গাত্রহরিদ্রা – ১৫

১৫

আজ সাত্যকি বাড়ি ফিরবে। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা, সাড়ে আটটা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। এই ভর সন্ধ্যেয় বিজয়া তাই রান্নাঘরেই ব্যস্ত। তাঁর ছেলেটা পাবদা মাছ খেতে খুব ভালোবাসে। বিজয়া সর্ষেবাটা দিয়ে সেই রান্নার আয়োজন করে চলেছেন। যদিও সাত্যকি বিজয়ওয়াড়া রওনা দেবার পর থেকেই তাঁর মনের ভেতরেও একটা ঝড় উঠেছে। অশান্তির ঝড়। নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং সংযমী দৃঢ়তায় সে সব সামাল দিয়ে উঠলেও আঠাশ বছর আগের বন্ধ দরজাটা যে তাঁর কাছে হাট করে খুলে গেছে। নিখিল যে মুহূর্তে সাত্যকির কাছে স্বীকার করেছেন, পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে মিথ্যে কেস সাজিয়েই চুরির দায়ে গোপাল মনোহর বালযোগীকে বরখাস্ত করেছেন এবং সেটা ব্যক্তিগত একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ থাকতে, তারপরেও আরও কিছু বোঝার জন্য বিন্দুমাত্র বুদ্ধিমতী হওয়ার প্রয়োজন নেই।

আজকে বিজয়ার খুবই খারাপ লাগছে সেদিনের ছবিটা ভাবতে গিয়ে। সেদিন দুপুরে তাদের বাড়িতে এসে গোপাল মনোহর তাকে বোঝাতে এসেছিল। বলতে এসেছিল ওই কাজ তার নয়। বিজয়া বিশ্বাস করেনি। একতরফা শুনে শুনে তার মাথা আগেই ভারী হয়ে ছিল। ফলে গোপাল মনোহরকে ঘৃণার চোখে দেখতে ও নিখিলকে দৃঢ়চেতা ভাবতে সেই মুহূর্তে তাঁর কোনো সংশয়ই ছিল না।

অথচ আজ ….. নেপথ্যের সেই ঘটনাটা আজ টলটলে জলের মতো পরিষ্কার এটা তো ঠিক, বিজয়া সেই অর্থে দুই বন্ধুর কাউকেই তেমন ভালো না বাসলেও প্রকৃত বন্ধুর মতো দু’জনের সঙ্গেই সমানভাবে মেলামেশা করছিল। এবং যেহেতু কাছাকাছি অঞ্চলে থাকার দরুন গোপাল মনোহরের সঙ্গে বেশি দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিলো তাই শেষের দিনগুলোতে ওর কাছাকাছি থাকতে, ওর সঙ্গ পেতেই ভালো লাগতো। এখন মনে হচ্ছে কিছুটা নিরাশ হয়ে নিখিল ওখান থেকেই ওর ঘুঁটি সাজানোর খেলায় ডুবে যায়। সে সব ঠিক আছে, প্রশ্ন যেটা থেকে যায় তা হলো, অন্য আর কোনো পদ্ধতিতে কি নিখিলের তার কাছের মানুষ হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল না? গোপাল মনোহরকে দূরে সরিয়ে রাখতে গিয়ে খেলাটা যে অনেক বেশি অনৈতিকতার হয়ে গেছে।

বিজয়ওয়াড়ায় গোপাল মনোহরের উদ্দেশে সাত্যকি রওনা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিজয়া যেন আরও নিঃসঙ্গ আরও একা হয়ে পড়লেন। এই ক’দিন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে নিখিলকে অন্য এক দৃষ্টিতে দেখে সেই মতো চলছিলেন। আহা, লোকটা যখন কারও সঙ্গে কথা বলা পছন্দ করছেন না তখন ওঁকে বিরক্ত করাটা ঠিক নয়। যে ভাবে থাকতে চাইছেন থাকুন তাঁর নিজের মতো। কিন্তু এখন তো সেই কুয়াশাটা সরে গেছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে সামনে এবং পেছনের সব কিছু। ফলে বিজয়া এখন আর নতুন আর এক দৃষ্টিতে স্বামীকে দেখে চলেছেন। আঠাশ-তিরিশ বছর পর অন্যরকমভাবে ভাবছেন। সমস্যা হলো, এতো কিছু জানার পরেও নিখিলের সঙ্গে ওনিয়ে একটা কথা বলাও উচিত হবে না। ঠিক হবে না ওঁকে কঠিন কিছু বলা। মানুষটা এমনিতেই মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছেন না সেখানে সামান্য একটু রূঢ় কিছু বললেও নিখিল সত্যি সত্যিই যা খুশি একটা কিছু করে বসতে পারেন। অতএব ভেবে চিন্তে, মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব দিক সামাল দেবার প্রয়োজন আছে।

অন্যভাবে ভাবতে গেলেও বিজয়া কি একটুও চঞ্চল হয়ে উঠছেন না? গোপাল মনোহরের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা অন্যায়। অর্থাৎ নিখিল অপরাধই করেছেন। এখানে যে আরও একটা প্রশ্নও লুকিয়ে রয়েছে। কেন নিখিল ওটা করলেন? বিজয়ার জন্যই নয় কী? এতো তীব্রতার গরজ নিয়ে যে মানুষটা অমন কাজ করলেন তাকে কি আজ এই আঠাশ-তিরিশ বছর বাদে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা যায়? মুশকিলটা হলো, নিখিল কেন সেই যৌবনের দুরন্ত দিনে তার কাছে সহজভাবে নিজেকে মেলে না দিয়ে ওই ঘুর পথের রাস্তাটাকেই বেছে নিলেন? আজকে সেই কথাটা ভাবতে গিয়েও বিজয়া বারেবারেই নরম হয়ে পড়ছেন, নিখিল তাকে এতো ভালোবাসতেন? সবচেয়ে বড়ো কথাটা হলো, নিখিল যাই করে থাকুন না কেন তার পেছনে সারাক্ষণ বিজয়ার উপস্থিতি কাজ করেছে। আজ অপরাধীর তকমা লাগিয়ে সেই মানুষটাকে কতো দূরে সরিয়ে রাখা যায়—যিনি স্বেচ্ছায় নিজেই সরে যাওয়ার বেদনা নিয়ে রয়েছেন?

সাত্যকি চলে যাওয়ার পর বিজয়া তাই স্বাভাবিক আচরণই করেছেন। স্বাভাবিক আচরণ বলতে নতুন যা জেনেছেন সেই বিষয় নিয়ে একটাও কথা না বলা। একটুও দাঁতে না কাটা। অর্থাৎ আগে যেমন ছিলেন সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলা। ফলে নতুন করে নিখিলের সঙ্গে কোনো সংঘাত না হলেও তাল যে একটা কেটে গেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর গণ্ডগোলটা বাধছেও ঠিক এখানেই বিজয়া যতোই স্বাভাবিকতার মধ্যে থেকে হাসিগল্প, সংসারের পাঁচটা কথা বলার চেষ্টা করছেন নিখিল ততোই তাঁকে অন্যরকম ভাবছেন। কথাবার্তা সব হারিয়ে ফেলছেন। বিজয়া সারা দিনে আর কতোবার বলবেন, কতো ভাবে বোঝাবেন, তোমার কিছুই হয়নি। তুমি কিছুই হারাওনি। একটা সংসারে মানুষের এতোগুলো বছরে সব কাজই ঠিকঠাক মতো হতে পারে না। দু’একটা ছন্দপতন তো হতেই পারে। সেই শোকে ভেঙে না পড়ে নতুন করে সেটাকে গড়ে নিতে হয়। জবুথবু হয়ে বসে না থেকে নিরন্তর সেই প্রচেষ্টার নামই সংসার। কিন্তু কাকে বলা? মানুষটাই তো পাথর। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে, সাত্যকির ফিরে আসার জন্য তিনি উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। যদিও সাত্যকি ফোনে প্রতি দিনের ঘটনাপ্রবাহ যা যা জানাবার সবই জানিয়েছে তবুও যেন কিছু একটা বাকি থেকেই যায়। ছেলের কাছ থেকে সেই ‘কিছু’ শোনার অপেক্ষায় নিখিল এখন অধীর হয়ে রয়েছেন। তবুও ভালো মানুষটার মধ্যে জীবনের স্পন্দন দেখা যাচ্ছে।

বিজয়ার কাজের মহিলা মনোরমার রান্নার হাতটা বেশ ভালো। এই বাড়ির সব রান্না তো ওই-ই করে। কিন্তু পাবদা মাছটা আজ বিজয়া নিজের হাতেই রেখেছেন। আসলে সাত্যকিটা দিন সাত, আটেক বাড়ি না থাকার ফলে বিজয়ার মনে আবার অন্য ধরনের শূন্যতা। ফলে বুকটা মাঝেমাঝেই ফাঁকা লাগে। ছেলেটাও হয়েছে অদ্ভুত! একেবারে মা, বাবা অন্ত প্রাণ! আর বিচক্ষণ! একটা চব্বিশ বছরের ছেলের মধ্যে যে অতো প্রাজ্ঞতা ভাবা যায় না। ছেলের জন্য বিজয়া নিজেই মাতোয়ারা।

রান্না সেরে বিজয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ব্যালকনিতে এসে স্বামীর পাশে বসলেন। মৃদু হেসে বললেন, বই পড়ার তোমার কী সুন্দর একটা নেশা ছিল অথচ সে সব এখন ছুঁয়েও দেখো না। আবার তো আরম্ভ করলে পারো।

আমার ভালো লাগে না।

কী তবে ভালো লাগে? এ ভাবে চুপচাপ বসে থাকতে? সারা দিন? দিনের পর দিন? বিজয়া কিন্তু বিন্দুমাত্র রাগারাগী করলেন না। তাঁর ভেতরে এবং বাইরেও নেই বিরক্তির প্রকাশ। তিনি বরং হালকা হেসে বললেন, আমাদের ছেলেটাকে বাঁচাতে হবে না? তুমি এমন মনমরা হয়ে থাকলে ছেলেটার কাছে ভুল সঙ্কেত পৌঁছাতে পারে। সাত্যকি কতো আর চাপ নেবে বলো? এ বার তো আমাদের ওর দিকেও তাকানো উচিত।

আশ্চর্য! আশ্চর্য একটা ঝিলিক খেলে গেল নিখিলের বিষণ্ণ দৃষ্টিতে। স্বার্থপরের মতো এতো দিন নিজের চিন্তাতেই ডুবে ছিলেন। নিজেকে ছাড়া অন্য কারও কথা ভাবার চেষ্টাই করেননি। অথচ সাত্যকি যে এর ফলে যথেষ্ট চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে উঠতে পারে, ওর হাসি, সুখ মিলিয়ে যেতে পারে, পারে শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে— সে সব কিন্তু নিখিল একবারও ভাববার ধারে কাছেও পৌঁছাননি। অথচ বছর চব্বিশের ছেলেটার তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। বাবা হয়ে তিনি কি সেটা নষ্ট করে দিতে পারেন? এই বোধটাই সম্ভবত তাঁকে জাগাচ্ছে, জাগিয়ে তুলছে।

নিখিল স্ত্রীর দিকে চোখ ফেরালেন। বিজয়ার হাতের ওপর নিজের হাতটা রেখে খুবই ক্লান্ত গলায় বললেন, আমি বোধহয় ভুল পথেই হাঁটছিলাম—

বিজয়া বলতে যাচ্ছিলেন, একটা ভুল করে তুমি আরও একটা ভুল করতে….. কিন্তু চিন্তাটা ওই পর্যন্তই। উচিত—অনুচিতের সীমারেখা নিয়ে কথা বলার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যিনি ভাবেন তিনি কি পারেন কাউকে ওভাবে কথা শোনাতে? বিজয়া হাসি মুখে বলে উঠলেন, শয়তানের ভুল হয় না।

কিন্তু বিজয়া আমি কি……

তুমি মানুষ। সেই জন্যই তো এই কষ্টটুকু পেলে। কষ্টের এই আগুনে পুড়ে তোমার শুদ্ধি হয়ে গেছে।

এ কথা তুমি বলছো? নিখিল তাঁর ভেতরের দীপ্তি ফিরে পাচ্ছেন। সেই উজ্জ্বল দৃষ্টি নিয়েই স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়েই রইলেন।

বিজয়া যেন মুহূর্তে অনেক ভারমুক্ত হয়ে গেলেন। রহস্যের ঘেরাটোপে নিজেকে আরও রহস্যময়ী করে তুলে হালকা গলায় বললেন, এখানে তোমার আর কে আছে? আমি বলছি না তো কি অন্য কেউ এসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করার দায় নিয়েছে?

কিন্তু বিজয়া …..আমার ছেলেটা কেন এখনও আসছে না?

এই, ‘আমার ছেলেটা’ বলার মানে কী? সাত্যকি তোমার একার? বিজয়া ফিরে গেলেন বছর পঁচিশ আগে, আমার কি তাতে কোনো ভূমিকাই ছিল না?

ছিল বিজয়া ছিল। তোমার ভূমিকাই তো সব। নিখিল মৃদু হেসে স্ত্রীর কোলে মাথা নামিয়ে রাখলেন। অস্ফুট গলায় বললেন, আমি তো ‘ছড়’ টানা শুধুমাত্র একজন যন্ত্ৰী।

বিজয়া ও কথার কোনো উত্তর দিলেন না—মানে দিতে পারলেন না। বরং হঠাৎ করে অসম্ভব এক লজ্জায় এবং মেঘ কেটে যাওয়ার পরিবর্তনে খুশি হয়ে নিখিলের এক মাথা সাদা-কালো চুলের মধ্যেই নিজের মুখ লুকালেন। বিড়বিড় করে শুধু বলতে লাগলেন, আজ আমি ভীষণ আনন্দ পাচ্ছি। খুব খুশি হয়েছি।

.

রাত ন’টা নাগাদ সাত্যকি বাড়িতে এসে পৌঁছালো। আট দিনেই মনে হচ্ছে যেন আঠারো মাস পর বাড়ি ফিরছে। নতুন এক দৃষ্টি নিয়ে সে মা, বাবাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনোরমাদি, এমনকী বাড়ির ঘর, সিঁড়ি, দেওয়ালগুলোকে পর্যন্ত বেশ নজর দিয়ে দেখতে লাগলো। একবার তো বিজয়াকে বলেই ফেললো, সরস্বতীর ছবিটা কি এই দেওয়ালে ছিল? আর এই চেরির টবটা তো ছিল নীচের সিঁড়িতে— সেটা দোতলার ল্যান্ডিংয়ে কেন? আমার ঘরে তো হালকা সবুজ পর্দা ছিল, ঘিয়ে রংয়ের হলো কবে? নিখিল ও বিজয়ার দিকে তাকিয়ে সাত্যকি হাসতে হাসতে আরও বললো, নেহাত তোমাদেরকে আর মনোরমাদিকে দেখলাম বলেই মনে হচ্ছে এটা আমাদের বাড়ি। নয়তো ছবি, টব, পর্দা ইত্যাদি দেখে আমার তো অন্য রকম……

রাজামুন্দ্রি আর সুমিঠ্‌ঠাগুরম করে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিজয়া ছেলের মুখের দিকে চেয়ে এক ঝলক হাসলেন, বুঝতে পারছি ফের তোকে ওখানে পাঠাতে হবে।

এই কারণেই মায়েদের অন্তর্যামী বলে। কথাটা বলেই সাত্যকি নিখিলের একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। পরিষ্কার বললো, তোমার আর মন খারাপ করার কোনো দরকার নেই বাবা, আমি তো আছি—আমি তোমার পাশেই আছি। আর খুব বেশি হলে ছ’মাস, এর মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার বন্ধু প্রচণ্ড সৎ। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। ফলে মানসিক সব কিছু ভুলে ঠেলে সরিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে তাঁর কিছুটা সময় লাগবে। এতো দিনের বাধন কি এক দিনে আলগা হয়? তবে গোপাল মনোহর বালযোগী যে নরম হবেন তা বোঝা গেছে। যাক গিয়ে, এর পরের ব্যাপারগুলো কীভাবে সামলাতে হবে, এগোতে হবে সে সব তুমি আমার ওপরেই ছেড়ে দাও বাবা, তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ, তুমি আগের মতোই হাসিখুশি থেকো—আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি। এবং থাকবোও।

খেতে বসে সাত্যকি প্লেটে পাবদা মাছ দেখে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিল। হইচই বাধিয়ে আরও ভাত চেয়ে নিয়ে সর্ষেবাটার সুস্বাদু মাছটা বেশ তৃপ্তি করে খেলো। মনোরমাদির প্রশংসা করতেই চাপা হেসে বিজয়া বলে উঠলেন, এই এটা তোর মনোরমাদি রাঁধেনি—মাছটা আমারই রান্না।

দারুণ রেঁধেছো মা, দারুণ! আসলে মায়েদের রান্নারই স্বাদ আলাদা হয়। ওই সময়ে নিখিল ছেলেমানুষের মতো একটা কাজ করলেন। সন্তানের প্রতি অপত্য এক স্নেহে নিজের প্লেটের পুরো মাছটাই সাত্যকির পাতে তুলে দিয়ে বললেন, এটাও তুই খেয়ে নে। তুই তো পাবদা খুবই ভালোবাসিস।

ভালোবাসি বলে সকলের মাছ আমাকে একাই খেতে হবে? না কি এটা কোনো নিয়ম হতে পারে? তুমি যে কী করো না বাবা-

বিজয়াও স্বামীকে বলে উঠলেন, তোমারই বা সাত্যকিকে তুলে দেবার কী হলো? মাছটা তো তুমিও খাবে। আর সাত্যকির লাগলে ওর জন্য আরও আছে। তোমরা যে যারটা খাও তো দেখি।

খাওয়া-দাওয়ার পর ব্যালকনিতে বসে সাত্যকি তার রাজামুন্দ্রি-সুমিঠ্‌ঠাগুরমের সফরের কথা থেকে শুরু করে গোপাল মনোহর বালযোগী, মন্দাকিনী ও তাঁদের অধ্যাপিকা মেয়ে আহিরার কথা, ওঁদের আতিথেয়তা, মানসিকতার কথা, ওদের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার-বিশ্লেষণ নিয়ে পুরো ছবিটাই মোটামুটি মা, বাবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছে। এমনকী জানিয়েছে নিজের পরিকল্পনার কথাও। অর্থাৎ আগামী মাসে যে আবার গোপাল মনোহর বালযোগীর কাছে গিয়ে নতুন করে প্রাক্তন বন্ধুর সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করবে উল্লেখ করেছে তাও। সাত্যকি যে এর শেষ দেখে ছাড়বে এবং সেই দেখাটাও যে অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক এক স্বর্ণ-দৃশ্য হয়ে উঠবে, আছে সেই অঙ্গীকারও। এখন সময়ের ওপর আস্থা রেখে নীরবে কিছু কাজ করে যাওয়ার আছে। আর দরকার আছে সহযোগিতার। এখন দেখা যাক কতো তাড়াতাড়ি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়!

নিজের ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে সাত্যকি একটা সিগারেট ধরালো। রাত এখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি। এই মুহূর্তে ঘুম আসাটা খুবই স্বাভাবিক। সমস্যাটা হলো ঘুমই আসবে না। বাবাকে আগের চেয়ে বেশ কিছুটা স্বাভাবিক লাগলো। সে যে সম্পর্কটা জোড়া লাগাবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাবা তাতে যথেষ্টই খুশি। কিন্তু মূল ব্যাপারটা যেটা দাঁড়াচ্ছে, সমস্যা তো এখন গোপাল মনোহর বালযোগী বা তার বাবার নয়, ওটা আজ না হয় কাল মিটে যাবে। কিন্তু আগামী একটা মাস সে আহিরাকে না দেখে কীভাবে কাটাবে? এটা মাথায় রাখতে গিয়েই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে অফিসে এই ক’দিন না যাওয়ার ফলে সেখানেও অনেক কাজ জমে আছে। সে সব ফাইল সরিয়ে আবার আসছে মাসেই ছুটতে হবে সুমিঠ্‌ঠাগুরমে। সাত্যকি বুঝে উঠতে পারছে না, এ ভাবে হাঁসফাঁস করতে করতে কোথাও খটাখটি না বাধিয়ে সে সব দিক রক্ষা করতে পারবে তো? ওর অবশ্য তেমনই বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসটুকু আছে বলেই তো সে সাত্যকি মৈত্র! হোক না সে বয়সে নিতান্তই এক তরুণ। এমন তো কথা নেই যে চব্বিশ বছরের কোনো ছেলের মধ্যে পরিপূর্ণতা অর্থাৎ কি না পরিপক্কতা, বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি কিছুই থাকবে না, থাকবে না ধৈর্যশীলতা, স্থিতিশীলতা। ওসব বুঝি শুধু বুড়োদেরই একচেটিয়া? ছোটবেলা থেকে ঠিক মতো গড়ে উঠতে পারলে বয়সের সীমারেখা বলে কিছু থাকে না। সাত্যকি সিগারেটটা ভালো করে ঘষে নিভিয়ে ছাইদানিতে গুঁজে রেখে আলোটাও নিভিয়ে দিল। এ বারে তার ঘুম আসছে। আহিরার কথা অনেক বেশি বেশি মনে হলেও এই ক’দিনের ক্লান্তিতে সাত্যকির চোখে ঘুম নামছে।

.

ঋতু পরিবর্তনের মতো নিখিলের পরিবর্তনটাও চোখে পড়ছে। ক্রমশ‍ই তিনি ‘জীবনে’ ফিরে আসছেন। যোধপুর পার্ক ও গড়িয়াহাটায় গিয়ে নিজেই বাজার করে আনছেন। আগের চেয়ে বেশি কথা বলছেন, হাসি-মজা করছেন। এবং প্রতি দিন বিকেলে প্রতিবেশী বন্ধুদের সঙ্গে লেকে গিয়ে কিছুটা হাঁটাহাঁটিও করে আসছেন। আসলে সাত্যকির কাছে একটা কথা জানার পর তাঁর অনুভূতিটাও আরও অন্য রকমের হয়ে উঠেছে। তিনি স্পষ্টই অনুভব করলেন প্রকৃত বন্ধু তো আসলে গোপালই। সম্পূর্ণ নিরপরাধ হয়েও ও কোনো প্রতিহিংসার পথে যায়নি। ও তো সাত্যকিকে জানিয়ে দিতে পারতো কারণটা। সাত্যকি নিজেই বললো ও সেই প্রশ্নটা রেখেওছিল। কিন্তু গোপালকে টলানো যায়নি। বলেছে, “বাবাকে শ্রদ্ধা করার জন্য অবশিষ্ট কিছু রেখে দাও।” ওই কথায় অবশ্য না বলেও অনেক কিছু বোঝানো গেছে। তবুও ….. তবুও এটা তো ঠিক গোপাল তাঁকে যতোটা উলঙ্গ করতে পারতো তা সে কিছুই করেনি। এই না-করার ভেতরে কি ওর মধ্যে এখনও কোনো ভালোবাসা লুকিয়ে নেই? না থেকে পারে? আর ওর ওই কথাটা, “বাবা ও ছেলের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোটা আমার কাজ নয়।” সাত্যকি হয়তো ঠিকই বলে, বন্ধুত্বের স্বার্থে উনি সবই মেনে নেবেন, একটু সময় লাগবে এই যা। নিখিল এখন সেই আশা নিয়েই রয়েছেন।

.

যোধপুর পার্কের মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলো সাত্যকি। ওখানে ওদের বসার চমৎকার একটা ব্যবস্থা আছে। পাশেই নারায়ণদার চায়ের দোকান। সেখান থেকে নিয়মিত চা সরবরাহের ফলে সেই আড্ডার মেজাজ ও চরিত্র এক অন্য মাত্রা পেয়ে মুকুল গন্ধে ভরে যায়। রাত সাড়ে ন’টা দশটাতেও মনে হয় ভরা কোটাল। মারুতিতে চেপে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাতু একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলো, এই তোরা সিমলিপালে বেড়াতে যাবি? সেখানে দারুণ জঙ্গল আর জলপ্রপাত। সঙ্গে বনের আদিবাসীরা তো আছেই—বাঘ, হাতি, হরিণ, পাখি। আর আছে মনোরম ইউক্যালিপটাস বাংলো।

যাওয়াটা হবে কবে? সন্তু আগ্রহের সঙ্গেই জানতে চাইলো।

সেটা তোরা যেদিন বলবি—

অরিন বলল, বারো তারিখে রওনা দেওয়া যেতে পারে।

তুই নিশ্চয়ই তোর সুবিধে দেখে….. দীপুর কটাক্ষের উত্তরে অরিন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, ঠিক আছে – তোর সুবিধে মতোই দিন দ্যাখ। আমার কোনো অসুবিধে হবে না।

আমার কিন্তু অসুবিধে আছে। সাত্যকির সাফ সাফ কথা।

তাতু খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলো, তোর আবার কীসের অসুবিধা?

আছে।

আরে আছে বলে একটা ফ্যাকড়া তুলে তো লাভ নেই। তাতু স্বাভাবিক গলায় বললো, ঘটনাটা হলো আমাদের সবাইকেই সেখানে যেতে হবে। অতএব সবাই মিলেই একটা দিনক্ষণ ঠিক কর। বারো, পনেরোয় অসুবিধে থাকলে আমরা কুড়ি, একুশেও রওনা হতে পারি।

দীপুর মুখের দিকে তাকিয়ে অরিন হাসতে হাসতে বললো, বারো তারিখে না হয় আমার সুবিধে, স্বার্থ ছিল—এটা সাতাশ, আঠাশ, যা খুশি একটা তারিখ হলেও আমার আপত্তি নেই।

‘আঠাশ’ তারিখ শুনেই সাত্যকির বুকটা ধক করে উঠলো। সে নিষ্প্রভ গলায় বললো, তোরা যা।

তুই যাবি না কেন? দীপুর শরীরী ভাষায় কলার চেপে ধরার ভঙ্গিমা।

অফিসের কাজে আমাকে ওই সময়ে রাজামুন্দ্রি থাকতে হবে।

এই তো এলি সেখান থেকে! অরিন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোদের অফিস ওখানে ঠিক কী করছে কী বানাচ্ছে বল দেখি যে তোর মতো এক পুঁচকে অফিসারকেও মাসে দু’বার সেখানে পাঠাতে হচ্ছে?

হয়তো কারও শ্বশুরবাড়ি বানিয়ে দিচ্ছে— মুচকি হেসে সাত্যকি উত্তর দিল, আমার জন্য কী আছে, তোরা সবাই মিলে সিমলিপাল থেকে ঘুরে আয় না।

গজগজ করতে করতে তাতু বলেই বসলো, আমি দেখেছি কোথাও একটা বেড়াবার প্রোগ্রাম বানালেই তোদের যতো রাজ্যের পায়তারা শুরু হয়ে যায়। নেহাত আমি আমার অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে সেখানে যেতে চাইছি না তাই …..

এতোক্ষণে ভোম্বল এই প্রথম কথা বললো, তা তুই তোর অফিসের লোকদের সঙ্গে চলে যা-

‘তা তুই তোর অফিসের লোকদের সঙ্গে চলে যা—’ হুবহু ভোম্বলকে নকল করে তাতু ভেংচি কাটলো। পরে বললো, ওদের সঙ্গেই চলে যেতাম কিন্তু ওখানে আমার একটা অসুবিধা আছে।

তার মানে তোরও পায়তারা অথবা একটা ফ্যাকড়া আছে। সাত্যকি মুখ টিপে হেসে জানতে চাইলো, তুই কেন অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছিস না?

আরে অসুবিধেটা তো ওখানেই। তাতু বেশ শুকনো মুখে বললো, আমাদের অফিসের অভ্যর্থনাকারীণী—মায়া দত্তগুপ্তও যাচ্ছে। মুশকিলটা কী জানিস, আমি ওর একটা উপকার করেছিলাম। তার খেসারত দিচ্ছি। তবে প্রতিজ্ঞা করছি প্রসবকালীন জরুরি অবস্থা ছাড়া এই জীবনে আর কখনওই কোনো মহিলার উপকার করবো না। ওই সময়ে মেয়েরা মুক্তির জন্য বেশ কষ্ট পায়। অতো কষ্ট চোখে দেখা যায় না।

দীপু হেসে বললো, মনে হচ্ছে এটা একটা ‘কষ্টের’ উপন্যাস হতে চলেছে।

আমার বিপন্নতায় আমি মরছি আর তুই উপন্যাস, মহাকাব্য খুঁজে বেড়াচ্ছিস। তাতু আর রাখঢাক না করে সেই সাতকাহন বলতে বসলো, একদিন বৃষ্টির মধ্যে বাস, ট্রাম অচল এবং উধাও হতে মায়া দত্তগুপ্তকে অফিস থেকে তার কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে আমার গাড়িতে একটা ‘তোলা’ দিয়েছিলাম। তা সেই মহিলা তো কিছুতেই ছাড়লো না। বাড়িতে ডেকে নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে হ্যা-হ্যা, হি-হি করে কফি টফি খাওয়ালো। আমি যতোবারেই উঠতে চেয়েছি ‘বসুন না, বসুন না’ করে গল্পের ডালপালা আরও ছড়িয়ে দিয়েছে। কলেজ জীবনে কোন ছেলেকে হাঁদা বানিয়েছে, সাম্মানিকে কতো নম্বর ছিল, প্রথমবার বান্ধবীদের সঙ্গে দীঘায় গিয়ে কেমন মজা হয়েছিল এ সব আমার শুনে কী লাভ বলতো? আমি তো বিরক্তই হচ্ছিলাম। যাক গিয়ে সে সব। তারপর থেকে তো অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই মায়ার ‘সুপ্রভাত’ জানানোর ধুম লেগে গেল। অফিস থেকে বেরুনোর সময়ে মাঝেমধ্যে এমনভাবে গাড়ির সামনে চলে আসতো যেন যোগাযোগটা নিতান্তই হঠাৎ ঘটে গেছে। ফলে সৌজন্যের খাতিরে তাকে আমার গাড়িতে কয়েকদিন তুলতেও হয়েছে। এখন এই ঘটনাগুলোকেই মহিলা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রেমের আবীর ছড়াতে শুরু করে দিয়েছে।

তাতে তোর সমস্যাটা কী? ভোম্বল ভ্রূ কুঁচকে তাতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো, একটা মেয়ের সঙ্গে ভাব করার সুযোগ পেয়ে …..

তুই যতো কম কথা বলিস ততোই ভালো বুঝলি তাতু ভোম্বলকে দাবড়ে বলেই ফেললো, তুই মেয়ে পেলি কোথা থেকে? তখন থেকে বলে যাচ্ছি মহিলা আর তুই কল্পনায় বানাবি মেয়ে—ধুৎ! আরে ওর নিজেরই একটা ন’বছরের মেয়ে আছে এবং মায়া দত্তগুপ্ত ডিভোর্সী, বুঝলি কিছু? আমার থেকে অন্তত এগারো বছরের বড়ো। এই অবস্থায় সেই উন্মাদ মহিলা ভাবছে আমি তার সঙ্গে কোমর জলে নয়, একেবারে ডুব গলায় নামতে রাজি। কী করে ভাবে রে সাত্যকি? ওকে তো পুরো একটা রাঁচিতেও ধরে রাখা যাবে না।

ওই সময়ে ভোম্বল কী যেন বলার চেষ্টা করতেই তাতু প্রায় খেঁকিয়ে উঠলো, তুই একটাও কথা বলবি না। আমি সাত্যকিকে জিজ্ঞেস করেছি—

সাত্যকি কিছু বলার আগে আমিও তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। ভোম্বল মুচকি হেসে বললো, তুই এখন মায়া দত্তগুপ্তকে যতোই ধাড়ী অথবা ধরাধরি মহিলা বলে চিহ্নিত করিস না কেন, বাচ্চা সহ ডিভোর্সী মহিলাদের কি বিয়ে হচ্ছে না? আর এগারো বছরের বড়ো বলে তুই যে চিল চিৎকারটা জুড়েছিস, বিবাহিত জীবনে তোরা তোদের যা যা কাজ তাই করে যাবি— সেখানে কে কার চেয়ে বড়ো কে ছোট এটা কী কোনো কাজে বাধা হতে পারে?

ভোম্বলের কৌতুকে যে ইঙ্গিত ছিল বন্ধুরা তাতে মজা পেয়ে হেসে উঠলো। নির্মল হাসি ছড়ালো তাতুও। বললো, ওসব পাকামো রাখ। আমার মাথার ওপরে আমার আট-আটজন দাদা, আট বউদি, তাদেরও ওপরে বাবা, মা—এবং আজকের দিনেও একই বাড়ির ছাদের তলায় একই হাঁড়ির এই যৌথ পরিবারে এমন একটা ধামসিপানা করলে আমার স্থান হবে লেকের জলে। অথচ মহিলা আমাকে প্রায় সেই দিকেই টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টায় আছে। সেই কারণেই অফিসের ওদের সঙ্গে সিমলিপালে যাবো না। যাবো আমার পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে।

কিন্তু ওটা তো সমস্যার সমাধান নয়। সাত্যকি প্যাকেট খুলে সিগারেট বের করে বন্ধুদের সবাইকে দিয়ে নিজেও একটা ধরালো। তারপর খুবই শান্ত গলায় বললো, তুই পর্যাপ্ত গম্ভীর হয়ে মায়া দত্তগুপ্তকে নিপাট দিদি বলে ডাকতে শুরু করে দে। এবং পরিষ্কার বলবি, আমাদের ন’ ভাইয়ের সংসারে কোনো বোন বা দিদি নেই। আপনাকে দিদি হিসাবে ‘দত্তক’ নিতে চাই। নিতে চাই ভাই ফোঁটা। একটা কথা জানবি, তুই এগারো বছরের ছোট হয়েও ওই বয়সী মহিলাদের নাম ধরে ডাকলে ওরা ভরা প্রসন্নতায় যতোটা পেখম ছড়ায়, দিদি অথবা মাসি ডাকলে ততোটাই দূরে সরে যায়।

তোর সূত্রটা কিন্তু ফেলনা নয়। তাতু বেশ উৎসাহিত হলো।

বন্ধুদের সবাইকে দেখে নিয়ে ভোম্বল হাসতে হাসতেই বললো, তা হলে এটাকেই আমরা ‘সাত্যকির সূত্র’ বলে প্রচার করে দিতে পারি।

তা পারিস। তবে এই সূত্রের একটা সংজ্ঞা আছে। সাত্যকি ওর ভুবন ভোলানো হাসির কিরণ ছড়িয়ে বললো, সেটাও জানা দরকার।

তোর সংজ্ঞাটা কী শুনি?

কোনো অবস্থাতেই এই মহিলাদের এতোটুকু অবজ্ঞা বা অসম্মান করা চলবে না। মনে রাখতে হবে ওরা বানের জলে ভেসে আসেনি। তোর, আমার ঘর থেকেই উঠে এসেছে। এটা আসলে বিচ্ছিন্নতার অসুখ। আর প্রত্যেকেই তার হারানো জায়গা নতুন করে ফিরে পেতে চায়। এই অবস্থায় যথেষ্ট সহানুভূতি দেখিয়ে দিদির মর্যাদা দেওয়াটাই সমঝোতার পথ বলে আমার বিশ্বাস। এবং সাত্যকি তাতুকে সতর্ক করে দিতেও ছাড়লো না, আমরা পুরুষরা তো সব ধোয়া তুলসিপাতা— তা এই তুলসীপাতার জঙ্গলের অনেকেই ওই অসংরক্ষিত মহিলাদের গা ঘেঁষে বসে নানা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। এটাও কিন্তু খুব খারাপ। সমর্থন করা যায় না।

ভোম্বল তাতুর মুখের দিকে তাকিয়ে খুক খুক করে হাসতে লাগলো। রহস্যের ঘেরাটোপে ঢুকে গিয়ে আরও রহস্যচ্ছলে বলে উঠলো, বাবা তাতু কিছু বুঝলে? এখন বাড়ি চলো—বোঝার জন্য সারা রাত পাবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *