কি পেলাম – ২

০২.

 বদরপুর গ্রামের প্রায় এক মাইল পূর্ব দিকে মুনসীরহাট গ্রাম। এই গ্রামের ছেলে হারুন। তার বাবার নাম বদরুদ্দিন। মায়ের নাম হনুফা বিবি। বদরুদ্দিন বছর পাঁচেক আগে এ্যাকসিডেন্ট করে অনেক দিন হাসপাতালে ছিলেন। মাথায় বেশি আঘাত পেয়েছিলেন। তাই সুস্থ হওয়ার পরও মাথায় গোলমাল থেকে যায়। কখনো ভালো থাকেন। আবার কখনো পাগলের মত আচরণ করেন। ওঁদের শুধু সাত ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। হারুন সবার বড়। সে ম্যাট্রিক পাশ করে দুবাইয়ে চাকরি কর। তার মেজ ও সেজ ভাই শামসু ও হোসেনকে সে দুবাইয়ে নিয়ে গিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে। দিয়েছে। চার নাম্বার ভাই মজিদ পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে সংসার দেখাশুনা করে। তারপরের ভাইগুলো স্কুলে পড়ে। তাদের আর্থিক অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো। একতলা বেশ কয়েকটা পাকা রুম করেছে। জমি জায়গাও কিছু কিনেছে।

বদরপুর গ্রামে হাই স্কুল নেই। তাই এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা মুনসীরহাট জি এণ্ড আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। রোকেয়া ঐ বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। তার বড় ভাই জাভেদ এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কাতারে চাকরি করছে। মেজ ভাই বখতিয়ারও এই স্কুলে থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে চাঁদপুরে হোস্টেলে থেকে কলেঝে পড়ছে। দুভাইয়ের পর রূপা, তারপর রোকেয়া। রোকেয়ার পর জুলেখা এবং সকলের ছোট বাহাদুর। জুলেখাও এই স্কুলের সেভেনের ছাত্রী। আর বাহাদুর গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে ক্লাশ ফোরে পড়ে।

বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর রোকেয়ার প্রায়ই হারুনের কথা মনে পড়ে, ছেলেটা দেখতে বেশ সুন্দর। ভাবে, আমার কথা আজিজ মামাকে কেন জিজ্ঞেস করল? আমার দিকেই বা অমন করে চেয়েছিল কেন? চোখে চোখ পড়ে যাওয়ার কথা হলে এখনো তাকে লজ্জা পায়।

একদিন রোকেয়া স্কুল ছুটির পর বান্ধবী লাকির সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। লাকি ও সে। নিচের ক্লাস থেকে এক সঙ্গে পড়ে আসছে। রোকেয়া হঠাৎ দেখতে পেল,হারুন সামনে তেমাথা রাস্তার নীমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে। রোকেয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগল।

হারুন আস্তে করে বলল, শুনুন।

দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। লাকি খুব চালাক চতুর ও মুখরা মেয়ে। সে হারুনের দিকে চেয়ে বলল, রাস্তায় মেয়েদের একাকি পেলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে বুঝি? আপনি আজিজ ভাইয়ের বন্ধু বলে কিছু বললাম না। নচেৎ মেয়েদের সঙ্গে এভাবে ডেকে কথা বলার মজা বুঝিয়ে দিতাম।

লাকির কথা শুনে হারুন লজ্জা পেয়ে কয়েক সেকেণ্ড কথা বলতে পারল না। তারপর বলল, দেখুন, আপনারা আমাকে যা ভাবছেন, সে রকম ছেলৈ আমি নই। আপনি তো দেখছি আমাকে চেনেন। আমি কিন্তু আপনাকে না চিনলেও আপনার সঙ্গিনীকে চিনি। উনি আমার বন্ধু আজিজের ভাগ্নি।

লাকি বলল, তাতে কি হয়েছে? বন্ধুর ভাগনী হলেই পথে ঘাটে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে নাকি? আপনার বাড়ি কোথায়?

হারুন আরো বেশি লজ্জা পেয়ে বলল, আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমার বাড়ি এই মুনসীরহাটেই। আমি ওঁর সঙ্গে দুএকটা কথা বলতে চাই।

লাকি রোকেয়াকে বলল, কিরে তুই ওঁকে চিনিস নাকি?

রোকেয়া হারুনকে দেখে মনে মনে পুলকিত হলেও বেশ লজ্জা পেয়েছিল। এখন তার কথা শুনে আরো বেশি লজ্জা পেয়ে কথা বলতে পারল না। নিজের অজান্তে শুধু হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল।

লাকি অবাক হয়ে একটু চিন্তা করে হারুনকে বলল, ওর সাথে কি কথা বলবেন বলছিলেন, তাড়াতাড়ি বলুন।

হারুন বলল, কথা এমন কিছু নয়, আমি আপনাদের নাম জানতে চাই।

লাকি বলল, নাম জেনে কি করবেন? তবু বলছি, আমার নাম লাকি। আর ও যখন আপনার বন্ধুর ভাগনী তখন নাম নিশ্চয়ই জানেন?

হারুন বলল না। তাকে জিজ্ঞেস করিনি।

লাকি বলল, ওর নাম রোকেয়া। এবার আসি তাহলে?

হারুন আসুন বলে একবারে রোকেয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের বাড়ির দিকে হাঁটতে আরম্ভ করল।

হারুনকে চলে যেতে দেখে তারাও নিজেদের পথে হাঁটতে লাগল। যেতে যেতে লাকি রোকেয়াকে জিজ্ঞেস করল, ওকে চিনলি কি করে? কোনো দিনতো তুই ওর কথা আমাকে বলিস নি?

রোকেয়া আজিজ মামার বিয়েতে গিয়ে যা হয়েছিল, তা বলে বলল, তারপর এই আজ দেখা। ওর কথা কি আর তোকে বলব?

লাকি বলল, কিন্তু তোদের দুজনের অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে, তোরা প্রেমে পড়েছিস।

রোকেয়া একটু রেগে গিয়ে বলল, কি বাজে বকছিস?

মনে হচ্ছে আমার কথায় রেগে গেছিস? তারপর হেসে ফেলে বলল, প্রেমে পড়লে প্রথম প্রথম সে কথা কেউ বললে সবাই রেগে যায়।

তুই জানলি কি করে? তুইও তাহলে কারো প্রেমে পড়েছিস?

 পড়লে তো তুই জানতে পারতিস। প্রেমের পথে আমি কোনোদিন পা বাড়াব না।

কেন?

প্রেম নাকি মানুষকে সব সময় কাঁদায়।

ধেৎ বাজে কথা। প্রেম মানে আনন্দ। সেখানে কান্না থাকবে কেন?

লাকি বলল, আমার চাচাতো ভাই তার মামাতো বোনের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। এখন তাদের এমন একটা দিন অতিবাহিত হয়নি, যেদিন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়নি। দুজনেই এখন অনুতপ্ত। বলে প্রেম করে বিয়ে না করে মা-বাবার পছন্দমত বিয়ে করলে, এমন অভিশপ্ত জীবন কাটাতে হত না। তুই উপন্যাস পড়িস কিনা জানি না, আমি কিন্তু পড়ি। ভাইয়া ভাবিকে পড়ার জন্য এনে দেয়। আমি চুরি করে পড়ি। তাতেও দেখি যারা প্রেম করে বিয়ে করে, সাংসারিক জীবনে তারা সুখ শান্তি পায় না। তবে সবক্ষেত্রে যে এ রকম হয়, তা নয়। খুব কম প্রেমিক প্রেমিকা দাম্পত্য জীবনে সুখ শান্তি পায়।

রোকেয়া বলল, তোর কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমিও কিছু কিছু ভালো উপন্যাস পড়ি। কই সে সবেতো খারাপ কিছু পাইনি। প্রেম করে বিয়ে করলে সংসার সুখেরই হয়। আমার মামা মামীকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। মামা-মামীর মধ্যে আমি কোনোদিন ঝগড়া তো দূরের কথা, একটু কথা কাটাকাটি হতেও দেখিনি।

 লাকি বলল, তোর বুদ্ধি একদম কাঁচা। কি করে যে তুই পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো করিস ভেবে পায়নি। আরে বোকা, পছন্দ করা আর প্রেম করা এক জিনিস হল বুঝি?

রোকেয়া বলল, বাদ দে ওসব কথা। তোর সঙ্গে তর্কে পারব না।

লাকি বলল, তুই ঐ ছেলেটার নাম জানিস?

হারুন।

তুই তো দেখছি তার নাম ও জানিস। সে তোর নাম জানল না, এ কেমন কথা। তার নাম জানলি কি করে?

ঐ দিন আনোয়ারা নামে সেখানকার একটা মেয়ে বলেছিল।

আমার মনে হয় হারুন তোকে পছন্দ করেছে।

 তাতে আমার কি?

 তাকে তোর পছন্দ হয়নি? ছেলেটা কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর।

পছন্দ হলেই বা কি? সে কথা কি–বাবাকে বলতে পারব? তোর মনে ধরেছে মনে হচ্ছে। পছন্দ হলে বল, আমি তোর ভাবিকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি।

হঠাৎ তোর মনে এরকম হল কেন?

 হারুন দেখতে সুন্দর বললি, তাতেই মনে হল।

সুন্দরকে সুন্দর বললে মনে ধরা হয় বুঝি? সুন্দরকে তো সবাই পছন্দ করে। তাছাড়া আমার পছন্দ হলে তো আর হবে না। তারও আমাকে পছন্দ হতে হবে। সে তো তোকে। পছন্দ করেছে।

এটা তোর মনগড়া কথা। অতক্ষণ ধরে যা কিছু কথা বলেছে, তা তোর সঙ্গে। আমার সঙ্গে একটাও বলেনি।

তা বলেছে, তবে তোকে উপলক্ষ্য করে। তাই তো আমার সঙ্গে কথা বলার সময় বারবার তোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখেছে।

রোকেয়া বলল, কি জানি হয়তো তোর কথা ঠিক। ততক্ষণে তারা রোকেয়াদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে।

লাকি বলল, আজ চলি। ভেবেচিন্তে বলিস, চেষ্টা করব।

আমার ভাববারও কিছু নেই আর বলারও কিছু নেই। তুই বরং নিজের কথা ভাবিস, এই কথা বলে রোকেয়া বাড়ির দিকে চলে গেল।

লাকির বড় আপার বিয়ে হয়েছে মুনসীরহাটে। তার দেবর নাসিমের সঙ্গে হারুনের খুব জানাশোনা। সে যখন জানতে পারল হারুন রোকেয়াকে পছন্দ করে তখন তাকে বলল, রোকেয়া আমার ভাবির বোনের বান্ধবী। তুমি যদি চাও, তাহলে আমি তোমাদের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

হারুন শুনে খুশি হয়ে বলল, তাই কর।

একদিন নাসিম হারুনকে সঙ্গে করে লাকিদের বাড়ি বেড়াতে এল। সে সময় নাসিমের ভাবি বাপের বাড়িতে ছিল। নাস্তা খাওয়ার সময় নাসিম ভাবিকে হারুনের কথা বলল।

শুনে নাসিমের ভাবি অর্থাৎ লাকির বড় বোন জাহেদা বলল, তাই নাকি?

 নাসিম বলল, হ্যাঁ ভাবি তাই। তুমি আমার বন্ধুর এটুকু উপকার কর।

জাহেদা হেসে উঠে বলল, রোকেয়া লাকির বান্ধবী। ছোট বোনের বান্ধবীকে তো আমি কিছু বলতে পারব না। কয়েক সেকেণ্ড চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে, আমার ভাবিকে দিয়ে ম্যানেজ করছি।

নামিস বলল, যা করলে ভালো হয় তাই কর।

ওদের নাস্তা খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর জাহেদা তার ভাবিকে নাসিম ও হারুনের আসার উদ্দেশের কথা বলে ব্যবস্থা করতে বলল।

জাহেদার ভাবি মুচকি হেসে বলল, এটা আর তেমন কঠিন কাজ নাকি? রোকেয়ার সঙ্গে আমার খুব ভাব। ডাকলেই ছুটে আসবে। আমি এক্ষুণি সে ব্যবস্থা করছি। এই কথা বলে সে লাকির কাছে গিয়ে বলল, তুমি রোকেয়াকে ডেকে নিয়ে এস। হারুন ভাই এসেছে, তাকে বলবে না।

লাকি হারুনকে দেখেই ব্যাপারটা অনুমান করেছিল। এখন ভাবির কথা শুনে অনুমানটা দৃঢ় হল। বলল, তুমি যাও, আমি একটু পরে ওকে ডেকে নিয়ে আসছি।

ভাবি বলল, তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে এস। ওরা বেশিক্ষণ থাকবে না। কথা শেষ কর চলে গেল।

লাকি রোকেয়াদের বাড়িতে গিয়ে তাকে বলল, তোকে ভাবি ডাকছে।

লাকির ভাবির সঙ্গে রোকেয়ার খুব ভাব। লাকির কাছে যখন যায় তখন তার সঙ্গে প্রায়ই গল্প করে। সেও মাঝে মাঝে গল্প করার জন্য রোকেয়াকে ডেকে পাঠায়। লাকির কথা শুনে বলল, এখন যাব না। বিকেলে যাব। মনটা ভালো নেই। আয় বস, দুজনে গল্প করি।

লাকি বলল, তোর মনে আবার কি হল?

রোকেয়া বলল, কি যে হয়েছে, ছাইপাস কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন বস না, দুটো কথা বলি।

এখন বসতে পারব না। ভাবি তোকে এক্ষুণি আমার সঙ্গে যেতে বলেছে।

 চল তাহলে, তোদের বাড়িতেই সবাই মিলে গল্প করা যাবে।

লাকি বলল, হ্যাঁ তাই চল।

রোকেয়া লাকির সঙ্গে তাদের বাড়িতে এলে লাকি বলল, তুই ভাবির ঘরে যা, আমি একটু পরে আসছি।

রোকেয়া ভাবির ঘরে এসে বলল, কি খবর ভাবি, হঠাৎ জরুরী তলব কেন?

ভাবি বলল, বস। এমনি গল্প করার জন্য ডাকলাম।

তারা গল্প করতে লাগল।

নাসিম ও হারুন অন্য ঘরে কথা বলছিল। লাকি বাইরে থেকে নাসিমকে আস্তে আস্তে কিছু কথা বলে ভাবির ঘরে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিল।

লাকি আসার দুতিন মিনিট পর দুজন লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে রোকেয়া সালাম দেওয়ার সময় নাসিমের সঙ্গে হারুনকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল। সে নাসিমকে চিনে। লাকিই একদিন তার বড় বোনের দেবরের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল।

নাসিম সালামের উত্তর দিয়ে দুজন দুটো চেয়ারে বসল। তারপর নাসিম রোকেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি লেখাপড়া করছেন, অত লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আমার বন্ধু হারুন আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

রোকেয়া এদের সামনে এই কথা বলায় আরো বেশি লজ্জা চুপ করে রইল।

তাই দেখে নাসিম বলল, ঠিক আছে আমরা থাকলে যদি আপনার অসুবিধে হয়, তা হলে বাইরে চলে যাচ্ছি। তারপর ভাবিকে ও লাকিকে ইশারা করে বেরিয়ে আসতে বলে চলে গেল। সেই সাথে ভাবি ও লাকি চলে গেল।

তারা চলে যাওয়ার পরও কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। হারুনও লাজুক। ধরনের ছেলে। এক সময় সঞ্চয় করে বলল, রোকেয়া, আমি তোমাকে ভালবাসি। চুপ। করে থেক না, কিছু বল।

হারুনের কথা শুনে রোকেয়া যেমন ভীষণ লজ্জা পেল তেমনি মনের মধ্যে একটা ভয় মিশ্রিত আনন্দের শিহরণ অনুভব করল। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারল না।

হারুন আবার বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সে জন্যে তোমার মা বাবাকে জানাবার আগে তোমার মতামত জানতে এসেছি। বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে উভয়ে উভয়ের মতামত জেনে নেয়া ভালো। তাহলে বিয়ের পর কোনো অসন্তোষ দেখা দেয় না। আর ইসলামেও বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।

রোকেয়া খুব লজ্জাশীলা মেয়ে। হারুনের কথার উত্তরে কি বলবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে চুপ করেই রইল।

রোকেয়া কোনো কথা বলছে না দেখে হারুন ভাবল, সে হয়তো তাকে পছন্দ করে না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমাকে যদি তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে কথা দিচ্ছি, আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করব না। এবার কিছু বল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেও যখন রোকেয়ার কাছ থেকে উত্তর পেল না তখন হারুন বলল, আমার ভাবা কি অন্যায় হবে, তুমি আমাকে পছন্দ কর না? কথা শেষ করে সে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ল।

রোকেয়ার এতক্ষণে লজ্জা কেটে গেছে। বলল, দেখুন, এ ব্যাপারে আব্বা আম্মা যা করবেন তাই হবে। আপনি আমার উপর মনে কষ্ট নেবেন না। তারপর নাসিমকে আসতে দেখে তাকে পাশ কাটিয়ে ছুটে বেরিয়ে এসে পাশের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

তাই দেখে নাসিম হারুনকে বলল, রোকেয়া খুব লাজুক মেয়ে। তোর সঙ্গে কথা বলেছে?

হারুন বলল, তোর কথাই ঠিক। ও খুব লাজুক। কথা বলতেই চায় না। তবে শেষমেষ যতটুকু বলেছে তাতেই যা জানার জানা হয়ে গেছে।

নাসিম ও হারুন বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর লাকি ও তার ভাবি রোকেয়া যে রুমে ছিল, তার দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল, রোকেয়া দরজা খোল।

রোকেয়া দরজা খুলে লাকির পিঠে কয়েকটা কিল মেরে বলল, তুই সবকিছু জেনেও আমাকে আগে বলিসনি কেন? আব্বা-আম্মা শুনলে আস্ত রাখবে না। আর পাড়া-পড়শী শুনলে কত বদনাম করবে ভেবে দেখেছিস?

লাকি কিছু বলার আগে তার ভাবি বলল, ওর কোনো দোষ নেই। আমি জানাতে নিষেধ করেছিলাম। তোমার কোনো ভয় নেই। আমরা একথা কাউকে জানাব না।

রোকেয়া যখন তাদের কাছ থেকে ফিরে আসছিল তখন লাকি তার সাথে বাইরে এসে জিজ্ঞেস করল, কিরে, হারুন ভাই কি কথা বললেন?

রোকেয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল, বলব না। তুই ওঁর কথা আগে বললি না কেন?

লাকি বলল, বললে তো তুই আসতিস না। তাছাড়া ভাবিতো বলল, সে নিষেধ করেছিল। তোর মনের মানুষের সঙ্গে দেখা করলাম, আর তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস? এই জন্যেই লোকে বলে, যার জন্যে চুরি করি, সেই বলে চোর।

রোকেয়া হেসে উঠে বলল, তোকে আর দোষ দেব না। তারপর হারুন ও সে যেসব কথা বলেছিল তা বলল।

লাকি বলল, আমার মন বলছে, হারুন ভাইয়ের সাথেই তোর বিয়ে হবে।

 তোর মন বললে তো হবে না, আল্লাহ পাকের মর্জি থাকলে হবে।

 তাতো বটেই। দোয়া করি আল্লাহ পাকের যেন মর্জি হয়।

রোকেয়া হেসে উঠে বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আমার চেয়ে তুই বিয়ে করার জন্য লালায়িত হয়ে পড়েছিস।

এ কথা কেন তোর মনে হল?

আমার বিয়ের জন্য তোর আগ্রহ দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিয়ের পর আমার দেবরের জন্য তোকেও যেন তাড়াতাড়ি নিয়ে যাই।

লাকি হেসে উঠে বলল, তা তুই বলতে পারিস। তবে আমি সে কথা ভেবে বলিনি। হারুন ভাই তোকে ভালবাসেন। আর তুইও তাকে পছন্দ করিস। তাই তোদেরকে সুখী দেখার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছি।

রোকেয়া আর কিছু না বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *