সীমার নাই? আমার চির-হিতৈষী সীমার নাই? মহাবীর সীমার ইহজগতে নাই? হায়! যে বীরের পদভরে কার্বালা-প্রান্তর কাঁপিয়াছে, যাহার অস্ত্রের তেজে রক্তের স্রোত বহিয়াছে, হোসেন-শির দামেস্কে আসিয়াছে, সেই বীর নাই? কে তাহার প্রাণ হরণ করিল? হায়! নিমক-হারাম সৈন্যগণ ষড়যন্ত্র করিয়া সীমারকে বাঁধিয়া দিল, তাহাতেই এই ঘটিল। কাসেদ্! বল, কে সীমারকে বধ করিল?”
কাসেদ্ যোড়করে বলিতে লাগিল, “বাদশা নামদার! মহাবীর সীমারকে একজনে মারে নাই। পঞ্চদশ রথী মিলিয়া বাণাঘাতে সীমারকে মারিয়া ফেলিয়াছে।”
“সীমারের হস্তে অস্ত্র ছিল না?”
“তাহার হস্তপদ লৌহদণ্ডে বাঁধা ছিল। ঐ বন্ধন দশায় তীরের আঘাতে শরীরের মাংস, শেষে অস্থি পর্যন্ত জর্জরিত হইয়া খসিতে লাগিল, তবু মহাবীরের প্রাণ বাহির হয় নাই? শেষে ঈশ্বরের নাম করিয়া মৃত্যু প্রার্থনা করায় মহাবীর সীমারের আত্মা ইহজগৎ হইতে অনন্তধামে চলিয়া গেল।”
এজিদ্ মহাক্রোধে বলিলেন, “সেখানে আমার সৈন্য, সৈন্যাধ্যক্ষ কেহ ছিল না?”
“বাদশা নামদার! সৈন্য বলিতে আর কেহ নাই। তবে পতাকাধারী, ভারবাহী, প্রহরী আর জন কয়েক মাত্র সৈন্য উপস্থিত ছিল।”
“আর আর সৈন্য?”
“আর আর সৈন্য প্রায়ই হানিফার অস্ত্রে মারা গিয়াছে। যাহারা জীবিত ছিল, তাহারা প্রাণভয়ে কে কোথায় পলাইয়াছে, তাহার সন্ধান নাই।”
“অলীদ?”
“সৈন্যাধ্যক্ষ মহামতি জীবিত আছেন,-কিন্তু-”
“কিন্তু কি?”
“বাদশা নামদার! সকলই পত্রে লেখা আছে।”
(মহাক্রোধে) “পত্র শেষে শুনিব। ওত্বে অলীদ উপস্থিত থাকিতে সীমার-উদ্ধার হইল না? সে কি কথা!”
“তিনি উপস্থিত ছিলেন, এখনও জীবিতই আছেন, কিন্তু মরিয়া বাঁচিয়াছেন।”
“হানিফা মদিনায় যাইতে সাহসী হইয়াছে?”
“বাদশা নামদার! সে সকল কথা মুখে বলিতে আমার শরীর রোমাঞ্চিত হইতেছে। পত্রেই বিশেষ লেখা আছে।”
“না-আমি পত্র খুলিব না। তোমার মুখে সকল কথা শুনিব, বল।”
“বাদশা নামদার! অলীদ পরাস্ত হইয়াছেন!”
“কে পরাস্ত করিল?”
“মোহাম্মদ হানিফা।”
“কি প্রকারে?”
“অলীদ মদিনা-প্রবেশ-পথ বন্ধ করিয়াছিলেন। তাহাতে হানিফার সহিত যুদ্ধ হয়। ক্রমে কয়েকদিন যুদ্ধ-দিবারাত্র যুদ্ধ। শেষ দিন মস্হাব কাক্কা বিস্তর অশ্বারোহী সৈন্যসহ উপস্থিত হইলে দামেস্ক সৈন্য আর টিকিতে পারিল না-রক্তমাখা হইয়া দলে দলে ভূতলে গড়াইতে লাগিল। অশ্বদাপটেই বা কত জনের প্রাণ বিয়োগ হইল। বাদশা নামদার! এমন যুদ্ধ কখনো দেখি নাই। এমন বীরও কখন দেখি নাই! অস্ত্রের আঘাত-অশ্বের পদাঘাত সমান চলিল! দেখিতে দেখিতে দামেস্ক সৈন্য তৃণবৎ উড়িয়া গিয়া কোথায় পলাইল, তাহার অন্ত রহিল না। বিপক্ষেরা সেনাপতি মহাশয়ের শিবির লুটপাট করিয়া মদিনাভিমুখে জয় জয় রব করিতে করিতে চলিয়া গেল।”
“অলীদ কিছুই করিলেন না?”
“তিনি আর কি করিবেন? মস্হাব কাক্কা তাঁহার অশ্বকে লাথি মারিয়া মারিয়া ফেলিল। তাঁহাকে শূন্যে উঠাইয়া এক আছাড়েই তাঁহার প্রাণ বাহির করিবে-মস্হাব কাক্কার এইরূপ কথা; কেবল হানিফার অনুরোধে অলীদের প্রাণ রক্ষা হইয়াছে। কিন্তু মস্হাব কাক্কা ছাড়িবার পাত্র নহেন, এমনি সজোরে অলীদ মহামতিকে ফেলিয়া দিয়াছিলেন যে, অনেকক্ষণ পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় পড়িয়া থাকিয়া শেষে উঠিতে উঠিতে, পড়িতে পড়িতে পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছেন।”
“মস্হাব কাক্কা কে?”
“তিনিই তো মহারথী সীমারকে ধরিয়া লইয়া-”
“তাহা তো শুনিয়াছি, অলীদ বাঁচিয়া গিয়াও কিছু করিলেন না?”
“মহারাজ! পলায়িত, পরাজিত, আতঙ্কিত, নিদ্রাবশে কাক্কারূপে চকিত, চমকিত। তিনি কি আর তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারেন?”
“মারওয়ান বোধ হয় অলীদের সাহায্য করিতে পারে নাই?”
“তিনি আর কি সাহায্য করিবেন? বাদশা নামদার! মোহাম্মদ হানিফা সর্বস্বান্ত করিয়া মদিনায় প্রবেশ করিলে, এদিকে অলীদ মহামতি দামেস্কাভিমুখে যাত্রা করিলেন, ওদিকে মন্ত্রীমহোদয়ও দামেস্ক হইতে মদিনাভিমুখে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে উভয়ের দেখা। এইক্ষণ তাঁহারা সেই সংযোগস্থানে শিবির নির্মাণ করিয়া বিশ্রামে আছেন। আমি সেই সংযোগ স্থান হইতে মন্ত্রীপ্রবরের পত্র লইয়া আসিয়াছি। তাঁহারা গোপনানুসন্ধানে জানিতে পারিয়াছেন যে, মোহাম্মদ হানিফা শীঘ্রই দামেস্ক নগর আক্রমণ করিবেন।”
এজিদ্ রোষে অধীর হইয়া বলিল, “তাঁহারা শুনিতে পারেন, তাঁহারা হারিতে পারেন, তাঁহারা হানিফার নামে কাঁপিতে পারেন, তাঁহারা বিশ্রামও করিতে পারেন। কিন্তু দামেস্ক নগরে মানুষের আক্রমণ করিবার সাধ্য আছে? এই নগরে শত্রু-প্রবেশের কি ক্ষমতা আছে? এই দুর্ভেদ্য প্রাচীন, পঞ্চবিংশতি লৌহদ্বার, ষষ্টি সেতু, অশীতি পরিখা, পঞ্চ সহস্র গুপ্তকূপ, এজিদ্ জীবিত, ইহাতে হানিফা দূরের কথা, হানিফার পিতা আলী, গোর হইতে উঠিয়া আসিলেও এ নগরে প্রবেশ করিতে পারিবেন না। যাও কাসেদ্, এখনই যাও, মারওয়ানকে গিয়া বল যে, আমি স্বয়ং যুদ্ধে যাইতেছি। দেখি, মদিনা আক্রমণ করিতে পারি কি না? দেখি, মদিনার সিংহাসনে বসিতে পারি কি না? দেখি, আমার হস্তে হানিফা বন্দি হয় কি না? দেখি, এই তরবারিতে মস্হাব কাক্কার শির ধরায় গড়াগড়ি যায় কি না? যাও, তোমার পত্র তুমি ফিরাইয়া লইয়া যাও,-যাহা বলিবার বলিলাম-মুখে বলিও।”
এজিদ্ ক্রোধে অধীর হইয়া মারওয়ানের পত্র দূরে নিক্ষেপ করিলেন। কাসেদ্ পত্র লইয়া ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে চলিয়া গেল।
এজিদ্ বিশ্রাম-গৃহ হইতে বহির্গত হইয়া আদেশ করিল, “যত সৈন্য এক্ষণে নগরে উপস্থিত আছে, সমুদয় প্রস্তুত হও-সামান্য প্রহরী মাত্র রাজপুরী রক্ষা করিবে, সৈন্য নামে নগর মধ্যে কেহ থাকিতে পারিবে না, সকলকে আমার সহিত মদিনা আক্রমণে যাইতে হইবে।-হানিফার বধসাধনে যাইতে হইবে,-মস্হাব কাক্কার মস্তক চূর্ণ করিতে যাইতে হইবে,-সীমারের দাদ উদ্ধার করিতে যাইতে হইবে। বাজাও ডঙ্কা, বাজাও ভেরী, আন অশ্ব, আন উষ্ট্র, এখনি যাত্রা করিব।”
অমাত্যগণ যাঁহারা তথায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁহারা যুদ্ধে বিরত হইতে অনেক কথা বলিলেন। কিন্তু কাহারো কথাই এজিদের নিকট স্থান পাইল না,-কর্ণে ভাল লাগিল না। পরিশেষে বৃদ্ধ হামান বলিতে লাগিলেন,-এতদিন পরে বৃদ্ধ সচিব নিতান্ত বাধ্য হইয়া স্থিরভাবে বলিতে লাগিলেন-
“মহারাজ! আমি বৃদ্ধ হইয়াছি, বয়স-দোষে আমার বুদ্ধিভ্রম জন্মিয়াছে, বিবেচনার দোষ ঘটিয়াছে, দূর চিন্তাতেও অপরাগ হইয়াছি। ইহা আমি স্বীকার করি। কিন্তু মহারাজ! এই বৃদ্ধ আপনার পিতার চিরহিতৈষী, আপনার হিতৈষী, দামেস্ক রাজ্যের হিতৈষী। এই দামেস্ক রাজ্য পূর্বে যাঁহার করতলগত ছিল, ন্যায়ের অনুরোধে উচিত বলিতে এই বৃদ্ধ কখনই তাঁহার নিকট সঙ্কুচিত হয় না। তাহার পর আপনার পিতার রাজত্বকালেও এই বৃদ্ধ সর্বপ্রধান মন্ত্রীর আসন প্রাপ্ত হইয়া ন্যায্য কথা বলিতে কখনোই ত্রুটি করে নাই-ভীত হয় নাই। মহারাজের রাজত্ব সময়েও কর্তব্য কার্যে পশ্চাদ্পদ হয় নাই। কিন্তু মহারাজ! সেকাল আর একাল অনেক ভিন্ন। পূর্বে মন্ত্রণার বিচার হইত, তর্কে মীমাংসা হইত,-ভ্রম কাহার না আছে? ভূপতির ভ্রম হইলে তিনি ভ্রম স্বীকার করিতেন। অমাত্যগণের ভ্রম হইলে তাঁহারাও ভ্রম স্বীকার করিতেন। এখন সে কাল নাই, সে মন্ত্রণাও নাই, সে মীমাংসাও নাই। ন্যায্য হউক, অন্যায্য হউক, ন্যায় হউক, অন্যায় হউক স্ব স্ব মত প্রবল করিতে সকলেই ব্যস্ত, সকলেই চেষ্টিত। বিশেষ অপরিপক্ক মস্তিষ্কের নিকট আমরা এক প্রকার বাতুল বলিয়াই সাব্যস্ত হইয়াছি। মহারাজ! মনে হয়, হাসানের বিষপানের পর এই নির্বোধ বৃদ্ধ কি বলিয়াছিল? সেই প্রকাশ্য দরবারে কি বলিয়াছিল? নবীন বয়সে, নূতন সিংহাসনে বসিয়া কৃষ্ণকেশ বিকৃত অপরিপক্ক মস্তিষ্কের মন্ত্রণাতেই মত দিলেন। সেই অদূরদর্শী, ভাবি-জ্ঞান-শূন্য মজ্জারই বেশি আদর করিলেন। মনের বিরাগে সারগর্ভ উপদেশ বিবেচনা না করিয়া সে সম্পূর্ণ ভ্রমময় অসার বাক্যেরই পোষকতা করিলেন। এ পাগল তুচ্ছ হইল। বালকেই বালকের বুদ্ধির প্রশংসা করে, যুবাই যুবার নিকট আদর পায়। আমি বয়সে মহা প্রাচীন হইলেও আপনি রাজা, মাথার মণি। এই যুদ্ধ সম্বন্ধে সেই এক দিন আমার মত প্রকাশ করিয়াছি, আর আজ রাজ্যের দুরবস্থা, ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা দেখিয়া বলিতে বাধ্য হইয়াছি। মহারাজ! বৃদ্ধ মন্ত্রীর অপরাধ মার্জনা হউক। একবার ভাবিয়া দেখুন দেখি, যে কারণে যুদ্ধ, যে কারণে দামেস্ক রাজ্যের এই শোচনীয় দশা, সে কারণের পরীক্ষা তো অগ্রেই হইয়াছিল? যে আমার নয়, আমি তাহার কেন হইব,-এ কথা সকলের বুঝা উচিত। এক জিনিসের দুইটি গ্রাহক হইলে, পরস্পর শত্রুভাব হিংসা ভাব স্বভাবতঃই যে উপস্থিত হয়, ইহা আমি অস্বীকার করি না। তবে যাহার হৃদয় আছে, মনুষ্যত্ব আছে, সে সেদিকে ভ্রমেও লক্ষ্য করে না, তাহাও জানি। যাহার অসহ্য হয়, যে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হইয়া যাহা ইচ্ছা তাহাই করিয়া বসে-করিতেও পারে। কারণ, যৌবনকাল বড়ই ভীষণ কাল। সে কালের অনেক দোষ মার্জনীয়। তবে যে হৃদয়ে শক্তি আছে, যে হৃদয়ে শক্তি আছে, যে মনে বল আছে, তাহার কথা স্বতন্ত্র। শত্রুপরিবারে শত্রুতা কি? তাহার সন্তান সন্ততি পরিজনে হিংসা কি! মহারাজ! হোসেনের শির দামেস্কে কেন আসিল? হোসেন পরিবার দামেস্ক-কারাগারে বন্দি কেন? ইহার কি কোন উত্তর আছে? বিধির ঘটনা, অদৃষ্টের লেখা খণ্ডাইতে কাহারো সাধ্য নাই। মহারাজ! এখনও উপায় আছে, রক্ষার পন্থা আছে। আপনি ক্ষান্ত হউন। রাজ্যবিস্তারে আমার অমত নাই, কিন্তু তাহার জন্য সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করুন। এখন চতুর্দিকে যে আগুন জ্বলিয়াছে, আপনি তাহা সহজে নির্বাণ করিতে পারিবেন না। প্রকৃতি ন্যায়ের সহায়, অন্যায়ের বৈরী। মন্ত্রীবর মারওয়ান এখন নিজ ভ্রম স্বীকার করিয়া দামেস্ক রাজ্য রক্ষাহেতু জয়নাল আবেদীনকে কারামুক্ত করিতে মন্ত্রণা দিতেছেন। সে সম্বন্ধে মহারাজ যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করিবেন আমি তাহার সদুত্তর করিব। তবে সামান্য একটু বলিয়া রাখি যে, হানিফার যে জ্বলন্ত রোষাগ্মি সহজে নির্বাণ হইবার নহে। আপনি যে আজ স্বয়ং যুদ্ধে অগ্রসর হইতেছেন, সেই সম্বন্ধে আমার কয়েকটি কথা আছে। -প্রথম আপনি কোথায় যুদ্ধে যাইতেছেন? যদি বলেন মদিনা-আমি বলিতেছি, মদিনায় যাইবার আর ক্ষমতা নাই। সীমার হত, অলীদ পরাস্ত, মারওয়ান ভয়ে কম্পিত; এ অবস্থায় মদিনা আক্রমণ করা দূরে থাকুক-মদিনার প্রান্তরসীমাতেও প্রবেশ করিতে পারিবেন না। ধন-বল আর বাহুবলই রাজার বল, ক্রমাগত যুদ্ধে ধনভাণ্ডার প্রায় শূন্য হইল; আর বাহুবল এখন নাই বলিলেই হয়। সীমারের সহিত সীমারের সৈন্যও গিয়াছে,-ওত্বে অলীদ সৈন্য সামন্ত হারাইয়া প্রাণে বাঁচিয়া আছে মাত্র। এখন একমাত্র সম্পূর্ণরূপে জীবিত মারওয়ান। রাজ্যরক্ষার জন্যও সৈন্যের প্রয়োজন। আজ যে আদেশ প্রচার হইয়াছে, তাহাতে রাজ্যরক্ষার আর কোন উপায় দেখিতেছি না। কারণ শত্রুর নানা পথ, শত্রুর সন্ধান অব্যর্থ। মহারাজ এদিকে যুদ্ধযাত্রা করিবেন, অন্য পথে যদি শত্রু আসিয়া নগর আক্রমণ করে, তখন কে রক্ষা করিবে? সে অস্ত্র-সম্মুখে বক্ষ পাতিয়া কে দণ্ডায়মান হইবে? আমি মহারাজের গমনে বাধা দিতেছি না। আপনারই রাজ্য, আপনারাই সিংহাসন, আপনিই রক্ষা করিবেন। আমার যাহা বলিবার বলিলাম-গ্রাহ্য করা না করা মহারাজের ইচ্ছা।”
এজিদ্ মন্ত্রীবর হামানের কথা মনঃসংযোগে শুনিল, কিন্তু তাহার চিরহিংসাপূর্ণ হৃদয়কে স্ববশে আনিতে পারিল না। দুর্নিবার ক্রোধ দ্বাদশ প্রকার হিংসার জীবনমূর্তি ধারণ করিয়া তাহার হৃদয় অধিকার করিয়া বসিল। লোহিত লোচনে ক্রোধযুক্ত স্বরে বলিল, “তুমি মাবিয়ার মন্ত্রী-আমার সহিত তোমার কোন মতেরই ঐক্য নাই-হইবেও না,-হইতে পারেও না। তুমি অনেক সময় আমাকে মনঃকষ্ট দিয়াছ। আমি তোমার মুখ দেখিতে ইচ্ছা করি না। তুমি দূর হও-আমার সম্মুখ হইতে দূর হও। কে আছ, এই বৃদ্ধ পাগলটাকে রাজপুরী হইতে বাহির করিয়া কারাগারে আবদ্ধ কর। যাহার কোন জ্ঞান নাই, তাহার উপযুক্ত স্থান মশান বা শ্মশান। যাও বুদ্ধিমান, যাও তোমার পরিপক্ক মস্তক লইয়া জীবনের অবশিষ্ট অংশ কারাগারে বাস কর। রাজ-প্রাসাদে তোমার আর স্থান নাই।”
আজ্ঞামাত্র প্রহরিগণ বৃদ্ধ সচিবকে লইয়া চলিল। মন্ত্রীবর যাইবার সময়ও বলিলেন, “মহারাজ! রাজ আজ্ঞা শিরোধার্য। আমি এখনও বলিতেছি, আপনি স্বয়ং যুদ্ধে যাইবেন না, মারওয়ানের সংবাদ না লইয়া কখনো নগর পরিত্যাগ করিবেন না।”
এজিদ্ মহাক্রোধে বলিল, “আমি এখনই যুদ্ধে যাইব। কোথায়?-ওমর কোথায়? হাসেম কোথায়?”
শশব্যস্তে সৈন্যাধ্যক্ষগণ উপস্থিত হইল। পুনরায় এজিদ্ বলিল, “মদিনা আক্রমণে, হানিফার বধ-সাধনে, আমার সহিত এখনই সসৈন্যে যাত্রা করিতে হইবে। প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ পদে আজ ওমর বরিত হইলেন; যাও-প্রস্তুত হও, যত সৈন্য নগরে আছে, তাহাদিগকে লইয়া প্রস্তুত হও।”