আম কুড়োতে সাবধান
ফুটবলম্যাচ দেখতে যাব বলে সেজেগুজে তৈরি হচ্ছিলুম। হঠাৎ কোত্থেকে এসে বাধা দিল প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝিলিক আর মেঘের গর্জন অবস্থাটা আরও সাংঘাতিক করে ফেলল। মনমরা হয়ে বসে রইলুম।
সন্ধ্যার দিকে ঝড়বৃষ্টির দাপট যখন কমে গেল, তখন দেখলুম ছোটমামা কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরছেন। একটু পরে পোশাক বদলে একটা লণ্ঠন জ্বেলে ছোটমামা ঘরে ঢুকলেন। আমাকে দেখে বললেন,–এ কী রে পুঁটু? তুই অন্ধকারে ভূতের মতো বসে আছিস যে?
বললুম, ধুস! ফুটবলম্যাচ পণ্ড হয়ে গেল।
ছোটমামা টেবিলে লণ্ঠন রেখে বললেন,-তাতে কী হয়েছে? যে আমার ঝাঁপুইতলা বনাম কঁকুড়হাটির খেলা! ও খেলা কি দেখার যোগ্য?
বলে উনি ফিক করে হসলেন। চাপাস্বরে ফের বললেন,–চল। বেরিয়ে পড়ি।
একটু অবাক হয়ে বললুম,–কোথায়?
ছোটমামা আরও চাপাস্বরে বললেন,–ফেরার সময় শর্টকাটে সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের পাশ দিয়ে এলুম। বললে বিশ্বাস করবিনে পুঁটু, ঝড়বৃষ্টির চোটে বাগানের সব আম পড়ে গেছে। এই জষ্টিমাসের আম। বুঝলি তো? সবই গাছপাকা।
–অন্ধকারে কী করে দেখতে পেলেন ছোটমামা?
তুই একটা বোকর বোকা!–ছোটমামা একটু চটে গেলেন।–বিদ্যুতের ছটায় দেখলুম না? সারা বাগানের তলায় পাকা আম ছড়িয়ে আছে। চল। কুড়িয়ে আনি।
–কিন্তু ছোটমামা, বাগানে ভোলা আছে যে! ভোলা সাংঘাতিক লোক। ভোঁদা বলছিল, সিঙ্গিমশাই ভোলাকে নাকি তাঁর বন্দুকটা দিয়েছেন। দেখতে পেলেই
আমার কথায় বাধা দিয়ে ছোটমামা বললেন,–ভোঁদা তোর চেয়েও বোকা। সিঙ্গিমশাই বন্দুক দেবেন ভোলাকে ভোলা বন্দুক ছুঁড়তে জানে? তা ছাড়া বন্দুকটা বাড়িতে না থাকলে সিঙ্গিমশাইয়ের বাড়িতে ডাকাত পড়বেই পড়বে, তুই জানিস? ওঠ। দেরি করা ঠিক নয়।
দোনামনা করে বললুম,–বন্দুক না পেলেও ভোলা খুব সাংঘাতিক লোক ছোটমামা! ওর গোঁফ আর চোখদুটো দেখলেই ভয় করে।
ছোটমামা আমার কথায় কান দিলেন না। কোত্থেকে একটা চটের থলে আর টর্চ নিয়ে এলেন। বললেন,-ভোলা এতক্ষণ খেতে গেছে। চলে আয়। আর শোন। জুতো খুলে ফ্যাল। খালি পায়ে যাব।
সিঙ্গিমশাইয়ের আমবাগানটা গ্রামের শেষে মাঠের ধারে। বাগানের মধ্যিখানে একটা মাচার ওপর ছোট্ট ছাউনি আছে। ভোলা সেখানে বসে বাগান পাহারা দেয়। সে দারুণ ধূর্ত লোক। বাগানের আনাচে-কানাচে কেউ পা বাড়ালে কী করে সে টের পেয়ে যায় কে জানে! টের পেলেই এমন হক ছাড়ে যে পিলে চমকে যায়। গতমাসে কচি আম কুড়ানোর জন্য ভোঁদার সঙ্গে গিয়ে কী বিপদেই না পড়েছিলুম!
আমি তো দিশেহারা হয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলুম। ওদিকে ভোঁদা ওর হাতে ধরা পড়ে সে এক কেলেঙ্কারি! ভোঁদাকে শাস্তিটা অবশ্যি দিয়েছিলেন ভোঁদার বাবা হাবুলবাবু! পাড়াসুদ্ধ লোকের সামনে কান ধরে ওঠবোস করানোর শাস্তি-ঘ্যা-ছা! ভেঁদা কিছুদিন বাড়ি থেকে লজ্জায় বেরুতে পারেনি। স্কুলে যাওয়া তো দূরের কথা।
সেই কথা ভেবে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু ছোটমামার অবাধ্য হওয়ার সাহসও আমার নেই। তাছাড়া ছোটমামা না থাকলে কে আমাকে শহরে কিংবা গঞ্জের মেলায় নিয়ে যাবে? পৃথিবীতে সবসময় কোথাওনা-কোথাও কত সুন্দর সব ঘটনা ঘটছে। ছোটমামা না নিয়ে গেলে আমি একা সেসব দেখতেই যে পাব না।
সন্ধ্যার অন্ধকার আজ বেজায় গাঢ়। আকাশের কোণায় দূরে মাঝে-মাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক। চারদিকে ব্যাঙ, পোকামাকড় তুলকালাম গান জুড়ে দিয়েছে। সিঙ্গিমশাইয়ের আমবাগানের দিকে যত এগোচ্ছি, তত অস্বস্তিটা বেড়ে যাচ্ছে। ছোটমামা পায়ের কাছে সাবধানে টর্চের আলো ফেলে হাঁটছেন। তাঁর পেছনে থলে হাতে আমি হাঁটছি। কতক্ষণ পরে ছোটমামা থমকে দাঁড়িয়ে চাপাস্বরে বললেন, ভোলার কুঁড়েঘরটাতে লণ্ঠন জ্বলছে বটে, তবে বাজি রেখে বলতে পারি, ব্যাটাচ্ছেলে নেই।
–কী করে বুঝলেন ছোটমামা?
–দিঘির পাড়ে টর্চের আলো দেখলুম না? ভোলা ওখান দিয়েই তো খেতে যায়।
–ভোলার টর্চ আছে বুঝি?
–থাকবে না? তুই বড্ড বোকা পুঁটু! রাতবিরেতে টর্চ ছাড়া কেউ বাগানে পাহারা দিতে পারে? তবে আর কথা নয়। আয়, তোকে বাগানের শেষ দিকটাতে একখানে বসিয়ে রাখব আর আমি আম কুড়িয়ে আনব। চুপচাপ বসে থাকবি কিন্তু!
ছোটমামা কথাটা বলতে গিয়ে পারলুম না। ভোঁদা বলেছিল, ওই বাগানের কোন গাছে কবে কে নাকি গলায় দড়ি দিয়ে মরেছিল। আর ভূতটা এখনও আছে। তবে সে ভোলার ভয়ে বেরুতে পারে না। ভোলা বাগানে না থাকলে তবেই সে বেরিয়ে এসে লোকেদের ভয় দেখায়।
তো ছোটমামা ধমক দিলেন চাপাগলায়। চুপ! খালি ছোটমামা আর ছোটমামা! –বলে এবার আমাকে প্রায় টানতে-টানতে নিয়ে চললেন। জলকাদা জমে আছে ঘাসের ফাঁকে। পা পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। প্রতিবারই ধমক খাচ্ছি। টর্চের আলোর দিকে চোখ রেখে হাঁটতে হচ্ছে।
ঠিক কথা। আসলে আমি সেই ভূতটার কথা ভেবে এদিকে-ওদিকে তাকাচ্ছিলুম। ভোলা যে এখন বাগানে নেই। কিছুক্ষণ পরে ছোটমামা আমাকে জায়গায় দাঁড় করিয়ে বললেন,–তুই এইখানে বসে থাক। আমি গাছপাকা আম ছাড়া কুড়োব না। ওই দ্যাখ, কত পাকা আম।
টর্চের আলোয় হলদে কয়েকটা আম দেখতে পেয়েই আমি ভূতের ভয়টা ভুলে গেলুম। এইসব আম নাকি সেরা জাতের আম। একটুও আঁশ নেই। একেবারে ক্ষীরের সন্দেশের মতো নাকি স্বাদ।
থলে নিয়ে ভিজে ঘাসে বসে থাকা যায় না। তাই উঠে দাঁড়ালুম। ছোটমামা এদিক-ওদিক টর্চের আলা ফেলে পাকা আম কুড়িয়ে আনছেন। মিঠে গন্ধে আমার মুখে জল আসছে। কিন্তু এখন কি আম খাওয়ার সময়?
থলে প্রায় অর্ধেক ভরে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। ছোটমামা বললেন,–এবার আমি যাচ্ছি বাতাসাভোগ গাছটার কাছে। খাসা আম! বুঝলি পুটু? তুই চুপচাপ বসে থাক। তবে কান খাড়া রাখবি কিন্তু! ভোলা বাগানে আসার সময় গান গাইতে গাইতে। আসে। শুনতে পেলেই তুই ডাকবি।
ছোটমামা টর্চের আলো ফেলতে-ফেলতে আমগাছের অজস্র গুঁড়ির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কোনও গাছের মাথায় একটা পাখি ডানার জল ঝাড়ল। সেই শব্দেই আমার বুক ধড়াস করে উঠেছিল। কিন্তু সুস্বাদু আমের মিঠে গন্ধ আমার ভয়টয় ক্রমশ তাড়িয়ে দিচ্ছিল।
কতক্ষণ পরে ধুপধুপ শব্দে ছোটমামা এসে গেলেন। নাহ। গাছটা খুঁজে পেলুম না। ওদিকে দিঘির পাড়ে টর্চের আলো দেখলুম, ভোলা আসছে।
–ছোটমামা! বড্ড অন্ধকার যে!
–হুঁ, টর্চ জ্বালি আর ভোলা দেখতে পাক! খালি বোকার মতো কথাবার্তা। থলেটা আমায় দে। আর আমার এই হাতটা ধরে থাক। ছাড়বিনে বলে দিচ্ছি।
ছোটমামা আমভর্তি থলেটা নিলেন, কিন্তু ওঁর একটা হাত ধরেই ছেড়ে দিলুম। উঃ! কী সাংঘাতিক ঠান্ডাহিম হাত!
ছোটমামা বললেন, কী হল? হাত ছাড়লি কেন?
–আপনার হাত যে বিচ্ছিরি ঠান্ডা!
–ধুর বোকা! জলকাদা ঘেঁটে আম কুড়িয়েছি, হাত ঠান্ডা হবে না? চলে আয় শিগগির!
এই সময় সত্যিই ভোলার হেঁডেগলার গান শুনতে পেলুম। ছোটমামার বরফের মতো ঠান্ডা হাতটা অগত্যা চেপে ধরে থাকতে হল। ছোটমামা এবার প্রায় হন্তদন্ত হয়ে দৌড়চ্ছেন। আমিও দৌডুচ্ছি।
কতক্ষণ দৌড়েছি জানি না। আমি এবার হাঁপিয়ে পড়েছিলুম। কাঁদো কাঁদো গলায় বললুম,–ছোটমামা। আমার পা ব্যথা করছে যে!
ছোটমামার মনে দয়া হল, বললেন, হুঁ। অনেকটা ঘুরপথে আসতে হল। কিন্তু কী আর করা যাবে? এবার আস্তেসুস্থে যাওয়া যাক।
অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এখানে-ওখানে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি জ্বলছে। কাছে কোথায় আচমকা শেয়াল ডাকতে থাকল। একটু ভয় পেয়ে বললাম, আমরা কোথায় এসে পড়েছি ছোটমামা?
–নদীর ধারে। ঝুঝলি না? ভোলার চোখ রাতবিরেতেও দেখতে পায় তাই পুরো গ্রামটার পাশ দিয়ে ঘুরতে হল। বলে ছোটমামা অদ্ভুত শব্দে হাসলেন। –তা পুঁটু! এবার একটা আম টেস্ট করে দেখি। কী বলিস? সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের আমের এত নামডাক। দেখি, সত্যি কি না।
ছোটমামা সেখানেই বসে পড়লেন। তারপর তেমনি অদ্ভুত শব্দে আম খেতে শুরু করলেন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি, এবার আমাকেও একটা আম খেতে দেবেন ছোটমামা। কিন্তু উনি যেন আমার কথা ভুলেই গেছেন। ক্রমাগত আম খাচ্ছেন আর আঁটিগুলো ছুঁড়ে ফেলছেন। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ওগুলো জলেই পড়ছে।
কিছুক্ষণ পরে না বলে পারলুম না, কেমন আম ছোটমামা?
জিভে একটা শব্দ করে ছোটমামা বললেন,-ফাস্টো কেলাস! তুই খেলে টের পেতিস পুঁটু! কিন্তু কী আর করা যাবে? সবগুলোই যে আমি কেঁকের বশে খেয়ে ফেললুম!
প্রায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠার মতো বললুম, স-ব?
–হ্যাঁ। তোর কথা মনেই ছিল না। বরং তার বদলে তোকে একটু আদর করি। বলে ছোটমামা আমার মাথায় তারপর মুখে হাত বুলোতে থাকলেন। কী অসহ্য ঠান্ডা হাত! আমি চেঁচিয়ে উঠলুম,–আর না ছোটমামা! বড় ঠান্ডা লাগছে যে!
–আমের গন্ধ কেমন মিঠে টের পাচ্ছিস বল পুঁটু! এই নে। আমার হাত শোক।
ছোটমামার আঙুল আমার নাকে ঢুকতেই আঙুলটা চেপে ধরলুম। তারপরই টের পেলুম আঙুলটা বেজায় শক্তও বটে। আঙুল না হাড়ঃ রাগে-দুঃখে কেঁদে ফেললুম। ছোটমামা আদুরে গলায় বললেন, কাঁদে না ছোঁড়া? কাল তোমায় আম খাওয়াব। এবার আমি নদীর জলে হাত ধুয়ে আসি।
ছোটমামা যে এমন অদ্ভুত কাণ্ড করবেন, কল্পনাও করিনি। উনি উঠে গেলেন হাত ধুতে, গেলেন তো গেলেনই। আর ফেরার নাম নেই। জলের ওপর এতক্ষণে তারা ঝিলমিল করছে দেখতে পেলুম। আবার একদল শেয়াল ডেকে উঠল। তখন ভয় পেয়ে ডাকলুম,–ছোটমামা! ছোটমামা!
কিন্তু কোনও সাড়া এল না। আমি এবার মরিয়া হয়ে আরও জোরে ওঁকে ডাকতে থাকলুম। কিছুক্ষণ পরে একটু দূরে টর্চের আলো ঝিলিক দিল। তারপর ছোটমামার গলা ভেসে এল, পুঁটু! পুঁটু!
সাড়া দিলুম। ছোটমামা দৌড়তে-দৌড়তে কাছে এলেন। তারপর টর্চের আলোয় খালি থলে দেখে প্রচণ্ড খাপ্পা হয়ে বললেন,–বিশ্বাসঘাতক! এইটুকু ছেলের হাড়ে হাড়ে এত বুদ্ধি! নদীর ধারে শ্মশানের কাছে আম নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তারপর হায়! হায়! সবগুলো আম একা সাবাড় করেছে!
অবাক হয়ে বললুম,–ছোটমামা! আপনিই তো—
উনি থাপ্পড় তুলে বললেন, আমিই তো মানে? মিথ্যুক কোথাকার!
-না ছোটমামা! আপনিই তো আমাকে এখানে এনে আমগুলো একা খেয়ে তারপর নদীর জলে হাত ধুতে গেলেন।
–শাট আপ! দেখি তোর মুখ খুঁকে!
আমার মুখে আমের গন্ধ পেয়ে ছোটমামা আরও তর্জন-গর্জন জুড়ে দিলেন। ওঁকে কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছিলুম না। একটু পড়ে উনি হতাশ হয়ে ভিজে ঘাসে বসে পড়লেন। বাতাসাভোগ আমগাছটা খুঁজে না পেয়ে ফিরে এসে দেখি, তুই নেই। ভাবলুম, ভোলা আসছে টের পেয়ে তুই বাড়ি চলে গেছিস। বাড়িতে তোকে পেলুম না। তারপর তোকে ডেকে ডেকে–ওঃ! পুটু রে! তুই এমন করবি ভাবতেও পারিনি।
–বিশ্বাস করুন ছোটমামা! আমি আম খাইনি। আপনিই খেয়েছেন।
–আবার মিথ্যে কথা? তোর মুখে আমের গন্ধ।
–আপনিই তো আদর করছিলেন এঁটো হাতে। কী সাংঘাতিক ঠান্ডা আপনার হাত!
আমার হাত ঠান্ডা? বাজে কথা বলবিনে!–বলে ছোটমামা ওঁর একটা হাত আমার গলায় ঠেকালেন।–বল এবার। আমার হাত ঠান্ডা না গরম?
কী আশ্চর্য! ছোটমামার হাত তত মোটেই তেমন ঠান্ডা নয়। অমনি বুকটা ধড়াস করে উঠল। তাহলে কে ছোটমামা সেজে আমাকে নদীর ধারে শ্মশানে এনেছিল? তার আঙুলটা নিরেট হাড় কেন?
আর ভাবতে পারলুম না। কঁদো কাঁদো গলায় বললুম, ছোটমামা! তাহলে সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের সেই গলায়দড়ে ভূতটা আপনি সেজে আমাকে এখানে টেনে এনেছিল।
শাট আপ! –বলে ছোটমামা উঠে দাঁড়ালেন। খালি বাজে গল্প! মিথ্যুক! লোভী! বিশ্বাসঘাতক! তোর শাস্তি পাওয়া উচিত। থাক তুই শ্মশানে পড়ে। আমি চললুম।
ছোটমামা দৌড়তে থাকলেন। আমি মরিয়া হয়ে ওঁকে অনুসরণ করলুম। ভাগ্যিস, ওঁকে টর্চ জ্বেলে দৌড়তে হচ্ছিল। তাই ওঁর নাগাল পেতে অসুবিধা হচ্ছিল না…
যাই হোক, বাড়ি ফিরে দুজনেই ঘটনাটা চেপে গিয়েছিলুম। ছোটমামা বলে দিলে মা ওঁকে খুব বকাবকি করতেন। আমি বললে শুধু মা নন, বাবাও আমাকে মিথ্যকের চূড়ামণি বা আর পেটুক সাব্যস্ত করে একটা জব্বর শাস্তি দিতেন।
ছোটমামার রাগ পড়তে তিন দিন লেগেছিল। তবে আমার কথা উনি কিছুতেই বিশ্বাস করেননি। আমার মনে এই দুঃখটা আজও থেকে গেছে। তবে ঠকে শিখেছি, আম কুড়োতে গেলে সাবধান থাকাই উচিত। আর হ্যাঁ, ভোঁদাকে ঘটনাটা চুপিচুপি বলতেই সে আমায় চিমটি কেটে বলেছিল,–তুই সত্যি বড় বোকা পুঁটু। গলায়দড়ে ব্যাটাচ্ছেলে যখন আম সাবাড় করছিল, তুই রাম বললেই পারতিস! রাম নামে সব ভূত জব্দ। আমের বদলে রাম। মনে রাখিস।