অপহরণ-১.৬

ছয়

ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ভয় পেলেন পামেলা কনওয়ে। আচমকা জ্বর এলে যেমন কাঁপুনি ধরে, সেরকম বার কয়েক শিউরে শিউরে উঠলেন

রঙের কৌটায় তুলি ডুবিয়ে আবার মন দিলেন ছবি আঁকায়। মেয়ে টিউলিপের ছবি আঁকছেন তিনি, কিন্তু কোনভাবেই পরিচিত হাসিটুকু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না। আরেকবার নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, আসলে কোনদিনই আমি পোর্ট্রেট পেইণ্টার হতে পারব না। ল্যাণ্ডস্কেপ আর স্টীল লাইফ খুবই ভাল আঁকেন। নিউ ইয়র্ক গ্যালারিতে তাঁর আঁকা ছবি বিক্রিও হয়। তবে এই শেষ, পোর্ট্রেট তিনি আর আঁকবেন না। টিউলিপের ছবি অবশ্য গ্যালারিতে পাঠানো হবে না, এটা তিনি আঁকছেন স্বামীর জন্যে, হোয়াইট হাউসের স্টাডিরুমের দেয়ালে টাঙানো হবে।

ক্যানভাসে তুলি বুলাতে বুলাতে মনের ভয়টা তাড়াবার চেষ্টা করলেন পামেলা। ভাবলেন, সব মানুষেরই কোন না কোন দুর্বলতা থাকে। আমার দুর্বলতা আমার মেয়ে। ওর যদি কিছু হয়…

হঠাৎ করে তাঁর খেয়াল হলো, আরে, এখুনি দেখছি সন্ধে হয়ে এল! হাতঘড়ির ওপর চোখ বুলালেন, পাঁচটা বেজে গেছে। স্মক খুলে স্টুডিও থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। বেডরূমের দিকে এগোলেন।

একঘণ্টা পর আবার বেরুলেন, গরম পানিতে শাওয়ার সেরে স্টেট ডিনারের জন্যে ড্রেস পরে নিয়েছেন। কুণ্ডুলী পাকানো ছোট ছোট চুলের গোছা ফ্রেমের মত ঘিরে রেখেছে মুখটাকে। খয়েরি চোখে বুদ্ধির ঝিলিক, হাঁটার ভঙ্গিতে সতেজ ভাব, নিটোল চোয়ালে দু’চারটে তিল। ফার্স্ট লেডির নাকটা খুব খাড়া, মখমলের মত গায়ের চামড়া। হাসলে, হাসিটা শুধু ঠোঁটেই থেমে থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে সারা মুখে, চোখে; এমনকি দেহ-ভঙ্গিতেও একটা পরিবর্তন ঘটে যায়—পুলকস্পর্শে অধীর নর্তকীর মত। সন্দেহ নেই, সুখী একজন মহিলা।

হোয়াইট হাউসে দিনগুলো তাঁর সুন্দর কাটছে। স্বামীকে নিয়ে তিনি গর্বিত। বুকের ধন পরমাসুন্দরী কন্যা টিউলিপকে পেয়ে তাঁর আশা পূরণ হয়েছে। ছবি আঁকা তাঁর নেশা, হোয়াইট হাউসে আসার পর নেশাটা তাঁকে ত্যাগ করতে হয়নি। লোকে যে যাই বলুক, তিনি ভাল আছেন, এভাবে বেঁচে থাকতে পারলে তাঁর আর কিছু চাওয়ার নেই।

গুরুত্ব না দিলেও, লোকে কে কি বলে সবই তাঁর কানে আসে। ফার্স্ট লেডি নাকি মিশুক নন, তাঁকে ঠিক সামাজিক বলা চলে না। হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি নাকি উদাসীন।

মিথ্যে নয়, অভিযোগগুলো স্বীকার করেন পামেলা। চুটিয়ে গন্ধ করা বা আড্ডা জমানো তাঁর স্বভাব নয়। গন্ধ বা আড্ডা, সাধারণত দুটোরই লক্ষ্য পরনিন্দা। তাঁর দ্বারা ওটা হয় না। নিজের কাজকে তিনি ভালবাসেন, অবসর সময়ে ছবি আঁকা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান।

আর ঘণ্টাখানেক পর সরকারি অতিথিরা আসতে শুরু করবেন, হোয়াইট হাউসের স্টেট রূমগুলোয় ভিড় জমে উঠবে। তার আগে টেবিল সাজাতে হবে, নতুন করে ফুল আর মোমবাতি সাজাতে হবে। কিন্তু এ-সব দেখার জন্যে বেতনভুক কর্মচারী আছে, ফার্স্ট লেডির চেয়ে তারাই এসব কাজে বেশি অভিজ্ঞ তাঁর মাথা না ঘামালেও চলে।

ডিনার টেবিলে কে কোথায় বসবে, অনেক সময় তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। জটিলতা দূর করার জন্যে সোশিয়াল সেক্রেটারি আছে, তাঁর নাক না গলালেও চলে। ক্যালিগ্রাফার আছে, প্রয়োজন মত নতুন প্লেস-কার্ড আর প্রোগ্রাম তৈরি করবে সে। আরও আছে শেফরা, ফাইভ কোর্সের চমৎকার ডিনার তৈরি করবে তারা। কিচেনে গিয়ে কি লাভ, রান্না-বান্না সম্পর্কে কি ছাই বোঝেন তিনি?

মেন্যুতে আজ কি আছে তিনি জানেন না। জানার দরকারও নেই। অতিথি যারা আসবে তারা সবাই রিচার্ড কনওয়ের বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত লোকজন, তারা কে কি খেতে পছন্দ করে, বা কে কোথায় বসবে, এসব প্রেসিডেন্টের জানা উচিত। হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্টের মাথাব্যথা, ফার্স্ট লেডির নয়। হ্যাঁ, ডিনারে থাকবেন তিনি, সঙ্গ দেবেন স্বামীকে-সময়টা তিনি উপভোগও করবেন। কিন্তু গুরুত্বহীন ঝামেলা পোহাবার মত সময় তাঁর হাতে নেই।

বিশেষ করে এই মুহূর্তে নেই।

এলিভেটরকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে হলরূমে নামলেন তিনি, দ্রুত পায়ে মেয়ের ঘরের দিকে এগোলেন। এই একটা কাজে কখনও ভুল হয় না তাঁর। মেয়েকে তিনি প্রচুর সময় দেন।

ফার্স্ট লেডিকে ঘরে ঢুকতে দেখে মুখ তুলে তাকাল গভর্নেস মিসেস কেনটারকি। আন্তরিক হাসিতে উল্লাসিত হয়ে উঠল প্রৌঢ়ার চেহারা। টিউলিপকে ছবির বই দেখাচ্ছে সে। মাকে দেখে ছুটে এল টিউলিপ। নিচু হলেন পামেলা, জড়িয়ে ধরে মেয়ে তাঁকে চুমো খেলো। সিধে হয়ে মেয়ের দু’কাঁধে হাত রাখলেন তিনি, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন মুখের দিকে। তাঁরই মত চেহারা পেয়েছে টিউলিপ, প্রায় গোল মুখ। তবে চোখ দুটো তাঁর চেয়েও সুন্দর, মায়াময়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার সেই ভয়টা ফিরে এল মনে। ঈশ্বর, ওর যদি কিছু ঘটে, স্রেফ মারা যাব আমি…।

.

‘স্বামীর কাজ-কর্মে আপনার আগ্রহ আছে, মিসেস রিকার্ড?’ জিজ্ঞেস করল সিনেটর

ভদ্রতাসূচক ক্ষীণ হাসি দেখা গেল মার্গারেটের ঠোঁটে। স্টেট ডাইনিং রুমে বসে ডিনার খাচ্ছে ওরা। টেবিলের ওদিকে তাকাল সে। তার স্বামী, সি.আই.এ. চীফ, যুগোস্লাভ অ্যামব্যাসাডরের স্ত্রীকে পাশে নিয়ে বসেছেন, আরেক পাশে বসেছে বিখ্যাত একজন কলামিস্ট। ‘হ্যাঁ, অবশ্যই,’ জবাব দিল সে। তবে অফিসটা কোথায়, কত ন’রে ডায়াল করলে তাঁকে পাওয়া যাবে, ইত্যাদি সাধারণ কয়েকটা ব্যাপার ছাড়া তাঁর কাজ সম্পর্কে কিছুই আমি জানি না।’ আজ আবার তার মনে হলো, জেফকে কিন্তু মোটেও সি.আই.এ-র চীফ বলে মনে হয় না। আচ্ছা, সি.আই.এ. চীফ কেমন দেখতে হলে মানায়? গম্ভীর আর রাশভারী? খুদে, ঝড়ো কাক, রহস্যময়? উঁহুঁ, জেফ এসবের ধারেকাছেও নয়।

জেফ রিকার্ডকে দশাসই বলা চলে, চেহারার মধ্যে সদা আড়ষ্ট একটা ভাব আছে, দেখতে অনেকটা মফস্বলের আনাড়ি উকিলের মত। চোখ দুটো উজ্জ্বল, তার দিয়ে তৈরি করা বাইফোকাল চশমার ফ্রেম নাকের ডগায় নেমে থাকে। সাদামাঠা মুখ, দ্রুত হাসতে পারে, মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত বিনয়ী।

আপনমনে হাসল মার্গারেট। দেখে মনে হলেও, জেফকে ঠিক নিরীহ বলা চলে না। প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের সময় তাকে এমন সব নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিতে দেখেছে সে, মনে পড়লে এখনও তার গলা শুকিয়ে আসে। হাসিটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল চেহারা থেকে। ভাবল, জেফকে কি সত্যি আমি চিনি? এত বছর একসাথে আছি, তবু ওকে আমার প্রায়ই অপরিচিত মনে হয় কেন?

জবাব শুনে সশব্দে হেসে উঠল সিনেটর। ‘চমৎকার উত্তর। পারফেক্ট পলিটিকাল ওয়াইফ-বিশ্বস্ত থাকার একমাত্র উপায় খুব বেশি না জানা।

ডিয়ার গড!—মনে মনে আঁতকে উঠে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিল মার্গারেট। নারী-স্বাধীনতার সমর্থনে সারা দেশে যারা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে, তারাও কেন এখনও ভাবে যে রাজনীতিক স্বামীকে বাদ দিলে স্ত্রীর আলাদা কোন অস্তিত্ব থাকে না? এবং কেন, কনওয়েদের ব্যক্তিগত বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও, হোয়াইট হাউস ডিনার পার্টিতে সব সময় আজেবাজে লোকের পাশে বসতে হবে তাকে?

সিনেটরের দৃষ্টি এড়িয়ে মার্গারেট বলল, ‘আপনি সমর্থন করায় আমি সুখী হলাম।’

মার্গারেটের আরেক পাশে বসেছে আরও কম বয়েসী একজন গেস্ট, প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট। লোকটা হাসতে পর্যন্ত জানে না! পামেলা যদি এসব ব্যাপারে একটু নজর রাখত!

‘তবে একান্ত গোপনীয় কিছু কিছু কথা আপনাকে তিনি বলেন, তাই না?’ সিনেটর নাছোড়বান্দা।

এবার তার দিকে সরাসরি তাকাল মার্গারেট। ‘আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব? জেফের কাজ সম্পর্কে আপনার এত আগ্রহ কেন বলুন তো?’

সিনেটর উত্তর দিল না। তার আরেকপাশে বসা এক লোক কি যেন জিজ্ঞেস করল, সেদিকে ফিরল সে। মার্গারেটের আরেক পাশে প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট গোগ্রাসে খাচ্ছে, যেন সারা বছর অভুক্ত ছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, মনে মনে বলল মার্গারেট। এই সুযোগে সুপটুকু শান্তিতে খেতে পারবে সে।

মাত্র আটটা বাজে। ভোজন পর্ব সবে শুরু হয়েছে। আরও চারটে কোর্স বাকি। ওয়াইন আসবে দু’বার। আনুষ্ঠানিক আরও অনেক কিছু বাকি আছে। প্রেসিডেন্ট সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন। সামরিক পোশাক পরে আসবে বেহালাবাদকদের একটা দল। হেড টেবিলের দিকে তাকাল মার্গারেট, বরাবরের মত অ্যাডাম্‌স্‌ ফায়ারপ্লেসের সামনে ফেলা হয়েছে সেটা। টেবিলের ওপর, দেয়ালে ঝুলছে লিংকনের পোর্ট্রেট। যুগোশ্লাভ প্রেসিডেন্টের সাথে গন্ধ করছেন ফার্স্ট লেডি। কে জানে, ভাবল মার্গারেট, পামেলা হয়তো সার্বো-ক্রোয়্যাটিয়ান ভাষাতেই কথা বলছে। আশ্চর্য সব ব্যাপারে অদ্ভুত দক্ষতা রয়েছে ওর। ভাল ছবি আঁকে, অনেকগুলো ভাষা জানে, বাইবেলের ওপর একটা বই লিখেছে, প্রায় শেষ করে এনেছে ব্যায়ামের ওপর লেখা বইটা—আরও কত কি যে পারে পামেলা! সুন্দরীও বটে। গত দুই যুগে ওর মত আর কেউ আসেনি হোয়াইট হাউসে। আর রিচার্ড, যেমন লম্বা তেমনি স্বাস্থ্যবান, প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে কর্তৃত্ব।

স্নেহ আর দরদ উথলে উঠল মার্গারেটের মুখে। সৌন্দর্য, মর্যাদা, আর সুরুচির প্রতীক কনওয়ে পরিবার; অথচ সে অন্তত জানে, বাইরে থেকে দেখে যা মনে হয়, অতটা সরল আর শান্তিময় জীবন নয় ওদের।

মার্গারেট দেখল, ঘরের চারদিকে চোখ বুলাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড কনওয়ে। একটা টেবিলে, একজনের ওপর স্থির হলো তাঁর দৃষ্টি। চেহারায় আশ্চর্য একটা ভাব ফুটে উঠল, খসে পড়ল মুখোশ, বেরিয়ে এল ভেতরের আসল মানুষটা। সম্ভবত এক সেকেণ্ড বা তারও কম সময়ের জন্যে। তারপরই হাত বাড়িয়ে ওয়াইনের গ্লাস তুলে নিলেন তিনি, ফিরলেন, আগের মতই হাসছেন আবার।

ভুরু কুঁচকে চিন্তায় পড়ে গেল মার্গারেট। রিচার্ড কনওয়ের চেহারায় মুহূর্তের জন্যে কি দেখল সে? রাগ? সন্দেহ? ঘৃণা? নাকি আহত বিস্ময়?

তবে কার দিকে তাকিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট, মার্গারেট বোধহয় ধরতে পেরেছে। তার যদি ভুল না হয়, রিচার্ড কনওয়ে সরাসরি তাকিয়েছিলেন জেফ রিকার্ডের দিকে।

.

গম্ভীর আর ব্যস্তভাবে কাজ করছেন সিক্রেট সার্ভিস চীফ কী বিউমণ্ট। অফিস ছুটির পর তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সেদিকে তাঁর খেয়াল নেই।

ঝনঝন শব্দে ফোন বেজে উঠল। প্রায় চমকে উঠে হাতঘড়ি দেখলেন কীথ বিউমণ্ট। সর্বনাশ, আটটা বাজে! এক সেকেণ্ড ইতস্তত করে ফোনের রিসিভার তুললেন কানে। কে ফোন করেছে জানেন।

‘কীথ,’ স্ত্রীর অসন্তুষ্ট গলা শুনতে পেলেন তিনি, ‘এই তোমার সময়জ্ঞান?’

‘দুঃখিত, ডিয়ার,’ যথাসম্ভব শান্তভাবে বললেন এস.এস. চীফ। ‘আমাকে মাফ করো, আজ আর সিনেমা দেখা হলো না।’ স্ত্রী কিছু বলার আগেই রিসিভার নামিয়ে রাখলেন তিনি। তারপর ডেস্কের কাগজ-পত্রের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন নতুন উদ্যমে। প্রেসিডেণ্ট মেক্সিকো সফরে যাচ্ছেন। একাধিক সিকিউরিটি প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো অনুমোদন করতে হবে তার।

মেক্সিকোর রাজনৈতিক অবস্থা ভাল নয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ, কাজেই সিকিউরিটি প্ল্যানে কোন খুঁত থাকা চলবে না। গত বছর মেক্সিকোয় দু’জন মার্কিন ব্যবসায়ীকে কিডন্যাপ করে সন্ত্রাসবাদীরা, প্রায় ওই একই সময়ে দূতাবাসের একজন অফিসার অন্ধের জন্যে গুলি খাননি। কীথ বিউমন্টের প্রধান দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করা। সফরটা বাতিল করার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেণ্ট তাঁর কথা কানে তোলেনি। ওদের বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদীরা ঠিক সেটাই চাইছে। অসম্ভব, এক দল গুণ্ডার কাছে নতি স্বীকার করা যায় না। তাছাড়া, প্রেসিডেন্টের এই সফর নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

মুশকিল হলো, প্রেসিডেণ্ট ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন। স্টেট ডিপার্টমেণ্টকে সমর্থন করেছেন তিনি। মেক্সিকোয় যাবেনই। কীথ বিউমণ্টকে এখন দেখতে হবে, তিনি যেন বহাল তবিয়তে ফিরে আসেন।

কাজ করতে করতে হঠাৎ অন্য একটা প্রসঙ্গ মনে পড়ে গেল তাঁর। তাড়াহুড়ো করে একটা নোট লিখলেন তিনি। টিউলিপ কনওয়েকে পাহারা দিচ্ছে ছ’জন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট, তাদের সংখ্যা আরও দু’জন বাড়িয়ে আটজন করলেন। প্রেসিডেণ্ট হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর টিউলিপের ওপর নজর রাখার জন্যে এই দু’জন অতিরিক্ত লোক দরকার হবে। এরপর আবার তিনি প্রেসিডেন্টের সফর সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।

রাত আটটায় আরও এক গাদা চিঠিপত্র নিয়ে কাজে বসল রানা। বিকেলের দিকে এগুলো পৌঁছে দিয়ে গেছে ডানিয়েল। কয়েকশো চিঠি, হয় হোয়াইট হাউস থেকে বাইরে গেছে, না হয় বাইরে থেকে হোয়াইট হাউসে এসেছে।

দ্রুত চোখ বুলিয়ে এক এক করে বাতিল করতে লাগল রানা, ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল স্তূপটা। তারপর হঠাৎ করে একটা চিঠিতে দৃষ্টি আটকে গেল। চিঠিটা আবার পড়ল ও, পড়ল সঙ্গে গাঁথা অন্যান্য চিঠিগুলো। এরপর কাঁচি দিয়ে কেটে রাখা খবরের কাগজের একটা খবর বের করল এনভেলাপ থেকে। খবরটা ওয়াশিংটন পোস্ট-এ বেরিয়েছিল। খবর আর চিঠির তারিখ মেলাল ও।

মেলে।

আরও অনেক কিছু দরকার হবে। ব্যাকগ্রাউণ্ড জানার জন্যে ডোশিয়ে। চেহারার জন্যে ফটোগ্রাফ। হাবভাব আর আচরণ জানার জন্যে মুভি ফিল্ম। কণ্ঠস্বরের জন্যে টেপ-রেকর্ডিং। তবে এসব জিনিস সহজেই যোগাড় করা সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ হলো সেটআপ। সুবর্ণ সুযোগ। সঠিক সময়।

আপন মনে হাসল রানা। প্রেসিডেন্টের মেয়েকে কিভাবে কিডন্যাপ করতে হবে জেনে ফেলেছে ও। একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘরের আরেক মাথায় হেঁটে এল, দাঁড়াল স্টেরিও সেটের সামনে। কয়েকটা অ্যালবাম থেকে বেছে নিল একটা। ওস্তাদ বেহালাবাদক হফ ভ্যানডেরবার্গের ভায়োলিন কনসার্ট।

চেয়ারে বসে নিঃশব্দে সিগারেট ফুঁকছে রানা, কনসার্ট বেজে উঠল। চোখ বুজে ধ্যানমগ্ন হলো ও। শুধু কিভাবে কিডন্যাপ করবে তাই নয়, টিউলিপকে কিভাবে আমেরিকা থেকে বের করে নিয়ে যাবে তাও জানা হয়ে গেছে ওর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *