অনুভব করেছি, তাই বলছি
প্রথম প্রকাশ: ১ বৈশাখ, ১৪০৮
সৃষ্টি প্রকাশন, ৩৩ কলেজ রো, কলকাতা ৭০০০০৯। পৃ. ৬৪, মূল্য ৫০.০০।
প্রচ্ছদ: যুধাজিৎ সেনগুপ্ত
উৎসর্গ: যাঁরা এখনও, বলতে নেই, ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছেন/তাঁদের—
.
সূচি
ফ্রেজারগঞ্জ, শেষ কবিতা, হায় হলুদ, হিসি করার আগমুহূর্তে, প্রেমের কবিতা, মহাসিন্ধুর এপার হতে, কথোপকথন, ‘কী আমার পরিচয়, মা?’, পাগলে কী না বলে…, সান অফ আ বিচ, ফুড়ুৎ, যাও তুমি, অফ-পিরিয়ডে লেখা একটি কবিতা, আবেদনপত্র, আমার চতুর্থ লেখাটি, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড অথবা যা খুশি, কাট-শট, মনখারাপ, একজন গাইডের আত্মকথা, ভবিষ্যবাণী, মধুরেণ, রেসিপি নং-১, রেনি-ডে, রবীন্দ্রনাথ, একটি মিইশটি নারীবাদী লেখা, বনবাংলো, গোরুর রচনা, তোমার জীবনে স্মরণীয় দিন, মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন, অনুভব করেছি, তাই বলছি, কৌতূহল, বিশেষ ছাড়!, মজার কবিতা? মোটেই না, কামধেনু, ড্রিম সিকোয়েন্স
.
‘দুটো কবিতা লিখে কিছু বদলানো যায় না ভাইসব—
চ্যাঁ—অ্যা—অ্যা—অ্যা
মাইক খারাপ, মাইক খারাপ
পরের মাইকটায় বল—
‘দুটো কবিতা লিখে কিছু বদলানো যায় না ভাইসব—
চ্যাঁ—অ্যা—অ্যা—অ্যা
মাইক খারাপ, মাইক খারাপ
পরের মাইকটায় বল—
‘দুটো কবিতা লিখে কিছু বদলানো যায় না ভাইসব—
চ্যাঁ—অ্যা—অ্যা—অ্যা
মাইক খারাপ, মাইক খারাপ
পরের মাইকটায় বল—
.
ফ্রেজারগঞ্জ
কোথা হইতে আসিয়াছে এ-গ্রামে, সে জানে না। উল্কাপাত তাহারে লইয়া আসিল নাকি বন্যা, তাহার গোচরে নাই। আপনার নাম সম্বন্ধেও উৎসুক নহে, কারণ এ-গ্রামে কাহারও কোনও নাম নাই। একের সহিত অপরের তফাত নাই বলিয়াই নামও লাগে না। একটি কথা পাশের লোকটিরে না কহিয়া পিছনের লোকটিরে কহিলেও একই হয়। লৌহসম্মত জল কোথা হইতে ভাসিয়া আসে। উহার পলকে উদ্দেশ্য নাই। কাহারও কোনও উদ্দেশ্য নাই…
ধুলো… ধুলো… ধুলো… ধুলো… বাপরে বাপ! এত জোর বাস চালানো জীবনে দেখিনি…। রুমাল কোথায়…? বেড়াল হয়ে যায়নি তো? আটটা ছেলেমেয়ে… আমরা আটটা ছেলেমেয়ে সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি… পৌঁছলাম… লজ… লজ… জল… জল… জল নেই, পাখা নেই, খাবার নেই… বারান্দায় এসে দাঁড়ালে দূরে জল… সমুদ্র বোধহয়… বাঁহাতে উইন্ডমিল একটা… স্থির…এইভাবে বর্ণনা দেবার কোনও মানে হয় না… তখনও তো চান হয়নি কারও….ধু-উ-শ!… এই জায়গাটা ঠিকঠাক লিখতে পারলেই… হাওয়া দিচ্ছে… হাওয়া… হাওয়া… সামনে মাঠ… এককোণে একটা গোলঘর মতো-১.১৫ নাগাদ চান করে ১.৪৫-এ বকখালি… হোটেলে লাঞ্চ— ডাল ভাত আলুভাজা পোস্ত স্যালাড ইলিশমাছ— ৩০ টাকা… ফেরার পথে পেছন দিকে মুখ করে ভ্যানে চড়া… কী পাপ করেছিলাম… একটা কুকুর, কালো-সাদায় ছোপ-ছোপ, ভ্যানের পেছনে হ্যা হ্যা করে দৌড়তে লাগল, মাথা দুলছে এপাশ ওপাশ, লেজ দুলছে… কখনও পিছিয়ে পড়ছে… কখনও এগিয়ে… কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না… ওইভাবে একদৃষ্টে কোনও কুকুর তাকিয়ে থাকতে পারে…মাগো-!
সকাল হইলে তাহার আর জ্ঞান থাকে না। সকল মিথ্যা হইয়া যায়। চক্ষুদ্বয় বন্ধ হইয়া আসে, প্রাণ পালঙ্কে ঢলিয়া পড়ে। ইহার তুলনা নারিকেলপাতা। ইহার অস্তিত্ব হাওয়া। কুটির স্পর্শ করিয়া রৌদ্র শীতল হয়। তাহারও তখন কঠিন নিদ্রা।
সন্ধেবেলা পা ভেজানো রবীন্দ্রসংগীত। গজল। আলো নিভে আসা। আবাদ গড়ে উঠছে। অন্ত্যাক্ষরী। ঝাউপাতা ফুঁড়ে বেরোচ্ছে হোটেল। ৯ দিয়ে গাও। হোটেলের নীচে চায়ের কাপ আর মাছ ধরার জাল গড়িয়ে যায়… ওই ….ং দিয়ে গাও। তারপর জেলেরা মরুভূমিতে মাছ ধরে… ঞ দিয়ে গাও… আমরা বরং বালির কথা বলি…ঃ দিয়ে গাও… গা না শালা-!
উহার ঘুমের কোনও তুলনা নাই।
আমরা কারা-কারা এসছি?
একজন মদ খায় আর চিত্রপরিচালকের মতো কাশে।
একজন মদ খায় না বিড়ি খায় না মেয়েদের খুব পড়ায়।
একজন চিত হয়ে শুয়ে ওয়াকম্যান শোনে… অল্প মদ খায়।
একজন অল্প মদ খায় আর সুযোগ পেলেই ওড়না দিয়ে বুক বাঁধে।
একজন বিচে-বিচে লোকাল মাছেদের লাগিয়ে বেড়ায়। মদ খায় বোধহয়।
একজন কবিতা লেখে মদও খায় আর কিছুতেই নেশাও হয় না।
একজন মদ খায়… কানে জবাফুল গুঁজে দোকান-দোকানে ঘোরে।
একজন চূড়ান্ত খেয়ে পিরিয়ড নিয়ে কী যে জোক বলে কিছুই বোঝা যায় না।
কুয়ার অভ্যন্তর হইতে পরিবার উদ্ধার করিবার উপায় সে এতদিনে
আবিষ্কার করিয়াছে।
তৎকালীন ঘুম যেন তাহার এই চিন্তায় ভাঙিয়া যায়।
—বার্তা কী?
—অন্ধকার হয়ে এসেছে, সমুদ্রের জল আর আকাশ সব এক হয়ে গেছে।
সুদূরতম ট্রলারের ফ্যাকাশে আলোগুলোই এখন বার্তা।
—আশ্চর্য কী?
—এত বড় সমুদ্র থাকতেও এখানকার লোকজন পুকুরে চান করে।
—পন্থা কী?
—যে-পথে মানুষ চিরকাল সমুদ্র থেকে হোটেলে ফিরেছে…
—সুখী কে?
—যে নিজের ইচ্ছেয় সমুদ্রের ধারে যথেষ্ট সময় বসে থাকতে পারে।
এতদিন এই গ্রামে থাকিতে-থাকিতে অভিনয় পদ্ধতি সে শিখিয়া ফেলিয়াছে। গ্রামবাসীগণের সহিত তাহার এক অদ্ভুত নির্ভরতার সম্পর্ক। ফলমূল ও স্মৃতির বিনিময়ে সে সকলের গাণিতিক হিসাবের সমাধান করিয়া দেয়। প্রত্যেকেই এত মুগ্ধ হইয়া পড়ে, যে নিজ-নিজ স্মৃতির সিংহভাগ তাহারে উপহার করিতেও ভয় পায় না। ফলমূল ও স্মৃতি। স্মৃতি ও ফলমূল। তাহার কুটিরে ক্রমশই ভিড় বাড়ে। তাহার দৃষ্টি আকাশে চিরনিবদ্ধ। লৌহসম্মত জল ভাসিয়া আসে… সে বৃষ্টি আনিতে পারে না।
—একটা গান কর।
—আবার? তুই কর না।
—না না… চ— ওই দিকটা একুট হেঁটে আসি… নে, ধর—
‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীলজলদিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ
আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনাবালি তীর ধরে
বহুদূর, বহুদূর হেঁটে এসেছ…
আমি কখনও যাইনি জলে, কখনও ভাসিনি নীলে,
কখনও রাখিনি চোখ ডানামেলা গাঙচিলে
আবার যেদিন তুমি সমুদ্রস্নানে যাবে
আমাকেও সাথে নিও। নেবে তো আমায়—
বলো, নেবে তো আমায়—?’
কে জানে, ডোরার সঙ্গে আরও কিছুদূর হাঁটা যেত কি না…
ইহা তাহার কী হইল! তাহার কোনও অভিধানেই এই অনুভূতির কোনওরূপ ব্যাখ্যা নাই। রাত জাগিতে জাগিতে প্রথমবার হিসাবে ভুল হইল আর সে পাখিকে ডাকিতে শুনিল। এই নিমজ্জমান তরলভাবের ন্যায় অত্যাশ্চর্য শীতলতা সে পূর্বে পায় নাই। উদ্ভব। তাহার তো নামও নাই। বাধ্য হইয়া অপরের স্মৃতি ঘাঁটিতে লাগিল সে।
একথা সত্যি যে আড়াই ঘণ্টা চান করার পর নজর গেছিল কাপড় উঠে যাওয়া ভেজা কোমরের দিকে কিন্তু আমি জানি এটা লেখা কিন্তু আমাকে প্লিজ কিছু কথা বানিয়ে বলতে দাও বলতে দাও যে সমুদ্রের মধ্যে আমি রাক্ষসকেও দেখেছি মনখারাপের বমি দেখেছি ঢেউ হিসেবে আশাবরী রাগ গাইতে পারে না এ বাবা ঝিঁ-ই-ই করে ঢেউ লাফাল আর দরজা খুলে গেল না খেতে পাওয়া বাচ্চার দল গো অ্যাজ ইউ লাইক-এ মৎস্যকন্যা সেজে ফিরছে আম্মা-আ-আ আরেকটু বানাই প্লিজ আরেকটু যেন আমি সবকিছুই খুব ভালভাবে বুঝতে পারছিলাম ফিরব না এখান থেকে দু’দিনে ফিরব না কতবার মাঠ দিয়ে হেঁটেছি কতবার মদ দাও আরেকবার চাঁদ শালা পূর্ণিমাও এখনই হল কার কোলে শুয়ে আছি অমৃতা আর আমি পেছনে মেয়েদের অন্তর্বাস চাঁদের হাওয়ায় ঠান্ডা হচ্ছে উইন্ডমিল আমি আর অমৃতা হাত ধরাধরি করে উড়ে গিয়ে উইন্ডমিল চালিয়েছি এরোপ্লেন ঘুম পায় এসবের কোনও মানে হয় না… কোনও মানে… কোনও…
তাহার বুঝি অন্তিম দিবস আসিল। স্পৃহা জাগিলে মানুষ এত অশান্ত হইয়া পড়ে… গ্রামবাসীগণের দোরে—দোরে গিয়া সে প্রশ্ন করিতে লাগিল-‘ইহারে কী কয়? ইহারে?’… হায়, সে মাথা কুটিয়াও বৃষ্টি আনিতে পারে না…
ঠিক ১.১০-এ বাস ছাড়ে। এই ড্রাইভার তুলনায় শান্তিপ্রিয়। পথে কিছু গান আর একবার অবরোধ হয়। আমরা ৬.০৫ নাগাদ তারাতলা মোড়ে নামি। ঠিক হয় যে, রাজেশ আর ডোরা অটো করে রাসবিহারী চলে যাবে, সুকন্যাও অটো ধরবে, অয়ন আর অমৃতা ফিরবে হেঁটে। অনেক চেষ্টায় একটা ট্যাক্সি পাওয়া যায়, তাতে আমি অনির্বাণ আর সৈকত উঠে পড়ি, সৈকত ট্রামডিপোয় নেমে যায়, আমরা বাঁশদ্রোণীতে ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে চাউমিন খাই। অনির্বাণ আমায় অটোয় তুলে দেয়। আমি ৭.১৯ নাগাদ ঘরে ঢুকি।
(পুনশ্চ: বাথরুমে ঢুকে কেঁদে ফেলার সঙ্গে উপরোক্ত ঘটনাগুলির কোনও যোগ নেই।)
শেষ কবিতা
মনে যদি বমি-বমি ভাব আসে
অথবা মনে হয় কিছুই ঠিক হচ্ছে না,
তা হলে দু’বেলা কবিতা পাঠের পর একটা করে
এই কবিতা পড়ুন, এতে ফল ভালই হবে—গুরু বলেছেন
এখন প্রশ্ন হতে পারে, গুরু কে? না, গুরু তিনিই, যাঁর মূর্তির সামনে
আপনি চার বছর ধরে টিপ প্র্যাকটিস করে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন আর
সেই মুহূর্তে এসে আপনার বুড়ো আঙুল ধার চাইছেন যিনি, তিনি।
তা যা হোক, পাঠকগণ, থুড়ি দর্শকগণ, এতক্ষণ আমার মুখ
দিয়ে যা বেরোল তার কিছুই কবিতা নয় সেগুলো সন্দেশ অথবা
হাতির দাঁত হতে পারে, গর্ভনিরোধক বড়ি অথবা লোডশেডিং
হতে পারে, কিন্তু না, কবিতা নয়, কারণ আমার মতো অলস আর
ন্যাকামিনির্ভর ছেলেরা
ভাবে, কবে সেই সুদিন আসবে,
যখন কবিতা আর লিখতে হবে না, পড়তে হবে না, বুঝতেও হবে না,
কবিতা শুধু হবে… এই বোকা বোকা ভাবনায় চালিত হয়ে
আপনাদের অর্জিত খুশমেজাজ পণ্ড করলাম, মাপ করবেন। তা সত্ত্বেও
অথবা মনে হয় কিছুই ঠিক হচ্ছে না
তা হলে দু’বেলা কবিতা পাঠের পর একটা করে
এই কবিতা পড়ুন, এতে ফল ভালই হবে—গুরু বলেছেন।
হায় হলুদ
আমি সব প্রমাণ লুট করে নিয়েছি এই চুরির
মাথার উপর দিয়ে উড়ে আসা ঝাঁকে-ঝাঁকে
বাজপাখি
বিশ্বাস করবেন না দিদি
চোখ থেকে বেরনো স্প্রিং যখন ফিরে আসে চোখে
হায়…এই বেলা বারোটার বৃষ্টি আমায়
তাকে মনে করাচ্ছে না…বলছে না তার কথা…
সব প্রমাণ পাগলা লুঠ করে নিল রে…
আজব তুমি সাঁই-সাঁই শিকে গেঁথে যাওয়া মুরগি
বিশ্বাস করুন মাসিমা—
এই যত কবিতা-কবিতা করে চেঁচাচ্ছি
সব ঢপবাজি শুধু চেঁচানোটা যদি লক্ষ করেন
মাগো-ও-ও-ও-ও এইভাবে দূরে চলে যাচ্ছে…
পরশু তার বিয়ে
হিসি করার আগমুহূর্তে
হিসি করার আগমুহূর্তে যদি আমার মনে পড়ত
তোমাকে
তা হলে কি আর এইভাবে বেঁচে থাকতাম একাকী
‘ফুড়ুৎ’ শব্দের অধিকারী?
আচ্ছা… তারপর বরফ
না, বরফ নয়… বিষ ঝরে পড়া বাড়ির ছাদ
লোক জমা হচ্ছে… মা, কন্ট্রোল রুমে খবর দে—
যাঃ এত রাত… লোক আসছে… ঘুম ভাঙুক
পাইপ-ধোঁয়া-বাতি-উদ্ধার…
কিন্তু আমি তো নেই
এর কোনও কিছুর মধ্যেই তো আমি নেই
মাই গুডনেস! ইয়ার্কির একটা সীমা আছে…
বলতে
বলতে
বলতে
দুধের সঙ্গে এত রাতে নিয়ম-ফিয়ম গুলে
জ্বর তো… আর পালানোর শব্দ ঠিক
কুকুরের ডাকের আগে আগে চলত…
বলছি
আমাকে বোঝার জন্যে আর একটু সময় দিন—
প্রেমের কবিতা
…একদমই লিখতে পারব না বলেছিলাম প্রেম-টেম
টাইম নেই, বিরক্তি হয়, জ্বর আসে…আমি বলেছিলাম
আর কী হতে কী হচ্ছে সবে একটু লেখাপত্তর ভাঙতে শুরু
করেছি আর মেয়েটা হুট করে এসে জুড়ে দিতে-দিতে বলছে
‘প্রেম লেখো, অ্যাই, প্রেম লেখো!’
আমি কী করি, এইবার অনির্বাণকে সব খুলে বলতে হবে
লোকে ভাবে কে শালা অনির্বাণ সবক’টা কবিতায় এসে
ভিড় করে… বেশ করে। বিশ্বকর্মা পুজোর মাইক…
নারকোল গাছের পাতা… প্রেমের কবিতা চাই যদি
এইটাই একটা প্রেমের কবিতা হোক—
মহাসিন্ধুর এপার হতে
নাম জানা যায়নি। বয়স ৬৮ বছর। পুরুষ। পেশা মাছ ধরা।
একটা চোখে ছানি। স্ত্রী মারা গেছেন গতবছর। ছেলে নিরুদ্দেশ।
আজ সকাল থেকে কাশিটাও খুব বেড়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টি। হয়তো
মাছ ধরতে যাওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে উপোস। সমুদ্রের পারে গালে
হাত দিয়ে নিরুপায় বসে থাকা। কী আশ্চর্য যে ভদ্রলোক
জানেন না, এই সমুদ্রের ওই তীরে ফ্রেজারগঞ্জ বলে একটা
জায়গায়, আমরা আটজন ছেলেমেয়ে বেড়াতে এসেছি।
কথোপকথন
—হ্যালো
—
—না, আমি সে-কথা বলতে চাইনি, আমি… মানে…
—
—সেদিন তো শুক্রবার ছিল, সম্ভব নয় তুমি তো জানোই
—
—দ্যাখো, না না, ওফ্-কে বলেছে তোমাকে?
—
—আর আমার কষ্ট হবে না? প্লিজ় এরকম কোরো না।
—
—ঠিকাছে, রাখলাম।
‘কী আমার পরিচয়, মা?’
—বধাঈ হো সিকন্দরজি, আপ পচাস লাখ রুপয়া জিত গয়ে, অওর অব আপ সির্ফ এক প্রশ্ন দূর হ্যাঁয় এক কড়োর রুপয়া সে। ওয়সে অগর আপকো এক
কড়োর রুপয়া মিল যাতা হ্যায়, তো উসসে আপ ক্যায়া করনা চাহেঙ্গে?
—ইয়া তো খর্চ করুঙ্গা, ইয়া ফির ব্যাঙ্ক মে জমা কর দুঙ্গা।
—ওয়াহ। বড়া নেক খয়াল হ্যায়। সিকন্দরজি কে লিয়ে একবার তালিয়াঁ।…হাঁ
তো হম ফির খেল মে প্রভেশ করতে হ্যাঁয়। এক কড়োর রুপয়া কে লিয়ে আখরি
সওয়াল, ইয়ে রাহা সিকন্দার জি, আপকে সামনে।… ইনমেসে কৌন আপকে
পিতাজি হ্যাঁয়?-যোগিন্দর/ ভগন্দর/ কলন্দর/ ছচুন্দর
—উম…ম্… ম্ আই থিংক ভগন্দর।
—শিওর?
—হাঁ জি।
—এক লাইফলাইন অভিভি বাকি হ্যায়, আপ চাহেঁ তো কিসিকো ফোন
কর সকতে হ্যাঁয়।
—ওকে জি। ম্যায় অপনে মাকো ফোন করনা চাহুঙ্গা।
—মাকো? বড়ি অচ্ছি বাত হ্যায়। বচপন সে জানতে হ্যায় উনকো?
—হাঁ জি।
—লিজিয়ে, লাইন লগ গয়ি। মাতাজি-ই, ম্যায় অমিতাভ বচ্চন বোল রাহা হুঁ কৌন বনেগা কড়োরপতি সে। আপকে বেটে সিকন্দরজি অভি মেরে সামনে বৈঠে হ্যাঁয়। আখরি সওয়ালকে উত্তরকে লিয়ে উনকো আপকি মদত চাহিয়ে যো কি এক কড়োর রুপয়া কে লিয়ে হ্যায়। জওয়াব দেনে কে লিয়ে আপকো মিলেঙ্গে তিস সেকেন্ড। অগলি আওয়াজ হোগি সিকন্দর জি কি, অওর আপকা সময় শুরু হোতা হ্যায়-অব।
—মা, ইনমেসে কৌন মেরে পিতা হ্যায়? যোগিন্দর/ ভগন্দর/ কলন্দর/ ছচুন্দর… জলদি বতাও মা, মা?— মা? মা জলদি! মা-মা এক কড়োর কা সওয়াল হ্যায়, ইয়াদ করো, ইনমেসে কৌন মেরে পিতা হ্যায়? মা… মা?… মা-।…
পাগলে কী না বলে…
মাথা ঘুরেছেন মাথা ঘুরেছেন তেতলার বারান্দা থেকে
নামিয়ে দেওয়া এই শাড়ি ক্যালেন্ডার
বাবা তারিখ বলো
পশ্চাৎদেশ আর হিস্ট্রি চকাৎ করে জানলার গ্রিল ভেঙে
অন্ধকার বেডরুমে, হেঁ-হেঁ, ঢুকে গেল তো?
যেভাবে এদিক
থেকে
নামাবেন
আপনার
পা
ঠকাবো না বৌদি। তেতলার বারান্দা থেকে
মরুভূমি ঢেলে দিয়েছেন তো তুমিই রে—
আর আমার বাই গড লেখার মানে খুঁজো না
বিজ্ঞানীরা বলছে শব্দের মধ্যে দিয়ে আলো পাস করালে
জলহস্তীদের সঙ্গে যৌনমিলন সম্ভব। বলো?
আচ্ছা দাঁড়াও, একমিনিট—
সান অফ আ বিচ
ভোরবেলা পুবদিকে তাকালেই দেখবেন গোলমতো কী একটা
তাতে আবার আলো-ফালো হয়… বারোটা নাগাদ সেটাকে
মাথার উপরে পাবেন, আর সন্ধেবেলা তো, বুঝতেই পারছেন,
পশ্চিমদিকে-সৈকত-ফৈকতে বেড়াতে গেলে আমরা হেবি কেতা
ক’রে সেটার ছবি তুলি, সেটিং-রাইসিং কীসব বলে… জলে
নেমে গোবিন্দ-গোবিন্দ ভাব করে প্রণাম জানাই, আর মাঝে মধ্যে
গ্রহণ-টহন হলে চাট্টি নাচিকুদি…এছাড়াও সেটা যে বীভৎস
বড় একটা গ্যাসীয় পিণ্ড, প্রচণ্ড ভাবে জ্বলতে-জ্বলতে যার সব
জ্বালানি ফুরিয়ে এসেছে এবং আরও কিছু অগুনতি বছর পরে
সেটা ফেটে যাবে এবং গ্রহাদিদের মেরে ফেলবে… তা তো
ডিসকভারি চ্যানেল খুললেই জানতে পারবেন…
ফুড়ুৎ
একজন চরকিসত্যির নাম হল প্রাণ
সঙ্গে ঘোরে চলোকুমার মুখ
আর এসো পুজো দিই ধরন
প্রাণ-২ তার হাঁটু ও কপাল ঐতিহাসিক নয়
কারণ জানা-অজানা
এইভাবেই কবিতাটি শেষ করতে ভাল লাগছে
যাও তুমি
যাও তুমি ভেসে যাও এই বাটি থেকে উঠে যাও
বাটিতে দুধ না জল না কী, কে জানে
কবিতা শুনতে তোমায় কে মাথার দিব্যি দিয়েছে
জোর করে পাজামা পরিয়েছে কে
আমি পাঠালাম তোমায়
ভাবো মহাকাশ
গ্রহের পর গ্রহ ভাসছে আলোর পর আলো
দূরত্বের কোনও মাপ নেই এখানে
তার মধ্যে কোথায় ছোট্ট একটা সূর্য
তার অধীনে ছোট্ট একটা সৌরজগৎ
তার মধ্যে প্রায় ক্ষুদ্রতম পৃথিবী
হ্যাঁ-হ্যাঁ এইভাবে
ফিরে এসো…
তার মধ্যে মোটে একভাগ স্থল
তার মধ্যে একটা এশিয়া
তার নীচের দিকে একটা ভারত
ভারতের ডান কোণে একটা ছোট্ট পশ্চিমবঙ্গ
তার নীচের দিকে বিন্দুর মতো কোথাও কলকাতা
সেই কলকাতার নিশ্চিহ্নপ্রায় কোনও ছাপাখানায়
বা সভাঘরে এই কবিতাটা ব্যবহৃত হচ্ছে,
বলো, পড়বে আর, এসব?
অফ-পিরিয়ডে লেখা একটি কবিতা
প্রেমিকার পিরিয়ডের দিনগুলোয় যাঁরা কাছাকাছি কোথাও
মাছ ধরতে চলে যান
তাঁদের জন্যে আমার চকিত দুষ্টুমিষ্টি সেলাম…
কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন ওই রক্তের সময়গুলো
পালিয়ে আসতে হয়
মাছ ভাজা খাবার জন্যে
সবাই সবাই সবাই সবাই সবাই বুঝে গেছেন
বুঝেছে মেয়েরাও
মাছ ধরতে ধরতে কান পাতুন, শুনবেন
আপনাদের প্রেমিকার বয়সি যত মেয়ে এই পৃথিবীতে আছে
তারা মাঝরাতে ঘামছে, রক্ত ছাড়ছে আর ঘুমের মধ্যে চেঁচাচ্ছে
—‘মা, আমি কাপড় ব্যবহার করব না মা!’
কারণ তারাও বুঝে গেছে, কাপড় দিয়ে আসলে পর্দা হয়
আর পর্দা দিয়ে কত কী ঢেকে রাখা যায়…
আবেদনপত্র
লোহা-লোহা গন্ধ নিয়ে উপরে উঠে আসবেন না
উঠলেই দেখবেন দরজার ডানপাল্লায় ঠেস দেওয়া
মাসিমা
এই মর্মে রোদ থেকে পায়রা ঝরে পড়ে
আর চালবাছার শব্দে এই মেসবাড়ির প্রত্যেকটা ঘর
ঝমঝমিয়ে উঠছে
গা থেকে ঝরাবেন না জং ধরা জল
মাসিমার চশমায় সাঁটা চোখ একাকার তথা
আর পাগলামো করবেন না
দয়া করে
আজ বাজার হয়নি
আমার চতুর্থ লেখাটি
আমার দুটো লেখা পুড়িয়ে ফেলার পর, তৃতীয় লেখাটাকে
কেন জানি না, ওরা মোমবাতি হিসেবে নিল। যেমন
আমি কান্না শেষ করে ফেলার পর আলো আর পাথর
এসে বলেছিল কাঁদতে নেই—
কাঁদছি না। দু’চোখে বরফের গুঁড়ো ভরে, শীতকালের
নিচুমতো ছাউনির ভেতরে চাদরের তলায় ঘাপটি
মেরে ব’সে আছি…
এবারের লেখাটা শুনতে একজন নেকড়ে আসবে
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড অথবা যা খুশি
১
বইয়ে যা পড়েছি
ওই আমার ৪৪ রকমের চশমা উড়ে গিয়ে
পড়ল তিয়েনআনের পাদদেশে
যেখানে
আসলে এখন মাঠময় মরুভূমি
নিজেদের ঘিরে-ঘিরে যেখানে নাচ করছে
জোকারেরা
সার্কাস বসেছে গো
আর এদিক-ওদিক থেকে সেখানে
ভাসতে-ভাসতে এসে পৌঁছচ্ছে দেশিবিদেশি
চকোলেট
জীবনবিমার কাগজপত্র
সাদা নাইটি…
কী যে আনন্দ গো—
আর সার্কাসের তলায়, এই রঙের
আনন্দের অনেক তলায়
একটা গোলঘর,
সেখানে, বললে বিশ্বাস করবে না,
এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে একজন
রাজকুমারী
চুল বিছানা থেকে গড়িয়ে মেঝেতে,
বুক দুটো সূর্যের দিকে উত্থিত,
কাপড় উঠে গেছে হাঁটুর ওপরে—
এই রাজকুমারীর নাম,
বললে বিশ্বাস করবে না, এর নাম
আর এর লক্ষ বছরের ঘুমতরঙ্গ যখন
চোঁ ক’রে উঠে আসছে
যখন আনন্দ আর সার্কাস ভেদ করে
হুপুস শব্দে উঠে যাচ্ছে আকাশে,
সে দেখছে জল,
আর তার নীচে জঘন্য একটা
সাবমেরিন…
২
দেবীর দোলায় আগমন
আজ অ্যালিস আসছেন।
অ্যালিসের হাত ধরবে কে?
আঃ হা—
অ্যালিসের হাত ধরবে আমি
ঢলাঢলি করবে আমি
অ্যালিসকে চান করিয়ে দেবেও আমি
অ্যালিসের সঙ্গে ইশে করবে…
ওই তো— গাউন আর ছায়াটুপি পরে
নৌকো করে দিদি আসছেন,
তাঁকে ইতিমধ্যেই রাজকুমারীর গল্প
শুনিয়ে ফেলেছে কোন শুয়ার
হ্যাঁ-হ্যাঁ… আসুন, অ্যালিস,
আপনার জন্য তৈরি আছে এই
পুরানা হাভেলি,
আর তার সঙ্গে কিছু ঘুমকাড়া কাহিনি…
আপনি হাত মুখ ধুয়ে নিন
আমি ততক্ষণে লাঞ্চ লাগাচ্ছি,
আমি ছাড়া অন্য কোনও
শুয়োরের বাচ্চার কথায় কান দেবেন না!
৩
শয়তানের হেলমেট
…রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর আমাদের সূত্রধর
অ্যালিসকে গল্প শোনাচ্ছেন…
‘… এই যে দেখছেন ছবি, এটি একজন
অদ্ভুত ছেলের হা হা কী অদ্ভুত যে ছেলে
হা হা
জন্মানোর আগে এ ছিল অনাথাশ্রমে
আর জন্মানোর পর মাথায় এল
শয়তানের হেলমেট
হা হা
দশ বছর বয়সে চূড়ান্ত মদ্যপ বাবাকে
বৃষ্টিভেজা উঠোন থেকে ঘরে টেনে নিয়ে
যেতে-যেতে
ভাবছিল বাবা মরে গেছে হয়তো,
কিন্তু পরের বর্ষায় সেই বাবার সঙ্গে
ক্লান্ত মায়ের আঠালো মিলনদৃশ্য দেখে
সারারাত ঘুমোতে পারল না
শয়তানের হেলমেট তখন নারকোল গাছের
উপর দিয়ে উড়ে চলেছে…
উড়তে-উড়তে কী অদ্ভুত যে বড় হল
ছেলেটি হা হা
এত অদ্ভুত বড় যে একজন জলজ্যান্ত
আবার এক বর্ষার রাতে সে মেয়েটির
পুরো শরীর মুষড়ে নিতে-নিতে
যেই না দূর্বাবৃত যোনিদ্বারে মুখ রেখেছে
যেই না নাকে গেছে সেই আদিম ঝাঁঝ
যেই না মনে হয়েছে এই সেই পথ
যেখান থেকে সে নিজে জন্মেছে
অমনি, কী বলব,
‘মা, মাগো’— করতে-করতে
উঠে এসেছে মেয়েটির বুকের কাছে
আক্রান্ত, সজাগ বৃন্তদুটিতে
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মুখ লাগাচ্ছে আর
চূড়ান্ত ভাবে টানছে
দুধের স্বাদ ভুলে গেছিল তো, হা হা
সে কি জানত, তার হেলমেট তখন
রাগে গর গর করছে,
আর মেয়েটি? মেয়েটি বুঝে গেছিল
এর দ্বারা হবে না।
না, হবেই না, অ্যালিস, হতই না,
বিশ্বাস করো, ছেলেটার দ্বারা কিস্যু
হওয়ারই ছিল না
যদি থাকত, তবে জীবনের মগজধোলাই
করা বর্ষার রাতটায়
সে বাইরের ঘরে বসে বসে সারারাত
ফোঁপাত না
যখন সে জানত, পাশের ঘরে তার প্রেমিকা
আর তার ভাই, তার নিজের ভাই
সারারাত ধরে… ওঃ!
তাও তো একবার, মাত্র একবার সাহস করে
সে ছুটে গেছিল ও ঘরের দরজায়
কেমন একটা শব্দ করছে…’
ভাই আর দেখবে কী, বদলে সে,
বললে বিশ্বাস করবে না, সে দেখেছিল
তার প্রেমিকার সঙ্গে ভাইকে,
এক বিছানায়,
ভাইকে দেখেছিল সে, চাঁদের আলোয়
হেলমেট পরে শুয়ে থাকতে…
৪
মুখোমুখি
সূত্রধরকৃত অ্যালিসের সাক্ষাৎকার—
(ধরি সূত্রধর = সেলুকাস)
—আপনার বয়েস?
—ঈশ্বর জানেন।
—এদেশে প্রথম এলেন?
—হ্যাঁ
—সমস্ত শুনেছেন?
—অনেকটাই।
—কিছু ভাল লাগল?
—আপনার প্রিয় দুটি জিনিস?
—সূর্য, ভ্যানিটি ব্যাগ।
—কী ধরনের পোশাক পছন্দ করেন?
—যা পরা যায়।
—প্রেম বলতে?
—না না হ্যাঁ আচ্ছা না
—কবিতা লেখেন?
—বলতে পারব না।
—আচ্ছা বৌদি, কষ্ট হয় না?
—আমি কাল ফিরে যাচ্ছি। নমস্কার।
—অনেক ধন্যবাদ, ইয়ে নমস্কার।
৫
অতঃপর সেলুকাসে কহিলা অ্যালিস—
সত্য সেলুকাস, কী ঝাক্কাস এই দেশ
আর কী বিন্দাস সব ছেলেমেয়ে
যেখানে আপেলের সঙ্গে সঙ্গম করতে-করতে
উঠে আসে ময়াল সাপ,
যেখানে খুলিগুহা আর নকশালবাড়ির
মধ্যে কোনও তফাত নেই,
যেখানে বকুনি দিলেই মেয়েরা
ব্রা খুলে দাঁত দেখায়
এক-দুই-এক-দুই কী ছন্দ আর
মাথার উপর দিয়ে ভগবানের হলুদ হাওয়া
যায় চলে
আহা, বলো,
না
না
না
না
কী তোফা এই অঞ্চল, সেলুকাস, যেখানে টিভি খুললেই তুমি
দেখবে মেয়ে, না-না, মেয়ের ঢল, হড় হড় করে নেমে আসছে
রাস্তায়, কত মেয়ে, কেউ ক্যাফে থেকে, কেউ জানলা থেকে,
কেউ স্বর্গোদ্যান থেকে, কেউ বাস্কেটবল কোর্ট থেকে, ছুটতে ছুটতে
আসছে, জড়ো হচ্ছে রাস্তায় ছুটন্ত অবস্থায় তাদেরগুলো কী ঝাঁকুনি
দিচ্ছে, কী তাদের পোশাক, কী তাদের মাথার চুল, সব ব্যাপক—
আর কী নিখুঁত ব্যাপার তুমি ভাবো, ছবিটার শেষে লিখে না দিলে
তুমি বুঝতেই না, যে ওটা আসলে একটা সুঠাম স্যানিটারি
ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন, আহা, আর টিভির পেছনে, ক্যাবিনেটের
ভেতরে, ওই যে লাল আলো, মাইক্রোস্কোপ থাকলে দেখতে, ওটা
একটা বিরাট অগ্নিকুণ্ড আর তার উপর ছটফট করছে হাত
পা বাঁধা ন’-বছরের একটি ল্যাংটো মেয়ে, না কোনও ক্যাফে,
কোনও জানলা বা কোনও স্বর্গোদ্যান থেকে নয়, ওকে আমরা
পেয়েছি বাজার থেকে, আর দ্যাখো— দেখতে পাচ্ছ? ওর
ছোট্ট ফুটোর মধ্যে ঢোকানো আছে একটা শোলার রিং, ঢোকানো
আছে, যাতে তোমার মতো জানোয়ারের লিঙ্গ ওকে এঁফোড় ওফোঁড়
করতে পারে, ও চেঁচাচ্ছে। কানে যাচ্ছে না তোমার? কোন
ন্যাপকিন ওর কাজে লাগবে, যখন পিরিয়ডের দিনগুলোয়
রক্তের বদলে লাভা গড়াবে ওখান দিয়ে? তুমি পারবে?
পারবে, ন্যাপকিনের বদলে তোমার ঠান্ডা জিভটা পেতে দিতে,
গরম, দুর্গন্ধী লাভা শুষে নিতে… পারবে? না না ভয় নেই।
তুমি শুধু বিছানায় তড়াক করে উঠে বসবে মাঝরাতে…
যতদিন বেঁচে থাকবে, মনে হবে, তোমার লেখা কবিতাগুলো
ছমছম করে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে… সারারাত…
না
না
না
না
সত্য সেলুকাস,
পাপপুণ্য দেশ, আহা, যাক ওই
সোনার তরী, জপমালা
আর রেসিং কার…
বলব না, থাক,
এক-দুই-এক-দুই
—এর পরেও কত ছন্দ হয়… আহ্…
৬
মেরা কুছ সামান
আমাদের সূত্রধর অ্যালিসকে যে কাহিনি
শোনাচ্ছিলেন, তার শেষাংশ—
‘… হ্যাঁ, আর জানেন, একদিন সত্যি সত্যিই
ঝরঝর করে বৃষ্টি নেমে গেল ছেলেটির
‘বৃষ্টি’— এই বলে আর কোনও
আকাঙ্ক্ষাই রইল না তার,
হেলমেট পরা নেই বলে, জানেন
মাথা ভিজছে হাশ্হাস্
সে শুনতে পাচ্ছে দূর কোনও ইহুদি নারীর
কপাট বন্ধ করার শব্দ
আর নিজে বিয়ারের ক্যান গিলতে-গিলতে
পিছলে বেড়াচ্ছে কোনও এক
পাহাড়ি শহরের বাজারে,
এক সর্দারজি তাকে পথ দেখাচ্ছে
—‘হাঁ হাঁ, যাইয়ে, ক্যান লেকে
চলে যাইয়ে…’
আর সে যখন টিনের তোরঙ্গ হয়ে
ফিরবে নিজের শহরে
আহা, সে জানবেও না, তার মাধবীটি
রাতের বেলা ফিনফিনে সবুজ ম্যাক্সি গায়ে দিয়ে
চুল এলিয়ে বসবে জানালায়
আর অপেক্ষা করবে; একবার টিপ্টিপ্
বৃষ্টি শুরু হলেই সে ধরবে গান—
‘মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়’
আহা, চাঁদের আলো ভর করা,
সোঁদা হাওয়া খেলতে থাকা
বিরাট সেই হলঘর,
সেখানে ঘুরে-ঘুরেই সে গাইবে—
‘মেরা ও সামান লওটাদো…’
তা, কী কী ছিল, সামান বলতে?
হ্যাঁ হ্যাঁ, সামান বলতে ছেলেটির কাছে
তখনও পড়ে আছে এক টাকা দামের গোলাপফুল
আর মিছিমিছি বরফঢাকা একটা লোহার গেট
আর সে নিজে…
মেয়েটি তাও একটা জামা আর একটা
শাল ফেরত দিয়েছিল,
কিন্তু ভাবুন, কিছু ফেরত না দিতে পেরে
ছেলেটা হতচ্ছাড়া
জানলা খুলে হাঁ করে বসে আছে রাতভোর
তার ঘনকালো টেপডেক থেকে
চুঁইয়ে নামছে আলি আকবর
এক-একটা মীড় পেটে এসে ক্যাঁৎ করে
লাথি মারছে
আর সে ককিয়ে উঠছে— ‘উহ মা! মাগোঃ!’
যদিও এখন এই অঞ্চলের লোকেরা বলে,
যে টেপডেকটা না হলে ছেলেটা নাকি
বাঁচতই না…’
৭
রাত জেগে লেখা সেলুকাসের চিঠি—
‘…শুনুন অ্যালিস, আপনি কাল ফিরে যাচ্ছেন বলে বলছি, নইলে
বলতাম না, এই জায়গাটা পুরো বানানো, আপনি যদি ফিরে না
যান, হ্যাঁ অ্যালিস, যদি ফিরে না যাও, তা হলে দেখতে পাবে
আসল ঘটনা। এতক্ষণ ধরে তোমায় যা যা বলেছি, সব মিথ্যে! সব!
সার্কাসের তলায় সেই রাজকুমারী, সেই ভোঁদুলাল, সে আর কেউ নয়,
ওই সবুজ ম্যাক্সি পরা মেয়েটি। আর যে-ছেলেটা গল্পের নায়ক,
যার ছবি তুমি দেখেছ, সে, হ্যাঁ, সে আমিই! কিন্তু সেই
আনন্দে আমি কি উড়ে-উড়ে বেড়াব, বলো? এই টিনের
তোরঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকতে আর ভাল্লাগছে না, অ্যালিস, ট্যুরিস্ট
এলে তোরঙ্গের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে এই একটাই গল্প।
ওফ্। আমাকে একটা নতুন গল্প বানাতে দাও, অ্যালিস, অন্য
কারওর ঝামেলা আমি বুঝি না। কী করব বুঝে? আমি নিজে
ভাল নেই, একদম ভাল নেই, তুমি যেও না অ্যালিস, লক্ষ্মীটি…’
৮
ছবির শেষাংশ
‘লাইটস্… সাউন্ডস্… ক্যামেরা… অ্যাকশন!…
না, না, না হচ্ছে না— কাট্।
কী ভ্যানতারা মারছ বলো তো তখন থেকে?
আরেকবার মন দিয়ে সিনটা শোনো।
প্রথমে তুমি ম্যানহোলের ঢাকনা তুলে
রাস্তায় উঠে আসবে।
একটু হতভম্ব ভাব,
পেছন থেকে বিউগল বাজবে,
তুমি অবাক হবে—
হঠাৎ রাস্তার একদিক থেকে ছুটে
আসবে ঝকঝকে একরাশ উটপাখি,
ভয় নেই, ট্রেইনড,
তুমি অন্যদিকে পালাতে যাবে,
দেখবে, দু’-হাত তুলে নাচতে-নাচতে
তোমার দিকে ছুটে আসছে
হাজার-হাজার উলঙ্গ মেয়েছেলে,
তাদের প্রত্যেকের স্ত্রী অঙ্গে ঘা,
আচ্ছা। এই গেল,
ও, ততক্ষণে উঁচু-উঁচু বাড়ি থেকে
বাচ্চা ছেলেরা কলার খোসা আর
পতাকা ফেলতে শুরু করেছে—
আচ্ছা! আরও আছে,
তুমি ভয় পেয়ে মাথার ওপর তাকাতেই,
দেখবে শ’খানেক লামা হুম-হুম করতে-করতে
ভেসে চলেছে—
আর ততক্ষণে পুরো ব্যাপারটার মধ্যে
ঢুকে পড়েছে পুলিশ
বুঝতেই পারছ, ফ্যামিলি এনটারটেইনার তো…
তা যাই হোক গে, গোলমাল থামাতে
পুলিশ গুলি চালাবে
‘ঢিচক্যাঁও। ঢিচক্যাঁও।
একটা মেয়ের লাশ পড়ে যাবে—
সব চুপ।
তুমি চুলটা একটু ঠিক করে নিয়ে
এগিয়ে যাবে, এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে
বিবস্ত্র মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে
সেই ডায়ালগটা বলবে। মনে আছে তো?
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিতে উত্তমকুমারের, ওই যে—
‘এর কি কোনও দরকার ছিল?
বলুন আপনারা, দরকার ছিল?’
তারপর কাট। বুঝলে?
যে মরল সে শালা কে, তোমার সেই
রাজকুমারী, নাকি অ্যালিস, না বেশ্যা কোনও
আমি তোমায় বোঝাচ্ছি, আমিই বা কে
আর, আর তুমি নিজেই বা কোন ইশে…
তোমার শালা ছেঁড়া গেছে!
সব গুলিয়ে গিয়ে, ওই দ্যাখো, আকাশে
শুধু থকথকে তেল ভাসছে, আর পুড়ে
মরছে এতদিনকার গরমমশলা…
এখন যাও তো, শট রেডি।
‘লাইটস্… সাউন্ডস্… ক্যামেরা… অ্যাকশন!…’
উপসংহার
… না, কোনও রাজকুমারী, কোনও অ্যালিস,
কোনও ঘুমকাড়া কাহিনিরই প্রমাণ হয় না।
তবে হ্যাঁ। জোকারদের নিয়ে দুঃখীমতো একটা
সার্কাস দু’দিনের জন্যে এসেছিল বটে, তাও সে কবে…
এখন সেই মাঠময় মরুভূমি আর বালির
দশহাত নীচে কয়েকটা ভাঙা চশমা ছাড়া
আর কিছুই নেই…
কাট-শট
এক: শুভদিন
কী ইচ্ছার তলায় লুকিয়েছিল ভার আজকাল
বলছিলাম। গুছিয়ে বলতে পারব না একদম কারণ
এর মধ্যে কোনও মিথ্যেকথা নেই, অর্ধেক কথা তো নোয়ানো শীতল
মাটি থেকে সূর্যের দিকে তাক করা বাকি অর্ধেক— ভাসুক
এইমাত্র তারই তো কথা হচ্ছিল
হচ্ছিল একমুহূর্তও বানিয়ে বলা নয় কিংবা
এমন নয় যে এই লেখাটা না লিখলে মরে যেতাম
চাপ কেবল তার অধর কেবল টেবিলের নীচে আমায় টানে
টেবিলের নীচ ক্রমশ ক্ষমায় চায় শরীর
বলো? কত নীচে লুটোলে মাথা আটকে যায় দু’দিক থেকে?
জানি না। সততা আসছে মোমবাতি অথবা
এই দৃশ্যের পুরোটাই লেপের তলায় গৃহীত আর
বলতে পারব না একবারও বলতে যাব না
কষ্ট বুক, বুঝছ? পারছি না যে, বুঝেছ?
এটা কোনও লেখা নয়, তাই না?
এক হল শুভদিন… আর
দুই, এখন পুরোটাই ভীষণভাবে তুমি
মনখারাপ
তুমি এখন ধানখেত আর গমখেত, এদের কাউকেই
সহ্য করতে পারছ না। ধানখেতের রং স্বর্গীয় হলুদ
গমের খেত বোধহয় নীল, কিন্তু সহ্য হচ্ছে না। খেতের পর খেত
অমনিভাবে বিছিয়ে আছে, তাদের শরীরে বিয়ের শাড়ির
মতো যে-রোদ্দুর এখন মুখ নামিয়ে হাসছে, সে তোমার কেউ
নয়। ঝকঝকে যে-বাতাস পাশের গ্রামের খবর নিয়ে
উড়ে যাচ্ছে খেতগুলোর ওপর দিয়ে, সেও তোমার শত্রু এখন।
কমলা রঙের যে-দু’জন বালিকা খেতের একধারে সেই
সকাল থেকে কফির দানা নিয়ে খেলছে, তাদের তুমি
ডাকোনি। তুমি কেবল বিড়বিড় করতে করতে চলেছ
এইসব ভালমানুষ খেতের নীচে বানানো সরু,
এবড়ো-খেবড়ো সুড়ঙ্গ দিয়ে; কষ্ট হচ্ছে তোমার, সুড়ঙ্গের
ওপরে ওই ধানখেত, গমখেত, রোদ্দুর, বাতাস আর
মেয়ে দুটিরও কষ্ট ভাসছে মাটিতে, তুমি আর তোমার
সুড়ঙ্গ সরু হতে হতে অন্ধকারের কাছে আরও নিচু হয়ে
আসছে, তোমার এক হাতে ঝুলকালি পড়া আদ্যিকালের
কোনও লন্ঠন, অন্যহাতে ঠাকুমার কাছে শোনা, ফ্যাকাশে
হয়ে আসা গল্পেরা, কানের পাশে গুঁড়ো হয়ে ঝরছে
সকলের আবছা ডাক, তুমি এগিয়ে যাচ্ছ, এগিয়েই যাচ্ছ,
যদিও এই সুড়ঙ্গের শেষে কোনও ধানখেত বা গমখেত নেই…
একজন গাইডের আত্মকথা
‘…হ্যাঁ, আপনারা এগিয়ে চলুন, বারবার একটু
ঝুঁকে নিশ্বাস নেবেন, ছাড়ার সময় দেখে রাখুন
ধোঁয়া, কেউ দলছুট হবেন না, পারলে প্রিয়জনের
হাত ধরে রাখুন আর খাদের দিকে ঘেঁষবেন না,
এগুলো পর্বতারোহণের প্রাথমিক শর্ত, আসুন
আপনাদের নিয়ে যাই ভুবনভোলানো দৃশ্যের খুব
কাছাকাছি, এই এত রাতেও যেখানে জ্বলজ্বল করে
গাছপালা আর মাটি, আপনারা যাঁরা গান করেন
অথবা জাদু জানেন, যাঁরা কবিতা লেখেন অথবা
চাকুরে, যাঁরা গৃহবধূ অথবা সুসময়, তাঁদের
সকলকেই আজ উপহার দিই জলজ্যান্ত স্বর্গ, হ্যাঁ,
আর বেশি দেরি নেই, কেবল দেখবেন ঠান্ডা না
লাগে, চোখ ছাড়া সবকিছু মুড়ে থাকুন, হ্যাঁ,
এগিয়ে চলুন, আমি আছি আপনাদের পেছনেই,
ভয় পাবেন না, আর কিছু পরেই আপনাদের
অকালমৃত্যুর জন্যে দায়ী থাকব আমি, যেমন
থেকে এসেছি না জানি কত হাজার বছর, ওই,
ওই চূড়ায়, যেখানে দেখছেন একটা পতাকা গাঁথা
আছে, ঠিক তার নীচেই চাপা রয়েছে আমার সমস্ত
পূর্বজন্ম, যার দুঃখ আমার এখনও গেল না,
সে যাক গে, আপনারা নিশ্চিন্তে ছোটখাটো নৈশ
গল্পগুজবের মধ্যে দিয়ে ওপর দিকে এগিয়ে চলুন,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, এগিয়ে চলো তুমিও, এই প্রথম তুমি
রাতের বেলা পাহাড়ে এলে, দ্যাখো কী মজা,
আমি একটু-একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছি ঠিকই,
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে রাখব তোমাদের, এই
অতিকায় আরোহণদৃশ্যে আমি একাই অতিথিশামুক,
আমি একাই গাইড, ম্যাপ দিয়ে বানানো আমার
শীতপোশাক, টুপি আর লাঠি, তবু পিছিয়ে পড়ছি,
মিলিয়ে যাচ্ছি, কেন না আমার প্রচণ্ড ভারী রুকস্যাক
থেকে এবার খণ্ড খণ্ড হয়ে ঝরে পড়ছে পৃথিবীর
এতদিনকার তাজা, টকটকে মাংস…
ভবিষ্যবাণী
… কাঁটাতার পেরিয়ে-পেরিয়ে উড়ে আসছে রংবেরঙের বমির ফুলকি, থুতুর ফুল ছিটকে আসছে ছোটবড়, একটি হার যদি বানিয়ে দাও গলার… ভগবান তোমায় দেখবেন… এই রাত, এত জোর রাত যে কাল সূর্য উঠতে প্রায় দুপুর হয়ে যাবে নির্ঘাত, এই রাতে, ভারী মাইলপাথরগুলো কাঁধে করে দাঁড়িয়ে যে-গাছ, তার অজ্ঞান ফুসফুসদুটো ওপারে, কাঁটাতারের ওপারে, কাঁটাতার তো দুই মাটির সঙ্গমচিহ্নমাত্র… মিলনের গন্ধে, দ্যাখো, চিড়বিড় করে শব্দ হচ্ছে, আর লালচেহলুদ, ধুকপুক করতে থাকা মাটির ওপর দিয়ে যেন গড়িয়ে এল চকমকি ফুৎকারের ঢেউ… আর তার তলায় কত বেসাহারা বাবা-মা’র কান্না স্বরলিপি আকারে নির্বিঘ্নে ভাসছে… না-গোপন না-প্রকাশ্য এমন কত ইচ্ছে কাপড়জামা খুলে ফেলছে লজ্জায়… কাঁটাতার পেরিয়ে-পেরিয়ে এই সব, সবই উড়ে আসছে, একটি ফাঁস যদি বানিয়ে দাও গলার, ভগবান তোমাকে দেখবেন, পছন্দ করবেন, আর তেমন-তেমন ব্যাপার হলে নিজের বিছানায় নিয়ে যাবেন… দ্যাখো… টিক-টিক-টিক-টিক টলন্ত চেনঘড়ি… আহা… বন্ধ হবার ঠিক আগমুহূর্তে কী কান্না… আহা… দ্যাখো… যুদ্ধ শুরু হতে আর কয়েক লক্ষ বছর মোটে বাকি, কিন্তু বিষণ্ণ, শ্যাওলা একটি সৈনিক এখন থেকেই তীর্থের কাক হয়ে আছে ফ্রন্টে, বেচারা, একটু বেশিই তাড়াতাড়ি এসেছে… তার কোন চেহারাটাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বুলা নামের মেয়েটি… কেউ জানে না… সে নিজেও… সে সত্যিই জানে না যুদ্ধক্ষেত্রগুলো আসলে পৃথিবীর প্রাচীনতম পিৎজা, সবশেষে একটু চপড চিজ, একটু গলাপচা শবদেহ জমার অপেক্ষা শুধু… হ্যাঁ… এই কাঁটাতার পেরিয়ে পেরিয়ে ধেয়ে আসছে অন্ধমুনির শীৎকার আর কতদিনকার, জং ধরে যাওয়া
মরা নেকড়েদের চ্যাপটা দৌড়শব্দ… মাগো!… এবার বাজনা শুরু হবে—
না
না
না
না
এইরকম কোনও
শব্দ তো তুমি আজ পর্যন্ত
শোনোইনি কিন্তু আজ এক্ষুনি শুনলে, তাই, এই দৃশ্যটি যে আঁকছিল, সেই তরুণ চিত্রকরের মুখ দিয়ে ‘আব্বুলিশ’ বলিয়ে নেওয়াই তোমার কাজ এখন… আর তারপর এই ভয়ানক দৃশ্যটা মাথায় চাপিয়ে ‘ভু-উ-শ’ করে কালো ঘন চৌবাচ্চা থেকে উঠে দাঁড়ানো… ব্যাস! তোমার ছুটি… পরদিন থেকে ঠিক ওইভাবেই তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে জন্মের পর জন্ম… প্রজন্মের পর প্রজন্ম… একসময় তোমার পাথর হয়ে যাওয়া গোড়ালির চারপাশে নতুন ছেলেমেয়েরা থিক থিক করবে… আর কোনও ঘোর অমাবস্যার রাতে আকাশের দিকে ঘাড় তুলে তোমার শ্যাওলা মাখা অণ্ডকোষদুটো দেখিয়ে বলবে—
‘যাক্ বাবা! অ্যাদ্দিনে জোড়া চাঁদ উঠেছে…’
মধুরেণ
—ধ্যাত্তেরি! এই মধুটা এসে না, সব বারোটা বাজিয়ে দিল।
—মধু কে গো?
—আরে ধুর এত কষ্ট করে সব তৈরি করলাম আর
লাস্ট মোমেন্টে ওই হারামজাদা মধুর জন্যে…
—মধু কে বলো তো?
—আর কী বলব, বললে বিশ্বাস করবে না, হাজারটা
কাঠখড় পুড়িয়ে, এত ঝামেলার পর, বলতে নেই, একটা
পারফেক্ট অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছিল, মাঝখান থেকে
গেঁড়ে পাকা মধু’র বাচ্চাটা ঢুকে গিয়ে… ওফ্। শালাকে
হাতে পাই একবার…!
—কিন্তু মধুটা কে?
—মধু একটা শুয়ার। আমার না, এখন কান্না পাচ্ছে।
মাইরি। ভাল্লাগেনা। কদ্দিন ধরে ভাবছি, ব্যাপারটা
ঠিকঠাক উতরে দিতে হবে, আমার আগেই বোঝা
উচিত ছিল, ওই মধু হারামি থাকতে সিরিয়াসলি
কিছু করাই যাবে না! ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা… ভগবান…
—আহা, এত ভেঙে পোড়ো না, সব ঠিক হয়ে যাবে,
কিন্তু… ইয়ে… মধু কে গো?
রেসিপি নং-১
প্রথম ধাপ:
চাঁদ তাক করে গুলি মারুন— ঢিচক্যাঁও!
চাঁদ লুড়কিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় ধাপ:
ফুল তাক করে গুলি মারুন— ঢিচক্যাঁও!
ফুল লুড়কিয়ে যাবে।
তৃতীয় ধাপ:
পাখি তাক করে গুলি মারুন— ঢিচক্যাঁও।
পাখি লুড়কিয়ে যাবে।
এইবার, দেখি তো— আমরা, শালারা কী নিয়ে কবিতা করি?
রেনি-ডে
রোল নাম্বার ওয়ান?— রোল নাম্বার টু?— রোল নাম্বার থ্রি?—
রোল নাম্বার ফোর?— রোল নাম্বার ফাইভ?— রোল নাম্বার সিক্স?—
রোল নাম্বার সেভেন?— রোল নাম্বার এইট?— রোল নাম্বার নাইন?—
রোল নাম্বার টেন?— রোল নাম্বার ইলেভন?— রোল নাম্বার টুয়েলভ?—
রোল নাম্বার থার্টিন?— রোল নাম্বার ফোর্টিন?— রোল নাম্বার ফিফটিন?—
রোল নাম্বার সিক্সটিন?— রোল নাম্বার সেভেনটিন?— রোল নাম্বার এইটিন?—
রোল নাম্বার নাইনটিন?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি
ওয়ান?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি টু?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি থ্রি?— রোল
নাম্বার টুয়েন্টি ফোর?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি ফাইভ?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি
সিক্স?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি সেভেন?— রোল নাম্বার টুয়েন্টি এইট?—
রোল নাম্বার টুয়েন্টি নাইন?— রোল নাম্বার থার্টি?—
(আজ নো স্টুডেন্ট ফাউন্ড হল)
বিচ্ছেদজাতীয় ব্যাপারে…
তোমার ফোনও এল না, তুমিও এলে না।
অথচ সামনের বাড়িতে নতুন রং করল ওরা—
শরৎকাল হল।
না, কান্না পাচ্ছে না, দম বন্ধ হচ্ছে না
লিখতে বসেছি, কবিতাও হচ্ছে…
তোমার ফোনও এল না, তুমিও এলে না,
পৃথিবীটা আমার তবু আগের মতোই রয়ে গেল।
(মজার ব্যাপার হচ্ছে, লোকজন কবিতা চায় বলে এত ভ্যান্তারা করে লিখতে
হয়। না হলে লিখতাম: ‘তুমি না এলে ছেঁড়া গেল!’)
রবীন্দ্রনাথ
‘আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি—
আমার যত বিত্ত প্রভু আমার যত বাণী,
আমার চোখের চেয়ে দেখা, আমার কানের শোনা,
আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা।
সব দিতে হবে
আমার প্রভাত আমার সন্ধ্যা হৃদয় পত্রপুটে
গোপন থেকে তোমার পানে উঠবে ফুটে ফুটে।
এখন সে যে আমার বীণা, হতেছে তার বাঁধা—
বাজবে যখন তোমার হবে তোমার সুরে সাধা।
সব দিতে হবে
তোমারি আনন্দ আমার দুঃখে-সুখে ভরে
আমার করে নিয়ে তবে নাও যে তোমার করে।
তোমার বলে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে
তোমার করে দেব তখন তারা আমার হবে।
সব দিতে হবে’
অথবা ধরুন—
‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথে যে জন ভাসায়
যে জন দেয় না দেখা, যায় যে দেখে— ভালবাসে আড়াল থেকে—
আমার মন মজেছে সেই গভীরের গোপন ভালবাসায় ’
এইসব কথাবার্তা যে লিখেছে, তাকে নিয়ে কোনও কথা হবে না।
একটি মিইশটি নারীবাদী লেখা
নেবেন-নেবেন, না নেবেন-না নেবেন কিন্তু নেবেন-নেবেন করে
নেবেন না এমন করবেন না এই মাগনার বাজার লুটে লিন পুটে লিন
তোরঙ্গমার্কা প্রতিশ্রুতি বৃথা না যায় দেখবেন আয়নার সামনে
লটকে থেকে দেড়ফুটি বেণী বাঁধিলাম আর এখন যদি পছন্দ না হয়
যদি কালো বলে গালমন্দ করেন আমাদের বউ ঝিয়েদের কষ্ট
হয় না বুঝি স্বর্গে হুলস্থুলু মঞ্চে ফুল টাইপের চেহারা আপনাদের
যাবার বেলা মুখ ফিরিয়ে চাট্টি কথা দিয়ে যান এই কুটনো কোটা
বাটনা বাটা জীবন থেকে একবার এট্টু শান্টিং-এর ব্যবস্থা করুন
মাইরি কলাগাছের তলায় শুয়ে থাকতে-থাকতে পিরিয়ড যে প্রায়
শেষ হয়ে এল এইবার ছুটির ঘণ্টা পড়বে এই মাগনার বাজারে
নেবেন-নেবেন, না নেবেন-না নেবেন কিন্তু নেবেন-নেবেন করে
নেবেন না এমন করবেন না…
বনবাংলো
আমরা ‘বনবাংলো-বনবাংলো’ খেলছি।
প্রথমে রামমনোহর এসে জিগ্যেস করবে— ‘আচ্ছা, এখানে বনবাংলোটা কোথায়?’ রামমনোহরের পরনে ধুতি আর পাগড়ি, জাতে গোয়ালা, দুধ-ফুদ দোয় আর কী, কিন্তু কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। ঘুমন্ত বিছুটিপাতা, নগরপালিকা বা সিন্থেটিক গিটার— কেউ না। অগত্যা সে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে যাবে।
এরপর ঝুমরি এসে ঢং করে জানতে চাইবে— ‘আচ্ছা, এখানে বনবাংলোটা
কোথায়?’ ঝুমরি খুব সেক্সি। ঝুমরির সারা গা দিয়ে ভকভক করে মিলনের,
মানে সঙ্গমের লাল গন্ধ বেরোচ্ছে। পারলে গোটা ব্রহ্মাণ্ডটা সে নিজের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়— এইরকম। কিন্তু কেউ ঝুমরির প্রশ্নের উত্তর দেবে না। হোমার— রচনাবলী, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিংবা রজনী পোহালো— কেউ না। সুতরাং ঝুমরিও ঠোঁট উলটে ফিরে যাবে।
এরপর মোহন-হিজড়ে এসে ঠপাৎ করে তালি মেরে বলবে— ‘আচ্ছা, এখানে বনবাংলোটা কোথায়?’ মোহনের কোনটা ছেলেদের মতো আর কোনটা মেয়েদের মতো, বলা ভার। কিন্তু কেউ মোহনের প্রশ্নের জবাব দেবে না। অকালকুষ্মাণ্ড, বৈজু-বাওরা অথবা তেরে মেরে বিচমে— কেউ না। ফলে, মোহন-হিজড়ে পুনর্বার তালি মেরে ফিরে যাবে।
এরপর একটা কেঁচো এসে জিগ্যেস করবে— ‘আচ্ছা, এখানে বনবাংলোটা কোথায়?’
আমরা ‘বনবাংলো-বনবাংলো’ খেলছি।
গোরুর রচনা
গোরু একটি ত্রিমাত্রিক গৃহপালিত পশু। গোরুর দুটো কান, দুটো চোখ আর একটা ল্যাজ আছে। গোরুর চারটে পা। দুটো সামনের দিকে, দুটো পেছনের দিকে। পায়ে খুরও আছে। বেশিরভাগ গোরুই খুব ভাল। গোরু মানুষের নানারকম কাজে লাগে। গোরুরা সকালে করে দুধ দেয়। সেই দুধ থেকে মাখন, ঘি, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। গোরুদের পায়খানাকে বলে গোবর। গোবর থেকে ঘুঁটে হয়। ঘুঁটে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করা হয়। গোরুর পেচ্ছাপ কোনও কাজে লাগে না। গোরুর মাংসকে বলে বিফ। খেতে খুব ভাল আর স্বাস্থ্যকর হয়। মুসলমান মানুষেরা গোরুর মাংস খেতে ভালবাসে। গোরুর ডিম হয় না। তাই গোরুর ডিমের মামলেট আমরা খেতে পাই না। গোরুর ডাককে ‘হাম্বা’ বলা হয়। গোরু উড়তে পারে না। তা ছাড়া গোরুর ডানাও নেই। হিন্দুরা গোরুকে দেবতা বলে মনে করে। দেবতারা হিন্দুদের গোরু বলে মনে করে। তারপর গোরু মারা গেলে গোরুকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্মশানে মানুষ পোড়ানো হয়। গোরুও পোড়ানো হয়। শ্মশানে খুব অন্ধকার হয় আর বড়-বড় গাছ থাকে। শ্মশানে আত্মাও থাকে। অনেকরকমের শ্মশান হয়। যেমন বড় শ্মশান, ছোট শ্মশান ইত্যাদি। সাধারণত গঙ্গার ধারে শ্মশান বানানো হয়। শ্মশানে অনেক বড়-বড় সাধক তপস্যা করেন। আমাদের দেশে অনেক বড়-বড় সাধক জন্মেছেন। যেমন রামকৃষ্ণ, বামাখ্যাপা, সত্যজিৎ রায় আর অমর্ত্য সেন। এঁদের মধ্যে অমর্ত্য সেন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।
তোমার জীবনে স্মরণীয় দিন
আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন হল গতকাল। গতকাল সকাল সাড়ে ন’টায় ঘুম থেকে উঠলাম। প্রথমে হিসি করলাম তারপর ব্রাশ করলাম। দু’গ্লাস জল খেয়ে পায়খানা গেলাম। বেরিয়ে চা-পাঁউরুটি খেলাম আর কাগজ দেখলাম। তারপর কিছুক্ষণ গান শুনলাম। দশটা-চল্লিশ থেকে এগারোটা অব্দি এই কবিতাটার খসড়া বানালাম। তারপর দাড়ি কামালাম। আবার গান শুনলাম। একটা নাগাদ চানে গেলাম। বেরিয়ে ভাত খেলাম। তারপর কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। তিনটে দশ-টশ নাগাদ শুলাম। ঘুমিয়ে নিলাম। পাঁচটা নাগাদ উঠে চা খেলাম। আবার হিসি করলাম, চোখে-মুখে জল দিলাম। তারপর জামাকাপড় পালটে বেরোলাম। অটো ধরে অনির্বাণের বাড়ি গেলাম। অনির্বাণ ছিল না। বসলাম। কিছু পরে অনির্বাণ ফিরল। দু’জনে মুড়িমাখা খেলাম। তারপর চা খেলাম। অনির্বাণ নিজের কিছু কবিতা শোনাল। আমিও আমার কিছু কবিতা শোনালাম। তারপর এদিক-ওদিক কিছু কথা হল। আটটা নাগাদ আবার চা খেলাম। ন’টার সময়ে বাড়ি ফেরার অটো ধরলাম। সোয়া ন’টায় বাড়ি ফিরলাম। দু’-তিনটে ফোন এল। এগারোটা নাগাদ খেতে বসলাম। খেয়ে উঠে ঘণ্টাখানেক টিভি দেখলাম। তারপর হিসি করে শুতে গেলাম। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন
শুধু আই লাভ ইউ?
শুধু নাম-ঠিকানা?
শুধু ক্লাস-কাট?
শুধু সাজা-গোজা?
শুধু গ্রিটিংস?
শুধু রোজ-রোজ?
শুধু ফুচকা?
শুধু উঠল বাই তো হাত সাফাই?
শুধু শরীর-শরীর?
শুধু মন-মন?
শুধু চিঠি-লেখা?
শুধু বাবা-মা’র অমত?
শুধু মান-অভিমান?
শুধু মুখ দেখা বন্ধ?
শুধু এই? এই? এই? এই? এই?
প্রেমিক-প্রেমিকারা পটি করে না?
অনুভব করেছি, তাই বলছি
… তা ছাড়া সবসময় ভালও লাগে না এই প্যানরপ্যানর। লেখনী চালু।
(ধরুন গিয়ে এই আমার শেষ পাঠযোগ্য লেখা) ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। নমো।
আমার শুধু নয়, আমাদের। আমাদিগের কোনও সাইট নাই। এমনকী
আইসাইটও নয়। শাঁ-আ-আ-আ-আ… লেখা চলছে…
ধরো, মৃত্যুর আগমুহূর্ত… ১১৭ তলার কার্নিশ থেকে হাফ ঝোলা ঝুলছে
মরা বেড়াল… তার অর্ধেকটা গায়ে দিয়েছে সূর্য… বাকিটা গলে-গলে
পড়ছে নীচে.. ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে… আহ… ক্যাঁচকোঁচ-ক্যাঁচকোঁচ
কীসের শব্দ রে ভাই?… ভাইটি আমার— তোর মরণদৃশ্যে কাঁদতে এল
সে কোন পাড়ার ভবতারিণী… এ তার পৈতৃক এক্কাগাড়ি না হয়ে যায় না
আর হেলিকপ্টার গোঁত্তা খেতে-খেতে বমি করে চলেছে গোলাপফুল…
ভাবো, কে ফর কাইট-এ আগুন লেগে গেছে আর বি ফর বল ফেটে রক্ত
বেরোচ্ছে… সোনামণি… জিন্দেগি কা সফর হ্যায় ইয়ে ক্যায়সা সফর…
তুমি গতকাল ন্যাড়া হয়েছ… এখন সেই মাথায় জন্ম নিচ্ছে পাপ…
কালো-হলুদ রঙের শয়তান প্যাঁচা মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে… নীচের
সহস্র খেত-খলিয়ানে ছড়িয়ে পড়ছে তার তেজস্ক্রিয় পেচ্ছাপ… আজ
বছরের যে-কোনও দিন তোমার মৃত্যুদিন…বাইবেল…বাইবেল…
বেল বটস… বেল বটল… বটল ইম্প… বটল ইম্পর্ট্যান্ট… ইম্পর্ট্যান্ট বলে
কিছু নেই… শব্দের আগুপিছু বোঝানো যাচ্ছে না তোমায়… তুমি মাল
‘বালুকাকুমার’ উপাধিপ্রাপ্ত মানুষ… শালা, ইয়ার্কি হচ্ছে!… দেখি!
দেখি, ভিড় হটান— এই তো, এই তো আমি এসে গেছি, বলো তো সোনা—
তোমার শেষ ইচ্ছা… পকেট থেকে কাচের টুকরো যত ছিল সব বার করে
নিলাম— সন্ধে হয়ে আসছে… ডেলিভারি ডেট কবে… বলো, বলো…
এক্ষুনি মরবে তুমি… দুঃখ-ফুঃখ বাদ দাও… কোকিল-টোকিল ডাকছে না…
ওসব প্রেমিকা-ফেমিকা বাজে কথা… ধরো তুমিই কোকিল কিংবা
প্রেমিকা কিংবা দুঃখ স্বয়ং… ধরো তাও নয়… ধরো তুমিই লিখছ আর অন্য
কেউ মারা যাচ্ছে… অথবা মনে করো… আয়না লাগবে, হারামজাদা?
বলবি কি না বল, বল, বল! মৃত্যুর আগে, একবার, স্রেফ একবারের
জন্যে হলেও, আমার হাতে একটা এগরোল খেতে ইচ্ছে করছে না?
—পাঠক, ভাইসব, এই হল আমাদের লেখার একটা বিলানমুনা।
বলো— ভৈরবীর জয়। মাইনেপত্তর কত দেবে রে? বুঝে দেখুন পাঠক,
এই জায়গাটা কী লিখে ভরাব ভেবে পাচ্ছি না। আপনাদের কোনও সাজেশন?
কী-ই আর বলবেন… সবে মিলে তো জন্মাতে চললাম মৃত্যুর মাঠে… দূরে—
দূরে পরীক্ষার পড়া করছে একতলা সব বাড়ি… আমাদের দোষ দেবার কেউ
নাইগো-ঝনর্ঝন বৃষ্টি ভেঙে পড়ার আওয়াজে সংবিৎ চলে যায়… আহা…ওই
অপরূপ আলোয় যদি চাকরি লুকনো থাকত একটা… মনে পড়ছে…
শাঁ-আ-আ-আ-আ-আ লেখা শুধু হচ্ছে… কী করা আর…
হাজার-হাজার ফ্রাস্ট্রেটেড ছেলেমেয়ে শ্রাবণের আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে কি
‘জন-গণ-মন-অধি’ গাইব নাকি?… যখনি দুয়ার খুলে দেখেছি
তুমি দাঁড়িয়ে আছ… চেয়ার ঠেলে উড়িয়ে দিয়েছি…নতুন করে ‘না’ বলবার
আর কী আছে… যারা দাঁড়িয়ে আছ, দয়া করে বুঝে যাও ‘না’, ‘না’, ‘না’, ‘না’
সাগরের ধারে-ধারে যত ঝিনুক সব বুঝে যাও
যাও
যাও
যাও
যাও
যাও
যাও বুঝে যাও বুঝে… ছিঃ! পাগলের মতো করে না।… যাও কালকের
পড়া করো গিয়ে, আমি কাকুকে বুঝিয়ে বলছি… ও কী! অ্যাকোয়ারিয়াম
ভাঙল কোথায়?… এখন যদি মাছগুলো বড় হয়ে টেস্ট পেপার গিলে ফ্যালে?
এই ভয়েই তো আমরা এত ছোট হয়ে আছি যে বলবার কিছু নেই… এই যে
অনির্বাণ অমুকের সঙ্গে আর থাকতে পারছে না এই যে আমি তমুককে
ভুজুং-ভাজুং দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছি… কী-ই করব, উপায় নেই… এই বেলচার
মতো রোদ ঢালু সইতে-সইতে প্রেম-ফ্রেম এখন অবসোলিট… পারছি না।
সিম্পলি নিতে পারছি না। কোনও কথা হবে? বরং কেউ চাইলে একটা
কালার প্রিন্ট আউট এনে দিতে পারি… আহ্ লাগছে!… গড়িয়ে-গড়িয়ে
নেমে এল রাত— ধানি পাধা সারে মাগা… ঝিঁঝিট… ঝিঁঝিট ডাকছে
ঘুম থেকে উঠেই নতুন করে লেখা শুরু— আগের এপিসোডের সঙ্গে কোনও
মিল না থাকাই স্বাভাবিক… আর চাট্টি তরকারি দেখি— বাঃ বেশ মেঘ
করেছ… ঐকার অর্থ ঐরাবত, ধ্যাশ। প্যাঁ-অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা—
আইলো অলি কুসুমকলি— ট্যান্ট্যাড়্যাঁ-অ্যাঁ— আমি জেমস বন্ড, আমার
বাবা ভ্যাগাবন্ড, তার বাবা ইক্যুইটি বন্ড… হ্যাত! বললেই হল-?
বাজে কথায় কান দেব-ও-ও-ও…না, কই আগের মতো
হচ্ছে না তো লেখাটা… কনটিন্যুইটি থাকছে না একদম… ধু-উ-শ…
সব অবলিক চিহ্ন দিয়ে সারিয়ে দেব… ধনেপাতা কত করে দাদু?
সিন্স জ্যাক ইজ অ্যাফ্রেইড
দ্যাট জিল উইল থিংক দ্যাট
জ্যাক ইজ অ্যাফ্রেইড
জ্যাক প্রিটেন্ডস দ্যাট জ্যাক ইজ নট অ্যাফ্রেইড অফ জিল
সো দ্যাট জিল উইল বি মোর অ্যাফ্রেইড অফ জ্যাক
কী মজা! কী মজা!
কী মজা! কী মজা!
চো-ও-প!
—আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়, যে…
—আগেই বলেছি, আমার কখনও কিছু মনে হয় না
—ও হ্যাঁ। আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় না, যে বর্তমানে কবিতা বিপদগ্রস্ত?
—কিন্তু ওই কাচ ভেঙে পড়ার ব্যাপারে কিছু বলা হল না যে… সেই যে
শীতের শেষ দুপুর… পর্দা লেগে অ্যাকোয়ারিয়ামটা মেঝেয় গড়িয়ে গিয়ে জল
কাচ… জল… কাচ… আর সেই কাচ ভেঙে পড়ার শব্দে… না-না… সেই
কাচ ভেঙে পড়ার আওয়াজে উল বুনতে-বুনতে ঘুমিয়ে পড়া কোনও মহিলার
ঘুম লাফ দিয়ে মাটিতে নামল… বাইরে… বাইরে তখন কফিনের ওপর
মাটি পড়ার আবছা খয়েরি শব্দ…
—না, মানে, আমি বলছিলাম কী, বাংলা ভাষায় এখন…
—হ্যাঁ, ঠিকই তো। কাকু চলে যাওয়ার পরদিন থেকেই আমার
ধূমজ্বর… বেলুন বাঁধা হাতদুটো কাটাকুটি… জবাফুল ফুটল সেবার…
ওর সঙ্গে দেখা হল… বলল চলে যাচ্ছে… হঠাৎ একটা সাইকেল…
এই— আলোটা একটু কমিয়ে দে, ওকে ডাক, বল, ভয়ের কিছু নেই
—আচ্ছা, একটু অন্য প্রসঙ্গে চলে আসি। আপনি পদবি ব্যবহার
করেন না কেন?
—বেশ করি। আরেকটা বিস্কুট নেবেন?
—উঁহু ঠিকাছে। কিন্তু, নামটা এমন নতুন না হলে পারতেন?
—দেখুন, মোটামুটি ইস্ট মাঞ্চুরিয়ান সেমিআলট্রা পোস্ট মডার্নিস্ট ভিউ
থেকে স্বীকার করছি যে আমার নাম শ্রীজাত, কিন্তু তাতে অত গুরুত্ব
দেবার মতো ব্যাপার কিছু নয়
—ইয়ে… মানে… আপনার কবিতার বিষয়ে যদি কিছু…হেঁ-হেঁ…
—দূর-দূর! কত হাজার-হাজার বছর ধরে এইসব ঘ্যানঘ্যানানি চলছে,
আর ভাল্লাগে না! আমার কিন্তু বুঝলেন, ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত
লেখার একটা ইচ্ছে ছিল, সে আর হল না (বলাই বাহুল্য, রবিঠাকুর
অলরেডি লিখে গেছেন)
—অত্যাধুনিক খিস্তি সম্বন্ধে আপনার মতামত?
—আমি তো এমনি-এমনি খাই!
—আপনার প্রিয় কবি?
—তারপর তো কোটালপুত্র হিসি করতে গেল…
—আপনার জীবন-দর্শন?
—ওই যে, ভদ্রলোক নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন আর
বিশাল প্রান্তরের এক কোণে দাঁড়ানো প্রেমিকার সারা শরীরের ওপর দিয়ে
বয়ে যাচ্ছে সেই আগুনের গরম ছায়া… আমরা সেই ছায়াটা তুলে
আনতে পারলাম না
—আপনার স্বপ্ন?
—স্বপ্ন কেন হবে, একবার সত্যি সত্যি তারকভ্স্কির ঘর থেকে
তিন বন্ধুতে মিলে আকাশে ঝাঁপ দিয়েছিলাম
—আচ্ছা, রেডিয়ো অ্যাক্টিভিটি আর গুঁড়োদুধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন?
—এই, তোমার আর আমার যা পার্থক্য…
—আমাদের শেষ প্রশ্ন। আপনি আর ক’দ্দিন লিখবেন?
… শাঁ-আ-আ-আ— বাজারের থলি থেকে বেরিয়ে আলো তার
গতি ধরল… লেখা…যে-কোনও টানেলের মধ্যে দিয়ে হুশহাশ করে
বেরিয়ে আসছে যখন তখন… সে কী অবস্থা— আর কী লিখব, ভাল
থেকো, ও হ্যাঁ, আমরা আর আপনারা সবাই মিলে জড়ো হয়েছি
মৃত্যুর মাঠে… দূরে-দূরে পড়া করছে একতলা সব বাড়ি… তাদের ওপর
দিয়ে যদি আজ ভেসে আসে শরৎকালের মতো দৈত্য… দেয়ার আর মোর
থিংস… সবাই মিলে দাঁড়িয়েছি এই মাঠে… ভগবানও দেখছি আমাদের
সঙ্গে মাঠে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছেন, ওপরে তা হলে শালা কে আছে রে?
আঃ শরবত উঃ শরবত নিদেনপক্ষে বরফের কুচি করে আমাদের ঢেলে দাও—
ছোট থাকতে কিছুই বুঝিনি, এখন বুঝতে পারি, ঈশ্বর যে-হাতে মৈথুন
করতেন, সেই হাত দিয়েই আমাদের মুখেভাত করিয়েছিলেন… এখনও
পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে ঈশ্বরের পেকে যাওয়া, পচে যাওয়া একদলা বীর্য
আর বিবাহিতা বান্ধবীদের ওইখান থেকে অনর্গল বেরিয়ে আসছে
শিকড়বাকড়হীন ন্যালাখ্যাপার দল… জগদ্ধাত্রী ওদের জন্যে জাল পেতেছেন…
জগদ্ধাত্রী এই পৃথিবীর জন্যে জাল পেতেছেন… অ্যাই, কী হচ্ছে কী! আঃ
লাগে! কালো কারেন্ট— সাদা কারেন্ট— কালো কারেন্ট— সাদা কারেন্ট—
কালো কারেন্ট কিচ্ছু দেখিনি, কিচ্ছু শুনিনি, কিচ্ছু বলিনি, কিচ্ছু বুঝতেই পারি
না ভ্রমর রে— কুয়োর মধ্যে বালতি নামিয়ে কালো, ন্যাতানো ইতিহাস তুলে
আনছি— ওয়্যাক্— আমাদের মধ্যে কৌন বনেগা কড়োরপতি কেউ জানে
না… হাত দাও, হাত দাও, হ্যাঁ এইবার চিপতে থাকো… না, মুখ দেবে না…
কী বলছ কী, লক্ষ্মণ তা হলে রামের ভাই নয়? মামাতো ভাইও নয়?
হি-হু-হো-হো-হা-হা-হা-হা-হা (হাসির পর বাঁশি বেজে উঠবে)
পাহাড়ের টিলা থেকে সূর্য দেখা যেতেই তার মনে পড়ল স্বামীর কথা
আলু-২ কেজি, চা-৫০০ গ্রাম, নুন-ভালটা, ইল্লি-বিল্লি-চিল্লি-মিল্লি
হ্যালো, সুকুমার রায়?— মা-আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ
শাঁ-আ-আ-আ-আ-আ-আ আমাদের ফুঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে লেখা,
যাবার সময় ঋতুস্রাবে ভেজা প্যান্টি ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে… আমরা সেই
দুর্গন্ধ বিক্রি করতে এসেছি, পাঠক-নেবেন? দোবো একটু? দেখি—
পা ফাঁক করুন— এই তো। নিন, এবার ভালবাসা বানান করুন…
……………………………………………………………………..
……………………………………………………………………..
……………………………………………………………………..
……………………………………………………………………..
সরি, ইয়োর টাইম ইজ আপ! নেইক্সট? না-না, আয়ুর্বেদিক চলবে না।
আচ্ছা, ভালবাসা বানান না-করে দেখান! আচ্ছা, ধরুন বানান নয়…
কিংবা ভালবাসাও নয়… কিংবাও নয়… মানে… কিছুই নয় আর কী…
মানে ওই এমনি… এমনিও হয়তো নয়… হয়তোটাও হয়তো…
মানে নয়… কথাই হচ্ছিল না কোনও বিষয়ে, আপনি নেই… আমিও
নেই… অথবা (কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঠোঁট উলটে)
এই। এইরকমই হবে। এখন থেকে এইরকমই হবে। কিছু তো বলবার
নেই, চুপ করে থাকারও কিছু নেই, জাস্ট পাতা ভরাতে হবে তাই এতক্ষণ
যাচ্ছেতাই লিখলাম, যাঁরা অ্যাদ্দুর পড়েছেন, কিছু মনে করবেন না, তাঁরা
অ্যাবসোলিউট মুরগি… অ্যাখোন থেকে জা খূসি তাঈ হবে, আমড়াও জা
খূষি তাঈ কোড়বো, কাড়োঢ় বাড়োন
ষূণবোনা, অ্যাই, অ্যাই হচ্ছে না— আচ্ছা শুরু করো— স্টার্ট!—
ঝাঁকি-স্পর্শ-লাভ-টুকি-মামা-বিলা-তোফা-কিচাইন
লাভ-শালা-খিস্তি-বিমা-আলো-মা-পটল-প্রমিস
সেক্স-টাঙরি-বিষ-ঠিক-থুঃ-কূউশ-ঢ্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ
ভূমি-পাপা-মিশা-হংকং-ঢ্যাং-বিপ্র-ফেল-ইন্দ্রধনুষ—
লিলাবেলমুস্করঘিঞ্জাবালবিন্দ্রাভূষ্ণুহিটোকষ্পতানচুমিন্তুকনাঞ্চা
বি্নহ্রংশুক্রহিন্ত্রেনৃস্থপ্রুউউোঔনড্রুভ্মষজুখ্রিতেুক্রৃখ্রৌঝৃঁঃপ্রীুল্লৃৌং
হাজার! করছি বেশ! এইবার লিখছি থেকে বাঁদিক ভাষা বাংলা
নাকি একার কারও কী ভাষা! আটকায় কে দেখি! করবো বার
পাচ্ছ না শুনতে কবিতা! ভাঙছি কলম করতে-করতে শব্দ দুমাদ্দুম
সব আমরা করেই এরকম থেকে এখন! পাচ্ছি না পাচ্ছেন না পাচ্ছিস না
…তা ছাড়া আর। লিখব
কৌতূহল
বলুন না বলুন না শুনি একটুখানি জাস্ট একবার
একবার বলুন প্লিজ় প্লিজ় বলুন বলুন না একটু
কী হল বলুন না আরে বলো না ভাই কী গো
বলো তো না না কাউকে বলব না পাগল নাকি এই
দিব্যি রইল নাও নাও এবার বলো দেখি বলো না
কী গো একবার বলো সে কী রে বল না ভাইটি
মাইরি বলছি পাঁচকান হবে না লক্ষ্মী সোনা আমার
বল না রে অ্যাঁ-অ্যা-অ্যা-অ্যা এইরকম করলে
খেলব না কিন্তু প্লিজ় বাবুসোনা মনা আমার
মাণিক বল না রে কীরে বল না
ওরে হারামজাদা
বিশেষ ছাড়!
স্বরবর্ণ
অ আ ই ঈ উ
ঊ ঋ ৯ এ ঐ
ও ঔ
ব্যঞ্জনবর্ণ
ক খ গ ঘ ঙ
চ ছ জ ঝ ঞ
ট ঠ ড ঢ ণ
ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ ম
য র ল ব
শ স ষ হ
ং ঃ ঁ
প্রিয় পাঠক, আমার নামে ইচ্ছেমতো কবিতা তৈরি করে নিন।
মজার কবিতা? মোটেই না!
দেখো বাবা, ভালবেসে আবার যেন গ্লানি-ফানি দিও না—
একেই খেয়ে খুলোয় না, তার ওপর টেকনিশিয়ান কম
মা লক্ষ্মী নিজেই বাড়ন্ত…
ছেলেদের তো বেশ্যা হবার উপায় নেই,
বড়জোর হাতকাটা পাজামার দোকান দেব
তুমি তখন থাকবে তো, সঙ্গে?
না-না, মজার কবিতা একদম ভেবো না
দুঃখ-টুঃখ যা চাই সব এর মধ্যে থেকেই তো
খুঁজে নিতে হবে
এসো
কামধেনু
পরীক্ষা শেষ হতেই, খাতা থেকে ব্রণভর্তি মুখ তুলল
কামধেনু
সে-রাগ সে-দৃশ্য আর বলার না
ছুটির ঘণ্টা ছাপিয়ে তখন ভেসে আসছে চায়ের
কাপ ধোয়ার শব্দ…
যে-দুটি হাত… ওগো, যে-সাদা অ্যাপ্রনটুকু
এই পাগলামি সারিয়ে দিতে পারত,
তার মাথা এঁফোড়-ওফোঁড় করে দিয়ে বেরিয়ে গেছে
সাংঘাতিক বিকেল
শেষমেশ কাটাদাগ মুখ তুলল কামধেনু
মাথায় শিঙের বদলে দুটো ভাঙা ট্রাম গাঁথা
আর
যাত্রীদের জামাকাপড়ে তার কপাল আলোকিত
পরীক্ষা এমন সুন্দর যে
বাড়ি ফেরার বাসনাটুকু ধুয়ে মেজে দিয়েছে
সত্যি-সত্যিই তার মনে নেই
কবে সে মুখ নামিয়েছিল খাতায়…
তখন সে এমন দেখতেও ছিল না
আমি ভাবছি আয়না দেখলে কী যে হবে,
কী হবে, যখন সে জানবে
বন্ধুকে আবিষ্কার করার দিন চলে গেছে
আর
আর এই রিমঝিম তুষারপাত আকাশের বিষ্ঠামাত্র…
ড্রিম সিকোয়েন্স
ঘর মাপার বিষয়ে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা এই লেখা পড়ে দেখতে পারেন।
অচেনা কোনও ঘর সম্বন্ধে জরুরি তথ্য নথিভুক্ত করতে হলে নিম্নোক্ত
উপায়গুলি পরপর ব্যবহার করা উচিত:
১। শহরের কোনও এক কোণে খালি ঘর খুঁজে বার করুন। ঘরটি বহুতল
ফ্ল্যাটের অন্তর্গত হলে ভাল হয়। কাছাকাছি কোনও কারখানা বা
বিমানপোত না থাকাই কাম্য।
২। ঘরটিতে ঢুকেই প্রথমে সদর দরজা লক করে দিন। দেখে নিন
কোনটা ড্রয়িং, কোনটা কমন প্লেস, কোনটা ডাইনিং, কোনটা স্টাডি,
কোনটা বেডরুম, কোনটা কিচেন আর কোনটা বাথরুম।
৩। রোদ্দুর আসতে থাকলে ব্লাইন্ড ফেলে দিন। এবার সন্তর্পণে কাজ
শুরু করুন। বাইরের ঘরে উলটানো পারফিউমের শিশি অথবা ভাঙা
রেকর্ড দেখতে পান কি না লক্ষ করুন। বেডরুমে ছেঁড়া তুলো আর
রাতপোশাক আবিষ্কার করুন। রান্নাঘরে পেঁয়াজ।
৪। ফিরে আসুন বাইরের ঘরে। ব্লাইন্ড তুলে দিন। দেয়ালে কোনও
ছবি বেঁকে গেছে কি না খেয়াল করুন। ফোন বেজে চলেছে। তুলবেন না।
আনসারিং মেশিনে কণ্ঠস্বর শুনে নিন। দুপুর। বাচ্চা মেয়ের খিলখিল
হাসির আবছা শব্দ শুনে ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন, আপনি ছাড়া
পুরো ফ্ল্যাটে কেউ নেই। পিঙ্ক-ফ্লয়েডের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তো? এবার
জানলা থেকে ঝুঁকে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের দিকে তাকান। সিঁড়ি
দিয়ে নীচে নামা স্থির করুন।
৫। সম্পূর্ণ রিপোর্টটি আপনার উপরিস্থ অফিসারের হাতে তুলে