মূত্রী
কংগ্রেস হাউস আর জিন্নাহ হল থেকে একটু দূরে একটা প্রস্রাবাগার আছে। বোম্বাইতে তাকে বলে মূত্রী। আশপাশের এলাকার সমস্ত নোংরা এই পূতিগন্ধময় জায়গাটার বাইরে জড়ো হয়ে থাকে। এমনই দুর্গন্ধ যে কাছাকাছি এলে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে চলতে হয়।
তাকে একবার বাধ্য হয়ে প্রস্রাব করতে এই মূত্রীতে ঢুকতে হল। নাকে রুমাল দিয়ে, শ্বাস বন্ধ করে কোনওরকমে সে ভেতরে ঢুকল।
মেঝেতে নোংরার বুদবুদ! দেওয়ালে যৌনাঙ্গের জঘন্য সব ছবি আঁকা! সামনে এক জায়গায় কেউ একটা লিখে রেখেছে, ‘মুসলমানের বোনের ইয়েতে পাকিস্তানের বাঁশ!’
লেখাটা যেন ভেতরের দুর্গন্ধকে শতগুণে বাড়িয়ে তুলল।
হালকা হয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
জিন্নাহ হল আর কংগ্রেস হাউস দুটোই সরকারের অধীনে। কিন্তু তার একটু দূরের ওই মূত্রী স্বাধীন। স্বাধীনভাবে তা চারদিকে পচা-গলা দুর্গন্ধ ছড়াতে ব্যস্ত।
আশপাশের মলমূত্র-নোংরা এখন আরো বেশি পরিমাণে সেটার বাইরে পড়ে থাকে।
ক’দিন বাদে আরেকবার তাকে ওটার মধ্যে ঢুকতে হল। প্রস্রাব করতে। নাকে রুমাল চেপে, শ্বাস বন্ধ করে।
মেঝেতে পায়খানার স্তর জমে! দেওয়াল যৌনাঙ্গের কুরুচিকর ছবিতে ভর্তি!
‘মুসলমানের বোনের ইয়েতে পাকিস্তানের বাঁশ!’—এর নীচে কেউ একটা লিখে রেখেছে, ‘হিন্দুর মায়ের ইয়েতে অবিভক্ত হিন্দুস্তানের বাঁশ!’
লেখাটা পড়তেই তার নাকে দুর্গন্ধের সঙ্গে সঙ্গে যেন অ্যাসিড ঢুকে জ্বালা ধরিয়ে দিল। কোনওরকমে তাড়াহুড়ো করে সে বেরিয়ে এল।
মহাত্মা গান্ধী বিনা শর্তে মুক্তি পেলেন। জিন্নাহ পাঞ্জাবে হেরে গেলেন। জিন্নাহ হল আর কংগ্রেস হাউসের উপর যেমন সরকারের দখল বজায় থাকল, তেমনি একটু দূরের মূত্রী আগের মতোই দুর্গন্ধের কব্জায় রয়ে গেল।
আবার সে একদিন সেখানে ঢুকল। কিন্তু এবার অন্য কারণে…।
নাকে রুমাল দিয়ে, শ্বাস বন্ধ করে কোনওরকমে সে ভেতরে ঢুকল।
মেঝেতে পোকা কিলবিল করছে। দেওয়ালে লিঙ্গ আঁকার আর জায়গা খালি নেই।
‘মুসলমানের বোনের ইয়েতে পাকিস্তানের বাঁশ!’ আর ‘হিন্দুর মায়ের ইয়েতে অবিভক্ত হিন্দুস্তানের বাঁশ!’ লেখা দুটো প্রায় মুছে এসেছে। তার নীচে সাদা চক দিয়ে লেখা আছে, ‘দুয়েরই মায়ের ইয়েতে হিন্দুস্তানের বাঁশ!’
এক মুহূর্তের জন্য যেন লেখাটা মূত্রীর সমস্ত দুর্গন্ধ দূর করে দিল।
ধীরে পায়ে সে যখন বাইরে বেরোল, তার মনে হল যেন ওই দুর্গন্ধের আস্তানায় সে একটা অদ্ভুত সুবাস পেয়েছিল…! এক মুহূর্তের জন্য…।