একশো ক্যান্ডেল পাওয়ারের বালব
কাইজার পার্কের বাইরে মোড়ের টাঙ্গা স্ট্যান্ডের কাছে একটা ল্যাম্প পোস্টে ঠেস দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সে ভাবছিল, ‘কী অদ্ভুত নিস্তব্ধতা!’
মাত্র দু’বছর আগে এই পার্কটার চেহারা একদম অন্যরকম ছিল; আর এখন রীতিমতো জীর্ণ দশা! যেখান দিয়ে আগে কেতাদুরস্ত সাজপোশাকে মানুষজন চলাফেরা করত, এখন চালচুলোহীন গুটিকয় লোক লক্ষ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়! বাজারে ভিড় থাকলেও আগের সেই জৌলুস নেই! চারিদিকের সিমেন্টের বাড়িগুলোও প্রায় ন্যাড়া দাঁড়িয়ে; বিধবার মতো একে অন্যের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে!
কোথায় সেই রূপ! সেই সিঁদুর, সেই রুজ পমেটম সব মুছে গিয়ে পার্ক এখন ফ্যাকাশে!…সেই সুরই বা কোথায়!…মাত্র দু’বছর আগেই তো সব ছিল!…এই তো সেদিনের কথা!…একটা মোটা মাইনের চাকরি পেয়ে সে কলকাতা থেকে এখানে এসেছিল। চেষ্টা করেছিল কাইজার পার্কেই একটা ঘর ভাড়া নিতে…কিন্তু অনেক খুঁজেও পায়নি…এখন অবশ্য চারিদিকের যা অবস্থা, মুচি-মেথর যে খুশি এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে পারে!
এক জায়গায় আগে একটা বড় ফিল্ম কোম্পানির দপ্তর ছিল। এখন সেখানে উনুন জ্বলছে! আগে বড় বড় গায়কেরা যেখানে জমায়েত হত, সেখানে এখন ধোপার দল নোংরা কাপড় ধুচ্ছে!
দু’বছরে এত পরিবর্তন!
সে এই পরিবর্তনের আসল কারণ জানত। কিছুটা খবরের কাগজ আর কিছুটা বন্ধুবান্ধবদের বদান্যতায়। সে জানত, কী ঝড় বয়ে গেছে! এমন ঝড় যা শহরের সব রূপ-জৌলুস উড়িয়ে নিয়ে গেছে! হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছে! না জানি কত মহিলা তাদের সম্মান হারিয়েছে! ইমারতগুলোর ইঁট-কাঠ-পাথরও ছাড়া পায়নি!…বেআব্র& মহিলাদের নগ্ন ক্ষতবিক্ষত বুকের মতোই চারিদিক রুক্ষ-শুষ্ক, ন্যাড়া, আহত চেহারায় দাঁড়িয়ে!
সে ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিল। বন্ধু তার জন্য থাকার জায়গার বন্দোবস্ত করে দেবে বলেছিল।
দু’বছর আগে যখন সে চাকরিসূত্রে এখানে এসেছিল, তখন এই টাঙ্গাস্ট্যান্ড খুব বিখ্যাত জায়গা ছিল। এখানে শহরের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট টাঙ্গা পাওয়া যেত। ফুর্তির সমস্ত উপকরণই হাতের কাছে মজুত ছিল। ভালো ভালো হোটেল ছিল। দারুণ চা, চমৎকার খাবার পাওয়া যেত। শহরের সমস্ত বড় দালালও এখানেই ঘোরাফেরা করত।
আগে সে বন্ধুর সঙ্গে মাঝে-মাঝেই এখানে আসত ফুর্তি করতে। রাত কাটানোর জন্য ভালো ভালো মেয়ে পাওয়া যেত। দামি মদের কোনো অভাব ছিল না। এখন তো যুদ্ধের বাজারে স্কচ-টচ প্রায় দুর্লভ!
টাঙ্গাও দাঁড়িয়ে ঠিকই। কিন্তু তার ভিতর সেই সাজসজ্জাও নেই, সেই পিতলের চমকও নেই, সেই জাঁকজমকও নেই!
সে ঘড়ি দেখল। সাতটা বেজে গেছে।
ফেব্র&য়ারি মাস। চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।
সে মনে মনে বন্ধুর বংশোদ্ধার করতে লাগল। শেষে চা খেতে পাশের একটা হোটেলে যাবে বলে পা বাড়াতেই তাকে কে একটা যেন পিছন থেকে আস্তে করে ডাকল।
সে ভাবল, তার বন্ধু এসে গেছে। সে পিছন ফিরল। বন্ধু নয়। একটা অচেনা লোক! বৈশিষ্ট্যহীন চেহারা, পরনে শতচ্ছিন্ন শালওয়ার আর নীল রঙের পপলিনের নোংরা কামিজ।
‘কী ব্যাপার? আমায় ডাকছিলে?’
‘জি!’
তার হঠাৎ মনে হল, এ হয়তো ভিখারি!
‘কী চাও?’
‘কিছু না।’ বলে লোকটা তার কাছে এগিয়ে এসে আরেকটু নিচু স্বরে বলল, ‘আপনার কিছু চাই?’
‘কী?’
‘এই যেমন মেয়ে-টেয়ে।’ বলে লোকটা আবার পিছিয়ে গেল।
সে চমকে উঠল। ভালো করে লোকটাকে দেখল। এইরকম সময়েও লোকে এইসব নিয়ে ব্যবসা করছে!…মনুষ্যত্বের অবনতির কথা ভাবতে ভাবতে সে জিগ্যেস করল, ‘কোথায়?’
তার কথার ধরনে দালাল নিরাশ হয়ে ফেরত যাওয়ার জন্য পা বাড়াল, ‘জি থাক!…আপনার দরকার নেই!’
সে দালালকে দাঁড় করাল, ‘তোমায় কে বলল যে দরকার নেই? তুমি যে জিনিসের ব্যবস্থা করতে পার বলছ, তার দরকার তো সবসময়! শূলে চড়েও দরকার, চিতায় উঠেও দরকার…!’
প্রায় দার্শনিকের মতো বলতে বলতে হঠাৎ সে থেমে গেল। তারপর আবার বলল, ‘দেখ, যদি কাছাকাছি থাকে তো বল। যেতে পারি। এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছি।’
দালাল কাছে এসে উত্তর দিল, ‘কাছেই। একদম কাছে।’
‘কোথায়?’
‘এই সামনের বিল্ডিংয়ে।’
‘এই…এই বড় বিল্ডিংটায়?’
‘জি হ্যাঁ!’
সে থতমত খেয়ে গেল, ‘আচ্ছা তাহলে…’, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে জিগ্যেস করল, ‘আমিও সঙ্গে যাব?’
‘চলুন…কিন্তু আমি আগে যাই।’
দালাল সামনের বড় বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে আরম্ভ করল।
সে বিভিন্নরকম হৃদয়বিদারক কথা ভাবতে ভাবতে দালালের পিছন পিছন চলতে লাগল।
কয়েক গজ দূরেই ছিল বিল্ডিংটা। একটু হেঁটেই দুজন সেখানে পৌঁছে গেল।
বিল্ডিংয়ের ভিতরের অবস্থা করুণ! চুন খসে পড়ছে, জায়গায় জায়গায় ইট বেরিয়ে আছে, ফাটা জলের পাইপ এদিকে-ওদিকে পড়ে আছে, যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই আবর্জনার স্তূপ!
চারিদিক অন্ধকার। উঠোনের মতো একটা জায়গা পেরিয়ে দালাল ঘুরে একদিকের পথ ধরল। সেখানে তখনো বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ন্যাড়া ইট, নুড়ি-পাথর, চুন আর সিমেন্টের স্তূপ ছড়িয়ে রয়েছে!
একটা অর্ধনির্মিত সিঁড়ি বেয়ে দালাল উঠতে লাগল। তাকে বলে গেল, ‘আপনি এখানেই দাঁড়ান একটু। আমি আসছি।’
সে থেমে গেল। দালাল সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। উপরে যেখানে সিঁড়ির ধাপ শেষ হয়েছে, সেদিকে তাকাতে একটা জোরালো আলো তার চোখে পড়ল।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু পরে অধৈর্য্য হয়ে সে পা টিপে-টিপে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল। শেষ সিঁড়িটায় পৌঁছতেই তার কানে এল দালালের কর্কশ গলার স্বর, ‘ওঠ বলছি! উঠবি কি না!’
এক নারীকণ্ঠ ভেসে এল, ‘বললাম তো, আমায় ঘুমোতে দে।’ মেয়েটার গলা কেমন যেন নিস্তেজ শোনাল।
‘ওঠ বলছি!…কথা না শুনলে মনে রাখিস…’
‘মেরে ফেল তুই আমায়!…কিন্তু আমি কিছুতেই উঠব না।…আমার উপর দয়া হয় না তোর?!’
‘ওঠ না রে!…জেদ করলে আমাদের পেট চলবে কী করে!’, দালাল বাচ্চা ভোলানোর কায়দায় বলল।
‘জাহান্নামে যাক সেসব!…না খেতে পেয়ে মরবই তো!…মরে যাই সেও ভালো! না ঘুমিয়ে আর থাকতে পারছি না!…আমায় ঘুমোতে দে!’
দালালের গলা আবার কর্কশ হয়ে গেল, ‘উঠবি না!? হারামজাদী, শুওরের বাচ্চা!’
মেয়েটা চিৎকার করে উঠল, ‘না! উঠব না, উঠব না…কিছুতেই উঠব না!’
দালাল চাপা গলায় বলল, ‘আস্তে! আস্তে কথা বল!…শুনতে পেয়ে গেলে!…চল ওঠ…তিরিশ চল্লিশ টাকা পাওয়া যাবে…’
‘তোর পায়ে পড়ি আমায় ছেড়ে দে!…কতদিন ধরে জেগে আছি!…আমার উপর দয়া কর!…দয়া কর!’, মেয়েটার গলায় আকুতি।
‘এক-দু’ঘণ্টার ব্যাপার, ব্যস, তারপর ঘুমোস।…কী রে? শুনছিস? নইলে আমায় জোরজবরদস্তি করতে হবে।’
হঠাৎ সব চুপচাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ সে শ্বাস বন্ধ করে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর আবার পা টিপে টিপে এগিয়ে ঘরের মধ্যে উঁকি মারল।
ঘরের মধ্যে একটা জোরালো আলোর বালব জ্বলছে! ছোট্ট, আসবাবহীন ঘর। শুধু দু-তিনটে বাসন ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ছে না। মেঝেতে একটা মেয়ে শুয়ে। দালাল দরজার দিকে পিছন ফিরে বসে মেয়েটার পা টিপছে।
একটু পরে দালাল আবার মেয়েটাকে বলল, ‘নে এবার ওঠ!…মাইরি বলছি, এক-দু’ঘণ্টার বেশি লাগবে না। তারপর যত ইচ্ছা ঘুমোস!…’
মেয়েটা আহত সাপের মতো ফুঁসে উঠল। চিৎকার করে বলল, ‘ঠিক আছে, উঠছি আমি।’
সে ভয়ে পিছিয়ে গেছিল। পা টিপে টিপে সে সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে গেল।
তার মনে হল, পালিয়ে যাবে…শহর থেকে, পৃথিবী থেকে…যেখান থেকে হোক, পালিয়ে যাবে, ব্যস।
সে ভাবতে লাগল, মেয়েটা কে?! তার উপর এত অত্যাচার কেন করছে লোকটা?! দালালটা মেয়েটার কে হয়! ওরা ওই ছোট্ট ঘরটায় কেন থাকে?! ওইটুকু ঘর, আর এত তীব্র আলো! অন্তত একশো ক্যান্ডেলপাওয়ারের হবে ওই বালবটা! অত আলোয় কারোর ঘুম আসে নাকি!
তার মাথা চিন্তার জটে আর চোখ বালবের আলোয় ধাঁধিয়ে গেছিল।
হঠাৎ পাশেই একটা আওয়াজ হল। সে ফিরে তাকাল। দুটো ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে।
‘দেখুন…’, দালালের ছায়া বলল।
সে উত্তর দিল, ‘দেখে নিয়েছি…।’
‘চলবে?’
‘চলবে।’
‘চল্লিশ টাকা?’
‘ঠিক আছে।’
‘দিয়ে দিন।’
তার মাথা কাজ করছিল না। সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ক’টা নোট বার করল। না গুনেই দালালকে দিয়ে বলল, ‘গুনে নাও কত আছে।’
নোটের খড়খড় আওয়াজ হল। তারপর দালাল বলল, ‘পঞ্চাশ আছে।’
‘পঞ্চাশই রাখ।’
হঠাৎ করে তার রাগ হয়ে গেল। ভীষণ রাগ! মনে হল একটা পাথরের চাঁই দিয়ে দালালটার মাথায় মারে!
দালাল বলল, ‘নিয়ে যান। দেখবেন, বেশি বিরক্ত করবেন না। এক-দু’ঘণ্টায় ফেরত দিয়ে যাবেন এখানে।’
সে বড় বিল্ডিংটা থেকে বেরিয়ে এল।
বাইরে একটা টাঙ্গা দাঁড়িয়ে ছিল। সে সামনে উঠে বসল। মেয়েটা পিছনে।
দালাল তাকে একটা সেলাম ঠুকল। তার আবার মনে হল, পাথর ছুঁড়ে দালালটার মাথা ফাটিয়ে দেবে!
মেয়েটাকে নিয়ে সে গেল কাছের একটা সুনসান হোটেলে।
ঘরে ঢুকে সে পরিষ্কার মাথায় ভাবার চেষ্টা করল যে পুরো ব্যাপারটা কী হল আর কীভাবে হল! মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সে দেখল, মেয়েটা যেন আপাদমস্তক বিধ্বস্ত! ঠোঁট ফুলে আছে! চোখ প্রায় বোজা! পুরো শরীরটাই যেন কুঁজো হয়ে আছে! দেখে মনে হচ্ছে একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি!
সে বলল, ‘মাথাটা একটু তুলবে?’
মেয়েটা চমকে উঠল, ‘কী?!’
‘কিছু না!…বলছিলাম, একটুও কথা বলবে না?’
মেয়েটা তাকাল। চোখ দুটো টকটকে লাল। যেন কেউ তাতে লঙ্কা ডলে দিয়েছে!
সে জিগ্যেস করল, ‘তোমার নাম?’
‘কিছু না।’ মেয়েটার গলায় আগুন!
‘কোথায় থাকো?’
‘তোমার যেখানে মনে হয়।’
‘এত রেগে আছ কেন?’
মেয়েটা যেন হঠাৎ জেগে উঠল। রক্তবর্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, ‘তুমি নিজের কাজ কর। আমার ফিরতে হবে।’
‘কোথায় ফিরবে?’
মেয়েটা রুক্ষস্বরে বলল, ‘যেখান থেকে নিয়ে এসেছ, সেখানে!’
‘তুমি যেতে চাইলে চলে যাও।’
‘তুমি যা করতে এনেছ, করো না! আমায় কেন বিরক্ত করছ?’
সে ব্যথাভরা গলায় উত্তর দিল, ‘আমি তোমায় বিরক্ত করছি না…আমার মায়া হচ্ছে তোমার জন্য!’
মেয়েটা তিতিবিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বলল, ‘চাই না তোমার মায়া!… তুমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো, যাতে আমি যেতে পারি।’
সে কাছে এসে মেয়েটার মাথায় হাত বোলাতে যেতেই মেয়েটা এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দিল।
‘বলছি তো আমায় বিরক্ত কোরো না!…কতদিন হয়ে গেল আমি ঘুমোইনি!…যবে থেকে এখানে এসেছি, জেগে আছি!’…
তার সহানুভূতি আরো বেড়ে গেল, ‘এখানে ঘুমিয়ে পড়।’
মেয়েটার চোখ আরো লাল হয়ে গেল। তীক্ষ্ন গলায় সে বলল, ‘এখানে কেন ঘুমোব!! এটা আমার বাড়ি?’…
‘তোমার বাড়ি কোনটা?…যেখান থেকে এলে?’
‘উফ…বাজে কথা রাখ বলছি!…আমার কোনো বাড়িঘর নেই। হয়েছে?… তোমার কিছু করতে হয় করো, নইলে আমায় রেখে এস…নিজের টাকা ফেরত নিয়ে নাও…’, মেয়েটা গালি দিতে গিয়েও চুপ করে গেল।
সে বুঝল, এই অবস্থায় প্রশ্ন করা বা সহানুভূতি দেখানো অর্থহীন। সে শুধু বলল, ‘চলো, তোমায় রেখে আসি।’
মেয়েটাকে সে ওই বিল্ডিংয়ে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
পরের দিন কাইজার পার্কের একটা সুনসান হোটেলে বসে সে তার বন্ধুকে গল্পটা বলছিল। শুনতে শুনতে বন্ধুরও মন নরম হয়ে গেল। বন্ধু দুঃখের সঙ্গে জিগ্যেস করল, ‘জোয়ান মেয়ে?’
সে বলল, ‘জানি না…ভালো করে দেখিনি…আমার শুধুই মনে হচ্ছিল, দালালটার মাথা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিই!’
বন্ধু বলল, ‘ঠিক করতিস…করাই উচিত!’
বেশিক্ষণ সে আর বসল না। তার মাথায় তখনো আগের দিনের ঘটনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। চা শেষ করে সে উঠে পড়ল।
বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে টাঙ্গাস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াল। এদিক-ওদিকে তাকিয়ে সে দালালটাকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু কাউকে তার চোখে পড়ল না।
সাতটা বেজে গেছিল। বড় বিল্ডিংটার উল্টোদিকেই সে দাঁড়িয়ে। সে বিল্ডিংটার দিকে পা বাড়াল। উঠোন পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেখল, চারদিক অন্ধকার। দিক ঠাহর করে সিঁড়ির দিকে এগোতে সে দেখল উপর থেকে একটা জোরালো আলো আসছে। সে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল। শেষ সিঁড়িতে পৌঁছে দেখল, ঘরের ভিতর থেকে আলো আসছে। কিন্তু সব নিস্তব্ধ। সে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সে ঘরের ভিতর উঁকি মারল। সঙ্গে সঙ্গে বালবটার আলোয় তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সে মুখ ফিরিয়ে খানিকক্ষণ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর ঘাড় নামিয়ে আবার ঘরে উঁকি মারল যাতে বালবের আলো তার চোখে না পড়ে।
ভিতরে মেঝের উপর চাটাই পাতা। একটা মেয়ে তাতে শুয়ে।…
সে ভালো করে তাকাল।
মেয়েটা ঘুমোচ্ছে। মুখের উপর ওড়না। বুক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নামছে-উঠছে।…
সে আরেকটু এগিয়েই একটা অস্ফুট চিৎকার করে ছুটে পিছিয়ে এল। কোনওরকমে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
…মেয়েটার থেকে একটু দূরে একটা লোক মেঝেতে শুয়ে ছিল। মাথা ফেটে চৌচির! পাশে একটা রক্তাক্ত ইট পড়ে!…