প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা

প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা

বাবা তাকে বুক-কিপিং এর কাজটা শিখে রাখতে বলেছিলেন, যাতে আর দশটা মেয়ের মত স্বামী-সংসারের প্রতীক্ষায় বসে থাকতে না হয়। এখন সে রেলওয়ে অধিদপ্তরের মালামাল বিভাগে বুক-কিপারের কাজ করে। অফিসের সবাই তাকে একজন যোগ্য কর্মী এবং যোগ্য নারী হিসেবে চেনে। সবার সাথেই সে চমৎকারভাবে মিশতে পারে। সব মিলিয়ে, তার মধ্যে অমিত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

একদিন বন বিভাগের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হল। অল্প কিছুদিনেই দুজনের মধ্যে বেশ বোঝাপড়া হয়ে গেল। কিছুদিন বাদে তারা বিয়ে করল। নতুন দম্পতির চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির সিদ্ধান্ত হল, তারা কখনোই সন্তান নেবে না। বিয়ে হচ্ছে একটা আত্মিক বন্ধন; এখানে সন্তান খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। জগৎকে তারা দেখিয়ে দিতে চায়, নারী মানেই ভোগের বস্তু নয়–নারীরও মন আছে।

স্বামী-স্ত্রীর দেখা হয় রাতের বেলা খাবার টেবিলে। নানা আদর্শিক কথাবার্তা হয় তখন। তাদের বিয়েটা তো দুটো আদর্শের মিলন, দুটো আত্মার মিলন। এ মিলনের মধ্যে আদর্শিক কথাবার্তা থাকবে সেটাইতো স্বাভাবিক, তাই না? যাহোক, দেহের মিলনও কদাচিৎ ঘটে, তবে সে ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কখনো কোন কথা হয় না।

স্ত্রী একদিন বাড়ি ফিরে জানালো তার অফিসের সময়সূচি পরিবর্তিত হয়েছে। পরিচালক মহোদয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন থেকে রাতের বেলা মার্লমো পর্যন্ত একটা নতুন ট্রেন চালু হবে। সুতরাং সন্ধ্যে ছ’টা থেকে নটা পর্যন্ত অফিসে থাকতে হবে। স্বামীর জন্য এটা খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার হল। কারণ সে নিজে কিছুতেই ছটার আগে বাড়ি ফিরতে পারে না, আর এখন বাড়ি ফিরে দেখতে হবে বউ বাড়িতে নেই। কী আর করা! ‘ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন’–এখন আর একসাথে বসে খাওয়া হয় না, রাতের বেলা অল্প একটু সময়ের জন্য দেখা হয়। স্বামী বেচারার দুঃখের সীমা নেই। সন্ধ্যাবেলার দীর্ঘ সময়টাকে সে এখন রীতিমত ঘৃণা করে।

ধীরে ধীরে অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন এল। সন্ধ্যাবেলায় সে স্ত্রীর অফিসে গিয়ে বসে থাকে। কিন্তু মালামাল বিভাগে বসে থাকাটা মোটেই সুখকর কোন অভিজ্ঞতা নয়, বিশেষত আসতে যেতে কুলিরা যখন ধাক্কা দিয়ে চলে যায়, তখনতো নয়ই। কীভাবে যেন প্রতিবার সে কুলিদের হাঁটাচলার পথের ওপরেই বসে পরে! যাহোক, এতসব ঝক্কি সামলে স্ত্রীর সাথে একটু আলাপ করার চেষ্টা করামাত্র সে কাঠখোট্টাভাবে বলে ওঠে “ওফ! কাজ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বিরক্ত কর না।” ধমক খেয়ে বেচারা একেবারে চুপ মেরে যায়, আর লক্ষ করে কুলিরা মুখ ফিরিয়ে হাসছে। কখনোবা স্ত্রীর সহকর্মীদের বলতে শোনা যায়–“মিসেস অমুক, আপনার স্বামী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।” ‘স্বামী’ শব্দটা ওরা এমনভাবে উচ্চারণ করে যে শুনলেই গা জ্বালা করে। তবে, সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে স্ত্রীর পাশের টেবিলের আহাম্মকটাকে দেখলে। গর্দভটা সবসময় স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে; আর, নানা ছুতোয় গপ্পো জমানোর চেষ্টা করে। জমা-খরচের খাতা দেখানোর ছল করে এমনভাবে কাঁধের ওপর দিয়ে ঝুঁকে পরে কথা বলে যে একটু হলেই ওর চিবুক তার স্ত্রীর গায়ে লেগে যায়। স্ত্রী অবশ্য এতে কিছু মনে করে বলে মনে হয় না। চালানবই, নথিপত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে গর্দভটার কথোপকথন শুনলে মনে হয় যেন এসব ব্যাপারে সবকিছু তার নখদর্পণে! দুজনকে আলোচনারত অবস্থায়। দেখলে বোঝা যায়, ওরা একে অপরকে বেশ ভালোভাবে জানে; এতটা ভালোভাবে যে, হয়ত স্বামী-স্ত্রী নিজেরাও নিজেদের অতটা ভালোভাবে জানে না। অবশ্য সেটা অযৌক্তিকও নয়; কারণ, স্বামীর সাথে স্ত্রী যতটা সময় কাটায়, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাটায় ঐ আহাম্মকটার সাথে । তাই, কিছুদিন পর থেকে স্বামীর মনে হতে লাগল–তাদের বিয়েটা আসলে সত্যিকারের আত্মিক বন্ধন নয়, সেটা হত যদি সে নিজেও মালামাল বিভাগে কাজ করত। আফসোস! সে তো কাজ করে বন বিভাগে।

একদিন(অবশ্য রাত বলাটাই ভাললা) স্ত্রী স্বামীকে জানালো, পরের শনিবার রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মিটিং আছে। মিটিং শেষে রাতের খাবারের আয়োজনও থাকবে। সেখানে তাকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। খবরটা শুনে স্বামীর কেমন একটু খচখচানি লাগলো। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি যাবে?”

“অবশ্যই যাবো” স্ত্রী বেশ জোর দিয়ে বলল।

স্বামী আগের মতই অস্বস্তি নিয়ে রইলো–“কিন্তু এতগুলো পুরুষ মানুষের মধ্যে তুমিই একমাত্র মহিলা। তাছাড়া, জানোতো পুরুষ মানুষের পেটে মদ পড়লে অন্য কিছু আর খেয়াল থাকে না।”

–তুমি তোমার বন বিভাগের মিটিংয়ে আমাকে ছাড়া যাও না?

“অবশ্যই যাই কিন্তু সেখানে আমি একগাদা মহিলার মাঝে একমাত্র পুরুষ হিসেবে থাকি না।” যুতসই জবাব দিতে পারায় স্বামীকে খুশি দেখালো।

স্ত্রী এই ভেবে অবাক হল, তার স্বামী, যে কিনা সবসময় নারীমুক্তির কথা বলে, আজ এমন কথা বলছে! তার মিটিংয়ে যাওয়া নিয়ে আপত্তি করছে! সে কি ভুলে গেছে, নারী আর পুরুষ সমান-সমান?

শেষ পর্যন্ত স্বামীকে হার মানতে হল। স্বীকার করতেই হল, এগুলো তার ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি। এতক্ষণ সে যা বলেছে তার সবই ভুল এবং সর্বোপরি, স্ত্রীর মতামতই সঠিক। কিন্তু সবকিছু মেনে নিয়েও সে স্ত্রীকে বারবার অনুনয় করল না-যাবার জন্য। আসলে ব্যাপারগুলো সে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছে না, আবার মন থেকে মানতেও পারছে না।

“তুমি অযৌক্তিক আচরণ করছ” স্ত্রী বিরক্ত হল।

স্বামী মেনে নিল, তার আচরণগুলো ঠিক যৌক্তিক হচ্ছে না। তবে, এটাও সত্য যে, নতুন এ যৌক্তিকতার সাথে মানিয়ে নিতে কম করে হলেও আরও অন্তত দশটি প্রজন্ম পর্যন্ত সময় লাগবে!

ঠিক আছে, তাহলে স্বামীরও এখন থেকে আর মিটিংয়ে যাওয়া চলবে না।

তা কী করে হয়? দুটো ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ স্বামীর মিটিংগুলোতে শুধুমাত্র পুরুষ মানুষেরাই থাকে। তাছাড়া স্বামীতে স্ত্রীকে মিটিংয়ে যেতে নিষেধ করেনি; যে ব্যাপারটা তার পছন্দ হচ্ছে না তা হল, রাতের বেলায় একা-একা এতগুলো পুরুষ মানুষের সাথে মিটিং করতে যাওয়া।

স্ত্রী মোটেই একা-একা যাচ্ছে না। অফিসের ক্যাশিয়ারের স্ত্রীও যাবে।

কিন্তু কী হিসেবে যাবে?

কেন, ক্যাশিয়ারের স্ত্রী হিসেবে!

তাহলে, স্বামী হিসেবে সে-ও কি যেতে পারে না?

তা হয়তো পারে, কিন্তু এসবের মধ্যে গিয়ে নিজেকে সে একেবারে সস্তা বানিয়ে ফেলবে না?

নিজেকে সস্তা বানাতে স্বামীর কোন আপত্তি নেই।

আচ্ছা, স্বামী কি হিংসা করছে?

অবশ্যই, কেন নয়? তাদের দুজনের মধ্যে অন্য কিছু আসতে পারে এই ভেবে সে রীতিমত আতঙ্কিত হচ্ছে।

ঊহ্! কী লজ্জা! কী অপমান, অবিশ্বাস! কী ঈর্ষা! স্বামী তাকে কী মনে করে?

মনে করে, তার স্ত্রী সম্পূর্ণ নিখুঁত। মনে করে, সে এতক্ষণ যা বলেছে তা ঠিক নয়। স্ত্রী ইচ্ছা করলে মিটিংয়ে যেতে পারে।

বাহ্! কী অবলীলায় স্বামীর আত্মবনমন!

স্ত্রী মিটিংয়ে গেল। শেষ করে বাড়ি ফিরতে ভোর হয়ে গেল। ফিরেই স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে জানালো, সবকিছু খুব ভালোভাবে শেষ হয়েছে। স্বামী মৃদু হাসলো। উৎসাহ পেয়ে স্ত্রী আরও নানান খুঁটিনাটি বলতে লাগলো–কেউ একজন তার প্রশংসা করে বক্তৃতা দিয়েছে, তারা সবাই একসঙ্গে গানে গলা মিলিয়েছে এবং শেষ পর্যায়ে, তাদের সমবেত নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটেছে।

কিন্তু এই ভোরবেলা স্ত্রী বাড়ি ফিরল কীভাবে?

কেন? ওই বেআক্কেলটা পৌঁছে দিয়ে গেছে।

কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলত!

তাহলেই বা কী হত? নিঃসন্দেহে সবাই তাকে একজন সম্মানিত নারী হিসেবেই চেনে, তাই না?

হ্যাঁ, তা ঠিক আছে; কিন্তু কেউ যদি সত্যিই দেখে ফেলত তাহলে কিন্তু সম্মানহানি ঘটত।

আসলে এসব কিছুই না, সত্যি কথাটা হল–স্বামীর ঈর্ষা হচ্ছে, তাই না? আর তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, স্বামী তাকে হিংসা করছে। সে আসলে স্ত্রীর প্রতিটি ছোটখাটো আনন্দকেই হিংসা করে।

এই তাহলে বিয়ের আসল অর্থ? স্ত্রী বাড়ির বাইরে গেলে, সামান্যতম মজা করলেও তাকে কথা শুনতে হবে? উহ! বিয়ে আসলে কী? বিয়ে আসলে নিতান্ত অর্থহীন, নির্বোধ একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু তাদের মিলনকে কি সত্যিকার অর্থে বিয়ে বলা যায়? তাদের ঘনিষ্টতা হয় শুধুমাত্র রাতের বেলা; যেমনটি আর দশটা সাধারণ দম্পতিরও হয়। তাহলে, কিসের ভিত্তিতে তারা নিজেদেরকে অন্যরকম মনে করে? তার স্বামীতে দেখা যাচ্ছে আর দশটা সাধারণ স্বামীর মতই চিন্তা করে।

কী আর করা যাবে? সব পুরুষই একরকম! বিয়ের আগে পর্যন্ত তারা সভ্য থাকে, কিন্তু বিয়ের পর… উহ্! বিয়ের পর…! তার স্বামীও অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। স্ত্রীকে সে নিজের সম্পত্তি মনে করে, মনে করে, সে চাইলেই যখন-তখন স্ত্রীকে আদেশ করতে পারে! স্বামী আর আগের মত নেই

হয়ত তাই! একটা সময় ছিল যখন স্বামী মনে করত, তারা একে অন্যের; কিন্তু চিন্তাটায় আসলে মস্ত ভুল ছিল। সে হয়ত তার স্ত্রীর, কিন্তু তেমনই যেমন থাকে একটা কুকুর তার মনিবের! সে তার স্ত্রীর ভৃত্য বৈ অন্য কিছুতো নয়, যাকে রাখা হয় কেবল রাতের বেলা বাড়ি পাহারা দেবার জন্য। সে হয়ত ‘স্ত্রীর স্বামী, কিন্তু স্ত্রী কি কখনো স্বামীর স্ত্রী হবার চেষ্টা করেছে? তারা দুজন কি আসলেই সমান-সমান?

এ-জাতীয় কথা শুনে স্ত্রীর মেজাজ চটে গেল। ঝগড়া করার জন্য সে বাড়ি ফেরেনি। সে কখনোই স্ত্রী ভিন্ন অন্য কিছু হতে চায়নি, কিংবা, স্বামীকেও স্বামী ভিন্ন অন্য কোন রূপে পেতে চায়নি চিৎকার করে সে এসব কথা বলতে থাকল।

স্বামী মনে মনে ভাবল, স্ত্রী হয়ত মাতলামির ঝেকে এসব কথা বলছে। তাই কোন প্রত্যুত্তর না-করে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইল।

স্ত্রী এবারে কান্না জুড়ে দিল। স্বামীকে অনুরোধ করল একটু বোঝার চেষ্টা করতে, ক্ষমা করে দিতে। কিন্তু স্বামী সেসবে কান না-দিয়ে কম্বলে মাথা ঢেকে শুয়ে রইল। স্ত্রী শেষমেষ জিজ্ঞেস করে বসল–“তোমার কাছে কি আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে? আমাকে আর স্ত্রী হিসেবে চাও না?”

অবশ্যই, স্বামী অবশ্যই তাকে স্ত্রী হিসেবে চায়। আসলে, গতকাল সারাটা সন্ধ্যা আর রাত এত একঘেয়ে লেগেছে যে, তার মনে হয়েছে, জীবনে এত খারাপ সময় বোধহয় কখনো আসেনি।

“আচ্ছা, ঠিক আছে, চল আমরা সবকিছু ভুলে যাই।” স্ত্রীর স্বপ্রণোদিত প্রস্তাব।

স্বামীও সানন্দে সে প্রস্তাব গ্রহণ করে নিল। আবার তারা একে-অন্যকে ভালোবেসে দিনাতিপাত করতে লাগলো।

পরদিন সন্ধ্যায় স্ত্রীর অফিসে গিয়ে জানা গেল, কিছু টুকিটাকি কাজ সারতে স্ত্রী গুদাম ঘরে গেছে। সুতরাং স্বামী বেচারা একা একা বসে রইল। হঠাৎ করে বাইরে থেকে রুমের দরজা খুলে গেল। সেই আহাম্মকটা দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে জিজ্ঞেস করল, “অ্যানী রুমে আছ নাকি?”

অ্যানীর স্বামীকে দেখে হকচকিয়ে গিয়ে সাট করে সরে পড়ল হতভাগাটা। স্বামীও সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। গর্দভটা তার স্ত্রীকে নাম ধরে ডাকে; তার মানে, দুজনের মধ্যে বেশ ভালোরকম ঘনিষ্টতা আছে। এতটা ঘনিষ্টতা সহ্য করা স্বামীর পক্ষে কষ্টকর। কাউকে কিছু না-বলে সে চুপচাপ বাড়ি ফিরে এলো। পরবর্তীতে, এ-নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটিও হল একচোট। স্ত্রীর অভিযোগ–নারীমুক্তির ব্যাপারটা তার স্বামী আসলে কখনোই মন থেকে মেনে নেয়নি, নিলে সহকর্মীর সাথে স্ত্রীর ভালো সম্পর্ক হওয়াটাকে সে খারাপ চোখে দেখতে পারত না। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হল যখন স্বামী বলে বসল–“আগেকার কথা নিয়ে অত ঘাটাঘাটি করে লাভ নেই।”

“মানে কী? তুমি নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে কথা বলছ না। তুমি নিশ্চয়ই আগেকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলনি?”

ফেলেছে, স্বামী তার আগেকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলেছে। কারণ, জীবন নিয়ত পরিবর্তনশীল, আর এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনটাও আবশ্যক। তবুও যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিয়ে বলতে ‘আত্মিক বন্ধন’র সেই ব্যাপারটা সে এখনো বিশ্বাস করে কি না, সে জবাব দেবে–বিয়ে ব্যাপারটাতেই এখন আর তার বিশ্বাস নেই; তা সে যে ধরনের বন্ধনই বোঝাক না কেন। ব্যাপারটার আসলে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। তাছাড়া, যদি আত্মিক বন্ধনের কথাই বলা হয়, তাহলে তো বলতে হয়, তার স্ত্রী ঐ গর্দভটার সাথে আত্মিক বন্ধনের সূত্রে বিবাহিত! কারণ, প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলে, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও ভাললা; অথচ, স্বামীর বন বিভাগ নিয়ে কিন্তু স্ত্রীর নূ্যনতম আগ্রহ নেই। তাহলে কি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আত্মিক কিছু আছে বলা যায়? সত্যিই কি তাদের মধ্যে কোন বন্ধন দাবি করা যায়?

না, যায় না। অন্তত, এখন আর দাবি করা যায় না। স্বামী যখন ‘নারীমুক্তি বিষয়ে নিজের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করেছে, তখনই সে এই দাবিকে নিজের হাতে খুন করেছে। স্ত্রী অন্তত তা-ই মনে করে।

*** *** ***

সংসার এখন আরও বেশি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মালামাল বিভাগের চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে স্বামী এখন তার বন বিভাগের সহকর্মীদের সঙ্গ খুঁজে নেয়। যে বিভাগের কাজকর্ম সে বোঝে না, সে বিভাগের কোন কিছু নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওদিকে স্ত্রী প্রায়ই বলে, “তুমি আমাকে আর বোঝ না।”

“আমি মালামাল বিভাগটাকে বুঝি না” স্বামীর ঠাণ্ডা প্রতিবাদ।

*** *** ***

এক রাতে (অবশ্য সকাল বলাটাই ভালো) স্বামী জানালো, পরদিন তাকে উদ্ভিদবিদ্যার ব্যবহারিক ক্লাস নিতে যেতে হবে। মেয়েদের একটা স্কুলে উদ্ভিদবিদ্যার ক্লাস নেয়ার দায়িত্ব পড়েছে তার ওপর।

আচ্ছা! তাই নাকি? তো, এ-কথা আগে বলেনি কেন?

বলা হয়ে ওঠেনি।

তা, মেয়েদের’ বলতে কি বড় মেয়েদের?

হ্যাঁ, ষোল থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে হবে।

সকালবেলাই যেতে হবে?

না, বিকেলে। ক্লাস শেষে রাতের খাবারের আয়োজনও থাকবে। মেয়েরা নাকি আশেপাশের কোন গ্রামে গিয়ে রাতে খাবার খাওয়ার বায়না ধরেছে।

তাই নাকি? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাও সাথে থাকবেন নিশ্চয়ই?

না, উনি থাকবেন না। বন বিভাগের কর্মকর্তার ওপর তাঁর যথেষ্ট আস্থা আছে। কর্মকর্তাটি যেহেতু বিবাহিত, তার ওপর এতটুকু আস্থা রাখাই যায়।

হুম, বিবাহিত হবার কিছু সুবিধাও আছে তাহলে!

পরদিন সকালে স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। স্বামী নিশ্চয়ই অসুস্থ স্ত্রীকে ফেলে বাইরে যাবার মত এতটা নির্দয় হবে না?

কিন্তু স্বামীকে তো সবার আগে নিজের কাজের কথা চিন্তা করতে হবে, তাই না? স্ত্রী কি খুব বেশি অসুস্থ?

হ্যাঁ, ভীষণ।

স্ত্রীর বাধা সত্ত্বেও ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার এসে জানালো “দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই, এমনিতেই হয়ত একটু খারাপ লেগেছে, আবার এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।” অতএব, স্বামীর বাড়িতে বসে থাকার কোন মানে হয় না। সে নির্দ্বিধায় ব্যবহারিক ক্লাস নিতে চলে গেল। ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতে ভোর হয়ে গেল। অথচ, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ নেই। উপরন্তু, তাকে বেশ টগবগে দেখাচ্ছে। অনেক দিন পর খুব চমৎকার একটা দিন পার করেছে সে, অ…নে…ক দিন পর।

“উঁহুহুহু…” এতক্ষণ চেপে রাখা আবেগ এবার কান্না হয়ে স্ত্রীর চোখেমুখে ঝড় তুলল। এত দূর সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়–স্বামীকে এখন প্রতিজ্ঞা করতেই হবে যে, তাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে সে কখনো ভালোবাসবে না, কক্ষনো না।

তুমুল কান্নাকাটির এক পর্যায়ে, স্ত্রী হঠাৎ মৃগী রোগীর মত ছটফট করতে লাগল। স্বামী দৌড়ে গেল স্মেলিং সল্ট আনতে। খানিক পর স্ত্রী একটু স্বাভাবিক হলে, একটু-একটু করে তাকে নানা কথা বলতে লাগল। মেয়েদের সাথে রাতের খাবারের খুঁটিনাটি বিবরণ না-দিলেও, অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে কথা হল তাদের মধ্যে। স্ত্রী যখন অতগুলো পুরুষ মানুষের মাঝে রাত্রিবেলায় মিটিংয়ে গিয়েছিল স্বামীর তখন কেমন লেগেছিল সে কথাও বলল। স্ত্রী এখন কান্না করছে কেন? কোন বিষয়টা তাকে কাঁদাচ্ছে? সে নিশ্চয়ই ঈর্ষা করছে না? নাকি করছে? অধিকারবোধটা যদি দুদিক থেকেই কাজ না-করে তাহলে সেটা সত্যিকারের ভালোবাসাই নয়। স্বামীর ওপর অধিকারবোধ কাজ করেছে বলেই নিশ্চয়ই তাকে হারানোর ভয়ে স্ত্রী এখন কাঁদছে? কারণ, হারানোর ভয়টা অধিকারবোধ থেকেই আসে। স্বামীরও কিছুদিন আগে ঠিক এই কারণেই অমন খারাপ লেগেছিল।

এভাবেই, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার বেশ কিছুদিনের জমে থাকা ভুল বোঝাবুঝি আপাত ঠিকঠাক হল। তবে, চিড় ধরানোর জন্য মালামালের বিভাগ আর মেয়েদের স্কুল কিন্তু কাঁচি নিয়ে তৈরি হয়েই ছিল!

*** *** ***

কিছুদিন পর একটা বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রশান্তিতে আবারও ছন্দপতন হল–

স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার ধারণা, সেদিন অফিসে লেবারদের কাজে যেচে সাহায্য করতে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটেছে। লেবাররা সেদিন কতগুলো ভারী বাক্স ওঠাচ্ছিল। তার নিজের সামনেও পড়ে ছিল একটা। লেবারদের অপেক্ষা না-করে, অতি উৎসাহী হয়ে সে একাই উঠাতে গিয়েছিল ওটা। ফলস্বরূপ, আজ বিছানায়।

কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তাই?

উঁহু ঘটনা অন্য জায়গায়!

সে ঘটনা জানতে পেরে স্ত্রী ভীষণ রেগে গেল, আর পুরো দোষটা চাপালো স্বামীর ঘাড়ে। বাচ্চাটাকে নিয়ে এখন কী করবে তারা? “ওকে তো বোর্ডিংয়ে মানুষ করতে হবে!”

হ্যাঁ, রুশো (স্বামী) একাই এজন্য দায়ী! রুশোটা আসলে আস্ত বোকা, না-হলে এমন কাজ কেউ করে? যাহোক, স্বামী হিসেবে সমস্ত দোষ মাথা পেতে নিতে সে মোটেও আপত্তি করল না; বরং ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরবর্তীতে আর কখনো মেয়েদের ক্লাস না-নেয়ার প্রতিজ্ঞা করল। তবে, এতকিছুর পরও স্ত্রীর বিরক্তিভাব কমেনি। সে এখন আর গুদাম ঘরে যেতে পারবে না ভাবতেই গা জ্বলছিল। এখন থেকে বাধ্য হয়ে তাকে অফিসের সামনের রুমে বসে মালামালের হিসাব লিখে রাখার কাজ করতে হবে। কিন্তু এসব কিছুর বাইরেও সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার যেটা ঘটল সেটা হল, এক সহকারীর আবির্ভাব, যার গোপন অভিসন্ধি ছিল যেকোনভাবে অফিসে স্ত্রীর চেয়ারটা দখল করা।

অফিসে সহকর্মীদের আচরণ আজকাল কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে। এমনকি লেবাররাও তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে। স্ত্রী ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। মনে হয়, কোথায় যে লুকাবে তাই যেন ভেবে পায় না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এখানে বসে মানুষের দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হওয়ার চেয়ে বরং ঘরে বসে স্বামীর জন্য রান্নাবান্না করাও ভালো। “উফ! মানুষগুলোর মনে কত রকম আজেবাজে চিন্তা যে থাকে! আর ভালো লাগে না।”

গত একমাস যাবত স্ত্রী বাড়িতে রয়েছে। অফিসে যাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব ঠেকছে। সে এখন প্রায় সবসময়ই ক্ষুধার্ত থাকে। সকাল হতে-না হতেই তার জন্য স্যান্ডউইচ আনাতে হয়। শরীরটা সারাক্ষণ কেমন যেন ঝিমঝিম করে। মনে হয়, যেন যেকোন সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। ফলে, বেশিরভাগ সময়ই বিশ্রাম নিতে হয়। কী একটা জীবন! কষ্টই বোধ হয় মেয়েমানুষের ভাগ্যের লিখন।

*** *** ***

অবশেষে সেই দিনটি এল। তাদের সন্তান আলোর মুখ দেখলো।

বাচ্চার বাবার জিজ্ঞাসা–“এখন কি আমরা ওকে বোর্ডিংয়ে রেখে আসবো?”

“ছিঃ, পুরুষ মানুষের কি হৃদয় বলে কিছু নেই?”

সন্দেহ নেই, বাচ্চার বাবার হৃদয়জাতীয় কিছু একটা আছে! অতএব, বাচ্চা বাড়িতেই বড় হতে লাগলো।

এর পর, একদিন অফিস থেকে এল এক অমায়িক চিঠি: বাচ্চা এবং বাচ্চার মা ভালো আছে তো?

হ্যাঁ, তারা দুজনেই ভালো আছে, এবং আগামী পরশুদিন বাচ্চার মা আবার অফিসে ফিরবে।

তবে, সত্যিকারে বাচ্চার মা এখনো কিছুটা দুর্বল রয়ে গেছে; যে কারণে তাকে গাড়ি ভাড়া করে অফিসে যেতে হয়। অবশ্য, খুব শীঘ্রই সে শরীরে বল ফিরে পেতে শুরু করল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়: বাচ্চাটার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে হয়। অবশ্য, শীঘ্রই সুবিধাজনক একটা বুদ্ধিও বের হল–বাচ্চার খোঁজ-খবর জানাতে একটা ছেলেকে নিয়োগ দেয়া হল। প্রথমদিকে ছেলেটাকে বাড়িতে পাঠানো হত দিনে দু’বার; কিছুদিন পর থেকে, প্রতি দু’ঘণ্টা পর-পর। বাচ্চার মা যখনই শুনে বাচ্চা কাঁদছে, তৎক্ষণাৎ সবকিছু ফেলে বাড়ি ছুটে যায়। ওদিকে, অফিসে তার পদটি দখলের চিন্তায় একজন তো আছেই। তবে তার বিভাগীয় প্রধান বেশ সদয় ব্যক্তি, এই যা বাঁচোয়া।

*** *** ***

বাচ্চার মা একদিন আবিষ্কার করল–বাড়ির নার্সটা ঠিকঠাকমত বাচ্চার দেখাশোনা করতে পারছে না। বাচ্চাকে খাওয়ানোর মত যথেষ্ট বুকের দুধ তার নেই; অথচ, চাকরি হারানোর ভয়ে এ-কথা সে এতদিন গোপন রেখেছে। অগত্যা, একদিনের ছুটি নিতে হল। নতুন নার্স খোঁজ করা হল। কিন্তু তেমন সুবিধা করা গেল না। সবগুলো আসলে একই রকম–শুধু নিজের স্বার্থ বোঝে। অন্যের বাচ্চাকে যত্ন নিয়ে খাওয়াতে চায় না। এগুলোর কোনটার ওপরই আস্থা রাখা যায় না।

“না, মোটেই আস্থা রাখা যায় না” বাচ্চার বাবাও সহমত পোষণ করলো। “এক্ষেত্রে একমাত্র নিজে ছাড়া অন্য কাউকেই ভরসা করা যায় না।”

বাচ্চার মা সরু চোখে তাকালো–“মানে কী? তুমি কি আমাকে চাকরি ছাড়ার ইঙ্গিত করছ?”

–উঁহু, তোমার যেমন ভালো মনে হয় তুমি তেমনই করবে।

–সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে তোমার দাসী হয়ে যাই সেটাইতো সবচেয়ে ভালো, তাই না?

–মোটেও না, আমি মোটেই সে রকম কিছু বলিনি।

বাবা-মায়ের কথা কাটাকাটির মধ্যে পরে বাচ্চার অবস্থা দিন-দিন আরও খারাপ হতে থাকলো। নানান অসুখবিসুখে ভুগতে লাগলো।

ও কিছু না, সব বাচ্চাই অসুখে ভোগে।

কিন্তু এসব বলে মনকে আর কতক্ষণ প্রবোধ মানানো যায়? অতএব, বাচ্চার মাকে প্রায়ই ছুটি নিতে হয়। সম্প্রতি বাচ্চার মাড়ি ব্যথা হয়েছে।

ব্যথায় জ্বর এসে গেছে। ফলে, আরও একদিন ছুটি নিতে হল। ব্যথা তেমন। কমছে না। রাত জেগে নানা কায়দা করে ওকে ঘুম পাড়াতে হয়, তারপর দিনে আবার অফিস: ক্লান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, দুঃশ্চিন্তা এবং …

আরও একটা দিন ছুটি নেয়া।

বাচ্চার বাবা তার সাধ্যমত বাচ্চার দেখাশোনা করে। অর্ধেক রাত পর্যন্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রাখে, ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কখনোই মালামাল বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে কোন কথা বলে না।

তারপরও স্ত্রীর মনে হয়, সে জানে স্বামী আসলে ঠিক কী চায়–স্বামী চায়, চাকরিটা সে ছেড়ে দিক। স্বামী যদিও ঘুণাক্ষরেও কখনো এ ধরনের কোন কথা তাকে বলেনি, তবুও কেন যেন তার মনে অশান্তি বাড়তে থাকে: “উফ! পুরুষ মানুষগুলো কী পরিমাণ বিশ্বাসঘাতক!” স্বামীকে সে ঘৃণা করে। সে আত্মঘাতী হবে, তবু চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর দাসী হবে না।

ওদিকে, মুখে কিছু না বললেও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে একটা ব্যাপার স্বামী খুব ভালো বুঝতে পেরেছে–“যত যাই বলা হোক না কেন, প্রকৃতির অলঙ্ঘনীয় আইন থেকে কারোরই মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।”

*** *** ***

দিনদিন সংসার খরচ বাড়ছে। বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস পড়ল, তখন খরচ সামলাতে স্বামীকে আবারও মেয়েদের স্কুলে পড়ানোর কাজটা শুরু করতে হল। আর, এর মধ্যেই স্ত্রী একদিন নিজেকে পরাজিত ঘোষণা করলো–“আমি এখন থেকে তোমার দাসী হয়ে গেলাম”, চাকরিচ্যুতির কাগজটা তার হাতে ধরা ছিল। “আমাকে এখন থেকে তোমার ইচ্ছামত চলতে হবে।” যদিও পুরো বাড়ির কত্রী সে-ই!

স্বামী নিজের উপার্জিত প্রতিটি টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়। সিগারেট খাওয়া বা অন্য যেকোন কাজের জন্য টাকা দরকার হলে স্ত্রীর কাছে টাকা চাইবার আগে সে এক বিশাল ফিরিস্তি দেয়। স্ত্রী অবশ্য কখনোই টাকা দিতে অমত করে না। তবুও, কোন রকম ফিরিস্তি না-দিয়ে টাকা চাইতে তার অস্বস্তি লাগে।

স্বামী এখন মিটিংয়ে যেতে পারে, তবে রাতে সেখানে খাওয়ার অনুমতি নেই, এবং মেয়েদের উদ্ভিদবিদ্যা শেখানোর সবরকম ক্লাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ! সে অবশ্য এখন এমনিতেই ওগুলো আর মিস করে না। কারণ, ছেলের সাথে খেলা করতেই এখন তার বেশি ভালো লাগে। সহকর্মীরা স্ত্রৈণ বললেও কিছু মনে করে না; বরং, হাসিমুখে মেনে নেয়; আর মনে মনে ভাবে স্ত্রীর মধ্যে চমৎকার একজন বন্ধু খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওদিকে, স্বামী যত যা-ই বলুক-না-কেন, স্ত্রী কিন্তু একগুয়েভাবে বলতেই থাকে–“আমি তোমার দাসী হয়ে গেলাম!”

হোক, বা না-হোক, অন্তত কথা শোনাতেই আনন্দ!

হায়রে নারীমুক্তি!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *