• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মনুসংহিতা – অনুবাদ : সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

লাইব্রেরি » সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় » মনুসংহিতা – অনুবাদ : সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

সূচিপত্র

  1. মনুসংহিতা – সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
  2. স্মৃতিশাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ এবং মনুস্মৃতির গুরুত্ব
  3. মনুস্মৃতির রচনার ইতিহাস ও কাল
  4. মনুস্মৃতির টীকা
  5. মনুস্মৃতির প্রভাব
  6. মনুস্মৃতির সাহিত্যিক মূল্য
  7. মনুস্মৃতিতে দার্শনিক তত্ত্ব ও বিজ্ঞান
  8. মনুস্মৃতিতে রাজনীতি
  9. মনুস্মৃতিতে নারীর স্থান
  10. মনুস্মৃতি ও মহাভারত
  11. মনুসংহিতায় শূদ্র এবং তথাকথিত অন্যান্য নীচ জাতি
  12. মনুস্মৃতিতে লিখিত জাতিসমূহের নাম
  13. মনুসংহিতায় ভৌগোলিক তথ্য
  14. মনুসংহিতায় গাছপালা, ফুল-ফল
  15. মনুসংহিতায় জীবজন্তু
  16. জীবজন্তুর নাম আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নামসহ লিখিত হল
  17. পাদটীকা

মনুসংহিতা – সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

(মূল, বঙ্গানুবাদ, বিস্তৃত অবতরণিকা, শব্দকোষ, গ্রন্থপঞ্জী ও শ্লোকপঞ্জী সম্বলিত)

.

ভূমিকা

‘মনুস্মৃতি’ বা ‘মনুসংহিতা’ ভারতের প্রাচীনতম এবং সর্বাপেক্ষা প্রামাণ্য ধর্মশাস্ত্র। পরবর্তী সর্ব সম্প্রদায়ের স্মৃতিনিবন্ধসমূহে পদে পদে এই গ্রন্থের প্রমাণ স্বীকৃত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মনুর অনুশাসনে ভারতীয় হিন্দুসমাজ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই গ্রন্থের পঠন পাঠন ব্যাপক। বিস্ময়কর এই যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাভা প্রভৃতি দেশে মনুর প্রভাব স্পষ্ট। শ্রীলঙ্কা, ব্রহ্ম প্রভৃতি দেশের আইনকানুনেও মনুর প্রভাব লক্ষিত হয়েছে। এর টীকাটিপ্পনী পড়ে বিধিনিষেধগুলির তাৎপর্য অনুধাবন পাঠকসাধারণের পক্ষে দুরূহ। যাঁরা সংস্কৃত ভাল জানেন না বা একেবারেই বোঝেন না, তাঁদের মধ্যে অনেকেই মনুর তথা ভারতের মর্মবাণী সম্বন্ধে কৌতুহলী ও জিজ্ঞাসু।

জিজ্ঞাসু ব্যক্তিমাত্রেরই প্রতি লক্ষ্য রেখে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শ্লোকের অনুবাদ যথাসম্ভব মূলানুগ ও প্রাঞ্জল করা হয়েছে। স্থানে স্থানে মেধাতিথি ও কুল্লূকভট্টের টীকা অবলম্বনে পাদটীকা দেওয়া হয়েছে। অনুবাদ সাধারণত কুল্লূকভট্টের টীকা অবলম্বনে করা হয়েছে। অনুবাদে কোন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করা হয়নি।

অবতরণিকায় ‘মনুসংহিতা’র কাল, এতে নারী ও শূদ্রের স্থান প্রভৃতি যাবতীয় তথ্য আলোচিত হয়েছে। তা ছাড়া, এই গ্রন্থে ভৌগোলিক তথ্য, গাছপালা, পশুপাখী সম্বন্ধে তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে।

গ্রন্থশেষে এক শব্দকোষে পারিভাষিক শব্দাবলীর ও দুরূহ পদসমূহের সূত্রনির্দেশপূর্বক অর্থ লিখিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শব্দগুলির মধ্যে যেগুলি ‘মহাভারত’-এ আছে, ঐগুলির স্থাননির্দেশও আছে। পরিশেষে শ্লোকপাদসূচী সন্নিবিষ্ট হয়েছে। গ্রন্থপঞ্জীতে ‘মনুসংহিতা’র প্রধান প্রধান সংস্করণ ও অনুবাদ এবং এই গ্রন্থ সম্বন্ধে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পরিচয় লিখিত হল।

সাধারণ পাঠক, গবেষক ও প্রাচীন ভারতের নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধে উৎসাহী ব্যক্তিগণ এই গ্রন্থপাঠে কিঞ্চিৎ উপকৃত হলেও লেখকের শ্রম সার্থক হবে।

আনন্দ পাবলিশার্স এই গ্রন্থের প্রকাশনভার গ্রহণ করে গ্রন্থকারের ও ভারতীয় ঐতিহ্যে শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিবর্গের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন।

শ্রীসুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
৭৭এ, গল্‌ফ্‌ ক্লাব্‌ রোড্‌,
কলিকাতা-৩৩

মহালয়া
১৪০৫ বঙ্গাব্দ

অবতরণিকা

স্মৃতিশাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ এবং মনুস্মৃতির গুরুত্ব

স্মৃ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন স্মৃতি শব্দের অর্থ যাকে স্মরণ করা হয়। বেদবোধক শ্রুতি থেকে স্মৃতির প্রভেদ এই যে, শ্রুতি ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাণী ; এই অলিখিত বাণীকে আদিতে পরম্পরাক্রমে শুনে শুনে জানতে হত। ঋষি ছিলেন বৈদিক মন্ত্রের দ্রষ্টা ; স্রষ্টা বা রচয়িতা নন।

বেদের পরে সৃষ্ট হল ছয় বেদাঙ্গ। কল্পনামক বেদাঙ্গের অন্তর্গত শ্রৌতসূত্র, গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র ও শুল্বসূত্র। ধর্মসূত্রের আলোচ্য ছিল সাময়াচারিক ধর্ম। সময় অর্থাৎ পৌরুষেয়ী ব্যবস্থা, যা মানুষ করেছে। আচার বলতে বোঝায় সজ্জনদের আচরণ। ধর্মসূত্রগুলি সংখ্যায় বহু, যেমন গৌতম, বৌধায়ন, আপস্তম্ব, বশিষ্ঠ, বিষ্ণু, বৈখানস প্রভৃতি নামের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধর্মসূত্রগ্রন্থ। এগুলি ছাড়াও বহু লেখকের নামাংকিত ধর্মসূত্র স্মৃতিনিবন্ধ ও টীকাসমূহে বিক্ষিপ্তভাবে আছে। কতক ধর্মসূত্র খৃষ্টের জন্মের বহু শত বৎসর পূর্বে রচিত হয়েছিল। ধর্মসূত্রগুলিতে আচার, প্রায়শ্চিত্ত, ব্যবহার (আইন কানুন) ও রাজধর্ম লিপিবদ্ধ আছে।

কালক্রমে সমাজ বৃহত্তর হল, সামাজিক রীতিনীতি জটিল আকার ধারণ করল। প্রয়োজন হল বৃহত্তর গ্রন্থের। ফলে লিখিত হল শ্লোকাকার স্মৃতিগ্ৰন্থসমূহ। ধর্মশাস্ত্রকারগণের নামোল্লেখ করেছেন যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর স্মৃতিগ্রন্থে (আঃ খৃষ্টীয় ১ম-২য় শতক)। এঁরা হলেন মনু, অত্রি, বিষ্ণু, হারীত, যাজ্ঞবল্ক্য, উশনস্‌, অঙ্গিরস্‌, যম, আপস্তম্ব, সংবর্ত, কাত্যায়ন, বৃহস্পতি, পরাশর, ব্যাস, শংখ, লিখিত, দক্ষ, গৌতম, শাতাতপ ও বশিষ্ঠ (১/৪, ৫)। বস্তুতঃ, এই কুড়ি জন ছাড়াও দেবল, পৈঠীনসি, সুমন্তু প্রভৃতি বহু ধর্মশাস্ত্রকারের নাম পাওয়া যায়।

কালক্রমে স্মৃতিগ্রন্থগুলির ব্যাখ্যার প্রয়োজন অনুভূত হল। মনু ও যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতির অনেক টীকা রচিত হল। কোন কোন টীকা এত বিস্তৃত যে, ঐগুলিকে এক একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থও বলা যায়।

স্মৃতিশাস্ত্রে কখনও কখনও শাস্ত্রকারদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেল। এইসব বিরুদ্ধ মতের সমাধান কল্পে এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রীতিনীতির তারতম্য লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ও ব্যাখ্যাকারগণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ও ব্যাখ্যা পদ্ধতি হেতু ক্ৰমে স্মৃতিনিবন্ধ রচিত হল। প্রধানতঃ গৌড় বা বঙ্গ, আসাম, মিথিলা, বারাণসী ও দাক্ষিণাত্য এই কয়টি অঞ্চলে স্বতন্ত্র নিবন্ধ রচিত হয়েছিল।

ধর্মশাস্ত্রকারগণের উক্ত তালিকায় মনুর নাম সর্বপ্রথম। এর থেকে বোঝা যায়, মনুস্মৃতি প্রধান বলে গণ্য হত। মন্বর্থবিপরীতা যা সা স্মৃতির্ন প্রশস্যতে, বেদার্থোপনিবন্ধৃত্বাৎ প্রাধান্যং হি মনোঃ স্মৃতম্‌, মনুর্বৈ যৎ কিংচাই তদ্ভেষজম্‌ ইত্যাদি উক্তি মনুর সর্বাধিক প্রামাণিকত্ব সূচিত করে।

মনুস্মৃতির রচনার ইতিহাস ও কাল

বর্তমান মনুস্মৃতি প্রথম থেকেই এরূপ ছিল না। ১/৫৮ শ্লোকে আছে যে, ব্ৰহ্মা এই শাস্ত্র প্রস্তুত করে মনুকে শিখিয়েছিলেন। মনু, মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে শিখিয়েছিলেন। ১/৫৯ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, ভৃগু এই শাস্ত্র মুনিগণকে শোনাবেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, অন্ততঃ তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে এই গ্রন্থ বর্তমান আকার ধারণ করেছে। এই গ্রন্থের রচনাকাল নির্ণয় করা দুরূহ ব্যাপার। পণ্ডিতপ্রবর কানে নানা যুক্তি প্রমাণ বলে সিদ্ধান্ত করেছেন যে, এর বিবর্তন হয়েছে আনুমানিক ২০০ খৃষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কালে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, মহাভারতে ও মনুস্মৃতিতে অনেক শ্লোক হুবহু এক প্রকার বা সামানা পরিবর্তনসহ দেখা যায়। এর থেকে অবশ্য এই দুই গ্রহের কালানুক্রমিক সম্বন্ধ নিধারণ করা যায় না কারণ, বর্তমান মহাভারত এর আদিম রূপ নয়, বহু যুগের বিবর্তনের ফল। তা ছাড়া, দুই গ্রন্থকারের মধ্যে কে ঋণী তা বলা যায় না।

মনুস্মৃতির টীকা

মনুস্মৃতির বহু টীকা আছে। মেধাতিথি (আঃ ৮২৫-৯০০ খৃষ্টাব্দ), গোবিন্দরাজ (আঃ ১০০০-১১১০ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তীকালে) ও কুল্লূকভট্টের (আঃ ১১৫০-১৩০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন কালে) টীকা প্রসিদ্ধ। মেধাতিথি প্রাচীনতম টীকাকার। তাঁর ভাষ্য অতি পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও বিস্তৃত। মন্বর্থমুক্তাবলী নামক কুল্লূকের টাকার বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি সংক্ষিপ্ত অথচ প্রাঞ্জল। ইনি ছিলেন কাশীবাসী বাঙ্গালী। টীকার প্রারম্ভে আত্মপরিচয়ে তিনি নিজেকে গৌড়বাসী এবং বরেন্দ্র বলে বিশেষিত করেছেন। উক্ত টীকারকারগণ ছাড়াও নারায়ণ, রাঘবভট্ট, নন্দন ও রামচন্দ্র ‘মনুস্মৃতি’র টীকা রচনা করেছিলেন।

মনুস্মৃতির প্রভাব

অদ্যাপি মনুব নাম শ্রদ্ধাসহকারে উচ্চারিত হয়। তাঁর স্মৃতির দোহ্যই পণ্ডিত সমাজে পদে পদেই দেওয়া হয়। স্মৃতিনিবন্ধগুলিতে কোন কোন ক্ষেত্রে মনুর বচনের বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, রঘুনন্দনের উদ্বাহতত্ত্বে এবং বিবাহসংক্রান্ত অপর কতক নিবন্ধে মনুর অসপিণ্ডা চ যা মাতুঃ প্রভৃতি বচনের ব্যাখ্যা বেশ কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে।

মনুর প্রভাব ভারতের চতুঃসীমাতেই আবদ্ধ নয়। ব্ৰহ্মদেশে, সিংহলে, পারস্যে, চীনদেশে, জাপানে এবং সুদূর প্রাচ্যের কতক দেশে তাঁর প্রভাব আজও গভীর ও ব্যাপক। ব্রহ্মদেশের কতক আইনের গ্রন্থে মনুর ঋণ স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে। সিংহলের ‘চুলবংশ’ নামক গ্রহে মনুর রাজধর্মের উল্লেখ বারংবার করা হয়েছে। চীনদেশে প্রাপ্ত একটি পুঁথিতে মনুর আইন কানুনের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। জাপানে উপনিবেশ স্থাপনকারী কিছু আর্য সেই দেশে মনুর ধর্মশাস্ত্র প্রবর্তিত করেছিলেন বলে মনে হয়। পারস্যের দেবগোষ্ঠীর মধ্যে আছেন বৈবস্বত মনু। এই দেশবাসীর জীবনে মনুর যথেষ্ট প্রভাব লক্ষিত হয়। জানা যায় যে, রাজ দরায়ুসের (খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতক) সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য মনুস্মৃতির অনুসরণে আইন তৈরি হয়েছিল।

মনুস্মৃতির সাহিত্যিক মূল্য

এই গ্রন্থের ভাষা সরল। স্থানে স্থানে উপমাদি প্রয়োগের ফলে শ্লোকগুলি সরস হয়ে উঠেছে। রাজধর্ম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যেমন জোঁক, বাছুর ও মৌমাছি একটু একটু করে রক্ত, দুধ ও মধুপান করে, তেমন রাজাও অল্প অল্প করে কর আদায় করবেন। এই সব শ্লোক থেকে লেখকের পর্যবেক্ষণ শক্তিরও পরিচয় পাওয়া যায়।

মনুস্মৃতিতে দার্শনিক তত্ত্ব ও বিজ্ঞান

সৃষ্টিতত্ত্বে সৃষ্টিক্রম বৰ্ণন প্রসঙ্গে গ্রন্থকার দার্শনিক জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন।

সৃষ্টিপ্রসঙ্গে তিনি জীবজগতের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে জীববিজ্ঞান সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান স্পষ্ট। উদ্ভিদ্‌ জগৎ সম্বন্ধেও তাঁর বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা দেখা যায়।

উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে, আধুনিক বিজ্ঞানে স্বীকৃত এই সত্যটি, বোধ হয়, বেদোত্তর যুগে সর্বপ্রথম মনুস্মৃতিতেই ঘোষিত হয়।

মনুস্মৃতিতে রাজনীতি

রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্বন্ধে এই গ্রন্থে উন্নতধরণের ভাবধারা লক্ষিত হয়। সাম, দান, ভেদ ও দণ্ড এই চারটি উপায় রাজাকে অবলম্বন করতে হবে। সাম অর্থাৎ পারস্পরিক আলোচনা দ্বারা বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন রাজার সঙ্গে ভাব করা, দান শব্দে বোঝায় কিছু দান করে বিরোধী রাজাকে অনুকূল করা, ভেদ শব্দে বোঝায় ঐরূপ রাজা ও তাঁর প্রজার মধ্যে বা মন্ত্রী প্রভৃতির মধ্যে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করা। দণ্ড অর্থাৎ শাস্তি বা সামরিক শক্তির প্রয়োগ। মনুর স্পষ্ট নির্দেশ এই যে, প্রথম তিন প্রকারে কার্যসিদ্ধি হলে দন্ড অবশ্যই বর্জনীয়।

সন্ধি, বিগ্রহ (যুদ্ধ), যান (অভিযান), আসন (স্থির হয়ে শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য করা), দ্বৈধীভাব (বাইরে বন্ধুত্ব দেখান, অন্তরে শত্রুতাপোষণ অথবা সেনাদলকে দুইভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ নিয়ে দুর্গে অবস্থান, অপর ভাগকে যুদ্ধে প্রেরণ), সংশ্রয় (নিজে দুর্বল হলে বলবত্তর রাজার আশ্রয়)—এই ছয়টি গুণ বিহিত হয়েছে। অবস্থা বিবেচনায় এইগুলি প্রয়োগ করতে হবে।

করাদান পদ্ধতি চমৎকার। বিভিন্ন দ্রব্যের উপরে ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারিত হয়েছে ; যেমন, ধানের ষষ্ঠ ভাগ, সোনার পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ ইত্যাদি। করবিষয়ে অতিরিক্ত উদার হলে রাজার নিজের ক্ষতি হয়, আবার লোভবশতঃ অতিরিক্ত করাদায় করলে প্রজার উৎপীড়ন হয়। তাই ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য, পাথেয়, খোরাকখৰচ প্রভৃতি বিচার করে ন্যায্য কর আদেয়। যারা খেটে-খাওয়া মানুষ, তারা স্বভাবতঃ কবদানে অসমর্থ ; তারা বিনা মজুরীতে মাসে একদিন করে রাজার কাজ করে দিবে।

শাস্তিবিধান সম্বন্ধে মনুর ব্যবস্থা অতি স্পষ্ট। উপযুক্ত দণ্ডাভাবে দুষ্কৃতকারীর অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায় এবং মাৎস্যন্যায়ের উদ্ভব হয়।

সেকালে দল ছিল না, সুতরাং দলের লোকের মন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারও ছিল না। বিশিষ্ট গুণের অধিকারী লোকই মন্ত্রী হতেন। এই গুণগুলির মধ্যে প্রধান শাস্ত্রজ্ঞান, বীরত্ব, সদ্বংশে জন্ম ইত্যাদি। মন্ত্রীর সংখ্যা সাধারণতঃ সাত কি আট। রাজা তাঁদের সঙ্গে পৃথক্‌ভাবে ও মিলিতভাবে পরামর্শ করবেন। মন্ত্রগুপ্তির উপরে খুব গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে।

দূতের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দূতকে হতে হবে রাজভক্ত, শুচি, দক্ষ, স্মৃতিমান, দেশকালজ্ঞ, দর্শনধারী, নির্ভীক ও বাগ্মী। দূতের উপরে যুদ্ধ ও সন্ধি নির্ভর করে।

রাজার দুর্গ ছয়প্রকার—ধন্বন্থদুর্গ (চারদিক মরুভূমিবেষ্টিত), মহীদুর্গ (পাথর বা ইটের তৈরি), অব্দুর্গ (জলবেষ্টিত), র্বাহ্ম (চারদিকে বনবেষ্টিত), নৃদুৰ্গ (হস্তি-অশ্ব রথ যুক্ত সেনাপরিবৃত) ও গিরিদুর্গ, (পর্বতোপরি স্থিত) ; এইগুলির মধ্যে গিরিদুর্গ প্রশস্ত।

সামরিক নিয়মে মানবিকতা লক্ষণীয়। গুপ্ত অস্ত্র, কণাকৃতি, বিষাক্ত, অগ্নিদীপ্ত ফলকযুক্ত বাণ প্রভৃতি শত্রুর প্রতি প্রয়োগ করা নিষেধ। রথে থেকে রথহীন ব্যক্তি, নিদ্রিত, স্বচহীন, নিরস্ত্র, অপরের সঙ্গে যুদ্ধরত, আত্মসমর্পণকারী প্রভৃতি ব্যক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত নয়। রণক্ষেত্রে সৈন্য সাজানকে বলা হয় ব্যূহ! মনু দণ্ড, শকট, বরাহ, মকর, সূচী ও গরুড় এই ছয়টি ব্যূহ নির্দেশ করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ ব্যূহ অবলম্বনীয়।

গ্রাম-পরিচালনা পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। গ্রামগুলিকে এক, দশ, বিশ, শ, হাজার এই ভাবে বিভিন্ন বর্গে ভাগ করতে হবে। প্রতি বর্গের একজন পরিচালক থাকবে। এদের মধ্যে পর পর বর্গের অধিপতি অধিকতর ক্ষমতাশীল। গ্রামে কোন দোষ হলে এক গ্রামপতি দশ গ্রামের অধিপতিকে জানাবেন, দশেশ বিংশতীশকে জানাবেন ইত্যাদি। গ্রামবাসী কর্তৃক প্রত্যহ অন্ন, ইন্ধন প্রভৃতি যা কিছু রাজাকে দেয়, তা গ্রামপতি ভোগ করবেন। দশ গ্রামাধিপতি প্রভৃতির জন্য নির্দিষ্ট জমির ব্যবস্থা আছে।

আন্তঃরাষ্ট্র সম্বন্ধ এইরূপ। কোন রাজা প্রতিবেশী রাজাকে শত্রু, তৎপরবর্তী রাজাকে মিত্র, তৎপর। অরি-মিত্র, তৎপর মিত্রমত্র বলে মনে করবেন।

মনুস্মৃতিতে নারীর স্থান

এই গ্রন্থে নারীর স্থান আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত রকমের মনে হয়। এক স্থানে (৩/৫৬) বলা হয়েছে—যেখানে নারীরা পূজিত হন, সেখানে দেবগণ তুষ্ট হন ; যেখানে তাঁরা পুজিত হন না, সেখানে সব কর্ম নিস্ফল হয়। পরের শ্লোকে আছে যে, যে বংশে কুলস্ত্রী দুঃখ করেন, সেই বংশ বিনষ্ট হয়। একটি শ্লোকে (৩/৫৯) বলা হয়েছে যে, উৎসবাদিতে স্ত্রীলোককে অলংকার, বস্ত্র ও ভোজ্য দিয়ে সম্মান করতে হবে। ২/১৪৫ শ্লোকে আছে যে, গৌরবে মাতা সহস্র পিতারও অধিক।

আবার মনুই স্ত্রীলোককে স্বাধীনতা দিতে নারাজ। তিনি বলেছেন (৯/৩) যে, তাঁকে কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী, বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করে ; তাঁর স্বাতন্ত্র্য সঙ্গত নয়। ২/৬৬তে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীলোকের পতিসেবা ব্রহ্মচর্যাশ্রমে গুরুগৃহে বাসের তুল্য। ৫/১৫৫ শ্লোকে বিধান এই যে, স্ত্রীলোকের পৃথক্‌ যজ্ঞ, ব্ৰত বা উপবাস নেই ; পতির শুশ্রূষাতেই তাঁর স্বর্গলাভ হবে।

অতএব দেখা যায়, একদিকে নারী অশেষ শ্রদ্ধার পাত্র, অপরদিকে তাঁর স্বাধীনতা বলে কিছু নেই ; পতিই তাঁর সব, নিজের যেন কোন পৃথক্‌ সত্তাই নেই।

আইনের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ স্ত্রীলোকের সাক্ষী হওয়ার বা স্বাধীনভাবে ঋণ করার অধিকার ছিল না। স্ত্রীলোকের সাক্ষী অবশ্য স্ত্রীলোক হতে পারতেন (৮/৬৮)।

কিন্তু, স্ত্রীধনের উপর তাঁর অবাধ অধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। বিবাহে প্রাপ্ত উপহার, বিবাহের পরে পিত্রালয় থেকে শ্বশুরালয়ে গমন কালে প্রাপ্ত, পতি বা অপর কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ প্রদত্ত দ্রব্য প্রভৃতি স্ত্রীধন বলে গণ্য হত। কিন্তু, স্ত্রীধন ভিন্ন অন্য কোন প্রকার ধনে স্ত্রীর অধিকার স্বীকৃত হয়নি (ভার্যা পুত্ৰশ্চ দাসশ্চ ত্ৰয় এবাধনাঃ স্মৃতাঃ—৮/৪১৬)।

সতীদাহ, সহমরণ বা অনুমরণ মনুর অভিপ্রেত কিনা, এই বিষয়ে বর্তমানে অনেকে জিজ্ঞাসু। ৫/১৫৭ শ্লোকে মনু নির্দেশ দিয়েছেন যে, বিধবা পবিত্র ফলমূল আহার করে অর্থাৎ স্বল্পাহারে দেহক্ষয় করবেন। ৫/১৬০ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, বিধবা সাধ্বী নারী ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে জীবন যাপন করলে স্বর্গলাভ করবেন। সুতরাং দেখা যায়, সহমরণ বা অনুমরণ তিনি অনুমোদন করেন নি। প্রথমোক্ত শ্লোকের ব্যাখ্যায় মেধাতিথি (আঃ ৯ম শতক) সতীদাহের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন যে, এই কাজ আত্মহত্যার ন্যায় গর্হিত এবং স্ত্রীলোকের পক্ষে নিষিদ্ধ। তিনি একে স্পষ্টভাষায় অশাস্ত্রীয় বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, সহমরণ ‘নির্ধারিত আয়ুষ্কালের পূর্বে কারও মৃত্যুবরণ সমীচীন নয়’ এই বেদবিধির বিরোধী।

মনুস্মৃতি ও মহাভারত

এই দুই গ্রন্থের কতক শ্লোক হুবহু, কোন কোন স্থলে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন সহ, একরকম। মনুর গ্রন্থ আদিম রূপে আমাদের কাছে পৌঁছেনি। বর্তমান ‘মহাভারত’ শত শত বৎসরের বিবর্তনের ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং, কে কার কার ঋণী, তা বলা অসম্ভব। কতক শ্লোক হয়ত লোকমুখে প্রচলিত শ্লোকভাণ্ডার থেকে উভয় গ্রন্থেই গৃহীত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য এই যে, এই দুই গ্রন্থে এমন কিছু শ্লোক আছে, যেগুলিতে শব্দগত সাদৃশ্য না। থাকলেও ভাবগত সাদৃশ্য বিদ্যমান; অথবা, শব্দসাম্য অপেক্ষা ভাবসাম্য স্পষ্টতর।

মনুসংহিতায় শূদ্র এবং তথাকথিত অন্যান্য নীচ জাতি

মনু ‘শূদ্র’ শব্দটি সামান্য বা সাধারণ এবং বিশেষ অর্থে প্রয়োগ করেছেন। শূদ্রযোনিতে উৎপন্ন শূদ্র দ্বিতীয় প্রকারের। প্রথম প্রকারের শূদ্র ছিল নানাবিধ। উচ্চবর্ণের কোন ব্যক্তি ‘ক্রিয়ালোপাৎ’ অর্থাৎ স্বধর্মচ্যুত হলে শূদ্রতুল্য বিবেচিত হতেন (১০/৪৩); যথা পৌণ্ড্রক, যবন, শক ইত্যাদি (১০/৪৪)। দ্বিজ হীনজাতীয় নারীকে বিবাহ করে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হতেন (৩/১৫)। যে দ্বিজ বেদাধ্যয়ন না করে শূদ্রের কার্যে প্রবৃত্ত হন, তিনিও শূদ্র বলে গণ্য (২/১৬৮)। সংকরবর্ণের লোক এবং অস্পৃশ্য ব্যক্তিগণও সাধারণভাবে শূদ্র বলে অভিহিত হত।

মনু বলেছেন (১০/১২৯) যে, শূদ্র বহু অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে না ; কারণ, তার প্রভূত সম্পদ্‌ থাকলে সে গর্বভরে ব্রাক্ষণদের উপর অত্যাচার করতে পারে। ৫/৯২ শ্লোকে ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, যে পথ দিয়ে উচ্চবর্ণের লোকেরা যাতায়াত করেন, সেই পথে শূদ্রের মৃতদেহ বহন করা চলবে না। ৪/৬১ শ্লোকে মনু বিধান দিয়েছেন যে, ব্রাহ্মণেরা শূদ্ররাজার রাজ্যে বাস করবেন না।

আইন কানুনের ক্ষেত্রেও শূদ্রের সম্বন্ধে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছুক বা অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণ নারীর সঙ্গে অবৈধ যৌন সংযোগের অপরাধে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড বিহিত হয়েছে (৮/৩৬৬)। শূদ্রনারীর সঙ্গে অনুরূপ সংযোগের অপরাধে ব্রাহ্মণের পক্ষে মাত্র কিছু জরিমানার বিধান আছে (৮/৩৮৫)। ব্রাহ্মণের পরিবাদ বা নিন্দা করলে শূদ্রের জিহ্বাছেদন বিধেয় (৮/২৭০)। কিন্তু, শূদ্রের প্রতি অনুরূপ অপরাধে ব্রাহ্মণ যৎসামান্য জরিমানা দিয়েই অব্যাহতি পাবেন (৮/২৬৮)। ব্রাহ্মণের অপবাদ করলে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের দণ্ড হবে যথাক্রমে ১০০ এবং ১৫০ মুদ্রা (৮/২৬৭)। ব্রাহ্মণ কর্তৃক শূদ্রহত্যা উপপাতক মাত্র, অর্থাৎ সামান্য পাপ (১১/৬৬); এইরূপ হত্যা গোধা, পেচক, নকুল, ভেক, বিড়াল, কুকুর বা কাকবধের তুল্য (১১/১৩১)। কিন্তু ব্ৰহ্মহত্যার অপরাধে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড ছাড়া নিষ্কৃতি নেই। বিচারালয়ে শপথ (oath) নেওয়ার সময় শূদ্রকে বলতে হবে যে, সত্য কথা না বললে সে সব রকম পাপের ভাগী হবে; কিন্তু উচ্চবর্ণের কাউকে এমন কথা বলতে হয় না (৮/১১৩)। শপথের অঙ্গ হিসাবে শূদ্রকে সন্তান এবং স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে বলতে হত, সে মিথ্যা বলবে না (৮/১১৪)। আর একটি ভয়াবহ পদ্ধতি ছিল এই যে, এরূপ অবস্থায় শূদ্রকে দিব্যের আশ্রয় নিতে হত। এতে তাকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে হাঁটতে হত অথবা তাকে জলে ডুবিয়ে রাখা হত। অদগ্ধ অবস্থায় বা জলমগ্ন না হয়ে ফিরে এলে তার কথা সত্য বলে বিবেচিত হত।

পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে মনুর বিধান এই যে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের শূদ্রাপুত্রের কোন দাবি নেই। যদি পিতা কিছু দেন, তাহলে সেটুকুই তার একমাত্র সম্বল (৯/১৫৫)।

দাসীর বা দাসীর সম্পর্কিত কোন নারীর গর্ভে শূদ্রের ঔরসে জাত পুত্র পিতার অন্যান্য পুত্রের সঙ্গে সমান অংশীদার হবে (৯/১৭৯)। নানা বর্ণের লোক বিচারপ্রার্থী হলে ব্রাহ্মণাদি ক্রমে বিচার করা হবে ; অর্থাৎ শূদ্রের পালা আসবে সকলের পরে (৮/২৪)।

অপরাধী শূদ্রের শাস্তি অতি কঠোর। দ্বিজকে প্রহার করলে তার হাত কেটে ফেলা হবে ; পদাঘাত করলে পা কাটা হবে (৮/২৮০)। ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসলে তার কটিদেশে তপ্তলৌহ দ্বারা চিহ্ন এঁকে তাকে নির্বাসিত করা হবে। অথবা, তার নিতম্ব এমনভাবে ছেদন করা হবে যাতে তার মৃত্যু হয় (৮/২৮১)। ব্রাহ্মণের গায়ে থুথু দিলে তার ওষ্ঠছেদন হবে। মূত্রপুরীষ নিক্ষেপ করলে যথাক্রমে তার লিঙ্গ ও গুদ ছেদন করা হবে (৮/২৮২)। ব্রাহ্মণের কেশ, পাদ, শ্মশ্রু, গ্রীবা ও অণ্ডকোষ আকর্ষণের অপরাধে শূদ্রের হস্তদ্বয় ছেদনীয় (৮/২৮৩)। ৮/৩৭৪-এ বিধান এই যে, দ্বিজের অরক্ষিত স্ত্রীগমনে শূদ্রের লিঙ্গ ছেদন করা হবে এবং তার সব কেড়ে নেওয়া হবে ; রক্ষিত স্ত্রীগমনে তাকে সর্বস্ব বঞ্চিত করে হত্যা করা হবে।

দ্বিজের ন্যায় উপবীত বা অন্যান্য চিহ্ন ধারণ করলে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড বিধেয় (৯/২২৪)।

৮/৬২ শ্লোকের বিধান এই যে, বাদীর ইচ্ছাক্রমে শূদ্র সাক্ষী হতে পারে। ৮/৬৮তে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, শূদ্রের সাক্ষী শূদ্র হবে এবং অন্ত্য অর্থাৎ চণ্ডালাদির সাক্ষী অস্ত্যই হবে। কিন্তু, গৃহাভ্যন্তরে কোন বিবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে দাস যে কারুরই সাক্ষী হতে পারে (৮/৭০)।

কোন প্রকার সংস্কারে শুদ্রকে অধিকার দেওয়া হয়নি (১০/১২৬)। বৰ্ণত্রয়ের সেবাই শূদ্রের একমাত্র বৃত্তি। প্রভুপরিত্যক্ত বস্ত্র, ছত্র, পাদুকা, তোষক প্রভৃতি শূদ্র ব্যবহার করবে। প্রভুর উচ্ছিষ্ট তার ভক্ষ্য। দাসবৃত্তি থেকে শূদ্রের কোন প্রকার মুক্তি নেই ১; দ্রষ্টব্য মনু ১০/১২৪, ১২৫; ৬/৯৭ এবং মেধাতিথির ভাষ্য। যজ্ঞে প্রদত্ত দ্রব্য ব্রাহ্মণ কখনও শুদ্রকে দিবেন না (৪/৮০)।

মৃতাশৌচকাল শূদ্রের পক্ষে দীর্ঘতম অথৎ এক মাস (৫/৮৩); ব্রাহ্মণের দশ দিন, ক্ষত্রিয়ের বার এবং বৈশ্যের পনেরো দিন।

মনু (৮/৪১৩ শ্লোক থেকে) নিম্নলিখিত সাত প্রকার দাসের উল্লেখ করেছেন; এরা শুদ্র ছিল২। ক্রীতই হোক, অক্রীতই হোক, ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যই শূদ্র সৃষ্ট হয়েছিল৩। সেবাই তার তপস্যা৪।

(১) যুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তির নিকট থেকে ধৃত (ধ্বজাহৃত),

(২) ক্রীতদাসী বা দাসীর পুত্র (গৃহজ),

(৩) যে উদরান্নের জন্য দাসত্ব বরণ করেছে (ভক্তদাস),

(৪) অপরের কাছ থেকে যাকে কেনা হয়েছে (ক্রীত),

(৫) অপর ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত (দৎত্রিম),

(৬) পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত (পৈতৃক),

(৭) জরিমানা প্রভৃতি দিতে অক্ষম হয়ে যে স্বয়ং দাসত্ব বরণ করেছে (দণ্ডদাস)।

দাসের নিজস্ব কোন সম্পত্তি রাখার অধিকার ছিল না (৮/৪১৬)। দাসশূদ্রের ধন ব্রাহ্মণ অবাধে নিজের কাজে প্রয়োগ করবেন ; কারণ, তার নিজস্ব বলে কিছু নেই, সে ‘ভর্তৃহার্যধন’ (৮/৪১৭)। এই শ্লোকের টীকায় কুল্লূভট্ট বলেছেন যে, আপদ্‌কালে ব্রাহ্মণ দাসের ধন বলপূর্বক নিলেও রাজা কর্তৃক দণ্ডনীয় হবেন না। শূদ্রকে রাজা যত্নসহকারে ‘দ্বিজাতিশুশ্রূষা’রূপ কার্য করাবেন। তা না হলে সে স্বকর্মচ্যুত হয়ে অশাস্ত্রীয় উপায়ে অর্জিত ধন গ্রহণ ও ঔদ্ধত্য হেতু সমাজবিরোধী কাজ করতে পারে (৮/৪১৮ ও কুল্লূকের টীকা)।

১০/১২১-এ মনু ব্যবস্থা করেছেন যে, দ্বিজদের সেবা করার সুযোগ একান্তই না পেলে শূদ্র অন্য বৃত্তি অবলম্বন করতে পারে।

যে শূদ্র তাঁর গৃহকর্ম করে না, তার দেওয়া খাদ্য ব্রাহ্মণের ভক্ষণ নিষিদ্ধ, শূদ্ৰান্ন ব্ৰহ্মতেজনাশক (৪/২১৮)। ব্রাহ্মণের পক্ষে শূদ্রকে দৃষ্টার্থ বা অদৃষ্টাৰ্থ অর্থাৎ ধর্মসংক্রান্ত কোন উপদেশ দান অশাস্ত্রীয় (৪/৮০)। শূদ্রযাজক অর্থাৎ যিনি শূদ্রের পক্ষে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেন, তাঁর ব্রাহ্মণ্য দোষযুক্ত হয় (৩/১৭৮)।

বিবাহব্যাপারে মনু বলেছেন (৩/১২) যে, দ্বিজের পক্ষে সবর্ণ বিবাহ প্রশস্ত। কামতঃ অর্থাৎ কামপরবশ হয়ে বিবাহ করলে ব্রাক্ষণ অপর তিন বর্ণের স্ত্রীকে, ক্ষত্রিয় নিম্নতর বর্ণের স্ত্রীকে এবং বৈশ্য বৈশ্য অথবা শূদ্র স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারেন। কিন্তু, পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে ব্রাহ্মণকর্তৃক শূদ্রা বিবাহ নিন্দিত হয়েছে। ৩/১৭ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, শূদ্রকে শয্যায় নিলে ব্রাহ্মণ অধোগতি প্রাপ্ত হন ; শূদ্রা স্ত্রীতে সন্তানের জন্ম দিলে তিনি ব্রাহ্মণ্য থেকেই ভ্রষ্ট হন। ব্রাহ্মণের শূদ্রা বিবাহ এত তীব্রভাবে নিন্দিত হয়েছে যে ৩/১৯ শ্লোকে মনু বলেছেন যে, শূদ্রার অধররস পান করলে, এমন কি তার নিঃশ্বোপহত হলে এবং তার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করলে ব্রাহ্মণের পাপ মোচনের কোন পথ নেই।

মনু চণ্ডালকে অস্পৃশ্যদের মধ্যে নিকৃষ্টতম বলেছেন। দিবাকীর্তি বা চণ্ডালকে স্পর্শ করলে স্নান করে শুদ্ধ হতে হয় (৫/৮৫)। এদের সঙ্গে বা কাছে থাকা নিষিদ্ধ (৪/৭৯)। ১০/৩০ শ্লোকে আছে যে, শূদ্র ও ব্রাহ্মণ স্ত্রীর সন্তান হয় ‘বাহ্য’ (অর্থাৎ চণ্ডাল-কুল্লূক)। চণ্ডালাদি ও বর্ণচতুষ্টয়ের মিশ্রণে বাহ্যতর অর্থাৎ চণ্ডাল অপেক্ষাও নিকৃষ্ট জাতির উদ্ভব হয়।

মনুসংহিতা’য় যে সকল সংকরবর্ণের উল্লেখ আছে, তাদের নাম ও পরিচয় পৃথক্‌ভাবে লিখিত হল। ম্লেচ্ছজাতির উল্লেখও করেছেন মনু (২/২৩, ১০/৪৫)। ‘ম্লেচ্ছ’ শব্দের অর্থ বর্নাশ্রমবহির্ভূত জাতি

নিম্নলিখিত শ্রেণীর লোকেরা, মনুর মতে, গ্রামোপকণ্ঠে চৈত্যক্রম বা প্রধান প্রধান বৃক্ষমূলে, শ্মশানে, পর্বতে বা উপবনে বাস করবে:

সৈরন্ধ (কেশপ্রসাধক, সংবাহক বা ব্যাধ), মৈত্রেয়ক (যারা প্রভাতে ঘণ্টা বাজিয়ে রাজা ও অন্যান্যদের স্তুতিকীর্তন করে), মার্গব (নৌচালক), কারাবর (চর্মকার), সোপাক (রাজা কর্তৃক নরহত্যর জন্য নিযুক্ত), পাণ্ডুসোপাক (বাঁশের ব্যবসায়ী), মেদ, অন্ধ্র, মদ্‌গু (এরা পশুবধ করে জীবিকার্জন কারে), ধিগ্‌বন (চর্মোপজীবী), বেন (ঘণ্টা, মুজাদি যস্ত্র বাদনের জন্য নিযুক্ত), অন্ত্যাবসায়ী (যাৱা শ্মশানে থেকে কাজ করে জীবন যাপন করে)। পূর্বোক্ত চণ্ডাল বাস করবে গ্রামের বাইরে। তাদের পরিধেয় মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত বস্ত্রাদি, আহার ভগ্নপাত্র থেকে, তারা লোহার বালা প্রভৃতি পরে অনবরত একস্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াবে এবং তাদের সম্পত্তি হবে কুকুর, গর্দভ (১০/৫০ থেকে)। চণ্ডাল এবং শ্বপাক জাতীয় লোকেরা যে পাত্রে ভক্ষণ করবে, তা অপরের ব্যবহারের অযোগ্য ; এই সব পাত্র বিহিত পদ্ধতি অনুসারে সংস্কার করলেও পরিত্যাজ্য।

মনু সুপকারাদি কারক এবং লোহকারাদি শিল্পীদের ও মেহনতি শূদ্রদের উল্লেখ করেছেন (৭/১৩৮); বিধান দিয়েছেন যে, এরা রাজাকে করদান না করে তার পরিবর্তে প্রতি মাসে রাজার কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করবে। ১০/১২০তেও শূদ্র সম্বন্ধে এই ব্যবস্থা আছে। যে সব সাধারণ লোক অল্পমূলোর শাক পাতা কেনাবেচা করে, তারা রাজস্ব হিসাবে ‘যৎকিঞ্চিৎ’ দিবে।

শূদ্রের সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে ১০/১২৬ শ্লোকটি স্পষ্ট। কুল্লূকের টীকানুসারে এর অর্থ এই যে, অভক্ষ্যভক্ষণে শূদ্রের কোন পাপ নেই। তার কোন সংস্কার নেই, ধর্মকার্যে তার কোন অধিকার নেই, এবং (তার পক্ষে বিহিত) পাকযজ্ঞাদিতে তার পক্ষে কোন নিষেধ নেই।

প্রায়শ্চিত্তের ক্ষেত্রেও শূদ্রের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধি লক্ষিত হয়।

ব্রহ্মবধের পাপক্ষালনার্থ দ্বাদশ বার্ষিক কৃচ্ছসাধন বিহিত, কিন্তু শূদ্ৰহত্যার প্রায়শ্চিত্ত নয় বা ছয় মাস ব্যাপী (১১/১৩০)।

শূদ্র এবং অন্যান্য তথাকথিত নীচ শ্রেণীর লোকদের সম্বন্ধে উল্লিখিত মনোভাব থেকে মনে হতে পারে যে, ‘মনুসংহিতাֹ’য় মানবিক ভাবের অভাব আছে। কিন্তু, কতক শ্লোক থেকে তা মনে হয় না। বয়স এবং বিদ্যার মর্যাদা মনু উচ্চনীচ নির্বিশেষে দিয়েছেন। ২/২৩৮ শ্লোকে নির্দেশ আছে যে, ‘অবর’ অর্থাৎ শূদ্রের কাছেও ‘শুভবিদ্যা’ শ্রদ্ধাসহকারে শিক্ষা করা উচিত এবং ‘অন্ত্য’ বা চণ্ডালের কাছেও ‘পরধর্ম’ অর্থাৎ পরবিদ্যা শিক্ষা করা কর্তব্য। ২/১৩৮ শ্লোকে উপদেশ এই যে, জাতি নির্বিশেষে ‘চক্র’ (চক্রযুক্ত রথাদিয়ানারূঢ়), ‘দশমীস্থ’ (নব্বই বৎসরের অধিক বয়স্ক) রোগী, ভারবাহী এবং স্ত্রীলোকের জন্য সকলেরই পথ ছেড়ে দেওয়া সমীচীন। ২/১৩৭ শ্লোক এবং এর কুল্লূকভট্টকৃত টীকা থেকে জানা যায়, শূদ্রও ‘দশমীস্থ’ অর্থাৎ নব্বই বৎসরের অধিক বয়স্ক হলে তিনি দ্বিজদেরও মানাই। যদিও কোন কোন অপরাধে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড বিহিত হয়েছে, তথাপি শূদ্রের মৃত্যু শাস্ত্রকারের অভিপ্রেত নয়; কারণ, ৮/১০৪ শ্লোকে বিহিত হয়েছে যে, শূদ্রকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচাতে গিয়ে সাক্ষী মিথ্যা কথা বললে মিথ্যাসাক্ষ্যজনিত পাপ হবে না।

মনুস্মৃতিতে লিখিত জাতিসমূহের নাম

ব্রাহ্মণাদি চার বর্ণ ছাড়াও ম্লেচ্ছ ও নিম্নলিখিত সংকর বর্ণগুলির উল্লেখ করেছেন মনু। এগুলি থেকে বোঝা যায়, বিবাহ এবং স্ত্রীসম্ভোগ সম্বন্ধে বাঁধাধরা নিয়মকানুন সত্ত্বেও সেকালে অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাপারে নিয়ম লঙ্ঘিত হত সংকর বর্ণগুলির নাম অকারাদিক্রমে লিখিত হল। ব্রাহ্মণাদি বর্ণত্রয়ের যে কোন একটির সঙ্গে নিম্নতর বর্ণের স্ত্রীর অনুলোম বা প্রতিলোম বিবাহের ফলে জাত সন্তানের বিশেষ সংজ্ঞাও লিখিত হল। মনু এদের ‘অন্তরপ্ৰভব’ বলে বিশেষিত করেছেন (১/২)। তিনি ছয়টি অনুলোমজ, ছয়টি প্রতিলোমজ ও কুড়িটি অনুলোমজ-প্রতিলোমজদের মিশ্রণে উদ্ভুত জাতির উল্লেখ করেছেন।৫

অন্ত্যাবসায়ী ১০.৩৯

চণ্ডাল পিতা ও নিষাদ (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

অন্ধ্র ১০.৩৬, ৪৮

বৈদেহক (দ্রঃ) পিতা ও কারাবর (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

অপসদ ১০.১০

ব্রাহ্মণ পিতা, ক্ষত্রিয় মাতা।

অম্বষ্ঠ ১০.৮, ১৩ প্রভৃতি

ব্রাহ্মণ পিতা ও বৈশ্য মাতার সন্তান।

আয়োগব ১০.১২, ১৫ ইত্যাদি

শূদ্র পিতা ও বৈশ্য মাতার সন্তান বা বৈশ্য পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

আবৃত ১০.১৫

ব্রাহ্মণ পিতা ও উগ্র (?) মাতার সন্তান।

আভীর ১০.১৫

ব্রাহ্মণ পিতা, অম্বষ্ঠ মাতা।

উগ্র ৪.২১২, ১০.৯,১৩ ইত্যাদি

ক্ষত্রিয় পিতা ও শূদ্র মাতার সন্তান।

ব্রাহ্মণ পিতা ও শূদ্র মাতার সন্তান।

বৈশ্য পিতা ও শূদ্র মাতার সন্তান।

করণ ৮.১৫৪, ১০.২২

বৈশ্য পিতা ও শূদ্র মাতার সন্তান।

কারাবর ১০.৩৬

নিষাদ (দ্রঃ) পিতা ও বৈদেহ (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

কুক্কুটক ১০.১৮

শূদ্র পিতা ও নিষাদ (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

বৈশ্য পিতা ও নিষাদ মাতার সন্তান।

কুণ্ড ৩.১৫৬, ১৫৮, ১৭৪

ব্রাহ্মণ পুরুষ ও কোন সধবা নারীর গোপনে মিলনজাত সন্তান।

কৈবর্ত ১০.৩৪

নিষাদ পিতা ও আয়োগব (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

ক্ষত্তা ১০.১২

শূদ্র পিতা, ক্ষত্রিয় মাতা।

গোলক ৩.১৫৬, ১৭৪

ব্রাহ্মণ বিধবার সঙ্গে ব্রাহ্মণের গোপন মিলনে প্রসূত সন্তান।

চণ্ডাল ১০,১২, ১৬ ইত্যাদি

শূদ্র পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান।

অবিবাহিত স্ত্রীলোকের সন্তান।

সগোত্রা স্ত্রীর সঙ্গে মিলনে প্রসূত সন্তান।

চুঞ্চু ১০.৪৮

ব্রাহ্মণ পিতা ও বৈদেহক (দ্রঃ) বা বন্দী (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

তুন্নবায় ৪.২১৪

বৈদেহক (দ্রঃ) পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

দাস ৮.৪০৮, ৪০৯ ; ৯.১৪১, ১৪২ ইত্যাদি।

পূর্বোক্ত কৈবর্তের সঙ্গে অভিন্ন।

ধিগ্‌বন ১০.১৫, ৪৯।

ব্রাহ্মণ পিতা ও আয়োগব (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

নিষাদ ১০.৮, ১৮ ইত্যাদি।

ব্রাহ্মণ ও শূদ্রার বিবাহজাত সন্তান।

পারশব ৯.৭৮, ১১.৮

উক্ত নিষাদের সঙ্গে অভিন্ন।

পুক্কস ১০.১৮, ৪৯ ইত্যাদি

নিষাদ (দ্রঃ) পিতা ও শূদ্র মাতার সন্তান।

শূদ্র পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

বৈশ্য পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

ভূর্জকণ্টক ১০.২১

ব্রাত্য ব্রাহ্মণ পিতা, ব্রাহ্মণ মাতা।

(এরই দেশভেদে বিভিন্ন নাম আবন্ত্য, বাটধান, পুষ্পধ ও শৈখ)।

মাগধ ১০.১১, ১৭ ইত্যাদি

বৈশ্য পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

বৈশ্য পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান।

শূদ্র পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

মেদ ১০.৩৬, ৪৮

বৈদেহক (দ্রঃ) ও নিষাদ (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

মৈত্রেয়র্ক ১০.৩৩

বৈদেহক (দ্রঃ) ও আয়োগব (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

স্লেচ্ছ ২.২৩

বর্ণাশ্রমবহির্ভূত জাতি। মনু বলেছেন, যে অঞ্চলে কৃষ্ণসার স্বভাবতঃ বিচরণ করে, তার বাইরের অঞ্চল ম্লেচ্ছদেশ নামে অভিহিত।

রঞ্জক ৪.২১৬

শূদ্র ও ক্ষত্রিয়ার অবৈধ মিলনের ফলে জাত সন্তান।

বেণ ১০.১৯, ৪৯

বৈদেহক পিতা (দ্রঃ) ও অম্বষ্ঠ মাতার সন্তান।

বিভিন্ন বর্ণের প্রতিলোমজ সন্তান, যে বাঁশ বেত কেটে জীবিকানির্বাহ করে।

বৈদেহক ১০.১১, ১৩ ইত্যাদি

বৈশ্য পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান।

শুদ্র ও ক্ষত্রিয়ার মিলনজাত সন্তান।

শূদ্র ও বৈশ্যার মিলনজাত সন্তান।

ব্রাত্য ৮.৩৭৩; ১০.২০-২৩ ইত্যাদি

বর্ণসংকরজাত সন্তান।

শ্বপচ ১০.৫১

উগ্র (দ্রঃ) পিতা ও ক্ষতৃ মাতার সন্তান।

ক্ষতৃ পিতা ও উগ্র মাতার সন্তান।

চণ্ডাল পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান।

চণ্ডাল পিতা ও বৈশ্য মাতার সন্তান।

শ্বপচক ১০.১৯

পূর্বোক্ত শ্বপচের সঙ্গে অভিন্ন।

সূচী ৮.১৮৭, ১৯১

বৈদেহক (দ্রঃ) পিতা ও ক্ষত্রিয় মাতার সন্তান।

সূত ১০.১১, ১৭ ইত্যাদি

ক্ষত্রিয় পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান।

সোপাক ১০.৩৮

চণ্ডাল পিতা ও পুক্কুস (দ্রঃ) মাতার সন্তান।

ঝল্ল, মল্ল, নিচ্ছিবি, নট, করণ, খস ও দ্রবিড়—এদের পিতা ব্রাত্য ক্ষত্রিয় এবং মাতাও তদ্রূপ (১০/২২)। একই প্রকারে এদের জন্ম হলেও দেশভেদে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম হয়।

সুধান্বাচার্য, কারুষ, বিজন্মা, মৈত্র, সাত্বত—এৱা ব্রাত্য বৈশ্য পিতামাতার সন্তান (১০/২৩)।

মনুসংহিতায় ভৌগোলিক তথ্য

‘মনুসংহিতা’য় ভারতবর্ষের নিম্নলিখিত অঞ্চলসমূহ ও তাদের অবস্থান সম্বন্ধে তথ্য আছে।

আর্যাবর্ত (২/২২)

হিমালয় ও বিন্ধাপর্বতের মধ্যবর্তী এবং পূর্ব সমুদ্র (বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম সমুদ্র (আরবসাগর) পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের নাম। টীকাকার কুল্লূকভট্ট লিখেছেন যে, সমুদ্রমধ্যস্থিত দ্বীপ আর্যাবর্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর্যাবর্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ—এখানে আর্যগণ আবর্তিত অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করেন।

ব্ৰহ্মর্ষিদেশ (২/১৯)

কুরুক্ষেত্র, মৎস্য, পঞ্চাল, শূরসেন—এই অঞ্চলগুলি দ্বারা গঠিত। এই দেশকে বলা হয়েছে। ‘ব্রহ্মাবর্তাদনন্তরঃ’ অর্থাৎ ব্রহ্মাবর্তের (দ্রঃ) পরে।

কুরুক্ষেত্র—থানেশ্বর। পূর্বে এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল শোণেপৎ, আমিন, কণাল ও পানিপৎ। এই জেলা উত্তরে সরস্বতী ও দক্ষিণে দৃষদ্বতী নদীর মধ্যবর্তী ছিল। ব্রহ্মাবর্ত প্রসঙ্গে এই দুই নদীর পরিচয় লিখিত আছে।

মৎস্য—(১) জয়পুর রাজ্য ; এর অন্তর্গত ছিল বর্তমান ভরতপুরের অংশ এবং আলোয়ার।

(২) কুর্গ।

(৩) মনে হয়, প্রাচ্য মৎস্য ছিল তিরহুতের (বৈশালী সহ) দক্ষিণ অংশ।

পঞ্চাল—রোহিখণ্ড। আদিতে এই দেশ ছিল দিল্লীর উত্তরে ও পশ্চিমে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে চম্বল নদ পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু, পরবর্তী কালে গঙ্গা নদীর দ্বারা এই অঞ্চল উত্তর ও দক্ষিণ পঞ্চালে বিভক্ত হয়। উত্তরাঞ্চলের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র (রোহিলখণ্ডে বরেলীর বিশ মাইল পশ্চিমে রামনগর) এবং দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী ছিল কাম্পিল্য (উত্তরপ্রদেশের ফারাক্কাবাদ জেলায় ফৎগড়ের আটাশ মাইল উত্তরপূর্বে কম্পিল নামক স্থান)।

শূরসেন—এই রাজ্যের রাজধানী ছিল মথুরা।

ব্ৰহ্মাবর্ত (২/১৭)

সরস্বতী ও দৃষদ্বতী এই দুইটি নদীর মধ্যবর্তী ভূভাগ। সরস্বতী নদী হিমালয়ের অংশভূত সেবালিকে শিরমুর পর্বত থেকে নির্গত হয়ে আম্বালায় আদ্‌বদ্রী নামক সমতলভূমিতে প্রকাশিত হয়েছে। নদীপ্রবাহ চলৌর গ্রামের নিকটবর্তী বালুকাময় স্থানে অদৃশ্য হয়ে ভবানীপুর নামক স্থানে পুনরাবির্ভূত হয়েছে। দৃষদ্বতী হল চজ্ঞর বা ঘগর ; এটি আম্বালা ও সিরহিন্দের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজপূতনার মরুতে অদৃশ্য হয়েছে। কানিংহামের মতে, এই নদীর নাম রক্ষী ; এটি থানেশ্বরের দক্ষিণপূর্ব দিক্ দিয়ে প্রবাহিত।

কেউ কেউ দৃষদ্বতীকে বর্তমান চিত্রাংগ (চৌতাংগ বা চিতাংগ) নামক নদীর সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন।

মধ্যদেশ (২/২১)

হিমালয় ও বিন্ধ্যপর্বতের মধ্যবর্তী, ‘বিনশনে’র পূর্বদিকে এবং প্রয়াগের পশ্চিমে অবস্থিত। বিনশন অর্থাৎ যেখানে সরস্বতী নদী অদৃশ্য হয়েছে। এই স্থানটি সিরহিন্দ (পাতিয়ালা) জেলায় বালুকাময় মরু অঞ্চলে অবস্থিত। থানেশ্বর থেকে পশ্চিমবাহিনী হয়ে নদীটি এখানে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছে। সরস্বতী নদীর পরিচয় ব্রহ্মাবর্ত প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য।

ম্লেচ্ছদেশ (২/২৩)

যিজ্ঞিয় দেশের পরে অবস্থিত বলে লিখিত। যজ্ঞিয় দেশ দ্রঃ। ম্লেচ্ছ শব্দে বোঝয় পারস্য প্রভৃতি দেশবাসী লোক ; সিংহলাদি দেশের বণাশ্রমধর্মহীন মানুষ।

যজ্ঞিয়ে দেশ (২/২৩)

এই অঞ্চলের কোন সীমা নির্ধারিত হয়নি। বলা হয়েছে, এই হল সেই দেশ যেখানে কৃষ্ণসার মৃগ স্বভাবতঃ বাস করে ; অর্থাৎ যেখানে এরূপ মৃগ বলপূর্বক আনীত হয় না।

মনুসংহিতায় গাছপালা, ফুল-ফল

‘মনুসংহিতা’য় (১/৪৬-৪৮) উদ্ভিদসমূহের নিম্নলিখিত শ্রেণীবিভাগ আছে :

(১) ওষধি—এই জাতীয় উদ্ভিদ ফল পাকলে মরে যায়।

(২) বনস্পতি—যাতে ফুল হয় না, কিন্তু ফল হয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য এই যে, বনস্পতি শব্দে সাধারণতঃ উক্তরূপ উদ্ভিদ্‌ ছাড়াও যে কোন গাছকে বোঝায় (বনস্পতিবৃক্ষমাত্রে বিনা পূস্পফলে দ্রুমে)। ‘অমরকোষ’-এ আর একটি শব্দ আছে বানস্পত্য ; এর অর্থ সেইরূপ বৃক্ষ, যার ফুল থেকে ফল হয়।

(৩) বৃক্ষ—দু’ রকম গাছ ; একরকম গাছে শুধু ফুল হয়, অন্য রকমে শুধু হয় ফল।

(৪) গুল্ম।

(৬) প্রতান—তযুক্ত লতা।

(৭) বল্লী—যে লতা গাছ বেয়ে ওঠে।

মনু উদ্ভিদ্‌কে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন ; যথা বীজপ্ররুহ (যা বীজ থেকে জন্মে), ও কাণ্ডপ্ররুহ (যা কাণ্ড বা শাখা থেকে জন্মে)।

উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে, এসম্বন্ধে মনু সচেতন ছিলেন। তিনি বলেছেন (১/৪৯)—অন্তঃসংজ্ঞা ভবন্ত্যেতে সুখদুঃখসমন্বিতাঃ ; এদের ভিতরে সংজ্ঞা বা সুখ দুঃখ বোধশক্তি আছে। এই তত্ত্বটি যে মনুর আবিষ্কার, তা নয়। এই সম্বন্ধে সচেতনতা ‘ঋগ্বেদে’ (১০/৯৭/২১) এবং ‘মহাভারত’-এও (শান্তিপর্ব, অধ্যায় ১৮৪) দেখা যায়।

আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নামও লিখিত হল

কবক (অর্থাৎ ছত্রাক)Andropogonschoenanthus৫/৫
গৃঞ্জন ছত্রাক (কুবক দ্রঃ)Odina wodier Roxb৫/৫, ১৯
পলাণ্ডুAllium cepa Lumn৫/৫, ১৯
লশুনAllium sativum Linn৫/৫, ১৯
শেলুDillenia indica Linn৫/৬

মনুসংহিতায় জীবজন্তু

এই গ্রন্থে সমগ্র জাগতিক পদার্থকে প্রধান দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে (১/৪); যথা স্থাবর ও জঙ্গম। জঙ্গম প্রাণিগণের স্থূল ভাগ (১/৪৩-৪৫) এইরূপ : জরায়ুজ, অণ্ডজ ও স্বেদজ। মানুষ ও জন্তু জরায়ুজ। পাখী, সাপ, কুমীর, মাছ ও কচ্ছপ অগুজ। অণ্ডজ দ্বিবিধ— স্থলজ ও ঔদক (উদকে বা জলে জাত)। মশা, মাছি, ছারপোকা, উকুন, পিপড়া প্রভৃতি স্বেদ বা তাপ থেকে জাত।

পশুসমুহকে মনু দুইভাগে বিভক্ত করেছেন ; যথা ক্রব্যাদ (১১/১৩৭) অথাৎ মাংসাশী এবং অক্রবাদ (ঐ) অথাৎ অমাংসভোজী।

একখুরবিশিষ্ট জন্তুকে বলা হয়েছে একশ (৫/৮)। এক পার্টিতে যাদের দাঁত আছে, তাদের অভিহিত করা হয়েছে একতোদৎ শব্দে (৫/১৮)।

পঞ্চনখবিশিষ্ট (যথা ৫/১৮) জন্তুদের সম্বন্ধে খাদ্যাখাদ্য বিষয়ে বিশেষ বিধান আছে।

জীবজন্তুর নাম আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নামসহ লিখিত হল

অজ Capra hircus ৮/২৩৫ ১১/১৩৬

অনডুহ Bos indicus ১১/১৩৬ ১১/১৩৭

অবি Ovis ammon ৫/৮, ৮/২৩৫

Ovis orientolis

অশ্ব Equus caballus ১১/৩৮, ১৯৯

আখ ৪/১২৬

উষ্ট্র Camelus dromederius ৫/৮, ১৮

Camelus bactrianus ১১/১৩৭, ১৫৪, ১৯৯

একশফ ৫/৮ (একখুরবিশিষ্ট ; যথা ঘোড়া, গাধা, খচ্চর)

কপি (বানর দ্রঃ) ১১/১৫৪

খড়্গ Rhinoceros unicornis ৫/১৮

খর Equus hemionus ১১/১৫৪

গজ Elephas Maximus ১১/১৩৬

গো Bos sp. ৮/২৪২, ১১/১৩০, ১৩৫

গোধা Voranus sp. ৫১৮, ১১/১৩১

গোমুখ ১১/১৫৪

ছুছুন্দরি Talpa micrura ১২/৬৫

Suneus caeruleus

দ্বিপ (গজ দ্রঃ) ৭/১৯২

ধেনু (গো দ্রঃ) ৮/১৪৬, ১১/১৩৭

নকুল Herpestes auropunctatus ১১/১৩১, ১৫৯

বরাহ Sus scrafa ৫/১৪, ১৯ ১১/১৩৪, ১৫৪

বানর Macaca mullatta ১/৩৯

Hylobates sp. ১১/১৩৫

Acetytis entellus

বিড্‌বরাহ (বরাহ দ্রঃ) ৫/১৪, ১৯, ১১/১৫৪

বিড়াল Felis domestica ১১/১৫৯

Rana tigrina ৪/১২৬

মণ্ডুক Bufo melanoticus ৪/১২৬

মহিষ Bubalus bubalis ৫/৯

মার্জার (বিড়াল দ্রঃ) ৪/১২৬

মেষ (অবি দ্রঃ) ১১/১৩৬

শল্যক Hystrix indica ৫/১৮

শশ Lepus nigricollis ৫/১৮

শ্বাবিধ্‌ ৫/১৮

(টীকাকার কুল্লূকের মতে এটি হল শল্যক ; অপর নাম সেধা)

হয় (অশ্ব দ্রঃ) ১১/১৩৬

পাদটীকা

 ১ ন স্বামিনা নিসৃষ্টোইপি শূদ্রোদাস্যাদ্‌ বিমুচাতে।

 ২ শূদ্রংতু কারয়েদ্‌ দাস্যম্‌।

 ৩ দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টৌহসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ংভুবা।

 ৪ তপঃ শূদ্রস্য সেবনম্‌ (১১/২৩৫)।

 ৫ মনু বলেছেন (১০/২৪) যে, বর্ণগুলির ব্যভিচার, সগোত্রাদিবিবাহ ও উপনয়নাদি স্বকর্মত্যাগ হেতু বর্ণ সংকরের উৎপত্তি হয়।

Book Content

০১. মনুসংহিতা – প্রথম অধ্যায়
০২. মনুসংহিতা – দ্বিতীয় অধ্যায়
০৩. মনুসংহিতা – তৃতীয় অধ্যায়
০৪. মনুসংহিতা – চতুর্থ অধ্যায়
০৫. মনুসংহিতা – পঞ্চম অধ্যায়
০৬. মনুসংহিতা – ষষ্ঠ অধ্যায়
০৭. মনুসংহিতা – সপ্তম অধ্যায়
০৮. মনুসংহিতা – অষ্টম অধ্যায়
০৯. মনুসংহিতা – নবম অধ্যায়
১০. মনুসংহিতা – দশম অধ্যায়
১১. মনুসংহিতা – একাদশ অধ্যায়
১২. মনুসংহিতা – দ্বাদশ অধ্যায়
১৩. সংযোজন – শব্দকোষ
লেখক: সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়বইয়ের ধরন: Editor's Choice, ধর্মীয় বই

Reader Interactions

Comments

  1. Ratna Deb

    March 20, 2023 at 9:05 pm

    Beautiful but if you provide meaning of each Sanskrit word in Bengali,it would be very helpful.

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.