০২. মনুসংহিতা – দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায়

১। বিদ্বদ্ভিঃ সেবিতঃ সদ্ভির্নিত্যমদ্বেষরাগিভিঃ।

হৃদয়েনাভ্যনূজ্ঞাতো যো ধর্মস্তং নিবোধত ॥

সজ্জন ও দ্বেষ এবং আসক্তিরহিত বিদ্বান ব্যক্তিগণ কর্তৃক সেবিত ও সর্বদা মনে মনে মঙ্গলজনক বলে জ্ঞাত যে ধর্ম, তা জানুন।

২। কামাত্মতা ন প্রশস্ত ন চৈবেহাস্ত্যকামতা।

কাম্যাোহি বেদাধিগমঃ কর্মযোগশ্চ বৈদিকঃ ॥

কামনাপূর্বক কর্ম করা প্রশংসনীয় নয়, এই জগতে কামনাহীনতা নেই ; যেহেতু বেদজ্ঞান ও বেদবিহিত কর্ম কাম্য।

৩। সঙ্কল্পমূলঃ কামা বৈ যজ্ঞাঃ সঙ্কল্পসম্ভবাঃ।

ব্রতা নিয়মধর্মাশ্চ সর্বে সঙ্কল্পজাঃ স্মৃতাঃ ॥

কামের মূল সংকল্প, যত্তসমূহ সংকল্প থেকে উদ্ভূত, ব্ৰতসকল এবং (প্রতিষেধাত্মক অহিংসাদি) যমধর্ম এই সবই সংকল্প থেকে জাত।

৪। অকামস্য ক্রিয়া কাচিদ্দশ্যতে নেহ কর্হিচিৎ।

যদ্‌যদ্ধি কুরুতে কিঞ্চিৎ তত্তৎ কামস্য চেষ্টিতম্ ॥

এ জগতে কোথাও কামনাহীন ব্যক্তির কোন ক্রিয়া দেখা যায় না। যা যা (লোকে) করে, তা কামের ক্রিয়া।

৫। তেষু সম্যগ্বর্তমানো গচ্ছত্যমলোকতাম্।

যথাসঙ্কক্সিতাংশ্চেহ সর্বান্ কামান্ সমশ্লুতে ॥

সেই (কাম্যকর্ম) সমূহে সম্যক্ রূপে প্রবৃত্ত হয়ে (মানুষ) দেবলোকে গমন করে এবং ইহলোকে ইচ্ছানুরূপ সকল কাম্যবস্তু ভোগ করে।

৬। বেদোহখিলো ধর্মমূলং স্মৃতিশীলে চ তদ্বিদাম্‌।

আচারশ্চৈব সাধূনামাত্মনস্তুষ্টিরেব চ ॥

সমগ্র বেদ, বেদজ্ঞ ব্যক্তিগণের স্মৃতি ও আচরণ, সজ্জনগণের আচার এবং নিজের সন্তোষ ধর্মের মূল।

৭। যঃ কশ্চিৎ কস্যচিদ্ধর্মো মনুনা পরিকীর্তিতঃ।

স সর্বোহভিহিতো বেদে সর্বজ্ঞানময়ো হি সঃ ॥

মনু কর্তৃক কারও যা কিছু ধর্ম ঘোষিত হয়েছে, তার সব বেদে উক্ত হয়েছে; সেই (বেদ) সকল জ্ঞানের আধার।

৮। সর্বন্তু সমবেক্ষ্যেদং নিখিলং জ্ঞানচক্ষুষা।

শ্রুতিপ্রামাণ্যতো বিদ্বান্ স্বধর্মে নিবিশেত বৈ ॥

এই সমস্ত জ্ঞাননেত্রে পর্যবেক্ষণ করে বেদপ্রমাণমূলে বিদ্বান্ স্বধর্মে নিবিষ্ট হবেন।

৯। শ্ৰতিস্মৃত্যুদিতং ধর্মমনুতিষ্ঠন্‌ হি মানবঃ।

ইহ কীর্তিমিবাপ্নোতি প্ৰেত্য চানুত্তমং সুখম্‌॥

মানুষ শ্রুতি ও স্মৃতিতে উক্ত ধর্ম অনুষ্ঠান করে ইহলোকে যশ ও পরলোকে শ্রেষ্ঠ সুখ লাভ করে।

১০। শ্রুতিস্তু বেদো বিজ্ঞেয়ো ধর্মশাস্ত্ৰস্তু বৈ স্মৃতিঃ।

তে সবার্থেম্বমীমাংস্যে তাভ্যাং ধর্মো হি নিৰ্বভৌ ॥

শ্রুতি বেদ বলে জ্ঞেয়, ধর্মশাস্ত্র স্মৃতি। সকল বিষয়ে এই দুইটি (তর্কদ্বারা) মীমাংস্য নয়। এই দুইটি থেকে ধর্ম প্রকাশিত হয়েছিল।

১১। যোহবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াদ্‌ দ্বিজঃ।

স সাধুভির্বহিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ ॥

যে দ্বিজ তর্কশাস্ত্র আশ্রয় করে ঐ দুই মূলকে অবজ্ঞা করেন, তিনি নাস্তিক, বেদের নিন্দুক ; সজনগণ কর্তৃক তাঁর বহিষ্কার করণীয়।

১২। বেদঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য চ প্রিয়মাত্মনঃ।

এতচ্চতুর্বিধং প্ৰাহুঃ সাক্ষাদ্ধাস্য লক্ষণম্॥

বেদ, স্মৃতি, সদাচার, নিজের প্রিয় কর্ম—ধর্মের এই চার প্রকার সাক্ষাৎ লক্ষণ।

১৩। অর্থকামেধসত্তানাং ধর্মজ্ঞানং বিধীয়তে।

ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ ॥

অর্থ ও কামে আসক্তিহীন ব্যক্তিগণের ধর্মজ্ঞান বিহিত। যারা ধর্ম জানতে চায়, তাদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ বেদ।

১৪। শ্রুতিদ্বৈধন্তু যত্র স্যাত্ত ধর্মাবুভৌ স্মৃতৌ।

উভাবপি হি তৌ ধর্মে সম্যগুক্তৌ মনীষিভিঃ॥

যেখানে বেদে মতভেদ হয় সেখানে দুইটি মতই ধর্ম বলে স্বীকৃত। মনীষিগণ কর্তৃক যথাযথভাবে উক্ত ঐ দুইটিই ধর্ম।

১৫। উদিতেইনুদিতে চৈব সময়াধ্যুষিতে তথা।

সর্বৰ্থা বৰ্ততে যজ্ঞ ইতীয়ং বৈদিকী শ্রুতিঃ ॥

(সূর্যের) উদয়কালে, অনুদয়কালে এবং সূর্যনক্ষত্ররহিত কালে সর্বপ্রকারে যন্ত্র প্রবর্তিত হয় ; এই হল বৈদিক শ্রুতি।

১৬। নিষেকাদিশ্মশানান্তে মস্ত্রৈর্যস্যোদিতে বিধিঃ।

তস্য শাস্ত্রেহধিকারোহস্মিন্ জ্ঞেয়ো নান্যস্য কস্যচিৎ॥

যার১ গর্ভাধান থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত বিধি মন্ত্র সহকারে উক্ত হয়েছে, এই শাস্ত্রে তার অধিকার২ জ্ঞাতব্য, অন্য কারও নয়।

১৭। সরস্বতীদৃষদ্বত্যোর্দেবনদ্যোর্যদস্তরম্।

তং দেবনির্মিতং দেশং ব্রহ্মাবর্তং প্রচক্ষতে ॥

সরস্বতী দৃষদ্বতী নামক দেবনদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী দেবনির্মিত দেশকে ব্রহ্মাবর্ত বলা হয়।

১৮। তস্মিন্‌ দেশে য আচারঃ পারস্পর্যক্রমাগতঃ।

বর্ণানাং সান্তরালানাং স সদাচার উচ্যতে ॥

সেই দেশে বর্ণসমূহের ও সংকর বর্ণসকলের পরম্পরাগত যে আচার, তাকে সদাচার বলা হয়।

১৯। কুরুক্ষেত্ৰঞ্চ মৎস্যাশ্চ পঞ্চালাঃ শূরসেনকাঃ।

এষ ব্ৰহ্মর্ষিদেশে বৈ ব্রহ্মাবর্তাদনন্তরঃ ॥

কুরুক্ষেত্র, মৎস্য, পঞ্চাল ও শূরসেন—ব্ৰহ্মাবর্তের পরে এই হল ব্রহ্মর্ষিদেশ।

২০। এতদ্দেশপ্রসূতস্য সকাশাদগ্ৰজন্মনঃ।

স্বং স্বং চরিত্রং শিক্ষেরন্‌ পৃথিব্যাং সর্বমানবাঃ ॥

এই দেশে জাত ব্রাহ্মণের কাছ থেকে পৃথিবীতে সকল মানুষ নিজ নিজ চরিত্র শিখবে।

২১। হিমবদ্বিন্ধ্যিয়োর্মধ্যং যং প্রাগ্বিনশনাদপি।

প্রত্যগেব প্রয়াগাচ্চ মধ্যদেশঃ প্রকীর্তিতঃ ॥

হিমালয় ও বিন্ধ্যপর্বতের মধ্যস্থিত বিনশনের৩ পূর্বে ও প্রয়াগের পশ্চিমে মধ্যদেশ বলে কথিত।

২২। আসমুদ্ৰাত্তু বৈ পূর্বাদাসমুদ্রাত্তু পশ্চিমাৎ।

তায়োবেবান্তরং গির্যোরার্যাবর্তং বিদুর্বুধাঃ ॥

পূর্বে সমুদ্র ও পশ্চিমে সমুদ্র পর্যন্ত উক্ত দুই পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানকে পণ্ডিতগণ আর্যাবর্ত বলেন।

২৩। কৃষ্ণসারস্তু চরতি মৃগো যত্র স্বভাবতঃ।

স জ্ঞেয়ো যজ্ঞিয়ো দেশো ম্লেচ্ছদেশস্ততঃ পরঃ ॥

যেখানে কৃষ্ণসার হরিণ স্বভাবতঃ বিচরণ করে, সেই দেশ যজ্ঞের উপযুক্ত বলে জ্ঞাতব্য, এর পরে ম্লেচ্ছদেশ।

২৪। এতান্‌ দ্বিজাতয়ো দেশান্ সংশ্রয়েরন্‌ প্রযত্নতঃ।

শূদ্ৰস্তু যস্মিন্ কস্মিন্ বা নিবসেদ্‌বৃত্তিকর্শিতঃ ॥

দ্বিজগণ এই দেশগুলিকে যত্ন সহকারে আশ্রয় করবেন। বৃত্তিভ্রষ্ট শূদ্র যে কোন দেশে বাস করবে।

২৫। এষা ধর্মস্য বো যোনিঃ সমাসেন প্রকীর্তিতা।

সম্ভবশ্চাস্য সর্বস্য বর্ণধর্মান্ নিবোধত ॥

ধর্মের এই কারণ এবং এই (পরিদৃশ্যমান) সকলের উৎপত্তি সংক্ষেপে আপনাদের নিকট বলা হল। বর্ণধর্ম শুনুন।

২৬। বৈদিকৈ কর্মভিঃ পুণৌর্নিষেকাদিদ্বিজন্মনাম্‌।

কার্যঃ শরীরসংস্কারঃ পাবনঃ প্ৰেত্য চেই চ ॥

পবিত্র বৈদিক কর্মসমূহদ্বারা দ্বিজগণের গলাধানাদি শরীরসংস্কার করণীয়, যা ইহলোকে (বেদাধ্যয়নাদি দ্বারা) ও পরলোকে (যাগাদির ফল দ্বারা) তাদের পবিত্র করবে।

২৭। গার্ভৈর্হোমৈর্জাতকর্মচৌড়মৌঞ্জীনিবন্ধনৈঃ।

বৈজিকং গার্ভিকঞ্চৈনো দ্বিজানামপমৃজ্যতে ॥

গর্ভাধান, জাতকর্ম, চূড়াকরণ ও উপনয়ন দ্বারা বীজদোষ ও গর্ভদোষ জনিত পাপ ক্ষালিত হয়।

২৮। স্বাধ্যায়েন ব্রতৈর্হোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়া সুতৈঃ।

মহাযজ্ঞৈশ্চ যজ্ঞৈশ্চ ব্রাহ্মীয়ং ক্রিয়তে তনুঃ ॥

বেদাধ্যয়ন, ব্রত, হোম, ত্রৈবিদ্যব্রত, ইজ্যা (তর্পণ), পুত্রোৎপাদন, (পঞ্চ) মহাযজ্ঞ ও (জ্যাতিষ্টোমাদি) যজ্ঞদ্বারা এই দেহ (স্থিত আত্মাকে) ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির যোগ্য করা হয়।

২৯। প্রাঙ্‌নাভিবর্ধনাৎ পুংসো জাতকর্ম বিধীয়তে।

মন্ত্রবৎ প্রাশনঞ্চাস্য হিরণ্যমধুসর্পিৰ্ষাম্॥

নাভিছেদের পূর্বে পুরুষের জাতকর্ম বিহিত। মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক তার সুবর্ণ, মধু ও ঘৃত ভোজন (বিহিত)।

৩০। নামধেয়ং দশম্যাস্তু দ্বাদশ্যাং বাস্য কারয়েৎ।

পুণ্যে তিথৌ মুহূর্তে বা নক্ষত্রে বা গুণান্বিতে ॥

দশম বা দ্বাদশ দিনে পবিত্র তিথিতে শুভ মুহূর্তে বা নক্ষত্রে এর নামকরণ করতে হবে।

৩১। মঙ্গল্যং ব্রাহ্মণস্য স্যাং ক্ষত্রিয়স্য বলান্বিতম্।

বৈশস্য ধনসংযুক্তং শূদ্রস্য তু জুগুপ্সিতিম্ ॥

ব্রাহ্মণের নাম শুভসূচক৪, ক্ষত্রিয়ের বলবাচক৫, বৈশ্যের ধনবাচক৬, শূদ্রের নাম নিন্দাবাচক৭ হবে।

৩২। শর্মবদব্রিা্‌হ্মণস্য স্যাদ্রাজ্ঞো রক্ষাসমন্বিতম্।

বৈশ্যস্য পুষ্টিসংযুক্তং শূদ্রস্য প্ৰৈষ্যসংযুতম্॥

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের উপনাম হবে যথাক্রমে শর্ম, বর্ম, ভূতি ও দাস ; যথা (শুভশৰ্মা, বলবর্মা, বসুভূতি, দীনদাস ইত্যাদি।)

৩৩। স্ত্রীণাং সুখোদ্যমক্রূর বিস্পষ্টার্থং মনোহরম্‌।

মঙ্গল্যং দীর্ঘবণান্তমাশীর্বাদাভিধানবৎ ॥

স্ত্রীলোকের নাম হবে সহজে উচ্চার্য, অনিষ্ঠুরতাবাচক, অনায়াসবোধ্য, সুন্দর, শুভসূচক, অন্তে দীর্ঘবর্ণযুক্ত এবং আশীর্বাদবোধক।৮

৩৪। চতুর্থে মাসি কর্তব্যং শিশোর্নিস্ক্রমণং গৃহাৎ।

যষ্ঠেইন্নপ্রাশনং মাসি যদ্বেষ্টং মঙ্গলং কুলে ॥

চতুর্থ মাসে শিশুর গৃহ থেকে নিষ্ক্রমণ করণীয়, যষ্ঠ মাসে অন্নপ্রাশন ; অথবা কৌলিক রীতিতে যা মঙ্গল বলে প্রচলিত (সেই মাসে নিষ্ক্রমণাদি করণীয়)।

৩৫। চূড়াকর্ম দ্বিজাতীনাং সর্বেষামেব ধর্মতঃ।

প্রথমেহব্দে তৃতীয়ে বা কর্তব্যং শ্রুতিচোদনাৎ ॥

ধর্ম অনুসারে বেদবিধিহেতু সকল দ্বিজের প্রথম বা তৃতীয় বৎসরে চূড়াকর্ম করণীয়।

৩৬। গর্ভাষ্টিমেহব্দে কুর্বীত ব্রাহ্মণস্যোপনায়নম্‌।

গর্ভাদেকাদশে রাজ্ঞো গর্ভাতু দ্বাদশে বিশঃ ॥

গর্ভ থেকে অষ্টম বৎসরে ব্রাহ্মণের উপনয়ন করণীয়। গর্ভ সময় নিয়ে একাদশ বৎসরে ক্ষত্রিয়ের ও গর্ভ থেকে দ্বাদশ বৎসরে বৈশ্যের (উপনয়ন কর্তব্য)।

৩৭। ব্রহ্মবৰ্চসকামস্য কার্যং বিপ্ৰস্য পঞ্চমে।

রাজ্ঞো বলার্থিনঃ ষষ্ঠে বৈশ্যস্যেহার্থিনোইষ্টমে॥

ব্ৰহ্মতেজকামী ব্রাহ্মণের পঞ্চম বর্ষে, বলকামী ক্ষত্রিয়ের ষষ্ঠ বর্ষে, অর্থকামী বৈশ্যের অষ্টম বর্ষে (উপনয়ন বিধেয়)।

৩৮। অষোড়শাদ্‌ব্রাহ্মণস্য সাবিত্রী নাতিবর্ততে।

আদ্বাবিংশাৎ ক্ষত্রবন্ধোরাচতুর্বিংশতের্বিশঃ॥

ব্রাহ্মণের সাবিত্রী (গায়ত্রী শিক্ষা বা উপনয়নকাল) ষোল বৎসর পর্যন্ত, ক্ষত্রিয়ের বাইশ বৎসর ও বৈশ্যের চব্বিশ বৎসর পর্যন্ত অতিক্রান্ত হয় না।

৩৯। অত উর্ধ্বং ত্রয়োহপ্যেতে যথাকালমসংস্কৃতঃ।

সাবিত্রী পতিতা ব্রাত্যা ভবন্ত্যার্যবিগর্হিতাঃ॥

এর পরে যথাকালে সংস্কারপ্রাপ্ত না হয়ে এই তিন বর্ণই গায়ত্রীভ্রষ্ট হয়ে আর্যগণের নিন্দনীয় ব্রাত্য (সংজ্ঞায় অভিহিত) হয়।

৪০। নৈতৈরপূতৈর্বিধিবদাপদ্যপি হি কর্হিচিৎ।

ব্রাহ্মান্‌ যৌনাংশ্চস সম্বন্ধানাচরেদ্‌ ব্রাহ্মণঃ সহ॥

ব্রাহ্মণ কখনও বিপদকালেও অপবিত্র এই লোকদের সঙ্গে ব্রাহ্ম (বেদাধ্যাপন) ও যৌন (বিবাহ) সম্বন্ধ করবেন না।

৪১। কার্ষ্ণবৌরব-বাস্তানি চর্মণি ব্রহ্মচারিণঃ।

বসীরন্নানুপূর্ব্যেণ শাণক্ষৌমাবিকানি চ॥

(বিভিন্ন বর্ণের) ব্রহ্মচারিগণ যথাক্রমে কৃষ্ণসার, রুরুমৃগ ও ছাগের চর্ম (উত্তরীয় রূপে) এবং শণ, ক্ষুমা ও মেষলোম নির্মিত (অধ্যেবসন) পরিধান করবেন।

৪২। মৌঞ্জী ত্রিবৃৎ সমা শ্লক্ষ্ণা কার্যা বিপ্রস্য মেখলা।

ক্ষত্রিয়স্য তু মোবী জ্যা বৈশ্যস্য শণতান্তবী॥

ব্রাহ্মণের মেখলা হবে মুঞ্জ (তৃণ) নির্মিত, সমান গুণত্রয় সমন্বিত ও কোমল। ক্ষত্রিয়ের হবে মুর্বা (তৃণ) নির্মিত ধনুর্গুণ এবংবৈ বৈশ্যের হবে শণতন্তু নির্মিত।

৪৩। মুঞ্জালাভে তু কর্তব্যাঃ কুশাশ্মন্তকল্বজৈঃ।

ত্রিবৃতা গ্রন্থিনৈকেন ত্রিভিঃ পঞ্চভিরেব বা॥

মুঞ্জ না পেলে কুশ, অশ্বন্তক (তৃণ) বল্বজের (মেখলা করণীয়)। ত্রিগুণা মেখলা (নিজ নিজ বংশের রীতি অনুসারে) এক, তিন বা পাঁচ গ্রন্থিযুক্ত হবে।

৪৪। কার্পাসমুপবীতং স্যাদ্বিপ্রস্যোর্ধ্ববৃতং ত্রিবৃৎ।

শণসূত্রময়ং রাজ্ঞো বৈশ্যস্যাবিকসৌত্রিকম্॥

ব্রাহ্মণের উপবীত হবে কার্পাসতুলা নির্মিত, ঊর্ধ্ববৃত৯ ও ত্রিগুণ। ক্ষত্রিয়ের হবে শণসূত্র নির্মিত, বৈশ্যের মেষলোমসূত্রনির্মিত।

৪৫। ব্রাহ্মণো বৈল্বপালাশৌ ক্ষত্রিয়ো বাটখাদিরৌ।

পৈলবোদুম্বরৌ বৈশ্যো দণ্ডানর্হতি ধর্মতঃ॥

ধর্মানুসারে ব্রাহ্মণ বিল্ব বা পলাশ বৃক্ষের, ক্ষত্রিয় বট বা খদির বৃক্ষের, বৈশ্য পীলু অথবা উদুম্বর (ডুমুর) বৃক্ষের দণ্ড ধারণ করবেন।

৪৬। কেশান্তিকো ব্রাহ্মণস্য দণ্ডঃ কার্যঃ প্ৰমাণতঃ।

ললাটসম্মিতো রাজ্ঞঃ স্যাত্তু নাসান্তিকো বিশঃ॥

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের দণ্ড হবে যথাক্রমে কেশ, ললাট ও নাসিকা পর্যন্ত দীর্ঘ।

৪৭। ঋজবস্তে তু সর্বে স্যুরব্রণাঃ সৌম্যদর্শনাঃ।

অনুদ্বেগকরা নৃণাং সত্বচো নাগ্নিদূষিতাঃ॥

ঐগুলি সবই হবে ঋজু, ব্রণরহিত, সুদর্শন, মানুষের অনুদ্বেগজনক, ত্বক্‌যুক্ত ও অগ্নি দ্বারা অদৃষিত।

৪৮। প্রতিগৃহ্যেপ্সিতং দণ্ডমুপস্থায় চ ভাস্করম্।

প্রদক্ষিণং পরীত্যাগ্নিং চরেদ্‌ভৈক্ষং যথাবিধি॥

অভীষ্ট দণ্ড গ্রহণপূর্বক সূর্য নমস্কার করে, অগ্নি প্রদক্ষিণ করতঃ বিধান অনুসারে ভিক্ষা করণীয়।

৪৯। ভবৎপূর্বং চরেদ্‌ভৈমুপনীতো দ্বিজোত্তমঃ।

ভবন্মধ্যন্তু রাজন্যো বৈশ্যস্তু ভবদুত্তরম্॥

উপনীত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য ভিক্ষাগ্রহণ কালে ভবৎ শব্দটি যথাক্রমে পূর্বে, মধ্যে ও পরে উচ্চারণ করবেন১০।

৫০। মাতরং বা স্বসারং বা মাতুর্বা ভগিনীং নিজাম্।

ভিক্ষেত ভিক্ষাং প্রথমং যা চৈনং নাবমানয়েৎ॥

প্রথমে মাতা, ভগ্নী বা মাতার নিজের ভগ্নী এবং যে নারী অবমাননা করবেন না, এঁদের কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে।

৫১। সমাহৃত্য তু তদ্ভৈক্ষং যাবদন্নমমায়য়া।

নিবেদ্য গুরবেহশ্নীয়াদাচম্য প্রাঙ্মুখঃ শুচিঃ॥

সেই ভিক্ষালব্ধ অন্ন সংগ্রহ করে যতটুকুতে তৃপ্তি হতে পারে ততটুকু অকপটে গুরুকে নিবেদন করে আচমনপূর্বক পূর্বমুখে শুদ্ধ হয়ে ভক্ষণ করবেন।

৫২। আয়ুষ্যং প্রাঙ্মুখো ভুঙ্‌ক্তে যশস্যং দক্ষিণামুখঃ।

শ্রিয়ং প্রত্যঙ্মুখো ভুঙ্‌ক্তে ঋতং ভুঙ্‌ক্তে হ্যুদঙ্মুখঃ॥

পূর্বমুখে খাওয়া আয়ুবৃদ্ধিকর, দক্ষিণমুখে যশস্কর, পশ্চিমমুখে সম্পদ্‌জনক; উত্তরমুখে সত্যফললাভ হয়।

৫৩। উপস্পৃশ্য দ্বিজো নিত্যমন্নমদ্যাৎ সমাহিতঃ।

ভুক্তা চোপস্পৃশেৎ সম্যগদ্ভিঃ খানি চ সংস্পৃশেৎ॥

দ্বিজ সর্বদা আচমন করে শান্তচিত্তে অন্নভক্ষণ করবেন। আহারান্তে ভালভাবে আচমন করবেন এবং (আচমনের জল দিয়ে নাসিকাদি মস্তকস্থিত) ইন্দ্রিয়গুলি স্পর্শ করবেন।

৫৪। পূজয়েদশনং নিত্যমদ্যাচ্চৈতদকুৎসয়ন্‌।

দৃষ্টাহৃষ্যেৎ প্ৰসীদেচ্চ প্রতিনন্দেচ্চ সর্বশঃ॥

সর্বদা ভোজ্য বস্তুকে পূজা করবেন, অন্নের নিন্দা না করে ভক্ষণ করবেন, অন্নদর্শনে হৃষ্ট হবেন, প্রসন্ন হবেন এবং প্রতিনন্দন১১ করবেন।

৫৫। পজিতং হ্যশনং নিত্যং বলমর্জঞ্চ যচ্ছতি।

অপুজিতন্তু তদ্ভুক্তভয়ং নাশয়েদিদম্‌॥

পূজিত ভক্ষ্যপদার্থ সর্বদা বল ও বীর্য দান করে। অপূজিত ভোজ্য ভুক্ত হলে এই দুটিই নষ্ট করে।

৫৬। নোচ্ছিষ্টং কস্যচিদ্দদ্যান্নাদ্যাচ্চৈব তথান্তরা।

ন চৈবাত্যশনং কুর্যান্ন চোচ্ছিষ্টঃ ক্কচিদ্‌ব্রজেৎ॥

কারও উচ্ছিষ্ট খাবে না, (দুবার ভোজনের) অন্তর্বর্তীকালে খাবে না, অতিভোজন করবে না, উচ্ছিষ্ট অবস্থায় কোথাও যাবে না।

৫৭। অনারোগ্যমনায়ুষ্যমস্বর্গ্যঞ্চাতিভোজনম্।

অপুণ্যং লোকবিদ্বিষ্টং তস্মাত্তৎ পরিবর্জয়েৎ॥

অতিভোজন আরোগ্যের প্রতিকুল, আয়ুনাশক ও অস্বর্গ্য (অর্থাৎ স্বর্গলাভজনক যাগাদি ক্রিয়ার প্রতিকুল), পাপজনক, লোকনিন্দিত; অতএব তা বর্জন করবে।

৫৮। ব্রাহ্মেণ বিপ্রস্তীর্থেন নিত্যকালমুপস্পৃশেৎ।

কায়ত্রৈদশিকাভ্যাং বান পিত্র্যেণ কদাচন॥

ব্রাহ্মণ সর্বদা ব্রাহ্মতীর্থ দ্বারা অথবা প্রজাপতিতীর্থ বা দৈবতীর্থ দ্বারা আচমন করবেন, কখনও পিতৃতীর্থ দ্বারা নয়।

৫৯। অঙ্গুষ্ঠমূলস্য তলে ব্রাহ্মং তীর্থং প্রচক্ষতে।

কায়মঙ্গুলিমুলেহগ্ৰে দৈবং পিত্র্যং তয়োরধঃ॥

বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠমূলের তলায় ব্রাহ্মতীর্থ কথিত হয়। প্রজাপতিতীর্থ কনিষ্ঠা অঙ্গুলির মুলে, অগ্রভাগে দৈবতীর্থ, পিতৃতীর্থ (তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের) নীচে।

৬০। ত্রিরাচামেদপঃ পূর্বং দ্বিঃপ্রমৃজ্যাত্ততো মুখম্।

খানি চৈব স্পৃশেদদ্ভিরাত্মানং শির এব চ॥

প্রথমে তিনবার জলে আচমন করবেন, তারপর দুইবার মুখ মার্জনা করবেন, জল দিয়ে (মস্তকস্থ) ইন্দ্রিয়সমূহ, বক্ষস্থল ও মস্তক স্পর্শ করবেন।

৬১। অনুষ্ণাভিরফেনাভিরদ্ভিস্তীর্থেন ধর্মবিৎ।

শৌচেপ্সুঃ সর্বদাচামেদেকান্তে প্রাগুদঙ্মুখঃ॥

শুদ্ধিকামী ধর্মজ্ঞ ব্যক্তি সর্বদা অনুষ্ণ ও অফেন জলে (ব্রাহ্মাদি) তীর্থ দ্বারা নিভৃতে পূর্ব বা উত্তরমুখে আচমন করবেন।

৬২। হৃদ্‌গাভিঃ পূয়তে বিপ্রঃ কণ্ঠগাভিস্তু ভূমিপঃ।

বৈশ্যোহদ্ভিঃ প্রাশিতভিস্তু শূদ্ৰঃ স্পৃষ্টাভিরন্ততঃ॥

ব্রাহ্মণ হৃদয় পর্যন্ত গত, ক্ষত্রিয় কণ্ঠগত, বৈশ্য শুধু মুখাভ্যন্তরগত ও শূদ্র পৃষ্টমাত্র জল দ্বারা পবিত্র হয়।

৬৩। উদ্ধৃতে দক্ষিণে পাণাবুপবীত্যুচ্যতে দ্বিজঃ।

সব্যে প্রাচীন আবীতী নিবীতী কণ্ঠসঞ্জনে॥

(কণ্ঠস্থিত যজ্ঞসূত্রের মধ্য দিয়ে) দক্ষিণবাহু উদ্ধৃত হলে দ্বিজ হন উপবীতী,১২ বামবাহু উত্তোলিত হলে প্রাচীন আবীতী১৩ উপবীত কণ্ঠলগ্ন হলে হয় নিবীতী।

৬৪। মেখলামজিনং দণ্ডমুপবীতং কমণ্ডলুম্‌।

অপ্সু প্ৰাস্য বিনষ্টানি গৃহ্নীতান্যানি মন্ত্রবৎ॥

নষ্ট মেখলা, মৃগচর্ম, দণ্ড, উপবীত ও কমণ্ডলু জলে নিক্ষেপ করে মন্ত্র সহকারে অন্য মেখলাদি গ্রহণ করবেন।

৬৫। কেশান্তঃ যোড়শে বর্ষে ব্রাহ্মণস্য বিধীয়তে।

রাজন্যবন্ধোদ্বাবিংশে বৈশ্যস্য দ্ব্যধিকে ততঃ॥

ব্রাহ্মণের কেশান্ত সংস্কার যোল বৎসর বয়সে, ক্ষত্রিয়ের বাইশ বৎসরে এবং বৈশ্যের চব্বিশ বৎসরে করণীয়।

৬৬। অমন্ত্রিকা তু কার্যেয়ং স্ত্রীণামাবৃদশেষতঃ।

সংস্কারার্থং শরীরস্য যথাকালং যথাক্ৰমম্॥

এই সকল সংস্কার স্ত্রীলোকের শরীর সংস্কারের জন্য যথাকালে ও যথাক্রমে অমন্ত্রক করণীয়।

৬৭। বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ মৃতঃ।

পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহর্থোহগ্নিপরিক্রিয়া॥

স্ত্রীলোকদের বিবাহবিধি বৈদিক সংস্কার বলে কথিত, পতিসেবা গুরুগৃহে বাস এবং গৃহকর্ম তাদের (হোমরূপ) অগ্নিপরিচর্যা।

৬৮। এষ প্রোক্তো দ্বিজাতীনামৌপনায়নিকো বিধিঃ।

উৎপত্তিব্যঞ্জকঃ পুণ্যঃ কর্মযোগং নিবোধত॥

দ্বিজগণের (দ্বিতীয়) জন্মসূচক পবিত্র এই উপনয়নবিধি কথিত হল। (তাঁদের) কর্তব্যকর্ম অবগত হোন।

৬৯। উপনীয় গুরুঃ শিষ্যং শিক্ষয়েচ্ছৌচমাদিতঃ।

আচারমগ্নিকার্যঞ্চ সন্ধ্যোপাসনমেব চ॥

গুরু শিষ্যকে উপনীত করে তাকে প্রথমে শুচিতা, আচার, অগ্নিকার্য ও সন্ধ্যাবন্দনা শিখাবেন।

৭০। অধ্যেষ্যমাণস্ত্বাচাস্তো যথাশাস্ত্ৰমুদঙ্মুখঃ।

ব্ৰহ্মাঞ্জলিকৃতোহধ্যাপ্যো লঘুবাসা জিতেন্দ্রিয়ঃ॥

অধ্যয়নকালে শিষ্য শাস্ত্রানুসারে আচমনপূর্বক উত্তরমুখ, পবিত্রবেশ, জিতেন্দ্রিয় ও ব্রহ্মাঞ্জলি করে থাকবে; এই অবস্থায় তাকে অধ্যয়ন করাতে হবে।

৭১। ব্রহ্মারম্ভেহবসানে চ পাদৌ গ্রাহ্যৌ গুরোঃ সদা।

সংহত্য হস্তাবধ্যেয়ং স হি ব্ৰহ্মাঞ্জলিঃ স্মৃতঃ॥

বেদপাঠের আরম্ভে ও শেষে সর্বদা গুরুর পাদবন্দনা করণীয়। যুক্ত করে অধ্যয়ন করণীয়; তাই ব্রহ্মাঞ্জলি নামে কথিত।

৭২। ব্যত্যস্তপাণিনা কার্যমুপসংগ্ৰহণং গুরোঃ।

সব্যেন সব্যঃ স্প্রষ্টব্যো দক্ষিণেন চ দক্ষিণঃ॥

ব্যত্যস্ত১৪ হস্তে গুরুর পাদবন্দনা করণীয়; বামহস্তে গুরুর বাম পদ ও দক্ষিণহস্তে দক্ষিণ চরণ স্পর্শ করা কর্তব্য।

৭৩। অধ্যেষ্যমাণন্তু গুরুর্নিত্যকালমতন্দ্রিতঃ।

অধীঘ ভো ইতি ব্রূয়াদ্বিমোহস্ত্বিতি চারমেৎ॥

যে শিষ্যকে পড়াতে হবে তাকে অনলস গুরু সব সময় ‘ওহে পড়’ এই বলবেন, ‘বিরতি হোক’ বলে বিরত হবেন।

৭৪। ব্ৰহ্মণঃ প্রণবং কুর্যাদাদাবন্তে চ সর্বদা।

স্রবত্যনোস্কৃতং পূর্বং পরস্তাচ্চ বিশীর্যতি॥

ব্রাহ্মণ সর্বদা (বেদপাঠের) আরম্ভে ও শেষে ওঁকার উচ্চারণ করবেন। পূর্বে ওঁকারবিহীন পাঠ নষ্ট হয়, অন্তে (ওঁকারহীন) পাঠ বিশীর্ণ (বিস্মৃত) হয়।

৭৫। প্রাক্‌কুলান্‌ পর্যুপাসীনঃ পবিত্রৈশ্চৈব পাবিতঃ।

প্রাণায়ামৈস্ত্রিভিঃ পূতস্তত ওঙ্কারমর্হতি॥

পূর্বাগ্র কুশসমুহে উপবিষ্ট, কুশসমুহের দ্বারা পবিত্ৰীকৃত ও তিন প্রাণায়ামের দ্বারা বিশুদ্ধ হলে ওঁকার উচ্চারণের যোগা হওয়া যায়।

৭৬। অকারঞ্চাপ্যুকারঞ্চ মকারঞ্চ প্রজাপতিঃ।

বেদত্রয়ান্নিরদুহদ্ভূর্ভুবঃ স্বরিতীতি চ॥

অকার, উকার ও মকার এবং ভুঃ ভুবঃ স্বঃ এইগুলি প্রজাপতি তিন বেদ থেকে দোহন করেছিলেন।

৭৭। ত্রিভ্য এব তু বেদেভ্যঃ পাদং পাদমদূদুহৎ।

তদিত্যৃচোহস্যাঃ সাবিত্র্যাঃ পরমেষ্ঠী প্রজাপতিঃ॥

পরমস্থানস্থিত প্রজাপতি তিন বেদ থেকেই এই গায়ত্রীর তৎ (আদি) এই তিন পাদ১৫ এক এক পাদ করে দোহন করেছিলেন।

৭৮। এতদক্ষমেতাঞ্চ জপন্‌ ব্যাহৃতিপূর্বিকাম্।

সন্ধ্যয়োর্বেদবিদ্বিপ্রো বেদপুণ্যেন যুজ্যতে॥

বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ দুই সন্ধ্যায় (দুই সন্ধিক্ষণ প্রাতে ও সায়ংকালে) এই (ওঁ) অক্ষর ও ভূর্ভুবঃ স্বঃ এই ব্যাহৃতি পূর্বক (গায়ত্রী) জপ করে বেদপাঠের পুণ্যযুক্ত হন।

৭৯। সহস্ৰকৃত্বস্ত্বভাস্য বহিরেতংত্রিকং দ্বিজঃ।

মহতোহপ্যেনসো মাসাৎ ত্বচেবাহির্বিমুচ্যতে॥

দ্বিজ (গ্রামের) বাইরে এই ত্রিপদা গায়ত্রী হাজার বার জপ করে এক মাসের মধ্যে সর্প যেমন নির্মোক থেকে তেমন মহাপাপ থেকেও মুক্ত হন।

৮০। এতয়র্চা বিসংযুক্তঃ কালে চ ক্রিয়য়া স্বয়া।

ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়-বিড্‌যোনির্গর্হণাং যাতি সাধুষু॥

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই ঋক্‌ থেকে ভ্রষ্ট হলে এবং যথাকালে স্বীয় কর্তব্য না করলে সজ্জনগণের নিন্দাভাজন হন।

৮১। ওঙ্কারপূর্বিকস্তিস্রো মহাব্যাহৃতয়োহব্যয়াঃ।

ত্রিপদা চৈব সাবিত্রী বিজ্ঞেয়ং ব্ৰহ্মণো মুখম্‌॥

ওঁকারপূর্বক অবিনাশী তিনটি মহাব্যাহৃতি ও ত্রিপদা গায়ত্রী বেদের মুখ বলে জ্ঞেয়।

৮২। যোহধীতেহহন্যহন্যেতাং ত্রীণি বর্ষাণ্যতন্দ্ৰিতঃ।

স ব্ৰহ্ম পরমভোতি বায়ুভূতঃ খমূর্তিমান্॥

যে অনলসভাবে তিন বৎসর প্রতিদিন এই গায়ত্রী পাঠ করে, সে বায়ুর ন্যায় যত্রতত্র গমন করতে পারে এবং ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হয়।

৮৩। একাক্ষরং পরং ব্রহ্ম প্রাণায়ামাঃ পরং তপঃ।

সাবিত্র্যাস্তু পরং নাস্তি মৌনাৎ সত্যং বিশিষ্যতে॥

একাক্ষরাত্মক (ওঁকার) পরমব্রহ্ম, প্রাণায়ামসমুহ শ্রেষ্ঠ তপস্যা। সাবিত্রী থেকে শ্রেয় কিছু নেই, মৌন অপেক্ষা সত্যভাষণ শ্রেয়।

৮৪। ক্ষরন্তি সর্বা বৈদিক্যো জুহোতি-যজতি-ক্রিয়াঃ।

অক্ষরং দুষ্করং জ্ঞেয়ং ব্রহ্ম চৈব প্রজাপতিঃ॥

সকল বেদবিহিত হোম যাগ নষ্ট হয়, (ওঁ এই) অক্ষর কিন্তু অবিনাশী; (এই অক্ষর) লোকের অধীশ্বর ব্রহ্ম।

৮৫। বিধিযজ্ঞাজ্জপযজ্ঞো বিশিষ্টো দশভির্গুণৈঃ।

উপাংশুঃ স্যাচ্ছতগুণঃ সহস্রো মানসঃ স্মৃতঃ॥

(দর্শপৌর্ণমাসাদি বিধিবিষয়ক) যজ্ঞ অপেক্ষা জপযজ্ঞ দশ গুণ শ্রেয়। উপাংশু১৬ (জপ) শত গুণে শ্রেয়, মানস জপ সহস্র গুণে শ্রেয় বলে কথিত।

৮৬। যে পাকযজ্ঞাশ্চত্বারো বিধিযজ্ঞসমন্বিতাঃ।

সর্বে তে জপযজ্ঞস্য কলাং নার্হান্তি যোড়শীম্॥

বিধিযজ্ঞযুক্ত যে চারটি পাকযজ্ঞ, সেই সবগুলি জপযজ্ঞের ষোলভাগের একভাগেরও যোগ্য হয় না।

৮৭। জপ্যেনৈব তু সংসিধ্যেদ্‌ব্রাহ্মণো নাত্র সংশয়ঃ।

কুর্যাদন্যন্ন বা কুর্যান্মৈত্রো ব্রাহ্মণ উচ্যতে॥

ব্রাহ্মণ শুধু জপের দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তিনি অন্য (যাগাদি) করুন বা না করুন, মৈত্র১৭ ব্রাহ্মণ১৮ বলে উক্ত হন।

৮৮। ইন্দ্রিয়াণাং বিচরতাং বিষয়েস্বপহারিষু।

সংযমে যত্নমাতিষ্ঠেদ্বিদ্বান্‌ যন্তেব বাজিনাম্‌॥

বিদ্বান্‌ ব্যক্তি চিত্তাকর্ষক (রূপাদি) বিষয়সমূহে বিচরণকারী ইন্দ্রিয়গুলির সংযমে যত্নবান্ হবেন, যেমন সারথি অশ্বগণকে সংযত করে।

৮৯। একাদশেন্দ্রিয়াণ্যাহুর্যানি পূর্বে মনীষিণঃ।

তানি সম্যক্‌ প্রবক্ষ্যামি যথাবদনুপূর্বশঃ॥

পূর্বে মনীষিগণ যে একাদশ ইন্দ্রিয়ের কথা বলেছেন, সেইগুলি যথাক্রমে সম্যক্‌রূপে বলব।

৯০। শ্রোত্রং ত্বক্‌ চক্ষুষী জিহ্বা নাসিকা চৈব পঞ্চমী।

পায়ুপস্থং হস্তপাদং বাক্‌ চৈব দশমী স্মৃতা॥

কর্ণ, চর্ম, চক্ষু, জিহ্বা ও পঞ্চম নাসিকা, পায়ু, উপস্থ, হস্ত, পদ ও বাক্য দশম ইন্দ্রিয় বলে কথিত।

৯১। বুদ্ধীন্দ্রিয়াণি পঞ্চৈষাং শ্রোত্ৰাদীন্যনুপূর্বশঃ।

কর্মেন্দ্রিয়াণি পঞ্চৈষাং পায়াদীনি প্রচক্ষতে॥

এদের মধ্যে কর্ণাদি পাঁচটিকে জ্ঞানেন্দ্রিয়, পায়ু প্রভৃতি পাঁচটিকে কর্মেন্দ্রিয় বলে।

৯২। একাদশং মনো জ্ঞেয়ং স্বগুণেনোভয়াত্মকম্‌।

যস্মিন্‌ জিতে জিতাবেতৌ ভবতঃ পঞ্চকৌ গণৌ॥

মন একাদশ ইন্দ্রিয় বলে জ্ঞেয়, নিজের গুণে এটি (জ্ঞান ও কর্ম) উভয়াত্মক, যাকে জয় করলে এই দুটি পঞ্চকগণ জিত হয়।

৯৩। ইন্দ্রিয়াণাং প্রসঙ্গেন দোষমৃচ্ছত্যসংশয়ম্‌।

সন্নিয়মা তু তান্যেব ততঃ সিদ্ধিং নিযচ্ছতি॥

ইন্দ্রিয়সমুহের বিষয়ের প্রতি অত্যাসক্তিহেতু মানুষ দোষপ্রাপ্ত হয়, সন্দেহ নেই। সেইগুলিকেই সংযত করে সে সিদ্ধি লাভ করে।

৯৪। ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি।

হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মের ভূয় এবাভিবর্ধতে॥

কামাবস্তুর ভোগের দ্বারা কামনা কখনও নিবৃত্ত হয় না, ঘৃতের দ্বারা অগ্নির ন্যায় আরও বর্ধিত হয়।

৯৫। যশ্চৈতান্‌ প্রাপ্পুয়াৎ সর্বান যশ্চৈতান্‌ কেবলাংস্ত্যজেৎ।

প্রাপণাৎ সর্বকামানাং পরিত্যাগো বিশিষ্যতে॥

যে এই সব (কাম্য বস্তুসমূহ) প্রাপ্ত হয়, যে এইগুলিকে ত্যাগ করে—(এই দুইয়ের মধ্যে) সকল কাম্যবস্তুর প্রাপ্তি থেকে পরিত্যাগ শ্রেয়।

৯৬। ন তথৈতানি শক্যন্তে সন্নিয়ন্তুমসেবয়া।

বিষয়েষু প্রজুষ্টানি যথা জ্ঞানেন নিত্যশঃ॥

বিষয়াসক্ত এই (ইন্দ্রিয়) গুলিকে সর্বদা জ্ঞানের দ্বারা যেমন সংযত করা যায়, তেমন বিষয় সেবা না করে পারা যায় না।

৯৭। বেদাস্ত্যাগশ্চ যজ্ঞাশ্চ নিয়মাশ্চ তপাংসি চ।

ন বিপ্রদুষ্টভাবস্য সিদ্ধিং গচ্ছন্তি কৰ্হিচিৎ॥

বেদাধ্যয়ন, দান, যজ্ঞ, নিয়ম ও তপস্যা (বিষয় সেবাহেতু) দুষ্টভাবাপন্ন ব্যক্তির এইগুলি কখনই সিদ্ধ হয় না।

৯৮। শ্রুত্বা স্পৃষ্টা চ দৃষ্টা চ ভুক্তা ঘ্রাত্বা চ যো নরঃ।

ন হৃষ্যতি গ্লায়তি বা স বিজ্ঞেয়ো জিতেন্দ্রিয়ঃ॥

(স্তুতি বা নিন্দা) শুনে, (সুখস্পর্শ বা দুঃখস্পর্শ বস্তু) (সুরূপ কুরূপ), (স্বাদু বিস্বাদ ভোজ্য) ও (সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ) দেখে, খেয়ে, শুঁকে যে হৃষ্ট বা বিষন্ন হয় না, সে জিতেন্দ্রিয় বলে জ্ঞেয়।

৯৯। ইন্দ্রিয়াণান্তু সর্বেষাং যদ্যেকং ক্ষরতীন্দ্রিয়ম্‌।

তেনাসা ক্ষরতি প্রজ্ঞা দৃতেঃ পাদাদিবোদকম্॥

সকল ইন্দ্রিয়ের মধ্যে যদি একটি বিষয়াসক্ত হয়, তাহলে ঐটি দিয়ে (জলপূর্ণ ছিদ্রযুক্ত) চর্মপাত্র থেকে জলের ন্যায় সেই ব্যক্তির জ্ঞান ক্ষরিত হয়।

১০০। বশে কৃত্বেন্দ্রিয়গ্রামং সংযম্য চ মনস্তথা।

সর্বান্‌ সংসাধয়েদর্থানক্ষিণ্বন্‌ যোগতস্তনূম্॥

ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করে এবং মনকে সংযত করে, দেহকে যোগ হেতু ক্ষয় না করে, সর্ববিষয় সাধন করবে।

১০১। পূর্বাং সন্ধ্যাং জপংস্তিষ্ঠেৎ সাবিত্রীমার্কদর্শনাৎ।

পশ্চিমান্তু সমাসীনঃ সম্যগৃক্ষবিভাবনাৎ॥

প্রাতঃসন্ধ্যায় সাবিত্রী জপ করে সূর্যদর্শন পর্যন্ত (দণ্ডায়মান হয়ে) অবস্থান করবে। সায়ংসন্ধ্যায় উপবিষ্ট হয়ে নক্ষত্ৰদৰ্শন পর্যন্ত (জপ করবে)।

১০২। পূর্বাং সন্ধ্যাং জপংস্তিষ্ঠন্নৈশমেনো ব্যপোহতি।

পশ্চিমান্তু সমাসীনো মলং হন্তি দিবাকৃতম্॥

প্রাতঃসন্ধ্যায় জপপূর্বক দণ্ডায়মান থাকলে রাত্রির পাপ অপগত হয়। সায়ংসন্ধ্যায় উপবিষ্ট (হয়ে জপ করলে) দিনকৃত পাপ নষ্ট হয়।

১০৩। ন তিষ্ঠতি তু যঃ পূর্বাং নোপাস্তে যশ্চ পশ্চিমাম্‌।

স শূদ্রবদ্বহিষ্কার্যঃ সর্বম্মাদ্দিজকর্মণঃ॥

যে প্রাতঃসন্ধ্যায় দণ্ডায়মান হয় না এবং সায়ংসন্ধ্যায় উপবিষ্ট হয় না, তাকে সকল দ্বিজকর্মের থেকে শূদ্রের ন্যায় বহিষ্কার করা উচিত।

১০৪। অপাং সমীপে নিয়তো নৈতাকং বিধিমাস্থিতঃ।

সাবিত্রীমপ্যধীয়ীত গত্বারণ্যং সমাহিতঃ॥

সংযতেন্দ্রিয় সমাহিতচিত্ত (দ্বিজ) বনগমনপূর্বক জলের কাছে নিত্যকর্ম সম্পাদন করবেন এবং গায়ত্রী পাঠ করবেন।

১০৫। বেদোপকরণে চৈব স্বাধ্যায়ে চৈব নৈত্যকে।

নানুরোধোহস্ত্যনধ্যায়ে হোমমন্ত্রেষু চৈব হি॥

অনধ্যায় দিনে বেদাঙ্গে, বেদপাঠে, নিত্যকর্মে ও হোমমন্ত্রে বাধা নেই।

১০৬। নৈত্যকে নাস্ত্যনধ্যায়ো ব্রহ্মসত্রং হি তৎ স্মৃতম্‌।

ব্রহ্মাহুতিহুতং পুণ্যমনধ্যায়বষট্‌কৃতম্॥

নিত্যকর্মে অনধ্যায় নেই, তাকে বলা হয় ব্রহ্মসত্ৰ। বেদরূপ যে হবনীয় দ্রব্য তদ্দারা আহুত যে অধ্যয়ন, তা অনধ্যায় দিনে অনুষ্ঠিত হলেও পুণ্যজনক হয়।

১০৭। যঃ স্বাধ্যায়মধীতেহব্দং বিধিনা নিয়তঃ শুচিঃ।

তস্য নিত্যং ক্ষরত্যেষ পয়ো দধি ঘৃতংমধু॥

যে সংযত শুদ্ধ হয়ে এক বৎসর নিয়মানুসারে বেদাধ্যয়ন করে, তার জন্য এই কর্ম দুগ্ধ, দধি, ঘৃত ও মধু ক্ষরণ করে।

১০৮। অগ্নীন্ধনং ভৈক্ষচর্যামধঃশয্যাং গুরোর্হিতম্‌।

আসমাবর্তনাৎ কুর্যাৎ কৃতোপনয়নো দ্বিজঃ॥

উপনীত দ্বিজ সমাবর্তন পর্যন্ত হোমাগ্নির জন্য কাষ্ঠাহরণ, ভিক্ষাচর্যা, ভূমিশয়ন ও গুরুর হিতকর কর্ম করবেন।

১০৯। আচার্যপুত্রঃ শুশ্রূষুনর্জ্ঞানদো ধার্মিকঃ শুচিঃ।

আপ্তঃ শক্তোহর্থদঃ সাধুঃ স্বোহধ্যাপ্যা দশ ধর্মতঃ॥

আচার্যপুত্র, শুশ্রূষাকারী, (অন্য বিষয়ে) জ্ঞানদাতা, ধার্মিক ব্যক্তি, শুদ্ধ ব্যক্তি, বান্ধব, গ্রহণ ও ধারণে সক্ষম ব্যক্তি, ধনদাতা, সজ্জন ও জ্ঞাতি এই দশজনকে ধর্মানুসারে অধ্যয়ন করান কর্তব্য।

১১০। নাপৃষ্টঃ কস্যচিদ্‌ব্রূয়ান্ন চান্যায়েন পৃচ্ছতঃ।

জানন্নপি হি মেধাবী জড়বল্লোক আচরেৎ॥

জিজ্ঞাসিত না হয়ে কাউকে কিছু বলবে না, অন্যায়ভাবে যে জিজ্ঞাসা করে তাকেও নয়। বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তি জেনেও সংসারে মূকের ন্যায় আচরণ করবে।

১১১। অধর্মেণ চ যঃ প্ৰাহ যশ্চাধর্মেণ পৃচ্ছতি।

তয়োরন্যতরঃ প্রৈতি বিদ্বেষং বাধিগচ্ছতি॥

অন্যায়রূপে (জিজ্ঞাসিত হয়ে) যে উত্তর দেয় এবং যে অন্যায়রূপে জিজ্ঞাসা করে, এদের একজন মরে যায় বা বিদ্বেষ প্রাপ্ত হয়।

১১২। ধর্মার্থৌ যত্র ন স্যাতাং শুশ্রূষা বাপি তদ্বিধা।

তত্র বিদ্যা ন বপ্তব্যা শুভং বীজমিবোষরে॥

ধর্ম অর্থ যার (অধ্যাপনে) হয় না বা (অধ্যয়নানুরূপ) শোনার ইচ্ছা যার থাকে না, সেই শিষ্যকে বিদ্যা দান উচিত নয়, যেমন উৎকৃষ্ট বীজ অনুর্বর ক্ষেত্রে (বপন করা উচিত নয়)।

১১৩। বিদ্যয়ৈব সমং কামং মর্তব্যং ব্রহ্মবাদিনা।

আপদ্যপি হি ঘোরায়াং নত্বেনামিরিণে বপেৎ॥

বেদাধ্যাপকের বরং বিদ্যার সহিত মরে যাওয়া ভাল, তথাপি একে তিনি অপাত্রে দান করবেন না।

১১৪। বিদ্যা ব্রাহ্মণমেত্যাহ শেবধিস্তেহস্মি রক্ষ মাম্।

অসূয়কায় মাং মা দাস্তথা স্যাং বীর্যবত্তমা॥

বিদ্যা ব্রাহ্মণের কাছে এসে বলল—আমি তোমার নিধিস্বরূপ, আমাকে অসুয়াযুক্ত লোককে দান করো না, তাহলে আমি সবাপেক্ষা বীর্যবতী হব।

১১৫। যমেব তু শুচিং বিদ্যান্নিয়তব্রহ্মচারিণম্।

তস্মৈ মাং ব্রূহি বিপ্রায় নিধিপায়াপ্রমাদিনে॥

যাকেই পবিত্র, সংযত ব্রহ্মচারী বলে জানবে, সেই নিধিরক্ষক ও সাবধানী ব্রাহ্মণের নিকট আমাকে বলবে।

১১৬। ব্ৰহ্ম যস্তননুজ্ঞাতমধীয়ানাদবাপ্নুয়াৎ।

স ব্রহ্মস্তেয়সংযুক্তো নরকং প্রতিপদ্যতে॥

যে অনুমতি ব্যতিরেকে অধ্যয়নরত ব্যক্তির থেকে বেদ গ্রহণ করে, সেই বেদচৌর্যপরায়ণ ব্যক্তি নরকে গমন করে।

১১৭। লৌকিকং বৈদিকং বাপি তথাধ্যাত্মিকমেব চ।

আদদীত যতো জ্ঞানং তং পূর্বমভিবাদয়েৎ॥

যার কাছ থেকে লৌকিক, বৈদিক বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করবে, তাঁকে প্রথমে অভিবাদন করবে।

১১৮। সাবিত্রীমাত্রসারোহপি বরং বিপ্রঃ সুযন্ত্রিতঃ।

নায়ন্ত্রিতস্ত্রিবেদোহপি সবশিী সর্ববিক্রয়ী॥

যার গায়ত্রী মাত্র সার, সেই জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণ বরং ভাল; অসংযত, সর্বভুক্‌, সর্ববিক্রয়ী ত্রিবেদজ্ঞ (ব্রাহ্মণও) ভাল নয়।

১১৯। শয্যাসনেহধ্যাচরিতে শ্রেয়সা ন সমাবিশেৎ।

শয্যাসনস্থশ্চৈবৈনং প্রত্যুখ্থায়াভিবাদয়েৎ॥

(বিদ্যা বা বয়সে) মান্য ব্যক্তি যে শয্যা, আসন ব্যবহার করেন, তাতে শয়ন উপবেশন করবে না। শয্যা বা আসনে স্থিত হয়ে উক্তরূপ ব্যক্তিদর্শনে উঠে অভিবাদন করবে।

১২০। উর্ধ্বং প্রাণা হ্যুৎক্রামন্তি যূনঃ স্থবির আয়তি।

প্রত্যুখ্থানাভিবাদাভ্যাং পুনস্তান্‌ প্রতিপদ্যতে॥

(বয়স বা বিদ্যায়) জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এলে যুবকের প্রাণ ঊর্ধ্বে বহির্গমন করে। উখ্থান ও অভিবাদনের দ্বারা পুনরায় সেই প্রাণকে পাওয়া যায়।

১২১। অভিবাদনশীলস্য নিত্যং বৃদ্ধোপসেবিনঃ।

চত্বারি সম্প্রবর্ধন্তে আয়ুর্বিদ্যা যশো বলম্॥

যে সর্বদা বৃদ্ধের সেবা করে ও অভিবাদন করে, তার আয়ু, বিদ্যা, যশ ও বল এই চারটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

১২২। অভিবাদাৎ পরং বিপ্রো জ্যায়াংসমভিবাদয়ন।

অসৌ নামাহমস্মীতি স্বং নাম পরিকীর্তয়েৎ॥

জ্যেষ্ঠকে অভিবাদনকালে ব্রাহ্মণ অভিবাদনের পরে ‘আমার এই নাম’ এই কথা বলে নিজের নাম বলবে।

১২৩। নামধেয়স্য যে কেচিদভিবাদং ন জানতে।

তান্‌ প্রাজ্ঞোহহমিতি ব্ৰূয়াৎ স্ক্রিয়ঃ সর্বাস্তথৈব চ॥

যারা নামের ও অভিবাদনের অর্থ জানে না, বিজ্ঞ ব্যক্তি তাদের এবং সকল স্ত্রীলোককে ‘আমি অভিবাদন করি’ এই মাত্র বলবে।

১২৪। ভোঃ শব্দং কীৰ্তয়েদন্তে স্বস্য নাম্নোহভিবাদনে।

নাম্নাং স্বরূপভাবো হি ভোভাবঋষিভিঃ স্মৃতঃ॥

অভিবাদনে নিজের নামের শেষে ভোঃ এই শব্দ বলবে, যেহেতু ভোঃ শব্দের যে ভাব তা অভিবাদ্য নামের স্বরূপভাব বলে ঋষিরা বলেছেন।

১২৫। আয়ুষ্মান্‌ ভব সৌম্যেতি বাচ্যো বিপ্রোহভিবাদনে।

অকারশ্চাস্য নাম্নোহন্তে বাচ্যঃ পূর্বাক্ষরঃ প্লুতঃ॥

ব্রাহ্মণ অভিবাদন করলে তাঁকে ‘আয়ুষ্মান্‌ ভব সৌম্য’ এই বলা উচিত। এই অভিবাদকের নামের শেষে অকার উচ্চারণ করতে হবে, পূর্বের অক্ষর প্লুত১৯ হবে।

১২৬। যো ন বেত্ত্যভিবাদস্য বিপ্রঃ প্রত্যভিবাদনম্‌।

নাভিবাদ্যঃ স বিদুষা যথা শূদ্ৰস্তথৈব সঃ॥

যে ব্রাহ্মণ অভিবাদনের প্রত্যভিবাদন জানেন না, তিনি বিদ্বান্‌ ব্যক্তির অভিবাদ্য নন; তিনি শূদ্রতুল্য।

১২৭। ব্রাহ্মণং কুশলং পৃচ্ছেৎ ক্ষত্রবন্ধুমনাময়ম্‌।

বৈশ্যং ক্ষেমং সমাগম্য শূদ্রমারোগ্যমেব চ॥

সাক্ষাৎ হলে ব্রাহ্মণকে কুশল, ক্ষত্রিয়কে অনাময়, বৈশ্যকে ক্ষেম ও শূদ্রকে আরোগ্য বলতে হবে।

১২৮। অবাচ্যো দীক্ষিতো নাম্না যবীয়ানপি যো ভবেৎ।

ভো ভবৎ পূর্বকত্ত্বেনমভিভাষেত ধর্মবিৎ॥

দীক্ষিত ব্যক্তি বয়ঃকনিষ্ঠ হলেও তাকে নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। ধর্মজ্ঞ ব্যক্তি একে প্রথমে ভবৎ বলে সম্বোধন করে সম্ভাষণ করবেন।

১২৯। পরপত্নী তু যা স্ত্রী স্যাসম্বন্ধা চ যোনিতঃ।

তাং ব্ৰয়াদ্ভবতীত্যেবং সুভগে ভগিনীতি চ॥

পরনারী ও যে স্ত্রীলোক পিতৃবংশীয় নয়, তাকে ভবতি, সুভগে বা ভগিনী বলে সম্বোধন করতে হয়।

১৩০। মাতুলাংশ্চ পিতৃব্যাংশ্চ শ্বশুরানৃত্বিজো গুরূন্‌।

অসাবহমিতি ব্ৰূয়াৎ প্রত্যুত্থায় যবীয়সঃ॥

বয়ঃকনিষ্ঠ মাতুল, পিতৃব্য, শ্বশুর, পুরোহিত ও গুরুকে (দেখে) উঠে ‘আমি অমুক’ বলবে।

১৩১। মাতৃষ্বসা মাতুলানী শ্বশ্রূরথ পিতৃষ্বসা।

সম্পূজ্যা গুরুপত্নীবৎ সমাস্তা গুরুভার্যয়া॥

মাসীমা, মামীমা, শাশুড়ী এবং পিসীমা গুরুপত্নীর ন্যায় মান্য; তাঁরা গুরুস্ত্রীর তুল্য।

১৩২। ভ্রাতুর্ভার্যোপসংগ্রাহ্যা সবর্ণাহন্যহন্যপি।

বিপ্রোষ্য তূপসংগ্রাহ্যা জ্ঞাতিসম্বন্ধিযোষিতঃ॥

ভ্রাতার সবর্ণ পত্নীর প্রতিদিনই পাদবন্দনা করবে। প্রবাস থেকে ফিরে এসে (অর্থাৎ প্রতিদিন নয়) জ্ঞাতি ও আত্মীয় স্ত্রীলোককে প্রণাম করবে।

১৩৩। পিতুর্ভগিন্যাং মাতুশ্চ জ্যায়স্যাঞ্চ স্বসর্যপি।

মাতৃবদ্‌বৃক্তিমাতিষ্ঠেম্মাতা তাভ্যো গরীয়সী॥

পিসীমা, মাসীমা ও জ্যেষ্ঠাভগিনীর প্রতি মাতার ন্যায় আচরণ করবে; মাতা তাঁদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

১৩৪। দশাব্দাখ্যং পৌরসখ্যং পঞ্চাব্দাখ্যং কলাভৃতাম্।

ত্র্যব্দপূর্বং শ্রোত্রিয়াণাং স্বল্পেনাপি স্বযোনিষু॥

এক নগর বা গ্রামবাসী দশ বৎসর, (গায়কাদি) শিল্পী পাঁচ বৎসর, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ তিন বৎসর বয়োজ্যেষ্ঠ হলে তাদের সঙ্গে সখ্য হয়; সপিণ্ডদের মধ্যে অল্পকালের জ্যেষ্ঠ হলেই সখ্য জ্ঞেয়।২০

১৩৫। ব্রাহ্মণং দশবর্ষন্তু শতবর্ষন্তু ভূমিপম্‌।

পিতাপুত্রৌ বিজানীয়াদ্‌ ব্রাহ্মণস্তু তয়োঃ পিতা॥

দশ বর্ষ বয়স্ক ব্রাহ্মণ ও শত বর্ষ বয়স্ক ক্ষত্রিয়কে পিতাপুত্র বলে জানবে; তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ পিতা।

১৩৬। বিত্তং বন্ধুর্বয়ঃ কর্ম বিদ্যা ভবতি পঞ্চমী।

এতানি মান্যস্থানানি গরীয়ো যদ্‌যদুত্তরম্॥

অর্থ, (পিতৃব্যাদি) বন্ধু, বয়স, কর্ম এবং পঞ্চম বিদ্যা—এইগুলি মান্যতার কারণ; পর পরটি পূর্ব পূর্বটির অপেক্ষা শ্রেয়।

১৩৭। পঞ্চানাং ত্ৰিষু বর্ণেষু ভূয়াংসি গুণবন্তি চ।

যত্র স্যুঃ সোহত্ৰ মানার্হঃ শূদ্রোহপি দশমীং গতঃ॥

তিন বর্ণের ক্ষেত্রে উক্ত পাঁচটির মধ্যে অধিক গুণবিশিষ্ট ব্যক্তি সম্মানের যোগ্য; শূদ্রও দশমীদশা (অর্থাৎ নবত্যধিক বর্ষ) প্রাপ্ত হলে (ব্রাহ্মণেরও) মান্য।

১৩৮। চক্রিণো দশমীস্থস্য রোগিণো ভারিণঃ স্ত্রিয়াঃ।

স্নাতকস্য চ রাজ্ঞশ্চ পন্থা দেয়ো বরস্য চ॥

রথাদি যানারূঢ়, নবত্যধিকবয়স্ক, রোগী, ভারী, স্ত্রীলোক, স্নাতক, রাজা, (বিবাহের জন্য প্ৰস্থিত) বর—এদের জন্য পথ ছেড়ে দেওয়া উচিত।

১৩৯। তেষান্তু সমবেতানাং মান্যৌ স্নাতকপার্থিবৌ।

রাজস্নাতকয়োশ্চৈব স্নাতকো নৃপমানভাক্‌॥

উক্ত ব্যক্তিগণ একত্র মিলিত হলে স্নাতক ও রাজা মাননীয় হবেন; রাজা ও স্নাতকের মধ্যে স্নাতক রাজার মান্য।

১৪০। উপনীয় তু যঃ শিষ্যং বেদমধ্যাপয়েদ্দিজিঃ।

সকল্পং সরহস্যঞ্চ তমাচার্যং প্রচক্ষতে॥

যে দ্বিজ শিষাকে উপনীত করে কল্প২১ ও রহস্য২২ সহ বেদ অধ্যয়ন করান, তাঁকে আচার্য বলা হয়।

১৪১। একদেশন্তু বেদস্য বেদাঙ্গান্যপি বা পুনঃ।

যোহধ্যাপয়তি বৃত্ত্যর্থপাধ্যায়ঃ স উচ্যতে॥

যিনি জীবিকার জন্য বেদের অংশমাত্র বা বেদাঙ্গ অধ্যাপন করেন, তিনি উপাধ্যায় বলে কথিত হন।

১৪২। নিষেকাদীনি কর্মাণি যঃ করোতি যথাবিধি।

সম্ভাবয়তি চান্নেন স বিপ্রো গুরুরুচ্যতে॥

যিনি নিয়মানুসারে গর্ভাধানাদি কর্ম করেন এবং অন্ন দ্বারা প্রতিপালন করেন, সেই ব্রাহ্মণ গুরু বলে কথিত হন।

১৪৩। অগ্ন্যাধেয়ং পাকযজ্ঞানগ্নিষ্টোমাদিকান্‌ মখান্।

যঃ করোতি বৃতো যস্য স তস্যর্ত্বিগিহোচ্যতে॥

যিনি বৃত হয়ে যার জন্য অগ্ন্যাধান২৩, পাকযজ্ঞ২৪ ও অগ্নিষ্টোমাদি যজ্ঞ করেন, তিনি তার ঋত্বিক্‌ বলে এই শাস্ত্রে কথিত হন।

১৪৪। য আবৃণোত্যবিতথং ব্ৰহ্মণা শ্রবণাবুভৌ।

স মাতা স পিতা জ্ঞেয়স্তং ন দ্রুহ্যোৎ কদাচন॥

যিনি যথার্থভাবে বেদ দ্বারা উভয় কর্ণ আচ্ছাদিত করেন, তিনি মাতা ও পিতা বলে জ্ঞেয়; কখনও (অর্থাৎ বেদ অধিগত হলেও) তাঁর অপকার করবে না।

১৪৫। উপাধ্যায়ান্‌ দশাচার্য আচাৰ্যাণাং শতং পিতা।

সহস্ৰন্তু পিতৃম্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে॥

আচার্য দশ উপাধ্যায়কে, পিতা একশত আচার্যকে ও মাতা এক সহস্র পিতাকে গৌরবে অতিক্রম করেন।

১৪৬। উৎপাদকব্রহ্মদাত্রোর্গরীয়ান্‌ ব্ৰহ্মদঃ পিতা।

ব্রহ্মজন্ম হি বিপ্রস্য প্রেত্য চেহ চ শাশ্বতম্॥

জনক ও বেদাধ্যাপক এই দুইজনের মধ্যে বেদদাতা পিতা শ্রেষ্ঠ। ব্রাহ্মণের বেশিক্ষার্থ জন্ম (অর্থাৎ উপনয়নজনিত সংস্কার) পরলোকে ও ইহলোকে শাশ্বত হয়।

১৪৭। কামান্মাতা পিতা চৈনং যদুৎপাদয়তো মিথঃ।

সম্ভুতিং তস্য তাং বিদ্যাদ্‌যদ্‌যোনাবভিজায়তে॥

কামহেতু মাতা পিতা একত্র এর যে জন্ম দেন, তাকে তার সম্ভূতি২৫ বলে জানবে; যেহেতু যোনিতে সে জন্মে।

১৪৮। আচার্যস্ত্বস্য যাং জাতিং বিধিবদ্বেদপারগঃ।

উৎপাদয়তি সাবিত্র্যা সা সত্যা সাজরামরা॥

বেদজ্ঞ আচার্য তার যে জন্ম গায়ত্রী দ্বারা যথাবিধি দেন, সেই জন্ম সত্য, অজর, অমর।

১৪৯। অল্পং বা বহু বা যস্য শ্রুতস্যোপকরোতি যঃ।

তমপীহ গুরুং বিদ্যাচ্ছ্রুতোপক্রিয়য়া তয়া॥

যিনি অল্প বা বহুল পরিমাণে (শিষ্যের) বেদজ্ঞান লাভে উপকার করেন, বেদবিদ্যার সেই উপকারহেতু তাঁকেও গুরু বলে জানবে।

১৫০। ব্রাহ্মস্য জন্মনঃ কর্তা স্বধর্মস্য চ শাসিতা।

বালোহপি বিপ্রো বৃদ্ধস্য পিতা ভবতি ধর্মতঃ॥

বেদজ্ঞানদাতা ও স্বধর্মশিক্ষক ব্রাহ্মণ বালক হলেও তিনি ধর্ম অনুসারে বৃদ্ধের পিতা হন।

১৫১। অধ্যাপয়ামাস পিতৃন্‌ শিশুরাঙ্গিরসঃ কবিঃ।

পুত্রকা ইতি হোবাচ জ্ঞানেন পরিগৃহ্য তান্‌॥

শিশু আঙ্গিরস কবি পিতৃগণকে অধ্যয়ন করিয়েছিলেন। তাঁদের জ্ঞান দিয়ে তিনি পুত্র বলে সম্বোধন করেছিলেন।

১৫২। তে তমর্থমপৃচ্ছন্ত দেবাগতমন্যবঃ।

দেবাশ্চৈতান্‌ সমেত্যোচুর্ন্যায্যং বঃ শিশুরুক্তবান্‌॥

তাঁরা ক্রুদ্ধ হয়ে সেই বিষয় দেবগণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন; দেবগণ সম্মিলিত হয়ে বলেছিলেন—শিশু তোমাদের ঠিকই বলেছে।

১৫৩। অজ্ঞে ভবতি বৈ বালঃ পিতা ভবতি মন্ত্রদঃ।

অজ্ঞং হি বালমিত্যাহুঃ পিতত্যেব তু মন্ত্রদম্॥

অজ্ঞ (বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও) বালক (বলে পরিচিত) হয়, মন্ত্র বা বেদদাতা (কনিষ্ঠ হলেও) পিতা হন। অজ্ঞ ব্যক্তিকে বলে বালক, বেদদাতাকে বলে পিতা।

১৫৪। ন হায়নৈর্ন পলিতৈর্ন বিত্তেন ন বন্ধুভিঃ।

ঋষয়শ্চক্রিরে ধর্মং যোহনূচানঃ স নো মহান্॥

বৎসর, পক্ককেশ, ধন ও বন্ধুত্বহেতু (মহত্ত্ব হয় না)। মুনিগণ এই ধর্ম করেছেন যে, যিনি অনূচান২৬ তিনি মহান্‌।

১৫৫। বিপ্রাণাং জ্ঞানহেতু জ্যৈষ্ঠ্যং ক্ষত্রিয়াণাস্তু বীর্যতঃ।

বৈশ্যানাং ধান্যধনতঃ শূদ্রাণামেব জন্মতঃ॥

ব্রাহ্মণদের জ্ঞানহেতু, ক্ষত্রিয়দের বীরত্বহেতু, বৈশ্যদের ধান্য ও ধনহেতু ও শূদ্রদের জন্মহেতু জ্যেষ্ঠত্ব হয়।

১৫৬। ন তেন বৃদ্ধো ভবতি যেনাস্য পলিতং শিরঃ।

যো বৈ যুবাপ্যধীয়ানস্তং দেবাঃ স্থবিরং বিদুঃ॥

যেহেতু মস্তক শুভ্র সেই হেতু বৃদ্ধ হয় না। যে যুবক হয়েও বেদাধ্যয়ন করে, তাকে দেবগণ স্থবির বলেন।

১৫৭। যথা কাষ্ঠময়ো হস্তী যথা চর্মময়ো মৃগঃ।

যশ্চ বিপ্রোহনধীয়ানস্ত্রয়স্তে নাম বিভ্রতি॥

কাঠের হাতী, চামড়ার হরিণ ও বেদাধ্যয়নহীন ব্রাহ্মণ নামমাত্র ধারণ করে।

১৫৮। যথা ষণ্ডোহফলঃ স্ত্রীষু যথা গৌর্গবি চাফলা।

যথা চাজ্ঞেহফলং দানং তথা বিপ্ৰোহনৃচোহফলঃ॥

ক্লীব যেমন স্ত্রীলোকের পক্ষে নিষ্ফল, স্ত্রী গাভী স্ত্রী গাভীর পক্ষে নিষ্ফল, মুর্খে দান বিফল, তেমনই অবেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ নিষ্ফল।

১৫৯। অহিংসয়ৈব ভূতানাং কার্যং শ্রেয়োহনুশাসনম্‌।

বাক চৈব মধুরা শ্লক্ষ্ণা প্রযোজ্যা ধর্মমিচ্ছতা॥

অহিংসা২৭ দ্বারাই শিষ্যদের শাসন শ্রেয়, ধর্মকামী ব্যক্তি (অধ্যাপক) কর্তৃক মিষ্ট কোমল বাক্য প্রযোজ্য।

১৬০। যস্য বাঙ্ননসী শুদ্ধে সম্যগ্‌গুপ্তে চ সর্বদা।

স বৈ সর্বমবাপ্নোতি বেদান্তোপগতং ফলম্॥

যার বাক্য মন শুদ্ধ, সর্বদা (নিষিদ্ধ বিষয় থেকে) সুরক্ষিত, সে বেদান্ত প্রতিপাদিত (সর্বজ্ঞত্ব সর্বেশ্বরত্বাদি) ফল লাভ করে।

১৬১। নারুন্তুদঃ স্যাদার্তোহপি ন পরদ্রোহকর্মধী।

যয়াস্যোদ্বিজতে বাচা নালোক্যাং তামুদীরয়েৎ॥

পীড়িত হলেও কারও মর্মপীড়াকর হবে না, অপরের অহিতকর কর্ম বা চিন্তা করবে না, যে কথায় লোক ব্যথিত হয়, স্বর্গলাভের বিরোধী তেমন কথা বলবে না।

১৬২। সম্মানাদ্‌ব্রাহ্মণো নিত্যমুদ্বিজেত বিষাদিব।

অমৃতস্যেব চাকাঙ্ক্ষেদবমানস্য সর্বদা॥

ব্রাহ্মণ সর্বদা সম্মানকে বিষের ন্যায় মনে করবেন, অমৃতের ন্যায় মনে করে সর্বদা অপমান আকাঙ্ক্ষা করবেন.২৮

১৬৩। সুখং হ্যবমতঃ শেতে সুখঞ্চ প্রতিবুধ্যতে।

সুখং চরতি লোকেহস্মিন্নবমন্তা বিনশ্যতি॥

অপমানিত ব্যক্তি সুখে শয়ন করে, সুখে জাগ্রত হয়, এই সংসারে সুখে বিচরণ করে; অপমানকারী বিনষ্ট হয়।

১৬৪। অনেন ক্রমযোগেন সংস্কৃতাত্মা দ্বিজঃ শনৈঃ।

গুরৌ বসন্‌ সঞ্চিনুয়াদ্‌ব্রহ্মাধিগমিকং তপঃ॥

এইভাবে ধীরে ধীরে সংস্কৃতচিত্ত দ্বিজ গুরুগৃহে বাস করে ব্রহ্মপ্রাপ্তির যোগ্য তপস্যা করবেন।

১৬৫। তপোবিশেষৈর্বিবিধৈর্ব্রতৈশ্চ বিধিচোদিতৈঃ।

বেদঃ কৃৎস্নোহধিগন্তব্যঃ সরহস্যো দ্বিজন্মনা॥

দ্বিজ বিশেষ তপস্যা ও বিবিধ বৈধ ব্রত দ্বারা উপনিষদ্‌ সহ সমগ্র বেদ অধিগত করবেন।

১৬৬। বেদমেব সদাভ্যস্যেত্তপস্তপ্‌স্যন দ্বিজোত্তমঃ।

বেদাভ্যাসো হি বিপ্রস্য তপঃ পরমিহোচ্যতে॥

ব্রাহ্মণ তপস্যা করতে অভিলাষী হয়ে বেদই অভ্যাস করবেন; কারণ ব্রাহ্মণের পক্ষে বেদাভ্যাস এ জগতে শ্রেষ্ঠ তপস্যা বলে কথিত হয়।

১৬৭। আ হৈব স নখাগ্রেভ্যঃ পরমং তপ্যতে তপঃ।

যঃ স্রগ্ব্যপি দ্বিজোহধীতে স্বাধ্যায়ং শক্তিতোহম্বহম্॥

একথা ধ্রুব সত্য যে, যে দ্বিজ (ব্রহ্মচারীর পক্ষে নিষিদ্ধ) মালা ধারণ করেও যথাশক্তি প্রত্যহ বেদাধ্যয়ন করেন, তিনি নখাগ্র থেকে (সর্বদেহব্যাপক) শ্রেষ্ঠ তপস্যা করেন।

১৬৮। যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্‌।

স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সাম্বয়ঃ॥

যে দ্বিজ বেদ পাঠ না করে অন্য বিষয়ে পরিশ্রম করেন, তিনি শীঘ্র জীবদ্দশায়ই সবংশে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন।

১৬৯। মাতুরগ্রেহধিজননং দ্বিতীয়ং মৌঞ্জিবন্ধনে।

তৃতীয়ং যজ্ঞদীক্ষায়াং দ্বিজস্য শ্রুতিচোদনাৎ॥

বেদের বিধানানুসারে দ্বিজের প্রথমে মাতার থেকে জন্ম হয়, দ্বিতীয় (জন্ম) হয় মুঞ্জনির্মিত মেখলা ধারণে (অর্থাৎ উপনয়নে), তৃতীয় (জন্ম) হয় যজ্ঞদীক্ষায়।

১৭০। তত্র যদ্‌ব্রহ্মজন্মাস্য মৌঞ্জীবন্ধনচিহ্নিতম্।

তত্রাস্য মাতা সাবিত্রী পিতা ত্বাচার্য উচ্যতে॥

তার মধ্যে মৌঞ্জীবন্ধনসূচিত এর যে বেদজন্ম, তাতে তার মাতা গায়ত্রী, পিতা আচার্য বলে কথিত।

১৭১। বেদপ্রদানাদাচার্যং পিতরং পরিচক্ষতে।

ন হ্যস্মিন্‌ যুজ্যতে কর্ম কিঞ্চিদামৌঞ্জিবন্ধনাৎ॥

বেদদান হেতু আচার্যকে বলা হয় পিতা; কারণ, মৌঞ্জীবন্ধনের পূর্বে (বালকের শ্রৌত স্মার্ত কোন) কার্যে অধিকার থাকে না।

১৭২। নাভিব্যাহারয়েদ্‌ ব্ৰহ্ম স্বধানিনয়নাদৃতে।

শূদ্রেণ হি সমস্তাবদ্‌যাবদ্বেদে ন জায়তে॥

(উপনয়নের পূর্বে) শ্রাদ্ধ ব্যতীত অন্যত্র বেদপাঠ করবে না; বেদপাঠে অধিকার না হওয়া পর্যন্ত (বর্ণত্রয়) শূদ্রতুল্য থাকে।

১৭৩। কৃতোপনয়নস্যাস্য ব্ৰতাদেশনমিষ্যতে।

ব্ৰহ্মণো গ্রহণঞ্চৈব ক্রমেণ বিধিপূর্বকম্॥

উপনীত বালককে (দিবানিদ্রা করো না, সমিধ্‌ আহরণ কর ইত্যাদি) ব্রতপালনের আদেশ দান কর্তব্য। ক্রমে যথাবিধি বেদ গ্রহণ করণীয়।

১৭৪। যদ্‌যস্য বিহিতং চর্ম যৎ সূত্রং যা চ মেখলা।

যো দণ্ডো যচ্চ বসনং তত্তদস্য ব্ৰতেস্বপি॥

যার জন্য যে চর্ম, সূত্র, মেখলা, দণ্ড ও বস্ত্র বিহিত হয়েছে, তা তার (গোদানাদি) ব্ৰতেও (নূতন নূতন) করণীয়।

১৭৫। সেবেতেমাংস্তু নিয়মান্‌ ব্রহ্মচারী গুরৌ বসন্।

সন্নিয়ম্যেন্দ্রিয়গ্রামং তপোবৃদ্ধ্যর্থমাত্মনঃ॥

ব্রহ্মচারী নিজের তপস্যার বৃদ্ধির জন্য গুরুগৃহে বাস করে ইন্দ্রিয়সমূহ সংযত করে এই নিয়মগুলি পালন করবেন।

১৭৬। নিত্যং স্নাত্বা শুচিঃ কুর্যাদ্দেবর্ষিপিতৃতর্পণম্‌।

দেবতাভ্যৰ্চনঞ্চৈব সমিদাধানমেব চ॥

প্রতিদিন স্নানপূর্বক শুদ্ধ হয়ে দেবতা, ঋষি ও পিতৃগণের উদ্দেশ্যে তর্পণ, দেবপূজা ও সমিধস্থাপন (হোম) করণীয়।

১৭৭। বর্জয়েন্মধু মাংসঞ্চ গন্ধং মাল্যং রসান্‌ স্ত্রিয়ঃ।

শুক্তানি যানি সর্বাণি প্রাণিনাঞ্চৈব হিংসনম্‌॥

মধু, মাংস, গন্ধদ্রব্য, মালা, রস, স্ত্রীলোক, শুক্ত২৯ দ্রব্য ও প্রাণিহিংসা বর্জন করবে।

১৭৮- অভ্যঙ্গমঞ্জনঞ্চাক্ষ্ণোরুপানচ্ছত্রধারণম্‌।

১৭৯। কামং ক্রোধঞ্চ লোভঞ্চ নর্তনং গীতবাদনম্‌॥

দ্যূতঞ্চ জনবাদঞ্চ পরীবাদং তথানৃতম্।

স্ত্রীণাঞ্চ প্রেক্ষণালম্ভমুপঘাতং পরস্য চ॥

অভ্যঙ্গ (তৈলাদি দিয়ে মাথা ও দেহমর্দন), চোখে কাজল, জুতো ও ছাতা ব্যবহার, কাম, ক্রোধ, লোভ, নৃত্য, গীত, বাদ্য, জুয়াখেলা, লোকের সঙ্গে নিরর্থক কলহ, পরনিন্দা, মিথ্যাভাষণ, স্ত্রীলোকদর্শন ও আলিংগন ও পরের অপকার (বর্জনীয়)।

১৮০। একঃ শয়ীত সর্বত্র ন রেতঃ স্কন্দয়েৎ ক্বচিৎ।

কামাদ্ধি স্কন্দয়ন্‌ রেতো হিনস্তি ব্ৰতমাত্মনঃ॥

সকল স্থানে একা শয়ন করবে, কখনও রেতঃস্খলন করবে না। কামবশে রেতঃস্খলন করলে নিজের ব্রত নষ্ট করা হয়।

১৮১। স্বপ্নে সিক্তৃা ব্রহ্মচারী দ্বিজঃ শুক্ৰমকামতঃ।

স্নাত্বাৰ্কৰ্মৰ্চয়িত্বা ত্রিঃ পুনর্মিতৃচং জপেৎ॥

ব্রহ্মচারী দ্বিজ ঘুমে অনিচ্ছাক্রমে শুক্ৰত্যাগ করলে স্নান করে সুর্য প্রণামপুর্বক তিনবার পুনর্মাম্ এই ঋক্‌ জপ করবে।

১৮২। উদকুম্ভং সুমনসো গোশকৃন্‌মৃত্তিকাকুশান্।

আহরেদ্‌যাবদৰ্থানি ভৈক্ষঞ্চাহরহশ্চরেৎ॥

জলকুম্ভ, ফুল, গোময়, মাটি ও কুশ (যতগুলি আচার্যের প্রয়োজন ততগুলি) আহরণ করবে। প্রতিদিন ভিক্ষা করবে।

১৮৩। বেদযজ্ঞৈরহীনানাং প্রশস্তানাং স্বকর্মসু।

ব্রহ্মচাৰ্যাহরেদ্ভৈক্ষং গৃহেভ্যঃ প্রযতোহম্বহম্॥

ব্রহ্মচারী পবিত্র হয়ে, যারা বৈদিক যজ্ঞ করে এবং নিজ কর্তব্য সম্পাদনে রত তাদের গৃহ থেকে প্রতিদিন ভিক্ষা আহরণ করবে।

১৮৪। গুরোঃ কুলে ন ভিক্ষেত ন জ্ঞাতিকুলবন্ধুষু।

অলাভে ত্নন্যগেহানাং পূর্বং পূর্বং বিবর্জয়েৎ॥

গুরুর বংশে, জ্ঞাতি ও মাতুলাদির গৃহে ভিক্ষা করবে না। অন্য গৃহ না পাওয়া গেলে পূর্ব পূর্ব গৃহ বর্জন করবে (অর্থাৎ প্রথমে মাতুলাদির গৃহে, সেখানে না পেলে জ্ঞাতিকুলে, সেখানে না পেলে গুরুর বংশে)।

১৮৫। সর্বং বাপি চরেদ্‌গ্রামং পূর্বোক্তানামসম্ভবে।

নিয়ম্য প্রযতো বাচমভিশস্তাংস্তু বর্জয়েৎ॥

পূর্বোক্ত গৃহগুলির অভাবে গ্রামের সকল বাড়ীতেই মৌনী ও পবিত্র হয়ে ভিক্ষা করবে, মহাপাতকাদি পাপগ্রস্ত লোকদের বর্জন করবে।

১৮৬। দূরাদাহৃত্য সমিধঃ সন্নিদধ্যাদ্বিহায়সি।

সায়ং প্রাতশ্চ জুহুয়াৎ তাভিরগ্নিমতন্দ্রিতঃ॥

দূর থেকে যজ্ঞকাষ্ঠ আহরণ করে আকাশে (খোলা জায়গায়?) রাখবে। সন্ধ্যা ও সকালে ঐগুলি দিয়ে অনলসভাবে অগ্নিতে হোম করবে।

১৮৭। অকৃত্বা ভৈক্ষচরণমসমিধ্য চ পাবকম্‌।

অনাতুরঃ সপ্তরাত্রমবকীর্ণিব্রতং চরেৎ॥

নীরোগ অবস্থায় ভিক্ষা না করে ও আগুনে হোম না করে সাত রাত্রি অবকীর্ণি৩০ ব্রত করবে।

১৮৮। ভৈক্ষেণ বৰ্তয়েন্নিত্যং নৈকান্নাদী ভবেদ্‌ব্রতী।

ভৈক্ষেণ ব্ৰতিনো বৃত্তিরুপবাসসমা স্মৃতা॥

ব্রহ্মচারী প্রত্যহ ভিক্ষালব্ধ অন্নদ্বারা জীবন ধারণ করবে, এক জনের অন্ন ভোজন করবে না (বহু লোকের গৃহ থেকে ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করবে)। ভিক্ষাদ্বারা জীবনধারণ উপবাসতুল্য।

১৮৯। ব্রতবদ্দেবদৈবত্যে পিত্র্যে কর্মণ্যথর্ষিবৎ।

কামমভ্যর্থিতোহশ্নীয়াদ্‌ব্রতমস্য ন লুপ্যতে॥

ব্রহ্মচারী দেবতা বা পিতৃ-উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধে শ্রাদ্ধকর্তা কর্তৃক নিমন্ত্রিত হয়ে ইচ্ছামত একজনের অন্নও খেতে পারে, এতে তার ব্ৰতলোপ হবে না।

১৯০। ব্রাহ্মণস্যৈব কর্মৈতদুপদিষ্টং মনীষিভিঃ।

রাজন্যবৈশ্যয়োস্ত্বেবং নৈতৎ কর্ম বিধীয়তে॥

মনীষিগণ কর্তৃক ব্রাহ্মণের জন্যই এই কর্ম উপদিষ্ট হয়েছে, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের পক্ষে এই কর্ম বিহিত নয়।

১৯১। চোদিতো গুরুণা নিত্যমপ্রচোদিত এব বা।

কুর্যাদধ্যয়নে যত্নমাচাৰ্যস্য হিতেষু চ॥

গুরুকর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বা না হয়ে প্রত্যহ অধ্যয়ন ও আচার্যের হিতকর কার্যে যত্নবান্‌ হতে হবে।

১৯২। শরীরঞ্চৈব বাচঞ্চ বুদ্ধীন্দ্রিয়মনাংসি চ।

নিয়ম্য প্রাঞ্জলিস্তিষ্ঠেদীক্ষমাণো গুরোর্মুখম্।

গুরুর মুখের দিকে চেয়ে শরীর, বাক্য, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয় ও মন সংযত করে কৃতাঞ্জলি হয়ে দণ্ডায়মান থাকবে।

১৯৩। নিত্যমুদ্ধৃতপাণিঃ স্যাৎ সাধ্বাচারঃ সুসংযতঃ।

আস্যতামিতি চোক্তঃ সন্নাসীতাভিমুখং গুরোঃ॥

প্রত্যহ শিষ্য (উত্তরীয় থেকে দক্ষিণ) বাহু বহিস্কৃত করবে এবং সদাচারপরায়ণ ও সুষ্ঠুরূপে সংযত হয়ে ‘উপবেশন কর’এই বলে গুরু কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে গুরুর অভিমুখে বসবে।

১৯৪। হীনান্নবস্ত্ৰবেষঃ স্যাৎ সর্বদা গুরুসন্নিধৌ।

উত্তিষ্ঠেৎ প্রথমঞ্চস্য চরমঞ্চৈব সংবিশেৎ॥

গুরুর নিকট সর্বদা তদপেক্ষা নিকৃষ্ট বস্ত্র ও বেশ ধারণ করবে। শুরুর আগে উঠবে, পরে শয়ন করবে।

১৯৫। প্রতিশ্রবণসম্ভাষে শয়ানো ন সমাচরেৎ।

নাসীনো ন চ ভুঞ্জানো ন তিষ্ঠন্‌ ন পরাঙ্মুখঃ॥

শোয়া অবস্থায়, উপবিষ্ট হয়ে, খেতে খেতে, দণ্ডায়মান বা বিপরীতমুখ হয়ে (গুরুর আদেশ) শ্রবণ বা তাঁকে সম্ভাষণ করবে না।

১৯৬। আসীনস্য স্থিতঃ কুর্যাদভিগচ্ছংস্তু তিষ্ঠতঃ।

প্রত্যুদ্‌গম্য ত্বাব্রজতঃ পশ্চাদ্ধাবংস্তু ধাবতঃ॥

(গুরু) আসনে উপবিষ্ট হয়ে আদেশ করলে শিষ্য আসন থেকে উঠে, (তিনি) দণ্ডায়মান হয়ে আজ্ঞা দিলে শিষ্য তাঁর অভিমুখে কয়েক পদ গমন করে, (গুরু) আগমন করতে করতে অনুমতি দিলে শিষ্য তাঁর অভিমুখে গিয়ে, গুরু বেগে গমন করতে করতে অনুমতি দিলে শিষ্য তাঁর পশ্চাৎ ধাবিত হয়ে আদেশ গ্রহণ ও তাঁকে সংভাষণ করবে।

১৯৭। পরাঙ্মুখস্যাভিমুখো দূরস্থস্যেত্য চান্তিকম্।

প্রণম্য তু শয়ানস্য নিদেশে চৈব তিষ্ঠতঃ॥

(গুরু) বিপরীতমুখ হয়ে আদেশ করলে শিষ্য সম্মুখীন হয়ে, গুরু দূরস্থ হয়ে অনুমতি করলে শিষ্য সমীপস্থ হয়ে, গুরু শুয়ে আদেশ করলে শিষ্য প্রণামপূর্বক গ্রহণ করে এবং গুরুর নিকট অবস্থানপূর্বক তিনি অনুমতি করলে শিষ্য অবনতভাবে প্রতিশ্রবণ ও সম্ভাষণ করবে।

১৯৮। নীচং শয্যাসনঞ্চাস্য সর্বদা গুরুসন্নিধৌ।

গুয়োস্ত চক্ষুর্বিষয়ে ন যথেষ্টাসনো ভবেৎ॥

গুরুর কাছে সর্বদা তদপেক্ষা নিম্ন শয্যা ও আসন (শিষ্য) ব্যবহার করবে। গুরুর দৃষ্টিপথে শিষ্য যথেচ্ছভাবে বসবে না।

১৯৯। নোদাহরেদস্য নাম পরোক্ষমপি কেবলম্‌।

ন চৈবাস্যানুকুর্বীত গতিভাষিতচেষ্টিতম্‌॥

শিষ্য গুরুর অগোচরেও তাঁর (উপপদ শূন্য) নাম উচ্চারণ করবে না এবং তাঁর গতিভঙ্গী বা কথার অনুকরণ করবে না।

২০০। গুরোর্যত্র পরীবাদো নিন্দা বাপি প্রবর্ততে।

কর্ণৌ তত্র পিধাতব্যৌ গন্তব্যং বা ততোইন্যতঃ॥

যেখানে গুরুর পরিবাদ (যে দোষ আছে তা বলা) ও নিন্দা (অবিদ্যমান দোষকথন) হয় সেখানে কর্ণদ্বয় আচ্ছাদনীয় অথবা সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাওয়া কর্তব্য।

২০১। পরীবাদাৎ খরো ভবতি শ্বা বৈ ভবতি নিন্দকঃ।

পরিভোক্তা কৃমির্ভবতি কীটো ভবতি মৎসরী॥

(গুরুর) পরিবাদ হেতু (শিষ্য) হয় গাধা, গুরুনিন্দুক হয় কুকুর। পরিভোক্তা (অর্থাৎ অন্যায়রূপে গুরুর ধন দ্বারা যে জীবিকানির্বাহ করে) কৃমি হয়, গুরুমসরী (অর্থাৎ যে গুরুর প্রশংসা সইতে পারে না) হয় কীট।

২০২। দূরস্থো নাৰ্চয়েদেনং ক্রুদ্ধো নান্তিকে স্ক্রিয়াঃ।

যানাসনস্থশ্চৈবৈনমবরুহ্যাভিবাদয়েৎ॥

দূর থেকে, ক্রুদ্ধ হয়ে বা স্ত্রীলোকের সমীপে গুরুত্ব অর্চনা করবে না। যানারূঢ় বা আসনে উপবিষ্ট থাকলে নেমে তাঁকে অভিবাদন করবে।

২০৩। প্রতিবাতেহনুবাতে চ নাসীত গুরুণা সহ।

অসংশ্রবে চৈব গুরোর্নকিঞ্চিদপি কীর্তয়েৎ॥

প্রতিবাতে৩১ ও অনুবাতে৩২ গুরুর সঙ্গে বসবে না। যেখানে থাকলে গুরু কিছু শুনতে পান না, সেখানে গুরুর সম্বন্ধে বা অন্য কিছু বলবে না।

২০৪। গোহশ্বোষ্ট্রযানপ্রাসাদ-প্রস্তরেষু কটেষু চ।

আসীত গুরুণা সার্ধং শিলা-ফলক-নৌষু চ॥

গরুর, ঘোড়ার বা উটের গাড়ীতে, প্রাসাদের উপরে, দীর্ঘ আসনে, মাদুরে, পাথরে এবং নৌকায় গুরুর সঙ্গে বসবে।

২০৫। গুরোর্গুরৌ সন্নিহিতে গুরুবদ্‌বৃত্তিমাচরেৎ।

ন চানিসৃষ্টো গুরুণা স্বান্‌ গুরূনভিবাদয়েৎ॥

গুরুর গুরু উপস্থিত হলে তাঁর প্রতি গুরুর ন্যায় আচরণ কর্তব্য। গুরুর বিনা অনুমতিতে নিজের (পিতা, মাতাদি) গুরুজনদের অভিবাদন করবে না।

২০৬। বিদ্যাগুরুম্বেতদেব নিত্যা বৃত্তিঃ স্বযোনিষু।

প্রতিষেধৎসু চাধর্মান্‌ হিতঞ্চোপদিশৎস্বপি॥

বিদ্যাদাতা গুরু, পিতৃব্যাদি, অধর্মাচরণের নিষেধকারী ও ধর্মাচরণের উপদেষ্টার প্রতি এই আচরণই সর্বদা (বিহিত)।

২০৭। শ্রেয়ঃসু গুরুবদ্‌বৃত্তিং নিত্যমেব সমাচরেৎ।

গুরুপুত্ৰেষু চার্যেষু গুরোশ্চৈব স্ববন্ধুষু॥

নিজ অপেক্ষা বিদ্যা ও তপস্যায় শ্রেষ্ঠ মহান্‌ ব্যক্তি, গুরুপুত্রও গু গুরুর পিতৃব্যাদির প্রতি গুরুর ন্যায় আচরণ করণীয়।

২০৮। বালঃ সমানজন্মা বা শিষ্যো বা যজ্ঞকর্মণি।

অধ্যাপয়ন্‌ গুরুসুতোগু রুবন্মানমর্হতি॥

বয়ঃকনিষ্ঠ, সমবয়স্ক বা শিষ্যই হোক গুরুপুত্র বেদাধ্যাপনক্ষম হলে তিনি যদি যজ্ঞকার্যে সমাগত হন, তাহলে তিনি গুরুর ন্যায় সম্মানের যোগ্য হন।

২০৯। উৎসাদনঞ্চ গাত্রাণাং স্নাপনোচ্ছিষ্টভোজনে।

ন কুর্যাদ্‌গুরুপুত্রস্য পাদয়োশ্চাবনেজনম্॥

গুরুপুত্রের গাত্রে বিলেপন, তাঁকে স্নান করানো, তাঁর উচ্ছিষ্ট ভোজন ও পাদপ্রক্ষালন শিষ্য করবে না।

২১০। গুরুবৎ প্রতিপূজ্যাঃ স্যুঃ সবর্ণা গুরুযোষিতঃ।

অসবর্ণাস্তু সম্পূজ্যাঃ প্রত্যুত্থানাভিবাদনৈঃ॥

গুরুর সবর্ণা পত্নীগণ গুরুর ন্যায় পূজনীয়া। তাঁর অসবর্ণ ভাষাগণ (শুধু) প্রত্যুত্থান ও (পাদস্পর্শবিহীন) অভিবাদন দ্বারা পূজনীয়া।

২১১। অভ্যঞ্জনং স্নাপনঞ্চ গাত্রোৎসাদনমেব চ।

গুরুপত্ন্যা ন কার্যাণি কএশানাঞ্চ প্রসাধনম্॥

গুরুপত্নীর অঙ্গে তৈলমর্দন, তাঁকে স্নান করানো, তাঁর গাত্রবিলেপন ও কেশ প্রসাধন শিয্যের করণীয় নয়।

২১২। গুরুপত্নী তু যুবতির্নভিবাদ্যেহ পাদয়োঃ।

পূর্ণবিংশতিবর্ষেণ গুণদোষৌ বিজানতা॥

পূর্ণবিংশতিবর্ষবয়স্ক গুণদোষজ্ঞ শিষ্য যুবতী গুরুপত্নীর পাদস্পর্শ করে অভিবাদন করবে না।

২১৩। স্বভাব এষ নারীণাং নরাণামিহ দূষণম্।

অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ॥

নারীদের স্বভাবই হল পুরুষদের দূষিত করা। অতএব পণ্ডিতগণ স্ত্রীলোক সম্বন্ধে অনবহিত হন না।

২১৪। অবিদ্বাংসমলং লোকে বিদ্বাংসমপি বা পুনঃ।

প্রমদা হ্যুৎপথং নেতুং কামক্রোধবশানুগম্॥

সংসারে কাম ও ক্রোধের বশবর্তী বিদ্বান্‌ বা অবিদ্বান্ব্যন্‌ ব্যক্তিকে স্ত্রীলোক বিপথে নিতে পারে।

২১৫। মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা ন বিবিক্তাসনো ভবেৎ।

বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কর্ষতি॥

মা, বোন বা মেয়ের সঙ্গে শুন্যগৃহাদিতে পুরুষ থাকবে না। শক্তিশালী ইন্দ্রিয়সমুহ বিদ্বান্‌ লোককেও বশীভূত করে।

২১৬। কামন্তু গুরুপত্নীনাং যুবতীনাং যুবা ভুবি।

বিধিবদ্বন্দনং কুর্যাদবহমিতি ব্রুবন্॥

‘আমি অমুক’ এই বলে যুবক শিষ্য যুবতী গুরুপত্নীদের বন্দনা যথাবিধি ভূমিতে করবেন।

২১৭। বিপ্রোষ্য পাদগ্রহণমন্বহং চাভিবাদনম্‌।

গুরুদারেষু কুর্বীত সতাং ধর্মমনুস্মরন্॥

প্রবাস থেকে ফিরে সজ্জনের ধর্ম স্মরণ করে শিষ্য (বয়োজ্যেষ্ঠ) গুরুপত্নীর পাদস্পর্শপূর্বক অভিবাদন করবে; তারপর প্রত্যহ তাঁকে (ভূমিতেই) অভিবাদন করবে।

২১৮। যথা খনন্‌ খনিত্ৰেণ নরো বার্যধিগচ্ছতি।

তথা গুরুগতাং বিদ্যাং শুশ্রূষুরধিগচ্ছতি॥

যেমন মানুষ খন্তা দিয়ে মাটি খনন করে জল পায়, তেমনই শুশ্রূষাপরায়ণ শিষ্য গুরুগত বিদ্যালাভ করে।

২১৯। মুণ্ডো বা জটিলো বা স্যাদথবা স্যাচ্ছিখাজটঃ।

নৈনংগ্রামেহভিনিম্লোচেৎ সূর্যোনাভ্যুদিয়াৎ ক্কচিৎ॥

মুণ্ডিতমস্তক বা জটাধারী অথবা শিখাধারী ব্রহ্মচারী সূর্যের উদয় বা অস্তকালে গ্রামে নিদ্রিত থাকবে না।

২২০। তঞ্চেদভ্যুদিয়াৎ সূর্যঃ শয়ানং কামচারতঃ।

নিম্নোচেদ্বাপ্যবিজ্ঞানাজ্জপন্নুপবসেদ্দিনম্‌॥

যথেচ্ছাচারী (ব্রহ্মচারীর) শোয়া অবস্থায় সূর্য উদিত হলে বা সে অজ্ঞানবশতঃ নিদ্রিত থাকতে থাকতে সূর্য অস্তমিত হলে গায়ত্রী জপপূর্বক দিনে উপবাস করবে।

২২১। সূর্যেণ হ্যভিনির্মুক্তঃ শয়ানোহভ্যুদিতশ্চ যঃ।

প্রায়শ্চিত্তমকুর্বাণো যুক্তঃ স্যান্মহতৈনসা॥

যে শয়ান থাকতে থাকতে সূর্য উদিত বা অস্তমিত হয়, সে প্রায়শ্চিত্ত না করলে মহাপাপযুক্ত হয়।

২২২। আচম্য প্রযতো নিত্যমুভে সন্ধ্যে সমাহিতঃ।

শুচৌ দেশে জপন্‌ জপ্যমুপাসীত যথাবিধি॥

প্রত্যহ পবিত্র হয়ে আচমনপূর্বক প্রাতে ও সায়ংকালে সমাহিত চিত্তে পবিত্রস্থানে যথাবিধি গায়ত্রী জপ করে সন্ধ্যোপাসনা করবে।

২২৩। যদি স্ত্রী যদ্যবরজঃ শ্রেয়ঃ কিঞ্চিৎ সমাচরেৎ।

তৎ সর্বমাচরেন্‌যুক্তো যত্র বাস্য রমেন্মনঃ॥

যদি স্ত্রীলোক বা শূদ্র কোন মঙ্গলকর্ম করে, তাহলে (ব্রহ্মচারী) সেই সব কর্ম মনোযোগী হয়ে করবে অথবা যাতে তার মন প্রীত হয় তা করবে।

২২৪। ধর্মার্থাবুচ্যতে শ্রেয়ঃ কামার্থৌ ধর্ম এব চ।

অর্থ এবেহ বা শ্রেয়স্ত্রিবর্গ ইতি তু স্থিতিঃ॥

কেউ ধর্ম ও অর্থকে, কেউ কাম ও অর্থকে, কেউ ধর্মকে, কেউ বা কেবল অর্থকে শ্রেয় বলেন; কিন্তু (ধর্ম, অর্থ ও কাম) এই ত্রিবর্গ শ্রেয়।

২২৫। আচার্যশ্চ পিতা চৈব মাতা ভ্রাতা চ পূর্বজঃ।

নার্তেনাপ্যবমন্তব্যা ব্রাহ্মণেন বিশেষতঃ॥

আচার্য, পিতা, মাতা, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে কেউ (নিজে), বিশেষতঃ ব্রাহ্মণ, পীড়িত হলেও অবমাননা করবে না।

২২৬। আচার্যো ব্ৰহ্মণো মূর্তিঃ পিতা মুর্তিঃ প্রজাপতেঃ।

মাতা পৃথিব্যা মূর্তিস্তু ভ্রাতা স্বো মূর্তিরাত্মনঃ॥

আচার্য ব্ৰহ্মার, পিতা প্রজাপতির, মাতা পৃথিবীর ও সহোদর ভ্রাতা নিজের মূর্তিস্বরূপ।

২২৭। যং মাতাপিতরৌ ক্লেশং সহেতে সম্ভবে নৃণাম্‌।

ন তস্য নিষ্কৃতিঃ শক্যা কর্তুং বর্ষশতৈরপি॥

মানুষের গর্ভাধানের পরে মাতাপিতা যে কষ্ট সহ্য করেন, শতবর্ষেও তা শোধ করা যায় না।

২২৮। তয়োনির্ত্যং প্রিয়ং কুর্যাদাচার্যস্য চ সর্বদা।

তেস্বব ত্ৰিষু তুষ্টেষু তপঃ সর্বং সমাপ্যতে॥

সর্বদা প্রত্যহ তাঁদের উভয়ের ও আচার্যের প্রিয়কর্ম করবে; সেই তিনজন প্রীত হলে সকল তপস্যা সমাপ্ত হয়।

২২৯। তেষাং ত্রয়াণাং শুশ্রূষা পরমং তপ উচ্যতে।

ন তৈরভ্যননুজ্ঞাতো ধর্মমন্যং সমাচরেৎ॥

সেই তিনজনের শুশ্রূষা শ্রেষ্ঠ তপস্যা বলে কথিত হয়। তাঁদের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য ধর্ম আচরণ করবে না।

২৩০। ত এব হি ত্রয়ো লোকাস্ত এব ত্ৰয় আশ্ৰমাঃ।

ত এব হি ত্রয়ো বেদাস্ত এবোক্তাস্ত্রয়োহগ্নয়ঃ॥

তাঁরাই ত্রিভুবন, তিন আশ্রম, বেদত্রয় ও অগ্নিত্রয়।

২৩১। পিতা বৈ গার্হপত্যোহগ্নির্মাতাগ্নির্দক্ষিণঃ স্মৃতঃ।

গুরুবাহবনীয়স্তু সাগ্নিত্ৰেতা গরীয়সী॥

পিতা গার্হপত্য, মাতা দক্ষিণ ও গুরু আহবনীয় অগ্নি; সেই অগ্নিত্রয় শ্রেষ্ঠ’

২৩২। ত্রিস্বপ্রমাদ্যন্নেতেষু ত্ৰীন্‌ লোকান্‌ বিজয়েদ্‌ গৃহী।

দীপ্যমানঃ স্ববপুষা দেববদ্দিবি মোদতে॥

গৃহস্থ ঐ তিনটিতে অপ্রমত্ত হলে ত্রিলোক জয় করতে পারে, নিজ দেহে ভাস্বর হয়ে দেবতার ন্যায় স্বর্গে আনন্দ উপভোগ করে।

২৩৩। ইমং লোকং মাতৃভক্ত্যা পিতৃভক্ত্যা তু মধ্যমম্‌।

গুরশুশ্ৰষয়া ত্বেবং ব্রহ্মলোকং সমশ্নুতে॥

মাতৃভক্তিদ্বারা ইহলোক, পিতৃভক্তিদ্বারা মধাম লোক ও গুরুশুশ্রূষাদ্বারা ব্ৰহ্মলোক ভোগ করা যায়।

২৩৪। সর্বে তস্যাদৃতা ধর্মা যস্যৈতে ত্রয় আদৃতাঃ।

অনাদৃতাস্তু যস্যৈতে সর্বাস্তস্যাফলাঃ ক্রিয়াঃ॥

যে এই তিনটিকে আদর করে, সে সকল ধর্ম আদর করে। যার কাছে এইগুলি অনাদৃত, তার সকল কর্ম নিষ্ফল।

২৩৫। যাবৎত্রয়স্তে জীবেয়ুস্তাবন্নান্যং সমাচরেৎ।

তেষ্বেব নিত্যং শুশ্রূষাং কুর্যাৎ প্রিয়হিতে রতঃ॥

যতদিন তাঁরা জীবিত থাকেন, ততদিন অন্য কিছু অনুষ্ঠান করবে না। প্রিয় ও হিতানুষ্ঠানে রত ব্যক্তি প্রত্যহ তাঁদের শুশ্রূষা করবে।

২৩৬। তেষামনুপরোধেন পারত্র্যং যদ্‌যদাচরেৎ।

তত্তন্নিবেদয়েৎ তেভ্যো মনোবচনকর্মভিঃ॥

তাঁদের (সেবার) ব্যাঘাত না করে পরলোকের জন্য যা কিছু হিতকর কার্য করবে, তা কায়মনোবাক্যে তাঁদের নিবেদন করবে।

২৩৭। তিষ্বেতেষ্বিতি কৃত্যং হি পুরুষস্য সমাপ্যতে।

এষ ধর্মঃ পরঃ সাক্ষাদুপধর্মোহন্য উচ্যতে॥

এই তিনজনের সেবা দ্বারা মানুষের যাবতীয় কর্তব্য সমাপ্ত হয়। এই সাক্ষাৎ শ্রেষ্ঠ ধর্ম অন্য উপধর্ম (অপ্রধান ধর্ম) বলে কথিত হয়।

২৩৮। শ্ৰদ্দধানঃ শুভাং বিদ্যামাদদীতাবরাদপি।

অন্ত্যাদপি পরং ধর্মং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি॥

শ্রদ্ধাসহকারে মঙ্গলজনক বিদ্যা শূদ্র থেকেও গ্রহণ করবে, চণ্ডালের কাছ থেকেও (আত্মজ্ঞানাদি) শ্রেষ্ঠ ধর্ম শিক্ষণীয়, নিকৃষ্ট বংশের৩৩ থেকেও উত্তম স্ত্রীকে বিবাহ করবে।

২৩৯। বিষাদপ্যমৃতং গ্রাহ্যং বালাদপি সুভাষিতম্।

অমিত্রাদপি সদ্‌বৃত্তমমেধ্যাদপি কাঞ্চনম্॥

বিয থেকেও অমৃত, বালকের থেকেও সৎকথা, শত্রুর থেকেও সদাচার এবংঅ পবিত্রস্থান থেকেও সোনা গ্রহণ করা বিধেয়।

২৪০। স্ত্রিয়ো রত্নান্যথো বিদ্যা ধর্মঃ শৌচং সুভাষিতম্‌।

বিবিধানি চ শিল্পানি সমাদেয়ানি সর্বতঃ॥

স্ত্রী, রত্ন, বিদ্যা, ধর্ম, শুচিতা, হিতকথা ও নানাবিধ শিল্প সকলের নিকট থেকে গ্রহণীয়।

২৪১। অব্রাহ্মণাদধ্যয়নমাপৎকালে বিধীয়তে।

অনুব্রজ্যা চ শুশ্রূষা যাবদধ্যয়নং গুরোঃ॥

বিপদ্‌কালে অব্রাহ্মণের৩৪ কাছে অধ্যয়ন বিধেয় এবং অধ্যয়নকাল পর্যন্ত গুরুর অনুগমন ও শুশ্রূষা করণীয়।

২৪২। নাব্রাহ্মণে গুরৌ শিষ্যো বাসমাত্যন্তিকং বসেৎ।

ব্রাহ্মণে চাননূচানে কাঙক্ষন্‌ গতিমনুত্তমাম্॥

অব্রাহ্মণ গুরুর বা বেদাঙ্গসহিত বেদে অনভিজ্ঞ ব্রাহ্মণ গুরুর গৃহে মুমুক্ষু শিষ্য যাবজ্জীবন বাস করবে না।

২৪৩। যদি ত্বাত্যন্তিকং বাসং রোচয়েত গুরোঃ কুলে।

যুক্তঃ পরিচরেদেনমাশরীরবিমোক্ষণাৎ॥

যদি গুরুগৃহে যাবজ্জীবন বাস শিষ্যের ভাল লাগে, তাহলে সযত্নে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর পরিচর্যা করবে।

২৪৪। আ সমাপ্তেঃ শরীরস্য যস্তু শুশ্রূষতে গুরুম্‌।

স গচ্ছত্যঞ্জসা বিপ্রো ব্ৰহ্মণঃ সদ্ম শাশ্বতম্॥

যে শরীরপাত পর্যন্ত গুরুশুশ্রূষা করে, সে অনায়াসে শাশ্বত ব্ৰহ্মলোক প্রাপ্ত হয়।

২৪৫। ন পূর্বং গুরবে কিঞ্চিদুপকুর্বীত ধর্মবিৎ।

স্নাস্যংস্তু গুরুণাজ্ঞপ্তঃ শক্ত্যা গুর্বর্থমাহরেৎ॥

ধর্মজ্ঞ ব্যক্তি (সমাবর্তনের) পূর্বে (গোবস্ত্রাদি দানের দ্বারা) গুরুর উপকার করবে না। গুরু কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যখন ব্ৰতাঙ্গ স্নান করবে, তখন গুরুকে যথাশক্তি দক্ষিণা দান করবে।

২৪৬। ক্ষেত্রং হিরণ্যং গামশ্বং ছত্রোপানহমাসনম্‌।

ধান্যং শাকঞ্চ বাসাংসি গুরবে প্রীতিমাবহেৎ॥

ক্ষেত্র, স্বর্ণ, গাভী, অশ্ব, ছত্র, চর্মপাদুকা, আসন, ধান্য, শাক ও বস্ত্র গুরুকে দিয়ে তাঁর প্রীতি উৎপাদন করবে।

২৪৭। আচার্যে তু খলু প্রেতে গুরুপুত্রে গুণান্বিতে।

গুরুদারে সপিণ্ডে বা গুরুবদ্‌বৃত্তিমাচরেৎ॥

আচার্য পরলোকগত হলে গুণবান্‌ গুরুপুত্র, গুরুপত্নী বা গুরুর সপিণ্ডের প্রতি গুরুর ন্যায় আচরণ করবে।

২৪৮। এতেষ্ববিদ্যামানেষু স্থানাসনবিহারবান্।

প্রযুঞ্জানোহগ্নিশুশ্রূষাং সাধয়েদ্দেহমাত্মনঃ॥

এঁদের অভাবে নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী (আচার্যের অগ্নিগৃহে) অবস্থান, উপবেশন ও বিহার করে অগ্নিপরিচর্যাপূর্বক নিজ দেহকে ব্রহ্মপ্রাপ্তিযোগ্য করবে।

২৪৯। এবং চরতি যো বিপ্রো ব্রহ্মচর্যমবিপ্লুতঃ।

স গচ্ছত্যুত্তমং স্থানং ন চেহ জায়তে পুনঃ॥

যে ব্রাহ্মণ এইভাবে স্খ্ব লনহীন হয়ে ব্রহ্মচর্য পালন করেন, তিনি উত্তম স্থান (ব্রহ্মলোক) প্রাপ্ত হন এবং ইহলোকে আর জন্মগ্রহণ করেন না।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

১অর্থাৎ দ্বিজের।

২অধ্যয়ন ও শ্রবণের অধিকার।

৩সরস্বতী নদী যেখানে লুপ্ত হয়েছে, সেই স্থান।

৪যথা শুভ।

৫যথা বল।

৬যথা বসু।

৭যথা দীন।

৮যথা যশোদাদেবী।

৯দুই করতলে ধারণপূর্বক দক্ষিণকর ঊর্ধ্বে ও বামকর নিন্মে চালনপূর্বক প্রস্তুত।

১০ব্রাহ্মণ—ভবন্‌ ভিক্ষাং দেহি।

ক্ষত্রিয়—ভিক্ষাং ভবন্‌ দেহি।

বৈশ্য—ভিক্ষাং দেহি ভবন।

১১প্রতিদিন আমাদের এই ভোজ্য হোক—এই বলে বন্দনা।

১২বাম স্কন্ধোপরি উপবীত স্থিত হলে।

১৩দক্ষিণ স্কন্ধোপরি উপবীত স্থিত হলে।

১৪যে ভাবে হস্তদ্বয় থাকে, তার বিপরীত ক্রম ব্যত্যস্ত।

১৫তৎ সবিতুর্বরেণ্যং, ভর্গো দেবসা ধাঁমহি, ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।

১৬কাছের লোকও শুনতে না পেলে জপের এই সংজ্ঞা হয়।

১৭জপপরায়ণ হয়ে পশুবধাদি থেকে নিবৃত্ত বলে সর্বজীবের মিত্র।

১৮ব্রহ্মসম্বন্ধী।

১৯দূরাহ্বানে, গানে ও রোদনে এই ত্রিমাত্র স্বর প্রযুক্ত হয়।

২০অর্থাৎ এই সকল ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠত্ব হেতু মান্যতা হয় না।

২১একটি বেদাঙ্গ, এর অন্তর্গত শ্রৌতসূত্র, গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র ও শুল্বসূত্র।

২২উপনিষদ্‌।

২৩গার্হপতা, আহ্বনীয় ও দক্ষিণ নামক অগ্নি স্থাপন।

২৪অষ্টকাদি।

২৫সম্ভব বা উৎপত্তি মাত্র; পশু প্রভৃতির ন্যায়।

২৬বেদাঙ্গসহ বেদাধ্যায়ী।

২৭অধ্যাপক শিষ্যকে কঠোর শাস্তি দিবেন না। দড়ি বা বাঁশের টুকরো দিয়ে দরকার হলে শিষ্যকে প্রহার করা যায়।

২৮অর্থাৎ মান অপমানে হৃষ্ট বা দুঃখিত হবেন না।

২৯যে সকল দ্রব্য স্বভাবতঃ মধুরাদিরসযুক্ত, কিন্তু কালক্রমে অম্ন হয় তাদের নাম।

৩০শব্দকোষ দ্র।

৩১-৩২ যেভাবে বসলে গুরুর দিক থেকে বাতাস শিষ্যের দিকে যায়, তাকে বলে প্রতিবাত। এর বিপরীত অনুবাত।

৩৩মেধাতিথির মতে, হীনকর্মকারী লোকের বংশ।

কুল্লূকের মতে, পরিণেতার অপেক্ষা নিকৃষ্ট বংশ।

এখানে অসবর্ণা কন্যা কিংবা সমান বর্ণের মধ্যে নিকৃষ্টতর বংশ অভিপ্রেত কিনা বোঝা যায় যায় না।

৩৪কলিকালে অসবর্ণা বিবাহ নিষিদ্ধ; এই বিধান কি এই নিষেধের ব্যতিক্রম?

ব্রাহ্মণ ভিন্ন দ্বিজ। শূদ্র নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *