মনুসংহিতা – সপ্তম অধ্যায়
১। রাজধৰ্মান্ প্রবক্ষ্যামি যথাবৃত্তো ভবেন্নৃপঃ।
সম্ভবশ্চ যথা তস্য সিদ্ধিশ্চ পরমা যথা॥
রাজা যে ভাবে আচরণ করবেন, তাঁর উৎপত্তি যে ভাবে হল এবং রাজকার্যে তাঁর পরম সিদ্ধি যে ভাবে হয়, সেই রাজধর্ম বলব।
২। ব্রাহ্মং প্রাপ্তেন সংস্কারং ক্ষত্রিয়ণ যথাবিধি।
সর্বসাস্য যথান্যায়ং কর্তব্যং পরিরক্ষণম্॥
ক্ষত্রিয় কর্তৃক নিয়মানুসারে উপনয়ন সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে নিজের রাজ্যস্থিত সকলের। ন্যায়ানুসারে রক্ষা কর্তব্য।
৩-৪। অরাজকে হি লোকেহস্মিন্ সর্বতো বিদ্রুতে ভয়াৎ।
রক্ষার্থমস্য সর্বস্য রাজানমসৃজং প্রভুঃ॥
ইন্দ্রানিলযমার্কাণামগেশ্চ বরুণস্য চ।
চন্দ্রবিত্তেশয়োশ্চৈব মাত্রা নির্হৃত্য শাশ্বতীঃ॥
রাজশূন্য এই জগতে চারদিকে ভয়ে (সকলে) প্রচলিত হলে এই সমগ্র (চরাচর জগতের) রক্ষার জন্য ঈশ্বর ইন্দ্র, বায়ু, সূর্য, অগ্নি, বরুণ, চন্দ্র ও কুবেরের শাশ্বত অংশ গ্রহণ করে রাজাকে সৃষ্টি করেছিলেন।
৫। যম্মাদেষাং সুরেন্দ্রাণাং মাত্রাভ্যো নির্মিতো নৃপঃ।
তস্মাদভিভবত্যেষ সর্বভূতানি তেজসা॥
যেহেতু এই শ্রেষ্ঠ দেবগণের অংশ থেকে রাজার সৃষ্টি হয়েছিল, সেইজন্য তিনি সকল। জীবকে তেজে অভিভূত করেন।
৬। তপত্যাদিত্যবচ্চৈৰ চক্ষুংষি চ মনাংসি চ।
ন চৈনং ভুবি শক্লোতি কশ্চিদপ্যভিবীক্ষিতুম্॥
তিনি সূর্যের ন্যায় চোখ ও মন সন্তপ্ত করেন। পৃথিবীতে কেউ তাঁকে মুখোমুখি অবলোকন করতে পারে না।
৭। সোহগ্নির্ভবতি বায়ুশ্চ সোহর্কঃ সোমঃ স ধর্মরাট্।
স কুবেরঃ স বরুণঃ স মহেন্দ্রঃ প্রভাবতঃ॥
তিনি প্রতাপে অগ্নি, বায়ু, সূর্য, চন্দ্র, যম, কুবের, বরুণ ও ইন্দ্র (তুল্য) হন।
৮। বলোহপি নাবমন্তব্যো মনুষ্য ইতি ভূমিপঃ।
মহতী দেবতা হেমা নররূপেণ তিষ্ঠতি॥
রাজাকে বালক হলেও মানুষ মনে করে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। ইনি মানুষের রূপে মহান্ দেবতা।
৯। একমেব দহত্যগ্নির্নরং দুরুপসর্পিণম্।
কুলং দহতি রাজাগ্নিঃ সপশু-দ্রব্যসঞ্চয়ম॥
অতি নিকটে যে যায় একমাত্র তাকেই অগি দগ্ধ করে। রাজারূপ অগ্নি (অপরাধীকে) বংশ, (গাভী অশ্বাদি) পশু ও (স্বর্ণরত্নাদি) সম্পত্তিসহকারে দ করেন।
১০। কার্যং সোহবেক্ষ্য শক্তিঞ্চ দেশকালৌ চ তত্ত্বতঃ।
কুরুতে ধর্মসিদ্ধার্থং বিশ্বরূপং পুনঃপুনঃ॥
তিনি কার্য বিচার করে (নিজের) শক্তি, দেশ ও কাল বিচার করে ধর্মসিদ্ধির জন্য বার বার বিশ্বকাপ (অর্থাৎ বহু রূপ) ধারণ করেন।
১১। যস্য প্রসাদে পদ্মা শ্রীবির্জয়শ্চ পবাক্রমে।
মৃত্যুশ্চ বসতি ক্রোধে সর্বতোজোময়ে হি সঃ॥
যাঁর অনুগ্রহে বিশাল সম্পত্তিলাভ হয়, যাঁর বীরত্বে জয়লাভ হয়, যাঁর ক্রোধে মৃত্যু বাস করে, তিনি প্রকৃতই সর্বতেজোময়।
১২। তং বস্তু দ্বেষ্টি সম্মোহাৎ স বিনশ্যত্যসংশয়ম্।
তস্য হ্যাশু বিনাশায় রাজা প্রকুরুতে মনঃ॥
মোহবশতঃ তাঁকে যে বিদ্বেষ করে, সে নিঃসন্দেহে বিনষ্ট হয়; তার ধ্বংসের জন্য রাজা মনোযোগ দেন।
১৩। তস্মাদ্ধর্মং যমিষ্টেষু স ব্যবস্যেন্নরাধিপঃ।
অনিষ্টাঞ্চাপ্যনিষ্টেষু তং ধর্মং ন বিচালয়েৎ॥
সুতরাং ইষ্ট (অর্থাৎ শিষ্ট) লোকের প্রতি যে (শাস্ত্রোক্ত নিয়ম) এবং অনিষ্ট (অশিষ্টের প্রতি) যে অনিষ্ট (শাস্ত্রে দুষ্টের অনিষ্টকর) ধর্ম তাকে লঙ্ঘন করবেন না।
১৪। তস্যার্থে সর্বভূতানাং গোপ্তারং ধর্মমাত্মজম্।
ব্রহ্মতেজোময়ং দন্ডমসৃজৎ পূর্বমীশ্বরঃ॥
তাঁর জন্য পূর্বে সকলজীবের রক্ষক, ধর্মস্বরূপ পুত্র, ব্ৰহ্মতেজোময় দণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন।
১৫। তস্য সর্বাণি ভূতানি স্থাবরাণি চরাণি চ।
ভয়াদ্ভোগায় কল্পন্তে স্বধর্মান্ন চলন্তি চ॥
সেই দণ্ডের ভয়ে স্থাবর জঙ্গম সকল সৃষ্ট জীব ও পদার্থ ভোগ করতে সমর্থ হয় এবং স্বধর্ম থেকে বিচ্যুত হয় না।
১৬। তং দেশকালৌ শক্তিঞ্চ বিদ্যাঞ্চাবেক্ষ্য তত্ত্বতঃ।
যথাহতঃ সম্প্রণয়েনুরেম্বন্যায়বর্তিযু॥
(অপরাধীর) দেশ, কাল, শক্তি ও বিদ্যা যথার্থরূপে পর্যালোচনা করে অন্যায়কারীর উপযোগী দণ্ড প্রণয়ন করবেন।
১৭। স রাজা পুরুষো দণ্ডঃ স নেতা শাসিতা চ সঃ।
চতুর্ণামাশ্রমাণাঞ্চ ধর্মস্য প্রতিভূঃ স্মৃতঃ॥
সেই দণ্ড রাজা, পুরুষ, নেতা, শাসক এবং চার আশ্রমের ধর্মের প্রতিভূ।
১৮। দণ্ডঃ শান্তি প্রজাঃ সর্বা দণ্ড এবাভিরক্ষতি।
দণ্ডঃ সুপ্তেষু জাগৰ্তি দণ্ডং ধর্মং বিদুৰ্বধাঃ॥
দণ্ড সকল লোককে শাসন করে, দণ্ডই রক্ষা করে। লোক নিদ্রিত থাকলে দণ্ড জাগ্রত থাকে; পণ্ডিতগণ দণ্ডকে ধর্ম বলেছেন।
১৯। সমীক্ষ্য স ধৃতঃ সম্যক্ সর্বা রঞ্জয়তি প্রজাঃ।
অসমীক্ষ্য প্রণীত বিনাশয়তি সর্বতঃ॥
বিবেচনাপূর্বক প্রযুক্ত (দণ্ড) সকল প্রজার মনোরঞ্জন করে। কিন্তু অবিবেচনাপূর্বক প্রযুক্ত (দণ্ড) সব দিকে নষ্ট করে॥
২০। যদি ন প্রণয়েদ্রাজা দণ্ডং দণ্ড্যেষতন্দ্রিতঃ।
শূলে মৎস্যানিবপক্ষ্য দুর্বলান্ বলবত্তরাঃ॥
যদি রাজা নিরলস ভাবে দণ্ডনীয়ের প্রতি দণ্ড প্রয়োগ না করেন, তাহলে অপেক্ষাকৃত অধিক বলশালী ব্যক্তিগণ দুর্বল লোকদের শুলে মৎস্যপাকের১ ন্যায় কষ্ট দিতে পারে।
২১। অদ্যাৎ কাকঃ পুবোডাশং শ্বাবলিহ্যাদ্ধবিস্তথা।
স্বাম্যঞ্চ ন স্যাৎ কস্মিংশ্চিৎ প্রবর্তেতাধরোত্তরম্॥
(দণ্ডাভাবে) কাক (যজ্ঞের) পুরোডাশ খেয়ে (ফলে), কুকুর (দেবকার্যের) হবি লেহন করে; কিছুর উপরেই (কারও) অধিকার থাকে না, নীচের লোক উপরে উঠে যায় (অর্থাৎ নীচ ব্যক্তি প্রভুত্ব করে)।
২২। সর্বো দণ্ডজিতো লোকো দুর্লভো হি শুচির্নরঃ।
দণ্ডস্য হি ভয়াৎ সর্বং জগদ্ভোগায় কল্পতে॥
পৃথিবীতে সকল লোক দণ্ডদ্বারা বশীভূত হয়; শুচি লোক সত্যি দুর্লভ। দণ্ডের ভয়ে সমগ্র জগৎ ভোগ করতে সমর্থ হয়।
২৩। দেব-দানব-গন্ধর্বা রক্ষাংসি পতগোরগাঃ।
তেহপি ভোগায় কল্পন্তে দণ্ডেনৈব নিপীড়িতাঃ॥
দেবতা, দানব, গন্ধর্ব, রাক্ষস, পক্ষী, সর্প—তারাও দণ্ডের দ্বারাই নিগৃহীত হয়ে (বৃষ্টিদানাদি উপকার দ্বারা) লোকের ভোগে সহায়তা করছে।
২৪। দুষ্যেয়ুঃ সর্ববর্ণাশ্চ ভিদ্যেরন্ সর্বসেতবঃ।
সর্বলোকপ্রকোপশ্চ ভবেদ্দণ্ডস্য বিভ্ৰমাৎ॥
দণ্ডের অনুচিত প্রয়োগে সকল বর্ণ দৃষিত হতে পারে, সকল (শাস্ত্রীয়) নিয়ম ভেঙ্গে যেতে পারে এবং সকল লোকের ক্রোধ হতে পারে।
২৫। যত্র শ্যামো লোহিতাক্ষো দণ্ডশ্চরতি পাপহা।
প্রজাস্তত্র ন মুহ্যন্তি নেতা চেৎ সাধু পশ্যতি॥
যেখানে শ্যামবর্ণ, রক্তনয়ন, পাপনাশক দণ্ড বিচরণ করে, সেখানে লোক মোহগ্রস্ত হয় না, যদি দণ্ডদাতা ন্যায় বিচার করেন।
২৬। তস্যাহুঃ সম্প্রণেতারং রাজানং সত্যবাদিনম্।
সমীক্ষ্যকারিণং প্রাজ্ঞং ধর্ম-কামার্থকোবিদম্॥
সত্যবাদী, বিবেচক, প্রাজ্ঞ, ধর্ম কাম ও অর্থে অভিজ্ঞ রাজাকে সেই দণ্ডের প্রবর্তয়িতা বলা হয়েছে।
২৭। তং রাজা প্রণয়ন্ সম্যক্ ত্রিবর্গেণাভিবর্ধতে।
কামাত্মা বিষমঃ ক্ষুদ্রো দণ্ডেনৈব নিহন্যতে॥
সেই দণ্ডকে রাজা উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করে (ধর্ম, কাম ও অর্থ এই) ত্রিবর্গসহ উন্নতিলাভ করেন। বিষয়াভিলাষী, ক্রোধপরায়ণ, ছলান্বেষী (রাজা) দণ্ড দ্বারাই নিহত হন।
২৮। দণ্ডো হি সুমহত্তেজো দুর্ধরশ্চাকৃতাত্মভিঃ।
ধর্মাদ্বিচলিতংহস্তি নৃপমেব সবান্ধবম্॥
যেহেতু মহাতেজস্বরূপ দণ্ড শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তিগণ কর্তৃক ধারণের অযোগ্য, (সেইজন্য) তা ধর্মভ্রষ্ট রাজাকে সবান্ধবে নিহত করে।
২৯। ততো দুর্গঞ্চ রাষ্ট্রঞ্চ লোকঞ্চ সচরাচরম্।
অন্তরীক্ষগতাংশ্চৈব মুনীন্ দেবাংশ্চ পীড়য়েৎ॥
(অবিবেচনাপূর্বক দণ্ডপ্রণেতা রাজা) দুর্গ, রাষ্ট্র, চরাচর জগৎ, অন্তরীক্ষস্থিত মুনিগণ ও দেবগণকে পীড়ন করেন।
৩০। সোহাসহায়েন মূঢ়েন লুক্কেনাকৃতবুদ্ধিনা।
ন শক্যো ন্যায়তো নেতুং সক্তেন বিষয়েষু চ॥
অসহায়, মুর্খ, লোভী, শাস্ত্রজ্ঞানহীন ও বিষয়াসক্ত ব্যক্তি কর্তৃক ন্যায়ানুসারে দণ্ড প্রযুক্ত হতে পারে না।
৩১। শুচিনা সত্যসন্ধেন যথাশাস্ত্রানুসারিণা।
প্রণেতুং শক্যতে দণ্ডঃ সুসহায়েন ধীমতা॥
শুচি, সত্যপ্রতিজ্ঞ, শাস্ত্রসম্মতব্যবহারকারী, উত্তম (সচিবাদি) সহায়যুক্ত ও বুদ্ধিমান্ (রাজা) কর্তৃক দণ্ড প্রযুক্ত হতে পারে।
৩২। স্বরাষ্ট্র ন্যায়বৃত্তঃ স্যাদ্ভূশদণ্ডশ্চ শত্রুষু।
সুহৃৎস্বজিহ্মঃ স্নিগ্ধেষু ব্রাহ্মণেষু মান্বিতঃ॥
(রাজা) নিজরাজ্যে ন্যায্য আচরণ করবেন, শক্রর প্রতি তীক্ষ্ণ দণ্ড বিধান করবেন, স্নেহভাজন বন্ধুর প্রতি সরল ও ব্রাহ্মণের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন।
৩৩। এবংবৃত্তস্য নৃপতেঃ শিলোঞ্ছেনোপি জীবতঃ।
বিস্তীর্যতে যশো লোকে তৈলবিন্দুরিবাম্ভসি॥
এইরূপ আচরণকারী রাজা শিলোঞ্ছদ্বারা জীবন ধারণ করলেও তাঁর যশ জলে তৈলবিন্দুর ন্যায় বিস্তারলাভ করে।
৩৪। অতস্তু বিপরীতস্য নৃপতেরজিতাত্মনঃ।
সংক্ষিপ্যতে যশো লোকে ঘৃতবিন্দুরিবাম্ভসি॥
এর বিপরীত আচরণকারী অজিতেন্দ্রিয় রাজার যশ জলে ঘৃতবিন্দুর ন্যায় সংকুচিত হয়।
৩৫। স্বে স্বে ধর্মে নিবিষ্টানাং সর্বেষামনুপূর্বশঃ।
বর্ণানামাশ্রমাণাঞ্চ রাজা সৃষ্টোহভিরক্ষিতা॥
যথাক্রমে বর্ণ ও আশ্রম সমূহের নিজ নিজ ধর্মে রত ব্যক্তিগণের রক্ষক রূপে রাজা সৃষ্ট হয়েছেন।
৩৬। তেন্ যদ্যৎ সভৃত্যেন কর্তব্যং রক্ষতা প্রজাঃ।
তত্তদ্বোহহং প্রবক্ষ্যামি যথাবদনুপূর্বশঃ॥
ভৃত্যসহ প্রজারক্ষণকারী রাজার যা যা কর্তব্য, তা যথাযথরূপে ক্রমে তোমাদের বলছি।
৩৭। ব্রাহ্মণান্ পর্যুপাসীত প্রাতরুত্থায় পার্থিবঃ।
ত্রৈবিদ্যবৃদ্ধান্ বিদুষস্তিষ্ঠেৎ তোষাঞ্চ শাসনে॥
রাজা প্রাতে উঠে ত্রিবেদজ্ঞ বিদ্বান্ ব্রাহ্মণদের সেবা করবেন এবং তাঁদের আদেশ পালন করবেন।
৩৮। বৃদ্ধাংশ্চ নিত্যং সেবেত বিপ্রান্ বেদবিদঃ শুচীন্।
বৃদ্ধসেবী হি সততং রক্ষোভিরপি পূজ্যতে॥
বেদজ্ঞ, পবিত্র ও বৃদ্ধ (ব্রাহ্মণদের) সেবা করবেন; কারণ, বৃদ্ধসেবী সর্বদা রাক্ষসগণ কর্তৃকও পৃজিত হন।
৩৯। তেভ্যোহধিগচ্ছেদ্ বিনয়ং বিনীতাত্মাপি নিত্যশঃ।
বিনীতাত্মা হি নৃপতির্ন বিনশ্যতি কর্হিচিৎ॥
বিনীত হলেও তাঁদের কাছ থেকে বিনয় সর্বদা শিক্ষা করবেন২ কারণ, বিনীতাত্মা রাজা কখনও বিনষ্ট হন না।
৪০। বহবোহবিনয়ান্নষ্টা রাজানঃ সপরিচ্ছদাঃ।
বনস্থা অপি রাজ্যানি বিনয়াং প্রতিপেদিবে॥
(হস্তী অশ্ব কোষাদি) পরিচ্ছদ যুক্ত বহু রাজা অবিনয় হেতু নষ্ট হয়েছেন। বনবাসী হয়েও (বহু রাজা) বিনয় হেতু রাজ্য লাভ করেছিলেন।
৪১। বেণো বিনষ্টোহবিনয়ান্নহুষশ্চৈব পার্থিবঃ।
সুদাঃ পৈজবনশ্চৈব সুমুখো নিমিরেব চ॥
অবিনয় হেতু বেণ, নহুষ, সুদাস, পৈজবন, সুমুখ ও নিমি (নামক) রাজাগণ নষ্ট হয়েছেন।
৪২। পৃথুস্তু বিনয়াদ্রাজ্যং প্রাপ্তবান্ মনুরেব চ।
কুবেরশ্চ ধনৈশ্বর্যং ব্রাহ্মণ্যঞ্চৈব গাধিজঃ॥
পৃথু ও মনু বিনয় হেতু রাজ্য লাভ করেছিলেন, কুবের ধন ও ঐশ্বর্য এবং বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছিলেন।
৪৩। ত্রৈবিদ্যেভ্যস্ত্রয়ীং বিদ্যাদ্ দণ্ডনীতিঞ্চ শাশ্বতীম্।
আন্বীক্ষিকীঞ্চাত্মবিদ্যাং বার্তারম্ভাংশ্চ লোকতঃ॥
ত্রিবেদজ্ঞ ব্যক্তিগণ থেকে (ঋক্, যজু ও সাম এই) ত্রয়ী, সনাতন দণ্ডনীতি, তর্কশাস্ত্র, ব্রহ্মবিদ্যা এবং (কৃষক বণিক আদি) জনগণের কাছ থেকে কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্যাদি (জীবিকার উপায় রাজা) শিখবেন।
৪৪। ইন্দ্রিয়াণাং জয়ে যোগং সমাতিষ্ঠেদ্দিবানিশম্।
জিতেন্দ্রিয়ো হি শক্লোতি বশে স্থাপয়িতুং প্রজাঃ॥
অহোরাত্র ইন্দ্রিয়সমূহের জয়ে মনোযোগ দিবেন; কারণ, জিতেন্দ্রিয় (রাজা) প্রজাগণকে বশে রাখতে পারেন।
৪৫। দশ কামসমুত্থানি তথাষ্টৌ ক্রোধজানি চ।
ব্যসনানি দুরন্তানি প্রযত্নেন বিবর্জয়েৎ॥
পরিণামে ক্লেশজনক দশটি কামজ ও আটটি ক্রোধজ ব্যসন সযত্নে (রাজা) বর্জন করবেন।
৪৬। কামজেষু প্রসক্তো হি ব্যসনেষু মহীপতিঃ।
বিযুজাতেহর্থধর্মাভ্যাং ক্রোধজেবাত্মনৈব তু॥
কারণ, কামজবাসনে অত্যাসক্ত রাজা অর্থ ও ধর্ম থেকে বিচ্যুত হন, ক্রোধজ ব্যসনে (অত্যাসক্ত রাজা) নিজেই বিনষ্ট হন।
৪৭। মৃগয়াক্ষো দিবাস্বপ্নঃ পরিবাদঃ স্ত্রিয়ো মদঃ।
তৌর্যত্রিকং বৃথাট্যা চ কামজো দশকো গণঃ।
মৃগয়া, অক্ষক্রীড়া, দিবানিদ্রা, পরের দোষকথন, স্ত্রীসম্ভোগ, মদ্যপান, নৃত্য, গীত বাদ্য ও বৃথা পর্যটন—এই দশটি কামজ ব্যাসন।
৪৮। পৈশুন্যং সাহসং দ্রোহ ঈর্য্যাসূয়ার্থদূষণম্।
বাগ্দণ্ডজঞ্চ পারুষ্যং ক্রোধজোহপি গণোহষ্টকঃ॥
না জেনে অন্যের দোষকথন, সজ্জনের বন্ধনাদিদ্বারা নিগ্রহ, ছলে হত্যা, ঈর্ষা, অন্যের গুণসত্ত্বে দোষাবিষ্কার, অপরের অর্থাপহরণ বা অবশ্য দেয় ধন না দেওয়া, বাক্পারুষ্য, দণ্ডপারুষ্য—এই আটটি ক্রোধজ ব্যসন।
৪৯। দ্বয়োরপ্যেতয়োমূর্লং যৎ সর্বে কবয়ো বিদুঃ।
তং যত্নেন জয়েল্লোভং তজ্জাবেতাবুভৌ গণৌ॥
এই দুই প্রকার ব্যসনেরই মূল বলে যাকে পণ্ডিতগণ বলেন, সেই লোভ সযত্নে জয় করবেন; এই উভয় ব্যসনবর্গ লোভজাত।
৫০। পানমক্ষাঃ স্ত্রিয়শ্চৈব মৃগয়া চ যথাক্রমম্।
এতৎ কষ্টতমং বিদ্যাচ্চতুষ্কং কামজে গণে॥
কামজ ব্যসনবর্গে মদ্যপান, অক্ষক্রীড়া, স্ত্রীসম্ভোগ, মৃগয়া যথাক্রমে এই চারটিকে সর্বাপেক্ষা কষ্টকর জানবে।
৫১। দণ্ডস্য পাতনঞ্চৈব বাক্পারুষ্যার্থদূষণে।
ক্রোধজেপি গণে বিদ্যাৎ কষ্টমেৎত্রিকং সদা॥
দণ্ডপারুষ্য, বাক্পারুষ্য, অর্থাপহরণ বা অবশ্য দেয় অর্থ না দেওয়া—ক্রোধজ ব্যসন বর্গে এই তিনটিকে সর্বদা কষ্টকর বলে জানবে।
৫২। সপ্তকস্যাস্য বৰ্গস্য সর্বত্রৈবানুষঙ্গিণঃ।
পূর্বং পূর্বং গুরুতরং বিদ্যাদ্ব্যসনমাত্মবান্॥
সকল রাজাতেই বিদ্যামান উক্ত সাতটি ব্যসনের মধ্যে পূর্ব পূর্বটিকে গুরুতর ব্যসন বলে জানবেন।
৫৩। ব্যসনস্য চ মৃত্যোশ্চ ব্যসনং কষ্টমুচ্যতে।
ব্যাসন্যধোহধো ব্রজতি স্বর্যাত্যব্যসনী মৃতঃ॥
ব্যসন ও মৃত্যুর মধ্যে ব্যসনকে (অধিক) কষ্টকর বলা হয়। ব্যসনাসক্ত ব্যক্তি ক্রমে অধোগতি প্রাপ্ত হয়, অব্যসনী ব্যক্তি মৃত হয়ে স্বর্গে গমন করে।
৫৪। মৌলান্ শাস্ত্রবিদঃ শূরান্ লব্ধলক্ষান্ কুলোদগতান্।
সচিবান্ সপ্ত চাষ্টৌ বা প্রকুর্বীত পরীক্ষিতান্॥
কুলক্রমাগত, শাস্ত্রজ্ঞ, বীর, যার অস্ত্রবিদ্যা দৃষ্ট এমন লোক, উচ্চবংশজাত—এইরূপ সাত আটজন পরীক্ষিত ব্যক্তিকে সচিব করবেন।
৫৫। অপি যৎ সুকরং কর্ম তদপ্যেকেন দুষ্করম্।
বিশেষতোহসহায়েন কিন্তু রাজ্যং মহোদয়ম্॥
যে কাজ সুকর তাও একার পক্ষে দুষ্কর। বিশেষতঃ মহাফলপ্রদ রাজ্য সহায়হীন ব্যক্তিকর্তৃক কি করে (শাসিত হতে পারে)।
৫৬। তৈঃ সার্ধং চিন্তয়েন্নিত্যং সামান্যং সন্ধিবিগ্রহম্।
স্থানং সমুদয়ং গুপ্তিং লব্ধপ্রশমনানি চ॥
তাঁদের সঙ্গে সর্বদা সাধারণ সন্ধি ও যুদ্ধের বিষয়, (দণ্ড, কোষ, পুর, রাষ্ট্রাত্মক চার) স্থান, (ধান্য স্বর্ণাদির) উৎপত্তিস্থান, নিজের ও রাষ্ট্রের রক্ষা, লব্ধধনের সৎপাত্রে দান প্রভৃতি আলোচনা করবেন।
৫৭। তেষাং স্বং স্বমভিপ্রায়মুপলভ্য পৃথক্ পৃথক্।
সমস্তানাঞ্চ কার্যেষু বিদধ্যাদ্ধিতমাত্মনঃ॥
তাঁদের নিজ নিজ মত পৃথক্ভাবে ও সম্মিলিতভাবে জেনে নিজের হিতকার্য করবেন।
৫৮। সর্বেষান্তু বিশিষ্টেন ব্রাহ্মণেন বিপশ্চিতা।
মন্ত্রয়েৎ পরমং মন্ত্ৰং রাজা ষাড়্গুণ্যসংযুতম্॥
সকল সচিবের মধ্যে বিশিষ্ট বিদ্বান্ ব্রাহ্মণের সঙ্গে ষাড়্গুণ্য৩ বিষয়ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণা করবেন।
৫৯। নিত্যং তস্মিন্ সমাশ্বস্তঃ সর্বকার্যাণি নিক্ষিপেৎ।
তেন সার্ধং বিনিশ্চিত্য ততঃ কর্ম সমারভেৎ॥
সর্বদা তাঁর উপরে বিশ্বাসপূর্বক সকল কাজ অর্পণ করবেন। তাঁর সঙ্গে স্থির করে কাজ।
আরম্ভ করবেন।
৬০। অন্যানপি প্রকুর্বীত শুচীন্ প্রাজ্ঞানবস্থিতান্।
সম্যগর্থসমাহর্তৃনমাত্যান্ সুপরীক্ষিতা॥
অন্য পবিত্র, প্রাজ্ঞ, কর্মকুশল, ন্যায্য উপায়ে ধনার্জনকারী অন্য ব্যক্তিগণকেও উত্তমরূপে পরীক্ষা করে অমাত্য৪ নিযুক্ত করবেন।
৬১। নিৰ্বর্তেতাস্য যাবদ্ভিরিতিকর্তব্যতা নৃভিঃ।
তবতোহতন্দ্রিতান্ দক্ষান্ প্রকুর্বীত বিচক্ষণান্॥
যতজন লোকের দ্বারা কার্যসমূহ নিষ্পন্ন হয়, ততজন অনলস, দক্ষ, বিচক্ষণ লোক নিযুক্ত করবেন।
৬২। তেষামর্থে নিযুঞ্জীত শূরান্ দক্ষান্ কুলোদ্গতান্।
শুচীনাকরকর্মান্তে ভীরূনন্তনির্বেশনে॥
তাঁদের মধ্যে বীর, কর্মকুশল ও উচ্চ বংশজাত ব্যক্তিগণকে অর্থবিষয়ে, সৎ ব্যক্তিগণকে খনি ও ইক্ষুধান্যাদিসংগ্রহস্থানে এবং ভীরু ব্যক্তিগণকে অন্তঃপুরে নিযুক্ত করবেন।
৬৩। দূতঞ্চৈব প্ৰকুর্বীত সর্বশাস্ত্রবিশারদম্।
ইঙ্গিতকারচেষ্টজ্ঞং শুচিং দক্ষং কুলোদ্গতম্॥
সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী, ইঙ্গিত, আকার ও করাস্ফালনাদিক্রিয়া সম্বন্ধে অভিজ্ঞ, শুচি, দক্ষ ও উচ্চকুলজাত ব্যক্তিকে দূত নিযুক্ত করবেন।
৬৪। অনুরক্তঃ শুচির্দক্ষঃ স্মৃতিমান্ দেশকালবিৎ।
বপুষ্মান্ বীতভীর্বাগ্মী দূতো রাজ্ঞঃ প্রশস্যতে॥
রাজার অনুরক্ত, শুচি, দক্ষ, স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, দেশকালজ্ঞ, রূপবান্, নির্ভীক, বাগ্মী দূত প্রশংসিত হয়।
৬৫। অমাত্যে দণ্ড আয়ত্তো দণ্ডে বৈনয়িকী ক্রিয়া।
নৃপতৌ কোষরাষ্ট্রে চ দূতে সন্ধিবিপর্যয়ৌ॥
দণ্ড অমাত্যের, বিনয়ক্রিয়া (শিল্প) দণ্ডের, কোষ ও রাষ্ট্র রাজার এবং সন্ধি ও বিগ্রহ (যুদ্ধ) দূতের আয়ত্তাধীন।
৬৬। দূত এব হি সন্ধত্তে ভিনত্ত্যেব চ সংহতান্।
দূতস্তৎ কুরুতে কর্ম ভিদ্যন্তে যেন মানবাঃ॥
দূতই (বিবদমান রাজাদের) সংহত করাতে পারেন, সংহত রাজাগণের মধ্যে ভেদসৃষ্টি করতে পারেন; দূত সেই কাজ করেন, যাতে মানুষের মধ্যে ভেদসৃষ্টি হয়।
৬৭। স বিদ্যাদস্য কৃত্যেষু নিগৃঢ়েঙ্গিতচেষ্টিতৈঃ।
আকারমিঙ্গিতং চেষ্টাং ভৃত্যেষু চ চিকীর্ষিতম্॥
তিনি শত্রু রাজার কার্যসমূহে (তাঁর অনুচরের) গূঢ় ইঙ্গিত ও চেষ্টা দ্বারা তাঁর অভিপ্রায়, ইঙ্গিত ও চেষ্টা এবং ভৃত্যবর্গের প্রতি তাঁর কি করার ইচ্ছা, তা জানবেন।
৬৮। বুদ্ধা চ সর্বং তাত্ত্বেন পররাজচিকীর্ষিতম্।
তথা প্রযত্নমাতিষ্ঠেদ্ যথাত্মানং ন পীড়য়েৎ॥
শত্রুরাজার সব অভিপ্রায় প্রকৃতরূপে জেনে তেমন চেষ্টা করবেন, যাতে নিজের কষ্ট না হয়।
৬৯। জাঙ্গলং শস্যসম্পন্নমাৰ্যপ্ৰায়মনাবিলম্।
রম্যমানতসামন্তং স্বাজীব্যং দেশমাবসেৎ॥
রাজা এমনস্থানে বাস করবেন যেখানে জল, তৃণ অল্প, বায়ু, প্রচুর রৌদ্রতাপ, বহু শস্য আছে, অনেক ধার্মিক লোক বাস করেন, যা রোগাদি শূন্য, সুন্দর, যেখানে নিকটস্থ অরণ্যবাসী প্রভৃতি লোক রাজার অনুগত ও (কৃষিবাণিজ্যাদি) জীবিকা সুলভ।
৭০। ধন্বদুর্গং মহীদুর্গব্মদুর্গং র্বাক্ষমেব বা।
নৃদুর্গং গিরিদুর্গং বা সমাশ্ৰিত্য বসেৎ পুরান্॥
ধন্বদুর্গ, মহীদুর্গ, জলদুর্গ, বৃক্ষদুর্গ, নৃদুৰ্গ, বা গিরিদুর্গ আশ্রয় করে নগরে বাস করবেন।
৭১। সর্বেণ তু প্রযত্নেন গিরিদুর্গং সমাশ্রযেৎ।
এষাং হি বাহুগুণ্যেন গিরিদুর্গং বিশিষ্যতে॥
সর্বপ্রযত্নে গিরিদুর্গ আশ্রয় করবেন। এই দুর্গগুলির মধ্যে বহুগুণ হেতু গিরিদুর্গ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
৭২। ত্ৰীণ্যাদ্যান্যাশ্রিতাস্ত্বেষাং মৃগগর্তাশ্রয়ান্সরাঃ।
ত্ৰীণ্যুত্তরাণি ক্রমশঃ প্লবঙ্গমনরামবাঃ॥
এদের প্রথম তিনটিতে হরিণ, গর্তবাসী (মূষিকাদি) ও অপ্সরাগণ আশ্রয় নেয়। পরের তিনটিতে থাকে যথাক্রমে বানর, মানুষ ও দেবতা।
৭৩। যথা দুর্গাশ্রিতানেতান্ নোপহিংসন্তি শত্ৰবঃ।
তথারয়ো ন হিংসন্তি নৃপং দুর্গসমাশ্রিতম্॥
যেমন দুর্গাশ্রিত এই জীবগণকে শত্রুগণ বধ করতে পারে না, তেমন দুর্গবাসী রাজাকেশত্রুরা হত্যা করতে পারে না।
৭৪। একঃ শতং যোধয়তি প্রাকারস্থো ধনুর্ধরঃ।
শতং দশসহস্রাণি তস্মাদ্দুর্গং বিধীয়তে॥
প্রাচীরস্থ একজন ধনুর্ধারী এক শত লোকের সঙ্গে, একশত লোক দশ হাজার লোকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে। সেজন্যই দুর্গ বিহিত হয়।
৭৫। তৎ স্যাদায়ুধসম্পন্নং ধনধান্যেন বাহনৈঃ।
ব্রাহ্মণৈঃ শিল্পিভির্যন্ত্রৈর্যবসেনোদকেন চ॥
সেই দুর্গে অস্ত্র, ধন, ধান্য, বাহন, ব্রাহ্মণ, শিল্পী, যন্ত্র (machine), পশুখাদ্য ও জল থাকবে।
৭৬। তস্য মধ্যে সুপর্যাপ্তং কারয়েদ্গৃহমাত্মনঃ।
গুপ্তং সর্বর্তুকংশুভ্রং জলবৃক্ষসমন্বিতম্॥
তার মধ্যে রাজা অতি প্রশস্ত, রক্ষিত, সকল ঋতুজাত ফুলপুষ্পাদিসম্পন্ন, সুধাধবলিত (চুনকাম করা), জল ও বৃক্ষসমন্বিত নিজের বাসস্থান নির্মাণ করবেন।
৭৭। তদধ্যাস্যোদ্বহেদ্ভাৰ্যাং সর্বণাং লক্ষণান্বিতাম্।
কুলে মহতি সস্তূতাং হৃদ্যাং রূপগুণান্বিতাম্॥
সেই গৃহে বাস করে সবর্ণা, সুলক্ষণা, উচ্চবংশজাতা, মনোরমা ও রূপগুণসম্পন্না ভার্যাকে বিবাহ করবেন।
৭৮। পুরোহিতঞ্চ কুর্বীত বৃণুযাদেব চর্ত্বিজম্।
তেহস্য গৃহ্যাণি কর্মাণি কুর্যুর্বৈতানিকানি চ॥
পুরোহিত ও ঋত্বিক্ বরণ করবেন। তাঁরা এঁর গৃহ্য (শাস্তি স্বস্ত্যয়নাদি) ও অগ্নিত্রয় সম্পাদ্য অনুষ্ঠান করবেন।
৭৯। যজেত রাজা ক্রতুভির্বিবিধৈরাপ্তদক্ষিণৈঃ।
ধর্মার্থঞ্চৈব বিপ্রেভ্যো দদ্যাদ্ভোগান্ ধনানি চ॥
নানা প্রকার প্রচুর দক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞ রাজা সম্পাদন করবেন এবং ধর্মের জন্য ব্রাহ্মণদের ভোগ্য বস্তু ও ধন দিবেন।
৮০। সাংবৎসরিকমাপ্তৈশ্চ রাষ্ট্রাদাহারয়েলিম্।
স্যাচ্চাঙ্গায়পরো লোকে বৰ্তেত পিতৃবন্নৃষু॥
রাষ্ট্র থেকে বাৎসরিক রাজস্ব বিশ্বস্ত লোক দিয়ে আদায় করবেন। (এই বিষয়ে) শাস্ত্র অনুসরণ করবেন, প্রজাদের কাছে পিতার ন্যায় থাকবেন।
৮১। অধ্যক্ষান্ বিবিধান্ কুর্যাৎ তত্র তত্র বিপশ্চিতঃ।
তেহস্য সর্বাণ্যবেক্ষেরন্ নৃণাং কার্যাণি কুৰ্বতাম্॥
(হস্তী, অশ্বাদি) বিবিধ (বিভাগে) বিদ্বান্ অধ্যক্ষ নিযুক্ত করবেন। তাঁরা রাজকার্যকারী লোকদের সব কিছু পরিদর্শন করবেন।
৮২। আবৃত্তানাং গুরুকুলাদ্বিপ্রাণাং পূজকো ভবেৎ।
নৃপাণামক্ষয়ো হ্যেষ নিধির্ব্রাহ্মোহভিধীয়তে॥
গুরুগৃহ থেকে প্রত্যাবৃত্ত ব্রাহ্মণদের পূজা করবেন; কারণ, ব্রাহ্মণকে (প্রদত্ত ধন ধান্যাদি) অবিনশ্বর সম্পদ্ বলে উক্ত হয়।
৮৩। ন তং স্তেনা ন চামিত্ৰা হবন্তি ন চ নশ্যতি।
তস্মাদ্ৰাজ্ঞা নিধাতব্যো ব্রাহ্মণেষ্বক্ষয়ো নিধিঃ॥
তাকে চোর বা শত্রু হরণ করে না, তা নষ্ট হয় না; সুতরাং, রাজা কর্তৃক অবিনাশী সম্পদ ব্রাক্ষণসমূহে স্থাপনীয়।
৮৪। ন স্কন্দতে ন ব্যথতে ন বিনশ্যতি কর্হিচিৎ।
বরিষ্ঠমগ্নিহোত্রেভ্যো ব্রাহ্মণস্য মুখে হুতম্॥
(এই নিধি) কখনও নীচে পড়ে না, শুকায় না এবং কখনও নষ্ট হয় না। ব্রাহ্মণের মুখে৫ যে হোম করা হয়, তা অগ্নিহোত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
৮৫। সমমব্রাহ্মণে দানং দ্বিগুণং ব্রাহ্মণব্রুবে।
প্রাধীতে শতসাহস্রমনস্তং বেদপারগে॥
অব্রাহ্মণকে দান সমফল (অর্থাৎ শাস্ত্রবিহিত ফলেব সমান), ব্রাহ্মণব্রুবকে দানে দ্বিগুণ ফল হয়, যে বেদাধ্যয়ন শুরু করেছে তাকে দানের ফল লক্ষগুণ, বেদে পারদর্শী ব্রাহ্মণকে দানের ফল অনন্ত।
৮৬। পাত্রস্য হি বিশেষেণ শ্ৰদ্দধানতয়ৈব চ।
অল্পং বা বহু বা প্ৰেত্য দানস্যাবাপ্যতে ফলম্॥
পাত্রেব বৈশিষ্ট্য অনুসারে, শ্রদ্ধাশীলতা হেতু দানের অল্প বা অধিক ফল পরলোকে লাভ হয়।
৮৭। সমোত্তমাধমৈ রাজা ত্বাহূতঃ পালয়ন্ প্রজাঃ।
ন নিবৰ্তেত সংগ্ৰামাৎ ক্ষাত্রং ধর্মমনুস্মরন্॥
সমানবলবিশিষ্ট, উত্তম বা অধম ব্যক্তি কর্তৃক (যুদ্ধার্থ) আহুত প্রজাপালক রাজা ক্ষত্রিয়ধর্ম স্মরণ কবে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হবেন না।
৮৮। সংগ্রামেষ্বনিবৰ্তিত্বং প্রজানাঞ্চৈব পালনম্।
শুশ্রূষা ব্রাহ্মণানাঞ্চ বাজ্ঞাং শ্রেয়স্করং পরম্॥
যুদ্ধে পরাঙ্মুখ না হওয়া, প্রজাপালন ও ব্রাহ্মণ শুশ্রূষা রাজাদের যারপরনাই শ্রেষ্ঠ কাজ।
৮৯। আহবেষু মিথোহন্যোন্যং জিঘাংসন্তো মহীক্ষিতঃ।
যুধ্যমানাঃ পবং শক্ত্যা স্বর্গং যান্ত্যপরাঙ্খুখাঃ॥
যুদ্ধে পরস্পরের হননেচ্ছায় অতিশয় শক্তি অনুসারে যুদ্ধ করতে করতে রাজারা পরাঙ্মুখ না হলে স্বর্গগমন করেন।
৯০। ন কুটেরায়ুধৈর্যন্যাদ্ যুধ্যমানো রণে রিপুন্।
ন কর্ণিভির্নাপি দিন্ধৈর্নাগ্নিজ্বলিততেজনৈঃ॥
যুদ্ধ করতে করতে যুদ্ধক্ষেত্রে গুপ্ত অস্ত্র, কর্ণাকার ফলকযুক্ত বাণ, বিষাক্ত বাণ ও অমিদীপ্ত ফলক বাণ দ্বারা শত্রুদের হত্যা করবেন না।
৯১। ন চ হন্যাৎ স্থলারূঢ়ং ন ক্লীবং ন কৃতাঞ্জলিম্।
ন মুক্তকেশং নাসীনং ন তবাস্মীতিবাদিনম্॥
(নিজে রথারূঢ় হয়ে) ভূমিস্থ ব্যক্তিকে, ক্লীব (নপুংসক), করযোড়ে স্থিত, আলুলায়িত কেশ, উপবিষ্ট ও ‘আমি তোমার’ বলে (আত্মসমর্পণকারীকে) হত্যা করবেন না।
৯২। ন সুপ্তং ন বিসন্নাহং ন নগ্নং ন নিরায়ুম।
নায়ুধ্যমানং পশ্যন্তং ন পরেণ সমাগতম্॥
নিদ্রিত, বর্মহীন, উলঙ্গ, নিরস্ত্র, যে যুদ্ধ করে না এমন লোক, যে (শুধু) দেখে (যুদ্ধ করে না) এবং অপরের সঙ্গে যুদ্ধরত ব্যক্তিকে হত্যা করবেন না।
৯৩। নায়ুধব্যসনপ্রাপ্তং নার্তং নাতিপবিক্ষতম্।
ন ভীতং ন পরাবৃত্তং সতাং ধর্মমনুস্মরন্॥
সংলোকের ধর্ম স্মরণ কৰে ভগ্নাস্ত্র, পীড়িত, অত্যন্ত আহত, ভীত ও পরাঙ্মুখ ব্যক্তিকে হত্যা করবেন না।
৯৪। যন্তু ভীতঃ পবাবৃত্তঃ সংগ্রামে হন্যতে পরৈঃ।
ভর্তুর্যদ্দুস্কৃতং কিঞ্চিৎ তৎ সর্বং প্রতিপদ্যতে॥
যে ভীত ও পরঙ্মুখ হয়ে যুদ্ধে শত্রু কর্তৃক নিহত হয়, সে প্রভুর যা কিছু পাপ তা সবই প্রাপ্ত হয়।
৯৫। যচ্চাস্য সুকৃতং কিঞ্চিদমুত্রার্থমুপার্জিতম্।
ভর্তা তৎ সর্বমাদত্তে পরাবৃত্তহতস্য তু॥
পরাঙ্মুখ হয়ে যে নিহত হয়, তার পরলোকের জন্য উপার্জিত যা কিছু পুণ্য তার সব প্রভু গ্রহণ করেন।
৯৬। রথাশ্বং হস্তিনং ছত্ৰং ধনং ধান্যং পশূন্ স্ত্রিয়ঃ।
সর্বদ্রব্যাণি কুপ্যঞ্চ যো যজ্জয়তি তস্য তৎ॥
রথ, অশ্ব, হস্তী, ছত্র, ধন, ধান্য, পশু, স্ত্রীলোক, সকল দ্রব্য, সোনারূপা ছাড়া তামা প্রভৃতি যে যা জয় করে, তারই তা হয়।
৯৭। রাজ্ঞশ্চ দদ্যুরুদ্ধারমিত্যেষা বৈদিকী শ্রুতিঃ।
রাজ্ঞা চ সর্বযোধেভ্যো দাতব্যপৃথগ্জিতম্॥
রাজাকে উৎকৃষ্ট (জিত) দ্রব্য দিবে—এটি বৈদিক শ্রুতি। (সৈন্যগণ কর্তৃক) মিলিতভাবে জিত দ্রব্য রাজা সকল যোদ্ধাদের মধ্যে ভাগ করে দিবেন।
৯৮। এষোহনুপস্কৃতঃ প্রোক্তো যোধধর্মঃ সনাতনঃ।
তস্মাদ্ধর্মান্ন চ্যবেত ক্ষত্রিয়ো ঘ্নন্ রণে রিপূন্॥
এই অনিন্দিত শাশ্বত যোদ্ধধর্ম বলা হল। ক্ষত্রিয় যুদ্ধে শত্রুহত্যা করতে করতে এই ধর্ম থেকে ভ্রষ্ট হবেন না।
৯৯। অলব্ধঞ্চৈব লিপ্সেত লব্ধং রক্ষেং প্রযত্নতঃ।
বক্ষিতং বর্ধয়েচ্চৈব বৃদ্ধং পাত্ৰেষু নিক্ষিপেৎ॥
যা লাভ করা হয়নি তা লাভের ইচ্ছা করবেন, যা লব্ধ হয়েছে তা যত্নসহকারে রক্ষা করবেন, যা রক্ষিত হয়েছে তা বাড়াবেন, যাকে বাড়ান হল তা সৎপাত্রে দান করবেন।
১০০। এতচ্চতুর্বধং বিদ্যাং পুরুষার্থপ্রয়োজনম্।
অস্য নিত্যমনুষ্ঠানং সম্যক্কুর্যাদতন্দ্রিতঃ॥
এই চার প্রকার স্বর্গাদি পুরুষার্থের প্রয়োজন বলে জানবেন। অনলসভাবে সর্বদা এর অনুষ্ঠান করবেন।
১০১। অলব্ধমিচ্ছেদ্দণ্ডেন লব্ধং রক্ষেদবেক্ষয়া।
রক্ষতিং বর্ধয়েদ্বৃদ্ধ্যা বৃদ্ধং পাত্ৰেষু নিক্ষিপেৎ॥
যা লব্ধ হয়নি তাকে দণ্ড দ্বারা পেতে ইচ্ছা করবেন, যা লব্ধ হয়েছে তাকে পর্যবেক্ষণের সহিত রক্ষা করবেন, যা রক্ষিত হয়েছে তাকে (স্থল জল পথে বাণিজ্যাদি) বৃদ্ধির উপায়ের দ্বারা বাড়াবেন, যা বর্ধিত হয়েছে তাকে সৎপাত্রে দান করবেন।
১০২। নিত্যমুদ্যতদণ্ডঃ স্যান্নিত্যং বিবৃতপৌরুষঃ।
নিত্যং সংবৃতসংবার্যো নিত্যং ছিদ্রানুসার্যারেঃ॥
প্রতিদিন হস্তী অশ্বদির যুদ্ধাদিশিক্ষা করাবেন, প্রতিদিন পৌরুষ প্রকাশ করবেন, প্রতিদিন গোপনীয় বিষয় গুপ্ত রাখবেন। প্রতিদিন শত্রুর দোষানুসন্ধান করবেন।
১০৩। নিত্যমুদ্যতদণ্ডস্য কৃৎস্নমুদ্ধিজতে জগৎ।
তস্মাৎ সর্বাণি ভূতানি দণ্ডেনৈব প্রসাধয়েৎ॥
প্রতিদিন হস্তী অশ্বদিকে শিক্ষাদান করলে সমগ্র জগৎ (রাজার ভয়ে) উদ্বিগ্ন থাকে। সুতরাং সকল জীবকে দণ্ড দ্বারাই বশীভূত করবেন।
১০৪। অমায়যৈব বর্তেত ন কথঞ্চন ময়য়া।
বুধ্যেতারিপ্রযুক্তাঞ্চ মায়াং নিত্যং স্বসংবৃতঃ॥
অকপটভাবে থাকবেন, কখনও কপটভাবে নয়। সর্বদা নিজের দুর্বলতা ঢেকে রেখে শত্রুপ্রযুক্ত কপটতা বুঝবেন।
১০৫। নাস্য চ্ছিদ্রং পবো বিদ্যাৎ বিদ্যাচ্ছিদ্রং পরস্য তু।
গৃহেৎ কূর্ম ইবাঙ্গানি বক্ষেদ্বিবরমাত্মনঃ॥
তাঁর দুর্বলতা শত্রু জানতে না পারে, কিন্তু শত্রুর দুর্বলতা জানবেন, কচ্ছপের ন্যায় (অমাত্যাদি) অঙ্গসমূহ রক্ষা করবেন, নিজের প্রজাভেদ রূপ দোষের প্রতিকার করবেন।
১০৬। বকবচ্চিন্তয়েদর্থান্ সিংহবচ্চ পরাক্রমেৎ।
বৃকবচ্চাবলুম্পেত শশবচ্ছ বিনিষ্পতেৎ॥
বকের ন্যায় বিষয়সমূহের চিন্তা করবেন, সিংহের ন্যায় পরাক্রম করবেন, বৃকের ন্যায় অপহরণ করবেন এবং শশকের ন্যায় পলায়ন করবেন।
১০৭। এবং বিজয়মানস্য যেহস্য স্যুঃ পরিপন্থিনঃ।
তানানয়েদ্বশং সর্বান্ সামাদিভিরুপক্রমৈঃ॥
এইরূপে বিজয়লাভ করতে করতে যারা তাঁর প্রতিকূল হবে, তাদের সামাদি৫ উপায়সমূহদ্বারা বশে আনবেন।
১০৮। যদি তে তু ন তিষ্ঠেযুরুপায়ৈঃ প্রথমৈস্ত্রিভিঃ।
দণ্ডেনৈব প্রসহ্যৈতাঞ্ছনকৈর্বশমানয়েৎ॥
যদি তারা (সাম, দান, ভেদ এই) প্রথম তিন উপায়ে নিবৃত্ত না হয়, তাহলে বলপূর্বক দণ্ডের দ্বারাই ধীরে ধীরে এদের বশীভূত করবেন।
১০৯। সামাদীনামুপায়ানাং চতুর্ণামপি পণ্ডিতাঃ।
সামদণ্ডৌ প্রশংসন্তি নিত্যং রাষ্ট্রাভিবৃদ্ধয়ে॥
সামাদি চার উপায়ের মধ্যে পণ্ডিতগণ রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য সর্বদা সাম ও দণ্ডের প্রশংসা করেন।
১১০। যথোদ্ধরতি নির্দাতা কক্ষং ধান্যঞ্চ রক্ষতি।
তথা রক্ষেন্ নৃপো রাষ্ট্রং হন্যাচ্চ পরিপন্থিনঃ॥
যে ধান কাটে, সে যেমন তৃণাদি উৎপাটন করে এবং ধান রক্ষা করে, তেমনই রাজা রাষ্ট্র রক্ষা করবেন এবং প্রতিকুলাচারীদের নিহত করবেন।
১১১। মোহাদ্ৰাজা স্বরাষ্ট্রং যঃ কর্ষয়ত্যনবেক্ষয়া।
সোহচিরাদ্ভ্ৰশ্যতে রাজ্যাজ্জীবিতাচ্চ সবান্ধবঃ॥
যে রাজা মোহবশে নিজের রাজ্যকে (অর্থাৎ প্রজাগণকে) দুষ্টশিষ্ট জ্ঞানাভাবে (অশাস্ত্রীয় ধনগ্রহণ ও মারণাদি দ্বারা) পীড়া দেন, তিনি সবান্ধব রাজ্যভ্রষ্ট ও প্রাণে নষ্ট হন।
১১২। শরীরকৰ্ষণাৎ প্রাণাঃ ক্ষীয়ন্তে প্রাণিনাং যথা।
তথা রাজ্ঞামপি প্রাণাঃ ক্ষীয়ন্তে রাষ্ট্রকর্ষণাৎ॥
শরীর শোষণ হেতু যেমন প্রাণীদের প্রাণ ক্ষীণ হয়, তেমনই রাজাদেরও প্রাণ রাষ্ট্র পীড়ন হেতু ক্ষীণ হয়।
১১৩। রাষ্ট্রস্য সংগ্রহে নিত্যং বিধানমিদমাচরেৎ।
সুসংগৃহীতরাষ্ট্রো হি পার্থিবঃ সুখমেধতে॥
রাষ্ট্রের রক্ষায় সর্বদা এই ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। যে বাজার রাষ্ট্র সুরক্ষিত, তিনি সুখে উন্নতি লাভ করবেন।
১১৪। দ্বয়োস্ত্রয়াণাং পঞ্চানাং মধ্যে গুল্মমধিষ্ঠিতম্।
তথা গ্রামশতানাঞ্চ কুর্যাদ্ৰাষ্ট্রস্য সংগ্রহম্॥
দুই, তিন, পাঁচ ও শত গ্রামের মধ্যে একটি রাজ্যের রক্ষাস্থানরূপ একটি গুল্ম৬ প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
১১৫। গ্রামস্যাধিপতিং কুর্যাদ্দশগ্রামপতিং তথা।
বিংশতীশং শতেশঞ্চ সহস্রপতিমেব চ॥
এক, দশ, বিশ, শত ও সহস্রগ্রামের (উপরে পৃথক্ পৃথক) অধিপতি নিযুক্ত করবেন।
১১৬। গ্রামে দোষান্ সমুৎপন্নান্ গ্রামিকঃ শনকৈঃ স্বয়ম্।
শংসেদ্গ্রামদশেশায় দশেশো বিংশতীশিনে॥
গ্রামে উৎপন্ন (চৌর্যাদি) দোষ গ্রামপতি (স্বয়ং অক্ষম হলে) ধীরে ধীরে দশ গ্রামপতিকে, দশপতি (অক্ষম হলে) বিশগ্রামাধিপতিকে জানাবেন।
১১৭। বিংশতীশস্তু তৎ সর্বং শতেশায় নিবেদয়েৎ।
শংসেদ্গ্রামশতেশস্তু সহস্রপতয়ে স্বয়ম্॥
বিশ গ্রামপতি সেই সব শতগ্রামপতিকে জানাবেন। শতগ্রামপতি সহস্রপতিকে নিজে জানাবেন।
১১৮। যানি রাজপ্রদেয়ানি প্রত্যহং গ্রামবাসিভিঃ।
অন্নপানেন্ধনাদীনি গ্রামিকস্তান্যবাপ্নুয়াৎ॥
প্রতিদিন গ্রামবাসিগণ কর্তৃক রাজাকে দেয় অন্ন, পানীয়, ইন্ধনাদি গ্রামিক (তাঁর ভরণপোষণের জন্য) পাবেন।
১১৯। দশী কুলন্তু ভুঞ্জীত বিংশী পঞ্চকুলানি চ।
গ্রামং গ্রামশতাধ্যক্ষঃ সহস্রাধিপতিঃ পুরম্॥
দশগ্রামপতি এককুল৭ ও বিশপতি পাঁচকুল ভোগ করবেন। শত গ্রামপতি একটি গ্রাম, সহস্রপতি একটি নগর ভোগ করবেন।
১২০। তেষাং গ্রাম্যাণি কার্যাণি পৃথক্কার্যণি চৈব হি।
রাজ্ঞোহন্যঃ সচিবঃ স্নিগ্ধস্তানি পশ্যেদতন্দ্রিতঃ॥
সেই গ্রামবাসীদের (পরস্পরের বিবাদ হলে) যে সকল গ্রাম্য কার্য এবং কৃত অকৃত পৃথক কার্য সেইগুলি বাজার অন্য হিতকারী সচিব অনলসভাবে দেখবেন।
১২১। নগরে নগরে চৈবং কুর্যাৎ সর্বার্থচিন্তকম্।
উচ্চৈঃ স্থানং ঘোররূপং নক্ষত্রাণামিব গ্ৰহম্॥
নক্ষত্রগণের মধ্যে গ্রহের ন্যায় প্রতিনগরে সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক, সর্বোপরি প্রধান, (হস্তী অশ্বাদি দ্বারা) ভীতিজনক একজনকে (অধিপতি) করবেন।
১২২। স তাননুপরিক্রামেৎ সর্বানেব সদা স্বয়ম্।
তেষাং বৃত্তং পরিণয়েৎ সম্যগ্রাষ্ট্রেষু তচ্চরৈঃ॥
তিনি নিজে সর্বদা (সেই গ্রামপতি প্রভৃতি) সকলের অনুগমন করবেন। রাজ্যে তাঁদের (গ্ৰামাধিপতি প্রভৃতি ও নগরাধিপতিদের) আচরণ চরের দ্বারা যথাযথভাবে অবগত হবেন।
১২৩। রাজ্ঞো হি রক্ষাধিকৃতাঃ পরস্বাদায়িনঃ শঠাঃ।
ভূতা ভবন্তি প্রায়েণ তেভ্যো রক্ষেদিনাঃ প্রজাঃ॥
রাজার (প্রজা) রক্ষণে নিযুক্ত ভৃত্যগণ প্রায়ই পরধনগ্রাহী ও শঠ হয়; তাদের কাছ থেকে এই প্রজাগণকে রক্ষা করবেন।
১২৪। যে কার্যিকেভ্যোহৰ্থমেব গৃহ্ণীয়ু পাপচেতসঃ।
তেষাং সর্বস্বমাদায় রাজা কু্র্যাৎ প্রবাসনম্॥
যে পাপাত্মাগণ কাযার্থীদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করে, তাদের সর্ব নিয়ে রাজা স্বদেশ থেকে বহিষ্কৃত করবেন।
১২৫। রাজকর্মসু যুক্তানাং স্ত্রীণাং প্ৰেষ্যজনস্য চ।
প্রত্যহং কল্পয়েদ্বৃত্তিং স্থানকর্মানুরূপতঃ॥
রাজকার্যে নিযুক্ত স্ত্রীলোক ও কর্মকরগণের (উত্তম, মধ্যম, অধম) স্থান (পদ?) ও কর্মানুসারে প্রতিদিন বৃত্তির ব্যবস্থা করবেন।
১২৬। পণো দেয়োহবকৃষ্টস্য যডুৎকৃষ্টস্য বেতন।
ষান্মাসিকস্তথাচ্ছাদো ধান্যদ্রোণস্তু মাসিকঃ॥
নিকৃষ্ট কর্মকরকে প্রতিদিন দেয় একপণ, উৎকৃষ্ট ব্যক্তিকে ছয় পণ এবং ছয় মাসে একজোড়া বস্ত্র ও মাসে একদ্রোণ ধান দেয়।
১২৭। ক্রয়বিক্রয়মধ্বানং ভক্তঞ্চ সপরিব্যয়ম্।
যোগক্ষেমঞ্চ সম্প্রেক্ষ্য বণিজো দাপয়েৎ করান্॥
ক্রয় (মুল্য), বিক্রয় (মুল্য), পথে (ব্যয়), খোরাকখরচ, অর্জন ও রক্ষণ প্রভৃতি বিবেচনা করে বণিক্দিগকে কর দেওয়াবেন।
১২৮। যথা ফলেন যুজ্যেত রাজা কর্তা চ কর্মাণাম্।
তথাবেক্ষ্য নৃপো রাষ্ট্রে কল্পয়েৎ সততং করান্॥
যাতে রাজা ও বণিক্ আপন আপন কার্যের (যথাযথ) ফললাভ করেন, তা বিবেচনাপূর্বক রাজা রাজ্যে সর্বদা করের ব্যবস্থা করবেন।
১২৯। যথাল্পাল্পমদন্ত্যাদ্যং বার্যোকোবৎসষ্টপদাঃ।
তথাল্পাল্পো গ্রহীতব্যো রাষ্ট্রাদ্ৰাজ্ঞাব্দিকঃ করঃ॥
যেমন জোঁক, বাছুর ও মৌমাছি অল্প অল্প করে খাদ্য গ্রহণ করে, তেমনই রাজা অল্প অল্প করে রাজ্য থেকে বার্ষিক কর গ্রহণ করবেন।
১৩০। পঞ্চাশদ্ভাগ আদেয়ো রাজ্ঞা পশুহিরণ্যয়োঃ।
ধান্যানমষ্টমো ভাগঃ ষষ্ঠো দ্বাদশ এব বা॥
রাজা পশু ও সোনার পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ, ধানের অষ্টম, যষ্ঠ বা দ্বাদশ ভাগ গ্রহণ করবেন।
১৩১। আদদীতাথ ষড্ভাগং দ্রুমাংসমধুসর্পিষাম্।
গন্ধৌষধিরনাঞ্চ পুষ্প-মূল-ফলস্য চ॥
গাছ, মাংস, মধু, ঘি, গন্ধদ্রব্য, ওষধি, (বৃক্ষাদির) রস, ফুল, মূল ও ফলের ষষ্ঠভাগ আদায় করবেন।
১৩২। পত্র-শাক-তৃণানাঞ্চ বৈদলস্য চ চর্মণাম্।
মৃন্ময়ানাঞ্চ ভাণ্ডানং সর্বস্যাশ্মময়স্য চ॥
পাতা, শাক, ঘাস, বাঁশের দ্রব্য, চামড়ার জিনিস, মাটির ভাণ্ড ও সকল পাথরের দ্রব্যের (যষ্ঠভাগ আদেয়)।
১৩৩। ম্রিয়মাণোহপ্যাদদীত ন রাজা শ্রোত্রিয়াৎ করম্।
ন চ ক্ষুধাস্য সংসীদেৎশ্রোত্রিয়া বিষয়ে বসন্॥
রাজা মুমুর্ষু হলেও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ থেকে কর গ্রহণ করবেন না। তাঁর রাজ্যে বাস করে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ক্ষুধায় যেন পীড়িত না হন।
১৩৪। যস্য রাজ্ঞস্তু বিষয়ে শ্রোত্রিয়ঃ সীদতি ক্ষুধা।
তস্যাপি তৎক্ষুধা রাষ্ট্রমচিরেণৈব সীদতি।
যে রাজার রাজ্যে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ক্ষুধাপীড়িত হন, তাঁর রাজ্যও শীঘ্রই ক্ষুধাক্লিষ্ট হয়।
১৩৫। শ্রুতবৃত্তে বিদিত্বাস্য বৃত্তিং ধর্ম্যাং প্রকল্পয়েৎ।
সংরক্ষেৎ সর্বতশ্চৈনং পিতা পুত্ৰমিবৌরসম্॥
বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের বেদবিদ্যা ও চরিত্র জেনে তাঁর ধর্মসম্মত জীবিকার ব্যবস্থা করবেন। পিতা যেমন ঔরস পুত্রকে করেন, তেমনই সর্বপ্রকারে এঁকে রক্ষা করবেন।
১৩৬। সংরক্ষ্যমাণো রাজ্ঞা যং কুরুতে ধর্মমম্বহম্।
তেনায়ুর্বর্ধতে রাজ্ঞো দ্রবিণং রাষ্ট্রমেব চ॥
তিনি রাজা কর্তৃক রক্ষিত হয়ে প্রত্যহ যে ধর্মানুষ্ঠান করেন, তার দ্বারা রাজার আয়ু, সম্পত্তি ও রাজ্যের বৃদ্ধি হয়।
১৩৭। যৎকিঞ্চিদপি বর্ষস্য দাপয়েৎ করসংজ্ঞিতম্।
ব্যবহারেণ জীবন্তং রাজা রাষ্ট্রে পৃথগ্জনম॥
রাজ্যে (শাকাদিসামান্য) দ্রব্যের ব্যবসায় দ্বারা জীবিকার্জনকারী সাধারণ লোককে রাজা বছরে কর বলে সামান্য কিছু দেওয়াবেন।
১৩৮। কারুকান্ শিল্পিনশ্চৈব শূদ্রাংশ্চাত্মোপজীবিনঃ।
একৈকং কারয়েৎ কর্ম মাসি মাসি মহীপতিঃ॥
রাজা (পাচকাদি) কারুক, (কর্মকার স্বর্ণকারাদি) শিল্পী এবং গায়ে খেটে খাওয়া শূদ্রদের মাসে মাসে এক এক দিন কর্ম (বিনা বেতনে) করিয়ে নিবেন।
১৩৯। নোচ্ছিন্দ্যাদাত্মনো মূলং পরেষাঞ্চাতিতৃষ্ণয়া।
উচ্ছিন্দন্ হ্যাত্মনো মুলমাত্মানং অংশ্চ পীড়য়েৎ ॥
অতিলোভবশতঃ নিজের এবং পরের মূলোচ্ছেদ করবেন না। নিজের মুলোচ্ছেদ করে নিজেকে এবং তাদের কষ্ট দেওয়া হয়।
১৪০। তীক্ষ্ণশ্চৈব মৃদুশ্চ স্যাৎ কার্যং বীক্ষ্য মহীপতিঃ।
তীক্ষ্ণশ্চৈব মৃদুশ্চৈব রাজা ভবতি সম্মতঃ॥
কার্য বিচেনায় রাজা কঠোর ও কোমল হবেন ; (সময়বিশেষে) কঠোর ও কোমল রাজা (লোকের) প্রিয় হন।
১৪১। অমাত্যমুখ্যং ধর্মজ্ঞং প্রাং দান্তং কুলোদগতম্।
স্থাপযেদাসনে তস্মিন্ খিন্নঃ কার্যেক্ষণে নৃণাম্ ॥
লোকের কার্য পর্যবেক্ষণে ক্লান্ত (রাজা) বিজ্ঞ, জিতেন্দ্রিয়, উচ্চকুলজাত প্রধান অমাত্যকে সেই কার্যদর্শনস্থানে স্থাপন করবেন।
১৪২। এবং সর্বং বিধায়েদমিতিকর্তব্যমাত্মনঃ।
যুক্তশ্চৈবাপ্রমত্তশ্চ পরিরক্ষেদিমাঃ প্রজাঃ॥
এইরূপে নিজের যাবতীয় কর্তব্য কর্ম করে উৎসাহসম্পন্ন ও প্রমাদরহিত হয়ে এই প্রজাগণকে রক্ষা করবেন।
১৪৩। বিক্ৰোশন্ত্যো যস্য রাষ্ট্রদ্ধ্রিয়ন্তে দস্যুভিঃ প্রজাঃ।
সম্পশ্যতঃ সভৃত্যস্য মৃতঃ স ন তু জীবতি ॥
ভৃত্যলহস্থিত যে রাজার চোখের সামনে রাজ্য থেকে আর্তনাদকারী প্রজাগণ দস্যুগণ কর্তৃক অপহৃত হয়, সেই রাজা মৃত, জীবিত নয়।
১৪৪। ক্ষত্রিয়স্য পরো ধর্মঃ প্রজানামেব পালনম্।
নির্দিষ্টফলভোক্তা হি রাজা ধর্মেণ যুজ্যতে॥
প্রজাপালনই ক্ষত্রিয়ের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শাস্ত্রোক্ত করাদি ভোগী রাজা ধর্মযুক্ত হন।
১৪৫। উত্থায় পশ্চিমে যামে কৃতশৌচঃ সমাহিতঃ।
হুতাগ্নির্ব্রাহ্মণাংশ্চার্চ প্রবিশেৎ স শুভাং সভাম্ ॥
রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শৌচকর্ম করে সমাহিত চিত্তে অগ্নিতে হোমানস্তর ব্রাহ্মণগণকে অর্চনা করে (বাস্তুর) সুলক্ষণাদিযুক্ত সভায় প্রবেশ করবেন।
১৪৬। তত্র স্থিতঃ প্রজাঃ সর্বাঃ প্ৰতিনন্দ্য বিসর্জয়েৎ।
বিসৃজ্য চ প্রজাঃ সর্বাঃ মন্ত্রয়েৎ সহ মন্ত্রিভিঃ ॥
সেখানে স্থিত সকল প্রজাকে অভিনন্দন করে বিদায় দিবেন, সকল প্রজাকে বিদায় দিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে মন্ত্রণা করবেন।
১৪৭। গিরিপৃষ্ঠং সমারুহ্য প্রাসাদং বা রহোগতঃ।
অরণ্যে নিঃশলাকে বা মন্ত্ৰয়েদবিভাবিতঃ ॥
পর্বতোপরি আরোহণ করে বা প্রাসাদে নির্জন স্থানে অথবা জনহীন বনে মন্ত্রণা করবেন, যেন (মন্ত্রণাভেদকারী ব্যক্তিগণ) দেখতে না পায়।
১৪৮। যস্য মন্ত্রন জানন্তি সমাগম্য পৃথগ্জনাঃ।
স কৃৎস্নাংপৃথিবীং ভুঙ্ক্তে কোষহীনোহপিপার্থিবঃ ॥
(মন্ত্রী ভিন্ন) অন্য লোক এসে যাঁর মন্ত্রণা জানতে না পারে, তিনি অল্পধন হয়েও সমগ্র পৃথিবী ভোগ করবেন।
১৪৯। জড়মূকান্ধবধিবাংস্তৈর্যগ্যোনান্ বয়োহতিগান্।
স্ত্রীম্লেচ্ছব্যাধিতব্যঙ্গান্ মন্ত্রকালেহপসারয়েৎ ॥
মন্ত্রণাকালে জড়বুদ্ধি, বোবা, অন্ধ, কালা, হীনযোনি (কথাবলা শুকাদি), অতিবৃদ্ধ, স্ত্রীলোক, ম্লেচ্ছ, রুগ্ন, অঙ্গহীন ব্যক্তি—এদের অপসারণ করবেন।
১৫০। ভিন্দন্ত্যমতা মন্ত্রং তৈর্যগ্যোনাস্তথৈব চ।
স্ক্রিয়শ্চৈব বিশেষেণ তস্মাৎ তত্রাতদৃতো ভবেৎ॥
অপমানিত লোক, হীনযোনি (পাখী প্রভৃতি), বিশেষতঃ স্ত্রীলোক মন্ত্রভেদ করে ; সুতরাং তাদের সম্বন্ধে সতর্ক হবেন।
১৫১। মধ্যন্দিনেহর্ধরাত্রে বা বিশ্রান্তে বিগতক্লমঃ।
চিন্তয়েদ্ধকামার্থান্ সার্ধং তৈরেক এব বা ॥
মধ্যাহ্নে বা মাঝরাত্রে বিশ্রাম করে ক্লান্তিহীন হয়ে সেই মন্ত্রীদের সঙ্গে বা একা ধর্ম, কাম ও অর্থ চিন্তা করবেন।
১৫২- পরস্পরবিরুদ্ধানাং তেষাঞ্চ সমুপার্জনম্।
১৫৫। কন্যানাং সম্প্রদানঞ্চ কুমারাণাঞ্চ রক্ষণম্ ॥
দুতসম্প্রেষণঞ্চৈব কার্যশেষং তথৈব চ।
অন্তঃপুরপ্রচারঞ্চ প্রাণিধীনাঞ্চ চেষ্টিতম্ ॥
কৃৎস্নঞ্চাষ্টবিধং কর্ম পঞ্চবর্গঞ্চ তত্ত্বতঃ।
অনুরাগাপরাগৌ চ প্রচারং মণ্ডলস্য চ ॥
মধ্যমস্য প্রচারঞ্চ বিজিগীষোশ্চ চেষ্টিতম।
উদাসীনপ্রচারঞ্চ শত্রাশ্চৈব প্রযত্নতঃ ॥
পরস্পরবিরুদ্ধ ধর্ম, অর্থ, কামের অর্জন, কন্যাবিবাহ ও রাজপুত্রদের রক্ষণ, দূতপ্রেরণ, অবশিষ্ট কার্য, অন্তঃপুরনারীগণের ব্যবহার, গুপ্তচরদের কার্যকলাপ, প্রকৃতরূপে আটপ্রকার৮ কাজ, পঞ্চবর্গ৯, (প্রজাদের) অনুরাগ, বিরাগ ও রাজমণ্ডলের১০ উদ্দেশ্য, মধ্যম১১ রাজার মনোভাব, বিজিগীষু রাজার কার্যকলাপ, উদাসীন ও শত্রু রাজার মনোভাব (সম্বন্ধে মন্ত্রণা করবেন)।
১৫৬। এতাঃ প্রকৃতয়ো মূলং মণ্ডলস্য সমাসতঃ।
অষ্টৌ চান্যাঃ সমাখ্যাতা দ্বাদশৈব তু তাঃ স্মৃতাঃ ॥
এই প্রকৃতিগুলি সংক্ষেপে (রাজ) মণ্ডলের মূল। অন্য আটটিও উক্ত হয়, প্রকৃতিগুলি দ্বাদশ বলে কথিত।
১৫৭। অমাত্যরাষ্ট্রদুর্গার্থদণ্ডাখ্যাঃ পঞ্চ চাপরাঃ।
প্রত্যেকংকথিতা হ্যেতাঃ সংক্ষেপেণ দ্বিসপ্ততিঃ ॥
(উক্ত বারটি প্রকৃতির) প্রত্যেকটির অমাত্য, রাষ্ট্র, দুর্গ, অর্থ, দণ্ড এই পাঁচটি (প্রকৃতি); সংক্ষেপে এইগুলি বাহাত্তর সংখ্যক।
১৫৮। অনন্তরমরিং বিদ্যাদরিসেবিনমেব চ।
অরেরনস্তরং মিত্রমুদাসীনং তয়োঃপরম্ ॥
(কোন রাজার) অব্যবহিত পরবর্তী রাজাকে শত্রু এবং শত্রুর সহায়কে শত্রু বলে জানবেন। শত্রুরাজ্যের পরবর্তী রাজাকে মিত্র এবং তাঁদের পরবর্তী রাজ্যের রাজাকে উদাসীন বলে জানবেন।
১৫৯। তান্ সর্বানভিসন্দধ্যাৎ সামাদিভিরুপক্রমৈঃ।
ব্যস্তৈশ্চৈব সমস্তৈশ্চ পৌরুষেণ নয়েন চ॥
সেই সব রাজাকে সামাদি উপায়ের সবগুলি দিয়ে বা পৃথক্ পৃথক্ ভাবে পৌরুষের দ্বারা বা নীতিদ্বারা বশীভূত করবেন।
১৬০। সন্ধিঞ্চ বিগ্ৰহঞ্চৈব যানমাসনমেব চ।
দ্বৈধীভাবং সংশ্রয়ঞ্চ ষড়গুণাংশ্চিত্তয়েৎ সদা ॥
সন্ধি, বিগ্রহ, যান, আসন, দ্বৈধীভাব ও সংশ্রয়—এই ছয়গুণ সর্বদা চিন্তা করবেন।
১৬১। আসনঞ্চৈব যানঞ্চ সন্ধিং বিগ্রহমেব চ।
কার্যং বীক্ষ্য প্রযুঞ্জীত দ্বৈধং সংশ্রয়মেব চ॥
আসন, যান, সন্ধি, বিগ্রহ, দ্বৈধ ও সংশয় কাজ বুঝে প্রয়োগ করবেন।
১৬২। সন্ধিন্তু দ্বিবিধং বিদ্যাদ্ৰাজা বিগ্রহমেব চ।
উভে যানাসনে চৈব দ্বিবিধঃ সংশ্রয়ঃ স্মৃতঃ ॥
সন্ধি, বিগ্রহ, যান, আসন ও সংশ্রয়—এর প্রতিটি দুই প্রকার।
১৬৩। সমানযানকর্মা চ বিপরীতস্তথৈব চ।
তদা ত্বায়তিসংযুক্তঃ সন্ধির্ভেয়ো দ্বিলক্ষণঃ ॥
তাৎকালিক ফললাভার্থে বা ভবিষ্যতে ফলপ্রাপ্তির জন্য অন্য রাজার সঙ্গে শত্রুরাজার প্রতি মানাদিবিষয়ক সন্ধি সমানযানকর্মা বলে কথিত হয়, তাৎকালিক ফল বা ভবিষ্যতে ফলার্থী হয়ে যে সন্ধি, তার নাম অসমানযানকর্মা ; এইভাবে সন্ধি দুইপ্রকার।
১৬৪। স্বয়ং কৃতশ্চ কাযার্থৰ্মকালে কাল এব বা।
মিত্রস্য চৈবাপকৃতে দ্বিবিধ বিগ্রহঃ স্মৃতঃ ॥
অসময়ে বা সময়ে কার্যসিদ্ধির জন্য স্বয়ংকৃত ও মিত্রের প্রতি রাজান্তরকৃত অপকার হলে (মিত্ররক্ষার জন্য) যুদ্ধ হয় ; (তাই) বিগ্রহ দুই প্রকার।
১৬৫। একাকিনশ্চাত্যয়িকে কার্যে প্রাপ্তে যদৃচ্ছায়া।
সংহতস্য চ মিত্রেণ দ্বিবিধং যানমুচ্যতে ॥
অকস্মাৎ শত্রুর বিপদ দেখে (শক্ত হলে) একাকী যাত্রা করবেন, (অশক্ত হলে) মিত্র রাজার সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবেন। এভাবে যান দুইপ্রকার।
১৬৬। ক্ষীণস্য চৈব ক্রমশো দৈবাৎ পূর্বকৃতেন বা।
মিত্রস্য চানুরোধেন দ্বিবিধং স্মৃতমাসনম্ ॥
পূর্বজন্মকৃত দুষ্কৃতিবশত বা (ইহলোকে) পূর্বকৃত দুষ্কৃতির ফলে এবং মিত্ররাজার অনুরোধে তাঁর কার্যরক্ষাৰ্থ আসন ; এভাবে আসন দ্বিবিধ।
১৬৭। বলস্য স্বামিনশ্চৈব স্থিতিঃ কার্যার্থসিদ্ধয়ে।
দ্বিবিধং কীর্ত্যতে দ্বৈধং ষাড্গুণ্যগুণবেদিভিঃ ॥
প্রয়োজনসিদ্ধির জন্য সেনার একস্থানে অবস্থান, (দুর্গদেশে সেনা সহ) স্বয়ং রাজার অবস্থান—ষাড্গুণ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ কর্তৃক এই দুই প্রকার দ্বৈধ কথিত হয়েছে।
১৬৮। অর্থসম্পাদনার্থঞ্চ পীড্যমানস্য শত্ৰুভিঃ।
সাধুষু ব্যপদেশাৰ্থং দ্বিবিধঃ সংশ্রয়ঃ স্মৃতঃ ॥
শত্রুকর্তৃক পীড়িত হয়ে প্রয়োজনসিদ্ধির জন্য অন্য রাজার আশ্রয় বা পীড়ন সম্ভাবনায় অমুক রাজা প্রবল রাজার আশ্রয় নিয়েছেন, সজ্জনগণের মধ্যে এইরূপ ঘোষণার জন্য অন্য রাজার আশ্রয়গ্রহণ—সংশ্রয় এই দুই প্রকার।
১৬৯। যদাবগচ্ছেদায়ত্যামাধিক্যং ধ্রুবমাত্মনঃ।
তদাত্বে চাল্পিকাং পীড়াং তদা সন্ধিং সমায়েৎ ॥
যখন বুঝবেন যে, ভবিষ্যতে নিজের উন্নতি নিশ্চিত ও তৎকালে সামান্য কষ্ট হবে, তখন সন্ধি অবলম্বন করবেন।
১৭০। যদা প্রহৃষ্টা মন্যেত সর্বাস্তু প্রকৃতীৰ্ভৃশম্।
অত্যুচ্ছ্রিতং তথাত্মানং তদা কুর্বীত বিগ্রহম ॥
যখন মনে করবেন, সকল প্রকৃতি অত্যন্ত আনন্দিত এবং নিজে (হস্তী, অশ্ব, কোষাদি এবং উৎসাহ, প্রভু ও মন্ত্র এই তিন শক্তিতে) অতি সমৃদ্ধ, তখন বিগ্রহ করবেন।
১৭১। যদা মন্যেত ভাবেন হৃষ্টং পুষ্টং বলং স্বকম্।
পরস্য বিপরীতঞ্চ তদা যায়দ্রিপুংপ্রতি ॥
যখন বুঝবেন যে নিজের সেনা হৃষ্টপুষ্ট ও শত্রুর বিপরীত ভাব, তখন শত্রুর প্রতি অভিযান করবেন।
১৭২। যদা তু স্যাৎ পরিক্ষীণো বাহনেন বলেন চ।
তদাসীত প্রযত্নেন শনকৈঃ সান্ত্বয়ন্নরীন্ ॥
যখন (নিজের) বাহন ও সেনা অতি ক্ষীণ, তখন সযত্নে ধীরে শত্রুদের (দানাদি দ্বারা) খুশি করে আসন অবলম্বন করবেন।
১৭৩। মন্যেতারিং যদা রাজা সর্বথা বলবত্তরম্।
তদা দ্বিধা বলং কৃত্বা সাধয়েৎ কার্যমাত্মনঃ ॥
যখন রাজা সর্বপ্রকারে শত্রুকে নিজ অপেক্ষা অধিকতর বলশালী বলে মনে করবেন, তখন সেনাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে নিজের কার্য সিদ্ধি করবেন।
১৭৪। যদা পরবলানান্তু গমনীয়তমো ভবেৎ।
তদা তু সংশ্রয়েৎ ক্ষিপ্রং ধার্মিকং বলিনং নৃপম্ ॥
যখন (রাজা) শত্রুসৈন্যকর্তৃক অত্যন্ত পরাজয়যোগ্য হবেন, তখন শীঘ্র ধার্মিক প্রবল রাজার আশ্রয় নিবেন।
১৭৫। নিগ্রহং প্রকৃতীনাঞ্চ কুর্যাদ্যোহরিবলস্য চ।
উপসেবেত তং নিত্যং সর্বত্নৈর্গুরুং যথা ॥
যে (রাজার দুষ্ট) প্রকৃতিদের ও শত্রুসৈন্যের নিগ্রহ করেন, তাকে সর্বদা সর্বপ্রযত্নে গুরুর ন্যায় সেবা করবেন।
১৭৬। যদি তত্রাপি সম্পশ্যেদ্দোষং সংশ্রয়কারিতম্।
সুযুদ্ধমেব তত্রাপি নির্বিশঙ্কঃ সমাচরেৎ ॥
যদি তাতেও সংশ্রয়কৃত দোষ দেখেন, তাহলে নির্ভয়ে প্রচণ্ড যুদ্ধই করবেন।
১৭৭। সর্বোপায়ৈন্তথা কু্র্যান্নীতিজ্ঞঃ পৃথিবীপতিঃ।
যথাস্যাভ্যধিক ন স্যুর্মিত্রোদাসীনশত্রবঃ ॥
নীতিজ্ঞ রাজা সকল প্রকারে এমন ভাবে কাজ করবেন, যাতে তাঁর মিত্র, উদাসীন ও শত্রুগণ প্রবল না হয়।
১৭৮। আয়তিং সর্বকাযাণাং তদাত্বঞ্চ বিচারয়েৎ।
অতীতানাঞ্চ সর্বোং গুণদোষৌ চ তত্ত্বতঃ ॥
সকল কার্যের ভবিষ্যৎ ও তৎকালীন অবস্থা এবং সকল অতীত ব্যাপারের গুণ দোষ যথার্থরূপে বিচার করবেন।
১৭৯। আয়ত্যাং গুণদোষজ্ঞস্তদাত্বে ক্ষিপ্রিনিশ্চয়ঃ।
অতীতে কার্যশেষজ্ঞঃ শত্ৰুভির্নাভিভূয়তে ॥
যিনি ভাবী গুণ ও দোষজ্ঞ এবং বর্তমানে যিনি তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারেন ও অতীত কার্যের অবশিষ্ট সম্বন্ধে জানেন, তিনি শত্রুগণের দ্বারা অভিভূত হন না।
১৮০। যথৈনং নাভিসন্দধ্যর্মিত্রোদাসীনশত্ৰবঃ।
তথা সর্বং সংবিদাধ্যাদেষ সামাসিকো নয়ঃ ॥
যাতে মিত্র, উদাসীন ও শত্রু উৎপীড়ন না করতে পারে, সেইভাবে সকল কাজ করবেন ; এই সংক্ষিপ্ত নীতি।
১৮১। যদা তু যানমাতিষ্ঠেদরিরাষ্ট্রং প্রতি প্রভু।
তদানেন বিধানেন যায়াদবিপুরং শনৈঃ ॥
যখন রাজা শত্রুরাজ্যাভিমুখে অভিযান করবেন, তখন এই নিয়মানুসারে ধীরে শত্রুর নগরের দিকে যাবেন।
১৮২। মার্গশীর্যে শুভে নাসি যায়াদ্যাত্রাং মহীপতিঃ।
ফাল্গুনং বাথ চৈত্রং বা মাসৌ প্রতি যথাবলম্ ॥
শুভ অগ্রহায়ণ মাসে অথবা ফাল্গুনে বা চৈত্রে সৈন্যের যোগ্য কালে রাজা যুদ্ধযাত্রা করবেন।
১৮৩। অনোস্বপি তু কালেষু যদা পশ্যেদ্ ধ্রুবং জয়ম্।
তদা যায়াদ্বিগৃহৈবি ব্যসনে চোথিতে রিপোঃ ॥
অন্য সময়েও যখন জয় নিশ্চিত বুঝবেন, তখন বিগ্রহ (কলহ?) করেই অথবা শত্রুর বিপদ হলে অভিমান করবেন।
১৮৪- কৃত্বা বিধানং মূলে তু যাত্রিকঞ্চ যথাবিধি।
১৮৫। উপগৃহাস্পদঞ্চৈব চাবান্ সমাগ্বিধায় চ ॥
সংশোধ্য ত্রিবিধং মার্গং ষড্বিধঞ্চ বলং স্বকম।
সাম্পরামিককল্পেন যায়াদরিপুরং শনৈঃ ॥
মূলে (অর্থাৎ নিজের দুর্গ ও রাষ্ট্রে) ব্যবস্থা করে, যথাবিধি যাত্রার উপযোগী ব্যবস্থাপূর্বক (শত্রুরাজ্যে অবস্থানোপযোগী) জিনিসপত্র নিয়ে এবং গুপ্তচরদের ঠিকভাবে নিযুক্ত করে, (জাঙ্গল,১২ অনুগ১৩ ও আটবিক। এই তিন প্রকার পথ পরিষ্কার করে, নিজের (হস্তী, অশ্ব, রথ, পদাতি, সেনা ও কর্মকর ভৃত্যদের উপযুক্ত আহারাদি দানে সম্মানিত করে) যুদ্ধশাস্ত্রোক্ত নিয়মানুসারে ধীরে শক্রনগরে যাবেন।
১৮৬। শত্রুসেবিনি মিত্র চ গূড়ে যুক্ততরো ভবেৎ।
গতপ্রত্যাগতে চৈব স হি কষ্টতরো রিপুঃ ॥
গোপনে শত্রুসেবী মিত্রারাজার ও পূর্বে গত পরে প্রত্যাগত ভৃত্যের সম্বন্ধে অতি সাবধান থাকবেন; এরা অতি কষ্টদায়ক শত্রু।
১৮৭। দণ্ডব্যুহেন তন্মার্গং যায়াৎ তু শকটেন বা।
বরাহ-মকরাভ্যাং বা সূচ্যা বা গরুড়েন বা ॥
দণ্ড, শকট, বরাহ, মকর, সূচী বা গরুড় ব্যূহ অবলম্বন করে অভিযান করবেন।
১৮৮। যতশ্চ ভয়মাশঙ্কেৎ ততো বিস্তারয়েদ্বলম্।
পদ্মেন চৈব ব্যূহেন নিবিশেত সদা স্বয়ম্॥
যে দিক থেকে ভয় আশঙ্কা করবেন, সেই দিকে সৈন্য বিস্তার করবেন। (রাজা) নিজে সর্বদা পদ্মব্যূহ অবলম্বন করে থাকবেন।
১৮৯। সেনাপতি বলাধ্যক্ষেী সৰ্বদিক্ষু নিবেশয়েৎ।
যতশ্চ ভয়মাশঙ্কেৎ প্রাচীং তাং কল্পয়েদ্দিশম্ ॥
সেনাপতি ও বাধ্যক্ষকে সকল দিকে নিযুক্ত করবেন। যে দিক থেকে ভয় আশঙ্কা করবেন, সেই দিক্কে সম্মুখে রাখবেন।
১৯০। গুল্মাংশ্চ স্থাপয়েদাপ্তান্ কৃতসংজ্ঞান সমন্ততঃ।
স্থানে যুদ্ধে চ কুশলানভীরূনবিকারিণঃ ॥
বিশ্বস্ত, (ভেরী পটহাদি) সংকেত যারা করে এমন, অবস্থান ও যুদ্ধে কুশল, নির্ভীক ও অধিকারী (অর্থাৎ যাদের রাজার আনুগত্য থেকে মুক্ত করা যায় না। বিশ্বস্ত কিছু সৈন্যকে স্থাপন করবেন।
১৯১। সংহতান্ যোধয়েদল্পান্ কামং বিস্তারয়েদ্বহূন্।
সূচ্যা বজ্রেণ চৈবৈতান্ ব্যূহেন বূহ্য যোধয়েৎ ॥
অল্পসংখ্যক সৈন্যদের সংহত করে যুদ্ধ করাবেন, (অনেক সৈন্যস্থলে) ইচ্ছানুসারে তাদের ছড়িয়ে দিবেন।
১৯২। স্যন্দনাশ্বৈঃ সমে যুধ্যেদনূপে নৌদ্বিপৈস্তথা।
বৃক্ষগুল্মাবৃতে চাপৈসিচর্মায়ূধৈঃ স্থলে ॥
সকল স্থানে রথ ও অশ্বদ্বারা, জলপূর্ণস্থানে নৌকা ও হস্তী দ্বারা, বৃক্ষ ও গুল্মচ্ছাদিত স্থানে ধনুর দ্বারা এবং (গর্ত কণ্টক পাষাণাদি রহিত) স্থলে খড়গফলক কুন্তাদি অস্ত্রের দ্বারা যুদ্ধ করবেন।
১৯৩। কুরুক্ষেত্রাংশ্চ মৎস্যাংশ্চ পঞ্চালান্ শূরসেনজান্।
দীর্ঘান্ লঘুংশ্চৈব নরানগ্রানীকেষু যোজয়েৎ ॥
কুরুক্ষেত্র, মৎস্য, পঞ্চাল ও শূরসেন বাসী দীর্ঘদেহ, অনতিস্থূলদেহ মানুষকে অগ্রসর করে নিযুক্ত করবেন।
১৯৪। প্রহর্ষয়েদ্বলং ব্যূহ্য তাংশ্চ সম্যক্ পরীক্ষয়েৎ।
চেষ্টাশ্চৈব বিজানীয়াদরীন্ যোধয়তামপি ॥
ব্যূহ রচনা করে যুদ্ধরত সৈন্যদের হর্ষোৎপাদন করবেন, তাদের উপযুক্তভাবে পরীক্ষা করাবেন, এবং (তাদের) কার্যকলাপ জানবেন।
১৯৬। ভিন্দ্যাচ্চৈব তড়াগানি প্রকারপরিখাস্তথা।
সমবস্কন্দয়েচ্চৈনং রাত্রৌ বিত্ৰাসয়েৎ তথা ॥
(সেই রাজ্যের) জলাশয়, প্রাকার ও পরিখা ভেদ করবেন, (পরিখা) জলশূন্য করাবেন এবং রাত্রিবেলা শত্রুরাজাকে (ঢাক প্রভৃতি বাজিয়ে) ভয় দেখাবেন।
১৯৭। উপজপ্যানুপজপেদ্ বুধ্যেতৈব চ তৎকৃতম।
যুক্তে চ দৈবে যুধ্যেত জয়প্রেসুরপেতভীঃ॥
(ঐ রাজার) ভেদযোগ্য ব্যক্তিদের (রাজার সঙ্গে) ভেদ করাবেন, তাঁর কার্য জানবেন, দৈব অনুকূল হলে জয়েচ্ছু নির্ভীক রাজা যুদ্ধ করবেন।
১৯৮। সাম্না দানেন ভেদেন সমস্তৈরথবা পৃথক্।
বিজেতুং প্রযতেতারীন্ ন যুদ্ধেন কদাচন ॥
সাম, দান ও ভেদ এইগুলি দ্বারা মিলিত বা পৃথভাবে শক্রকে জয় করতে চেষ্টা করবেন, কখনও (পরাজয় সম্ভাবনায়, নিতান্ত প্রয়োজন না হলে) যুদ্ধ দ্বারা নয়।
১৯৯। অনিত্যো বিজয়ো যস্মাদ্দৃশ্যতে যুধ্যমানয়োঃ।
পরাজয়শ্চ সংগ্রামে তস্মাদ্যুদ্ধং বিবর্জয়েৎ ॥
যুদ্ধকারী দুই পক্ষের জয়লাভ অনিশ্চিত, যুদ্ধে পরাজয়ও (সম্ভব); সুতরাং, যুদ্ধ বর্জন করবেন।
২০০। ত্রয়াণামপ্যুপায়ানাং পূর্বোক্তনামসম্ভবে।
তথা যুধ্যেত সংযত্তো বিজয়েত রিপূন্ যথা ॥
পূর্বোক্ত তিনটি উপায়ে অসম্ভব হলে সযত্নে এমনভাবে যুদ্ধ করবেন, যাতে শত্রুকে জয় করতে পারেন।
২০১। জিত্বা সম্পূজয়েদ্দেবান্ ব্রাহ্মণাংশ্চৈব ধার্মিকান্।
প্রদদ্যাৎ পরিহারাংশ্চ খ্যাপয়েদভয়ানি চ ॥
জয় করে দেবতা ও ধার্মিক ব্রাহ্মণগণের পূজা করবেন, (সেই দেশবাসীকে) পরিহার১৪ দিবেন ও অভয় ঘোষণা করবেন।
২০২। সর্বেষান্তু বিদিতৈষাং সমাসেন চিকীর্ষিতম্।
স্থাপয়েৎ তত্র তদ্বংশ্যং কুর্যাচ্চ সময়ক্রিয়াম্ ॥
(শত্রুরাজার) সকল (অমাত্যাদির) অভিপ্রায় সংক্ষেপে জেনে সেই রাজ্যে সেই বিজিত রাজার) বংশধরকে স্থাপন করবেন ও (অমাত্যাদির জন্য এই করণীয়, এই অকরণীয় এইরূপ) নিয়ম করবেন।
২০৩। প্রমাণানি চ কুর্বীত তেষাং ধর্ম্যান্ যথোদিতান্।
রত্নৈশ্চ পূজয়েদেনং প্রধানপুরুষৈঃ সহ ॥
তাদের পরম্পরাগত আচার শাস্ত্রবিরুদ্ধ না হলে তাকেই (ঐ রাজ্যে) প্রামাণ্য বলে স্থির করবেন এবং (অভিষিক্ত) রাজাকে মুখ্যব্যক্তিগণসহ রত্ন দিয়ে সম্মানিত করবেন।
২০৪। আদানমপ্রিয়করং দানঞ্চ প্রিয়কারকম্।
অভীপ্সিতানামর্থানাং কালে যুক্তং প্রশস্যতে ॥
ঈপ্সিত দ্রব্যের অন্য কর্তৃক গ্রহণ অপ্রিয় (অন্য থেকে প্রাপ্ত) দান প্রিয় ; (কিন্তু) জয়কালে ঈপ্সিত বস্তুর আদান ও দান প্রশংসনীয়।
২০৫। সর্বং কর্মেদমায়ত্তং বিধানে দৈব মানুষে।
তয়োর্দৈবমচিন্ত্যন্তু মানুষে বিদ্যতে ক্রিয়া ॥
এই সমস্ত কর্ম দৈব ও মানুষের অধীন, এই দুইটির মধ্যে দৈব অচিন্তনীয়, মানুষের ব্যাপারে কর্ম দেখা যায় (অর্থাৎ চেষ্টসাধ্য)।
২০৬। সহ বাপি ব্ৰজেদ্যুক্তঃ সন্ধিং কৃত্বা প্রযত্নতঃ।
মিত্রং হিরণ্যং ভূমিং বা সম্পশ্যংস্ত্রিবিধং ফলম্॥
অথবা সন্ধি করে মিত্র, স্বর্ণ ও ভূমি (সন্ধির এই তিন ফললাভ) লক্ষ্য করে প্রস্থান করবেন।
২০৭। পার্ষ্ণিগ্রাহঞ্চ সম্প্রেক্ষ্য তথাক্রদঞ্চ মণ্ডলে।
মিত্রাদথাপ্যমিত্রাদ্বা যাত্ৰাফলমবাপ্নুয়াৎ ॥
রাজমণ্ডলে পাষ্ণিগ্রাহ ও আক্রন্দকে লক্ষ্য করে মিত্র বা শত্রুরাজার থেকে যুদ্ধযাত্রার ফল লাভ করবেন।
২০৮। হিরণ্যভূমিসম্প্রাপ্ত্যা পার্থিবো ন তথৈধতে।
যথা মিত্রং ধ্রুবং লব্ধৃা কৃশমপ্যায়তিক্ষমম্ ॥
সোনা, জমি লাভ করে রাজার তেমন উন্নতি হয় না, যেমন (আপাতত) হীনবল ও ভবিষ্যতে উন্নত স্থির মিত্রকে লাভ করে হয়।
২০৯। ধর্মজ্ঞঞ্চ কৃতজ্ঞঞ্চ তুষ্টপ্রকৃতিমেব চ।
অনুরক্তং স্থিরারম্ভং লঘু মিত্রং প্রশস্যতে ॥
ধার্মিক, কৃতজ্ঞ, যার অমাত্যাদি তুষ্ট এমন, অনুরক্ত, কার্যারম্ভের প্রতি যার স্হিরনিশ্চয় বুদ্ধি, এইরূপ মিত্র প্রশংসিত হয়।
২১০। প্রাজ্ঞং কুলীনং শূরঞ্চ দক্ষং দাতারমেব চ।
কৃতজ্ঞং ধৃতিমন্তঞ্চ কষ্টমাহুররিং বুধাঃ ॥
বিজ্ঞ, উচ্চকুলজাত, বীর, কাৰ্যদক্ষ, দাতা, কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল শত্ৰু কষ্টদায়ক।
২১১। আর্যতা পুরুষজ্ঞানং শৌর্যং করুণবেদিতা।
স্থৌললক্ষ্যঞ্চ সততমুদাসীনগুণোদয়ঃ ॥
সাধু স্বভাব, লোকচরিত্রে অভিজ্ঞতা, বীরত্ব, সদয় ভাব, বহুপ্রদত্ব—এইগুলি সর্বদা উদাসীনের গুণ।
২১২। ক্ষেম্যাং শস্যপ্রদাং নিত্যং পশুবৃদ্ধিকরীমপি।
পরিত্যজেন্নৃপো ভূমিমাত্মার্থমবিচারয়ন্ ॥
আত্মরক্ষার জন্য নির্বিচারে রাজা (উত্তম জলবায়ু ও রোগাভাবাদিহেতু) কল্যাণকর, শস্যশালী, সর্বদা পশুবৃদ্ধিকর, এমন ভূমিও ত্যাগ করবেন।
২১৩। আপদর্থং ধনং রক্ষেদ্দারান্ রক্ষেদ্ধনৈরপি।
আত্মানং সততং রক্ষোরৈরপি ধনৈরপি ॥
আপদকালের জন্য ধন রক্ষা করবেন, স্ত্রীকে ধন দিয়েও রক্ষা করবেন, নিজেকে সর্বদা স্ত্রী ও ধন দিয়েও রক্ষা করবেন।
২১৪। সহ সর্বাঃ সমুংপন্নাঃ প্ৰসমীক্ষ্যাপদো ভৃশম্।
সংযুক্তাংশ্চ বিযুক্তাংশ সর্বোপায়ান্ সৃজেদ্বুধঃ ॥
সকল বিপদকে একসঙ্গে উপস্থিত দেখেও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি (মুহ্যমান হবেন না) ; (সামাদি) উপায়গুলিকে একত্র বা পৃথক্ভাবে প্রয়োগ করবেন।
২১৫। উপেতারমুপেয়ঞ্চ সর্বোপায়াংশ্চ কৃৎস্নশঃ।
এতৎ ত্রয়ং সমাশ্ৰিত্য প্রযতেতার্থসিদ্ধয়ে ॥
উপায় প্রয়োগকারী (রাজা), যার প্রতি উপায় অবলম্বনীয় সে, সবল উপায় এই তিনটি অবলম্বন করে প্রয়োজনসিদ্ধির জন্য চেষ্টা করবেন।
২১৬। এবং সর্বমিদং রাজা সহ সম্মন্ত্র্য মন্ত্রিভিঃ।
ব্যায়ম্যাপ্লুত্য মধ্যাহ্নে ভোক্তুমন্তঃপুরং বিশেৎ॥
রাজা এইভাবে এই সকল বিষয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যায়ামপূর্বক স্নান করে মধ্যাহ্নে ভোজন করতে অন্তঃপুরে যাবেন।
২১৭। তত্রাত্মভূতৈঃ কালজ্ঞৈরহার্যৈঃ পরিচারকৈঃ।
সুপরীক্ষিতমন্নাদ্যমদ্যান্মন্ত্রৈর্বিষ্যপহৈঃ ॥
সেখানে আত্মতুলা, ভোজনকালজ্ঞ, বিশ্বস্ত পরিচারকগণ কর্তৃক উত্তমরূপে পরীক্ষিত অন্নাদি বিষঘ্নমন্ত্রসহ ভক্ষণ করবেন।
২১৮। বিষঘ্নৈরগদৈশ্চাস্য সর্বদ্রব্যাণি যোজায়েৎ।
বিষঘ্নানি চ রত্নানি নিয়তো ধারয়েৎ সদা ॥
বিষনাশক ওষুধ তাঁর সকল (খাদ্য) দ্রব্যে মিশাবেন এবং বিষনাশক রত্ন সযত্নে সর্বদা ধারণ করবেন।
২১৯। পরীক্ষিতাঃ স্ত্রিয়শ্চৈনং ব্যজনোদকধূপনৈঃ।
বেশাভরণসংশুদ্ধাঃ স্পৃশেয়ুঃ সুসমাহিতাঃ ॥
পরীক্ষিত, বেশ ও অলংকারে শুদ্ধ স্ত্রীলোক উত্তমরূপে অতিমনোযোগ সহকারে পাখা, জল ও ধূপ দিয়ে তাঁর পরিচর্যা করবেন।
২২০। এবং প্রযত্নং কুর্বীত যানশয্যাসনাশনে।
স্নানে প্রসাধনে চৈব সর্বালঙ্কারকেষু চ ॥
এইরূপে যানবাহন, শয্যা, আসন, খাদ্য, স্নান, প্রসাধন ও সকল অলংকারে যত্নবান্ হবেন।
২২১। ভুক্তবান্ বিহারেচ্চৈব স্ত্রীভিবন্তঃপুরে সহ।
বিহৃত্য তু যথাকালং পুনঃ কর্মাণি চিত্তয়েৎ ॥
আহার করে স্ত্রীলোকেদের সঙ্গে অন্তঃপুরে বিহার করবেন। বিহার করে যথাসময় পুনরায় কার্য চিন্তা করবেন।
২২২। অলঙ্কৃতশ্চ সম্পশ্যেদায়ুধীয়ং পুনর্জনম্।
বাহনানি চ সড়ড়বাণি শস্ত্রাণ্যাভরণানি চ ॥
অলংকৃত হয়ে অস্ত্রজীবী যোদ্ধাদের, বাহন, সকল অস্ত্র ও অলংকার রচনাদি পরিদর্শন করবেন।
২২৩। সন্ধ্যাঞ্চোপাস্য শৃণুয়ান্তর্বেশ্মনি শস্ত্রভৃৎ।
রহস্যাখ্যায়িনাঞ্চৈব প্রণিধীনাঞ্চ চেষ্টিতম্ ॥
সন্ধ্যা করে গৃহমধ্যে অস্ত্রধারণপূর্বক গুপ্তসংবাদদাতা গুপ্তচরদের ব্যাপার শুনবেন।
২২৪। গত্বা কক্ষান্তরন্ত্বন্যৎ সমনুজ্ঞাপ্য তং জনম্।
প্রবিশেদ্ভোজনার্থংচ স্ত্রীবৃতোহত্ন্তঃপুরং পুনঃ ॥
অন্য কোঠায় গিয়ে সেই লোকদের বিদায় দিয়ে স্ত্রীলোকবেষ্টিত হয়ে ভোজনের জন্য পুনরায় অন্তঃপুরে প্রবেশ করবেন।
২২৫। তত্র ভুক্তা পুনঃ কিঞ্চিৎ তুর্যঘোষৈঃ প্রহর্ষিতঃ।
সংবিশেৎ তু যথাকালমুত্তিষ্ঠেচ্চে গতক্লমঃ ॥
সেখানে কিছু খেয়ে পুনরায় বাদ্যযন্ত্রদ্বারা হৃষ্ট হয়ে যথাসময় শয়ন করবেন এবং ক্লান্তিহীন হয়ে উঠবেন।
২২৬। এতদ্বিধানমাতিষ্ঠেদরোগঃ পৃথিবীপতিঃ।
অস্বস্থঃ সর্বমেতত্তু ভৃতেষু বিনিযোজয়েৎ ॥
সুস্থ রাজা এই নিয়ম পালন করবেন। অসুস্থ রাজা এই সব কাজ ভৃত্যদের দিবেন।
মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় রাজধৰ্মনামক সপ্তম অধ্যায় সমাপ্ত।
পাদটীকা
১শিককাবাবের ন্যায়, শিকে মাছ গেঁথে তাকে অগ্নিতপ্ত করে খাদ্য প্রস্তুত হয়। পাঠান্তরে আছে জলে মৎসানিবাহিংস্যুঃ; জলে যেমন বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে তেমনই প্রবল দুর্বলকে নষ্ট করে ; একে বলে মাৎসান্যায়।
২দ্রঃ ৭। ১৬০
৩কর্মসচিব।
৪ব্রাহ্মণের হাতকে মুখ বলা হয়।
৫ও সাম, দান, ভেদ, দণ্ড।
৬রক্ষকগণ সহ একজন প্রধান পুরুষ যেখানে থাকে তার নাম।
৭ছয় গরু যুক্ত হালের দ্বারা যতটুকু জমি চাষ করা যায়, তার নাম।
৮করাদি গ্রহণ, ভৃত্যাদিকে বেতনাদি দান, দৃষ্টাদৃষ্ট কার্যে মন্ত্রীদের নিয়োগ, বিরুদ্ধ কার্যের নিবারণ, সন্দিগ্ধ বিষয়ে রাজাদেশ নির্ণয়, বিচারদর্শন, বিচারের পরাজিত ব্যক্তির থেকে দণ্ডগ্রহণ, প্রায়শ্চিত্ত।
৯কাপটিক (কপট ছাত্র), উদাস্হিত, গৃহপতিব্যঞ্জন (গৃহস্থের বেশে চর), বৈদেহকব্যঞ্জন, তাপসব্যঞ্জন (কপট তপস্বী) এই পাঁচ প্রকার প্রকার গুপ্তচর।
১০সপ্তম অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ দ্রঃ।
১১শত্রু ও বিজিগীষু রাজার রাজ্যের মধ্যবর্তী রাজা।
১২শব্দকোষ দ্রঃ।
১৩জলপূর্ণস্থান।
১৪ভূমি স্বর্ণাদিদান, সম্মানপ্রদর্শন।