তৃতীয় অধ্যায়
১। ষট্ত্রিংশদাব্দিকং চর্যং গুরৌ ত্রৈবেদিকং ব্ৰতম্।
তদর্ধিকং পাদিকং বা গ্ৰহণান্তিকমেব বা॥
গুরুগৃহে ছত্রিশ বৎসর, তার অর্ধকাল বা পদকাল বেদত্রয় অধ্যয়ন করবে অথবা যতদিনে বেদত্রয় অধ্যয়ন করতে আবশ্যক, তাবৎকাল (গুরুগৃহে অবস্থানপূর্বক অধ্যয়ন করবে)।
২। বেদানধীত্য বেদৌ বা বেদংবাপি যথাক্রমম্।
আবিপ্লুতব্রহ্মচর্যো গৃহস্থাশ্রমমাবসেৎ॥
বেদসমূহ, বেদদ্বয় বা একটি বেদ যথাক্রমে অধ্যয়ন করে অস্খলিতব্রহ্মচর্য ব্যক্তি গৃহস্থাশ্রমে বাস করবে।
৩। তং প্রতীতং স্বধর্মেণ ব্রহ্মদায়হরং পিতউঃ।
স্রগ্বিণং তল্প আসীনমর্হয়েৎ প্রথমং গবা॥
স্বধর্মানুষ্ঠানে প্রখ্যাত, পিতার নিকট অধীতবেদ, মাল্যভূষিত ও উৎকৃষ্ট শয়নে উপবিষ্ট সেই ব্রহ্মচারীকে প্রথমে (অর্থাৎ বিবাহের পূর্বে, পিতা বা আচার্য) গাভীযুক্ত মধুপর্কদ্বারা পূজা করবে।
৪। গুরুণানুমতঃ স্নাত্বা সমাবৃতো যথাবিধি।
উদ্বহেত দ্বিজো ভার্যাং সবর্ণাং লক্ষণান্বিতাম্॥
শুরু কর্তৃক অনুজ্ঞাত দ্বিজ স্নানপুর্বক যথাবিধি সমাবর্তন করে সুলক্ষণযুক্ত সবর্ণ কন্যাকে বিবাহ করবে।
৫। অসপিণ্ডা চ যা মাতুরসগোত্ৰা চ যা পিতুঃ।
সা প্রশস্তা দ্বিজাতীনাং দারকর্মণি মৈথুনে॥
যে কন্যা মাতার সপিণ্ড বা পিতার সগোত্র নয়, সে দ্বিজের বিবাহে এবং মৈথুনে১ প্রশস্ত।
৬। মহান্ত্যপি সমৃদ্ধানি গোহজাবিধনধান্যতঃ।
স্ত্রীসম্বন্ধে দশৈতানি কুলানি পরিবর্জয়েৎ॥
বিবাহবিষয়ে এই (নিম্নলিখিত) দশটি বংশ মহৎ, গাভী, ছাগ এবং মেষ, ধন ও ধান্যে সমৃদ্ধ হলেও বর্জন করবে।
৭। হীনক্রিয়ং নিষ্পুরুষং নিশ্ছন্দো রোমশার্শসম্।
ক্ষয্যাময়াব্যপস্মারি-শ্বিত্রি-কুষ্ঠি কুলানি চ॥
হীনক্রিয়, পুরুষসন্তানহীন, বেদাধ্যয়নরহিত, বহু লোমযুক্ত, অর্শ, যক্ষ্মা, মন্দাগ্নি, অপম্পার, শ্বিত্র বা কুষ্ঠরোগ গ্রস্ত ব্যক্তিদের বংশও (বর্জন করবে)।
৮- নোদ্বহেৎ কপিলাং কন্যাং নাধিকাঙ্গীং ন রোগিণীম্।
৯। নালোমিকাং নাতিলোমাং ন বাচাটাং ন পিঙ্গলাম্॥
র্নক্ষবৃক্ষ নদীনাম্নীং নান্ত্যপর্বতনামিকাম্।
ন পক্ষ্যহিপ্ৰেয্যনাম্নীং ন চ ভীষণনামিকাম্॥
কপিলবর্ণা, অধিকাঙ্গবিশিষ্টা, রোগগ্রস্তা, লোমহীনা, অধিকলোমবিশিষ্টা, বাচাল, পিঙ্গলবর্ণা, নক্ষত্র, বৃক্ষ, নদী, পর্বত, পক্ষী, সর্প, দাস—এইগুলির নামধারিণী এবং ভীতিজনক নামযুক্তা কন্যাকে বিবাহ করবে না।
১০। অব্যঙ্গাঙ্গীং সৌম্যনাম্নীং হংসবারণগামিনীম্।
তনুলোমকেশদশনাং মৃদ্বঙ্গীমুদ্বহেৎ স্ত্রিয়ম্॥
যে অঙ্গহীন নয়, যার নাম সুখে উচ্চাৰ্য, যে হংসগতি বা গজগামিনী, যার লোম ও কেশ কোমল, দত্ত ক্ষুদ্র, অঙ্গ মৃদু, সেই স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে।
১১। যস্যাস্তু ন ভবেদ্ভ্রাতা ন বিজ্ঞায়েত বা পিতা।
নোপযচ্ছেত তাং প্রাজ্ঞঃ পুত্রিকাধমর্শঙ্কয়া॥
যে কন্যার ভ্রাতা নেই বা পিতা অজ্ঞাত, বিজ্ঞব্যক্তি পত্রিকা২ ধর্মশঙ্কায় তাকে বিবাহ করবে না।
১২। সবর্ণাগ্রে দ্বিজাতীনাং প্রশস্তা দারকর্মণি।
কামতস্তু প্রবৃত্তানামিমাঃ স্যুঃ ক্রমশো বরাঃ॥
দ্বিজগণের প্রথম বিবাহে সবর্ণা কন্যা প্রশস্তা। কামবশে বিবাহে প্রবৃত্ত ব্যক্তিগণের এই (বক্ষ্যমাণ) কন্যাগণ যথাক্রমে শ্রেয়।
১৩। শূদ্রৈব ভার্যা শূদ্রস্য সা চ স্বা চ বিশঃ স্মৃতে।
তে চ স্বা চৈব রাজ্ঞঃ স্যুস্তাশ্চ স্বা চাগ্রজন্মনঃ॥
শূদ্রাই শূদ্রের স্ত্রী হয়। শূদ্রা এবং বৈশ্যা বৈশ্যের স্ত্রী হতে পারে। শূদ্রা, বৈশ্যা ও ক্ষত্রিয়া ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী হতে পারে। ঐ তিন বর্ণের ও ব্রাহ্মণ বর্ণের স্ত্রী ব্রাহ্মণের হতে পারে।
১৪। ন ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়য়োরাপদ্যপি হি তিষ্ঠতোঃ।
কস্মিংশ্চিদপি বৃত্তান্তে শূদ্রা ভার্যোপদিশ্যতে॥
কোন (ইতিহাসাদি) বৃত্তান্তে ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়ের পক্ষে বিপদ্কালেও শূদ্রা স্ত্রী উপদিষ্ট হয় নি।
১৫। হীনজাতিস্ত্রিয়ং মোহাদুদ্বন্তো দ্বিজাতয়ঃ।
কুলান্যেব নয়ন্ত্যাশু সসস্তানানি শূদ্ৰতাম্॥
দ্বিজগণ মোহবশে হীনজাতির স্ত্রীকে বিবাহ করে নিজেদের বংশকে সন্তান সহ শীঘ্রই শূদ্রত্ব প্রাপ্ত করেন।
১৬। শূদ্ৰাবেদী পতত্যত্রেরুতথ্যতনয়স্য চ।
শৌনকস্য সুতোৎপত্ত্যা তদপত্যতয়া ভৃগোঃ॥
অত্রি উতথ্যপুত্র (গৌতমের) মতে, শূদ্রা স্ত্রী বিবাহ করলে (ব্রাহ্মণাদি দ্বিজ) পতিত হত। শৌনকের মতে (শূদ্রা বিবাহ করে তাতে) সন্তান জন্ম হলে (পতিত হয়), ভৃগুর মতে শূদ্রা স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের সন্তান হলে পতিত হয়।
১৭। শূদ্রাং শয়নমারোপ্য ব্রাহ্মণো যাত্যধোগতিম্।
জনয়িত্বা সুতং তস্যাং ব্রাহ্মণ্যাদেব হীয়তে॥
ব্রাহ্মণ শূদ্রাকে শয্যায় নিলে অধোগতি প্রাপ্ত হন; তাতে পুত্রোৎপাদন করলে ব্রাহ্মণ্য থেকেই ভ্রষ্ট হন।
১৮। দৈবপিত্র্যাতিথেয়ানি তৎপ্রধানানি যস্য তু।
নাশ্নত্তি পিতৃদেবাস্তং ন চ স্বৰ্গং স গচ্ছতি॥
যার (যে ব্রাহ্মণের) দৈব, পিত্র্য ও আতিথ্য কার্য প্রধানতঃ শূদ্রা স্ত্রী কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তাঁর (প্রদত্ত কব্য হবা) পিতৃগণ ও দেবগণ গ্রহণ করেন না এবং তিনি স্বর্গে গমন করেন না।
১৯। বৃষলীফেনপীতস্য নিঃশ্বসোপহতস্য চ।
তস্যাঞ্চৈব প্রসূতস্য নিষ্কৃতি র্ন বিধীয়তে॥
যে ব্রাহ্মণ শূদ্রার অধররস পান করেন, তার নিঃশ্বাসক্লিষ্ট হন এবং তাতে সন্তান উৎপাদন করেন, তাঁর শুদ্ধি হয় না।
২০। চতুর্ণামপি বর্ণানাং প্ৰেত্য চেহ হিতাহিতান্।
অষ্টাবিমান্ সমাসেন স্ত্রীবিবাহান্ নিবোধত॥
চার বর্ণেরই ইহলোক ও পরলোকের হিত ও অহিতকর এই (বক্ষ্যমাণ) অষ্ট প্রকার বিবাহ শুনুন।
২১। ব্রাহ্মো দৈবস্তথৈবার্ষঃ প্রাজাপত্যস্তথাসুরঃ।
গান্ধর্বো রাক্ষসশ্চৈব পৈশাচশ্চাষ্টমোহধমঃ॥
ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও অধম পৈশাচ অষ্টম প্রকার বিবাহ।
২২। যো যস্য ধর্ম্যো বর্ণস্য গুণদোষৌ চ যস্য যৌ।
তদ্বঃ সর্বং প্রবক্ষ্যামি প্রসবে চ গুণাগুণান্॥
যে বর্ণের যে বিবাহ ধর্মসম্মত, যে বিবাহের যা গুণ দোষ এবং যে বিবাহে সন্তানপ্রসবে যে গুণ দোষ হয়, তা সব আপনাদের বলব।
২৩। ষড়ানুপূর্ব্যা বিপ্রস্য ক্ষত্রস্য চতুরোহবরান্।
বিট্শূদ্রয়োস্তু তানেব বিদ্যাদ্ধর্ম্যানরাক্ষসান্॥
যথাক্রমে প্রথম ছয়টি ব্রাহ্মণের, ক্ষত্রিয়ের পক্ষে চারটি (আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ), বৈশ্য ও শূদ্রের পক্ষে রাক্ষস ভিন্ন (ক্ষত্রিয়ের জন্য বিহিত) এইগুলিই ধর্মসম্মত।
২৪। চতুরো ব্রাহ্মণস্যাদ্যান্ প্রশস্তান্ কবয়ো বিদুঃ।
রাক্ষসং ক্ষত্রিয়স্যৈকমাসুরং বৈশ্যশূদ্রয়োঃ॥
ব্রাহ্মণের পক্ষে প্রথম চার প্রকার, ক্ষত্রিয়ের একমাত্র রাক্ষস এবং বৈশ্য ও শূদ্রের আসুর প্রশস্ত বলে পণ্ডিতগণ বলেন।
২৫। পঞ্চানান্তু এয়ো ধর্ম্যা দ্বাবধর্মৌ স্মৃতাবিহ।
পৈশাচশ্চাসুরশ্চৈব ন কর্তব্যৌ কদাচন॥
এই শাস্ত্রে প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ এই পাঁচ প্রকার বিবাহের মধ্যে (প্রথম) তিনটি ধর্মসম্মত, দুইটি অধর্মীয়। পৈশাচ ও আসুর বিবাহ কখনও করা উচিত নয়।
২৬। পৃথক্ পৃথগ্ বা মিশ্রৌ বা বিবাহৌ পূর্বচোদিতৌ।
গান্ধর্বৌ রাক্ষসশ্চৈব ধর্ম্যৌ ক্ষত্রস্য তৌ স্মৃতৌ॥
পূর্বোক্ত গান্ধর্ব ও রাক্ষস বিবাহ পৃথক্ পৃথক্ বা মিশ্রিত৩ ভাবে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে ধর্মসম্মত বলে জ্ঞাত।
২৭। আচ্ছাদ্য চার্চয়িত্ব চ শ্রুতিশীলবতে স্বয়ম্।
আহৃয় দানং কন্যায়া ব্রাহ্মো ধর্মঃ প্রকীর্তিতঃ॥
বিদ্বান্ ও চরিত্রবান্ ব্যক্তিকে নিজে আহ্বান করে, তাকে বস্ত্রাদি দ্বারা আচ্ছাদিত করে ও সম্মানিত করে কন্যাদান ব্রাহ্ম বিবাহ বলা হয়।
২৮। যজ্ঞে তু বিততে সমাগৃত্বিজে কর্ম কুর্বতে।
অলঙ্কৃত্য সুতাদানং দৈবং ধর্মং প্রচক্ষতে॥
যজ্ঞারম্ভকালে যজ্ঞকর্মরত পুরোহিতের নিকট অলংকৃতা কন্যার উপযুক্তরূপে দানকে দৈব বিবাহ বলে।
২৯। একং গোমিথুনং দ্বে বা বরাদাদায় ধর্মতঃ।
কন্যাপ্রদানং বিধিবদার্ষো ধর্মঃ স উচ্যতে॥
একটি বা দুইটি গেমিথুন৪ বর থেকে ধর্মার্থে নিয়ে তাকে যথাবিধি কন্যাদান আর্য বিবাহ বলে কথিত।
৩০। সহোভৌ চরতাং ধর্মমিতি বাচানুভাষ্য চ।
কন্যাপ্রদানমভার্চ্য প্রাজাপত্যো বিধিঃ স্মৃতঃ॥
‘তোমরা দুইজনে একত্র হয়ে ধর্মাচরণ কর’—এই বলে বরকে অর্চনা করে তাকে কন্যাদান প্রাজাপত্য বিবাহ নামে কথিত।
৩১। জ্ঞাতিভ্যো দ্রবিণং দত্বা কন্যায়ৈ চৈব শক্তিতঃ।
কন্যাপ্রদানং স্বাচ্ছন্দ্যাদাসুরো ধর্ম উচ্যতে॥
(কন্যার পিত্রাদি) জ্ঞাতিদের এবং কন্যাকে যথাশক্তি ধন দিয়ে স্বেচ্ছানুসারে কন্যাগ্রহণ আসুর বিবাহ নামে কথিত।
৩২। ইচ্ছয়ান্যোন্যসংযোগঃ কন্যায়াশ্চ বরস্য চ।
গান্ধর্বঃ স তু বিজ্ঞেয়ো মৈথুন্যঃ কামসম্ভবঃ॥
কন্যা ও বরের ইচ্ছানুসারে পরস্পর মিলন গান্ধর্ব নামে জ্ঞেয়; এই বিবাহ কামবশে মৈথুনেচ্ছায় ঘটে।
৩৩। হত্বা চ্ছিত্ত্বা চ ভিত্ত্বা চ ক্রোশন্তীং রুদতীং গৃহাৎ।
প্রসহ্য কন্যাহরণং রাক্ষসো বিধিরুচ্যতে॥
(বিরুদ্ধ কন্যাপক্ষীয় ব্যক্তিগণকে) হত্যা বা আঘাত করে, তাদের অঙ্গচ্ছেদ করে এবং (প্রাচীরাদি) ভেদ করে চিৎকার ও রোদনকারিণী কন্যার বলপূর্বক হরণ রাক্ষস বিবাহ নামে কথিত।
৩৪। সুপ্তাং মত্তাং প্রমত্তাং বা রহো যত্ৰোপগচ্ছতি।
স পাপিষ্ঠো বিবাহানাং পৈশাচশ্চষ্টমোহধমঃ॥
নিদ্রিতা, মদ্যপানে বিহুলা বা প্রমত্তা (চরিত্ররক্ষণে অক্ষমা) কন্যাকে নির্জনে সম্ভোগ করলে সর্বাধিক পাপজনক ও নিকৃষ্টতম অষ্টম প্রকার বিবাহ পৈশাচ নামে কথিত হয়।
৩৫। অদ্ভিরেব দ্বিজাগ্ৰাণাং কন্যাদানং বিশিষ্যতে।
ইতরেষান্তু বর্ণানামিতরেতরকাম্যয়া॥
ব্রাহ্মণদের কন্যাদান জল দ্বারাই প্রশস্ত। অন্য বর্ণদের পক্ষে পরস্পরের ইচ্ছায় শুধু বাগ্দান দ্বারাই হতে পারে।
৩৬। যো যস্যৈষাং বিবাহানাং মনুনা কীৰ্ত্তিতো গুণঃ।
সর্বং শৃণূত তং বিপ্রাঃ সম্যক্ কীর্তয়তো মম॥
হে ব্রাহ্মণগণ, এইগুলির মধ্যে যে বিবাহের যে গুণ মনু কর্তৃক উক্ত হয়েছে, সেই সব আমি সম্যক্রূপে বলছি, শুনুন।
৩৭। দশ পূর্বান্ পরান্ বংশ্যানাত্মানঞ্চৈকবিংশকম্।
ব্রাহ্মীপুত্রঃ সুকৃতকৃন্মোচরত্যেনসঃ পিতৃন্॥
ব্রাহ্ম বিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীর পূণ্যবান্ পুত্র ঊর্ধ্বতন দশ, অধস্তন দশ পুরুষ ও নিজেকে—এই একুশ পুরুষকে পাপমুক্ত করে।
৩৮। দৈবোঢ়াজঃ সুতশ্চৈব সপ্ত সপ্ত পরাবরান্।
আর্ষোঢ়াজঃ সুতন্ত্রীংস্ত্রীন ষট্ ষট্ কায়োঢ়জঃ সুতঃ॥
দৈব বিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীর পুত্র ঊর্ধ্বতন সাত ও অধস্তন সাত পুরুষ, আর্ষমতে বিবাহিতা স্ত্রীর পুত্র তিন তিন ও প্রাজাপত্যবিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীর পুত্র ছয় ছয় পুরুষ (পাপমুক্ত করে)।
৩৯। ব্রাহ্মাদিষু বিবাহেষু চতু্র্স্বেবানুপূর্বশঃ।
ব্রহ্মবৰ্চনিঃ পুত্ৰা জায়ন্তে শিষ্টসম্মতাঃ॥
ব্রাহ্মাদি পর পর চার প্রকার বিবাহে সজ্জনের মান্য ও বেদাধ্যয়নজনিত তেজস্বী পুত্র জন্মে।
৪০। রূপসত্ত্বগুণোপেতা ধনবন্তো যশস্বিনঃ।
পর্যাপ্তভোগা ধর্মিষ্ঠা জীবন্তি চ শতং সমাঃ॥
রূপ, সত্বগুণ, ধন, যশ ও প্রচুর ভোগের অধিকারী ও ধার্মিক হয়ে শতবর্ষ জীবিত থাকে।
৪১। ইতরেষু তু শিষ্টেষূ নৃশংসানৃতবাদিনঃ।
জয়ন্তে দুর্বিবাহেষু ব্ৰহ্মধর্মদ্বিষঃ সুতাঃ॥
অবশিষ্ট নিকৃষ্ট বিবাহগুলিতে নিষ্ঠুর, মিথ্যাবাদী এবং বেদ ও যাগাদির প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন পুত্র জন্মে।
৪২। অনিন্দিতৈঃ স্ত্রী বিবাহৈরনিন্দ্যা ভবতি প্রজা।
নিন্দিতৈর্নিন্দিতা নৃণাং তস্মান্নিন্দ্যান্ বিবর্জয়েৎ॥
অনিন্দিত বিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীতে অনিন্দনীয় সন্তান জন্মে। নিন্দিত বিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীতে মানুষের নিন্দিত সন্তান জন্মে। সুতরাং, নিন্দনীয় বিবাহগুলি বর্জন করবে।
৪৩। পাণিগ্রহণসংস্কারঃ সবর্ণাসূপদিশ্যতে।
অসবর্ণাস্বয়ং জ্ঞেয়ো বিধিরুদ্বাহকর্মণি॥
সবর্ণা স্ত্রীতে পাণিগ্রহণসংস্কার উপদিষ্ট হয়। অসবর্ণা স্ত্রীর পক্ষে এই (বহ্ম্যমাণ) বিবাহবিধি জ্ঞাতব্য।
৪৪। শরঃ ক্ষত্রিয়য়া গ্রাহ্যঃ প্রতোদো বৈশ্যকন্যয়া।
বসনস্য দশা গ্রাহ্যা শূদ্রয়োৎকৃষ্টবেদনে॥
ক্ষত্রিয়া শর, বৈশ্যকন্যা প্রতোদ (গোতাড়ন-যষ্টি), (ব্রাহ্মণাদি) উৎকৃষ্ট (বর্ণত্রয় কর্তৃক বিবাহে) শূদ্রা (ব্রাহ্মণাদির) প্রাবৃত বস্ত্রের প্রান্তভাগ ধারণ করবে।
৪৫। ঋতুকালাভিগামী স্যাৎ স্বদারনিরতঃ সদা।
পর্ববর্জং ব্রজেচ্চৈনাং তদ্ব্রতো রতিকাম্যয়া॥
(গৃহস্থ) নিজের স্ত্রীর প্রতি সর্বদা অনুরক্ত হয়ে ঋতুকালে স্ত্রীসম্ভোগ করবেন; স্ত্রীর প্রতি প্রতিমান্ ব্যক্তি (অমাবস্যাদি) পর্ব বাদে রতিকামনায় (অন্য সময়েও) দারগমন করবেন।
৪৬। ঋতুঃ স্বাভাবিকঃ স্ত্রীণাং রাত্রয়ঃ ষোড়শ স্মৃতাঃ।
চতুর্ভিরিতরৈঃ সাৰ্দ্ধমহেভিঃ সদ্বিগর্হিতৈঃ॥
(শোণিতস্রাবযুক্ত), সজ্জনকর্তৃক (সম্ভোগে) নিন্দিত চার অহোরাত্র সহিত ষোল রাত্রি স্ত্রীলোকের স্বাভাবিক ঋতুকাল।
৪৭। তাসামাদ্যাশ্চতস্রস্তু নিন্দিতৈকাদশী চ যা।
ত্রয়োদশীচ শেষাস্তু প্রশস্তা দশ রাত্রয়ঃ।
ঐ রাত্রিগুলির মধ্যে প্রথম চার রাত্রি, একাদশ ও ত্রয়োদশ রাত্রি নিন্দিত; অবশিষ্ট দশ রাত্রি প্রশস্ত।
৪৮। যুগ্মাসু পুত্ৰা জায়ন্তে স্ত্রিয়োহযুগ্মাসু রাত্রিষু।
তস্মাদ্ যুগ্মাসু পুত্ৰার্থী সংবিশেদার্তবে স্ক্রিয়ম্॥
(পূর্বোক্ত দশ রাত্রির মধ্যে) যুগ্ম রাত্রিতে পুত্র ও অযুগ্ম রাত্রিতে কন্যা জন্মে। সুতরাং, পুত্রকামী ব্যক্তি ঋতুকালে যুগ্মদিনে দারগমন করবে।
৪৯। পুমান্ পুংসোহধিকে শুক্রে স্ত্রী ভবত্যধিকে স্ত্রিয়াঃ।
সমেহপুমান্ পুংস্ক্রিয়ৌ বা ক্ষীণেহল্পে চ বিপর্যয়ঃ॥
পুরুষের শুক্রাধিক্যে পুত্র ও স্ত্রীর শুক্ৰাধিক্যে কন্যা জন্মে (উভয়ের) শুক্র সমান হলে নপুংসক বা যমজ পুত্র কন্যা হয়। উভয়ের শুক্র ক্ষীণ বা অল্প হলে গর্ভ হয় না।
৫০। নিন্দ্যাস্বষ্টাসু চান্যাসু স্ত্রিয়ো রাত্ৰিষু বর্জয়ন্।
ব্রহ্মচার্যেব ভবতি যত্র তত্রাশ্রমে বসন্॥
যিনি (পূর্বোক্ত) নিন্দিত ছয় রাত্রি ও তা ছাড়া অনিন্দিত আট রাত্রিতে স্ত্রী সম্ভোগ বর্জন করে (অবশিষ্ট দুই রাত্রিতে দারগমন করেন), তিনি যে কোন আশ্রমে বাস করে ব্রহ্মচারী হন।
৫১। ন কন্যায়াঃ পিতা বিদ্বান্ গৃহ্নীয়াচ্ছুল্কমন্বপি।
গৃহ্নন্ শুল্কং হি লোভেন স্যান্নরোহপত্যবিক্রয়ী॥
কন্যার বিজ্ঞ পিতা সামান্য শুল্কও গ্রহণ করবেন না। লোভবশে শুল্ক গ্রহণ করে মানুষ অপত্যবিক্রয়ী হয়।
৫২। স্ত্রীধনানি তু যে মোহাদুপজীবন্তি বান্ধবাঃ।
নারী যানানি বস্ত্রং বা তে পাপা যাস্ত্যধোগতিম্॥
(স্ত্রীলোকের পতি পিতা প্রভৃতি) যে বান্ধবগণ মোহবশে স্ত্রীধন, স্ত্রীলোকের দাসী, (অশ্বদি) যান বা বস্ত্র ব্যবহার করেন, সেই পাপী ব্যক্তিগণ অধোগতি প্রাপ্ত হন।
৫৩। আর্ষে গোমিথুনং শুল্কং কেচিদাহুর্মৃষৈব তৎ।
অল্পোহপ্যেবং মহান্ বাপি বিক্রয়স্তাবদেব সঃ॥
আর্ষবিবাহে যে গোমিথুন (বিহিত), তাকে কেউ কেউ শুল্ক বলেন, তা মিথ্যা কথা। শুল্ক অল্পই হোক বা অধিকই হোক, তার গ্রহণে বিক্রয়ই হয়।
৫৪। যাসাং নাদদতে শুল্কং জ্ঞাতয়ো ন স বিক্রয়ঃ।
অর্হণং তৎ কুমারী ণামানৃশংস্যঞ্চ কেবলম্ ॥
যে কন্যাদের জ্ঞাতিগণ শুল্ক গ্রহণ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে বিক্রয় হয় না। (বরপক্ষ কন্যাকে প্রীতিপূর্বক যে ধন দান করে, কন্যার পিত্রাদি সেই ধন নিজেরা না নিয়ে কন্যাকে দিলে তাকে বিক্রয় বলা যায় না), তা কেবল কুমারীদের পুজন ও প্রীতিদান।
৫৫। পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্তথা।
পূজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণমীপ্সুভিঃ ॥
বহু কল্যাণকামী পিতা, ভ্রাতা, পতি, দেবর কর্তৃক কন্যা সম্মাননীয়া ও ভূষণীয়া।
৫৬। যত্র নার্যস্ত্ত পূজ্যন্তে রমস্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্ৰাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥
যেখানে নারীগণ সম্মানিত হন, সেখানে দেবগণ প্রীত হন। যেখানে এঁরা সম্মানিত হন না, সেখানে সকল কর্ম নিষ্ফল হয়।
৫৭। শোচন্তি জাময়ো যত্র বিনশাত্যাশু তৎকুলম্।
ন শোচন্তি তু যত্রৈতা বর্ধতে তদ্ধি সর্বদা ॥
জামিগণ (ভগিনী, পত্নী, কন্যা, ভ্রাতৃবধু প্রভৃতি) যেখানে দুঃখ করেন, সেই বংশ শীঘ্র বিনষ্ট হয়। যেখানে এঁরা দুঃখ করেন না, সেই বংশ সর্বদা উন্নতিলাভ করে।
৫৮। জাময়ো যানি গেহানি শপন্ত্যপ্রতিপূজিতাঃ।
তানি কৃত্যাহতানীব বিনশ্যন্তি সমন্ততঃ ॥
জামিগণ অসম্মানিত হয়ে যে গৃহসমুহকে শাপ দেন, সেই গৃহসকল অভিচারহতের ন্যায় সব দিকে বিনষ্ট হয়।
৫৯। তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ।
ভূতিকামর্নরৈর্নিত্যং সৎকারেষুৎসবেষু চ ॥
অতএব উন্নতিকামী ব্যক্তিগণ কর্তৃক এঁরা অলংকার, বস্ত্র ও ভোজ্য দ্বারা সর্বদা উৎসবাদিতে পূজনীয়া।
৬০। সন্তুষ্টো ভার্যয়া ভর্তা ভর্ত্রা ভার্যা তথৈব চ।
যস্মিন্নেব কুলে নিত্যং কল্যাণং তত্র বৈ ধ্রুবম্ ॥
যে কুলে স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে, স্ত্রী স্বামীকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, সেই কুলে সর্বদা নিশ্চয়ই কল্যাণ হয়।
৬১। যদি হি স্ত্রী ন রোচেত পুমাংসং ন প্রমোদয়েৎ।
অপ্রমোদাৎ পুনঃ পুংসঃ প্রজনং ন প্রবর্ততে ॥
যদি স্ত্রী (বস্ত্রাভরণাদি দ্বারা) দীপ্তিমতী না হন, তাহলে পুরুষকে আনন্দিত করতে পারেন না। পুরুষ আনন্দিত না হলে সন্তানজন্ম হয় না।
৬২। স্ত্রিয়ান্তু রোচমানায়াং সর্বমেব তদ্ৰোচতে কুলম্।
তস্যাণ্ত্ত্বরোচমানায়াং সর্বমেব ন রোচতে ॥
স্ত্রীলোক দীপ্তিমতী হলে সেই সমগ্র কুল কাস্তিমান্ হয়। তিনি দীপ্তিমতী না হলে সবই দীপ্তিহীন হয়।
৬৩। কুবিবাহৈঃ ক্রিয়ালোপৈর্বেদানধ্যয়নেন চ।
কুলান্যকুলতাং যান্তি ব্রাহ্মণাতিক্রমেণ চ ॥
মন্দ বিবাহ, (জাতকমাদি) ক্রিয়ার লোপ, বেদপাঠের অভাব ও ব্রাহ্মণের অবমাননা হেতু কুল অকুলে পরিণত হয়।
৬৪- শিল্পেন ব্যবহারেণ শুদ্ৰাপত্যৈশ্চ কেবলৈঃ।
৬৫। গোভিরশ্বৈশ্চ যানৈশ্চ কৃষ্যা রাজোপসেবয়া ॥
অযাজ্যযাজনৈশ্চৈব নাস্তিক্যেন চ কর্মণাম্।
কুলান্যাশু বিনশ্যন্তি যানি হীনানি মন্ত্ৰতঃ ॥
(চিত্রকর্মাদি) শিল্প, সুদে টাকা ধার দেওয়া, কেবল শুদ্ৰাগৰ্ভজাত সন্তান, গে, অশ্ব ও যানের ক্রয় বিক্রয়াদি, কৃষিকর্ম, রাজসেবা, যাজনের অযোগ্য (ব্রাত্যাদির) যাজন, (শ্রৌতস্মার্ত) কর্মের প্রতি নাস্তিক্যবুদ্ধি ও বেদের অনধ্যয়ন হেতু কুল নষ্ট হয়।
৬৬। মন্ত্ৰতস্তু সমৃদ্ধানি কুলান্যল্পধনান্যপি।
কুলসঙ্খ্যাঞ্চ গচ্ছন্তি কর্ষন্তি চ মহাদ্যশঃ ॥
অল্প ধনসম্পন্ন বংশসমূহও বেদে সমৃদ্ধ হলে (অর্থাৎ বেদাধ্যয়ন, বেদজ্ঞান ও বৈদিক কর্মের অনুষ্ঠানযুক্ত হলে) উৎকৃষ্ট কুলগণনায় পরিগণিত হয় ও মহাকীর্তি লাভ করে।
৬৭। বৈবাহিকেহগ্নৌ কুর্বীত গৃহ্যং কর্ম যথাবিধি।
পঞ্চযজ্ঞবিধানঞ্চ পক্তিঞ্চান্বাহিকীং গৃহী॥
গৃহস্থ বিবাহবিহিত অগিতে যথাবিধি গৃহ্যসূত্রোক্ত ক্রিয়া, পঞ্চ মহাযজ্ঞের অন্তর্গত (বৈশ্বদেবাদির) অনুষ্ঠান ও প্রতিদিন সম্পাদ্য পাকক্রিয়া করবেন।
৬৮। পঞ্চসুনা গৃহস্থস্য চুল্লী পেষণ্যুপস্করঃ।
কণ্ডনী চোদকুম্ভশ্চ বধ্যতে যাস্তু বাহয়ন্ ॥
গৃহস্থের সুনা (হিংসাস্থান) পাঁচটি—চুল্লী, শিলনোড়া, সংমার্জনী, উদৃখল মুষল ও জলকুম্ভ, যেগুলিকে নিজকার্যে প্রয়োগ করে (গৃহস্থ) পাপযুক্ত হয়।
৬৯। তাসাং ক্রমেণ সর্বাসাং নিষ্কৃতার্থং মহর্ষিভিঃ।
পঞ্চ ক্লপ্তা মহাযজ্ঞাঃ প্রত্যহং গৃহমেধিনাম্ ॥
যথাক্রমে ঐগুলি থেকে উদ্ভূত সব পাপের থেকে মুক্তির জন্য মহর্ষিগণ কর্তৃক গৃহস্থদের জন্য প্রতিদিন পাঁচটি মহাযজ্ঞ বিহিত হয়েছে।
৭০। অধ্যাপনং ব্ৰহ্মযজ্ঞঃ পিতৃযজ্ঞস্তু তর্পণম্।
হোমো দৈবো বলির্ভৌতো নৃযজ্ঞোহতিথিপূজনম্ ॥
অধ্যাপনা ব্রহ্মযজ্ঞ, তর্পণ পিতৃযজ্ঞ, হোম দেবযজ্ঞ, অতিথিপূজা নৃযজ্ঞ।
৭১। পঞ্চৈতান্ যো মহাযজ্ঞান্ ন হাপয়তি শক্তিতঃ।
স গৃহেহপি বসন্নিত্যং সূনাদোযৈর্নলিপ্যতে ॥
এই পাঁচটি মহাযজ্ঞ শক্তি সত্ত্বেও যে ত্যাগ করে না, সে সর্বদা গৃহে বাস করেও সুনাদোষে লিপ্ত হয় না।
৭২। দেবতাতিথিভৃত্যানাং পিতৄণামাত্মনশ্চ যঃ।
ন নির্বপতি পঞ্চানামুচ্ছসন্ ন স জীবতি ॥
দেবতা, অতিথি, ভৃত্য, পিতৃপুরুষ ও আত্মা এই পাঁচটিকে যে অন্ন দান করে না, সে শ্বাস-প্রশ্বাসযুক্ত হলেও জীবিত থাকে না।
৭৩। অহুতঞ্চ হুতঞ্চৈব তথা প্ৰহুতমেব চ।
ব্রাহ্ম্যং হুতং প্রাশিতঞ্চ পঞ্চ যজ্ঞান্ প্রচক্ষতে ॥
পঞ্চ মহাযজ্ঞকে অহুত, হুত, প্রহুত, ব্রাহ্মহুত ও প্রাশিত এই (পাঁচ) নামে অভিহিত করা হয়।
৭৪। জপোহহুতো হুতো হোমঃ প্রহুতো ভৌতিকো বলিঃ।
ব্রাহ্ম্যং হুতং দ্বিজাগ্ৰ্যার্চা প্রাশিতং পিতৃতর্পণম্ ॥
জপ অহুত, হোম হুত, ভূতবলি প্রহুত, ব্রাহ্মণপূজা ব্রাহ্ম্য হুত, পিতৃতর্পণ প্রাশিত।
৭৫। স্বাধ্যায়ে নিত্যযুক্তঃ স্যাদ্দৈবে চৈবেহ কর্মণি।
দৈবকর্মণি যুক্তো হি বিভর্ত্তীদং চরাচরম্ ॥
(গৃহস্থ) সর্বদা বেদাধ্যয়ন ও দৈবকর্মে (হোমে) যত্নবান হবেন ; দৈবকর্মে যুক্ত ব্যক্তি এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎ ধারণ করেন।
৭৬। অগ্নৌ প্রাস্তাহুতিঃ সম্যগাদিত্যমুপতিষ্ঠতে।
আদিত্যাজ্জায়তে বৃষ্টিৰ্বৃষ্টেরেন্নং ততঃ প্রজাঃ ॥
অগ্নিতে প্রদত্ত আহুতিতে সম্যক্ভাবে সূর্যের পূজা হয়, সূর্য থেকে বৃষ্টি জন্মে, বৃষ্টি থেকে উৎপন্ন হয় অন্ন, তার (উপভোগ) থেকে জনগণ জন্মে।
৭৭। যথা বায়ুং সমাশ্ৰিত্য বৰ্ত্তন্তে সর্বজন্তবঃ।
তথা গৃহস্হমাশ্রিতা বৰ্ত্তন্তে সর্ব আশ্ৰমাঃ ॥
যেমন বায়ুকে আশ্রয় করে সকল জীব বেঁচে থাকে, তেমন গৃহস্থকে আশ্রয় করে সকল আশ্রমবাসিগণ বেঁচে থাকে।
৭৮। যস্মাৎ ত্রয়োহপ্যাশ্রমিণো জ্ঞানেনান্নেন চান্বহম্।
গৃহস্থেনৈব ধার্যন্তে তস্মাজ্জ্যেষ্ঠাশ্রমো গৃহী ॥
যেহেতু তিন আশ্রমবাসিগণই জ্ঞান ও অন্নদ্বারা প্রত্যহ গৃহস্থগণ কর্তৃকই পোষিত হয়, সেইজন্য গৃহস্থাশ্রম শ্রেষ্ঠ।
৭৯। স সন্ধার্যঃ প্রযত্নেন স্বর্গমক্ষয়মিচ্ছতা।
সুখঞ্চেহেচ্ছতা নিত্যং যোহধার্যো দুর্বলেন্দ্রিয়ৈঃ ॥
যিনি অক্ষয় স্বর্গ ও ইহলোকে অত্যন্ত সুখ ইচ্ছা করেন, তৎকর্তৃক যত্নসহকারে সেই (গৃহস্থাশ্রম) অবলম্বনীয়, যা দুর্বল (অসংযত) ইন্দ্রিয়যুক্ত লোকের দ্বারা অবলম্বনীয় নয়।
৮০। ঋষয়ঃ পিতরো দেবা ভূতান্যতিথয়স্তথা।
আশাসতে কুটুম্বিভ্যস্তেভ্যঃ কার্যং বিজানতা ॥
ঋষিগণ, পিতৃগণ, দেবগণ, ভূতাদি এবং অতিথিগণ গৃহস্থগণ থেকে প্রার্থনীয় বস্তু প্রার্থনা করেন। (অতএব) কার্যজ্ঞ গৃহস্থ এঁদের উপকার করবেন।
৮১। স্বাধ্যায়েনাৰ্চয়েতর্ষীন্ হোমৈর্দেবান্ যথাবিধি।
পিতৃন্ শ্রাদ্ধৈশ্চ নৃনন্নৈর্ভুতানি বলিকর্মণা ॥
বেদাধ্যয়নদ্বারা ঋষিগণকে, হোমদ্বারা দেবগণকে, পিতৃগণকে শ্রাদ্ধ দ্বারা, মানুষকে অন্ন দ্বারা এবং ভূতগণকে বলি দ্বারা যথাবিধি অৰ্চনা করবেন।
৮২। কুর্যাদহরহঃ শ্রাদ্ধমন্নাদ্যেনোদকেন বা।
পয়োমূলফলৈর্বাপি পিতৃভ্যঃ প্রীতিমাবহন্ ॥
পিতৃগণের সন্তোষার্থে অন্নাদি, জল, দুধ, মুল বা ফল দ্বারা প্রতিদিন শ্রাদ্ধ করবেন।
৮৩। একমপ্যাশয়েদ্বিপ্রং পিত্রর্থে পাঞ্চযজ্ঞিকে।
ন চৈবাত্রাশয়েৎ কঞ্চিদ্বৈশ্বদেবং প্রতি দ্বিজম্ ॥
পযজ্ঞের অন্তর্গত পিতৃপ্রয়োজনে একজন হলেও ব্রাহ্মণ ভোজন করাবেন। বৈশ্বদেব (অর্থাৎ হোমাদিকর্মের জন্য) কোন ব্রাহ্মণ ভোজন করাবেন না।
৮৪। বৈশ্বদেবস্য সিদ্ধস্য গৃহ্যেহগ্নৌ বিধিপূর্বকম্।
আভ্যঃ কুর্যাদ্দেবতাভ্যো ব্রাহ্মণো হোমমম্বহম্।
ব্রাহ্মণ এই (বক্ষ্যমাণ দেবগণকে) সংস্কৃত গৃহাগ্নিতে যথাবিধি সর্বদেবোদ্দেশ্যে পক্বান্নদ্বারা প্রত্যহ হোম করবেন।
৮৫। অগ্নেঃ সোমস্য চৈবাদৌ তয়োশ্চৈব সমস্তয়োঃ।
বিশ্বেভ্যশ্চৈব দেবেভ্যো ধন্বন্তরয় এব চ ॥
প্রথমে অগ্নিকে, সোমকে, পরে এই উভয়কে একত্রে (তারপর) সর্ব দেবগণকে এবং ধন্বন্তরিকে (এভাবে হোম করবেন)।
৮৬। কুহ্বৈ চৈবানুমত্যৈ চ প্রজাপতয় এব চ।
সহ দ্যাবাপৃথিব্যোশ্চ তথা স্বিষ্টকৃতেহন্ততঃ ॥
কুহূ (অর্থাৎ যাতে চন্দ্রকলা সংপূর্ণ লুপ্ত হয়), অনুমতি (অর্থাৎ দুই প্রহর ব্যাপী চতুর্দশীর পরে পূর্ণিমা), প্রজাপতি, স্বর্গমর্ত্য ও সকলের শেষে স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির উদ্দেশ্যে হোম করাবেন।
৮৭। এবং সম্যগ্ঘবির্হুত্বা সর্বদিক্ষু প্রদক্ষিণম্।
ইন্দ্রান্তকাপ্পতীন্দুভ্যঃ সানুগেভ্যো বলিং হরেৎ ॥
এভাবে সম্যক্রূপে হবিদ্বারা হোম করে সব দিকে প্রদক্ষিণপূর্বক সানুচর ইন্দ্র, যম, বরুণ ও সোমের উদ্দেশ্যে বলিপ্রদান করবেন।
৮৮। মরুদ্ভ্য ইতি তু দ্বারি ক্ষিপেদপ্স্বদ্ভা ইত্যপি।
বনস্পতিভ্য ইতোবং মুসলোলুখলে হরেৎ॥
দ্বারে মরুদ্ভঃ, জলমধ্যে অদ্ভ্যঃ, মুষল ও উলুখলে বনস্পতিভ্যঃ এই বলে বলি প্রদান করবেন।
৮৯। উচ্ছীর্ষকে শ্রিয়ৈ কুর্যাদ্ভদ্রকাল্যৈ চ পাদতঃ।
ব্রহ্মবাস্তোষ্পতিভ্যান্তু বাস্তুমধ্যে বলিং হরেৎ॥
(বাস্তু পুরুষের) শিরে (উত্তর-পূর্ব দিকে) লক্ষ্মীকে, (বাস্তুপুরুষের) পাদদেশে (দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে) ভদ্রকালীকে, গৃহ মধ্যে ব্রহ্মাকে ও বাস্তুদেবকে বলিদান করবেন।
৯০। বিশ্বেভ্যশ্চৈব দেবেভ্যো বলিমাকাশমুৎক্ষিপেৎ।
দিবাচরেভ্যো ভূতেভ্যো নক্তঞ্চারিভ্য এব চ ॥
দিবাকর, নিশাচর, ভূতসমূহ এবং সকল দেবতার উদ্দেশ্যে বলি আকাশে নিক্ষেপ করবেন।
৯১। পৃষ্ঠবাস্তুনি কুর্বীত বলিং সর্বাত্মভূতয়ে।
পিতৃভ্যো বলিশেষন্তু সর্বং দক্ষিণতো হরেৎ॥
পৃষ্ঠবাস্তুতে (অর্থাৎ দ্বিতল গৃহ বা বলিদাতার পশ্চাৎ দিক্স্থিত ভূভাগ) সকল জীবকে বলিদান করবেন। বলির অবশিষ্ট সকল (অন্ন) পিতৃগণের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ দিকে দিবেন।
৯২। শুনাঞ্চ পতিতানাঞ্চ শ্বপচাং পাপরোগিণাম্।
বায়সানাং কৃমীণাঞ্চ শনকৈর্নিৰ্বপেদ্ভুবি ॥
কুকুর, পতিত লোক, শ্বপচ৫, পাপজনিত রোগগ্রস্ত ব্যক্তি (কুষ্ঠ বা ক্ষয় রোগগ্রস্ত), কাক ও কৃমির উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে মাটিতে অন্নদান করতে হবে।
৯৩। এবং যঃ সর্বভূতানি ব্রাহ্মণো নিত্যমৰ্চতি।
স গচ্ছতি পরং স্থানং তেজোমূর্তি পথর্জুনা ॥
এইরূপে যে ব্রাহ্মণ সর্বজীবকে প্রতিদিন অর্চনা করেন, তিনি সোজা পথে উজ্জ্বল পরম স্থানে (ব্রহ্ম ধামে) গমন করেন।
৯৪। কৃত্বৈতবদ্বলিকর্মৈবমতিথিং পূর্বমাশয়েৎ।
ভিক্ষাঞ্চ ভিক্ষবে দদ্যাদ্বিধিবদ্ব্রহ্মচারিণে ॥
এভাবে বলিকর্ম করে প্রথমে অতিথি ভোজন করাবেন, ভিক্ষুক ও ব্রহ্মচারীকে যথাবিধি ভিক্ষা দিবেন।
৯৫। যং পুণ্যফলমাপ্নোতি গাং দত্ত্বা বিধিবদ্ গুরোঃ।
তৎ পুণ্যফলমাপ্নোতি ভিক্ষাং দত্ত্বা দ্বিজো গৃহী ॥
গুরুকে যথাবিধি গাভী দান করে যে ফল লাভ করা যায়, সেই ফল গৃহস্থ দ্বিজ ভিক্ষাদান করে প্রাপ্ত হন।
৯৬। ভিক্ষামপ্যুদপাত্রং বা সৎকৃত্য বিধিপূর্বকম্।
বেদতত্ত্বার্থবিদুষে ব্রাহ্মণায়োপপাদয়েৎ ॥
(গৃহস্থ) বেদতত্ত্বজ্ঞ বিদ্বান্ ব্রাহ্মণকে যথাবিধি সম্মান করে ভিক্ষা ও জলপ্রাত্র দান করবেন।
৯৭। নশ্যন্তি হব্যকব্যানি নরাণামবিজানতাম্।
ভস্মীভূতেষু বিপ্ৰেযু মোহাদদ্দত্তানি দাতৃভিঃ ॥
সৎপাত্র না জেনে মোহবশতঃ দাতাগণ কর্তৃক ভস্মরূপ পাত্রে প্রদত্ত হব্য কব্য নষ্ট হয়।
৯৮। বিদ্যাতপঃসমৃদ্ধেষু হুতং বিপ্রমুখাগ্নিষু।
নিস্তারয়তি দুর্গাচ্চ মহতশ্চৈব কিন্বিষাৎ ॥
বিদ্যা ও তপস্যায় সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণের মুখাগ্নিতে হুত (হব্য কব্য) কঠিন (ব্যাধি, শত্রুভয়, রাজরোষ প্রভৃতি) অবস্থা ও মহাপাপ থেকে ত্রাণ করে।
৯৯। সম্প্রাপ্তায় ত্বতিথয়ে প্রদদ্যাদাসনোদকে।
অন্নঞ্চৈব যথাশক্তি সৎকৃত্য বিধিপূর্বকম্ ॥
উপস্থিত অতিথিকে যথাবিধি সম্মান করে আসন ও জল এবং যথাশক্তি অন্ন দান করবেন।
১০০। শিলানপপ্যুঞ্ছতো নিত্যং পঞ্চাগ্নীনপি জুহ্বতঃ।
সর্বং সুকৃতমাদত্তে ব্রাহ্মণোহনর্চিতো বসন্॥
শিলোঞ্ছ৬ দ্বারা জীবিকানির্বাহ করলেও প্রতিদিন পঞ্চাগ্নিতে হোম করলেও যার বাড়ীতে ব্রাহ্মণ (অতিথি) অনৰ্চিত অবস্থায় বাস করেন, তার পুণ্য (সেই অতিথি) নিয়ে নেন।
১০১। তৃণানি ভূমিরুদকং বাক্ চতুর্থী চ সুনৃতা।
এতান্যপি সতাং গেহে নোচ্ছিদ্যন্তে কদাচন ॥
তৃণ, ভূমি, জল ও চতুর্থ প্রিয়বচন—সজ্জনদের গৃহে এইগুলির অভাব কখনও হয় না।
১০২। একরাত্ৰস্তু নিবসন্নতিথির্ব্রাহ্মণঃ স্মৃতঃ।
অনিত্যং হি স্থিতো যস্মাৎ তম্মাদতিথিরুচ্যতে ॥
(পরগৃহে) এক রাত্রি বাসকারী ব্রাহ্মণ অতিথি বলে জ্ঞাত। যেহেতু তাঁর স্থিতি অনিত্য, সেইজন্য তিনি অতিথি বলে কথিত হন।
১০৩। নৈকগ্রামীনমতিথিং বিপ্রং সাঙ্গতিকং তথা।
উপস্থিতঃ গৃহে বিদ্যাদ্ভার্যা যত্রাগ্নয়োহপি বা ॥
ভার্যা ও অগ্নিযুক্ত গৃহে উপস্থিত এক গ্রামবাসী চাটুকার ব্রাহ্মণকে অতিথিরূপে গণ্য করবেন না।
১০৪। উপিসতে যে গৃহস্থাঃ পরপাকমবুদ্ধয়ঃ।
তেন প্ৰেত্য পশুতাং ব্রজনন্ত্যন্নাদিদায়িনাম্।
যে নির্বোধ গৃহস্থগণ (আতিথ্য লোভে অন্য গ্রামে গিয়ে) পরান্ন ভোজন করেন, তাঁরা পরলোকে সেই পাপে অন্নদাতাদের পশুত্বে পরিণত হন।
১০৫। অপ্রণোদ্যোহতিথিঃ সায়ং সুর্যোঢ়ো গৃহমেধিনা।
কালে প্রাপ্তত্বকালে বা নাস্যানশ্নন্ গৃহে বসেৎ ॥
সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যাবেলা (উপস্থিত অতিথিকে গৃহস্থ প্রত্যাখ্যান করবেন না। যথাকালে বা কালাতিক্রমে (সমাগত অতিথি) গৃহস্থের গৃহে ভোজন না করে থাকবেন না।
১০৬। ন বৈ স্বয়ং তদশ্নীয়াদতিথিং যন্ন ভোজয়েৎ।
ধন্যং যশস্যমায়ুষ্যং স্বর্গ্যঞ্চাতিথিপূজনম্ ॥
অতিথিকে যা ভোজন করান হয়নি, তা নিজে খাবেন না। অতিথিসৎকার ধন ও যশলাভে সহায়ক, আয়ুবর্ধক ও স্বর্গলাভজনক।
১০৭। আসনাবসথৌ শয্যামনুব্রজ্যামুপাসনম্।
উত্তমেযুত্তমং কুর্যাদ্ধীনে হীনং সমে সমম্ ॥
আসন, থাকবার জায়গা, শয্যা, অনুগমন ও পরিচর্যা উত্তম, সমান ও হীন (অতিথি ভেদে) উত্তম, সমান ও হীন হবে।
১০৮। বৈশ্বদেবে তু নির্বৃত্তে যদন্যোহতিথিরাব্ৰজেৎ।
তস্যাপ্যন্নং যথাশক্তি প্রদদ্যান্ন বলিং হরেৎ॥
বৈশ্বদেব কার্য সম্পন্ন হলে যদি অন্য অতিথি আসেন, তাহলে তাঁকেও শক্তি অনুসারে অন্ন দেয় ; (পূর্বপ্রস্তুত) বলি থেকে দিবেন না।
১০৯। ন ভোজনার্থং স্বে বিপ্রঃ কুলগোত্রে নিবেদয়েৎ।
ভোজনার্থং হি তে শংসন্ বান্তাশীত্যুচ্যুতে বুধৈঃ ॥
ব্রাহ্মণ ভোজনের জন্য নিজের বংশ ও গোত্রের পরিচয় দিবেন না। ভোজনের নিমিত্ত ঐ দুইটি যে বলে, তাকে পণ্ডিতগণ বান্তাশী৭ বলেন।
১১০। ন ব্রাহ্মণস্য ত্বতিথির্গৃহে রাজন্য উচ্যতে।
বৈশ্যশূদ্রৌ সখা চৈব জ্ঞাতয়ো গুরুরেব চ ॥
ব্রাহ্মণের গৃহে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রকে অতিথি বলা হয় না। বন্ধু, জ্ঞাতি ও গুরুকে অতিথি বলা হয় না।
১১১। যদি ত্বতিথিধর্মেণ ক্ষত্রিয়ো গৃহমাব্রজেৎ।
ভুক্তবৎসু চ বিপ্রেষু কামং তমপি ভোজয়েৎ ॥
কিন্তু যদি ক্ষত্রিয় (ব্রাহ্মণ গৃহে) অতিথিরূপে আসে, তাহলে (উপস্থিত) ব্রাহ্মণগণের ভোজন হলে তাকেও ইচ্ছামত ভোজন করাবেন।
১১২। বৈশাশূদ্রাবপি প্রাপ্তৌ কুটুম্বেহতিথিধর্মিণৌ।
ভোজয়েৎ সহ ভূত্যৈস্তাবানৃশংস্যং প্রযোজয়ন্ ॥
(ব্রাহ্মণের) গৃহে অতিথিরূপে উপস্থিত বৈশ্য শূদ্রকেও, তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে, ভূতদের ভোজন সময়ে ভোজন করাবেন।
১১৩। ইতবানপি সখ্যাদীন্ সম্প্ৰীত্যা গৃহমাগতান্।
প্রকৃত্যান্নং যথাশক্তি ভোজয়েৎ সহ ভাৰ্যয়া ॥
অন্যান্য বন্ধু প্রভৃতি প্রীতিবশতঃ গৃহে উপস্থিত হলে উৎকৃষ্ট অন্ন প্রস্তুত করে শক্তি অনুসারে, স্ত্রীর ভোজনকালে, তাদের ভোজন করাবেন।
১১৪। সুবাসিনীঃ কুমারীশ্চ রোগিণো গর্ভিণীঃস্ত্রিয়ঃ।
অতিথিভ্যোহগ্র এবৈতান্ ভোজয়েদবিচারয়ন্ ॥
সুবাসিনী (নবোঢ়া স্ত্রী), কুমারী, রোগী ও গর্ভবতী স্ত্রীলোককে নির্বিচারে অতিথিদের পূর্বে ভোজন করাবেন।
১১৫। অদত্ত্বা তু য এতেভ্যঃ পূর্বং ভূঙ্ক্তেহবিচক্ষণঃ।
স ভুঞ্জানো ন জানাতি শ্বগৃধ্রৈর্জগ্ধিমাত্মনঃ ॥
যে অজ্ঞ ব্যক্তি এদের না দিয়ে পূর্বে ভোজন করে, সে জানেনা যে, (মৃত্যুর পরে) কুকুর ও শকুনিগণ তাকে খাবে।
১১৬। ভুক্তবৎস্বথ বিপ্ৰেষু স্বেষু ভৃত্যেষু চৈব হি।
ভুঞ্জীয়াতাং ততঃ পশ্চাদবশিষ্টন্তু দম্পতি ॥
ব্রাহ্মণ (অতিথি) ও নিজের ভৃত্যগণ ভোজন করলে পরে অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য (গৃহস্থ) দম্পতি ভোজন করবেন।
১১৭। দেবানৃষীন্ মনুষ্যাংশ্চ পিতৃন্ গৃহ্যাশ্চ দেবতাঃ।
পূজয়িত্বা ততঃ পশ্চাদ্,গৃহস্থঃ শেষভুগ্ ভবেৎ ॥
দেবতা, ঋষি, মানুষ, পিতৃগণ ও গৃহদেবতাগণকে পূজা করে গৃহস্থ অবশিষ্ট অন্ন ভোজন করবেন।
১১৮। অঘং স কেবলং ভুঙ্ক্তে যঃ পচত্যাত্মকারণাৎ।
যজ্ঞশিষ্টাশনং হ্যেতৎ সতামন্নং বিধীয়তে ॥
যে (শুধু) নিজের জন্য অন্ন পাক করে, সে শুধু পাপ ভোজন করে। সজ্জনদের পক্ষে যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নভক্ষণ বিহিত।
১১৯। রাজর্ত্বিক্স্নাতকগুরূন্ প্রিয়শ্বশুরমাতুলান।
অর্হয়েন্মধূপর্কেণ পরিসংবৎসরাৎ পুনঃ ॥
রাজা, ঋত্বিক্ (সংজ্ঞক পুরাহিত), স্নাতক, গুরু, জামাতা, শ্বশুর ও মাতুল এক বৎসর পরে পুনরায় (গৃহে সমাগত হলে) তাঁদের মধুপর্ক দিয়ে অভ্যর্থনা করবেন।
১২০। রাজা চ শ্রোত্রিয়শ্চৈব যজ্ঞকর্মণ্যুপস্থিতৌ।
মধুপর্কেণ সম্পূজ্যৌ ন ত্বযজ্ঞ ইতি স্থিতিঃ ॥
রাজা ও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ যজ্ঞকর্মে উপস্থিত হলে মধুপর্ক দ্বারা পূজনীয়, কিন্তু যজ্ঞ ভিন্ন উপলক্ষ্যে নয়।
১২১। সায়ংত্বন্নস্য সিদ্ধস্য পত্ন্যমন্ত্রং বলিং হরেৎ।
বৈশ্বদেবং হি নামৈতৎ সায়ংপ্রাতর্বিধীয়তে॥
সন্ধ্যাকালে সিদ্ধ অন্নদ্বারা স্ত্রী অমন্ত্রক (দেবতার উদ্দেশ্যে) বলি দিবেন। এটির নাম বৈদেব, সন্ধ্যা ও প্রাতে বিহিত।
১২২। পিতৃযজ্ঞন্তু নির্বর্তা বিপ্রশ্চেন্দুক্ষয়েহগ্নিমান্।
পিণ্ডাম্বাহার্যকং শ্রাদ্ধং কুর্যাম্মাসানুমাসিকম্॥
সাগ্নিক (ব্রাহ্মণ) অমাবস্যায় পিতৃযজ্ঞ সম্পন্ন করে প্রতি মাসে পিণ্ডাহাৰ্যক নামক শ্রাদ্ধ করবেন।
১২৩। পিতৃণাং মাসিকং শ্রাদ্ধমন্বাহার্যং বিদুৰ্বুধাঃ।
তচ্চামিষেণ কর্তব্যং প্রশস্তেন প্রযত্নতঃ ॥
পিতৃগণের মাসিক শ্রাদ্ধকে পণ্ডিতগণ অম্বাহার্য বলেন। তা প্রশস্ত মাংস দ্বারা যত্নসহকারে করণীয়।
১২৪। তত্র যে ভোজনীয়াঃ স্যুর্যে চ বর্জ্যা দ্বিজোত্তমাঃ।
যাবন্তশ্চৈব যৈশ্চান্নৈস্তান্ প্রবক্ষ্যাম্যশেষতঃ॥
তাতে যে ব্রাহ্মণ ভোজনীয়, যে বর্জনীয়, যতজন (ভোজনীয়) এবং যে অন্ন দ্বারা (ভোজনীয়) তা সম্পূর্ণভাবে বলছি।
১২৫। দ্বৌ দৈবে পিতৃকার্যে ত্রীনেকৈকমুভয়ত্র বা।
ভোজয়েৎ সুসমৃদ্ধোহপি ন প্রসজ্জেত বিস্তরে ॥
অতি ধনী ব্যক্তিও দৈবকর্মে দুই ও পিতৃকার্যে তিন বা উভয়ক্ষেত্রেই এক একজন (ব্রাহ্মণ) ভোজন করাবেন ; বাহুল্যে প্রবৃত্ত হবেন না।
১২৬। সৎক্রিয়াং দেশকালৌ চ শৌচং ব্রাহ্মণসম্পদঃ।
পঞ্চৈতান্ বিস্তরো হস্তি তম্মান্নেহেত বিস্তরম্॥
সৎকার (বা সম্মানপূর্বক সেবা), দেশ, কাল, শুচিতা, উৎকৃষ্ট ব্রাহ্মণরূপ সম্পদ্—এই পাঁচটিকে (ব্রাহ্মণদের) বাহুল্য নষ্ট করে৮; সুতরাং (ব্রাহ্মণ) বাহুল্য করতে চেষ্টা করবে না।
১২৭। প্রথিতা প্রেতককৃত্যৈষা পিত্র্যং নাম বিধুক্ষয়ে।
তস্মিন্ যুক্তস্যৈতি নিত্যং প্রেতকৃত্যৈব লৌকিকী ॥
শ্রাদ্ধ করলে পিতৃপুরুষ তৃপ্ত হন। এই শ্রাদ্ধ অমাবস্যায় করণীয়। এই শ্রাদ্ধ দ্বারা (গুণী পুত্রপৌত্রাদি ও বিবিধ সম্পদ) লব্ধ হয়, (সুতরাং) এটি আবশ্যিক।
১২৮। শ্রোত্রিয়ায়ৈব দেয়ানি হব্যকব্যানি দাতৃভিঃ।
অর্হত্তমায় বিপ্ৰায় তস্মৈ দত্তং মহাফলম্ ॥
দাতাগণ হব্য ও কব্য বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকেই দিবেন। যোগ্যতম ব্রাহ্মণকে দান মহাফলজনক।
১২৯। একৈকমপি বিদ্বাংসং দৈবে পিত্র্যে চ ভোজয়েৎ।
পুষ্কলং ফলমাপ্নোতি নামন্ত্রজ্ঞান্ বহূনপি ॥
দৈব ও পিতৃকার্যে এক একটি করেও বিদ্বান্ (ব্রাহ্মণকে) ভোজন করান উচিত ; তাতে প্রচুর ফললাভ হয়, অবেদজ্ঞ বহু ব্রাহ্মণকেও ভোজন করা সমীচীন নয়।
১৩০। দূরাদেব পরীক্ষেত ব্রাহ্মণং বেদপারগম্।
তীর্থং তদ্ধব্যকব্যানাং প্রদানে সোহতিথিঃ স্মৃতঃ ॥
দূর থেকেই বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে পরীক্ষা করা বিধেয় ; কারণ, তিনি হব্য ও কব্য প্রদানের (যোগ্য) পাত্র ; তিনি অতিথি বলে কথিত।
১৩১। সহস্রং হি সহস্রাণামনৃচাং যত্র ভুঞ্জতে।
একস্তান্ মন্ত্রবিৎ প্রীতঃ সর্বানৰ্হতি ধর্মতঃ ॥
যেখানে দশ লক্ষ আবেদ ব্রাহ্মণ ভোজন করেন, সেখানে একজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণও সন্তুষ্ট হলে তিনি ধর্মানুসারে ঐ সকল (ব্রাহ্মণ ভোজনের ফলের) যোগ্য হন।
১৩২। জ্ঞানোৎকৃষ্টায় দেয়ানি কব্যানি চ হবীংষি চ।
ন হি হস্তাবসসৃগ্দিগ্ধৌ রুধিরেণৈব শুধ্যতঃ ॥
জ্ঞানে উৎকৃষ্ট ব্রাহ্মণকে কব্য ও হব্য দেয় ; কারণ, রক্তাক্ত হস্তদ্বয় রক্তদ্বারাই শুদ্ধ হয় না।
১৩৩। যাবতো গ্ৰসতে গ্রাসান্ হব্যকবব্যেষ্বমন্ত্রবিৎ।
ভাবতো গ্ৰসতে প্ৰেত্য দীপ্তশূলর্ষ্ট্যয়োগুড়ান্ ॥
অবেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ হব্য কব্যে যত সংখ্যক গ্রাস ভোজন করেন, পরলোকে (শ্রাদ্ধকর্তা) তত সংখ্যক জ্বলন্ত শূলষ্টি নামক লৌহপিণ্ড ভোজন করেন।
১৩৪। জ্ঞাননিষ্ঠা দ্বিজাঃ কেচিৎ তপোনিষ্ঠাস্তথাপরে।
তপঃস্বাধ্যায়নিষ্ঠাশ্চ কর্মনিষ্ঠাস্তথাপরে ॥
দ্বিজগণের মধ্যে কতক (আত্ম) জ্ঞাননিষ্ঠ, অপর কতক তপস্যানিরত, কিছু তপস্যা ও বেদাধ্যয়নরত ও অন্যান্যেরা (যাগাদি)কর্মনিষ্ঠ।
১৩৫। জ্ঞাননিষ্ঠেষু কব্যানি প্রতিষ্ঠাপ্যানি যত্নতঃ।
হব্যানি তু যথান্যায়ং সর্বেধেব চতুর্ষপি ॥
জ্ঞাননিষ্ঠগণকে যত্নসহকারে কব্য দেয়, হব্য কিন্তু (উক্ত) চার প্রকার দ্বিজকেই যথাবিধি প্রদেয়।
১৩৬- অশ্রোত্রিয়ঃ পিতা যস্য পুত্ৰঃ স্যাদ্বেদপারগঃ।
১৩৭। অশ্রোত্রিয়ো বা পুত্রঃ স্যাৎ পিতা স্যাদ্ধেদপারগঃ ॥
জ্যায়াসমনয়োর্বিদ্যাদ্ যস্য স্যাচ্ছ্রেত্রিয়ঃ পিতা।
মন্ত্রসম্পূজনার্থন্তু সৎকারমিতরোহর্হতি ॥
যার পিতা অবেদজ্ঞ, পূত্র বেদজ্ঞ, অথবা পুত্র অবেদজ্ঞ, পিতা বেদে পারদর্শী—এদের মধ্যে যার পিতা বেদজ্ঞ, সে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু অপর ব্যক্তি (অর্থাৎ যার পিতা অবেদজ্ঞ, কিন্তু স্বয়ং বেদবিৎ) শ্রাদ্ধাদিতে পূজার যোগ্য।
১৩৮। ন শ্রাদ্ধে ভোজয়েন্মিত্রং ধনৈঃ কার্যোহস্য সংগ্রহঃ।
নারিং ন মিত্রং যং বিদ্যাত্তং শ্রাদ্ধে ভোজয়েদ্দ্বিজম্ ॥
শ্রাদ্ধে বন্ধুকে ভোজন করাবে না, ধনদ্বারা তার সঙ্গে মিত্ৰতা করণীয়। যে ব্রাহ্মণকে শত্রুও নয়, মিত্রও নয় এইরূপ জানবে, তাকে শ্রাদ্ধে ভোজন করাবে।
১৩৯। যস্য মিত্রপ্রধাননি শ্রাদ্ধানি চ হবীংষি চ।
তস্য প্ৰেত্য ফলং নাস্তি শ্রাদ্ধেষু চ হবিঃষু চ ॥
যার শ্রাদ্ধে ও দেবকার্যে মিত্রভোজন করান হয়, পরলোকে সে ঐ কার্যসমূহের ফল পায় না।
১৪০। যঃ সঙ্গতানি কুরুতে মোহাচ্ছ্রাদ্ধেন মানবঃ।
স স্বর্গাচ্চ্যবতে লোকাচ্ছ্রাদ্ধমিত্রো দ্বিজাধমঃ ॥
যে মোহবশতঃ শ্রাদ্ধকাৰ্যদ্বারা মিত্ৰতা করে, সেই শ্রাদ্ধমিত্র অধম ব্রাহ্মণ স্বর্গভ্রষ্ট হয়।
১৪১। সম্ভোজনী সাভিহিতা পৈশাচী দক্ষিণা দ্বিজৈঃ।
ইহৈবাস্তে তু সা লোকে গৌরন্ধেবৈকবেশ্মনি ॥
দ্বিজগণকর্তৃক পৈশাচী নামে অভিহিতা সেই দানক্রিয়া সম্ভোজনী (বহু পুরুষভোজনাত্মিকা)। অন্ধ গাভী যেমন এক ঘরে থাকে, ঐ দানক্রিয়াও তেমন ইহলোকেই থাকে (পরলোকে ফলপ্রসূ হয় না।)
১৪২। যথেরিণে বীজমুপ্ত্বা ন বপ্তা লভতে ফলম্।
তথানৃচে হবির্দত্ত্বা ন দাতা লভতে ফলম্॥
যেমন ঊষর ক্ষেত্রে বীজ বপন করে বপনকারী ফল পায় না, তেমনই অবেদজ্ঞকে হব্য দান করে দাতা ফললাভ করে না।
১৪৩। দাতৃন্ প্রতিগ্রহীতৃংশ্চ কুরুতে ফলভাগিনঃ।
বিদুষে দক্ষিণাং দত্ত্বা বিধিবৎ প্ৰেত্য চেহ চ॥
বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে যথাবিধি দত্ত দক্ষিণা ইহলোকে ও পরলোকে দাতা ও গ্রহীতাকে ফলভাগী করে।
১৪৪। কামং শ্রাদ্ধেহর্চয়েন্মিত্ৰং নাভিরূপমপি ত্বরিম্।
দ্বিষতা হি হবির্ভুক্তং ভবতি প্রেত নিষ্ফলম্ ॥
শ্রাদ্ধে বরং মিত্রকে অর্চনা করবে, কিন্তু বিদ্বান্ শত্রুকে নয়। শত্রুকর্তৃক ভুক্ত হব্য পরলোকে নিষ্ফল হয়।
১৪৫। যত্নেন ভোজয়েচ্ছ্রাদ্ধে বহৃচং বেদপারগম্।
শাখাস্তগমথার্ধ্বর্যুং ছন্দোগন্তু সমাপ্তিকম্ ॥
শ্রাদ্ধে ঋগ্বেদী, বেদপারদর্শী, সম্পূর্ণ শাখাধ্যায়ী, অধ্বর্যু (যজুর্বেদশাখাধ্যায়ী পুরোহিত), সম্পূর্ণ সামবেদাধ্যায়ী ব্যক্তিগণকে ভোজন করাবেন।
১৪৬। এষামন্যতমো যসা ভুঞ্জীত শ্রাদ্ধমৰ্চিতঃ।
পিতৃণাং তস্য তৃপ্তিঃ স্যাচ্ছাশ্বতী সাপ্তপৌরুষী ॥
এদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি পুজিত হয়ে যার শ্রাদ্ধে ভোজন করেন, তার পিতৃগণের সপ্তপুরুষ পর্যন্ত শাশ্বতী তৃপ্তি হয়।
১৪৭। এষ বৈ প্রথমঃ কল্পঃ প্রদানে হব্যকব্যয়োঃ।
অনুকল্পস্ত্ত্বয়ং জ্ঞেয়ঃ সদা সদ্ভিরনুষ্ঠিতঃ ॥
হব্য ও কব্যের দানে এই মুখ্যবিধি। সর্বদা সজ্জন কর্তৃক অনুষ্ঠিত এই (বক্ষ্যমাণ) অনুকল্প জ্ঞেয়।
১৪৮। মাতামহং মাতুলঞ্চ স্বস্ত্রীয়ং শ্বশুরং গুরুম্।
দৌহিত্রং বিট্পতিং বন্ধুমৃত্বিগ্যাজ্যৌ চ ভোজয়েৎ ॥
মাতামহ, মাতুল, ভাগিনেয়, শ্বশুর, গুরু, দৌহিত্র, জামাতা, বন্ধু, ঋত্বিক্ (সংজ্ঞক পুরোহিত) ও যজ্ঞকর্তাকে ভোজন করাবে।
১৪৯। ন ব্রাহ্মণং পরীক্ষেত দৈবে কর্মাণ ধর্মবিৎ।
পিত্র্যে কর্মণি তু প্রাপ্তে পরীক্ষেত প্রযত্নতঃ ॥
ধর্মজ্ঞ ব্যক্তি দৈবকার্যে ব্রাহ্মণকে পরীক্ষা করবেন না, কিন্তু পিতৃকর্ম উপস্থিত হলে যত্নসহকারে পরীক্ষা করবেন।
১৫০। যে স্তেনপতিতক্লীবা যে চ নাস্তিকবৃত্তয়ঃ।
তান্ হব্যকব্যয়োর্বিপ্রাননর্হান্ মনুরব্রবীৎ ॥
যারা চোর, পতিত, ক্লীব এবং নাস্তিকাচারী সেই ব্রাহ্মণগণকে মনু হব্য কব্যে অযোগ্য বলেছেন।
১৫১। জটিলঞ্চানধীয়ানং দুর্বলং কিতবং তথা।
যাজয়ন্তি চ যে পৃগাংস্তাংশ্চ শ্রাদ্ধে ন ভোজয়েৎ ॥
জটাধারী (বা মুণ্ডিতমস্তক) ব্রহ্মচারী, বেদাধ্যয়নশূন্য, দুর্বল, দ্যূতক্রীড়াসক্ত ও পৃগযাজীকে৯ শ্রাদ্ধে ভোজন করাবেন না।
১৫২। চিকিৎসকান্ দেবলকান্ মাংসবিক্রয়িণস্তথা।
বিপেণন চ জীবন্তো বর্জ্যাঃ স্যুর্হব্যকব্যয়োঃ ॥
চিকিৎসক, দেবলক১০, মাংসবিক্রয়ী ও বাণিজ্যকারী হব্য কব্যে বর্জনীয়।
১৫৩। প্রেষ্যো গ্রামস্য রাজ্ঞশ্চ কুনখী শ্যাবদন্তকঃ।
প্রতিরোদ্ধা গুরোশ্চৈব ত্যক্তাগ্নির্বাদ্ধুষিস্তথা ॥
১৫৪। যক্ষ্মী পশুপালশ্চ পরিবেত্তা নিরাকৃতিঃ।
ব্ৰহ্মদ্বিত্ পরিবিত্তিশ্চ গুণাভ্যস্তর এব চ ॥
১৫৫। কুশীলবোহবকীর্ণী চ বৃষলীপতিরেব চ।
পোনৰ্ভবশ্চ কাণশ্চ যস্য চোপপতির্গৃহে॥
১৫৬। ভৃতকাধ্যাপকো যশ্চ ভৃতকাধ্যাপিতস্তথা।
শুদ্ৰশিষ্যো গুরুশ্চৈব বাগ্দুষ্টঃ কুণ্ডগোলকৌ ॥
১৫৭। অকারণপরিত্যক্তা মাতাপিত্রোগুরুরোস্তথা।
ব্রাহ্মর্যৌনৈশ্চ সম্বন্ধৈঃ সংযোগং পতিতৈর্গতঃ ॥
১৫৮। অগারদাহী গরদঃ কুণ্ডাশী, সোমবিক্রয়ী।
সমুদ্রযায়ী বন্দী চ তৈলিকঃ কুটকারকঃ ॥
১৫৯। পিত্রা বিবদমানশ্চ কিতবো মদ্যপস্তথা।
পাপরোগ্যভিশস্তশ্চ দাম্ভিকো রসবিক্রয়ী ॥
১৬০। ধনুঃশরাণাং কর্তা চ যশ্চাগ্রেদিধিষুপতিঃ।
মিত্রধ্রুগ্ দ্যুতবৃত্তিশ্চ পুত্রাচার্যস্তথৈব চ ॥
১৬১। ভ্রামরী গণ্ডমালী চ শ্বিত্র্যথ পিশুনস্তথা।
উন্মত্তোহব্ধশ্চ বর্জ্যাঃ স্যুর্বেদনিন্দক এব চ ॥
১৬২। হস্তিগোহশ্বোষ্ট্রদমকো নক্ষত্রৈর্যশ্চ জীবতি।
পক্ষিণাং পোষকো যশ্চ যুদ্ধাচার্যস্তথৈব চ ॥
১৬৩। স্রোতসাং ভেদকো যশ্চ তেষাং চাবরণে রতঃ।
গৃহসংবেশকো দূতো বৃক্ষারোপক এব চ ॥
১৬৪। শ্বক্রীড়ী শ্যেনজীবী চ কন্যাদূষক এব চ।
হিংস্রো বৃযলবৃত্তিশ্চ গণানাং চৈব যাজকঃ॥
১৬৫। আচারহীনঃ ক্লীবশ্চ নিত্যং যাচনকস্তথা।
কৃষিজীবী শ্লীপদী চ সদ্ভির্নিন্দিত এব চ ॥
১৬৬। ঔরভ্রিকো মাহিষিকঃ পরপূর্বাপতিস্তথা।
প্রেতনির্যাতকশ্চৈব বর্জনীয়াঃ প্রযত্নতঃ ॥
(১৫৩-১৬৬-র অনুবাদ)
গ্রামবাসীর বা রাজার ভৃত্য, কুৎসিত নখরোগবিশিষ্ট, কৃষ্ণবর্ণদন্তযুক্ত, গুরুর প্রতিকুলাচরণকারী, (শ্রৌত স্মার্ত) অগিত্যাগী, সুদখোর, যক্ষ্মারোগী, পশুপালক, পরিবেত্তা১১ , নিবাকৃতি১২ , ব্রাহ্মণবিদ্বেষী, পরিবিত্তি এবং যে অনেকের সম্পত্তি নিজে গ্রহণ করে, নট, অবকীর্ণী১৩ , শুদ্ৰাপতি, পুনর্ভুপুত্র, অন্ধ, যার গৃহে উপপতি আছে, যিনি বেতন নিয়ে অধ্যাপনা করেন, যে বেতন দিয়ে পড়ে, শূদ্রের শিষ্য (অর্থাৎ শূদ্র অধ্যাপকের নিকট অধ্যয়নকারী), শূদ্রের গুরু, কর্কশভাষী, কুণ্ড১৪ , গোলক১৫ , অকারণে মাতাপিতা ও গুরুত্যাগী, পতিতের সঙ্গে অধ্যয়ন ও বিবাহ সম্বন্ধে মিলিত, যে গৃহদাহ করে, বিষদাতা, কুণ্ডাশী১৬ , সোমবিক্রেতা, যে সমুদ্রযাত্রা করে, স্তুতিপাঠক, যে তৈলের জন্য তিলাদি পেষণ করে, কূটসাক্ষী, পিতার সহিত বিবাদরত, কিতব১৭, মদ্যপায়ী, (যক্ষ্মা কুষ্ঠাদি পাপজনিত) রোগাৰ্ত, অভিশাপগ্রস্ত, যে ছলপূর্বক ধর্মকর্ম করে, (ইক্ষু প্রভৃতির) রসবিক্রয়ী, ধনু ও শরনির্মাতা, অগ্রেদিধিষ্যুপতি১৮, মিত্রদ্রোহী, দ্যুতজীবী, যে পুত্রের নিকট বেদশিক্ষা করে, অপম্মার রোগগ্রস্ত, গণ্ডমালা রোগগ্রস্ত, শ্বেতীরোগী, দুষ্ট, উন্মত্ত, অন্ধ, বেদনিন্দুক, হস্তী গাভী অশ্ব ও উষ্ট্রের প্রশিক্ষক, নক্ষত্রাদি গণনাদ্বারা জীবিকার্জনকারী, পক্ষিপোষক, যুদ্ধাৰ্থ অস্ত্রশিক্ষক, সেতুভঙ্গদ্বারা প্রবহমান স্রোত যে দেশান্তরে নিয়ে যায়, ঐরূপ স্রোত আবরণ করে, জীবিকাৰ্থে যে গৃহিনির্মাণ শিক্ষা দেয়, দূত, (বেতনভোগী) বৃক্ষরোপক, ক্রীড়ার্থ কুকুরপোষক, শ্যেনপক্ষীদ্বারা জীবিকার্জনকারী, যে কন্যাগমন করে, হিংসাবৃত্তি অবলম্বনকারী, শুদ্ৰবৃত্তিধারী, (বিনায়কাদি) গণযাগকারী, আচারভ্রষ্ট, ক্লীব, সর্বদা যাজ্ঞাকারী, কৃষিজীবী, শ্লীপদী (যার গোদ আছে), সজ্জননিন্দিত, মেষপালক, মহিষপালক, পুনর্ভূপতি ও ধনগ্রহণপূর্বক প্রেতদাহদিকারী যত্নসহকারে বর্জনীয়।
১৬৭। এতান্ বিগর্হিতাচারানপাঙ্ক্তেয়ান্ দ্বিজাধমান্।
দ্বিজাতিপ্রবরো বিদ্বানুভয়ত্র বিবর্জয়েৎ ॥
উৎকৃষ্ট বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ এই নিন্দিত আচারপরায়ণ, অপাংক্তেয়, অধম দ্বিজগণকে (দৈব পৈত্র) উভয় কর্মে বর্জন করবেন।
১৬৮। ব্রাহ্মণত্বনধীয়ান স্তৃণাগ্নিরিব শাম্যতি।
তস্মৈ হব্যং ন দাতব্যং নহি ভস্মনি হুয়তে ॥
বেদাধ্যয়নরহিত ব্রাহ্মণ তৃণাগ্নির ন্যায় তেজোহীন হয়। তাঁকে হব্য দেয় নয় ; কারণ, ভস্মে হোম করা হয় না।
১৬৯। অপাঙ্ক্ত্যদানে যো দাতুৰ্ভবত্যুর্ধ্বং ফলোদয়ঃ।
দৈবে হবিষি পিত্র্যে বা তং প্ৰবক্ষাম্যশেষতঃ ॥
দৈব ও পৈত্র্য কর্মে অপাংক্তেয় ব্যক্তিকে দান করলে পরকালে দাতার যে ফললাভ হয়, তা সম্পূর্ণভাবে বলছি।
১৭০। অব্ৰতৈর্যদ্দ্বিজৈর্ভুক্তং পরিবেত্তাদিভিস্তথা।
অপাঙ্ক্তেয়ৈর্যদন্যৈশ্চ তদ্বৈ রক্ষাংসি ভুঞ্জতে ॥
(বেদগ্ৰহণার্থ) ব্ৰতরহিত, পরিবেত্তা প্রভৃতি অন্যান্য অপাংক্তেয় দ্বিজ কর্তৃক যা ভক্ষিত হয়, তা রাক্ষসগণ ভোজন করে।
১৭১। দারাগ্নিহোত্রসংযোগং কুরুতে যোহগ্রজে স্থিতে।
পরিবেত্তা স বিজ্ঞেয়ঃ পরিবিত্তিস্ত্ত পূর্বজঃ ॥
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা (অবিবাহিত বা অনগ্নিক) থাকতে যে দারপরিগ্রহ বা অগ্নিহোত্র গ্রহণ করে, সে পরিবেত্তা বলে অভিহিত হয় ; জ্যেষ্ঠভ্রাতা হয় পরিবিত্তি।
১৭২। পরিবিত্তিঃ পরিবেত্তা যয়া চ পরিবিদ্যতে।
সর্বে তে নরকং যান্তি দাতৃ-যাজকপঞ্চমাঃ ॥
পরিবিত্তি, পরিবেত্তা, যে কন্যা দ্বারা পরিবেদন হয়, কন্যাদাতা এবং পঞ্চম ব্যক্তি পুরোহিত—এঁরা সকলে নরকগামী হন।
১৭৩। ভ্রাতুর্মৃতস্য ভার্যায়াং যোহনুরজ্যেত কামতঃ।
ধর্মেণাপি নিযুক্তায়াং স জ্ঞেয়ো দিধিষুপতিঃ ॥
মৃত ভ্রাতার ধর্মানুসারে নিযুক্ত১৯ পত্নীর প্রতি যে কামবশে অনুরক্ত হয়, সে দিধিষুপতি বলে জ্ঞেয়।
১৭৪। পরদারেষু জায়েতে দ্বৌ সুতৌ কুণ্ডগোলকৌ।
পত্যৌ জীবতি কুণ্ডঃ স্যান্মৃতে ভর্তরি গোলকঃ ॥
পরস্ত্রীতে কুণ্ড গোলক সংজ্ঞক দুই পুত্র জন্মে ; পতি জীবিত থাকলে হয় কুণ্ড, মৃত হলে গোলক।
১৭৫। তৌ তু জাতৌ পরক্ষেত্রে প্রাণিনৌ প্ৰেত্য চেহ চ।
দত্তানি হব্যকব্যানি নাশয়েতে প্রদায়িনাম্ ॥
পরস্ত্রীতে জাত ঐ দুই জন ইহলোকে ও পরেললাকে দাতাদের প্রদত্ত হব্য কব্য নষ্ট করে।
১৭৬। অপাঙ্ক্ত্যো যাবতঃ পাঙ্ক্ত্যান্ ভুঞ্জানাননুপশ্যতি।
তাবতাং ন ফলং তত্র দাতা প্রাপ্নোতি বালিশঃ ॥
অপাংক্তেয় ব্যক্তি ভোজনরত যে কয়জন পাংক্তেয় ব্যক্তিকে দেখে, মুর্থ দাতা তত জনের (ভোজনের) ফল পান না।
১৭৭। বীক্ষ্যান্ধো নবতেঃ কাণঃ ষষ্টেঃ শ্বিত্রী শতস্য তু।
পাপরোগী সহস্ৰস্য দাতুর্নাশয়তে ফলম্ ॥
অন্ধব্যক্তি (পংক্তিদর্শন যোগ্য স্থানে উপবেশন করলে) দাতার নব্বই জন লোকের, কাণা ষাট জনের, শ্বেতী রোগী একশত জনের, (যক্ষ্মা কুষ্ঠাদি) পাপরাগী সহস্র জনের (ভোজনের) ফল নষ্ট করে।
১৭৮। যাবতঃ সংস্পৃশেদঙ্গৈর্ব্রাহ্মণান্ শূদ্রযাজকঃ।
তাবতাং ন ভবেদ্দাতুঃ ফলং দানস্য পৌর্তিকম্ ॥
শূদ্র যাজক ব্রাহ্মণ যতসংখ্যক ব্রাহ্মণের পংক্তিতে উপবেশন করে, দাতা যত জন ব্রাহ্মণকে পূর্তবিষয়ক২০ দান করেন ততজনের দানের ফল পান না।
১৭৯। বেদবিচ্চাপি বিপ্রোহস্য লোভাৎ কৃত্বা প্রতিগ্ৰহম্।
বিনাশং ব্রজতি ক্ষিপ্রমামপাত্রমিবাম্ভসি ॥
বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণও লোভহেতু এই শূদ্র যাজকের দান গ্রহণ করলে শীঘ্রই জলে অপক্ব মাটির পাত্রের ন্যায় বিনষ্ট হন।
১৮০। সোমবিক্ৰয়িণে বিষ্ঠা ভিষজে পূযশোণিতম্।
নষ্টং দেবলকে দত্তমপ্রতিষ্ঠন্তু বার্ধুযৌ ॥
সোমবিক্রেতাকে দান হয় বিষ্ঠা, চকিৎসককে দান হয় পূয ও রক্ত, দেবলকে২১ দান হয় নষ্ট, কুসীদজীবীকে যা দেওয়া হয়, তাতে দাতার প্রতিষ্ঠা হয় না।
১৮১। যত্তু বাণিজকে দত্তং নেহ নামুত্র তদ্ভবেৎ।
ভস্মনীব হুতং হব্যং তথা পৌনর্ভবে দ্বিজে॥
বণিবৃত্তি বা পূনর্ভুপ্রসূত দ্বিজকে যা দান করা হয়, তা ভস্মে হুত হব্যের ন্যায় ইহলোকে ও পরলোকে নিষ্ফল হয়।
১৮২। ইতরেষু ত্বপাঙ্ক্ত্যেষু যথোদ্দিষ্টেম্বসাধুষু।
মেদোহসৃঙ্গাংসমজ্জাস্থি বদন্ত্যন্নং মনীষিণঃ ॥
পূর্বোক্ত অন্যান্য অসং অপাংক্তেয় ব্যক্তিগণকে দত্ত অন্নকে মনীষিগণ (দাতার জন্মাত্তরে ভোজনের জন্য) মেদ, রক্ত, মাংস, মজ্জা ও অস্থি নামে অভিহিত করেন।
১৮৩। অপাঙ্ক্ত্যোপহতা পঙ্ক্তিঃ পাব্যতে যৈর্দ্বিজোত্তমৈঃ।
তান্নিবোধত র্কাৎস্ন্যেন দ্বিজাগ্ৰ্যান্পঙ্ক্তিপাবন্যন্॥
অপাংক্তেয়দূষিত পংক্তি যে ব্রাহ্মণকর্তৃক পবিত্র হয়, সেই শ্রেষ্ঠ পংক্তিপাবন দ্বিজগণ সম্বন্ধে বিস্তারিত শুনুন।
১৮৪। অগ্ৰ্যাঃ সর্বেষু বেদেষু সর্বপ্রবচনেষু চ।
শ্রোত্রিয়ান্বয়জাশ্চৈব বিজ্ঞেয়াঃ পঙ্ক্তিপাবনাঃ ॥
সকল বেদে, সকল বেদাঙ্গে যাঁরা শীর্ষস্থানীয় এবং বেদত্ত ব্রাহ্মণকুলে জাত, তাঁরা পংক্তিপাবন বলে জ্ঞেয়।
১৮৫- ত্ৰিণাচিকেতঃ পঞ্চাগ্নিস্ত্রিসুপর্ণঃ ষড়ঙ্গবিৎ।
১৮৬। ব্রহ্মদেয়াত্মসন্তানো জ্যেষ্ঠসামগ এব চ॥
বেদার্থবিৎ প্রবক্তা চ ব্রহ্মচারী সহস্রদঃ।
শতায়ুশ্চৈব বিজ্ঞেয়া ব্রাহ্মণাঃ পঙ্ক্তিপাবনাঃ ॥
ত্রিণাচিকেত, অগ্নিহোত্রী, ত্রিসুপর্ণ, ছয় বেদাঙ্গে অভিজ্ঞ, ব্রাহ্মবিবাহে জাত সন্তান ও জেষ্ঠ্যসামগ, বেদার্থজ্ঞ, বেদব্যাখ্যাতা, ব্রহ্মচারী, সহস্ৰদাতা, ও শতবর্ষবয়স্ক ব্রাহ্মণ পংক্তিপাবন বলে জ্ঞেয়।
১৮৭। পুর্বেদ্যুরপরেদ্যুর্বা শ্রাদ্ধকৰ্মণ্যুপস্থিতে।
নিমন্ত্রয়েত ত্র্যবারান্ সম্যগবিপ্রান্ যথোদিতান্ ॥
শ্রাদ্ধকৰ্ম উপস্থিত হলে পূর্বদিনে বা শ্রাদ্ধদিনে যথাক্ত অন্যূন তিনজন ব্রাহ্মণকে উপযুক্ত সৎকারপূর্বক নিমন্ত্রণ করবে।
১৮৮। নিমন্ত্রিতো দ্বিজঃ পিত্র্যে নিয়তাত্মা ভবেৎ সদা।
ন চ চ্ছন্দাংস্যধীয়ীত যস্য শ্রাদ্ধং চ তদ্ভবেৎ ॥
পিতৃকার্যে নিমন্ত্রিত দ্বিজ সর্বদা সংযতেন্দ্রিয় হবেন ও বেদাধ্যয়ন করবেন না; শ্রাদ্ধকর্তার পক্ষেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।
১৮৯। নিমন্ত্রিতান্ হি পিতর উপতিষ্ঠস্তি তান্ দ্বিজান্।
বায়ুবচ্চানুগচ্ছন্তি তথাসীনানুপাসতে ॥
পিতৃপুরুষগণ সেই নিমন্ত্রিত দ্বিগণকে পূজা করেন, বায়ুর ন্যায় তাঁদের অনুগমন করেন এবং তাঁরা উপবিষ্ট হলে নিকটে বসেন।
১৯০। কেতিতস্তু যথান্যায়ং হব্যকব্যে দ্বিজোত্তমঃ।
কথঞ্চিদপ্যতিক্রামন্ পাপঃ শূকরতাং ব্রজেৎ ॥
যথাবিধি হব কব্যে নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ কোন প্রকারে নিমন্ত্রণ রক্ষা না করলে পাপিষ্ঠ সেই ব্রাহ্মণ শূকরত্ব প্রাপ্ত হবেন।
১৯১। আমন্ত্রিতস্ত্ত যঃ শ্রাদ্ধে বৃষল্যা সহ মোদতে।
দাতুর্যদ্দুষ্কৃতং কিঞ্চিং তৎসৰ্বং প্রতিপদ্যতে ॥
শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত হয়ে যিনি শূদ্রার সঙ্গে বিলাস করেন, তিনি দাতার (শ্রাদ্ধকর্তার) সব কিছু দুষ্কৃত প্রাপ্ত হন।
১৯২। অক্রোধনাঃ শৌচপরাঃ সততং ব্রহ্মচারিণঃ।
ন্যস্তশস্ত্রা মহাভাগাঃ পিতরঃ পূর্বদেবতাঃ ॥
মহান পিতৃগণ ক্রোধরহিত, শুচি, নিয়ত ব্রহ্মচারী, যুদ্ধত্যাগী এবং অনাদি দেবতা। (অতএব শ্রাদ্ধদাতা ও শ্রাদ্ধভ্যেক্তা তাদৃশ হবেন)।
১৯৩। যম্মাদুৎপত্তিরেতেষাং সর্বেষামপ্যশেষতঃ
যে চ যৈরুপচর্যাঃ স্যুর্নিয়মৈস্তান্ নিবোধত ॥
যার থেকে এদের সকলের উৎপত্তি, যে সকল (শাস্ত্রবিহিত) নিয়মে তাঁরা সেবিত হবেন, সেইগুলি সম্পূর্ণরূপে শুনুন।
১৯৪। মনোর্হৈরণ্যগর্ভসা যে মরীচ্যাদয়ঃ সুতাঃ।
তেষামৃষীণাং সর্বেষাং পুত্রাঃ পিতৃগণাঃ স্মৃতাঃ ॥
হিরণ্যগর্ভসুত মনুর মরীচি প্রভৃতি যে পুত্রগণ, সেই সকল ঋষিদের পুত্রেরা পিতৃগণ বলে কথিত।
১৯৫। বিরাট্সুতাঃ সোমসদঃ সাধ্যানাং পিতরঃ স্মৃতাঃ।
অগ্মিম্বাত্তাশ্চ দেবানাং মারীচা লোকবিশ্রুতাঃ ॥
বিরাটের পুত্রদের নাম সোমসদ, তাঁরা সাধ্যগণের পিতা বলে কথিত। অগ্নিম্বাত্তা প্রভৃতি লোক বিশ্রুত মরীচিসুতগণ দেবগণের পিতা।
১৯৬। দৈত্য-দানব-যক্ষাণাং গন্ধর্বোরগ-রক্ষসাম্।
সুপর্ণ-কিন্নরাণাঞ্চ স্মৃতা বর্হিষদোহত্রিজাঃ ॥
অত্রিসুত বর্হিষদ দৈত্য, দানব, যক্ষ, গন্ধর্ব, সর্প, রাক্ষস, সুপর্ণ (পক্ষিবিশেষ) ও কিন্নরদের পিতা বলে কথিত।
১৯৭। সোমপা নাম বিপ্রাণাং ক্ষত্রিয়াণাং হবির্ভুজঃ।
বৈশ্যানামাজ্যপা নাম শূদ্রানান্তু সুকালিনঃ ॥
সোমপা ব্রাহ্মণগণের, হবির্ভুক্রা ক্ষত্রিয়দের, আজ্যপা বৈশ্যদের ও সুকালিন শূদ্রদের পিতা।
১৯৮। সোমপাস্তু কবেঃ পুত্রা হবিষ্মন্তোহঙ্গিরঃসুতাঃ।
পুলস্ত্যস্যাজ্যপাঃ পুত্ৰা বশিষ্ঠস্য সুকালিনঃ ॥
সোমপাগণ কবির, হবিষ্মত্ত অঙ্গিরার, আজ্যপা পুলস্ত্যের ও সুকালিন বশিষ্ঠের পুত্র।
১৯৯। অগ্নিদগ্ধানগ্নিদগ্ধআন্ কাব্যান্ বর্হিষদস্তথা।
অগ্নিধ্বাত্তাংশ্চ সৌম্যাংশ্চ বিপ্রাণামেব নির্দিশেৎ॥
অগ্নিদগ্ধ, অনগ্নিদগ্ধ, কাব্য, বর্হিষদ, অগ্নিধ্বাত্তা এবং সৌম্যকেও ব্রাহ্মণদের পিতা বলে জানবে।
২০০। য এতে তু গণা মুখ্যাঃ পিতৄণাং পরিকীর্তিতাঃ।
তেষামপীহ বিজ্ঞেয়ং পুত্রপৌত্রমনন্তকম্॥
এই পিতৃগণের মধ্যে যাঁরা প্রধান গণ বলে ঘোষিত, তাঁদেরও পুত্র পৌত্রগণ অনন্ত বলে জানবে।
২০১। ঋষিভ্যঃ পিতরো জাতাঃ পিতৃভ্যো দেবদানবাঃ।
দেবেভ্যস্তু জগৎ সর্বং চরং স্থাণ্বনুপূর্বশঃ ॥
ঋষিগণ থেকে পিতৃগণ, পিতৃগণ থেকে দেবতা ও দানব, দেবগণের থেকে সকল চরাচর জগৎ ক্রমে জন্মেছে।
২০২। রাজতৈর্ভাজনৈরেষামথবা রজতান্বিতৈঃ।
বার্যপি শ্রদ্ধয়া দত্তমক্ষয়ায়োপকল্পতে ॥
(পিতৃগণকে) রূপার পাত্রে বা রূপাযুক্ত তাম্রপাত্রে শ্রদ্ধাসহকার জলদান করলেও তা (পিতৃগণের) অক্ষয় তৃপ্তির কারণ হয়।
২০৩। দেবকার্যাদ্দিজাতীনাং পিতৃকার্যং বিশিষ্যতে।
দৈবং হি পিতৃকার্যস্য পূর্বমাপ্যায়নং স্মৃতম্॥
দ্বিজদের পক্ষে দেবকার্য অপেক্ষা পিতৃকার্য শ্রেয়, কারণ পিতৃকার্যের পূর্বে দেবগণের আপ্যায়ন হয় (অর্থাৎ দেবকার্য পিতৃকার্যের অঙ্গ)।
২০৪। তেষামারক্ষভুতন্তু পূর্বং দৈবং নিযোজয়েৎ।
রক্ষাংসি হি বিলুম্পন্তি শ্রদ্ধমারক্ষবর্জিতম্ ॥
সেই (পিতৃকার্যের) রক্ষস্বরূপ দৈবকার্য পূর্বে প্রযোজ্য ; কারণ, রাক্ষসেরা রক্ষাহীন শ্রাদ্ধ নষ্ট করে।
২০৫। দৈবাদ্যন্তং তদীহেত পিত্রাদ্যন্তং ন তদ্ভবেৎ।
পিত্রাদ্যন্তং ত্বীহমানঃ ক্ষিপ্রং নশ্যতি সান্বয়ঃ ॥
শ্রাদ্ধের আদি ও অন্তে দৈকার্যের জন্য চেষ্টা করবে, তার আদি ও অস্তে পিতৃকার্য থাকবে না। যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধের আদি ও অন্তে পিতৃকার্যের চেষ্টা করে সে সবংশে শীঘ্র নষ্ট হয়।
২০৬। শুচিং দেশং বিবিক্তঞ্চ গোময়েনোপলেপয়েৎ।
দক্ষিণাপ্রবণঞ্চৈব প্ৰযেত্নেনোপপাদয়েৎ ॥
পবিত্র ও নির্জন যে স্থান দক্ষিণদিকে ক্রমাবনত, তাকে সযত্নে গোময়লিপ্ত করবে।
২০৭। অবকাশেষু চোক্ষেষু নদীতীরেষু চৈব হি।
বিবিক্তেষু চ তুষ্যন্তি দত্তেন পিতরঃ সদা॥
স্বভাবতঃ শ্রাদ্ধ অরণ্যাদি প্রদেশে, নদীতীরে ও নির্জনস্থানে প্রদত্ত দ্রব্য দ্বারা পিতৃগণ সর্বদা তুষ্ট হন।
২০৮। আসনেষুপকৢপ্তেষু বর্হিষ্মৎসু পৃথক্ পৃথক্।
উপস্পৃষ্টোদকান্ সম্যগ্বিপ্রাংস্তানুপবেশয়েৎ ॥
পৃথক পৃথক্ রূপে বিন্যস্ত কুশময় আসনসমূহে সেই (নিমন্ত্রিত) স্নাত ও কৃতাচমন ব্রাহ্মণগণকে উপযুক্তরূপে বসাবে।
২০৯। উপবেশ্য তু তান্ বিপ্রানাসনেজুগুষ্পিতান্।
গন্ধমাল্যৈঃ সুরভিভির্চয়েদ্দেবপূর্বকম্ ॥
সেই অনিন্দিত ব্রাহ্মণগণকে উপবেশন করিয়ে গন্ধদ্রব্য ও সুগন্ধি মালা দ্বারা দেবাদিক্রমে তাঁদের অর্চনা করবে।
২১০। তেষামুদকমানীয় সপবিত্রাংস্তিলানপি।
অগ্নৌ কুর্যাদনুজ্ঞাতো ব্রাহ্মণো ব্রাহ্মণৈঃসহ ॥
ব্রাহ্মণ তাদের জল ও দর্ভসহ তিল দান করে ব্রাহ্মণগণ কর্তৃক অনুজ্ঞাত হয়ে অগ্নিতে (বক্ষ্যমাণরূপে) ব্রাহ্মণগণ সহ হোম করবেন।
২১১। অগ্নেঃ সোমযমাভ্যাঞ্চ কৃত্বাপ্যায়নমাদিতঃ।
হবির্দানেন বিধিবৎ পশ্চাৎ সন্তর্পয়েৎ পিতৃন্ ॥
প্রথমে হবিদানের দ্বারা অগ্নি, সোম ও যমকে প্রীত করে পরে যথাবিধি পিতৃগণকে তৃপ্ত করবে।
২১২। অগ্ন্যভাবে তু বিপ্ৰস্য পাণাবেবোপপাদয়েৎ।
যো হ্যগ্নিঃ স দ্বিজো বিপ্রৈর্মন্ত্রদর্শিভিরুচ্যতে ॥
অগ্নির অভাবে ব্রাহ্মণের হস্তেই (আহুতিত্রয়) প্রদান করবে। বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ বলেন, যা অগ্নি তাই দ্বিজ।
২১৩। অক্ৰোধনান্ সপ্ৰসাদান্ বদস্ত্যেতান্ পুরাতনান্।
লোকস্যাপ্যায়নে যুক্তান্ শ্রাদ্ধদেবান্ দ্বিজোত্তমান্ ॥
ক্রোধহীন, প্রসন্ন, (সৃষ্টির অনাদিত্বহেতু) পুরাতন, লোকবৃদ্ধির জন্য তৎপর ব্রাহ্মণগণ শ্রাদ্ধের পাত্ৰভূত বলে (মনু প্রভৃতি) নির্দেশ করেছেন।
২১৪। অপসব্যমগ্নৌ কৃত্বা সর্বমাবৃৎ পরিক্রমম্।
অপসব্যেন হস্তেন নিৰ্বপেদুদকং ভুবি ॥
(অগ্নিপর্যুক্ষণাদি করে) দক্ষিণভাগে অগ্নৌকরণ হোমের অনুষ্ঠান করে পরে দক্ষিণ হস্তে পিণ্ডাধারভূত ভূমিতে জলদান করবে।
২১৫। ত্রীংস্তু তস্মাদ্ধবিঃশেষাৎ পিণ্ডান্ কৃত্বা সমাহিতঃ।
ঔদেকেনৈব বিধি নিৰ্বপেদ্দক্ষিণামুখঃ ॥
সেই হবির অবশিষ্ট অংশ থেকে তিনটি পিণ্ড প্রস্তুত করে সমাহিত চিত্তে দক্ষিণ মুখ হয়ে ঔদকবিধি অনুসারেই দান করবে।
২১৬। ন্যুপ্য পিণ্ডাংস্ততস্তাংস্তু প্ৰয়তো বিধিপূর্বকম্।
তেষু দর্ভেষু তং হস্তং নিমৃজ্যাল্লেপভাগিনাম্ ॥
যত্নসহকারে যথাবিধি সেই পিণ্ডগুলি দান করে ঐ দর্ভের উপরে লেপভাগিগণের (অর্থাৎ প্রপিতামহপিত্রাদি তিনপুরুষ) তৃপ্তির জন্য ঐ হস্ত মার্জন করবে।
২১৭। আচম্যোদক্পরাবৃত্য ত্রিরায়ম্য শনৈরসুন্।
ষড়্ঋতুংশ্চ নমস্কুর্যাৎ পিতৄনেব চ মন্ত্রবিৎ ॥
মন্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ আচমনপূর্বক উত্তরমুখ হয়ে প্রাণায়াময় করে, ছয় ঋতুকে ও পিতৃগণকে নমস্কার করবেন।
২১৮। উদকং নিনয়েচ্ছেষং শনৈঃ পিণ্ডান্তিকে পুনঃ।
অবজিঘ্রেচ্ছ তান্ পিণ্ডান্ যথানুপ্তান্ সমাহিতঃ।
(পিণ্ডদানের পূর্বে) পিণ্ডের কাছে ধীরে ধীরে জল উৎসর্গ করবে এবং যে ক্রমে পিণ্ডাদি দান করা হয়েছে সেই ক্রমেই ঐগুলিকে ঘ্রাণ করবে।
২১৯। পিণ্ডেভ্যন্ত্বল্পিকাং মাত্রাং সমাদায়ানুপূর্বশঃ।
তানেব বিপ্রানাসীনান্ বিধিবৎ পূর্বমাশয়েৎ ॥
পিণ্ডগুলির থেকে অল্প অংশ ক্রমে নিয়ে তা উপবিষ্ট ব্রাহ্মণগণকে প্রথমে যথাবিধি ভোজন করাবে।
২২০। ধ্রিয়মাণে তু পিতরি পূর্বেষামেব নিৰ্বপেৎ।
বিপ্রবদ্বাপি তং শ্রাদ্ধে স্বকং পিতামাশয়েৎ ॥
পিতা জীবিত থাকতে তাঁর উর্ধ্বতন পুরুষগণের (অর্থাৎ পিতামহ, প্রপিতামহ ও বৃদ্ধ প্রপিতামহের) শ্রাদ্ধ করবে অথবা পিতৃব্রাহ্মণ স্থানে নিজের পিতাকেই ভোজন করাবে।
২২১। পিতা যস্য নিবৃত্তঃ স্যাজ্জীবেদ্বাপি পিতামহঃ।
পিতুঃ স নাম সঙ্কীর্ত্য কীৰ্তযেং প্রপিতামহম্ ॥
যাঁর পিতা মৃত, পিতামহ জীবিত, তিনি পিতার নাম কীর্তন করে প্রপিতামহের নাম কীর্তন করবেন।
২২২। পিতামহো বা তচ্ছ্র্যদ্ধং ভুঞ্জীতেতাব্রবীন্মনুঃ।
কামং বা সমনুজ্ঞাতঃ স্বয়মেব সমাচরেৎ ॥
পিতামহ জীবিত থাকলে তাঁকে ভোজন কাবে (এবং পিতৃপিতামহের শ্রাদ্ধ করবে) অথবা জীবিত পিতামহের অনুমতিক্রমে তঁকে ভোজন করাবে (পিতামহের শ্রাদ্ধ করবে কিম্বা পিতামহকে ভোজন না করিয়ে পিতৃপ্রপিতামহবৃদ্ধপ্রপিতামহের শ্রাদ্ধ করবে), মনু এই বলেছেন।
২২৩। তেষাং দত্ত্বা তু হস্তেষু সপবিত্রং তিলোদকম্।
তৎপিণ্ডাগ্রং প্রযচ্ছেত স্বধৈষামত্ত্বিতি ব্ৰুবন্॥
তাঁদের (সেই পিত্রাদি ব্রাহ্মণের) দৰ্ভসহ তিলোদক দান করে পূর্বোক্ত পিণ্ডাংশগুলি ‘এষাংস্বধা অস্তু’ বলে (পিত্রাদি ব্রাহ্মণের হস্তে) দান করবেন।
২২৪। পাণিভ্যাস্তুপসংগৃহ্য স্বয়মন্নস্য বর্দ্ধিতম্।
বিপ্রান্তিকে পিতৃন্ ধ্যায়ন্শনকৈরুপনিক্ষিপেৎ ॥
পূর্ণ অন্নপাত্র হস্তদ্বয়ে ধারণপূর্বক পিতৃগণের ধ্যান করে ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণগণের সমীপে রাখবেন।
২২৫। উভয়োর্হস্তয়োর্মুক্তং যদন্নমুপনীয়তে।
তদ্বিপ্রলুস্পস্ত্যসুরাঃ সহসা দুষ্টচেতসঃ ॥
উভয় হস্তমুক্ত যে অন্ন আনীত হয়, তাকে হঠাৎ দুষ্টবুদ্ধি অসুরগণ নষ্ট করে।
২২৬। গুণাংশ্চ সুপশাকাদ্যান্ পয়ো দধি ঘৃতং মধু।
বিন্যসেৎ প্রযতঃ সম্যগ্ ভূমাবেব সমাহিতঃ ॥
নানাবিধ ব্যঞ্জন, সূপ শাকাদি, দুগ্ধ, দধি, ঘৃত ও মধু সাবধানে পূর্বে সমাহিতচিত্তে মাটিতেই স্থাপন করবে।
২২৭। ভক্ষ্যং ভোজ্যঞ্চ বিবিধং মূলানি চ ফলানি চ।
হৃদ্যানি চৈব মাংসানি পানানি সুরভীণি চ ॥
বিবিধ ভক্ষ্য (মোদকাদি) ও ভোজ্য (পায়সাদি) ; বিবিধ মূল, ফল, মনোমত মাংস ও সুগন্ধি পানীয়—সেই সব এনে ধীরে ধীরে সমাহিতচিত্তে সাবধানে ঐগুলির সব গুণ বলতে বলতে পরিবেশন করাবে।
২২৮। উপনীয় তু তৎ সর্বং শনকৈঃ সুসমাহিতঃ।
পরিবেষয়েত প্রযতো গুণান্ সর্বান্ প্রচোদয়ন্॥
অতি সমাহিত হয়ে সেই সব ধীরে ধীরে উপস্থাপিত করে পবিত্র হয়ে তাদের সকল গুণ বলতে বলতে পরিবেশন করবে।
২২৯। নাম্রমাপাতয়েজ্জাতু ন কুপ্যেন্নানৃতং বদেৎ।
ন পাদেন স্পৃশেদন্নং ন চৈতদবধূনয়েৎ ॥
কখনও অশ্রুবিসর্জন করবে না, ক্রোধ প্রকাশ করবে না, মিথ্যা কথা বলবে না, পা দিয়ে অন্ন স্পর্শ করবে না, পরিবেষণ পাত্র থেকে উৎক্ষিপ্ত করে ভোজনপাত্রে দিবে না।
২৩০। অস্রং গময়তি প্রেতান্ কোপোহরীননৃতং শুনঃ।
পাদস্পর্শস্তু রক্ষাংসি দৃষ্কৃতীনবধুননম্ ॥
অশ্রু অন্নকে প্রেতদের, কোপ শত্রুদের, মিথ্যা কুকুরের, পাদস্পর্শ রাক্ষসদের ও উৎক্ষেপণ দুষ্কৃতকারীদের নিকট নিয়ে যায়।
২৩১। যদ্যদ্রোচেত বিপ্রেভ্যস্তত্তদ্দদ্যাদমৎসরঃ।
ব্রহ্মোদ্যাশ্চ কথাঃ কুর্যাৎ পিতৃণামেতদীপ্সিতম্ ॥
ব্রাহ্মণদের যে সকল দ্রব্য রুচিকর, সেই সকল দ্রব্য মাৎসর্যহীন হয়ে দান করবে। পরমাত্মবিষয়ক কথা সকলও বলবে ; পিতৃগণের এটি ঈঙ্গিত।
২৩২। স্বাধ্যায়ং শ্রাবয়েৎ পিত্র্যে ধর্মশাস্ত্রাণি চৈব হি।
আখ্যানানীতিহাসংশ্চ পুরাণানি খিলানি চ ॥
পিতৃকার্যে (ব্রাহ্মণদের) বেদ, ধর্মশাস্ত্র, আখ্যান, ইতিহাস, পুরাণ ও খিল (শ্রীসূক্তশিবসংকল্পাদি) শোনাবে।
২৩৩। হর্ষয়েদ্ব্রাহ্মণাংস্তুষ্টো ভোজয়েচ্চ শনৈঃ শনৈঃ।
অন্নাদ্যেনাসকৃচ্চৈতান্ গুণৈশ্চ পরিচোদয়েৎ ॥
সন্তুষ্ট হয়ে ব্রাহ্মণগণকে আনন্দ দান করবে, ধীরে ধীরে তাদের অন্নাদি ভোজন করাবে এবং (মিষ্টান্ন পায়সাদির) গুণ বর্ণন পূর্বক বারংবার ব্রাহ্মণগণকে (গ্রহণ করতে) অনুরোধ করবে।
২৩৪। ব্ৰতস্হমপি দৌহিত্রং শ্রাদ্ধে যত্নেন ভোজয়েৎ।
কুতপঞ্চাসনে দদ্যাৎ তিলৈশ্চ বিকিরেম্মহীম্ ॥
দৌহিত্র ব্রহ্মচারী হলেও তাকে সযত্নে শ্রদ্ধে ভোজন করাবে। আসন হিসাবে নেপালী কম্বল দান করবে, মাটিতে তিল ছিটিয়ে দিবে।
২৩৫। ত্রীণি শ্রাদ্ধে পবিত্রাণি দৌহিত্রঃ কুতপস্তিলাঃ।
ত্রীণি চাত্র প্রশংসন্তি শৌচমক্রোধমত্বরাম্ ॥
দৌহিত্র, নেপালী কম্বল ও তিল—শ্রাদ্ধে এই তিনটি পবিত্র। এতে শুচিতা, ক্রোধশূন্যতা ও ত্বরাহীনতা—এই তিনটিকে প্রশংসা করা হয়।
২৩৬। অত্যুষ্ণং সর্বমন্নং স্যাদদ্ভুঞ্জীরংস্তে চ বাগ্যতাঃ।
ন চ দ্বিজাতয়ো ব্রুয়ুর্দাত্রা পৃষ্টা হবির্গুণান্॥
সকল অন্ন অতি উষ্ণ হবে। সেই ব্রাহ্মণগণ সংযতবাক্ হয়ে তা ভক্ষণ করবেন। দাতা (শ্রাদ্ধকর্তা) কর্তৃক শ্রাদ্ধীয় দ্রব্যের গুণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে দ্বিজগণ বলবেন না।
২৩৭। যাবদুষ্ণং ভবত্যন্নং যাবদশ্নন্তি বাগ্যতাঃ।
পিতরস্তাবদশ্নন্তি যাবন্নোক্তা হবির্গুণাঃ ॥
অন্ন যতক্ষণ উষ্ণ থাকে, ততক্ষণ পিতৃগণ মৌনী হয়ে ভক্ষণ করবেন যতক্ষণ না শ্রাদ্ধীয় দ্রব্যের গুণ বলা হয়।
২৩৮। যদ্বেষ্টিতশিরা ভুঙ্ক্তে যদ্ভুংক্তে দক্ষিণমুখঃ।
সোপানৎকশ্চ যদ্ভুঙ্ক্তে তদ্বৈ রক্ষাংসি ভুঞ্জতে॥
(ব্রাহ্মণগণ) মস্তকে বস্ত্র বেষ্টন করে দক্ষিণমুখ হয়ে ও চর্মপাদুকা পরিহিত হয়ে যা ভক্ষণ করেন, তা রাক্ষসেরা ভোজন করে।
২৩৯। চাণ্ডালশ্চ বরাহশ্চ কুক্কুটঃ শ্বা তথৈব চ।
রজস্বলা চ ষণ্ঢশ্চ নেক্ষেরন্নশ্নতো দ্বিজান্ ॥
ভোজনরত দ্বিজগণকে চণ্ডাল, শুকর, কুক্কুট, কুকুর, রজস্বলা নারী ও ক্লীব দেখবে না।
২৪০। হোমে প্রদানে ভোজ্যে চ যদেভিরভিবীক্ষ্যতে।
দৈবে কর্মণি পিত্রে বা তদ্গচ্ছত্যযথাতথম্ ॥
দৈব ও পিতৃকার্যে, হোমে, দানে ও ভোজ্যে এরা যা দেখে, তা বিফল হয়।
২৪১। ঘ্রাণেন শুকরো হন্তি পক্ষবাতেন কুক্কুটঃ।
শ্বা তু দৃষ্টিনিপাতেন স্পর্শেনাবরবর্ণজঃ ॥
শূকর ঘ্রাণঘারা, কুক্কুট পক্ষবায়ু দ্বারা, কুকুর দৃষ্টিপাতের দ্বারা ও শূদ্র স্পর্শদ্বারা নষ্ট করে।
২৪২। খঞ্জো বা যদি বা কাণো দাতুঃ প্রেষ্যোহপি বা ভবেৎ।
হীনাতিরিক্তগাত্রো বা তমপ্যপনয়েৎ ততঃ ॥
খঞ্জ, কাণা, শ্রাদ্ধকর্তার ভৃত্য, হীনাঙ্গ বা অধিকাঙ্গ ব্যক্তিকে সেই স্থান থেকে অপসারণ করবে।
২৪৩। ব্রাহ্মণং ভিক্ষুকং বাপি ভোজনার্থমুপস্থিতম্।
ব্রাহ্মণৈরভ্যনুজ্ঞাতঃ শক্তিতঃ প্রতিপূজয়েৎ ॥
ব্রাহ্মণ বা ভিক্ষুক ভোজনের জন্য উপস্থিত হলে ব্রাহ্মণগণের অনুমতিক্রমে যথাশক্তি তাদের সম্মান করবে।
২৪৪। সার্ববর্ণিকমন্নাদ্যং সন্নীয়াপ্লাব্য বারিণা।
সমুৎসৃজেদ্ভূক্তবতামগ্ৰতো বিকিরন্ ভুবি ॥
ভুক্ত ব্রাহ্মণগণের সম্মুখে সর্বপ্রকার অন্নব্যঞ্জনাদি একত্র করে জল দিয়ে প্লাবিত করে মাটিতে (দর্ভোপরে) ছড়িয়ে দিতে হবে।
২৪৫। অসংস্কৃতপ্রমীতানাং ত্যাগিনাং কুলযোষিতাম্।
উচ্ছিষ্টং ভাগধেয়ং স্যাদ্দর্ভেষু বিকির যঃ ॥
যারা সংস্কারের পূর্বে মৃত ও যারা (নির্দোষ) কুলস্ত্রীকে পরিত্যাগ করে মৃত, দর্ভোপরি পাত্রোচ্ছিষ্ট অন্ন (ও অগ্নিদগ্ধা পিণ্ড) তাদের প্রাপ্য ভাগ হবে।
২৪৬। উচ্ছেষণং ভূমিগতমজিহ্মস্যাশঠস্য চ।
দাসবর্গস্য তৎ পিত্র্যে ভাগধেয়ং প্রচক্ষতে ॥
পিতৃকার্যে মাটিতে যে উচ্ছিষ্ট পড়ে যায়, তা যে দাসগণ সরলস্বভাব ও শঠতাহীন তাদের প্রাপ্য ভাগ বলা হয়েছে।
২৪৭। আসপিণ্ডক্রিয়াকর্ম দ্বিজাতেঃ সংস্থিতস্য তু।
অদৈবং ভোজয়েচ্ছ্রাদ্ধং পিণ্ডমেকন্তু নির্বপেৎ ॥
সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধপর্যন্ত অচিরমৃত দ্বিজের বৈশ্বদেবব্রাহ্মণভোজনরহিত শ্রদ্ধার্থ অন্ন (ব্রাহ্মণকে) ভোজন করাবে এবং একটি পিণ্ড দিবে।
২৪৮। সহপিণ্ডক্রিয়ায়ন্তু কৃতায়ামস্য ধর্মতঃ।
অনয়ৈবাবৃতা কার্যং পিণ্ডনির্বপণং সুতৈঃ ॥
মৃতব্যক্তির ধর্মানুসারে সপিণ্ডীকরণ সমাপ্ত হলে পুত্রগণ কর্তৃক (সকল তিথিতে) এই (পার্বণরীতিতেই) পিণ্ডদান করণীয়।
২৪৯। শ্রাদ্ধং ভুক্ত্বা য উচ্ছিষ্টং বৃষলায় প্রযচ্ছতি।
স মূঢ়ো নরকং যাতি কালসূত্রমবাক্শিরাঃ ॥
যে শ্রাদ্ধে ভোজন করে উচ্ছিষ্ট শূদ্রকে দেয়, সেই মূর্খ অধোমুখে কালসূত্র নামক নরকে গমন করে।
২৫০। শ্রাদ্ধভুগ্ বৃষলীতল্পং তদহর্যোহধিগচ্ছতি।
তস্যাঃ পুরীষে তেন্মাসং পিতরস্তস্য শেরতে ॥
শ্রাদ্ধে ভোজন করে যে সেই দিন শুদ্ৰাসম্ভোগ করে, তার পিতৃপুরুষগণ সেই স্ত্রীলোকের বিষ্ঠায় সেই মাস শয়ন করেন।
২৫১। পৃষ্টা স্বদিতমিত্যেবং তৃপ্তানাচাময়েৎ ততঃ।
আচান্তাংশ্চানুজানীয়াদভি ভো রম্যতামিতি ॥
তৃপ্ত ব্রাহ্মণগণকে (তৃপ্তিবোধক) স্বদিত জিজ্ঞাসা করে আচমন করাবে। তাঁরা আচমন করলে ‘ভো অভিরম্যতাং’ (বিশ্রাম করুন) এই বলে বিশ্রাম করতে বলবে।
২৫২। স্বধাস্ত্বিত্যেব তং ব্রূয়ূর্ব্রাহ্মণাস্তদনন্তরম্।
স্বধাকারঃ পরা হ্যাশীঃ সর্বেষু পিতৃকর্মসু ॥
তারপর ব্রাহ্মণগণ তাঁকে ‘স্বধা অস্তু’ (স্বধা হউক) এই কথা বলবেন। সকল পিতৃকার্যে স্বধা-উচ্চারণ শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।
২৫৩। ততো ভুক্তবতাং তেষামন্নশেষং নিবেদয়েৎ।
যথা ব্ৰুয়ুস্তথা কুর্যাদনুজ্ঞাতস্ততো দ্বিজৈঃ ॥
তারপর সেই ভুক্ত ব্রাহ্মণগণকে অবশিষ্ট অন্নের কথা বলবে। দ্বিজগণ কর্তৃক অনুজ্ঞাত হয়ে তাঁরা যেমন বলবেন তেমনই করবে।
২৫৪। পিত্র্যে স্বদিতমিত্যেবং বাচ্যং গোষ্ঠে তু সুশ্রুতম্।
সম্পন্নমিত্যভ্যুদয়ে দৈবে রুচিতমিত্যপি॥
পিতৃকার্যে ব্রাহ্মণগণকে স্বদিত, গোষ্ঠীশ্রাদ্ধে সুশ্রুত, আভদয়িক (বা বৃদ্ধি) শ্রাদ্ধে সম্পন্ন, দৈবশ্রাদ্ধে রুচিত এই কথা বলতে হয়।
২৫৫। অপরাহ্ণস্তথা দর্ভা বাস্তুসম্পাদনং তিলাঃ।
সৃষ্টির্সৃষ্টিৰ্দ্বিজাশ্চাগ্রাঃ শ্রাদ্ধকৰ্মসু সম্পদঃ ॥
অপরাহ্ণ, (কুশাদি) দর্ভ, উত্তমরূপে মার্জিত গৃহাদি, তিল, অকৃপণভাবে অন্নদান, অন্নাদির বিশেষ সংস্কার, পংক্তিপাবন ব্রাহ্মণ—এইগুলি শ্রাদ্ধকার্যে সম্পদ।
২৫৬। দর্ভাঃ পবিত্রং পূর্বাহ্ণো হবিষ্যাণি চ সর্বশঃ।
পবিত্রং যচ্চ পূর্বোক্তং বিজ্ঞেয়া হব্যসম্পদঃ ॥
কুশ, মন্ত্র, পূবাহ্ণ, (বক্ষ্যমাণ মুন্যন্নাদি) উৎকৃষ্ট সকল হবিষ্য, পূর্বোক্ত পবিত্র বস্তু প্রভৃতি হব্যে (বা দৈবকার্যে) সম্পদ্।
২৫৭। মুন্যন্নানি পয়ঃ সোমো মাংসং যচ্চানুপস্কৃতম্।
অক্ষারলবণংচৈব প্রকৃত্যা হবিরুচ্যতে॥
মুন্যন্ন (বানপ্রস্থের খাদ্য), দুগ্ধ, সোমরস, অবিকৃত মাংস, (সৈন্ধবাদি) অকৃত্রিম লবণ স্বাভাবিক হবিষ্যান্ন বলে কথিত হয়।
২৫৮। বিসৃজ্য ব্রাহ্মণাংস্তাংস্তু নিয়তো বাগ্যতঃ শুচিঃ।
দক্ষিণাং দিশমাকাঙ্ক্ষন্ যাচেতেমান্ বরান্ পিতৃন্ ॥
সেই (নিমন্ত্রিত) ব্রাহ্মণগণকে বিদায় দিয়ে অনন্যচিত্তে মৌনী ও শুচি হয়ে দক্ষিণদিক্ দেখতে দেখতে পিতৃপুরুষের নিকট এই (বক্ষ্যমাণ) বরগুলি প্রার্থনা করবে।
২৫৯। দাতারো নোহভিবর্ধন্তাং বেদাঃ সন্ততিরেব চ।
শ্রদ্ধা চ নো মা ব্যগমদ্বহুদেয়ঞ্চ নোহস্ত্বিতি ॥
আমাদের বংশে দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি হোক, বেদের অধ্যয়ন অধ্যাপনা সমধিক হোক, আমাদের শ্রদ্ধা যেন অপগত না হয়, দান করার মত আমাদের বহুদ্ৰব্য হোক।
২৬০। এবং নির্বপণং কৃত্বা পিণ্ডাংস্তাংস্তদনন্তরম্।
গাং বিপ্রমজমগগ্নিং বা প্রাশয়েদপ্সু বা ক্ষিপেৎ॥
এই রূপে পিণ্ডদান করে (উক্ত বর প্রার্থনার) পরে সেই পিণ্ডগুলি গাভী, ব্রাহ্মণ বা অজকে খাওয়াবে অথবা অগ্নিতে বা জলে নিক্ষেপ করবে।
২৬১। পিন্ডনির্বপণং কেচিৎ পুরস্তাদেব কুর্বতে।
বয়োভিঃ খাদয়ন্ত্যন্যে প্রক্ষিপন্ত্যনলেহপ্সু বা ॥
কেউ কেই পিণ্ডদান পূর্বেই (ব্রাহ্মণভোজনের পরেই) করেন। অপর ব্যক্তিগণ পাখী দিয়ে খাওয়ান বা আগুনে অথবা জলে পিণ্ড নিক্ষেপ করেন।
২৬২। পতিব্রতা ধর্মপত্নী পিতৃপূজনতৎপরা।
মধ্যমন্তু ততঃ পিণ্ডমদ্যাৎ সম্যক্ সুতার্থিনী ॥
পৃতিব্রতা, ধর্মপত্নী (অর্থাৎ প্রথম বিবাহিতা সবর্ণা নারী) পিতৃপূজাপরায়ণা (অর্থাৎ শ্রাদ্ধে শ্রদ্ধাশীলা), পুত্রার্থিনী স্ত্রী সম্যক্রূপে মধ্যম (অর্থাৎ পতির পিতামহের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত) পিণ্ড ভক্ষণ করবেন।
২৬৩। আয়ুষ্মন্তং সুতং সূতে যশোমেধাসমন্বিতম্।
ধনবন্তং প্রজাবন্তং সাত্ত্বিকং ধার্মিকং তথা ॥
(সেই পিণ্ড ভোজন করলে) দীর্ঘায়ু, যশস্বী, মেধাবী, ধনবান্, পুত্রবান্, সাত্ত্বিক ও ধার্মিক পুত্র (স্ত্রী) প্রসব করেন।
২৬৪। প্রক্ষাল্য হস্তাবাচম্য জ্ঞাতিপ্রায়ং প্রকল্পয়েৎ।
জ্ঞাতিভ্যঃ সৎকৃতং দত্ত্বা বান্ধবানপি ভোজয়েৎ ॥
হাত দুটি ধুয়ে ও আচমন করে জ্ঞাতিভোজন করাবেন। জ্ঞাতিদের সৎকার করে (মাতৃপক্ষীয়) বান্ধবগণকেও ভোজন করাবেন।
২৬৫। উচ্ছেষণন্তু তৎ তিষ্ঠেদ্যাবদ্ধিপ্রা বিসর্জিতাঃ।
ততো গৃহবলিং কুর্যাদিতি ধর্ম্যে ব্যবস্থিতঃ ॥
যতক্ষণ পর্যন্ত ব্রাহ্মণগণকে বিদায় না দেওয়া হয়, ততক্ষণ উচ্ছিষ্ট থাকবে। তারপর গৃহবলি দান করবে—এই ধর্ম বিহিত।
২৬৬। হবির্যচ্চিররাত্রায় যচ্চানন্ত্যায় কল্প্যতে।
পিতৃভ্যো বিধিবদ্দত্তং তৎ প্রবক্ষ্যাম্যশেষতঃ ॥
পিতৃপুরুষকে যথাবিধি দত্ত যে হবি চিরকাল আনন্ত্যের হেতু হয়, তা সম্পূর্ণভাবে বলছি।
২৬৭। তিলৈর্ব্রীহির্যবৈর্মাষৈরদ্ভির্মূলফলেন বা।
দত্তেন মাসং প্রীয়ন্তে বিধিবৎ পিতরো নৃণাম্ ॥
মানুষের পিতৃগণ যথাবিধি প্রদত্ত তিল, ধান, যব, মাষ, জল, মূল, ফল দ্বারা এক মাস তৃপ্তি লাভ করেন।
২৬৮। দ্বৌ মাসৌ মৎস্যমাংসেন ত্ৰীন্ মাসান্ হারিণেন চ।
ঔরভ্রেণাথ চতুরঃ শাকুনেনাথ পঞ্চ বৈ ॥
(তাঁরা) মৎস্য মাংস দ্বারা দুই মাস, হরিণ মাংসে তিন মাস, মেষ মাংস দ্বারা চার মাস, পশ্চিমাংস দ্বারা পাঁচ মাস (তৃপ্তি লাভ করেন)।
২৬৯। যগ্মাসাংশ্ছাগমাংসেন পার্যতেন চ সপ্ত বৈ।
অষ্টাবেণস্য মাংসেন রৌরবেণ নবৈব তু ॥
ছাগমাংসে ছয় মাস, চিত্রিত মৃগমাংস দ্বারা সাত মাস, এণ মৃগমাংস দ্বারা আট মাস ও রুরুমৃগ মাংস দ্বারা নয় মাস (তৃপ্তিলাভ হয়)।
২৭০। দশমাসাংস্ত্ত তৃপ্যন্তি বরাহমহিষামিষৈঃ।
শশকূর্ময়োস্ত মাংসেন মাসানেকাদশৈব তু ॥
শূকর ও মহিষের মাংস দ্বারা দশ মাস (পিতৃগণ) তৃপ্ত হন। শশক ও কচ্ছপের মাংস দ্বারা একাদশ মাস (তৃপ্তি হয়)।
২৭১। সংবৎসরস্তু গব্যেন পয়সা পায়সেন চ।
বার্ধ্রীণসস্য মাংসেন তৃপ্তির্দ্বাদশবার্ষিকী॥
গাভীদুগ্ধ২২ ও (সেই দুগ্ধে প্রস্তুত) পায়স দ্বারা এক বৎসর, বার্ধ্রীণসের২৩ মাংসে, দ্বাদশ বর্ষ তৃপ্তি হয়।
২৭২। কালশাকং মহাশলল্কাঃ খড়গলোহামিষং মধু।
আনন্ত্যায়ৈব কল্পন্তে মুন্যন্নানি চ সর্বশঃ ॥
কালশাক, মহাশোল মাছ, গণ্ডার ও রক্তবর্ণ ছাগ মাংস, মধু, সর্ববিধ নীবারাদি ধান্য অনন্তকাল তৃপ্তিদায়ক হয়।
২৭৩। যৎকিঞ্চিন্মধুনা মিশ্রং প্রদদ্যাৎ তু ত্রয়োদশীম্।
তদপ্যক্ষয়মেব স্যাদ্বর্ষাসু চ মঘাসু চ ॥
বর্ষাকালে মঘানক্ষত্রে ত্রয়োদশী তিথিতে মধুমিশ্রিত যা কিছু দেওয়া যায়, তাতেও অক্ষয়তৃপ্তি হয়।
২৭৪। অপি নঃ স কুলে জায়াদ্ যো ন দদ্যাৎ ত্রয়োদশীম্।
পায়সং মধুসর্পির্ভ্যাং প্রাক্ছায়ে কুঞ্জরস্য চ ॥
(পিতৃগণ এই প্রার্থনা করেন) আমাদের কুলে এমন লোক জন্মগ্রহণ করুক, যে আমাদের (মঘানক্ষত্র যুক্ত কৃষ্ণা) ত্রয়োদশীতে বা (অন্য তিথিতে) হস্তীর পূর্বদিক্স্থিত ছায়ায় ঘৃতমধুযুক্ত পায়স দিবে।
২৭৫। যদ্যদ্দদাতি বিধিবৎ সম্যক্ শ্রদ্ধাসমন্বিতঃ।
তৎ তৎ পিতৃণাং ভবতি পরত্রানন্তমক্ষয়ম্ ॥
যথাবিধি উপযুক্তরূপে শ্রদ্ধাসহকারে যা যা দেওয়া হয়, সেই সেই দ্রব্যে পিতৃপুরুষগণের পরলোকে অনন্তকাল অক্ষয়তৃপ্তি হয়।
২৭৬। কৃষ্ণপক্ষে দশম্যাদৌ বর্জয়িত্বা চতুর্দশীম্।
শ্রাদ্ধে প্রশস্তাস্তিথয়ো যথৈতা ন তথেতরাঃ ॥
কৃষ্ণপক্ষে দশমী প্রভৃতি চতুর্দশী ভিন্ন তিথিগুলি শ্রাদ্ধে প্রশস্ত ; অন্যগুলি তেমন নয়।
২৭৭। যুক্ষু কুর্বন্ দিনর্ক্ষেষু সর্বান্ কামান্ সমশ্লুতে।
অযুক্ষু তু পিতৃন্ সর্বান্ প্রজাং প্রাপ্নোতি পুষ্কলাম্ ॥
যুগ্ম তিথি নক্ষত্রে (শ্রাদ্ধ করলে) সকল কাম্যবস্তু লাভ হয়। অযুগ্ম তিথিনক্ষত্রে পিতৃকার্য করলে (ধনবিদ্যাদি সম্পন্ন) সন্তান লাভ করা যায়।
২৭৮। যথা চৈবাপরঃ পক্ষঃ পূর্বপক্ষাদ্ বিশিষ্যতে।
তথা শ্রাদ্ধস্য পূর্বাহ্ণদপরাহ্ণো বিশিষ্যতে ॥
যেমন কৃষ্ণপক্ষ শুক্লপক্ষ অপেক্ষা (শ্রাদ্ধে) শ্রেয়, তেমনই শ্রাদ্ধে পূর্বাহ্ণ অপেক্ষা অপরাহ্ণ প্রশস্ত।
২৭৯। প্রাচীনাবীতিনা সম্যগপসব্যমতন্দ্রিণা।
পিত্র্যমানিধনাৎ কার্যং বিধিবদ্দর্ভপাণিনা॥
শ্রাদ্ধ সমাপ্তি পর্যন্ত প্রাচীনাবীতী অনলস, কুশহস্ত হয়ে যথাবিধি পিতৃতীর্থ দ্বারা পিতৃকার্য করণীয়।
২৮০। রাত্রৌ শ্রাদ্ধং ন কুর্বীত রাক্ষসী কীর্তিতা হি সা।
সন্ধ্যয়োরুভয়োশ্চৈব সূর্যে চৈবাচিরোদিতে ॥
রাত্রিবেলা শ্রাদ্ধ করণীয় নয়, রাত্রিকে রাক্ষসী বলা হয়েছে। উভয় সন্ধিক্ষণে (অর্থাৎ প্রাতে ও সন্ধ্যায়) এবং সুর্যোদয়ের অল্পকাল পরে (শ্রাদ্ধ করণীয় নয়)।
২৮১। অনেন বিধিনা শ্রাদ্ধং ত্রিরব্দস্যেহ নিৰ্বপেৎ।
হেমন্তগ্রীষ্মবর্ষাসু পাঞ্চযজ্ঞিকমম্বহম্ ॥
এই নিয়মানুসারে বৎসরে হেমন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা এই তিনবার শ্রাদ্ধ করবে, পঞ্চ যজ্ঞান্তর্গত শ্রাদ্ধ প্রতিদিন করণীয়।
২৮২। ন পৈতৃযজ্ঞিয়ো হোমো লৌকিকেহগ্নৌ বিধীয়তে।
ন দর্শেন বিনা শ্রাদ্ধমাহিতাগ্নের্দ্বিজন্মনঃ ॥
(শ্রৌত স্মার্ত ব্যতিরিক্ত) লৌকিক অগ্নিতে পিতৃ যজ্ঞবিহিত হোম বিহিত নয়। সাগ্নিক দ্বিজের শ্রাদ্ধ অমাবস্যাভিন্ন (অন্য তিথিতে) হয় না।
২৮৩। যদেব তৰ্পয়ত্যদ্ভিঃ পিতৃন্ স্নাত্বা দ্বিজোত্তমঃ।
তেনৈব কৃৎস্নমাপ্নোতি পিতৃযজ্ঞক্রিয়াফলম্ ॥
ব্রাহ্মণ স্নান করে যে পিতৃতর্পণ করেন, তার দ্বারাই (নিত্য) পিতৃশ্রাদ্ধের সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায়।
২৮৪। বসুন্ বদন্তি বৈ পিতৃন্ রুদ্রাংশ্চৈব পিতামহান।
প্রপিতামহাংস্তথাদিত্যান্ শ্রুতিরেষা সনাতনী ॥
পিতৃপুরুষকে বসু, পিতামহকে রুদ্র ও প্রপিতামহকে আদিত্য বলা হয়। এই নিত্যশ্রুতি।
২৮৫। বিঘসাশী ভবেন্নিত্যং নিত্যং বামৃতভোজনঃ।
বিঘসো ভুক্তশেষন্ত যজ্ঞশেষং তথামৃতম্ ॥
প্রত্যহ বিঘসাশী বা অমৃতভোজী হবে ; (ব্রাহ্মণের) ভুক্তাবশিষ্ট (অন্নাদিকে) বিঘস, যজ্ঞাবশিষ্ট (পুরোডাশাদিকে) অমৃত বলা হয়।
২৮৬। এতদ্বোহভিহিতং সর্বং বিধানং পাঞ্চযজ্ঞিকম্।
দ্বিজাতিমুখ্যবৃত্তীনাং বিধানং শ্রুয়তামিতি ॥
পঞ্চযজ্ঞের সকল নিয়ম আপনাদের বললাম। ব্রাহ্মণগণের (শিলোঞ্ছাদি) জীবিকা শুনুন।
মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্রোক্ত সংহিতায় তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।
পাদটীকা
১মেধাতিথির মতে, মূলে শব্দটি আছে অমৈথুনী অর্থাৎ পিতা ভিন্ন অন্যের মৈথুন জাতা নয়, অর্থাৎ পিতার ঔরসজাতা কন্যা নিয়োগোৎপাদিতা নয়। অমৈথুনে পাঠে অর্থ হবে এইরূপ কন্যা ধর্মকার্যার্থ বিবাহকর্মে প্রশস্তা, মৈথুনে নয়।
কুল্লূকের মতে, মৈথুনে অর্থাৎ স্বামী স্ত্রী এই মিথুন সাধা অগ্নাধান কর্মে ও পুত্রেৎপাদনাদিতে।
২প্রাচীনকালে পুত্রিকাপুত্র সমাজে স্বীকৃত ছিল। অপুত্রক ব্যক্তি কন্যা সম্বন্ধে ইচ্ছা পোষণ করতেন যে, এর যে পুত্র হবে, সে মাতামহের পুত্ররূপে গণ্য হবে, অথবা ঐ কন্যাই পিতার পুত্র স্বরূপ বিবেচিত হবে।
৩স্ত্রীপুরুষের পারস্পরিক অনুরাগ থাকলে যুদ্ধাদিদ্বারা কন্যালাভপূর্বক তাকে বিবাহ করার নাম মিশ্রিত গান্ধর্বরাক্ষস বিবাহ।
৪এক গাভী ও এক বৃষে একটি গোমিথুন হয়।
৫শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।
৬শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।
৭যে বমি করে উদগীর্ণ পদার্থ ভক্ষণ করে।
৮অর্থাৎ বহু ব্রাহ্মণ উপস্থিত হলে তাঁদের উপযুক্ত অভ্যর্থনা করা যায় না, উপযুক্ত স্থানে তাঁদের বসান যায় না, ঠিক সময়ে ভোজন করান যায় না, বহু লোকের মধ্যে কে পবিত্র তা জানা যায় না এবং তাঁদের উৎকর্ষও বিচার করা যায় না।
৯পৃগ শব্দের অর্থ শব্দকোষে দ্রষ্টব্য। এখানে বহুলোককে যে যাজন করে তাকে বোঝান হয়েছে।
১০শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।
১১ঐ।
১২ঐ।
১৩ঐ।
১৪ঐ।
১৫ঐ।
১৬যে পূর্বোক্ত কুণ্ডের অন্নভক্ষণ করে।
১৭যে নিয়ে খেলতে অক্ষম। কিন্তু নিজের জন্য অপরকে দিয়ে খেলায়।
১৮শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।
১৯নিয়োগপ্রথানুসারে মনোনীত। নিয়োগ শব্দ শব্দকোষে দ্রষ্টব্য।
২০শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।
২১ঐ।
২২গব্যেন শব্দে কেউ কেউ গোমাংস বুঝেছেন। মেধাতিথি বলেছেন যে, শংখস্মৃতিতে গোমাংস ভক্ষণে যে প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে, তা মধুপর্ক ও অষ্টকাশ্রাদ্ধ ভিন্ন অন্যত্র বুঝতে হবে। অর্থাৎ মধুপর্কে ও অষ্টকাশ্রাদ্ধে গোমাংসভক্ষণ নিষিদ্ধ নয়। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, আপস্তম্বসূত্রে (১১৭৩০, ৩১; ২১৬২৫) শ্রাদ্ধে গোমাংসদান ও গোমাংসভক্ষণ অনুমোদিত হয়েছে।
২৩এই শব্দের অর্থ হতে পারে গণ্ডার, বৃদ্ধ ছাগ, একপ্রকার ষাঁড় বা পাখী।