মনুসংহিতা – একাদশ অধ্যায়
১- সান্তানিকং যক্ষ্যমাণমধ্বগং সৰ্ব্ববেদসম্।
২। গুর্ব্বর্থং পিতৃমাত্রর্থং স্বাধ্যায়ার্থ্যুপতাপিনঃ ॥
নবৈতান্ স্নাতকান্ বিদ্যাদ্ব্রাহ্মণান ধর্ম্মভিক্ষুকান্।
নিঃস্বেভ্যো দেয়ামেতেভ্যো দানং বিদ্যাবিশেষতঃ ॥
বিবাহার্থী, (জ্যোতিষ্টোমাদি) যাগকারী, পথিক, সর্বদক্ষিণ বিশ্বজিৎত্যাগ যিনি করেছেন, যিনি গুরুর গ্রাসাচ্ছাদনার্থে চান, যিনি পিতামাতার ভরণপোষণের জন্য চান, বেদবিদ্যাকালীন বাস্ত্রাদিপ্রার্থী, রোগী—এই নয়জন ব্রাহ্মণকে ধর্মভিক্ষাশীল স্নাতক বলে জানবে। এরা নিঃস্ব হলে বিদ্যাবত্তানুসারে এদের দান করা উচিত।
৩। এতেভ্যো হি দ্বিজাগ্র্যেভ্যা দেয়মন্নং সদক্ষিণম্।
ইতরেভ্যো বহিৰ্ব্বেদি কৃতান্নং দেয়মুচ্যতে॥
এই ব্রাহ্মণগণকে দক্ষিণাযুক্ত অন্ন দেয়। অন্যদের বেদির বাইরে সিদ্ধান্ন দেয়।
৪। সৰ্ব্বরত্নানি রাজা তু যথার্হং প্রতিপাদয়েৎ।
ব্রাহ্মণান্ বেদবিদুষো যজ্ঞার্থঞ্চৈব দক্ষিণাম্ ॥
রাজা যজ্ঞোপযোগী সকল রত্ন ও যজ্ঞার্থ দক্ষিণা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে গ্রহণ করাবেন।
৫। কৃতদারোহপবান্ দারান্ ভিক্ষিত্বা যোহধিগচ্ছতি।
রতিমাত্রং ফলং তস্য দ্রব্যাদাতুন্তু সন্ততিঃ॥
বিবাহিত ব্যক্তি (সন্তানের প্রয়োজন ব্যতিরেকে) ভিক্ষাদ্বারা অপর দারপরিগ্রহ করলে সেই স্ত্রী কেবল রতিমাত্রফল, তাতে উৎপন্ন সন্তান ধনদাতার (উৎপাদকের নয়)।
৬। ধনানি তু যথাশক্তি বিপ্রেষু প্রতিপাদয়েৎ।
বেদবিৎসু বিবিক্তেষু প্ৰেত্য স্বর্গং সমম্মুতে॥
শক্তি অনুসারে ধন বেদজ্ঞ ও পুত্ৰকলত্রাদিতে আসক্ত ব্রাহ্মণকে দেয় (অহলে দাতা) পরলোকে স্বর্গলাভ করেন।
৭। যস্য ত্রৈবার্ষিকং ভক্তং পর্য্যাপ্তং ভৃত্যবৃত্তয়ে।
অধিকং বাপি বিদ্যেত স সোমং পাতুমর্হতি॥
যার পোষ্য পালনের উপযুক্ত তিন বৎসরের অন্ন বা তদধিক (সঞ্চিত) থাকে, তার (কাম্য) সোম্যাগ করা উচিত।
৮। অতঃ স্বল্পীয়সি দ্রব্যে যঃ সোমং পিবতি দ্বিজঃ।
স পীতনোমপুর্ব্বোহপি ন তস্যাপ্নোতি তৎফলম ॥
এর কম দ্রব্য থাকলে যে সোময়াগ করে, তার পূর্বে সোমযাগ করা থাকলেও সেই যজ্ঞফল হয় না।
৯। শক্তঃ পরজন দাতা স্বজনে দুঃখজীবিনি।
মধ্বাপাতো বিষাস্বাদঃ স ধৰ্ম্মপ্রতিরূপকঃ॥
(মাতা পিতা প্রভৃতি) স্বজন কষ্টে থাকলেও যদি সক্ষম ব্যক্তি অপরকে ধনদান করে, তাহলে তা আপাতমধুর (অন্তে) বিষাস্বাদ, তা ধর্মের প্রতিরূপ (মাত্র, ধর্ম নয়)।
১০। ভৃত্যানামুপরোধেন যৎ করোত্যৌধ্বদেহিক।
তদ্ভবত্যসুখোদৰ্কং জীবতশ্চ মৃতস্য চ॥
অবশ্যপালনীয় ব্যক্তিদের কষ্ট দিয়ে (ধর্মবুদ্ধিতে) যে পারলৌকিক (দানাদি) ধর্ম অনুষ্ঠিত হয়, তা কি জীবিত কি মৃত লোকের পরিণামে দুঃখকর হয়।
১১- যশ্চেৎ প্রতিরুদ্ধঃ স্যাদেকেনাঙ্গেন যজ্বনঃ।
১২। ব্রাহ্মণস্য বিশেষণ ধার্ম্মিকে সতি রাজনি॥
যো বৈশ্যঃ স্যাদ্বহুপশুর্হীনক্রতুরসোমপঃ।
কুটুম্বাৎ তস্য তদ্দ্রব্যমাহরেদ্যজ্ঞসিদ্ধয়ে॥
ধার্মিক রাজা থাকতে (ক্ষত্রিয়ের) বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের যজ্ঞ একাঙ্গে অসম্পূর্ণ হলে যে বৈশ্যের বহু পশু থাকে, যে বৈশ্য (পঞ্চমহাযজ্ঞাদি) ক্রিয়াহীন ও অসোমযাজী তার গৃহ থেকে যজ্ঞসিদ্ধির জন্য সেই দ্রব্য আহরণ করবে।
১৩। আহরেৎ ত্রীণি বা দ্বে বা কামং শূদ্রস্য বেশ্মনঃ।
ন হি শূদ্রস্য যজ্ঞেষু কশ্চিদস্তি পরিগ্রহঃ॥
তিন বা দুইটি দ্রব্য (হেতু অঙ্গবৈকল্য হলে) ইচ্ছামত (বৈশ্যাভাবে) শূদ্রগৃহ থেকে তা আহরণ করবে; কারণ, শূদ্রের কোন যজ্ঞসম্বন্ধ নেই।
১৪। যোহনাহিতাগ্নিঃ শতগুরযজ্বা চ সহস্রগুঃ।
তয়োরপি কুটুম্বাভ্যামাহরেদবিচারয়ন্॥
যে নিরগ্নিক ব্যক্তি একশত গাভীর অধিকারী বা যে সাগ্নিক অথচ অসোম্যজী ও সহস্র গাভীর অধিকারী, তাদের বাড়ী থেকেও নির্বিচারে দ্রব্য আহরণ করবে।
১৫। আদাননিত্যাাচ্চাদাতুরাহরেদপ্রযচ্ছতঃ।
তথা যশোহস্য প্রথতে ধৰ্মশ্চৈব প্রবর্দ্ধতে॥
যে (প্ৰতিগ্রহাদি দ্বারা) নিত্য ধনসঞ্চয় করে অথচ ইষ্টাপূর্ত দানরহিত ও (যজ্ঞার্থে যাচ্ঞা করলেও কিছু) দেয় না, তার থেকে দ্রব্য আহরণে যশ ও ধর্ম বৃদ্ধি হয়।
১৬। তথৈব সপ্তমে ভক্তে ভক্তানি ষড়শ্নতা।
অশ্বস্তনবিধানেন হৰ্ত্তব্যং হীনকর্ম্মণঃ॥
সপ্তম ভোজনকালে (অর্থাৎ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় দুইবার হিসাবে তিন দিন উপবাসী থেকে চতুর্থ দিন প্রাতে) অভুক্ত থেকে দানাদিধর্মরহিত ব্যক্তির থেকে এমন খাদ্য আহরণীয় যা পরের দিন পর্যন্ত থাকে না। (অর্থাৎ মাত্র একদিনের খাদ্য আহরণীয়)।
১৭। খলাৎ ক্ষেত্রাদগারাদ্বা যতো বাপ্যুপলভ্যতে।
আখ্যাতব্যস্তু তৎ তস্মৈ পৃচ্ছতে যদি পৃচ্ছতি॥
(উল্লিখিত প্রয়োজনে উক্ত ব্যক্তিদের) ধান্যাদিমর্দনস্থান, ক্ষেত্র বা যেখান থেকেই ধান্য লব্ধ হয়, তা ক্ষেত্রস্বামী জিজ্ঞাসা করলে তাকে বলতে হবে।
১৮। ব্রাহ্মণস্বং ন হর্ত্তব্যং ক্ষত্রিয়েণ কদাচন।
দস্যুনিক্রিয়য়োস্তু স্বমজীবন্ হর্ত্তুমর্হতি॥
ব্রাহ্মণের দ্রব্য ক্ষত্রিয় কখনও হরণ করবে না। জীবিকা না থাকলে কদাচারী অনাচারী ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় থেকে ক্ষত্রিয় দ্রব্য হরণ করতে পারে।
১৯। যোহসাধুভ্যোহর্থমাদায় সাধুভ্যঃ সম্প্রযচ্ছতি।
স কৃত্বা প্লবমাত্মানং সারয়তি তাবভৌ॥
যে অসাধু ব্যক্তির থেকে ধন গ্রহণ করে সজ্জনকে দান করে, সে নিজেকে ভেলা করে সেই দুইজনকে দুঃখমুক্ত করে।
২০। যদ্ধনং যজ্ঞশীলানাং দেবস্বং তদ্বিদুৰ্বুধাঃ।
অযজ্বনান্তু যদ্বিত্তমাসুরস্বং তদুচ্যতে॥
যজ্ঞশীল ব্যক্তিদের ধন দেবতার সম্পত্তি বলে পণ্ডিতগণ মনে করেন। যারা যজ্ঞশীল নয়, তাদের বিত্ত আলুর বলে কথিত হয়।
২১। ন তস্মিন্ ধারয়েদ্দন্ডং ধার্মিকঃ পৃথিবীপতিঃ।
ক্ষত্রিয়স্য হি বালিশ্যাদ্ব্রাহ্মণঃ সীদতি ক্ষুধা॥
ধার্মিক রাজা (উক্ত প্রয়োজনে উল্লিখিত প্রকারে যে দ্রব্যহরণ করে) তাকে দণ্ড দিবেন না; কারণ, ক্ষত্রিয় (রাজার) মূর্খতা হেতু ব্রাহ্মণ ক্ষুধাপীড়িত হয়।
২২। তস্য ভৃত্যজনং জ্ঞাত্বা স্বকুটুম্বান্ মহীপতিঃ।
শ্রুতশীলে চ বিজ্ঞায় বৃত্তিং ধর্ম্ম্যাং প্রকল্পয়েৎ॥
উক্তরূপ ব্রাহ্মণের পোষ্যবর্গ ও বিদ্যা, চরিত্র জেনে (তাঁর) ধর্মসম্মত জীবিকার ব্যবস্থা করবেন
২৩। কল্পয়িত্বাস্য বৃত্তিঞ্চ রক্ষেদেনং সমস্ততঃ।
রাজাহি ধর্ম্মষড্ভাগং তস্মাৎ প্রাপ্নোতি রক্ষিতাৎ॥
তাঁর জীবিকা দিয়ে (তাঁকে) সর্বপ্রকারে এইরূপে রক্ষা করবেন; কারণ, রাজা সেই রক্ষিত ব্যক্তির থেকে ধর্মের ষষ্ঠভাগ প্রাপ্ত হন।
২৪। ন যজ্ঞার্থং ধনং শূদ্রাদ্বিপ্রো ভিক্ষেত কর্হিচিৎ।
যজমানো হি ভিক্ষিত্বা চণ্ডালঃ প্ৰেত্য জায়তে।
যজ্ঞের জন্য শূদ্রের থেকে ব্রাহ্মণ কখনও ধন ভিক্ষা করবেন না; কারণ, যজ্ঞকারী ব্রাহ্মণ (এইরূপ) ভিক্ষা করে পরলোকে চণ্ডাল হয়ে জন্মেন।
২৫। যথার্থমর্থং ভিক্ষিত্বা যো ন সৰ্ব্বং প্রযচ্ছতি।
স যাতি ভাসতাং বিপ্রঃ কাকতাং বা শতং সমাঃ॥
যজ্ঞের জন্য অর্থ ভিক্ষা করে যিনি (ভিক্ষালব্ধ) সকল অর্থ ব্যয় করেন না, সেই ব্রাহ্মণ একশত বৎসর ভাসত্ব (শকুন) বা কাকত্ব প্রাপ্ত হন।
২৬। দেবস্বং ব্রাহ্মণস্বং বা লোভেনোপহিনস্তি যঃ।
স পাপাত্মা পরে লোকে গৃধ্রোচ্ছিষ্টেন জীবতি॥
দেবতার বা ব্রাহ্মণের ধন যে লোভ হেতু অপহরণ করে, সেই পাপিষ্ঠ ব্যক্তি পরলোকে গৃধ্রের উচ্ছিষ্টভোজনে জীবনধারণ করে।
২৭। ইষ্টিং বৈশ্বানরীং নিত্যং নির্ব্বপেদপৰ্য্যয়ে।
কুপ্তানাং পশুসোমানাং নিষ্কৃত্যর্থসম্ভবে॥
বিহিত পশুযাগ ও সোমবাগ অসম্ভব হলে তার অকরণ-দোষক্ষালনের জন্য বত্সর সমাপ্তির পবে দ্বিতীয়বর্ষের প্রারম্ভে সর্বদা (শূদ্রের থেকেও ধন গ্রহণ করে) বৈশ্বানরী ইষ্টি করবেন।
২৮। আপৎকল্পেন যো ধর্ম্মং কুরুতেইনাপদি দ্বিজঃ।
স নাপ্নোতি ফলং তস্য পরত্রেতি বিচারিতম্॥
যে দ্বিজ আপদ্কালে বিহিত ধর্ম আপদ্কাল ভিন্ন অন্য সময়ে আচরণ করেন, তিনি পরলোকে তার ফললাভ করেন না—এই সিদ্ধান্ত।
২৯। বিশ্বৈশ্চ দেবৈঃ সাধ্যৈশ্চ ব্রাহ্মণৈশ্চ মহর্ষিভিঃ।
আপৎসু মরণাম্ভীতৈর্বিধেঃ প্রতিনিধিঃ কৃতঃ॥
বিশ্বদেব নামক দেবতা, সাধ্যগণ, মরণভয়ে ভীত ব্রাহ্মণ ও মহর্ষিগণ আপদ্কালে (সোমাদি যাগের) প্রতিনিধিরূপে (বৈশ্বানরী প্রভৃতি ইষ্টির) অনুষ্ঠান করেছেন।
৩০। প্রভুঃ প্রথমকল্পস্য ষোহনুকল্পেন বৰ্ত্ততে।
ন সাম্পায়িকং তস্য দুৰ্ম্মতের্বিদ্যতে ফলম্॥
যে লোক প্রথমকল্পের কর্ম করতে সক্ষম হয়ে (আপদ্কালে বিহিত) প্রতিনিধি দ্বারা অনুষ্ঠান করে, সেই দুর্মতির পারলৌকিক উন্নতিরূপ ফল ও প্রত্যবায় পরিহার হয় না।
৩১। ন ব্রাহ্মণো বেদয়েত কিঞ্চিদ্রাজনি ধর্ম্মিবিৎ।
স্ববীর্য্যেণৈব তান্ শিষ্যান্মানবানপকারিণঃ॥
ধর্মজ্ঞ ব্রাহ্মণ (তাঁর প্রতি কেউ অপরাধ করলে) কিছুই রাজাকে জানাবেন না, নিজের শক্তি দ্বারাই অপকারিগণকে শাসন করবেন।
৩২। স্ববীর্যাদ্ৰাজবীর্য্যাচ্চ স্ববীৰ্য্যং বলবত্তরম্।
তস্মাৎ স্বেনৈব বীর্য্যেণ নিগৃহ্ণীয়াদরীন্ দ্বিজঃ॥
নিজের ও রাজার শক্তির মধ্যে নিজের শক্তি অপেক্ষাকৃত অধিক বলযুক্ত; সুতরাং, নিজের শক্তিদ্বারাই দ্বিজ শত্রুদের নিগৃহীত করবেন।
৩৩। শ্রুতীরথর্ব্বাঙ্গিরসীঃ কুৰ্য্যাদিত্যবিচারয়ন্।
বাক্শস্ত্রং বৈ ব্রাহ্মণস্য তেন হন্যাদরীন্ দ্বিজঃ॥
অথর্ববেদোক্ত আঙ্গিরসী শ্রুতি (অর্থাৎ অভিচার মন্ত্র) নির্বিচারে পাঠ করবেন। ব্রাহ্মণের বাক্যই অন্ত্র, তার দ্বারা দ্বিজ শত্রুদের হত্যা করবেন।
৩৪। ক্ষত্রিয়ো বাহুবীর্য্যের্ণ তরেদাপমাত্মনঃ।
ধনেন বৈশ্যশূদ্রৌ তু জপহ্যেমের্দ্বিজোত্তমঃ॥
ক্ষত্রিয় বাহুবলের দ্বারা, বৈশ্য ও শূদ্র ধনের দ্বারা, ব্রাহ্মণ জপ হোমের দ্বারা নিজের বিপদ অতিক্রম করবেন।
৩৫। বিধাতা শাসিতা বক্তা মৈত্রো ব্রাহ্মণ উচ্যতে।
তস্মৈ নাকুশলং ব্রয়ান্ন শুষ্কাং গিরমীরয়েৎ ॥
ব্রাহ্মণ বিধাতা, শাসক, বক্তা (প্রায়শ্চিত্তাদির উপদেষ্টা) ও মৈত্র (সকলের হিতকারী) বলে এ কথিত হন। তাঁকে অনিষ্ট বা রুক্ষ কথা বলবে না।
৩৬। ন বৈ কন্যা ন যুবতির্নাল্পবিদ্যা ন বালিশঃ।
হোতা স্যাগ্নিহোত্ৰস্য নার্ত্তো নাসংস্কৃতস্তথা॥
কন্যা, যুবতী, অল্পবিদ্যাসম্পন্ন ব্যক্তি, মূর্খ, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তি ও অনুপনীত ব্যক্তি হোম করবে না।
৩৭। নরকে হি পতন্ত্যেতে জুহন্তঃ স চ যস্য তৎ।
তস্মাদ্বৈতানকুশলো হোতা স্যাদ্বেদ্বপারগঃ॥
এই (উক্ত) ব্যক্তিরা হোম করলে তারা এবং যার জন্য করে সে নরকে পতিত হয়। সুতরাং, হোতা হবেন শ্ৰৌতকর্মে প্রবীণ ও বেদে পারদর্শী।
৩৮। প্রাজাপত্যমদত্ত্বাশ্বমগ্ন্যাধেয়স্য দক্ষিণাম্।
অনাহিতাগ্নির্ভবতি ব্রাহ্মণো বিভবে সতি॥
সম্পত্তি থাকতে যে প্রজাপতি-দেবতাকে অশ্ব দক্ষিণা না দেয়, সে অগাধানের ফল না পেয়ে নিরগ্নি থাকে।
৩৯। পুণ্যান্যন্যানি কুৰ্ব্বীত শ্রদ্দধানো জিতেন্দ্রিয়ঃ।
ন ত্বল্পদক্ষিণৈর্যজ্ঞৈর্যজেতেহ কথঞ্চন॥
শ্রদ্ধাবান্ জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি অন্য পুণ্যকর্ম করবেন, কিন্তু, কোন প্রকারেই অল্পদক্ষিণা দিয়ে যজ্ঞ করবেন না।
৪০। ইন্দ্রিয়াণি যশঃ স্বর্গমায়ুঃ কীৰ্ত্তিং প্রজাঃ পশূন্।
হস্ত্যল্পদক্ষিণো যজ্ঞস্তম্মান্নাল্পধনো যজেৎ॥
অল্প দক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞ ইন্দ্রিয়, যশ, স্বর্গ, আয়ু, কীর্তি, সন্তান ও পশু নষ্ট করে ; সুতরাং, অল্পধন ব্যক্তি যজ্ঞ করবে না।
৪১। অগ্নিহোত্রপরিধ্যাগ্নীন্ ব্রাহ্মণঃ কামকারতঃ।
চান্দ্রায়ণং চরেন্মসং বীরহত্যাসমং হি তৎ॥
অগ্নিহোত্রী ব্রাহ্মণ স্বেচ্ছায় হোম না করলে এক মাস (প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ) চান্দ্রায়ণ ব্রত করবেন; হোম না করা পুত্রহত্যাতুল্য।
৪২। যে শূদ্ৰাদধিগম্যার্থমগ্নিহোত্রমুপাসতে।
ঋত্বিজস্তে হি শূদ্ৰানাং ব্রহ্মবাদিষু গর্হিতাঃ॥
যাঁরা শূদ্রের থেকে অর্থ গ্রহণ করে অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান করেন, তাঁরা শূদ্রদের ঋত্বিক্ এবং বেদবাদিগণের মধ্যে নিন্দিত হন।
৪৩। তেষাং সততমজ্ঞানাং বৃষলাগ্ন্যুপসেবিনাম্।
পদা মস্তকমাক্রম্য দাতা দুর্গাণি সস্তরেৎ॥
সেই অজ্ঞ শূদ্ৰাগ্নিসেবিগণের মাথায় পা দিয়ে অর্থদাতা (পরলোকে) দুঃখ থেকে ত্রাণ পায়।
৪৪। অকুৰ্ব্বন্ বিহিতং কর্ম্ম নিন্দিতঞ্চ সমাচরন্।
প্রসক্তশ্চেন্দ্রিয়ার্থেষু প্রায়শ্চিত্তীয়তে নরঃ॥
মানুষ বিহিত কর্ম না করে, নিন্দিত কর্ম করে এবং ইন্দ্রিয়ভোগে অত্যাসক্ত হয়ে প্রায়শ্চিত্তার্হ হয়।
৪৫। অকামতঃ কৃতে পাপে প্রায়শ্চিত্তং বিদুৰ্বুধাঃ।
কামকারকৃতেহপ্যাহুরেকে শ্রুতিনিদর্শনাৎ॥
অজ্ঞাতসারে পাপ করা হলে পণ্ডিতগণ প্রায়শ্চিত্ত (করতে) বলেন। কেউ কেউ বৈদিক প্রমাণানুসারে জ্ঞানকৃত পাপেও (প্রায়শ্চিত্তের কথা) বলেছেন।
৪৬। অকামতঃ কৃতং পাপং বেদাভ্যাসেন শুধ্যতি।
কামতস্তু কৃতং মোহাৎ প্রায়শ্চিত্তৈঃ পৃথগ্বিধৈঃ॥
অজ্ঞাতসারে কৃত পাপক্ষয় বেদপাঠের দ্বারা হয়। মোহবশতঃ জ্ঞানকৃত পাপ অন্যবিধ প্রায়শ্চিত্তসমূহদ্বারা (ক্ষালিত হয়)।
৪৭। প্রায়শ্চিত্তীয়তাং প্রাপ্য দৈবাৎ পূৰ্ব্বকৃতেন বা।
ন সংসর্গং ব্রজেৎ সদ্ভিঃ প্রায়শ্চিত্তেহকৃতে দ্বিজঃ॥
দৈববশতঃ (ইহকালে) বা পূর্বজন্মে কৃত (পাপের জন্য) প্রায়শ্চিত্তার্হ হয়ে দ্বিজ প্রায়শ্চিত্ত করা না হলে সজ্জনের সংসর্গ করবেন না।
৪৮। ইহ দুশ্চরিতৈঃ কেচিৎ কেচিৎ পূৰ্ব্বকৃতৈ স্তথা।
প্রাপ্নুৰন্তি দুরাত্মানো নরা রূপবিপৰ্য্যয়ম॥
দুরাত্মাদের মধ্যে কেউ ইহকালে কৃত দুষ্কর্ম হেতু কেউ বা পূর্বজন্মকৃত পাপের ফলে বিকৃতরূপ প্রাপ্ত হয়।
৪৯। সুবর্ণচৌরঃ কৌনখ্যং সুরাপঃ শ্যাবদন্ততাম্।
ব্ৰহ্মহা ক্ষয়রোগিত্বং দৌশ্চর্ম্মং গুরুতল্পগঃ॥
সোনাচোর কুৎসিত নখবিশিষ্ট, সুরাপায়ী কৃষ্ণবর্ণদন্তবিশিষ্ট, ব্রহ্মঘাতী ক্ষয়রোগী ও গুরুদারগামী দুশ্চর্মা হয়।
৫০। পিশুনঃ পৌতিনাসিক্যং সুচকঃ পূতিবক্ত্রতাম্।
ধান্যচৌরোহঙ্গহীনত্বমাতিরৈক্যন্তু মিশ্রকঃ॥
যে অপরের দোষ বলে বেড়ায়, তার নাক হয় দুর্গন্ধযুক্ত, যে অপরের দোষ না থাকলেও দোষ খ্যাপন করে তার মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হয়, ধান যে চুরি করে সে অঙ্গহীন হয়, যে লোককে ঠকাবার জন্য ধান প্রভৃতির সঙ্গে অন্যদ্রব্য মিশায়, সে হয় অধিকাঙ্গ।
৫১। অন্নহর্ত্তাময়াবিত্বং মৌক্যং বাগপহারকঃ।
বস্ত্রাপহারকঃ শ্বৈত্র্যং পঙ্গুতামশ্বহারকঃ॥ ৫১
অন্নচোরের অগ্নিমান্দ্য রোগ হয়, গুরুর বিনা অনুমতিতে বেদাধ্যয়নকারী মূক হয়, বস্ত্ৰচোরের শ্বেতীরোগ হয়, অশ্বচোরের হয় পঙ্গুতা।
৫২। এবং কর্ম্মবিশেষেণ জায়ন্তে সদ্বিগর্হিতাঃ।
জড়মূকান্ধবধিরা বিকৃতাকৃতয়স্তথা॥
এইরূপে বিশেষ কর্মানুসারে, সজ্জনের নিন্দিত জড়বুদ্ধি, মূক, অন্ধ, বধির ও বিকৃতরূপ হয়।
৫৩। চরিতব্যমতো নিত্যং প্রায়শ্চিত্তং বিশুদ্ধয়ে।
নিন্দ্যৈর্হি লক্ষণৈর্যুক্তা জায়ন্তেহনিষ্কৃতৈনসঃ॥
অতএব পাপক্ষালনের জন্য সর্বদা প্রায়শ্চিত্ত অনুষ্ঠেয়। যারা পাপ থেকে মুক্ত হয়নি, তারা নিন্দিতলক্ষণযুক্ত হয়ে জন্মে।
৫৪। ব্রহ্মহত্যা সুরাপানং স্তেয়ং গুর্ব্বঙ্গনাগমঃ।
মহান্তি পাতকান্যাহুঃ সংসৰ্গশ্চাপি তৈঃ সহ॥
ব্রাহ্মণহত্যা, (নিষিদ্ধ) সুরাপান, (ব্রাহ্মণের স্বর্ণের), অপহরণ, গুরুদারগমন ও এদের সংসর্গ—এইগুলি মহাপাতক।
৫৫। অনৃতঞ্চ সমুৎকর্ষে রাজগামি চ পৈশুনম্।
গুরোশ্চালীকনির্ব্বন্ধঃ সমাণি ব্ৰহ্মহত্যয়া॥
নিজে নিকৃষ্ট হয়েও নিজেকে উৎকৃষ্ট বলা (যেমন অব্রাহ্মণ কর্তৃক আমি ব্রাহ্মণ এইরূপ উক্তি), অপরের যে প্রকার দোষ রাজাকে বললে ঐ ব্যক্তির প্রাণদণ্ড হতে পারে সেইপ্রকার দোষ বলা ও গুরুর সম্বন্ধে মিথ্যাভাষণ ব্রাহ্মণবধের তুল্য।
৫৬। ব্রহ্মোজ্ঝতা বেদনিন্দা কৌটসাক্ষ্যং সুহৃদ্বধঃ।
গর্হিতানাদ্যয়োর্জন্ধিঃ সুরাপানসমানি ষট্॥
(ব্রাহ্মণ কর্তৃক অধীত) বেদের বিস্মরণ, বেদের নিন্দা, কূটসাক্ষ্য, বন্ধুবধ, নিন্দিত (বসোনাদির) ও অখাদ্য (বিষ্ঠাদির) ভক্ষণ—এই ছয়টি সুরাপানতুল্য।
৫৭। নিক্ষেপস্যাপহরণং নরাশ্বরজতস্য চ।
ভূমি-বজ্র-মণীনাঞ্চ রুক্সস্তেয়সমং স্মৃতম্॥
গচ্ছিত দ্রব্যের অপহরণ, মানুষ, ঘোড়া, রূপা, ভূমি, হীরে ও মণির অপহরণ স্বর্ণাপহরণ সদৃশ।
৫৮। রেতঃসেকঃ স্বযোনীষু কুমারীষ্বন্ত্যজাসু চ।
সখ্যুঃ পুত্রস্য চ স্ত্রীযু গুরুতল্পসমং বিদুঃ॥
সহোদরা ভগিনী, কুমারী, চণ্ডালী বা বন্ধুপুত্রের ভার্যাতে শুক্রনিক্ষেপ গুরুদারগমনতুল্য।
৫৯- গোবধোহযাজ্যসংযাজ্য পারদাৰ্যাত্মবিক্রয়াঃ।
৬৬। গুরুমাতৃপিতৃত্যাগঃ স্বাধ্যায়াগ্যোঃ সুতস্য চ॥
পরিবিত্তিতানুজেহনূঢ়ে পরিবেদনমেব চ।
তয়োর্দানঞ্চ কন্যায়াস্তয়োরেব চ যাজনম্॥
কন্যায়া দূষণঞ্চৈব বার্দ্ধুষ্যং ব্ৰতলোপনম্।
তড়াগারামদারাণামপত্যস্য চ বিক্রয়ঃ॥
ব্রাত্যতা বান্ধবত্যাগো ভৃত্যাধ্যাপনমেব চ।
ভৃত্যাচাধ্যয়নাদানমপণ্যানাঞ্চ বিক্রয়ঃ॥
সর্ব্বাকরেষ্বধীকারো মহাযন্ত্রপ্রবর্তনম্।
হিংসৌষধীনাং স্ত্র্যাজীবোহভিচাবো মূলকর্ম্ম চ॥
ইন্ধনার্থমশুষ্কাণাং দ্রূমাণামবপাতনম্।
আত্মার্থঞ্চ ক্রিয়ারম্ভো নিন্দিতান্নাদনংতথা॥
অনাহিতাগ্নিতা স্তেয়মৃণানামনপক্রিয়া।
অসচ্ছাস্ত্ৰাধিগমনং কৌশীলব্যস্য চ ক্রিয়া॥
ধান্য-কুপ্য-পশুস্তেয়ং মদ্যপস্ত্রীষেবণম্।
স্ত্রীশূদ্রবিট্-ক্ষত্রবধো নাস্তিক্যঞ্চোপপাতকম্॥
গোহত্যা, অযাজ্যযাজন, পরদারগমন, আত্মবিক্রয়, গুরু মাতা, পিতা, বেদ, অগ্নি ও পুত্রের ত্যাগ, পরিবিত্তিতা১, পরিবেদন, এই দুইজনকে কন্যাদান, এদের যাজন, মৈথুন ছাড়া অলিপ্রক্ষেপাদিদ্বারা২ কন্যাদূষণ, সুদের দ্বারা জীবনধারণ ও ব্ৰতলোপ (অর্থাৎ ব্রহ্মচারীর মৈথুন), জলাশয়, উদ্যান, স্ত্রী বা পুত্রের বিক্রয়, ব্রাত্যতা৩, পিতৃব্যাদিবান্ধবের সেবা না করা, বেতন নিয়ে অধ্যাপনা, বেতন দিয়ে অধ্যয়ন, নিষিদ্ধ দ্রব্যের বিক্রয়, সকল খনিতে (রাজাজ্ঞায়) অধিকার, বৃহৎ সেতু প্রভৃতির প্রবর্তন, ওষধিসমূহের হেদন, ভার্যাদি স্ত্রীকে বেশ্যাবৃত্তি করিয়ে জীবিকার্জন, অভিচার৪, বশীকরণ, ইন্ধনের জন্য অঞ্চবৃক্ষ ছেদন, নিজের জন্য অনাতুর অবস্থায় দেবপিত্রাদির উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে পাকাদিযজ্ঞের অনুষ্ঠান, নিষিদ্ধ দ্রব্যের ভক্ষণ, অগ্ন্যাধান না করা, চৌর্য, ঋণ শোধ না করা, (বেদ ও স্মৃতিবিরোধী) অসৎ শাস্ত্রের শিক্ষা, নৃত্য গীতবাদ্যদ্বারা জীবিকানির্বাহ, ধান, সোনা, রূপা ছাড়া অন্য ধাতু ও (গবাদি) পশুর অপহরণ, মদ্যপায়িনী স্ত্রী অভিগমন, স্ত্রীলোক, শূদ্র, বৈশ্য বা ক্ষত্রিয়বধ ও নাস্তিকতা উপপাতক।
৬৭। ব্রাহ্মণস্য রুজঃ কৃত্বা ঘ্রাতিরম্রেয়মদ্যয়োঃ।
জৈহ্ম্যঞ্চ মৈথুনং পুংসি জাতিভ্রংশকরং স্মৃতম্॥
(হস্ত বা দণ্ড দ্বারা) ব্রাহ্মণের পীড়ন, ঘ্রাণের অযোগ্য (রসোন, বিষ্ঠাদি) দ্রব্য ও মদের আঘ্রাণ, কুটিলতা, পুরুষের সঙ্গে মৈথুন জাতিভ্রংশকর বলে খ্যাত।
৬৮। খবাশ্বোষ্টমৃগেভানামাজাবিকবধস্তথা।
সঙ্করীকরণং জ্ঞেয়ং মীনাহিমহিষস্য চ॥
গাধা, ঘোড়া, উট, হরিণ, হাতী, ছাগল, ভেড়া, মাছ, সাপ বা মোষবধ সংকরীকরণ নামে খ্যাত।
৬৯। নিন্দিতেভ্যো ধনাদানং বাণিজ্যং শূদ্রসেবনম্।
অপাত্ৰীকরণং জ্ঞেয়মসত্যস্য চ ভাষণম্॥
নিন্দিত ব্যক্তির থেকে ধনগ্রহণ, বাণিজ্য, শূদ্রসেবা ও মিথ্যাভাষণ অপাত্ৰীকরণ নামে জ্ঞাতব্য।
৭০। কৃমিকীট-বয়োহত্যা মদ্যানুগতভোজনম্।
ফলৈধঃকুসুমস্তেয়মধৈৰ্য্যঞ্চ মলাবহম্॥
কৃমি, কীট বা পক্ষীর হত্যা, মদ্যানুগত৫ দ্রব্যের ভক্ষণ, ফল, জ্বালানী কাঠ বা ফুল চুরি ও অধৈর্য মলাবহ (নামে কথিত)।
৭১। এতান্যেনাংসি সর্ব্বাণি যথোজানি পৃথক্ পৃথক্।
যৈর্যৈব্রতৈরপোহ্যন্তে তানি সম্যঙ্ নিবোধত॥
এই পূর্বোক্ত সকল পাপ যে সকল ব্ৰত দ্বারা ক্ষালিত হয়, ঐগুলি পৃথক্ পৃথক্ ভাবে উপযুক্তরূপে শুনুন।
৭২। ব্রহ্মহা দ্বাদশ সমাঃ কুটীং কৃত্বা বনে বসেং।
ভৈক্ষাশ্যাত্মবিশুদ্ব্যর্থং কৃত্বা শবশিরোধ্বজম্॥
ব্রহ্মহত্যাকারী কুটীর নির্মাণ করে (নিহত ব্যক্তির, তদভাবে অন্য মৃতব্যক্তির) মস্তকের কপাল নিয়ে ভিক্ষালব্ধ অন্নাহারে বার বৎসর বনে বাস করবে।
৭৩। লক্ষ্যং শস্ত্রভৃতাং বা স্যাদ্বিদুষামিচ্ছয়াত্মনঃ।
প্রাস্যেদাত্মানমর্গেী বা সমিদ্ধে ত্রিরবাক্শিরাঃ॥
অথবা যে (যুদ্ধরত) অস্ত্রধারিগণ জানে (যে অপরাধী পাপক্ষয়ের জন্য তাদের লক্ষ্যীভূত হয়েছে) স্বেচ্ছায় (প্রমাদবশতঃ নয়) তাদের বাণের লক্ষ্যীভূত হবে (যতক্ষণ না মরে বা মৃতকল্প হয়), বা নিজেকে প্রজ্বলিত অগিতে মাথা নীচের দিকে রেখে তিনবার নিক্ষেপ করবে।
৭৪। যজেত বাশ্বমেধেন স্বর্জিতা গোসবেন বা।
অভিজিদ্বিশ্বজিদ্ভ্যাং বা ত্রিবৃতাগ্নিষ্টুতাপি বা॥
অথবা অশ্বমেধ, স্বর্জিৎ বা গোসব, অভিজিৎ, বিশ্বজিৎ বা ত্রিরাবৃত্ত অগ্নিষ্টুৎ নামক যাগের দ্বারা (প্রায়শ্চিত্ত করবে)।
৭৫। জপন্ বান্যতমং বেদং যোজনানাং শতং ব্ৰজেৎ।
ব্রহ্মহত্যাপনোদায় মিতভুঙ্নিয়তেন্দ্রিয়ঃ॥
অথবা ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপক্ষয়ের জন্য মিতাহারী ও জিতেন্দ্রিয় হয়ে যে কোন একটি বেদ জপ করতে করতে এক শত যোজন পথ গমন করবে।
৭৬। সর্ব্বস্বং বেদবিদূষে ব্রাহ্মণায়োপপাদয়েৎ।
ধনং বা জীবনায়ালং গৃহং বা সপরিচ্ছদম্॥
অথবা বেদত্ত ব্রাহ্মণের জীবনধারণের উপযোগী সকল ধন বা উপকরণযুক্ত গৃহ দান করবে।
৭৭। হবিষ্যভুগ্বানুসরেৎ প্রতিস্রোতঃ সরস্বতীম্।
জপেদ্বা নিযুতাহাবস্ত্রির্বৈ বেদস্য সংহিতাম্॥
অথবা হবিষ্যান্নভোজী হয়ে (বিখ্যাত প্লক্ষপ্রস্রবণবধি পশ্চিম সমুদ্র পর্যন্ত) স্রোতে সরস্বতী নদীতে গমন করবে বা মিতাহারী হয়ে তিনবার বেদপাঠ করবে।
৭৮। কৃতবাপনো নিবসেদ্ গ্রামান্তে গোব্রজেহপি বা।
আশ্রমে বৃক্ষমূলে বা গোব্রাহ্মণহিতে রতঃ॥
অথবা ছিন্নকেশনখশ্মশ্রু হয়ে গাভী ও ব্রাহ্মণের হিতে রত থেকে গ্রামপ্রান্তে গোচারণভূমিতে আশ্রমে বা বৃক্ষমূলে বাস করবে।
৭৯। ব্রাহ্মণার্থে গবার্থে বা সদ্যঃ প্রাণান্ পরিত্যজেৎ।
মুচ্যতে ব্রহ্মহত্যায়া গোপ্তা গোর্ব্রাহ্মণস্য চ॥
গাভী ও ব্রাহ্মণের রক্ষক ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণ বা গাভীর জন্য সদ্য প্রাণত্যাগ করে ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়।
৮০। ত্র্যবরং প্রতিযোদ্ধা বা সর্ব্বস্বমবজিত্য বা।
বিপ্রস্য তন্নিমিত্তে বা প্রাণলাভেহপি বিমুচ্যতে॥
(চোরাদি ব্রাহ্মণের সর্বস্ব অপহরণ করতে থাকলে তা উদ্ধার করার জন্য) অন্ততঃ তিনবার যুদ্ধ করে (অকৃতকার্য হলেও) বা (হৃত) ধন উদ্ধার করলে বা সেই জন্য (ধনাধিকারী স্বয়ং যুদ্ধ করে মরণাপন্ন হলে তাঁকে হৃতধনের সমপরিমাণ ধন দিয়ে) বাঁচালে পাপমুক্ত হবে।
৮১। এবং দৃঢ়ব্রতো নিত্যং ব্রহ্মচারী সমাহিতঃ।
সমাপ্তে দ্বাদশে বর্যে ব্রহ্মহত্যাং ব্যপোহতি॥
এইরূপে সর্বদা স্ত্রীসম্ভোগাদিরহিত হয়ে নিয়মপালনপূর্বক সংযতচিত্ত হয়ে বার বৎসর সমাপ্ত হলে (ব্রহ্মম) ব্ৰহ্মহত্যার পাপনাশ করে।
৮২। শিষ্ট্বা বা ভূমিদেবানাং নরদেবসমাগমে।
স্বমেনোহবভৃথস্নাতো হয়মেধে বিমুচ্যতে॥
ক্ষত্রিয় যজমান কর্তৃক আরব্ধ যে অশ্বমেধ যজ্ঞে ব্রাহ্মণ (পুরোহিত) আছেন, ঐ যজ্ঞে এসে ব্ৰহ্মহত্যাকারী নিজের পাপ নিবেদন করে অবভৃথ স্নান করলে পাপ মুক্ত হয়।
৮৩। ধর্ম্মস্য ব্রাহ্মণো মূলমগ্রং রাজন্য উচ্যতে।
তস্মাৎ সমাগমে তেষামেনো বিখ্যাপ্য শুধ্যতি॥
ধর্মের মূল ব্রাহ্মণ ও অগ্রভাগ ক্ষত্রিয় বলে কথিত। অতএব তাদের সমাগমস্থলে পাপ ঘোষণা করে (পাপী) পাপমুক্ত হয়।
৮৪। ব্রাহ্মণঃ সম্ভবৈনৈব দেবানামপি দৈবতম্।
প্রমাণঞ্চৈব লোকস্য ব্ৰহ্মাত্রৈব হি কারণম্॥
ব্রাহ্মণ জন্মের দ্বারাই দেবগণেবও দেবতা হন এবং লোকের নিকট (তাঁর উপদেশ) প্রামাণ্য; বেদ এই বিষয়ে কারণ (অর্থাৎ, ব্রাহ্মণের উপদেশ বেদমূলক)।
৮৫। তেষাং বেদবিদো ব্ৰূয়ূস্ত্রয়োহপ্যেনঃসু নিষ্কৃতিম্।
সা তেযাং পাবনায় স্যাৎ পবিত্র বিদুষাং হি বাক্॥
সেই ব্রাহ্মণদের মধ্যে তিনজনও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ পাপবিষয়ে যা প্রায়শ্চিত্ত বলেন, তা তাদের শুদ্ধিজনক, কারণ, বিদ্বান্ (ব্রাহ্মণদের) বাক্য পবিত্র।
৮৬। অতোহন্যতমমাস্থায় বিধিং বিপ্রঃ সমাহিতঃ।
ব্ৰহ্মহত্যাকৃতং পাপং ব্যপোহত্যাত্মবত্তয়া॥
এই (প্রায়শ্চিত্তগুলির মধ্যে) একটি প্রায়শ্চিত্তবিধি সমাহিতচিত্ত ব্রাহ্মণ আশ্রয় করে আত্মজ্ঞান হেতু ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ দূর করেন।
৮৭। হত্বা গর্ভমবিজ্ঞাতমেতদেব ব্রতং চরেৎ।
বাজন্যবৈশ্যৌ চেজানাবাত্ৰেয়ীমেব চ স্ত্রিয়ম্॥
অজ্ঞাত (ব্রাহ্মণ) ভ্রূণ, যাগরত ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, বা রজস্বলা (ব্রাহ্মণী)কে হত্যা করলে এই (ব্রহ্মহত্যার) প্রায়শ্চিত্তই করবে।
৮৮। উক্ত্বা চৈবানৃতং সাক্ষ্যে প্রতিরুধ্য গুরুং তথা।
অপহৃত্য চ নিক্ষেপং কৃত্বা চ স্ত্রীসুহৃদ্বধম্॥
সাক্ষ্যে মিথ্যা কথা বলে, গুরুর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, গচ্ছিত দ্রব্য অপহরণ করে, (আহিতাগ্নি ব্রাহ্মণের) স্ত্রীবধ করে (ব্রাহ্মণ ভিন্ন) বন্ধু বধ করে (ব্রহ্মহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করবে)।
৮৯। ইয়ং বিশুদ্ধিরুদিতা প্রমাপ্যাকামতো দ্বিজম্।
কামতো ব্রাহ্মণবধে নিষ্কৃতির্ন বিধীয়তে॥
অজ্ঞাতসারে ব্রহ্মহত্যায় এই প্রায়শ্চিত্ত উক্ত হয়েছে, জ্ঞাতসারে ব্রাহ্মণবধে (দ্বিগুণ প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া) নিষ্কৃতি নেই।
৯০। সুরাং পীত্বা দ্বিজো মোহাদগ্নিবর্ণাং সুরাং পিবেৎ।
তয়া স কায়ে নির্দগ্ধে মুচ্যতে কিল্বিষাত্ততঃ॥
দ্বিজ মোহবশতঃ সুরা পান করে অগ্নিবর্ণ (জ্বলন্ত) সুরা পান করবেন। তদ্দ্বারা নিজদেহ নিঃশেষে দগ্ধ হলে পাপমুক্ত হয়।
৯১। গোমূত্রমগ্নিবর্ণং বা পিবেদুদকমেব বা।
পয়ো ঘৃতং বা মরণাদেগাশকৃদ্রসমেব বা॥
অথবা অগ্নিবর্ণ (জ্বলন্ত) গোমূত্র, জল, দুধ, ঘি, গোময়জল মৃত্যু পর্যন্ত পান করবেন।
৯২। কণান্ বা ভক্ষয়েদব্দং পিণ্যাকং বা সকৃন্নিশি।
সুরাপানাপনুত্ত্যর্থং বালবাসা জটী ধ্বজী॥
অথবা সুরাপানের পাপাপনোদনার্থে গোলোমাদিনির্মিত বস্ত্রপরিহিত ও জটাধারী হয়ে সুরাপাত্র ধারণ করে একবৎসর কাল খুদ বা খইল রাত্রে একবার ভক্ষণ করবে।
৯৩। সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ চ মলমুচ্যতে।
তস্মাদ্ব্রাহ্মণরাজনৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ॥
সুরা অন্নের মল এবং মল পাপস্বরূপ বলে কথিত হয়। সুতরাং, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সুরাপান করবেন না।
৯৪। গৌড়ী পৈষ্টী চ মাধ্বী চ বিজ্ঞেয়া ত্রিবিধা সুরা।
যথৈবৈকা তথা সর্বা ন পাতব্যা দ্বিজোত্তমৈঃ ॥
গৌড়ী (গুড় থেকে তৈরি), পৈষ্টী (চাল থেকে তৈরি) ও মাধ্বী (মধুকপুষ্প থেকে তৈরি)—সুরা এই তিনপ্রকার। ব্রাহ্মণের পক্ষে একটির (অর্থাৎ মুখ্য সুরা পৈষ্টীর) ন্যায় সকল প্রকার সুর অপেয়।
৯৫। যক্ষ-বক্ষঃ-পিশাচান্নং মদ্যং মাংসং সুরাসবম্।
তদ্ ব্রাহ্মণেন নাত্তব্যং দেবানামশ্নতা হরিঃ ॥
দেবতার হবিভক্ষণকারী ব্রাহ্মণ কর্তৃক যক্ষ, রাক্ষস ও পিশাচের পেয় ও ভোজ্য মদ, মাংস, সুরা ও আসব (সদ্যোজাত মদ) ভোজ্য পেয় নয়।
৯৬। অমধ্যে বা পতেন্মত্তো বৈদিকং বাপ্যুদাহরেৎ।
অকাৰ্য্যমন্যৎ কুয্যার্দ্বা ব্রাহ্মণো মদমোহিতঃ॥
ব্রাহ্মণ মদমত্ত হয়ে অশুচিস্থানে পড়তে পারেন, বেদবাক্য (অস্থানে) উচ্চারণ করতে পারেন বা কুকার্য করতে পারেন।
৯৭। যস্য কায়গতং ব্রহ্ম মদ্যেনাপ্লাবাতে সকৃৎ।
তস্ম ব্যপৈতি ব্রাহ্মণ্যং শূদ্ৰত্বঞ্চ স গচ্ছতি॥
যার দেহ(সংস্কাররূপে)স্থিত বেদ মদের দ্বারা একবার আপ্লুত হয়, তার ব্রাহ্মণত্ব অপগত হয়, সে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।
৯৮। এষা বিচিত্রাভিহিতা সুরাপানস্য নিষ্কৃতিঃ।
তত ঊর্ধ্বং প্রবক্ষ্যামি সুবর্ণস্তেয়নিস্কৃতিম্॥
সুরাপানের এই নানা প্রকার প্রায়শ্চিত্ত উক্ত হল। এরপর (ব্রাহ্মণের) স্বর্ণাপহরণের প্রায়শ্চিত্ত বলব।
৯৯। সুবর্ণস্তেয়কৃদ্ধিপ্রো রাজানমভিগম্য তু।
স্বকৰ্ম্ম খ্যাপয়ন্ ব্রুয়ান্মাং ভবাননুশাস্ত্বিতি॥
(ব্রাহ্মণের) স্বর্ণাঁপহারক ব্রাহ্মণ রাজার নিকট উপস্থিত হয়ে নিজের কার্য নিবেদন করে বলবেন, “আপনি আমাকে শাসন করুন।”
১০০। গৃহীত্বা মুষলং রাজা সকৃদ্ধন্যাৎ তু তং স্বয়ম্।
বধেন শুধতি স্তেনো ব্রাহ্মণস্তপসৈব তু॥
মুদগর নিয়ে রাজা নিজে একবার আঘাত করবেন। (স্বর্ণচোর) ব্রাহ্মণ (ঐরূপে) বধ (মৃতকল্প অবস্থা) বা কৃচ্ছ্রসাধন দ্বারা শুদ্ধ হয়।
১০১। তপসাপনুনুৎসুস্তু সুবর্ণস্তেয়জং মলম্।
চীরবাসা দ্বিজোহরণ্যে চরেদ্ব্রহ্মহণো ব্ৰতম্॥
কৃচ্ছ্রসাধন দ্বারা স্বর্ণাপহরণজনিত পাপক্ষয়কামী দ্বিজ বনে চীরবাসা হয়ে ব্রহ্মহত্যাকারীর ব্রত করবেন।
১০২। এতৈব্রতৈরপোহেত পাপং স্তেয়কৃতং দ্বিজঃ।
গুরুস্ত্রীগমনীয়ন্তু ব্ৰতৈরেভিরপানুদেৎ॥
এই সকল ব্ৰতদ্বারা দ্বিজ (ব্রাহ্মণগণের স্বর্ণাপহরণজনিত) পাপ দূর করবেন, এই (বক্ষ্যমাণ ব্ৰতসমূহ দ্বারা) গুরুদারগমনজনিত পাপ দূর করবেন।
১০৩। গুরুতল্প্যভিভাষ্যৈনস্তপ্তে স্বপ্যাদয়োময়ে।
সূম্মীং জ্বলন্তীং স্বাশ্লিয্যেন্ মৃত্যুনা স বিশুধ্যতি॥
গুরুদারগামী পাপ ঘোষণা করে উত্তপ্ত লৌহশয্যায় শয়ন করবে, জ্বলন্ত লৌহনির্মিত স্ত্রী প্রতিকৃতি ভালভাবে আলিঙ্গন করে সে মৃত্যুদ্বারা শুদ্ধ হয়।
১০৪। স্বয়ং বা শিশ্নবৃষণাবুৎকৃত্যাধায় চাঞ্জলৌ।
নৈঋতীং দিশমাতিষ্ঠেদানিপাতাদজিহ্মগঃ॥
অথবা নিজে লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ছেদন করে অঞ্জলিতে নিয়ে শরীর পাত না হওয়া পর্যন্ত সোজাসুজি নৈঋত দিকে গমন করবে।
১০৫। খট্বাঙ্গী চীরবাসা বা শ্মশ্রুলো বিজনে বনে।
প্রাজাপত্যং চারেৎ কৃচ্ছ্রমন্দমেকং সমাহিতঃ॥
অথবা খট্বাঙ্গ (নরকপাল যুক্ত দণ্ড) ধারী, চীববাসা ও শ্মশ্রু (দাড়ি) ধারী হয়ে নির্জন বনে সংযতচিত্তে এক বৎসর প্রাজাপত্যব্রত করবে।
১০৬। চন্দ্রোয়ণং বা ত্রীন্ মাসানভ্যস্যেন্নিয়তেন্দ্রিয়ঃ।
হবিষ্যেণ যবাগ্বা বা গুরুতল্পাপনুত্তয়ে॥
অথবা গুরুদারগমনজনিত পাপক্ষয়ের জন্য জিতেন্দ্রিয় হায়ে তিন মাস চান্দ্রায়ণ ব্রত করবে বা হবিষ্যান্ন কি (নীবারাদির) যবাগু (যাউ) ভক্ষণ করবে।
১০৭। এতৈর্ব্রতৈরপোহেয়ুর্মহাপাতকিনো মলম্।
উপপাতকিনস্তেবমেভির্নানাবিধৈব্ৰতৈঃ॥
এই সকল ব্রত দ্বারা মহাপাতকীরা পাপ দূর করবে। উপপাতর্কিগণ কিন্তু এই (নিম্নলিখিত) নানারূপ ব্ৰতদ্বারা (পাপক্ষয় করবে)।
১০৮। উপপাতকসংযুক্তো গোঘ্নো মাসং যবান্ পিবেৎ।
কৃতবাপো বসেদ্গোষ্ঠে চৰ্ম্মণা তেন সংবৃতঃ॥
উপপাতকী গোহত্যাকারী একমাস যব (মণ্ড) পান করবে, মুণ্ডিত মস্তক ও লূনশ্মশ্রু (দাড়ি কামান অবস্থায়) হয়ে ঐ (নিহত গাভীর) চর্মে আবৃত হয়ে গোচারণভূমিতে বাস করবে।
১০৯। চতুর্থকালমশ্লীয়াদক্ষারলবণং মিতম্।
গোমূত্ৰেণা চরেৎ স্নানং দ্বৌ মাসৌ নিয়তেন্দ্রিয়ঃ ॥
(দ্বিতীয় মাসে) গোমূত্রদ্বারা স্নান করবে, সংযতেন্দ্রিয় হয়ে অকৃত্রিম লবণে, দ্বিতীয় তৃতীয় মাসে একদিন উপবাসী থেকে দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় হবিষ্যভোজী হবে।
১১০। দিবানূগচ্ছেদ্গাস্তাস্তু তিষ্ঠন্নূর্ধ্বং রজঃ পিবেৎ।
শুশ্রূষিত্বা নমস্কৃত্য রাত্রৌ বীরাসনং বসেৎ॥
(তিন মাস পর্যন্ত) দিনে গাভীসমূহের অনুগমন করবে, দাঁড়িয়ে তাদের খুররাত্থিত ধূলি আস্বাদন করবে, তাদের সেবা করে ও নমস্কার করে রাত্রে বীরাসনে বসবে।
১১১। তিষ্ঠন্তীষ্বনুতিষ্ঠেত্তু ব্রজন্তীষ্বপ্যনূব্রজেৎ।
আসীনাসু তথাসীনো নিয়তো বীতমৎসরঃ॥
তারা দাঁড়ালে সে শুচি ও ক্রোধহীন হয়ে দাঁড়াবে, তারা চললে সেও চলবে, তারা উপবিষ্ট হলে সেও উপবিষ্ট হবে।
১১২। আতুরামভিশস্তাং বা চোরব্যাঘ্রদিভির্ভইয়ৈং।
পতিতাংপঙ্কলগ্নাংবা সর্ব্বোপায়ৈর্বিমোচয়েৎ॥
(গাভী) রুগ্ন, চোর, বাঘ প্রভৃতির ভয়ে ভীত, পতিত বা পঙ্কলগ্ন হলে সকল প্রকারে তাকে মুক্ত করবে।
১১৩। উষ্ণে বর্ষতি শীতে বা মারুতে বাতি বা ভৃশম্।
ন কুর্বীতাত্মনস্ত্রাণং গোরকৃত্বা তু শক্তিতঃ॥
গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হলে বা শীতকালে বাতাস সবেগে বইলে যথাশক্তি গাভীকে রক্ষা না করে নিজেকে রক্ষা করবে না।
১১৪। আত্মনো যদি বান্যেষাং গৃহে ক্ষেত্র্যেথবা খলে।
ভক্ষয়ন্তীং ন কথয়েৎ পিবন্তঞ্চৈব বৎসকম্॥
নিজের বা অন্যের গৃহে, ক্ষেত্রে বা ধান্যমর্দনস্থলে গাভী শস্যভক্ষণ করলে তার কথা এবং দুগ্ধপানকারী গোবৎসের কথা (কাউকে) বলবে না।
১১৫। অনেন বিধিনা যস্তু গোঘ্নো গামনুগচ্ছতি।
স গোহত্যাকৃত, পাপং ত্রিভির্মাসৈর্ব্যপোহতি॥
যে গোহত্যাকারী এই নিয়মে গাভীর অনুগমন করে, সে তিন মাসে গোহত্যাজনিত পাপ দূর করে।
১১৬। বৃষভৈকাদশা গাশ্চ দদ্যাৎ সুচরিতব্রতঃ।
অবিদ্যমানে সর্ব্বস্বং বেদবিদ্ভ্যো নিবেদয়েৎ॥
ভালভাবে প্রায়শ্চিত্ত করে (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) একটি বৃষ সহিত দশটি গাভী (দক্ষিণাস্বরূপ) দিবে। বৃষগাভী না থাকলে সর্বস্ব বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দিবে।
১১৭। এতদেব ব্রতং কুর্য্যুরুপপাতকিনো দ্বিজাঃ।
অবকীর্ণিবর্জ্জং শুদ্ধ্যর্থং চান্দ্রায়ণমথাপি বা॥
অবকীর্ণী (যে ব্রহ্মচারী স্ত্রীসহবাস করে) ব্যতীত উপপাতকী দ্বিজগণ পাপক্ষয়ার্থে এই ব্রতই করবেন বা চান্দ্রায়ণব্রত (করবেন)।
১১৮। অবকীর্ণী তু কাণেন গর্দভেন চতুষ্পথে।
পাকযজ্ঞবিধানেন যজেত নিঋর্তিং নিশি॥
অবকীর্ণী কিন্তু চতুষ্পথে কাণা গাধা দ্বারা পাকযজ্ঞের নিয়মানুসারে নিঋতি দেবতার হোম করবে।
১১৯। হুত্বাগ্নৌ বিধিবদ্ধোমানন্ততশ্চ সমেত্যৃচা।
বাতেন্দ্রগুরুবহ্নীনাং জুহুয়াৎ সর্পিযাহুতীঃ॥ ১২০
অগ্নিতেযথাবিধি হোম করে ‘সমাসিঞ্চন্তু মরুতঃ’ এই ঋক্দ্বারা বায়ু, ইন্দ্র, বৃহস্পতি ও অগ্নিকে ঘৃতাহুতি দিবে।
১২০। কামতো রেতসঃ সেকং ব্ৰতস্থস্য দ্বিজন্মনঃ।
অতিক্রমং ব্ৰতস্যাহুর্ধর্মজ্ঞা ব্রহ্মবাদিনঃ॥
ধর্ম ব্রহ্মবাদিগণ বলেছেন যে, দ্বিজ ব্রহ্মচারীর ইচ্ছাপূর্বক (স্ত্রীযোনিতে) শুক্রসিঞ্চন ব্রহ্মচর্যের লঙ্ঘন।
১২১। মারুতং পুরুহুতঞ্চ গুরুং পাবকমেবচ।
চতুরো ব্ৰতিনোহভ্যেতি ব্রাহ্মংতেজোহবকীর্ণিনঃ॥
অবকীর্ণী ব্রহ্মচারীর ব্ৰহ্মতেজ মরুৎ, ইন্দ্র, বৃহস্পতি ও অগ্নি এই চার (দেবতায়) সংক্রামিত হয়।
১২২। এতস্মিন্নেনসি প্রাপ্তে বসিত্বা গর্দভাজিনম্।
সপ্তাগাবাংশ্চরেদ্ভৈক্ষং স্বকর্ম পরিকীৰ্ত্তয়ন্॥
এই পাপ হলে গর্দভচর্ম পরিধান করে নিজের কার্য খ্যাপন করে সাত বাড়ীতে ভিক্ষা করবে।
১২৩। তেভ্যো লন্ধেন ভৈক্ষণ বৰ্ত্তয়ন্নেককালিকম্।
উপস্পৃশংস্ত্রিষবণং ত্বব্দেন স বিশুধাতি॥
সেই সকল গৃহ থেকে লব্ধ ভিক্ষা দ্বারা একবার আহারপূর্বক ত্রিষবণ (সন্ধ্যা, সকাল ও দুপুরে স্নান) করে (পাপী) এক বৎসরে শুদ্ধ হয়।
১২৪। জাতিভ্রংশকরং কৰ্ম্ম কৃত্বান্যতমমিচ্ছয়া।
চরেৎ সান্তপনং কৃচ্ছ্রং প্রাজাপত্যমনিচ্ছয়া॥
জ্ঞাতসারে কোন একটি জাতিভ্রংশকর কর্ম করে (সপ্তাহসাধ্য) সান্তপন ব্রত করবে, অজ্ঞাতসারে করলে (দ্বাদশ দিন সাধ্য) প্রাজাপত্য ব্রত করবে।
১২৫। সঙ্করাপাত্ৰকৃত্যাসু মাসং শোধনমৈন্দবম্।
মলিনীকরণীয়েষু তপ্তঃ স্যাদ্ যাবকৈস্ত্র্যহম্॥
সংকরীকরণ ও অপাত্ৰীকরণ পাতকসমূহের মধ্যে একটি করে একমাস চান্দ্রায়ণব্রতরূপ প্রায়শ্চিত্ত করবে। মলিনীকরণ জাতীয় পাপগুলির মধ্যে একটি করলে তিনরাত্রি যবাগূর তপ্ত ক্বাথ সেবন করবে।
১২৬। তুরীয়ো ব্রহ্মহত্যায়াঃ ক্ষত্রিয়স্য বধে স্মৃতঃ।
বৈশ্যেহষ্টমাংশো বৃত্তস্থে শূদ্রে জ্ঞেয়স্তু যোড়শঃ॥
ক্ষত্রিয়বধে ব্ৰহ্মহত্যার প্রায়শ্চিত্তের চতুর্থ ভাগ, বৈশ্যবধে অষ্টম ভাগ ও স্ববৃত্তিনিষ্ঠ শূদ্রবধে যোড়শ ভাগ (প্রায়শ্চিত্ত) জ্ঞেয়।
১২৭। অকামতস্তু রাজন্যং বিনিপাত্য দ্বিজোত্তমঃ।
বৃষভৈকসহস্রা গা দদ্যাৎ সুচরিতব্রতঃ॥
ব্রাহ্মণ অজ্ঞাতসারে ক্ষত্রিয় বধ করে সুষ্ঠুভাবে প্রায়শ্চিত্তানুষ্ঠানপূর্বক একটি বৃষ ও এক সহস্র গাভী (ব্রাহ্মণগণকে) দান করবেন।
১২৮। ত্র্যব্দং চরেদ্বা নিয়তো জটী ব্ৰহ্মহণো ব্ৰতম্।
বসন্ দূরতরে গ্রামাদ্বৃক্ষমূলনিকেতনঃ॥
অথবা সংযত হয়ে গ্রাম থেকে বহুদূরে বৃক্ষমূলে বাস করে জটাধারী হয়ে ব্রহ্মহত্যার প্রায়শ্চিত্ত তিন বৎসর করবেন।
১২৯। এতদেব চরেদব্দং প্রায়শ্চিত্তং দ্বিজোত্তমঃ।
প্রমাপ্য বৈশ্যং বৃত্তস্থং দদ্যাচ্চৈকশতং গবাম॥
ব্রাহ্মণ সদাচারী বৈশ্যকে বধ করে এই প্রায়শ্চিত্তই এক বৎসর করবেন এবং একশত গাভী (ব্রাহ্মণগণকে) দান করবেন।
১৩০। এতদেব ব্রতং কৃৎস্নং ষন্মাসান্ শুদ্ৰহা চরেৎ।
বৃষভৈকাদশা বাপি দদ্যাদ্বিপ্রায় গাঃ সিতাঃ॥
শূদ্রঘাতী এই সম্পূর্ণ ব্রতই ছয় মাস করবেন অথবা একটি বৃষ ও দশটি শুক্লবর্ণ গাভী ব্রাহ্মণকে দিবেন।
১৩১। মজরিনকুলৌ হত্বা চাষং মণ্ডুকমেব চ।
শ্বগোধালুককাকাংশ্চ শুদ্ৰহত্যাব্রতং চরেৎ॥
বিড়াল, নেউল, চাষপাখী, ব্যাঙ্, কুকুর, গোসাপ, প্যাঁচা বা কাক মেরে শুদ্ৰহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করবে।
১৩২। পয়ঃ পিবেৎ ত্রিরাত্ৰং বা যোজনং বাধবনো ব্রজেৎ।
উপস্পৃশেৎস্রবন্ত্যাং বা সূক্তং বাব্দৈতং জপেৎ॥
অথবা তিনরাত্রি দুগ্ধপান করবে বা (তাতে অক্ষম হলে) এক যোজন পথ গমন করবে, (তাতে অসমর্থ হলে) নদীতে স্নান করবে বা (তাতে অশক্ত হলে) আপো হিষ্ঠাদি সূক্ত জপ করবে।
১৩৩। অভ্রিং কার্ষ্ণায়সীং দদ্যাৎ সর্পং হত্বা দ্বিজোত্তমঃ।
পলালভারকং যণ্ঢে সৈসকষ্ণৈকমাষকম্॥
ব্রাহ্মণ সাপ মেরে তীক্ষ্ণলৌহদণ্ড (ব্রাহ্মণকে) দিবে, নপুংসককে হত্যা করে এক বোঝা পলাল (খড়) এবং এক মাষা সীসা দিবে।
১৩৪। ঘৃতকুম্ভং বরাহে তু তিলদ্রোণন্তু তিত্তিরৌ।
শুকে দ্বিহায়নং বৎসং ক্রৌঞ্চং হত্বা ত্রিহায়ণম্॥
শূকর মেরে ঘৃতকুম্ভ, তিত্তিরি পাখীবধে একদ্রোণ (চার আঢক পরিমিত) তিল, শুকপাখী বধে দুই বৎসর বয়স্ক বাছুর, ক্রৌঞ্চ পাখীবধে তিন বৎসর বয়স্ক বাছুর (ব্রাহ্মণকে) দিবে।
১৩৫। হত্বা হংসং বলাকাঞ্চ বকং বর্হিণমেব চ।
বানরং শ্যেনভাসৌ চ স্পর্শয়েদ্ ব্রাহ্মণায় গাম্॥
হাঁস, বলাকা, বক, ময়ূর, বানর, শ্যেনপাখী বা ভাসপাখী মেরে ব্রাহ্মণকে একটি গাভী দান করবে।
১৩৬। বাসো দদ্যাদ্ধয়ং হত্বা পঞ্চ নীলান্ বৃষান্ গজম্।
অজমেষ্যবনড্বাহং খরং হত্বৈকহায়নম্॥ ১৩৭
ঘোড়া মেরে কাপড়, হাতী মেরে পাঁচটি নীল বৃষ, ছাগল ও ভেড়া মেরে বৃষ, গাধা মেরে এক বৎসর বয়স্ক বাছুর (ব্রাহ্মণকে দেয়)।
১৩৭। ক্ৰব্যাদাংস্তু মৃগান হত্বা ধেনুং দদ্যাৎ পয়স্বিনীম্।
অক্রব্যাদান্ বৎসতরীমুষ্ট্রং হত্বা তু কৃষ্ণলম্॥ ১৩৮
কাঁচা মাংসভোজী পশু মেরে দুগ্ধবতী গাভী, অমাংসভোজী পশু মেরে বকনা বাছুর, উট মেরে এক রতি সোনা (ব্রাহ্মণকে দেয়)।
১৩৮। জীনকার্ম্মুকবস্তাবীন্ পৃথগদদ্যাদ্বিশুদ্ধয়ে।
চতুৰ্ণামপি বর্ণানাং নারীর্হত্বাহনবস্থিতাঃ॥ ১৩৯
চার বর্ণের মানুষই ব্যভিচারিণী নারী হত্যা করে (ব্রাহ্মণাদিক্রমে) চর্মপুট, ধনু, ছাগ ও মেষ দান করবে।
১৩৯। দানেন বধনির্ণেকং সর্পাদীনাশক্লুবন্।
একৈকশশ্চরেৎ কৃচ্ছ্রং দ্বিজঃ পাপাপনুত্তয়ে॥
সাপ প্রভৃতির বধজনিত পাপের ক্ষয় (উক্ত) দান দ্বারা করতে অক্ষম হলে দ্বিজ পাপাপনোদনের জন্য প্রাজাপত্যব্রত অনুষ্ঠান করবে।
১৪০। অস্থিমতান্তু সত্ত্বানাং সহস্ৰস্য প্রমাপণে।
পূর্ণে চানস্যনস্গ্ধান্তু শূদ্ৰহত্যাব্রতং চরেৎ॥
অস্থিবিশিষ্ট সহস্র প্রাণীর বধে ও অস্থিবিহীন একশকট পরিমিত মৎকুণ (ছারপোকা) প্রভৃতি প্রাণীর বধে শূদ্ৰবোধোক্ত প্রায়শ্চিত্ত করবে।
১৪১। কিঞ্চিদেব তু বিপ্রায় দদ্যাদস্থিমতাং বধে।
অনস্থনাঞ্চৈব হিংসায়াং প্রাণায়ামেন শুধ্যতি॥
অস্থিবিশিষ্ট প্রাণীর বধে ব্রাহ্মণকে কিঞ্চিৎ দিবে। অস্থিরহিত প্রাণীর বধে প্রাণায়াম দ্বারা (হত্যাকারী) শুদ্ধ হয়।
১৪২। ফলদানাস্তু বৃক্ষাণাং ছেদনে জপ্যমৃক্শতম্।
গুল্মবল্লীলতানাঞ্চ পুষ্পিতানাঞ্চ বীরুধাম্॥
ফলবান্ বৃক্ষ, গুল্ম, বল্লী, লতা ও পুষ্পিত বীরুধের ছেদনে এক শত ঋক্ জপ করা উচিত।
১৪৩। অন্নাদ্যজানাং সত্ত্বানাং রসজ্ঞানাঞ্চ সর্ব্বশঃ।
ফলপুষ্পোদ্ভবানাঞ্চ ঘৃতপ্রাশো বিশোধনম্॥
অন্নাদিতে জাত, গুড়াদিরসে জাত, ফল পুষ্পে উদ্ভূত সকল প্রাণীর বধে ঘৃতপ্রাশন প্রায়শ্চিত্ত।
১৪৪। কৃষ্টজানামোষধীনাং জাতানাঞ্চ স্বয়ং বনে।
বৃথালম্ভেহনুগচ্ছেদ্গাং দিনমেকং পয়োব্রতঃ॥
কর্ষিত ভূমিতে জাত ওষধি ও বনে আপনিই জাত (নীবারাদি) অকারণ ছেদন করলে এক দিন দুগ্ধপান করে একটি গাভীর অনুগমন করবে।
১৪৫। এতৈর্ব্রতৈরপোহ্যং স্যাদেনো হিংসাসমুদ্ভবম্।
জ্ঞানাজ্ঞানকৃতং কৃৎস্নং শৃণুতানাদ্যভক্ষণে॥
জ্ঞানকৃত ও অজ্ঞানকৃত হত্যাজনিত সকল পাপ এই ব্রতগুলি দ্বারা নষ্ট হয়। অভক্ষাভক্ষণের প্রায়শ্চিত্ত শোন।
১৪৬। অজ্ঞানাদ্বারুণীং পীত্বা সংস্কারেণৈব শুধ্যতি।
মতিপূৰ্ব্বমনির্দ্দেশ্যং প্রাণান্তিকমিতি স্থিতিঃ॥
অজ্ঞাতসারে (গৌড়ী বা মাধ্বী) সুরাপান করে (পুনরায় উপনয়ন) সংস্কারের দ্বারাই (ব্রাহ্মণ) শুদ্ধ হন। জ্ঞাতসারে (পৈষ্টী ভিন্ন মদ্য পানে) প্রাণান্তিক প্রায়শ্চিত্ত হবে—এই ব্যবস্থা।
১৪৭। অপঃ সুরাভাজনস্থা মদ্যভাণ্ডস্থিতাস্তথা।
পঞ্চরাত্রং পিবেৎ পীত্বা শঙ্খপুষ্পীশ্রিতং পয়ঃ॥
(পৈষ্টী) সুরা পাত্রস্থিত ও (পৈষ্টী ভিন্ন অন্য) মদ্যভাণ্ডস্থিত জল পান করে শঙ্খপুষ্পনামক ওষধি মিশিয়ে পাঁচ রাত্রি দুগ্ধ পান করবে।
১৪৮। স্পৃষ্ট্বা দত্ত্বা চ মদিরাং বিধিবৎ প্রতিগৃহ্য চ।
শূদ্রোচ্ছিষ্টাশ্চ পীত্বাপঃ কুশবারি পিবেৎ ত্র্যহম্॥
সুরা স্পর্শ করে, দান করে বা যথাবিধি প্রতিগ্রহ করে অথবা শূদ্রের উচ্ছিষ্ট জল পান করে তিন দিন কৃশজল পান করবে।
১৪৯। ব্রাহ্মণস্তু সুরাপস্য গন্ধমাঘ্রায় সোমপঃ।
প্রাণানপ্সু ত্রিরায়ম্য ঘৃতং প্রাশ্য বিশুধ্যতি॥
যে ব্রাহ্মণ সোমযাগ করেছেন, তিনি সুরাপায়ী ব্রাহ্মণের মুখের গন্ধ আঘ্রাণ করলে জলমধ্যে তিনবার প্রাণায়াম করে ঘৃতপ্রাশন দ্বারা শুদ্ধ হন।
১৫০। অজ্ঞানাং প্রাশ্য বিম্মুত্রং সুরাসংস্পৃষ্টমেব চ।
পুনঃ সংস্কারমর্হন্তি ত্ৰয়ো বর্ণা দ্বিজাতয়ঃ॥
তিন বর্ণের দ্বিজ অজ্ঞাতসারে বিষ্ঠা বা মূত্র অথবা সুরাসংস্পৃষ্ট খাদ্য ভক্ষণ করে পুনরায় (উপনন) সংস্কারের যোগ্য হন।
১৫১। বপনং মেখলা দণ্ডো ভৈক্ষচর্য্যা ব্ৰতানি চ।
নিবৰ্ত্তন্তে দ্বিজাতীনাং পুনঃসংস্কার কর্ম্মণি॥
পুনরায় সংস্কারে মস্তকমুণ্ডন, মেখলাধারণ, দণ্ডধারণ, ভিক্ষা করা, (মধুমাংসাদিত্যাগ রূপ) ব্রত হয় না।
১৫২। অভোজ্যানান্ত ভুক্ত্বানং স্ত্রীশূদ্রোচ্ছিষ্টমেব চ।
জগ্ধ্বা মাংসমভক্ষ্যঞ্চ সপ্তরাত্রং যবান্ পিবেৎ॥
যাদের থেকে খাদ্য ভক্ষণীয় নয় তাদের অন্ন, স্ত্রীলোক বা শূদ্রের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করে, অভক্ষ্য মাংসভক্ষণ করে সাত রাত্রি যব (মণ্ড) পান করবে।
১৫৩। শুক্তানি চ কষাযাংশ্চ পীত্বামেধ্যান্যপি দ্বিজঃ।
তাবদ্ভবত্যপ্ৰয়তো যাবৎ তন্ন ব্রাজত্যধঃ॥
অনিষিদ্ধ হলেও শুক্ত (যে দ্রব্য স্বভাবতঃ মধুর, কালবশে অম্ন হয়) বা কষায় (বয়ড়া প্রভৃতির কাথ) পান করে দ্বিজ ততক্ষণ পর্যন্ত অপবিত্র থাকবেন যতক্ষণ না তা জীর্ণ হয়।
১৫৪। বিড়বরাহখরোষ্ট্রাণাং গোমায়োঃ কপিকাকয়োঃ।
প্রাশ্য মূত্রপুরীষাণি দ্বিজশ্চান্দ্রায়ণং চরেৎ॥
গ্রাম্যশূকর, গর্দভ, উষ্ট্র, শৃগাল, বানর বা কাকের মূত্র, বিষ্ঠা খেয়ে দ্বিজ চান্দ্রায়ণ করবেন।
১৫৫। শুস্কাণি ভূক্ত্বা মাংসানি ভৌমানি কবকানি চ।
অজ্ঞাতঞ্চৈব সূনাস্থমেতদেব ব্রতং চরেৎ॥
শুকমাংস বা ভূমিজাত ছত্রাক বা কসাইখানা থেকে আনীত অজ্ঞাত মাংসভক্ষণে এই ব্রতই করবেন।
১৫৬। ক্ৰব্যাদশূকরোষ্ট্রাণাং কুক্কুটানাঞ্চ ভক্ষণে।
নরকাকখরাণাঞ্চ তপ্তকৃচ্ছং বিশোধনম্॥
কাঁচা মাংসভোর্জী পশুপাখী, (গ্রাম্য) শূকর, উষ্ট্র, কুক্কুট, মানুষ, কাক বা গর্দভের মাংসভক্ষণে তপ্তকৃচ্ছ্র প্রায়শ্চিত্ত।
১৫৭। মাসিকান্নন্তু যোহশ্নীয়াদসমাবর্ত্তকো দ্বিজঃ।
স ত্ৰীণ্যহান্যুপবসেদেকাহঞ্চোদকে বসেৎ॥
সমাবর্তনের পূর্বে যে দ্বিজ মাসিক শ্রাদ্ধে অন্নভক্ষণ করেন, তিনি তিনদিন উপবাস করবেন এবং একদিন জলে বাস করবেন।
১৫৮। ব্রহ্মচারী তু যোহশ্লীয়ান্মধু মাংসং কথঞ্চন।
স কৃত্বা প্রাকৃতং কৃচ্ছ্রং ব্রতশেষং সমাপয়েৎ॥
যে ব্রহ্মচারী কোন প্রকারে মধু বা মাংস ভক্ষণ করেন, তিনি প্রাজাপত্য ব্রত করে (প্রারব্ধ) ব্রতের সমাপন করবেন।
১৫৯। বিড়ালকাকাখুচ্ছিষ্টং জগ্ধ্বা শ্বনকুলস্য চ।
কেশকীটাবপন্নঞ্চ পিবেদ্ব্রহ্মসুবর্চ্চলাম্॥
বিড়াল, কাক, ইদুর, কুকুর বা নেউলের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করে বা কেশ বা কীটদুষ্ট দ্রব্যভক্ষণ করে ব্রহ্মসুবর্চলন নামক ওষধির ক্কথিত জল পান করবে।
১৬০। অভোজ্যমন্নং নাব্যব্যমাত্মনঃ শুদ্ধিমিচ্ছতা।
অজ্ঞানভুক্তন্তূত্তার্য্যং শোধ্যং বাপ্যাশুশোধনৈঃ॥
নিজের শুদ্ধিকামী ব্যক্তি অভোজ্য অন্ন ভক্ষণ করবে না। অজ্ঞাতসারে ভুক্ত হলে বমি করে ফেলতে হবে অথবা শীঘ্র প্রায়শ্চিত্ত দ্বারা শুদ্ধ হতে হবে।
১৬১। এযোহনাদ্যানসোক্তো ব্ৰত্যনাং বিবিধ বিধিঃ।
স্তেয়দোষাপহর্তৃর্ণাং ব্রত্যনাং শ্রূয়তাং বিধিঃ॥
অভক্ষ্যভক্ষণে (প্রায়শ্চিত্তরূপ) ব্রতসমূহের এই বিবিধ নিয়ম উক্ত হল। চৌর্য দোষনাশকদের ব্রতবিধি শোন।
১৬২। ধান্যাম্মধনচৌর্য্যাণি কৃত্বা কামাদ্দ্বিজোত্তমঃ।
স্বজাতীয়গৃহাদেব কৃচ্ছ্রাব্দেন বিশুধ্যতি॥
ব্রাহ্মণ জ্ঞাতসারে সবর্ণের গৃহ থেকে ধান্য, অন্ন বা ধন চুরি করে এক বৎসর কৃচ্ছ্রদ্বারা শুদ্ব হন।
১৬৩। মনুষ্যাণান্তু হরণে স্ত্রীণাং ক্ষেত্ৰগৃহস্য চ।
কূপবাপীজলানাঞ্চ শুদ্ধিশ্চান্দ্রায়ণং স্মৃতম্॥
মানুষ, স্ত্রীলোক, ক্ষেত্র, গৃহ, কূপ বা দীর্ঘিকার জল হরণে প্রায়শ্চিত্ত চান্দ্রায়ণ।
১৬৪। দ্রব্যাণামল্পসারাণাং স্তেয়ং কৃত্বান্যবেশ্মতঃ।
চরেৎ সান্তপনং কৃচ্ছ্রং তন্নির্যাত্যাত্মশুদ্ধয়ে॥
অল্পমূল্য দ্রব্য অন্যের বাড়ী থেকে চুরি করে নিজের শুদ্ধির জন্য সান্তপন কৃচ্ছ্র করবে।
১৬৫। ভক্ষ্যভোজ্যাপহরণে যানশয্যাসনস্য চ।
পুষ্পমূলফলানাঞ্চ পঞ্চগব্যং বিশোধনম্॥
ভক্ষ্যদ্রব্য, যান, শয্যা, আসন, ফুল, মূল ও ফলের অপহরণে পঞ্চগব্য পান শুদ্ধির উপায়।
১৬৬। তৃণকাষ্ঠদ্রমাণাঞ্চ শুকান্নস্য গুড়স্য চ।
চেলচর্ম্মামিষাণাঞ্চ ত্রিরাত্ৰং স্যাদভোজনম্॥
তৃণ, কাষ্ঠ, বৃক্ষ, শুষ্ক অন্ন, গুড়, বস্ত্র, চর্ম ও মাংসের (অপহরণে) তিন রাত্রি উপবাস (বিধেয়)।
১৬৭। মণিমুক্তাপ্রবালানাং তাম্ৰস্য রজতস্য চ।
অয়ঃকাংস্যোপলানাঞ্চ দ্বাদশাহং কণান্নতা॥
মণি, মুক্তা, প্রবাল, তামা; রূপা, লোহা, কাঁসা ও পাথর (এইগুলির অপহরণে) বার দিন চালের কণা ভক্ষণ (বিধেয়)।
১৬৮। কার্পাসকীটজোর্ণানাং দ্বিশফৈকশফস্য চ।
পক্ষিগ্ধৌষধীনাঞ্চ রজ্জ্বাশ্চৈব ত্র্যহং পয়ঃ॥
কাপাস, পট্টবস্ত্র, পশমী (কম্বলাদি,), দ্বিখুর ও এক খুরবিশিষ্ট পশু, পক্ষী, গন্ধৌষধি (চন্দনাদি) বা দড়ি চুরিতে তিন দিন দুগ্ধপান (বিধেয়া)।
১৬৯। এতব্রতৈরপোহেত পাপং স্তেয়কৃতং দ্বিজঃ।
অগম্যাগমনীয়ন্তু ব্রতৈরেভিরপানুদেৎ॥
দ্বিজ এই ব্রতসমূহের দ্বারা চৌর্যজনিত পাপ দূর করবেন, অগম্যাস্ত্রীগমনজনিত পাপ (বক্ষ্যমাণ) ব্রতসমূহেব দ্বারা দূর করবেন।
১৭০। গুরুতল্পব্রতং কুর্য্যাদ্রেতঃ সিক্ত্বা স্বযোনিষু।
সখ্যুঃ পুত্ৰস্য চ স্ত্রী ষু কুমারীদন্ত্যজাসু চ॥
সহোদরা ভগিনী, বন্ধুভার্যা, পুত্রবধূ, কুমারী বা চণ্ডালীতে শুক্রসিঞ্চন করে গুরুদারগমনের প্রায়শ্চিত্ত (বিধেয়)।
১৭১। পৈতৃষ্বস্রেয়ীং ভগিনীং স্বস্রীয়াং মাতুরেব চ।
মাতুশ্চ ভ্রাতুস্তনয়াং গত্বা চান্দ্রায়ণং চরেৎ॥
পিসতুত ভগিনী, মাসতুত ভগিনী বা মাতুলের কন্যা গমনে চান্দ্রায়ণ করবে।
১৭২। এতাস্তিস্রস্তু ভার্য্যার্থে নোপযচ্ছেত্তু বুদ্ধিমান্।
জ্ঞাতিত্বেনানুপেয়াস্তাঃ পততি হ্যুপযন্নধঃ॥
বুদ্ধিমান্ ব্যক্তি ভার্যা করার জন্য এই (উক্ত) তিনজনকে বিবাহ করবেন না। বান্ধবতা হেতু এরা অগম্যা, এদের বিবাহ করলে পতিত হয়।
১৭৩। অমানুষীষু পুরুষ উদক্যায়ামযোনিষু।
রেতঃ সিক্ত্ত্বা জলে চৈব কৃচ্ছ্রং সাতপনংচরেৎ॥
(গোভিন্ন অন্য) পশুতে, পুরুষে৬, রজঃস্বলা নারীতে, স্ত্রীলোকের যোনি তিন্ন (মুখাদি) অন্য স্থানে বা জলে শুক্রসিঞ্চন করে সান্তপন ব্রত করবে।
১৭৪। মৈথুনন্তু সমাসেব্য পুংসি যোষিতি বা দ্বিজঃ।
গোযানেহ্নসু দিবা চৈব সব্যসাঃ স্নানমাচরেৎ॥
পুরুষে বা নারীতে মৈথুন করে, গোশকটে, জলে বা দিনে (মৈথুন করে দ্বিজ সব স্নান করবেন।
১৭৫। চাণ্ডালান্ত্যস্ত্রিয়ো গত্বা ভুক্ত্বা চ প্রতিগৃহ্য চ।
পতত্যজ্ঞানতোবিপ্রো জ্ঞানাৎ সাম্যন্তু গচ্ছতি॥
অজ্ঞাতসারে চণ্ডাল বা (ম্লেচ্ছ শবরাদি) নীচজাতীয়া স্ত্রীগমন করে, তাদের অন্নভক্ষণ করে বা তাদের থেকে দান গ্রহণ করে ব্রাহ্মণ পতিত হন, জ্ঞাতসারে করলে তাদের সমান হন।
১৭৬। বিপ্রদুষ্টাং স্ক্রিয়ং ভর্ত্তা নিরুন্ধ্যাদেকবেশ্মনি।
যৎ পুংসঃ পরদারেষু তচ্চৈনাং চারয়েদ্ব্রতম্॥
ব্যভিচারিণী স্ত্রীকে স্বামী একটি ঘরে বন্ধ করে রাখবেন এবং পরদারগমনে পুরুষের যে প্রায়শ্চিত্ত, তা তাকে করাবেন।
১৭৭। সা চেৎ পুনঃ প্রদুষ্যেত্তু সদৃশেনোপয়ন্ত্রিতা।
কৃচ্ছ্রং চান্দ্রায়ণষ্ণৈব তদস্যাঃ পাবনং স্মৃতম্॥
(প্রায়শিচত্তের পরে) পুনরায় সেই স্ত্রী যদি সবর্ণ পুরুষকর্তৃক প্রার্থিতা হয়ে ব্যভিচার করে, তাহলে প্রাজাপত্য ও চান্দ্রায়ণ তার শুদ্ধির উপায় বলে খ্যাত।
১৭৮। যৎ করোত্যেকরাত্রেণ বৃষলীসেবনাদ্দ্বিজঃ।
তড়ৈক্ষভুগ্ জপন্নিত্যং ত্রিভির্বষ্যৈর্ব্যপোহতি॥
একরাত্র চণ্ডালী৭ গমনে দ্বিজ যে পাপ করেন, ভিক্ষান্নভোজন ও (জলমধ্যে সাবিত্র্যাদি) জপ করে তিন বৎসরে সেই পাপ দূর করেন।
১৭৯। এষা পাপকৃতামুক্তা চতুর্ণামপি নিষ্কৃতিঃ।
পতিতৈঃ সম্প্রযুক্তানামিমাঃ শৃণুত নিষ্কৃতীঃ॥
চার বর্ণের পাপাচারিগণেরই এই প্রায়শ্চিত্ত বলা হয়েছে। পতিত ব্যক্তিগণের সংসর্গকারিগণের এই (বক্ষ্যমাণ) প্রায়শ্চিত্ত শোন।
১৮০। সংবৎসরেণ পততি পতিতেন সহাচরন্।
যাজনাধ্যাপনাদ্ যৌনান্ন তু যানাসনাশনাৎ॥
পতিতের সঙ্গে একযানে গমন, একাসনে উপবেশন ও এক পংক্তিতে ভোজন রূপ সংসর্গ এক বত্সর করলে লোক পতিত হয় ; যাজন, অধ্যাপন ও যৌন (বিবাহাদি) সংসর্গে সদ্য পাতিত হয়।৮
১৮১। যো যেন পতিতেনৈষাং সংসর্গং যাতি মানবঃ।
স তস্যৈব ব্রতং কুর্য্যাৎ তৎসংসর্গবিশুদ্ধয়ে॥
যে এদের মধ্যে পতিতের সংসর্গ করে, সে সেই সংসর্গজনিত পাপমোচনের জন্য তারই প্রায়শ্চিত্ত করবে।
১৮২। পতিতস্যোদকং কার্যং সপিন্ডৈর্বান্ধবৈর্বহিঃ।
নিন্দিতেহহনি সায়াহ্নে জ্ঞাত্যৃত্বিগগুরুসন্নিধৌ॥
পতিত (মহাপাতকী) ব্যক্তির (জীবদ্দশায়) তার প্রেতোদকক্রিয়া সপিণ্ড বান্ধবগণ (গ্রামের) বাইরে নিন্দিত দিনে (নবমী তিথিতে) সন্ধ্যাবেলা জ্ঞাতি, ঋত্বিক ও গুরুর উপস্থিতিতে করবে।
১৮৩। দাসী ঘটমপাং পূর্ণং পর্যসেৎ প্রেতবৎ পদা।
অহোরাত্রমুপাসীরন্নশৌচং বান্ধবৈঃ সহ॥
(সপিণ্ডসমানোদক কর্তৃক নিযুক্ত) দাসী দক্ষিণাভিমুখী হয়ে, উদকপূর্ণ ঘট পা দিয়ে ফেলেদিবে। সপিণ্ডসমানোদকগণ এক দিন রাত্রি অশৌচ পালন করবে।
১৮৪। নিবর্ত্তেরংশ্চ তস্মাত্তু সম্ভাষণসহাসনে।
দায়াদ্যস্য প্রদানঞ্চ যাত্রা চৈব হি লৌকিকী॥
তার সঙ্গে কথা বলা, একত্র বসা, তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারদান এবং (শ্রাদ্ধাদিতে নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণাদি) ব্যবহার বর্জন করবে।
১৮৫। জ্যেষ্ঠতা চ নিবর্ত্তেত জ্যেষ্ঠাবাপ্যঞ্চ যদ্ধনম্।
জ্যেষ্ঠাংশং প্রাপ্নূয়াচ্চাস্য যবীয়ান্ গুণতোহধিকঃ॥
ঐ পতিত ব্যক্তির জ্যেষ্ঠতা (অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ হিসাবে তার প্রতি অভিবাদনাদি) থাকবে না, (পৈতৃক সম্পত্তিতে) জ্যেষ্ঠ হিসাবে প্রাপ্য (অতিরিক্ত) ধন সে পাবে না। কনিষ্ঠ ভ্রাতা অধিকতর গুণবান্ হলে জ্যেষ্ঠের অংশ পাবে।
১৮৬। প্রায়শ্চিত্তে তু চরিতে পূর্ণকুম্ভমপাং নবম্।
তেনৈব সার্দ্ধং প্রাস্যেযুঃ স্নাত্বা পুণ্যে জলাশয়ে॥
(পতিত ব্যক্তি) যদি প্রায়শ্চিত্ত করে তাহলে (সপিণ্ডসমানোদকেরা) তার সঙ্গে একত্র হয়ে পবিত্র জলাশয়ে স্নান করে নূতন জলপূর্ণ কুম্ভ নিক্ষেপ করবে।
১৮৭। স ত্বপ্সু তং ঘটং প্রাস্য প্রবিশ্য ভবনং স্বকম্।
সর্ব্বাণি জ্ঞাতিকার্য্যাণি-যথাপূৰ্ব্বং সমাচরেৎ॥
সে জলে সেই ঘট ফেলে নিজ বাড়ীতে প্রবেশ করে সকল জ্ঞাতিকর্ম পূর্বের ন্যায় করবে।
১৮৮। এতমেব বিধিং কুয়্যদি্ যাোষিৎসু পতিতাস্বপি।
বস্ত্রান্নপানং দেয়ংতু বসেয়ুশ্চ গৃহান্তিকে॥
পতিতা নারী সম্বন্ধেও এই নিয়মই পালন করবে। পতিতা নারীকে বস্ত্র, অন্ন ও পানীয় দিবে এবং তাকে গৃহসমীপে (কুটীরে) বাস করাবে।
১৮৯। এনস্বিভিরনিৰ্ণিক্তৈর্নার্থং কিঞ্চিৎ সহাচরেৎ।
কৃতনির্ণেজনাংশ্চৈব ন জুগুপ্সেত কর্হিচিৎ॥
যে পাপাচারিগণ প্রায়শ্চিত্ত করেনি, তাদের সঙ্গে (দান প্রতিগ্রহাদি) কিছু করবে না এবং যারা প্রায়শ্চিত্ত করেছে, তাদের কখনও নিন্দা করবে না।
১৯০। বালঘ্নাংশ্চ কৃতঘ্নাংশ্চ বিশুদ্ধানপি ধৰ্ম্মতঃ।
শরণাগতহন্তৃংশ্চ স্ত্রীহন্তৃংশ্চ ন সংবসেৎ॥
বালক, শরণাগত ও স্ত্রীহন্তা এবং উপকারীর অপকারক, প্রায়শ্চিত্ত দ্বারা শুদ্ধ হলেও এদের সঙ্গে ব্যবহার করবে না।
১৯১। যেষাং দ্বিজানাং সাবিত্রী নানুচ্যেত যথাবিধি।
তাংশ্চারয়িত্বা ত্ৰীন্ কৃচ্ছ্রন্ যথাবিধ্যুপনায়য়েৎ॥
যে দ্বিজগণের সাবিত্রী (অর্থাৎ উপনয়ন সংস্কার) নিয়মানুসারে হয়নি, তাদের তিনটি প্রাজাপত্য করিয়ে যথাবিধি উপনয়ন দিবে।
১৯২। প্রায়শ্চিত্তং চিকীর্ষন্তি বিকমর্ম্মস্থাস্তু যে দ্বিজাঃ।
ব্ৰহ্মণা চ পরিত্যক্তাস্তেষামপ্যেতদাদিশেৎ॥
যে নিষিদ্ধকৰ্মকারী বা (উপনীত হয়েও) বেদাধ্যয়নে বিমুখ দ্বিজগণ প্রায়শ্চিত্ত করতে ইচ্ছা করেন, তাঁদেরও এই (উক্ত প্রাজাপত্যত্রয়) নির্দেশ করবে।
১৯৩। যদা্গর্হিতেনাৰ্চয়ন্তি কৰ্ম্মণা ব্রাহ্মণা ধনম্।
তস্যোৎসর্গেন শুধ্যন্তি জপ্যেন তপসৈব চ৷৷
ব্রাহ্মণগণ নিন্দিত কর্মদ্বারা যে ধন অর্জন করেন, তার ত্যাগ, জপ ও তপস্যা দ্বারা তাঁরা শুদ্ধ হন।
১৯৪। জপিত্বা ত্রীণি সাবিত্র্যাঃ সহস্রাণি সমাহিতঃ।
মাসং গোষ্ঠে পয়ঃ পীত্বা মুচ্যতেহসৎপ্রতিগ্ৰহ্যৎ॥
সংযত চিত্তে তিন হাজার বার গায়ত্রী জপ করে এবং এক মাস গোচারণভূমিতে দুগ্ধপান করে অসৎপ্রতিগ্ৰহজনিত পাপ থেকে (ব্রাহ্মণ) মুক্ত হন।
১৯৫। উপবাসকৃশং তন্তু গোব্রজাৎ পুনরাগতম্।
প্রণতং প্রতিপূচ্ছেয়ুঃ সাম্যং সৌম্যেচ্ছসীতি কিম্॥
তিনি উপবাসে কৃশ হয়ে গোচারণভূমি থেকে ফিরে এলে এবং প্রণাম করলে তাঁকে (ব্রাহ্মণগণ) জিজ্ঞাসা করবেন—হে সৌম্য, তুমি আমাদের সঙ্গে সাম্য (তুল্য ব্যবহার) ইচ্ছা কর কি?
১৯৬। সত্যমুক্ত্বা তু বিপ্ৰেষু বিকিরেদ্ যবসং গবাম্।
গোভিঃ প্রবর্ত্তিতে তীর্থে কুর্য্যুস্তস্য পরিগ্রহম্॥
একথা সত্য (পুনরায় অসৎপ্রতিগ্ৰহ করব না) এইরূপ ব্রাহ্মণদের বলে গাভীকে ঘাস দিবেন; সেই ঘাস গাভী খেতে থাকলে (সেইহেতু) পবিত্ৰীকৃত স্থানে (ব্রাহ্মণগণ) তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করতে স্বীকার করবেন।
১৯৭। ব্রাত্যানাং যাজনং কৃত্বা পরেষামন্ত্যকর্ম চ।
অভিচারমহীনঞ্চ ত্রিভিঃ কৃচ্ছ্রৈর্ব্যপোহতি॥
ব্রাত্যের৯ যাজন, (পিতা গুরু প্রভৃতি ছাড়া) অন্যের অন্ত্যকর্ম (দাহ শ্রাদ্ধাদি), নির্দোষ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অভিচার (মারণাৰ্থ শ্যেনযাগাদি) ও (অশুচিকর) অহীনযাগ করে তিনটি প্রাজাপত্য দ্বারা লোক পাপমুক্ত হয়।
১৯৮। শরণাগতং পরিত্যজ্য বেদং বিপ্লাব্য চ দ্বিজঃ।
সংবৎসরং যবাহারস্তৎ পাপমপসেধতি॥
শরণাপন্ন ব্যক্তিকে ত্যাগ করে বা যে বেদাধ্যয়নের অধিকারী নয় তাকে অধ্যাপন করে দ্বিজ এক বৎসর যবাহারী হয়ে সেই পাপ দূর করেন।
১৯৯। শ্বশৃগালখরৈর্দ্দষ্টো গ্রামৌঃ ক্ৰব্যাদ্ভিরেব চ।
নরাশোষ্ট্রবরাহৈশ্চ প্রাণায়ামেন শুধ্যতি॥
কুকুর, শৃগাল, গর্দভ, গ্রাম্য কাঁচামাংসভোজী জন্তু, মানুষ, অশ্ব, উষ্ট্র বা শূকর কর্তৃক দষ্ট হয়ে প্রাণায়ামের দ্বারা শুদ্ধ হয়।
২০০। ষষ্ঠান্নকালতা মাসং সংহিতাজপ এব বা।
হোমাশ্চ সকলা নিত্যমপাঙ্ক্ত্যানাং বিশোধনম্॥
একমাস পর্যন্ত দুইদিন উপবাসী থেকে তৃতীয় দিন রাত্রে ভোজন বা বেদপাঠ এবং ‘দেবকৃতস্যৈনস’ ইত্যাদি আটটি মন্ত্রদ্বারা হোম সর্বদা অপাংক্তেয় ব্যক্তিদের শুদ্ধির উপায়।
২০১। উষ্ট্রযানং সমারুহ্য খরযানন্তু কামতঃ।
স্নাত্বা তু বিপ্রো দিগ্বাসাঃ প্রাণায়ামেন শুধ্যতি॥
উটের বা গাধার গাড়ীতে স্বেচ্ছায় আরোহণ করে বা উলঙ্গ হয়ে স্নান করলে ব্রাহ্মণ প্রাণায়ামের দ্বারা শুদ্ধ হয়।
২০২। বিনাদ্ভিরপ্সু বাপ্যাৰ্ত্তঃ শারীরং সন্নিবেশ্য চ।
সচেলো বহিরাপ্লুত্য গামালভ্য বিশুধ্যতি॥
জলাভাবে বা জলমধ্যে (মলমূত্রের) বেগার্ত ব্যক্তি বিষ্ঠা মূত্র ত্যাগ করে সবস্ত্র (গ্রামের) বাইরে (নদী প্রভৃতিতে) স্নান করে গাভী স্পর্শ করে শুদ্ধ হয়।
২০৩। বেদোদিতানাং নিত্যানাং কৰ্ম্মণাং সমতিক্রমে।
স্নাতকব্রতলোপে চ প্রায়শ্চিত্তমভোজনম্॥
বেদবিহিত নিত্যকর্মের অকরণে এবং স্নাতকব্রতের লোপে অনাহার প্রায়শ্চিত্ত।
২০৪। হুঙ্কারং ব্রাহ্মণস্যোক্ত্বা ত্বঙ্কারঞ্চ গরীয়সঃ।
স্নাত্বানশ্নন্নহঃশেষমভিবাদ্য প্রসাদয়েৎ॥
ব্রাহ্মণকে হুংকার (চুপ কর ইত্যাদি) বা গুণবত্তর ব্যক্তিকে তুমি বললে স্নান করে উপবাসী থেকে দিনের শেষে তাদের অভিবাদন করে তুষ্ট করবে।
২০৫। তাড়য়িত্বা তৃণেনাপি কণ্ঠে বাবধ্য বাসসা॥
বিবাদে বা বিনির্জিত্য প্রণিপত্য প্ৰসাদয়েৎ॥
(ব্রাহ্মণকে) তৃণ দিয়ে প্রহার করলেও, গলায় কাপড় দিলে, (বাক্) কলহে পরাস্ত করে প্রণাম দ্বারা তাঁকে তুষ্ট করবে।
২০৬। অবগূৰ্য্য ত্বব্দশতং সহস্রমভিহত্য চ।
জিঘাংসয়া ব্রাহ্মণস্য নরকং প্রতিপদ্যতে॥
ব্রাহ্মণ-হননের ইচ্ছায় দণ্ড উঠালে এক শত বৎসর, আঘাত করলে হাজার বৎসর, নরকভোগ হয়।
২০৭। শোণিতংযাবতঃ পাংশূন্ সংগৃহ্নাতি মহীতলে।
তাবন্ত্যব্দসহস্রাণি তৎকৰ্ত্তা নরকে বসেৎ॥
মাটিতে রক্ত যতগুলি ধূলিকণাকে আর্দ্র করে, তত সংখ্যক বৎসর (উক্ত) ব্যক্তি নরকে বাস করে।
২০৮। অবগূৰ্য্য চরেৎ কৃচ্ছ্রমতিকৃচ্ছ্রং নিপাতনে।
কৃচ্ছ্রতিকৃচ্ছ্রৌ কুর্ব্বীত বিপ্রস্যোৎপাদ্য শোণিতম্॥
ব্রাহ্মণের হত্যাকারী ব্যক্তি দণ্ড উত্তোলন করে প্রাজাপত্য, প্রহার করে অতিকৃচ্ছ্র রক্তপাত করে কৃচ্ছ্রতিকৃচ্ছ্র (উভয়) ব্রত করবে।
২০৯। অনুক্তনিষ্কৃতীনান্তু পাপানামপনুত্তয়ে।
শক্তিঞ্চাবেক্ষ্য পাপঞ্চ প্রায়শ্চিত্তং প্রকল্পয়েৎ॥
যাদের প্রায়শ্চিত্ত নির্দিষ্ট হয়নি, ঐ সকল পাপাপনোদনের জন্য পাপীর শক্তি ও পাপের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা করবে।
২১০। যৈরভ্যুপায়ৈরেনাংসি মানবো ব্যপকৰ্ষতি।
তান্ বোহভ্যুপায়ান্ বক্ষ্যামি দেবর্ষিপিতৃসেবিতান্॥
যে সকল উপায়ে মানুষ পাপ ক্ষয় করে সেই দেবতা, পিতৃগণ ও ঋষি সেবিত উপায়গুলি সম্বন্ধে তোমাদের বলব।
২১১। এ্যহং প্রাতস্ত্র্যহং সায়ং ত্র্যহমদ্যাদষাচিতম্।
ত্র্যহং পরঞ্চ নাশ্নীয়াৎ প্রাজাপত্যং চরন্ দ্বিজঃ॥
দ্বিজ প্রাজাপত্য করতে করতে তিনদিন প্রাতে, তিনদিন সন্ধ্যায়, তিনদিন অযাচিত দ্রব্য ভোজন করে পরের তিনদিন উপবাস করবে।
২১২। গোমূত্রং গোময়ং ক্ষীরং দধি সর্পিঃ কুশোদকম্।
একরাত্রোপবাসশ্চ কৃচ্ছ্রং সান্তপনং স্মৃতম্॥
গোমূত্র, গোময়, দুগ্ধ, দধি, ঘৃত ও কুশোদক গ্রহণ এবং একরাত্র উপবাস—এর নাম কৃচ্ছ্র সান্তপন।
২১৩। ত্রকৈকং গ্রামমশ্নীয়াৎ ত্র্যহাণি ত্ৰীণি পূৰ্ব্ববৎ।
ত্র্যহঞ্চোপবসেদন্ড্যমতি কৃচ্ছ্রং চরন্ দ্বিজঃ॥
দ্বিজ অতিকৃচ্ছ করতে করতে তিন দিন এক এক গ্রাস ভক্ষণ করবেন, তারপর তিন দিন পূর্বের নাায় (সন্ধ্যায় এক গ্রাস এবং তিন দিন অযাচিত এক এক গ্রাস ভোজন করবেন), শেষের তিন দিন উপবাস করবেন।
২১৪। তপ্তকৃচ্ছ্রং চরন্ বিপ্রো জলক্ষীরঘৃতানিলান্
প্রতিত্রাহং পিবেদুষ্ণান্ সকৃৎস্নায়ী সমাহিতঃ॥
ব্রাহ্মণ তপ্তকৃচ্ছ্র করতে করতে সংযত চিত্তে তিন তিন দিন করে উষ্ণ জল, উষ্ণ দুগ্ধ, উষ্ণ ঘৃত এবং উষ্ণ বায়ু সেবন করবেন ও একবার স্নান করবেন।
২১৫। যতাত্মনোহপ্রমত্তস্য দ্বাদশাহভোজনম্।
পরাকো নাম কৃচ্ছ্রহয়ং সর্ব্বপাপাপনোদনঃ॥
সংযতচিত্ত ও প্রমাদরহিত ব্যক্তির বার দিন উপবাস—এর নাম পরাককৃচ্ছ্র, এটি সকল পাপনাশক।
২১৬। একৈকং হ্রাসয়েৎ পিন্ডং কৃষ্ণে শুক্লে চ বর্দ্ধয়েৎ।
উপম্পৃশংস্ত্রিষবণমেতচ্চান্দ্রায়ণং স্মৃতম্॥
কৃষ্ণপক্ষে এক এক দিনে এক এক গ্রাস কমাবে, শুক্লপক্ষে এক এক দিনে এক এক গ্রাস বাড়াবে, তিনবার (প্রাতে, দুপুরে, সন্ধ্যায়) স্নান—এই ব্রত চান্দ্রায়ণ নামে খ্যাত।
২১৭। এতমেব বিধিং কৃৎস্নমারেদ্যবমধ্যমে।
শুক্লপক্ষাদিনিয়তশ্চরংশ্চান্দ্রায়ণংব্ৰতম্॥
এই সম্পূর্ণ নিয়মই যবমধ্য (চান্দ্রায়ণ ব্রতে) পালন করবে (প্রভেদ শুধু এই যে এতে) শুক্লপক্ষ থেকে চান্দ্রায়ণ ব্রত আরম্ভ হয়।
২১৮। অষ্ট্যবষ্টৌ সমশ্নীয়াৎ পিণ্ডান্ মধ্যন্দিনে স্থিতে।
নিয়তাত্মা হবিষ্যাশী যতিচান্দ্রায়ণং চর॥
যতিচান্দ্রায়ণ করতে জিতেন্দ্রিয় ও হবিষ্যান্নভোজী হয়ে দুপুরে প্রতিদিন আট আটটি গ্রাস ভক্ষণ করবে।
২১৯। চতুরঃ প্রাতরশ্নীয়াৎ পিণ্ডান্ বিপ্রঃ সমাহিতঃ।
চতুরোহস্তমিতে সূর্য্যে শিশুচান্দ্রায়ণং স্মৃতম্॥
ব্রাহ্মণ সংযতচিত্তে প্রাতে চার গ্রাস ও সূর্যাস্তে চার গ্রাস ভক্ষণ করবেন—এই ব্রত শিশুচান্দ্রায়ণ নামে খ্যাত।
২২০। যথাকথঞ্চিৎ পিণ্ডানাং তিস্রোহশীতীঃ সমাহিতঃ।
মাসেনাশ্নন্ হবিষ্যস্য চন্দ্রসৈতি সলোকতাম্॥
কোন প্রকারে সংযতচিত্তে ২৪০ গ্রাস হবিষ্যান্ন এক মাসে ভক্ষণ করলে চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়।
২২১। এতদ্রুদ্রাস্তথাদিত্য বসবশ্চাচরন্ ব্রতম্।
সর্ব্বাকুশলমোক্ষায় মরুতশ্চ মহর্ষিভিঃ॥
রুদ্রগণ, আদিত্যগণ, বসুগণ, মরুদাণ ও মহর্ষিগণ সকল পাপক্ষয়ের জন্য এই ব্রত করেছিলেন।
২২২। মহাব্যাহৃতিভির্হোমঃ কর্তব্যঃ স্বয়মন্বহম্।
অহিংসা সত্যমক্রোধমার্জবঞ্চ সমাচরেৎ॥
মহাব্যাহৃতি (ভূঃ, ভুবঃ স্বঃ) সহকারে প্রতিদিন নিজের হোম কর্তব্য এবং অহিংসা, সত্যভাষণ, ক্রোধহীনতা ও সরলতার অভ্যাস করণীয়।
২২৩। ত্রিরহস্ত্রির্নিশায়াঞ্চ সবাসা জলমাবিশেৎ।
স্ত্রী-শূদ্র-পতিতাংশ্চৈব নাভিভাষেত কর্হিচিৎ॥
দিনে তিনবার, বাত্রে তিনবার সবস্ত্র স্নান করবে। কখনও স্ত্রীলোক, শূদ্র ও পতিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবে না।
২২৪। স্থানাসনাভ্যাং বিহরেদশক্তোহধঃ শয়ীত বা।
ব্রহ্মচারী ব্রতী চ স্যাদ্গুরুদেবদ্বিজার্চ্চকঃ॥
দণ্ডায়মান ও উপবিষ্ট হয়ে বিচরণ করবে, অক্ষম হলে ভূমিতে শয়ন করবে, স্ত্রীসংযোগরহিত হয়ে (মেখলাদণ্ডধারী) ব্রহ্মচারী হয়ে গুরু, দেবতা ও দ্বিজগণের পূজা করবে।
২২৫। সাবিত্রীঞ্চ জপেন্নিত্যং পবিত্রাণি চ শক্তিতঃ।
সর্ব্বেম্বেব ব্রতেম্বেবং প্রায়শ্চিত্তাৰ্থমাদৃতঃ॥
সকল ব্ৰতেই এইরূপ প্রায়শ্চিত্তের জন্য যত্নসহকারে সর্বদা গায়ত্রী ও অঘমৰ্ষণাদি মন্ত্র যথাশক্তি জপ করবে।
২২৬। এতৈর্দ্বিজাতয়ঃ শোধ্যা ব্রতৈরাবিষ্কতৈনসঃ।
অনাবিষ্কৃতপাপাংস্তু মন্ত্রৈর্হোমৈশ্চ শোধয়েৎ॥
এই দ্বিজগণ, যাঁদের পাপ লোকবিদিত, ব্ৰতসমূহ দ্বারা শোধনীয়। যাঁদের পাপ অজ্ঞাত, তাঁদের মন্ত্র ও হোমের দ্বারা শুদ্ধ করবে।
২২৭। খ্যাপনেনানুতাপেন তপাধ্যয়নেন চ।
পাপকৃন্মুচ্যতে পাপাৎ তথা দানেন চাপদি॥
পাপকারী ব্যক্তি (নিজের পাপের) ঘোষণা, অনুতাপ, তপস্যা (কৃচ্ছ্রসাধন) ও বেদাধ্যয়ন দ্বারা পাপমুক্ত হয়, আপদ্কালের দানের দ্বারা (পাপমুক্ত হয়)।
২২৮। যথা যথা নরোহধৰ্ম্মং স্বয়ং কৃত্বানুভাষতে।
তথা তথা ত্বচেবাহিস্তেনাধৰ্ম্মেন মুচ্যতে॥
যেমন যেমন মানুষ অধর্ম করে নিজে তা বলে, তেমন তেমন সে সেই অধর্ম থেকে মুক্ত হয়, যেমন সর্প ত্বক্ (নিমোক) থেকে মুক্ত হয়।
২২৯। যথা যথা মনস্তস্য দুষ্কৃতং কর্ম গৰ্হতি।
তথা তথা শরীরং তং তেনাধর্মেণ মুচ্যতে॥
যেমন যেমন তার মন দুষ্কর্মের নিন্দা করে, তেমন তেমন সব শরীর সেই অধর্ম থেকে মুক্ত হয়।
২৩০। কৃত্বা পাপং হি সন্তপ্য তষ্মাৎ পাপাৎ প্রমুচ্যতে।
নৈবং র্কুয্যাং পুনরিতি নিবৃত্ত্যা পুয়তে তু সঃ॥
পাপ করে অনুতাপ করলে সেই পাপ থেকে মানুষ মুক্ত হয়। এমন কাজ আর করব না, এই বলে নিবৃত্ত হলে সে পবিত্র হয়।
২৩১। এবং সঞ্চিন্ত্য মনসা প্ৰেত্য কর্মফলোদয়ম্।
মনোবাত্মূৰ্ত্তিভির্নিত্যং শুভং কর্ম সমাচরেৎ॥
এইভাবে মনে মনে পরলোকে কর্মফল চিন্তা করে কায়মনোবাক্যে সর্বদা শুভ কর্ম করবে।
২৩২। অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাৎ কৃত্বা কর্ম বিগর্হিতম্।
তস্মাদ্বিমুক্তিমন্বিচ্ছন্ন্ দ্বিতীয়ং ন সমাচরেৎ॥
জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে নিন্দিত কর্ম করে তার থেকে মুক্তি ইচ্ছা করে দ্বিতীয়বার তা করবে না।
২৩৩। যস্মিন্ কৰ্ম্মণ্যস্য কৃতে মনসঃ স্যাদলাঘবম্।
তস্মিংস্তাবত্তপঃ কুৰ্য্যদ্যাবৎ তুষ্টিকরং ভবেৎ॥
যে কাজ করা হলে মন ভারী হয়, সেই ব্যাপারে ততক্ষণ (তপস্যা, কৃচ্ছ্রসাধন) করবে যতক্ষণ মনস্তুষ্টি না হয়।
২৩৪। তপোমুলমিদং সৰ্ব্বং দৈবমানুষকং সুখম্।
তপোমধ্যং বুধৈঃ প্রোক্তং তোপোহন্তং বেদদর্শিভিঃ॥
দৈব ও মানুষকৃত এই সকল সুখের মূল তপস্যা। এর মধ্য তপস্যা এবং অন্ত তপস্যা, বেদজ্ঞ পণ্ডিতগণ এই কথা বলেছেন।
২৩৫। ব্রাহ্মণস্য তপো জ্ঞানং তপঃ ক্ষত্রস্য রক্ষণম্।
বৈশ্যস্য তু তপো বার্ত্তা তপঃ শূদ্রস্য সেবনম্ ॥
ব্রাহ্মণের তপস্যা জ্ঞান, ক্ষত্রিয়ের তপস্যা রক্ষা করা, বৈশ্যের তপস্যা কৃষি পশুপালনাদি, শূদ্রের তপস্যা (দ্বিজগণের) সেবা।
২৩৬। ঋষযঃ সংযতাত্মানঃ ফলমুলানিলাশনাঃ।
তপসৈব প্রপশ্যন্তি ত্রৈলোক্যং সচরাচরম্॥
জিতেন্দ্রিয়, ফলমূলভোজী ঋষিগণ তপস্যা দ্বারাই স্থাবরজঙ্গমাত্মক ত্রিভুবন দেখেন।
২৩৭। ঔষধ্যন্যগদো বিদ্যা দৈবী চ বিবিধা স্থিতিঃ।
তপসৈব প্রসিধ্যন্তি তপস্তেষাং হি সাধনম্॥
ঔষধ, নীরোগতা, বেদবিদ্যা, ও নানাবিধ স্বর্গাদিতে অবস্থান তপস্যা দ্বারাই সিদ্ধ হয়; কারণ, তপস্যা তাদের প্রাপ্তির কারণ।
২৩৮। যদ্দুস্তরং যদ্দুরাপং যদ্দুর্গং যচ্চ দুষ্করম্।
সৰ্ব্বন্তু তপসা সাধ্যং তপো হি দুরতিক্ৰমম্॥
যা দুস্তর, যা দুপ্রাপ্য, যা দুর্গম, যা দুষ্কর এই সবই তপস্যা দ্বারা সাধ্য; কারণ, তপস্যা অলঙ্ঘনীয়।
২৩৯। মহাপাতকিনশ্চৈব শেষাশ্চাকাৰ্য্যকারিণঃ।
তপসৈব সুতপ্তেন মুচ্যন্তে কিল্বিষাৎ ততঃ॥
মহাপাতকিগণ ও অবশিষ্ট পাপাচারিগণ সুষ্ঠুরূপে কৃত তপস্যা দ্বারাই পাপমুক্ত হয়।
২৪০। কীটাশ্চাহিপতঙ্গাশ্চ পশবশ্চ বয়াংসি চ।
স্থাবরাণি চ ভূতানি দিবং যান্তি তপোবলাৎ॥
কীট, সর্প, পতঙ্গ, জন্তু, পক্ষী এবং স্থাবর পদার্থ তপস্যার শক্তিতে স্বর্গে গমন করে।
২৪১। যৎ কিঞ্চিদেনঃ কুৰ্ব্বত্তি মনোবাঙ্ মূৰ্ত্তিভিৰ্জনাঃ।
তৎ সৰ্ব্বং নির্দ্দহন্ত্যাশু তপসৈব তপোধনাঃ॥
মানুষ কায়মনোবাক্যে যা কিছু পাপ করে, তার সবই তপস্বিগণ তপস্যা দ্বারা শীঘ্ন দগ্ধ করেন।
২৪২। তপসৈব বিশুদ্ধস্য ব্রাহ্মণস্য দিবৌকসঃ।
ইজ্যাশ্চ প্রতিগৃহ্ণন্তি কামান্ সংবর্দ্ধয়ন্তি চ ॥
তপস্যা দ্বারা শুদ্ধ ব্রাহ্মণেরই যজ্ঞ দেবগণ গ্রহণ করেন এবং তাঁর কাম্য বস্তু দান করেন।
২৪৩। প্রজাপতিরিদং শাস্ত্রং তপসৈবাসৃজৎ প্রভুঃ।
তথৈব বেদানৃষ্যস্তপসা প্রতিপেদিরে॥
প্রভু প্রজাপতি তপস্যা দ্বারাই এই শাস্ত্র সৃষ্টি করেছিলেন। তেমনই ঋষিগণ তপস্যা দ্বারা বেদসমূহ লাভ করেছিলেন।
২৪৪। ইত্যেতং তপসো দেব মহাভাগ্যং প্রচক্ষতে।
সর্ব্বস্যাস্য প্রপশ্যান্তস্তপসঃ পুণ্যমুত্তমম্॥
তপস্যা থেকে এই (পরিদৃশ্যমান) সকলের পবিত্র উৎপত্তি লক্ষ্য করে দেবগণ তপস্যার এই মাহাত্মা বলেন।
২৪৫। বেদাভ্যাসোহন্বহং শক্ত্যা মহাযজ্ঞক্রিয়া ক্ষমা।
নাশযন্ত্যাশু পাপানি মহাকজান্যপি॥
মহাযজ্ঞকরণে অসমর্থ ব্যক্তিগণ প্রতিদিন যথাশক্তি বেদাভ্যাসের ধারা শীঘ্ন মহাপাতকজাত পাপও নষ্ট করেন।
২৪৬। যথৈবস্তেজসা বহ্নিঃ প্রাপ্তং নির্দ্দহতি ক্ষণাৎ।
তথা জ্ঞানাগ্নিনা পাপং সৰ্ব্বং দহতি বেদবিৎ॥
যেমন অগ্নি নিকটবর্তী কাষ্ঠ ক্ষণমাত্রে তেজ দ্বারা নিঃশেষে দগ্ধ করে, তেমনই বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ জ্ঞানাগ্নি দ্বারা সকল পাপ দগ্ধ করেন।
২৪৭। ইত্যেতদেনসামুক্তং প্রায়শ্চিত্তং যথাবিধি।
অত ঊর্ধ্বং রহস্যানাং প্রায়শ্চিত্তং নিবোধত॥
নিয়মানুসারে (প্রকাশ্য) পাপসমুহের এই প্রায়শ্চিত্ত বলা হল। এর পরে রহস্য (গোপন) পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোন।
২৪৮। সব্যাহৃতিপ্রণবকাঃ প্রাণায়ামাস্তু যোড়শ।
অপি ভ্ৰূণহনং মাসাৎ পুনন্ত্যহরহঃ কৃতাঃ॥
প্রতিদিন ব্যাহৃতি (ভঃ, ভুবঃ স্বঃ) ও প্রণব (ওঁকার) যুক্ত ষোলটি প্রাণায়াম এক মাসে ব্রহ্মহত্যাকারীকেও শুদ্ধ করে।
২৪৯। কৌৎসং জপ্ত্বাপ ইত্যোতদ্বাসিষ্ঠঞ্চ প্রতীত্যৃচম্।
মাহিত্রং শুদ্ধবত্যশ্চ সুরাপহপি বিশুধ্যতি॥
কৌৎস (ঋষিদৃষ্ট) ‘অপ নঃ শোশুচদঘম্’ এই মন্ত্র এবং বশিষ্ঠ (ঋষিদৃষ্ট) ‘প্রতিস্তোমেভিরুষসং বসিষ্ঠাঃ’ এই ঋক্, মাহিত্র (মহিত্ৰীণাধোস্ত্বিতি) মন্ত্র এবং শুদ্ধবতী মন্ত্ৰসমূহ (এতোন্বিন্ত্রং স্তবাম ইত্যাদি) তিন ঋক্ জপ করে সুরাপায়ীও শুদ্ধ হয়।
২৫০। সকৃজ্জপ্ত্বাস্যসবার্মীয়ং শিবসঙ্কল্পমেব চ।
অপহৃত্য সুবর্ণন্তু ক্ষণাদ্ভবতি নির্মলঃ॥
অস্যবামীয় (অস্য বামস্য পলিতস্য) এই সুক্ত একবার জপ করে ও (যজ্জাগ্রতো দুরম্) এই বাজসনেয়ী সংহিতায় পঠিত শিবসংকল্প মন্ত্র পাঠ করে (ব্রাহ্মণের) স্বর্ণাপহারক ক্ষণমধ্যে নিস্পাপ হয়।
২৫১। হবিষ্পান্তীয়মভাস্য নতমংহ ইতীতি চ।
জপিত্বা পৌরুষং সুক্তং মুচ্যতে গুরুতল্পগঃ॥
হবিষ্পান্তমজরং স্বৰ্বিদিম্ (এই একুশটি ঋক্) এবং নতমংহোন দুরিতম্ ইত্যাদি (আটটি) ঋক্ এবং পুরুষসূক্ত (সহস্ৰশীর্যা পুরুষঃ) জপ করে গুরুদারগামী পাপমুক্ত হয়।
২৫২। এনসাং স্থূল-সুক্ষ্মণাং চিকীর্ষন্নপনোদনম্।
অবেত্যৃচং জপেদব্দং যৎকিঞ্চেদমিতীতি বা॥
গুরুলঘু পাপের ক্ষয়কামী ব্যক্তি ‘অব তে হেডো বরুণ’ এই ঋক্ অথবা ‘যৎকিংচেদং বরুণ দৈবো’ এই ঋক্ এক বৎসর জপ করবে।
২৫৩। প্রতিগৃহ্যাপ্রতিগ্রাহ্যং ভুক্ত্বা চান্নং বিগর্হিতম্।
জপুংস্তুরৎসমন্দীয়ং পূয়তে মানবস্ত্র্যহাৎ॥
প্রতিগ্রহের অযোগ্য দ্রব্য প্রতিগ্রহ করে বা নিন্দিত অন্ন ভক্ষণ করে ‘তরৎসমন্দী ধাবতি’ ইত্যাদি (চারটি ঋক্) জপ করে মানুষ তিন দিনে পবিত্র হয়।
২৫৪। সোমারৌদ্ৰন্তু বহ্বেনা মাসমভ্যস্য শুধ্যতি।
স্রবন্তামাচরন্ স্নানমৰ্য্যম্ণামিতি চ ত্যৃচম্॥
নদীতে স্নান করে ‘সোমো রুদ্রা’ ইত্যাদি (চারটি ঋক্) এবং ‘অর্যমণং বরুণং মিত্রংচ’ ইত্যাদি (তিনটি ঋক্) এক মাস অভ্যাস করলে বহুপাপযুক্ত ব্যক্তি শুদ্ধ হয়।
২৫৫। অব্দার্দ্বমিন্দ্ৰমিত্যেতদেনস্বী সপ্তকং জপেৎ।
অপ্রশস্তন্তু কৃত্বাপ্সু মাসমাসীত ভৈক্ষভুক্॥
পাপী ‘ইন্দ্রং মিত্রমবরুণমগ্নিম্’ ইত্যাদি সাতটি ঋক্ ছয় মাস জপ করলে (সর্ব পাপমুক্ত হয়)। জলে মলমূত্র তাগ করে এক মাস ভিক্ষান্নভোজী হয়ে থাকবে।
২৫৬। মন্ত্রৈঃ শাকলহোমীয়ৈরব্দং হুত্বা ঘৃতং দ্বিজঃ।
সুগুৰ্ব্বপ্যপহন্ত্যেনো জপ্ত্বা বা নম ইত্যৃচম্॥
‘দেবকৃতস্য’ ইত্যাদি শাকল হোমমন্ত্র দ্বারা ঘৃতহোম করে ‘নম ইন্দ্ৰশ্চ’ ইত্যাদি ঋক্ এক বৎসর জপলে অত্যন্ত গুরুপাপও দূর হয়।
২৫৭। মহাপাতকসংযুক্তোহনুগচ্ছেদ্ গাঃ সমাহিতঃ।
অভ্যস্যাব্দং পাবমানীর্ভৈক্ষাহারো বিশুধ্যতি॥
মহাপাতকী সংযতচিত্তে গাভীসমূহের অনুগমন করবে। ভিক্ষান্ন আহার করে ‘যঃপাবমানীরধ্যেতি’ এই ঋক্ এক বৎসর অভ্যাস করলে সে শুদ্ধ হয়।
২৫৮। অরণ্যে বা ত্রিরভ্যস্য প্রযতো বেদসংহিতাম্।
মুচ্যতে পাতকৈঃ সর্ব্বৈ পরাকৈঃ শোধিতস্ত্রিভিঃ॥
অথবা তিনটি পরাকব্রত দ্বারা পবিত্র হয়ে (বাহ্যাভ্যন্তর) শৌচযুক্ত ব্যক্তি বনে বেদসংহিতা তিনবার অভ্যাস করে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়।
২৫৯। ত্র্যহংতূপবসেদ্ যুক্তস্ত্রিরহ্নোহভ্যুপয়ন্নপঃ।
মুচ্যতে পাতকৈঃ সর্ব্বৈস্ত্রির্জপিত্বাঘমর্ষণম্॥
তিন দিন উপবাসী ও সংযত হয়ে তিনবার (প্রাতে, দুপুরে ও সন্ধ্যায়) স্নানপূর্বক অঘমর্ষণ সূক্ত জপ করলে (পাপী) সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়।
২৬০। যথাশ্বমেধঃ ক্রতুরাট্ সর্ব্বপাপাপনোদনঃ।
তথাঘমর্ষণং সূক্তং সর্ব্বপাপাপনোদনম্॥
যেমন যজ্ঞের রাজা অশ্বমেধ সকল পাপনাশক, তেমন অঘমৰ্ষণ সূক্ত সকল পাপনাশক।
২৬১। হত্বা লোকানপীমাংস্ত্রীশ্নন্ননপি যতস্ততঃ।
ঋগ্বেদং ধ্যরয়ন্ বিপ্রো নৈনঃ প্রাপ্নোতি কিঞ্চন॥
এই (ভূরাদি) লোকত্রয় নষ্ট করে মহাপাতকী প্রভৃতি যার তার থেকে অন্নভোজন করে ব্রাহ্মণ ঋগ্বেদ অভ্যাস করলে কোন পাপগ্রস্ত হয় না।
২৬২। ঋক্সংহিতাং ত্রিরভ্যসা যজুষাং বা সমাহিতঃ।
সাম্নাং বা সরহস্যানাং সর্ব্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে॥
(ব্রাহ্মণ) ঋগ্বেদসংহিতা, যজুর্বেদ বা ব্রাহ্মণোপনিষৎসহ সামবেদ তিনবার অভ্যাস করে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়।
২৬৩। যথা মহাহ্রদং প্রাপ্য ক্ষিপ্তং লোষ্ট্রং বিনশ্যতি।
তথা দুশ্চরিতং সৰ্ব্বং বেদে ত্রিবৃতি মজ্জতি॥
যেমন বিশাল হ্রদে নিক্ষিপ্ত লোষ্ট্র বিনষ্ট হয় (ডুবে যায়), তেমনই সকল পাপ ত্রিবৃৎ বেদে মগ্ন হয়।
২৬৪। ঋচো যজুংষি চান্যানি সামানি বিবিধানি চ।
এষ জ্ঞেয়স্ত্রিবৃদ্ধেদো যো বেদৈনং স বেদবিৎ॥
ঋক্সমূহ, যজুর্মন্ত্র, অন্য নানাবিধ সামমন্ত্র—এই ত্রিবৃৎ বেদ নামে জ্ঞেয়; যে একে জানে, সে বেদজ্ঞ।
২৬৫। আদ্যং যৎ ত্র্যক্ষরং ব্রহ্ম ত্রয়ী যস্মিন্ প্রতিষ্ঠিতা।
স গুহ্যোহন্যস্ত্রিবৃদ্বেদো যস্তং বেদ স বেদবিৎ॥
(সকল বেদের) আদ্য (অ, উ, ম এই) তিন অক্ষরাত্মক (ওঁকার রূপ) ব্রহ্ম, যাতে ত্রয়ী (ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ) প্রতিষ্ঠিত, তা গুহ্য, একে ত্রিবৃৎ বলা যায়; একে যে জানে সে বেদজ্ঞ।
মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুলোক্ত সংহিতায় একাদশ অধ্যায় সমাপ্ত।
পাদটীকা
১শব্দকোষ দ্রঃ।
২পূর্বশ্লোকে কুমারীকন্যায় রেতঃসেক বা মৈথুনের কথা বলা হয়েছে।
৩শব্দকোষ দ্রঃ।
৪শোনাদিয়াগের দ্বাড়া নিরপরাধ ব্যক্তিকে মারা।
৫যে পেটিকায় মদ থাকে তাতে আনীত।
৬পুংসি সপ্তম্যস্ত হওয়ায় এখানে পুরুষ কর্তা হতে পারে না; সুতরাং সমমৈথুন (homosexuality) অভিপ্রেত মনে হয়।
৭মূলে আছে বৃষলী। এই শব্দের অর্থ শূদ্রা নারী। কিন্তু বিহিত প্রায়শ্চিতের গুরুত্ব বিবেচনায় কুল্লুকভট্ট এখানে এর অর্থ করেছেন চণ্ডালী।
৮এই ব্যাখ্যা মেধাতিথ্বি ও কুল্লুকাসারী। গোবিন্দরাজের মতে, যাজনাদি ত্রিবিধ সংসর্গে এক বৎসরে পাতিত্য হয়, যানাদি সংসর্গে লঘুত্বহেতু দীর্ঘতরকালের সংসর্গে পাতিত্য হয়।
৯শব্দকোষ দ্রঃ।