• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ক্ষিতিমোহন সেন

লাইব্রেরি » ক্ষিতিমোহন সেন » ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ক্ষিতিমোহন সেন
ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা - ক্ষিতিমোহন সেন

সূচিপত্র

  1. ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ক্ষিতিমোহন সেন
    1. প্রকাশকের কথা
    2. ভূমিকা
    3. নিবেদন

ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ক্ষিতিমোহন সেন

কবিবর শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথঠাকুর মহোদয় লিখিত ভূমিকাসহ

প্রকাশকের কথা

যদিও প্রচ্ছদে বইটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা’ এখানে শ্রীক্ষিতিমোহন সেনের দুটি বই সংকলিত হয়েছে। প্রথম বই ‘ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা’ পাওয়া এবং অক্ষরবিন্যাস ও সংশোধনের পর আমরা হাতে পাই দ্বিতীয় বই ‘বাংলার সাধনা’। প্রথম বইটি বেরিয়েছিল ১৯৩০ সালে। এর আগের বছর ‘অধরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বক্তৃতা’ হিসাবে লেখক একটি পেশ করেছিলেন। ‘বাংলার সাধনা’র প্রকাশকাল বেশ পরে। আমাদের হাতে যে সংস্করণটি আছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—’বিশ্বভারতী প্রথম প্রকাশ : ১৩৫২’।

এ দুটি বই আলাদা আলাদাভাবে প্রকাশ হতে পারত। প্রথম পর্যায়ে যেরকম হয়েছিল। আবার, আমরা দেখলাম, এ দুটি বই একসঙ্গে প্রকাশ হলেও কোনো অসুবিধা নেই, বরং তাতে কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। দুটি বই একই বিষয় নিয়ে রচিত, ফলে দুটি বইয়ের একত্র অবস্থান পাঠকের জন্য সুবিধাজনক। এরকম মনে করে, দুটি ভিন্ন বই একই মলাটে আবদ্ধ হল।

দিব্যপ্রকাশ
ফেব্রুয়ারি ২০০৮

ভূমিকা

ভারতবর্ষের যে সব ইতিহাস আমরা পড়ি সে তার বাইরের ইতিহাস। সেই ইতিহাসে বিদেশীর অংশই বেশী। তারা রাজ্যশাসন করেছে, যুদ্ধবিগ্রহ করেছে, আমরা সেই বাইরের চাপ স্বীকার করে নিয়েছি,—মাঝে মাঝে মাথা নাড়া দিয়ে সেটা ঠেলে ফেলবার চেষ্টা করেছি, মাঝে মাঝে চেষ্টা সফল হয়েছে। মোটের উপর এই ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের অকৃতার্থতাই অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে আমাদের চোখে পড়তে থাকে।

এ কথা মানতে হবে যে রাষ্ট্রিক সাধনা ভারতের সাধনা নয়। একদা বড়ো বড়ো রাজা ও সম্রাট্ আমাদের দেশে দেখা দিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের মহিমা তাঁদের মধ্যেই স্বতন্ত্র। দেশের সর্বসাধারণ সেই মহিমাকে সৃষ্টি, বহন বা ভোগ করে না। ব্যক্তিবিশেষের শক্তির মধ্যেই তার উদ্ভব এবং বিলয়।

কিন্তু ভারতের একটি স্বকীয় সাধনা আছে; সেইটি তার অন্তরের জিনিস। সকল প্রকার রাষ্ট্রিক দশা-বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে তার ধারা প্রবাহিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই ধারা শাস্ত্রীয় সম্মতির তটবন্ধনের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এর মধ্যে পাণ্ডিত্যের প্রভাব যদি থাকে তো সে অতি অল্প। বস্তুত এই সাধনা অনেকটা পরিমাণে অশাস্ত্রীয়, এবং সমাজশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। এর উৎস জনসাধারণের অন্তরতম হৃদয়ের মধ্যে, তা সহজে উৎসারিত হয়েছে, বিধিনিষেধের পাথরের বাধা ভেদ করে। যাঁদের চিত্তক্ষেত্রে এই প্রস্রবণের প্রকাশ, তাঁরা প্রায় সকলেই সামান্য শ্রেণীর লোক, তাঁরা যা পেয়েছেন ও প্রকাশ করেছেন তা ‘ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন’।

ভারতের এই আন্তরিক সাধনার ধারাবাহিক রূপ যদি আমরা স্পষ্ট করে দেখতে পেতুম তা হলে ভারতের প্রাণবান্ ইতিহাস যে কোন্‌খানে তা আমাদের গোচর হতে পারত। তা হলে জানা যেত ভারতবর্ষ যুগে যুগে কি লক্ষ্য করে চলেছে, এবং সেই লক্ষ্যসাধনে কি পরিমাণে তার সিদ্ধি। সুহৃদ্বর ক্ষিতিমোহন সেন তাঁর এই গ্রন্থে ভারতবর্ষের সুদীর্ঘকালের সেই চিত্তপ্রবাহের পথটিকে তার ভিন্ন ভিন্ন শাখায় প্রশাখায় অনুসরণ করে এসেছেন। আমরা দেখতে পেয়েছি এই প্রবাহটি গভীররূপে সত্য এবং একান্তভাবে ভারতবর্ষের স্বকীয়। ভারতের জনসাধারণের মধ্যে সাধনার যে স্বাভাবিক শক্তি অন্তর্নিহিত রয়েছে ক্ষিতিমোহনের এই রচনায় তাকে আবিষ্কার করা গেল। এই প্রকাশের অভিব্যক্তির যে ধারা অন্তর-বাহিরের বাধার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই গ্রন্থের সীমারেখায় তার একটা রূপচিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এখন তার উদ্ভাবনের তার প্রাগ্রসর যাত্রার সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস পাবার অপেক্ষা রয়ে গেল, না পেলে ভারতবর্ষের ধ্রুব স্বরূপটির পরিচয় ভারতবর্ষের লোকের কাছে অসম্পূর্ণ, এমনকি ভ্রমসংকুল হয়ে থেকে যাবে।

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শান্তিনিকেতন
১২ই পৌষ ১৩৩৬

নিবেদন

ভারতীয় মধ্যযুগের ধর্মসাধনার ইতিহাস-কথা বলিতে যে কোনো বিদ্বজ্জনসভার আহ্বান আসিবে তাহা কখনো মনে করি নাই। সে আজ পঁয়ত্রিশ বৎসরের কথা যখন বাল্যকালে কাশীতে নানা সম্প্রদায়ের সাধুসন্তদের সহিত পরিচয় ঘটিল। তাঁহাদের সবারই প্রিয়ধাম কাশীতেই সৌভাগ্যক্রমে আমার জন্ম। তাই হয়তো এই দিকে কিছু কিছু সুযোগ ঘটিয়া গিয়াছিল। সেই সব পুরাতন সাধকগণের সাধনা ও বাণী এমন উদার গভীর ও মনোহর যে অল্প বয়সেই তাহাতে আমার নেশা লাগিয়া গেল। ইহার পর লেখাপড়ার সময়েও এই সব বাণীর পরিচয়েই আমার অধিকাংশ সময় কাটিত। সৌভাগ্যক্রমে তখন এমন সব পথপ্রদর্শকের প্রসাদ লাভ করিলাম যাঁহাদের মত লোক এখন পাওয়া দুর্লভ। সেই শ্রেণীর লোক দিন দিন কমিয়া আসিতেছেন। এই সেদিন বোম্বাই নগরে শান্তা ক্রুসে কাঠিয়াওয়াড়-ভারনগরের লাখনকা-গ্রামবাসী বৃদ্ধ সাধু বাবা মোহনদাস পরলোকগমন করিলেন। তাঁর কণ্ঠে তিন হাজারের অধিক ভজন ছিল। বাণী যে কত হাজার তাঁর মুখে মুখে ছিল তাহা বলা যায় না। মৎসম্পাদিত ‘কবীর’-এর প্রথম খণ্ডে আমি এরূপ কয়েকজন সাধুর নাম করিয়াছি। এমন কত কত সমর্থ সাধক বিদ্বৎসমাজে খ্যাত না হইয়াই চলিয়া গেলেন।

ভারতের নানা স্থানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মঠে মঠে ও সম্প্রদায়ের সংগৃহীত গ্রন্থেও সাধকদের বহু বাণী সংগৃহীত আছে। তাহাও ক্রমে নষ্ট ও দুষ্প্রাপ্য হইয়া আসিতেছে। অনেক মঠে স্বামীরা সেই সব বাণীর সংগ্রহ যক্ষের ধনের মত গোপন করিয়া রাখেন, মাথা খুঁড়িয়া মরিলেও সে সব দেখিতে পাইবার জো নাই। রাজপুতানার রাজাদের গ্রন্থালয়েও এই একই অবস্থা। অনেক দুঃখে এই সব কথা লিখিতেছি।

সেই যুগের সাধকেরা অনেকেই অতি নিম্নকুলসম্ভূত কিন্তু তাঁহাদের অনুবর্তী সম্প্রদায়গুলি তাঁহাদিগকে অনেক সময় নানা উপায়ে উচ্চজাতীয় বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন। সেইজন্য তাঁহারা সেই সব সাধকদের অনেক বাণী চাপিয়া গিয়াছেন ও অনেক কথা বিকৃত করিয়া বলিতে বাধ্য হইয়াছেন। কবীর দাদূ প্রভৃতি সাধকেরা কোন্ বংশে জন্মগ্রহণ করেন তাহা অনুসন্ধান করিলেই এই কথাটি ভাল করিয়া বুঝা যাইবে। কবীর ছিলেন মুসলমান জোলা—সেই কথা কত গল্প দিয়াই আচ্ছাদন করা হইয়াছে।

এখন ইতিহাস আলোচনায় সবই ধরা পড়িয়াছে। তিনি যে মুসলমান জোলার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তাতে আর কোনো সংশয়ই নাই। তাঁর দীক্ষাও রামানন্দ হইতে হঠাৎ প্রাপ্ত নহে। রামানন্দের এমন শিষ্য আরও যে অনেক আছেন। এই সব কথা এই গ্রন্থের কবীর-সম্পর্কিত আলোচনায় লেখা হইয়াছে।

দাদূ-সম্প্রদায়ীরা সত্য কথা চাপা দিয়া বলিতে চান, দাদূ নাগর ব্রাহ্মণের সন্তান। কেহ কেহ বলেন তাঁর জন্মই নাই, তিনি যে নিরঞ্জন। কিন্তু সত্য তো আর চাপা দেওয়া যায় না। তাই নানাপ্রকার মত রহিয়া গেল। স্বর্গীয় সুধাকর দ্বিবেদী মহাশয় বলেন, দাদূ যাঁদের ঘরে জন্মান তাঁরা চামড়ার মোট বা কূপ হইতে জল তুলিবার পাত্র সেলাই করিতেন, কাজেই তিনি মুচি। এই কথাটিও আংশিক সত্য।

এখন ধরা পড়িয়া গিয়াছে যে তাঁর জন্ম মুসলমান ধুনকর বংশে। বালগোপাল কৃত ‘জীবন-পরিচয়’ গ্রন্থে, তেজানন্দ-কৃত গ্রন্থে, দাসজী কৃত ‘পন্থ প্ৰখ্যা’ গ্রন্থে সব সব কথা প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। আমি একলা এ কথা বলিতে হয়তো একটু ইতস্ততঃ করিতাম, কিন্তু দাদূ-তত্ত্বানুরাগী সত্যনিষ্ঠ শ্ৰীযুত চন্দ্ৰিকাপ্রসাদ ত্রিপাঠীও এ কথা স্পষ্ট লিখিয়াছেন। যে সব মঠের গ্রন্থ দেখিয়া তিনি এই তত্ত্ব প্রচার করেন সে মঠের অধিকারীরা এইজন্য রাগ করিয়া তাঁদের মঠের অমূল্য সব প্রাচীন গ্রন্থ পোড়াইতে আরম্ভ করিয়াছেন।

এ সব বিষয়ে অনেকটা সাচ্চা খবর পাওয়া যায় সে সব সাধুর কাছে যাঁরা হৃদয়ের অনুরাগে সাধক হইয়াছেন কিন্তু কোনো সম্প্রদায়ের বন্ধনে ধরা দেন নাই। সম্প্রদায়ী সাধুরা এই সব গভীরজ্ঞানী সাধুদিগকে সম্প্রদায়হীন বলিয়া আমল দিতে চাহেন না। কিন্তু যদি পুরাতন সব সাচ্চা খবর পাইতে হয় আর গভীরতম বাণীর সংগ্রহ পাইতে হয় তবে তাহা মিলিবে এই সব সাধুদেরই কাছে।

একটা কথা এখানে বলা উচিত। মধ্যযুগের সাধকদের যে সব বাণী অতি গভীর ও উদার সে সব বাণী অনেক সময় তাঁহাদের সম্প্রদায়ের সংগ্রহে তেমন মেলে না। অনেক সময়েই তাহা মেলে এই সব অসাম্প্রদায়িক সাধুদের কাছে।

দেশকালের অবস্থানুসারে এই সব সাধুর সংখ্যা এখন বিরল হইয়া আসিয়াছে। যে সব সাধু এখনকার বাজারে ভালো ব্যবসা চালাইতে পারেন সে সব সাধু ইঁহারা নহেন। কাজেই এখনকার নূতন যুগের চাহিদা অনুযায়ী নূতন নূতন নানারকমের স্বামীদের উদ্‌ভব হইতে থাকিলেও এই সব পুরাতন সাধুদের ধারা এখন নিঃশেষ হইয়া আসিয়াছে। আর কিছুকাল পরে ইঁহাদের স্মৃতিমাত্র অবশেষ থাকিবে, অথবা হয়তো স্মৃতিও থাকিবে না কারণ ইঁহাদের সম্বন্ধে সকলে এতই কম খবর রাখেন।

অথচ যদি ভারতের মধ্যযুগের সাধনার প্রকৃত ইতিহাস জানিতে হয় তবে এই সব সাধুদের কাছে মধ্যযুগের সাধনার বাণী তত্ত্ব ও ইতিহাস সংগ্রহ না করিলে আর কোনো গতি নাই।

ভারতের সবচেয়ে বড় কথা তার ধর্ম। নানা ভেদ-বিভেদের ভূমি ভারতের প্রধান কথা এই যোগসাধনার চেষ্টা। যুগে যুগে বড় বড় সাধকদের মধ্য দিয়া সেই চেষ্টাই চলিয়া আসিতেছে। ভারতের সমস্যাই তো তাই। রাষ্ট্রীয় সাধনা তার প্রধান কথা নয়। কাজেই এই সব সাধুদের সংগৃহীত ও নানা মঠের গ্রন্থে সংরক্ষিত বাণী ও ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি আলোচনা না করিলে ভারতের প্রকৃত মর্মস্থানটির খবর পাইবার কোনো উপায় নাই।

আমাদের দেশ যদি য়ুরোপ বা আমেরিকা হইত তবে দেখিতাম এই সব সন্ধান জানিবার জন্য বহু যুবক তাঁদের প্রাণপাত করিতেছেন। দেশের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়া এই সব অনুসন্ধানের তপস্যা চলিয়াছে। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় এমন আশা দুরাশা মাত্র।

১৯০৮ সালে শান্তিনিকেতনে আসিয়াও আমি আমার প্রত্যেকটি ছুটি ও সর্বপ্রকারের অবসরকাল এই সব সন্ধানেই কাটাইয়াছি। দীর্ঘকাল আমার এই বাতিকের খবর সেখানে মুখ খুলিয়া কাহাকেও জানাই নাই। দীর্ঘকাল এমনভাবে কাটিল। তারপর কি জানি কেমন করিয়া কবিবর শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ সন্ধান পাইলেন। তখন তিনি ক্রমাগত আমাকে এই সব বিষয়ে লিখিবার জন্য তাগিদ দিতে লাগিলেন।

প্রথমত সকলের কাছে এই সব বিষয় জানাইতে আমার খুব সংকোচ ছিল। তারপর ইহাও জানিতাম, যে গ্রন্থপ্রকাশক আমার এই কাজে হাত দিবেন তাঁহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হইবে। তবু ইণ্ডিয়ান প্রেস রাজী হইলেন, আর কবিবরের অসহনীয় তাগিদে কবীরের কয় খণ্ড প্রকাশ করিতে হইল। কবীরের মুখ্য বাণীর মাত্র চারিটি খণ্ড প্ৰকাশ পাইয়াছিল। এই রকম দশটি খণ্ড বাহির হইলে কবীরের কতকটা পরিচয় দেওয়া যাইত। মধ্যযুগের এমন প্রায় দুইশত জন সাধকের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে যাঁদের বাণী মানবসাধনার পথে নানাভাবে সহায়তা করিবে। ক্ষেত্র বিরাট্; কিন্তু কাজ করিবার লোক কই? এই সব দিকে কয়জন লোকের অনুরাগ আছে?

এই সব বিষয়ে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথের কাছে অশেষ উৎসাহ ও সহায়তা পাইয়াছি। কোনো বিদ্যায়তনে এই অনুসন্ধানের কোনো স্থান কখনো হইতে পারে তাহা মনেও করি নাই। অন্য কাজ করিয়া অবসর সময়ই এই কাজে দিতাম। তিনি বিশ্বভারতীয় এই কাজের অবসরও রচনা করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু ভবিষ্যৎকালকে যাঁহারা সৃষ্টি করিবেন সেই সব তরুণ কর্মীদের এখনো তেমন করিয়া এই ক্ষেত্রে দেখা পাওয়া গেল না। উপাধি লাভের উদ্দেশ্যে বা থীসিস লেখার জন্য এই বিষয়ে দুই-একজন এক-আধটুকু সানুগ্রহ সন্ধান করেন মাত্র। কিন্তু সেরূপ ভাবে কাজ করিয়া আর বিশেষ কি লাভের আশা করা যায়?

সত্যিকার বিশ্ববিদ্যালয় গড়িয়া তোলা যাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সেই মনীষী জ্ঞানতপস্বী আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয় এই সব বিষয়ে আলাপ করার জন্য স্বয়ং ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয় ও এ বিষয়ে কোনো একটা ব্যবস্থা (scheme) করা যায় কি না তাহা নানাভাবে আলোচনা করেন। অনেক কিছু করার তাঁর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তাঁর অকালমৃত্যুতে সে সবই অপরিপূর্ণ রহিয়া গেল।

গত বৎসর যখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে অধর মুখোপাধ্যার বৃত্তি সূত্রে আমাকে কিছু বলিতে বলা হইল তখন এরূপ কিছু আমি আশাও করি নাই, কারণ এত বড় পণ্ডিত-সমাজের যে আবার এই সব নিরক্ষর সাধকদের সাধনার প্রতি এই মনোযোগ হইবে এ কথা মনেও করি নাই। জানি না কাঁহার বা কাঁহাদের উদ্‌যোগে ইহা সম্ভবপর হইল। কাজেই আমি সমগ্র কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকেই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি। বিষয়টি বিশাল। সামান্য দুই-একটি বক্তৃতায় তাহার কতটুকু পরিচয়ই বা দেওয়া সম্ভব। আমাদেরও কর্মশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হইয়া আসিবে; এখন কেবল আশা করিয়া আছি যে ভবিষ্যতের যাঁরা আশাস্থল তাঁরা আমাদের স্কন্ধ হইতে কবে এই সব গুরুভার নিজেদের যোগ্যতর স্কন্ধে গ্রহণ করিবেন।

এই সব ক্ষেত্রে যাঁহারা নাবিবেন তাঁহাদের জ্ঞানতপস্যা ব্যর্থ হইবে না। এই কাজে নাবিলে তাঁহারা দেখিবেন যে ধর্ম-জগতে এমন কোনো পরীক্ষা (experiment) সম্ভবপর নয় যাহা ভারতের মধ্যযুগে কোনো-না-কোনো সাধক সাধনা করিয়া যান নাই। এই সব সাধকরা শাস্ত্রজ্ঞানহীন, কাজেই কোনো বাঁধা পথে তাঁহারা চালিত হন নাই। তাঁদের প্রতিভা ও তাঁদের দৃষ্টি সদাই উন্মুক্ত ছিল। শাস্ত্র-শাসিত ধর্মসম্প্রদায়গুলি সবই প্রায় গতানুগতিক ভাবে বাঁধা রাস্তায় চলিয়া আসিয়াছে কিন্তু ইঁহাদের প্রত্যেকের নূতন দৃষ্টি নূতন ভাবনা নূতন পথ। এই পথে মানবমনের ভাল মন্দ নানাভাবে পরখ করিবার সাহসের পরিচয় মিলিবে। নানা দিক দিয়া ধর্মভাবকে সার্থক করিবার চেষ্টা দেখা যাইবে। মানবতত্ত্বের এত বড় একটি আলোচনার ক্ষেত্র যে বৃথা পড়িয়া রহিল তাহাতে রামপ্রসাদের এই কথাটি মনে হয়—

মন রে কৃষিকাজ জান না।
এমন মানবজমীন রইল পতিত,
আবাদ কল্পে ফলতো সোনা।

শাস্ত্র-শৃঙ্খলিত ও গ্রন্থ-বদ্ধ আমরা ভাল করিয়া চাহিয়াও দেখিলাম না যে চক্ষের সম্মুখে কত বড় একটি সুযোগ বৃথা চলিয়া গেল। এখনো যদি প্রাণপণ চেষ্টা করা যায় তবু সেই বিরাট্ ঐশ্বর্যের অতি সামান্য অংশ মাত্র উদ্ধার করা সম্ভব হইবে। আমরা হয়তো সেই ঐশ্বর্যের মাত্র এক আনা অংশের খবর পাইয়াছি আর পনের আনা অংশ ইতিপূর্বেই বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। আর যতটুকু আছে তাহাও লুপ্ত হইতে আর বেশী বাকী নাই।

যাঁহারা আলোচনা করিবেন তাঁহারা দেখিতে পাইবেন লিখিত সব শাস্ত্র ও গ্রন্থ অপেক্ষা এই সব নিরক্ষর সাধকদের এক-একটি বাণী কত মহান্ কত গভীর। ইঁহাদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান বা সম্প্রদায়গত কোনো ভেদবুদ্ধি নাই। ইঁহারা অধিকাংশই নিরক্ষর এবং সকল সাধনার মৈত্রী ও যোগই ইঁহাদের আপন সাধনার ধন। সেই যোগসাধনাই ভারতের সাধনা, বাহিরে ইহার যত প্রতিকূল লক্ষণই দেখা যাক না কেন।

এইখানে যে অবসরটুকু পাইয়াছিলাম তাহাতে কোনোমতে সেই যুগের সাধনার একটু আভাসমাত্র দিতে পারিয়াছি। এখানে কোনোমতে কাঠামোখানা মাত্র দেখান গিয়াছে। সম্ভব হইলে ভবিষ্যতে সেই যুগকে আর একটু পূর্ণতর ভাবে দেখাইতে চেষ্টা করিব। জীবন্ত একটি যুগের কেবল কঙ্কাল মাত্র দেখাইয়া বিশেষ কিছু বুঝানো যায় না। তার উপর একটু রক্তমাংস না থাকিলে জীবনের রূপটি বুঝিতে পারা কঠিন হয়। তখনকার সাধকদের সাধনা ও বাণীর একটু পরিচয় দিতে পারিলে সেই যুগের রূপটি প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিতে পারে।

এই বিশাল কার্যক্ষেত্রের জন্য ভবিষ্যতে অনেক সাধক চাই। তাই দেশের তরুণ জ্ঞানার্থীদের সাধনা এই ক্ষেত্রে আহ্বান করিতেছি।

যাঁহাদের অনুগ্রহে এই কয়টি কথাও জানাইবার অবসর পাইলাম সেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে এবং পরলোকগত আচার্যপ্রবর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের উদ্দেশে আমার ধন্যবাদ জানাইতেছি।

স্নেহাস্পদ শ্রীমান্ মনোমোহন ঘোষ আমার প্রুফশীট প্রভৃতি দেখা হইতে আরম্ভ করিয়া আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করিয়াছেন, তাঁহাকে আমার ধন্যবাদ জানাইতেছি।

এই কার্যে আমি কবিবর শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের কাছে যে কি পরিমাণে ঋণী তাহা বলিয়া বুঝাইতে পারি না। সেই যুগের সাধকদের গম্ভীর বাণীর রসসম্ভোগে রসানুভব-নিপুণ তাঁহার যে সশ্রদ্ধ প্রতিভা দেখিয়াছি এমন আর কাহারও দেখি নাই। সেই সব বাণীর প্রতি তাঁহার অনুরাগ ও উৎসাহই এতকাল আমার মহা-সহায় হইয়া আসিয়াছে। তাঁহারই লিখিত একটি ভূমিকা এই মুদ্রিত বক্তৃতা-প্রারম্ভে আশীর্বাদের মত সন্নিবিষ্ট হইল।

আর যাঁহারা যে ভাবে এই ক্ষেত্রে আমাকে যতটুকু সহায়তা করিয়াছেন সকলের কাছেই আমার সকৃতজ্ঞ অভিবাদন জানাইয়া আমার নিবেদনটি সমাপ্ত করিতেছি।

শ্ৰীক্ষিতিমোহন সেন
শান্তিনিকেতন
পৌষ-পূর্ণিমা ১৩৩৬

Book Content

ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ১
ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা – ২
বাংলার সাধনা
পরিশিষ্ট – মহাপ্রভুর অভিনয়লীলা
লেখক: ক্ষিতিমোহন সেনবইয়ের ধরন: প্রবন্ধ ও গবেষণা

জাতিভেদ – ক্ষিতিমোহন সেন

ভারতের সংস্কৃতি – ক্ষিতিমোহন সেন

কবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন

Reader Interactions

Comments

  1. Goutam Saraswati

    February 5, 2025 at 5:17 am

    Where is it available in Kolkata?

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.