• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম – কালী প্রসন্ন দাস

লাইব্রেরি » কালী প্রসন্ন দাস » ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম – কালী প্রসন্ন দাস
ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম - কালী প্রসন্ন দাস

ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম
ডক্টর কালী প্রসন্ন দাস
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
দর্শন বিভাগ
সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
সাভার, ঢাকা

প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০১৩

উৎসর্গ

পিতা কৃপাসিন্ধু দাস এবং পিতৃপ্রতিম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কাজী নূরুল ইসলাম যাদের অনুপ্রেরণায় এ গ্রন্থের সূচনা অথচ রচনা সমাপ্ত হওয়ার আগেই যাদের মহাপ্রস্থান

ভূমিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৩ সনে আমাকে চার্বাক ও হিউমের জ্ঞানবিদ্যা : একটি তুলনামূলক সমীক্ষা, শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য এম. ফিল. ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৯৪ সনে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা: চার্বাক ও হিউম শিরোনামে আমার এম. ফিল. অভিসন্দর্ভ বাংলা একাডেমী থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বর্তমান গ্রন্থ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থেরই ভাষাগত পরিমার্জিত সংস্করণ।

মানুষের চেতনার ক্রমবিকাশের বিশেষ এক পর্যায়ে দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ, উল্লেখযোগ্য ও স্বীকৃত শাখা হিসেবে জ্ঞানবিদ্যার উদ্ভব। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে আদিযুগ থেকেই জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাই বলা যায় জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাস দর্শনের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। ভারতীয় দর্শনে নয়টি জনপ্রিয় সম্প্রদায় রয়েছে। চার্বাক, বৌদ্ধ, জৈন, সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত। প্রতিটি সম্প্রদায়ই জ্ঞানবিদ্যার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। অবশ্য পাশ্চাত্য দর্শনের সকল দার্শনিক জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা করেননি। জ্ঞানবিদ্যাগত প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসকে প্রায় একশ বছর, অর্থাৎ সোফিস্টদের সময় পর্যন্ত, অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে আধুনিক যুগের পাশ্চাত্য দর্শনে জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা অনেকটা অপরিহার্য রূপলাভ করে এবং আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শন সামগ্রিক অর্থেই জ্ঞানবিদ্যাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, জ্ঞানের উৎপত্তি, বিকাশ, সীমা, সম্ভাবনা, বৈধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যেসব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদ একটি বিশেষ ধারা হিসেবে বিবেচিত। চার্বাক নামক ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের আলোচনার মধ্য দিয়ে এই ধারার সূত্রপাত। পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য দর্শনে যেন এ ধারারই পরিণতি ।

ভারতীয় দর্শনের নয়টি সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাকগণ ব্যতিক্রম। তাঁরা এককভাবে অভিজ্ঞতাবাদের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাশ্চাত্য দর্শনে এমনটি দেখা যায় না। কেননা, পাশ্চাত্য দর্শনে প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত অনেক দার্শনিকই অভিজ্ঞতাবাদকে সমর্থন করেছেন। তবে, আধুনিক ব্রিটিশ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন, জন লক ও জর্জ বার্কলের আলোচনায় অভিজ্ঞতাবাদের অধিকতর পূর্ণাঙ্গ, সুশৃঙ্খল ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হিউমের দর্শন এ ধারার সঙ্গতিপূর্ণ, যৌক্তিক ও চূড়ান্ত পরিণতি ।

সুতরাং দেখা যায়, প্রাচীন ভারতে চার্বাক দর্শনে যে অভিজ্ঞতাবাদী জ্ঞানবিদ্যাগত ধারার সূত্রপাত, পাশ্চাত্যে, আধুনিক যুগে হিউমের দর্শনে সে ধারারই যেন চূড়ান্ত পরিণতি। তাই জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাসে অভিজ্ঞতাবাদী ধারার সূচনা হিসেবে চার্বাক অভিজ্ঞতাবাদ এবং পরিণতি হিসেবে হিউমের অভিজ্ঞতাবাদ নতুন করে আলোচনার দাবি রাখে। এই বিবেচনা থেকে বৰ্তমান

গ্রন্থে অভিজ্ঞতাবাদের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এ দুটি মাইল ফলকের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে এ দুটি মতবাদের মধ্যে কোনো তুলনামূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায় না। এ অভাব পূরণ করার লক্ষ্যেই বর্তমান গ্রন্থের পরিকল্পনা। পাঠকের সুবিধার জন্যে এ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়ের উপর এখানে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।

এ গ্রন্থে মোট ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। প্রধানত ভারতীয় জ্ঞানবিদ্যার গতি-প্রকৃতি বা ঐতিহাসিক ধারা নির্ণয় করার লক্ষ্যেই প্রথম অধ্যায়ে ভারতীয় জ্ঞানবিদ্যা’ সম্পর্কিত আলোচনা। দ্বিতীয় অধ্যায়ের পটভূমি হিসেবে প্রথম অধ্যায়ের পরিকল্পনা। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে ‘চার্বাক জ্ঞানবিদ্যা’ আলোচিত হয়েছে, এবং ভারতীয় জ্ঞানবিদ্যায় চার্বাকদের অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। ব্যাপক অর্থে ভারতীয় দর্শন বলতে উপমহাদেশের সকল দার্শনিক মতবাদকে বোঝায়। সর্বদর্শন সংগ্রহ গ্রন্থে মাধবাচার্য ষোলটি মতবাদের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, তন্ত্র দর্শনও ব্যাপক অর্থে ভারতীয় দর্শনের অন্তর্ভুক্ত। তা সত্ত্বেও বর্তমান গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের প্রচলিত আটটি দার্শনিক সম্প্রদায়, অর্থাৎ মীমাংসা, বেদান্ত, ন্যায়, সাংখ্য, যোগ, বৈশেষিক, বৌদ্ধ ও জৈন জ্ঞানবিদ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আলোচনার সুবিধার জন্যই মীমাংসা জ্ঞানবিদ্যাকে প্রথমে সন্নিবেশিত করে অন্যান্য সম্প্রদায়কে উপযুক্ত ক্রমবিন্যাসে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

আলোচনার সর্বজনীনতা ও ব্যাপকতা ভারতীয় দর্শনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রচলিত নয়টি সম্প্রদায়ের সকলেই জ্ঞানবিদ্যার আলোচনায় গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শুধু তাই নয়, এদের প্রায় সকলকে জ্ঞানের উৎপত্তি, সীমা, সম্ভাব্যতা, বৈধতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উপর গভীরভাবে আলোকপাত করতে দেখা যায়। তবে এ গ্রন্থের আলোচনাকে শুধু যথার্থ জ্ঞানের উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদ বা প্রমাণতত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, উপরিলিখিত আটটি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়কে প্রমাণতত্ত্বের দিক থেকে পাশ্চাত্য দার্শনিকদের মতো বিশুদ্ধ বুদ্ধিবাদী বা বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনা চার্বাক জ্ঞানবিদ্যা’ প্রসঙ্গে। মূলত হিউমের জ্ঞানবিদ্যার সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনার লক্ষ্যেই এ অধ্যায়ের পরিকল্পনা। চার্বাক দর্শন জ্ঞানবিদ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। চার্বাকগণ শুধু অভিজ্ঞতাবাদী প্রমাণতত্ত্ব বা প্রত্যক্ষ প্রমাণের কথা বলেই শেষ করেন নি। এর যৌক্তিকতা প্রদর্শনের লক্ষ্যে ভারতীয় দর্শনে স্বীকৃত অন্যসব প্রমাণকে সূক্ষ্ম যুক্তির সাহায্যে খণ্ডন। করতে প্রয়াসী হয়েছেন। তাই, দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনাকে চার্বাক জ্ঞানবিদ্যা এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া, এ অধ্যায়ে ভারতীয় জ্ঞানবিদ্যায়। চার্বাকদের অবস্থান নির্ণয়েরও চেষ্টা করা হয়েছে। এ আলোচনা থেকে দেখা যায়, ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে কেবল চার্বাক সম্প্রদায়ই জ্ঞানবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতাবাদকে সমর্থন করেছেন। তারাই দর্শনের ইতিহাসে অভিজ্ঞতাবাদী জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারার প্রবর্তক। শুধু অভিজ্ঞতাবাদী হিসেবেই নয়, বেদ-বিরোধী তথা অধ্যাত্মবাদ-বিরোধী দার্শনিক ধারা হিসেবেও চার্বাক দর্শন অন্য আটটি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় থেকে স্বতন্ত্র। চার্বাকদের অধ্যাত্মবাদ-বিরোধী ও বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতাবাদী জ্ঞানবিদ্যার সঙ্গে প্রাচীন ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উন্নতির পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।

বর্তমান গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায় ‘পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা’ প্রসঙ্গে। চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হিউমের জ্ঞানবিদ্যা, এবং পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যায় হিউমের অবস্থান নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তৃতীয় অধ্যায়ের পরিকল্পনা। তাই পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসের প্রাচীন যুগের সোফিস্টদের জ্ঞানবিদ্যা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের হিউম-পূর্ববর্তী দার্শনিক জর্জ বার্কলে পর্যন্ত জ্ঞানবিদ্যাগত ধারার আলোচনার মধ্যে এ অধ্যায়টি সীমাবদ্ধ। এ সময়কাল দুহাজার বছরের বেশি। এই ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাসকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক–এ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং যেসব দার্শনিক জ্ঞানবিদ্যার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন শুধু তাদের জ্ঞানোৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তৃতীয় অধ্যায়ে দুহাজার বছরের পাশ্চাত্য জ্ঞানোৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। এ আলোচনা থেকে দেখা যায়, এ সময়ে পাশ্চাত্য দার্শনিকগণ স্পষ্টত বিশুদ্ধ বুদ্ধিবাদী ও বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতাবাদী এ দুটি পরস্পরবিরোধী স্বতন্ত্র ধারাকে লালন করেছেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, চার্বাকগণ প্রাচীন ভারতে জ্ঞানবিদ্যার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদী ধারার প্রবর্তক। তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচনায় এ ধারাটিকেই সোফিস্ট থেকে বার্কলে পর্যন্ত প্রবাহিত হতে দেখা যায়। ব্রিটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম এ ধারারই যৌক্তিক ও সঙ্গতিপূর্ণ পরিণতি দান করেন। হিউমের জ্ঞানবিদ্যা’ চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।

প্রধানত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে আধুনিক যুগে বিশ্বতাত্ত্বিক আলোচনা বিজ্ঞানের হাতে অর্পিত হয়। ফলে জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা হয়ে পড়ে দর্শনের প্রধান বিষয়। সম্ভবত এ কারণে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে জ্ঞানবিদ্যা প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। আধুনিক ব্রিটিশ দর্শনে এ আলোচনা বিশেষ রূপলাভ করে। বিজ্ঞানের প্রভাবে তখন দর্শনে নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্মাণের দিকে দার্শনিকদের ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়। নিউটনীয় বিজ্ঞানের প্রভাবে ফ্রান্সিস বেকন দর্শনে আরোহাত্মক পদ্ধতির প্রচলন করেন, যার মূলভিত্তি হলো পর্যবেক্ষণ। ফ্রান্সিস বেকন ও জন লকের পথ ধরে জর্জ বার্কলে অভিজ্ঞতাবাদী মতবাদ প্রদান করেন এবং এ প্রসঙ্গে আরোহাত্মক পদ্ধতির ভিত্তিতে সার্বিক ও অনিবার্য জ্ঞান সম্ভব বলে দাবি করেন। এ দাবি অসঙ্গতিপূর্ণ। তবে হিউমের দর্শনে এসে এ ধারার বিশেষ পরিণতি দেখা যায়। হিউম অভিজ্ঞতাকে যথার্থ জ্ঞানোৎপত্তির একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলেও আরোহ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেননি। তিনি পর্যবেক্ষণের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। পর্যবেক্ষণকে নির্ভর করে আরোহাত্মক পদ্ধতিতে সার্বিক জ্ঞানলাভ তিনি সম্ভাব্য বা আকস্কিক বলে আখ্যায়িত করেন। এর ফলে তাঁর দর্শনে অভিজ্ঞতাবাদ সঙ্গতিপূর্ণ রূপলাভ করে এবং যৌক্তিক পরিণতি হিসেবে তা সংশয়বাদে পর্যবসিত হয়। এ বিষয়টিই ‘হিউমের জ্ঞানবিদ্যা’ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ের আলোচনা। এছাড়া, চার্বাকদের মতো হিউমও তার অভিজ্ঞতাবাদী মতবাদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্যান্য দার্শনিক মতবাদ দিয়েছেন। তাই এ অধ্যায়ে তার আত্মসম্পর্কিত ও কার্যকারণ সম্পর্কিত মতবাদের আলোচনাও সন্নিবেশিত হয়েছে।

হিউম তার জ্ঞানবিদ্যাগত মতবাদ দ্বারা পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যায় বিশেষ অবস্থান গ্রহণ করেন। তাকে শুধু অভিজ্ঞতাবাদী মতবাদের সঙ্গতিপূর্ণ পরিণতি দানকারী হিসেবে মূল্যায়ন করাই যথেষ্ট নয়। তিনি বুদ্ধিলব্ধ জ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে আরোহ পদ্ধতিকে নিশ্চিত নয়, বরং সম্ভাব্য জ্ঞানের পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করেন। সর্বোপরি জ্ঞানের ক্ষেত্রে সংশয়বাদের কথা বলে হিউম জ্ঞানবিদ্যার আলোচনায় কিছু মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। পরবর্তীকালের প্রধান প্রধান দার্শনিক মতবাদগুলোর কোনোটিই হিউমের উথাপিত প্রশ্নকে, তথা তার জ্ঞানবিদ্যাগত অবস্থানকে অবজ্ঞা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে উপসংহারে আলোচিত হয়েছে। পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাসে হিউমের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তাই চতুর্থ অধ্যায়ে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যার ইতিহাসে তার অবস্থান নির্ণয়েরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে ‘চার্বাক ও হিউমের জ্ঞানবিদ্যার তুলনামূলক সমীক্ষা’। প্রধানত দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচিত চার্বাক জ্ঞানবিদ্যা ও চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হিউমের জ্ঞানবিদ্যার ভিত্তিতেই পঞ্চম অধ্যায়ের সমীক্ষা। এ আলোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, চার্বাক ও হিউমের জ্ঞানবিদ্যাগত মতবাদের মধ্যে কিছু মৌলিক ধারণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য, এবং এসব ধারণা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এতে নির্দেশিত হয়, চার্বাক নামক ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় খ্রিষ্টপূর্ব সাতশ’ অব্দেরও আগে যে জ্ঞানবিদ্যাগত ধারণাগুলোর প্রবর্তন করেন আড়াই হাজার বছর পরবর্তী পাশ্চাত্য দার্শনিক হিউম সে ধারণাগুলোরই যুগোপযোগী ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের ব্যাখ্যার পার্থক্য মূলত তাঁদের দেশ কাল ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পার্থক্যের কারণেই ঘটেছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, দার্শনিক সমস্যাবলি আলোচনার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আছে। সমসাময়িক দেশ কাল, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ইত্যাদি দর্শনের ইতিহাসের গতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।

ষষ্ঠ অধ্যায় সমগ্র আলোচনার ‘উপসংহার’। এতে বলা হয়েছে, চার্বাক উদ্ভাবিত জ্ঞানবিদ্যাগত ধারাটি কালিক, দৈশিক ও নৃতাত্ত্বিক গণ্ডি অতিক্রম করে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় হিউমের দর্শনে এসে পৌঁছায়। কিন্তু এখানেই এর শেষ নয়। কারণ, হিউম-পরবর্তী উল্লেখযোগ্য দার্শনিক মতবাদের মধ্যেও এ ধারার সুস্পষ্ট প্রভাব বিরাজমান। আধুনিক ও সমকালীন দর্শনের বিভিন্ন মতবাদ, যেমন বিচারবাদ, উপযোগবাদ, যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ, প্রয়োগবাদ, রূপতত্ত্ব বা অবভাসবাদ এবং বিশ্লেষণী দর্শনের উপরও চার্বাক প্রতিষ্ঠিত ও হিউম অনুসৃত অভিজ্ঞতাবাদের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ থেকে বলা যায়, জন্মসূত্রে কোনো দার্শনিককে তাঁর জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভৌগোলিক গণ্ডি বা দেশ কালের দ্বারা চিহ্নিত করা গেলেও তাঁর মতবাদকে এসব গণ্ডির দ্বারা সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। দার্শনিক মতবাদের আবেদন দেশকালোত্তীর্ণ ।

চার্বাক দর্শন সম্পর্কিত যে কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সীমাবদ্ধতা হলো চার্বাকদের রচিত মূল গ্রন্থের দুষ্প্রাপ্যতা। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি প্রধানত চাৰ্বাক দর্শন সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাদির উপরই নির্ভর করেছি।

অভিসন্দর্ভ প্রস্তুত করার সময় আমি যাঁদের সহায়তা পেয়েছি তাঁদের কথা বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত সংস্করণে উল্লেখ করেছি। এর পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকছি। আমার আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৎকালীন প্রফেসর ডক্টর কাজী নূরুল ইসলাম এবং অনানুষ্ঠানিক অথচ বাস্তব কর্মতত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ডক্টর প্রদীপ কুমার রায়-এর প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলা একাডেমী থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগে দর্শন বিষয়ের দুজন বিদগ্ধ পণ্ডিত এ পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করেছেন। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের বর্তমান প্রফেসর ইমেরিটাস, আমার শিক্ষক, ডক্টর আবদুল মতীন। অন্যজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য ও বরেণ্য শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর রমেন্দ্রনাথ ঘোষ। এঁদের স্পর্শে আমার পাণ্ডুলিপির মানোন্নয়ন ঘটেছে। তাঁদের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা রইল। বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা, আমার হিতাকঙ্ক্ষী, মোবারক হোসেনের উদ্যোগে এবং অবসর প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার আলমগীর রহমানের আগ্রহে এ গ্রন্থ প্রকাশিত হলো। এঁদের কাছে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আশা করছি ভাষাগত পরিমার্জনের ফলে বর্তমান সংস্করণ পাঠকদের অধিকতর মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।

কালী প্রসন্ন দাস
১৫.১০.২০১২
সি/২
২৭৫ এলিফেন্ট রোড, ঢাকা১২০৫

Book Content

১. ভারতীয় জ্ঞানবিদ্যা
২. চার্বাক জ্ঞানবিদ্যা
৩. পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা
৪. হিউমের জ্ঞানবিদ্যা
৫. চার্বাক ও হিউম : তুলনামূলক সমীক্ষা
৬. উপসংহার
লেখক: কালী প্রসন্ন দাসবইয়ের ধরন: প্রবন্ধ ও গবেষণা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.