আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১ – সুকুমার বিশ্বাস
আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১
.
আমার শিক্ষক
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার
শ্রদ্ধাস্পদেষু
.
প্রসঙ্গ-কথা
আসামে প্রথম থেকেই বহু জাতি উপজাতি ও ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এই সকল মানুষের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক পটভূমি ও সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যও বর্তমান। আসাম প্রদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশকালে ইংরেজ শাসক তাঁদের মুনাফা অর্জনের প্রতি লক্ষ রেখেই বাংলার অন্তর্গত শ্রীহট্ট বা সিলেট এবং গোয়ালপাড়া জেলাকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করেন। এই দুটি জেলাতেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাছাড় জেলাতেও ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের বসবাস। আবার চা-বাগান সৃষ্টির সময়কাল থেকে আসামে বৈচিত্র্যময় মানুষের ভিড় আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ব্রিটিশ শাসক এই স্বতন্ত্রতার বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। ফলে, বৈচিত্র্যের মধ্যে একের অনুসন্ধান প্রয়াস ছিল দুশ্চেষ্টিত প্রায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিগত সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাঙালি-অসমিয়া সংঘাত-সংঘর্ষ, হিংসা রক্তপাত ছিল এই স্বতন্ত্রতাকে কেন্দ্র করেই। আমরা এ কথা বলতেই পারি, এই বৈরিতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছিল একপক্ষীয় এবং তা মূলত অসমিয়া জাতির পক্ষ থেকে। এই পেশিশক্তি আরও সক্রিয় হয় সাতচল্লিশ উত্তরকালের শুরু থেকে। পুরোপুরি রাজশক্তির আর্শীবাদলাভও ঘটে এ সময় থেকেই।
১৯৪৭ সালে ভারতভাগের পরপরই আসাম সরকার তাঁদের ভাষানীতি প্রকাশ্যে আনেন। আসামের প্রধানমন্ত্রী (এ সময় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলা হত) গোপীনাথ বরদলৈ ১৯৪৭ সালের ৩ অক্টোবর সাংবাদিকদের জানান, ‘…Assamese would be the official and state language.’ তিনি আরও বলেন ‘Assamese would also be the medium of instruction in schools.’
১৯৪৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরদলৈ শিলচর আসেন আগরতলা স্টেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। এ সময় স্থানীয় মানুষের দেওয়া স্মারকলিপির জবাবেও তিনি জানিয়ে দেন : ‘Assamese as a state language would be made compulsory.’ সুতরাং, আসাম সরকারের ভাষা নীতি সম্পর্কে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। দ্বিতীয় ভাষা বা অন্য কোনো ভাষার কথাও উচ্চারণ করেননি তিনি। সদ্য স্বাধীন ভারতের একটি প্রদেশ সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের সার্বিক নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয় বলে মনে করার কারণ বর্তমান।
১৯৪৭ সালেই বাঙালিরা আক্রান্ত হন। বাঙালি-বিরোধী চিঠিপত্র প্রকাশ, সভা আয়োজন, সরকারি নির্দেশ, এমনকী তাঁরা শারীরিকভাবেও নিগৃহীত হন। ২৩ আগস্ট তারিখে ‘জাতীয় মহাসভা’ গৌহাটিতে এক বিশাল জনসভায় ‘বঙ্গাল খেদা’-র ডাক দেন।
আসাম প্রদেশে স্বাধীনতার পর প্রথম আইনসভা বসে ১৯৪৭-এর ৫ নভেম্বর। এই সভাতে আসামের গভর্নর স্যার আকবর হায়দারি যে ভাষণ দেন, তা ছিল জাতিবিদ্বেষে পূর্ণ। তিনি তাঁর ভাষণে একদিকে অসমিয়াদের আসামের মালিক বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে বাঙালি জাতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও দ্বিধা করেননি। তিনি তাঁদের ‘stranger’ বলেও অভিহিত করেন। গভর্নর আইনসভায় বলেন, ‘…The natives of Assam are now masters of their own house. They have a Government which is both responsible and responsive of them.’ গভর্নর জানান ‘…The Bengalee has no longer the power, even if he had the will, to impose any thing on the peoples of these Hills and Valleys which constitute Assam.’ তিনি বাঙালিদের প্রতি আনুগত্যের পাঠও দেন।
আইনসভায় গভর্নরের ভাষণের পূর্বেই কামরূপের ডেপুটি কমিশনার ১৯৪৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলারে আসাম থেকে বাঙালিদের বের করে দেবার নির্দেশ দেন। ‘…directly aimed at ousting the Bengalee community from the soil of Assam for good.’
এ সময় অর্থাৎ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আসাম সরকার জনগণের কাছে দুটি বিষয় স্পষ্ট করে দেন। এক, রাজ্যের সরকারি কাজে এবং বিদ্যালয়সমূহে একমাত্র অসমিয়া ভাষা স্থান লাভ করবে এবং দুই, আসামে বসবাসকারী বাঙালিদের আসাম ত্যাগ করতে হবে। আর যদি থাকতেই হয়, তাহলে অসমিয়াদের ভাষা-সংস্কৃতি গ্রহণ করেই থাকতে হবে। অর্থাৎ, অসমিয়াদের সঙ্গে মিশে যেতে হবে, বাঙালি হিসেবে পৃথক ‘আইডেন্টিটি’ বা অস্তিত্ব স্বীকার করা যাবে না।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আসাম সরকার এবং সরকার ঘনিষ্ঠ ‘অসম সাহিত্য সভা’ সুপরিকল্পিতভাবেই একযোগে অগ্রসর হয়।
১৯৪৮ সালে গোপীনাথ বরদলৈ আসাম আইনসভায় দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, ‘It is not the intention of the Government to make Assam a bilingual state and for the sake of homogenity of province … all non-Assamese to adopt Assamese language.’
এই বক্তব্যের পর সরকারি অবস্থান সম্পর্কে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার কোনো সুযোগ তাঁরা রাখেননি। এ সময় সরকারের ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে বাঙালি তথা অনসমিয়াদের যেসব শর্ত অরোপ করা হয়, তা পূরণ করা ছিল দুঃসাধ্যপ্রায়। এই বিধির তীব্র সমালোচনা করে বিশিষ্ট আইনজীবী এন সি চ্যাটার্জি বলেন, ‘অসমিয়া ভিন্ন আসামের অন্যান্য ভাষাভাষী অধিবাসীদের সমান নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করাই আসাম সরকারের ঘোষিত নীতি ছিল।’
বাঙালিদের বঞ্চিত করার লক্ষ্যে জমি ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা, চাকরি, ব্যাবসাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আসাম সরকার অসংখ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেন, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
১৯৪৮ সালের মে মাসে গৌহাটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বাঙালিদের ওপর ব্যাপকভাবে হামলা পরিচালিত হয়। অসমিয়াদের এই হামলায় বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পথচারী, কলকাতার সংবাদপত্র অফিস— কোনো কিছুই বাদ পড়েনি। লুট করা হয়েছে অবাধে, অগ্নি সংযোগে ভস্মীভূত হয়েছে অসংখ্য গৃহ। হতাহতের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে, সরকারকে সেনাবাহিনী তলব করতে হয়। এ সময় বহু আক্রান্ত বাঙালি ঝামেলা এড়ানোর জন্য সরকারি হাসপাতাল এড়িয়ে চলেছেন। সরকারিভাবে একজনের মৃত্যুসংবাদ স্বীকার করা হলেও বেসরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও অধিক বলে জানা যায়। এখানে বলা প্রয়োজন যে, অসমিয়াদের আক্রমণের নিশানা বাঙালি জনগোষ্ঠী হলেও কোনো বাঙালি মুসলিম বা তাঁদের ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠান বা বাড়িঘর আক্রান্ত হয়নি। ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে গেলেও তাঁদের অনুগামীরা তো এখনও বর্তমান। তারাই হিন্দু-মুসলিমে বিভেদ সৃষ্টিতে তৎপর থেকেছেন।
পঞ্চাশ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার এক ভয়াবহ চিত্র আমরা পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছি। আসামও এ সময় দাঙ্গাক্রান্ত হয়ে পড়ে। দাঙ্গা হয় করিমগঞ্জ, গোয়ালপাড়া, বরপেটাসহ আসামের বিভিন্ন অংশে। এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আসাম ত্যাগে বাধ্য হন। এ সব মানুষের অধিকাংশ বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে এবং কোচবিহারে আশ্রয় গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরু লোকসভায় এক বিবৃতিতে ‘ট্রাইবাল ফোক’ (Tribal Folk) এই দাঙ্গায় জড়িত বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ‘নেহরু-লিয়াকত’ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত মুসলিমদের অধিকাংশই আসামে ফিরে আসেন এবং ভারত সরকার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পর পর কয়েকটি সংঘটিত ঘটনা বাঙালি মানসকে বিচলিত করে তোলে। সাতচল্লিশে সিলেট গণভোট এবং দাঙ্গা, আটচল্লিশের হামলা এবং পঞ্চাশের দাঙ্গা। এসব ঘটনার রক্তাক্ত চেহারা তখনও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। ফলে, সমাজে শুভবোধসম্পন্ন মানুষের প্রয়াস সত্ত্বেও হিন্দু-মুসলিমে দূরত্ব ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।
গোয়ালপাড়া জেলায় ১৯৫৫ সালে পুনরায় বাঙালিদের ওপর হামলা হয়। এই আক্রমণের তীব্রতা এতটাই ব্যাপক ও বহুমুখী ছিল যে এ সময়ের এই আন্দোলন ‘বঙ্গাল খেদা’ নামে পরিচিত হয়। হামলার মৌল উদ্দেশ্যই ছিল গোয়ালপাড়া থেকে বাঙালি উৎসাদন। মার্চ মাসে ধুবড়িতে এই আক্রমণের সূত্রপাত। কেবল ধুবড়ি নয়—এই দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিলাসীপাড়া, বিজনী, বরপেটা, ফকিরাগ্রামসহ প্রায় সমগ্র জেলা জুড়েই বাঙালিদের ওপর অব্যাহত থাকে। এই হামলার ফলে উৎপীড়িত গৃহহীন মানুষ পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারসহ অন্যান্য স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আসাম বিধানসভা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ছাড়াও দুটি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এমনকী কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বও সভা, আলোচনা করলেও বাঙালিরা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই থাকতে বাধ্য হন। ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ আসাম পরিদর্শনে আসেন ১৯৫৫ সালের মে মাসে। এই সফরের প্রাক্কালে বাঙালিদের ওপর এই হামলা ছিল তাৎপর্যবহ। গোয়ালপাড়ার বাঙালি জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একীভূত হতে সম্মতি জানিয়েছিলেন। আর এ কারণেই হামলা। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি বড়ো অংশ অসমিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বাঙালি হিন্দু উচ্ছেদে। সমকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ সময়ও গৌহাটির পানবাজারে অবস্থিত আনন্দবাজার পত্রিকা এবং হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডার্ড অফিস ২১ এপ্রিল রাতে ৩০ জনের একটি সঙ্ঘবদ্ধ দল হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ভয়াবহ এই দাঙ্গা-হাঙ্গামার কোনো বিচার হয়নি। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ই আক্রান্ত হয়েছেন বারংবার।
১৯৫৯ সালের ১৭-২০ এপ্রিল নওগাঁয় অনুষ্ঠিত ‘অসম সাহিত্য সভা’-র বার্ষিক অধিবেশনের সমাপ্তি দিনে এক সিদ্ধান্তে সাহিত্য সভা জানিয়ে দিলেন—‘The Sabha urged the state Government to implement the resolution and also asked the members of the Assam Assembly to adopt a resolution to this effect and to see that Assamese is declared as state language within 1960, সিদ্ধান্তে আরও বলা হয় ‘Assamese should be taught compulsorily in non-Assamese schools of Assam.’
অসম সাহিত্য সভার এই ঘোষণার কয়েক মাসের মধ্যে ১৯৫৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসাম গভর্নরের উপদেষ্টা এন কে রুস্তমজী ঘোষণা করেন ‘… it has been finally decided to introduce Assamese as the medium of instructions in all schools in the Agency with effect from the next school sessions.’
আমরা জানি, ১৯৬০ সালেই ‘অসমিয়া’ ভাষা রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি লাভ করে। অপরদিকে উপদেষ্টা রুস্তমজী-র ঘোষণাটির পিছনেও ছিল অসম সাহিত্য সভার দাবি। কিন্তু সরকারের এই শর্তহীন আনুগত্য কেন? তাহলে কি আমাদের বলতে হবে আসাম সরকার পরিচালনে ‘অসম সাহিত্য সভা’ নিয়ামকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত?
১৯৬০ সালে আসামে বসবাসকারী বাঙালি জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্যোগ। এ সময় অসমিয়াদের বড়ো অংশই পরিকল্পিতভাবে সর্বাত্মক হামলা পরিচালনা করে সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। একই সঙ্গে অসমিয়াকে রাজ্যভাষা করার জন্যও সরকারের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখা হয়। অসমিয়া ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাঁদের পত্র-পত্রিকা বাঙালি বিরোধী অভিযানে নেমে পড়ে। পত্র-পত্রিকায় বাঙালি বিরোধী নানা কুৎসা প্রচার করে সহজেই অসমিয়া সমাজকে উত্তেজিত করে তোলা হয়। ছাত্রছাত্রী এবং নেতৃবর্গ একের পর এক সভা, মিছিল করে, উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত, বিভ্রান্ত করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, অসংখ্য বাঙালি নারী ধর্ষিতা হন। আহত অগুনতি। সীমাহীন নির্যাতন। সরকারি হিসাব মতেই এ সময় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪০ জন। অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁদের পঙ্গু করে দেওয়া হয়।
নির্যাতনে দিশেহারা বাঙালি জান ও মান বাঁচাতে সবকিছু ফেলে দলে দলে পশ্চিমবঙ্গের পথে পাড়ি জমান। স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ভিড়। এ সব গৃহহীন মানুষেরা পথেও আক্রান্ত হয়েছেন, হারাতে হয়েছে পথের শেষ সম্বলটুকুও। ট্রেন আক্রমণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আলিপুরদুয়ার স্টেশনসহ সর্বত্র শরণার্থীদের ভিড়। অসংখ্য আহত মানুষে রেলওয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল পূর্ণ হয়ে যায়। রেলের ড্রাইভার, গার্ড ও অন্যান্য পদের রেলকর্মীগণও অসমিয়াদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। বহু বাঙালি নারীকে ট্রেন থেকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে—যাঁদের খোঁজ আর কোনোদিনই মেলেনি। ’৪৬-এর নোয়াখালি দাঙ্গার মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের নিরিখে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও সেখানকার সাধারণ মানুষ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এইসব বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অসংখ্য শরণার্থী ক্যাম্প পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ষাট হাজারে। আসামের বিভিন্ন স্থানেও ছিন্নমূল বাঙালিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা কাছাড়ে বিশেষত শিলচরেই ১৭টি শরণার্থী ক্যাম্প গড়ে ওঠে। বাঙালি এলাকা লামডিং, যমুনা মুখ—এইসব স্থানেও বাস্তুহারা মানুষের ভিড় ছিল কল্পনাতীত। মানুষের ঠিকানা শেষপর্যন্ত কোথায় হবে—তাও তো কেউ জানেন না তখন। এমন ট্র্যাজেডি স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতে ভাবতে কষ্ট হয় আমাদের।
১৯৬০ সালের জুলাই মাসে অসমিয়াদের বেপরোয়া লাগামহীন অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছায়—তখন কাছাড়ের বাঙালি নেতৃত্ব সকলকে একত্রিত করতে উদ্যোগী হন। আর এই প্রয়াসের ফলেই শিলচরে ২, ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষা সম্মেলন। সমগ্র আসামের উল্লেখযোগ্য মানুষ সম্মেলনে যোগদান করেন। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা মানুষও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে চপলাকান্ত ভট্টাচার্য, এম পি এবং কাজী আবদুল ওদুদের অংশগ্রহণ ছিল বিশেষ তাৎপর্যবহ। সম্মেলন উদবোধন করেছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ এবং সভাপতিত্ব করেন চপলাকান্ত ভট্টাচার্য। উল্লেখযোগ্য যে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীও এই সম্মেলনে যোগ দেন এবং তাঁরা ২ জুলাই সন্ধ্যায় শিলচর সংস্কৃতি ভবনে পৃথক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন—যেখানে বিপুল সংখ্যক পাহাড়ের মানুষ অংশ নেন। বাঙালিরা এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন।
এ বছর নভেম্বরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহর হোজাই-এ আসামে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনও ছিল দু-দিনব্যাপী। সম্মেলনে বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয় এবং তা প্রতিকারে প্রদেশ তথা কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। বিষয়টি সরকারের গোচরে আনা হলেও ফলাফল থাকে শূন্য।
কার্যত কাছাড়ের বাঙালিরা ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা ভাষার দাবিতে একজোট হওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও আসামের প্রায় সকল বাঙালির মধ্যে এ প্রয়াস লক্ষ করা গেছে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার কারণে আসাম উপত্যকার সকল বাঙালিকে একজোট করা সম্ভব হয়নি। কাছাড়ের সাধারণ মানুষেরা বাংলা ভাষার দাবিতে সোচ্চার হন। কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে আন্দোলনে তেমন গতি আনা সম্ভব হয়নি।
১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারিতে করিমগঞ্জে ‘গণসংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হওয়ার পর আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। কাছাড় কংগ্রেস, পিএসপি এবং কমিউনিস্ট পার্টির একটি বড়ো অংশ ভাষা আন্দোলনে এগিয়ে আসেন। সংগ্রাম পরিষদের মূল দাবিই ছিল বাংলা ভাষার স্বীকৃতি ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দান। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বড়ো মাপের কোনো নেতা-নেত্রী ছিলেন না, ছিলেন মধ্যমানের মানুষেরা।
গণসংগ্রাম পরিষদ সকল দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষ তথা সাধারণ মানুষকে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মানুষ যেন এক অলৌকিক যাদুবলে জেগে ওঠেন। সংগ্রাম পরিষদও মানুষের সঙ্গে সমান তালে তাল মেলাতে পিছপা হননি। জোর কদমে এগিয়ে চলে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা। অতিদ্রুত সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ, সখ্যতা গড়ে ওঠে।
সংগ্রাম পরিষদের ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি ছিল এক সফল পদক্ষেপ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গ্রাম ও শহরের মানুষেরা একসূত্রে গ্রথিত হন। জনতা জান দিতে প্রস্তুত, কিন্তু জবান নয়। তাঁরা মাতৃভাষা বাংলার সরকারি স্বীকৃতি চান।
আসাম সরকার তথা কেন্দ্র যখন গণসংগ্রাম পরিষদের ঘোষিত দাবিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজেদের পেশিশক্তি প্রদর্শনে তৎপর হয়ে ওঠে— তখনও পরিষদ তাদের নির্দিষ্ট দিন ১৯ মে তারিখে সত্যাগ্রহ অহিংস আন্দোলন কর্মসূচিতে অবিচল থাকেন।
১৯ মে ১৯৬১ আসামে বসবাসরত বাঙালি তথা অনসমিয়াদের জন্যে এক কালো দিন, শোকের দিন। শিলচরসহ সমগ্র কাছাড় জেলা পুলিশে-মিলিটারিতে ছয়লাপ হয়ে যায়। রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি। অপরদিকে কাছাড়ের নিরস্ত্র নারী, পুরুষ, শিশু ভোর রাত থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে রেল অবরোধে রওয়ানা দেন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। অপর আরেক দল সত্যাগ্রহী সরকারি অফিসের সম্মুখে পিকেটিংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। লক্ষ্য—ট্রেন চলতে দেবেন না, অফিস খুলবে না। তাঁরা ছিলেন নিরস্ত্র, শান্ত, ধীর, স্থির। কিন্তু মাতৃভাষার মান বাঁচাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাঁদের মুখে ছিল শ্লোগান—‘জান দিব, জবান দিব না’, ‘বন্দে মাতরম’, ‘বাংলা ভাষা জিন্দাবাদ’।
সরকারি সম্পত্তির কোনো ক্ষতি তাঁরা করেননি, আঘাত করেননি পুলিশ-মিলিটারিকে। আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু দুপুর দুটোর পর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আকস্মিকভাবে শিলচর স্টেশন এলাকায় অবস্থানরত সত্যাগ্রহী-জনতাকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয় কোনো হুঁশিয়ারি না দিয়েই। আর এই বুলেটের আঘাতেই ঝরে পড়ে এগারোটি তাজা প্রাণ। প্রথম দিন অর্থাৎ ১৯ মে ১ জন নারীসহ ৯ জন এবং পরদিন বুলেটবিদ্ধ দু-জনের মহাপ্রয়াণ ঘটে চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও।
এ কথা বলা যায় যে, এই হত্যাযজ্ঞের প্রধান পুরোহিত ছিলেন আসাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহা এবং তাঁর অনুগামী, অনুগতগণ। এই হত্যাকান্ডে সমগ্র ভারতজুড়ে ধিক্কার ধ্বনি উচ্চারিত হয়। প্রতিবাদ ওঠে সর্বস্তরে, সকল মহলে। কিন্তু তারপরও সরকার নির্লিপ্ত। মিথ্যার আশ্রয়ে একের পর এক পরস্পর বিরোধী প্রেস-বিজ্ঞপ্তি জারিতে ব্যস্ত থাকলেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরু এ দিন গৌহাটিতে অবস্থান করছিলেন এবং জনসভায় ভাষণও দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ভাষা শহিদদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ তো দূর অস্ত— বরং নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদেরই তিনি দোষারোপ করেন, সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগানোর অভিযোগও তোলেন তিনি। বাঙালি জীবনে কী নির্মম পরিহাস!
শেষপর্যন্ত কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার আসামের ভাষা বিষয়ে রফাসূত্র বের করার জন্য কাছাড় নেতৃত্বকে দিল্লিতে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। সরকার আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে কাছাড় জেলার বিভিন্ন জেল থেকে প্রায় তিনশো আন্দোলনকারীকে ১৭ জুন মুক্তি দেন। আন্দোলনরত নেতৃত্ব সরকারের এই মনোভাবের কারণে তাঁরাও সাময়িকভাবে তাঁদের আন্দোলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন। কাছাড়ে তখন শান্তি বিরাজমান।
কিন্তু আকস্মিকভাবেই ১৯ জুন হাইলাকান্দিতে ভয়াবহ দাঙ্গা সংঘটিত হয়। আর এই দাঙ্গায় অংশ নেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়।
বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে, লুটপাট চালিয়ে সমগ্র হাইলাকান্দিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। ডেপুটি কমিশনার দাঙ্গাকারীদের নিরস্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। এর ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। দাঙ্গাকারীরা যে সরকার তথা একটি গোষ্ঠির সমর্থনে এই দাঙ্গা ঘটিয়েছিল, তা হামলাকারীদের শ্লোগান থেকেই স্পষ্ট। আর এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষা আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া। আসলে এই দাঙ্গা ছিল পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এই ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাষা বিষয়ে আলোচনার জন্য কাছাড় কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ নেতৃত্বকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানান। দু-দিনব্যাপী এই আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীলাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং দ্বিতীয় দিন প্রধান মন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহরুর সঙ্গে একটানা বৈঠক শেষে কাছাড়ের উভয় নেতৃত্ব সরকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। কেন্দ্রীয় সরকার কেবল কাছাড়ে বাংলা ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষাদান সম্ভব হবে বলেও ঘোষণা করা হয়। সংখ্যালঘুদের জন্য আরও বেশকিছু রক্ষাকবচের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের দাবি ছিল সমগ্র আসামে বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি। কিন্তু তা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবারই অসমিয়া ‘জুজুর’ ভয় দেখিয়েছেন। দুই সরকার—কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ের কাছেই যে ‘মানুষ’ বড়ো নয় ভোট রাজনীতি সবার ওপরে, এ সত্য তখনও ছিল, এখনও বর্তমান। আমাদের মনে হয়েছে গণসংগ্রাম পরিষদ-এর কাছে এই সমঝোতা ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ ওই মুহূর্তে খোলা ছিল না। কারণ রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় সরকারই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের ওপর নিরন্তর চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে সংগ্রাম পরিষদের বিরুদ্ধে পালটা লড়াই চালাবার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘শান্তি পরিষদ’ গঠন করা হয়। এই সংগঠন এ সময় বাংলা ভাষা বিরোধী আন্দোলনে বেশ তৎপর ছিল। ভাষা আন্দোলনকারীদের মানসিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য পুরোনো অস্ত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ন্যক্কারজনক পথও বেছে নেওয়া হয়েছে। এ সব দাঙ্গাকারীদের মাঝে প্রচুর অর্থ বিলির অভিযোগও সমকালীন সংবাদপত্রে দফায় দফায় পাওয়া গেছে।
আমাদের এ কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন একটিমাত্র জেলার মানুষ— কাছাড়। কলকাতা বা বাংলাদেশের ঢাকার মতো সুবিধে এখানকার মানুষের ছিল না। কিন্তু তারপরও নিখাদ মাতৃভাষা বাংলার জন্য হাজারে হাজারে সাধারণ মানুষ পথে নেমেছিলেন, গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন। শ-য়ে শ-য়ে নরনারী জেল বন্দি থেকেছেন, নির্যাতন ভোগ করেছেন। বিপুল সংখ্যায় নারীর অংশগ্রহণ ছিল অভাবনীয়। ছাত্রছাত্রীদের ত্যাগ স্বীকার আজ ইতিহাসের বিষয়। এই অমানবিক অত্যাচার, হত্যাকান্ড আসামের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই মানবসৃষ্ট ট্র্যাজেডির জন্য আসামের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। এ দায় তাঁরা কোনোদিনই মুছে ফেলতে পারবেন না। ইতিহাসের নির্মম সত্য কাউকে ক্ষমা করেনি, সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই হবে।
বইটি যদি সাধারণ পাঠক-গবেষকদের কোনো কাজে লাগে, তবেই আমার দীর্ঘদিনের শ্রমকে যথাযথ বলে মনে করব। ভুল-ত্রুটির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
সুকুমার বিশ্বাস
১৯৪৭-১৯৬১ কাল পরিসরে ‘আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ’ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে সমকালের মোট ন-টি পত্রিকা আমরা ব্যবহার করেছি। এসব পত্রিকার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা, অমৃতবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, দৈনিক বসুমতী এবং স্বাধীনতা; আসাম রাজ্যের দি আসাম ট্রিবিউন, যুগশক্তি (সাপ্তাহিক), জনশক্তি (সাপ্তাহিক) এবং মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত দি হিন্দু উল্লেখযোগ্য।
আমাদের বর্তমান কাজের প্রাণশক্তি ছিল এসব সমকালীন সংবাদপত্র। বিশেষ করে আনন্দবাজার পত্রিকা-র বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি ইতিবাচক ভূমিকা ছিল অনন্য। আসামে কলকাতার সংবাদপত্র অফিস আক্রান্ত হয়েছে বারবার। সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। একাধিক পত্রিকা-বাণ্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিগ্রহ ছিল নিত্যদিন। কিন্তু তারপরও পত্রিকাগুলির কতৃপক্ষ তাঁদের মানবিক দায় থেকে পিছিয়ে আসেননি। কেবল তাই নয়— আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ এবং হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডাড় পত্রিকা কতৃপক্ষ কাছাড়ে নিগৃহীতদের জন্য সাহায্যভান্ডার খুলে মানুষের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। কলকাতার সংবাদপত্র আসামের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কারণে দু-জন সংবাদপত্র কর্মীকে হত্যাও করা হয়। কলকাতাসহ সকল পত্রিকা কতৃপক্ষ, সংবাদপত্র কর্মী এবং যাঁরা প্রাণ হারালেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে এসব পত্রিকা দেখার অনুমতি দিয়ে বাধিত করেছেন। একটানা দু-বছর এই গ্রন্থাগারেই সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেছি। দৈনিক পত্রিকা শাখার কর্মীবৃন্দ বিশেষত পার্থ ঘোষ যেভাবে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন সেজন্যে আমি কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শীতলচন্দ্র অধিকারী এবং রথীন দাসের সাহায্য ও সহযোগিতায় আমি উপকৃত হয়েছি। আন্তরিক এ মানুষ দু-জনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
শিলচরের জনশক্তি পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা দেখার সুযোগ হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ঘেঁষা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারভুক্ত ‘যতীন্দ্রমোহন সংগ্রহশালা’-য় বসে। দীর্ঘ কয়েকমাস তথ্যসংগ্রহকালে প্রতিষ্ঠানে কর্মরতা ড. মায়া ভট্টাচার্য যে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন, সেজন্যে তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত যুগশক্তি পত্রিকা-সংকলনসহ বেশ কয়েকটি দুর্লভ গ্রন্থ দিয়েছিলেন এই পরিবারেরই সন্তান শ্রীঅরিজিৎ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে আসাম বিষয়ের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে উপকৃত হয়েছি। তাঁকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যসংগ্রহে আমরা আসামের শিলচর, করিমগঞ্জ এবং গৌহাটি গিয়েছিলাম ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এ কাজে সঙ্গী ছিলেন আমার স্ত্রী শিখা বিশ্বাস। শিলচরের সন্তান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদে কর্মরত শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার স্থানীয় কয়েকজন লেখক-গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কারণে আমাদের স্বচ্ছন্দে কাজ করার সুযোগ ঘটে। লেখক শিবাদিত্য দাশগুপ্তও বইসহ অন্যান্য সহযোগিতা করেছিলেন। এই দু-জনের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।
শিলচরে আমরা একটি হোটেলে উঠেছিলাম। সেখানকার লেখক-গবেষক-আইনজীবী ইমাদউদ্দিন বুলবুল ‘পূর্বাচলে’ আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন স্থানীয় লেখক-গবেষক-সাংবাদিকের সঙ্গে মত বিনিময়ের আয়োজন করেছিলেন। এই সভায় বুলবুল ছাড়াও শিলচর গণসংগ্রাম পরিষদ প্রধান পরিতোষ পাল চৌধুরী, লেখক-গবেষক ড. সুবীর কর, বিজয়-কুমার ভট্টাচার্য, তুষারকান্তি নাথ, পার্থপ্রতিম দাশ, প্রবীণ সাংবাদিক অতীন দাশসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে মত বিনিময় হয় এবং তাঁরা সকলেই সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসব মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শিলচরে অবস্থানকালেই লেখক-গবেষক কানু আইচের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ হয়। আমিই যোগাযোগ করে তাঁর আস্তানায় চলে গিয়েছিলাম। প্রচুর সাহায্য করেছিলেন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে। ডাকযোগেও আমার ঠিকানায় অনেক তথ্য পাঠিয়েছেন। শ্মশানঘাট স্থলে সমাধি দেখিয়েছিলেন সকল শহিদের। সে এক অন্য অনুভূতি, অন্য জগৎ। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
ভাষা সৈনিক, ডিকটেটর লড়াকু পরিতোষ পাল চৌধুরী আজ আর আমাদের মাঝে নেই। অথচ সেদিন তিনি আমাদের একটি গাড়িতে করে নিয়ে গান্ধীবাগের প্রতিটি স্থান দেখিয়েছিলেন। বরাক নদীস্থলসহ শহিদদের স্মৃতি-বিজড়িত অনেক স্থানও দেখিয়েছিলেন। আশি-ঊর্ধ্ব এই মানুষটি আমাদের অরুণাচল আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বই ছাড়াও অরুণাভ চৌধুরীর ’৬১-র ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত বইটিও উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। হোটেলে দীর্ঘ আলোচনায় বসেছি একাধিক দিন। সঙ্গী ছিলেন ড. সুবীর কর। আমাদের এ বইটি নিয়ে ভীষণ আগ্রহ ছিল তাঁর। কিন্তু শেষ দেখা হল না। তাঁর আত্মা শান্তিলাভ করুক।
ইমাদউদ্দিন বুলবুল শিলচরে আমাদের প্রায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। তাঁর বই ছাড়াও আরও কয়েকটি বই, হাতে লেখা পান্ডুলিপি আমায় দিয়েছিলেন, যা থেকে প্রভূত উপকৃত হয়েছি। বুলবুল রক্তিম দিগন্ত-র সম্পাদক মিতা দাসপুরকায়স্থের অফিসেও নিয়ে গিয়েছিলেন। শ্রীমতী পুরকায়স্থ বাৎসরিক রক্তিম দিগন্ত-র দু-টি সংখ্যা দিয়েছিলেন যেখান থেকে বেশ কয়েকটি আলোকচিত্র বর্তমান গ্রন্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এই দু-জন মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ইমাদউদ্দিন নিয়মিত আমার স্বাস্থ্যের খবর নেন আজও। শিলচরে পার্থপ্রতিম দাশ-এর আন্তরিক সহযোগিতা মনে রাখার মতো। ড. কামালুদ্দীন আহমদ-এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেও উপকৃত হয়েছি। এরপর করিমগঞ্জ গেলাম। কমিরগঞ্জেও আমরা দু-জন হোটেলে উঠেছিলাম। রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশিষ্ট লেখক-গবেষক-কবি দিলীপকান্তি লস্কর তাঁর গাড়িতে করে আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিলেন। নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছেন। আবার করিমগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তিনি আমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত প্রায় সব বইগুলিই আমি ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। এসব বই থেকে আসামের ভাষা আন্দোলনের প্রথম পাঠ গ্রহণ করি। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এসব গ্রন্থ পেয়েছিলাম সাংবাদিক মিলন দত্ত-র কাছ থেকে, যাঁর কাছে ঋণী হয়ে রইলাম আমি।
করিমগঞ্জের বিশিষ্ট গবেষক-অধ্যাপক জন্মজিৎ রায়-এর কাছেও আমি ঋণী। আমরা তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন আসামের বাইরে ছিলেন। কলকাতায় ফিরে তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। তিনি আমার অনুরোধে অতিদুর্লভ পুস্তিকা ‘আসামে উপেক্ষিত’ এবং শ্রীরায়ের লেখা সিলেট গণভোট বিষয়ক একটি নিবন্ধ ডাকযোগে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ফোনে মাঝে মাঝেই সমস্যা সমাধানে কথা বলেছি। তিনি সমাধান সূত্রও বের করে দিয়েছেন। সিনিয়র এই মানুষটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
করিমগঞ্জের তৎকালীন ছাত্রনেতা ভাষা সংগ্রামী নিশীথরঞ্জন দাস-এর বাড়িতে আমরা একাধিক দিন গেছি। এই কমিউনিস্ট নেতা ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন সেদিন, কারাভোগও করেছিলেন। এই বর্ষীয়ান নেতা শ্রীদাস তাঁর লিখিত বইগুলি আমায় দিয়েছিলেন, কথাও বলেছিলেন দীর্ঘ সময়। আন্তরিক, দিলদরাজ এই মানুষটির বাড়িতে একদিন দুপুরের আহারও গ্রহণ করতে হয়েছিল। শ্রীমতী দাস পরম মমতায় আমাদের সেদিন খাইয়েছিলেন। এঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শ্রীদাস করিমগঞ্জের গণসংগ্রাম পরিষদের অগ্রণী নেতা নলিনীকান্ত দাসের সন্তান নির্মাল্য দাস এবং শিক্ষক মহীতোষ দাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। নির্মাল্য দাস-এর আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাঁর কাছে রক্ষিত গণসংগ্রাম পরিষদ-এর সব ফাইলই নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর এক শিক্ষক। কিন্তু তিনি আর ফেরত দেননি তাঁর অনুরোধ সত্ত্বেও। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মহীতোষ দাস-এর বাড়িও আমরা দু-জন মিলে খুঁজে বের করেছিলাম। তিনিও আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করেছিলেন। ’৬১-র ভাষা আন্দোলনে এই শিক্ষক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘বিজয়ী ব্যায়াম সংঘ’-এর প্রায় ৭০ জন-এর মতো তরুণ করিমগঞ্জের আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মতোই কাছাড়ে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল। শিলচরে গুলিবর্ষণের পর করিমগঞ্জে যে গণজাগরণ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি— এমনটা আর কখনো দেখা যায়নি।’ বর্ষীয়ান এই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা রইল।
এ সময় আমরা গৌহাটিও সফর করি। লক্ষ ছিল কটন কলেজ। ১৯৬০ সালের ৪ জুলাই এই এলাকাতেই পুলিশ গুলি চালিয়েছিল এবং তাতে একজন অসমিয়া ছাত্রের মৃত্যু হয় এবং এর ফলেই চলমান ভাষাদাঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারণ করে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়। আমরা কলেজ এলাকার আশপাশ ঘুরে দেখেছিলাম।
গৌহাটিতে বসবাসরত সেদিনের শিলচর কলেজ ছাত্র একনিষ্ঠ ভাষা সংগ্রামী মণীন্দ্র রায়-এর সঙ্গেও কথা হয়। শিলচরের পরিতোষ পাল চৌধুরী আগেই টেলিফোনে আমার কথা জানিয়ে রেখেছিলেন। তিনি এই ভাষা আন্দোলনে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করেছিলেন নিষ্ঠার সঙ্গে। শ্রীরায়, শ্রীপাল চৌধুরীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। শ্রীরায় লিখিত আকারে তাঁর জবানবন্দি আমাকে দিয়েছিলেন। সেদিনের ছাত্রনেতা বিজনশঙ্কর রায়-এর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে, কথাও হয়েছে। তিনি বেশ কিছু তথ্য ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
বর্তমানে গৌহাটির দিসপুরে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত পি ডব্লিউ ডি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার নিশুতি মজুমদারও ছিলেন সেদিনের শিলচরে ছাত্র, ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তাঁর সঙ্গেও টেলিফোনে মাঝে মাঝেই কথা হয়েছে। তিনিও লিখিত আকারে তাঁর বয়ান ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর লেখা আমি ব্যবহার করেছি নির্দ্বিধায়। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই সহযোগিতার জন্যে।
আর একজন মানুষ, তিনি আজ আর নেই আমাদের মাঝে। ইতিহাসবিদ অমলেন্দু দে সবসময় আসামের এই কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করার জন্যে উৎসাহ দিয়েছেন। বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর টান ছিল নিরন্তর। তাঁর আত্মা শান্তিলাভ করুক— এই কামনাই করি। আমার অনুরোধে সংবাদপত্র থেকে প্রচুর আলোকচিত্র গ্রহণ করেছিলেন দু-জন আলোকচিত্রী — তিমির অধিকারী এবং জাফর আলি খান। বিশেষত জাফর আলি খান ছবি তুলে দিয়েছিলেন প্রচুর। এঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আনন্দবাজার পত্রিকা-র বেশ কিছু প্রিন্ট নিয়েছিলাম কলকাতার জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র থেকে। এসব আলোকচিত্র আজ ইতিহাসের উপাত্ত—যা আমি ব্যবহার করেছি দু-হাতে, মানুষের জন্যেই।
পারুল প্রকাশনী-র প্রধান গৌরদাস সাহা আমার বর্তমান পান্ডুলিপিটি মুদ্রণের জন্য গ্রহণ করায় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। গ্রন্থ প্রকাশনার কাজে যাঁরা নিষ্ঠাভরে শ্রম দিয়েছেন, যত্ন নিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমার শুভাশিস রইল। আমার স্ত্রী শিখা বিশ্বাস অতীতের মতো বর্তমান কাজেও নিত্যসঙ্গী ছিলেন ঘরে এবং বাইরে। আমার কনিষ্ঠ সন্তান অলোককে মাঝে মাঝেই আমার কাজ নিয়ে প্রেসে ছুটতে হয়েছে। এঁদের প্রতি আমার আশীর্বাদ থাকল। যাঁদের কথা বলতে পারিনি, অথচ আমার এ কাজে সহায়তা প্রদান করেছেন— তাঁদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
সুকুমার বিশ্বাস
Leave a Reply