• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – কৃষণ চন্দর

লাইব্রেরি » কৃষণ চন্দর, মোস্তফা হারুন » ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – কৃষণ চন্দর
ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ - কৃষণ চন্দর

ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – কৃষণ চন্দর

ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ
[ দাদর পুলকে বাচ্চে ]
মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: মোস্তফা হারুন

.

আমার কথা

প্রায় বছর দশেক আগে এই উপন্যাসের মূল বইটি আমি ফুটপাথে পেয়েছিলাম। ‘দাদর পুলকে বাচ্চে’ নামক এই উপন্যাসটির বিষয়-বস্তু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল, তখন থেকেই ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম ‘ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ’ নাম দিয়ে বইটি অনুবাদ করব। কিন্তু দীর্ঘদিন নানা ব্যস্ততার দরুন তা’ আর অনুবাদ করতে পারিনি। দেশ স্বাধীন হবার পর দৈনিক আজাদে বসে বিশিষ্ট সাংবাদিক বন্ধু ফকির আশরাফের সাথে লেখাটির বিষয়-বস্তু নিয়ে আলাপ হলে তিনি বেশ উৎসাহ প্রদর্শন করেন এবং তাড়াতাড়ি তা অনুবাদ করে আজাদের সাহিত্য পাতায় দেবার অনুরোধ করেন। বলা বাহুল্য, তিনি তখন পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। এ জন্যে তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজাদের সাহিত্য পাতায় ছাপ। হওয়ার পর লেখার কোন কপি রাখতে পারিনি। পুস্তকাকারে ছাপার জন্য শেষ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর গ্রন্থাগার থেকে অনুজ প্রতিম রুহুল আমিন দৌলতী বহু শ্রম ও কষ্ট স্বীকার করে লেখাটি কপি করে আমাকে দেয়। তার এই সহযোগিতা ছাড়া বইটির প্রকাশ হয়ত সম্ভব হ’ত না। বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক জনাব মোস্তাফা কামাল বইটি প্রকাশ করে আমার সুপ্ত ইচ্ছাকে রূপ দিয়েছেন। তার সদিচ্ছার প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকল। অনুবাদের উৎকর্ষ অপকর্ষ সম্পর্কে সহৃদয় পাঠকরা যদি আমাকে তাদের মতামত জানান, তাহলে আগামী সংস্করণে আরে। নির্ভুল ও সুন্দরভাবে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

—মোস্তফা হারুন

.

আমার বন্ধু কৃষণ চন্দর

কৃষণ চন্দর আমার বন্ধু, আমার সহগামী—এই টেকোটাকে আমি দু’চোখে দেখতে পারি না (অবশ্য আমি তার চেয়েও বেশী টেকে)।

যখন তার সাথে আমার আদৌ পরিচয় হয়নি, তার নামটা শুনেই আমার গা জ্বালা করে উঠত। কারণ, যেখানেই তার নাম ছাপা হতে, নামের সাথে ডিগ্রীর লেজুড়টাও বেমালুম জুড়ে দেয়া হতো, কৃষণ চন্দর এম. এ.–ছিঃ, এটা একটা কথা হলো? তুমি বাবা এম. এ. পাস করেছ ( আমি মনে মনে বলি ) তো আমি কি করব? আমার কি আসে যায় তাতে? কালীদাস তে কোনদিন বিদ্যালংকারের লেজুড়টা তার নামের সাথে জুড়ে দেননি। মির্জা গালিব কি আলেম ফাজেল পাস ছিলেন? শেক্সপীয়ার বেচারী তো ম্যাটিক পাসও ছিলেন না। কেউ যদি বলেন ‘আর্মস এ্যাও দি ম্যান’ নাটকটি রচনা করেছেন ‘বানার্ড শ’ বি. এ.– তাহলে লোকেরা হাসবে না? এখন চিত্ত করুন, কৃষণ চন্দর এম. এ-টা কেমন ঠেকছে।

অবশেষে এই হতভাগার সাথে একদিন দিল্লীর পুরনো রেডিও ষ্টেশনে দেখা হয়ে গেল আমার। দেখে মনে হলো আর যা হোক, হতভাগার চেহারাটা কিন্তু মন্দ না। অবশ্য ইতিপূর্বেও আমি কৃষণ চন্দরের ছবি পত্রপত্রিকার দেখেছিলাম। বড় বড় চোখ, চওড়া কপাল, কোঁকড়ানো চুল। কোট-প্যান্ট টাই মিলিয়ে বেশ স্মার্ট দেখাচ্ছিল। এজন্যেই তো কলেজের মেয়ের তার রোমান্টিক গল্প পড়ার জন্যে পাগল। আমি মনে মনে বললাম। আবার মনে মনে বললাম, আসলে ছাপানো ছবিটা ফটোগ্রাফাররা রিটাচ করে নিয়েছিল হয়ত, যাতে রোমান্টিক গল্প লিখিয়ের চেহারাটাও রোমান্টিক হবে, আসলে যা কোনদিন হয় না।

কিন্তু তার সাথে দেখা করে আমার সে ভুল ভাঙল। আমার মেজাজটা এবারে আরো বিগড়ে গেল তার ওপরে। মনে মনে বললাম, হায় খোদা, একটি লোকের চেহারা যেমন রোমান্টিক, তেমনি তার লেখাতেও পর্যাপ্ত যাদু রয়েছে, যা পড়ে ( পাঠকের পরিবর্তে পাঠিকারাই বেশী ) তার প্রেমে পড়ে যায়—এই কি তোমার ইনসাফ?

সেকালে কাশ্মীরী বাজারের একটি ছোট বাংলো হতে দিল্লী রেডিওর অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ছিল তখন বলতে গেলে দিল্লী রেডিও একটা সাহিত্য মজলিশ হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কৃষণ চন্দর, সাদত হাসান মাণ্টো, উপেন্দ্রনাথ আশক –এর তিনজনই তখন কাজ করতে। সেখানে। ‘মেজাজ’ রেডিওর উর্দু ম্যাগাজিন ‘আওয়াজের’ সম্পাদক ছিলেন। ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ও চেরাগ হাসান হাসরতকে তখন সেখানে প্রায়ই সৈনিকের পোশাকে বসে থাকতে দেখা যেতে। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতেই বুঝে নিয়েছিলাম, এদের সবারই মধ্যমণি হলেন কৃষণ চন্দর এম. এ.। মনে হলো কৃষণ চন্দর নিজেই নিজের রোমান্টিক গল্পগুলোর নায়ক। হাত মেলাবার ফাঁকে আমি তার উচ্চতাটাও দেখে নিলাম। আমার মতোই মাঝারি ধরনের লম্বা। রাহুল সংকৃতায়ন বা মতলবী ফরিদাবাদীর ন্যায় দানব প্রকৃতির নয়।

কৃষণ চন্দরের সাথে আমার দেখা হয়েছিল সে আজ পঁচিশ বছরের কথা। কৃষণ চন্দরের শিরদেশের সেই কোঁকড়ানো কেশরাজি আজ নিশ্চিহ্ন। মোট লেন্সের পুরু চশমার কাচের আড়ালের বুদ্ধিদীপ্ত সেই বড় বড় চোখজোড়। পঞ্চাশ বছর যাবৎ জীবনের নানা উত্থান-পতন ও আলো-ছায়ার লুকোচুরি দেখে দেখে আজ ক্লান্ত, বিপর্যস্ত। পরিশ্রম, চিন্তাভাবনা এবং দুঃখ-বেদনার ছায়া এসে তাঁর সেই কমনীয় রোমাণ্টিক মুখকে আচ্ছন্ন করেছে। বয়স এবং অভিজ্ঞতার রেখা ফুটে উঠেছে তার মুখাবয়বে। এতদিন পর আজও কৃষণ চন্দরের নাম শুনে আমার হিংসা হয়। পঞ্চাশোত্তর বয়সেও সে দিব্যি রোমান্টিক গল্পের ইন্দ্রজালে সবাইকে বিমুগ্ধ করছে। তার গল্প-উপন্যাসের বই পড়ে এখনো কলেজের ছাত্রীরা তাকে না দেখেই তার প্রেমে পড়ে যায়। এবং তা হিন্দুস্থানের বাইরেও।

আমি এবং সর্দার জাফরী তখন মস্কোতে ছিলাম। যেখান থেকে কৃষণ চন্দরকে চিঠির ওপর চিঠি এবং টেলিগ্রাম পাঠিয়ে তাকে মস্কো চলে আসতে বললাম। বললাম, তুমি চলে এসে এবং আমাদের বাঁচাও। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের এশীয় ভাষা সমূহের এক কলেজে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। উর্দু সাহিত্যের ব্যাপারে আমরা কিছু আলোকপাত করব, এই উদ্দেশ্য। মিলনায়তনে প্রায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী উন্মুখ হয়ে আমার বক্তৃতা শুনছিল। বস্তৃতা শেষ হতেই আমার প্রতি প্রশ্নের বারিবর্ষণ চলল। প্রশ্নকারীদের মধ্যে মেয়েরাই বেশী। এরা সবাই এখানে উর্দু অথবা হিন্দি পড়াশুনা করছে। এদের বেশীর ভাগ প্রশ্নই ছিল কৃষণ চন্দর সম্পর্কে। এর সবাই নাকি কৃষণ চন্দরের বই পড়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষণ চন্দরের গল্পের বহু সংলাপও তাদের কণ্ঠস্থ। বুঝতে পারলাম, হিন্দুস্থানের কথাশিল্পীদের মধ্যে তার একমাত্র কৃষণ চন্দরেরই ভক্ত এবং তার সম্পর্কেই তাদের হাজার রকমের প্রশ্ন। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাসের নাম কি? তিনি আজকাল কি করছেন? তিনি কি বিয়ে করেছেন? তার ছেলেমেয়ে ক’টা? ইত্যাকার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমরা হিমশিম খেয়ে উঠছিলাম।

এরপর এক পাঠাগার পরিদর্শন করতে গিয়ে জানলাম, যে ক’জন ভারতীয় লেখকের বই রুশ ভাষায় তর্জমা হয়েছে, তন্মধ্যে কৃষণ চন্দরের লেখাই বেশী আলোড়ন সৃষ্টিকারী। রিডিং-রুমে যেয়ে দেখলাম, একটি মেয়ে বসে বসে কৃষণ চন্দরের অনুবাদ পড়ছে। সর্দার জাফরী জিজ্ঞেস করল, কমরেড, আপনি কি এই লেখককে পছন্দ করেন? সম্ভবতঃ মেয়েটা কোন এক কারখানায় কাজ করে। জাফরীর প্রশ্ন শুনেই সে উল্লসিত হয়ে বলল, তা কি আর বলতে!

এরপর দেখা গেল, আরো যে ক’জন মেয়ে চুপচাপ বসে পড়ছিল, তারাও এসে জানালে কৃষণ চন্দর আমাদের প্রিয় লেখক!

সর্দার জাফরী এদেরকে উত্তেজিত করার জন্য বলল, কিন্তু আমরা তে কৃষণ চন্দরকে তেমন পছন্দ করি না । তার লেখায় তেমন কোন উচ্চাঙ্গের চিন্তাধারা নেই। তার সব লেখাই রোমান্টিক ধরনের।

মেয়ের সমস্বরে বলল, “এই জন্যই তো আমরা তাকে পছন্দ করি । তাঁর রোমাটিক লেখায় সমাজের সত্যিকারের চিত্র পাওয়া যায়।” জাফর আলোচনা বিলম্বিত করার জন্যে বলল, ফুল স্বরখ, হ্যায় উপন্যাসে (এক অন্ধ ফুল বিক্রেতাকে কেন্দ্র করি রচিত ) আমি তো মনে করি ভারতীয় মজুরদের সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠেনি।’

এ কথা বলতেই একজন মজুর শ্রেণীর লোক প্রতিবাদ করে বলল, ‘কে বলে এতে মজুরদের চিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি? মজুরদের বাহ্যিক চিত্র এতে না ফুটে থাকলেও তাদের আশা-আকাঙখা এবং অন্তর্জগতের সম্পূর্ণ আবেদন এতে ফুটে উঠেছে।

এ কথার পর আর একটি মেয়ে এগিয়ে এসে কৃষণ চন্দরের অপর একটি উপন্যাসের নাম করল। উপন্যাসের নাম “পুরে চান্দ কি রাত”। উপন্যাসটি সর্বতোভাবে রোমান্টিক। সমাজ চিত্র বা সামাজিক সমস্যার কোন কিছুই এতে আলোচিত হয়নি। এ উপন্যাস ছাপা হবার পর কৃষণ চন্দরকে ভারতীয় কাঠমোল্লা ধরনের কমরেডর রোমান্টিক বুর্জোয়া বলে আখ্যায়িত করেছিল। মেয়েটি বলল, ‘এমন সুন্দর কাহিনী তার হয় না।  এই উপন্যাসে সমাজের সমুদয় সুষম যেন নিংড়ে আন। হয়েছে। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনের গভীর কন্দরে প্রেম ও আবেগ-আকুতির এমন সুন্দর চিত্ৰ আঁকতে পারেন—এমন মরমী শিল্পী বিরল।

কৃষণ চন্দর জীবনকে ভালবাসেন বলে এমন কাহিনী লিখতে পেরেছেন। সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের এমন কাব্যময় প্রকাশ সচরাচর কোন গদ্য লিখিয়ের দ্বারা সম্ভব হয় না। — কৃষণ চন্দরের লেখা পড়ে মনে হয় তিনি একজন কবি। কিন্তু তাকে কেউ কবি বলে না।

শৈশবে কৃষণ চন্দর কিছুকাল কাশ্মীরে ছিলেন। কাশ্মীরের নৈসৰ্গিক প্রাকৃতিক শোভা কৃষণ চন্দরের মনে কাব্যিক অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীরের পটভূমিকায় কৃষণ চন্দর বহু চমৎকার গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। কাশ্মীর থেকে শুধু যে কাব্যিক উপাদান পেয়েছেন, তা নয়—কাশ্মীরের সৌন্দর্য তাঁর ব্যক্তিত্বকে করেছে রোমান্টিক এবং সম্পূর্ণ অভিনব ষ্টাইলে তিনি সাহিত্য রচনায় ব্ৰতী হয়েছেন। শুধুমাত্র কাশ্মীরের সৌন্দর্যের ভিত্তিতেই যে কৃষণ চন্দরের মনে সাহিত্যের উন্মেষ ঘটেছে, তা নয়। একটি দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থ জীবনের তিতিক্ষ তাকে গাল্পিক হিসেবে গড়ে তুলেছে। ছোটবেলায় কয়েক মাস তিনি অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। কারাবাসের মত স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিটি মুহূর্ত তিনি তাঁর চেতনার সাথে সংগ্রাম করেছেন। ‘ওরকান’ গল্পে তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। না স্কুলে যেতে পারেন, না পারেন বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। কতদিন হয়েছে তিনি বই-পুস্তক দেখেননি—এভাবে তিনি তাঁর রুগ্নজীবন-এর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন গল্পটতে। এ সময় তিনি ঘণ্টার পর ঘটা চক্ষু মুদে নিজের সম্পর্কে, মা-বাবার সম্পর্কে, জীবন এবং মৃত্যু সম্পর্কে, জানালার বাইরের কাশ্মীরের শ্যামল উপত্যকা সম্পর্কে, পাহাড়ের চড়াই-উৎরাইতে ভারী বোঝা নিয়ে যেসব নিম্নবিত্ত কাশ্মীরীদের কাফেলা চলেছে, তাদের সম্পর্কে এবং নিজের অসুস্থ জীবনের বিষিয়ে ওঠা মন সম্পর্কে ভেবেছেন। তাঁর এই তিক্ত-বিষাক্ত মন সারা বিশ্বের সকল ব্যথা বেদনার সাথে যেন একাত্ম হয়ে মিশে গিয়েছিল।

কৃষণ চন্দর অসংখ্য গল্প লিখেছেন। কাশ্মীরের মনোলোভা সুষমামণ্ডিত পটভূমিকা থেকে শুরু করে বোম্বাইয়া নোংরা অলিগলি এমন কি মহালক্ষী পুলের পরিবেশকেও তিনি গল্পে চিত্রিত করেছেন। তিনি “এক্সট্র গার্ল’ এর কাহিনী লিখেছেন। কালুভাঙ্গীর কাহিনী ও বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ এবং পাঁচ টাকার স্বাধীনতার কাহিনীও তার কলম থেকে বাদ যায়নি। মদমত্ত তীব্র যৌবনানুভূতির গল্প এবং ‘লালবাগ’-এর মত গল্পও লিখেছেন তিনি, যেখানে মানুষ মানুষের রক্তপাত ঘটিয়েছে। ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেসের’ মত ভয়ানক কাহিনীর পাশাপাশি ‘পুরে চান্দ কি রাত’-এর প্রেমঘন রোমান্টিক কাহিনীও তিনি লিখেছেন। এভাবে সকল শ্রেণী ও সকল পরিবেশের গল্প লেখার পর তিনি “কাহানী কি কাহানী’ নামে গল্পের গল্পও রচনা করেছেন।

কৃষণ চন্দরের চিন্তাশক্তি এমন এক স্বয়ংক্রিয় মেশিন, যার কবলে সকল অভিজ্ঞতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ব্যথা-বেদনা এবং বন্ধু ও শত্রু বেমালুম কাহিনীর বিশেষ উপাদান হিসেবে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে।

কৃষণ চন্দর এত কাহিনী লিখেছেন, তার কাহিনীটা কেউ লেখেননি। তবে এ কথা বলা যায়, কৃষণ চন্দরের সকল কাহিনী ভিন্ন অর্থে তার নিজেরই কাহিনী। প্রত্যেক কাহিনীতে কৃষণ চন্দর নতুনভাবে জন্মলাভ করেছেন। প্রত্যেক কাহিনীতে তিনি জন্ম থেকে জম্মান্তরে বিচরণ করেছেন।

কৃষণ চন্দরের কাহিনী কেউ লেখেননি। তিনি নিজেও লেখেননি। তবে ‘ইয়াদোঁকে চিনার’ গল্পে তাঁর শৈশবকালের কিছু ঘটনা ব্যক্ত করেছিলেন। কৃষণ চন্দর নিজেই যদি তার জীবনীটা লিখে যেতে পারতেন, তাহলে একটা মস্তবড় কীর্তি সম্পাদিত হ’ত ।

আমি জানি, কৃষণ চন্দরের বয়স এখন পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি। (আমাকে গালি না দিয়ে ছাড়বে না যে, কথাটা ফাঁস করে দিলে কেন তুমি?) এ যাবৎ তিনি ৩০টির কাছাকাছি বই লিখেছেন, গল্পও বোধ হয় শ’পাঁচেক লিখেছেন ।

বন্ধুর অভিযোগ করে বলে, কৃষণ বড় বেশী লেখে। আমিও মানি, কৃষণ চন্দরের মত এত বেশী পরিমাণে কেউ লেখে না। কিন্তু আমি তাঁর আর্থিক অসংগতির কথা জানি। নিজের এবং পরিবার পরিজনের অন্ন সংস্থানের জন্যেই তাকে এত বেশী পরিমাণে লিখতে হয়। নামের জন্যে তিনি লেখেন না। পাক-ভারতে তাঁর মত খ্যাতি আর কোন লেখকের নেই। ফিল্ম-ষ্টারদের চাইতেও কৃষণ চন্দরের ভক্তদের চিঠির সংখ্যা অত্যধিক। তার বই-এর উর্দু এবং হিন্দি সংস্করণ প্রতি বছরই ছাপা হয়। সোভিয়েট ইউনিয়নে কৃষণ চন্দর যে শুধুমাত্র একজন খ্যাতনামা ভারতীয় কথাশিল্পী তা নয়, বরং তার ব্যাপক সাহিত্য কর্মের ওপর পি. এইচ. ডি-র প্রবর্তন করা হয়েছে এখন সেখানে। ভারতের এমন কোন উর্দু বা হিন্দি পত্রিকা নেই যাতে কৃষণ চন্দরের লেখা না ছাপা হয়। কৃষণ চন্দরের লেখার জন্যে সকল পত্রিকা লালায়িত থাকে। এত কিছু সত্ত্বেও কৃষণ চন্দর একজন মহান সাহিত্যশিল্পী হতে পারেননি। অন্ততঃ কৃষণ চন্দর নিজে তাই মনে করেন। এতটুকু দম্ভও নেই তার অভিব্যক্তিতে। কৃষণ চন্দর নিজের গল্পগুলোকে নিজের সস্তানের মতে ভালবাসেন। অথচ কেউ কোনদিন তার মুখে নিজের গল্পের সপক্ষে একটি কথাও শোনেনি। আসল কথা হলো, মনের মতো করে গল্প লেখা এখনও তার হয়ে উঠেনি।

কৃষণ চন্দর আমার বন্ধু, আমার সহগামী। নেহাতই সাদাসিধে একজন মানুষ। জীবনে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে। সাংবাদিক ছিলেন, সম্পাদক ছিলেন, কলেজের ছাত্রদেরকে পর্যস্ত পড়িয়েছেন। রেডিওর চাকরী থেকে আরম্ভ করে চিত্রজগৎ পর্যন্ত এসে হান দিয়েছেন। ডায়ালগ লিখেছেন, ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন। অন্য প্রযোজকের জন্যে হিট কাহিনী লিখেছেন। বেকার এবং রিক্ত জীবনের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। প্রেম ও বিয়ে থেকে আরম্ভ করে হৃদয়ের লেন-দেন এবং পরে বিচ্ছেদ পর্যন্ত বাদ দেননি। ঘর ভেঙ্গেছেন এবং আবার ঘর বেঁধেছেন।

কখনো আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিয়েছেন। কখনো বা মোশায়েরাতে বসে সময় নষ্ট করেছেন। কালক্রমে কংগ্রেস পার্টি করেছেন, আবার সুযোগ বুঝে সোস্যালিষ্ট কম্যুনিষ্টদের সাথেও হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু আসলে তিনি কোন পাটিতেই ছিলেন না। কর্ম গোত্র ইত্যাদি বন্ধনের অনেক উর্ধ্বে ছিলেন তিনি। সাম্রাজ্যবাদ ও বিভেদ সৃষ্টির বড় শত্রু ছিলেন তিনি।

আমার এ বন্ধুটি লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন। কিন্তু তার চেয়ে বেশী তিনি খরচ করেছেন। কোন সময়ই তাঁর ধার-কৰ্জ শেষ হতো না। বাড়ন্ত নাকের ডগায় তার সদি সব সময় লেগেই থাকতো। কৃষণ চন্দরের চারপাশে সব সময় দু’ধরনের লোক থাকত। একদল পাওনাদার, অপর দল কর্জের উমেদার। নিজে ধার-কর্জ করলেও অপরকে আবার ধার-কৰ্জ দেবার বেলায় বেশ তৎপর ছিলেন। আপনার পকেটে পয়সা না থাকলে আপনি কৃষণ চন্দরের শরণাপন্ন হতে পারেন। সম্ভবতঃ নিরাশ হবেন না। সাদা শার্ট আর উলেন পাতলুন পরনে থাকে তার। তাঁর পকেটে কোনদিনই দেড়-দুটাকার বেশী থাকে না। কালেভদ্রে কখনো বেশী পয়স হলে ট্যাক্সি ভাড়া করে চারদিকে বেড়াতে শুরু করেন এবং বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদেরকে টাকা দিয়ে আসেন। শেষাবধি সন্ধ্যাবেলা তার পকেটে বাসে চড়বার মতে ক’ট। পয়সা থাকতে মাত্র।

হতে পারে তার বাড়িতে চাল বাড়ন্ত। কিন্তু লিখতে বসলে তার সামনে দামী মস্তবড় রাইটিং প্যাড থাকতেই হবে। আজেবাজে কাগজে তাঁর কলম চলতে নারাজ। ভাবসাব দেখে মনে হবে, নীল রং-এর পুরু কাজে কোন যুবক তার প্রেমিকার কাছে প্রেমপত্র লিখতে বসেছে।

নিয়ম বা সময়ানুবর্তিতার দাস হয়ে কোন সময়ই তিনি কাজ করতে পারেননি। মুড ভাল থাকলে এক বসাতেই হয়ত পুরো উপন্যাস লিখে ফেলেন। আর ভাল না লাগলে দু’তিন মাসের মধ্যেও এক-আধ শব্দ লিখতে মন চায় না তার৷ তাকে নিয়ে আপনি যে-কোন বিষয়ে গল্প জমাতে পারেন। রাজনীতি, সাহিত্য, সিনেমা, নাটক, রোমান্স, স্ক্যাণ্ডেল এবং এমন কি আজেবাজে ঘরোয়। গল্পও।

—খাজা আহমদ আব্বাস

উর্দু নক্‌শ

.

লেখক পরিচিতি

কৃষণ চন্দর জন্মেছিলেন ১৯১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের পশ্চিম পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা জেলার ওয়াজিরাবাদ নামক এক ছোট শহরে। যদিও তিনি এক চিঠিতে তাঁর জন্মস্থান লাহোর বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর পুরো নাম কৃষণ চন্দর শর্মা। জন্মসূত্রে তিনি কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ। তাঁর পিতা ছিলেন কাশ্মীরের ভরতপুর নামক এক ছোট রাজ্যের স্বনামধন্য চিকিৎসক। কৃষণ চন্দরের প্রথম প্রকাশিত গল্প-সংকলন ‘তিলিসম্-এ-খেয়াল’। প্রথম উপন্যাস ‘শিকস্ত’, এটি রচনা শুরু হয় ১৯৪০ সালে। বস্তুত, প্রথম গল্প থেকেই কৃষণ চন্দরের মানবতাবাদী সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর তিনি একে একে অজস্র গল্প ও উপন্যাস লিখে উর্দু এবং হিন্দি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। সারা ভারতেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা ও ভারতীয় বিভিন্ন ভাষা ছাড়াও রুশ, জার্মান, ইংরেজি, চেক, হাঙ্গেরি, পোলিশ, চীন ও জাপানি ভাষায় তাঁর সাহিত্য অনূদিত হয়েছে। উর্দু ও হিন্দি ভাষায় তাঁর ৩০টি ছোটগল্প সংকলন এবং ২০টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। কৃষণ চন্দরের গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘তিলিসম্-এ-খেয়াল’, ‘টুটে তারে’, ‘পুরানে খুদা’, ‘অন্নদাতা’, ‘তিন গুন্ডে’, ‘অজন্তা সে আগে’, ‘নয়ে আফসানে’, ‘মজাহিয়া আফসানে’, ‘মিস নৈনিতাল’, ‘কাশ্মীর কি কহানী’, ‘নয়ে গুলাম’, ‘কিতাব কা কফন’, ‘কালা সুরাজ’, ‘হম্ বহশী হ্যাঁয়’ ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘শিকাস্ত’, ‘যব খেত জাগে’, ‘গদ্দার’, ‘কাগজ কি নাও’, ‘কাগজ কি নাও’, ‘কার্নিওয়ালা’, ‘বাওন পাত্তে’, ‘আয়নে একেলে হ্যাঁয়’, ‘আধা রাস্তা’, ‘তুফান কি কালিয়াঁ’ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিশুদের জন্য রচিত ‘দাদর পুলকে বাচ্চে’, ‘লাল তাজ’, ‘উল্টা দরখৎ’, ‘চিড়িয়া কি আলিফ লায়লা’ শিশু-সাহিত্যের সীমানা ছাড়িয়ে মহৎ সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়া রয়েছে তাঁর শৈশব স্মৃতিচারণমূলক রচনা ‘ইয়াদোঁ কি চিনার’। ‘দরওয়াজা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটিকা সংকলন। তাঁর রম্যরচনা সংকলনগুলির মধ্যে ‘দেওতা আওর কিষাণ’, ‘নজারে’, ‘এক গাদ্ধে কি সর্গুজাশ্ৎ’ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁর রম্যরচনাগুলি একাধারে হাস্য-কৌতুক ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে সমুজ্জ্বল। তীক্ষ্ণ ছুরির ফলার মতো সেগুলি পাঠকের চোখের সামনে ঝলসিয়ে ওঠে।

Book Content

ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – ১
ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – ৫
ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – ১০
ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ – ১৫
লেখক: কৃষণ চন্দর, মোস্তফা হারুনবইয়ের ধরন: অনুবাদ বই, উপন্যাস
গাঞ্জে ফেরেশতে (চলচ্চিত্র ইতিহাসের দলিলগ্রন্থ)

গাঞ্জে ফেরেশতে (চলচ্চিত্র ইতিহাসের দলিলগ্রন্থ) – সাদত হাসান মান্টো

আমি গাধা বলছি - কৃষণ চন্দর

আমি গাধা বলছি – কৃষণ চন্দর

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.