দশ
বস্তি এলাকা। এখানে দিনভর খেটে খাওয়া মানুষের ভীড়ে কুলি, মজুর, বড়লোকদের বাসার চাকর-নফর, ভিক্ষাবৃত্তি যাদের পেশা, রাত দশটার পরে দেহ ব্যবসায় মেতে ওঠে এমন সব মেয়ে এবং আরো অনেক ধরনের সামাজিক জীবদের নিয়ে এই বস্তি এলাকা। এখানকার আলাপ-সালাপের ধরন অন্য রকম। গাল-মন্দ আর তুই-তুকারী এখানে লেগেই থাকে। এখানে তামাকের গন্ধের সাথে মাছের, তাড়ি আর অপরিচ্ছন্ন মানুষের দেহের ভোটকা গন্ধে দম আটকে যাবার মতো পরিবেশ। ভগবান আস্তে আস্তে বলল, ‘মানুষ নরকের চাইতে অসহ্য নিবাস তৈরী করেছে নিজেদের জন্যে, আর তা হলো এই বস্তি।’
আমি বললাম, ‘তাহলে এটাতো মেনে নিচ্ছি যে, আমরাও এমন একটা কিছু তৈরী করতে পারি যা তোমার নরকের চাইতেও অধম।’
‘হাঁ, তা মানতে হয় বৈকি।’
‘তাহলে এটাও তোমাকে মানতে হবে যে, মানুষ যদি আবার এর বিপরীত দিকে ঝুঁকে যায় তাহলে তোমার স্বর্গের চাইতেও চমৎকার একটা কিছু করতে পারে।’
ভগবান আমার কথা শুনে বলল, ‘রাখো ওসব পাকামো। হাতে যা আছে, ওটা শেষ করো।’
এক দালাল অন্য দালালকে বলছিলঃ
‘আমি লোকটাকে দেঁতোকুম্ভীর (বেশ্যা) কাছে নিয়ে গেলাম। কুম্ভীর সে দাঁত আর নেই। সে সম্পূর্ণ নতুন এক পাটি দাঁত লাগিয়েছে! কিন্তু তা সত্বেও মেয়েটিকে তার পছন্দ হলো না। বলল, আমার জাপানী মেয়ে চাই। আমি তাকে এখানে নিয়ে এলাম। রাত তখন বারটা। আর যাবে কোথা শালা। আমি ঘিনুর এখানে এনে পেটপুরে মদ খাইয়ে নিলাম। শালা যখন একেবারে মাতাল হয়ে গেল, আমি তাকে আবার কুম্ভীর কাছেই নিয়ে গেলাম। এবারে সে কুম্ভীকে পরখ করতে পারলো না। বলল, ‘হাঁ, এ রকম জাপানী মেয়েই আমার চাই।’ শালা জাপানী কা বাচ্চা। এক ঘন্টা পূর্বে যে মেয়েকে সে দশ টাকা দিতে রাজী হতো না, এ যাত্রা সে তাকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে গেল। ঘিনুর মদ এখানে আসল, আর সব নকল।’ ঘিনু নিজেও এক পেগ মুখে তুলে নিয়ে এ কথা বলল।
ঘিনুর এক বন্ধু ছিল। নাম তার চিমটা রাম। সেও ঘিনুর মত দুধ বেচতো। সে ঘিনুর ব্যবসা জমে উঠেছে দেখে ঈর্ষা করে বলল, ‘তোর ব্যবসা তো বেশ জমেছে, এরপর আমাকেও ধান্ধায় নামতে হবে।’
ঘিনু তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘না, না, এমন কাজও করো না। দুধের ব্যবসা এটার চাইতে অনেক ভালো। দুধে যত পানি দাও গাহাক কিছুই বলতে সাহস পাবে না। কিন্তু মদে এতটুকু পানি মিশালেও গাহাক টের পেয়ে গেলে আর এ-মুখো হবে না কনদিন।’
‘ঘিনু জিন্দাবাদ!’ কে একজন চাকর পাশ থেকে বলে উঠল।
‘সবই ভগবানের ইচ্ছা।’ ঘিনু শিবের মূর্তির দিকে তাকিয়ে বলল।
ঘিনু সত্যি বড় ধর্মপ্রাণ লোক। সে তার বস্তির ঝুপড়ির চারদিকই দেব-দেবীর মূর্তি দিয়ে সাজিয়েছে।
কে একজন মজুর ফোড়ন কেটে বলল, ‘ভগবান বলতে আছে নাকি কিছু? সামনের ওই মিলটাতে আগুন লেগে গেল। মিল এখনও চালু হয়নি। দু’মাস ধরে বেকার অপেক্ষা করছিলাম। আমার বউতো গত বিশ বছর যাবত রোজ মন্দিরে আসা-যাওয়া করে। অবশেষে আমাদের ভাগ্যে কি এ-ই ছিল?’
ঘিনু রেগে বলল, ‘ভগবানকে উদ্দেশ্য করে কোন গালাগাল দেবে না বলছি। আমার এখনাএ যদি মদ খেতে চাওতো গালি চলবে না।’
মজুর তেড়ে উঠে বলল, ‘এরপর তোমার এখানে আর আসছি থোড়াই। আমার মনের খবর তুমি কি জানো! আমি ভগবানকে এসব শোনাচ্ছি। ভগবান আমাদের মিলই যদি চলতে না দিলো তো আমাদের সৃষ্টি করে কেন পাঠাল এই ধরা ধামে?
বলেই সে রাগে গড় গড় করতে করতে চলে গেল। কিন্তু সে তার কথায় একটা মোক্ষম প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে গেল চারদিকে। অন্যান্য লোকরাও বলে উঠলো, ‘বেচারা তো সত্যি কথা বলেছে। আমাদের এসব কারচুপি আর কদ্দিন চলবে?’
আর একজন বলে উঠল, ‘সিন্ধি শেঠ আমাকে এক মাসের নোটিশ দিয়েছে। বাড়ি খালি করে দাও। বাড়ি কিভাবে খালি করব? কোথায় যেয়ে উঠব যে, ঘর খালি করব।
অন্য একজন বলে উঠল, ‘সবাই বলে তুমি চোর। বান্দ্রার বাজারে টমাটো আট আনায় পাওয়া যায় আর তুমি কিনা হাকাচ্ছ বার আনা। অথচ আমি তোমাদের বলতে পারি, যদি এক শব্দ মিথ্যা বলি তবে নিজের মাংস খাই! আমি এক পয়সা চুরি করি না, অথচ রোজ আমাকে চোর শব্দ শুনতে হয়। সত্যি ভগবানের হাতে কোন ইনসাফ নেই।’
অন্য আরেকটি সংলাপঃ
‘আমার ছেলের অসুখ ছিল। শাহ বরকত পীরের দোয়ায় ভাল হয়ে গেল। সত্যি ভগবান বড় মহান।’
অন্য একজনের কথাঃ
‘সত্যি বড় মহান সে, সত্যি বড়……’
‘সত্যি বড় নিষ্ঠুর সে…সত্যি…।’
এগার
এভাবে দুই মাতালের মাঝে বাক-বিতন্ডা চলছিল। দু’জনই বেশ গাট্টাগোট্টা জওয়ান। ভগবানের গুণ কীর্তন করার চাইতে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনই যেন তাদের বাক-বিতন্ডার আসল উদ্দেশ্য।
‘আমি বলছি তার চাইতে কেউ বড় নেই এ সংসারে।
‘আমি বলছি তার চাইতে মহান কেউ নেই।
‘বড়।
‘না, মহান।’ বলেই দু’জন সামনা-সামনি উঠে দাঁড়াল এবং দু’জন দু’জনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে হাত-পা গুটাচ্ছিল, এমন সময় ঘিনু এসে দু’জনের মাঝে দাঁড়াল।
‘এই হাতাহাতি করবি না বলছি। অন্য একজনকে ডেকে এর ফয়সালা করতে হবে।’
‘ঠিক আছে, তাই হোক।’
দু’জনই সমস্বরে বলে উঠল। তারপর দু’জনের দৃষ্টি নিপতিত হলো আমাদের দু’জনের উপর। আমাদের টেবিলটা কাছেই ছিল। তারা ভগবানের বার বার আপাদমস্তক দেখছিল। কারণ, আমার চাইতে ভগবানের চেহারা অপেক্ষাকৃত ছিমছাম এবং নিষ্পাপ ধরনের। কি মনে করে তারা দু’জন আমাকে রেখে ভগবানের কাছে এসে বসল।
‘তুমিই বলো, এ লোকটি বলছে ভগবান নাকি মহান, আমি বলছি নিষ্ঠুর। তুমিই বলো আমাদের মধ্যে কার কথা ঠিক?’
ভগবান বলল, ‘কারো কথাই ঠিক নয়।’
‘তা কেমন করে?’
‘যেহেতু ভগবানের কোন অস্তিত্ব নেই।’
‘একি বলছ? আরে শুনছ, শালা বলছে কিনা ভগবান নেই।’
‘রাম রাম!’
‘শালা নাস্তিক।’
‘কি বলছিলে, ভগবান নেই?’ বলেই ঘিনু ভগবানের কলার চেপে ধরল। ‘যার কৃপায় বেঁচে বর্তে আছ, যার খাচ্ছ তাকেই কিনা গালি দিচ্ছ। তোমার সাহস কি, আমাদের ভগবানকে অস্বীকার করছ।’ বলেই ঘিনু ভগবানের মুখে এক চড় কষিয়া দিল।
আমি ভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠলাম, দৌড়ে এসে বললাম, ‘আরে রাখো, একি করছ? তোমরা জান না, কার সাথে কি করছ? তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও…..’
‘কেন ছাড়ব, শালা কিনা আমাদের ভগবানকে অস্বীকার করছে। শালার বুকে চাকু বসিয়ে দোব, তবে ছাড়ব। বলেই তারা ভগবানকে আর এক দফা ধোলাই করল।
কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের হুইসেল শোনা গেল। লোকেরা দিক-বিদিক ছুটতে লাগল। আমি ভগবানকে টেনে হিঁচড়ে ঝুপড়ির ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে এলাম এবং দৌড়াতে দৌড়াতে মহমের কাছে চলে এলাম। ভগবানের মুখে এবং গায়ে নানা ক্ষত দেখা গেল। দু’এক জায়গা থেকে রক্তও ঝরছিল। আমি পানি এনে তার ক্ষতগুলো ধুতে লাগলাম।
এখান থেকে ঘিনুর আড্ডা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছিল। পুলিশের লোকেরা ঘিনু এবং অন্যান্য ক’জন লোককে ধরে নিয়ে গেলো। তারপর চারদিকে নিথর নীরবতা।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলে আমরা পায় পায় বাসার দিকে ফিরে যাচ্ছিলাম। পথ চলতে চলতে আমি ভগবানকে বললাম, ‘তোমার আবার মাথায় কি পাগলামী চেপেছিল? নিজের অস্তিত্ব অস্বীকার করে মারটা খেলে। তুমি জান না এটা হিন্দুস্থান? এখানে প্রতি গলিতে মসজিদ, মন্দির, গুরুদ্বার, গীর্জা রয়েছে। আমরা ভগবানের বড় উপাসক। আমরা ভগবানের জন্যে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারি।
ভগবান বলল, ‘মিথ্যা কথা, নিজের প্রাণ দিতে পার না। অবশ্য ভগবানের নামে অপরের প্রাণ সংহার করতে পারো। তুমি মনে করছ আমার দেহের এ ক্ষত কত যন্ত্রণা দিচ্ছে। আসলে এগুলো তোমাদের ক্ষত। কানপুর থেকে কোলকাতা আর জম্মু থেকে জব্বলপুর পর্যন্ত ধর্মকর্মের নামে এখানে যা কিছু হচ্ছে, সবই আমার নখ-দর্পণে রয়েছে। তোমরা কোনদিন হিসেব করে দেখেছ আমার জন্যে, শুধু আমার জন্যে তোমরা কত ক্ষতের সৃষ্টি করেছ?’
বার
সাত সকালে আমার চোখ খুলতেই দেখি ভগবান লাপাত্তা। আমি ভাবলাম, রাতের ঘটনা থেকে সে মনক্ষুন্ন হয়ে চলে গেছে। কিন্তু তাই বলে একটু বলে গেলে এমন ক্ষতি ছিল কি? আমি কি আর তার সাথে স্বর্গে যাবার বায়না ধরতাম? আবার মনে হলো, হয়ত বা ঘুম থেকে উঠেই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছে। দেখি, সূর্য উঠে নিক, ততক্ষণ অপেক্ষা করি। রাতভর আমার তেমন ঘুম হয়নি। এজন্যে পাশ বদল করে আবার শুয়ে পড়লাম। আমি পাশ ফিরে শুঁতে শুঁতে দেখলাম দরজা ভেজানো আছে। এমন কি দরজার অর্গলও খোলা নেই। তবুও এতে আমি তেমন বিস্মিত হলাম না। কেননা, রুদ্ধদ্বার কক্ষ থেকে ভগবানের পক্ষে হাওয়া হয়ে যাওয়াই তার অনেকটা অভ্যেস বলা যেতে পারে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ভগবানের ভূমিকা অনেকটা এ ধরনেরই পরিলক্ষিত হয়েছে। মানুষকে বিপদে ফেলে ভগবান হঠাৎ এভাবে পালিয়ে যেতে অভ্যস্ত। এজন্যে আমি এ ব্যাপারে তেমনি বিস্ময় প্রকাশ না করে ভালো মানুষটির মতো আবার শুয়ে পড়লাম। এরপর দ্বিতীয়বার যখন জাগলাম, প্রথমে দৃষ্টি পড়ল পাশের জায়গাটিতে, যেখানে ভগবান শুয়েছিল। এখন বেড়ার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তীর্যক আলো এসে লুটিয়ে পড়েছে সেখানে সোনালী আখর রচনা করে।
চারিদিকে আরেকবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিলাম। এবার আমি নিশ্চিত হলাম যে, ভগবান সত্যি সত্যিই চলে গেছে। ভগবান চলে গেছে এ কথা মনে হতে আমি চারিদিকে সন্দেহের চোখে নজর বুলালাম, সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে তো? অবশ্য ভগবান সম্পর্কে আমার এ ধরনের চিন্তা ভাবনা একটা বিরাট রকমের ধৃষ্টতারই শামিল। তাছাড়া আমার কামরার ভেতরে উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু ছিলও না। যা ছিল হাতে গোণা ক’টা বস্ত্র। তবু এই বোম্বে শহরে কনফিডেন্স ট্রিক করার মতো লোকের তো কোন অভাব নেই। এমনও হতে পারে কোন সত্যিকার চোর-বদমাশ ভগবানের রূপ ধরে আমাকে বোকা বানিয়ে গেল। তাই আমি আরেকবার সবকিছু তদন্ত করে দেখলাম। একটা ছড়ি ছাড়া আর সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে মনে হলো।
এরপর প্রথমতঃ আমি একটা সান্তনা পেলাম, কিন্তু পরমুহুর্তে লজ্জিত হলাম। জানি না ভগবানের এমন কি প্রয়োজন পড়লো যে, আমার ছড়িটা তুলে নিয়ে চলে গেল।
এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে আমি যখন দ্বিতীয়বার বিছানার দিকে তাকালাম মনে হলো, কে যেন সবেমাত্র আবার পাশ ফিরে শু’লো। চেয়ে দেখলাম, ভগবান শুয়ে আছে। ছড়িটিও যথাস্থানে আবার রয়েছে। দরজার অর্গল যেমন ছিল তেমনি রয়েছে। ভগবানের এ ধরনের দুষ্টুমিতে আমার ভীষণ রাগ হলো।
আমি তার গা ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে বললাম, ‘কোথায় গিয়েছিলে মরতে?’
বলল, ‘মিস আশারাণীর কাছে গিয়েছিলাম।’
আমি বললাম, ‘কোন্ আশারাণী? বিখ্যাত চিত্র নায়িকা আশারাণীর কথা বলছ?’
‘হ্যাঁ।’
আমি বললাম, ‘তোমার কাছে তো আশারাণীর কোন কাজ থাকার কথা নয়। ভগবান তো তাকে সবকিছুই দিয়ে রেখেছে। ধন, দৌলত, যশ, খ্যাতি –কোনটারই তো তার অভাব নেই। সর্বোপরি একজন বোকা স্বামীও রয়েছে তার। এ জগতে একজন মেয়ে যা চায় তার সবই রয়েছে তার কাছে। তুমি কি আশারাণীর বাড়ির ভেতরকার সুইমিং পুল দেখেছো?’
ভগবান মুচকি হেসে বলল, ‘সেই সুইমিং পুল থেকে স্নান সেরে সবে ফিরলাম। জানো, আমাদের স্বর্গে অমৃতের সরোবর রয়েছে। সেই সরোবর পদ্মফুল সুশোভিত। কিন্তু এমন সুগন্ধি স্বচ্ছ পানির সরোবর আর হয় না। এর চারদিকে শ্বেতমর্মরে বাঁধানো সবকিছু। বেশ জমেছিল……।’
আমি অধীর হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘কিন্তু তুমি কি মনে কর সে এত বোকা যে তোমার প্রেমে পড়বে?’
‘আমার প্রেমে পরবে এটা তেমন বিচিত্র কি? আমি তো অনেককাল থেকে তাকে জানি। তুমি জান না, সে আমাকে কত ভালবাসে। সে তার শয্যাকক্ষে স্বর্ণনির্মিত কৃষ্ণমূর্তি স্থাপন করেছে। রোজ সকাল-সন্ধ্যা মীরা বাঈয়ের পোশাক পরে এর সামনে নৃত্য করে। নৃত্যের প্রতি তালে তালে সে আমাকে মুগ্ধ করতে চায়। প্রতি কথায় সে বলে, তুমি একটিবারের জন্যেও আমাকে যদি দর্শন দাও তাহলে আমি তোমার চরণ ধুয়ে প্রতিনিয়ত পানি পান করব। আর আমি তোমার উদ্দেশ্যে এমন ভজন পরিবেশন করব যে, মীরা বাঈর কথাও তুমি ভুলে যাবে।
আমি বললাম, ‘বজ্জাতি, সব বজ্জাতি।’
‘না, এতে কোন কৃত্রিমতা নেই। ওর অন্তঃকরণটা বেশ ভালো। আমি অনেক দিন ধরে ওকে দেখে আসছি। আমি কাউকে দর্শন দিলে তো এভাবেই দিয়ে থাকি। কাউকে কষ্টিপাথরে যাচাই না করে আমি দর্শন দিই না। আজ সকালে পূজার সময় সে বুকে ছোরা ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠল –ভগবান তুমি যদি এই মুহুর্তে আমাকে দর্শন না দাও, তাহলে এই ছোরা আমার বুকে বসিয়ে দোব। বাধ্য হয়ে তক্ষুণি আমাকে সেখানে হাজির হতে হলো।
আমি বললাম, ‘যত্ন-আত্তি কেমন করল সে?’
‘সে গঙ্গা পানি দিয়ে আমার চরণ ধুয়ে দিলো, রেশমী বসন পরতে দিলো আর খেতে দিলো সব চাইতে সুস্বাদু খাবার। সে প্রাণমন ঢেলে আমাকে মধুর গান শোনালো। সে গানে আমি বিভোর হয়ে গেলাম।
আমি বললাম, ‘শেষাবধি ফিল্মষ্টারও তোমাকে ভজিয়ে ফেললো!’
‘না, না, এমন কোন কথা নেই। তবে ওর অন্তঃকরণটা একেবারে সরল, আমার জন্যে সে ব্যাকুল। সে তো আমাকে আসতেই দিতে চাইছিল না।’
বললাম, ‘থেকে গেলেই পারতে তার কাছে।’
ভগবান বলল, ‘তোমার ছড়িটা যেহেতু নিয়ে গিয়েছিলাম।’
তের
আমি বললাম, ‘গিয়েছিলে তো ভালো, আমার ছড়িটা কেন নিয়ে গিয়েছিলে?’
ভগবান বলল, ‘যেহেতু ওর বাড়ির সামনে দুটো কুকুর বাঁধা থাকে। কুকুর দুটো ভীষণ হিংস্র। আমার বড্ড ভয় লাগে, যদি কামড়ে দেয়। এজন্যে তোমার ছড়িটা হাতে করে নিয়েছিলাম। জানতো, বোম্বে শহরে কোন ভরসা নেই। এ ধরনের কুকুর ভগবানকেও তোয়াক্কা করে না।’
আমি বললাম, ‘তুমি এত সকালে বোম্বের দেখেছ কি? তুমি সহজ ধরনের লোক। ভগবানের দোহাই, এসব ধান্ধায় পড়ো না বলছি। এখানে কত হোমরা-চোমড়া এলো, একদিন সবকিছু খুইয়ে তাদেরকে যেতে হলো।
ভগবান দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলল, ‘না, না, তাকে তুমি চেন না। সে এ ধরনের মেয়ে নয়। তুমি কি মনে করো আমি তার অন্তরের খবর রাখি না?’
আমি কথা কেটে নিয়ে বললাম, ‘রাখো তোমার ওসব। আজ কোথায় কোথায় যাবার প্রোগ্রাম আছে, তা ঠিক করেছ? চলো আজ জুহুর দিকে যাব।
ভগবান চমকে উঠে বলল, ‘সে তো আমাকে জুহু যাবার জন্যেই বলেছে।
‘কে বলেছে?’
‘আশারাণী।
আমি একটু রুষ্ট হয়ে বললাম, ‘তাহলে আমার সাথে তোমার পাল্লা দিয়ে কোন কাজ নেই। তুমি তার কাছেই যাও।
ভগবান আমার হাত চেপে ধরে বলল, ‘রাগ করেছ? তুমি আশারাণীকে মোটেই চেন না। আমার প্রতি তার যে ভালবাসা তা সম্পূর্ণ অকৃত্রিম এবং নিঃস্বার্থ।
আমি জবাবে কিছু বললাম না। ভগবানের মুঠো থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলাম এবং একটু লজ্জিত হয়ে বসে পড়লাম। এরপর আমি পেছন ফিরে আবার শুয়ে পড়লাম। চোখে আবার একটু তন্দ্রা এলো। হঠাৎ একটু মৃদু শব্দ শুনে জেগে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, ভগবান ছড়ি হাতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। বলল, ‘আমি তোমার ছড়িটা আবার নিয়ে যাচ্ছি। আজ সেকেন্ড শোতে সে আমাকে তার নিজের অভিনত একটি ছবি দেখাবে। আমি কাল ফিরব।
আমি ‘উহু’ বলে বক্রোক্তি করে ফিরে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে ভগবান আমার জন্যে মিষ্টি, নারকেল, কুল এবং নানা ফল নিয়ে এসে হাজির হলো। মুচকি হেসে বলল, ‘এগুলো সব আশারাণী দিয়েছে, নাও তোমাকে দিয়ে দিলাম সব। কিন্তু তোমাকে একটা কথা বলি, আশারাণীকে চিনতে তুমি বড্ড ভুল করছ। সে আমাকে সত্যি সত্যি ভালাবাসে, মীরা বাঈর চেয়েও বেশী। এক মুহুর্তের জন্যেও সে আমাকে ভুলতে পারে না। সারাক্ষণ আমার চরণে মাথা রেখে মিনতি জানায়। সত্যি বলতে কি, এখন আমিও তার প্রতি অনেকটা ঝুঁকে পড়েছি। এখন আমিও একটু একটু প্রেম অনুভব করছি মনে হয়।
আমি চোখে ছানাবড়া করে বললাম, ‘কি বললে, তুমিও প্রেমে পড়েছ? হায়, শালী শেষকালে তোমার মতো নিরীহ লোকটাকে ফেঁসে ফেলল! আরে ভগবান, তুমি এসব কি বলছ, তুমি ফিল্মষ্টার আশারাণীর প্রেমে পড়েছ? তুমি না সকল প্রেম, অনুরাগ আর ভাবাবেগের ঊর্ধ্বে?’
ভগবান বলল, ‘তুমি কখনো তার চেহারা দেখেছ? এমন নিষ্পাপ চেহারা আর হয় না। গতকালের ফিল্ম-ফেয়ারে তার ছবি রয়েছে, দেখে নিও।
আমি বললাম, ‘দেখেছি, বড্ড খাসা চেহারা।
ভগবান তার রূপ আরো ব্যাখ্যা করতে করতে বলল, ‘তার হাতের আঙ্গুলগুলোই বা কত সুন্দর। মনে হয় সৃষ্টি জগতের প্রথম প্রয়াস এই আঙ্গুলগুলো।
ভগবান এমন করে বলছিলো যেন আশারাণীকে সে চাক্ষুস সামনে দেখতে পাচ্ছিল। তন্ময় হয়ে আবার বলছিল, ‘যখন সে আমার প্রেমে বিভোর হয়ে হাতে খরতাল নিয়ে নাচতে থাকে, তখন মনে হয় সারা বিশ্ব চরাচরে মায়াযাদুর ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে পড়েছে।
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘সর্বনাশ!’
ভগবান আবার বলল, ‘আজ রাতে সে আমাকে শাকিলা বানু ভুপালীর কাওয়ালী শোনাবে।
‘একেবারে গোল্লায় গেলে দেখছি। তুমি স্বর্গ থেকে কি মনে করে এ ধরাধামে এসেছ? তুমি না এখানকার শিশু সমাজকে দেখবে?’
‘চুলোয় যাক তোমার শিশু সমাজ!’
‘তোমার সিদ্ধান্ত তাহলে পাল্টে নিচ্ছ? একটুও ভয় লাগছে না তোমার?’
‘জব পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া?’ অতঃপর ভগবান গুনগুন করে কলিটি আওড়াচ্ছিল। আমি ছটফট করতে করতে ঘরের বাইরে চলে গেলাম।
চৌদ্দ
আমি ভগবানের গা ঝাঁকিয়ে ডেকে তুললাম। সে চোখ রগড়াতে রগড়াতে উঠে বসলো। আমি বললাম, ‘কি হলো? আশারাণী কি ঘর থেকে বের করে দিয়েছে?’
ভগবান হাত কচলাতে কচলাতে বলল, ‘আরে না ভাই, ব্যাপারটা অন্য রকম। যা ভেবেছিলাম তা নয়।
‘অন্য রকম মানে? তা হলে আশারাণীর প্রেমের ঘোর কেটে গেছে নাকি?’
ভগবান বলল, ‘না, ব্যাপারটা হয়েছিল কি, আশারাণী গত রাতে নাচতে নাচতে আজানু নত হয়ে আমার চরণে দুমড়ে পড়ে কেঁদে কেঁদে বলল, ‘ভগবান আমার উপর ভীষণ বিপদ এসে পড়েছে, ভগবান আমাকে এই সংকট থেকে বাঁচাও।’
আমি বললাম, ‘সংকটটা কি ছিল তার? নিশ্চয়ই সে তার বোকার হদ্দ স্বামীটাকে তালাক দিতে চাইছিল, না?’
ভগবান বলল, ‘না, ওসব কিছু না। সে সংকট হলো ইনকাম ট্যাক্স।
চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ। ভগবান চুপচাপ বসে আক্ষেপে তার হাত কচলাচ্ছিল। আমি নীরবতা ভঙ্গ করে বললাম, ‘শেষাবধি তোমার বেলাতেও নিঃস্বার্থ ভালবাসাটুকু হলো না। তোমার ভালবাসাতেও স্বার্থ?’ ভগবান জবাবে কিছুই বলল না। আমি আবার বললাম, ‘এ জগতে যে কেউ তোমাকে ভালবাসে, তাতে কিছু না কিছু স্বার্থ নিহিত থাকে। যার যে বস্তুর অভাব, সেটুকু পাবার জন্যে তোমার কাছে ধর্ণা দেয়। পুত্র, কন্যা, বাড়ি, স্বামী, অন্নবস্ত্র……আর যার কাছে এর সবই আছে, এ জগতেই সে নিজের জন্যে স্বর্গ তৈরী করে এবং পরকালের স্বর্গে নিজের জায়গা করে নেবার জন্যে তোমার কাছে আসে। লক্ষ লক্ষ টাকার কালোবাজারী করে একটা মসজিদ বা মন্দির বানিয়ে তোমাকে খুশি করা ঘুষ নয় তো কি? এ ধরনের লোকদের কাছে তুমি একজন আই. সি. এস. বা মিনিষ্টারের চাইতে বেশী কিছু নও। এরা তোমাকে পূজা করে থোড়াই, তারা নিজেদের ইস্পিত বস্তুর পূজা করে। নিজেদের ভয়ের পূজা করে।
আমি রাগে ক্ষোভে আরো অনেক কিছু বলতাম। কিন্তু ভগবানের হতমান চেহারা দেখে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। আমি টেনে তাকে বুকের সাথে চেপে ধরলাম। বুকে চেপে ধরতেই ভগবান ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। তাঁর কান্নায় এমন অভিমান প্রকাশ পাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আজই ধরিত্রী দ্বিধা হয়ে যাবে।
পরদিন থেকে আমরা আমাদের পুরনো কাজে ফিরে গেলাম। পকেটের মালপানিও ফুরিয়ে এসেছিল। অবশ্য এ ক্ষেত্রে স্বর্গ থেকে প্রচুর ফরেন এক্সচেঞ্জ আনিয়ে নেবার কোন প্রশ্ন উঠে না। আমরা বেশ বদলে শিশুর রূপ ধারণ করলাম। অবশ্য এবারে একটু বড়সড় শিশুর রূপ ধরলাম এবং চার্চগেট ষ্টেশনের কাছে কোন কাজ পাবার আশায় ঘুরাফিরা করতে লাগলাম। এখানে আমাদের মতো ছেলেদের একটা গ্যাং ছিল। এরা ট্রেন থেকে নেমে আসা ভদ্রলোকদের জন্যে টেক্সি যোগাড় করে দিত। টেক্সি খুঁজতে খুঁজতে কখনো এরা ‘ইয়োস সিনেমা’ বা ‘এম্বেসেডর হোটেল’ অবধি চলে যেতো। যেখানেই খালি টেক্সি পেতো, আরোহী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিতো, এজন্যে এরা দু’আনা এক আনা পেতো। অবশ্য কোন খদ্দের মাত্র এক আনা দিলে তা নিয়ে লড়াই ঝগড়া বেঁধে যেতো। এদের দলের ছেলেরা মিলে তখন নিরীহ খদ্দেরকে নাজেহাল করে ছাড়তো। আমরা দু’জন এদের গ্যাং-এ শামিল হবার জন্যে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনক্রমেই এরা আমাদেরকে গ্রহণ করতে চাইলো না। এদের দলের লিডার আমাদেরকে বলল, ‘আমরা নিজেরাই দিনভর ছুটাছুটি করে দিনের শেষে আট-দশ আনার বেশী উপার্জন করতে পারি না। এতে আমাদের সারা দিনের নাস্তা এবং এক বেলার খাবারের সংস্থান হয়। এ তল্লাটে টেক্সি কম অথচ দলে ছেলের সংখ্যা বেশী। আজকাল লোকেরা আমাদের উপেক্ষা করে নিজেরাই টেক্সি খোঁজ করে বেড়ায়। এমতাবস্থায় দলে যদি আরো দু’জন শামিল হও, আমাদের বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
এখান থেকে নিরাশ হয়ে আমরা সামনের ফুটপাথের এক বুট পালিশ ছোকড়ার কাছে চলে এলাম। ছেলেটির পরনে একটা রঙিন সার্ট ছিল। কোমরে বেল্ট আর পরনের কালো পেন্টটা হাঁটু অবধি উঠানো ছিল। পালিশের কৌটা সাজানো রয়েছে। আমাদের মনে হলো, এ কাজটি আমাদের জন্যে মন্দ হবে না।
বুট পালিশওয়ালা ছেলেটি যে দাদার কাজ করতো, আমরা তার কাছে চলে গেলাম। আমাদের করুণ কাহিনী শুনে সে বলল, ‘আমি তোমাদেরকে কাজ দিতে পারি, তবে শর্ত হলো, সকাল আটটায় এখানে এসে হাজির হতে হবে এবং রাত বারটা পর্যন্ত এখানে থাকতে হবে।
ভগবান চোখ কপালে তুলে বলল, ‘তা কেন? সরকারী আইনের চেয়ে আট ঘন্টা বেশী তুমি আমাদেরকে খাটাতে পারবে না।
সে বলল, ‘তাহলে তোমরা সরকারের কাছে যাও, আমার কাছে কেন এসেছ?’
ভগবান বলল, ‘এ জগত ভগবানের, সরকার এ রাষ্ট্র চালায়। সরকার এই ফুটপাথ তো কাউকে ইজারা দেয়নি। আমরা দু’টি ক্ষুধার্ত ছেলে, পালিশের বাক্স নিয়ে এখানে বসে যাবো। যা কিছু কামাবো, তা দিয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তি করব।
লোকটি বলল, ‘এমন স্বাধীন ধান্ধা বোম্বেতে চলে না মিষ্টার। এ ফুটপাথকে আমরা পয়সা দিই, সাপ্তাহিক নজরানা দিই। তুমি আমার জায়গায় বেআইনী বসলে লালঘরে যেতে হবে। মনে রেখ, এটা বোম্বাই শহর। এখানে কাজ করতে হলে আমাদের অধীনে কাজ করতে হবে। আমি তোমাদেরকে দু’টো কালো প্যান্ট, দু’টো বুশ সার্ট, দু’বেলা খাবার, দু’বেলা-নাস্তা দেব। পালিশের বাক্স, কৌটা, সরঞ্জাম সব আমি দেব। তোমরা শুধু দিনের শেষে এক টাকা নিয়ে কেটে পড়বে। বাকী কামাই সব আমার। দিনের শেষে যখন রাত হয়ে আসবে, তখন মেয়ে সাপ্লাইর কাজ শুরু হবে। সে কাজও তোমাদের করতে হবে।
ভগবান চোখ ছানাবড়া করে বলল, ‘তোমরা ছেলে-ছোকড়াদের দ্বারা মেয়ে সাপ্লাইর কাজও করাও?’
লোকটি মৃদু হেসে বলল, ‘মিষ্টার, তুমি কোন শহর থেকে এসেছে? এমন আজগুবি প্রশ্ন করতে তো আর কাউকে কখনো শুনিনি। এই বোম্বাই শহরে যে আকাল চলছে। ছেলেরা যদি নিজেরা এভাবে কামাই না করতে অভ্যস্ত হয়, তাহালে তো না খেয়েই মারা যাবে। এজন্যে ছেলেদেরকে কাজ করতে হয়। খবরের কাগজ বিক্রি থেকে শুরু করে মেয়ে সাপ্লাই পর্যন্ত সব কাজই তাদেরকে করতে হয়। এক কাজের জন্যে আমার কাছে দশ ছেলে এসে হাজির হয়। দশটি ছেলেকে যদি পুলিশে নিয়ে যায় তো আরো বিশটি এসে জোটে। তোমরা জান না, এই শহরে বেকারত্ব কতো বেশী। জানি না, তোমরা কোন্ মুলুক থেকে এসেছ, আর মেয়ে সাপ্লাই’র কাজটা এমন কি-ই বা খারাপ কাজ। তোমাদের মতো ছেলেরা যদি এ কাজ না করে তো অন্যেরা করবে। তবে কম বয়সী ছেলেদের বেলায় সুবিধে হলো যে, তোমাদেরকে কেউ সন্দেহ করবে না। কোন খদ্দেরের বাড়ীতে গেলে, কোন মেয়েকে সাথে নিয়ে চললে, কোন বাড়ীতে ঢুকে পড়লে –কোন কিছুতেই পুলিশ তোমাদেরকে সন্দেহ করতে পারবে না। এ কারণে ছেলেদের জন্যে এ কাজটি বড় উত্তম। একদম সেফ। পয়সাও বেশ ভাল। নইলে দিনভর বুট পালিশ করে কি-ই বা এমন পাওয়া যায়। মাত্র এক টাকা। আমার ছেলেপেলেগুলো তো রোজ এক টাকার সিনেমাই দেখে। বাকী খাই-খরচার জন্যে পয়সা কোত্থেকে আসে? এজন্যে এরা শখ করেই রাতের বেলা এ ধান্ধা করে থাকে। এ কাজে তারা কখনো পাঁচ টাকা পর্যন্ত লাভবান হয়। তোমাদের দু’জনকে আমার বেশ ভদ্র গোছের ছেলে বলে মনে হয়। বিশেষ করে এই ছেলেটিকে (ভগবানকে দেখিয়ে) তো খুবই সহজ সরল মনে হয়। এ ধরনের ছেলেরাই এ কাজ ভালো পারে। দশ বছর তদন্ত করেও পুলিশ এদেরকে সন্দেহ করতে পারে না। বলো, এ কাজে আসবে?’
আমি ভগবানের দিকে তাকালাম, ভগবানও আমার দিকে তাকালো। শেষে ভগবান আমার হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘চলো এখান থেকে কেটে পড়া যাক।’
আমি বললাম, ‘আমার বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে। দাদা লোকটা যা বললো চলো না তা-ই মেনে নিই।
ভগবান প্রায় চীৎকার করে বলল, ‘না, না, না, তা হয় না। তুমি জলদি চলো!’