1 of 2

মায়েদের জন্য ভালোবাসা

বহু বছর আগে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম তখন আমার ছেলেমেয়েরা খুব ছোট। তারা তাদের স্কুলটাকে খুব পছন্দ করত। তার কারণ সেখানে লেখাপড়া ছাড়া আরও অনেক কিছু হতো। যে রকম মে মাস এলেই স্কুলের সব বাচ্চা খুব উৎসাহ নিয়ে তাদের মায়েদের জন্য কোনো একটা উপহার তৈরি করা শুরু করত। মে মাসের ১১ তারিখ ‘মা দিবস’। সেদিন বাচ্চারা রীতিমতো হইচই করে মায়ের হাতে সেটা তুলে দিত! (বাবা দিবস মনে হয় ষড়যন্ত্র করে জুন মাসে রাখা হয়েছে−তত দিনে স্কুল ছুটি হয়ে যায় বাবার জন্য আর উপহার তৈরি হয় না!)

ব্যাপারটাতে খানিকটা ছেলেমানুষি আছে, কিন্তু আমার মনে হয়, এই ছেলেমানুষিটুকু খুবই দরকার। ছাগল বা গরুর বাচ্চা জন্ন হওয়ার পরই তিড়িং-বিড়িং করে লাফাতে থাকে, কিন্তু মানুষের বাচ্চার মতো অসহায় হয়ে আর কেউ জন্ন নেয় না। মায়েরা সেই অসহায় বাচ্চাকে বুকে ধরে মানুষ করেন বলে পৃথিবীতে এখন ছয় বিলিয়ন মানুষ! (এই ছয় বিলিয়ন মানুষের মধ্যে একজনও নেই যাকে কোনো একজন মা পেটে ধরেননি!) পৃথিবীর এই সভ্যতার একেবারে গোড়ার ব্যাপারটা হচ্ছে সন্তানের জন্য ভালোবাসা। অন্যসব ভালোবাসা থেকে এই ভালোবাসা অনেক বেশি খাঁটি আর গভীর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কাব্যগাথা তৈরি হয়েছে মায়েদের নিয়ে। কোনো কিছুর জন্য আমাদের ভালোবাসা গভীর হলে কোনো না কোনোভাবে সেখানে আমরা ‘মা’ কথাটি জুড়ে দিই। তাই নিজের দেশকে বলি মাতৃভুমি, মুখের ভাষাকে বলি মাতৃভাষা! নিজেদের সভ্য হিসেবে পরিচয় দিতে হলে সবার আগে দেখি মায়েদের আমরা কতটুকু সম্মান করি, সেই ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি মায়ের পায়ের নিচে হচ্ছে বেহেশত!

নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ করে আমাদের কিছু আলেম-ওলামা বলে বসেছেন, আমি যদি পুরুষ মানুষ হয়ে থাকি তাহলে আমার মা যেহেতু একজন মহিলা তিনি আমার থেকে নিচু স্তরের মানুষ। পত্রিকায় ছাপা হওয়া সেই খবর আমাকে কয়েকবার পড়তে হয়েছে বিশ্বাস করার জন্য যে সত্যিই এই কথাগুলো আলেম-ওলামারা বলেছেন। আলেম-ওলামাদের এ রকম একটা কথা বলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, আমাদের চারজন উপদেষ্টা নারী উন্নয়ন নীতিমালাটি এই আলেম-ওলামাদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা যেন এই কথাগুলো বলতে পারেন তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁরা শুধু এই কথাটি বলেননি, ধর্মের দোহাই দিয়ে নারী উন্নয়ননীতির এমন সব পরিবর্তনের কথা বলেছেন যে সেই পরিবর্তন করা হলে এই নারী উন্নয়ননীতিকে আর ‘নারী উন্নয়ন নীতি’ বলা যাবে না, এটাকে ‘পুরুষের ঔদ্ধত্যের নীতি’ বা এই ধরনের নতুন কোনো একটা নাম দিয়ে চালাতে হবে।

যেসব মানুষ নারীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলছেন তাঁরা যদি এই পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটু খবর রাখতেন তাহলে তাঁরা মুখ ফুটে এ ধরনের কথা বলতে সাহস পেতেন না। পৃথিবীতে টিকে থাকাটা যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকে তাহলে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা রীতিমতো বিপদগ্রস্ত গোষ্ঠী! বিজ্ঞানের এমন একটা পর্যায় এখন এসেছে যে প্রায় রুটিন মাফিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্লোন করা শুরু হয়েছে। নানা রকম আইন-কানুন করে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে, তা না হলে মানুষের ক্লোন করা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। যখন ক্লোন করা ডাল-ভাতের মতো হয়ে যাবে, তখন পৃথিবীর মেয়েরা যদি কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে পুরুষদের পরিত্যাগ করে তাহলে এক প্রজন্ন পরই পৃথিবীতে আর কোনো পুরুষ থাকবে না, মেয়েরা কিন্তু নিজেদের ক্লোন করে দিব্যি পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে!

নারী বড় না পুরুষ বড়−স্কুলের ছেলেমেয়েদের মতো আমি মোটেও সেই বিতর্ক শুরু করতে যাচ্ছি না! যে জিনিসটা আমাদের মনে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে নারী আর পুরুষ ভিন্ন দুটি প্রজাতি নয়−দুজনই মানুষ। পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে দুজনেরই একই অধিকার কেউ যদি বলে একজনের অধিকার বেশি অন্যের অধিকার কম তাহলে তার থেকে অন্যায় কথা আর কিছু হতে পারে না। মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে তার অধিকার না দেওয়ার মতো বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?

২.
১৯৯৭ সালে প্রথমবার জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। নারী আর পুরুষের মধ্যে পার্থক্য দুর করে জাতীয় জীবনে তাদের মোটামুটি এক জায়গায় নিয়ে আসার বিভিন্ন কৌশল এই নারী উন্নয়ননীতিতে ছিল। সেই নারী উন্নয়ননীতিটি সে সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা, নারী অধিকার সংগঠন এবং নানা ধরনের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনের মাঝে আলাপ-আলোচনার সুযোগ ছিল বলে সবার মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা ছিল। সেই নারীনীতিতে উত্তরাধিকারের বেলাতেও নারী এবং পুরুষের সমান অধিকারের কথাও বলা হয়েছিল। (মজার ব্যাপার হচ্ছে−এখন প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার করে ইসলামি দলগুলো নারী উন্নয়ননীতির নামে একটা হাঙ্গামা শুরু করলেও তখন সে রকম কিছু করেছিল বলে মনে পড়ে না!)

’৯৭-এর নারী উন্নয়ননীতি এই দেশের মানুষ বেশি দিন দেখতে পায়নি। কারণ জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক দিন রাতের অন্ধকারে সেই নারীনীতি পরিবর্তন করে ফেলা হলো! বলা হয়ে থাকে সেই পরিবর্তনটুকু করেছে জোট সরকারের শরিক জামায়াতে ইসলামী এবং সেই পরিবর্তনের কথা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কিংবা আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দুরে, মহিলা আর শিশু বিষয়কমন্ত্রী খুরশিদ জাহান হকও জানতেন না! পুরোপুরি জামায়াতে ইসলামী কায়দায় পরিবর্তনগুলো করার কারণে সেই দলিলটি তখন আর ‘নারী উন্নয়ননীতি’ থাকল না, বরং হয়ে গেল ‘নারী ঠেকাও নীতি’। পরিবর্তন করা হয়েছিল ২০০৪ সালের মে মাসের মাঝামাঝি, দেশের মানুষ সেটা জানতে পারল ২০০৫ সালের প্রথম দিকে! জানামাত্রই সঙ্গে সঙ্গে সবাই এই নারী ঠেকাও নীতি প্রত্যাখ্যান করে সবাই ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ননীতি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করতে শুরু করল।

শেষ পর্যন্ত এই বছর বিশ্ব নারী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা নারী উন্নয়ননীতি ২০০৮ ঘোষণা করলেন। উত্তরাধিকারের কথাটি নেই, তবুও সবাই প্রাথমিকভাবে একটু সতর্ক হয়ে সেটাকে স্বাগত জানাল, কারণ এর মধ্যে কিছু নতুন বিষয় এসেছে (যেমন−পাঁচ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, জাতীয় সংসদে বর্ধিত আসনের পরিবর্তে এক-তৃতীয়াংশ আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কোটা বাড়ানো ইত্যাদি)! বলা যেতে পারে, এটা ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ননীতির পুনর্বিন্যাস।

এ পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু এর পরে যা ঘটল তার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না! ধর্ম ব্যবসায়ী দলগুলো রুটিনমাফিক তাদের চেঁচামেচি শুরু করে দিল এবং সঙ্গে সঙ্গে সরকারের চরজন উপদেষ্টা এই নারীনীতি পর্যালোচনা করার জন্য এমন একটা কমিটির হাতে তুলে দিলেন, যাঁরা আজীবন প্রগতিশীল কাজের বিরোধিতা করে এসেছেন, আজীবন নারীদের সব ধরনের উন্নয়নে বাধা দিয়ে এসেছেন। ‘আলেম-ওলামা’দের এই কমিটিতে কোনো মহিলা নেই। বাংলাদেশে ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে সাত কোটি মহিলা−এই সাত কোটি মহিলার মধ্যে একজন মহিলাও নেই, যিনি ধর্ম সম্পর্কে জানেন? যিনি এই আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বসে ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা পর্যালোচনা করতে পারেন? নারী উন্নয়ননীতি−কিন্তু সেটা পর্যালোচনা করবে কিছু নারীবিদ্বেষী পুরুষ, এটা কোন ধরনের যুক্তি? সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে, এই নারী উন্নয়ননীতিতে কিন্তু এ ধরনের ব্যাপার যেন না ঘটে সেটা নিয়েও সতর্ক করে দেওয়া আছে। ৩.৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো ধর্মের, কোনো অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীস্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইনবিরোধী কোনো বক্তব্য বা অনুরূপ কাজ করা বা কোনো উদ্যোগ না নেওয়া’। অথচ ঠিক এ কাজটিই করা হলো, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীস্বার্থের পরিপন্থী একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কিছু আলেম-ওলামাকে সুযোগ করে দেওয়া হলো−এর চেয়ে উৎকট রসিকতা আর কী হতে পারে?
বর্তমান সরকার বিচ্ছিন্ন কয়েকজন মানুষের সরকার−আমরা আগেও দেখেছি, হঠাৎ করে উপদেষ্টাদের চাকরি চলে যায়! এ রকম অবস্থায় অন্য কিছু না হোক নিজের চাকরির জন্য মায়ার কারণেও তো তাঁদের আরও একটু সতর্ক থাকার কথা−তাঁরা কোন যুক্তিতে এ রকম দায়িত্বহীন একটা কাজ করলেন? সে জন্য তাঁদের কি কখনো দেশের মানুষ ক্ষমা করবে?

৩.
জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০০৮ আসলে খুব ছোট একটা দলিল−সুচিপত্রটুকু ছেড়ে দিলে মাত্র ১৯ পৃষ্ঠা। সব মিলিয়ে এখানে পাঁচটা অধ্যায়। কোন অধ্যায় কী নিয়ে সেটা সহজে বোঝা যায় না, কারণ অধ্যায়গুলোর কোনো শিরোনাম নেই; ভেতরের বিষয়গুলো দেখে অনুমান করে নিতে হয়। প্রথম অধ্যায়টি হচ্ছে ভুমিকা, সুচনা পর্ব ও পূর্ব ইতিহাস। দ্বিতীয় অধ্যায় হচ্ছে উন্নয়ননীতির লক্ষ্য। আমার কাছে যে কপিটি আছে সেটা দেখে মনে হলো, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল, কিন্তু এর পরিবেশনাটুকু একটু অগোছালো। এ অধ্যায়ের ১৯টি লক্ষ্যের ক্রমিকসংখ্যাগুলো দেখে বোঝা যায়, নারী উন্নয়ননীতির অন্যান্য অংশের সঙ্গে মিল রেখে এর ক্রমিকসংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ২.১ থেকে ২.১৯, কিন্তু লেখা হয়েছে ১.১ থেকে ১.১৯। ফলে এ দলিলটিতে ১.১ থেকে ১.৬ ধারা রয়েছে দুবার এবং বর্ণনা করছে দুটি ভিন্ন বিষয়। তৃতীয় অধ্যায়টি হচ্ছে নারী উন্নয়ননীতির একেবারে মূল বিষয়টি−দ্বিতীয় অধ্যায়ে যে লক্ষ্যগুলো ঠিক করা হয়েছিল সেগুলো বস্তবায়ন করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার তালিকা। নারী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয়ই সেখানে আছে, যেমন বলা আছে বৈষম্য কিংবা নির্যাতন কীভাবে দুর করা যাবে। কীভাবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অধিকার দেওয়া যাবে এবং সবশেষে শিক্ষা-দীক্ষা প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি দিয়ে জীবনের মান বাড়াতে হবে।

এই দলিলের চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় হচ্ছে এই উন্নয়ননীতির বাস্তবায়নের কৌশল, কর্মপরিকল্পনা, অর্থায়ন−এসব বিষয় নিয়ে।

এই নারী উন্নয়ন নীতিমালাটি পড়ার সময় ঘুণাক্ষরেও কারও মনে হবে না যে এখানে বিরোধিতা করার মতো একটি অক্ষরও আছে। মজার ব্যাপার যে ‘আলেম-ওলামারা’ তার পরও এই নারী উন্নয়ন নীতিমালা বিরোধিতা করার মাল-মসলা পেয়ে গেছেন। এটি একেবারে অবিশ্বাস্য, যে বিষয়গুলো আমরা সভ্য মানুষের পরিচয় হিসেবে দেখি তাঁরা সেই বিষয়গুলোরই বিরোধিতা করেছেন, আর সবচেয়ে ভয়ের কথা তাঁরা সেটা করছেন ধর্মের নাম দিয়ে। মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই দেশের যেসব সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন তাঁরা এই আলেম-ওলামাদের প্রতিক্রিয়া দেখে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছেন, তাঁরা কখনো কল্পনাও করেননি তাঁদের ধর্মকে এ রকমভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব!

কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়, এই আলেম-ওলামারা বাচ্চার পরিচয় দেওয়ার বেলায় বাবার নাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের নাম দেওয়ার বিরুদ্ধে! যে মা নয় মাস তাঁর সন্তানকে পেটে ধরে জন্ন দেন, বুক আগলে রক্ষা করেন, সেই মায়ের নাম সন্তানের পরিচয় দেওয়ার সময় লেখা যাবে না−এ রকম কথা কি কোনো সভ্য মানুষ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারেন!

সারা পৃথিবী অনেক চেষ্টা করে বাল্যবিবাহ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। এর কী ভয়াবহ ফল হতে পারে সেটি একটা ছোট বাচ্চাও জানে (খবরের কাগজে দেখেছি স্কুলের বান্ধবীকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে খবর পেয়ে ক্লাসের অন্য সবাই মিলে সেটাকে ঠেকিয়ে দিয়েছে)। আমাদের কপাল−এই দেশের আলেম-ওলামারা সেটা জানেন না, তাঁরা বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করতে নারাজ! বাইরের জগৎ যখন এই কথা শুনবে তখন আমরা মুখ দেখাব কেমন করে?

আলেম-ওলামারা এই নারী উন্নয়ননীতির যে ধারাগুলোর বিরোধিতা করেছেন, সেগুলো দেখে এই দেশের নারীরা একটু মুচকি হাসতেও পারেন! সম্ভবত, তাঁরা নারীদের রীতিমতো ভয় পান, মনে হয় নারীদের ক্ষমতায়ন হয়ে যাবে এই বিষয়টি তাঁদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের একটা বিষয়! তারা যেন কোনোভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা না পেয়ে যায়, অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত না হয়ে যায়, সম্পদের অধিকার না পেয়ে যায় সেটাই তাঁদের একমাত্র দুর্ভাবনা। তাঁরা কোটা প্রথারও বিরুদ্ধে, কারণ তাহলে মেয়েরা তাদের ক্ষমতায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে−কিন্তু সেই কথাটা তাঁদের মুখ ফুটে বলার সাহস নেই! তাঁরা বলেন, ‘কোটা প্রথা নারীর জন্য অমর্যাদাকর।’ মজার কথা হচ্ছে তারা কিন্তু সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন, নারীর মর্যাদা পুরুষ থেকে কম−এই ঘোষণায় তাদের যে অমর্যাদা করা হলো সেই কথাটি একবারও তাঁদের মাথায় আসেনি!

৪.
এই দেশের সাত কোটি মানুষ হচ্ছে মহিলা। যারা নারী উন্নয়ননীতির বিরোধিতা করছেন তাঁদের মনে রাখতে হবে তাঁরা এই দেশের এক-দুজন নয় সাত কোটি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করার সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছেন। জেনে হোক না জেনে হোক তাঁদের কর্মকান্ড দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের মেয়েদের মনে ধর্ম নিয়ে একটা প্রশ্ন তৈরি করে দিচ্ছেন। এই মেয়েদের অনেকেই দেখেছে তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের ওপরে, তাহলে কেন তাদের পুরুষের নিচে স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, সেটা তারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। তাঁরা যে ধর্মের কথা বলে মেয়েদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে চাইছেন, সেই ধর্মের যে তাঁরা অনেক বড় একটা ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন, সেটা কি তাঁরা জানেন?
নারী উন্নয়ননীতি আসলে মোটেও শুধু নারীদের ব্যাপার নয়। এটা আমাদের সবার ব্যাপার, তাই নারী উন্নয়নের জন্য শুধু নারী আর নারী সংগঠনের সদস্যরা কথা বলবেন সেটাও হতে পারে না। যখন দেখব নারীদের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না তখন বুঝতে হবে আমাদের কারও অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। সেই অধিকার আদায় করার জন্য শুধু নারীদের নয় আমাদেরও পথে নামতে হবে।

আমাদের দেশের নারীদের সংগ্রামের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই নারী উন্নয়ননীতি নিয়ে যদি আবার সংগ্রাম করতে হয় তাহলে সেই সংগ্রামে শুধু নারীরা থাকবে না, সেখানে পুরুষেরাও থাকবে।

শুধু মায়েরা থাকবে না, মায়ের পাশে সন্তানেরাও থাকবে। বিশ্ব মা দিবসে বাংলাদেশের সব মায়ের জন্য ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।

2 Comments
Collapse Comments
Sharmina Akter Banu March 25, 2010 at 6:29 pm

Thank you so much Sir for your nice artical. I’m agree with you.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *