০৩. সেদিন কি তিথি, কি নক্ষত্র, কি লগ্ন ছিল

সেদিন কি তিথি, কি নক্ষত্র, কি লগ্ন ছিল, তা আমি জানি না। জীবন-নদীতে এত দীর্ঘদিন উজান বইবার পর বেশ বুঝতে পারছি যে সেদিন বিশেষ শুভলগ্নে আমি পৃথিবীর প্রথম আলো দেখিনি। এই পৃথিবীর বিরাট স্টেজে বিচিত্র পরিবেশে অভিনয় করার জন্য আমার প্রবেশের কিছুকালের মধ্যেই মাতৃদেবী প্ৰস্থান করলেন। একমাত্র দিদিও আমার জীবন-নাট্যের প্রথম অঙ্কেই জামাইবাবুর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি কেটে পড়ল। আমার জীবনের সেই প্ৰাগৈতিহাসিক তিনটে কপিও পাওয়া গিয়েছিল। নিয়মিত বাসাবাদলের দৌলতে দু’টি কপি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তৃতীয় কপিট দিদির সংসারে ক্ষুধার্ত উইপোকার উদরের জ্বালা মেটাচ্ছে। মানুষের জীবনে প্ৰথম ও প্ৰধান নারী হচ্ছে মা। তাঁর স্নেহ, তার ভালবাসা, তাঁর চরিত্র, আদর্শ প্রতি পুত্রের জীবনেই প্রথম ও প্রধান সম্পদ। আমি সেই স্নেহস্পৰ্শ, ভালবাসা ও সম্পদ থেকে চিরবঞ্চিত থেকে গেছি।–তাইতো আমার জীবনে নারীর প্রয়োজন ও গুরুত্ব উপলব্ধিতে অনেক সময় লেগেছে।

ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে ও আশপাশে কোন বোন বা অন্য কোন নারীচরিত্র না থাকায় মেয়েদের সম্পর্কে আমার শঙ্কা ও সঙ্কোচ, বহুদিন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি। আমার কৈশোরের সেই সেদিনের কথা মনে হলে আজও হাসি পায়।…

তখন ক্লাশ নাইন থেকে টেনএ উঠেছি। সবে পাখনা গজান শুরু হয়েছে। হাফ প্যাণ্ট ছেড়ে মালকেঁচা দিয়ে ধুতি পরা ধরেছি। ফুলহাতা শার্টের হাত না গুটিয়ে পরলে বোকা বোকা মনে হয়।, শ্ৰদ্ধানন্দ পার্কে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল পেটাতে বেশ আত্মসম্মানে লাগে। বিকেলবেলার একমাত্ৰ রিক্রিয়েশন দু’চারজন বন্ধু মিলে পাড়ার এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে আডা দেওয়া। মণ্টু দার বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল, হৃদ্যতা ছিল। দু’একবার পৌষসংক্রান্তির দিন মণ্টুদার মা আমাকে আদর করে পিঠে-পায়েসও খাইয়েছেন। শুনেছি দিদির বিয়ের সময় মন্টুদাদের বাড়ির সবাই খুব সাহায্য করেছিলেন। ঐ বাড়ির সবার সঙ্গেই আমার পরিচয় ছিল,–ওদের পরিবারের অনেক খবরই আমি জানতাম। জানতাম না। শুধু নন্দিনীর কথা। ছোটনাগপুরের মালভূমি থেকে মন্ট দ্বার এই চঞ্চল। কিশোরী ভাইঝি কবে আকস্মাৎ মহানগরীতে আবিভূতি। হয়েছিলেন, সে খবর আমি রাখিনি। তিনিও যে নাইন থেকে টেনএ উঠে মীর্জাপুরের বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়কে ধন্য করার জন্য কলকাতা এসেছেন, তাও জানতাম না। জানতাম না আরো অনেক কিছু। জানতে পারিনি যে চোদ্দ বছর বয়সেই তিনি তার জীবন-নাট্যের নায়ক খুঁজতে বেরিয়েছেন। এসব কিছুই আমি জানতাম না।

একদিন মণ্টুদাদের বাড়ি থেকে দু একটা গল্পের বই নিয়ে। বেরুবার সময় মাথার ওপর একটা কাগজের প্যাকেট এসে পড়ায় চমকে গেলাম। কুড়িয়ে নিয়ে দেখলাম একটা খাম। নাম ঠিকানা কিছুই লেখা ছিল না। শুধু লেখা ছিল, তোমার চিঠি। তোমার চিঠি। মানে আমার চিঠি! মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গেলাম। দু’এক মিনিট বোধহয়। থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর একটু হলেই চীৎকার করে মণ্টুদাকে ডাক দিতাম। কিন্তু হঠাৎ যেন কে আমার মাথায় বুদ্ধি জোগাল। চারপাশটা একনজরে দেখে নিলাম। শুধু বুড়ো কাকাতুয়া পাখীটা ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলাম না। খামটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলাম। উপরের লেখাটা বারিকয়েক পড়লাম, তোমার চিঠি। তারপর দৃষ্টিটা দোতলার দিকে ঘুরিয়ে নিতেই কোনার ঘরের জানলায় হাসিখুশিভরা একটা সুন্দরী কিশোরীকে দেখলাম।

অনেকদিন আগেকার কথা সবকিছু ঠিক মনে নেই। তবে আবছা আবছা মনে পড়ে কি যেন একটা ইশারা করে নন্দিনী লুকিয়েছিল। নারী চরিত্র সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও আমার বুঝতে কষ্ট হয়নি চিঠিটি নন্দিনীরই লেখা।

প্ৰায় ছুটতে ছুটতে বাসায় এলাম। ঘরের খিল বন্ধ করে চিঠিটা একবার নয়, অনেক বার পড়লাম। চিঠির ভাষাটা আজ আর মনে নেই। কিন্তু ভাবটা একটু একটু মনে পড়ে। কিছুটা উচ্ছ্বাস, কিছুটা আবেগ ছিল চপলা, কিশোরী নন্দিনীর ঐ চিঠিতে। চিঠিটা পেয়ে তালও লেগেছিল, ভয়ও লেগেছিল। তার চাইতে আরো বেশী লেগেছিল অবাক। ধনীর দুলালীর জীবন-উৎসবে আমার আমন্ত্রণ! আমার মত একটা ভাঙা ডিঙ্গি নৌকা চড়ে, নন্দিনী জীবন-সাগর পাড়ি দেবে? আমি কল্পনাও করতে পারিনি।

নন্দিনী চিঠির উত্তর চেয়েছিল কিন্তু আমার সাহস হয় নি। উৎসাহও আসে নি। উত্তর দিইনি, তবুও আবার চিঠি পেয়েছিলাম। ইঙ্গিত পেয়েছিলাম, আমি নাকি তার মানসরাজ্যের রাজপুত্র। পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে নন্দিনীকে নিয়ে অভিষিক্ত করব আমার জীবন-সঙ্গিনীরূপে। আরো অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। সে। জীবন যার প্রাচুর্যে ভরা, বিলাসিত করা যার স্বভাব, তার পক্ষে এমন অহেতুক স্বপ্ন দেখা হয়ত স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মত দৈন্যভরা কিশোরের পক্ষে এমন স্বপ্ন দেখা সম্ভব ছিল না। তাইতো তার সে আমন্ত্রণ আমি গ্ৰহণ করতে পারিনি। সে আমন্ত্রণ গ্ৰহণ করার ক্ষমতা বা সাহসও আমার ছিল না।

নন্দিনীকে আমি ভালবাসিনি। কিন্তু প্ৰাণচঞ্চল এই কিশোরীকে ভুলব না কোনদিন। সে আমার জীবনযজ্ঞের উদ্বোধনসঙ্গীত গেয়েছিল। এই কিশোরী আমার জীবন-নাট্যমঞ্চে শুধু একটু উকি দিয়েই সরে গিয়েছিল, বিশেষ কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করার অবকাশ পায় নি, কিন্তু তবু তার এক অনন্য ভূমিকা রয়ে গেছে আমার কাছে। বি-এ বা এম-এ পাশ করার পর জীবনের বৃহত্তর পটভূমিকায় অতীতের অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায়, কিন্তু হারিয়ে যায় না পাঠশালার গুরুমশায়ের স্মৃতি। নন্দিনী আমার তেমনি একটি অমূল্য স্মৃতি। সে আমার তোরের আকাশের একটি তারা। সে তারার জ্যোতিতে আমি আমার জীবন-পথ চলতে পারিনি বা তার প্রয়োজন হয় নি। তা না হোক। তবুও সে আমার জীবন দিগদর্শনে সাহায্য করেছিল। সর্বোপরি সে আমাকে আমার আমিত্ব আবিষ্কারে সাহায্য করেছিল।

ভালবাসা কি এবং তার কি প্রয়োজন, সেদিন আমি বুঝিনি, জানিনি। নন্দিনী কেন আমাকে ভালবেসেছিল, কি সে চেয়েছিল,, কি পেয়েছিল–কিছুই আমি জানি না। শুধু এইটুকুই জানি আমার সুখে সে সুখী হতো, আমার দুঃখে সে লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জলও ফেলেছে। ছন্দোবদ্ধভাবে এইসব অনুভূতির প্রকাশ করবার সুযোগ কোনদিনই সে পায় নি। কিন্তু যখনই সে সুযোগ এসেছে, নন্দিনী তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।

সরস্বতী পূজার আগের ক’দিন মরবার অবকাশ থাকত না। খাওয়া-দাওয়া তো দূরের কথা ঘুমুবার পর্যন্ত সময় পেতাম না। সারা দিন-রাত্তিরই রিপন স্কুলে কাটাতাম। নন্দিনী ঠিক জানত আমি কোন গরম জামা নিয়ে যাই নি। সন্ধ্যার পর এক ফাঁকে। একটা আলোয়ান নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দিয়ে আসত। বলত, তোমার কি ঠাণ্ডাও লাগে না? যদি জ্বরে পড়, তাহলে কি হবে বল তো!

একবার সত্যি সত্যিই আমি খুব অসুস্থ হয়েছিলাম। নটা বাজতে না বাজতেই বাবা বিদায় নিতেন। ফিরতে ফিরতে সেই রাত দশটা! অখিল মিস্ত্রী লেনের ঐ বিখ্যাত ভাঙা বাড়িটার অন্ধকার কক্ষে আমি একলা থেকেছি। মণ্টুদাদের বাড়ি থেকে আমার পথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছিল নন্দিনীর আগ্রহেই। দুবেল স্কুলে যাতায়াতের পথে নন্দিনী আমাকে দেখে যেত। হয়ত একটু সেবা-যত্নও করত।

এসব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। শুধু আমার জন্য এক’জন পথ চেয়ে বসে থাকবে, আমাকে ভালবেসে, সেবা করে, যত্ন করে, কেউ মনে মনে তৃপ্তি পাবে, আমি ভাবতে পারতাম না। নন্দিনী আমার জীবনে সেই অভাবিত অধ্যায়ের সূচনা করে।

ম্যাট্রিক পাশ করার পরই নন্দিনী বোম্বে চলে গেল। আমার জীবনের সেই ক্ষণস্থায়ী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। কিন্তু তবুও সে আমার জীবন থেকে একেবারে বিদায় নিল না। চিঠিপত্ৰ নিয়মিত আসত। আর আসত আমার জন্মদিনে একটা শুভেচ্ছা। আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা নেতাজী নই। আমার মত সাধারণ মানুষের জন্মদিনে যে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান হতে পারে, তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আমার জন্মদিনে বাবা ধান-দূর্বা দিয়ে আশীৰ্বাদ করেই অফিসে দৌড় দিতেন। সেবারেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নি। বিকেলবেলায় নন্দিনী টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে আমার জন্য সামান্য কিছু উপহার এনে চমকে দিয়েছিল।

 

নন্দিনী আজ অনেক দূরে চলে গেছে। সুখে-শাস্তিতে স্বামীপুত্র নিয়ে ঘরসংসার করছে। তার আজ কত কাজ, কত দায়িত্ব। কিন্তু তবুও একটা গ্ৰীটিংস টেলিগ্রাম পাঠাতে ভোলে না। আমার জন্মদিনে।

কলকাতা থেকে বিদায় নেবার পর আমার সঙ্গে নন্দিনীর আর দেখা হয় নি। এম-এ পড়বার সময় ওর বিয়ে হলো এক আই-এ–এস পাত্রের সঙ্গে। নিমন্ত্রণাপত্রের সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত অনুরোধপত্রও এসেছিল। কিন্তু আমার পক্ষে তখন বোম্বে যাওয়া আদৌ সম্ভব ছিল না। টিউশানির টাকা আগাম নিয়ে পনের টাকা দামের একটা তাঁদের শাড়ী পাঠিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে আমি আমার  জীবন-যুদ্ধে এমন মেতে উঠেছিলাম যে নন্দিনীকে মনে করার পর্যন্ত ফুরসত পেতাম না।

প্ৰায় বছর দশেক পরে আমি গ্যাংটক গিয়েছিলাম কি একটা কাজে। তিন-চারদিন পরে কলকাতার পথে শিলিগুড়ি ফিরছিলাম। পথে আটকে পড়লাম। সেবক ব্রীজের কাছে কিছুটা ধ্বস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়েছিল। কুলি-মজুরের দল রাস্তা পরিষ্কারে ব্যস্ত। আমার মত অনেকেই প্ৰকৃতির এই খামখেয়ালীপনায় বিরক্ত হয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলেন। রাস্তা পরিষ্কার হতে আরো ঘণ্টা দুয়েক লাগবে। এই দীর্ঘ অবসরে অনেকের সঙ্গেই আলাপ-পরিচয় হলো। কার্শিয়াং-এর তরুণ এস-ডি-ওর সঙ্গেও বেশ ভাব হয়ে গেল।

মাসিকয়েক পর আবার কর্মব্যাপদেশে দাৰ্জিলিং যাচ্ছিলাম। পথে কার্শিয়াং পড়বে। মনে মনে ঠিক করেছিলাম। এস-ডি-ও সাহেবের সঙ্গে দেখা করব। শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং এলাম। হঠাৎ অফিসে গিয়ে হাজির হওয়ায় এস-ডি-ও সাহেব চমকে গেলেন। পরপর দুকাপ কফি গিলেই পালাবার উপক্রম করছিলাম কিন্তু এস-ডি-ও সাহেব বললেন, তা কি হয়। আমার কোয়ার্টারে যাবেন, লাঞ্চ খাবেন। তারপর বিকেলের দিকে দাৰ্জিলিং যাবেন।

আমার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই এস-ডি-ও সাহেব কোয়ার্টারে টেলিফোনে স্ত্রীকে জানালেন, নন্দা, আমার এক বন্ধু এসেছেন কলকাতা থেকে। লাঞ্চে নিয়ে আসছি। তুমি একটু ব্যবস্থা করো।

গোটা বারো নাগাদ এস-ডি-ও সাহেব আমাকে নিয়ে কোয়ার্টারে গেলেন। ড্রইংরুমে আমাকে বসিয়ে রেখে স্নান করবার জন্য বিদায় নিলেন। মিনিট কয়েক পরে আর কেউ নয়, স্বয়ং নন্দিনী কফির কাপ হাতে নিয়ে আমার সামনে হাজির হলো। দুজনেই একসঙ্গে বলেছিলাম, তুমি?

সেদিন কার্শিয়াং পাহাড়ের সমস্ত কুয়াশা ভেদ করেও নন্দিনীর চোখেমুখে যে উজ্জ্বলতা, যে আনন্দ দেখেছিলাম, তা কোনদিন ভুলব না। এস-ডি-ও সাহেবকে বলেছিলাম, আপনি যে মণ্টুদাদের বাড়ির জামাই, তা তো জানতাম না। সংক্ষেপে জানালাম ওর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতার কথা। গোপন করিনি যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছোটবেলায় খেলাধুলা করেছি।

এস-ডি-ও আমাকে শ্বশুরবাড়ির দূত মনে করে আনন্দে মেতে উঠলেন। লাঞ্চের টেবিলে এক গেলাস স্কোয়াস হাতে নিয়ে আমার হেলথ এর জন্য প্রপোজ করতে গিয়ে ঘোষণা করলেন, মিস্টার জার্নালিস্ট আজ রাত্রে এক স্পেশ্যাল ডিনারে চীফ গেস্ট হবেন এবং কাশিয়াংএ রাত্রিবাস করবেন।

আমি বললাম, তা কি হয়।

এস-ডি-ও সাহেব বললেন, ভুলে যাবেন না। আমি শুধু অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন চালাই তা নয়, বিচারও করি। আমি কার্শিয়াংএর চীফ জাস্টিস কাম প্ৰাইম মিনিস্টার।

নন্দিনী বলল, এতদিন পর যখন দেখা হলো, একটা দিন থাকলে কি তোমার খুব ক্ষতি বা কষ্ট হবে?

সত্যি খুব আনন্দ করে সেই দিনটি কাটিয়েছিলাম। নন্দিনী ঠিক এতটা আদর-যত্ন করবে, ভাবতে পারিনি।

কর্মজীবনের পাকচক্ৰে আমি ছিটকে পড়েছি বহুদূরে। নন্দিনীর সঙ্গে আমার আর দেখা হয় নি, ভবিষ্যতে কোনদিন দেখা হবে। কিনা, তাও জানি না। তবে ভুলব না তার স্মৃতি।

জান দোলাবৌদি, আমি কার্শিয়াং ত্যাগের আগে নন্দিনী বলেছিল, একটা অনুরোধ করব?

আমি বলেছিলাম, তার জন্য কি অনুমতির প্রয়োজন?

না তা নয়। তবে বলো আমার অনুরোধটা রাখবে।

বিদায় নেবার প্রাক্কালে মনটা নরম হয়েছিল। কোনকিছু তর্ক করার প্রবৃত্তি ছিল না। বললাম, নিশ্চয়ই রাখব।

তোমার পুত্রবধূর নাম রেখে নন্দিতা। রাখবে তো? আমি স্তম্ভিত হয়েছিলাম ওর ঐ বিচিত্ৰ অনুরোধ করার জন্য। ঠোঁটটা কামড়াতে কামড়াতে কথা বলতে পারিনি। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলাম।

এই চিঠি আর দীর্ঘ করব না। তাছাড়া তুমি তো আমার চিঠি। একবার পড়ে ক্ষান্ত হও না। আর যাই কর আমার এসব চিঠি তুমি কলেজে নিয়ে ক্লাশে বসে পড়ে না। তিন-চারদিনের জন্য এলাহাবাদে যাচ্ছি। ফিরে এসে আবার চিঠি দেব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *