2 of 2

৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ

বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ

ইবন ইসহাক বলেন, : ইয়াযিদ ইবন রূমান উরওয়া সূত্রে আইশা (রা) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেন। বদর যুদ্ধে নিহত কাফিরদের লাশ বদর কুয়ায় নিক্ষেপ করতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) নির্দেশ দেন। নির্দেশ মত লাশগুলো তাতে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু উমাইয়া ইবন খালফের লাশ নিক্ষেপ করা হল না। কেননা, তার লাশ ফুলে-ফোঁপে পরিহিত বর্মের সাথে আটকে গিয়েছিল। সাহাবীগণ বর্মের ভিতর থেকে লাশ টেনে বের করার চেষ্টা করলে মাংস ছিড়ে যেতে থাকে। তখন ঐ অবস্থায় রেখেই তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়। লাশ নিক্ষেপ শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সা) কূপের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ করে বলেন, : হে কুপের অধিবাসীরা! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা কি তোমরা যথাযথভাবে পেয়েছ? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তো আমি যথাযথভাবে পেয়েছি। হযরত আইশা (রা) বলেন, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি মৃত লোকদের সাথে কথা বলছেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তারা এখন ভালভাবে জেনে গিয়েছে যে, তাদের প্রতিপালক তাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা সঠিক। হযরত আইশা (রা) বলেন :

লোকজন বলাবলি করে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, “আমি তাদেরকে যা বলছি তারা তা শুনতে পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেছিলেন, “তারা জানতে পারছে।

ইবন ইসহাক আনাস ইবন মালিক (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ একদা মধ্যরাতে শুনতে পান। তিনি আহবান করছেন : হে কুপের

আবু জাহল ইবন হিশাম! এভাবে কৃপের মধ্যে নিক্ষিপ্ত প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে বলেন : তোমরা কি তা সত্যরূপে পেয়েছ, যার ওয়াদা তোমাদের প্রভু তোমাদের সাথে করেছিলেন? আমার প্রভু আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমি তো তা সত্যরূপে পেয়েছি। সাহাবীগণ তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছেন, যারা মরে পচে গলে গেছে? জবাবে তিনি বললেন, আমি যা বলছি তা তোমরা ওদের থেকে বেশী শুনিছ না। অবশ্য তারা আমার কথার উত্তর দিতে পারছে না।

ইমাম আহমদ (র) ইবন আবু আব্দী সূত্রে আনাস (রা) থেকে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এবং তা বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। ইবন ইসহাক বলেন, : আমাকে কতিপয় বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছিলেন–হে কৃপের বাসিন্দারা! তোমরা ছিলে তোমাদের নবীর নিকৃষ্টতম আত্মীয়-স্বজন। তোমরা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছ। অন্যরা আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। তোমরা আমাকে স্বদেশ থেকে বের করে দিয়েছ। অন্যরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। তোমরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছ। আর অন্য লোকেরা আমাকে সাহায্য করেছে। এখন কি তোমরা সেই প্রতিদান যথার্থ পেয়েছ, যে সম্পর্কে তোমাদের রব তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? কেননা, আমি সেই প্রতিফল যথার্থভাবে পেয়ে গেছি, যা দেয়ার প্রতিশ্রুতি আমার রব আমাকে দিয়েছিলেন।

ইবন কাহীর বলেন, : হযরত আইশা (রা) যদি কুরআনের কোন আয়াতের সাথে বিশেষ কোন হাদীছের বাহ্যিক দৃষ্টিতে সংঘর্ষ হচ্ছে বলে মনে করেন, তখন তিনি সেই হাদীছের তাবীল (ব্যাখ্যা) করে থাকেন। এটা সে ধরনের। হযরত আইশার মতে, আলোচ্য হাদীছটি :

وما أنت بمسمع من فى القبور আয়াতের সাথে সংঘর্ষিক। যার অর্থ হচ্ছে, “তুমি তাদেরকে শুনাতে সমর্থ হবে না, যারা কবরে রয়েছে’ (৩৫ : ২২)। প্রকৃতপক্ষে হাদীছের সাথে এ আয়াতের কোন সংঘর্ষ নেই। সাহাবায়ে কিরাম ও পরবর্তীকালের অধিকাংশ বিজ্ঞ আলিম এ হাদীছের শাব্দিক অর্থই গ্রহণ করেছেন–যা হযরত আইশার মতের বিপরীত এবং এটাই সঠিক। ইমাম বুখারী বলেন, : উবায়দ ইবন ইসমাঈল … উরওয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আইশার নিকট আলোচনা করা হল, ইবন উমর রাসূলুল্লাহর বরাত দিয়ে বলছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের কান্নাকাটি করার কারণে কবরে শাস্তি দেয়া হয়। আইশা (রা) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন! রাসূলুল্লাহ (সা) তো একথা বলেছিলেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার অপরাধ ও গোনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ তার পরিবারের লোকজন এখন তার জন্যে কান্নাকাটি করছে। হযরত আইশা (রা)

বলেন, ইবন উমরের এ কথাটি তার ঐ কথারই অনুরূপ, যা রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঐ কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে কুপে বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের লাশ নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে যা বলার তা বললেন। ইবন উমর বলছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। আসলে তিনি বলেছিলেন–এখন তারা ভালই বুঝতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা কিছু বলেছিলাম তা ছিল যথার্থ। তারপর হযরত আইশ এ আয়াতাংশ দুটো তিলাওয়াত করলেন :

(তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না (৩০ : ৫২) এবং তুমি তাদেরকে শুনাতে সমর্থ হবে না, যারা কবরে রয়েছে (৩৫ : ২২)। আইশা (রা) বলেন, এর অর্থ, হল যখন তারা জাহান্নামে যাবে। ইমাম মুসলিম এ হাদীছ আবু কুরায়ব সূত্রে আবু উসামা থেকে বর্ণনা করেছেন। মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন করার পর সে বাইরের কথা শুনতে পায়, এ সম্পর্কে একাধিক হাদীছে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। জানাযা অধ্যায়ে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। এরপর ইমাম বুখারী বলেন, : উছমান … ইবন উমর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীছটি ইমাম মুসলিম আবু কুরায়ব সূত্রে আবু উসামা থেকে এবং আবু বকর ইবন আবু শায়াবা ও ওয়াকী’ সূত্রে হিশাম, ইবন উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ … আবু তালহা থেকে বর্ণিত। বদর যুদ্ধের দিন নবী করীম (সা)-এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরায়শ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কৃপটি ছিল ভীষণ নােংরা ও কদৰ্য। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নীতি ছিল–কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে যুদ্ধের ময়দানে তিন দিন অবস্থান করতেন। সে মতে, বদর প্রান্তরে অবস্থানের তৃতীয় দিনে তিনি তাঁর বাহন প্রস্তুত করার আদেশ দেন। বাহনের উপরে ষীন তুলে বেঁধে দেয়া হল। এরপর তিনি পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলেন এবং সাহাবীগণ তাকে অনুসরণ করে পিছনে পিছনে গেলেন। তারা বলেন, আমরা মনে করছিলাম, হয়ত কোন প্রয়োজনে তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কৃপে নিক্ষিপ্ত নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে ডেকে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্ৰ অমক! এখন তো বুঝতে পারছি, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা তোমাদের জন্যে আনন্দকর ছিল। কিনা? আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তোমরা কি তা সত্য পেয়েছ? একথা শুনে হযরত উমর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আত্মাহীন দেহের সাথে কী কথা বলছেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, আমি যা বলছি তা ওদের তুলনায় তোমরা বেশী শুনিছ না। কাতাদা বলেন, আল্লাহ তার রাসূলের কথা শুনাবার জন্যে তাদের দেহে সাময়িকভাবে প্ৰাণ সঞ্চার করে দিয়েছিলেন তাদেরকে ভৎসনাস্বরূপ এবং লাঞ্ছনা, কষ্ট, অনুশোচনা ও লজ্জা দেয়ার জন্যে। এ হাদীছ ইবন মাজাহ ব্যতীত অন্যান্য মুহাদিছগণ সাঈদ ইবন আবু আরূবা থেকে বিভিন্ন সূত্রে

বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আহমদ ইউনুস, শায়বান, কাতাদা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কাতাদা আনাস ইবন মালিক থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আবু তালহার উল্লেখ করেননি। এ সনদটি সহীহ। কিন্তু প্রথমটি অধিকতর সহীহ ও প্রসিদ্ধ।

ইমাম আহমদ আফফান সূত্রে … আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। বদর যুদ্ধে নিহত শক্ৰদের লাশ রাসূলুল্লাহ্ (সা) তিন দিন পর্যন্ত রেখে দেন। অবশেষে লাশে পচন ধরে। তখন

উতবা ইবন রাবীআ, হে শায়াবা ইবন রাবীআ! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন তা কি তোমরা যথার্থভাবে পেয়েছ? আমার প্রতিপালক আমাকে যা দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন আমি তো তা যথার্থভাবে পেয়েছি।

হযরত আনাস বলেন, উমর (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কথা শুনতে পেয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত্যুর তিন দিন পর আপনি তাদেরকে আহবান করছেন? তারা কি আপনার কথা শুনতে পাচ্ছে? আল্লাহ তো বলেছেন :

انك لا تُسمع الموتى –

“তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি যা যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শুনিছ না। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারছে না। ইমাম মুসলিম এ হাদীছটি হুদাবা ইবন খালিদ সূত্রে হাম্মাদ ইবন সালামা থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবন ইসহাক বলেন, হাসসান ইবন ছাবিত এ প্রসঙ্গে নিমের কবিতাটি আবৃত্তি করেন :

عرفت دیار زینب (بالکثیب) + کخط الوحی فی الورق القشیب

পুরাতন কাগজের উপরে (অস্পষ্ট) হস্তাক্ষর। বাতাস প্রবাহিত হয়ে সে বসতবাটিকে দোলা দেয় এবং প্রতিটি কাল মেঘ তার উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করে। ফলে তার চিহ্ন পুরাতন হয়ে গেছে এবং তা সে পড়েছে। অথচ এক কালে এখানেই আমার প্রেমিকা বসবাস করত। (ওহে কবি!) প্রতিনিয়ত সেই স্মৃতি স্মরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রোখ এবং হৃদয়ের জ্বালা-যন্ত্রণা নিবারণ কর। মিথ্যা কল্পকাহিনী বলা বাদ দিয়ে সেইসব সত্য ঘটনা বল, যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বদর যুদ্ধে মুশরিকদের মুকাবিলায় মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে সৌভাগ্যদান করেছিলেন, সে কথা বর্ণনা কর! সেদিন প্রাতঃকালে তাদের কাহিনীকে হিরা পর্বতের ন্যায় (দৃঢ়) মনে হচ্ছিল। কিন্তু অপরান্ত্রে তার গোড়া পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়ে পড়ল। আমরা আমাদের মধ্য হতে এমন এক বাহিনী নিয়ে তাদের মুকাবিলা করেছি, যে বাহিনীর যুবক ও বৃদ্ধ সবাই ছিল বনের সিংহের ন্যায়। তারা যুদ্ধে অগ্নিশিখার মধ্যে মুহাম্মদ (সা)-এর সম্মুখে থেকে তাকে হিফাযত করেছে। তাদের হাতে ছিল হাতলযুক্ত তরবারি এবং মোটা গ্ৰন্থিবিশিষ্ট বর্শা। সত্য দীনের খাতিরে বনু আওসের নেতৃবৃন্দকে বনু নাজ্জারের লোকজন সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। আমরা আবু জাহলকে ধরাশায়ী করেছি এবং উতবাকে যমীনের উপর ছুড়ে মেরেছি। আর শায়বাকে

VeG–

এমন সব লোকদের মধ্যে নিক্ষেপ করেছি, যদি তাদের বংশ পরিচয় দেয়া হয়, তবে তারা সন্ত্রান্ত বংশ হিসেবে গণ্য হবে। আমরা যখন তাদের দলবলকে কৃপের মধ্যে নিক্ষেপ করলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, : তোমরা কি এখন আমার কথা সত্যরূপে পাওনি? আল্লাহর নির্দেশ অন্তরকে প্রভাবিত করে। কিন্তু তারা কোন জবাব দিল না। যদি তারা কথা বলতে সমর্থ হত, তবে অবশ্যই বলত যে, আপনি সত্য কথা বলেছিলেন এবং আপনি ছিলেন সঠিক সিদ্ধান্তের অধিকারী।”

ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন মুশরিকদের লাশ কৃপের মধ্যে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন, তখন উতবা ইবন রবীআর লাশ টেনে-হেঁচড়ে কুপের নিকট আনা হল। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা) উত্বার (মুসলমান)। ছেলে আবু হুযায়ফার চেহারার দিকে তাকালেন। দেখলেন যে, সে মর্মাহত এবং তার চেহারা বিবৰ্ণ হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, : হুযায়ফা!

আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা নয়। আমি আমার পিতার কুফারী ও হত্যার ব্যাপারে কোন প্রকারে দ্বিধাগ্ৰস্ত নই। তবে আমি আমার পিতাকে যথেষ্ট জ্ঞানী, প্রজ্ঞাশীল ও উত্তম গুণের অধিকারী বলে জানতাম। সে জন্যে আশা করেছিলাম যে, এসব গুণ তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করবে। কিন্তু যখন দেখলাম যে, তিনি কুফৱী অবস্থায়ই মারা গেলেন, তখন আমার সে আশা পূর্ণ না হওয়ায় আমি মর্মাহত হয়েছি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার কল্যাণের জন্যে দুআ করলেন ও তার প্রশংসা করলেন। ইমাম বুখারী বলেন, : হুমায়াদী … ইবন আব্বাস সূত্রে . বর্ণনা করেন, তিনি :র্থ < 1।| 1,,,, … …….। (যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বদলে অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করে) আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহর কসম, এরা হল কুরায়শদের মধ্যকার কাফিররা। আমার বলেন, এরা হল কুরায়শ সম্প্রদায় এবং মুহাম্মদ (সা) হচ্ছেন আল্লাহর নিআমত। এবং ১1, 11, 16:47, 1,1*1, (নিজেদের সম্প্রদায়কে তারা ধ্বংসের ঘরে পেঁৗছে দিয়েছে) আয়াতাংশে,,,।,, অর্থ · · (দােযখ)। এখানে বদরের যুদ্ধের দিনে দোযখে নিক্ষেপের কথা বুঝান হয়েছে। ইবন ইসহাক বলেন, : এ প্রসঙ্গে হাসসান ইবন ছাবিত তাঁর কবিতায় বলেন, :

“আমার কওম— যারা তাদের নবীকে আশ্রয় দিয়েছিল এবং গোটা বিশ্ববাসী যখন কুফরীতে নিমজ্জিত ছিল, তখন তারা তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছিল। এরা ছিল পূর্ব-পুরুষের উত্তম বৈশিষ্ট্যাবলীর সঠিক উত্তরসূরী। এরা পুণ্যবান আনসারদের সহযোগী। আল্লাহর বণ্টনে তারা সন্তুষ্ট। বংশীয় মর্যাদায় সম্মানিত শ্রেষ্ঠ নবী যখন তাদের মাঝে আগমন করেন, তখন মধুর স্বাগত সম্ভাষণে তারা তাকে বরণ করে নেন এবং তারা বলেন, আপনি এখানে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অবস্থান করুন! আপনি শ্রেষ্ঠ নবী, উত্তম প্রতিবেশী। আমরা বড়ই সৌভাগ্যবান। তাঁরা তাকে থাকার ব্যবস্থা করলেন এমন ঘরে, যেখানে কোন ভয়-ভীতি ছিল না। যে এঁদের প্রতিবেশী হবে এ রকম ঘরই তার থাকবে। মুহাজিরগণ যখন হিজরত করে

এখানে আগমন করলেন, তখন এরা নিজেদের ধন-সম্পদ তাদেরকে ভাগ করে দিলেন। আর অগ্রাহ্যকারী কাফিরদের ভাগে রয়েছে জাহান্নাম। আমরা বদর প্রান্তরের দিকে এগিয়ে গেলাম, তারাও মৃত্যুর জন্যে সেদিকে এগিয়ে আসল। যদি তারা নিশ্চিতভাবে তাদের পরিণামের কথা জানত, তবে কিছুতেই সেদিকে অগ্রসর হত না। ইবলীস তাদেরকে ধোকা দিয়ে পথ দেখিয়ে এগিয়ে আনল। তারপর তাদেরকে একাকী ছেড়ে চলে গেল। শয়তান যাকে বন্ধু বানায় তার সাথে চরম ধোকাবাজীই করে থাকে। সে বলেছিল, আমি তোমাদের পাশেই থাকব। পরে তাদেরকে এক নিকৃষ্ট ঘাঁটিতে এনে ফেলল, যাতে কেবল লাঞ্ছনা ও অপমানই ছিল। এরপর যখন আমরা পরস্পরের মুখোমুখি হলাম, তখন শয়তান তার সাহায্যকারী দলবল নিয়ে নেতাদের থেকে কেটে পড়ল। আর একদল দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালাল।

ইমাম আহমদ বলেন, : ইয়াহিয়া ইবন আবু বকর ও আবদুর রাযযাক … ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধ শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলা হল, এখন আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলাকে আক্রমণ করুন। তাদেরকে সাহায্য করার মত আর কেউ সামনে নেই। তখন আব্বাস বন্দী অবস্থায় শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকে বলে উঠলেন, মুহাম্মদ! এটা তুমি করতে পার না। রাসূলুল্লাহ বললেন, কেন পারব না? আব্বাস বললেন, আল্লাহ তোমাকে দু’টি দলের মধ্যে একটি দেয়ার ওয়াদা করেছেন এবং সে ওয়াদা তিনি পূর্ণ করেছেন।

বদর যুদ্ধে বড় বড় কাফির নেতাসহ মোট সত্তর জন নিহত হয়। এ যুদ্ধে এক হাযার ফেরেশতা অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল যে, এ যুদ্ধে যারা বেঁচে যাবে, তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করবে। তাদের সকলকে হত্যা করা আল্লাহর আভীষ্ট হলে এ কাজের জন্যে একজন মাত্র ফিরিশতা পাঠিয়েই তিনি তা করতে পারতেন। কিন্তু যুদ্ধে কেবল সে লোকগুলোই নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কল্যাণ ছিল না। এই ফেরেশতাদের মধ্যে ছিলেন। হযরত জিবরাল (আঃ)। যিনি আল্লাহর নির্দেশে লুত্ জাতির আবাসভূমি মাদাইনকে যমীন থেকে উপরে তুলে নেন। অথচ সেই ভূ-খণ্ডের মধ্যে ছিল সাতটি সম্প্রদায়ের লোক, জীব-জন্তু, মাটি, বৃক্ষ-লতা, ফসলাদি এবং আরও অনেক কিছু, যার তথ্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও জানা নেই। এসব কিছুসহ ভূ-খণ্ডটি হযরত জিবরাল (আঃ) তাঁর একটি পাখার কিনারায় তুলে আকাশের সীমানা পর্যন্ত উঠিয়ে নেন। এরপর তা উলটিয়ে নীচে ফেলে দেন এবং তার উপর চিহ্নিত বিশেষ ধরনের পাথর বর্ষণ করেন। লুত জাতির আলোচনায় আমরা এ বিষয়ে উল্লেখ করে এসেছি।

আল্লাহ মু’মিনদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাথে সাথে এর যৌক্তিকতা ও অস্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহর বাণী :

“অতএব যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধে মুকাবিলা কর, তখন তাদের গর্দানে আঘাত কর, পরিশেষে যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করবে, তখন তাদেরকে কষে বঁধবে, এরপর হয় অনুকম্পা, নয় মুক্তিপণ। তোমরা জিহাদ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না যুদ্ধ তার অস্ত্ৰ নামিয়ে ফেলে। এটাই বিধান। এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি চান তোমাদের একজনকে অপরের দ্বারা পরীক্ষা করতে” (৪৭ : 8)

মহান আল্লাহর বাণী :

“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তোমাদের হাতে আল্লাহ তাদেরকে শান্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন ও মু’মিনদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন এবং তাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার প্রতি ক্ষমা-পরায়ণ হন” (৯ : ১৪-১৫)।

তাই দেখা যায় আবু জাহল একজন আনসার বালকের হাতে নিহত হয়। তারপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ তার বুকের উপর বসে দাড়ি চেপে ধরেন। তখন আবু জাহল তাকে বললো হে তুচ্ছ মেষ রাখাল! আজি তুমি এক কঠিন স্থানে আরোহণ করেছে। তারপর ইবন মাসউদ তার মুণ্ড কেটে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সম্মুখে নিয়ে হাযির করেন। আল্লাহ এভাবে মু’মিনদের চিত্তকে প্রশান্তি দান করেন। নিঃসন্দেহে আবু জাহলের এই মৃত্যু ছিল বজপাতে বা ছাদ ধ্বসে কারো মৃত্যু বা স্বাভাবিক মৃত্যুর চাইতে অধিকতর লাঞ্ছনাপূর্ণ।

ইবন ইসহাক বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের তালিকায় এমন কতিপয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ

করতে আসেন। কেননা, ইসলাম গ্রহণের কারণে তারা ছিলেন মক্কার মুশরিকদের হাতে অত্যাচারিত ও নিগৃহীত। তাদের কয়েকজনের নাম এখানে উল্লেখ করা হল : (১) হারিছ ইবন যামআ ইবন আসওয়াদ, (২) আবু কায়স ইবন ফাকিহ, (৩) আবু কায়স ইবন ওয়ালীদ ইবনুল মুগীরা, (৪) আলী ইবন উমাইয়া ইবন খালফ (৫) আস ইবন মুনাবিবহ ইবন হাজ্জাজ। ইবন ইসহাক বলেন, এদের সম্পর্কেই কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :

“যারা নিজেদের উপর জুলুম করে, তাদের জান কবয্যের সময় ফেরেশতাগণ বলে, “তোমরা

কী অবস্থায় ছিলে’ তারা বলে, দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম। তারা বলে, দুনিয়া কি এমন

প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে! জাহান্নামই এদের আবাসস্থল আর তা কত মন্দ আবাস” (৪ : ৯৭)। Y

বদর যুদ্ধে মোট বন্দী সংখ্যা সত্তর জন। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ। বন্দীদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। যেমন–(১) রাসূলুল্লাহর (সা)-এর চাচা আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব, (২) তার চাচাত ভাই আকীল ইবন আবু তালিব এবং (৩) নাওফিল ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব। এখান থেকে দলীল গ্রহণ করে ইমাম শাফিঈ ও ইমাম বুখারী বলেন, কেউ যদি রক্ত সম্পৰ্কীয় কোন আত্মীয়ের মুনীব হয়ে যায়, তবে সে এমনিতে আযাদ হবে না; বরং গোলামই থাকবে। কিন্তু ইবন সামুরা থেকে হাসানের বর্ণিত হাদীছ এর বিপরীত। এই তালিকার মধ্যে আরও আছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) কন্যা যয়নবের স্বামী আবুল আস ইবন রবী” ইবন আবদে শামস ইবন উমাইয়া।

অনুচ্ছেদ

বদর যুদ্ধের বন্দীদের হত্যা করা হবে, নাকি মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে—এ ব্যাপারে সাহাবাগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ বলেন, : আলী ইবন আসিম … হাসান সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে সাহাবীগণের পরামর্শ চান এবং বলেন, : আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের করায়াত্ত করে দিয়েছেন। হযরত উমর দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওদেরকে হত্যা করে দিন! রাসূলুল্লাহ্ (সা) উমরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পুনরায় লোকদের কাছে একই ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। এবার আবু বকর সিন্দীক দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মত হচ্ছে, তাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হোক। এ কথা শুনার পর রাসূলুল্লাহর চেহারার বিষন্ন ভাব কেটে গেল এবং মুক্তিপণ নিয়ে তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিলেন। হাসান বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করলেন :

আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, তাতে তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত” (৮ : ৬৮)।

সূত্রে … উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বদর যুদ্ধের দিনে তাঁর সাহাবীগণের প্রতি লক্ষ্য করলেন, তারা ছিলেন সংখ্যায় তিনশ’র কিছু বেশী। পরে মুশরিক বাহিনীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখতে পেঁলেন, তারা ছিল হাযারের উর্ধে। এরপর তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন, যার শেষের কথা ছিল–কাফিরদের সত্তরজন নিহত হয় এবং সত্তরজন বন্দী হয়। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) (বন্দীদের ব্যাপারে) আবু বকর, আলী ও উমর (রা)-এর সাথে

পরামর্শ করেন। হযরত আবু বকর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা তো আমাদের ভাই-বেরাদর ও আত্মীয়-স্বজন, আমার মতে, এদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করুন। এতে যে অর্থ আসবে তা

দান করবেন এবং তখন তারা আমাদের সাহায্যকারী হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র (উমর)! তোমার মত কি? আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আবু বকর যে মত ব্যক্তি করেছেন আমার মত সে রকম নয়। আমার মত হচ্ছে এদের মধ্যে আমার নিকট-আত্মীয়কে ধরে আমিই হত্যা করব। আকীলকে আলীর কাছে দেয়া হবে, সে তাকে হত্যা করবে এবং হামযা তার ভাইকে ধরে হত্যা করবেন। এতে আল্লাহ দেখবেন যে, আমাদের অন্তরে মুশরিকদের প্রতি কোনই দুর্বলতা নেই। আর এই বন্দীরা হচ্ছে কাফিরদের সর্দার, তাদের নেতা ও পরিচালক। রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমার মত গ্রহণ করলেন না, তিনি আবু বকরের মত গ্রহণ করলেন ও মুক্তিপণ আদায় করলেন।

উমর বলেন : পরের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও আবু বকরের নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তাঁরা উভয়ে কাঁদছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনারা কাঁদছেন কেন? কারণটা জানতে পারলে যদি আমারও কান্না আসে, তবে আমিও কাদব। আর যদি কান্না না আসে, তবে আপনাদের দেখাদেখি কান্নার ভান করব। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, মুক্তিপণ গ্রহণের কারণে তোমাদের সাথীকে১ এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখান হয়েছে। দেখান হয়েছে যে, তোমাদের উপর আযাব আসছে এবং তা একেবারে নিকটস্থ এই বৃক্ষের চেয়েও নিকটে এসে গেছে। আর আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেছেন :

দেশে ব্যাপকভাবে শক্রকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্যে সংগত নয়। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ চান পরলোকের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহর পূর্বাবধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ (অর্থাৎ মুক্তিপণ) সেজন্যে তোমাদের উপর আপতিত হত–মহাশাস্তি (৮ : ৬৭-৬৮)। এরপর } মু’মিনদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল করে দেয়া হল। হযরত উমর হাদীছের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।

ইমাম আহমদ আবু মুআবিয়া … আবদুল্লাহ সূত্রে অনুরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন–যাতে অতিরিক্ত আছে উমর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করে। দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তাদেরকে আমার হাতে সোপর্দ করুন, আমি ওদের গর্দান উড়িয়ে দেই। আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এদেরকে একটা প্রান্তরে রেখে

১. ইঙ্গিত তার নিজের দিকে ছিল।

চারিদিকে প্রচুর কাঠ বিছিয়ে আগুন ধরিয়ে দিন! এসব কথা শুনে কোন জবাব না দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঘরে প্রবেশ করেন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে একদল বলল, রাসূলাল্লাহ আবু বকরের মতই গ্রহণ করবেন। আর একদল বলল, উমরের মত গ্ৰহণ করবেন। অন্য একদল বলল, আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার মত গ্রহণ করবেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে লোকজনের সম্মুখে এসে বললেন, : আল্লাহ কিছুসংখ্যক লোকের অন্তরকে নরম করেন এবং তা তুলা থেকেও নরম হয়ে যায় আবার কিছুসংখ্যক লোকের অন্তরকে কঠিন বানান এবং তা পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। হে আবু বকর! তোমার দৃষ্টান্ত হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর মত। তিনি বলেছিলেন :

فمن تبعنی فانهٔ منی و من عصبانی فان لنت غفور رحیم . “সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে। সেই আমার দলভুক্ত। কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (১৪ : ৩৬)। হে আবু বকর! তোমার দৃষ্টান্ত হযরত ঈসা। (আ)। তিনি বলেছিলেন :

إن نعذبهم فائهم عبادك وإن تغفر لهم فانك أنت العزيز الحكيم “তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (৫ : ১১৮)। আর হে উমর! তোমার দৃষ্টান্ত হযরত নূহ (আ.)-এর মত। তিনি বলেছিলেন :

رب لا تذر على الأرض من الكفرين ديارا. “হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিও না (৭১ : ২৬)। হে উমর! তোমার দৃষ্টান্ত হযরত মূসা (আ:)-এর মত। তিনি বলেছিলেন :

ربنا اطمس على أموالهم وأشدد على قلوبهم فلا يؤمنوا حتى يروا العذاب

الالیم“হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, তাদের হৃদয়ে মোহর করে দাও, তারা তো মৰ্মসুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত বিশ্বাস করবে না”। (১০ : ৮৮)। তোমরা এখন রিক্তহস্ত। সুতরাং মুক্তিপণ গ্ৰহণ কিংবা হত্যা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আবদুল্লাহ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সুহায়ল ইবন বায়যাকে এর থেকে বাদ রাখুন কেননা, আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের কথা আলোচনা করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) নীরব থাকলেন। আবদুল্লাহ বলেন, তখন আমি এতো ভীত হয়ে পড়লাম যে, এমনটি আর কোন দিন হইনি। মনে হচ্ছিল, আকাশ থেকে আমার উপর বুঝি পাথর বর্ষিত হবে। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, সুহায়ল ইবন বায়যা ব্যতীত। তখন আমার ভয় কেটে গেল। আল্লাহ এ সময় আয়াত নাযিল

করলেন :

–a–ماکان لنبی آن یکون لهٔ آستری

“দেশে ব্যাপকভাবে শক্রকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর পক্ষে সংগত নয়।” (৮ : ৬৭-৬৮)। তিরমিয়ী ও হাকিম আবু মুআবিয়া থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবন মারদুবিয়াহ আবদুল্লাহ ইবন উমর ও আবু হুরায়রা থেকে প্রায় এ রকমই বৰ্ণনা করেছেন। আবু আইয়ুব আনসারী (রা) থেকেও এরূপ বৰ্ণিত হয়েছে। ইবন মারদুবিয়াহ ও হাকিম তার মুসতাদরাকে উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা সূত্রে … ইবন উমর থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে অন্যান্য বন্দীদের সাথে (রাসূল (সা)-এর চাচা।) আব্বাসও বন্দী হন। জনৈক আনসার তাকে বন্দী করেন। আনসাররা তাঁকে হত্যা করার হুমকি দেন। একথা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কানে আসে। সকালে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমার চাচা আব্বাসের চিন্তায় রাত্রে আমার ঘুম হয়নি। আনসাররা নাকি তাকে হত্যা করতে চায়। হযরত উমর বললেন, আমি কি আনসারদের কাছে যাব? রাসূলুল্লাহ বললেন, হ্যা যাও। হযরত উমর আনসারদের কাছে গিয়ে বললেন, আব্বাসকে ছেড়ে দাও! আনসাররা বলল, আল্লাহর কসম, আমরা আব্বাসকে ছাড়বো না। উমর বললেন, যদি রাসূলুল্লাহর এতে সম্মতি থাকে? তাঁরা বললেন, রসূলুল্লাহর যদি সম্মতি থাকে, তাহলে ওঁকে নিয়ে যাও! হযরত উমর তাকে নিয়ে আসলেন। আবাসকে উমর আয়ত্তে নিয়ে বললেন, ওহে আব্বাস!! ইসলাম কবুল করা!! আল্লাহর কসম, আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চাইতে তোমার ইসলাম গ্ৰহণ করা আমার নিকট অধিকতর প্ৰিয়। কারণ, আমি জানি, তুমি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) অধিক খুশী হবেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) বন্দীদের সম্পর্কে আবু বকর ও উমর (রা)-এর সাথে পরামর্শ করেন ও এ ব্যাপারে আয়াত নাযিলের বর্ণনা রয়েছে। হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাকিম। এর সনদকে বিশুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম এ হাদীছ বৰ্ণনা করেননি। তিরমিয়ী, নাসাঈ ও ইবন মাজাহ সুফিয়ান ছাওরী সূত্রে … আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বললেন, : বন্দীদের ব্যাপারে আপনার সাহাবীদেরকে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে–তারা ইচ্ছে করলে মুক্তিপণ নিতে পারে কিংবা ইচ্ছে করলে আগামী বছর (যুদ্ধে) নিজেদের সম-সংখ্যক নিহত হওয়ার শর্তে তাদেরকে হত্যাও করতে পারে। সাহাবীগণ বললেন, মুক্তিপণ কিংবা আমাদের থেকে নিহত হওয়া এ হাদীছটি খুবই অপরিচিত। কেউ কেউ একে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন উবায়দা থেকে। ইবন ইসহাক ইবন আবু নাজীহ সূত্রে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন :

لولا كتاب من اللّه سبق لمسكُمْ فيما أخذتُمُ عذاباً عظيم. “আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, তার জন্যে তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত।” (৮ : ৬৮)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন : পূর্ব থেকে বাধা না দিয়ে আমি কোন অন্যায়ের কারণে কাউকে শাস্তি দিই না–এ বিধান যদি আগের থেকে না থাকত, তবে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, তার জন্যে আমি শাস্তি প্ৰদান করতাম। ইবন আবু নাজীহ

মুজাহিদ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবন ইসহাক প্রমুখ এই ব্যাখ্যা গ্ৰহণ করেছেন।

আমাশ বলেন, পূর্বে যে বিধান ছিল তা হল এই যে, বদর যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদের কাউকে শাস্তি দেয়া হবে না। সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস, সাঈদ ইবন জুবােয়র ও

আতা ইবন আবু রাবাহ থেকে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। মুজাহিদ ও ছাওরী বলেন, : আল্লাহর পূর্ব-বিধান হলো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষমা করে দেয়া। ওয়ালিবা (র) ইবন আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেন, পূর্বের কিতাবে লেখা ছিল গনীমত ও মুক্তিপণ তোমাদের জন্য হালাল। এ কারণে উক্ত আয়াতের শেষে বলা হয়েছেঃ

فكلوا مما غنم ثم حلاً لأطيبا

“যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর” (৮ : ৬৯)। হযরত আবু হুরায়রা, ইবন মাসউদ্দ, সাঈদ ইবন জুবায়র, আতা, হাসান, কাতাদা ও আমাশ থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইবন জারীর এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমে জাবির ইবন আবদুল্লাহ বর্ণিত নিম্নের হাদীছ দ্বারা সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমাকে এমন পাচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত অবস্থানকারীদের মনে আমার প্রভাব-প্রতিপত্তি ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, (২) ভূ-পৃষ্ঠকে আমার জন্যে সিজদার স্থান ও পবিত্র করা হয়েছে। (৩) আমার জন্যে গনীমতের সম্পদ হালাল করা হয়েছে, যা আমার পূর্বের কোন নবীর জন্যে হালাল করা হয়নি, (৪) আমাকে শাফাআত করার অধিকার দেয়া হয়েছে, (৫) অন্যান্য নবীগণ আপন আপন সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরিত হয়েছেন। আর আমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্যে প্রেরণ করা

হয়েছে।

আমাশ আবু সালিহর মাধ্যমে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেছেন : আমাদের ব্যতীত অন্য কোন উম্মতের জন্যে গনীমত হালাল করা হয়নি। এজন্যেই আল্লাহ বলেছেন : “যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও পাক বলে ভোগ কর।” এভাবে গনীমত ও মুক্তিপণ ভোগ করার জন্যে আল্লাহ অনুমতি দান করেন। আবু দাউদ আবদুর রহমান সূত্রে … ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন : বদর যুদ্ধের বন্দীদের মুক্তিপণের সর্বনিম্ন পরিমাণ ছিল জনপ্ৰতি চারশ’ দিরহাম এবং সর্বোচ্চ চার হাযার দিরহাম। এরপরও আল্লাহ প্ৰতিশ্রুতি দেন। যে, যদি কোন বন্দী ঈমান আনে ও ইসলাম কবুল করে, তবে তার নিকট থেকে আদায়কৃত মুক্তিপণের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে দুনিয়ায় ও আখিরাতে অধিক কল্যাণ দান করবেন। আল্লাহর বাণী :

JSS S S AAS S S C S S S S S S S S S S C A o o a o بر همه سر و ؟ Q Q q د سمر o–i o … 3 3. ~

یاایها النبی قلی لمن فی اید یکم من الاسری ان یعلم الله فی قلوب کم خیرا

يما أخذ ين تُمْ ويغفر لگمْ – হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বল, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তার চাইতে উত্তম কিছু তিনি

তোমাদেরকে দান করবেন ও তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৮? ৭০)। ওয়ালিবী বলেন, ইবন আব্বাস বলেছেন : এ আয়াতটি আমার পিতা আব্বাস প্রসঙ্গে

\.–

অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি চল্লিশ উকিয়া ১ স্বর্ণ নিজের মুক্তিপণ হিসেবে প্ৰদান করেন। এরা সকলেই

থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা পোষণ করি। ইবন ইসহাক বলেন, : আব্বাস ইবন আবদুল্লাহ। . ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের পর যুদ্ধবন্দীদেরকে রাত্রে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ঐ রাতের প্রথম অংশে রাসূলুল্লাহর আর ঘুম হল না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি ঘুমুচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন, আমার চাচা আব্বাসকে কষে বাধার কারণে তার কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম আসছে না। একথা শুনার পর সাহাবীগণ গিয়ে আব্বাসের বাঁধন খুলে দিলেন। তখন আব্বাস কান্না বন্ধ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঘুমিয়ে পড়লেন। ইবন ইসহাক বলেন, : আব্বাস ছিলেন সম্পদশালী ব্যক্তি। তাই তিনি নিজের মুক্তিপণ হিসেবে একশ’ উকিয়া প্ৰদান করেন। আমার মতে, এই একশ’ উকিয়া ছিল তাঁর নিজের, তাঁর দুই চাচাত ভাই আকীল ও নাওফিলের এবং তার মিত্ৰ–বনী হারিছ ইবন ফাহরের পুত্ৰ উত্বা ইবন আমরের পক্ষ থেকে। যেমন বর্ণিত আছে যে, আব্বাস যখন দাবী করেছিলেন, আমি পূর্বেই ইসলাম গ্ৰহণ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমরা আপনার বাহ্যিক দিকটা দেখব, আর আপনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি আল্লাহই ভাল জানেন এবং তিনি আপনাকে এর বিনিময় দেবেন। অতএব, আপনার মুক্তিপণ দিতে হবে। আব্বাস বললেন, আমার নিকট কোন সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তবে সেই মাল কোথায় যা আপনি ও উন্মুল ফযল মাটির নীচে রেখে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি যদি এ যুদ্ধে মারা যাই, তাহলে এ মাল ফািযল আবদুল্লাহ ও কুছামের সন্তানরদেরকে দিও? আব্বাস বললেন, আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল! কেননা, এই লুক্কায়িত সম্পদের কথা আমি ও উন্মুল ফযল ব্যতীত আর কেউই জানে না। এ ঘটনাটি ইবন ইসহাক ইবন আবু নাজীহ সূত্রে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারীতে মূসা ইবন উকবা সূত্রে আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় আনসার সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। তারা বললেন, আমাদেরকে আমাদের ভাগিনা আব্বাসের মুক্তিপণ মাফ করে দেয়ার অনুমতি দিন! তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তোমরা তার মুক্তিপণের একটি দিরহামিও মাফ করবে না। বুখারী বলেন, : ইবরাহীম ইবন তাহমান সূত্রে আনাস থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা)-এর নিকট বাহরায়ন থেকে বিপুল পরিমাণ (সাদাকার) মাল আসে। তিনি বললেন, এসব মাল মসজিদে রেখে দাও। তখন আব্বাস এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি, আমাকে কিছু মাল দিন! রাসূলুল্লাহ বললেন, লও! আব্বাস তাঁর কাপড়ের মধ্যে মাল ভর্তি করে নেয়ার জন্যে উঠাতে উদ্যত হলেন, কিন্তু বেশী করে ভর্তি করার কারণে তিনি তা উঠাতে সক্ষম হলেন না। তখন তিনি রাসূলুল্লাহকে বললেন, এটি আমাকে উঠিয়ে দেয়ার জন্যে কাউকে আদেশ করুন। তিনি বললেন, না। আব্বাস বললেন, তাহলে আপনিই আমাকে উঠিয়ে দিন! তিনি বললেন, না। তারপর কাপড় থেকে কিছু মাল ফেলে দিয়ে উঠাতে চাইলে কিন্তু এবারও উঠাতে সমর্থ হলেন না। আবার তিনি রাসূলুল্লাহকে বললেন, আপনার সাহাবীদের কাউকে একটু উঠিয়ে দিতে বলুন! তিনি বললেন, ১. উকিয়া = :০ দিরহাম বা সাড়োদশ তোলা।

না। আব্বাস বললেন, তা হলে আপনিই আমাকে উঠিয়ে দিন, তিনি বললেন, না। এরপর আব্বাস কাপড় থেকে আরও কিছু মাল নামিয়ে কাঁধের উপর উঠিয়ে চলে গেলেন। তার এ অত্যধিক লোভের কারণে বিস্মিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি দৃষ্টির আড়াল হলেন। সাদাকার সমুদয় মাল তিনি দান করে দিলেন। এমনকি একটা দিরহাম অবশিষ্ট থাকতেও তিনি স্থান ত্যাগ করলেন না।

বায়হাকী বলেন, হাকিম … আবদুর রহমান সুদী থেকে বৰ্ণিত। তিনি বলেছেন, আব্বাস ও তাঁর দুই ভাতিজা আকীল ইবন আবু তালিব এবং নাওফিল ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব প্ৰত্যেকের মুক্তিপণ ছিল চারশ’ দীনার করে। এরপর আল্লাহ শেষোক্ত দু’জনের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। মহান আল্লাহর বাণী :

وان يُريدُوا خيانتك فقد خانوا اللّه من قبل فأمكن منهم واللّه عليم حكيم.

তারা তোমার সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে চাইলে, তারা তো ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। এরপর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (৮ : ৭১)।

অনুচ্ছেদ

প্ৰসিদ্ধ মতে বদর যুদ্ধে মুশরিক দলের সত্তরজন নিহত হয় এবং সত্তরজন বন্দী হয়। এ সম্পর্কে পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরেও আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। সহীহ বুখারীতে হযরত বারা ইবন আযিবের হাদীছেও বর্ণিত হয়েছে যে, বদর যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর সত্তরজন নিহত হয় এবং সত্তরজন বন্দী হয়। মূসা ইবন উকবা বলেন, : বদর যুদ্ধে যে কয়জন মুসলিম সৈন্য শহীদ হন, তাদের মধ্যে ছয়জন কুরায়শ (মুহাজির) এবং আটজন আনসার। আর মুশরিক বাহিনীর মধ্য হতে উনপঞ্চাশজন নিহত হয় এবং উনচল্লিশজন বন্দী হয়। মূসা ইবন উকবা থেকে বায়হাকীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। বায়হাকী তারপরে বলেছেন, মুসলমান শহীদদের সংখ্যা ও মুশরিক নিহতদের সংখ্যা সম্পর্কে ইবন লাহিয়া আসওয়াদের মাধ্যমে উরওয়া থেকে এরূপই বর্ণনা করেছেন। তারপর বায়হাকী বলেন, : হাকিম সূত্রে … মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে মুসলমানদের এগারজন শহীদ হন। চারজন কুরায়শ (মুহাজির) ও সাতজন আনসার। অপরদিকে মুশরিকদের পক্ষ থেকে একুশজনের কিছু বেশী লোক নিহত হয়। তিনি অন্য এক বর্ণনায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চল্লিশজন সহযোদ্ধা বন্দী হন। আর তাদের নিহতদের সংখ্যাও ছিল অনুরূপ। এরপর বায়হাকী আবু সালিহ সূত্রে … যুহরী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মুসলিম বাহিনীতে সর্বপ্রথম শহীদ হন। হযরত উমরের আযাদকৃত দাস মাহজা’ (১৯২৫-) জনৈক আনসারী। আর মুশরিকদের মধ্য হতে সত্তরজনের অধিক নিহত হয় এবং সমসংখ্যক বন্দী হয়। ইবন ওহাব সূত্রে … উরওয়া ইবন যুবােয়র থেকেও অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। বায়হাকী বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত রিওয়ায়াতগুলোর মধ্যে এ বর্ণনাটিই বিশুদ্ধতর। তারপর বায়হাকী এ মতের সমর্থনে উপরোক্ত হাদীছ ছাড়াও সহীহ বুখারীতে আবু ইসহাক সূত্রে বারা” ইবন আযিবা বর্ণিত হাদীছের উল্লেখ

করেন। বারা” ইবন আযিবা বলেন, উহুদ যুদ্ধে নবী করীম (সা) আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রকে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। শত্রুরা আমাদের সত্তরজনকে শহীদ করে দেয়। বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীগণ মুশরিকদের একশ’ চল্লিশজনকে নিহত ও গ্রেফতার করেন। তন্মদ্ধে সত্তরজন বন্দী হয় এবং সত্তরজন নিহত হয়। ইবন কাহীর বলেন, বিশুদ্ধ মতে বদর যুদ্ধে মুশরিকদের সংখ্যা ছিল নয়শী’ থেকে হাযারের মাঝখানে। কাতাদা স্পষ্টভাবে এ সংখ্যা নয় শ’ পঞ্চাশজন বলে উল্লেখ করেছেন। ইতোপূর্বে উল্লিখিত হযরত উমর (রা)-এর হাদীছ থেকে জানা গেছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল হাযারের উর্ধের্ব। কিন্তু প্রথম সংখ্যাই সঠিক। কারণ, রাসূল (সা) বলেছেন : শত্রুপক্ষের সৈন্যসংখ্যা নয়শী’ ও হাযারের মাঝামাঝি। বদর যুদ্ধে সাহাবাগণের সংখ্যা ছিল তিনশ’ দশজনের কিছু বেশী। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আসছে। ইতোপূর্বে মিকসাম সূত্রে ইবন আব্বাস থেকে হাকাম বর্ণিত হাদীছে উল্লিখিত হয়েছে যে, ১৭ই রামাযান শুইবানরে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ কথা আরও বলেছেন, উরওয়া ইবন যুবায়র, কাতাদা, ইসমাঈল, সুদী আল-কবীর ও আবু জাফর আল-বাকির।

বায়হাকী কুতায়বা সূত্রে … আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে বদর যুদ্ধ লায়লাতুল কদরে হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন : রামাযানের এগার দিন অবশিষ্ট থাকতে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। কেননা, ঐ তারিখের সকাল হল বদর যুদ্ধের দিন। বায়হাকী যায়দ

রামাযান মাসের উনিশ তারিখের রাত হচ্ছে কদরের রাত–এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেছেন, মীমাংসার দিন হলো দু’দলের পরস্পরের সম্মুখীন হওয়ার দিন। বায়হাকী বলেন, মাগায়ী বিশেষজ্ঞদের প্রসিদ্ধ মতে রমযান মাসের সতের তারিখে বন্দরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরপর বায়হাকী বলেন : আবুল হুসাইন ইবন বুশরান সূত্রে … মূসা ইবন তালহা থেকে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, আবু আইয়ুব আনসারীর নিকট বদর যুদ্ধের তারিখ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, (রমযান মাসের) সতের অথবা তের তারিখে কিংবা (রমাযানের) এগার দিন অথবা সতের দিন অবশিষ্ট থাকতে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ হাদীছটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের।

হাফিয ইবন ‘আসাকির কুবাছ ইবন আশয়াম আল-লায়হীর জীবন প্রসঙ্গে ওয়াকিদী

প্রমুখের বরাতে লিখেছেন যে, বদর যুদ্ধে কুবাছ মুশরিকদের পক্ষে যুদ্ধ করতে আসে। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও মুশরিকদের পরাজয়ের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। কুবাছ বলেন, মুশরিকদের পরাজয়ের সময় আমি মনে মনে ভাবছিলাম–এমন অবস্থা তো আর কখনও দেখিনি। মহিলারা ব্যতীত সকল পুরুষ যোদ্ধা রণাংগন ছেড়ে পলায়ন করল। আল্লাহর কসম, এ যুদ্ধে যদি কেবল কুরায়শ মহিলারা এসে অস্ত্র ধারণ করত, তাহলে তারা মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীদেরকে প্রতিহত করতে পারত। এরপর খন্দকের যুদ্ধ হয়ে গেলে আমি ভাবলাম, যদি মদীনায় যেতে পারতাম, তাহলে মুহাম্মদ (সা) কী বলেন, তা বুঝার সুযোগ পেতাম। এ সময়ে আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছিল। কুবাছ বলেন, কিছু দিন পর আমি মদীনায় গেলাম এবং লোকজনের কাছে মুহাম্মদ (সা)-এর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারা জানান যে, তিনি ঐ মসজিদে সাখী-সঙ্গীদের নিয়ে বসে আছেন। এরপর আমি তথায়

উপস্থিত হলাম; কিন্তু সঙ্গীদের ভীড়ের মধ্যে তাঁকে চিনতে না পেরে সালাম জানালাম। তখন মুহাম্মদ (সা) বললেন, ওহে কুবাছ ইবন আশয়াম! বদরের যুদ্ধে তুমিই তো বলেছিলেআজকের ন্যায় আমি আর কখনও দেখিনি। রণাংগন থেকে মহিলারা ব্যতীত পুরুষরা পলায়ন করেছে। তখন আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। কেননা, এ কথাটি আমি কখনও কারও নিকট ব্যক্ত করিনি। আর ঐ যুদ্ধের সময় এ কথা আমি মুখে বলিনি। তা কেবল আমার মনের মধ্যেই উদয় হয়েছিল। সুতরাং আপনি নবী না হলে এ বিষয়ে অবগত হতে পারতেন না। আসুন, আমি আপনার নিকট ইসলামের উপর বায়আতি গ্ৰহণ করি। এভাবে আমি ইসলামে দীক্ষিত হই।

অনুচ্ছেদ

বদর যুদ্ধে প্ৰাপ্ত মালে গনীমত কাদের প্রাপ্য, এ প্রশ্নে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। মতবিরোধের কারণ হচ্ছে, মুশরিকরা যখন পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে, তখন সাহাবীগণ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের এক ভাগ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে ঘিরে রাখেন। মুশরিকরা পুনরায় ঘুরে এসে তাঁর উপর আক্রমণ করতে পারে এ আশংকায় তাঁরা তাকে পাহারা দিচ্ছিলেন। আর এক অংশ মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করে তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে থাকেন। তৃতীয় দল বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা গনীমতের মাল সংগ্রহ করেন। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্যদের তুলনায় গনীমতের অধিক হকদার বলে দাবী জানায়।

ইবন ইসহাক বলেন, : আবদুর রহমান ইবন হারিছ … আবু উমামা বাহিলী সূত্রে বর্ণনা

তিনি বললেন, : আমরা যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি, যুদ্ধের পর গনীমতের মাল নিয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এরং আমাদের আচরণ অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে পৌছে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আনফাল অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ গনীমতের কর্তৃত্ব আমাদের হাত থেকে তুলে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে প্রদান করেন। তিনি মুসলমানদের মধ্যে তা সমভাবে বণ্টন করে দেন। ইমাম আহমদও … মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সমহারে বণ্টন করার অর্থ হচ্ছে, বিশেষ কোন একটি অংশকে নয়। বরং যারা গনীমত সং করেছিল, যারা শত্রুর পিছনে ধাওয়া করেছিল এবং যারা ময়দানে টিকে থেকে পতাকা সমুন্নত রেখেছিল—এঁদের সকলের মধ্যেই তিনি গনীমত বণ্টন করেন। এভাবে বন্টনের দ্বারা একথা বুঝায় না যে, গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ পৃথক করা হয়নি এবং পৃথক করে তা যথাস্থানে ব্যয় করা হয়নি, যেমন আবু উবায়দা প্রমুখ এরূপ সন্দেহ করেছেন। বরং রাসূল (সা)-এর যুলফিকার নামক তরবারি বদর যুদ্ধের গনীমত থেকে অতিরিক্ত হিসেবে নিয়েছিলেন। ইবন জারীর বলেন : বদর যুদ্ধে আবু জাহলের উটের নাকে রূপার হার পরান ছিল। গনীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ বের করার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সা) এ উটটি নিজের জন্যে রেখে দেন। ইমাম ১। আহমদ বলেন, : মুআবিয়া ইবন আমর . উবাদী ইবন সীমিত সূত্রে বর্ণনা বলেন, তিনি করেন। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে মদীনা থেকে বের হয়ে বদরে উপস্থিত হই। সেখানে শত্রুর

সাথে মুকাবিলা হয় এবং আল্লাহ দুশমনদেরকে পরাজিত করেন। মুসলমানদের মধ্য হতে একটি দল শক্ৰদের পিছনে ছুটে এবং তাদেরকে হত্যা করে। আর একটি দল গনীমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। অপর একটি দল রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে ঘিরে রাখে, যাতে এলোমেলো থাকার সুযোগ নিয়ে শত্রুরা তার কাছে আসতে না পারে। রাত্রিকালে সৈন্য একে অপরের সঙ্গে যখন মিলিত হল, তখন গনীমত সংগ্ৰহকারীরা বলল? আমরাই তো গনীমত সংগ্রহ করেছি, এতে অন্য কারও কোন ভাগ নেই। শত্রুর পিছনে ধাওয়াকারীরা বললঃ এ ব্যাপারে তোমাদের দাবী আমাদের থেকে বড় নয়। কারণ, আমরাই গনীমত থেকে শক্ৰদেরকে হটিয়ে দিয়েছি এবং তাদেরকে পরাজিত করেছি। যারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পাশে ছিলেন, তারা বললেন; আমাদের আশংকা ছিল যে, এরূপ ফাঁকা অবস্থা দেখে শত্রুরা ভিন্ন পথে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উপর আক্রমণ না করে বসে, তাই আমরা তাকে ঘিরে অবস্থান করেছি। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ আয়াত নাযিল

করলেন :

يسألونك عبر الأنفال قل الانفال للّه والرسول فاتقوا اللّه وأصلحوا ذات

് 8 o 只 c 单 o 息 > 3ر 9 م. متر 3 با ر . م پو ه مر په is . بین کم و اطیعوا الله و رسوله ان کنتم مؤمنین

“লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বল, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং

রাসূলের। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মু’মিন হও (৮ : ১)।

তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) মুসলমানদের মধ্যে সেসব বন্টন করে দেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) কোন শত্রু এলাকা আক্রমণ করলে এক-চতুর্থাংশ যোদ্ধাদের দিয়ে দিতেন এবং প্রত্যাবর্তনকালে এক-তৃতীয়াংশ বন্টন করতেন। তবে তিনি অতিরিক্ত কিছু দেয়া অপসন্দ করতেন। তিরমিয়ী ও ইবন মাজ ছাওৱী সূত্রে আবদুর রহমান ইবন হারিছ থেকে এ হাদীছ বৰ্ণনা করেছেন এবং তিরমিয়ী একে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। ইবন হিব্বান তার সহীহ’ গ্রন্থে এবং হাকিম। তার মুসতাদরাক গ্রন্থে আবদুর রহমান থেকে এ হাদীছ বৰ্ণনা করেন এবং হাকিম একে মুসলিমের শর্ত মতে সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। অবশ্য মুসলিম এ হাদীছটি বর্ণনা করেননি। আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন হিব্বান ও হাকিম একাধিক সূত্রে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঘোষণা করলেন, যারা এই এই কাজ করতে পারবে, তাদেরকে এই এই (পুরস্কার) দেয়া হবে। ঘোষণা শুনে যুবকরা দ্রুত সে কাজে অগ্রসর হল এবং বৃদ্ধরা পতাকার কাছে থেকে গেলেন। যখন গনীমত বণ্টনের সময় হল, তখন যুবকরা এসে তাদের প্রতিশ্রুত পুরস্কার দাবী করল। বৃদ্ধরা বললেন, আমাদের উপরে তোমরা নিজেদেরকে প্রাধান্য দেবে না। কেননা, আমরা ছিলাম তোমাদের জন্যে প্রাচীন স্বরূপ। যদি তোমরা ফিরে আসতে, তাহলে আমাদের কাছে এসে জড়ো হতে। এভাবে তারা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহ আয়াত নাযিল করলেন :

ပံ5-5)-(ဖ်–ဂဲါဒ် ပိ! ……………………. يسألونك عن الانفال

লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে. এ আয়াত নাযিল হওয়ার উপলক্ষ হিসেবে অন্য একটি বর্ণনা আমরা উল্লেখ করেছি। এখানে তার বিশদ আলোচনার অবকাশ নেই। মোটকথা, যুদ্ধলব্ধ সম্পদের উপর নিরংকুশ কর্তৃত্ব আল্লাহ ও তার রাসূলের। তারা মানুষের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ বিবেচনায় রেখে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন। এ জন্যেই আল্লাহ বলেছেন : . فل الأنفال للَّه والرسول (বল, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং রাসূলের। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।) এরপর বদর যুদ্ধ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা’আলা বলেন :

আরও জেনে রেখো যে, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর, রাসূলের, স্বজনদের, ইয়াতীমদের, দরিদ্রদের এবং পথচারীদের (৮ : :১)। এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, পূর্বের আয়াতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের যে ফায়সালা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশাধীন রাখা হয়েছিল এ আয়াতে ঐ নির্দেশেরই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন সে নির্দেশই এখানে প্ৰদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যা বলা হল, তা আবু যায়দের বক্তব্য। আবু উবায়দ কাসিম ইবন সাল্লাম বলেন, : বদর যুদ্ধে প্রাপ্ত সমুদয় গনীমত রাসূলুল্লাহ্ (সা) যোদ্ধাদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করে দেন। এক-পঞ্চমাংশ সংরক্ষিত রাখেননি। পরবতী সময়ে খুমুস বা পঞ্চমাংশের বিধান নাযিল হয় এবং পূর্বের গনীমত বণ্টনের সকল নিয়ম রহিত হয়ে যায়। ওয়ালিবী ইবন আব্বাস থেকে এ রকমই বৰ্ণনা করেছেন। মুজাহিদ, ইকরিমা ও সুদী এ মতই পোষণ করেন। কিন্তু তা তর্কাতীত নয়। কেননা, খুমুসের (পঞ্চমাংশের) আয়াতের পূর্বের ও পরের সবগুলো আয়াতই বদর যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট। আয়াতগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এটাই দাবী করে যে, এগুলো এক সাথে একই সময়ে নাযিল হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে পৃথক পৃথকভাবে নাযিল হয়নি, যাতে রহিতকরণের প্রশ্ন উঠে। এছাড়া বুখারী ও মুসলিমে হযরত আলী বর্ণিত হাদীছে, যাতে তার সেই দুই উটের বর্ণনা আছে, যার কুজ হযরত হামযা (রা) কেটে ফেলেছিলেন সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এর একটি উট ছিল বদর যুদ্ধের গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ (খুমুস) থেকে প্রাপ্ত। আবু উবায়দ যে বলেছেন, বদর যুদ্ধের গনীমত থেকে খুমুস বের করা হয়নি, এ হাদীছ তার সাথে সাংঘর্ষিক। বরং এটাই সঠিক যে, বন্দরের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পোচ ভাগ করে এক ভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। ইমাম বুখারী, ইবন জারীর ও অন্যান্য আলিমগণ এই মত পোষণ করেন এবং এটাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *