2 of 2

৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া

আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া

আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর এই সারিয়া বড় বদর যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই آ۶ ما آfl, Nf ۹ آم>}{2i–یوم الفرقان یوم التقی الجمعان ۹۲۱۹R %C511 পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল। আর আল্লাহ তো সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

ইবন ইসহাক বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা) আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ। ইবন রিয়াব আলআসাদীকে বদর আল-উলা অর্থাৎ প্রথম বদর যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রজব মাসে প্রেরণ করেন। আর তাঁর সঙ্গে ৮ জন মুহাজিরকে প্রেরণ করেন, যাদের মধ্যে কোন আনসারী সাহাবী

ছিলেন না। আর সে আটজন হলেন আবু হুযায়ফা ইবন উতবা— বনু আসাদ ইবন খুযায়মার মিত্র উক্কাশা। ইবন মিহসান ইবন হারছান, বনী নাওফিলের মিত্ৰ উত্বা ইবন গাযিওয়ান, সাআদ ইবন আবু ওযাক্কাস আয-যুহরী, বনী আব্দীর মিত্র আমির ইবন রাবীআ আল-ওয়াইলী, বনী আব্দীর অপর এক মিত্ৰ ওয়াকিদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবদ মানাফ, বনী আব্দীর অপর মিত্র বনী সাআদ ইবন লােয়ছের অন্যতম সদস্য খালিদ ইবন বুকায়ার এবং সাহল ইবন বায়যা আল-ফিহরী— এরা ৭ জন। আর ৮ম জন হলেন তাদের আমীর আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ রাযিয়াল্লাহু আনহুম। ইবন ইসহাক সূত্রে ইউনুস বলেন, তাঁরা ছিলেন ৮জন, আর তাদের আমীর হলেন নবম ব্যক্তি। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার হাতে একখানা লিপি দিয়ে বলেন, দুদিন সফর করার আগে লিপিটি খুলবে না। দু’দিন পর তা খুলে তাতে লিখিত নির্দেশ দেখবে এবং তা অনুসরণ করবে। তবে সঙ্গীদের কাউকে যেন বাধ্য না করা হয়। দু’দিন সফর শেষে লিপি খুলে দেখেন, তাতে লেখা আছে—

আমার এই লিপি পাঠ করে সফর অব্যাহত রাখবে, শেষপর্যন্ত মক্কা এবং তাইফ-এর মধ্যস্থলে নাখলায়’ অবতরণ করবে। আর সেখানে কুরায়শের গতিবিধি লক্ষ্য করবে এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করবে। লিপি খুলে তিনি বললেন, : এ নির্দেশ আমার শিরোধাৰ্য। তারপর লিপির মর্ম সম্পর্কে সঙ্গীদেরকে জানালেন। তিনি একথাও বললেন যে, কাউকে বাধ্য করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কেউ শাহাদত কামনা করলে এবং সে জন্য আগ্রহী হলে সে যেন আমার সঙ্গে চলে। আর কারো তা পসন্দ না হলে সে যেন ফিরে যায়। আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নির্দেশ মতো চলতে থাকবো। এই বলে তিনি চলতে শুরু করেন এবং তার সঙ্গীরাও তার সঙ্গে চলতে থাকে। কেউই পেছনে থেকে যায়নি। হিজায ভূমি দিয়ে তারা চলতে থাকেন। ফারা’ এর উচু ভূমি মাদান যাকে বাহরান বলা হয়, সেখানে পৌঁছে সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস এবং উতবা ইবন গাযওয়ান তাদের উট হারিয়ে ফেললেন। এই উটের উপর তারা পালাক্রমে আরোহণ করতেন। তারা ২জন উটের সন্ধানে পেছনে রয়ে গেলেন এবং আবদুল্লাহ ইবন জাহাশি এবং তার অন্য সঙ্গীরা চলতে চলতে নাখলায় গিয়ে অবতরণ করলেন। কুরায়শের কাফেলা যে পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তাতে আমর ইবন হাযরামীও ছিল। ইবন হিশাম বলেন, হাযরামীর নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবন আব্বাদ আস-সদফ, উছমান ইবন আবদুল্লাহ ইবন মুগীরা আল মািখযুমী এবং তাঁর ভাই নাওফিল এবং হিশাম, ইবন মুগীরার আযাদকৃত গোলাম হাকাম ইবন কায়সান। মুসলিম বাহিনী তাদেরকে দেখে ভীত হয়ে পড়ে আর ওরা তাদের একেবারে নিকটেই অবস্থান নিয়েছিল। উক্কাশা। ইবন মিহসান, যার মস্তক মুণ্ডিত ছিল, প্রতিপক্ষের লোকেরা তাকে দেখে নিরাপদ বোধ করল। এরা উমরাকারী দল। তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এদিকে তাদের ব্যাপার নিয়ে সাহাবাগণ পরামর্শ করলেন, আর এ ঘটনাটি ছিল রজব মাসের শেষ দিনের। তারা বলাবলি করছিলেন, আল্লাহর কসম, আজ রাতে তোমরা যদি তাদেরকে ছেড়ে দাও, তবে তারা হেরোমে প্ৰবেশ করবে এবং তারা নিজেদেরকে তোমাদের থেকে রক্ষা করবে। আর তোমরা যদি তাদেরকে হত্যা কর, তবে এ হত্যাকাণ্ড হবে হারাম মাসে। বিষয়টি নিয়ে সাহাবাগণ দ্বিধাদ্বন্দূে পড়ে গেলেন। তারা ওদেরকে আক্রমণ করতে ভয় পেলেন। এরপর তারা মনে সাহস সঞ্চয় করে এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে কাবু করা সম্ভব, তাদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ হলেন। তাঁরা তাদের সঙ্গে যা কিছু আছে তা নিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত হলেন। এরপর ওয়াকিদ ইবন আবদুল্লাহ তামীমী আমর ইবন হাযরামীকে তীর নিক্ষেপে হত্যা করেন। উছমান ইবন আবদুল্লাহ এবং হাকীম ইবন কায়সানকে গ্রেফতার করা হয় এবং নাওফিল ইবন আবদুল্লাহ পলায়ন করে প্রাণ বাঁচায়। তারা তাকে পাকড়াও করতে ব্যর্থ হন। আবদুল্লাহ ইবন জাহাশি এবং তাঁর সঙ্গীরা দু’জন বন্দী এবং মাল-সামানসহ বণিক দলকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হন।

আবদুল্লাহ ইবন জাহাশি (রা)-এর পরিবারের কোনও এক সদস্য উল্লেখ করেন যে, আবদুল্লাহ তাঁর সঙ্গীদেরকে বলেন, : আমরা যে গনীমত লাভ করেছি, তাতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে। তা পৃথক করে অবশিষ্ট অংশ তিনি তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে বন্টন করে দেন।

ইবন ইসহাক বলেন, পরে আবদুল্লাহ ইবন জাহাশা (রা)-এর এ বন্টনকে অনুমোদন করে পরবর্তীকালে খুমুসের বিধান নাযিল হয়। তাঁরা রাসূলের দরবারে হাযির হলে তিনি বললেন : আমি তো তোমাদেরকে হারাম মাসে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেইনি। তাই দ্রব্য সামগ্ৰী ও কয়েদী দু’জন এমনিতেই পড়ে থাকে এবং রাসূল (সা) তা থেকে কিছুই গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। রাসূল (সা) এ কথা বললে তারা ভীষণ লজ্জিত হলেন এবং মনে করলেন যে, হারাম মাসে যুদ্ধ করে তারা ধ্বংস হয়ে গেছেন এবং অন্যান্য মুসলমান ভাইয়েরাও এজন্য তাদের নিন্দা করেন। আর কুরায়শরা বলতে শুরু করে মুহাম্মদ এবং তার সঙ্গীরা হারাম মাসকেও হালাল করে নিয়েছে। হারাম মাসেও তারা রক্তপাত শুরু করেছে, (গনীমতের) মাল গ্রহণ করছে এবং লোকদেরকে বন্দী করা শুরু করেছে। আর মক্কার মুসলমানরা কুরায়শদের জবাবে বলতেন, তারা যা করেছেন, তাতো করেছেন শাবান মাসেই (রজব মাসে নয়)। আর ইয়াহুদীরা এ দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিরুদ্ধে ফাল বের করে (শুভাশুভ নির্ণয় করে)। তারা বলে, আমর ইবন হাযরামীকে হত্যা করেছে ওয়াকিদ ইবন আবদুল্লাহ। আমার যুদ্ধকে চাঙ্গা করেছে, হাযরামী যুদ্ধে হাযির হয়েছে আর ওয়াকিদ ইবন আবদুল্লাহ যুদ্ধকে উসকে দিয়েছে। এ ব্যাপারে লোকেরা অনেক কথাবার্তা শুরু করলে আল্লাহ্ তা’আলা তার রাসূলের উপর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল

করেন?

ތ م; oރ, ރ ޗ s ع می بر م A s ما ه و کار که به بر ۰ که ه یسئلونلک عن الشهر الحرام قتال فیه قل قتال فیه کبیر و صد عن سبیل الله و گفر به و المسجد الحرام و اخراج اهاله منهٔ آگبر عند الله و الفثنهٔ آگبژ

من القتل ولا يزالون يقاتلونكم حتى يردّوكم عن دينكم أن استطاعوا

হারাম মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি বল, তাতে যুদ্ধ করা ভীষণ (অন্যায়), তবে আল্লাহর পথে বাধা দান করা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, মাসজিদুল হারামে যেতে বাধা দেয়া, তার বাসিন্দাদেরকে সেখান থেকে বের করা আল্লাহর নিকট তার চাইতেও বড় (গুনাহের কাজ)। আর ফিতনা হত্যার চাইতেও গুরুতর অন্যায়। তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবে, যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে দেয়–যদি তারা সক্ষম হয় (২ : ২১৭)। r

অর্থাৎ তোমরা যদি হারাম মাসে হত্যা করেই থােক, তবে তারা তো আল্লাহকে অস্বীকার করে তাঁর পথ থেকে বারণ করছে, বারণ করছে মাসজিদুল হারাম থেকে। আর মাসজিদুল হারাম থেকে তোমাদেরকে বের করা, অথচ-– তোমরা তো মসজিদুল হারামেরই বাসিন্দাএকাজটা তোমরা তাদের মধ্যে যাদেরকে হত্যা করেছ, তার চাইতেও গুরুতর অপরাধ, আর ফিতনা তথা অশান্তি-অরাজকতা-বিপর্যয় হত্যার চাইতেও গুরুতর অপরাধ। এতদসত্ত্বেও তারা এহেন নিকৃষ্ট ও গুরুতর অন্যায় কাজে অবিচল রয়েছে, তাওবা করছে না। সে সব অপকর্ম বর্জনও করছে না। একারণে আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

ولا يزالون يقاتلونكم حتى يردّوكم عن دينكم ان استطاعواতারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই যাবে, যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে দেয়–যদি তারা সক্ষম হয় (২৪২১৭)।

ইবন ইসহাক বলেন, : কুরআন করীমে যখন এ নির্দেশ নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা’আলা। যখন মুসলমানদের ভীতি কাটিয়ে দেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) কাফেলার ধনসম্পদ আর দু’জন বন্দীকে গ্রহণ করলেন। এ সময় কুরায়শরা উছমান এবং হাকাম ইবন কায়সানের মুক্তিপণসহ দূত প্রেরণ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তা গ্ৰহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, : তোমরা যতক্ষণ আমাদের দজন সঙ্গী অর্থাৎ সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস এবং উত্বা ইবন গাযওয়ানকে ফেরত না দেবে, ততক্ষণ আমরাও তোমাদের বন্দীদ্বয়কে মুক্তিপণের বদলে ফেরত দেবো না। কারণ আমাদের আশংকা হচ্ছে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে। তোমরা তাদের দু’জনকে হত্যা করলে আমরাও তোমাদের সঙ্গীদ্বয়কে হত্যা করবো। এরপর তারা সাআদ এবং উতবাকে নিয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ও মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের সঙ্গীদ্বয়কে ফেরত দেন। অবশ্য হাকাম ইবন কায়সান ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিষ্ঠাবান মুসলমানের জীবন যাপন করেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর খিদমতে অবস্থান করেন। বিরে মাউনার ঘটনায় তিনি শাহাদাতবরণ করেন। আর উছমান ইবন আবদুল্লাহ। মক্কায়ই ফিরে যায় এবং কাফির হিসাবেই সেখানে

মারা যায়।

ইবন ইসহাক বলেন, : কুরআন নাযিল হলে আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ এবং তাঁর সঙ্গীদের ভয়ভীতি দূর হয় এবং তারা সওয়াব লাভের আশা করেন। তাঁরা বললেন, : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি মুজাহিদদের অনুরূপ সওয়াব লাভের আশা করতে পারি? তখন আল্লাহ তা’আলা। আয়াত নাযিল করেন?

إن الذين أمنوا والذين هاجروا وجاهدوا فى سبيل اللّه أولئك يرجون

رحمة الله و الله غفور”رحيم. যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, তারা প্রত্যাশা করে আল্লাহর রহমত আর আল্লাহ মহাক্ষমাশীল, অতি দয়াময় (২ : ২১৮)। আল্লাহ তা’আলা তাদের এ মহা প্ৰত্যাশার প্রশংসা করেছেন।

ইবন ইসহাক বলেনঃ এ প্রসঙ্গে যুহরী ও ইয়াষীদ ইবন রূমান কর্তৃক উরওয়া ইবন যুবায়র থেকে হাদীছ বর্ণিত রয়েছে। অনুরূপভাবে মূসা ইবন উকবা তার মাগায়ী গ্রন্থে যুহরী সূত্রে উল্লেখ করেছেন। ঠিক এভাবেই শুআয়ব যুহরী সূত্রে উরওয়া থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং তাতে আছে, মুসলমান এবং মুশরিকদের সংঘাতে নিহত মুশরিকদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হল ইবন হাযরামী। আর ইবন হিশাম বলেন, : সে হল প্রথম ব্যক্তি, যাকে মুসলমানরা হত্যা করেছিলেন। আর এসব সম্পদই ছিল প্রথম সম্পদ, যা মুসলমানরা গনীমত হিসাবে লাভ করেছিলেন। আর উছমান (ইবন আবদুল্লাহ) এবং হাকাম ইবন কায়সান ছিল মুসলমানদের হাতে প্ৰথম বন্দী। আমি বলি : সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস সূত্রে ইমাম আহমদের বর্ণিত হাদীছ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ ছিলেন ইসলামে প্রথম আমীর। আর আমি তাফসীর গ্রন্থে ইবন ইসহাকের উপস্থাপিত নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উল্লেখ করেছি। তন্মধ্যে হাফিযী আবু মুহাম্মদ ইবন আবী হাতিম বর্ণিত হাদীছও রয়েছে। আপনি পিতার সূত্রে জুন্দুব ইবন আবদুল্লাহর বরাতে তিনি বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) একটা ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণ করেন। এবং তাদের আমীর নিযুক্ত করেন আবু উবায়দা ইবন জাররাহকে— মতান্তরে উবায়দা ইবন হারিছকে। তিনি রওনা হওয়ার সময় রাসূলের প্রেমে কান্নাকাটি করতে করতে বসে পড়লে রাসূলুল্লাহ তাঁর স্থলে আবদুল্লাহ ইবন জাহাশকে নিযুক্ত করেন এবং তাকে একটা লিপি দিয়ে নির্দেশ দেন যে, অমুক অমুক স্থানে পৌঁছার পূর্বে এ লিপি পাঠ করবে না। লিপিতে তিনি তাকে বলেন, সঙ্গীদের কাউকে তোমার সঙ্গে চলতে বাধ্য করবে না। লিপি পাঠ করে তিনি ইন্না লিল্লাহ পাঠ করেন এবং বলেন, আল্লাহ এবং রাসূলের নির্দেশ শুনলাম এবং মাথা পেতে নিলাম। তিনি তাদেরকে খবর দেন এবং লিপি পাঠ করে শোনান। তাদের মধ্যে ২জন পিছনে রয়ে যান আর অবশিষ্টরা তাঁর সঙ্গে থেকে যান। তারা ইবন হাযরামীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাকে হত্যা করেন। কিন্তু তারা জানতেন না যে, এদিনটা রজব মাসের, না জুমাদাছ ছানী মাসের অন্তর্ভুক্ত। তখন মুশরিকরা মুসলমানদেরকে বলতে শুরু করে— তোমরা তো হারাম মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটালে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা আয়াত নাযিল করলেন :

লোকেরা তোমাকে প্রশ্ন করে হারাম মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে। তুমি বল, তাতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায় (২ : ২১৭)। ইসমাঈল ইবন আবদুর রহমান সুদী কবীর তার তাফসীর গ্রন্থে

আবু মালিক সূত্রে ইবন আব্বাস ও ভিন্ন সূত্রে ইবন মাসউদসহ একদল সাহাবী সূত্রে উপরোক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন, :

রাসূলুল্লাহ (সা) একটা বাহিনী প্রেরণ করেন। তাঁরা ছিলেন ৭ জনের একটা দল। তাদের আমীর ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন জাহাশি (রা) আর তাঁরা হলেন (১) আম্মার ইবন ইয়াসির, (২) আবু হুযায়ফা ইবন উতবা, (৩) সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস, (৪) উতবা ইবন গাৰ্যওয়ান, (৫) সাহল ইবন বায়যা; (৬) আমির ইবন ফুহায়রা এবং (৭) উমর ইবন খাত্তাবের মিত্র ওয়াকিদ ইবন আবদুল্লাহ ইয়ারবৃঙ্গ (রা)। ইবন জাহাশের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) একটা চিঠি লিখে ‘বাতুনে মিলাল’ পৌছার আগে পত্রটা না খোলার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেন। ‘বাতনে মিলাল’ পৌছে পত্র খুলে দেখেন, তাতে লিখা আছে : ‘বাত্নে নাখলা’ পৌছা পর্যন্ত সফর অব্যাহত রাখবে। তখন তিনি সঙ্গীদেরকে বললেন, : যে ব্যক্তি শাহাদতের প্রত্যাশী, সে যেন সফর অব্যাহত রাখে এবং ওসীয়াত করে রাখে। কারণ আমিও ওসীয়াত করছি এবং রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী চলছি। এই বলে তিনি চলতে থাকেন এবং সাআদ ও উতবা পেছনে রয়ে যান। এরা দু’জন তাদের সওয়ারী হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং তার খোজে। সেখানে অবস্থান করেন। তিনি এবং তার অন্য সঙ্গীরা চলতে চলতে বাতনে নাখলা পৌঁছে অবস্থান গ্ৰহণ করেন। সেখানে হাকীম ইবন কায়সান, মুগীরা ইবন উছমান এবং আবদুল্লাহ ইবন মুগীরাকে দেখতে পান। উক্ত বর্ণনায় ওয়াকিদ কর্তৃক আমর ইবন হাযরামীর হত্যা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাঁরা গনীমত আর দু’জন বন্দী নিয়ে ফিরে আসেন। এটা ছিল মুসলমানদের অর্জিত প্রথম গনীমতের মাল। তখন মুশরিকরা বলতে শুরু করে–মুহাম্মদ আল্লাহর আনুগত্য দাবী করেন, অথচ তিনিই সর্বপ্রথম হারাম মাসকে হালাল করে রজব মাসে আমাদের সঙ্গীকে হত্যা করেছেন। মুসলমানরা বলে আমরা তো তাকে হত্যা করেছি। জুমাদাছ ছানী মাসে। সুদী বলেন: মুসলমানরা তাকে হত্যা করে রজব মাসের প্রথম রাত্রে এবং জুমাদাছ ছানী মাসের শেষ রাত্রে।

আমি (গ্রন্থকার আল্লামা ইবন কাহীর) বলি : হয়তো জুমাদাছ ছানী মাস অসম্পূর্ণ অর্থাৎ ২৯ দিন ছিল। একারণে মুসলমানরা মনে করেছিলেন ৩০ তারিখ রাত্রেও জুমাদাছ ছানী মাসই রয়ে গেছে। অথচ ঐ রাতেই রজবের চাঁদ দেখা গিয়েছিল। আল্লাহই ভাল জানেন। আওর্ষকী ইবন আব্বাস সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করে বলেন যে, ঘটনাটি ঘটে জুমাদাছ ছানী মাসের শেষ তারিখ রাত্রে। আসলে তা ছিল রজব মাসের প্রথম তারিখ, কিন্তু মসলমানরা তা জানতেন না। ইবন আবী হাতিম বর্ণিত জুন্দুবের হাদীছ ইতোপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। ইবন ইসহাকের বর্ণনায় ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তা ছিল রজব মাসের শেষ রাত্রি : তাদের আশংকা ছিল এই সুযোগ গ্রহণ না করলে এবং সুযোগ কাজে না লাগালে পরদিন হারাম মাস শুরু হয়ে যাবে। এ বিশ্বাস থেকেই তারা এরূপ করেন। যুহরী উরওয়া সূত্রে এরূপই বর্ণনা করেছেন, আর বায়হাকী তা উল্লেখ করেছেন। আসল ব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন। যুহরী উরওয়া সূত্রে বলেন, আমাদের নিকট এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইবন হাদরামীর রক্তপণ আদায় করেন এবং হারাম মাসকে হারাম করেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে নির্দোষ ঘোষণা করে আয়াত নাযিল করেন। এ বর্ণনা ইমাম বায়হাকীর।

ইবন ইসহাক বলেন, : আবদুল্লাহ ইবন জাহাশের গাযাওয়া সম্পর্কে মুশরিকদের সমালোচনার জবাবে আবু বকর সিদীক নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন। মুশরিকরা বলেছিল যে,

মুসলমানরা হারাম মাসকেও হালাল করা শুরু করেছে। ইবন হিশাম বলেন, কবিতাটি আসলে আবদুল্লাহ ইবন জাহাশের। কবিতাটি হলো এরূপ :

তোমরা হারাম মাসে হত্যাকে বড় অপরাধ বলে গণ্য করছ, সত্য-সন্ধানী যদি দেখে তাহলে তার চাইতেও জঘন্যতার হল

صلود کم عما یقول مسحد–و کفر به و الله راع و شاهلی–মুহাম্মাদ যা বলেন, তাতে তোমাদের বাধা দান এবং আল্লাহকে অস্বীকার করা, আর আল্লাহতো দেখেন এবং সাক্ষ্য দেন।

এবং মসজিদে হারাম থেকে তোমাদের বের করাটা তথাকার বাসিন্দাদের, যাতে দেখা না যায় আল্লাহর ঘরে কোন সিজদাকারীকে।

فانا وان عيرتمونسا بقتله–وار جف بالاسلام باغ و حاسد–আর আমরা। যদিও তোমরা আমাদেরকে অভিযুক্ত কর তার হত্যার জন্য, ইসলাম বিদ্বেষী আর বিদ্রোহী বলে গাল দাও।

নাখলায় ইবন হাযরামীর রক্তে সিক্ত করেছি। আমাদের বর্শা, যখন ওয়াকিদ প্রজুলিত করেছিল যুদ্ধের আগুন।

دما و ابن عبد الله عثمان بیننا–ینازعه غل من القید عاندআর আমাদের হাতে বন্দী ছিল উছমান ইবন আবদুল্লাহ, কয়েদ থেকে তাকে মুক্ত করতে প্ৰয়াসী হয় তারা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *