2 of 2

৫৫. আশীরার যুদ্ধ

আশীরার যুদ্ধ

ইবন হিশাম বলেন, : এ যাত্রায় নবী করীম (স) আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদকে মদীনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান। আর ওয়াকিদী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পতাকা ছিল

ঠেকাবার জন্যই রাসূলুল্লাহ্ (সা) অভিযানে বের হন। ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) বনু দীনারের পথ ধরে চলেন। এরপর ফাইফা আল-খিয়ার-এর উচু ভূমির দিকে যান এবং ইবন

আযহার-এর বাতহা প্রান্তরে একটা বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন। এ স্থানকে বলা হতো। যাতুস সাক। সেখানে নামায আদায় করেন। পরে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেখানে তার জন্যে আহার্য তৈয়ার করা হলে তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা আহার করেন। সেখানকার চুলার চিহ্ন সর্বজন বিদিত। মুশায়রিব নামক কুয়ো থেকে তাঁর জন্য পানি আনা হয়। এরপর তিনি রওনা হন খালায়েক স্থানটি বায়ে রেখে এবং আবদুল্লাহ গিরিসঙ্কটের পথ ধরে গমন করেন। এরপর সাৰ্ব্ববুশ শাদ হয়ে “মিলাল’ নামক স্থানে অবতরণ করেন। তিনি সেখানে মুজতামাউয যাবুআ নামক স্থানে অবস্থান নেন। এরপর ফারশা মিলাল হয়ে বাখীরাতুল। ইয়ামাম-এর পথ ধরে চলেন। তারপর সেখান থেকে পথের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে বাতনে ইয়াম্বু-এর আশীরা নামক স্থানে অবস্থান নেন এবং জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরার কিছু দিন কাটান। সেখানে তিনি বনী মুদলাজ এবং বনী মুদলাজের মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতা করে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ ক্ষেত্রেও কোন সংঘর্ষ হয়নি।

ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ সূত্রে. আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করে বলেন, আবু ইসহাক বলেনঃ আমি যায়দ ইবন আরকামের পাশে ছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, রাসূলুল্লাহ্ (স) কতটা যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন? তিনি বললেন, : ১৯টায়। আমি বললাম, আপনি তাঁর সঙ্গে ক’টাতে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, ১৭টায়। আমি বললাম, এগুলোর মধ্যে কোনটা প্রথম ছিল? তিনি বললেন, আল-আশীর বা আল-আসীর। বিষয়টা আমি কাতাদার সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি বললেন, আল-আশীর। এ হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, প্রথম গাযওয়া ছিল আল-আশীরা। এটাকে আশীরা, আসীরা, আশীর এবং আশীরাও বলা হয়ে থাকে। তবে যদি এর অর্থ হয় সে সব গাযওয়া, যাতে নবী করীম (স) স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছেন, তবে তার প্রথমটা হল আল-আশীরা। এ যুদ্ধে যায়দ ইবন আরকাম অংশগ্রহণ করেন। তখন আর তার পূর্বে এমন অন্য অভিযান হওয়াটা নাকচ হবে না যাতে যায়দ ইবন আরকাম অংশগ্রহণ করেননি। এভাবে মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের বর্ণনা এবং এ হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, এ দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) আলীকে লক্ষ্য করে যা বলার বলেছিলেন!। ইয়াখীদ ইবন মুহাম্মদ সূত্রে আম্মার ইবন ইয়াসির থেকে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে যে, আম্মার বলেন, বাতনে ইয়াম্বু-এর গাযওয়া আল-আশীরায় আমি আলী (রা)-এর সফর-সঙ্গী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেখানে অবতরণ করে এক মাস অবস্থান করেন। সেখানে তিনি বনী মুদলাজ এবং তাদের মিত্ৰ গোত্র বনী যামরার সঙ্গে সন্ধি করেন। তখন আলী ইবন আবু তালিব

ইয়াকযান!! আমরা কি তাদের কাছে যেতে পারি না? সেখানে তারা কেমন কাজ করছে আমরা তা প্রত্যক্ষ করবো। আমরা তাদের কাছে গেলাম এবং কিছু সময় তাদের কাজ প্রত্যক্ষ করলাম। এখানে নিদ্ৰা আমাদেরকে আচ্ছন করে এবং আমরা মাটিতে শুয়ে পড়ি। সেখানে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর পবিত্র পা দিয়ে আমাদেরকে নাড়া দিলে আমরা জাগ্রত হই। আমাদের গায়ে মাটি লেগেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আলীকে

বললেন, হে আবু তুরাব! কারণ তাঁর গায়ে মাটি লেগেছিল। আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে তাকে জানালাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, : আমি কি সে হতভাগা দু জন লোক সম্পর্কে তোমাদেরকে জানাবাে? আমরা বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, ছামূদ গোত্রের উহায়ামির, যে উগ্ৰী বধ করেছিল, আর সে ব্যক্তি, যে তোমার এ অঙ্গে আঘাত করবে। হে আলী— একথা বলতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) আলীর মাথায় তার হাত রাখলেন। অবশেষে এটা রক্তে রঞ্জিত হবে। একথা বলে তিনি দাড়ির উপর তাঁর পবিত্ৰ হাত স্থাপন করেন। এ সনদে হাদীসটি গরীব পর্যায়ের। তবে অন্য হাদীসে এর সমর্থন আছে–আলী (রা)-এর নাম আবু তুরাব রাখার পক্ষে। যেমন বুখারী শরীফে আছে : আলী (রা) একদিন ফাতিমার উপর রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদে ঘুমান। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের ঘরে এসে ফাতিমার নিকট আলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাগ করে তিনি মসজিদে চলে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (স) মসজিদে উপস্থিত হয়ে তাকে জাগ্রত করেন এবং বলেন, হে আবু তুরাব, উঠে দাড়াও! হে আবু তুরাব, উঠে দাড়াও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *