2 of 2

৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে

সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে

ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) এ স্থান থেকে হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব ইবন হাশিমকে ৩০ জনের একটা বাহিনীসহ ঈস’ নামক স্থানের দিকে সীফুল বাহরে প্রেরণ করেন। এ বাহিনীতে কোন আনসারী সাহাবী ছিলো না। এ বাহিনীটি সমুদ্র তীরে আবু জাহল ইবন হিশামের নেতৃত্বে পরিচালিত ৩০০ অশ্বারোহী বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এখানে মাজদী ইবন আমার আল-জুহানী উভয় বাহিনীর মধ্যে মধ্যস্থতা করে সমঝোতা করে দেন। ফলে উভয় দলের লোকেরা ফিরে যান— তাদের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয়নি।

ইবন ইসহাক বলেন, : কেউ কেউ বলেন যে, হামযার পতাকা ছিল প্রথম পতাকা, যা রাসূলুল্লাহ (সা) কোন মুসলমানের হাতে তুলে দেন। আর এটা এ কারণে যে, হামযা আর উবায়দার বাহিনী একই সময় প্রেরণ করা হয়, তাই তা লোকদের নিকট সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মূসা ইবন উকবা যুহরী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, উবায়দা ইবন হারিছের বাহিনীর পূর্বে হামযার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয। আর হামযার বাহিনীকে যে আবওয়ার যুদ্ধের পূর্বে প্রেরণ করা হয় তিনি তার পক্ষে প্রমাণও পেশ করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) আবওয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাজিরদের ৬০ জনের বাহিনীসহ উবায়দা ইবন হারিছকে প্রেরণ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন, তা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ওয়াকিদীর উদধূতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি বলেন, : প্রথম হিজরী সনের রমযান মাসে হামযার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয়, এরপর শাওয়াল মাসে প্রেরণ করা হয় উবায়দার বাহিনীকে। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক হামযা (রা)-এর একটা কবিতা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে তাঁর পতাকাই ছিল প্রথম পতাকা। তবে ইবন ইসহাক বলেন, হামযা এ কবিতা বলে থাকলে ঠিকই বলেছেন। কারণ, তিনি সত্য কথাই বলেন। আসলে কোনটা ঘটেছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে আমরা জ্ঞানীদের নিকট থেকে যা শুনেছি, সে অনুযায়ী উবায়দাই ছিলেন অগ্রবতী। আর তার কাসীদটি এই –

الا يا لقوى للتحلم والجهل – وللنقض من راى الرجال و للعقلহে আমার সম্প্রদায়, সাবধান! নিজেদের মিথ্যা স্বপ্ন আর অজ্ঞতার জন্য বিস্ময় প্রকাশ করা: বিস্ময় প্রকাশ কর জ্ঞান-বুদ্ধি আর লোকের মতের বিরুদ্ধাচরণের জন্যেও।

و للراكبينا بالمظالم لم نطاً – لهم حرمات من سوام ولا أهل আরো বিস্ময় প্রকাশ কর অশ্বারোহী বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের জন্যে। আমরা তাদের সম্পদ আর জনবলের অবমাননা করিনি।

((–

کانا باتلنا هم و لا بتل عند نا–لهم غیر امر بالعفاف و بالعدلযেন আমরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, অথচ আমরা তা করি না। আমরা তাদের জন্য পবিত্ৰতা আর ইনসাফের হুকুম ছাড়া আর কিছুই করি না।

و امر باسلام فلا يقبلونه – و ينزل منهم مثل منزلة الهزل – ইসলাম গ্রহণের হুকুম ছাড়া আমরা অন্য কোন হুকুম করি না। তবে তারা ইসলাম কবুল করে না, বরং তারা উপহাসের অবস্থান গ্রহণ করে।

فما برحوا حتى انتدابست لغارة – لهم حيث حلوا ابتغی راحة الفضل–তারা অটল থাকে (একই অবস্থায়) শেষ পর্যন্ত আমি প্রেরিত হই একটা আকস্মিক অভিযানে। যেখানেই তারা অবস্থান নেয়, সেখানে আমি কামনা করি তাদের জন্যে শান্তি আর কল্যাণ!

بامر رسول الله اول حافق – عليه لواء لم يكن لاح من قبل রাসূলুল্লাহর নির্দেশে তার উপর উড়ছে প্রথম পতাকা, যা ইতোপূর্বে কখনাে উডউীন হয়নি।

لواء الدیه النصر من ذی کرامة–اله عزیز فعله افضل الفعل–এ পতাকার সাথে আছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য, যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান, যার কাজ সর্বোত্তম কাজ।

عشیه ساروا حاشدین و کلنا–مراجله من غیظ اصحابه تغلی–তারা যাত্রা করে রাতের প্রথম প্রহরে প্রস্তুত হয়ে, আর আমাদের অন্তর উত্তেজিত হচ্ছিল তাদের প্রতি ক্ৰোধে।

فلما تراءینا اناخوا فعقلوا–مطایا و عقلنا مدی غرضی النبل۔–আমরা যখন পরস্পরে মুখোমুখি হলাম, তারা তখন সওয়ারী বসিয়ে বেঁধে ফেললো। আমরাও তখন বাহনগুলোকে বেঁধে নেই তীরের লক্ষ্য-সীমার বাইরে।

وقلنا لهم حبل الاله نصيرناومالكم الا الضلالة من حبل

গোমরাহী ছাড়া কোন আশ্রয় নেই।

فثار ابو جهلی هانالله باغیا–فخاب و رد الله کید ابی جهل–সেখানে আবু জাহ্ল গর্জে উঠে ঔদ্ধত্যে, আবু জাহলের চক্রান্তকে ব্যৰ্থ করে দেন আল্লাহ।

আমরা ছিলাম কেবল ত্ৰিশ জন অশ্বারোহী! আর তারা ছিল দুই শ” এক জন।

فیال لؤی لا تطیعوا غوا تکمو فیئوا الی الاسلام و المنهج السهلی

হে লুয়াই গোত্রের লোকেরা! তোমরা আনুগত্য করো না তোমাদের গোমরাহ লোকদের। ফিরে এসো তোমরা ইসলামে, সরল পথে।

فانی اخاف ان یصب علیکم–عذاب فتد عوا بالندامة والنکلআমার আশংকা হয় তোমাদের উপর নাযিল হবে আযাব তখন তোমরা লাঞ্ছিত হয়ে সন্তান হারানোর জন্যে রোদন করবে।

ইবন ইসহাক বলেন, আবু জাহল ইবন হিশাম–তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত হোক— এর জবাবে বলে

عجبت لاسباب الحفيظة والجهل – وللشاغبين بالخلاف وبالبطلএসব রাগ-লোভ আর অজ্ঞতার কারণসমূহ নিয়ে আমি অবাক, বিরোধ আর অর্থহীন কথায় যারা মেতে উঠে, তাদের জন্য আমি অবাক হই।

و للتاركين ما وجد نسب جدودنا – عليه ذوى الاحساب والسؤدد الجزل – যারা বিসর্জন দেয় পূর্ব পুরুষের রীতিনীতি, (তাদের জন্য বিস্ময়) যারা ছিলেন বংশ-মর্যাদা আর নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের অধিকারী।

অধিকাংশ আলিমই এই দু’টি কবিতা হামযা ও আবু জাহলের হওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *