2 of 2

৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান

রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান

আবওয়া বা ওয়াদানের যুদ্ধ হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব বা উবায়দা ইবন হারিছের বাহিনীর অভিযানের বিবরণ মাগাষী পৰ্যায়ে আলোচিত হবে। বুখারী ইবন ইসহাকের বরাতে

কিতাবুল মাগাষীতে বলেন, : রাসূলুল্লাহ (সা) সর্বপ্রথম যে যুদ্ধাভিযান বা গাযওয়ায় অংশ নেন, তা হল আবওয়া যুদ্ধ, এরপর বুয়াত, তারপর আশীরার যুদ্ধ। তারপর রাবী বলেন, যােয়দ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হযেছিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) কয়টি গাযওয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন? তিনি বললেন : ১৯টিতে। তবে মতান্তরে তিনি ১৭টিতে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে প্রথমটা হলো আসীরা বা আশীরার যুদ্ধ। গায়ওয়া আশীরার বর্ণনায় সনদ ও মূল পাঠসহ এ বিষয়ে আলোচনা পরে আসছে। আর সহীহ বুখারীতে বুরায়দা সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১৬টি গাযাওযায় যোগদান করেন। আর মুসলিম শরীফে একই রাবী থেকে বর্ণিত আছে, যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে ১৬টা গাযিওয়ায় অংশ গ্ৰহণ করেন। একই রাবী সূত্রে মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১৯টা গাযিওয়ায় যোগদান করেন। আর এগুলোর মধ্যে যুদ্ধ করেন ৮টায়। হুসাইন ইবন ওয়াকিদ… বুরায়দা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১৭টা গাযওয়ায় অংশ গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ করেন। ৮টাতে— বদর, উহুদ, আহ যাব, মুরায়সী, কাদীদ, খায়বর, মক্কা ও হুনায়ন ৷৷ ২৪ টা সারিয়া তথা বাহিনী প্রেরণ করেন। আর ইয়াকুব ইবন সুফিয়ান মাকহুল সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১৮টা গাযিওয়ায় অংশ গ্রহণ করেন, যুদ্ধ করেন ৮টিতে। এগুলোর প্রথম হলো বদর, পরে উহুদ, তারপর আহব্যাব, তারপর কুরায়যা, তারপর বিরে মাউনা, এরপর খুযাআ, গোত্রের বনু মুস্তালিক, এরপর গাযিওয়া খায়বর, তারপর গাযিওয়া মক্কা, তারপর হুনায়ন এবং তাইফ। কুরায়যার পর বিরে মাউনার উল্লেখ তর্কাতীত নয়। আর বিশুদ্ধ কথা এই যে, তা ছিল উহুদ যুদ্ধের পর, যে সম্পর্কে পরে আলোচনা আসছে। ইয়াকুব বলেন :… সাঈদ ইবন মুসায়্যাব বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা) ১৮টা গাযওয়ায় অংশগ্রহণ করেন। আরেকবার আমি তাকে বলতে শুনেছি, তিনি চব্বিশটিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি জানি না, এটা তার অনুমান, নাকি পরে তিনি শুনে বলেছেন। তাঁবারানী….. যুহরী থেকে বর্ণনা করে বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা) ২৪টা গাযওয়ায় অংশগ্রহণ করেন। আবদুর রহমান ইবন হুমায়দ তার মুসনােদ গ্রন্থে জাবির (রা)-এর বরাতে বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) ২১টি গাযওয়ায় অংশ গ্রহণ করেন। আর হাকিম হিশাম, সূত্রে কাতাদার বরাতে বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মাগাষী এবং সারিয়ার মোট সংখ্যা ছিল :৩টি। অতঃপর হাকিম বলেনঃ হয়তো তিনি গাযাওয়া ১ ও সারিয়া উভয় প্রকার অভিযান বুঝাতে চেয়েছেন। *

“আল-ইকলীল” গ্রন্থে আমি ধারাবাহিকভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রেরিত অভিযানসমূহের উল্লেখ করেছি, যেগুলোর সংখ্যা শতাধিক। হাকিম বলেন, আমাদের একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী বুখারায় আমাকে জানান যে, তিনি আবু আবদাল্লাহ মুহাম্মদ ইবন নাসর-এর গ্রন্থে যুদ্ধ ছাড়া সত্তরটির অধিক সারিয়া ও অভিযাত্রী বাহিনীর নাম পড়েছেন। হাকিমের এই বর্ণনা রীতিমতো বিস্ময়কর আর কাতাদার উক্তির যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন, তাও সন্দেহাতীত নয়। ইমাম আহমদ আযহার ইবন কাসিম রাসিবী সূত্রে কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর

১. গায়ওয়া হচ্ছে ঐ সব যুদ্ধাভিযান, যেগুলোতে স্বয়ং নবী করীম (সা) উপস্থিত ছিলেন। পক্ষান্তরে সারিয়া বলা

হয় তাঁর প্রেরিত বাহিনীগুলির অভিযানসমূহকে।

গাযওয়া ও সারিয়ার মোট সংখ্যা :৩টি। ২৪টি সারিয়া আর ১৯টি গাযওয়া। এর মধ্যে ৮টিতে যুদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো : বদর, উহুদ, আহ যাব, মুরায়সী’, খায়বর, মক্কা বিজয় এবং হুনায়ন। আর মূসা ইবন উকবা যুহরী সূত্রে বলেন, : এগুলো হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর গাযিওয়া, যেগুলোতে তিনি শরীক ছিলেন এবং যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় সনে বদরের যুদ্ধ রামাযান মাসে। এরপর তৃতীয় সনে শাওয়াল মাসে উহুদে তিনি লড়াই করেন। এরপর তিনি লড়াই করেন। খন্দকের যুদ্ধে। এটাকে আহব্যাবের যুদ্ধও বলা হয়। হিজরী :র্থ সনের শাওয়াল মাসে বনী কুরায়যা, এরপর ৫ম সনে শা’বান মাসে তিনি বনী মুস্তালিক ও বনী নিহইয়ানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ষষ্ঠ সনে তিনি খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, ৮ম সনে (মক্কা) বিজয়কালে রামাযান মাসে তিনি অভিযান পরিচালনা করেন। এরপর ৮ম সনে শাওয়াল মাসে তিনি হুনায়নের যুদ্ধ লড়েন ও তারপর তাইফ অবরোধ করেন। আর নবম সনে আবু বকর (রা)-এর নেতৃত্বে হজ্জ পালিত হয়। আর দশম সনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বিদায় হজ্জ করেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা) ১২টা গাযাওয়ায় অংশগ্রহণ করেন, যেগুলোতে কোন যুদ্ধ হয়নি। প্রথম যে গাযাওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা) অংশগ্রহণ করেন, তা ছিল আবওয়ার অভিযান।

হাম্বল ইবন হিলাল… যুহরীর বরাতে বলেন, : যুদ্ধ সম্পর্কে প্রথম যে আয়াতটি নাযিল হয় أذن للذين يقاتلون بأنهم ظلموا– 3 اCSTع أك”

আয়াতের শেষ পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমনের পর এ আয়াত নাযিল হয়। আর সর্বপ্রথম যে যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সা) শরীক হন, তা ছিল বদর যুদ্ধ— ১৭ রমযান শুক্রবার। তিনি বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) বনী নায়ীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এরপর শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ করেন অর্থাৎ তৃতীয় সনে। এরপর :র্থ সনে শাওয়াল মাসে খন্দক যুদ্ধ করেন। পরে ৫ম সনে শা’বান মাসে বনী লিহইয়ানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৬ষ্ঠ সনে খায়বার যুদ্ধ এবং ৮ম সনে শা’বান মাসে মক্কা বিজয়ের অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ৮ম সনে রমযান মাসে হুনায়নের যুদ্ধ হয়। আর রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১১টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যেগুলোতে কোন সংঘর্ষ হয়নি। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সর্বপ্রথম যে গাযওয়ায় অংশ নেন, তা হলো আবওয়া, এরপর আল-আশীরা, তারপর গাযওয়া গাতফান, তারপর গাযওয়া বনী সুলায়ম, এরপর গাযওয়া আল-আবওয়া, এরপর গাযিওয়া বদর আল-উলা (প্রথম বদর যুদ্ধ), তারপর গাযওয়া তাইফ, তারপর গাযাওয়া হুদায়বিয়া, তারপর গাযিওয়া সাফরা, এরপর গাযওয়া তাবুক ছিল তার শেষ অভিযান। এরপর তিনি সারিয়াসমূহের উল্লেখ করেন। হাফিয ইবন আসাকির-এর ইতিহাস গ্রন্থ থেকে নিয়ে আমি এটি লিপিবদ্ধ করেছি। তবে এটি একটি বিরল বর্ণনা। পরে আমরা ধারাবাহিকভাবে যা লিখবো, তা-ই সঠিক ও বিশুদ্ধ।

আর সিয়ার ও মাগাষীর বিষয়টা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা, এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং এর জন্যে প্রস্তুতি গ্ৰহণ আবশ্যক। যেমন মুহাম্মদ ইবন উমর আল-ওয়াকিদী আলী ইবন হুসাইন সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা কুরআন

মজীদের সূরা যেভাবে শিখতাম, সে ভাবে রাসূল (সা)-এর যুদ্ধের বিবরণসমূহ সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি। ওয়াকিদী বলেন? আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আমার চাচা যুহরীকে বলতে শুনেছি : ইলমুল মাগাষী হচ্ছে এমনি এক ইলাম, যাতে নিহিত রযেছে দুনিয়া ও আখিরাতের জ্ঞান।

আর মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) ইয়াহুদী মুনাফিকদের বড় বড় কাফির সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) যুদ্ধের জন্য প্ৰস্তৃতি গ্রহণ করলেন দুশমনের সঙ্গে জিহাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী। আশপাশের মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আল্লাহ তাকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দুপুরের দিকে মদীনায় আগমন করেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স তখন ছিল ৫৩ বছর। এটা ছিল নুবুওয়াতপ্রাপ্তির ১৩ বছর পরের ঘটনা। রবিউল আউয়াল মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো, রবিউছ ছানী, জুমাদাল উলা ও জুমাদাছ ছানী, রজব, শাবান, রমাযান, শাওয়াল, যিলকাদ ও যিলহাজ অর্থাৎ বছরের শেষাবধি তিনি মদীনায় অবস্থান করেন। এ বছর হজ্জের কর্তৃত্ব মুশরিকদের হাতে ছিল। মুহাররম মাসও তিনি এভাবে কাটালেন। মদীনায় আগমনের ১২ মাসের মাথায় সফর মাসে তিনি মুজাহিদের বেশে বের হন। ইবন হিশাম বলেন : এ সময় তিনি সাআদ ইবন উবাদাকে মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। ইবন ইসহাক বলেন, তিনি ওয়াদান পর্যন্ত পৌঁছেন; এটাকে আবওয়ার যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে। ইবন জারীর বলেন, : এটাকে ওয়াদানের যুদ্ধও বলা হয়। তিনি কুরায়শ এবং বনী যামরা ইবন বকর ইবন আবদ মানাত ইবন কিনানার উদ্দেশ্যে বহির্গত হন। এখানে তিনি বনী যামরার সাথে সমঝোতা করেন এবং বনী যামরার পক্ষ থেকে মাখশী ইবন আমরা যামরী উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। সে সময় ইনিই ছিলেন তাদের নেতা। রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় ফিরে আসেন, কোন সংঘাতের মুখোমুখি হননি। সফর মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো এবং রবিউল আউয়ালের প্রাথমিক দিনগুলো তিনি মদীনায় অবস্থান করেন। ইবন হিশাম বলেন, : এটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রথম গাযওয়া। আর ওয়াকিদী বলেন, : তাঁর পতাকা ছিল। চাচা হামযার হাতে এবং তার পতাকা ছিল সাদা রঙ্গের।

Leave a Reply to Taspiya Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *