অন্য মা

আমার মা না হয়ে তুমি 
          আর - কারো মা হলে 
ভাবছ তোমায় চিনতেম না , 
          যেতেম না ঐ কোলে ? 
মজা আরো হত ভারি , 
দুই জায়গায় থাকত বাড়ি , 
আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে , 
          তুমি পারের গাঁয়ে । 
এইখানেতেই দিনের বেলা 
যা - কিছু সব হত খেলা 
দিন ফুরোলেই তোমার কাছে 
          পেরিয়ে যেতেম নায়ে । 
হঠাৎ এসে পিছন দিকে 
আমি বলতেম , ' বল্‌ দেখি কে ?' 
তুমি ভাবতে , চেনার মতো 
           চিনি নে তো তবু । 
তখন কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে 
আমি বলতেম গলা ধরে — 
' আমায় তোমার চিনতে হবেই , 
          আমি তোমার অবু !' 
  
ঐ পারেতে যখন তুমি 
          আনতে যেতে জল , 
এই পারেতে তখন ঘাটে 
          বল্‌ দেখি কে বল্‌ ? 
কাগজ - গড়া নৌকোটিকে 
ভাসিয়ে দিতেম তোমার দিকে , 
যদি গিয়ে পৌঁছোত সে 
          বুঝতে কি , সে কার ? 
সাঁতার আমি শিখিনি যে 
নইলে আমি যেতেম নিজে , 
আমার পারের থেকে আমি 
          যেতেম তোমার পার । 
মায়ের পারে অবুর পারে 
থাকত তফাত , কেউ তো কারে 
ধরতে গিয়ে পেত নাকো , 
          রইত না একসাথে । 
দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে 
দেখা - দেখি দূরে দূরে — 
সন্ধেবেলায় মিলে যেত 
          অবুতে আর মাতে । 
  
কিন্তু হঠাৎ কোনোদিনে 
          যদি বিপিন মাঝি 
পার করতে তোমার পারে 
          নাই হত মা রাজি । 
ঘরে তোমার প্রদীপ জ্বেলে 
ছাতের ‘পরে মাদুর মেলে 
বসতে তুমি , পায়ের কাছে 
          বসত ক্ষান্তবুড়ি , 
উঠত তারা সাত ভায়েতে , 
ডাকত শেয়াল ধানের খেতে , 
উড়ো ছায়ার মতো বাদুড় 
          কোথায় যেত উড়ি । 
তখন কি মা , দেরি দেখে 
ভয় হত না থেকে থেকে 
পার হয়ে মা , আসতে হতই 
          অবু যেথায় আছে । 
তখন কি আর ছাড়া পেতে ? 
দিতেম কি আর ফিরে যেতে ? 
ধরা পড়ত মায়ের ওপার 
          অবুর পারের কাছে । 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *