২.১১ প্রবাস খণ্ড

এখানে তিতাসের মোহনা। মেঘনার সঙ্গে সম্পর্ক চুকাইয়া এখন ইহারই মুখ দিয়া প্রবেশ করিতে হইবে। যাইবার সময় মুখটা আরো সংকীর্ণ ছিল। এখন বর্ষার জলে সে-মুখ অনেক বড় হইয়া গিয়াছে।

তিতাসের মুখের ভিতর ঢুকিয়া খানিক আগাইবার পর সুবল দুত্তোরি বলিয়া দাঁড় তুলিয়া ফেলিল। বাঁশের খুঁটিটা একটানে তুলিয়া লইয়া মাটিতে ঠেকাইয়া কয়েকটা পাড় দিল। তারপর তার সঙ্গে নৌকার দড়ি বাঁধিয়া ছইয়ের ভিতরে ঢুকিয়া শুইয়া পড়িল। আরো একটু বেলা ছিল। আরো একটু আগানো যাইত। কিন্তু তিলক মুখ খুলিয়া একথা বলিতে সাহস পাইল না।

আবার রাত আসিল। রাত গভীর হইল। এবং এক সময়ে ফুরাইয়া গেল।

পূবদিকের আকাশ খোলাসা হইয়া আসিতেছে। কিশোর কি ভাবিয়া উঠিল। মাঝ নৌকায় দাঁড়াইয়া সেদিকে কতক্ষণ তাকাইয়া রহিল। তারপর গলুইয়ে গিয়া হাত বাড়াইয়া জল স্পর্শ করিল।

হাত জলে লাগে নাই। কিসে যেন লাগিতেচে। কিন্তু বড় নরম। আর কি ভীষণ ঠাণ্ডা। ঘার বাড়াইয়া চাহিয়া দেখিল, স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। দেখিয়া কিশোর খুব জোরে একটা চিৎকার দিল।

একটা নারীদেহ ভাসিয়া রহিয়াছে। কোমর হইতে পা অবধি একেবারে খাড়া জলের নীচে। বুকটা চিতাইয়া ভাসিয়া উঠিয়াছে। গলা টান হইয়া মাথা পিছন দিকে ঢলিয়া রহিয়াছে। লম্বা চুলগুলিকে লইয়া তিতাসের মৃদু স্রোত টানাটানি করিতেছে।

‘অ তিলক, দেইখ্যা যাও!’

চোখ কচলাইয়া তিলক বলিল, ‘কি কিশোর।’

‘তারে পাওয়া গেছে।’

তিলক উঠিয়া আসিয়া মড়াটাকে দেখিয়া, রাম রাম বলিতে বলিতে সুবলকে ডাকিয়া তুলিল। তারপর কালবিলম্ব না করিয়া নৌকা ছাড়িয়া দিল।

কিশোর ছইয়ের ভিতর চুপ করিয়া বসিয়াছিল।

দাঁড় টানিতে টানিতে ক্লান্ত হইয়া তিলক ছইয়ের ভিতরে আসিয়া বসিল। আগে লক্ষ্য ক’রে নাই। মালসার আগুনে টিকা ডুবাইয়া তামাকের চোঙ্গাটা কোথায় কিশোরকে জিজ্ঞাসা করিয়া যখন কোন সাড়া পাইল না, তখন লক্ষ্য করিল। কিশোরের চোখ দুইটা অস্বাভাবিক রকমের বড় আর জবাফুলের মত লাল হইয়া গিয়াছে। মুখে ফুটিয়া উঠিয়াছে ভীষণ এক দানবীয় ভাব। মাঝে মাঝে ডাইনে বাঁয়ে নীচে উপরে চোখ ঘুরাইতেছে।

আঁতকাইয়া উঠিয়া তিলক চিৎকার দিল, ‘অ সুবলা দেইখ্যা যা, কিশোর পাগল হইয়া গেছে।’

1 Comment
Collapse Comments

মাটির দেহ হবে সোনা নিলে গুরুর উপাসনা এই গানটা লিরিক দিবেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *