ওল্ড স্টেটমেন্ট
নিউ স্টেটমেন্ট
1 of 2

যোহন ১৩

১ ইহুদীদের নিস্তারপর্বের ঠিক পূর্বে যীশু বুঝতে পারলেন, য়ে এই জগত ছেড়ে পিতার কাছে তাঁর যাবার সময় হয়ে এসেছে। যীশু পৃথিবীতে তাঁর আপনজনদের সব সময় ভালবেসেছেন। এবার তিনি তাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার চূড়ান্ত প্রমাণ দিলেন।
২ যীশু ও তাঁর শিষ্যরা সান্ধ্য় আহার করছিলেন। দিযাবল ইতিমধ্যে শিমোন ঈষ্করিযোতের ছেলে যিহূদাকে প্ররোচিত করেছে যীশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেওযার জন্য।
৩ যীশু বুঝলেন য়ে পিতা তাঁকে সব কিছুর ওপর ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন, আর ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাচ্ছেন।
৪ তখন তিনি ভোজের আসর থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর উপরের জামাটা খুলে রেখে একটি গামছা কোমরে জড়ালেন।
৫ তারপর গামলায় জল ঢেলে শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিতে লাগলেন, আর য়ে গামছাটি কোমরে জড়িয়ে ছিলেন সেটি দিয়ে তাঁদের পা মুছিয়ে দিতে লাগলেন।
৬ এইভাবে তিনি শিমোন পিতরের কাছে এলে পিতর যীশুকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি কেন আমার পা ধুইয়ে দেবেন?’
৭ এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি যা করছি, তুমি এখন তা বুঝতে পারছ না, কিন্তু পরে বুঝবে।’
৮ পিতর তাঁকে বললেন, ‘আপনি কখনও আমার পা ধুইয়ে দেবেন না।’যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি যদি তোমার পা না ধুইয়ে দিই, তাহলে আমার সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক থাকবে না।’
৯ শিমোন পিতর তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি কেবল আমার পা নয়, হাত ও মাথা ধুইয়ে দিন!’
১০ যীশু তাঁকে বললেন, ‘য়ে স্নান করেছে তার পা ধোযা ছাড়া আর কিছু দরকার নেই, আর তো সর্বাঙ্গ পরিষ্কার হয়েছে। তোমরাও পরিষ্কার হয়েছ, কিন্তু সকলে নও।’
১১ যীশু জানতেন য়ে একজন তাঁকে ধরিয়ে দেবে, সেই কারণেই তিনি বললেন, ‘তোমরা সকলে পরিষ্কার নও।’
১২ তাদের পা ধোযানো শেষ করে তিনি আবার তাঁর উপরের জামাটি পরলেন ও টেবিলে তাঁর জায়গায় ফিরে এসে তাদের বললেন, ‘আমি তোমাদের প্রতি কি করলাম তা বুঝতে পারলে?
১৩ তোমরা আমায় ‘গুরু’ ও ‘প্রভু’ বলে থাকো; আর তোমরা তা ঠিকই বল, কারণ আমি তা-ই।
১৪ তাই আমি প্রভু ও গুরু হয়ে যদি তোমাদের পা ধুইয়ে দিই, তাহলে তোমাদেরও উচিত পরস্পরের পা ধোযানো।
১৫ আমি তোমাদের কাছে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম, য়েন আমি তোমাদের প্রতি য়েমন করলাম, তোমরাও তেমনি কর।
১৬ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, চাকর তার মনিবের থেকে বড় নয়, আর দূত তার প্রেরণকর্তার থেকে বড় নয়।
১৭ য়েহেতু তোমরা এসব জান, এইগুলি পালন কর, তাহলে তোমরা সুখী হবে।
১৮ ‘আমি তোমাদের সকলের বিষয়ে বলছি না। আমি জানি, কাদের আমি মনোনীত করেছি। কিন্তু শাস্ত্রে য়ে কথা লেখা হয়েছে তা অবশ্যই পূর্ণ হবে, ‘য়ে আমার সঙ্গে আহার করল, সেই আমার বিরুদ্ধে গেল।’
১৯ এসব ঘটবার আগেই আমি তোমাদের এসব বলছি, যাতে যখন এসব ঘটবে, তোমরা বিশ্বাস করবে য়ে আমিই তিনি।
২০ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমি যাকে পাঠাবো তাকে য়ে গ্রহণ করবে, সে আমাকেই গ্রহণ করবে। আর য়ে আমাকে গ্রহণ করে, আমায় যিনি পাঠিয়েছেন, সে তাঁকেও গ্রহণ করে।’
২১ এই কথা বলার পর যীশু খুবই উদ্বিগ্ন হলেন, আর খোলাখুলিই বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে।’
২২ শিষ্যরা পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন, আদৌ বুঝতে পারলেন না কার বিষয়ে তিনি বলছেন।
২৩ যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন যাকে যীশু খুবই ভালবাসতেন, তিনি যীশুর গায়ের ওপর হেলান দিয়ে ছিলেন।
২৪ শিমোন পিতর এই শিষ্যকে ইশারা করলেন এবং যীশুকে জিজ্ঞেস করতে বললেন য়ে উনি কার সম্পর্কে বলছেন।
২৫ তখন তিনি যীশুর বুকের উপর ঝুঁকে পড়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রভু, সে কে?’
২৬ যীশু বললেন, ‘আমি রুটির টুকরোটি বাটিতে ডুবিয়ে যাকে দেব সে-ই সেই লোক।’ এরপর তিনি রুটির টুকরো ডুবিয়ে শিমোন ঈষ্করিযোতের ছেলে যিহূদাকে দিলেন।
২৭ যিহূদা রুটির টুকরোটি নেওযার পর শয়তান তার মধ্যে ঢুকে পড়ল। এরপর যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি যা করতে যাচ্ছ তা তাড়াতাড়ি করোগে যাও।’
২৮ কিন্তু যাঁরা তাঁর সঙ্গে খাবার টেবিলে খেতে বসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউই বুঝতে পারলেন না তিনি কেন তাকে একথা বললেন।
২৯ কেউ কেউ মনে করলেন, যিহূদার কাছে টাকার থলি আছে, তাই হয়তো যীশু তাকে বললেন, পর্বের জন্য যা যা প্রযোজন তা কিনে আনতে যাও; অথবা হয়তো গরীবদের ওর থেকে কিছু দান করতে বলেছেন।
৩০ যিহূদা রুটির টুকরোটি গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চলে গেল। তখন রাত হয়ে গেছে।
৩১ যিহূদা সেখান থেকে চলে যাবার পর যীশু বললেন, ‘মানবপুত্র এখন মহিমান্বিত হলেন, আর ঈশ্বরও তাঁর মাধ্যমে মহিমান্বিত হলেন।
৩২ ঈশ্বর যদি তাঁর মাধ্যমে মহিমান্বিত হন, তবে ঈশ্বরও মানবপুত্রকে নিজের মাধ্যমে মহিমান্বিত করবেন, তিনি খুব শিগ্গিরই তা করবেন।’
৩৩ ‘আমার প্রিয় সন্তানরা, আমি আর কিছু সময় তোমাদের সঙ্গে থাকব। তোমরা আমায় খুঁজবে, আর আমি য়েমন ইহুদী নেতাদের বলেছিলাম, আমি য়েখানে যাচ্ছি তোমরা সেখানে য়েতে পার না, সেই কথাই এখন তোমাদেরও বলছি।
৩৪ আমি তোমাদের এক নতুন আদেশ দিচ্ছি, তোমরা পরস্পরকে ভালবেসো। আমি য়েমন তোমাদের ভালবাসি, তোমরাও তেমনি পরস্পরকে ভালবেসো।
৩৫ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি ভালবাসা থাকে তবে এর দ্বারাই সকলে জানবে য়ে তোমরা আমার শিষ্য।’
৩৬ শিমোন পিতর যীশুকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’যীশু বললেন, ‘য়েখানে এখন আমি যাচ্ছি, তুমি আমার পেছনে সেখানে আসতে পারবে না; কিন্তু পরে তুমি আমায় অনুসরণ করবে।’
৩৭ পিতর তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, এখন কেন আমি আপনার সঙ্গে য়েতে পারি না? আমি আপনার জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেব।’
৩৮ যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি কি সত্যি আমার জন্য প্রাণ দেবে? আমি তোমাকে সত্যি বলছি; কাল ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।