ওল্ড স্টেটমেন্ট
নিউ স্টেটমেন্ট
1 of 2

বিচারকচরিত ০৪

১ এহূদের মৃত্যুর পর, লোকরা আবার যে সব কাজ প্রভুর বিবেচনায মন্দ তাই করলো।
২ তাই প্রভু কনানের রাজা যাবীনের কাছে ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত হতে দিলেন। যাবীন হবোশত্‌ শহরে রাজত্ব করত। তার সৈন্যবাহিনীর প্রধান ছিল সীষরা। সীষরা হরোশত্‌ হাগোযিম শহরে বাস করত।
৩ সীষরার ৯০0 লোহার রথ ছিল। সীষরা ২০ বছর ইস্রায়েলবাসীদের ওপর অত্যন্ত নিষ্ঠুর ছিল এবং সে তাদের উত্‌পীড়ন করেছিল। এর ফলে তারা সাহায্যের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
৪ দবোরা নামের একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম ছিল লপ্পীদোত। সেই দবোরা ইস্রায়েলের বিচার করতেন।
৫ একদিন দবোরা খেজুর গাছের নীচে বসে ছিলেন। এই খেজুর গাছের নাম দবোরার খেজুর গাছ। ইস্রায়েলের লোকরা তাঁর কাছে এল। সীষরাকে নিয়ে কি করা যায় সে বিষযে তারা তাঁর পরামর্শ চাইল। দবোবার খেজুর গাছটি ছিল ইফ্রয়িমের পাহাড়ি অঞ্চলে রামা আর বৈথেল শহরের মাঝখানে।
৬ দবোরা বারক নামের একজন লোককে খবর পাঠালেন। তিনি তাকে দেখা করতে বললেন। বারক, অবীনোযমের পুত্র থাকে নপ্তালির কেদশ শহরে। বারক দেখা করতে এলে দবোরা তাকে বললেন, “ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর তোমাকে আজ্ঞা দিচ্ছেন; ‘নপ্তালি এবং সবূলুন পরিবারগোষ্ঠীর ১০,000 লোক জোগাড় কর এবং তাদের তাবোর পর্বতে নিয়ে যাও।
৭ রাজা যাবীনের সেনাপতি সীষরা যাতে তোমার কাছে আসে আমি তার ব্যবস্থা করব। আমি তাকে তার রথ আর সৈন্যদল নিয়ে কীশোন নদীর ধারে পাঠিয়ে দেব। তারপর তোমাদের কাছে সে হেরে যাবে। এ ব্যাপারে আমি হব তোমাদের সহায়।”‘
৮ বারক দবোরাকে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে গেলে যাব, যা বলবেন করব। কিন্তু আপনি না গেলে আমিও যাবো না।”
৯ দবোরা বললেন, “আমি নিশ্চয়ই যাব।” কিন্তু তোমার মনোভাবের জন্য সীষরাকে পরাজিত করবার সম্মান তোমার হবে না। প্রভু একজন মহিলাকেই সীষরাকে পরাজিত করবার জন্য পাঠাবেন।দবোরা বারকের সঙ্গে কেদশ শহরে গেলেন।
১০ কেদশে বারক সবূলূন এবং নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠীকে ডেকে ১০,000 লোককে জড়ো করে তার পেছন পেছন যেতে বললেন। দবোরাও বারকের সঙ্গে গেলেন।
১১ এখন, হেবর নামে কেনীয় সম্প্রদাযের একটি লোক ছিল। সে অন্য কেনীয়দের ত্যাগ করেছিল। কেনীয়রা ছিল মোশির শ্বশুর হোবরের উত্তরপুরুষ। হেবর ওক গাছের পাশে সানন্নীম নামে একটি জায়গায় বাস করত। সানন্নীম কেদশ শহরের খুব কাছেই অবস্থিত।
১২ সীষরাকে একজন খবর দিল, অবীনোযমের পুত্র বারক তাবোর পর্বতে রযেছে।
১৩ খবর শুনে সীষরা ৯০0 লোহার রথ আর সমস্ত লোকদের নিয়ে হরোশত্‌ হাগোযিম শহর থেকে কীশোন নদীর দিকে রওনা হল।
১৪ দবোরা তখন বারককে বললেন, “আজ সীষরাকে পরাজিত করবার জন্য প্রভু তোমার সহায় হবেন। প্রভু যে ইতিমধ্যেই তোমার জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দিয়েছেন তা তুমি নিশ্চয়ই জানো।” তাই বারক ১০,000 লোক নিয়ে তাবোর পর্বত থেকে নেমে এল।
১৫ লোকজন নিয়ে বারক এবার সীষরাকে আক্রমণ করল। যুদ্ধের সময় প্রভু সীষরা আর তার রথ, লোকজন সবকিছুর মধ্যে একটা তালগোল পাকিযে দিলেন। লোকজন সব কি যে করবে বুঝতে পারছিল না। এই সুয়োগে বারক ও তার সৈন্যবাহিনী সীষরার বাহিনীকে হারিযে দিল। কিন্তু সীষরা রথ ফেলে দিয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেল।
১৬ বারক যুদ্ধ চালিয়ে গেল। সে আর তার সৈন্যরা রথ আর বাহিনীকে হরোশত্‌ হাগোযিম পর্য়ন্ত তাড়িয়ে নিয়ে গেল। তারা সব লোককে তরবারি দিয়ে কেটে ফেলল। একজনও বেঁচে রইল না।
১৭ কিন্তু সীষরা পালিয়ে গেল। সে একটা তাঁবুতে এলো। সেই তাঁবুতে যাযেল নামে একজন স্ত্রীলোক বাস করত। তার স্বামীর নাম ছির হেবর। হেবর ছিল কেনীয় সম্প্রদাযের লোক। তার পরিবার হাত্‌সোরের রাজা যাবীনের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করত। সীষরা যাযেলের তাঁবুর দিকে ছুটে যাচ্ছিল।
১৮ সীষরাকে ছুটে আসতে দেখে যাযেল তার তাঁবু থেকে বেরিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলো। যাযেল সীষরাকে বলল, “আমার তাঁবুতে আসুন। কোন ভয় নেই।” সীষরা যাযেলের তাঁবুতে ঢুকলো। যাযেল একটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলো।
১৯ সীষরা বলল, “আমি তৃষ্ণার্ত। দয়া করে আমায় এক গ্লাস জল দিন।” একটা চামড়ার বোতলে যাযেল দুধ রাখত। সীষরাকে দুধ খাইযে যাযেল আবার তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল।
২০ সীষরা যাযেলকে বলল, “তাঁবুর দরজার পাশে আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, “ভেতরে কেউ আছে কি না, বলবেন না কেউ নেই।”‘
২১ কিন্তু যাযেল তাঁবু খাটানোর একটা গোঁজ আর একটা হাতুড়ি পেয়ে গেল। তারপর চুপিচুপি সীষরার কাছে গেল। সীষরা খুবই ক্লান্ত ছিল, তাই সে ঘুমাচ্ছিল। যাযেল গোঁজটা সীষরার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে দিল। গোঁজটা তার মাথার মধ্যে ঢুকে বেরিয়ে এসে মাটিতে ঢুকে গেল। সীষরা মারা গেল।
২২ আর ঠিক তখনই বারক সীষরার খোঁজে যাযেলের তাঁবুর কাছে এলো। যাযেল তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে বারককে বলল, “ভেতরে আসুন। যাকে খুঁজছেন তাকে দেখাচ্ছি।” বারক যাযেলের সঙ্গে ভেতরে এল। দেখল সীষরা মরে মাটিতে পড়ে আছে। তার মাথার ভেতর গোঁজ ঢুকে আছে।
২৩ সেদিন ঈশ্বর ইস্রায়েলের লোকদের হয়ে কনানদের রাজা যাবীনকে পরাজিত করলেন।
২৪ ইস্রায়েলবাসীরা ক্রমে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো, যে পর্য়ন্ত না তারা কনানদের রাজা যাবীনকে পরাজিত করল। শেষে তারা যাবীনকে বিনষ্ট করল।