• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মহরম পর্ব ২৬ প্রবাহ

লাইব্রেরি » মীর মশাররফ হোসেন » বিষাদ সিন্ধু (উপন্যাস) » ০১.মহরম পর্ব » মহরম পর্ব ২৬ প্রবাহ

ইমাম হোসেনের অশ্বের পদধ্বনি শ্রবণ করিয়া এজিদের সৈন্যগণ চমকিত হইল। সকলের অন্তর কাঁপিয়া উঠিল। সকলেই দেখিতে লাগিল, হোসেন স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে আসিতেছেন। দেখিতে দেখিতে চক্ষেরে পলকে মহাবীর হোসেন যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ওরে বিধর্মী পাপাত্মা এজিদ্! তুই কোথায়? তুই নিজে দামেস্কে থাকিয়া নিরীহ সৈন্যদিগকে কেন রণস্থলে পাঠাইয়াছিস? আজ তোকে পাইলে জ্ঞাতি-বধ বেদনা, ভ্রাতুষ্পুত্র কাসেমের বিচ্ছেদ-বেদনা এবং স্বীয় পুত্রগণের বিয়োগ-বেদনা, সমস্তই আজ তোর পাপ শোণিতে শীতল করিতাম-তোর প্রতি লোমকূপ হইতে হলাহল বাহির করিয়া লোমে লোমে প্রতিশোধ লইতাম। জানিলাম, কাফেরমাত্রেই চতুর। রে নৃশংস! অর্থলোভ দেখাইয়া পরের সন্তানগণকে অকালে নিধন করিবার নিমিত্ত পাঠাইয়াছিস্। ওরে অর্থলোভী পিশাচেরা! ধর্মভয় বিসর্জন দিয়া আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিয়াছিস! আয় দেখি, কে সাহস করিয়া আমার অস্ত্রের সম্মুখে আসিবি, আয়! আর বিলম্ব কেন? যাহার পক্ষে ইহজগৎ ভারবোধ হইয়া থাকে, যে হতভাগ্য আপন মাতাকে অকালে পুত্রশোকে কাঁদাইতে ইচ্ছা করিয়া থাকে, যৌবনে কুলস্ত্রীর বৈধব্য কামনা যাহার অন্তরে উদয় হইয়া থাকে, সে শীঘ্র আয়! আর আমার বিলম্ব সহ্য হইতেছে না।”

এজিদ্-পক্ষীয় সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা আবদুর রহমান-হোসেনের সহিত যুদ্ধ করিতে তাহার চিরসাধ। অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া সেই আবদুর রহমান অসি চালনা করিতে করিতে হোসেনের সম্মুখে আসিয়া বলিতে লাগিল, “হোসেন! তুমি আজ শোকে তাপে মহাকাতর; বোধ হয়, আজ দশ দিন তোমার পেটে অন্ন নাই; পিপাসায় কণ্ঠতালু বিশুষ্ক; এই কয়েক দিন যে কেন বাঁচিয়া আছ বলিতে পারি না। আর কষ্টভোগ করিতে হইবে না, শীঘ্রই তোমার মনের দুঃখ নিবারণ করিতেছি। বড় দর্পে অশ্বচালনা করিয়া বেড়াইতেছ; এই আবদুর রহমান তোমার সম্মুখে দাঁড়াইল, যত বল থাকে, অগ্রে তুমিই আমাকে আঘাত কর। লোকে বলিবে যে, ক্ষুৎপিপাসাকুল, শোকতাপবিদগ্ধ, পরিজন-দুঃখকাতর, উৎসাহহীন বীরের সহিত কে না যুদ্ধ করিতে পারে? এ দুর্নাম আমি সহ্য করিব না। -তুমিই অগ্রে আঘাত কর। তোমার বল বুঝিয়া দেখি; যদি আমার অস্ত্রঘাত সহ্য করিবার উপযুক্ত হও, আমি প্রতিঘাত করিব; নতুবা ফিরিয়া যাইতে তোমার ন্যায় হীন, ক্ষীণ দুর্বল যোদ্ধাকে খুঁজিয়া তোমার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাইয়া দিব।”

হোসেন বলিলেন, “এত কথার প্রয়োজন নাই! আমার বংশমধ্যে কিংবা জাতিমধ্যে অগ্রে অস্ত্র নিক্ষেপের রীতি থাকিলে তুমি এত কথা কহিবার সময় পাইতে না। হারামজাদ্! বেঈমান! কাফের, শীঘ্র যে কোন অস্ত্র হয়, আমার প্রতি নিক্ষেপ কর। সমরক্ষেত্রে আসিয়া বাক্বিণ্ডতার দরকার কি? অস্ত্রই বলপরীক্ষার প্রধান উপকরণ! কেন বিলম্ব করিতেছিস্? যে কোন অস্ত্র হউক, একবার নিক্ষেপ করিলেই তোর যুদ্ধসাধ মিটাইতেছি। বিলম্বে তোর মঙ্গল বটে, কিন্তু আমার অসহ্য।”

হোসেনের মস্তক লক্ষ্য করিয়া তরবারি উত্তোলনপূর্বক “তোমার মস্তকের মূল্য লক্ষ টাকা!” এই বলিয়াই আবদুর রহমান ভীম তরবারি আঘাত করিলেন। হোসেনের বর্মোপরি আবদুর রহমানের তরবারি সংলগ্ন হইয়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বহির্গত হইল। রহমান লজ্জিত হইয়া পলায়নের উপক্রম করিল। হোসেন বলিলেন, “অগ্রে সহ্য কর্, শেষে পলায়ন করিস্।” এই কথা বলিয়াই এক আঘাতে রহমানের অশ্ব সহিত দেহ দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন। এই ঘটনা দেখিয়া এজিদের সৈন্যগণ মহাভয়ে কম্পিত হইতে লাগিল। কেহই আর হোসেনের সম্মুখীন হইতে সাহস করিল না। বলিতে লাগিল, “যদি হোসেন আজ এ সময় পিপাসা নিবারণ করিতে বিন্দুমাত্রও জল পায়, তাহা হইলে আমাদের একটি প্রাণীও ইহার হস্ত হইতে প্রাণ বাঁচাইতে পারিবে না। যুদ্ধ যতই হউক, বিশেষ সতর্ক হইয়া দ্বিগুণ সৈন্য দ্বারা ফোরাতকূল এখন ঘিরিয়া রাখাই কর্তব্য। যে মহাবীর একাঘাতে আবদুর রহমানকে নিপাত করিল, তাহার সম্মুখে কে সাহস করিয়া দাঁড়াইবে? আমরা রহমানের গৌরবেই চিরকাল গৌরব করিয়া বেড়াই, তাহারই যখন এই দশা হইল, তখন আমরা তো হোসেনের অশ্বপদাঘাতেই গলিয়া যাইব।” পরস্পর এইরূপ বলাবলি করিয়া সকলেই একমতে দ্বিগুণ সৈন্য দ্বারা বিশেষ সুদৃঢ়রূপে ফোরাতকূল বন্ধ করিল।

হোসেন অনেকণ পর্যন্ত সমরপ্রাঙ্গণে কাহাকেও না পাইয়া শত্রুশিবিরাভিমুখে অশ্বচালনা করিলেন। তদ্দর্শনে অনেকেরই প্রাণ উড়িয়া গেল। কেহ অশ্বপদাঘাতে নরকে গমন করিল, কেহ কেহ সাহসের উপরে নির্ভর করিয়া হোসেনের সম্মুখে সশস্ত্র হইয়া দাঁড়াইল। কিন্তু হাতের অস্ত্র হাতেই রহিয়া গেল, মস্তকগুলি দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া দূরে দূরে বিনিক্ষিপ্ত হইল।

মহাবীর হোসেন বিধর্মীদিগকে যেখানে পাইলেন, যে অস্ত্র যে সুযোগে যাহাকে মারিতে পারিলেন, সেই অস্ত্রের দ্বারাই তাহাকে মারিয়া নরক পরিপূর্ণ করিতে লাগিলেন। শিবিরস্থ অবশিষ্ট সৈন্যগণ প্রাণভয়ে যাহারা যে দিকে সুবিধা ঊর্ধ্বশ্বাসে সেই দিকে দৌড়াইয়া প্রাণ রক্ষা করিল। যাহারা তাঁহার সম্মুখে দৌড়াইয়া আসিল, তাহারা কেহই প্রাণরক্ষা করিতে পারিল না। সকলেই হোসেনের অস্ত্রে দ্বিখণ্ডিত হইয়া পাপময় দেহ পাপরক্তে ভাসাইয়া নরকগামী হইল। অবশিষ্ট সৈন্যগণ র্কাবালাপার্শ্বস্থ বিজন বনমধ্যে পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিল; ওমর, সীমার, আবদুল্লাহ্ জেয়াদ প্রভৃতি সকলেই হোসেনের ভয়ে বনমধ্যে লুকাইল।

শত্রুপক্ষের শিবিরস্থ সৈন্য একেবারে নিঃশেষিত করিয়া হোসেন ফোরাতকূলের দিকে অশ্ব চালাইলেন। ফোরাত-রক্ষীরা হঠাৎ পলাইল না, কিন্তু অতি অল্পক্ষণ হোসেনের অসির আঘাত সহ্য করিয়া আর তিষ্ঠিবার সাধ্য হইল না। কেহ জলে ঝাঁপ দিয়া পড়িল, কেহ জঙ্গলে লুকাইল, কেহ কেহ অন্য দিকে পলাইল, কিন্তু বহুতর সৈন্যই হোসেনের অস্ত্রাঘাতে দ্বিখণ্ডিত হইয়া রক্তস্রোতের সহিত ফোরাত-স্রোতে ভাসিয়া চলিল। কোন স্থানে শত্রুসৈন্যের নাম মাত্রও নাই, রক্তস্রোত মধ্যে শরীরের কোন কোন ভাগ লক্ষিত হইতেছে মাত্র। যে এজিদের সৈন্যকোলাহলে প্রচণ্ড কারবালা প্রান্তর, সুপ্রশস্ত ফোরাতকূল ঘনঘন বিকম্পিত হইত; এক্ষণে হোসেনের অস্ত্রাঘাতে সেই কার্‌বালা একেবারে জনশূন্য নীরব প্রান্তর, হোসেন ব্যতীত প্রাণিশূন্য। ফোরাত-তীর প্রকৃতিদেবীর বক্ষক্ষেত্রস্থ স্বাভাবিক শোভা একেবারে পরিবর্তিত হইয়া লোহিতবর্ণ ধারণ করিয়া। নিন্মভূমিতে রক্তের স্রোত কল কল শব্দে প্রবাহিত হইতেছে। রক্তমাখা খণ্ডিত দেহ ভিন্ন আর কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। হোসেন জলপিপাসায় এমনি কাতর হইয়াছেন যে, আর কথা কহিবার শক্তি নাই। এতক্ষণ কেবল শত্রুবিনাশের উৎসাহে উৎসাহিত ছিলেন বিধর্মীয় রক্তস্রোত বহাইয়া পিপাসার অনেক শান্তি হইয়াছিল, এখন শত্রু শেষ হইল, পিপাসাও অসহ্য হইয়া উঠিল। শীঘ্র শীঘ্র ফোরাতকূলে যাইয়া অশ্ব হইতে অবতরণপূর্বক একেবারে জলে নামিলেন। জলের পরিষ্কার স্নিগ্ধভাব দেখিয়া ইচ্ছা করিলেন যে, এককালে নদীর সমুদয় জল পান করিয়া ফেলেন। অঞ্জলিপূর্ণ জল তুলিয়া মুখে দিবেন, এমন সময় সমুদয় কথা মনে পড়িল। আত্মীয় বন্ধুর কথা মনে পড়িল, কাসেমের কথা মনে পড়িল, আলী আক্‌বর প্রভৃতির কথা মনে পড়িল, পিপাসার্ত দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা মনে পড়িল। “একবিন্দু জলের জন্য ইহারা কত লালায়িত হইয়াছে, কত কাতরতা প্রকাশ করিয়াছে, কত কষ্টভোগ করিয়াছে, এই জলের নিমিত্তই আমার পরিজনেরা পুত্রহারা, পতিহারা, ভ্রাতাহারা হইয়া মাথা ভাঙ্গিয়া মরিতেছে, আমি এখন শত্রুহস্ত হইতে ফোরাতকূল উদ্ধার করিয়া সর্বাগ্রেই নিজে সেই জলপান করিব!-নিজের প্রাণ পরিতৃপ্ত করিব!-আমার প্রাণের মায়াই কি এত অধিক হইল। ধিক্ আমার প্রাণে! -এই জলের জন্য আলী আক্‌বর আমার জিহ্‌বা পর্যন্ত চুষিয়াছে। এক পাত্র জল পাইলে আমার বংশের উজ্জ্বল মণি মহাবীর কাসেম আজ শত্রুহস্তে প্রাণত্যাগ করিত না। এখনো যাহারা জীবিত আছে তাহারা তো শোকতাপে কাতর হইয়া পিপাসায় মৃতবৎ হইয়া রহিয়াছে। -এ জল আমি কখনোই পান করিব না,-ইহজীবনেই আর পান করিব না।” এই কথা বলিয়া হস্তস্থিত জল নদীগর্ভে ফেলিয়া দিয়া তীরে উঠিলেন। কি ভাবিলেন তিনিই জানেন। একবার আকাশের দিকে লক্ষ্য করিয়া পবিত্র শিরস্ত্রাণ শির হইতে দূরে নিক্ষেপ করিলেন। দুই এক পদ অগ্রসর হইয়াই কোমর হইতে কোমরবন্দ খুলিয়া দূরে ফেলিয়া দিলেন। সেই পবিত্র মোজা আর পায়ে রাখিলেন না। ভ্রাতৃশোক, পুত্রশোক, সকল শোক একত্র আসিয়া তাঁহাকে যেন দগ্ধ করিতে লাগিল। কি মনে হইল, তাহাতেই বোধ হয়, পরিচিত পায়জামা মাত্র অঙ্গে রাখিয়া আর আর সমুদয় বসন খুলিয়া ফেলিলেন। অস্ত্রশস্ত্র দূর নিক্ষেপ করিয়া ফোরাতস্রোতের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলেন। হোসেনের অশ্ব প্রভুর হস্ত, পদ ও মস্তক শূন্য দেখিয়াই যেন মহাকষ্টে দুই চক্ষু হইতে অনবরত বাষ্পজল নির্গত করিতে লাগিল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্, ওমর, সীমার আর কয়েকজন সৈনিক যাহারা জঙ্গলে লুকাইয়াছিল তাহার দূর হইতে দেখিল যে, ইমাম হাসেন জলে নামিয়া অঞ্জলিপূর্ণ জল তুলিয়া পুনরায় ফেলিয়া দিলেন। পান করিলেন না। তদনন্তর তীরে উঠিয়া সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র, অবশেষে অঙ্গের বসন পর্যন্ত দূরে নিক্ষেপ করিয়া শূন্যশির শূন্যশরীরে অশ্বের নিকট দণ্ডয়মান আছেন। এতদ্দর্শনে ঐ কয়েকজন একত্রে ধনুর্বাণ হস্তে হোসেনকে ঘিরিয়া ফেলিল। হোসেন স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া আছেন, কাহাকেও কিছু বলিতেছেন না। স্থিরভাবে স্থিরনেত্রে ধনুর্ধারী শত্রুদিগকে দেখিতেছেন, মুখে কোন কথা নাই। এখন নিরস্ত্র অবস্থায় শত্রুহস্তে পতিত হইয়া মনে কোন প্রকার শঙ্কাও নাই! অন্যমনস্কে কি ভাবিতেছেন, তাহা ঈশ্বরই জানেন, আর তিনিই জানেন। ক্ষণকাল পরে তিনি ফোরাতকূল হইতে অরণ্যাভিমুখে দুই এক পদ অগ্রসর হইতে লাগিলেন। শত্রুগণ চতুষ্পার্শ্বে দূরে দূরে তাঁহাকে ঘিরিয়া চলিল। যাইতে যাইতে জেয়াদ্ পশ্চাদ্দিক হইতে তাঁহার পৃষ্ঠ লক্ষ্য করিয়া এক বিষাক্ত লৌহস্বর নিক্ষেপ করিল। ভাবিয়াছিল যে, এক শরে পৃষ্ঠবিদ্ধ করিয়া বক্ষস্থল ভেদ করিবে, কিন্তু ঘটনাক্রমে সে শর হোসেনের বামপার্শ্ব দিয়া চলিয়া গেল, গাত্রে লাগিল না। শব্দ হইল, সে শব্দেও হোসেনের ধ্যানভঙ্গ হইল না। তাহার পর ক্রমাগতই শর নিপ্তি হইতে লাগিল। কিন্তু একটিও ইমামের অঙ্গে বিদ্ধ হইল না। সীমার শরসন্ধানে বিশেষ পারদর্শী ছিল না বলিয়াই খঞ্জর (খঞ্জর-এক প্রকার ছোরা, ইহার দুই দিকেই ধার।) হস্তে করিয়া যাইতেছিল। এত তীর নিক্ষিপ্ত হইতেছে, একটিও হোসেনের অঙ্গে লাগিতেছে না। কী আশ্চর্য! সীমার এই ভাবিয়া জেয়াদের হস্ত হইতে তীরধনু গ্রহণপূর্বক হোসেনের পৃষ্ঠদেশ লক্ষ্য করিয়া এক শর নিক্ষেপ করিল। তীর পৃষ্ঠে না লাগিয়া গ্রীবাদেশের এক পার্শ্ব ভেদ করিয়া চলিয়া গেল। সেদিকে হোসেনের ভ্রূপে নাই। এমন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন আছেন যে, শরীরের বেদনা পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছেন। যাইতে যাইতে অন্যমনস্কে একবার গ্রীবাদেশের বিদ্ধস্থান হস্ত দিয়া ঘর্ষণ করিলেন। জলের ন্যায় বোধ হইল;-করতলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন, জল নহে, গ্রীবানিঃসৃত সদ্যরক্ত! রক্তদর্শনে হোসেন চমকিয়া উঠিলেন। আজ ভয়শূন্য মানসে ভয়ের সঞ্চার হইল। সভয়ে চতুর্দিকে চাহিয়া দেখিলেন, আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্, অলীদ, ওমর, সীমার এবং আর কয়েকজন সেনা চতুর্দিক ঘিরিয়া যাইতেছে। -সকলের হস্তেই তীরধনু। ইহা দেখিয়াই চমকিত।-যে সমুদয় বসনের মাহাত্ম্যে নির্ভরহৃদয়ে ছিলেন-তৎসমুদয় পরিত্যাগ করিয়াছেন; তরবারি, তীর, নেজা, বল্লম, বর্ম, খঞ্জর কিছুই সঙ্গে নাই, কেবল দুখানি হাত মাত্র। অন্যমনস্কভাবে দুই এক পদ করিয়া চলিলেন; শত্রুরাও পূর্ববৎ ঘিরিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

কিছু দূরে যাইয়া হোসেন আকাশপানে দুই-তিন বার চাহিয়া ভূতলে পড়িয়া গেলেন। বিষাক্ত তীরবিদ্ধ ক্ষতস্থানের জ্বালা, পিপাসার জ্বালা, শোকতাপ,-বিয়োগদুঃখ,-নানা-প্রকার জ্বালায় অধীর হইয়া পড়িলেন। জেয়াদ্ এবং ওমর প্রভৃতি ভাবিল যে, হোসেনের মৃত্যু হইয়াছে। কিছুণ পরে হস্তপদ সঞ্চালনের ক্রিয়া দেখিয়া নিশ্চয় হোসেনের মৃত্যু মনে করিল না, মৃত্যু নিকটবর্তী জ্ঞান করিয়া কিঞ্চিৎ দূরে স্থিরভাবে দণ্ডায়মান রহিল।

হোসেন ভূমিতলে পড়িয়া রহিয়াছেন। সীমারের সামান্য শরাঘাতে তাদৃশ মহাবীরের প্রাণবিয়োগ হইবে, অসম্ভব ভাবিয়া কেহই হোসেনের নিকট যাইতে সাহসী হইল না; কেহ কেহ নিশ্চয় মৃত্যু অনুমান করিতেছে; মুখেও বলিতেছে যে, “হোসেন আর নাই! চল, হোসেনের মস্তক কাটিয়া আনি।” দুই এক পদ যাইয়া আর অগ্রসর হইতে সাহস হয় না। হোসেনের মৃত্যু সংবাদ এজিদের নিকট লইয়া গেলে কোন লাভই নাই। এজিদ্ সে সংবাদ বিশ্বাস করিয়া কখনোই পুরস্কার দান করিবেন না। মস্তক চাই! ভাবিয়া ভাবিয়া সীমার বলিল, “জেয়াদ্! তুমি তো খুব সাহসী, তুমিই মৃত হোসেনের মাথা কাটিয়া আন!”

জেয়াদ্ বলিল, “হোসেনের মাথা কাটিতে আমার হস্ত স্থির থাকিবে না, সাহসও হইবে না! আমি উহা পারিব না। যদি দুর্বলতাবশতঃ হোসেন ধরাশায়ী হইয়া থাকে কিংবা অন্য কোন অভিসন্ধি করিয়া মড়ার ন্যায় মাটিতে পড়িয়া থাকে, আমাকে হাতে পাইলে, বল তো আমার কী দশা ঘটিবে? যাহার ভয়ে জঙ্গলে পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছি, ইচ্ছা করিয়া তাহার হাতে পড়িব? আমি তো কখনোই যাইব না! মাথা কাটিয়া আনা তো শেষের কথা, নিকটেও যাইতে পারিব না!”

অলীদকে সম্বোধন করিয়া সীমার বলিলেন, “ভাই অলীদ! তোমার অভিপ্রায় কী? তুমি হোসেনের মাথা কাটিয়া আনিতে পারিবে না কি?”

অলীদ উত্তর করিল, “আমি হোসেনের বিরুদ্ধে যাহা করিয়াছি, তাহাই যথেষ্ট হইয়াছে! এজিদের বেতনভোগী হইয়া আজ কার্‌বালা প্রান্তরে যাহা আমি করিলাম, জগৎ বিলয় না হওয়া পর্যন্ত মানবহৃদয়ে সমভাবে তাহা পাষাণাঙ্কবৎ খোদিত থাকিবে! ইহার পরিণামফল কি আছে, তাহা,-ভবিতব্য কি আছে, তাহা কে জানে ভাই?-ভাই তোমরা আমায় মার্জনা কর, আমি পারিব না! হোসেনের মাথাও আমি কাটিতে চাহি না, লক্ষ টাকা পুরস্কারেরও আশা করি না। যাহার হৃদয়ে রক্তমাংসের লেশমাত্রও নাই, লক্ষ টাকার লোভে সেই এই নিষ্ঠুর কার্য করুক!”

সদর্পে সীমার বলিয়া উঠিল, “দেখিলাম তোমাদের বীরত্ব! -দেখিলাম তোমাদের সাহস! -বুঝিলাম তোমাদের ক্ষমতা! -এই দেখ, আমি এখনই হোসেনের মাথা কাটিয়া আনি!”-এই কথা বলিয়াই সীমার খঞ্জরহস্তে একলম্ফে হোসেনের বক্ষের উপর গিয়া বসিল। যে সীমারের নামে অঙ্গ শিহরিয়া উঠিয়াছিল, যে সীমারের নামে হৃদয় কাঁপিয়া উঠিয়াছিল, পাঠক! এই সেই সীমার! সুধার খঞ্জর-হস্তে সেই সীমার, ঐ হোসেনের বরে উপর বসিয়া গলা কাটিতে উদ্যত হইল!!!

হোসেন জীবিত আছেন। উঠিবার শক্তি নাই। অন্যমনস্কে কি চিন্তায় অভিভূত ছিলেন, তিনিই জানেন। চক্ষু মেলিয়া বক্ষের উপর খঞ্জর হস্তে সীমারকে দেখিয়া বলিতে লাগিলেন, “তুমি ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব-তুমি আমার বক্ষের উপর বসিলে। নূরনবী মোহাম্মদের মতাবলম্বী হইয়া ইমাম হোসেনের বক্ষের উপর পা রাখিয়া বসিলে! তোমার কী পরকাল বলিয়া কিছুই মনে নাই? এমন গুরুতর পাপের জন্য তুমি কী একটুও ভয় করিতেছ না?”

সীমার বলিল, “আমি কাহাকেও ভয় করি না!-আমি পরকাল মানি না। নূরনবী মোহাম্মদ কে? আমি তাহাকে চিনি না। তোমার বুকের উপর বসিয়াছি বলিয়া পাপের ভয় দেখাইতেছ? সে ভয় আমার নাই! কারণ আমি এখনই এই খঞ্জরে তোমার মাথা কাটিয়া লইব। যাহার মাথা কাটিয়া লক্ষ টাকা পুরস্কার পাইব, তাহার বুকের উপর বসিতে আবার পাপ কি? সীমার পাপের ভয় করে না।”

“সীমার! আমি এখনই মরিব। বিষাক্ত তীরের আঘাতে আমি অস্থির হইয়াছি। বক্ষের উপর হইতে নামিয়া আমায় নিশ্বাস ফেলিতে দাও। একটু বিলম্ব কর!-একটু বিলম্বের জন্য কেন আমাকে কষ্ট দিবে? আমার প্রাণ বাহির হইয়া গেলে মাথা কাটিয়া লইও। দেহ যত খণ্ড করিতে ইচ্ছা হয়, করিয়ো। একবার নিশ্বাস ফেলিতে দাও! আজ নিশ্চয়ই আমার মৃত্যু। এই কার্‌বালা-প্রান্তরেই হোসেনের জীবনের শেষ কার্য সমাপ্ত। জীবনের শেষ এই র্কাবালায়। ভাই সীমার! তুমি নিশ্চয়ই আমার মাথা কাটিয়া লইতে পারিবে। আমি আশীর্বাদ করিতেছি, এই কার্য করিয়া তুমি জগতে বিখ্যাত হইবে। ক্ষণকাল অপেক্ষা কর।”

অতি কর্কশস্বরে সীমার বলিল, “আমি তোমার বুকের উপর চাপিয়া বসিয়াছি, মাথা না কাটিয়া উঠিব না। যদি অন্য কোন কথা থাকে, বল। বুকের উপর হইতে একটুও সরিয়া বসিব না।” এই বলিয়া সীমার আরো দৃঢ়রূপে চাপিয়া বসিয়া হোসেনের গলায় খঞ্জর চালাইতে লাগিল।

হোসেন বলিতে লাগিলেন, “সীমার! আমার প্রাণ এখনই বাহির হইবে; একটু বিলম্ব কর।-এই কষ্টের উপর আর কষ্ট দিয়া আমাকে মারিয়ো না।”

সীমার তীক্ষ্ণধার খঞ্জর হোসেনের গলায় সজোরে চালাইতে লাগিল, কিন্তু চুল পরিমাণ কাটিতে পারিল না। বারবার খঞ্জরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। হস্তদ্বারা বারংবার খঞ্জরের ধার পরীক্ষা করিয়া দেখিল। পুনরায় অধিক জোরে খঞ্জর চালাইতে লাগিল। কিছুতেই কিছুই হইল না-তিলমাত্র চর্মও কাটিল না। সীমার অপ্রস্তুত হইল। আবার খঞ্জরের প্রতি ঘনঘন দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। আবার ভাল করিয়া দেখিয়া খঞ্জরের ধার পরীক্ষা করিল।

হোসেন বলিলেন, “সীমার! কেন বারবার এ সময় আমাকে কষ্ট দিতেছ! শীঘ্রই মাথা কাটিয়া ফেল! আর সহ্য হয় না। অনর্থক আমাকে কষ্ট দিয়া তোমার কী লাভ হইতেছে? বন্ধুর কার্য কর।-শীঘ্রই আমার মাথা কাটিয়া ফেল।”

“আমি তো কাটিতে বসিয়াছি। সাধ্যানুসারে চেষ্টাও করিতেছি। খঞ্জরে না কাটিলে আমি আর কি করিব! এমন সুতীক্ষ্ণ খঞ্জর তোমার গলায় বসিতেছে না, আমার অপরাধ কি-আমি কি করিব?

হোসেন বলিলেন, “সীমার! তোমার বসন খোল দেখি?”

“কেন?”

“কারণ আছে। তোমার বক্ষ দেখিলেই জানিতে পারিব যে, তুমি আমার কাতেল (হন্তা) কি-না।”

“তাহার অর্থ কী?”

“অর্থ আছে। অর্থ না থাকিলে বৃথা তোমাকে এমন অনুরোধ করিব কী জন্য?-তোমরা সকলে জান,-অন্ততঃ শুনিয়া থাকিবে, হোসেন কখনো বৃথা বাক্য ব্যয় করে না।-মাতামহ বলিয়া গিয়াছেন, রক্ত-মাংসে গঠিত হইলেও যে বক্ষ লোমশূন্য, সে বক্ষ পাষাণময়, সেই লোমশূন্য বক্ষই তোমার কাতেল; যাহার বক্ষ লোমশূন্য তাহার হস্তেই তোমার নিশ্চয় মৃত্যু। মাহামহের বাক্য অলঙ্ঘনীয়। সীমার! তোমার বক্ষের বস্ত্র খুলিয়া ফেল।-আমি দেখি, যদি তাহা না হয়, তবে তুমি বৃথা চেষ্টা করিবে কেন? তোমার জীবনকাল পর্যন্ত আমাকে এ প্রকারে যন্ত্রণা দিয়া;-সহস্র চেষ্টা করিলেও, দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করিতে পারিবে না।”

সীমার গাত্রের বসন উন্মোচন করিয়া হোসেনকে দেখাইল। নিজেও দেখিল। হোসেন সীমারের বক্ষের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দুই হস্তে দুই চক্ষু আবরণ করিলেন। সীমার সজোরে হোসেনের গলায় খঞ্জর দাবাইয়া ধরিল। এবারেও কাটিল না। বার বার খঞ্জর ঘর্ষণে হোসেন বড়ই কাতর হইলেন। পুনরায় সীমারকে বলিতে লাগিলেন, “সীমার! আর একটি কথা; আমার মনে হইয়াছে, বুঝি তাহাতেই খঞ্জরের ধার ফিরিয়া গিয়াছে, তোমারও পরিশ্রম বৃথা হইতেছে, আমিও যারপরনাই কষ্টভোগ করিতেছি। সীমার! মাহামহ জীবিতাবস্থায় অনেক সময় স্নেহ করিয়া আমার এই গলদেশে চুম্বন করিতেন। সেই পবিত্র ওষ্ঠের চুম্বনমাহাত্ম্যেই তীক্ষ্ণধার অস্ত্র ব্যর্থ হইয়া যাইতেছে। আমার মস্তক কাটিতে আমি তোমাকে বারণ করিতেছি না; আমার প্রার্থনা এই যে, আমার কণ্ঠের পশ্চাদ্ভাগে,-যেখানে তীরের আঘাতে শোণিত প্রবাহিত হইতেছে, সেইখানে খঞ্জর বসাও; অবশ্যই দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন হইবে।”

“না, তাহা কখনো হইবে না। আমি অবশ্যই এই প্রকারে তোমার মাথা কাটিব।”

“সীমার! আমাকে এ প্রকার কষ্ট দিয়া তোমার কী লাভ? এরূপে কিছুতেই কার্য সিদ্ধি হইবে না। আমি মিনতি করিয়া বলিতেছি, আমার গলার সম্মুখদিকে আর খঞ্জর চালাইও না। তোমার যত্ন নিষ্ফল হইবে, আমিও কষ্ট পাইব, অথচ মাথা কাটিতে পারিবে না। দেখ, নিশ্বাস ফেলিতে আমার বড় কষ্ট হইতেছে। শীঘ্র শীঘ্র তোমার কার্য শেষ করিলে তোমারও লাভ, আমারও কষ্ট নিবারণ। এ জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলি নাই। তুমি ঐ তীরবিদ্ধ স্থানে খঞ্জর বসাও, এখনই ফল দেখিতে পাইবে। আমাকে এ প্রকারে কষ্ট দিলে এজিদের অঙ্গীকৃত লক্ষ টাকা অপেক্ষা তোমার আর অধিক লাভ কী হইবে?”

“তোমার কথা শুনিলে আমার কী লাভ হইবে?”

“অনেক লাভ হইবে! তুমি আমার প্রতি সদয় হইয়া এই অনুগ্রহ কর যে, আমার গলার এদিকে আর খঞ্জর চালাইয়ো না, তীরবিদ্ধ স্থানে অস্ত্র বসাইয়া আমার মস্তক কাটিয়া লও।-আমি ধর্মতঃ প্রতিজ্ঞা করিতেছি, পরকালে তোমাকে আমি অবশ্যই মুক্ত করাইব।-বিনাবিচারে তোমাকে স্বর্গসুখে সুখী করাইব। পুনঃপুনঃ ঈশ্বরের নাম করিয়া আমি ধর্মতঃ প্রতিজ্ঞা করিতেছি, তোমাকে স্বর্গে লইয়া যাইতে না পারিলে, আমি কখনোই স্বর্গের দ্বারে পদনিক্ষেপ করিব না। ইহা অপেক্ষা তুমি আর কি চাও ভাই?”

হোসেনের বক্ষ পরিত্যাগ করিয়া সীমার তাঁহার পৃষ্ঠোপরি বসিল। ইমামের দুখানি হস্ত দুই দিকে পড়িয়া গেল।-যেন বলিতে লাগিলেন, “জগৎ দেখুক, আমি কি অবস্থায় চলিলাম!-নূরনবী মোহাম্মদের দৌহিত্র,-মদিনার রাজা, মহাবীর আলীর পুত্র হইয়া শূন্যহস্তে সীমারের অস্ত্রঘাতে কি ভাবে আমি ইহসংসার হইতে বিদায় হইলাম! জগৎ দেখুক!” সীমার যেমন তীরবিদ্ধ স্থানে খঞ্জর স্পর্শ করিল, অমনি হোসেনের শির, দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল! আকাশ, পাতাল, অন্তরী, অরণ্য, সাগর, পর্বত বায়ু ভেদ করিয়া চতুর্দিক হইতে রব হইতে লাগিল, “হায় হোসেন! হায় হোসেন!! হায় হোসেন!!!”

সীমার ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে হোসেনের শির লইয়া প্রস্থান করিল। রক্তমাখা খঞ্জর ইমামের দেহের নিকট পড়িয়া রহিল।

[মহরম পর্ব সমাপ্ত ]

Category: ০১.মহরম পর্ব
পূর্ববর্তী:
« মহরম পর্ব ২৫ প্রবাহ

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑