০২. তারা তিন জন

২. তারা তিন জন

সান্তা-ফের প্রস্থানের পর কয়েকদিন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আবহাওয়া ছিলো বেশ ভালো, তাপমাত্রাও ছিলো বেশ উঁচুতেই। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অব্দি সমুদ্রের হাওয়া বইতো মৃদুভাবে, স্নিগ্ধ একটা আমেজ ছড়িয়ে দিতো। সন্ধের পর অবশ্য একটু শীত-শীত করতো।

বাতিঘরের চারপাশ ঘিরে ফরাশের মতো ছড়িয়ে আছে সবুজ ঘাস। ঝিলের জলে সমুদ্রমুখী জলের আবেগ। গ্রীষ্মের মিষ্টি সোনালি দিন।

একদিন, তখন দিন শেষ, বাতিঘরের আলো জ্বালাবার সময় হ’য়ে এসেছে। বাতিঘরের বাতির সামনে বৃত্তাকার গ্যালারিটায় ব’সে কথা বলছিলো তারা তিনজন—অর্থাৎ বাস্‌কেথ, ফিলিপ আর মরিস।

তামাকের থলে থেকে পাইপে তামাক ভরতে-ভরতে বাস্‌কেথ জিগেশ করলে, ‘তা, এই নতুন জীবন কেমন লাগছে তোমাদের? সহ্য হয়ে আসছে তো ক্রমশ?’

‘এখনো অবশ্যি অসহ্য হ’য়ে-ওঠার বা একঘেয়ে ক্লান্তিকর মনে হওয়ার সময় আসেনি।’ ফিলিপই জবাব দিলে, ‘এখনো তো বেশ নিশ্চিন্ত আর নিরুপদ্রবই লাগছে।’

‘ঠিক বলেছো,’ মরিসও সায় দিলে। ‘এই তিনমাস তো দেখতে-দেখতেই কেটে যাবে ব’লে মনে হচ্ছে।’

‘যেমন ক’রে দিগন্তে অদৃশ্য হ’য়ে যায় জাহাজের পাল—তাই না?’

‘এই ক-দিনে দিগন্তে কিন্তু কোনো জাহাজের চিহ্নটুকুও দেখা যায়নি।’ ফিলিপ বললো, ‘এদিকটায় শুনেছিলুম জাহাজের আনাগোনা খুবই বেশি, তাই এই বাতিঘর বানানো হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো জাহাজ দেখা যাচ্ছে না। একটু আশ্চর্যই নয় কি ব্যাপারটা?’

‘ধৈর্য ধরো, বন্ধু। জাহাজ দেখতে পাবে এবং শিগগিরই।’ বাস্‌কেথ আশ্বাস দিলে, ‘জাহাজ যদি এদিকটায় না-ই চলাচল করতো তবে মাইল দশেক জুড়ে সমুদ্র আলোয় ঝলমল ক’রে তোলবার জন্যে এই বাতিঘর মিছেমিছি বানাবার কোনো দরকার পড়তো না নিশ্চয়ই। এখনও তো নতুন কি না। কিছুদিন যাক, সবাই জানুক এখানে নতুন বাতিঘর হয়েছে, তারপর দেখো, এই সোজা পথ ধ’রেই, দ্বীপের পাশ দিয়েই অনবরত জাহাজের পর জাহাজ চলাচল করবে। তাছাড়া এখানে যে বাতিঘর আছে, সেটাই তো যথেষ্ট নয়। জানতে হবে সন্ধে থেকে ভোর অব্দি এ-আলো জ্বলে কি-না।’

ফিলিপ বললে, ‘তাহ’লে সান্তা-ফে যদ্দিন-না বুয়েনোস আইরেসে পৌঁছুচ্ছে তদ্দিন আর সে-কথা জানতে পারছে না কেউ।’

বাস্‌কেথ সায় দিলে : ‘ঠিক বলেছো। কাপ্তেন লাফায়েৎ প্রতিবেদন দেবামাত্র কর্তারা জাহাজি-জগতে খবরটা ছড়াতে একটুও দেরি করবে না।’

‘সান্তা-ফে তো মাত্র ছ-দিন হ’লো রওনা হয়েছে,’ মরিস বললে, ‘তার গিয়ে পৌঁছতে এখনও ঢের সময় লাগবে—’

‘উঁহু, মনে হয় আর সপ্তাহখানেক লাগবে।’ বাস্‌কেথ বললে, ‘আবহাওয়া ভালো, সমুদ্রও শান্ত, হাওয়ার মতিগতিও ভালোই। পালে আর এনজিনে দিনরাত চ’লে, হ্যাঁ, পুরো দমে চলে, ঐ সময়ের মধ্যেই তার পৌঁছোনো উচিত।’

ফিলিপ বললে, ‘এতক্ষণে সান্তা-ফে নিশ্চয়ই মাগেলান প্রণালী ছাড়িয়ে গেছে।’

‘নিঃসন্দেহে।’ বাস্‌কেথ বললে, ‘এখন নিশ্চয়ই পাতাগোনিয়ার তীর ধরে দ্রুত বেগে ছুটে চলেছে।’

এখনও যে সান্তা-ফের কথাই এদের মন জুড়ে থাকবে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। স্বদেশের জাহাজ তাদের এখানে ফেলে রেখে স্বদেশেই ফিরে চলেছে। তাই এই অখণ্ড নির্জনতায় সান্তা ফের কথা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না।

বাস্‌কেথ হঠাৎ অন্য কথা পাড়লে। ‘কী ফিলিপ, আজ কী-রকম মাছ ধরলে?’

‘বেশ-কিছু। তবে সবচেয়ে তাজ্জব ব্যাপার কী জানো? দেড়সের ওজনের একটা ছানাগোছের কাছিম আমি হাত দিয়েই ধরেছি, একদম খালি হাতে। কাছিমটা তীরের বালির উপর এসে উঠেছিলো।’

‘শাবাশ!’ বাস্‌কেথ তাকে বাহবা দিলে, ‘তবে সমুদ্রের মাছ বা কাছিম-টাছিম ফুরিয়ে যাবে ব’লে মনে কোরো না কিন্তু। ধীরে-ধীরে ফুরোতে পারবে না তুমি। আমাদের কৌটোর মাংস কম ক’রে খরচ করতে হবে, সুতরাং যত-ইচ্ছে মাছ ধ’রে যাও। কিন্তু আমিষ তো হ’লো, এবার শাক-শক্তির কথা কিছু বলো।

‘আমি আজ বনের দিকে গিয়েছিলুম,’ মরিস জানালে। ‘কিছু কন্দ মূল খুঁড়ে এনেছি, রেকাবি ভ’রে খেতে দেবো। খেয়ে আমার পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করবে তোমাদের।’

বাস্‌কেথ বললে, ‘সে-তো অতীব উত্তম প্রস্তাব। টাটকা জিনিশের চাইতে কৌটোর খাবার কি আর খেতে ভালো হয় কখনও?’

ফিলিপ আপশোশ ক’রে বললে, ‘যদি দু-একটা গুঅনাকো শিকার করা যেতো।’

জিভ দিয়ে সড়াৎ ক’রে এক আওয়াজ ক’রে বাস্‌কেথ বললে, ‘গুঅনাকো শিকার না-করে, না-রেঁধে-বেড়ে আমার কাছে ও-নাম উচ্চারণ কোরো না কিন্তু। আমার তো এক্ষুনি খিদে পেয়ে গেছে। কিন্তু মনে রেখো—যত-বড়ো শিকারীই হও না কেন, বাতিঘরের আশপাশ ছেড়ে বেশি দূরে চ’লে যেয়ো না যেন! আমাদের কাজ শিকার ক’রে বেড়ানো নয়, কাজ বাতিঘরের আলো চালু রাখা আর চারপাশের সমুদ্রে সজাগ, সতর্ক দৃষ্টি রাখা।’

শিকারলোলুপ মরিস বললে, ‘কিন্তু মনে করো বন্দুকের পাল্লার মধ্যে চমৎকার একটা গুঅনাকোর মাথা দেখা গেলো—’

‘সে-কথা বলিনি।’ বাস্‌কেথ বললে, ‘তবে গুঅনাকোগুলো একটু বেয়াড়া গোছেরই হয়। আর যে-রকম শিং–বাস!’

ষোলোই ডিসেম্বর রাত্তির ছটা থেকে দশটা অব্দি বাতিঘরের আলো চালু রাখবার ভার ছিলো মরিসের ওপর। হঠাৎ সমুদ্রের পুবদিকটায়, পাঁচ-ছ মাইল দূরে একটা আলো জেগে উঠলো। নিশ্চয়ই কোনো জাহাজের আলো। বাতিঘর তৈরি হবার পর দ্বীপ থেকে এই প্রথম কোনো জাহাজ দেখা গেলো।

বাস্কথ আর ফিলিপ ব’সে-ব’সে আড্ডা দিচ্ছিলো। মরিস ভাবলে, এই জাহাজের খবর তাদেরও জানানো উচিত : দ্বীপে আসার পর প্রথম জাহাজ কি-না! তাই সে তাদের ডাকতে গেলো। বাস্‌কেথ আর ফিলিপ তক্ষুনি তার সঙ্গে এ-ঘরে চ’লো এলো। পুবদিকের জানলা দিয়ে তিনজনে টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালে।

দেখে নিয়ে, বাস্‌কেথ বললে, শাদা আলো। তার মানে একটি স্টীমারের সামনের আলো।’

স্টীমারটি তরতর ক’রে সান হুয়ান অন্তরীপের দিকে এগিয়ে আসছিলো। আধঘণ্টার মধ্যেই তারা স্টীমারটির গন্তব্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হ’য়ে গেলো। বাতিঘরকে দক্ষিণ-পশ্চিমে রেখে স্টীমারটি দ্রুত গতিতে লেময়র প্রণালীতে চলতে লাগলো। একটু পরে তার লাল আলো চোখে পড়লো তাদের। তারপর সেটা দ্রুতবেগে আঁধারের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।

ফিলিপ বললে, ‘পৃথিবীর একেবারে শেষ সীমানার বাতিঘরটার আওতায় এই জাহাজটিই প্রথম পড়লো।’

বাস্‌কেথ বললে, ‘তবে আশা করি নিশ্চয়ই এটা শেষ জাহাজ নয়।

পরদিন বিকেলের দিকে ফিলিপ একটা মস্ত পাল-তোলা জাহাজ দেখতে পেলে দিগন্তে। চমৎকার আবহাওয়া সেদিন, আকাশ স্বচ্ছ, অনাবিল। দক্ষিণ-পুব থেকে মিষ্টিমধুর মৃদু হাওয়া বইছিলো, কোনো কুয়াশাই ছিলো না তখন। দশ মাইল দূর থেকেও জাহাজটিকে দেখা যাচ্ছিলো।

বাস্‌কেথ আর মরিসের নাম ধ’রে হাঁক পাড়লে ফিলিপ। তারপর সবাই মিলে বাতিঘরে গিয়ে উঁকি দিলে। জাহাজটি পুরো দমে এগিয়ে আসছে, তবে সেটা যে কোনদিকে যাবে, উত্তরে না দক্ষিণে, সেটা তখনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তারা তিনজনে এ নিয়ে রীতিমতো তর্কই জুড়ে দিলে। শেষটায় দেখা গেলো যে মরিসের কথাই ঠিক। মরিস বলেছিলো : ‘এই পাল-তোলা জাহাজটা কিন্তু প্রণালীর দিকে আসবে না।’ জাহাজটা সত্যি মস্ত। কম করেও নিশ্চয়ই আঠারোশো টন ভার বইতে পারে। মার্কিন মুলুকে তৈরি দ্রুতগতিসম্পন্ন জাহাজগুলোর অন্যতম।

বাস্‌কেথ বললে, ‘জাহাজটা যদি নিউ-ইংলণ্ডের না-হয় তো আমার টেলিস্কোপ একটা ছাতা হ’য়ে যাবে।’

মরিস জিগেস করলে, ‘জাহাজটা কি তার নম্বর দেবে আমাদের? তোমার কী মনে হয়?’

প্রধান আলোকরক্ষীর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো : ‘নম্বর দেয়া তার কর্তব্য।’

আর, সত্যি, হ’লোও তাই। একটু পরেই জাহাজটির ওপর পৎপৎ ক’রে সংকেত পতাকা উড়লো। জানা গেলো তার নাম মডাঙ্ক। ইউনাইটেড স্টেটস অভ আমেরিকার নিউ-ইংল্যাণ্ডের বস্টন বন্দর থেকে সে রওনা হয়েছে। আরহেতিন প্রজাতন্ত্রের পতাকা উড়িয়ে আলোকরক্ষীরা জবাব দিলে। আর যতক্ষণ-না দ্বীপের দক্ষিণ দিকের ওয়েবস্টার অন্তরীপের আড়ালে তার মাস্তুল অদৃশ্য হ’য়ে গেলো, ততক্ষণ তারই দিকে তারা একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। তারপর একসময় বাস্‌কেথ তাকে বিদায়-অভিনন্দন জানালে : ‘যাত্রা শুভ হোক মন্‌ডাঙ্কের। ঈশ্বর করুন, তাকে যেন শৃঙ্গ অন্তরীপের ঝড়ের পাল্লায় পড়তে না-হয়।’

এর পরের ক-দিন সমুদ্র ফের নির্জন—শুধু পুবদিগন্তে, অনেক দূরে, একটা-দুটো পালের চিহ্নই শুধু দেখা গেলো। যে-জাহাজগুলো স্টটেন আইল্যাণ্ডের মাইল দশেক দূর দিয়ে গেলো, তাদের কিন্তু মার্কিন বন্দরে জাহাজ থামাবার কথা নয়। বাকেথের মতে এগুলো অ্যান্টার্কটিকে মাছ ধরতে যাচ্ছে। নিরক্ষ রেখার দিক থেকে আসা কতগুলো ছোটো ছোটো জাহাজও দেখা গেলো। সেগুলো পয়েন্ট সেভারেল থেকে বেশ-কিছু দূর দিয়েই প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে চ’লে গেলো।

বিশে ডিসেম্বর অব্দি তাদের খাতায় টুকবার মতো উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটেনি। আবহাওয়া কিছুটা বদলাচ্ছে, উত্তর-পুব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওয়া বইছে। বৃষ্টিও হ’য়ে গেলো বেশ কয়েক পশলা। ছোটোখাটো ঝড়ও উঠেছিলো কয়েকবার।

একুশে ডিসেম্বর সকালবেলায় ফিলিপ পাইপ মুখে দিয়ে চলেছে, হঠাৎ সমুদ্রতীরের অরণ্যে একটা জানোয়ারের মুখ দেখতে পেলে। কয়েক মিনিট সতর্ক চোখে তাকিয়ে তেমন-কিছু যখন দেখা গেলো না, তখন সে সোজা টেলিস্কোপ-ঘরে চ’লে এলো। এবার আর জন্তুটাকে চিনতে তার কোনো অসুবিধেই হলো না। হ্যাঁ, একটা গুঅনাকোই বটে। একবার গুলি ছুঁড়ে হাতের টিপ পরখ দেখলে হয়।

তক্ষুনি সে বাস্‌কেথ আর মরিসের উদ্দেশে হাঁক পাড়লে। তার হাঁকডাক শুনে দুজনেই হস্তদন্ত হ’য়ে তার কাছে এসে দাঁড়ালো। একটা সুযোগ নেয়া যে দরকার, সে-বিষয়ে কোনো দ্বিমতই হ’লো না। গুঅনাকোটাকে শিকার করতে পারলে একটু মুখ বদলাতে পারা যাবে। একঘেয়ে টিনের খাবার খেয়ে-খেয়ে সকলেরই বেশ অরুচি লাগছিলো।

ঠিক হ’লো, ফিলিপ উপসাগরের দিকে যাবার পথে প্রস্তুত হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর মরিস একটা বন্দুক নিয়ে ঐ গুঅনাকোটার পেছনে ধাওয়া করবে। অবশ্য গুঅনাকোটা যাতে তাকে দেখে না-ফ্যালে, সেই জন্যে খুব সাবধানে পা-টিপে যেতে হবে—কাছে গিয়ে সে ওটাকে তাড়া লাগাবে ফিলিপের দিকে যাবার জন্যে।

বাস্‌কেথ দুজনকেই হুঁশিয়ার ক’রে দিয়ে বললে, ‘খুব সাবধান। এটা মনে রেখো এই জানোয়ারগুলোর ইন্দ্রিয়গুলো খুব শক্তিশালী। কোনোমতে যদি একবার দেখে ফ্যালে কিংবা গন্ধ পায়, তাহলে এমন ছুট লাগাবে যে কারু সাধ্য হবে না তাদের পেছনে ধাওয়া করবে অথবা গুলি করবে।’

মরিস জবাব দিলে, ‘আচ্ছা, মনে থাকবে।’

বাস্‌কেথ আর ফিলিপ ফের টেলিস্কোপে চোখ লাগালে। না, গুঅনাকোটা একটুও নড়েনি। তখন তারা মরিসের দিকে নজর দিলে।

জঙ্গলমুখো চলেছে মরিস। আড়াল দিয়ে গিয়ে জানোয়ারটার অজানতেই সে তার পেছনে পৌঁছে ধাওয়া করতে পারবে ব’লেই মনে হলো। তারা অবশ্য বেশিক্ষণ আর মরিসের ওপর নজর রাখতে পারলে না। খানিক বাদেই সে অরণ্যের অন্ধকারে অদৃশ্য হ’য়ে গেলো।

প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেছে। গুঅনাকোটা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। বেচারার বরাটা নেহাৎই খারাপ। কিন্তু মরিস এখনও গুলি করছে না কেন?

বাস্‌কেথ আর ফিলিপ একটা গুলির শব্দ শোনবার জন্যে উৎসর্গ হয়ে রইলো। অথচ আশ্চর্য, কোনো গুলির শব্দই শোনা গেলো না। আরো তাজ্জব : আচমকা গুঅনাকোটা একটা পাথরের ওপর লুটিয়ে পড়লো।

ঠিক তক্ষুনি মরিস দ্রুতপদে পাথরের আড়াল থেকে এগিয়ে এলো। তারপর কিছুক্ষণ স্থির, নিশ্চল গুঅনাকোটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ছুটতে শুরু করলো।

দৌড়েই এলো সে বাতিঘরের কাছে, কি-রকম একটা অস্বাভাবিক গলায় চেঁচিয়ে ডাকলে সে বন্ধুদের।

বাস্‌কেথ বললে, ‘নিশ্চয়ই অদ্ভুত-কোনো ব্যাপার হয়েছে। চ’লে এসো, ফিলিপ!’

দুজনেই ছুটে মরিসের কাছে গিয়ে হাজির হ’লো। বাস্‌কেথ ব্যগ্র স্বরে শুধোলে ‘কী ব্যাপার? কী হয়েছে? গুঅনাকোটারই বা কী হ’লো?’

‘ওখানে গেলেই দেখতে পাবে,’ মরিস তখনও হাঁফাচ্ছে। ‘আশ্চর্য কাণ্ড!’ তিনজনে তক্ষুনি ছুটে গিয়ে গুঅনাকোটার কাছে হাজির।

মরিস আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললে, ‘ওই দ্যাখো।’

ফিলিপ জিগেস করলে, ‘ম’রে গেছে নিশ্চয়ই?’

‘হ্যাঁ!’

‘হার্টফেল?’ বাস্‌কেথ বললে, ‘তাহ’লে বুড়ো হ’য়ে গিয়েছিলো, বলো!‘

‘না। স্বাভাবিকভাবে মরেনি। একে কেউ মেরেছে।’

‘মেরেছে! বলো কী?‘

‘হ্যাঁ, মেরেছে। ঐ দ্যাখো গুলির দাগ!’

‘গুলি!’ বাস্‌কেথ প্রায় চেঁচিয়েই উঠলো, তার গলায় বিস্ময় আর ভয়।

‘হ্যাঁ, গুলি করেই মারা হয়েছে এটাকে।’

না, কোনোই সন্দেহ নেই। ঐ-তো, স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে গুলির দাগ। বাস্‌কেথ কি-রকম অদ্ভুত ফ্যাশফেশে গলায় বললে, ‘তাহ’লে এই দ্বীপে আরো শিকারী আছে? কিন্তু সে কে? বা কারা? ‘

ব’লেই সে উদ্বিগ্ন চোখে চারপাশটায় চোখ একবার বোলালো।