• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৩. য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল

লাইব্রেরি » মুহম্মদ জাফর ইকবাল » সায়েন্স ফিকশন সমগ্র » অন্ধকারের গ্রহ » ১৩. য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল

য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল সে একটি গহিন বনে হারিয়ে গেছে, যেদিকেই যায় সে দেখতে পায় শুধু গাছ আর গাছ। কৃত্রিম গাছ নয়, সত্যিকারের গাছ। সেই গাছের ডাল, গাছের পাতায় তার শরীর আটকে যাচ্ছে, লতাগুলোতে সে জড়িয়ে যাচ্ছে, তখন শুনতে পেল বহুদূর থেকে কেউ যেন তাকে ডাকছে, য়ুহা।

য়ুহা এদিকে সেদিকে তাকালো, কাউকে দেখতে পেল না। শুধু মনে হলো কণ্ঠস্বরটি বুঝি আরো কাছে এগিয়ে এসেছে—আবার ডাকছে, য়ুহা। এ রকম সময় সে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠল, তার ওপর ঝুঁকে পড়ে আছে রায়ীনা, তাকে ধাক্কা দিতে দিতে সে ডাকছে।

য়ুহা এসে বসে এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, আমরা কোথায়? আমরা গ্ৰহটাতে নেমে এসেছি।

আমরা তো বেঁচে আছি তাই না?

মনে হচ্ছে বেঁচে আছি। তবে এটাকে তুমি যদি বেঁচে থাকা না বলতে চাও তাহলে অন্য ব্যাপার।

য়ুহা স্কাউটশিপের গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, সর্বনাশ, কী বিদঘুটে গ্রহ!

রায়ীনা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ এটা খুব বিদঘুটে একটা গ্রহ।

য়ুহা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি কখনো চিন্তা করিনি, আমার জীবনের শেষ সময়টা কাটাব এ রকম একটা বিদঘুটে অন্ধকার গ্রহে।

তোমার জীবনের শেষ সময়টা কোথায় কাটানোর কথা ছিল?

আমি ভেবেছিলাম আমার নিজের পরিচিত মানুষের সাথে। সাধারণ মানুষ। সাদামাটা মানুষ।

রায়ীনা মাথা ঘুরিয়ে য়ুহার দিকে তাকিয়ে বলল, বিষয়টা নিয়ে আমারও এক ধরনের কৌতূহল! তুমি তো সামরিক কমান্ডের কেউ নও-তুমি কেমন করে এই মহাকাশযানে আছ?

আমি একজন কবি! আমি একাডেমির কাছে আবেদন করেছিলাম যে আমি মহাকাশ ভ্রমণে যেতে চাই। একাডেমি এদের সাথে আমাকে যেতে দিয়েছে।

রায়ীনা হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি এখন নিশ্চয়ই খুব আফসোস করছ যে কেন এসেছিলে?

না, আসলে করছি না। সবকিছুই তো অভিজ্ঞতা, এটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা। একটা জীবন তো নানারকম অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু না।

রায়ী অন্যমনস্কভাবে বলল, তা ঠিক।

য়ুহা বলল, এখান থেকে বের হয়ে যদি আবার নিজের পরিচিত মানুষদের কাছে ফিরে যেতে পারতাম, তাহলে অভিজ্ঞতার গুরুত্বটুকু আরো অনেক বাড়ত।

রায়ীনা আবার অন্যমনস্কভাবে বলল, তা ঠিক।

য়ুহ্য জিজ্ঞেস করল, আমরা এখন কী করব?

রায়ীনা বলল, আমি প্রথম ছত্রিশ ঘণ্টা বিশেষ কিছু করতে চাই না।

য়ুহা একটু অবাক হয়ে বলল, প্রথম ছত্রিশ ঘণ্টা?

হ্যাঁ। ছত্রিশ ঘণ্টার পর আমি মহাকাশযান থেকে আরো কয়েকটি স্কাউটশিপ আশা করছি। আমাদের সাহায্য করার জন্যে তখন আরো কিছু মানুষ আসবে। যন্ত্রপাতি আসবে! অস্ত্র আসবে! তখন যদি কিছু করা যায় করব।

য়ুহা হতচকিত হয়ে বলল, আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ছত্রিশ ঘণ্টা পর মহাকাশযান থেকে স্কাউটশিপ কেন আসবে?

তার কারণ ছত্রিশ ঘণ্টা পর আমার দলের লোকজন মহাকাশযানটা দখল করে নেবে। চব্বিশ ঘণ্টার মাঝেই সেটা ঘটে যাবার কথা, আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আরো বারো ঘণ্টা হাতে রাখছি। আর তারা মহাকাশযানটা দখল করার পর আমাকে সাহায্য করার জন্যে ছুটে আসবে।

য়ুহা বিস্ফারিত চোখে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার দলের লোকেরা কেমন করে মহাকাশযানটা দখল করবে?

তোমার মনে আছে এই স্কাউটশিপ রওনা দেবার আগে আমি আমাদের দলের লোকদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়েছিলাম?

হ্যাঁ। মনে আছে।

আসলে আমি মোটেও বিদায় নিতে যাইনি। ক্যাপ্টেন ক্ৰব ঠিকই বলেছিল, কাউকে যখন হিমঘরে শীতল করে রাখা হয় তখন তার ভেতরে আর একটা ক্রু ড্রাইভারের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আমি গিয়েছিলাম আমাদের একজনের লিকুইড হিলিয়াম সরবরাহে ঘোট একটু ফুটো করতে-খুব ছোট, খালি চোখে কিছুতেই ধরা পড়বে না কিন্তু সময় দেয়া হলে লিকুইড হিলিয়ামটা বের হয়ে যাবে! সবাই যখন ভেবেছে আমি গভীর আবেগে বিদায় নিয়ে আসছি, আসলে তখন আমার জুতোর গোড়ালিতে লাগানো টাইটেনিয়ামের সূক্ষ্ম পিনটি দিয়ে টিউবে একটা ছোট ফুটো করেছি। ঘণ্টা তিনেক পর যখন শরীরটাকে ঠান্ডা রাখতে পারবে না তখন তাকে জাগিয়ে তোলা হবে! তুমি আমাকে যেভাবে জাগিয়েছিলে।

কী আশ্চর্য!

না, মোটেও আশ্চর্য নয়। এটা হচ্ছে খুব বাস্তব একটা কাজ! যাই হোক আমি যার ক্যাপসুলে এই ঘটনা ঘটিয়ে রেখে এসেছি তার নাম হচ্ছে রিহি। রিহি হচ্ছে আমাদের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান। আমাদের ধারণা, তার নিউরনের সিনালের সংখ্যা আমাদের থেকে দশ গুণ বেশি! সে নিশ্চয়ই জানবে তখন কী করতে হবে। অন্য সবাইকে তখন জাগিয়ে তুলবে। পরের অংশ সহজ–মহাকাশযানটা দখল করে নেয়া! ছোটখাটো যুদ্ধ হতে পারে কিন্তু সেই যুদ্ধে কেউ তাদের হারাতে পারবে না। তাদেরকে হারানোর মতো সামরিক বাহিনী এখনো জন্মায়নি।

তুমি সত্যি বলছ?

হ্যাঁ। আমি সত্যি বলছি। তাই আমি পরের ছত্রিশ ঘণ্টা বিশেষ কোনো অ্যাডভেঞ্চার না করে বসে থাকতে চাই। যতটুকু সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে চাই। যখন সময় হবে তখন যেন সেটা ব্যবহার করতে পারি।

মুহ বিস্ফারিত চোখে বলল, রায়ীন, আমি যতই তোমাকে দেখছি ততই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

রায়ীনা হেসে বলল, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি তোমার জীবনে খুব বেশি মানুষ দেখনি। তাই অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যাও!

না, আমি অল্পতে মুগ্ধ হই না। তুমি আসলেই অসাধারণ।

ঠিক আছে, আমি অসাধারণ! সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করব। এখন ঠিক করা যাক ছত্রিশ ঘণ্টা সময় কীভাবে কাটানো যায়।

য়ুহা এবং রায়ীনা কিছুক্ষণের মাঝেই আবিষ্কার করল বিশেষ কিছু না করে ছত্রিশ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দেয়া খুব সহজ নয়। স্কাউটশিপে যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করে তারা গ্রহটা সম্পর্কে তথ্য বের করার চেষ্টা করছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই সেই কাজটা শেষ হয়ে গেল। তারা আবিষ্কার করল গ্রহটা মোটামুটি বিচিত্র, বায়ুমণ্ডল বলতে গেলে নেই, তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। গ্রহটার পৃষ্ঠে আলো বিকিরণকারী এক ধরনের যৌগ আছে, সেখান থেকে নিস্প্রভ এক ধরনের আলো বের হয়, পুরো গ্রহটা সেজন্যে কখনো পুরোপুরি অন্ধকার নয় কিন্তু কখনোই পরিষ্কার করে কিছু দেখা যায় না। চারপাশে কেমন যেন মন খারাপ করা বিষঃ এক ধরনের পরিবেশ। এটা মূলত সিলিকনের গ্রহ, গ্ৰহটার ভর খুব কম, তাই বায়ুমণ্ডল আটকে রাখতে পারেনি। ছোট গ্রহ বলে পৃষ্ঠদেশ একেবারে অসম। জৈবিক প্রাণীর রুটিন বাঁধা পরীক্ষাগুলোতে কিছু ধরা পড়েনি কিন্তু এই গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে তার একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রহটির পৃষ্ঠ থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একটা সিগন্যাল মহাকাশে পাঠানো হয়। এ ধরনের একটা সিগন্যাল পাঠাতে হলে তার জন্যে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটা নির্দিষ্ট ধরনের উন্নতি হতে হয় মানুষের সভ্যতার সমকক্ষ সভ্যতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

সিগন্যালটি নির্দিষ্ট একটা সময় পরপর পাঠানো হয়, মোটামুটি সহজেই কোথা থেকে সিগন্যালটা পাঠানো হচ্ছে জায়গাটুকু নির্দিষ্ট করা গেছে। এই গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে হলে মনে হয় এই জায়গাটা দিয়েই শুরু করতে হবে। তবে নিজে থেকে সেখানে হাজির হওয়াটা খুব বিপজ্জনক একটি কাজ হয়ে যেতে পারে।

প্রথম কয়েক ঘণ্টার ভেতরেই য়ুহা এবং রায়ীনার ভেতরে এক ধরনের। ক্লান্তি এসে ভর করল, কোনো কিছু না করার এক ধরনের ক্লান্তি আছে, সেই ক্লান্তি খুব সহজেই একজনকে কাবু করে ফেলে। য়ুহা বলল, এই ছোট স্কাউটশিপে বসে থাকতে অসহ্য লাগছে! আমি কি স্কাউটশিপের বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসতে পারি? অপরিচিত একটা গ্রহে পা দিতে কেমন লাগে সেটা একটু দেখতে চাই! কখনো এ রকম একটা অভিজ্ঞতা হবে আমি ভাবিনি।

রায়ীনা বলল, আমারও অসহ্য লাগছে, কিন্তু এক সাথে দুজন বের হওয়া ঠিক হবে না। তুমি বের হও আমি তোমার ওপর চোখ রাখি, তারপর আমি বের হব, তখন তুমি আমার ওপর চোখ রাখবে।

য়ুহা তখন খুব সাবধানে স্কাউটশিপ থেকে বের হয়ে এলো। তার শরীরে তাপ নিরোধক পোশাক, তারপরও বাইরের শীতল গ্রহটিতে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। য়ুহা উপরের দিকে তাকালো, সেখানে কুচকুচে কালো আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে। চারদিকে এবড়ো থেবড়ো পাথর, শুষ্ক এবং বিবর্ণ। য়ুহা স্কাউটশিপটি ছেড়ে কয়েক পা এগিয়ে গেল এবং হঠাৎ তার ভেতরে এক ধরনের বিচিত্র অনুভূতি হতে থাকে, তার মনে হয় কেউ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো, আবছা অন্ধকারে উঁচু-নিচু পাথর, তার ভেতর থেকে সত্যিই কি কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে?

য়ুহা।

বল।

আমার মনে হচ্ছে তোমার হৃৎস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কিছু কী হয়েছে?

না। কিছু হয়নি।

তুমি কী কোনো কারণে ভয় পেয়েছ?

না ভয় পাইনি। তবে—

তবে কী?

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

মানুষের মন খুব বিচিত্র। রায়ীনা হাসির মতো শব্দ করে বলে, সত্যি সত্যি কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি একটু চিন্তিত হতাম কিন্তু এটা যদি তোমার একটা কল্পনা হয়ে থাকে তাহলে আমি ব্যাপারটাকে খুব গুরুত্ব দেব না।

য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকালো, চারপাশে শুষ্ক বিবর্ণ পাথর, কোথাও কিছু নেই। য়ুহা জোর করে মাথা থেকে চিন্তাটা সরিয়ে দেয়। মহাকাশের এই বিশেষ পোশাকে অভ্যস্ত হতে সময় নেবে, য়ুহা সাবধানে আর কয়েক পা অগ্রসর হয়। হাঁটা বলতে যা বোঝায় এটা মোটেও সে রকম নয়—গ্রহটার মাধ্যাকর্ষণ এত কম যে পায়ের ধাক্কাতেই অনেকটুকু উপরে উঠে যায়, মনে হয় সে বুঝি হেঁটে যাচ্ছে না, লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। শরীরের ভরকেন্দ্রটিও ঠিক জায়গায় নেই, পেছনে নানা ধরনের বোঝা, তাই একটু সামনে ঝুঁকে হাঁটতে হচ্ছে। এই পোশাকের সাথে একটা জেট প্যাক লাগানো আছে, সুইচ টিপেই সে উপরে উঠে যেতে পারবে, সামনে-পেছনে যেতে পারবে। য়ুহা এই মুহূর্তে সেটা অবশ্যি পরীক্ষা করে দেখার সাহস পেল না। এই পোশাকের সাথে একটা অস্ত্র ও থাকার কথা। অস্ত্রটা কোথায় আছে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাও সে বুঝতে পারছে না। মনে মনে আশা করে আছে তাকে কখনোই অস্ত্রটা হাতে তুলে নিতে হবে না। পৃথিবীতে একটা জিনিসকেই সে অপছন্দ করে, সেটা হচ্ছে অস্ত্র।

যুহ অন্যমনস্কভাবে আরো একটু সামনে এগিয়ে যেতেই রায়ীনার একটা সতর্কবাণী শুনতে পেল, য়ুহা, তুমি আর সামনে যেয়ো না।

কেন?

কোনো কারণ নেই। স্বাভাবিক নিরাপত্তার নিয়ম হচ্ছে অচেনা জায়গায় বেশি দূর না যাওয়া।

য়ুহা বলল, ঠিক আছে। আমি ফিরে আসছি।

য়ুহা ঘুরে যাওয়ার চেষ্টা করে আবিষ্কার করল মহাকাশ অভিযানের এই বেঢপ পোশাক পরে খুব সহজ কাজগুলোও মোটেও সহজে করা যায় না। কোনোভাবে তাল সামলানোর চেষ্টা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হঠাৎ করে তার মনে হলো কিছু একটা যেন সরে গেছে। য়ুহা থমকে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে তাকালো, সাথে সাথে সে রায়ীনার গলার স্বর শুনতে পায়, কী হয়েছে?

না কিছু না। তবে—

তবে কী?

আমার মনের ভুলও হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হলো কী একটা যেন সরে গেছে।

রায়ীনা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তুমি বাইরে আর অপেক্ষা করে স্কাউটশিপে চলে এসো। রায়ীনা যদিও গলার স্বরটি শান্ত রাখার চেষ্টা করেছে তার পরেও সেখানে উদ্বেগটুকু লুকিয়ে রাখতে পারল না।

আসছি। য়ুহা একটু এগিয়ে যেতেই দেখল অন্ধকার গ্রহের পাথরের আড়াল থেকে কিছু একটা দ্রুত সরে যাচ্ছে। সে আতঙ্কিতভাবে অন্যপাশে তাকালো, তার স্পষ্ট মনে হয় চারদিক থেকে কিছু একটা তাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে।

রায়ীনা।

কী হয়েছে?

আমার চারদিকে কিছু একটা এসেছে। মনে হয় কিছু একটা করার চেষ্টা করছে।

তুমি তোমার মাথা ঠান্ডা রাখ য়ুহা। দৌড়ানোর চেষ্টা করবে না। ঠিক যেভাবে আসছিলে সেভাবে আসতে থাক। কোনো রকম বিপদ হলে আমি আছি।

ঠিক আছে।

য়ুহা স্কাউটশিপটার দিকে এগুতে থাকে এবং হঠাৎ করে তার হেডফোনে কর্কশ একটা ধাতব শব্দ শুনতে পায়। অর্থহীন একটা শব্দ কিন্তু শব্দ সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। য়ুহার হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হয়ে ওঠে। মহাকাশের বেঢপ পোশাকের ভেতর সে কুলকুল করে ঘামতে থাকে। য়ুহা আরো দুই পা এগিয়ে গেল এবং হঠাৎ করে মনে হলো কোনো একটা প্রাণী খুব কাছে দিয়ে ছুটে গেছে, আবছা অন্ধকারে তার শরীরের খুঁটিনাটি কিছু দেখা গেল না। শুধু তার অস্তিত্বটা অনুভব করা গেল।

ভয় পেয়ো না য়ুহা। তুমি এগিয়ে আসতে থাকো-রায়ীনা তাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করল, তোমার কিছু হলে আমি আছি।

ঠিক আছে রায়ীনা।

য়ুহা আরো দুই পা এগিয়ে গেল, বড় কিছু পাথরের আড়ালে এখন স্কাউটশিপটা আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে। আর একটু এগিয়ে গেলেই সেখানে পৌঁছে যাবে। নিজের অজান্তেই য়ুহার পদক্ষেপ হঠাৎ দ্রুততর হয়ে ওঠে।

ঠিক এ রকম সময় বড় একটা পাথরের আড়াল থেকে একটা প্রাণী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তার ধাক্কায় সে ছিটকে পড়ে যায়। সাথে সাথে নানা আকারের আরো কিছু প্রাণী তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে হুঁটোপুটি খেতে থাকে। য়ুহা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে হাত দিয়ে প্রাণীগুলো নিজের ওপর থেকে সরানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, প্রাণীগুলো তাকে জাপটে ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ায় চেষ্টা করতে থাকে। য়ুহা হাত দিয়ে প্রাণীগুলোকে আঘাত করার চেষ্টা করল, নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

হেডফোনে রায়ীনার গলার স্বর শুনতে পেল য়ুহা, আসছি। আমি আসছি!

য়ুহাকে যখন টেনেহিঁচড়ে বেশ কিছুদূর নিয়ে এসেছে তখন রায়ীনা দৌড়ে তার কাছে পৌঁছালো। হাতের অস্ত্রটি দিয়ে অনির্দিষ্টভাবে গুলি করতে করতে সে ছুটে এসেছে। পেছন থেকে একটা প্রাণীকে টেনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, অস্ত্রটা দিয়ে সেটাকে আঘাত করে, তার পরেও সরাতে না পেরে সে আবার গুলি করল।

গুলির আঘাতে প্রাণীটা ছিটকে পড়ে গেল, কর্কশ এক ধরনের শব্দ করতে করতে সেটি উঠে দাঁড়ায়, তারপর উবু হয়ে উঠে সেটি হামাগুড়ি দিয়ে পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। রায়ীনা য়ুহাকে টেনে নিয়ে যাওয়া বিচিত্র প্রাণীগুলোর দিকে অস্ত্রটা তাক করে গুলি করল এবং তখন হঠাৎ প্রাণীগুলো য়ুহাকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে পালিয়ে যেতে শুরু করল।

প্রাণীগুলো পালিয়ে যাবার পর য়ুহা উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় বলল, তোমাকে ধন্যবাদ রায়ীনা। তুমি না এলে সর্বনাশ হয়ে যেত।

তুমি ঠিক আছ তো?

হ্যাঁ। ঠিক আছি।

তাহলে চল, স্কাউটশিপে।

এক সেকেন্ড দাঁড়াও- য়ুহা হঠাৎ নিচু হয়ে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করল, ভয় পাওয়া গলায় বলল, এই দেখো কী পড়ে আছে।

রায়ীনা এগিয়ে যায়, কী পড়ে আছে?

একটা হাত। তোমার গুলিতে প্রাণীটার শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে।

রায়ীনা নিচু হয়ে হাতটা তুলে নেয়, সেটা তখনো নড়ছে, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হাতটা মানুষের হাত।

Category: অন্ধকারের গ্রহ
পূর্ববর্তী:
« ১২. স্কাউটশিপটা ছোট
পরবর্তী:
১৪. স্কাউটশিপের ভেতরে ছোট টেবিল »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑