• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১২. লরির খোলা দরজার কাছে

লাইব্রেরি » মুহম্মদ জাফর ইকবাল » সায়েন্স ফিকশন সমগ্র » রুহান রুহান » ১২. লরির খোলা দরজার কাছে

লরির খোলা দরজার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রুহান তার লাল পাহাড় থেকে কিনে আনা বইটি পড়ছে তখন ক্রিটিনা জিজ্ঞেস করল, তোমার হাতে টা কী?

এটার নাম বই। আগে যখন সব মানুষের কাছে ক্রিস্টাল রিডার ছিল না তখন তারা এই রকম বই পড়ত।

কী আশ্চর্য! ক্রিটিনা রুহানের পাশে ঝুঁকে পড়ে বলল, দেখি তোমার বইটি।

ক্রিটিনা রুহানের এত কাছে ঝুঁকে এসেছে সে মেয়েটির মাথার চুলের হালকা এক ধরনের সুবাস পেল। বিবর্তনে মানুষের যে ইন্দ্রিয়গুলোর বিকাশ ফটেছে ঘ্রাণ তার একটি নয়, যদি হতো সে নিশ্চয়ই এই মেয়েটির শরীরের ঘ্রাণ তীব্রভাবে অনুভব করতে পারত।

ক্রিটিনা বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে বলল, কী আশ্চর্য! এখানে দেখছি নানা ধরনের চিহ্ন!

হ্যাঁ। এগুলোকে বলে বর্ণমালা। বর্ণমালা সাজিয়ে সবকিছু লেখা হয়।

সত্যি?

হ্যাঁ।

তুমি বর্ণমালা পড়তে পার?

হ্যাঁ। আমি শিখেছি।

ক্রিটিনা অবাক হয়ে বলল, তুমি আমাকে পড়ে শোনাও দেখি এখানে কী লেখা আছে।

রুহান পড়ল, মানুষের চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল। মাত্র সাতটি ফোটন হলেই চোখের রেটিনা সেটাকে দেখতে পায়। বিবর্তনের কারণে যদি চোখ আর মাত্র দশ গুণ বেশি সংবেদনশীল হয়ে যেত তাহলে খালি চোখেই আমরা কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া দেখতে পেতাম–

ক্রিটিনা চোখ বড় বড় করে বলল, বাবা গো! কী কটমটে কথা!

রুহান হেসে বলল, এটা মোটেও কটমটে কথা না। এটা খুব সাধারণ কথা। আসলে আমরা তো ক্রিস্টাল রিডারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই বই থেকে পড়লে কিছু বুঝতে পারি না।

ক্রিটিনা ভুরু কুঁচকে বলল, এখন তো পৃথিবীতে আর ক্রিস্টাল রিডার তৈরি হয় না, তাই না?

না।

তার মানে আমাদের আবার এরকম বই পড়া শিখতে হবে?

রুহান সোজা হয়ে বসে বলল, হ্যাঁ। আসলে আমি ঠিক এই কথাটা সবাইকে বোঝাতে চাই কিন্তু কেউ সেটা বুঝতে চায় না। যতদিন পৃথিবীটা আবার ঠিক না হয় সবার কাছে ক্রিস্টাল রিডার না থাকে ততদিন কী ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করবে না? একশবার করবে!

এই রকম বই দিয়ে?

হ্যাঁ। রুহান ক্রিটিনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইছ না। কিন্তু বিশ্বাস কর–

ক্রিটিনা হেসে বলল, কে বলেছে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করছি না? আমি অবশ্যই তোমার কথা বিশ্বাস করেছি।

রুহান মাথা নেড়ে বলল, না, তুমি আসলে আমার কথা বিশ্বাস কর নি। তুমি আমাকে খুশি করার জন্যে এই কথাটা বলছ।

ঠিক আছে। ক্রিটিনা মুখ টিপে হাসল। হেসে বলল, এখন তা হলে তোমাকে আরেকটা কথা বলি, এই কথাটা শুনলে তুমি বুঝবে যে আসলেই আমি তোমার কথা বিশ্বাস করেছি।

কী কথা বলবে?

তুমি কী আমাকে পড়তে শেখাবে?

রুহানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, তুমি সত্যি আমার কাছে শিখতে চাও?

হ্যাঁ। শিখতে চাই।

কেন?

ক্রিটিনা শব্দ করে হাসল। হেসে বলল, না! তোমাকে খুশি করার ও! আমি ঠিক করেছি আমাদের গ্রামের স্কুলটা আমি আবার চালু করব। স্কুলে। বাচ্চাদের আমি পড়তে শেখাব। তারা যেন কিছু একটা জানার সুযোগ পায়, শেখার সুযোগ পায়!

চমৎকার! রুহান নিজের অজান্তেই ক্রিটিনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি ঠিক এরকম একটা কিছু চাচ্ছিলাম!

ক্রিটিনা বলল, তাহলে তুমি আমাকে কখন শেখাবে?

এখনই শেখাব।

এখন? এই লরির মধ্যে? যখন আমরা ঝাঁকুনি খেতে খেতে যাচ্ছি?

হ্যাঁ। ভালো কাজে দেরি করতে হয় না।

সত্যি সত্যি রুহান ক্রিটিনাকে বর্ণমালা শেখাতে শুরু করে দিল।

 

দুজনে মিলে যখন বর্ণমালার মাঝামাঝি গিয়েছে তখন হঠাৎ লরিটি থেমে গেল। রুহান মাথা বের করে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

সামনে থেকে এজেন্ট দ্রুচান বলল, রাস্তার মাঝখানে দুইটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনেক মানুষ অনেক অস্ত্র।

রুহানের পেটের মধ্যে কেমন যেন পাক খেয়ে ওঠে, চাপা গলায় বলল, সর্বনাশ!

তাড়াতাড়ি অস্ত্রটা নিয়ে সে লাফিয়ে নেমে আসে। এজেন্ট দ্রুচান চোখে বাইনোকুলার দিয়ে সামনের গাড়িগুলোকে দেখছে। তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। রুহান জানতে চাইল, কী অবস্থা?

বুঝতে পারছি না।

সবাই কী পজিশান নিয়েছে?

নাহ্। হাঁটাহাটি করছে। দেখে মনে হয় না কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে। সবাই গল্পগুজব করছে।

তাহলে কী আমরা যাব?

এজেন্ট দ্রুচান বাইনোকুলার থেকে চোখ নামিয়ে বলল, একসাথে সবার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি যাই দেখে আসি কী ব্যাপার।

এজেন্ট দ্রুচান খুব দুশ্চিন্তিত মুখে গেল কিন্তু সে যখন ফিরে এলো তখন তার মুখ ভরা হাসি। হাত নেড়ে চোখ বড় বড় করে বলল, তোমরা বিশ্বাস করবে না কী হচ্ছে?

কী হচ্ছে?

দুই গাড়ি বোঝাই লোকজন, আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে।

রুহান চোখ কপালে তুলে বলল, তুমি ওদের বলেছ যে আমরা ডাকাতের দল তৈরি করছি না। লুটপাট করতে যাচ্ছি না?

আমার বলতে হয়নি! ওরা জানে। ওরা সেটা জেনেই এসেছে। ওরা ডাকাতের দলে যেতে চায় না।

রিদি অবাক হয়ে বলল, সত্যি?

সত্যি! তোমরা বিশ্বাস করবে না কী ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র নিয়ে চলে এসেছে। যদি আমরা সত্যি সত্যি ডাকাতের দল করতাম, আমাদের সাথে কেউ পারত না!

রুহান চোখ পাকিয়ে বলল, এজেন্ট দ্রুচান, তোমার যতই ডাকাতের দল করার ইচ্ছে হোক না কেন আমরা কিন্তু সেটা করছি না!

এজেন্ট দ্রুচান একটা কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাসের ভঙ্গি করে বলল, আমি জানি রুহান! আমি সেটা খুব ভালো করে জানি।

 

ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে হলো কেউই বুঝতে পারল না, কিন্তু সবাই যখন ক্রিটিনাদের গ্রামে পৌঁছাল তখন তাদের সাথে আঠারোটা লরি এবং প্রায় তিনশত মানুষ। বেশিরভাগ সশস্ত্র—সবাই এসেছে রুহান আর রিদির সাথে কাজ করার জন্যে। ক্রিটিনার গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল। কিন্তু তারা দেখল গ্রামের কেউ ঘুমায় নি, সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে তাদের জন্যে। অপেক্ষা করছে। ক্রিটিনাকে দেখে তার মা ছুটে এলো, বুকে জড়িয়ে বলল, মা তুই ফিরে এসেছিস?

ক্রিটিনা চোখ মুছে বলল, হ্যাঁ মা ফিরে এসেছি।

আমি ভেবেছিলাম তোকে আর কোনোদিন দেখব না।

ক্রিটিনা বলল, আমিও তাই ভেবেছিলাম মা, কিন্তু এই যে দুইজন রুহান আর রিদি তারা সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। তারা আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।

ক্রিটিনার মা অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলল, জানি। আমি সব জানি। এখন সবাই জানে। এই এলাকার সব মানুষের মুখে মুখে এখন একটা মাত্র কথা।

কী কথা মা?

ঈশ্বর দুজন দেবদূতকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, তারা এখন সারা পৃথিবীর সব মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করে দেবে।

ক্রিটিনা খিলখিল করে হেসে বলল, না মা, ওরা দেবদূত না। ওরা মানুষ। একটু বোকা সোকা কিন্তু একেবারে একশ ভাগ মানুষ। তারা যে কাজটা করছে সেই কাজটা দেবদূতরা পারত না, শুধু মানুষেরাই এই কাজ পারে।

আমাকে ঐ মানুষগুলোর কাছে নিয়ে যাবি? আমি ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের মঙ্গলের জন্যে প্রার্থনা করব?

এসো মা আমার সাথে।

ক্রিটিনা তার মাকে নিয়ে রুহান আর রিদিকে খুঁজে বের করে আবিষ্কার করল হারানো সন্তানদের মায়েরা রুহান আর রিদিকে ঘিরে রেখেছে। কেউ কেউ আকুল হয়ে কাঁদছে, কেউ কেউ তাদের হাত ধরে সেখানে চুমু খাবার চেষ্টা করছে।

রুহান কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু অনেক মানুষের ভিড়ে সে কিছু বলতে পারছে না। ক্রিটিনা তখন রুহান আর রিদিকে উদ্ধার করার জন্যে এগিয়ে যায়, সবাইকে ঠেলে সরিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, তোমরা সবাই সরে যাও। এই দুজন মানুষ অনেক দূর থেকে অনেক কষ্ট করে আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে এনেছে। মানুষগুলো ক্লান্ত, তাদের একটু বিশ্রাম নিতে দাও।

মায়েরা চিৎকার করে বলল, আমরা আমাদের বাড়িতে তাদের জন্যে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আমরা তাদের আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাই!

ক্রিটিনা বলল, দুজন মানুষ ত্রিশজনের বাড়িতে যেতে পারবে না! তাদের। সাথে আরো তিনশ মানুষ আছে। তাদের সবার একটা ব্যবস্থা করতে হবেতোমরা আপাতত তাদের মুক্তি দাও।

কমবয়সী একজন মা বলল, আমরা তাদের কোনো একটা কথা শুনতে চাই।

ক্রিটিনা রুহানের হাত স্পর্শ করে বলল, রুহান তুমি কিছু একটা বল।

কী বলব?

ক্রিটিনা কাঁধ বাঁকিয়ে বলল, আমি জানি না। যা ইচ্ছে হয় বল!

রুহান একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে গলা উঁচু করে বলল, আপনাদের কাছে আপনাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে।

অনেক মানুষের ভিড়, সবার কথাবার্তায় জায়গাটা সরগরম হয়ে ছিল, রুহান কথা বলতে শুরু করতেই সবাই চুপ করে গেল, চারপাশে হঠাৎ করে পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। রুহান সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল, কাজটা ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে কী যখন আমরা সেটা শুরু করেছিলাম তখন ঠিক কীভাবে আমরা করব সেটা জানতাম না। তারপর আমরা সেটা শুরু করেছিলাম।

রুহান একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমরা অসম্ভব আনন্দিত, আমরা সেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটা শুরু করেছিলাম। সে কারণে আজ আপনাদের আপনাদের সন্তানদের ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এই কাজটি করার কাতা। আরেকটি খুব বড় কাজ হয়েছে! মানুষ আবার নতুন করে বিশ্বাস করতে। করেছে যে একজনকে শুধু অন্যায় আর অপরাধ করে বেঁচে থাকতে হবে। মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে ঘৃণা করে, তাদের উপর অত্যাচার করে দিন কাটাতে হবে না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে পারবে, তাদের সম্মান করতে পার। এবং তার পরেও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারবে।

রুহান এক মুহূর্তের জন্যে থামতেই সবাই এক ধরনের আনন্দধ্বনি কর। তার ঠিক কোন কথাটাতে সবাই এত আনন্দ পেয়েছে রুহান তা ধরতে পারল না। কম বয়সী একটি মা চিৎকার করে বলল, এখন আমরা অন্যজনের মুখে কিছু শুনতে চাই!

রিদি হাত নেড়ে বলল, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না! রুহান যেটা বলেছে সেটাই আমার কথা।

এবারে অনেকে চিৎকার করে বলল, না, না, আমরা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।

রিদি একটু ইতস্তত করে বলল, রুহানের সব কথা ঠিক। তবে আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, যারা পৃথিবীটাকে একটা নরকে পরিণত করেছে তারা কিন্তু এত সহজে এটা মেনে নেবে না। তারা পাল্টা আঘাত হানা। চেষ্টা করবে, প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করবে। আমাদের সে জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা যেটা শুরু করেছি সেটা এখনো শেষ হয়নি–সবাই মিলে সেটা শেষ করতে হবে!

এবারেও অনেকেই আনন্দের একটা শব্দ করল, যদিও রিদি যে কথাগুলো বলেছে সেটা মোটেও আনন্দের কথা নয়, সেটা ছিল খুব ভয়ের কথা, খুব আশঙ্কার কথা।

 

প্রাথমিক উচ্ছ্বাস কেটে যাবার পর যখন গভীর রাতে সবাই ঘুমাতে গিয়ে তখন রিদি আর রুহান অনেকক্ষণ পর নিরিবিলি কথা বলার সুযোগ পেল। রিদি চোখ মটকে বলল, কেমন বুঝতে পারছ রুহান!

রুহান জিজ্ঞেস করল, তুমি কীসের কথা বলছ?

সব মিলিয়েই বলছি। তুমি যখন লাল পাহাড়ের বাজারে ক্রিটিনা আর অন্য ছেলে-মেয়েদের বাঁচানোর জন্যে তোমাদের অস্ত্রটা বের করেছিলে তখন কী তুমি কল্পনা করেছিলে এরকম একটা কিছু ঘটবে?

না। ভাবি নি।

তুমি কী ভেবেছিলে?

রুহান বলল, আমি কিছুই ভাবি নি। মানুষ হয়ে মানুষকে বেচা-কেনা করা যায় না, যেভাবেই হোক সেটা থামাতে হবে, এটা ছাড়া আর কিছুই ভাবি নি।

এখন তুমি বুঝতে পারছ কী ঘটছে? কী ঘটছে?

এখন আমাদের সাথে প্রায় তিনশ সশস্ত্র মানুষ। তারা যে শুধু সশস্ত্র তাই না, আমার ধারণা তাদের সবাই বেশ ভালো সৈনিক। আমি নিশ্চিত, যতই দিন যাবে এরকম মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। দেখতে দেখতে আমাদের সাথে হাজার হাজার মানুষ চলে আসবে। আমরা তখন বিশাল একটা শক্তি হয়ে যাব। বুঝতে পারছ?

রুহান বলল, হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।

রিদি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, না, তুমি বুঝতে পার নি।

আমি কী বুঝতে পারি নি!

আমরা যেটা অনুমান করছি সেটা কী ক্ৰিভন অনুমান করছে না?

রুহান মাথা নেড়ে বলল, মনে হয় করছে।

তা হলে?

তুমি বলছ, ক্রিভন সেটা কোনোদিনই করতে দেবে না?

রিদি মাথা নাড়ল, আমার তাই ধারণা। আমরা এখন পর্যন্ত যে সব কাজ করেছি তার প্রত্যেকটা ক্ৰিভনের মান-সম্মান, ব্যাবসা, বাণিজ্য, ক্ষমতার রাজত্ব সবকিছুর উপর একটা করে বিশাল আঘাত। ক্ৰিভনের এখন তার লোকজনের সামনে মুখ দেখানোর কোনো উপায় নেই। ক্ৰিভনকে যেভাবে হোক তার সম্মানকে উদ্ধার করতে হবে। সেটা কীভাবে করা সম্ভব, বলো দেখি?।

রুহান কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল।

রিদি বলল, বলো।

রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমাদের দুইজনকে ধরে নিয়ে।

হ্যাঁ। শুধু ধরে নিয়ে নয়, দুইজনকে খুব কঠিন একটা শাস্তি দিয়ে–এমন কঠিন একটা শাস্তি যে পৃথিবীর যে কোনো মানুষ যখন সেটা শুনবে তখন আতঙ্কে শিউরে উঠবে। রিদি এক মুহূর্ত থেমে বলল, সেটা কী হতে পা তুমি জান?

রুহান কিছুক্ষণ পর বলল, জানি।

সেটা কী?

আমি সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।

ঠিক আছে। আমিও চাই না। শুধু আমি নিশ্চিত করতে চাই যে তুমিও বর্তমান পরিস্থিতিটা ঠিকভাবে বুঝতে পারছ।

আমি বুঝতে পারছি রিদি। জেনে হোক না জেনে হোক আমরা অসম্ভব বিপদের একটা কাজে হাত দিয়েছি। অনেকটা সিংহের লেজ ধরে ফেলার মতো, এখন সেটা ধরে রাখতেই হবে, ছেড়ে দিলে সিংহটা আমাদের খেয়ে ফেলবে।

রিদি শব্দ করে হেসে বলল, মাঝে মাঝে তুমি খুব বিচিত্র কথা বল রুহান। খুব বিচিত্র এবং মজার। যাই হোক, চল শুয়ে পড়া যাক।

তুমি যাও, আমার একটা কাজ করতে হবে।

কী কাজ?

সেটাও খুব বিচিত্র, তুমি জানতে চেয়ো না।

রিদি বলল, সেই কাজটা কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না?

না।

আমি জানি, আমাদের খুব বিপদের ঝুঁকি আছে কিন্তু সেটা আজ রাতেই ঘটে যাবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের এখানে এখন তিনশত সশস্ত্র মানুষ, তারা ছোট গ্রামটার চারপাশে পালা করে পাহারা দিচ্ছে। নাইট গগলস চোখে দিয়ে লোকজন দেখছে, গোপনে কেউ আক্রমণ করতে পারবে না।

সেটা নিয়েই ভাবছি রিদি। মনে হচ্ছে সেটাই দুশ্চিন্তার কথা।

রিদি শক্ত বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে বিড়বিড় করে বলল, যেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কথা তুমি সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। কিন্তু যেটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তুমি চুল পাকিয়ে ফেল। আমার ধারণা তোমার। এখন সময় হয়েছে- কথাটা শেষ করার আগেই রিদি গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।

রুহান শুতে গেল একটু পরেই। শোবার আগে সে কয়েকটা কাঠি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে সেই কয়লা দিয়ে দেয়ালে একটা নির্দেশ লিখে গেল। ছোট একটা নির্দেশ, এটা লিখতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়, কিন্তু রুহান তার জীবনে বর্ণমালা ব্যবহার করে কিছু লেখেনি তাই তার বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল! রুহান খুব ভালো করে জানে বর্ণমালা ব্যবহার করে এই লেখা খুব বেশি মানুষ পড়তে পারবে না, তবুও তার মনে হলো এটা লিখে রাখা দরকার। খুব দরকার।

সে যে কত ক্লান্ত হয়েছিল সেটা সে নিজেই জানত না। রিদির মতোই বিছানায় শোয়া মাত্রই রুহান গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।

 

গভীর রাতে রিদি আর রুহান তাদের দরজায় শব্দ শুনে চমকে জেগে উঠে। ভয়। পাওয়া গলায় রুহান জিজ্ঞেস করল, কে?

আমি গার্ড।

কী হয়েছে গার্ড?

একটা মেয়ে তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।

মেয়ে? রিদি আর রুহান অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। এতো রাতে কোন মেয়ে তার সাথে দেখা করতে আসবে?

দরজা খুলতেই হুঁড়মুড় করে একটা মেয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকল। একটা চাদর দিয়ে তার পুরো শরীর ঢাকা, শীতে একটু একটু কাঁপছে। মেয়েটি অপ্রকৃতস্থের মতো তাদের দুজনের দিকে তাকায়। বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে যন্ত্রের মতো বলতে থাকে, রিদি? রুহান? রিদি? রুহান? রিদি? রুহান?

রুহান নিঃশ্বাস বন্ধ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটিকে সে চেনে। একজন সক্রেটিস। মেয়েটির নাম ক্ৰানা। এই মেয়েটির মাথায়। ইলেট্রড দিয়ে যখন সিস্টেম লোড করা হয়েছিল তখন সেখানে সে হাজির ছিল। রুহান মেয়েটিকে চিনতে পেরেছে কিন্তু মেয়েটি তাকে চিনতে পারে নি। চেনার কথা নয়–এরা সক্রেটিস, মাথায় স্টিমুলেশন দেবার আগে এরা কাউকে চেনে না।

রুহান তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটার হাতের দিকে তাকাল, একটা লাল লিভার শক্ত করে ধরে রেখেছে। লিভারটা সে চেনে, বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে এই ধরনের লিভার ব্যবহার করা হয়।

ক্ৰানা একবার রিদি আর একবার রুহানের দিকে তাকিয়ে অনেকটা আপন মনে জিজ্ঞেস করে, রিদি? রুহান? রিদি?

রুহান বলল, হ্যাঁ। আমরা রিদি আর রুহান।

ক্রানা নামের মেয়েটা কিছুক্ষণ তাদের মুখের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খুব ধীরে ধীরে তার শরীরের উপর থেকে চাদরটা সরাল, তারপর বলল, ক্রিভন আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছে। ক্ৰিভন? তোমরা চেনো ক্ৰিভনকে?

রুহান আর রিদি বিস্ফোরিত চোখে কানার শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার শরীরে বড় বড় দুটি টিউব বাঁধা। টিউবগুলো দুজনেই চেনে। এগুলো হাইব্রিড বিস্ফোরক। দুটো প্রয়োজন নেই একটা টিউব বিস্ফোরিত হলেই এই পুরো গ্রাম ভস্মীভূত হয়ে যাবে, কিন্তু ক্ৰিভন দুটি হাইব্রিড বিস্ফোরক শো দিয়েছে কারণ গ্রামটাকে ভস্মীভূত করা তার উদ্দেশ্য নয়। তার উদ্দেশ্য ভয় দেখানো।

ক্রানা ডান হাতে শক্ত করে লিভারটা চেপে ধরে রেখে বিড়বিড় করে বলাকা, ক্ৰিভন খুব মজার মানুষ। এক কথা অনেকবার বলে। অনেকবা। অনেকবার। আমাকে বলেছে রিদি আর রুহানকে খুঁজে বের করে নিয়ে যেতে। অনেকবার বলেছে। আর কী বলেছে জান? বলেছে রিদি আর রুহান যদি এক। কথা উচ্চারণ করে তাহলে এই লিভারটা ছেড়ে দিতে! কী আশ্চর্য একটা কথা!

রুহানের মনে হলো তার মেরুদণ্ড দিয়ে ভয়ের একটা শীতল স্রোত ব যেতে শুরু করেছে। মনে হলো সে বুঝি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না, হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাবে। ক্ৰানা এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার আপন মনে বলে, রিপি রুহান তোমরা কী কথা বলবে? একটা কথা। মাত্র একটা কথা! তাহলে আমি লিভারটা ছেড়ে দিতাম–দেখতাম কী হয়! কী হবে বলে তোমার মনে হয়? তোমরা কী জান? রিদি? রুহান? তোমরা জান? জান কী হয়?

ক্রানার সামনে দাঁড়িয়ে রিদি আর রুহান কুলকুল করে ঘামতে থাকে। হেরে গেছে! তারা জানে তারা হেরে গেছে। ক্ৰিভনের মতো একজন অসুস্থ মানুষ কী। সহজে তাদের হারিয়ে দিল!

Category: রুহান রুহান
পূর্ববর্তী:
« ১১. এজেন্ট দ্রুচান
পরবর্তী:
১৩. ক্রিটিনাদের গ্রাম »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑