1 of 3

০৬।১৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : ত্রয়োদশ অনুবাক

ত্রয়োদশ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : বীরস্য রথঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

বনস্পতে বীড়ঙ্গো হি ভুয়া অস্মৎসখা প্রতরণঃ সুবীরঃ। গোভিঃ সংনদ্ধো অসি বীড়য়স্বাস্থাতা তে জয়তু জেত্বানি ॥ ১। দিকথিব্যাঃ পর্যোজ উদ্ভূতং বনস্পতিভ্যঃ পর্যাতৃতং সহঃ। অপমোজানং পরি গোভিরাবৃতমিন্দ্রস্য বজ্রং হবিষা রথং যজ। ২। ইন্দ্রস্যৌজো মরুতামনীকং মিত্রস্য গর্ভো বরুণস্য নাভিঃ। স ইমাং নো হব্যদাতিং জুষাণো দেব রথ প্রতি হব্যা গৃভায় ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে বৃক্ষ-নির্মিত রথ! তুমি দৃঢ় হও। তুমি আমাদের শত্রুবর্গ হতে উদ্ধার করণশালী মিত্রস্বরূপ। তুমি চর্মের বন্ধনে দৃঢ়বদ্ধ, অতএব তুমি বীরগণের সাথে বেষ্টিত হয়ে যুদ্ধের যোগ্য হয়ে থাকো। তোমার উপর আরোহণশালী পুরুষ (অর্থাৎ তোমাতে অধিষ্ঠিত যোদ্ধৃপুরুষ) শত্রুসেনাদের স্বর্ণ, ধন এবং রাজ্যের উপর বিজয়প্রাপ্ত করুক ॥১॥

আকাশ ও পৃথিবী হতে তদীয় বল প্রাপ্তিকৃত হয়েছে। (অর্থাৎ দু-সম্বন্ধি বৃষ্টির জলে ও পৃথিবীর অবয়বের দ্বারা তদীয় সার উধৃত হয়ে রথ নির্মিত হয়েছে–এটাই অর্থ)। বৃষ্টির জলে বৃদ্ধিপ্রাপ্তশালী (বনস্পতি-স্বরূপা) বৃক্ষের কাষ্ঠরূপ বলই এই রথ। চর্ম-রশ্মির দ্বারা আবদ্ধিত (বা আবোষ্টিত) এই রথ ইন্দ্রের আয়ুধের, সমান দ্রুতগতি সম্পন্ন। এই রথকে ঘৃতযুক্ত হব্যের দ্বারা সেবা করা উচিত। ২।

হে রথ! তুমি ইন্দ্রের পরাক্রমস্বরূপ, মরুৎ-বর্গের বলসদৃশ, মিত্রদেবতার তুমি গর্ভবৎ, এবং বরুণ দেবতার তুমি অবয়ব বা নাভিতুল্য। তুমি আমাদের দ্বারা সেবমান যজ্ঞীয় হবিঃ সমূহকে প্রতিগ্রহণ করো ৷ ৩৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : দুন্দুভিঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : দুন্দুভি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

উপ শ্বাসয় পৃথিবীমুত দ্যাং পুরত্রা তে বন্বতাং বিষ্ঠিতং জগৎ। স দুন্দুভে সঙ্কুরিন্দ্রেণ দেবৈধূরা দবীয়ো অপ সেধ শত্রম্ ॥১॥ আ ক্ৰয় বলমোজা ন আ ধা অভি ষ্টন দুরি বাধমানঃ। অপ সেধ দুন্দুভে দুচ্ছুনামিত ইন্দ্রস্য মুষ্টিরসি বীডয়স্ক ॥ ২॥ প্রামূং জয়াভীমে জয়ন্তু কেতুমদ দুন্দুভির্বাবদীতু। সমপর্ণাঃ পতন্তু নো নবোস্মাকমিন্দ্র রথিনো জয়ন্তু ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে দুন্দুভি! তুমি পৃথিবী ও আকাশকে আপন নির্ঘোষে পূর্ণ করে দাও। অনেক দেশস্থ প্রাণী তোমার ধ্বনিকে সুখপূর্বক শ্রবণ করে থাকে। তুমি যুদ্ধের অধিস্বামী ইন্দ্র ও তার অনুগামী মরুৎ-বর্গের সাথে সম্মিলিত হয়ে আমাদের শত্রুবৃন্দকে দূরে বিতাড়ন করো। ১।

 হে দুন্দুভি! তুমি শত্রুগণের রথ, অশ্ব, হন্তী ও আরোহী ইত্যাদি সকল কিছু হরণ করে তাদের পরাজয়জনিত আর্তনাদ উৎসারিত করাতে থাকো। তুমি সংগ্রামে আমাদের সম্মুখে উপনীত হও এবং পরাজয়-করণশালী পাপ সমুদায়কেও দূর করে দাও। তুমি শত্রুগণের কর্ণভেদী (বা হৃদয়ভঞ্জক) শব্দ করে তাদের সন্তাপকারিণী সেনাগণকে বিতাড়িত করে দাও। তুমি ইন্দ্রের মুষ্টির সমান দৃঢ় হয়ে থাকো। ২।

 হে ইন্দ্র! ঐ দৃশ্যমান শত্রুসেনাদের উপর বিজয় লাভ করো। এই দুন্দুভি প্রজ্ঞানসদৃশ উচ্চ ধ্বনিতে আমাদের এই শূর শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করুক। আমাদের সেনাপতি, মন্ত্রী ও রাজাও রথারূঢ় হয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করুক৷ ৩৷৷

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বনস্পতে বীত্বঙ্গো ইতি প্রথমং সূক্তং। অত্র আদ্যেন তৃচেন নবং রথং অভিমন্ত্র জয়কামং রাজানং রথং আরোহয়েৎ। তদ্ উক্তং কৌশিকেন। …উপ শ্বাসয় ইতি তৃচেন পরসেনাত্ৰাসনবিদ্বেষণকর্মণি ভের্যাদিবাদিং সূত্রোক্তপ্রকারেণ সম্পাত্য ত্রিস্তাড়য়িত্বা বাদকায় প্রযচ্ছে। সূত্রিতং হি।… তথা মহাব্রতে অনেন তৃচেন তাড়য়েৎ। তদ্ উক্তং বৈতানে।…ইত্যাদি। (৬কা…১৩অ. ১-২সূ)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তের মন্ত্রগুলি সূত্রানুসারে নূতন রথ অভিমন্ত্রিত পূর্বক জয়াভিলাষী রাজাকে রথে আরোহণ করানোর ক্ষেত্রে বিনিযুক্ত হয়। দ্বিতীয় সূক্তের মন্ত্রগুলি সূত্রানুসারে শত্রুসেনার ত্রাস, বিদ্বেষ প্রভৃতি কর্মে ভেরী ইত্যাদি বাদ্য তিনবার বাদনের পর বাদককে প্রদানে বিনিয়োগ করণীয়! তথা মহাব্রতে এই সূক্তমন্ত্রগুলির বিনিয়োগ হয়ে থাকে। (৬কা, ১৩অ. ১-২)।

.

তৃতীয় সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

[ঋষি : ভৃঙ্গঙ্গিরা দেবতা : বনস্পতি, যক্ষ্মনাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী]

বিদ্রধস্য বলাসস্য লোহিতস্য বনস্পতে। বিসল্পকস্যোষধে মোচ্ছিষঃ পিশিং চন ॥১॥ যৌ তে বলাস তিষ্ঠতঃ কক্ষে মুম্বাবপশ্রিতৌ। বেদাহং তস্য ভেষজং চীপুরভিচক্ষণম্ ॥ ২॥ যো অঙ্গ্যো যঃ কর্ণোঃ যে অক্ষ্যোসিল্পকঃ। বি বৃহামো বিসল্পকং বিদ্রধং হৃদয়াময়। পরা তমজ্ঞাতং যক্ষ্মমধরাঞ্চং সুবামসি ॥ ৩৷৷

 বঙ্গানুবাদ –হে পলাশ! তুমি রুধিরস্রাবাত্মক বিসর্পক ইত্যাদি রোগের ঔষধিবিশেষ; তুমি বিদ্রধির, অর্থাৎ বিদরণশীল ব্ৰণবিশেষের, ঔষধিস্বরূপ; তুমি বলক্ষয়কারক কাস, শ্বাস ইত্যাদি রোগকেও দূর করে থাকো। তুমি বিসর্পের সাথে দূষিত চর্ম ও মেদকেও (বা শরীরের দুষ্ট মাংসকেও) নিবারণ করো। ১।

 হে কাস-শ্বাসযুক্ত বলাস রোগ! তোমার বিসর্পক ইত্যাদি যে দুটি বিকার অণ্ডকোষের নিকট বা বগলের কোণে অবস্থিত, অমি তার ঔষধি জ্ঞাত আছি। চীপুদ্র বৃক্ষ ঐ ব্যধিকে বিনাশ করতে সমর্থ। ২।

নাড়ীমুখ হতে সম্পূর্ণ দেহব্যাপি বিস্তারপ্রাপ্ত বিসর্পক হস্ত, পদ, কর্ণ, চক্ষু ইত্যাদিতেও সংক্রামিত হয়ে যায়; সেগুলিকে এবং বিদ্রধি, হৃদয়রোগ, যক্ষ্মা ইত্যাদি বিকরাল রোগসমূহকেও আমি পরায়ুখ করে প্রেরণ করে দিচ্ছি। ৩৷

.

চতুর্থ সূক্ত : রাজা

[ঋষি : অঙ্গিরা দেবতা : শকধূম, সো ছন্দ : অনুষ্টুপ]

শকধূমং নক্ষত্রাণি যদ রাজানমকুর্বত। ভদ্রাহমস্মৈ প্রাযচ্ছন্নিদং রাষ্ট্রমসাদিতি ॥১॥ ভদ্রাহং নো মধ্যন্দিনে ভদ্রাহং সায়মস্তু নঃ ভদ্রাহং নো অহ্নাং প্রাতা রাত্রী ভদ্রাহমস্তু নঃ ॥ ২॥ অহোরাত্রাভ্যাং নক্ষত্রেভ্যঃ সূর্যাচক্ৰমসাভ্যাম। ভদ্রাহমম্মুভ্যং রাজছুকধূম ত্বং কৃধি ॥ ৩৷৷ যো নো ভদ্ৰাহমকরঃ সায়ং নক্তমথো দিবা। তস্মৈ তৈ নক্ষত্ররাজ শকধূম সদা নমঃ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –পুরাকালে শকধূম (অর্থাৎ শকৃত-সম্বন্ধী ধূমবা) নামক অগ্নিকে নক্ষত্রসমূহ তাদের রাজা চন্দ্রমায় পরিণত করেছিল; এমন কি তাঁকে সেই নক্ষত্রমণ্ডলের রাজ্য প্রদান করতে স্বীকার করেছিল; কারণ তারা চেয়েছিল যে, এই নক্ষত্রমণ্ডল তারই অধীনস্থ থাকুক এবং সব কিছুই তার বশে থাকুক ॥ ১।

 মধ্যাহ্ন সায়ংকাল ও প্রাতঃকালেও আমাদের দিন পুণ্যাহ হোক এবং রাত্রিও আমাদের নিমিত্ত পুণ্যাহ হোক। ২।

হে শকধূম! হে নক্ষত্রমণ্ডলেন রাজ! তুমি রাত্রি, দিবস, অশ্বিনী ইত্যাদি নক্ষত্র এবং দিবা ও রাত্রিকে পৃথক করণশালী সূর্য ও চন্দ্র হতে আমাদের কালকে (সর্ব মুহূর্তকে) শুভ করিয়ে আনয়ন করো। ৩।

 হে শকধূম! হে সোম! তুমি সায়ংকাল, রাত্রি বা দিনে আমাদের পুণ্যাহ সৃষ্টি করেছে। আমরা তোমার উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি ৷৷ ৪।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— বিদ্রধস্য বলাসস্য ইতি তৃচেন জলোদরবিসর্পাদিসর্বরোগভৈষজ্যার্থং ব্যাধিতস্য মূর্ধি সম্পাতা আনয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন তৃচেন চতুরঙ্গুলং পলাশশলং পিষ্টা অভিমন্যু ব্যাধিতশরীরং লিম্পেৎ। সূত্রিতং হি।…শকধূমং ইতি চতুঋচেন স্বস্ত্যয়নকামঃ আজ্যসমিৎপুরোডাশাদি-শম্বুলান্তানং ত্রয়োদশদ্রব্যাণাং অন্যতমং জুহুয়াৎ। তথা নিত্যনৈমিত্তিককামকৰ্মাণি শীঘ্রং কতুকামঃ অনেন চতুঋচেন ব্রাহ্মণস্য সন্ধিযু গোময়পিণ্ডা নিধায় অগ্নিত্বেন সঙ্কল্প অভিমন্যু সূত্রোক্তপ্রকারেণ প্রশ্নপ্রতিবচনে কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।…তথা সোমগ্ৰহজনিতারিষ্টশান্তয়ে অনেনাজ্যং জুহুয়াৎ .তথা গ্ৰহযজ্ঞে হবিরাজ্যহোমাদীনি অনেন সোমায় কুর্যাৎ। তদ উক্তং শান্তিকল্পে।..ইত্যাদি৷ (৬কা, ১৩অ, ৩-৪)।

টীকা— উপযুক্ত তৃতীয় সূক্তের মন্ত্রগুলি জলোদর, বিসর্প ইত্যাদি সর্বরোগের ভৈষজ্যাত্রে ব্যাধিতে শরীরে লেপনের ক্ষেত্রে সূত্রোক্ত-প্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রগুলি স্বস্তয়নকামী ব্যক্তি আজ্য, সমিৎ, পুরোডাশ ইত্যাদি ত্রয়োদশটি দ্রব্যের একটির দ্বারা সূত্রানুসারে হোম করবেন। নিত্যনৈমিত্তিক কার্য তরান্বিত করার ক্ষেত্রেও সূত্রোক্ত-প্রকারে এই মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ করণীয়। সোমগ্রহজনিত দোষশান্তির নিমিত্ত কিংবা গ্রহযজ্ঞেও এই মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ নির্দিষ্ট আছে ॥ (৬কা, ১৩অ. ৩-৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : ভগপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ভগ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 ভগেন মা শাংশপেন সাকমিণে মেদিনা। কৃপোমি ভগিনং মাপ দ্ৰান্তুরাতয়ঃ ॥১॥ যেন বৃক্ষ অভ্যভবো ভগেন বৰ্চসা সহ। তেন মা ভগিনং কৃপ দ্ৰান্তুরাতয়ঃ ॥ ২॥ যো অন্ধ্যো যঃ পুনঃসররা ভগগা বৃক্ষেহিতঃ। তেন মা ভগিনং কৃপ দ্রারাতয়ঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –গো-মহিষাদির খুরসদৃশ আকারসম্পন্ন আয়ুধশালী, সেই সৌভাগ্যকর ভগদেবতার দ্বারা আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান্ করে তুলছি। ইন্দ্র আমার সেবায় অত্যন্ত প্রসন্ন হোন; আমি তার কৃপায় নিজেকে ভাগ্যবান করে তুলছি। আমাদের শত্রুগণ নিকৃষ্ট গতি প্রাপ্ত হোক। ১।

 হে ঔষধি! তুমি ভগদেবতার যে তেজের দ্বারা সমীপবর্তী বৃক্ষকে তিরস্কৃত করে থাকো, সেই দেবতার দ্বারা আমাকে সৌভাগ্য প্রদান করো। আমাদের অদানশীল শত্রুগণ আমাদের নিকট হতে দূরীভূত হয়ে নিকৃষ্ট গতি লাভ করুক ॥ ২॥

ভগদেবতা নেত্রহীন হওয়ার কারণে সম্মুখভাগে গমনে সমর্থ হয় না, এবং গৃহীত প্রদেশেই বারম্বার চক্রাকারে ভ্রাম্যমান হয়ে থাকেন; এই কারণে মার্গের বৃক্ষে বৃক্ষে আঘাত প্রাপ্ত হতে থাকেন। সেই ভগদেবতার দ্বারা তুমি আমাকে ভাগ্যশালী করাও। আমাদের অদানশীল শত্রুগণ আমাদের নিকট হতে দূরীভূত হয়ে নিকৃষ্ট গতি লাভ করুক৷ ৩৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত : স্মরঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : স্মর ছন্দ : বৃহতী, অনুষ্টুপ]

 রথজিতাং রাথজিতেয়ীনামন্সরসাময়ং স্মরঃ। দেবাঃ. প্র হিণুত স্মরমসৌ মামনু শোচতু॥১॥ অসৌ মে স্মরদিতি প্রিয়ো মে স্মরদিতি।. দেবা প্রঃ হিণুত স্মরমসৌ মামনু শোচতু ॥ ২॥ যথা মম স্মরাসৌ নামুয্যাহং কদাচন।। দেবাঃ প্র হিণুত স্মরমসৌ মামনু শোচতু৷ ৩৷৷ উন্মাদয়ত মরুত উদন্তরিক্ষ মাদয়। অগ্ন উন্মাদয়া ত্বমসৌ মামনু শোচতু। ৪৷

বঙ্গানুবাদ –এই কাম (অর্থাৎ স্মর) রথের দ্বারা জয়লাভশালিনী ও রথের দ্বারা জয়লাভকারিণী অপ্সরাগণের অধীনে অবস্থান করছে। হে দেবগণ! এই কামকে সেই রমণীর নিকট দূর করো, তার প্রভাব যেন আমার উপর না পতিত হয়। ১।

এই পুরুষ আমাকে স্মরণ করুক, আমার প্রিয় আমাকে স্মরণ করুক এইরকমে সেই দুষিতা কামার্তা রমণী আমাকে স্মরণ করুক। হে দেবগণ! তোমরা সেই কামকে আমার নিকট হতে দূর করো। ২৷

যে রকমে সেই রমণী আমাকে স্মরণ করে, সেই রকমে আমি যেন তাকে স্মরণ না করি। হে দেবগণ! এই কামকে আমার নিকট হতে দূর করো ৷ ৩৷৷

 হে মরুতগণ! সেই স্ত্রীকে উন্মত্ত করো; হে অন্তরিক্ষ! সেই স্ত্রীকে উন্মত্ত করে আমার অধীন করো; হে অগ্নি! তুমি তার সকল স্মৃতিকে তিরোহিত করে তাকে উন্মাদ করে দাও। সেই কাম যেন আমার উপর কোন প্রভাব ফেলতে না পারে ॥ ৪ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ভগেন মা সং ইতি তৃচেন শঙ্খপুস্পিকামূলং খাত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র সৌভাগ্যকামস্য বীয়াৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন শঙ্খপুস্পিকাপুং অভিমন্ত্র শিরসি বর্ধীয়াৎ। তদ উক্তং সংহিতা বিধৌ। রথজিতাং ইত্যাদি সূক্তেন দুষ্টস্ত্রীবশীকরণকর্মণি মাষান্ অভিমন্ত্র স্ত্রিয়া সঞ্চরণস্থলেষু প্রক্ষিপেৎ।…ইত্যাদি। (৬কা, ১৩অ. ৫-৬সূ)।

টীকা –প্রথমোক্ত সূক্তের তিনটি মন্ত্র সূত্রোক্তপ্রকারে অভিমন্ত্রিত করে শঙ্খপুষ্পিকার মূল খনন পূর্বক সৌভাগ্যকামী ব্যক্তির মস্তকে বন্ধন করণীয়। পরবর্তী সূক্তের চারটি মন্ত্র দুষ্টা স্ত্রীর বশীকরণকর্মে সূক্রোক্তপ্রকারে মাষকলাই অভিমন্ত্রিত করে সেই স্ত্রীর সঞ্চরণস্থলে নিক্ষেপ ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (৬কা, ১৩অ. ৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : স্মরঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : স্মর ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 নি শীর্ষতো নি পত্তত আধ্যো নি তিরামি তে। দেবাঃ প্র হিণুত স্মরমসৌ মামনু শোচতু। ১। অনুমতেইন্বিদং মন্যস্বাকুতে সমিদং নমঃ।। দেবাঃ প্র হিণুত স্মরমসৌ মামনু শোচতু। ২। যদ ধাবসি ত্রিযোজনং পঞ্চযোজনমাশ্বিন। ততত্ত্বং পুনরায়সি পুত্ৰাণাং নো অসঃ পিতা। ৩

বঙ্গানুবাদ –হে জায়া! তোমার মস্তক হতে পদ পর্যন্ত সমগ্র শরীরে স্মরকৃত পীড়া নিক্ষেপ করছি। হে দেবগণ! কামকে আমার নিকট হতে দূর করে এই স্ত্রীর নিকট প্রেরণ করো, যাতে কামপীড়িত হয়ে সে আমাকে স্মরণ পূর্বক শোকে অভিভূত হয়। এই কাম যেন আমাকে প্রভাবিত করতে না পারে। ১।

হে অনুমতি! আমার এই অভিলাষকে তুমি অনুকূলরূপে মান্য করো। হে চ সঙ্কল্পাভিমানিনী দেবতা আকুতি! তুমি আমার এই ক্রিয়মান নমস্কার স্বীকার করো (অর্থাৎ হবিলক্ষণ অন্ন গ্রহণ করো)। হে দেবগণ! কামকে আমার নিকট হতে দূর করে এই স্ত্রীর নিকট প্রেরণ করো, যাতে কামপীড়িত হয়ে সে আমাকে স্মরণপূর্বক শোকে অভিভূত হয়। এই কাম যেন আমাকে প্রভাবিত করতে না পারে। ২।

(বশীকৃতা স্ত্রী প্রার্থনা করছে)–হে পুরুষ! তুমি যোজনত্রয় দূরদেশে কিংবা পঞ্চসংখ্যক যোজন পরিমিত যেখানেই ধাবিত হয়ে গমন করে থাকো, অথবা অশ্বিনদ্বয়ের প্ৰাপণীয় যে অত্যন্ত দূরদেশেই গমন করে থাকো, সেই স্থান হতে পুনরায় প্রত্যাবর্তিত হও। গৃহে বর্তমান আমাদের পুত্রগণের তুমি পালক (বা পিতা) হও। (অর্থাৎ তোমার দেশান্তর গমনের ফলে এতাবন্ত কাল পুত্রগণ পিতৃরহিত ছিল, ইদানীং তোমার আগমনের ফলে তারা পিতৃমন্ত হোক). ৷৷ ৩৷৷

.

অষ্টম সূক্ত : স্মরঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : স্মর ছন্দ : বৃহতী, অনুষ্টুপ]

 যং দেবাঃ স্মরমসিঞ্চন্নস্বন্তঃ শোশুচানং সহাধ্যা। তং তে তপামি বরুণস্য ধর্মণা ॥ ১৷ যং বিশ্বে দেবাঃ স্মরমসিঞ্চন্নস্বন্তঃ শশাশুচানং সহাধ্যা। তং তে তপামি বরুণস্য ধর্মণা ॥ ২. যমিন্দ্রাণী স্মরমসিঞ্চদস্বন্তঃ শশাশুচানং সহাধ্যা। তং তে তপামি বরুণস্য ধর্মণা ॥ ৩॥ যমিন্দ্রাগ্নী স্মরমসিঞ্চতামস্বন্তঃ শশাশুচানং সহাধ্যা। তং তে তপামি বরুণস্য ধর্মণা ॥ ৪৷৷ যং মিত্রাবরুণৌ স্মরমসিঞ্চতামস্বন্তঃ শশাশুচানং সহাধ্যা। তাং তে তপামি বরুণস্য ধর্মণা ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –প্রাণীগণকে কামার্ত করার নিমিত্ত আধি (মানসী পীড়া) নাম্নী আপন ভার্যার নিমিত্ত বিরহাগ্নিতে সন্তপ্তমানগাত্র যে কামকে (স্মরকে) সকল দেবতা আপন শাক্তিতে জলে অভিসিক্ত (বা সিঞ্চিত) করেছেন, হে যোষিৎ! আমি তোমার নিমিত্ত বরুণের ধারণ শক্তির দ্বারা সেই কামকে সন্তাপিত করছি৷ ১৷

বিশ্বদেবগণ অন্তরিক্ষস্থ প্রাণীদের পীড়া প্রদানের নিমিত্ত যে কামদেবকে জলে অভিষিক্ত করেছেন, হে বামা! আমি বরুণের শক্তির দ্বারা সেই কামকে সন্তপ্ত করছি। ২।

ইন্দ্রাণী মানসিক পীড়ায় স্থিত থেকে অন্তরিক্ষস্থ প্রাণীদের পীড়া প্রদানের নিমিত্ত যে কামদেবকে জলে অভিষিক্ত করেছেন, হে ভামিনী! তোমার নিমিত্ত সেই কামকে আমি সন্তপ্ত করছি ৷৷ ৩৷৷

 ইন্দ্র ও অগ্নি অন্তরিক্ষস্থায়ী প্রাণীবর্গকে কামপীড়িত করার নিমিত্ত যে কামদেবকে জলে অভিষিক্ত করেছিলেন, হে রমণী! তোমার নিমিত্ত আমি সেই কামকে সন্তপ্ত করে দিচ্ছি ৷৷ ৪৷৷

 মিত্র ও বরুণ অন্তরিক্ষে অবস্থিত প্রাণীবর্গকে কামপীড়িত করার নিমিত্ত যে কামদেবকে জলে অভিষিক্ত করেছিলেন, হে কামিনী! আমি তোমার নিমিত্ত সেই কামকে সন্তপ্ত করে দিচ্ছি ॥ ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— নিশীৰ্ষতে নি পত্তত ইতি সূক্তস্য পূর্বতৃচেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ৷৷ (৬কা, ১৩অ. ৭-৮সূ)।

টীকা –উপযুক্ত সপ্তম ও অষ্টম সূক্তের মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী ষষ্ট সূক্তে উক্ত হয়েছে। (৬কা, ১৩অ, ৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : মেখলাবন্ধনম

 [ঋষি : অগস্ত্য দেবতা : মেখলা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, জগতী]

য ইমাং দেবো মেখলামাববন্ধ যঃ সংননাহ য উ নো যোজ। যস্য দেবস্য প্রশিষা চরামঃ স পারাঁমচ্ছা স উ নো বি মুঞ্চাৎ ॥ ১। আহুতাস্যভিহুত ঋষীণামস্যায়ুধ। পূর্বা ব্রতস্য প্রশ্নতী বীরপ্পী ভব মেখলে ॥ ২॥ মৃত্যোরহং ব্রহ্মচারী যদস্মি নির্যাচন ভূতাৎ পুরুষং যমায়। তমহং ব্ৰহ্মণা তপসা শ্রমেণানয়ৈনং মেখলয়া সিনামি ৷ ৩৷৷ শ্রদ্ধায়া দুহিতা তপসোহধি জাতা স্বস ঋষীণাং ভূতকৃতাং বভূব। সা নো মেখলে মতিমা ধেহি মেধামথো। নো ধেহি তপ ইন্দ্রিয়ং চ ॥ ৪ ৷ যাং ত্বা পূর্বে ভূতকৃত ঋষয়ঃ পরিবেধিরে। সা ত্বং পরি পজস্ব মাং দীর্ঘায়ুত্বায় মেখলে ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ — হে আপন শত্রুদের প্রতি হিংসার নিমিত্ত দেবতাগণ এই মেখলাকে স্থাপিত (বা বন্ধন) করেছিলেন এবং যে দেবতা অপরের নিমিত্ত মেখলা স্থাপিত করে থাকেন, তারা অভিচার কর্মে আমাদেরও মেখলার সাথে যুক্ত করছেন। আমরা যে দেবতার প্রশাসনে অবস্থান করছি, তিনি আমাদের ঈঙ্গিত কর্মের পূর্ণতা সম্পাদিত করুন এবং আমাদের শত্রুবর্গকে বিনাশ পূর্বক আমাদের শত্রু-বিহীন করুন ৷ ১।

 হে আহুতির দ্বারা সিদ্ধ মেখলা! তুমি বিশ্বামিত্র প্রমুখ ঋষিবৃন্দের অস্ত্রস্বরূপা। তুমি শত্রুবৃন্দের হিংসক এবং ক্ষীর ইত্যাদি পান-করন-শালিনী। ২৷

আমি বৈবস্বত মৃত্যুর (অর্থাৎ যমের) কর্মকারী। আমি ব্রহ্মচারী, তপোবিশেষ দীক্ষা ইত্যাদি মৃত্যুর (অর্থাৎ যমের) কর্মকারী। আমি ব্রহ্মচারী, তপোবিশেষ দীক্ষা ইত্যাদি নিয়মের সাথে যুক্ত। আমার দ্বারা কৃত অভিচার কর্মের দ্বারা শত্রু অবশ্যই মরণপ্রাপ্ত হবে। এই নিমিত্ত আমি এই বধযোগ্য শত্রুকে আপন মন্ত্র-সিদ্ধ মেখলার দ্বারা বন্ধন করছি ৷৩৷

আস্তিক্য বুদ্ধির নাম হলো শ্রদ্ধা; সেই শ্রদ্ধার পুত্রী মেখলা ব্রহ্মার তপস্যায় উৎপন্না ও এবং ঋষিগণের ভগিনীস্বরূপা। হে মেখলা! তুমি আমাদের ভবিষ্যতের বিষয় উপলব্ধি করণশালিনী মতি প্রদান করো এবং মাত্র বিষয়কে স্মরণে রক্ষার সমর্থ-বুদ্ধি আমাদের প্রদান করো; তুমি আমাদের আত্মবল প্রদান করো। ৪।

হে মেখলা! ঋষিগণ পূর্বে তোমাকে বন্ধন করেছিলেন। তুমি অভিচার দোষকে পরিহার করো এবং চিরজীবী হওয়ার নিমিত্ত অভিচার দোষকে পরিহার করো এবং চিরজীবী হওয়ার নিমিত্ত আমার সাথে সংযুক্ত হও। ৫৷৷

.

দশম সূক্ত : শত্রুনাশনম্

[ঋষি : শুক্র দেবতা : বজ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ]

অয়ং বজ্ৰস্তপয়তামৃতস্যাবাস্য রাষ্ট্রমপ হন্তু জীবিত। শৃণাতু গ্রীবাঃ প্ৰ শৃণাতৃষ্ণিহা বৃত্রস্যেব শচীপতিঃ ॥১॥ অধরোধর উত্তরেলভ্যা গৃঢ়ঃ পৃথিব্যা মোৎসৃপ। বজ্রেণাবহতঃ শয়াম ॥ ২॥ যো জিনাতি মন্বিচ্ছ যো জিনাতি তমিজ্জহি। জিনতো বজ্র ত্বং সীমন্তমন্বঞ্চমনু পাতয়৷ ৩৷

বঙ্গানুবাদ –এই দণ্ড ইন্দ্রের বর্জ্যের সমান শত্রুগণকে প্রতিহত করুক। এই বজ্রসদৃশ দণ্ড শত্রুর রাজ্যকে বিনষ্ট করুক। ইন্দ্র যেমন বৃত্রের কণ্ঠ (বা গ্রীবা) এবং বাহুর শিরাসমূহ কর্তন করেছিলেন, তেমনই এই দণ্ড শত্রুর শিরাসমূহ কর্তন করে ফেলুক। ১

উচ্চ হতেও উচ্চতর এবং নিম্ন হতেও নিম্নতর স্থানে অবস্থিত শত্ৰু পৃথিবীর উপর পতিত হয়ে পুনরায় যেন উখিত হতে না পারে। ২।

হে বজ্র! তুমি হানিকারক শত্রুগণের অনুসন্ধান করো, তাদের প্রহার করো এবং তাদের সীমান্তের উপর পাতিত করে বিনাশ করে দাও (অথবা তাদের মস্তকের মধ্যস্থানে অর্থাৎ সীমন্তস্থানে আঘাত করে বিচূর্ণ করো) ॥ ৩॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— য ইমাং দেবো মেখলাং ইতি পঞ্চর্চেন অভিচারকর্মণি দীক্ষায় মেখলাং সম্পাত্য অভিমন্যু বীয়াৎ। অত্র আহুতাস্যভিহুত ইত্যনয়া তত্রৈব কর্মণি মেখলায়া গ্রন্থিং আলিম্পে। মৃত্যোরহং ইত্যনয়া বাধকিঃ সমিধঃ আদধ্যাৎ। উপনয়নকর্মণি শ্রদ্ধায়া দুহিতা ইতি দ্বাভ্যাং মেখলাং বধীয়াৎ। সূত্রিতং হি। অয়ং বজ্র ইতি তৃচেন অভিচার কর্মণি দীক্ষায়াং দণ্ডং সম্পত্য অভিমন্ত্র গৃহীয়াৎ। তত্রৈব কর্মনি অনেন তৃচেন অন্নং অভিম কর্তা ভুঞ্জীত ৷ (৬কা, ১৩অ. ৯-১০সূ) ৷৷

টীকা –উপযুক্ত নবম সূক্তের মন্ত্রগুলি অভিচার কর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে মেখলা বন্ধনে বিনিযুক্ত হয়। যেমন, দ্বিতীয় মন্ত্রে মেখলার গ্রন্থিবন্ধন, তৃতীয় মন্ত্রে সমিধাদান, চতুর্থ ও পঞ্চম মন্ত্রে উপনয়ন কর্মে মেখলা বন্ধন ইত্যাদির বিনিয়োগ হয়ে থাকে। দশম সূক্তটি অভিচার কর্মে সূত্রানুসারে দীক্ষাক্ষেত্রে দণ্ড সম্পাতনে বিনিযুক্ত হয়। (৬কা, ১৩অ. ৯-১০সূ)। 

.

একাদশ সূক্ত : বলপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : শুক্র দেবতা : বজ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ]

যদামি বলং কুর্ব ইথং বজ্রমা দদে। স্কন্ধানমুষ্য শায়ন বৃত্রস্যেব শচীপতিঃ ॥১॥ যৎ পিৰামি সং পিবামি সমুদ্র ইৰ সম্পিবঃ। প্রাণানমুষ্য সম্পায় সং পিবামো অমুং বয়ম্ ॥ ২॥ যদ গিরামি সং গিরামি সমুদ্র ইৰ সংগিরঃ। প্রাণানমুষ্য সঙ্গীর্য সং গিরামো অমুং বয়ম্ ॥

বঙ্গানুবাদ –শচীপতি ইন্দ্র যে রকমে বৃত্রাসুরের স্কন্ধ ছেদন করে পৃথক্ করেন, তেমনই আমি শত্রুর (নামোল্লেখ কর্তব্য) স্কন্ধ ছেদনের নিমিত্ত ভোজনের দ্বারা বল ও বলের দ্বারা অস্ত্র ধারণ করছি ॥১॥

আমি যে জল পান করছি, তাতে শত্রুকে গ্রহণ করে তার রস পান করছি। নদীমুখ। হতে সমুদ্র কর্তৃক সকল জলের আত্মসাৎকরণের ন্যায় আমিও এই শত্রুর প্রাণাপান, ব্যান, চক্ষু ইত্যাদির রসকে পান পূর্বক অন্তে সেই শত্রুকেই পান করে ফেলবো৷ ২৷

আমি যা গলাধঃকরণ করছি, তার দ্বারা শত্রুকে (তার মাংস ইত্যাদি সহ) গলাধঃকরণ করে ফেলছি। নদীমুখ হতে সমুদ্র কর্তৃক সকল জলের আত্মসাৎ করণের ন্যায় আমিও এই শত্রুর প্রাণাপান, ব্যান, চক্ষু ইত্যাদি রূপ রস গলাধঃকৃত পূর্বক শেষে শত্রুকেই গ্রাস করে ফেলবো॥ ৩॥ :

.

দ্বাদশ সূক্ত : কেশদৃংহণম

 [ঋষি : বীতহব্য (কেশবর্ধনকাম) দেবতা : নিতত্নী বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী]

দেবী দেব্যামধি জাতা পৃথিব্যামস্যোষধে। তাং ত্বা নিতত্নি কেশেভ্যো দৃংহণায় খনামসি ॥১॥ দৃংহ প্রত্না জনয়াজাতা জাতানু বর্ষীয়সস্কৃধি ॥ ২॥ যস্তে কেশোহবপদ্যতে সমূলে যশ্চ বৃশ্চতে। ইদং কং বিশ্বভেষজ্যাভিষিঞ্চামি বীরুধা ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে কাঁচমাচী প্রভৃতি ঔষধি! দ্যোতমানা হয়ে তুমি পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়েছ। ন্যপ্ৰসরণশীলা (অর্থাৎ নিম্নদিকে বা বক্রাকারে বিস্তৃতা) ঔষধি। আমরা তোমাকে আমাদের কেশকে দৃঢ় করণের নিমিত্ত খনন করে সংগ্রহ করছি। ১।

হে ঔষধি! তুমি কেশকে দৃঢ় করো;, যেখানে কেশ উৎপন্ন হয়নি সেখানে কেশোম করো। হে কেশ-বৃদ্ধিকামী পুরুষ! আমি তোমার পতিত অথবা মূলের সাথে উৎপাটিত হয়ে যাওয়া কেশসমূহের রোগকে দূরীকরণশালিনী ঔষধির দ্বারা সিঞ্চন করছি। (অস্মাদ ঔষধ প্রযোগাদ মন্ত্রসামর্থ্যাচ্চ সর্বং কেশাশ্রিতরোগজাতং নিবর্তত ইত্যর্থঃ–এই ঔষধ প্রয়োগে ও মন্ত্ৰসামথ্যে সকল কেশাশ্রিত রোগ নিবৃত্ত হবে–এটাই অর্থ)। ২-৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যৎ অশ্নামি যৎ গিরামি ইত্যাভ্যাং অভিচারকর্মণি অনুং অভিমন্ত্র ভুঞ্জীত।…যৎ পিবামি ইত্যনয়া উদকং অভিমন্যু পিবেৎ।…দেবী দেব্যাং যাং জমদগ্নিঃ (১৩শ সূক্ত) ইতি তৃচাভ্যাং কেশবৃদ্ধিকরণকামঃ কাঁচমাচীফলং জীবন্তীফলং ভৃঙ্গরাজং বা সম্পত্য অভিমন্যু বীয়াৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি কাঁচমাচীভৃঙ্গরাজ সহিতোদকং আভ্যা তৃচাভ্যাং অভিমন্ত্র উষঃকালে অবসিঞ্চেৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ১৩অ. ১১-১২)।

টীকা –উপযুক্ত একাদশ সূক্তের প্রথম ও তৃতীয় মন্ত্র দুটি অভিচারকর্মে সূত্রানুসারে অন্ন অভিমন্ত্রিত করে ভোজনে বিনিয়োগ করণীয়; দ্বিতীয় মন্ত্রটি ঐভাবে জল অভিমন্ত্রিত করে পান করায় বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। দ্বাদশ সূক্তটি (এবং পরবর্তী ১৩শ সূক্তটি) কেশবৃদ্ধিকামী ব্যক্তির পক্ষে সূত্রোক্তপ্রকারে কাঁচমাচী ফল (কুঁচ?), জীবন্তী ফল বা ভৃঙ্গরাজ অভিমন্ত্রিত করে মস্তকে বন্ধন এবং উষাকালে ঐগুলির সাথে জল অভিমন্ত্রিত করে কেশে সিঞ্চন করায় বিনিযুক্ত হয় ॥ (৬কা, ১৩অ. ১১-১২)।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত : কেশবর্ধনম

[ঋষি : বীতহব্য (কেশবর্ধনকাম) দেবতা : নিতত্নী বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

যাং জমদগ্নিরখনদ দুহিত্রে কেশবর্ধনীম। তাং বীতহ্য আভরদসিতস্য গৃহেভ্যঃ ॥১॥ অভীশুনা মেয়া আসন্ ব্যামেনানুমেয়াঃ। কেশা নডা ইব বর্ধন্তাং শীষ্ণস্তে অসিতাঃ পরি ॥ ২॥ দৃংহ মূলমিগ্রং যচ্ছ বি মধ্যং যাময়ৌষধে। কেশা ন ই বর্ধতাং শীষ্ণস্তে অসিতাঃ পরি ॥ ৩ ৷৷

বঙ্গানুবাদ—মহর্ষি জমদগ্নি (অর্থাৎ যাঁর গৃহে সদা প্রজ্বলিত অগ্নি বর্তমান) তার আপন পুত্রীর কেশ-বৃদ্ধির নিমিত্ত যে ঔষধি খনন করেছিলেন, তা কৃষ্ণকেশ (অসিত) ঋষির গৃহের নিকট হতে বীতহব্য নামক ঋষি প্রাপ্ত হয়েছিলেন৷ ১৷

হে কেশবর্ধনাভিলাষি! প্রথমে তোমার কেশ অঙ্গুলির দ্বারা পরিমাপ করা যাচ্ছিল, পুনরায় (বা তার পরে) হস্তের দ্বারা মাপযোগ্য হয়েছে। তোমার মস্তকস্থ কেশরাসি নল-খাগড়া নাকম তৃণের মতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক ॥ ২॥

হে ঔষধি! কেশসমূহের মূল হতেই দৃঢ় করো এব অগ্রভাগকে অধিক বর্ধিত করে দাও, মধ্যভাগকেও যথাযথভাবে প্রবৃদ্ধ করো। যেমন নদীর তীরে উৎপন্ন হয়ে নল-খাগড়াগুলি বৃত্ত ক্রমশঃ বৃদ্ধিলাভ করে, তেমনই তোমার মস্তকস্থ কেশরাশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক ॥ ৩

.

চতুর্দশ সূক্ত : ক্লীবত্বম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]

ত্বং বীরুধাং শ্রেষ্ঠতমাভিতাস্যোষধে। ইমং মে অদ্য পুরুষং ক্লীবমোপশিনং কৃধি ॥ ১৷ ক্লীবং কৃথধ্যাপশিনমথথা কুরীরিণং কৃধি। অথাস্যেন্দ্রো গ্রাবভ্যামুভে ভিনত্বাণ্ডেী ॥ ২॥ ক্লীব ক্লীবং ত্বকরং বস্ত্রে বখ্রিং স্বাকরমরসারসং ত্বাকর কুরীরমস্য শীর্ষণি কুম্বৎ চাধিনিদাসি ॥ ৩॥ যে তে নাড্যৌ দেবকৃতে যয়োস্তিষ্ঠতি বৃষ্ণ্যম। তে তে ভিনদ্মি শম্যয়ামুয্যা অধি মুষ্কয়োঃ ॥ ৪৷৷ যথা নডং কশিপুনে স্ত্রিয়ো ভিন্দন্ত্যশনা। এবা ভিনদ্মি তে শেপোহমুষ্যা অধি মুষ্কয়োঃ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –হে লতাসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠা ঔষধি! তুমি অমিতবীর্য। তুমি আমার এই বৈরী পুরুষকে নিবীর্য করে দাও ॥১॥

 হে ঔষধি! তুমি আমাদের শত্রুকে পুরুষত্বহীন (অর্থাৎ নপুংসক) করে দাও এবং তাকে স্ত্রীত্ব প্রদান করে দীর্ঘকেশ-সম্পন্ন করো; তারপর ঐ পুরুষের প্রজননাত্মক দুটি অণ্ডকোষকেই ইন্দ্রদেব বজ্রের দ্বারা চূর্ণ করে দিন ২

হে শত্রু! আমি তোমাকে এই (আভিচারিক) কর্মের দ্বারা পুংস্তুরহিত করে দিয়েছি; তুমি বীর্য-শূন্য হয়ে গিয়েছে। এই নপুংসক শত্রুর মস্তুকে আমরা দীর্ঘ কেশজাল বিস্তৃত করে স্ত্রীগণের আভূষণ কুম্ভ ধারণ করিয়ে দিচ্ছি ৷ ৩৷

বিধাতা-নির্মিত তোমার বীর্য-বাহিকা নাড়ীসমূহের আশ্রয়ভূত অণ্ডকোষের দুটি নাড়ীকে পদদলিত (বা পিষ্ট) করে দিচ্ছি৷৷ ৪।

যেমন তৃণাসন (বা চাটাই) প্রস্তুতের নিমিত্ত স্ত্রীলোকেরা নল-খাগড়াকে প্রস্তরের দ্বারা চূর্ণ করে, তেমনই, হে শত্রু! তোমার অণ্ডকোষের উপরে স্থিত শিশ্নকে (পুংজননেন্দ্রিয়কে) প্রস্তরের আঘাতে চূর্ণ করে তোমাকে সম্পূর্ণ নিবীর্য করে দিচ্ছি। ৫।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যাং জমদগ্নিঃ ইতি তৃচস্য পূর্বতৃচেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ… ত্বং বীরুধাং ইতি পঞ্চর্চেন অভিচারকর্মণি সূত্রোক্তপ্রকারেণ মূত্রপুরীষস্থানং বাধকেন কাষ্ঠেন হন্যাৎ। (৬কা. ১৩অ. ১৩-১৪সূ)৷

টীকা –উপযুক্ত ত্রয়োদশ সূক্তের মন্ত্র তিনটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তে সূত্রসহ উক্ত হয়েছে। চতুর্দশ সূক্তের পাঁচটি মন্ত্র অভিচারকর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ কর্তব্য ॥ (৬কা, ১৩অ. ১৩-১৪সূ)।

.

পঞ্চদশ সূক্ত : সৌভাগ্যবর্ধনম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : জগতী, অনুষ্টুপ]

ন্যস্তিকা রুবোহিথ সুভগন্ধরণী মম। শতং তব প্রতানায়স্ত্রিংশন্নিতানাঃ। তয়া সহস্ৰপর্ণা হৃদয়ং শোষয়ামি তে ॥১॥.. শুষ্যতু ময়ি তে হৃদয়মথো শুষ্যত্বাস্য। অথো নি শুষ্য মাং কামেনাথো শুষ্কাস্যা চর ॥ ২॥ সংবননী সমুস্পলা ব কল্যাণি সং নুদ। অমূং চ মাং চ সং নুদ সমানং হৃদয়ং কৃধি ॥ ৩৷৷– যথোদকমপপুষোহপশুষ্যত্যাস্যম্। এবা নি শুষ্য মাং কামেনাথো শুষ্কাস্যা চর। ৪। যথা নকুলো বিচ্ছিদ্য সন্দধাত্যাহিং পুনঃ। এবা কামস্য বিচ্ছিন্নং ধেহি বীর্যাবতি ॥ ৫৷

বঙ্গানুবাদ –হে সহস্ৰপর্ণী শঙ্খপুস্পিকা! তুমি আমার দুর্ভাগ্যের লক্ষণসমূহ দূরীভূত করে উদিত (বা উৎপন্ন) হয়েছে। তুমি আমাকে সৌভাগ্য যুক্ত-করণশালিনী। তুমি শত শত শাখাশালিনী। তুমি ত্রয়স্ত্রিংশৎ (তেত্রিশ)-সংখ্যক দেবতার উপকারের নিমিত্ত সেই সংখ্যক (অর্থাৎ তেত্রিশটি) প্রবোহ (অর্থাৎ মূল) নিম্নদিকে বিস্তৃত করে দিয়েছে। ১৷

হে কামিনী! সহস্র পত্রের দ্বারা যুক্ত সেই সহস্ৰপর্ণীর সাথে আমি তোমার হৃদয়কে সন্তপ্ত করে দিচ্ছি। আমাকে কামের দ্বারা শুষ্ক করে তুমি শুষ্ক মুখশালিনী হয়ে চলো॥ ২॥

হে ঔষধি! তুমি পীতবর্ণশালিনী এবং সৌভাগ্য প্রদানশালিনী। তুমি বশীকরণভূতা ও সম্যক্ উপ্তফলা (ফলপ্রদায়িনী) হয়ে সেই রমণীকে আমার অভিমুখে প্রেরিত করো এবং আমাদের হৃদয়কে অভিন্ন করে দাও ॥ ৩॥

 পিপাসার্ত মনুষ্যের মুখ যেমন শুষ্ক হয়ে যায়, তেমনই কামের প্রভাবে আমার বিরহাগ্নিতে তোমার হৃদয় শুষ্ক (বা দগ্ধ) হতে থাকুক। ৪

যে রকমে নকুল সর্পকে ছিন্ন করে পুনরায় যুক্ত করে দেয়, সেই রকমে, হে শক্তিশালিনী ঔষধি! তুমি বিযুক্ত স্ত্রী-পুরুষগণের মধ্যে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করে দাও (অর্থাৎ স্ত্রীর পরাজুখত্বের দ্বারা বা কামকৃত বিকারের দ্বারা বিচ্ছিন্ন আমাকে পুনরায় তার সাথে সংযুক্ত করে দাও)। ৫৷৷

.

ষোড় সূক্ত : সুমঙ্গলৌ দন্তৌ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি দন্তা ছন্দ : বৃহতী, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি]

যৌ ব্যাঘ্ৰাববরূঢ়ো জিম্বসতঃ পিতরং মাতরং চ। তৌ দন্তৌ ব্ৰহ্মাণম্পতে শিবৌ কৃণু জাতবেদঃ ॥১॥ ব্রীহিমত্তং যবমত্তমখো মাষমথো তিল। এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নধেয়ায় দন্তৌ। মা হিংসিষ্টং পিতরং মাতরং চ ॥ ২॥ উপহুতৌ সযুজো স্যোনৌ দন্তৌ সূমঙ্গলৌ। অন্যত্র বাং ঘোরং তন্বঃ পরৈতু দন্তেী মা হিংসিষ্টং পিতরং মাতরং চ ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –উপরের পংক্তিতে নিম্নভিমুখী প্রথম উৎপন্ন হওনশীল দন্ত দ্বয় ব্যাঘ্রের সমান হিংসক হয়ে মাতা-পিতাকে ভক্ষণকারী হয় (বা বিনাশনে ইচ্ছা করে)। হে ব্ৰহ্মণস্পতি (মন্ত্ৰাধিপতি)! হে জাতবেদা অগ্নি! তুমি সেই দন্তদ্বয়কে অহিংসক করো, (অর্থাৎ ঐগুলি যেন সন্তানের জনক-জননীর পক্ষে হানিকারক না হয়)। ১।

 হে উপর-পংক্তির প্রথমোৎপন্ন দন্তদ্বয়। তোমরা ধান্য, যব, কলাই ও তিল ভক্ষণ করো। তোমাদের তৃপ্তির নিমিত্ত রমণীয় ফলরূপ ব্রীহি, যব ইত্যাদির ভাগ প্রস্তুত আছে, তোমরা এতে তৃপ্ত হও এবং এই বালকের মাতা-পিতাকে বিনাশ করো না ৷ ২৷

এই দন্তদ্বয় মিত্ররূপ এবং সুখপ্রদ হোক। হে দন্তদ্বয়! এই বালকের শরীর হতে মাতা-পিতার নাশকারী ঘোর (ক্র) কর্মের সম্ভাবনা অন্যত্র দূর হয়ে যাক। তোমাদের দ্বারা এর মাতা-পিতার যেন হানি না ঘটে ৷ ৩৷৷

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ন্যস্তিকা ইতি সুক্তেন পঞ্চর্চেন স্ত্রীবশীকরণকর্মণি ভগেন মা সং (৬।১২৯) ইত্যত্ৰোক্তানি কর্মণি কুর্যাৎ। সূত্রং তু তত্রৈব উদাহৃতং।যৌ ব্যাঘ্ৰেী ইতি তৃচেন কুমারস্য কুমাৰ্যা বা প্রথমং উপরিতনদন্তজনননিমিত্তদোষপরিহারার্থং ব্রীহিযবতিলানাং অন্যতমং জুহুয়াৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি ব্রিীহিমবমাষতিলা একীকৃত্য অনেনাভিম উপজাতদন্তাভ্যাং দর্শয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন স্থালীপাকং সম্পত্য অভিমন্ত্র উক্তং শিশুং আশয়েৎ। সূত্রিতং হি।…..ইত্যাদি। (৬কা, ১৩অ. ১৫-১৬)।

 টীকা— উপযুক্ত পঞ্চদশ সূক্তের মন্ত্র-পঞ্চক স্ত্রীবশীকরণ কর্মে এই কাণ্ডের এই অনুবাকের পঞ্চম সূক্তের (মূল সূক্ত ১২৯) উদাহৃত সূত্রানুসারে বিনিয়োগ কর্তব্য। ষোড়শ সূক্তের মন্ত্র তিনটি সন্তানের প্রথম দন্তোগম জনিত মাতা-পিতার পক্ষে হানিকর সম্ভাবনা স্থালনের নিমিত্ত প্রযুক্ত হয়। যথা–পুত্র-সন্তান বা কন্যা-সন্তানের প্রথম উপরের পাটিতে দন্ত উৎপন্ন হওয়ার দোষ পরিহারের নিমিত্ত ব্রীহি, যব বা তিলের যে কোনওটির দ্বারা হোম কর্তব্য, ইত্যাদি সবই সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ কর্তব্য ॥ (৬কা, ১৩অ. ১৫-১৬)।

.

সপ্তদশ সূক্ত : গোকর্ণয়োর্লক্ষ্যকরণম

[ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : অশ্বিনদ্বয় ছন্দ : অনুষ্টুপ]

বায়ুরেনাঃ সমাকরৎ ত্বষ্টা পোয় প্রিয়তা। ইন্দ্র আভ্যো অধি ব্ৰবদ রুদ্ৰো ভুমে চিকিৎসতু। ১। লোহিতেন স্বধিতিনা মিথুনং কর্ণয়োঃ কৃধি। অকর্তামশ্বিনা লক্ষ্ম তদস্তু প্রজয়া বহু। ২। যথাক্রুদেবাসুরা যথা মনুষ্যা উত। এবা সহস্রপোষায় কৃণুতং লক্ষ্মাশ্বিনা ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— বায়ুদেবতা আমাদের এই গো-সমূহকে দলবদ্ধতা প্রাপ্ত করান; ত্বষ্টাদেব পোষণের নিমিত্ত এই গো-সমূহকে ধারণ করুন। ইন্দ্রদেব এদের প্রতি স্নেহযুক্ত বচন প্রয়োগ করুন; পশুপীড়ক রুদ্রদেব এদের বৃদ্ধির নিমিত্ত চিকিৎসার দ্বারা রোগ (বা দোষ) হতে মুক্ত করুন। ১।

হে গোপালকবৃন্দ! লোহিত বর্ণের তাষের স্বধিতির (অর্থাৎ সূক্ষ্মাগ্রভাগ অস্ত্রের) দ্বারা গো-বৎসের কর্ণে স্ত্রী বা পুংসাত্মক (বকনা বা এঁড়ে) চিহ্ন সূচিত করো। অশ্বিনীকুমারদ্বয়ও তেমনই চিহ্ন দ্যোতিত করুন এবং সেই চিহ্ন পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সন্তানের সাথে সমৃদ্ধি প্রাপ্তি-করণশালী হোক৷ ২৷

দেব ও দানবগণ পশুগণের লক্ষণানুযায়ী তাদের কর্ণে স্বধিতির দ্বারা যে চিহ্ন দ্যোতিত করেছিল, এবং মনুষ্যগণও যা করেছিল, সেই রকম, হে অশ্বিনীকুমারদ্বয়! অসংখ্য গাভীকে, পুষ্টির নিমিত্ত চিহ্নিত করো। ৩

.

অষ্টাদশ সূক্ত : অন্নসমৃদ্ধি:

[ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : বায়ু ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 উচ্ছয়স্ব বহুৰ্ভব স্বেন মহসা যব। মৃণীহি বিশ্বা পাত্রাণি মা ত্বা দিব্যাশনিধীৎ॥১॥ আশৃন্বন্তং যবং দেবং যত্র ত্বচ্ছাবদামসি। তদুস্থুয়স্ব দ্যৌরিব সমুদ্র ইবৈধ্যক্ষিতঃ ॥ ২॥ অক্ষিতাস্ত উপসদোহক্ষিতাঃ সন্তু রাশয়ঃ। পৃণন্তো অক্ষিতাঃ সত্তারঃ সক্ষিতাঃ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— হে যব! তুমি উৎপন্ন হয়ে উন্নত হয়ে থাকো। তুমি অনেক রকমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পাত্ৰসমূহকে পূর্ণ করে থাকো। আকাশের উপলাত্মক বজ্ৰ তোমাকে যেন বিনষ্ট করে ৷৷ ১।

 আমাদের বচন শ্রবণ করে যব-রপে বর্তমান হে দেব! তুমি অন্তরিক্ষে যেমন বৃদ্ধিলাভ করছে, তেমনই এই ভূমিতে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, যেমন সমুদ্র কখনও না-ক্ষীণপ্রাপ্তিশালীরূপে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, (অর্থাৎ সমুদ্রের ন্যায় ক্ষয়রহিতরূপে বৃদ্ধি লাভ করো)। ২।

 হে যব! তোমার সমীপে গমনকারী, কার্য-করণশালী ব্যক্তি অক্ষয় সৌভাগ্য লাভ করুক। ধান্যের স্থূপ অক্ষয় হোক। তোমাকে ঘরে আনয়নকারী (বা সংগ্রহকারী) এবং উপভোগ-করণশালী মনুষ্যও ক্ষয়-রহিত হোক৷ ৩৷৷.

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বায়ুরেনাঃ ইতি তৃচেন পুষ্ট্যর্থচিত্রাকর্মণি বৃক্ষশাখাদিসম্ভারা সম্পাতয়েৎ। তত্রৈব বায়ুরেনাঃ ইতি ঋচা প্রভাতে উদকধারোপেতয়া শাখয়া গাং পরিক্রামেৎ। তত্রৈব কর্মণি লোহিতেন স্বধিতিনা ইতি মন্ত্রেন সূত্ৰোক্তরীত্যা বৎসকর্ণং ছিন্দাৎ। তত্রৈব কর্মণি যথা চঃ ইতি ঋচা কর্ণলোহিতং দধিমধুঘৃতোদক-মিশ্রিতং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র বৎসং প্রাশয়েৎ।…উদ্ভুয়স্ব ইতি তৃচে পুষ্ট্যর্থবীজবপনকর্মণি ব্রীহ্যাদিবীজং আজমিশ্রং কৃত্বা অভিমন্ত্র প্রত্যুচং তিম্ৰোমুষ্ঠীলাঙ্গলপদ্ধতৌ নিধায় পাংসুভিরাচ্ছাদয়েৎ। তৎ উক্তং কৌশিকেন।….ইত্যাদি। (৬কা, ১৩অ. ১৭-১৮সূ)।

টীকা –উপযুক্ত সপ্তদশ সূক্তের মন্ত্রগুলি পুষ্টিকর্মে বৃক্ষশাখা ইত্যাদি সম্ভারে সম্পাতিত করণীয়। প্রথম মন্ত্রটির দ্বারা প্রভাতকালে জলের ধারার সাথে শাখার দ্বারা গাভীগুলিকে পরিক্রমা করণীয়। এছাড়া দ্বিতীয় মন্ত্রটির দ্বারা সূত্রোক্তরীতিতে বৎস-কৰ্ণ বিদ্ধকরণ, তৃতীয় মন্ত্রটির দ্বারা দধি-মধু-ঘৃত-জল মিশ্রিত করে বৎসকে খাওয়ানো ইত্যাদিতে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। অষ্টাদশ সূক্তটি পুষ্টির নিমিত্ত বীজবপন কর্মে ব্রীহি ইত্যাদির বীজ ঘৃতে মিশ্রিত করে অভিমন্ত্রণ ইত্যাদিতে বিনিযুক্ত হয়। (৬কা, ১৩অ. ১৭-১৮সূ)।

ইতি ষষ্ঠং কাণ্ডং সমাপ্ত

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *