1 of 3

০৬।০২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : পুংসবনম্
[ঋষি : প্রজাপতি। দেবতা : রেতঃ, মন্ত্রোক্ত দেবতাগণ। ছন্দ : অনুষ্টুপ]

শমীমশ্বস্থ আরুঢ়স্তত্র পুসুবনং কৃতম। তদ বৈ পুত্রস্য বেদনং তৎ স্ত্রী ভরামসি ॥১॥ পুংসি বৈ রেতো ভবতি তৎ স্ত্রিয়ামনু যিচ্যতে। তদ বৈ পুত্রস্য বেদনং তৎ প্রজাপতিরব্রবীৎ॥২॥ প্রজাপতিরনুমতিঃ সিনীবাল্যচীরুপ। স্ত্রৈমূয়মন্যত্র দধৎ পুমাংসমু দধদিহ ॥৩॥

 বঙ্গানুবাদ –অগ্নিরূপ পুত্র উৎপাদনের নিমিত্ত স্ত্রীরূপিণী শমীবৃক্ষের উপরে পুরুষরূপী অশ্বত্থা বৃক্ষ আরোহণ করেছে। (ঈদৃশাৎ অশ্বত্থাৎ অগ্নিমন্থনার্থং অরণ্যোরাহরণং–অর্থাৎ এইরকমে অশ্বত্থা হতে অগ্নিমন্থনার্থে অরণিদ্বয় আহরণ করা হয়)। আমরা পুত্রোৎপত্তির নিমিত্ত কর্ম স্ত্রীগণের মধ্যে সম্পাদিত করছি। অশ্বথের যে কর্মের দ্বারা পুত্রপ্রাপ্তি হয়ে থাকে, সেই পুংসবন কর্ম পুত্রকে অবশ্যই প্রাপ্ত করিয়ে থাকে ॥ ১।

 পুরুষের বীজভূত বীর্য গর্ভাশয়ের মধ্যে সিঞ্চিত হয়ে যায়,তাতেই পুত্রপ্রাপ্তি ঘটে থাকে। এই পুত্র-জননের উপায় প্রজাপতি ব্রহ্মা আমাদের বলেছেন ॥ ২॥

অমাদেবতা সিনীবালী, পৌর্ণমাসীর দেবতা অনুমতি ও সম্বৎসরাত্মকা দেব প্রজাপতি গর্ভাশয় স্থিত বীজকে অতিরিক্ত স্থানে স্থাপিত করে সন্তানের হস্ত-পদ ইত্যাদি অঙ্গসমূহকে নির্মাণ করেছেন। ৩।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : সর্পবিষনিবারণম

 [ঋষি : গরুত্মান দেবতা : তক্ষক (বিষনিবারণ) ছন্দ : অনুষ্টুপ]

পরি দ্যামিব সূর্যোহহীনাং জনিমাগম। রাত্রী জগদিন্যদ্ধংসাৎ তেনা তে বারয়ে বিষম্ ॥১॥ যদ ব্ৰহ্মভিষদৃষিভিদ দেবৈবিদিতং পুরা। যদ ভুতং ভব্যমাসম্বৎ তেনা তে বারয়ে বিষম্ ॥২॥ মধ্বা পৃঞ্চে নদঃ পর্বর্তা গিরয়ো মধু। মধু পরুষ্ণী শীপালা শমামে অস্তু শং হৃদে ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –অন্তরিক্ষে সূর্যের ব্যাপ্ত হওয়ার ন্যায়, রাত্রির সংসারকে অন্ধকারে আবৃত করার ন্যায়, সর্পদলের সকল জন্মকে আমি জ্ঞাত হয়ে গিয়েছি। যে বিষ বিষগ্রস্তের সমগ্র শরীরে ব্যাপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তাকে আমি এই ঔষধির দ্বারা বিনষ্ট করে দিচ্ছি। ১৷৷

(হে বিষগ্রস্ত জন!) যে ঔষধিকে ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ জ্ঞাত আছেন, যা অগস্ত্য-বশিষ্ঠ প্রমুখ ঋষিগণও জেনেছেন, এবং যা মন্ত্র ও ব্রাহ্মণদের দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে থাকে, সেই ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কালের ঔষধির দ্বারা আমি তোমার দেহগত বিষকে নষ্ট করে দিচ্ছি। ২৷

গঙ্গা ইত্যাদি নদী সমুদায়, বৃহৎ-ক্ষুদ্র পর্বত সমূহ, পরুষ্ণী নাম্নী নদী তোমার শরীরে মধু সিঞ্চিত করুক। বিষ-হরণকারী অমৃতরূপ মধুকে আমি তোমার সম্পূর্ণ দেহের উপর লেপন করে দিচ্ছি। এই বিষ-নাশক মধু তোমার মুখ ও হৃদয়ের পক্ষে সুখ-করণশালী হোক৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …তত্র আদ্যেন তৃচেন পুংসবণকর্মণি শমীগর্ভাশ্বত্থাগ্নিং মধুমন্থে প্রক্ষিপ্য অভিমন্ত্র স্ত্রিয়ং পায়য়েৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি তথাৰিধমেবাগ্নিং কৃষ্ণোর্ণয়া বেষ্টয়িত্ব অনেন তৃচেন সম্পাত্য অভিমন্যু স্ত্রিয়া বধীয়াৎ।…পরি দ্যামিব ইতি তৃচেন সর্পবিষভৈষজ্য-কর্মণি মধুক্রীড়ং অভিমন্ত্র বিষাবৃতং পায়য়েৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মাণ অনেন তৃচেন ব্রাহ্মণো জজ্ঞে (৪৬) ইতি সূক্তোক্ত জপাঁচমনাদীনি কর্মণি কুর্যাৎ..ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ২অ. ১-২সূ)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তের দ্বারা পুংসবন কর্মে শমীগর্ভস্থিত অশ্বত্থাগ্নি মধুমন্থে প্রক্ষিপ্ত করে অভিমন্ত্রিত পূর্বক স্ত্রীকে পান করানো কর্তব্য। তথা এই কর্মে অগ্নিকে কৃষ্ণবর্ণের উর্ণায় বেষ্টন পূর্বক এই সূক্তে অভিমন্ত্রিত করে স্ত্রীর অঙ্গে বন্ধন করে দেওয়া উচিত।…দ্বিতীয় সূক্তটির দ্বারা সর্পবিষভৈষজ্য কর্মে মধুক্ৰীড় অভিমন্ত্রিত করে বিষাবৃত জনকে ভোজন করানো কর্তব্য। এই কর্মে চতুর্থ কাণ্ডের দ্বিতীয় অনুবাকের প্রথম সূক্তে উক্তমতে জপ আচমন ইত্যাদি কর্ম করণীয়।..ইত্যাদি। প্রথম সূক্তে অশ্বত্থ বৃক্ষের নামোৎপত্তি সম্পর্কে সায়নাচার্যের উক্তি–স চ অগ্নি অশ্বে ভূত্বা যস্মিন্ বৃক্ষে পুরা সম্বৎসরং অবাৎসীৎ স বৃক্ষঃ অশ্বথঃ।..ইত্যাদি। (৬কা, ২অ. ১-২সু)৷৷

.

তৃতীয় সূক্ত : মৃত্যুজয়ঃ

[ঋষি : অথর্ব স্বস্ত্যয়নকাম দেবতা : মৃত্যু ছন্দ : অনুষ্টুপ]

নমো দেববধেভ্যো নমো রাজবধেভ্যঃ। অথো যে বিশ্যানাং বধান্তেভ্যো মৃত্যো নমোহস্তু তে॥১॥ নমস্তে অধিবাকায় পরাবাকায় তে নমঃ। সুমত্যৈ মৃত্যো তে নমো দুৰ্মত্যৈ ত ইদং নমঃ ॥২॥ নমস্তে যাতুনেভ্যো নমস্তে ভেষজেভ্যঃ। নমস্তে মৃত্যো মূলেভ্যো ব্রাহ্মণেভ্য ইদং নমঃ ॥৩॥

বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের মারক অস্ত্রসমূহকে নমস্কার। হে মৃত্যু! রাজা, বৈশ্য ও দেববর্গের শস্ত্রসমূহ হতে রক্ষা করণের নিমিত্ত তোমাকে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। ১।

হে মৃত্যু! তোমার বচন-বাহী ও অপরকে পরাভবক্ষম বচনশালী দূতসমূহের উদ্দেশে নমস্কার করছি। তোমার কৃপাপূর্ণ মতি (অর্থাৎ অপরের প্রতি অনুগ্রহান্বিত) ও নিগ্রহ-সমম্বিত বুদ্ধির নিমিত্তও নমস্কার। ২।

হে মৃত্যু! রক্ষাকরণশালী ঔষধিসমূহ, পীড়া-প্রদানশালী যাতুনবর্গ এবং তোমার মূল বলভূত পুরুষগণের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। সেই বেদবেত্তা ব্রাহ্মণগণের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি, যাঁরা শাপ প্রদানে এবং কৃপা-করণেও যুগপৎ সমর্থ ॥ ৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : বলাসনাশনম্

 [ঋষি : বভ্রুপিঙ্গল দেবতা : বলাস ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 অস্থিস্রংসং পরুংসমাস্থিতং হৃদয়াময়। বলাসং সর্বং নাশয়াঙ্গেষ্ঠা যশ্চ পর্বসু ॥১॥ নির্বাসং বলাসিনঃ ক্ষিণোমি মুঙ্করং যথা। ছিনত্মস্য বন্ধনং মূলমুর্বার্বা ইব॥ ২॥ নির্বলাসেতঃ প্র পশুংগঃ শিশুকো যথা। অথো ইট ইব হায়নোপ দ্রাহ্যবীরহা ॥৩

বঙ্গানুবাদ— শরীরের সর্বত্র ব্যাপ্ত, অস্থিগুলিকে কম্পিত করণশালী, অঙ্গের সংযোগকারী পর্বগুলিকে শ্লথকারী, বল-ক্ষয়কারক হৃদয়স্থ কাসশ্বসাত্মক যে শ্লেষ্ম ব্যাধি আছে, সেই সবকে মন্ত্রশক্তি নাশ করুক ॥১॥

যেমন সরোবরের মধ্য হতে কমল সমূলে উচ্ছেদ প্রাপ্ত হয়, তেমনই আমি এই রোগীর শ্লেষ্ম সম্বন্ধী রোগকে মূল সহ উৎপাটিত করছি। পরিপক্ক কর্কটী (কাকুড়) ফল যেমন আপনিই বৃন্ত হতে পৃথক্ (চ্যুত) হয়ে যায়, সেই রকমেই অকস্মাৎই আমি এই রোগের বিনাশ করবো। ২।

 যেমন বিগত হয়ে যাওয়া বৎসর আর প্রত্যাবর্তন করে না, তেমনই হে বল-ক্ষয়কারক ব্যাধি! তুমি আমার পুত্র ইত্যাদির বিনষ্টি না করে গমন করো। যেমন দ্রুতগামী মৃগ দূরে ধাবিত হয়ে চলে যায়, তেমনই তুমি এ ব্যাধিগ্রস্তের দেহ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে দূরে পলায়ন করো। ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –নমো দেববধেভ্যঃ ইতি তৃচেন জয়কামঃ স্বসেনাং পরিতঃ প্রতিদিশং উপস্থানং কুর্যাৎ ….তথা বৈশ্যস্য সংগ্রামজয়ার্থং প্রহরণোদ্যতান্ শত্ৰু পশ্যন এনং তৃচং জপেৎ…. অস্থিস্রংসং ইতি তৃচেন শ্লেষ্মভৈষজ্যকর্মণি সম্পাতিতাভিমন্ত্রিতবৃক্ষশকলেন সহ ব্যাধিতং অবসিঞ্চেদ।  মার্জয়েৎ আচাময়েচ্চ।…ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ২অ. ৩-৪সূ)।

টীকা –তৃতীয় সূক্তটির দ্বারা জয়কামী জন আপন সেনার চতুর্দিকে উপস্থান করবেন।..তথা বৈশ্যের সংগ্রাম জয়ার্থে অস্ত্র নিয়ে উদ্যত শত্রুদের দর্শন পূর্বক এই মন্ত্র জপনীয়।…চতুর্থ সূক্তের মন্ত্ৰত্রয় শ্লেষ্মব্যাধির ভৈষজ্য কর্মে সম্পাতিতব্য। এই মন্ত্ৰত্রয়ের দ্বারা অভিমন্ত্রিত বৃক্ষখণ্ডের সাথে ব্যাধিত জনের অঙ্গ সিঞ্চন, মার্জন ও তাকে আচমন করানো কর্তব্য।..ইত্যাদি। (৬কা, ২অ. ৩-৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : শত্রুনিবারণ

[ঋষি : উদ্দালক দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

 উত্তমো অস্যোষধীনাং তব বৃক্ষা উপস্তয়ঃ। উপস্তিরস্তু সোহস্মাকং যো অল্ম অভিদাসতি ॥১॥ সবন্ধুশ্চাসবন্ধুশ্চ যো অল্ম অভিদাসতি। তেষাং সা বৃক্ষাণামিবাহং ভূয়াসমুত্তমঃ ॥২॥ যথা সোম ওষধীনামুত্তমমা হবিষাং কৃতঃ। তলাশা বৃক্ষানামিবাহং ভূয়াসমুত্তমঃ ॥৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে সোমপর্ণোপন্ন পলাশ! তুমি ঔষধিসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। অন্য বৃক্ষ তোমার অনুগত। যে আমাদের ক্ষীণ (বা হিংসা) করতে ইচ্ছা করে, সেই শত্রু (আমাদের প্রতি) তোমার কৃপার ফলে ক্ষীণ হয়ে যাক। ১।

 সগোত্র সম্পন্ন বা অন্য গোত্র সম্পন্ন যে শত্রু আমাদের ক্ষীণ করে দিতে চায়, সেই দুই রকমের শত্রুদের মধ্যেই আমি পলাশের সমান শ্রেষ্ঠ হবো॥ ২॥

যেমন বৃক্ষের মধ্যে পলাশকে উত্তম বলে স্বীকার করা হয়, যেমন অন্য ঔষধি অপেক্ষা সোমকেই পুরোডাশ ইত্যাদিতে প্রযুক্ত করা হয়ে থাকে, তেমনই সগোত্রীয় জনদের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ হবো॥ ৩

.

ষষ্ঠ সূক্ত : অক্ষিরোগভৈষজম

[ঋষি : শৌনক দেবতা : চন্দ্রমা মন্ত্রোক্ত দেবতাগণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী ইত্যাদি]

আবয়ো অনায়ো রসস্ত উগ্র আবয়ো৷ আ তে করম্ভমদ্মসি ॥১॥ বিহহ্মো নাম তে পিতা মদাবতী নাম তে মাতা। স হিন ত্বমসি যমাত্মানমাবয়ঃ ॥২॥ যথা ভূমিমৃর্তমনা মৃতামৃতমনস্তরা। যথোত মষুষো মন এবেৰ্য্যোমৃতং মনঃ ॥৩৷৷ অদো যৎ তে হৃদি শ্রিতং মনস্কং পতয়িষ্ণুকম্। ততস্ত ঈর্ষাং মুঞ্চামি নিরূদ্মাণং দৃতেরিব ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –হে সর্ষপকাণ্ড (সরিষার শাক)! তুমি রোগ-বিনষ্টির নিমিত্ত ভক্ষিত হয়ে থাকো, তোমার তৈল মহান বলশালী। সেই তৈলে সৃষ্ট (ভাজা) তোমার শাক বা করম্ভকে আমরা অভিমন্ত্রিত করে সেবন করে থাকি। ১।

হে সরিষার শাক! তোমার পিতা বিহংল এবং মাতা মদাবতী নামে পরিচিত। তুমি আপন শরীরকে অপরের খাদ্যের নিমিত্ত দান করে দিয়ে থাকো, সেই কারণে শুধুই প্রশস্ত মাতা-পিতার ন্যায় হয়ে থাকো না ॥ ২॥

হে তৌবিলিক নাম্নী পিশাচী! তুমি রোগের নিদানভূত, অতএব আমাদের রোগকে পরাজিত করে নিম্নমুখে প্রেরণ করো। এই ঐলব নামক নেত্র-রোগ দূর হয়ে যাক। ব ও বকর্ণ (বরোগের কারণ) রোগীর নিকট হতে দূরে গমন করুক। হে নিরাল নামক রোগ! তুমিও এই পুরুষের শরীর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে পলায়ন করো ॥ ৩

হে সস্যমঞ্জরী! তোমার নাম অলসালা। প্রথম গ্রহণ-করণের কারণে তুমি পূর্বা। হে শলাঞ্জালা! তুমি শেষে গৃহীত হয়েছে বলে তুমি উত্তরা। হে নীলাগলসলা! ঐ দুইয়ের মধ্যবর্তী কালে গৃহীতা হওয়ার জন্য তুমি তৃতীয়া ॥ ৪

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –উত্তমো অসি ইতি তৃচেন পুষ্টিকামঃ পালাশমনিং বাসিতং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র বধুীয়াৎ…আবয়ো অনাবয়ো ইতি চতুঋচেন অক্ষিরোগ-ভৈষজ্যে সার্ষপতৈলেন সম্পাতিতং সর্ষপকাণ্ডমণিং অভিমন্যু রোগাৰ্তস্য বধীয়াৎ…ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ২অ. ৫-৬)।

টীকা –তিনটি ঋক সমন্বিত উপযুক্ত পঞ্চম সূক্তের দ্বারা পুষ্টিকামী জন পালাশমণি বাসিত পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে ধারণ করবেন। চারিটি মন্ত্র সমন্বিত ষষ্ঠ সূক্তের দ্বারা চক্ষুরোগে সরিষার তৈলের সাথে সম্পাতিত সর্ষপকাণ্ডমণি অভিমন্ত্রিত করে রোগার্তের অঙ্গে বন্ধন করণীয়।..ইত্যাদি। (৬কা, ২অ, ৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : গর্ভদৃংহণম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : গর্ভদৃংহণম, পৃথিবী ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

যথেয়ং পৃথিবী মহী ভূতানাং গর্ভমাদধে। এবা তে খ্রিয়তাং গর্ভো অনু সূতুং সবিতবে ॥১॥ যথেয়ং পৃথিবী মহী দাধারেমা বনস্পতী। এবা তে প্রিয়তাং গর্ভো অনু সূতুং সবিতবে ॥২॥ যথেয়ং পৃথিবী মহী দাধার পর্বর্তা গিরীন্। এবা তে প্রিয়তাং গর্ভো অনু সূতুং সবিতবে ॥৩৷৷ যথেয়ং পৃথিবী মহী দাধার বিষ্ঠিতং জগৎ। এবা তে প্রিয়তাং গর্ভো অনু সূতুং সবিতবে ॥৪॥ ৮

 বঙ্গানুবাদ –হে স্ত্রী! এই মহতী পৃথিবীর দ্বারা প্রাণীবর্গের শরীরকে ধারণ করণের ন্যায় ও তোমার গর্ভও প্রসবের সময় পর্যন্ত (দশমাস কাল) গর্ভাশয়ে স্থিত থাকুক ॥ ১।

হে নারী! এই বিশাল পৃথিবী যে রকমে বনস্পতিরাজিকে ধারণ করে আছে, তেমনই তোমার গভও প্রসবের সময় পর্যন্ত (দশমাস কাল) গর্ভাশয়ে স্থিত থাকুক। ২৷৷

হে স্ত্রী! এই মহতী পৃথিবী যে রকমে পর্বত বা মহাশৈলরাজিকে ধারণ করে আছে, তেমনই তোমার গর্ভও প্রসবের সময় পর্যন্ত (দশমাস কাল) গর্ভাশয়ে স্থিত থাকুক। ৩।

হে স্ত্রী! এই মহতী পৃথিবী যে রকমে সমগ্র চরাচরকে ধারণ করে আছে, তেমনই তোমার গর্ভও প্রসব কাল আসন্ন হওয়ার নিমিত্ত (দশমাস কাল) গর্ভাশয়ে স্থিত হয়ে থাকুক ॥ ৪।

.

অষ্টম সূক্ত : ঈর্ষ্যাবিনাশনম্

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ঈৰ্য্যাবিনাশম ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 ঈর্ষায় ব্রাজিং প্রথমাং প্রথমস্যা উতাপরাম। অগ্নিং হৃদয্যং শোকং তং তে নির্বাপয়ামসি ॥১॥ যথা ভূমিমৃতমনা মৃতমৃতমনস্তরা। যথোত মষুষো মন এবেৰ্ষোমৃতং মনঃ ॥২॥ অদো যৎ তে হৃদি শ্রিতং মনস্কং পতয়িষ্ণুকম। ততস্ত ঈর্ষাং মুঞ্চামি নিরূত্মাণং দৃতেরিব ॥৩৷৷

 বঙ্গানুবাদ –হে ঈর্ষাযুক্ত পুরুষ! এই স্ত্রীকে অপর কেউ যেন না দর্শন করে–তোমার এই ঈষাপূর্ণ গতিকে শান্ত করে আমরা তোমার মধ্যস্থ ক্রোধ ও শোককেও পৃথক করে দিচ্ছি ॥ ১৷৷

দেহ হতে প্রাণ নিষ্ক্রান্ত হলে শব যেমন মৃতমনা হয়না, যেমন সর্বক্লেশসহ্যকারিণী পৃথিবী সর্বদা শান্ত মনঃশালিনী হয়ে থাকে এবং কখনও ঈর্ষা করে না; তেমনই পুরুষের স্ত্রী-বিষয়ক ঈর্ষাযুক্ত মন যেন ঈর্ষাকে প্রাপ্ত না হয়। ২৷৷

হে পুরুষ! আমি তোমার হৃদয়গত স্ত্রী-বিষয়ক ক্রোধাগ্নিকে নিঃশেষে অপসারিত করে দিচ্ছি, যেমন কর্মকার ভস্ত্রিকার (চর্মনির্মিত হাপরের) মুখ দিয়ে তার অন্তঃপূরিত বায়ুকে নিঃসরিত করে দেয়। ৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যথেয়ং পৃথিবী মহী ইতি সূক্তেন গৰ্ভদৃংহনকর্মণি ধনুর্জাং ত্রিরুগ্ৰথ্য স্ক্রিয়ং বর্ধীয়াৎ। তথা অনেন সূক্তেন ক্ষেত্ৰমৃত্তিকাং অভিমন্ত্র প্রতৃচং গার্ভিনীং প্রাশয়েৎ। কৃষ্ণাসিকতা অভিমন্ত্র গার্ভিন্যাঃ শয়নং পরিকিরেদ বা। তথা, জন্মগ্রহণেপি তচ্ছান্ত্যর্থং অনেন সূক্তেন ধনুর্জা-বন্ধনাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ….ঈর্ষায় ব্রাজিং ইতি তৃচেন স্ত্রীবিষয়েষা-নিবৃত্ত্যর্থং ঈৰ্ষোপেতং দৃষ্টা জপেৎ..ইত্যাদি। (৬কা, ২অ. ৭-৮)।

টীকা –উপযুক্ত সপ্তম সূক্তের দ্বারা গর্ভদৃংহন কর্মে গর্ভকে স্থিরভাবে ধারণের উদ্দেশে কৃত ক্রিয়ায়) ধনুকে জ্যার সাথে তিনবার গাঁইট দিয়ে স্ত্রীকে বন্ধন করা কর্তব্য। তথা এই সূক্তের দ্বারা ক্ষেত্ৰমৃত্তিকা অভিমন্ত্রিত করে প্রতিটি ঋকের উচ্চারণ পূর্বক গর্ভিণীকে খাওয়ানো কর্তব্য। তথা পুত্রের জন্মগ্রহণেও তার শান্তির নিমিত্ত এই সূক্তের দ্বারা ধনুজা-বন্ধন ইত্যাদি কর্ম করণীয়।…অষ্টম সূক্তের দ্বারা স্ত্রীবিষয়ক ঈর্ষা নিবৃত্তির জন্য ঐ ইর্ষাযুক্ত পুরুষকে দর্শন করে জপ করণীয়।…ইত্যাদি। (৬কা, ২অ, ৭-৮সূ)।

.

নবম সূক্ত : পাবমানম

[ঋষি : শন্তাতি দেবতা : চন্দ্রমা, দেবজন সমূহ ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী ]

পুনন্তু মা দৈবজনাঃ পুনন্তু মনবো ধিয়া। পুনন্তু বিশ্বা ভূতানি পবমানঃ পুনাতু মা ॥১॥ পবমানঃ পুণাতু মা ক্ৰত্বে দক্ষায় জীবসে। অথথা অরিষ্টতাতয়ে ॥২॥ উভাভ্যাং দেব সবিতঃ পবিত্রেণ সবেন চ। অম্মান পুনীহি চক্ষসে ॥৩॥

বঙ্গানুবাদ –দেবজন আমাকে পবিত্র করুন, মনুষ্যগণ আমাকে কর্ম ও বুদ্ধির দ্বারা পবিত্র করুক। সকল প্রাণী, অন্তরিক্ষে বিচরণশীল পবমান বায়ু এবং দশাপবিত্রে শোধ্যমান (পরিশুদ্ধমান) সোম, এরা সকলে আমাকে পবিত্র করে দিক ॥১॥

শুদ্ধ হওমান (পবমান) সোম কর্মের নিমিত্ত, বল প্রাপ্তির নিমিত্ত এবং অহিংসার নিমিত্ত আমাকে পবিত্র করুন। ২৷৷

 হে সবিতাদেব! তুমি সকলকে প্রেরণাদানকারী। তোমার তেজঃ ও প্রেরণা–এই পবিত্র-করণের সাধন; এর দ্বারা আমাদের ইহলোক ও পরলোকে সুখ প্রাপ্তির নিমিত্ত পবিত্র করো। ৩

.

দশম সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : যক্ষ্মনাশনম্ ছন্দ : জগতী, পংক্তি]

অগ্নেরিবাস্য দহত এতি শুষ্মিণ উতেব মত্তো বিপন্নপায়তি। অন্যমম্মদিচ্ছতু কং চিদব্রতস্তপুর্বধায় নমো অস্তু তক্সনে ॥১॥ নমো রুদ্রায় নমো অস্তু তনে নমো রাজ্ঞে বরুণায় ত্বিষীমতে। নমো দিবে নমঃ পৃথিব্যৈ নম ওষধীভ্যঃ ॥২॥ অয়ং যো অভিশোচয়িষ্ণুবিশ্বা রূপাণি হরিতা কৃগোষি। তস্মৈ তেহরুণার বস্রবে নমঃ কৃণোম বন্যায় তক্সনে ॥৩॥

বঙ্গানুবাদ –দাবাগ্নির ন্যায় সব কিছুকে দহনকারী এই জ্বরের জ্বলন সমগ্র অঙ্গে ব্যাপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই সময় উন্মত্তের মতো প্রলাপ করতে করতে মনুষ্য জ্বরের সাথে সংসার হতে গমন র করে থাকে। এই হেন জ্বর আমার নিকট হতে অপসারিত হয়ে কোন দুরাচারী জনকে প্রাপ্ত হোক। এই নিমিত্ত জ্বরের অভিমানী দেবতার উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। ১।

জ্বরের তাপে ক্রন্দনাতুরকারী রুদ্রদেবতাকে নমস্কার, জ্বরকেও নমস্কার; বরুণ, আকাশ, পৃথিবীকে নমস্কার এবং পৃথিবীর উপর উৎপন্নশীল ঔষধিসমূহেরও উদ্দেশে নমস্কার। (দ্যাবা ও পৃথিবী ভূতজাতের মাতাপিতাস্বরূপ, সেই জন্য তাদের উদ্দেশে নমস্কার; পৃথিবীতে উৎপন্ন ব্রীহি ইত্যাদি ঔষধ সেবনে ও পথ্যক্রমে আরোগ্য উপজাত হওয়ার কারণে সেগুলির উদ্দেশে নমস্কার) ॥ ২॥

সকল অঙ্গে ব্যাপ্ত হয়ে, প্রত্যক্ষ অনুভবের দ্বারা আগমন পূর্বক রক্তকে দূষিত করে হরিদ্রাবর্ণ-দানশালী পিত্ত জ্বরের উদ্দেশে আমি নমস্কার জ্ঞাপন করছি। ৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পুনন্তু মা ইত্যস্য তৃচস্য বৃহগণে পাঠাৎ শান্তুদকাদৌ বিনিয়োগো দ্রষ্টব্যঃ….অগ্নেরিবাস্য দহতঃ ইতি তৃচেন পিত্তজ্বরভৈষজ্যে দাবাগ্নৌ তাম্ৰসুবেণ আজ্যং হুত্বা ব্যাধিতস্য মূর্ধি সম্পাতা আনয়েৎ।..ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ২অ, ৯-১০সূ)। টীকা –নবম সূক্তটির বৃহদগণে পঠিত শান্তু্যদক ইত্যাদি কর্মে বিনিয়োগ দেখা যায়।…দশম সূক্তটির দ্বারা পিত্তজ্বরের ভৈষজ্যে যজ্ঞীয় তাম্রপাত্রে দাবাগ্নির উদ্দেশে আজ্য আহুত করে ব্যাধিত জনের মস্তকে (বা কেশে) সম্পাতিত করণীয়।..ইত্যাদি। (৬কা, ২অ. ৯-১০সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *