৮. সন্ধেতে যে খবরটা পেলাম

৮.

সন্ধেতে যে খবরটা পেলাম, তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না! আঙ্কল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, এবার আর পটকা ফটকা নয়, বম্ব ব্লাস্ট! ভয়ার্ত প্রীতমের করা ফোন থেকে যা বুঝলাম। পুলিশ জায়গাটা কর্ডন করে রেখেছে। ফরেন্সিক এক্সপার্টরা তন্নতন্ন করে চত্বরটা পরীক্ষা করছে। দুটো ডেলিভারি এসেছিল সকালে। সেগুলো ট্র্যাক করা হচ্ছে। বল্লরীকে নিয়ে আন্টি আপাতত কোম্পানির গেস্ট হাউসে।

মৃত্যুর আগে একেনবাবুর চুইংগাম ডিসকভারির কথাও বোধহয় শুনে যাননি। অবশ্য সেটা জিজ্ঞেস করার সময় এখন নয়।

.

ক্যাম্পর ইন্ডাস্ট্রির মালিকের এভাবে খুন হওয়াটা একটা বিগ নিউজ। একেনবাবুও খোঁজখবর করছেন। যেটুকু জানলাম বেশ সোফিস্টিকেটেড প্ল্যাস্টিক বম্ব। যেই বানাক না কেন, বম্ব বানানোর বিজনেসটা জানে, অ্যামেচারের কাজ নয়।

ওডিনও খবরটা শুনেছে। জিজ্ঞেস করল প্রেজেন্টটা মিস্টার সিংকে দিতে পেরেছিলাম কি না। বিড় বিড় করল, ওটা ইতিমধ্যে না দেখে থাকলে তো আর দেখতেও পাবেন না।

“হোয়াট ডিফারেন্স ইট মেকস ওডিন। তোমার আঙ্কল-আন্টি মনে করে পাঠিয়েছেন, সেটাই তো যথেষ্ট!”

মাঝে মাঝে লোকেদের প্রায়োরিটি দেখে বিস্মিত হতে হয়!

আঙ্কলের ফিউনারেলটা হচ্ছে লোয়ার ম্যানহাটানের একটা ফিউনারেল হোমে। লন্ডন থেকে প্রীতমের দুই মামা এসেছেন মামিদের নিয়ে। প্রাইভেট অ্যাফেয়ার, ক্যাম্পর ইন্ডাস্ট্রির সবাই এলে তো তিল ধারণের জায়গা থাকবে না। শুধু সিনিয়র কিছু এক্সিকিউটিভ। অনেকেই ফুল নিয়ে এসেছেন। মেজোমামা আর ছোটোমামা ফুলগুলোকে খুলে খুলে ক্যাসকেডের চার পাশে সাজিয়ে রাখছেন। আমি আর প্রমথ ফুল নিয়ে গিয়েছিলাম। একেনবাবু একটু পরে আসবেন বলেছিলেন। হঠাৎ অমল মিত্র এসে হাজির। জিজ্ঞেস করলেন, “একেনবাবু কোথায়?”

“একটু বাদেই আসছেন।”

তারপর প্রায় অনুনয়ের ভঙ্গিতে বললেন, “আপনাদের একটু সাহায্য করতে হবে আমাকে?”

আমি আর প্রমথ দুজনেই বিস্মিত চোখে তাকালাম।

“বল্লরী কথা বলা বন্ধ করেছে। ওর ধারণা আমি চুইংগাম বেহালায় ঢুকিয়েছি বিপ্লব আর বিপ্লবের ফ্যামিলিকে হেনস্থা করার জন্য। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি এর মধ্যে জড়িত নই। কেন এরকম নোংরা কাজ আমি করব? আপনারা একেনবাবুকে সেটা বলুন।”

আমার সত্যিই বিরক্তি লাগল। আঙ্কলের ফিউনারেলে এসেছি, একটা বিষাদপূর্ণ অনুষ্ঠান… এর মধ্যে এসব কী কথা!

“ঠিক আছে বলব,” বলে কাটালাম।

“ছোঁড়াটা বাঁশ খাচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।” অমল চলে যেতেই প্রমথর মন্তব্য।

এর মধ্যে ভিড়টা বেশ বেড়েছে। ক্যাসকেডের চারপাশে ফুল রাখার আর জায়গা নেই। প্রীতমের দুই মামা ফুলগুলো নিয়ে পাশের একটা টেবিলে রাখছেন। হঠাৎ দেখি ওডিন। হাতে কাগজে মোড়া এক গুচ্ছ ফুল। সেটা প্রীতমের ছোটোমামার হাতে দিতেই পিছন থেকে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আর দু’জন পুলিশ সেটা হাত থেকে প্রায় কেড়ে নিয়ে ওডিনের হাত পেছন করে হাতকড়া লাগিয়েছে। পুরো ব্যাপারটা বড়োজোর পনেরো সেকেন্ড! দেখলাম একেনবাবুও সেখানে দাঁড়িয়ে। ওডিনকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। বাইরে বম্ব স্কোয়াডের গাড়ি। ফিউনারেল হোমে সবাই সন্ত্রস্ত। কোনও মতে নমো নমো করে ব্যাপারটা শেষ হল। শুধু আমি না প্রমথও কমপ্লিটলি কনফিউসড।

একেনবাবু বাড়ি ফিরলেন বিকেলে।

“কী ব্যাপার মশাই বলুন তো? ওডিনকে ওরকম করে অ্যারেস্ট করা হল কেন?”

“খুবই স্যাড স্যার, তার কারণ আঙ্কলের মৃত্যুর জন্য মিস্টার ওডিনই দায়ী। এঁকে সময় মতো না ধরলে আরেকটা বিস্ফোরণ হত। আমরা সবাই খতম হয়ে যেতে পারতাম।”

“হেঁয়ালি ছেড়ে, প্রথম থেকে বলুন।”

“বলছি স্যার, বলছি.. সেই সঙ্গে একটু কফিও হোক। স্টুয়ার্ট সাহেবের অফিসে ওটি ভালো পাওয়া যায় না।”

প্রমথ রোস্টেড কফি বিন ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডারে গুঁড়ো করতে বসল। একেনবাবুর গল্পও শুরু হল…

“স্যার এখানে ডিটেকশনের দুটো গল্প আছে। প্রথমে প্রাণঘাতি গল্পটাই বলি। এও বলি স্যার, আমি যা বলছি তা আপনারা সবই জানেন। প্রমথবাবু যদি বা না জানতে পারেন, আপনি কিন্তু স্যার, জানেন।”

“বাপি জানলেও ব্যাপারটার আসল অর্থ বুঝতে পারে না, একটু গবেট আছে।”

“চুপ কর তুই, বলুন।”

“দাঁড়া দাঁড়া, কফিটা একেবারে নিয়ে তারপর শোনা যাক, কয়েক মিনিটের তো ব্যাপার।”

.

সোফায় বসে গরম কফিতে চুমুক দিয়ে একেনবাবু আমার দিকে তাকিয়ে শুরু করলেন, “আপনি স্যার নিশ্চয় খেয়াল করেছিলেন, আফ্রিকার ক্যাম্পর ইনডাস্ট্রি নিয়ে মিস্টার ওডিনের একটা বিশেষ আগ্রহ ছিল।”

“তা করেছিলাম, একটু অবাকই হয়েছিলাম। পরে অবশ্য জেনেছিলাম ওদের পরিবারের অন্নদাতা ছিল ওই কোম্পানি।”

“এক্সাক্টলি স্যার। মিস্টার ওডিন অবশ্য সেটা জেনেছিলেন খুব বেশিদিন হয়নি.. জন্মদাতা বাবা-মা’র খোঁজ শুরু করার সময় ওঁর পালক-পিতার এক বন্ধুর কাছ থেকে। তিনি মনে হয় মিস্টার ওডিনের বাবা-মা’র খবর মিস্টার জনসন, মানে ওডিনের পালক পিতার থেকে বেশি জানতেন। এছাড়া সাবালক হয়ে গেলে অ্যাডপশন এজেন্সি থেকেও নিজের জন্মগত পরিচয় খানিকটা পাওয়া যায়, যদি আইনের কোনও বাধা না থাকে। অনুমান করি স্যার, মিস্টার ওডিন ওখান থেকেই জানতে পারেন কোন অনাথ আশ্রমে তিনি থাকতেন। তারপর সেই অনাথ আশ্রমের সঙ্গে তো বটেই, পরে সেকো ফ্যামিলির কারও কারও সঙ্গে মিস্টার ওডিনের যোগাযোগ হয়েছিল। হয় চিঠিতে অথবা ফোনে। আর সেই পরিবারকে আরও ভালো ভাবে জানার জন্যেই তিনি তিন সপ্তাহের জন্য আফ্রিকা গিয়েছিলেন।

“প্রমথবাবু, আপনি এটা জানেন না, কিন্তু মিস্টার ওডিন খুব পরিষ্কার করেই বাপিবাবুকে লিখেছিলেন কেন আফ্রিকা যাচ্ছেন.. To find my roots. বাপিবাবু অবশ্য এটাকে একটু অন্যভাবে নিয়েছিলেন। লেখাটাতে দুটো অর্থই লুকিয়েছিল, যিনি যেভাবে নেবেন। তাই না স্যার?”

আমি মাথা নাড়লাম।

“আসলে স্যার, অ্যাডপ্টেড ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা আমরা তো নিজেরাই দেখেছি এরিক সাহেবের সঙ্গে কথা বলে। মনের গভীরে ওঁদের মানসিক কষ্ট কী নিদারুণ, আমাদের পক্ষে কল্পনা করা কঠিন। কেন ওঁদের নিজের বাবা-মা ওঁদের পরিত্যাগ করলেন… এই কষ্ট ওঁদের কুরে কুরে খায়। মিস্টার ওডিনের ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছে একটা বাইরের কারণে…ওঁর বাবা-মা ওঁকে ফেলে দেননি স্যার, মৃত্যুই হঠাৎ এসে ওঁর বাবা-মা’কে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। দু’জনেই মারা গেছেন ক্যান্সারে…মেসোথেলিওমা।

“আপনারা জানেন কিনা জানি না স্যার, এটা একটা মারাত্মক ক্যান্সার। যার অন্যতম প্রধান কারণ অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে বহু সময়ের জন্যে থাকা। শুধু ওঁর বাবা-মা নন, কাকারও মৃত্যু ওই একই ক্যান্সারে। সেদিক থেকে স্যার, বাবা-মা’র ওপর অভিমান না করে, মিস্টার ওডিন রাগ করতে পারেন ভগবানের ওপর। এর মধ্যে বেহালা নিয়ে ওই ব্যাপারটা ঘটল। মিস্টার প্রীতম এসে অমল মিত্রের কথা বললেন। মনে আছে স্যার?”

“কী কথা?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“মিস্টার মিত্রের ঠাকুরদার কথা। ক্যাম্পর ইন্ডাস্ট্রির অ্যাসবেস্টসের ব্যাবসাটা তিনিই দাঁড় করিয়েছিলেন। এখন অবশ্য সেটা পড়তি অবস্থায়, কারণ বেশির ভাগ দেশই ওটার ব্যবহার বন্ধ করেছে মেসোথেলিওমার ভীতিতে। তখনই মনে পড়ল মিস্টার ওডিনের সেই নোট, যেটা প্রীতমের আঙ্কলকে পাঠানো গিফটের সঙ্গে আটকানো ছিল। আপনার মনে আছে স্যার?”

আমাকে জিজ্ঞেস করলেন একেনবাবু।

আমি ভাবার চেষ্টা করলাম। “ওঁর আঙ্কল আর আন্টির নাম?”

“হ্যাঁ স্যার, কিন্তু ডাক নামটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন।”

“খুবই মনে আছে। known as..’ বলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমরা তো কথাও বললাম সেই নিয়ে।”

“কিন্তু তার পরের শব্দগুলোও ভাবুন স্যার… “Best, OS।”

“হ্যাঁ, কিন্তু ওতো সব সময়েই নোটের শেষে Best, OS কথাটা লেখে।”

“তা লেখেন। কিন্তু এখানে সেটা অন্য মাত্রা পেয়েছিল। শেষ তিনটে শব্দ এখন এক সঙ্গে পড়ন স্যার, As Best OS, অর্থাৎ অ্যাসবেস্টস। কী তীব্র রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে মিস্টার ওডিন ওই নোটটা লিখেছিলেন! বক্তব্যে কোনও ঢাকা চাপা নেই, কিন্তু গুরুবচন আঙ্কলের সাধ্য হবে না তার অর্থ বোঝার। আমরাও বুঝিনি। এখানেও ওঁর সেই roots খোঁজার মতো… যে যেভাবে বোঝে!”

.

প্রমথ এবার মুখ খুলল, “এবার কিন্তু আপনার গল্পের গরু গাছে উঠছে! এর সঙ্গে আঙ্কলের মৃত্যুর সম্পর্ক কী? আঙ্কল মারা গেছেন একটা সোফিস্টিকেটেড প্লাস্টিক বোমায়। সেটা তো যে-কেউ বানাতে পারবে না!”

“একদম ঠিক স্যার। তবে কিনা বাপিবাবু আরেকটা জিনিস খেয়াল করেননি, আমিও প্রথমে করিনি। আমাদের ধারণা ছিল মিস্টার ওডিন এনার্জি সেক্টরের একটা ল্যাবে কাজ করেছেন। সেটা ঠিক নয় স্যার, উনি কাজ করেছিলেন এনার্জেটিক্স ল্যাবে। বাপিবাবু সেদিন যখন ওঁর রেসিউমিটা দেখালেন, তখন এনার্জেটিক্স শব্দটা পড়েছিলাম, কিন্তু সেভাবে ওটা নিয়ে ভাবিনি। এনার্জি আর এনার্জেটিক্সের মধ্যে অনেক তফাত। এনার্জেটিক্স হল বিস্ফোরক নিয়ে কারবার। উনি আগে কাজ করতেন সেখানে রিসার্চ করা হত বিস্ফোরক নিয়ে।”

.

একেনবাবু বলে চললেন, “সেদিন আরও দুটো প্যাকেজ আঙ্কলের কাছে এসেছিল বটে, কিন্তু সেগুলো নির্দোষ… অ্যামাজন আর ওয়ালমার্টের অন-লাইন অর্ডার। ওডিনের প্যাকেজটা খুলতে গিয়েই এক্সপ্লোশানটা হয়। ফরেন্সিক অ্যানালিসিসে দেখা যায় ব্যাটারি অপারেটেড কোনও ট্রিগারিং মেকানিজম ব্যবহার করা হয়েছিল। আমিও চিন্তা করতে শুরু করি, কোথায় মিস্টার ওডিন এটা বানাতে পারেন। বাইরে কোথাও বানাবার চেষ্টা করলে করলে ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে… করতে পারবেন ইউনিভার্সিটিরই কোথাও। কোথায় আবার? প্রমথবাবু ওঁকে ল্যাবে একটা কাজ জোগাড় করে দিয়েছেন। সেই ল্যাবে প্ল্যাস্টিক বোম বানাবার সব রসদই মজুত আছে, বাইরে থেকে কিছুই কেনার দরকার নেই। পুলিশ ইতিমধ্যেই সেটা ভেরিফাই করেছে।”

“মাই গড!” প্রমথ বলল।

“ওঁর দিক থেকে ভাবুন স্যার, বাবা-মা ওঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন ক্যানসারে মৃত্যুর জন্য, অন্য কোনও কারণে নয়। আর ক্যানসার হয়েছে অ্যাসবেস্টসের জন্য। ক্যাম্পর ইন্ডাস্ট্রি, যার মালিক হচ্ছেন আঙ্কল গুরুদয়াল সিং আর তাঁর ভাইরা, অ্যাসবেস্টস নিয়ে এত হইচই সত্ত্বেও মুনাফার লোভে সেই ব্যাবসা বন্ধ করেননি। যদ্দিন খরিদ্দার পেয়েছেন, মাল তৈরি করেছেন, বিক্রি করেছেন। এই সিং ভাইরাই জেনেশুনে ওঁর বাবা-মা’কে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। রাগ থাকা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার স্যার।

“মুশকিল হল স্যার, এগুলো সবই পরোক্ষ প্রমাণ। ওঁকে বোমা বানাতে দেখা যায়নি। বোমা উনি নিজে ডেলিভারি করেননি। যে চিঠি লিখেছেন… সেটার ওপর ভিত্তি করে কিছুই এগোয় না। কিন্তু আমি জানতাম স্যার, একজন সিং-এর মৃত্যুতে উনি সন্তুষ্ট হবেন না। তারপর এই ফিউনারেলের ব্যাপারটা এল। অন্য দুই ভাইও আসবেন, পত্রিকাতেই খবর পাওয়া গেল।

.

“মিস্টার ওডিন আবার কাজে লাগলেন। এবার উনি জানতেন না, ওঁর ওপর নজর রাখা হচ্ছে, প্রত্যেকটা মুভ রেকর্ড করা হচ্ছে। ফুলের গুচ্ছ কিনে কাগজের মোড়কে যখন প্ল্যাস্টিক এক্সপ্লোসিভ জড়াচ্ছেন.. এসব ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে কঠিন, অর্থাৎ ট্রিগারিং মেকানিক্স, যাতে কাগজগুলো খুললেই সেটা তৎক্ষণাৎ কাজ করে, সেটাকে যখন বসাচ্ছেন– সেটাও ফোকাস করে তোলা হল। তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেনই। ওঁর পিছন পিছন আমরা গেলাম, ফুলটা হাতে দিতে না দিতে ওঁকে অ্যারেস্ট করলাম।… সবই স্বীকার করেছেন উনি। অত্যন্ত ট্র্যাজিক। পুলিশের কাজ স্যার, নচ্ছার!”

.

আমরা অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। একটা প্রশ্ন অবশ্য মাথায় এল, এত দেরি করে পুলিশ ওকে গ্রেফতার করল কেন! বোমা বানানোর সময়েও করতে পারত। কিন্তু তার আগেই প্রমথ বলে উঠল, এবার একটা হালকা প্রসঙ্গ তুলি। “আপনি তো মশাই, অমল মিত্রের কেস কাঁচ্চা করে দিয়ে এলেন।”

“কেন স্যার?”

“ওই যে বল্লরীর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছেন, অমল মিত্র আঙ্কলের ডেল গেসু বেহালার সাউন্ড-বক্সে চুয়িংগাম ফেলেছেন, আওয়াজটা ড্যাম্প করতে। উদ্দেশ্য বল্লরীর বয়ফ্রেন্ডের বাবার ওপর আঙ্কল যাতে এত রেগে যান যে বল্লরীর বিয়েতে আপত্তি করেন!”

“কী মুশকিল স্যার, আমি কি তাই বলে এসেছি?”

“প্লেন ইংলিশে বলেননি, কিন্তু ইশারায় তো বলেছেন।”

“বলে থাকলে ভুল বলেছি, স্যার।”

“মানে?”

“মানে স্যার, ওই বিস্ফোরণের পরে পুলিশ সিকিউরিটি ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো সব পরীক্ষা করেছে। কীর্তিটা ওই যমজ দুটো ভাইয়ের। এটা অবশ্য স্যার, আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল, এইভাবে বিপ্লবকে হেনস্থা করার চেষ্টা– শুধু চাইল্ডিশ নয়, রিস্কি।”

“কিন্তু বেচারা অমল, ওর জন্যে তো কিছু করতে হবে?” আমি বললাম।

“ও-তত দু’দিক থেকেই শেষ। বল্লরী ভালোবাসে বিপ্লবকে… অমল বেহালা নষ্ট করুক বা না করুক। আর আঙ্কলও গন। আমার শুধু একটাই দুঃখ, একেনবাবু, প্রমথ বলল, “বাপিটার কিছু হল না। বিপ্লব গন হলে বাপির তবু একটা চান্স থাকত।”

“কেন স্যার, বেভ ম্যাডাম তো আছেন।”

একেনবাবুকে মাঝে মাঝে খুন করতে ইচ্ছে করে।