১২. অর্জুনের মনে পড়ল

অর্জুনের মনে পড়ল, এই থর বা পাহাড়ি ছাগলের কথা অমল সোমের মুখে সে এর আগে শুনেছে। অমল সোম ওর ভাল নামটিও বলেছিলেন। অর্জুন মনে করার চেষ্টা করল।

সুন্দর বলল, কী ভাবছেন বাবু?

ভাবছিলাম জন্তুটার আসল নাম কী? যাকগে, তুমি ওদের বলতে পারতে আর কোনও অবৈধ কাজ করবে না। তা না বলে জঙ্গলে পালিয়ে এলে কেন?

বললে ওরা কথা শুনত না। এ অঞ্চলে নীলবাবু যা বলবেন, সেটাই আইন। কথা না শুনলে ওরা আমার সর্বনাশ করে দিত।

কিন্তু জঙ্গলে খাবার নেই, বৃষ্টিবাদল আছে, বন্য জন্তু আক্রমণ করতে পারে, এভাবে তুমি কতদিন পালিয়ে থাকবে? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

যে কদিন পারি। আমি শহরের দিকে চলে যেতে পারতাম, কিন্তু তা হলে যে আমার ছেলেবউকে দেখতে পাব না। জঙ্গলে থাকলে ওদের কাছাকাছি থাকব আমি। এই কদিনে অবশ্য একটা অন্যায় করেছি। বনমুরগি ধরে ছাড়িয়ে খেয়েছি। এই যা।

কী হল?

 

মাটির নীচের ওই ফলটার কথা খেয়ালই ছিল না। বাচ্চাগুলোর পর। মা-শেয়ালটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বাকিটা খেয়ে গেছে। হতাশ গলায় বলল সুন্দর।

তুমি এক কাজ করে। আমার সঙ্গে চলো। বাংলোয় গিয়ে খাবে।

অসম্ভব! ওখানে গেলে নীলবাবু ঠিক খবর পেয়ে যাবে।

সে জানবে কী করে?

ওই বাংলোর কর্মচারীদের মধ্যে যে ওর লোক নেই, তা জানব কী করে?

ঠিক আছে। তুমি রাত হলে এসো। আমি জেগে থাকব।

সুন্দর অর্জুনকে জঙ্গলের ধারে পৌঁছে দিয়ে ফিরে গেল। এই সময় টুপ টুপ করে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগল। অর্জুন দৌড়ে বাংলোয় ফিরে এল। বিকেল হয়ে আসছে। আকাশে জমাট মেঘ। রাত্রে ভারী বৃষ্টি হবে।

ফরেস্ট বাংলোর বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। সন্ধের মুখ থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সুন্দরের জন্য চিন্তা হচ্ছিল অর্জুনের। বেচারা ভিজে যাবে একদম, অসুখ হওয়া বিচিত্র নয়। পাশের বেতের চেয়ারে বসে মেজর আফ্রিকান ভাষায় একটা বর্ষার গান গাইছিলেন গুনগুন করে। একটু আগে তিনি বলেছেন ফরেস্টে বৃষ্টি দেখলেই তাঁর আফ্রিকার কথা মনে পড়ে। হয়তো কোনও গল্পের ভূমিকা ছিল সেটা, কিন্তু কেউ প্রশ্ন না করায় গানে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।

হঠাৎ অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা মেজর, এই গানের কবির নাম

কী?

খনাতিক মোজাম্বা। যে নৌকোয় চড়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতাম, তার মাঝি ছিল লোকটা। অথচ কবিতা লিল নির্ঘাত নোবেল পেয়ে যেত অ্যাদ্দিনে। লাইনটা শুনুন, হে বৃষ্টি, মেঘ না থাকলে তোমার অস্তিত্ব নেই যেমন, আমার দুঃখগুলোরও কোনও মূল্য নেই আমি না থাকলে। বিউটিফুল। কী বলেন? মেজর জিজ্ঞেস করলেন।

সত্যিই ভাল। কিন্তু বৃষ্টির জন্যই বারান্দায় পোকা বাড়ছে। আমরা যদি তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ি, তা হলে কারও অসুবিধে আছে? অমল সোম জানতে চাইলেন প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে।

শুয়ে পড়ব। সবাই মিলে? মেজর অবাক!

হ্যাঁ। কেন?

আমাদের সতর্ক থাকা উচিত নয় কি? নীল চ্যাটার্জি তার বন্ধুর হেনস্থার বদলা নিতে এখানে আসবে না? যা ফেরোসাস লোক! মেজর কথা শেষ করেই কানখাড়া করলেন। বৃষ্টির আওয়াজ ছাপিয়ে একটা গাড়ির আওয়াজ ভেসে আসছে। তারপরেই দূরে হেডলাইটের আলো দেখা গেল, আবছা।

মেজর উঠে দাঁড়ালেন, আমার অস্ত্রটা নিয়ে আসি। তিনি দ্রুত ঘরে ঢুকে গেলেন।

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গাড়িটা একেবারে বাংলোর গায়ে এসে থামল। দরজা খুলে কে ভেতরে ঢুকে গেল, ওপর থেকে বোঝা গেল না। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ হল। ওরা দেখল চৌকিদার দৌড়ে উঠে এসেছে, সাব, নীলবাবু এসেছেন, দেখা করতে চান।

অমল সোম বললেন, নিয়ে এসো।

চৌকিদার নেমে গেলে অমল সোম বললেন, ছেলেটা মোটেই মাথামোটা নয়।

নীল উঠে এল। বৃষ্টির জল তার জ্যাকেটে লেগেছে। ওপরে এসে হাতজোড় করে বলল, নমস্কার। আপনাদের কি বিরক্ত করলাম?

অমল সোম বললেন, মোটেই নয়। বসুন।

চেয়ার টেনে পা ছড়িয়ে বসল নীল, আরে, আপনারা নিজেদের পরিচয় দেবেন তো, কীরকম মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেল বলুন তো! আপনি তো অর্জুন? আমি আপনার ফ্যান। সেই লাইটারের আমল থেকে। আপনার বাংলাদেশে গিয়ে রহস্য উদ্ধারের শেষটা অবশ্য আমাকে টানেনি। যাকগে, আমি এলাম অনেকটা দিদির চাপে। যা হয়েছে সব ভুলে যান। এনজয় ইওর টিপ।

অনেক ধন্যবাদ।

শুনলাম আপনারা নাকি একটা ফুলের খোঁজে এসেছেন, যা বিষের গন্ধ ছড়ায়। ইন্টারেস্টিং। এব্যাপারে যদি আমার সাহায্য দরকার হয়, তা হলে বলবেন।

নিশ্চয়ই বলব। অমল সোম শান্ত গলায় বললেন।

তা হলে আজ চলি। আপনারা গল্প করুন। নমস্কার। হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল নীল। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্জুনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি যে ম্যাজিক জানেন, তা কখনও পড়িনি তো! আমার নির্বোধ বন্ধু যা করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন আপনি। হাত নেড়ে আগুন জ্বালাতে এদেশের সাধু-সন্ন্যাসীরা এককালে পারতেন। অবশ্য আমেরিকানরা বোতাম টিপে সেটা করতে পারে। নমস্কার।

দ্রুত চলে গেল নীল। তারপরেই গাড়িটা পাক খেয়ে ফিরে গেল। সে উঠে এসেছিল গাড়ির হেডলাইট না নিভিয়ে। জায়গার অন্ধকার আরও বেড়ে গেল।

অমল সোম হেসে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু বুঝতে পারলে অর্জুন?

অর্জুন মাথা নাড়ল, না। এ যে দেখছি একদম উলটো ব্যবহার।

হ্যাঁ। আমি যা ভেবেছিলাম, নীলবাবু তার অনেক বেশি বুদ্ধিমান। উনি এসে এই বৃষ্টির মধ্যে জানিয়ে গেলেন আমাদের সম্পর্কে সমস্ত খবর ওঁর নেওয়া হয়ে গিয়েছে।

মেজর বেরিয়ে এলেন, আমার মনে হয় ছেলেটা ভয় পেয়েছে। বন্ধুকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি দেখে বুঝতে পেরেছে ওরও ওই একই অবস্থা করব আমরা।

অমল সোম উঠে পড়লেন, ভয় পেয়েছে কিনা জানি না, তবে অর্জুন যে বোম টিপে আগুন জ্বালিয়েছিল, সেটা ধরতে পেরেছে নীলবাবু। আর আপনি যে আমেরিকায় থাকেন, সেই খবর নিশ্চয়ই ওর জানা হয়ে গেছে।

সন্ধের পরই রাতের খাবার দেওয়া হল। কিন্তু অর্জুন খেল না। সে বলল, এখন আমার একটুও খিদে পাচ্ছে না, আপনারা খেয়ে নিন, আমি পরে খাব।

মেজর তাই শুনে খাওয়ার সময়টা পিছিয়ে দিচ্ছিলেন, কিন্তু অমল সোম সেটা করতে দিলেন না। ওঁরা যখন নীচের খাবার ঘরে যাচ্ছেন, তখন দোতলার বারান্দায় বসে অর্জুন বৃষ্টি দেখছিল। যদিও তার মন পড়ে ছিল জঙ্গলের মধ্যে। শালগাছ-ঘেরা জায়গাটায় নিশ্চয়ই এখন বৃষ্টির জল ঢুকে পড়েছে। বেচারা সুন্দর! অন্যায়ের সঙ্গে হাত মেলাবে না বলে এই শাস্তি পেতে হচ্ছে ওকে। নীল চ্যাটার্জি যখন তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করল, তখন সে সুন্দরের কথা ওকে বলতে পারত। অর্জুনের অনুরোধ হয়তো নীল রাখত। কিন্তু না, তাতে সুন্দরেরই ক্ষতি বাড়ত। ওর মুখে থর শিকারের কাহিনী অর্জুনরা জেনে গিয়েছে, তা বোঝার পর নীল আর পিছিয়ে যেত না। বরং সুন্দর যে এ অঞ্চলে আছে তা জেনে যেত।

সুন্দরকে সে রাত্রে এখানে আসতে বলেছে। সেই কারণে অমল সোম বলা সত্ত্বেও রাতের খাবার খেল না। এমন বৃষ্টির রাত্রে চৌকিদার বাবুর্চি বেশিক্ষণ জেগে থাকবে না। তখন সুন্দর এলে খাবারটা ওর সঙ্গে ভাগ করে খেতে পারবে। অর্জুন দেখল বাবুর্চি ওর খাবার ওপরে নিয়ে আসছে। শোওয়ার ঘরের টেবিলে যত্ন করে ঢেকে রেখে নেমে গেল।

অমল সোম এবং মেজর খাওয়া শেষ করে ওপরে উঠে এলেন। মেজর বললেন,  খেতে পেলেই শুতে চায়, কথাটা আমার ক্ষেত্রে খুব খাটে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।

শুয়ে পড়ুন। অর্জুন বলল।

আফ্রিকাতেও তাই করতেন? অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন।

আফ্রিকা ন্য। গ্রিনল্যান্ড থেকে একশো কিলোমিটার উত্তরে বরফের ওপর তাঁবু খাটিয়ে তিন রাত ছিলাম। তখন শুধুই রাত। সময় বুঝতে হলে ঘড়ি দেখতে হত। বিকেল পাঁচটার সময় খেয়েদেয়ে স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঢুকে যেতাম। আমার সঙ্গে ছিলেন এক বৃদ্ধ বিজ্ঞানী, স্ট্যানলি স্টিভেনসন। স্ট্যানলির ঘুম আসত না। সে জেগে জেগে হাওয়ার শব্দ শুনত। হাওয়াদের নাকি নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ আছে।

থাকতে পারে। আমি চললাম। অমল সোম নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।

সেদিকে তাকিয়ে মেজর বললেন, অমলবাবুর বয়স হয়ে যাচ্ছে, অল্পতেই টায়ার্ড হয়ে পড়েন। যাই, আমিও যাই। হাই তুলতে তুলতে নিজের ঘরে চলে গেলেন মেজর।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নাক ডাকার আওয়াজ ভেসে এল। মেজর ঘুমাচ্ছেন।

সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বৃষ্টির তেজ আরও বাড়ল। পোকার জন্য আলো নিভিয়ে দিয়েছিল অর্জুন। জঙ্গলে বাতাসের তুমুল লড়াই চলছে। তার আওয়াজ অবশ্য মেজরের নাসিকাগর্জনের ওপরে। নীচের আলোগুলো নিভে গেল। তার মানে বাবুর্চি, চৌকিদার তাদের কাজ শেষ করে শুয়ে পড়ল।

বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য গাছপালা নেগেটিভ ছবি হয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে।

বাবু। চাপা গলায় ডাকটা ভেসে এল।

চমকে মুখ ফেরাতেই অন্ধকারে ঝাপসা শরীরটা নজরে এল।

সুন্দর! ফিসফিস করল অর্জুন।

হ্যাঁ বাবু।

অর্জুন তাজ্জব! কখন নিঃসাড়ে লোকটা খুঁটি বেয়ে দোতলার বারান্দায় উঠে এসেছে, তা সে টের পায়নি। অথচ সে সুন্দর কোন পথে আসবে তাই অনুমান করার চেষ্টা করছিল।

তুমি তো ভিজে গেছ?

হ্যাঁ বাবু।

এসো।

প্রায় নিঃশব্দে ওরা ঘরে ঢুকল। আলো জ্বালল না প্রথমে। মেজরের নাক ডাকছে। বড় ভোয়ালেটা অর্জুন সুন্দরের হাতে দিয়ে বলল, ওটা বাথরুম। ওখানে ঢুকে এটা পরো।

সুন্দরের হাতে একটা প্যাকেট ছিল। প্যাকেটটা প্লাসটিকের। সেটা টেবিলের ওপর রেখে যখন তোয়ালে নিল, তখন বাইরে বিদ্যুৎ চমকাল। অর্জুন দেখল তার শরীর পুরো জলে ভেজা।

ওটা কী?। আমার জামা। বৃষ্টির জন্য।

ও, যাও।

সুন্দর বেরিয়ে এল চটপট। অর্জুন খাবার খুলল। তারপর নিজে যতটা সম্ভব কম নিয়ে বাকিটা সুন্দরকে দিয়ে দিল। বুভুক্ষু মানুষ কীভাবে খায় তা অনুমান করল অর্জুন। খাওয়া শেষ করে জল খেয়ে সুন্দর ফিসফিস করল, কে ইনি?

মেজর। তোমার কোনও চিন্তা নেই।

জঙ্গলে একটা বুড়ো বাঘ আছে, ঘুমিয়ে পড়লে ওইভাবে নাক ডাকে।

অর্জুনের হাসি পেল। মেজর শুনতে পেলে সুন্দরকে মেরে ফেলতেন। খাওয়ার পর ওরা বাইরে এসে বসল। সুন্দরের কোমর থেকে তোয়ালে অন্ধকারেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে রঙের ঔজ্জ্বল্যের জন্য। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, খুব ভিজেছ?

না। গাছের ঘরে তেমন জল পড়েনি। এখানে আসতে গিয়ে ভিজে গেলাম।

তোমার নীলবাবু এসেছিল এখানে।

অ্যাঁ? নীলবাবু! চমকে উঠে দাঁড়াল সুন্দর।

অর্জুন, ওকে বলো ভয়ের কোনও কারণ নেই। পেছন থেকে নিচু গলা ভেসে এল। তারপবই অমল সোম এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসলেন, বসো। তোমার নাম সুন্দর?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

অর্জুন বলল, সুন্দর, ইনি আমার দাদা।

অ।

অমল সোম বললেন, তুমি নীলবাবুকে এত ভয় পাচ্ছ কেন?

কথার অমান্য করেছি, উনি মেরে ফেলবেন।

সে কী! এর আগে কখনও মেরেছেন?

হ্যাঁ। জঙ্গলে লাশ পাওয়া যায়।

খুন?

ঠিক বলতে পারব না। শরীরে কোনও চিহ্ন থাকে না। রক্ত বের হয়।

কতজন এভাবে মারা গিয়েছে?

অন্তত পাঁচজন।

থানা থেকে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি?

না। পুলিশ বলে প্রমাণ নেই কে মেরেছে!

হুঁ। তুমি তো পাখি শিকার করো?

করতাম বাবু, এখন ছেড়ে দিয়েছি।

ও। তা জঙ্গলের নাড়িনক্ষত্র তো জানো?

তা জানি।

সেরাও-এর নাম শুনেছ?

সেরাও?

তখনই অর্জুনের মনে পড়ে গেল। সে উত্তেজিত গলায় বলল, সুন্দর, বিকেলে তুমি যাকে থর বলছিলে, তারই ভাল নাম সেরাও।

সুন্দর বলল, হ্যাঁ চিনি।

অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে এই প্রসঙ্গ উঠেছিল অর্জুন?

অর্জুন জবাব দিল, নীলবাবু ওকে থর শিকার করতে বলেছে, অন্তত থর কোথায় আছে তার খবর দিতে হবে। সুন্দর রাজি হয়নি বলে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে।

অমল সোম বললেন, গুড। সুন্দর, সেরাও কোন অঞ্চলে থাকে?

পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝামাঝি জায়গায় ওদের দেখেছি।

আমি জানি বক্সার পাহাড় থেকে এদিকের ভুটানের পাহাড় পর্যন্ত ওদের দেখা যায়। ওরা কখনওই পাহাড়ের বেশি ওপরে ওঠে না, আবার জঙ্গলের গভীরে ঢোকে না। তাই?

আমি অতটা জানি না বাবু।

সুন্দর, তুমি আমাকে থর খুঁজতে সাহায্য করবে?

আমি? না বাবু, আমি আর পাপ করব না।

তোমাকে কোনও পাপ করতে বলছি না। আমি কখনওই পশুপাখি মারি না। আমরা শুধু ওদের লক্ষ করব, ছবি তুলব, ব্যস! এর জন্যে তুমি টাকা পাবে।

কিন্তু নীলবাবু?

সে যাতে জানতে না পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করব।

সুন্দর এবার অর্জুনকে জিজ্ঞেস করল, আপনি সঙ্গে থাকবেন তো বাবু?

অর্জুন বলল, নিশ্চয়ই।

ঠিক আছে। কিন্তু আপনাদের অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।

কতটা?

তা এখান থেকে তিনপোয়া বেলা।

হাঁটব। মনে হচ্ছে বৃষ্টি মাঝরাত্রেই থেমে যাবে। ভোর ভোর বেরিয়ে পড়তে পারি।

কিন্তু–এখন জঙ্গল ভেজা থাকবে। পাতায়-পাতায় জোঁক বের হবে।

তা হলে?

একদিন রোদ উঠুক। গাছপালা ঠিক হোক, তারপর—

তোমার কি এখানে একদিন থাকার ইচ্ছে আছে? অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন।

মিথ্যে কথা বলব না বাবু। নীলবাবুর বন্ধু আমার বউকে শাসিয়ে এসেছে। আমি তার বদলা নেব বলে এই জঙ্গলে এসেছি। উনি একা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে ভালবাসেন। আমি এমন শাস্তি দেব…। কথা শেষ করল না সুন্দর।

সে এখন থানায়। তাকে কোথায় পাবে?

থানায়?

হ্যাঁ। আমরাই ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।

হা ভগবান!

আফসোস কোরো না। তা ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া আইনের কাজ, তোমার নয়। তুমি আর পাপ করতে চাও না, ওটা করলে পাপ হবে।

বেশ, তা হলে ভোরেই চলুন।

অমল সোম একটু চিন্তা করলেন, না। কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে হবে। আমরা এগারোটা নাগাদ বের হব। তুমি রাতটা এখানেই ঘুমিয়ে নাও। জঙ্গলে ঢুকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলো। অন্ধকার চলে গেলে সেখানে গিয়ে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে।

গাছবাড়ির কাছে পৌঁছতে পারবেন বাবু? অর্জুনকে জিজ্ঞেস করল সুন্দর।

গাছবাড়ি? তার চেয়ে শেয়াল যেখানে ছিল, সেই জায়গাটায় যাওয়া সহজ। অর্জুন বলল।

সঙ্গে সঙ্গে সুন্দর বলল, তাই হবে। ওখানেই থাকব আমি। তবে এখন আমি চললাম। এখানে থাকতে সাহস হচ্ছে না বাবু। সে ঘরে ঢুকে গেল। তারপর নিজের ভেজা খাটো প্যান্টটা পরে প্যাকেটটা নিয়ে যেভাবে এসেছিল, সেইভাবেই নেমে গেল বাংলো থেকে।