১০. জোরে আওয়াজ

দরজায় যত জোরে আওয়াজ হল, সন্তুর বুকের মধ্যে যেন তার থেকেও জোরে আওয়াজ হতে লাগল। এই বরফের রাজ্যের মধ্যে সে আর কাকাবাবু ছাড়া আর কেউ নেই।

কাকাবাবু আর সন্তুর খাট যেখানে পাশাপাশি পাতা, সেখান থেকে গম্বুজের দরজাটা দেখা যায় না। কাকাবাবু বিছানার ওপর স্থির হয়ে বসে আছেন, হাতে রিভলভার। তিনি গম্ভীরভাবে কোনও-কিছু চিন্তা করতে বসেছেন যেন এই সাংঘাতিক সময়ে।

দরজার ওপর দুমদুম আওয়াজটা আরও বেড়ে গেল।

কাকাবাবু এবার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হু ইজ দেয়ার?

কোনও উত্তর এল না। আওয়াজটাও হঠাৎ থেমে গেল।

কাকাবাবু বললেন, লোহার দরজাটা বেশ শক্ত। সহজে কেউ ভাঙতে পারবে না। সন্তু, তুই গম্বুজের ওপরে উঠে দাখ তো বাইরে কিছু দেখা যায় কি না।

সন্তু বিছানায় শুয়ে পড়ার সময় জুতো খুলে ফেলেছিল। তাড়াতাড়ি জুতো পরে নিল আবার। ওভারকেটটা গায়ে চাপিয়ে গম্বুজের সিঁড়িতে পা দিতেই আবার দুমদুম শব্দ হল দরজায়।

সন্তু তরতর করে উঠে গেল ওপরে। জানলাটা দিয়ে ব্যগ্র হয়ে তাকাল বাইরে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। গম্বুজের ওপর থেকে ঠিক নীচের জায়গাটা দেখতে পাওয়া যায় না।

সন্তু বেশ জোরে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, কে? কে ওখানে?

এবারও কোনও সাড়া নেই।

কাকাবাবু ক্রাচ ঠকঠকিয়ে এগিয়ে গেলেন দরজাটার কাছে। কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন, উত্তর দিচ্ছ না কেন? কে দরজা ধাক্কাচ্ছ? পরিচয় দাও!

এর উত্তরে দরজায় আবার দুমদাম শব্দ।

কাকাবাবু আবার বললেন, কে, মিংমা? নোরবু? কে বাইরে?

তবু কোনও সাড়া নেই। কাকাবাবু দরজার ছিটিকিনিতে হাত দিয়ে বললেন, কে আছ। সরে দাঁড়াও! খুলেই আমি গুলি করব?

ওপর থেকে সন্তু বলল, কাকাবাবু, খুলবেন না, খুলবেন না।

কাকাবাবু দরজার মস্ত বড় ছিটিকিনিটা ধরে এমনিই একটা শব্দ করলেন।

যেন তিনি দরজাটা খোলার ভান করছেন। আসলে দরজাটা খুললেন না।

সন্তু তাড়াতাড়ি নেমে এল নীচে। তারপর কাকাবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ওপর থেকে কিছু দেখা যাচ্ছে না।

কাকাবাবু বিরক্তভাবে বললেন, আমার মনে হয় নোরবু কিংবা মিংমা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে! না হলে এখানে আর অন্য মানুষ আসবে কী করে? আর কোনও মানুষ হঠাৎ এসে পড়লেই বা সাড়া দেবে না কেন?

সন্তু থমথমে মুখে কাকাবাবুর দিকে তাকাল। কাকাবাবু এখনও কোনও মানুষের কথা ভাবছেন? এ তো ইয়েতির কাণ্ড! সন্তু নিজের চোখেই তো ইয়েতির ছায়া দেখেছে। ইয়েতি দরজা ভেঙে গম্বুজের মধ্যে ঢুকতে চাইছে। সন্তুর শরীরটা এত কাঁপছে যে কিছুতেই সে নিজেকে যেন সামলাতে পারছে না।

কাকাবাবু আরও কয়েকবার ইংরেজি, বাংলা, হিন্দিতে কে? কে? জিজ্ঞেস করলেন। কোনও উত্তর পেলেন না। দুমদুম আওয়াজটাও একটু পরে থেমে গেল।

বেশ কিছুক্ষণ একদম চুপচাপ।

কাকাবাবু আর সন্তু দরজার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ শব্দটা না হওয়ায় কাকাবাবু বললেন, এবার দরজাটা খুলে দেখা যাক।

সন্তু প্ৰায় আর্তনাদ করে বলে উঠল, না! কাকাবাবু, ওরা সুযোগেরই অপেক্ষা করছে। আমরা দরজা খুললেই—

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ওরা মনে কারা? আমি তো ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তোরা যদি ইয়েতি দেখেও থাকিস, কিন্তু ইয়েতি কখনও মানুষকে তাড়া করে এসেছে, এ-রকম তো শোনা যায়নি। যারা ইয়েতি দেখেছে বলে দাবি করে, তারা সবাই বলেছে, ইয়েতি হয় খুব ভিতু অথবা লাজুক প্ৰাণী। তারা মানুষ দেখলেই পালিয়ে যায়। তোদের দেখেও তো পালিয়েছে। তারা হঠাৎ গম্বুজের দরজায় এসে ধাক্কা দেবে কেন?

একটুক্ষণ ভুরু কুঁচকে চিন্তা করে কাকাবাবু আবার বললেন, তুই আমার পেছন দিকে সরে যা, সন্তু! ইয়েতি হোক বা যাই হোক, রিভলভারের গুলির সামনে দাঁড়াতে পারবে না।

কথা বলতে বলতেই কাকাবাবু বড় ছিটিকিনিটা খুলে ফেললেন। তারপর এক হ্যাঁচকাটান দিলেন দরজায়।

দরজাটা খুলল না।

কাকাবাবু আরও জোরে টানলেন। এবারও খুলল না।

কাকাবাবু বললেন, কী হল? পুরনো আমলের দরজা, ওদিক থেকে ধাক্কা দেওয়ায় বোধহয় খুব এঁটে গেছে। তুই একটু হাত লাগা তো সন্তু।

তখন কাকাবাবু আর সন্তু দুজনে মিলেই ঠেলল দরজাটা। কিন্তু তবু দরজাটা খোলার লক্ষণ নেই। সন্তু দুমদুম করে লাথি মারতে লাগল। তবু এক চুলও ফাঁক হল না।

একটু পরেই ওরা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারল, দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এবার কাকাবাবুর কপালেও ঘাম দেখা দিল।

দরজাটা এমনভাবে বাইরে থেকে বন্ধ করল কে? কীভাবেই বা বন্ধ করল? বাইরের দিকে দুটো মোটা কড়ায় তালা দেবার ব্যবস্থা আছে। কাকাবাবুরা এখানে আসবার আগে গম্বুজটার দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়াই ছিল। কাকাবাবু নেপাল সরকারের কাছ থেকে সেই তালার চাবি এনেছিলেন। কেউ যদি বাইরে থেকে অন্য কোনও তালা লাগায়ও, তাহলেও দরজাটা ঠেললে খানিকটা ফাঁক হতই। দুপাল্লার দরজা, বাইরে থেকে কখনওই এমন শক্তভাবে বন্ধ হয় না।

কাকাবাবু ফিসফিস করে বললেন, তাহলে বুঝলি তো, এটা ইয়েতির কাজ নয়। মানুষের কাজ।

একটু থেমে তিনি আবার বললেন, আমরা ভাবছিলুম, দুমদুম করে ওরা বুঝি আমাদের দরজা খুলতে বলছে। আসলে বোধহয় ব্যাপারটা উল্টো। ওরা দরজার বাইরে একটা লোহার পাটি কিংবা ঐ ধরনের কিছু লাগিয়ে দিয়ে গেছে। হাতুড়ি-টাতুড়ি পেটার জন্য ঐ রকম দুমদুম শব্দ হচ্ছিল।

সন্তুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বাইরে থেকে কেউ দরজা বন্ধ করে দিয়ে গেছে, তাহলে তারা বেরুবে কী করে? কারা এমন করল? মিংমার সঙ্গে তার খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল, সে কিছুতেই এ কাজ করতে পারে না। তাছাড়া তাকে আর কাকাবাবুকে মেরে ফেলে মিংমাদের লাভ কী?

সে মরিয়া হয়ে দরজাটার গায়ে খুব জোরে আর-একবার লাথি কষাল। দরজাটা একটুও নড়ল না।

কাকাবাবু বললেন, ওতে কোনও ফল হবে না।

তিনি খাটের কাছে ফিরে গিয়ে বসে পড়ে পাইপ ধারালেন। তারপর আবার হঠাৎ মুখ তুলে বললেন, সন্তু, ছিটিকিনিটা বন্ধ করে দে। ওরা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করেছে। আমাদের দিক থেকেও বন্ধ রাখা দরকার। নইলে ওরা হঠাৎ ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।

সন্তু ছিটিকিনিটা লাগিয়ে দিয়ে ফিরে এল কাকাবাবুর কাছে। তার শরীরে যেন একটুও শক্তি নেই আজ। এই গম্বুজের মধ্যে তাদের বন্দী হয়ে থাকতে হবে? এই ছোট্ট একটা আধো-অন্ধকার ঘর, খাবার-দাবারও বেশি নেই, এ-রকম ভাবে আর কতদিন বাঁচা যাবে? এর আগে সন্তু যে-কয়েকটি অভিযানে বেরিয়েছে কাকাবাবুর সঙ্গে, কোনওবার সে এত হতাশ হয়ে পড়েনি। এবারে সবচেয়ে যেটা অস্বস্তিকর লাগছে, সেটা হল এই যে, শক্ৰ যে কে, তা-ই এখনও জানা গেল না। এই বরফের রাজ্যে কে বা কারা তাদের সঙ্গে শত্ৰুতা করতে আসতে পারে, সে কথাটাই তার মাথায় ঢুকছে না।

সে ভেবেছিল, এবার সে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে এসেছে। পথে অনেক বিপদ থাকবে তো বটেই, কিন্তু কেউ যে শত্ৰুতা করবে, সে-কথা সে কল্পনাও করেনি আগে। কাকাবাবুর কথাই ঠিক, ইয়েতি কখনও এইভাবে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে পারে না।

কাকাবাবু খানিকটা আপন মনেই বললেন, বাইরে থেকে কেউ এসে খুলে না দিলে এ দরজা ভেঙে বেরুনো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। সাহায্যের জন্য আমি আগেই খবর পাঠিয়েছি, কিন্তু ওদের এসে পৌঁছতে অন্তত দু-তিন দিন লেগে যাবে।

সন্তু বলল, দু-তিন দিন? তার মধ্যে তো আমরা এখানে দম বন্ধ হয়েই মারা যাব?

কাকাবাবু বললেন, ওপরের জানলা দিয়ে হাওয়া আসে–তা হলেও দু-তিন দিন এইটুকু ঘরের মধ্যে থাকা খুবই কষ্টকর, ওরা যদি আবার এসে দরজা ভেঙে

সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, ওরা মানে কারা?

কাকাবাবু বললেন, সেই তো কথা, ওরা মানে কারা, তা তো আমিও বুঝতে পারছি না। কারা রাত্তিরবেলা বরফের মধ্য দিয়ে আলো নিয়ে হাঁটে? অত বড় বড় পায়ের ছাপ কি সত্যিই ইয়েতির? খাটের তলা থেকে তুই ওয়ারলেস সেটটা বার কর।

দুইেকানে হেডফোন লাগিয়ে কাকাবাবুওয়্যারলেসে খবর পাঠাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। প্ৰথমে কিছুক্ষণ করাকর করু-গরীর-গর আওয়াজ, তারপর কাকাবাবু হঠাৎ এক সময় বলে উঠলেন, হ্যালো হালো, পীক নাম্বার হাড্রেড অ্যান্ড ফরটিন কলিং বেস, পীক নাম্বার হান্ড্রেড অ্যান্ড ফরটিন–এস ও এস ফ্রম রায়চৌধুরী, হ্যালো, রজার, ক্যান ইয়ু গেট মী–এস ও এস ফ্রম রায়চৌধুরী-ইয়োর কোড প্লীজ-ওভার

তারপর কাকাবাবু খানিকক্ষণ চুপ করে ওদিককার কথা শুনে নিজে আবার বলতে লাগলেন, কী-রকম যেন অদ্ভুত ইংরেজিতে, তার মধ্যে অঙ্কের সংখ্যাই বেশি। সন্তু কিছুই মানে বুঝতে পারল না। সে একদৃষ্টি চেয়ে রইল দরজার

কাকাবাবু বেশ খানিকটা সময় ধরে কথা বললেন ওয়্যারলেসে। তাঁকে বেশ উত্তেজিত মনে হল। এক সময় তিনি বেশ রাগের সঙ্গে বললেন, ওভার অ্যাণ্ড আউট! তারপর খুলে ফেললেন হেডফোন। পাইপটা ধরাতে গিয়ে লাইটার খুঁজে পেলেন না। অসহিষ্ণুভাবে বললেন, দূর ছাই, সেটা আবার রাখলুম কোথায়?

কাকাবাবুর ওভারকেটে অন্তত দশ-এগারোটা পকেট। কখন কোন পকেটে তিনি কোন জিনিসটা রাখেন, তা নিজেই ভুলে যান। কয়েকটা পকেট হাতড়ে তিনি লাইটারটা পেয়ে গিয়ে পাইপ ধারালেন। তারপর কয়েকটা টান দেবার পর বললেন, ওরা বেরিয়ে পড়েছিল.কিন্তু অত দেরি করে এলে তো চলবে না–একমাত্র উপায় যদি হেলিকপটারে আসতে পারে–কিন্তু হেলিকপটার ওদের ওখানে নেই, আছে একটা নামচোবাজারে-সেখানে খবর দিয়ে যদি আনাতে পারে।

আবার হঠাৎ চুপ করে গিয়ে কাকাবাবু পাইপ টানতে লাগলেন। তাঁর ভুরু দুটি কুঁচকে আছে।

কাকাবাবু কোনওদিন কোনও অবস্থাতেই ভয় পান না। তিনি বারবার বলেন, গায়ের জোর থাক বা না থাক, মনের জোর থাকলে মানুষ সবকিছু জয় করতে পারে। সন্তুর মনে পড়ল, কণিষ্কর মুণ্ডু খুঁজতে যাওয়া হয়েছিল যে-বার, সেবার একটা ভয়ংকর গুহার মধ্যে পড়ে গিয়েও কাকাবাবু একটুও ঘাবড়াননি। আন্দামানে গিয়ে তিনি নিজে জোর করে জারোয়াদের দ্বীপে নেমেছিলেন। কোনওবার কাকাবাবুকে সে বিচলিত হতে দেখেনি।

গম্বুজের এই বিশাল লোহার দরজা বাইরে থেকে বন্ধ, এটা তো আর জোর দিয়ে খোলা যাবে না। বাইরের সাহায্য দরকার। সে সাহায্য কখন আসবে কে জানে!

কাকাবাবু সন্তুর দিকে তাকিয়ে থেকে অসহিষ্ণুভাবে বললেন, বুঝতেই পারছি না ব্যাপারটা কী হচ্ছে! কারা দরজা বন্ধ করল? তুই আবার ইয়েতি দেখলি! সত্যি করে বলতো, ঠিক দেখেছিলি?

সন্তু বলল, হাঁ কাকাবাবু!

কাকাবাবু বললেন, আমি দেখতে পেলাম না কেন? আমার দেখাই বেশি দরকার ছিল?

কাকাবাবু ঘড়ি দেখে বললেন, ছটা বাজে। বাইরে নিশ্চয়ই অন্ধকার হয়ে গেছে। আজ সারা রাত জেগে থাকতে হবে। তুই বরং এক কাজ কর সন্তু, তুই দূরবিনটা নিয়ে ওপরে জানলার কাছে বসে থাক। দ্যাখ, কোনও আলো-টালো চোখে পড়ে কি না। হেলিকপটারটা যদি আসে, সেটারও আলো দেখতে পাবি।

সন্তু দূরবীন নিয়ে উঠে গেল ওপরে। সেখানেই বসে রইল ঘন্টার পর ঘন্টা। মাঝখানে একবার নীচে নেমে কিছু বিস্কুট আর চীজ খেয়ে নিল। কাকাবাবু স্পিরিট ল্যাম্প জেলে জল গরম করে দুইেকাপ কফি বানালেন। তারপর তিনি খাটের ওপর বসে। উরুর ওপর রিভলভারটা রেখে একটা বই পড়তে লাগলেন।

সন্তু দূরবীন নিয়ে গম্বুজের জানলা দিয়ে তাকিয়ে রইল বাইরে। কিছুই দেখা যায় না। শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। আকাশও দেখা যায় না, এরকম অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে চোখ ব্যথা করে।

সেখানেই সন্তু কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে জানে না। হঠাৎ এক সময় সে রীতিমতন ব্যথা পেয়ে জেগে উঠল। তার মুখে যেন ফুটছে হাজার হাজার সূচ। সারা শরীরটা কেঁপে উঠল ঠকঠক করে।

চমকে উঠতেই তার হাত থেকে দূরবীনটা খসে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গড়তে লাগল শব্দ করে।

নীচ থেকে কাকাবাবু বলে উঠলেন, কী হল, সন্তু?

সন্তু তখন জানলার পাল্লা দুটো বন্ধ করার জন্য ব্যস্ত। কিছুতেই বন্ধ করতে পারছে না, এত জোর হাওয়া। বাইরে দারুণ তুষারঝড় উঠেছে। গম্বুজের ভেতরটা কুচো কুচে বরফ আর হিমশীতল বাতাসে ভরে যাচ্ছে। আর বেশি হাওয়া ঢুকলে তাদের ঠাণ্ডায় জমে যেতে হবে।

অতি কষ্টে জানলা বন্ধ করে নীচে নেমে এল সন্তু। এমন ঠাণ্ডা লেগেছে যে তার চোয়াল দুটো যেন আটকে গেছে। অতি কষ্ট্রে সে বলল, কাকাবাবু, বাইরে-তু-ষা-র-ঝড়! দারুণ জো-রে!

কাকাবাবু বললেন, তুই আমার কাছে চলে আয় শিগগিরই!

সন্তু কাকাবাবুর কাছে যেতেই তিনি সন্তুর মুখখানা ধরে খুব জোরে দুহাত ঘষতে লাগলেন তার গালে। একটুক্ষণ এ-রকম থাকার পর সন্তুর গাল দুটো অনেকটা গরম হয়ে গেল, চোয়ালটাও স্বাভাবিক মনে হল।

কাকাবাবু বললেন, শিগগির ক্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে পড়।

তারপর যেন নিজের ওপরই রাগ করে বললেন, গোদের ওপর বিষফোঁড়া! একেই এই কাণ্ড তার ওপর আবার তুষারঝড়। এই ঝড় কখন থামবে কে জানে! ঝড় না থামলে তো হেলিকপটার এদিকে এলেও নামতে পারবে না?