৫. চ্যারিটি

৫. চ্যারিটি

৩১২ সালে কন্সতান্তাইনের ধর্মান্তরের আগে মনে হয়েছিল শেষ পর্যন্ত বুঝি ক্রিশ্চানরা টিকে থাকতে পারবে না, কারণ রোমান কর্তৃপক্ষের হাতে বিক্ষিপ্ত কিন্তু প্রবল নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছিল তারা। তারা আর সিনাগগের সদস্য নেই, এটা যখন তারা স্পষ্ট করে দিয়েছিল, রোমানরা চার্চকে ধর্মান্ধদের সুপারস্তিতিশিও ধরে নিল, যারা আদি ধর্মের সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মারাত্মক পাপ করেছে। ট্র্যাডিশনের বাধ ভেঙে দেয়, এমন গণ আন্দোলনের ব্যাপারে রোমানরা দারুণভাবে সন্দিহান ছিল। ক্রিশ্চানদের বিরুদ্ধেও নাস্তিক্যের অভিযোগ উঠেছিল, কারণ তারা রোমের পৃষ্ঠপোষক দেবতাদের মেনে নিতে অস্বীকার করে সাম্রাজ্যকে বিপদাপন্ন করে তুলেছিল। নির্যাতনের লক্ষ্য ছিল ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করা, সহজেই সেটা সম্ভবপর হতে পারত। ৩০৩ সালের দিকে সম্রাট দিওক্লিশিয়ান ক্রিশ্চানদের বিরুদ্ধে নিশ্চিহ্নকরণের যুদ্ধ শুরু করেন। সন্ত্রাস ও উদ্বেগের এই কালটি চিহ্ন রেখে গেছে। জেসাসকে মৃত্যু পর্যন্ত অনুসরণ করে যেতে প্রস্তুত শাহাদাৎ বরণকারীরা পরিণত হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিশ্চানে।

কোনও কোনও ক্রিশ্চান তাদের ধর্মবিশ্বাসের উপর অ্যাপোলোজিয়া- যৌক্তিক ব্যাখ্যা-লিখে প্যাগান প্রতিবেশিদের বোঝানোর প্রয়াস পেয়েছিল যে ক্রিশ্চান ধর্ম অতীতের ধার্মিকতার সাথে বিধ্বংসী বিচ্ছেদ নয়। তাদের অন্যতম প্রধান যুক্তি ছিল, জেসাসের জীবন ও মৃত্যু হিব্রু পয়গম্বরগণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, পূর্বাভাস ও ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী রোমানরা এই যুক্তিটিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল। ইভাঞ্জেলিস্টরা তাদের পেশার ব্যাখ্যা উপভোগ করছিলেন, কিন্তু অ্যাপোলজিস্টদের কাছে একে বেশ কঠিন ঠেকেছে। মারসিওন. একবার ক্রিশ্চানদের কাছে হিব্রু ঐশীগ্রন্থ বাতিল করে দেওয়ার আবেদন রেখেছিলেন। জেন্টাইল ধর্মান্তরিতরা তাদের ইহুদি ঐতিহ্য সম্পর্কে ক্রমেই অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করেছিল।’ সিনাগগে আর উপাসনা করছিল না তারা, তো ইহুদি ঈশ্বরকে নিয়ে কী করার ছিল তাদের? ঈশ্বর কি পুরোনো কোভেন্যান্ট সম্পর্কে মত পাল্টেছেন? কেমন করে ইসরায়েলের পবিত্র ইতিহাস ক্রিশ্চান ইতিহাস হতে পারে? পয়গম্বরগণ জেসাস সম্পর্কে আসলে কী জেনেছিলেন, কেমন করে জেনেছিলেন? ইসায়াহ ও জেরেমিয়াহ কি জেন্টাইল ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা জেসাসকে নিয়ে মগ্ন ছিলেন?

এই অ্যাপোলজিস্টদের প্রথম দিকের অন্যতম ছিলেন জাস্তিন (১৯৯- ১৬০), পবিত্র ভূমির সামারিয়ার প্যাগান ধর্মান্তরিত ছিলেন তিনি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হন। বহু গ্রিক দর্শন পাঠ করেছিলেন তিনি, কিন্তু যা খুঁজছিলেন ক্রিশ্চান ধর্মে তার দেখা পান। জনের গস্পেলের সূচনায় লোগোসকে স্টয়িকদের সমগ্র বাস্তবতা সংগঠিতকারী সেই ভয়ঙ্কর স্বর্গীয় প্রশ্বাস মনে করেছিলেন জাস্তিন এবং লোগোসকে (‘যুক্তি’) নিউমা (pneuma) (‘আত্মা’) বা ঈশ্বর আখ্যায়িত করেছেন। শেষ পর্যন্ত ক্রিশ্চান ও প্যাগানরা একটা সাধারণ প্রতীক লাভ করেছিল। এই দুটো অ্যাপোলোজিয়ায় জাস্তিন যুক্তি তুলে ধরেন যে, গোটা ইতিহাস জুড়ে জগতে সক্রিয় লোগোসের অবতার জেসাস গ্রিক হিব্রুদের সমানভাবে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। পয়গম্বরদের মাধ্যমে কথা বলেছেন, যাঁরা এভাবে মেসায়াহর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। আগে বহু রূপ ধারণ করেছিলেন লোগোস। প্লেটো ও সক্রেটিসের মাধ্যমে কথা বলেছেন। মোজেস জ্বলন্ত ঝোঁপ থেকে ঈশ্বরকে কথা বলতে শুনছেন ভাবলেও আসলে তিনি লোগোসেরই কথা শুনেছেন। পয়গম্বরদের অরাকলস স্বয়ং ‘অনুপ্রাণিত [পয়গম্বরদের] মুখে উচ্চারিত হয়নি; বরং স্বর্গীয় বাণী তাদের ঠোঁট পরিচালনা করেছেন। অনেক সময় লোগোস ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, অন্য সময়ে ঈশ্বরের নামে কথা বলেছেন। কিন্তু ইহুদিরা মনে করেছে ঈশ্বর সরাসরি তাদের সাথে কথা বলছেন, তারা বুঝতে পারেনি, এটা ছিল “ঈশ্বরের প্রথম জন্ম দেওয়া লোগোস। ইহুদি ঐশীগ্রন্থে ঈশ্বর মানবজাতির কাছে এক সাঙ্কেতিক বাণী প্রেরণ করেছিলেন কেবল ক্রিশ্চানরাই যার অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছে।

লোগোস সম্পর্কিত জাস্তিনের মত ‘ফাদারস’ অভ দ্য চার্চ নামে পরিচিত ধর্মতাত্ত্বিকদের ব্যাখ্যায় কেন্দ্রিয় গুরুত্ব লাভ করে, কারণ তাঁরা ক্রিশ্চান ধর্মের ভবিষ্যৎ ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন ও ইহুদি ধর্মবিশ্বাসকে গ্রেকো-রোমান বিশ্বে অভিযোজিত করেছিলেন। প্রথম থেকেই ফাদারগণ তানাখকে ব্যাপক প্রতীকী ব্যবস্থা হিসাবে দেখতেন। ইরানাস যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, মোজেসের রচনাসমূহ আসলেই চিরন্তন লোগোস ক্রাইস্টের বাণী, যিনি তাঁর মাধ্যমে কথা বলছিলেন। ফাদারগণ ‘ওল্ড টেস্টামেন্টকে বিভিন্ন রচনার সংকলন হিসাবে দেখেননি, বরং ঐক্যবদ্ধ বাণীর একক গ্রন্থ মনে করেছেন, ইরানাস যাকে এর হাইপোথেসিস বলেছেন: উপরিতলের ‘নিচে’র (হাইপো) যুক্তি। হিব্রু ঐশীগ্রন্থ সরাসরি জেসাসের কথা উল্লেখ করেনি, কিন্তু তাঁর জীবন ও মৃত্যু বাইবেলের সাঙ্কেতিক সাবটেক্সট গঠন করেছে এবং মহাবিশ্বের রহস্যও উন্মোচিত করেছে।o বস্তুগত বিষয়, অদৃশ্য বাস্তবতা, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ, প্রাকৃতিক বিধি-প্রকৃতপক্ষে যা কিছু অস্তিত্ববান-এক স্বর্গীয় সংগঠিত ব্যবস্থার অংশ, ইরানাস যাকে বলেছেন, ‘অর্থনীতি।’ সব কিছুরই একটা সমন্বিত সমগ্ৰ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বাকি সমস্ত কিছুর সাথে সম্পর্কিত অর্থনীতিতে সঠিক স্থান রয়েছে। জেসাস ছিলেন এই মন্ত্রের স্বর্গীয় অর্থনীতি। পল যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁর আবির্ভাব চূড়ান্তভাবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে: ‘তাহা এই, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খৃস্টেই (এক ঐক্য) [আনাকেফালিলেই ওসিসে ] সংগ্রহ করার যাইবে।৬ জেসাস ছিলেন ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনার কারণ, উদ্দেশ্য ও পরিণতি।

জেসাস হিব্রু ঐশীগ্রন্থের কেন্দ্রে অবস্থান করেন বলে তারাও স্বৰ্গীয় অর্থনীতিকে প্রকাশ করে, তবে এই সাবটেক্সট কেবল তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন বাইবেলকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। খোদ বিশ্বসৃষ্টির মতো ঐশীগ্রন্থ একটা টেক্সট (তেক্সতাস), যা এক অবিচ্ছেদ্য সমগ্রকে আকার দেওয়ার জন্যে ‘একসাথে গ্রন্থিত’ তন্তু নির্মাণ করেছে।’ ঐশীগ্রন্থের সাঙ্কেতিক তেক্সতাস নিয়ে ধ্যান সাধারণ লোককে বুঝতে সাহায্য করে যে জেসাসই সব কিছুকে একসূত্রে গেঁথে রেখেছেন এবং গোটা অর্থনীতির গভীরতর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ব্যাখ্যাকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমস্ত সূত্রকে একসাথে করে বিশাল কোনও ধাঁধার বিভিন্ন অংশকে জুড়ে দেওয়ার মতো একে তুলে ধরা। ইরানাস ঐশীগ্রন্থকে অসংখ্য ছোটছোট পাথরের কণায় তৈরি মোজায়েকের সাথে তুলনা করেছেন, একসাথে সঠিকভাবে বসানোর পর সুদর্শন রাজার প্রতিকৃতি তৈরি করে।

ঐশীগ্রন্থের ব্যাখ্যাকে অবশ্যই জেসাসের অ্যাপসলের শিক্ষার অনুবর্তী হতে হবে, ইরানাস যাকে বলেছেন “বিশ্বাসের বিধি,’ অর্থাৎ লোগোস, জেসাসে যা মূর্ত হয়ে উঠেছে, একেবারে সূচনা থেকেই সৃষ্টির কাঠামোতে যা সুস্পষ্ট ছিল।

কেউ মনোযোগ দিয়ে ঐশীগ্রন্থ পড়লে সে অবশ্যই তাতে ক্রাইস্ট সম্পর্কে ডিসকোর্স এবং এক নতুন আহ্বানের আভাস আবিষ্কার করবে। কেননা ক্রাইস্টই ‘এই বিশ্বে ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা ধনভাণ্ডার, কারণ বিশ্বই হচ্ছে ক্ষেত০। কিন্তু ঐশীগ্রন্থেও লুকানো আছেন তিনি, যেহেতু মানবীয় ভাষায় বলতে গেলে, আগমন অর্থাৎ ক্রাইস্টের আবির্ভাব, ভবিষ্যদ্বাণী করা সেই সব বিষয়ের সমন্বয়ের আগে দুর্বোধ্য ধরণ আর উপকথায় তাৎপর্যমণ্ডিত হয়েছিল। ১১

কিন্তু ক্রাইস্ট ঐশীগ্রন্থে ‘লুকানো’ ছিলেন, এই কথার মানে ছিল যে, ক্রিশ্চানদের তাঁকে খুঁজে পেতে হলে কষ্টকর ব্যাখ্যামূলক প্রয়াস পেতে হবে।

তানাখকে কেবল অ্যালিগোরিয়ায় পরিবর্তনের মাধ্যমেই ক্রিশ্চানরা এর অর্থ বুঝতে পারে, যেখানে ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে’র সকল ঘটনা ও চরিত্র নিউ টেস্টামেন্টের ক্রাইস্টের ধরণে পরিণত হয়েছে। ইভাঞ্জেলিস্টগণ ইতিমধ্যে হিব্রু ঐশীগ্রন্থে জেসাসের ‘ধরণ ও উপকথা’ খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু ফাদারগণ আরও বেশি উচ্চাভিলাষী ছিলেন। ‘পুরোনো কোভেন্যান্টের প্রত্যেক পয়গম্বর, রাষ্ট্রের প্রত্যেক অভ্যুত্থান, প্রত্যেক আইন, প্রত্যেক অর্থনীতি কেবল ক্রাইস্টের দিকেই ইঙ্গিত করে, কেবল তাঁরই ঘোষণা দেয়, কেবল তাঁকেই তুলে ধরে,’ জোরের সাথে বলেছেন বিশপ অভ সিসেরা ইউজবিয়াস (২৬০-৩৪০)। ১২ লোগোস জেসাস জাতির জন্মদাতা আদমের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ছিলেন শাহাদাত বরণকারী আবেলের মাঝে, স্বেচ্ছা আত্মদানে প্রস্তুত ইসাকের মাঝে ছিলেন, আর ছিলেন রোগাক্রান্ত জবের মাঝে।১৩ ক্রিশ্চানরা এতদিন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন মানুষ, ঘটনাপ্রবাহ ও বিভিন্ন ইমেজকে ‘একসূত্রে’ গাঁথার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসমতে ঐশীগ্রন্থের চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরতে নিজস্ব ভিন্ন হোরোয গড়ে তুলছিল। র‍্যাবাইদের মতো বাইবেলিয় লেখকদের ইচ্ছা জানতে আগ্রহী ছিল না তারা, টেক্সটকে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেও দেখতে চায়নি। একটা ভালো ব্যাখ্যা ঐশী অর্থনীতি সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির যোগান দিয়েছে।

অবশ্য সবাই উপমার প্রতি এমনি উৎসাহের অংশীদার ছিল না। অ্যান্টিওকে ব্যাখ্যাকারগণ ঐশীগ্রন্থের আক্ষরিক অর্থের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল খোদ পয়গম্বরগণ আসলে কী শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন সেটা আবিষ্কার করা-পেছনে তাকানোর সুবিধা নিয়ে তাঁদের কথায় কী আবিষ্কার করা যেতে পারে তা নয়। পয়গম্বরগণ প্রায়শই উপমা ও তুলনা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু এই অলঙ্কারিক ভাষা আক্ষরিক অর্থেরই অংশ ছিল-পয়গম্বর ও শ্লোকরচয়িতাগণ যা বলতে চেয়েছিলেন তার বেলায় গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিওকবাসীরা অ্যালেগোরির কোনও প্রয়োজন দেখেনি। চতুৰ্দশ শতাব্দীর শেষের দিকের ধর্মপ্রচারক জন ক্রিসোস্তোম দেখিয়েছেন, বাইবেলের সাধারণ অর্থ থেকেও চমৎকার নৈতিক শিক্ষা লাভ করা সম্ভব। অ্যান্টিওকবাসীরা সকল টিপিক্যাল ব্যাখ্যা বাতিল করে দিতে পারেনি, কারণ ইভাঞ্জেলিস্টরা একে দারুণ নিষ্ঠার সাথে ব্যবহার করছিলেন, কিন্তু পণ্ডিতদের নিউ টেস্টামেন্টের অ্যালেগোরিতেই স্থির থাকার তাগিদ দিয়েছেন, নতুন কিছুর সন্ধানে নিরুৎসাহিত করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ৩৯২ থেকে ৪২৮ পর্যন্ত মপসুয়েস্তি য়ার বিশপ থিওদর সং অভ সংসে কোনও মূল্যই দেখতে পাননি, এটা কেবলই একটা প্রেমসঙ্গীত এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ আরোপ করা গেলেই তাকে পবিত্র টেক্সট হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।

কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ায় সং কেবল অ্যালেগোরিয়ার এমনি সমৃদ্ধ সুযোগ করে দেওয়ার কারণেই দারুণ জনপ্রিয় ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্রিশ্চানরা ফিলোর মতো একই রকম ছন্দময় পদ্ধতিতে সাজানো এমন এক পাঠ কৌশল সৃষ্টি করেছিল যার নাম দিয়েছিল আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা-ইম্মায়ুসের পথে শিষ্যদের অভিজ্ঞতার অনুরূপ অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করার প্রয়াস। র‍্যাবাইদের মতো তারা বাইবেলকে অক্ষম অন্তহীনভাবে নতুন অর্থ নিয়ে হাজির হতে সক্ষয় টেক্সট বিবেচনা করেছে। তারা এটা ভাবেনি যে ঐশীগ্রন্থে তারা এমন কিছু পড়ছে যার অস্তিত্ব নেই, বরং র‍্যাবাইদের সাথে সহমত হয়েছিল যে, ‘সবকিছুই আছে’ তাতে। সবচেয়ে মেধাবী আলেকজান্দ্রিয়ার ব্যাখ্যাকার ছিলেন সেকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দ্রুতপ্রজ লেখক অরিগেন (১৮৫-২৫৪)।” বাইবেলিয় ধারাভাষ্যের পাশাপাশি তিনি হেক্সাপ্লাম (পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রিক অনুবাদের পাশে হিব্রু টেক্সটকে স্থান দেওয়া বাইবেলের একটি সংস্করণ) এবং দুটো বিশাল রচনাঃ ক্রিশ্চান ধর্মের সমালোচনামূলক এক প্যাগান দার্শনিকের সমালোচনা প্রত্যাখ্যানের লক্ষ্যে অ্যাগেইনস্ট সেরসিয়াস ও ক্রিশ্চান মতবাদের সমন্বিত বিবরণ অন ফার্স্ট প্রিন্সিপলসও রচনা করেছিলেন।

অরিগেনের চোখে জেসাস ছিলেন সকল ব্যাখ্যার শুরু ও শেষ :

জেসাস আমাদের কাছে আইনের গোপনীয়তা উন্মোচন করার সময় আইন তুলে ধরেছেন। কারণ আমরা যারা ক্যাথলিক চার্চের, আমরা মোজেসের বিধানকে বাদ দিই না বরং গ্রহণ করি যতক্ষণ তা জেসাস আমাদের কাছে পাঠ করেন। প্রকৃতপক্ষে কেবল তিনি পাঠ করলেই আমরা আইনের সঠিক উপলব্ধি লাভ করতে পারি, এবং আমরা তাঁর বোধ ও উপলব্ধি গ্রহণ করতে সক্ষম।১৫

অরিগেনের বেলায় ইহুদি ঐশীগ্রন্থসমূহ নিউ টেস্টামেন্টের উপর মিদ্রাশ, যেটি নিজেই আবার তানাখের ধারাভাষ্য। অ্যালেগোরি ছাড়া বাইবেল কোনও অর্থই প্রকাশ করে না। আপনি ক্রাইস্টের নির্দেশ: ‘আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও,’ এর অক্ষরিক অর্থ কী করবেন?১৬ কীভাবে একজন ক্রিশ্চান খত্নাবিহীন বালককে হত্যা করার বর্বর নির্দেশ মেনে নিতে পারে?” ট্যাবারন্যাকলস নির্মাণের দীর্ঘ নির্দেশনাসমূহ কোন দিক থেকে ক্রিশ্চানদের সাথে সম্পর্কিত?১৮ বাইবেলিয় লেখকগণ সত্যিই কি ঈশ্বর ‘স্বর্গ উদ্যানে হেঁটেছিলেন’ বোঝাতে চেয়েছেন?” নাকি জোরের সাথে বোঝাতে চেয়েছেন যে ক্রাইস্টের শিষ্যদের কখনওই জুতো পরা উচিত হবে না?” আক্ষরিকভাবে তরজমা করলে ‘বাইবেলকে পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে’ সম্মান করা অসম্ভব না হলেও খুবই কঠিন।২১ ঐশীগ্রন্থ পাঠ মোটেও সহজ কাজ ছিল না–এই বিষয়টি অরিগেন বারবার গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। প্রায়শই ধর্মদ্রোহীরা নিজেদের স্বার্থে টেক্সট পরিবর্তন করে বা খুবই জটিল কোনও অনুচ্ছেদের একেবারেই শাদামাঠা অর্থ প্রদান করে থাকে। অধিকতর সমস্যাসঙ্কুল বা বোধের অতীত বাইবেলিয় কাহিনীতে অনুপ্রেরণা বা উন্নত শিক্ষা লাভ কঠিন ছিল, কিন্তু ঐশীগ্রন্থে যেহেতু লোগোস কথা বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে লাভ শনাক্ত করতে যদি নাও পারি, তবু তা সম্ভব।’২২ তো এমনকি অরিগেন ফারাওয়ের কাছে স্ত্রীকে নিজের বোন বলে ভান করে বিক্রি করার সময় আব্রাহামের সন্দেহজনক আচরণের আলোচনা করেছেন,২৩ তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, সারাহ হলেন সদ্গুণের প্রতীক এবং আব্রাহাম তাকে নিজের কাছে না রেখে বরং ভাগ করে নিতে চেয়েছেন।

একজন আধুনিক পাঠক লক্ষ করবেন, অরিগেন ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যেমন ঐশীগ্রন্থ বিকৃতির অভিযোগ এনেছেন সেই একই অপরাধে অপরাধী তিনিও। রাব্বিনিক মিদ্রাশের মতো তাঁর ব্যাখ্যাসমূহ যেন ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতকারী, লেখকের মনোভাবের বিনিময়ে অর্থের লক্ষ্য অনুসন্ধান। অরিগেন প্রথমে আলেকজান্দ্রিয়ায় ও পরে সিসেরায় ইহুদি মিদ্রাশের মুখোমুখি হয়ে থাকবেন, এখানে তিনি নিজস্ব একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, এক্সোডাসের উপর ব্যাখ্যায় অরিগেন বিশাল ছবি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না-ইসরায়েলিদের দাসত্ব-মুক্তিকে ক্রাইস্টের বয়ে আনা নিষ্কৃতি হিসাবে দেখা-বরং আপাত তাৎপর্যহীন বর্ণনায় ক্রাইস্টের উল্লেখের সন্ধান করেছেন। সকল ক্রিশ্চানকে ‘মিশরের’ অন্ধকার অতিক্রম করতে হবে, জেসাসকে অনুসরণ করতে বিসর্জন দিতে হবে পার্থিব সবকিছু। মিশর থেকে যাত্রার প্রথম ধাপে, ঐশীগ্রন্থ আমাদের বলছে, ইসরায়েলিরা ‘রেমেসেসকে সুক্কোথের জন্যে রেখে এসেছিল। ফিলোর মতো অরিগেন সব সময়ই বিভিন্ন নামের উৎস নিয়ে গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন যে রেমেসেস মানে ‘মথের গুঞ্জন ধ্বনি।’ এরপর তিনি ঐশীগ্রন্থের কিছু ধারাবাহিক উদ্ধৃতি খুঁজে পেয়েছেন যা এই আপাত গুরুত্বহীন বাক্যটির সম্পূর্ণ নতুন অর্থ তুলে ধরেছে। মথ’ শব্দটি তাকে মথ ও ঘুনপোকার কাছে নাজুক পার্থিব সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থেকে জেসাসের সতর্কবাণী মনে করিয়ে দিয়েছে। ২৫ সুতরাং প্রত্যেক ক্রিশ্চানকে ‘রেমেসেস থেকে’ সরে আসতে হবে।

তুমি যদি সেই জায়গায় আসতে চাও যেখানে আমাদের প্রভু আছেন এবং তোমাকে মেঘ স্তম্ভে ২৬ নিয়ে যেতে চাও আর পাহাড় যাতে তোমাকে অনুসরণ করেণ, তোমাকে যা আধ্যাত্মিক খাদ্য ও আধ্যাত্মিক পানীয় এগিয়ে দেয়, কম খেয়ো না। ২৮ সেখানে তোমার ধনরত্ন জমিয়ে রেখো না যেখানে মথ তাকে ধ্বংস করে ফেলবে বা চোরের দল সিঁদ কেটে চুরি করে নিয়ে যাবে। গস্পেলে এই কথাই প্রভু পরিষ্কার করে বলেছেন: যদি সিদ্ধ হইতে ইচ্ছাকর, তবে চলিয়া যাও, তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দারিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে। সুতরাং এর মানে রেমেসেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্রাইস্টকে অনুসরণ করা।

এভাবে ইসরায়েলিদের রেমেসেসে অভিযাত্রা জেসাসের পূর্ণাঙ্গ অঙ্গীকারের দাবির প্রতি দৃষ্টিপাত করে। অরিগেনের পক্ষে ঐশীগ্রন্থ ছিল তেক্সতাস, শব্দের নিবিড় বুনটের কাপড়-যার প্রত্যেকটাই লোগোস জেসাসের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল এবং পাঠককে তাঁকে অনুসরণের নির্দেশ দেয়। অরিগেন এটা বিশ্বাস করেননি যে ব্যাখ্যাসমূহ ব্যক্তিগত মতামত ছিল, কারণ ঈশ্বরই সূত্র রোপন করেছিলেন, তাঁর কাজ ছিল তাদের সমাধান করা ও জেসাসের আবির্ভাবের আগে সম্ভব ছিল না এমনভাবে স্বর্গীয় বাণী তাদের কাছে শ্রবণযোগ্য করে তোলা।

ব্যাখ্যা ব্যাখ্যাকারী ও তাঁর ছাত্রদের কাছে এক্সতাসিস-এর একটা মুহূর্তকে উপস্থিত করত-ইহজাগতিকতা থেকে ‘বাইরে আসা।’ আধুনিক বাইবেলিয় পণ্ডিতগণ কোনও টেক্সটকে গবেষণা জগতের পার্থিব অর্থনীতিতে স্থাপন করতে চান, একে আর পাঁচটা প্রাচীন দলিলের মতোই বিবেচনা করেন।৩২ অরিগেনের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। প্রাথমিক কালের ক্রিশ্চান আধ্যাত্মিকতার মূলে ছিল ‘ব্যক্তিগত দর্শন’ নামে অভিহিত বিষয়টি, কারণ প্রায় সকল প্রাক আধুনিক সংস্কৃতিতেই এটা পাওয়া গেছে। পৌরাণিক আঁচঅনুমান অনুযায়ী স্বর্গীয় বলয়ে প্রত্যেক পার্থিব বাস্তবতার অনুরূপ অনুকৃতি রয়েছে। এটা ছিল আমাদের জীবন কোনওভাবে অসম্পূর্ণ ও বিচ্ছিন্ন, আমরা স্পষ্টভাবে কল্পনা করতে পারি এমন সন্তোষজনক ভাষ্য থেকে আলাদা এমন অসম্পূর্ণ ধারণা প্রকাশ করার একটা প্রয়াস। যেহেতু পৃথিবী ও স্বর্গ সত্তার বিশাল ধারায় পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত, সুতরাং একটা প্রতীক এর অদৃশ্য সূত্র (রেফারেন্ট) থেকে অবিচ্ছেদ্য। ‘প্রতীক’ শব্দটি এসেছে গ্রিক সিম্বুলিয়েন: ‘একসাথে করা’ থেকে। আদি আদর্শ রূপ ও এর পার্থিব অনুকৃতি ককটেলের জিন ও টনিকের মতো অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। একটার স্বাদ নিতে হলে অন্যটিরও স্বাদ নিতে হবে। ক্রিশ্চানরা ইউক্যারিস্টে মদ ও রুটি খাওয়ার সময় এটাই ক্রিশ্চান আচারের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে, তারা এইসব বস্তুর উপস্থাপিত ক্রাইস্টের মুখোমুখি হয়। একইভাবে ঐশীগ্রন্থের সময়-সীমাবদ্ধ শব্দ নিয়ে সংগ্রাম করে তারা সকল মানবীয় উচ্চারণের প্রটোটাইপ লোগোসের মুখোমুখি হয়। এটা অরিগেনের হারমেনেউটিক্সের মূল বিষয় ছিল। ‘ঐশীগ্রন্থের বিষয়বস্তু স্বর্গীয় বস্তুনিচয়ের বিশেষ রহস্য ও ইমেজের বাহ্যিক রূপ,’ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তিনি নিউ টেস্টামেন্ট পাঠ করার সময় অবিরাম ‘সেখানে ধারণ করা অবর্ণনীয় রহস্যের গভীর অস্পষ্টায় বিস্ময়ে অভিভূত’ হয়ে গেছেন, প্রতিটি বাঁকে তিনি ‘হাজার হাজার অনুচ্ছেদ পেয়েছেন যা কোনও জানালার মতো আরও গভীরতর ভাবনার দিকে চালিত করা সংকীর্ণ পথ খুলে দিয়েছে।

কিন্তু অরিগেন বাইবেলের আক্ষরিক অর্থকে অবহেলা করেননি। হেক্সাপ্লার কষ্টকর কাজ একটা নির্ভরযোগ্য টেক্সট প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে তাঁর নিষ্ঠা তুলে ধরে। তিনি হিব্রু শিখেছেন, র‍্যাবাইদের সাথে পরামর্শ করেছেন এবং পবিত্র ভূমির ভূগোল, প্রকৃতি দেখে বিস্মিত হয়েছেন। কিন্তু বাইবেলের অসংখ্য শিক্ষা ও বিবরণের অসন্তোষজনক উপরিগত অর্থ তাঁকে ঐশীগ্রন্থের অতীতে দৃষ্টিপাত করতে বাধ্য করেছিল। ঐশীগ্রন্থের দেহ ও আত্মা ছিল।

আমাদের দেহ আমাদের মন ও ভাবনাকে আকার দেয়। আমাদের যন্ত্রণা দেয় ও অব্যাহতভাবে মরণশীলতার কথা মনে করিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের দৈহিক জীবন স্বয়ংক্রিয় সাধু যোগান দেয়, যা আমরা সঠিকভাবে সাড়া দিলে আমাদের অমর আধাত্মিক প্রকৃতিকে লালন করার পথে পরিচালিত করতে পারে।৩৬ একইভাবে দেহের সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতা-ঐশীগ্রন্থের আক্ষরিক অর্থ- আমাদের এর আত্মার সন্ধানে বাধ্য করে। ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবেই আমাদের মাঝে এই বৈষম্য রোপন করেছেন:

স্বর্গীয় প্রজ্ঞা ঐতিহাসিক অর্থের নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধক খণ্ড ও বাধার ব্যবস্থা রেখেছে…বেশ কিছু অসম্ভাব্যতা ও অসামঞ্জস্যতা রোপন করে, যাতে বিবরণ, যেমন বলা হয়ে থাকে, পাঠকের সামনে একটা বাধা সৃষ্টি করে এবং তাকে সাধারণ অর্থের পথে এগিয়ে যেতে অস্বীকারে প্ররোচিত করে। ৩৭

এই কঠিন অনুচ্ছেদগুলো স্পষ্টতই ‘আমাদের’ সেগুলোর সাধারণ অর্থ থেকে ‘রুদ্ধ ও বাধা দিয়ে’৩৮ ‘আমাদের সংকীর্ণ পায়ে চলা পথের ভেতর দিয়ে এক উচ্চতর ও রাস্তায় নিয়ে আসে। ‘আক্ষরিক অর্থের অসম্ভাব্যতার সাহায্যে’ ঈশ্বর আমাদের ‘অন্তস্থ অর্থের পরীক্ষার দিকে চালিত করেন। ৩৯

আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাকরণ কঠিন ছিল: আমরা যেভাবে আমাদের অবাধ্য সত্তাকে পরিবর্তিত করি ঠিক সেভাবে ঐশীগ্রন্থসমূহকে পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল। বাইবেলিয় ব্যাখ্যার জন্যে ‘যারপরনাই পরিশুদ্ধতা ও সংযম আর…প্রহরার রাত প্রয়োজন’; প্রার্থনা ও সদ্গুণসমন্বিত জীবন ছাড়া এটা অসম্ভব ছিল। এটা কোনও গাণিতিক সমস্যার সমাধানের মতো ছিল না, কারণ এখানে অধিকতর স্বজ্ঞামূলক ভাবনাচিন্তার বিষয় জড়িত। কিন্তু পণ্ডিত অধ্যাবসায়ের সাথে ঐশীগ্রন্থসমূহ ‘উপযুক্ত সম্মান ও মনোযোগের সাথে ভাবলে, এটা নিশ্চিত যে, স্রেফ পাঠের মাধ্যমেই এবং সেগুলোকে মনোযোগের সাথে বিবেচনা করে তার মন ও অনুভূতি এক স্বর্গীয় প্রশ্বাসের স্পর্শ লাভ করবে এবং সে আবিষ্কার করবে যে তার পঠিত শব্দগুলো কোনও মানুষের উচ্চারণ নয়, বরং ঈশ্বরের ভাষা।

ঈশ্বরের এই বোধ ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে অর্জিত হয়। সং অভ সংস- এর ধারাভাষ্যের ভূমিকায় অরিগেন উল্লেখ করেছেন, সলোমনের নামে প্রচলিত তিনটি পুস্তকে-প্রোভার্বস, এক্লেসিয়াস্তেস ও সং অভ সংস-এই যাত্রার বিভিন্ন ধাপ তুলে ধরে। ঐশীগ্রন্থের দেহ, মন ও আত্মা ছিল যা আমাদের মরণশীল প্রকৃতি অতিক্রম করে যায়; এগুলো তিনটি ভিন্ন ইন্দ্রিয়ের স্মারক যার মাধ্যমে ঐশীগ্রন্ত উপলব্ধি করা যেতে পারে। প্রোভার্বস হচ্ছে দেহের পুস্তক। এটা অ্যালেগোরি ছাড়াই উপলব্ধি করা সম্ভব, সুতরাং এটা ঐশীগ্রন্থের আক্ষরিক অর্থ তুলে ধরে, উচ্চতর কোনও কিছুর সন্ধানের আগে ব্যাখ্যাকারকে যার উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হয়; এক্লেসিয়াস্তেস মন ও হৃদয়ের স্বাভাবিক শক্তি অবচেতনের পর্যায়ে কাজ করেছে। পার্থিব বস্তুসমগ্র অর্থহীন ও শূন্য ইঙ্গিত দিয়ে এক্লেসিয়াস্তেস বস্তু জগতে আমাদের সমস্ত আশা স্থাপন করার ব্যর্থতা প্রকাশ করে। সুতরাং এটা ঐশীগ্রন্থের নৈতিক বোধকে জোরাল করেছে, কারণ কোনও অতিপ্রাকৃত দর্শনের প্রয়োজন হয় না এমন যুক্তি ব্যবহার করে আমাদের তা দেখিয়েছে কীভাবে আচরণ করতে হবে। বাইবেল পাঠ করার সময় অধিকাংশ ক্রিশ্চান বিরল ক্ষেত্রে আক্ষরিক ও নৈতিক অর্থের চেয়ে বেশি দূরে অগ্রসর হয় না।

কেবল ঐশীগ্রন্থের উচ্চতর রহস্যে দক্ষতা অর্জনকারী একজন ব্যাখ্যাকার সং অভ সংস সামাল দিতে পারেন, যেটা প্রজ্ঞার সাথে প্রোভার্বস-এর পরে ও এক্লেসিয়াস্তেসের আগে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং আধ্যাত্মিক উপমাগত বোধ তুলে ধরেছে। যেসব ক্রিশ্চান বাইবেলকে একেবারেই অক্ষরিক পদ্ধতিতে পাঠ করে থাকে, সং অভ সংস তাদের কাছে স্রেফ একটা প্রেমের কবিতা। কিন্তু উপমাগত ব্যাখ্যা গভীরতর অর্থ তুলে ধরে: ‘স্বর্গীয় বরের প্রতি কনের ভালোবাসা-অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণীর জন্যে সম্পূর্ণ আত্মার সঙ্গীত।’৪২

বহু কিছুর প্রতিশ্রুতিদানকারী মনে হওয়া পার্থিব ভালোবাসা সব সময় হতাশ করে; কেবল আদিআদর্শ রূপের মাধ্যমেই এটা পূর্ণতা অর্জন করতে পারে: খোদ ভলোবাসা ঈশ্বর। সং স্বর্গাভিমুখে এই আরোহণকে তুলে ধরেছে। অরিগেন সং-কে তিনটি স্তরে ব্যাখ্যা করেছেন। সূচনা পঙক্তি ‘তাঁকে তাঁর মুখের চুম্বন দিয়ে আমাকে চুম্বন দিতে দাও,’-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার সময় আক্ষরিক ঐতিহাসিক অনুভূতি নিয়ে শুরু করেছেন। এটা ছিল বিয়ের গানের সূচনাঃ কনে বরের অপেক্ষা করছে; সে যৌতুক পাঠিয়েছে, কিন্তু এখনও তার সাথে মিলিত হয়নি, কনে তার উপস্থিতি কামনা করছে। কিন্তু উপমাগতভাবে বর ও কনের ইমেজ ঈশ্বর ও চার্চের সম্পর্ক বোঝায়, পল যেমনটা ব্যাখ্যা করেছেন” ও পঙক্তিটি ক্রাইস্টের আবির্ভাবের আগের সময়কালকে প্রতীকায়িত করেছে। ইসরায়েল যৌতুক হিসাবে আইন ও প্রফেটস গ্রহণ করেছে, কিন্তু এখনও অবতাররূপ লোগোসের অপেক্ষা করছে, যিনি তাদের সম্পূর্ণ করবেন। সবশেষে টেক্সটে অবশ্যই ব্যক্তির আত্মার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে যার ‘একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ঈশ্বরের বাণীর সাথে মিলিত হওয়া। আত্মা ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক বিধান, যুক্তি ও স্বাধীন ইচ্ছার যৌতুকের অধিকারী হয়ে গেছে, কিন্তু সেসব তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি, সুতরাং সে সং-এর সূচনাবাক্য দিয়ে প্রার্থনা করছে এই আশায় যে পরিশুদ্ধ ‘খাঁটি ও কুমারী আত্মা স্বয়ং ঈশ্বরের বাণীর আগমনে আলোকিত হয়ে উঠবে।’৪৬ এই পঙক্তির নৈতিক বোধ দেখিয়েছে যে, কনে সকল ক্রিশ্চানের পক্ষে আদর্শ, যাদের অবশ্যই অব্যাহতভাবে তাদের স্বভাবকে অতিক্রম করে ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে নিজেদের শিক্ষা দিতে হবে।

ব্যাখ্যাসমূহ সব সময়ই কর্মে চালিত করেছে। অরিগেনের কাছে এর মানে ছিল ধ্যান (থিওরিয়া)। পাঠককে অবশ্যই ‘সত্যের নীতিমালা গ্রহণে সক্ষম না হওয়া”৭ পর্যন্ত পঙক্তি নিয়ে ধ্যান করতে হবে। এভাবে ঈশ্বরের এক নতুন ধারণা লাভ করবে তারা। অরিগেনের ধারাভাষ্য প্রায়শই সিদ্ধান্তহীন রয়ে গেছে বলে মনে হয়, কারণ তাঁর পাঠকদের নিজেদেরই শেষ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হতো। অরিগেনের ধারাভাষ্য কেবল তাদের সঠিক আধ্যাত্মিক ভঙ্গিতে স্থাপন করতে পারে, তাদের পক্ষে ধ্যান করতে পারবেন না তিনি। প্রলম্বিত থিওরিয়া বাদে তাঁর ব্যাখ্যা সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

তরুণ বয়সে অরিগেন শাহাদতের আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। কিন্তু কন্সতান্তাইনের ধর্মান্তরের পর ক্রিশ্চান ধর্ম রোমান সাম্রাজ্যের বৈধ ধর্মে পরিণত হলে শাহাদত বরণের আর সুযোগ ছিল না, সাধু পরিণত হয়েছিলেন প্রধান ক্রিশ্চান আদর্শ। চতুর্থ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সন্ন্যাসীগণ নিঃসঙ্গ প্রার্থনায় মনোনিবেশ করার জন্যে মিশর ও সিরিয়ার বিভিন্ন মরুভূমিতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এই মহান সন্ন্যাসীদের অন্যতম ছিলেন অ্যান্টনি অভ ইজিপ্ট (২৫০-৩৫০), গস্পেলের সাথে নিজের সম্পদের সমন্বয় সাধন করতে পারছিলেন না তিনি একদিন চার্চে জোর কণ্ঠে জেসাসের আমন্ত্রণ ‘তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে…আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও,’ শুনতে অস্বীকার যাবার কাহিনী শুনতে পান। ৪৮ র‍্যাবাইদের মতো অ্যান্টনি এই ঐশীগ্রন্থকে মিকরা, ‘সমন’ হিসাবে উপলব্ধি করেন। সেদিনই বিকেলে সব সম্পদ দান করে মরুভূমির পথ ধরেন তিনি। সন্ন্যাসীদের বাণীর কর্মী হিসাবে শ্রদ্ধা করা হতো। ৯ মরুভূমির গুহায় সাধুগণ ঐশীগ্রন্থ আবৃত্তি করতেন, টেক্সট মুখস্থ করতেন ও সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতেন। এইসব বাইবেলিয় অনুচ্ছেদ সাধুর অন্তস্থ বিশ্বের অংশে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে সেগুলোর আদি অর্থ এই ব্যক্তিগত তাৎপর্যের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সাধুগণ বিশ্বাস করতেন জেসাস তাদের বাইবেল পড়ার কৌশল বাতলে দিয়েছেন: সারমন অন দ্য মাউন্টে ঐশীগ্রন্থকে এক নতুন অর্থ দান করেছেন তিনি, বাইবেলের কিছু অংশকে অন্যগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। দয়ার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন। সাধুগণ এক নতুন ক্রিশ্চান জীবনধারার অগ্রপথিক ছিলেন, যার জন্যে গস্পেলের ভিন্ন পাঠ প্রয়োজন ছিল। অ্যাপাথেশিয়ার-ভালোবাসার স্বাধীনতা দানকারী ব্যক্তিগত সুখের অভাব- আত্মবিস্মৃতি অর্জন না করা অবধি মুখস্থ করা টেক্সটকে মনের ভেতর অনুরণিত হতে দিতে হতো তাঁদের। একজন আধুনিক পণ্ডিত যেমন ব্যাখ্যা করেছেন:

তারা প্রাচীন কালের শেষ প্রান্তের টানাপোড়নে ভরা বিশ্বে গভীরতর সামাজিক প্রায়োজন মেটাতে ভালোবাসতে ও ভালোবাসা পেতে যথেষ্ট উপেক্ষা করতে পারতেন ও নিজেদের বাইরে আমন্ত্রণ জানাতে পারতেন। ঈশ্বরকে ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসা, যেখানে তাদের স্থাপন করা হয়েছে সেই সৃষ্ট জগৎ-কে ভালোবাসা-এটাই মহান এবং অ্যাপাথিয়ার উপসংহারের আশা করতেন-ভালোবাসায় পর্যবসিত মহান নিস্পৃহতা।৫০

অরিগেন তাঁর সং-এর ধারাভাষ্যে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন: সাধুগণ প্রতিবেশীকে ভালোবাসার প্রতি জোর দিয়েছেন। সম্প্রদায়ে এক সাথে বাস করে নিজেদের জীবনের সিংহাসন থেকে উচ্ছেদ করার প্রয়োজন ছিল তাদের এবং সেখানে অন্যকে বসাতে হয়েছে। সাধুগণ জগৎ থেকে পশ্চাপসরণ করেননিঃ আক্ষরিকভাবেই হাজার হাজার ক্রিশ্চান পরামর্শের জন্যে কাছের শহর ও গ্রাম থেকে তাদের উপর চড়াও হয়েছে। নীরবতায় বাস করার ফলে সাধুরা কী করে শুনতে হয় সেই শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

অ্যান্টনির অন্যতম আন্তরিক ভক্ত ছিলেন ক্রাইস্টের ঐশ্বরিকতা সংক্রান্ত চতুর্থ শতাব্দীর বিতর্কের এক কেন্দ্রিয় ব্যক্তিত্ব আথানাসিয়াস অভ আলেকজান্দ্ৰিয়া (২৯৬-৩৭৩)। এই সময় ক্রিশ্চানিটি জেন্টাইল ধর্মবিশ্বাস হওয়ায় লোকজনের ‘ঈশ্বরের পুত্র বা ‘আত্মা’র মতো ইহুদি পরিভাষা বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। জেসাস কি তাঁর পিতার মতো একইভাবে স্বর্গীয়? পবিত্র আত্মা কি অন্য একজন ঈশ্বর? প্রোভার্বসের প্রজ্ঞার একটি সঙ্গীতের উপর আলোচনায় বিতর্ক কেন্দ্রিভূত হয়েছিল, যার শুরু হয়েছে:৫১ ‘ইয়াহওয়েহ নিজ পথের প্রারম্ভে আমাকে প্রাপ্ত হইয়াছি যেন, তাহার কর্ম্ম সকলের পূর্ব্বে পূর্ব্ববধি।’ এর মানে কি ক্রাইস্ট সামান্য সৃষ্টি ছিলেন, তাই যদি হয়, কেমন করে তিনি স্বর্গীয় হতে পারেন? আথানাসিয়াসের কাছে লেখা এক চিঠিতে আলেকজান্দ্রিয়ার ক্যারিশম্যাটিক প্রেসবিটারিয়ান আরিয়াস জোর দিয়ে বলেন, জেসাস ছিলেন মানবীয় সত্তা, ঈশ্বর যাঁকে স্বর্গীয় মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন যোগাতে ঐশীগ্রন্থের বিশাল টেক্সট তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। আরিয়াস যুক্তি দেখান, জেসাস ঈশ্বরকে ‘পিতা’ ডেকেছেন, এই বিষয়টিই তাঁদের ভেতরকার পার্থক্য তুলে ধরে, কেননা পিতৃত্বের সাথে পূর্বঅস্তিত্ব জড়িত; তিনি গস্পেলের সেইসব অনুচ্ছেদও উদ্ধৃত করেছেন যেখানে ক্রাইস্টের মানবিকতা ও আক্রম্যতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আথানাসিয়াস ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বেছে নিয়েছিলেন: জেসাস ছিলেন পিতা ঈশ্বরের মতো একইভাবে স্বর্গীয়, এই সময়ের সমান বিতর্কিত ধারণা ছিল এটা, আথানাসিয়াস নিজস্ব প্রামাণিক টেক্সট দিয়ে এর পক্ষে সমর্থন দেখিয়েছেন।

বিতর্কের শুরুতে ক্রাইস্টের প্রকৃতি সংক্রান্ত কোনও অর্থডক্স শিক্ষা ছিল না, কেউই জানত না কে সঠিক, আরিয়াস নাকি আথানাসিয়াস। দুইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রবল আলোচনা চলেছে। ঐশীগ্রন্থ থেকে কোনও কিছু প্রমাণ করা অসম্ভব ছিল, কেননা যেকোনও পক্ষকেই সমর্থন করানোর কাজে টেক্সট কাজে লাগানো যেত। কিন্তু গ্রিক ফাদার অভ দ্য চার্চগণ ঐশীগ্রন্থকে ধর্মতত্ত্বের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে দেননি। কাউন্সিল অভ নাইসিয়ায় প্রণীত ক্রিডে আথানাসিয়াস ঈশ্বরের সাথে জেসাসের সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে সম্পূর্ণ ঐশীগ্রন্থবহির্ভূত পরিভাষা ব্যবহার করেছেন: “তিনি ছিলেন হোমুইসিয়ন, পিতার মতো ‘একই উপাদানের’। অন্য ফাদারগণ তাদের ধর্মতত্ত্বকে বাইবেলের বিস্তারিত শিক্ষার ধর্মীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্ৰণয়ন করেছেন, যা মানবীয় সকল কথা ও ধারণাকে অতিক্রম করে যাওয়া ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের কিছুই বলতে পারে না।

কাপাদোসিয়ায় বাসিল অভ সিসারা (৩২৯-৭০) যুক্তি দেখান যে, দুই ধরনের ধর্মীয় শিক্ষা রয়েছে, দুটোই জেসাস থেকে উদ্ভূত: কেরিগমা হচ্ছে চার্চের গণশিক্ষা আর ডগমা অবর্ণনীয় সব কিছু প্রকাশ করে; একে কেবল লিটার্জির প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি বা নীরব ধ্যনে তুলে ধরা যেতে পারে। ফিলোর মতো বাসিল ঈশ্বরের সত্তা (অউসিয়া), যা আমাদের উপলব্ধির অতীতে অবস্থান করে ও ঐশীগন্থে বর্ণিত জগতে তাঁর কর্মকাণ্ড (এনার্জিয়াই)-এর ভেতর পার্থক্য টেনেছেন। ঈশ্বরের আউসা এমনকি বাইবেলেও উল্লেখ করা হয়নি।৫৪ এটা ট্রিনিটির মতবাদের মূলে ছিল, ভাই গ্রেগরি অভ নাইসা (৩৩৫- ৯৫) ও তাঁর বন্ধু গ্রেগরি অভ নাযিয়ানযাসের (৩২৯-৯১)-এর সাথে মিলে প্রণয়ন করেছিলেন তিনি। ঈশ্বরের একক সত্তা রয়েছে যা সব সময়ই আমাদের কাছে দুর্বোধ্য রয়ে যাবে। কিন্তু ঐশীগ্রন্থে ঈশ্বর তিনটি হিপোস্তাসেসের- ‘প্রকাশ’–(ফাদার, লোগোস এবং আত্মা)–মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করেছেন, স্বর্গীয় এনার্জিয়াই, যা ঈশ্বরের অনির্বচনীয় রহস্যকে আমাদের সীমাবদ্ধ বুদ্ধিমত্তার সাথে খাপ খাইয়েছে।

কাপাদোসিয় ফাদারগণ ধ্যানবাদী ছিলেন, ঐশীগ্রন্থের উপর তাদের দৈনন্দিন থিওরিয়া এমন দুয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল যা এমনকি বাইবেলের অনুপ্রাণিত ভাষারও অতীত। ডেনিস দ্য আরোপাগাইত ছদ্মনামে রচনাকারী গ্রিক ফাদারের বেলায়ও এটা সত্য, তাঁর রচনাবলী গ্রিক অর্থডক্স বিশ্বে ঐশীগ্রন্থের মতোই কর্তৃত্বপূর্ণ। তিনি ‘নীরবতার’ অ্যাপোফ্যাটিক ধর্মতত্ত্ব প্রচার করেছেন। ঈশ্বর ঐশীগ্রন্থে তাঁর কিছু পরিমাণ নাম প্রকাশ করেছেন, আমাদের যা বলে যে ঈশ্বর ‘ভালো’, সহানুভূতিময়,’ এবং ‘ন্যায়বিচারক’, কিন্তু এইসব গুণাবলী আসলে ‘পবিত্র অবগুণ্ঠন’ যা এইসব শব্দের অতীত স্বর্গীয় রহস্যকে আড়াল করে রাখে। ক্রিশ্চানরা যখন ঐশীগ্রন্থ শোনে, তাদের তখন অবশ্যই অব্যাহতভাবে মনে রাখতে স্ব যে এইসব মানবীয় পরিভাষা ঈশ্বরের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্যে খুবই সীমিত। সুতরাং ঈশ্বর ‘ভালো’ ও ‘ভালো-নন’; ‘ন্যায়বিচারক’, ও ‘ন্যায়বিচারক নন’। এই পরস্পরবিরোধী পাঠ তাদের ‘সেই অন্ধকারে নিয়ে যাবে যা বুদ্ধির অতীত’৫৬ এবং অনিবচনীয় ঈশ্বরের সত্তায় পৌঁছে দেবে। সিনাই পাহাড়ে নেমে আসা মেঘের গল্প বেশ পছন্দ করতেন ডেনিস: অজ্ঞতার পুরু মেঘে ঢাকা পড়ে যাচ্ছেন মোজেস, কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি, কিন্তু এমন এক জায়গায় ছিলেন যেখানে ঈশ্বর রয়েছেন।

ঐশীগ্রন্থ জেসাসের ঐশ্বরিকতার বিষয়টি ফয়সালা করতে পারেনি। কিন্তু বাইযান্তানিয় ধর্মবিদ ম্যাক্সিমাস দ্য কনফেসর (c. ৫৮০-৬৬২) এমন এক ব্যাখ্যায় পৌঁছেছিলেন যা গ্রিকভাষী ক্রিশ্চানদের পক্ষে মানদণ্ডে পরিণত হয়, কারণ এতে ক্রাইস্ট সম্পর্কিত তাদের অন্তস্থ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছিল। ম্যাক্সিমাস এটা বিশ্বাস করেননি যে আদমের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই লোগোস মানব দেহ ধারণ করেছিলেন, আদম পাপ না করলেও এই অবতারের ঘটনা ঘটত। জেসাসই ছিলেন প্রথম ঈশ্বরপ্রতীম মানুষ, আমরা সবাই তাঁর মতো হতে পারি–এমনকি এই ইহকালেই। বাণীকে রক্তমাংসের মানুষে পরিণত করা হয়েছিল যাতে ‘গোটা মানবজাতি ঈশ্বরে পরিণত হতে পারে, ঈশ্বরে রূপান্তরিত মানুষের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে স্বর্গীয় হতে পারে- কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণ মানুষ, স্বভাবেও, এবং করুণায় কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণ ঈশ্বর।’৫৭

পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার লাতিনভাষী ফাদারগণ আরও বাস্তববাদী ছিলেন। এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে, পশ্চিমে থিওরিয়া-র মানে দাঁড়িয়েছিল যৌক্তিক নির্মাণ আর ডগমা ধর্ম সম্পর্কে বলা সম্ভব সব কিছুকেই বোঝাত। পশ্চিমে এটা ছিল এক ভীতিকর সময়, জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপের বর্বর জাতিগুলোর কাছে পরাস্ত হয়ে চলছিল রোমান সাম্রাজ্য। অন্যতম প্রভাবশালী পাশ্চাত্য ব্যাখ্যাকার ছিলেন জেরোমে (৩৪২-৪২০)। ডালমাশিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি, রোমে সাহিত্য ও রেটোরিকে পড়াশোনা করেন, তারপর আগ্রাসী গোত্রগুলোর হাত থেকে পালিয়ে বেথলহেমে থিতু হওয়ার আগে অ্যান্টিওক ও মিশর ভ্রমণ করেন। বেথেলহেমে তিনি একটা মনেস্টারি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে জেরোমে আলেকজান্দ্রিয়ার অ্যালেগোরিকাল হারমেনেউটিক্সে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু মেধাবী ভাষাবিদ হিসাবে, গ্রিক ও হিব্রু ভাষায় পাণ্ডিত্যের বেলায় তাঁর কালের অসাধারণ ব্যাপার, তাঁর প্রধান অবদান ছিল গোটা বাইবেলকে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা। একে বলা হতো ভালগেত (‘মাতৃভাষা’) এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত তা ইউরোপে প্রমিত হিসাবে টিকে ছিল। তাঁর ভাষায় হেব্রাতিকা ভেরিতাস (‘হিব্রু ভাষায় সত্যি’)-র প্রতি শ্রদ্ধাশীল জেরোমে র‍্যাবাইগণ কর্তৃক অনুশাসন থেকে বাদ দেওয়া অ্যাপোক্রাইফা পুস্তক সমূহ বাদ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সহকর্মী অগাস্তিনের অনুরোধে সেসব অনুবাদে সম্মত হন। টেক্সট নিয়ে কাজ করার ফলে জেরোমে ক্রমবর্ধমানহারে বাইবেলের আক্ষরিক, ঐতিহাসিক উপলব্ধির দিকে তাঁর ব্যাখ্যাকে কেন্দ্রিভূত করতে ঝুঁকে পড়েন।

তাঁর বন্ধু উত্তর আফ্রিকার বিশপ অভ হিপ্পো অগাস্তিন (৩৫৪-৪৩০) রেটোরিকে পড়াশোনা করেছিলেন, তিনিই প্রথম বাইবেলের হতাশ হয়েছিলেন, মহান লাতিন কবি ও অরেটরদের তুলনায় একে নিম্নমানের বোধ হয়েছিল তাঁর। তা সত্ত্বেও এক দীর্ঘ বেদনাদায়ক সংগ্রামের পর তাঁর ক্রিশ্চান ধর্মে দীক্ষা লাভে বাইবেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আধ্যাত্মিক সংকটের মুহূর্তে তিনি পাশের বাড়ির বাগানে এক শিশুকে গানের স্তবক ‘তোলে লেগে’ (তুলে নিয়ে পড়ো’) গাইতে শুনতে পান। তখন তাঁর মনে পড়ে যায় যে, গস্পেল থেকে একটা অংশ পাঠ শুনে মঠচারী জীবন বেছে নিয়েছিলেন অ্যান্টনি। প্রচণ্ড উত্তেজনায় পলের এপিসলের কপি হাতে তুলে নেন তিনি, চোখে পড়া প্রথম শব্দগুলো পাঠ করেন, ‘আইস, রঙ্গরসে ও মত্ততায় নয়, লাম্পট্য ও স্বেচ্ছাচারিতায় নয়, বিবাদে ও ঈর্ষায় নয়, কিন্তু দিবসের উপযুক্ত শিষ্টভাবে চলি। কিন্তু তোমরা যিশু খ্রিস্টকে পরিধান করে, অভিলাষ পূর্ণ করিবার জন্য নিজ মাংসের নিমিত্ত চিন্তা করিও না।’৫৮ অন্যতম প্রথম নথিভুক্ত ‘নবজন্মে’ দীক্ষা লাভের এই ঘটনায়, যা পাশ্চাত্য ক্রিশ্চান ধর্মের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হবে, অগাস্তিনের মনে হলো তাঁর সব সন্দেহ ধুয়ে মুছে গেছে। ‘যেন বিশ্বাসের অটল আলোক রশ্মি আমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছে ও দ্বিধার সমস্ত ছায়া পারিয়ে গেছে। ১৫৯

পরে অগাস্তিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাইবেল নিয়ে তাঁর আগের সমস্যাগুলোর কারণ ছিল অহঙ্কার: যারা নিজেদের প্রতারণা ও আত্ম-গর্ব থেকে মুক্ত করতে পারে কেবল তাদের কাছেই ঐশীগ্রন্থ বোধগম্য হয়ে ওঠে।৬০ আমাদের মানবীয় দুর্বলতার ভাগ নিতেই লোগোস স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন, একইভাবে ঈশ্বর যখন তাঁর বাণী ঐশীগ্রন্থে উন্মেচিত করেন, তাঁকে আমাদের স্তরে নেমে আসতে হয় এবং আমাদের বোধগম্য সময়-সীমিত ইমেজ ব্যবহার করতে হয় তাঁকে।৬১ এই জীবনে আমরা কোনওদিনই পূর্ণ সত্য জানতে পারব না, এমনকি মোজেসও সরাসরি স্বর্গীয় সত্তার দিকে তাকাতে পারেননি।৬২ ভাষা সহজাতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ: আমরা বিরল ক্ষেত্রে অন্যের কাছে নিজের ভাবনা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি, ফলে অন্য লোকের সাথে আমাদের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল হয়ে ওঠে। সুতরাং ঐশীগ্রন্থ নিয়ে আমাদের সংগ্রাম এই কথা মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, মানবীয় ভাষায় স্বর্গীয় ভাষা প্রকাশ করা কঠিন। সুতরাং ঐশীগ্রন্থের অর্থ নিয়ে তিক্ত, ক্রুদ্ধ বিতর্ক হাস্যকর। বাইবেল এমন এক সত্যি তুলে ধরেছে যা প্রতিটি লোকের বোধের অতীত, সুতরাং কেউই শেষ কথা বলতে পারে না। এমনকি মোজেসকেও তিনি কী লিখেছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যে সশরীরে উপস্থিত হতে হয়েছে; কেউ কেউ পেন্টাটিউক সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারেনি, কারণ আমাদের প্রত্যেকে মনের ভেতর কেবল গোটা প্রত্যাদেশের সামান্য অংশই ধরে রাখতে পারি। দয়ামায়াহীন বিতর্কে জড়ানোর বদলে–যেখানে প্রত্যেকেই জোর দিয়ে বলে যে কেবল তার কথাই ঠিক–সেখানে আমাদের অন্তর্দৃষ্টির ঘাটতি সম্পর্কে বিনীত স্বীকারোক্তি আমাদের কাছে টেনে নিতে পারে।

বাইবেল ভালোবাসার কথা বলেছে। মোজেস যা কিছু লিখেছেন তা ‘ভালোবাসার খাতিরেই,’ তো ঐশীগ্রন্থ নিয়ে ঝগড়াবিবাদ বিকৃতি: ‘এইসব বাণী থেকে অসংখ্য অর্থ জানা যায়, তো মোজেস ঠিক কোনটা বোঝাতে চেয়েছিলেন সেটা স্থির করার জন্যে বিধ্বংসী বিতর্কের সাথে ভালোবাসার চেতনাকে আঘাত দিতে এত তাড়াহুড়োর কী আছে-যেখানে ভালোবাসার খাতিরেই মোজেস আমরা যা কিছু স্পষ্ট করার প্রয়াস পাচ্ছি সেসব বলেছিলেন।’৬৪ অগাস্তিনও হিল্লেল ও র‍্যাবাইদের মতো একই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। দয়াই তোরাহর কেন্দ্রিয় নীতি, বাকি সবই ধারাভাষ্য। মোজেস আর যাই লিখে থাকুন, তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল দ্বৈত নির্দেশনা শিক্ষা দেওয়া ঈশ্বরের ভালোবাসা ও প্রতিবেশিকে ভালোবাসা। জেসাসেরও মূলবাণী ছিল এটা। সুতরাং বাইবেলের নামে আমরা অন্যকে অপমান করলে, ‘প্রভুকে মিথ্যাবাদীতে পরিণত করব।’৬৬ ঐশীগ্রন্থ নিয়ে যারা বিবাদে মেতে থাকে তারা অহঙ্কারে পরিপূর্ণ; তারা ‘মোজেসের অর্থ’ জানে না, নিজেদের ভালোবাসে, সেটা সত্যি বলে নয়, বরং এটা তাদের নিজস্ব বলে। সুতরাং ‘কেউ যেন যা লিখিত হয়েছে তা নিয়ে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অহঙ্কারে ভরে না ওঠে,’ নিজের সমাবেশের প্রতি আবেদন রেখেছেন অগাস্তিন। ‘কিন্তু এসো, আমরা আমাদের প্রভু ঈশ্বরকে সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়া আর আপনার মতো আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসি।’৬৮

প্লেটোবাদী হিসাবে অগাস্তিনের পক্ষে আক্ষরিক অর্থের উপরে আধ্যাত্মিক অর্থকে তুলে নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু ইতিহাস সম্পর্কে জোরাল বোধ ছিল তাঁর, ফলে মধ্যপথ বেছে নিতে পেরেছিলেন। কোনও দুর্বোধ্য কাহিনীর মূর্ত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করার বদলে তিনি নৈতিক মান সাংস্কৃতিক শর্তাধীন বোঝাতে চেয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, বহুগামীতা আদিম জনগণের মাঝে ছিল সাধারণ ও গ্রহণযোগ্য। এমনকি আমাদের ভেতর সেরারাও পাপ করেন, তো ডেভিডের ব্যাভিচারের কাহিনীকে উপমায় পরিণত করার কোনও প্রয়োজন নেই, আমাদের সবার প্রতি সতর্কবাণী হিসাবেই একে বাইবেলে জায়গা দেওয়া হয়েছে। ন্যায়ভাবের নিন্দা কেবল রূঢ়ই নয়, বরং তা আত্মতুষ্টি ও আত্ম-প্রশংসায় ভরা, আমাদের ঐশীগ্রন্থ অনুধাবনের পথে অন্যতম বড় বাধা। সুতরাং, ‘আমরা যা পড়ছি তার উপরই ধ্যান করতে হবে, যতক্ষণ না এমন একটা ব্যাখ্যা মিলছে যা দানের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে মনে হয়।’ আবেদন জানিয়েছেন অগাস্তিন। ‘ঐশীগ্রন্থ দয়া ছাড়া আর কোনও শিক্ষা দেয় না, তীব্র প্রলোভন ছাড়া অন্য কোনও কিছুকেই ভর্ৎসনা করে না এবং এভাবে মানুষের মনকে আকৃতি দান করে।

ইরানাস জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, ব্যাখ্যাকারকে অবশ্যই “বিশ্বাসের বিধি’ মেনে চলতে হবে। অগাস্তিনের বেলায় ‘বিশ্বাসের ধর্ম’ মতবাদ ছিল না, বরং ভালোবাসার চেতনা ছিল। মুল লেখক যাই ভেবে থাকুন না কেন, বাইবেলের কোনও অনুচ্ছেদ ভালোবাসার প্রতি অনুকূল না হলে তাকে অবশ্য‍ই মূর্তভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, কারণ দয়াই বাইবেলের শুরু ও শেষ:

সুতরাং যেই স্বর্গীয় ঐশীগ্রন্থ বা এর অংশ বিশেষ বোঝে বলে মনে করে যাতে করে তা ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রতি দ্বিগুন ভালোবাসা সৃষ্টি করে না, সে তা বোঝে না। দয়ার স্বভাব গড়ে তোলার পক্ষে উপকারী শিক্ষা যেই খুঁজে পাক, এমনকি যদি সে লেখক সে জায়গায় কী বলতে চেয়ে থাকতে পারেন না বললেও সে প্রতারিত হয়নি।

ব্যাখ্যা হচ্ছে এমন এক অনুশীলন যা আমাদের দয়ার কঠিন কাজে প্রশিক্ষিত করে তোলে। অস্বস্তিকর টেক্সটে অভ্যাসগতভাবে দয়ার ব্যাখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন জীবনে একটা কিছু করা শিখতে পারি। অন্য ক্রিশ্চান ব্যাখ্যাকারদের মতো অগাস্তিন বিশ্বাস করতেন, জেসাসই বাইবেলের মূল। ‘আমরা যখন শ্লোক, প্রফেটস এবং আইন পাঠ শুনি,’ এক সারমনে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি, ‘আমাদের সামগ্রিক উদ্দেশ্য থাকে সেখানে ক্রাইস্টকে দেখা, সেখানে ক্রাইস্টকে উপলব্ধি করা।৭২ কিন্তু ঐশীগ্রন্থে তাঁর পাওয়া জেসাস কখনওই ঐতিহাসিক জেসাস ছিলেন না, বরং সম্পূর্ণ ক্রাইস্ট, যিনি, সেইন্ট পল যেমন শিক্ষা দিয়েছিলেন, মানবজাতি থেকে অবিচ্ছেদ্য।৭৩ ঐশীগ্রন্থে জেসাসকে পাওয়ার পর ক্রিশ্চানকে অবশ্যই জগতে ফিরে আসতে হবে এবং সমাজের প্রতি প্রেমময় সেবার মাধ্যমে তাঁকে অনুসন্ধান করতে হবে।

অগাস্তিন ভাষাবিদ ছিলেন না। হিব্রু জানতেন না তিনি, ইহুদি মিদ্রাশের দেখাও পাননি, কিন্তু হিল্লেল ও আকিবার মতো একই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। ঘৃণা ও বিরোধ জন্মদানকারী ঐশীগ্রন্থের যেকোনও ব্যাখ্যা অবৈধ, সব ব্যাখ্যাকারকেই অবশ্যই দয়ার নীতিতে পরিচালিত হতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *