৩৬. ফিরআউনের ধ্বংসোত্তর যুগে বনী ইসরাঈলের অবস্থা

ফিরআউনের ধ্বংসোত্তর যুগে বনী ইসরাঈলের অবস্থা

আল্লাহ তা’আলার বাণী :

সুতরাং আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্ৰাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকারী করি; এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হল। যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি। আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দেই; তারপর তারা প্রতিমাপূজায় রত এক সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হয়। তারা বলল, হে মূসা! তাদের দেবতার মত আমাদের জন্যও একটি দেবতা গড়ে দাও; সে বলল, তোমরা তো এক মুর্থ সম্প্রদায়। এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা যা করছে তাও অমূলক। সে আবারো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ খুঁজব অথচ তিনি তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? স্মরণ করা, আমি তোমাদেরকে ফিরআউনের অনুসারীদের হাত হতে উদ্ধার করেছি, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত।

WLS JR

তারা তোমাদের পুত্ৰ সন্তানকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের এক মহাপরীক্ষা। (সূরা আ’রাফ : ১৩৬ – ১৪১)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা দিচ্ছেন যে, কিভাবে তিনি ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং কিভাবে তাদের ইজ্জত-সম্মান ভুলুষ্ঠিত করেছিলেন। আর তাদের মাল-সম্পদ আল্লাহ তা’আলা কেমনভাবে ধ্বংস করে বনী ইসরাঈলকে তাদের সমস্ত ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলেন।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন 4 كذلك وأورثتاها بُنِئی اشرُ اپُشل ‘এরূপই ঘটেছিল এবং বনী-ইসরাঈলকে করেছিলাম। এ সমুদয়ের অধিকারী।’ (সূরা শু’আরা : ৫৯)

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

. আমি ইচ্ছে করেছিলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে; তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে ও উত্তরাধিকারী করতে। (সূরা কাসাস : ৫)

আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :

যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণ প্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হল, যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি। (সূরা আ’রাফ : ১৩৭)

আল্লাহ তা’আলা ফিরআউন ও তার গোষ্ঠীর সকলকে ধ্বংস করে দিলেন। দুনিয়ায় বিরাজমান তাদের মহা সম্মান ঐতিহ্য তিনি বিনষ্ট করে দিলেন। তাদের রাজা, আমীর-উমারা ও সৈন্য-সামন্ত ধ্বংস হয়ে গেল। মিসর দেশে সাধারণ প্ৰজাবৰ্গ ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট রইল না। ইব্‌ন আবদুল হাকাম ‘মিসরের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ঐদিন থেকে মিসরের স্ত্রী লোকেরা পুরুষদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিল, কেননা আমীর-উমারাদের স্ত্রীরা তাদের চেয়ে নিম্ন শ্রেণীর সাধারণ লোকদেরকে বিয়ে করতে হয়েছিল। তাই তাদের স্বামীদের উপর স্বভাবতই তাদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠি হয়। এ প্রথা মিসরে আজ পর্যন্ত চলে আসছে।

কিতাবীদের মতে, বনী ইসরাঈলকে যে মাসে মিসর ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে মাসকেই আল্লাহ তা’আলা তাদের বছরের প্রথম মাস বলে নির্ধারণ করে দেন। তাদেরকে হুকুম দেওয়া হয় যে, তাদের প্রতিটি পরিবার যেন একটি মেষশাবক। যবোহ করে। যদি প্রতিটি পরিবার একটি করে মেষশাবক সংগ্ৰহ করতে না পারে তাহলে পড়াশীর সাথে অংশীদার হয়ে তা

করবে। যবোহ করার পর মেষশাবকের রক্ত তাদের ঘরের দরজার চৌকাটে ছিটিয়ে দিতে হবে, যাতে তাদের ঘরগুলো চিহ্নিত হয়ে থাকে। তারা এটাকে রান্না করে খেতে পারবে না। তবে হ্যা, মেষশাবকের মাথা, পায়া ও পেট ভুনা করে খেতে পারবে। তারা মেষশাবকের কিছুই অবশিষ্ট রাখবে না এবং ঘরের বাইরেও ফেলতে পারবে না, তারা সাতদিন রুটি দিয়ে নাশতা করবে। সাত দিনের শুরু হবে তাদের বছরের প্রথম মাসের ১৪ তারিখ হতে। আর এটা ছিল বসন্তকাল। যখন তারা খানা খাবে তাদের কোমর কোমরবন্দ দ্বারা বাধা থাকবে, পায়ে মুজা

খাবার বাকি থাকলে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে; এটাই তাদের ও পরবর্তীদের জন্যে ঈদ বা পর্বের দিন রূপে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই নিয়ম যতদিন বলবৎ ছিল তাওরাতের বিধান ততদিন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। তাওরাতের বিধান যখন বাতিল হয়ে যায়, তখন এরূপ নিয়মও রহিত হয়ে যায়। আর পরবর্তীতে এরূপ নিয়ম প্রকৃত পক্ষে রহিত হয়ে গিয়েছিল।

কিতাবীরা আরো বলে থাকেন, ফিরআউনের ধ্বংসের পূর্ব রাতে আল্লাহ তা’আলা। কিবতীদের সকল নবজাতক শিশু ও নবজাতক প্ৰাণীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যাতে তারা বনী ইসরাঈলের পিছু ধাওয়া থেকে বিরত থাকে। দুপুরের সময় বনী ইসরাঈল বের হয়ে পড়ল। মিসরের অধিবাসিগণ তখন তাদের নবজাতক সন্তান ও পশুপালের শোকে অভিভূত ছিল। এমন কোন পরিবার ছিল না, যারা এরূপ শোকে শোকাহত ছিল না। অন্যদিকে মূসা (আ)-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ আসার সাথে সাথে বনী ইসরাঈলরা অতি দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে পড়ল। এমনকি তারা নিজেদের আটার খামিরও তৈরি করে সারেনি, তাদের পাথেয়াদি চাদরে জড়িয়ে এগুলো কাধে ঝুলিয়ে নিল। তারা মিসরবাসীদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ধারস্বরূপ নিয়েছিল। তারা যখন মিসর থেকে বের হয়, তখন স্ত্রীলোক ব্যতীত তাদের সংখ্যা ছিল প্ৰায় ৬ লাখ, তাদের সাথে ছিল তাদের পশুপাল। আর তাদের মিসরে অবস্থানের মেয়াদ ছিল চারশ ত্ৰিশ বছর। এটা তাদের কিতাবের কথা। ঐ বছরটিকে তারা নিস্কৃতির বছর (৫.১। র ৭.) আর তাদের ঐ ঈদকে ‘নিকৃতির ঈদ’ বলে অভিহিত করে। তাদের আরো দুটি ঈদ ছিল—ঈদুল ফাতির ও ঈদুল হামলা। ঈদুল হামল ছিল বছরের প্রথম দিন। এই তিন ঈদ তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তাদের কিতাবে এগুলোর ऐझाथ छिन।

তারা যখন মিসর থেকে বের হয়ে পড়ল তখন তারা তাদের সাথে নিয়েছিল ইউসুফ (আ)-এর কফিন এবং তারা সূফ নদীর রাস্তা ধরে চলছিল। তারা দিনের বেলায় ভ্ৰমণ করত; মেঘ তাদের সামনে সামনে ভ্ৰমণ করত। মেঘের মধ্যে ছিল নূরের স্তম্ভ এবং রাতে তাদের সামনে ছিল আগুনের স্তম্ভ। এ পথ ধরে তারা সমুদ্রের উপকূলে গিয়ে উপস্থিত হল। সেখানে তারা পৌছতে না পৌছতেই ফিরআউন ও তার মিসরীয় সৈন্যদল তাদের নিকটে পৌঁছে গেল। বনী ইসরাঈলরা তখন সমুদ্রের কিনারায় অবতরণ করেছিল। তাদের অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়ল। এমনকি তাদের কেউ কেউ বলতে লাগল, এরূপ প্রান্তরে এসে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে মিসরের হীনতম জীবন যাপনই বরং উত্তম ছিল। তাদের উদ্দেশে মূসা (আ) বললেন, ‘ভয় করো না’। কেননা, ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনী এর পর আর তাদের শহরে ফিরে যেতে

পারবে না। কিতাবীরা আরও বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন সমুদ্রে নিজ লাঠি দ্বারা আঘাত করে সমুদ্র বিভক্ত করে দেন-যাতে তারা সমুদ্রে প্রবেশ করে ও শুকনো পথ পায়। দুই দিকে পানি সরে গিয়ে দুই পাহাড়ের আকার ধারণ করল; আর মাঝখানে শুকনো পথ বেরিয়ে আসে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা তখন গরম দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত করে দেন। তখন বনী ইসরাঈলরা সমুদ্র পার হয়ে গেল। আর ফিরআউন তার সেনাবাহিনীসহ বনী ইসরাঈলকে অনুসরণ করল। যখন সে সমুদ্রের মধ্যভাগে পীেছল, তখন আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাঁর লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত করেন। ফলে পানি পূর্বের আকার ধারণ করল। তবে কিতাবীদের মতে, এ ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের বেলায় এবং সমুদ্র তাদের উপর স্থির হয়েছিল। সকাল বেলায়। এটা তাদের বোঝার ভুল এবং এটা অনুবাদ বিভ্রাটের কারণে হয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই অধিকতর জ্ঞাত। তারা আরো বলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মারলেন, তখন মূসা (আ) ও বনী ইসরাঈল প্ৰতিপালকের উদেশে নিম্নরূপ তাসবীহ পাঠ করলেন ৪

و نبذ فرسانها فى البحر المنيع المحمود . অর্থাৎ—’সেই জ্যোতির্ময় প্রতিপালকের তাসবীহ পাঠ করছি, যিনি সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছেন এবং অশ্বারোহীদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছেন, যিনি উত্তম প্রতিরোধকারী ও প্ৰশংসিত।’ এটা ছিল একটি দীর্ঘ তাসবীহ। তারা আরো বলেন, হারূনের বোন নাবীয়াহ মারিয়াম নিজ হাতে একটি দফ* ধারণ করেছিলেন এবং অন্যান্য স্ত্রীলোক তার অনুসরণ

করেছিল, সকলেই দফা ও তবলা নিয়ে পথে বের হলো, মারিয়াম তাদের জন্যে সুর করে গাইছিলেন ৪

فسبحان الرب القهار الذی قهر الخیول و رکبانها القاء فی البحر .

‘পরাক্রমশালী পবিত্র সেই প্রতিপালক যিনি ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে প্রতিহত করেছেন।’ এরূপ বর্ণনা তাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এরূপ বর্ণনা সম্ভবত, মুহাম্মদ ইব্‌ন কা’ব আল কুরায়ী (র) থেকে নেয়া হয়েছে, যিনি কুরআনের আয়াত 5;34 এ.41 , এর ব্যাখ্যায় বলতেন যে, ইমরানের কন্যা মারিয়াম, ঈসা (আ)-এর মা হচ্ছেন মূসা (আ) ও হারূন (আ.)-এর বোন। তার বর্ণনাটি যে অমূলক, তাফসীরে তা আমরা বর্ণনা করেছি। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। কেননা, কেউ এরূপ মত পোষণ করেননি। বরং প্রত্যেক তাফসীরকার এটার বিরোধিতা করেছেন। যদি ধরে নেয়া হয় যে, এরূপ হতে পারে তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে এরূপ : মূসা (আ) ও হারূন (আ.)-এর বোন মারিয়াম বিনত ইমরান এবং ঈসা (আঃ)-এর মা মারিয়াম বিনত ইমরানের মধ্যে নাম, পিতার নাম ও ভাইয়ের নামের মধ্যে মিল রয়েছে। যেমন- একদা মুগীরা ইব্‌ন শু’বা (রা) সাহাবীকে নাজরানের অধিবাসীরা 6 334. এ.&। এ- আয়াতাংশের তাফসীর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিল। তিনি জানতেন

১. দফা এমন একটি বাদ্যযন্ত্র যার এক দিকে চামড়া লাগানো থাকে।

JኃX@

না তাদেরকে কি বলবেন। তাই তিনি রাসূল (সা)-কে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন, জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে বললেন, তুমি কি জান না তারা আম্বিয়ায়েকিরামের নামের সাথে মিল রেখে নামকরণ করতেন? ইমাম মুসলিম (র) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

আমীরের স্ত্রীকে আমীরাহ বলা হয়ে থাকে, যদিও তাদের বাদশাহী কিংবা প্রশাসনে কোন হাত নেই। নবী পরিবারের সদস্যা হিসাবে তাকে নাবিয়াহ বলা হয়েছে। এটি রূপকভাবে বলা হয়েছে। সত্যি সত্যি তিনি নবী ছিলেন না এবং তার কাছে আল্লাহ্ তা’আলার ওহী আসত না। আর মহা খুশির দিন ঈদে তাঁর দফা বাজানো হচ্ছে। এ কথার প্রমাণ যে, ঈদে দফা বাজানো আমাদের পূর্বে তাদের শরীয়তেও বৈধ ছিল। এমনকি এটা আমাদের শরীয়তেও মেয়েদের জন্য ঈদের দিনে বৈধ। এ প্রসঙ্গে নিম্নে বর্ণিত হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য। মিনার দিনসমূহে তথা কুরবানীর ঈদের সময়ে দুটি বালিকা আয়েশা সিদীকা (রা)-এর কাছে দফা বাজাচ্ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে ছিলেন, হুযুরের চেহারা ছিল দেয়ালের দিকে। যখন আবু বকর (রা) ঘরে ঢুকলেন তখন তাদেরকে ধমক দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আবু বকর! তাদেরকে এটা করতে দাও। কেননা, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যেই রয়েছে। উৎসবের দিন এবং এটা আমাদের উৎসবের দিন। অনুরূপভাবে বিয়ে-শাদীর মজলিসে এবং প্রবাসীকে সংবর্ধনা জানানোর ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের দফা বাজানো জায়েয আছে-যা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাদিতে বর্ণিত রয়েছে।

কিতাবিগণ আরো বলেন যে, বনী ইসরাঈলরা যখন সমুদ্র অতিক্রম করল এবং সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করল। তখন তারা একটি স্থানে তিনদিন অবস্থান করে। সেখানে পানি ছিল না। তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এ নিয়ে নানারূপ সমালোচনা করে। তখন তারা লবণাক্ত বিস্বাদ পানি খুঁজে পেল, যা পান করার উপযোগী ছিল না। তখন আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি একটি কাঠের টুকরো পানির উপর রেখে দিলেন। তখন তা মিঠা পানিতে পরিণত হল এবং পানকারীদের জন্যে উপাদেয় হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-কে ফরজ, সুন্নাত ইত্যাদি শিক্ষা দান করলেন এবং প্রচুর নসীহত প্রদান করলেন।

মহাপরাক্রমশালী ও আপনি কিতাবের রক্ষণাবেক্ষণকারী আল্লাহ তা’আলা তার কালামে ইরশাদ করেন :

‘আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দেই। তারপর তারা প্রতিমা পূজায় রত এক সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হয়। তারা বলল, ‘হে মূসা’! তাদের দেবতার মত আমাদের জন্যেও একটি দেবতা গড়ে দাও। সে বলল, তোমরা তো এক মূর্থ সম্প্রদায়; এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তাতো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা যা করেছে তাও অমূলক।’ (৭ আ’রাফ : Svoby-SV):)

তারা এরূপ মূর্থিতা ও পথভ্রষ্টতার কথা মূসা (আ)-এর কাছে আরয করছিল। অথচ তারা আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাদি ও কুদরত প্ৰত্যক্ষ করছিল যা প্রমাণ করে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলার রাসূল যা কিছু নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা যথার্থ। তারা এমন একটি সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো, যারা মূর্তি পূজায় রত ছিল। কেউ কেউ বলেন, এই মূর্তিগুলো ছিল গরুর আকৃতির। তারা তাদেরকে প্রশ্ন করেছিল যে, কেন তারা এগুলোর পূজা করে? তখন তারা বলেছিল যে, এগুলো তাদের উপকার ও অপকার সাধন করে থাকে এবং প্রয়োজনে তাদের কাছেই উপজীবিকা চাওয়া হয়। বনী ইসরাঈলের কিছু মুর্থ লোক তাদের কথায় বিশ্বাস করল। তখন এই মুখরা তাদের নবী মূসা (আ)-এর কাছে আরয করল যে, তিনি যেন তাদের জন্যেও দেব-দেবী গড়ে দেন। যেমন ঐসব লোকের দেব-দেবী রয়েছে।

মূসা (আঃ) তাদেরকে প্রতিউত্তরে বললেন, প্রতিমা পূজাকারিগণ নির্বোধ এবং তারা হিদায়াতের পথে পরিচালিত নয়। আর এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা যা করেছে তাও অমূলক। তারপর মূসা (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ তা’আলার নিয়মিতরাজি এবং সমকালীন বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে তাদেরকে জ্ঞানে, শরীয়তের এবং তাদের মধ্য থেকে রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। তিনি তাদেরকে আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে, মহাশক্তির অধিকারী ফিরআউনের কবল থেকে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে উদ্ধার করেছেন এবং ফিরাউনকে, তাদের সম্মুখেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাছাড়া ফিরআউন ও তার ঘনিষ্ঠ অনুচরগণ যেসব সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা নিজেদের জন্যে সঞ্চিত ও সংরক্ষিত করে রেখেছিল ও সুরম্য প্রাসাদ গড়েছিল, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সে সবের উত্তরাধিকারী করেছেন। তিনি তাদের কাছে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন যে, এক লা-শরীফ আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। কেননা তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও মহাপরাক্রমশালী। তবে বনী ইসরাঈলের সকলেই তাদের জন্যে দেব-দেবী গড়ে দেবার দরখাস্ত করেনি। বরং কিছু সংখ্যক মূর্থ ও নির্বোধি লোক এরূপ করেছিল। তাই আয়াতাংশ : ৩1:14, 24, 1636.46–এ (১৭ বা সম্প্রদায় বলতে তাদের সকল লোককে নয়, কিছু সংখ্যককে বুঝানো হয়েছে। যেমন সূরায়ে কাহাফের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

অর্থাৎ,-’সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্রকরণ এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না এবং তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবে, তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হবেই। অথচ তোমরা মনে করতে. যে, তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত ক্ষণে আমি তোমাদেরকে

উপস্থিত করব না।’ (সূরা কাহাফ : ৪৭-৪৮)

উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘অথচ তোমরা মনে করতে’ দ্বারা তাদের সকলকে বুঝানো হয়নি। বরং কতক সংখ্যককে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আহমদ (র)এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আবু ওয়াকিদ

ՆX Գ

লায়সী (রা) বলেন, হুনাইন যুদ্ধের সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে বের হলাম। যখন আমরা একটি কুল গাছের কাছে উপস্থিত হলাম তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! কাফিরদের যেরূপ তরবারি রাখার জায়গা রয়েছে, আমাদের সেরূপ তরবারি রাখার জায়গার ব্যবস্থা করে দিন। কাফিররা তাদের তরবারি কুল গাছে ঝুলিয়ে রাখে ও তার চারপাশে ঘিরে বসে। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন (আশ্চর্যান্বিত হয়ে) বললেনঃ আল্লাহু আকবার! এবং বললেন এটা হচ্ছে ঠিক তেমনি, যেমনটি বনী-ইসরাঈলরা মূসা (আ)-কে বলেছিল : (অর্থ {…! (K J.9) —’ব 4:14, অর্থাৎ— ‘হে মূস)! তাদের দেবতাদের মত আমাদের জন্যেও একটি দেবতা গড়ে Կiv3 তোমরা তো তোমাদের পূর্ববতীদের রীতিনীতিই অনুসরণ করছ। ইমাম নাসাঈ (র) ५£न्म९ তিরমিয়ী (র) ও ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী (র) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। ইব্‌ন জারীর (র) আবু ওয়াকিদ আল লাইন্সী (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবায়ে কিরাম (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে খায়বারের উদ্দেশে মক্কা ত্যাগ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, কাফিরদের একটি কুলগাছ ছিল, তারা এটার কাছে অবস্থান করত এবং তাদের হাতিয়ার এটার সাথে ঝুলিয়ে রাখত। এ গাছটাকে বলা হত ‘যাতু আনওয়াত।’ বর্ণনাকারী বলেন, একটি বড় সবুজ রংয়ের কুল গাছের কাছে পৌঁছে আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্যেও একটি যাতু আনওয়াত-এর ব্যবস্থা করুন, যেমনটি কাফিরদের রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন : যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তোমরা এরূপ কথা বললে, যেমন মূসা (আ)-এর সম্প্রদায় মূসা (আ)-কে বলেছিল, আমাদের জন্য এ সম্প্রদায়ের দেবতাদের মত একটি দেবতা গড়ে দাও। সে বলল, তোমরা তো এক মূর্থ সম্প্রদায়। এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা যা করছে তাও অমূলক।’ (সূরা আরাফ : ১৩৮-১৩৯)

বস্তৃত মূসা (আঃ) যখন মিসর ত্যাগ করে বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে সেখানে পৌছলেন, তখন সেখানে হায়সানী, ফাযারী ও কানআনী ইত্যাদি গোত্র সম্বলিত একটি দুর্দান্ত জাতিকে বসবাসরত দেখতে পান। মূসা (আঃ) তখন বনী ইসরাঈলকে শহরে প্রবেশ করার এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বিতাড়িত করতে হুকুম দিলেন। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ইবরাহীম (আ) কিংবা মূসা (আ)-এর মাধ্যমে এই শহরটি বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা মূসা (আ)-এর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করল এবং যুদ্ধ থেকে বিরত রইল। তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভীতিগ্ৰস্ত করলেন এবং তীহ প্ৰান্তরে নিক্ষেপ করেন, যেখানে তারা সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত উদ্রান্তের মত ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে থাকেন।

যেমন আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন :

স্মরণ কর, মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল- হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর; যখন তিনি তোমাদের মধ্য থেকে নবী করেছিলেন ও তোমাদেরকে রাজাধিপতি করেছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাউকেও যা তিনি দেননি তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার সম্প্রদায়!! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করবে না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তারা বলল, হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে এবং তারা সে স্থান থেকে বের না। হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করব না; তারা সেই স্থান থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা প্রবেশ করব। যারা ভয় করছিল তাদের মধ্যে দু’জন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন তারা বলল, তোমরা তাদের মুকাবিলা করে দরজায় প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে। আর তোমরা মু’মিন হলে আল্লাহর উপরই নির্ভর কর। তারা বলল, হে মূসা’! তারা যতদিন সেখানে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবই না। সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ করা; আমরা এখানেই বসে থাকবো। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ব্যতীত অপর কারও উপর আমার আধিপত্য নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও। আল্লাহ বললেন, তবে এটা চল্লিশ বছর তাদের জন্য নিষিদ্ধ রইল, তারা পৃথিবীতে উদভ্ৰান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে, সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করবে না। (সূরা মায়িদা : ২০-২৬)

এখানে আল্লাহর নবী মূসা (আ) বনী ইসরাঈলের উপর আল্লাহ তা’আলা যে অনুগ্রহ করেছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নিয়ামতসমূহ দান করে অনুগ্রহ করেছিলেন। তাই আল্লাহর নবী তাদেরকে

তিনি বললেন, :

অর্থাৎ— ‘হে আমার সম্প্রদায়! পবিত্র ভূমিতে তোমরা প্রবেশ কর আর এটা তোমাদের প্ৰতিপালক তোমাদের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে না এবং দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকবে না। যদি পশ্চাদপসরণ কর ও বিরত থাক লাভের পর ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে এবং পরিপূর্ণতা অর্জনের পর অপরিপূর্ণতার শিকার হবে।

সেখানে রয়েছে একটি দুর্ধর্ষ, দুৰ্দান্ত ও কাফির সম্প্রদায়। তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলতে লাগল :

وتاً لن تَدخُلها حتى يلحزجؤا يمثها فيث يخولجؤا كاكا داخثون. অর্থাৎ— যতক্ষণ না ঐ সম্প্রদায়টি সেখান থেকে বের হয়ে যায় আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। যখন তারা বের হয়ে যাবে আমরা সেখানে প্ৰবেশ করব, অথচ তারা ফিরআউনের ধ্বংস ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে। আর সে ছিল এদের তুলনায় অধিকতর দুর্দান্ত, অধিকতর যুদ্ধ-কুশলী এবং সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে প্রবলতর। এ থেকে বোঝা যায় যে, তারা তাদের এরূপ উক্তির ফলে ভৎসনার যোগ্য এবং খোদাদ্রোহী হতভাগ্য, দুর্দান্ত শক্ৰদের মুকাবিলা থেকে বিরত থেকে লাঞ্ছনা ও নিন্দার যোগ্য।

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বহু তাফসীরকার বিভিন্ন ধরনের কল্প-কাহিনী ও বিবেকের কাছে অগ্রহণীয় এবং বিশুদ্ধ বর্ণনা বিবর্জিত তথ্যাদি পেশ করেছেন। যেমন কেউ কেউ বলেছেন, বনী ইসরাঈলের প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত সম্প্রদায়ের লোকজন বিরাট দেহের অধিকারী ও ভীষণ আকৃতির ছিল। তারা এরূপও বৰ্ণনা করেছেন যে, বনী ইসরাঈলের দূতরা যখন তাদের কাছে পীেছল, তখন সে দুদন্তি সম্প্রদায়ের দূতদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তাদের সাথে সাক্ষাত করল এবং তাদেরকে একজন একজন করে পাকড়াও করে আস্তিনের মধ্যে ও পায়জামার ফিতার সাথে জড়াতে লাগল, দূতরা সংখ্যায় ছিল বারজন। লোকটি তাদেরকে তাদের বাদশাহর সম্মুখে ফেলল। বাদশাহ বলল, এগুলো কি? তারা যে আদম সন্তান সে চিনতেই পারল না।

এসব কল্প-কাহিনী ভিত্তিহীন। এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, বাদশাহ তাদের ফেরৎ যাওয়ার সময় তাদের সাথে কিছু আঙ্গুর দিয়েছিল। প্রতিটি আঙ্গুর একজন লোকের জন্যে যথেষ্ট ছিল। তাদের সাথে আরো কিছু ফলও সে দিয়েছিল, যাতে তারা তাদের দেহের আকার-আকৃতি সম্বন্ধে ধারণা করতে পারে। এই বর্ণনাটিও বিশুদ্ধ নয়। এ প্রসঙ্গে তারা আরো বর্ণনা করেছেন যে, দুর্ধর্ষ ব্যক্তিদের মধ্য হতে উক্ত ইব্‌ন আনাক নামী এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলকে ধ্বংস করার জন্যে বনী ইসরাঈলের দিকে এগিয়ে আসল। তার উচ্চতা ছিল ৩৩৩৩৪ হাত। বাগাবী প্রমুখ তাফসীরকারগণ এরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তা শুদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস :

الان . অর্থাৎ— আল্লাহ আদমকে ষাট হাত উচ্চতা বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেন তারপর ক্রমে ক্ৰমে কমতে কমতে তা এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে— এর ব্যাখ্যা বর্ণনা প্রসঙ্গে তা বিস্তারিত আলোচনা

ՆՀO

ও তা উপড়িয়ে নিয়ে আসল এবং মূসা (আ)-এর সৈন্য-সামন্তের উপর রেখে দেবার মনস্থ করল, এমন সময় একটি পাখি আসল ও পাথরের পাহাড়টিকে ঠোকর দিল এবং তা ছিদ্র করে ফেলল। ফলে উজের গলায় তা বেড়ীর মত বসে গেল। তখন মূসা (আ) তার দিকে অগ্রসর হয়ে লাফ দিয়ে ১০ হাত উপরে উঠলেন। তার উচ্চতা ছিল ১০ হাত। তখন মূসা (আঃ)-এর সাথে তার লাঠিটি ছিল। আর লাঠিটির উচ্চতাও ছিল ১০ হাত। মূসা (আ)-এর লাঠি তার পায়ের গিটের কাছে পৌছল এবং মূসা (আ) তাকে লাঠি দ্বারা বধ করলেন। উক্ত বর্ণনাটি আওফ আল-বাকালী (র) থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইব্‌ন জারীর (র) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনার সনদের বিশুদ্ধতায় মতবিরোধ রয়েছে। এ ছাড়াও এগুলো সবই হচ্ছে ইসরাঈলী বৰ্ণনা। এর সব বর্ণনা বনী ইসরাঈলের মূর্খদের রচিত। এসব মিথ্যা বর্ণনার সংখ্যা এত অধিক যে, এগুলোর মধ্যে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। এগুলোকে সত্য বলে মেনে নিলে বনী ইসরাঈলকে যুদ্ধে যোগদান না করার কিংবা যুদ্ধ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচনা করতে হয়। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা। তাদেরকে যুদ্ধ হতে বিরত থাকার জন্যে শান্তি প্ৰদান করেছেন, জিহাদ না করার জন্যে এবং

জীবন যাপন করার শাস্তি দিয়েছেন। দু’জন পুণ্যবান ব্যক্তি তাদেরকে যুদ্ধ করার জন্যে অগ্রসর হতে এবং যুদ্ধ পরিহারের মনোভাব প্রত্যাহার করার জন্যে যে উপদেশ দান করেছিলেন, তা আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত আয়াতে ইংগিত করেছেন। কথিত আছে, উক্ত দু’জন ছিলেন ইউশা ইব্‌ন নূন (আ.) ও কালিব ইব্‌ন ইউকান্না। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), মুজাহিদ (র), ইকরিম (র), আতীয়্যা (র), সুদী (র), রবী’ ইব্‌ন আনাস (র) ও আরো অনেকে এ মত ব্যক্তি

করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

مؤمنین. অর্থাৎ- ‘যারা ভয় করে কিংবা যারা ভীত তাদের মধ্য হতে দুইজন যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা ঈমান, ইসলাম, আনুগত্য ও সাহস প্রদান করেছেন, তারা বললেন, দরজা দিয়ে তাদের কাছে ঢুকে পড় এবং ঢুকে পড়লেই তোমরা জয়ী হয়ে যাবে। আর যদি তোমরা আল্লাহ তা’আলার উপর তাওয়াকুল রাখা তার কাছেই সাহায্য চাও এবং তার কাছেই আশ্রয় চাও, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন। তখন তারা বলল, ‘হে মূসা! যতক্ষণ পর্যন্ত দুৰ্দান্ত সম্প্রদায় উক্ত শহরে অবস্থান করবে, আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। তুমি ও তোমার প্রতিপালক তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, আমরা এখানেই বসে রইলাম।’ (সূরা মায়িদা : ২৩-২৪)

মোটকথা, বনী ইসরাঈলের সর্দাররা জিহাদ হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিল। এর ফলে বিরাট বিপর্যয় ঘটে গেল। কথিত আছে, ইউশা (আ) ও কালিব (আ) যখন তাদের এরূপ উক্তি

VRS)

শুনতে পেলেন (তখনকার নিয়ম অনুযায়ী) তারা তাদের কাপড় ছিড়ে ফেলেন এবং মূসা (আ) ও হারূন (আ) এই অশ্রাব্য কথার জন্য আল্লাহ তা’আলার গযব থেকে পরিত্রাণের জন্যে বনী ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তা’আলার রহমত কামনা করে সিজদায় পড়ে গেলেন।

মূসা (আ) বললেনঃ

হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ছাড়া আর কারো উপর আমার আধিপত্য নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও। (शूद्धा भाशिना : २९)

উক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাংশের অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে আমার ও তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন :

অর্থাৎ— জিহাদ হতে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে.এ শান্তি দেয়া হয়েছিল যে, তারা

যাপন করবে। (সূরা মায়িদা : ২৬)

কথিত আছে, তাদের যারা তীহ ময়দানে প্রবেশ করেছিল তাদের কেউ বের হতে পারেনি বরং তাদের সকলে এই চল্লিশ বছরে সেখানে মৃত্যুবরণ করেছিল। কেবল তাদের ছেলে-মেয়েরা এবং ইউশা (আ) ও কালিব (আ) বেঁচে ছিলেন। বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ন্যায় বলেননি। বরং তিনি যখন তাদের কাছে যুদ্ধে যাবার বিষয়ে পরামর্শ করলেন, তখন আবু বকর সিদীক (রা) এ ব্যাপারে কথা বললেন, আবু বকর (রা) ও অন্যান্য মুহাজির সাহাবী এ ব্যাপারে উত্তম পরামর্শ দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘তোমরা আমাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ প্ৰদান কর।’ শেষ পর্যন্ত সা’দ ইব্‌ন মুয়ায (রা) বলেন, সম্ভবত আপনি আমাদের দিকেই ইঙ্গিত করছেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, যদি আপনি আমাদেরকে নিয়ে এ সমুদ্র পাড়ি দিতে চান। অতঃপর আপনি এটাতে ঝাপিয়ে পড়েন, তবে আমরাও আপনার সাথে ঝাপিয়ে পড়তে প্ৰস্তৃত। আমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তিই পিছু হটে থাকবে না। আগামীকালই যদি আমাদেরকে শত্রুর মুকাবিলা করতে হয় আমরা যুদ্ধে ধৈর্যের পরিচয় দেব এবং মুকাবিলার সময় দৃঢ় থাকব। হয়ত শীঘ্রই আল্লাহ তা’আলা আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে এমন আচরণ প্রদর্শন করাবেন যাতে আপনার চোখ জুড়াবে। সুতরাং আপনি আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করে রওয়ানা হতে পারেন। তাঁর কথায় রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত গ্ৰীত হলেন।

ԵՀՀ

ইমাম আহমদ (র) ইব্‌ন শিহাব (র) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাহাবী হযরত মিকদাদ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বদরের যুদ্ধের দিন বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে সেরূপ বলব না, যেরূপ বনী ইসরাঈল মূসা (আ)-কে বলেছিল :

অর্থাৎ— তুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ করা আমরা এখানে বসে রইলাম, বরং আমরা বলব, ‘আপনি ও আপনার প্রতিপালক যুদ্ধে যাত্রা করুন, আমরাও আপনাদের সাথে যুদ্ধে শরীক থাকবো।’

উল্লেখিত হাদীসের এ সনদটি উত্তম। অন্য অনেক সূত্রেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমদ (র) আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মিকদাদ (রা)-কে এমন একটি যুদ্ধে উপস্থিত হতে দেখেছি, যে যুদ্ধে তাঁর অবস্থান এতই গৌরবজনক ছিল যে, আমি যদি সে অবস্থানে থাকতাম। তবে তা অন্য যে কোন কিছুর চাইতে আমার কাছে প্রিয়তর হতো।’ রাসূলুল্লাহ (সা) মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোয়ায় রত ছিলেন, এমন সময় মিকদাদ (রা) রাসূল (সা)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলেন, ‘আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে এরূপ বলব না, যেরূপ বনী ইসরাঈলরা মূসা (আ)-কে ۹||۹||۶|||||||s,۹۹ مه STN۹l g۹ ۹۹۹ راهش اشتی وی باید فقابتلا زاکا فرهنگ : 57چ۹۶f ডানপাশে আপনার বামপাশে, আপনার সামনে ও পিছন থেকে- আমরা প্ৰাণ দিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এ কথা শুনার পর আমি রাসূল (সা)-এর চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখতে পেলাম। তিনি এতে খুশী হয়েছিলেন।

ইমাম বুখারী (র) তাঁর গ্রন্থের তাফসীর এবং মাগাষী অধ্যায়ে এ বর্ণনা পেশ করেছেন। হাফিজ আবু বকর মারদােয়েহ (র) আনাস (রা) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) যখন বদরের দিকে রওয়ানা হলেন, তখন তিনি মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করলেন। উমর (রা) তাঁকে সুপরামর্শ দিলেন। তারপর হুযুর (সা) আনসারগণের পরামর্শ চাইলেন। কিছু সংখ্যক আনসার অন্যান্য আনসারকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! রাসূলুল্লাহ (সা) যুদ্ধের ব্যাপারে তোমাদের পরামর্শ চাইছেন। তখন আনসারগণ বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এরূপ বলব না যেরূপ বনী-ইসরাঈল মূসা (আ)-কে বলেছিল : A3) এ14%, এওঁ ‘যে সত্তা আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ فقاتلاً إنَّا لههُثا قاچاؤن. করেছেন তাঁর শপথ, ‘আমাদেরকে যদি পৃথিবীর অতি দূরতম অংশেও মুকাবিলার জন্যে যেতে বলা হয়, নিশ্চয়ই আমরা আপনার আনুগত্য করব। ইমাম আহমদ (র) বিভিন্ন সূত্রে আনাস (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা পেশ করেছেন। ইব্‌ন হিব্বান (র) তার সহীহ গ্রন্থেও অনুরূপ বর্ণনা

করেছেন।

বনী ইসরাঈলের তীহ প্ৰান্তরে প্রবেশ ও অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী

বিষয়টি উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তীহ প্ৰান্তরে,

ভবঘুরের মত বিচরণের শাস্তি দেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, চল্লিশ বছর তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না। কিতাবীদের গ্রন্থাদিতে জিহাদ থেকে বিরত থাকার বিষয়টি আমার চােখে পড়েনি। বরং তাদের কিতাবে রয়েছে, ‘মূসা (আ) একদিন ইউশা (আ)-কে কাফিরদের একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার প্রস্তুতি নিতে হুকুম দিলেন। আর মূসা (আ), হারূন (আ) ও খোর নামক এক ব্যক্তি একটি টিলার চূড়ায় বসেছিলেন। মূসা (আঃ) তাঁর লাঠি উপরের দিকে উঠালেন, যখনই তিনি তার লাঠি উপরের দিকে উঠিয়ে রাখতেন, তখনই ইউশা (আ) শক্রির বিরুদ্ধে জয়ী হতেন। আর যখনই লাঠিসহ তার হাত ক্লান্তি কিংবা অন্য কারণে নিচে নেমে আসত। তখনই শক্রদল বিজয়ী হতে থাকত। তাই হারূন (আ.) ও খোর মূসা (আ)-এর দুই হাতকে সূর্যস্ত পর্যন্ত ডানে, বামে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। ইউশা (আ)-এর সৈন্য দল ७ा शब्लांठ कन्व्न।

কিতাবীদের মতে, ইউশা (আ)-এর সেনাবাহিনী সকলে মাদায়ানকে পছন্দ করত। মূসা (আ)-এর শ্বশুরের কাছে মূসা (আঃ)-এর যাবতীয় ঘটনার সংবাদ পীেছল। আর এ খবর পৌছল। যে, কিভাবে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে তার শত্রু ফিরআউনের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছেন। তাই তিনি মূসা (আঃ)-এর কাছে আনুগত্য সহকারে উপস্থিত হলেন। তার সাথে ছিলেন তাঁর মেয়ে সাফুরা। সাফুরা ছিলেন মূসা (আ)-এর স্ত্রী। তাঁর সাথে মূসা (আ)-এর দুই পুত্র জারশুন্য এবং আটিরও ছিলেন। মূসা (আঃ) তাঁর শ্বশুরের সাথে সাক্ষাত করলেন। তিনি তাকে সম্মান প্রদর্শন করলেন। তার সাথে বনী ইসরাঈলের মুরুববীগণও সাক্ষাত করলেন, তারাও তার প্রতি সম্মান প্ৰদৰ্শন করলেন।

কিতাবীরা আরো উল্লেখ করে যে, মূসা (আ)-এর শ্বশুর দেখলেন যে, ঝগড়া বিবাদের সময় বনী ইসরাঈলের একটি দল মূসা (আ)-এর কাছে ভিড় জমায়। তাই তিনি মূসা (আ)-কে পরামর্শ দিলেন, তিনি যেন জনগণের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক আমানতদার, পরহেযগার ও চরিত্রবান প্রশাসক নিযুক্ত করেন। যারা ঘুষ ও খিয়ানন্তকে ঘৃণা করেন। তিনি যেন তাদেরকে বিভিন্ন স্তরের প্রধানরূপে নিযুক্ত করেন। যেমন প্রতি হাজারের জন্যে, প্রতি শতের জন্যে, প্রতি পঞ্চাশজনের জন্য এবং প্রতি দশজনের জন্য একজন করে। তারা জনগণের মধ্যে বিচারকার্য সমাধা করবেন। তাদের কর্তব্য সমাধানে যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়, তখন তারা আপনার কাছে ফায়সালার জন্যে আসবে এবং আপনি তাদের সমস্যার সমাধান দেবেন। মূসা (আ) সেরূপ শাসনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন।

কাছে সমতল ভূমিতে অবতরণ করেন। তারা তাদের কাছে চলতি বছরের প্রথম মাসে মিসর থেকে বের হয়েছিলেন। এটা ছিল বসন্ত ঋতুর সূচনাকাল। কাজেই তারা যেন গ্ৰীষ্মের প্রারম্ভে তীহ নামক ময়দানে প্রবেশ করেছিলেন। আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত।

কিতাবীরা বলেন, বনী ইসরাঈলগণ সিনাইয়ের তুর পাহাড়ের পাশেই অবতরণ করেন। অতঃপর মূসা (আ) তুর পাহাড়ে আরোহণ করেন এবং তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বলেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে হুকুম দিলেন, তিনি যেন বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তা’আলা যেসব

ՆՀ8

নিয়ামত প্ৰদান করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে যেন শকুনের দুইটি পাখায় উঠিয়ে ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে নির্দেশ দেন, তিনি যেন বনী ইসরাঈলকে পবিত্ৰতা অর্জন করতে, গোসল করতে, কাপড়-চােপড় ধুয়ে তৃতীয় দিবসের জন্যে তৈরি হতে হুকুম দেন। তৃতীয় দিন সমাগত হলে তিনি নির্দেশ দেন, তারা যেন পাহাড়ের পাশে সমবেত হন, তবে তাদের মধ্য হতে কেউ যেন মূসা (আ)-এর কাছে না। আসে। যদি তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর কাছে আসে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা শিংগার আওয়াজ শুনতে থাকবে, এমনকি একটি প্ৰাণীও তখন তার কাছে যেতে পারবে না। যখন শিংগার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে তখন পাহাড়ে যাওয়া তাদের জন্যে বৈধ হবে। বনী ইসরাঈলও মূসা (আ)-এর কথা শুনলেন; তাঁর আনুগত্য করলেন, গোসল করলেন; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেন; পবিত্রতা অর্জন করলেন ও খুশবু ব্যবহার করলেন। তৃতীয় দিন পাহাড়ের উপর বিরাট মেঘখণ্ড দেখা দিল; সেখানে গর্জন শোনা গেল; বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল ও শিংগার বিকট আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। এতে বনী ইসরাইল ঘাবড়ে গেল ও অত্যন্ত আতংকগ্ৰস্ত হয়ে পড়ল। তারা ঘরের বের হল এবং পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়াল। পাহাড়কে বিরাট ধোঁয়ায় ঢেকে ফেলল, তার মধ্যে ছিল অনেকগুলো নূরের স্তম্ভ।

সমস্ত পাহাড় প্ৰচণ্ডভাবে কাপতে লাগল, শিংগার গর্জন অব্যাহত রইল এবং ক্রমাগত তা বৃদ্ধি পেতে লাগল। মূসা (আ) ছিলেন পাহাড়ের উপরে, আল্লাহ্ তা’আলা তার সাথে একান্তে কথা বলছিলেন। আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে নেমে যেতে হুকুম দিলেন। মূসা (আ) বনী

দিয়েছিলেন। তাদের আলেমদেরকেও তিনি নিকটবতী হতে আদেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর অধিক নৈকট্য অর্জন করার জন্যে তাদেরকে পাহাড়েও চড়তে হুকুম দিলেন।

উপরোক্ত সংবাদটি হলো কিতাবীদের গ্রন্থাদিতে লিখিত সংবাদ যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে (

মূসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এরা পাহাড়ে চড়তে সক্ষম নয়। আর তুমি পূর্বে একাজ করতে নিষেধ করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে তার ভাই হারূন (আ)-কে নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন। আর আলিমগণ এবং বনী ইসরাঈলের অন্যরা যেন নিকটে উপস্থিত থাকে। মূসা (আ) তাই করলেন। তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দশটি কলেমা বা উপদেশ বাণী দিলেন।

কিতাবীদের মতে, বনী ইসরাঈলরা আল্লাহর কালাম শুনেছিল। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, যতক্ষণ না মূসা (আঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর মূসা (আ)-কে তারা বলতে লাগল, ‘আপনি প্রতিপালকের কাছ থেকে আমাদের কাছে উপদেশ বাণী পৌঁছিয়ে দিন। আমরা আশংকা করছি হয়তো আমরা মারা পড়ব।’ অতঃপর মূসা (আঃ) তাদের কাছে আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে প্রাপ্ত দশটি উপদেশ বাণী পৌঁছিয়ে দেন। আর এগুলো হচ্ছে : (এক) লা-শরীক আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের নির্দেশ, (দুই) আল্লাহ তা’আলার সাথে মিথ্যা শপথ

ՎԵՀ@

করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা, (তিন) ‘সাবাত’ সংরক্ষণের জন্যে নির্দেশ। তার অর্থ হচ্ছে সপ্তাহের একদিন অর্থাৎ শনিবারকে ইবাদতের জন্যে নির্দিষ্ট রাখা। শনিবারকে রহিত করে আল্লাহ তা’আলা এর বিকল্পরূপে আমাদেরকে জুম’আর দিন দান করেছেন। (চার) তোমার পিতা-মাতাকে সম্মান কর। তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহ তা’আলা তোমার আয়ু বৃদ্ধি করে দেবেন, (পাঁচ) নর হত্যা করবে না, (ছয়) ব্যভিচার করবে না, (সাত) চুরি করবে না, (আট) তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না, (নয়) তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভের দৃষ্টিতে তাকাবে না, (দশ) তােমার সাথীর স্ত্রী, গোলাম-বাদী, গরু-গাধা ইত্যাদি কোন জিনিসে লোভ করবে না। অর্থাৎ হিংসা থেকে বারণ করা হয়। আমাদের প্রাচীনকালের আলিমগণ ও অন্য অনেকেই বলেন যে, এ দশটি উপদেশ বাণীর সারমর্ম কুরআনের সূরায়ে আন’আমের দুটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

যাতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

অর্থাৎ-বল, এস তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন, তোমাদেরকে তা পড়ে শুনাই, তাহল তোমরা তার কোন শরীক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিফিক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের কাছে যাবে না; আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা অনুধাবন করা। ইয়াতীম বয়ঃপ্ৰাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তার সম্পত্তির নিকটবতী হবে না এবং পরিমাণ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে, স্বজনের সম্পর্কে হলেও এবং আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ কর এবং এপথই সামার সরলপথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে। (সূরা আনআম : SGS-SGvo)

তারা এই দশটি উপদেশ বাণীর পরও বহু ওসীয়ত ও বিভিন্ন মূল্যবান নির্দেশাবলীর উল্লেখ করেছেন, যেগুলো বহুদিন যাবত চালু ছিল। তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এগুলো আমল করেছেন। কিন্তু এরপরই এগুলোতে আমলকারীদের পক্ষ হতে অবাধ্যতার ছোয়া লাগে। তারা

 

এগুলোর দিকে লক্ষ্য করলো এবং এগুলোতে পরিবর্তন সাধন করল, কোন কোনটা একেবারে বদল করে দিল; আবার কোন কোনটার মনগড়া ব্যাখ্যা দান করতে লাগল। তারপর এগুলোকে একেবারেই তারা ছেড়ে দিল। এরূপ এসব নির্দেশ এককালে পূর্ণরূপে চালু থাকার পর পরিবর্তিত ও বর্জিত হয়ে যায়। পূর্বে ও পরে আল্লাহ তা’আলার হুকুমই বলবৎ থাকবে, তিনিই যা ইচ্ছে হুকুম করে থাকেন এবং যা ইচ্ছে করে থাকেন, তারই হাতে সৃষ্টি ও আদেশের মূল চাবিকাঠি। জগতের প্রতিপালক আল্লাহই বরকতময়। অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু থেকে উদ্ধার করেছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তুর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের কাছে মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম, তোমাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এ বিষয়ে সীমালংঘন করো না, করলে তোমাদের উপর আমার ক্ৰোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্ৰোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়। আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তাওবা করে ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে। (সূরা তা-হা : ৮০-৮২)

আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলের প্রতি যে দয়া ও অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে শত্রু থেকে রক্ষা করেছিলেন, বিপদ-আপদ ও সংকীর্ণ অবস্থা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। আর তাদেরকে তুর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে তাদের নবী মূসা (আ)-এর সঙ্গ দান করার জন্যে অংগীকার করেছিলেন যাতে তিনি তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিধান অবতীর্ণ করতে পারেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর মান্না আসমান থেকে প্রতি প্ৰত্যুষে নাযিল করেন। তাদের জন্যে অতি প্রয়োজনের বেলায় কঠিন সময়ে এমন ভূমিতে ভ্রমণ ও অবস্থানকালে যেখানে কোন প্রকার ফসলাদি ও দুধেল প্রাণী ছিল না, প্রতিদিন সকালে তারা মান্না ঘরের মাঝেই পেয়ে যেত এবং তাদের প্রয়োজন মুতাবিক রেখে দিত যাতে ঐদিনের সকাল হতে আগামী দিনের ঐ সময় পর্যন্ত তাদের খাওয়া-দাওয়া চলে। যে ব্যক্তি এরূপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করে রাখত তা নষ্ট হয়ে যেত; আর যে কম গ্ৰহণ করত এটাই তার জন্যে যথেষ্ট হত; যে অতিরিক্ত নিত তাও অবশিষ্ট থাকতো না। মান্না তারা রুটির মত করে তৈরি করত এটা ছিল ধবধবে সাদা এবং অতি মিষ্ট। দিনের শেষ বেলা সালওয়া নামক পাখি তাদের কাছে এসে যেত, রাতের খাবারের প্রয়োজন মত পরিমাণ পাখি তারা অনায়াসে শিকার করত। গ্ৰীষ্মকাল দেখা দিলে আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর মেঘখণ্ড প্রেরণ করে ছায়া দান করতেন। এই মেঘখণ্ড তাদেরকে সূর্যের প্রখরতা ও উত্তাপ থেকে রক্ষা

করত।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

. ‘হে বনী ইসরাঈল! আমার সে অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর যা দিয়ে আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করা। আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করা। আমি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে ঈমান আন। এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারী। আর তোমরাই এটার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ে না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করবে না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করবে।’ (সূরা বাকারা : ৪০-৪১)

এরপর আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

অর্থাৎ- হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যা দ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। তোমরা সে দিনকে ভয় কর

ԿՀԵr

যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারো সুপারিশ গ্ৰহণ করা হবে না এবং কারো নিকট থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য প্রাপ্তও হবে না। স্মরণ কর, যখন আমি ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে তোমাদেরকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদের পুত্রদেরকে যিবোহ করে ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রেখে তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা ছিল; যখন তোমাদের জন্য সাগরকে বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফিরআউনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছিলাম আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। যখন মূসার জন্যে চল্লিশ রাত নির্ধারিত করেছিলাম, তার প্রস্থানের পর তোমরা তখন বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে। তোমরা তো জালিম। এরপরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছি। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দান করেছিলাম যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই শ্ৰেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, তখন তোমরা বাজাহত হয়েছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখছিলে। তারপর মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনজীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম। তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করলাম। বলেছিলাম, তোমাদেরকে ভাল যা দান করেছি তা হতে আহার করা। তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই বরং তারা তাদের প্রতিই জুলুম করেছিল। (সূরা বাকারা : ৪৭-৫৭)

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন?

‘স্মরণ কর, যখন মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থীনা করল। আমি বললাম, তোমরা লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে তাখোকে বারটি ঝরনা প্রবাহিত হল। প্ৰত্যেক গোত্ৰ নিজ

心、

নিজ পান-স্থান চিনে নিল। আমি বললাম, ‘আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াবে না।’ যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থীনা কর তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য, শাক-সবজি, ফাঁকুড়, গম, মসুর ও পিয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’ মূসা বলল, তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সাথে বদল করতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ করা। তোমরা যা চাও তা সেখানে রয়েছে। আর তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হল ও তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করবার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল। (সূরা বাকারা :

(لاما-Oما

এখানে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন ও অনুগ্রহ করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দু’টো সুস্বাদু খাবার বিনাকষ্টে ও পরিশ্রমে সহজলভ্য করে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন ভোরে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্যে মান্না অবতীর্ণ করতেন এবং সন্ধ্যার সময় সালওয়া নামক পাখি প্রেরণ করতেন। মূসা (আ)-এর লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করার ফলে তাদের জন্যে আল্লাহ তা’আলা পানি প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন। তারা এই পাথরটিকে তাদের সাথে লাঠি সহকারে বহন করত। এই পাথর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হত; প্রতিটি গোত্রের জন্যে একটি প্রস্রবণ নির্ধারিত ছিল। এই প্রস্রবণগুলো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত করত। তারা নিজেরা পান করত ও তাদের প্রাণীদেরকে পানি পান করাত এবং তারা প্রয়োজনীয় পানি জমা করেও রাখত। উত্তাপ থেকে বাচাবার জন্যে মেঘ দ্বারা তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা ছায়া দান করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলার তরফ হতে তাদের জন্যে ছিল এগুলো বড় বড় নিয়ামত ও দান, তবে তারা এগুলোর পূর্ণ মর্যাদা অনুধাবন করেনি এবং এগুলোর জন্যে যথাযোগ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনি। আর যথাযথভাবে ইবাদতও তারা আঞ্জাম দেয়নি। অতঃপর তাদের অনেকেই এসব নিয়ামতের প্রতি বিরক্তি প্ৰকাশ করল। এগুলোর প্রতি অধৈৰ্য হয়ে উঠল এবং চাইল যাতে তাদেরকে এগুলো পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এমন সব বস্তু যা ভূমি উৎপন্ন করে যেমন শাক, সবজি, ফাঁকুড়, গম, মসুর ও পিয়াজ ইত্যাদি। এ কথার জন্যে

মূসা (আ) তাদেরকে ভৎসনা করলেন এবং ধমক দিলেন, তাদের সতর্ক করে বললেনঃ

অর্থাৎ–ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল শহরের অধিবাসীর জন্য অর্জিত উৎকৃষ্ট নিয়ামতসমূহের পরিবর্তে কি তোমরা নিকৃষ্টতর বস্তু চাও? তাহলে তোমরা যেসব বস্তু ও মর্যাদার উপযুক্ত নও তার থেকে অবতরণ করে তোমরা যে ধরনের নিকৃষ্ট মানের খাদ্য খাবার চাও তা তোমরা অর্জন করতে পারবে। তবে আমি তোমাদের আবদারের প্রতি সাড়া দিচ্ছি না এবং তোমরা যে ধরনের আকাঙক্ষা পোষণ করছ, তাও আল্লাহ তা’আলার দরবারে আপাতত পৌছাচ্ছি না। উপরোক্ত যেসব আচরণ তাদের থেকে পরিলক্ষিত হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে, মূসা (আঃ) তাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত রাখতে ইচ্ছে করেছিলেন তা থেকে তারা বিরত থাকেনি।

ՆDO

যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

এ বিষয়ে সীমালংঘন করবে না, করলে তোমাদের উপর আমার ক্ৰোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্ৰোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা তা-হা : ৮১)

বনী ইসরাঈলের উপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলার গযব। অবধারিত হয়েছিল। তবে আল্লাহ তা’আলা এরূপ কঠোর শাস্তিকে আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথেও সম্পৃক্ত করেছেন, ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে আল্লাহ তা’আলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে ও পাপরাশি থেকে তওবা করে এবং বিতাড়িত শয়তানের অনুসরণে আর লিপ্ত না থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেন :

| Z •,ሪዲ ✓,, / / / / / /, ‘ / / ል /ኅ %« /( » «, / واتى لغفار لمن تاب وامن وعول صالحا ثم اهتدى. আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে। (সূরা তা-হা : ৮২)

আল্লাহর দীদার লাভের জন্য মূসা (আ)-এর প্রার্থীনা

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

‘স্মরণ কর মূসার জন্য আমি ত্রিশ রােত নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয় এবং মূসা তার ভাই হারূন (আ)-কে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে: সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না, মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না, বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, এটা স্বস্থানে স্থির থাকলে তবে তুমি আমাকে দেখবে।’ যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্ৰকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূৰ্ণ-বিচূর্ণ করল। আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলল, ‘মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মু’মিনদের মধ্যে আমিই প্ৰথম।’

তিনি বললেন, ‘হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছি; সুতরাং আমি যা দিলাম তা গ্ৰহণ কর এবং কৃতজ্ঞ হও। আমি তার জন্য ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে এগুলোর যা উত্তম তা গ্ৰহণ করতে নির্দেশ দাও। আমি শীর্ঘ সত্যত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখােব। পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন থেকে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্ৰহণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে, এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। যারা আমার নিদর্শন ও পরকালে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে তাদের কার্য নিম্বফল হয়। তারা যা করে তদনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।’ (সূরা আ’রাফ : ১৪২-১৪৭)

পূর্ববতী যুগের উলামায়ে কিরামের একটি দল, যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত ত্রিশ রাত্রের অর্থ হচ্ছে যিলকাদ মাসের পূর্ণটা এবং যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত মোট চল্লিশ রাত। এ হিসেবে মূসা (আ)-এর জন্যে আল্লাহ তা’আলার বাক্যালাপের দিন হচ্ছে কুরবানীর ঈদের দিন। আর অনুরূপ একটি দিনেই আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ (সা)-এর জন্যে তার দীনকে পূর্ণতা দান করেন এবং তার দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

মূলত মূসা (আঃ) যখন তাঁর নির্ধারিত মেয়াদ পরিপূর্ণ করলেন তখন তিনি ছিলেন রোযাদার। কথিত আছে, তিনি কোন প্রকার খাবার চাননি। অতঃপর যখন মাস সমাপ্ত হল তিনি এক প্রকার একটি বৃক্ষের ছাল হাতে নিলেন এবং মুখে সুগন্ধি আনয়ন করার জন্যে তা একটু চিবিয়ে নিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাকে আরো দশদিন রোযা রাখত আদেশ দিলেন। তাতে চল্লিশ দিন পুরা হলো। আর এ কারণে হাদীস শরীফে রয়েছে যে, ‘L~~)।( — —।( ২

WoWDSR

51 61 STS & اتجاه,8 5 3 08لة 515) is 65fRTTIة له الطيب عند الله من ريح المسلك কাছে মিশকের সুগন্ধি উত্তম।

মূসা (আঃ) যখন তার নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করার জন্যে পাহাড় পানে রওয়ানা হলেন, তখন ভাই হারূন (আ)-কে বনী ইসরাঈলের কাছে স্বীয় প্রতিনিধিরূপে রেখে গেলেন। হারূন (আ) ছিলেন মূসা (আ)-এর সহোদর ভাই। অতি নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল ও জনপ্রিয় ব্যক্তি।

আল্লাহ তা’আলার মনোনীত ধর্মের প্রতি আহবানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মূসা (আ)-এর সাহায্যকারী। মূসা (আঃ) তাঁকে প্রয়োজনীয় কাজের আদেশ দিলেন। নবুওতের ক্ষেত্রে তাঁর বিশিষ্ট মর্যাদা থাকায় মূসা (আ)-এর নবুওতের মর্যাদার কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। আল্লাহ্ তা’আলা

  1. 4. ^ ইরশাদ করেন : 4% »1$ %q» $! এ 4.32 °L» €4% (অর্থাৎ মূসা (আঃ) যখন তার

জন্যে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে পেঁৗছলেন তখন তার প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা পর্দার আড়াল থেকে তার সাথে কথা বললেন।) আল্লাহ্ তা’আলা তাকে আপনি কথা শুনালেন; মূসা (আ)-কে আহবান করলেন, সংগোপনে তার সাথে কথা বললেন; এবং নিকটবতী করে নিলেন, এটা উচ্চ একটি সম্মানিত স্থান, দুর্ভেদ্য দুর্গ, সম্মানিত পদমর্যাদা ও অতি উচ্চ অবস্থান। তার উপর আল্লাহ তা’আলার অবিরাম দরূদ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার উপর আল্লাহ তা’আলার সালাম বা শান্তি। যখন তাকে উচ্চ মর্যাদা ও মহাসম্মান দান করা হল এবং তিনি আল্লাহ তা’আলার কালাম শুনলেন, তখন তিনি পর্দা সরিয়ে নেবার আবেদন করলেন এবং এমন মহান

সত্তার উদ্দেশে যাকে দুনিয়ার সাধারণ চোখ দেখতে পায় না, তার উদ্দেশে বললেন :

হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও! আমি তােমাকে দেখব। আল্লাহ উত্তরে বর্লেন : ০.Jর্চ ৫, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না। অর্থাৎ মূসা (আঃ) আল্লাহ্ তা’আলার প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারবেন না; কেননা পাহাড় যা মানুষের তুলনায় অধিকতর স্থির ও কাঠামোগতভাবে অধিক শক্তিশালী। পাহাড়ই যখন আল্লাহ তা’আলার জ্যোতি প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারে না তখন মানুষ কেমন করে পারবে? এ জন্যই

১,০৭, এ৯৫% অর্থাৎ তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে।

প্রাচীন যুগের কিতাবগুলোতে বৰ্ণিত রয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-কে বললেন, ‘হে মূসা, কোন জীবিত ব্যক্তি আমাকে দেখলে মারা পড়বে এবং কোন শুষ্ক দ্রব্য আমাকে দেখলে উলট-পালট হয়ে গড়িয়ে পড়বে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু মূসা (রা) হতে বৰ্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলার পর্দা হচ্ছে নূর বা জ্যোতির। অন্য এক বর্ণনা মতে, আল্লাহ তা’আলার পর্দা হচ্ছে আগুন। যদি তিনি পর্দা সরান তাহলে তার চেহারার ঔজ্জ্বল্যের দরুন যতদূর তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) আয়াতাংশ পুঁL»9144,56 x -এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, এটা হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার ঐ নূর যা কোন বস্তুর সামনে প্রকাশ করলে তা টিকতে পারবে না। এজন্যই আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :

‘যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল। আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল, যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলে উঠল : ‘মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই

প্ৰথম।’

ولكن انظر إلي الجبلي فإن اللهشتُقرّ مكائه فشكوف كرانى (5) etiRTية আয়াতাংশ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন :

এটার অর্থ হচ্ছে- পাহাড় তোমার চাইতে বড় এবং কাঠামোতেও তোমার চাইতে অধিকতর শক্ত, যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, মূসা (আ) পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখেন, পাহাড় স্থির থাকতে পারছে না। পাহাড় সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, প্রথম ধাক্কায় তা চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। মূসা (আ) প্রত্যক্ষ করছিলেন পাহাড় কি করে। :পর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। ইমাম আহমদ (র) ও তিরমিয়ী (র) হতে বর্ণিত এবং ইব্‌ন জারীর (র) ও হাকিম (র) কর্তৃক সত্যায়িত এ বিবরণটি আমি আমার তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছি। ইব্‌ন জারীর (র) আনাস (রা) সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত এটুকু রয়েছে যে, STHIsle fe TIGHTs فلما تجلی و نه لالجیل جلهٔ دکا (i۹f R TgggTs (SITی করেন এবং আঙ্গুলো ইশারা করে বলেন, এভাবে পাহাড় ধসে গেল বলে রাসূলুল্লাহ (সা) বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কনিষ্ঠা আঙ্গুলের উপরের জোড়ায় স্থাপন করলেন।

সুদী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার জ্যোতি কনিষ্ঠ অঙ্গুলির পরিমাণে প্রকাশ করায় পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল অর্থাৎ মাটি হয়ে গেল। আয়াতাংশ %4এ উল্লেখিত (4……. এ.32, … … এর অর্থ হচ্ছে বেহঁশ হয়ে যাওয়া। কাতাদা (র) বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে মারা যাওয়া তবে প্রথম অর্থটি বিশুদ্ধতর। কেননা, পরে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ওLAI LAL৯ কেননা বেহঁশ হবার পরই জ্ঞান ফিরে পায়। আয়াতাংশ 45% »1%(/^ * 4. A1% »1¥J (মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তােমাতেই প্রত্যাবর্তন( أول المُؤمنين করলাম এবং মু’মিনদের আমিই প্রথম।) অর্থাৎ আল্লাহ যেহেতু মহিমময় ও মহাসম্মানিত সেহেতু কেউ তাঁকে দেখতে পারবে না। মূসা (আঃ) বলেন, এর পর আর কোন দিনও তোমার দর্শনের আকাজক্ষা করব না। আমিই প্রথম মুমিন অর্থাৎ তোমাকে কোন জীবিত লোক দেখলে মারা যাবে এবং কোন শুষ্ক বস্তু দেখলে তা গড়িয়ে পড়বে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু সাঈদ খুদরী (র) থেকে বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন : ‘আমাকে তোমরা আম্বিয়ায়ে কিরামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রাধান্য দিও না। কেননা, কিয়ামতের দিন যখন মানব জাতি জ্ঞানহারা হয়ে যাবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম জ্ঞান ফিরে পাব। আর তখন আমি মূসা (আ)-কে আল্লাহ তা’আলার আরশের কাছে স্তম্ভ ধরে থাকতে দেখতে পাব। আমি জানি না, তিনি কি আমার পূর্বেই জ্ঞান ফিরে পাবেন, না কি তাঁকে তুর পাহাড়ে জ্ঞান হারাবার প্রতিদান দেয়া হবে।’ পাঠটি বুখারীর।  (১ম খণ্ড) ৮০—

এ হাদীসের প্রথম দিকে এক ইহুদীর ঘটনা রয়েছে। একজন আনসারী তাকে চড়,S is li لا و الذی اصطفی موسی علی البشر : 57&۹۶۴ تا ۹۹۹۹۹۹।(۹||C۶خاک)}م এমন সত্তার শপথ করে বলছি, যিনি মূসা (আ)-কে সমস্ত বনী আদমের মধ্যে অধিকতর সম্মান দিয়েছেন। তখন আনসারী প্রশ্ন করেছিলেন আল্লাহ কি মুহাম্মদ (সা) থেকেও মূসা (আ)-কে অধিক সম্মান দিয়েছিলেন? ইহুদী বলল, হ্যা, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন : یک 65ج (11)।(|||||||||||||||||||||| 1।(if T * (RF Sتلا 3 di 3 لات خیرونی من بین الانبیاء অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। এই হাদীসে ৩.৫-৭ -1- – -31- ১ + ১ অর্থাৎ মূসা (আঃ) থেকে আমাকে অগ্ৰাধিকার দেবে না, কথাটিরও উল্লেখ রয়েছে। এরূপ নিষেধ করার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এটা বিনয় প্রকাশ করার জন্য বলেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে আমার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে কিংবা আম্বিয়ায়ে কিরামকে তুচ্ছ করার উদ্দেশ্যে আমার অগ্ৰাধিকার বর্ণনা করবে না। অথবা এটার অর্থ হচ্ছে এরূপ : এটা তোমাদের কাজ নয়। বরং আল্লাহ তা’আলাই কোন নবীকে অন্য নবীর উপর মর্যাদা দান করে থাকেন। এই মর্যাদা ও অগ্ৰাধিকার কারো অভিমতের উপর নির্ভরশীল নয়। এই মর্যাদা অভিমতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় না। বরং আল্লাহ তা’আলার ওহীর উপর নির্ভরশীল। যিনি বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) সকলের মধ্যে উত্তম’ এই তথ্যটি জানার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা) এরূপ বলতে নিষেধ করেছিলেন, যখন তিনি জানতে পারলেন যে, তিনিই সকলের মধ্যে উত্তম তখন এ নিষেধাজ্ঞাটি রহিত হয়ে যায়। তার এ অভিমতটি সন্দেহমুক্ত নয়। কেননা, উপরোক্ত হাদীসটি আবু সাঈদ খুদরী (র) ও আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে। আর আবু হুরায়রা (রা) খায়বার যুদ্ধের বছরে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। তাই খায়বার যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানতে পেরেছেন, এর সম্ভাবনা ক্ষীণ। আল্লাহ তা’আলাই সর্বজ্ঞ। তবে রাসূলুল্লাহ (সা) যে সমস্ত মানব তথা সমস্ত সৃষ্টির সেরা এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : قمه 48 6918’ كثثم خيراً مئة أخرجك للكاس উম্মত, মানব জাতির জন্য তােমাদের আবির্ভাের্ব হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০) আর উম্মতের পরিপূর্ণতা তাদের নবীর মান-মর্যাদার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়। হাদীসের সর্বোচ্চ সূত্র তথা মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি থাকব আদম সন্তানদের সর্দার। এটা আমার গর্ব নয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) মাকামে মাহমুদ যে কেবল তারই জন্য নির্দিষ্ট তা তিনি উল্লেখ করেন। মাকামে মাহমূদ পূর্বের ও পরের সকলের কাছেই ঈর্ষণীয় এবং এই মর্যাদা অন্য সব নবী-রাসূলের নাগালের বাইরে থাকবে। এমনকি নূহ (আ), ইবরাহীম (আ), মূসা (আ) এবং ইসা ইব্‌ন মারিয়াম (আ.) প্রমুখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন নবীগণও এ গৌরব লাভ করবেন না।

فاکون اول من یفیق فاجد موسی باطشا بقائمة العرش فلا ادری افاق قبلی ام جوزی لصاعقه الطور . হাদীসে উক্ত উপরোক্ত বাক্য দ্বারা বোঝা যায়, বান্দাদের আমলের ফয়সালা করার সময় আল্লাহ তা’আলা যখন জ্যোতি প্রকাশ করবেন, তখন কিয়ামতের মাঠে সৃষ্টিকুল জ্ঞানহারা হয়ে

 

যাবে। অতিরিক্ত ভয়-ভীতি ও আতংকগ্ৰস্ততার জন্যই তারা এরূপ জ্ঞানহারা হবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি জ্ঞান ফিরে পাবেন তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী এবং সব নবীর চেয়ে আসমান যমীনের প্রতিপালকের প্রিয়তম মুহাম্মদ (সা)। তিনি মূসা (আ)-কে আরশের স্তম্ভ ধরে থাকতে দেখবেন। সত্যবাদী নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন : لا ادری اصعق فافاق قبلی او جو زنی بصعقة الطور . অর্থাৎ— আমি জানি না। তাঁর জ্ঞানহারা হওয়া কি অতি হালকা ছিল কেননা তিনি দুনিয়ায় অর্থাৎ তিনি আন্দীে জ্ঞানহারা হননি। এতে রয়েছে। মূসা (আ)-এর জন্য একটি বড় মর্যাদা। তবে এই বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁর সার্বিক মর্যাদাবান বুঝায় না। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা) মূসা (আ)-এর মর্যাদা ও ফখীলতের দিকে এভাবে ইংগিত করেন, কেননা যখন ইহুদী বলেছিল? |2}ه 21 Fک6-(SIT) |لالا f{f۹ }۶۰° ه .।( Sldi۹ لا و الذی اصطفی موسی علی البشر মানব জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, আনসারী ইহুদীর গালে চপেটাঘাত করায় মূসা (আ)-এর সম্পর্কে কেউ বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে পারে তাই রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত এবং বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। অর্থাৎ সমসাময়িক যুগের লোকদের উপর পূর্ববতীদের উপর নয়, কেননা ইবরাহীম (আ) মূসা (আ) থেকে উত্তম ছিলেন। যা ইবরাহীম (আ)-এর কাহিনীর মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আবার তার পরবর্তীদের উপরও নয়, কেননা মুহাম্মদ (সা) তাদের উভয় থেকেই উত্তম ছিলেন। যেমন মি’রাজের রাতে সকল নবী-রাসূলের উপর মুহাম্মদ (সা)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা)।(۴|||||||| ۹۹۹ نه ساقوام مقاما یر غیب الی الخلق حتی ابراهیم 3 مجا) کFC* آT*۹& এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হব যার আখাঙ্ক্ষা সৃষ্টিকুলের সকলেই করবে, এমনকি ইব্রাহীম (जी)-७। %,, z .. ( 2 / /,2 4 / J, / * 2 / আল্লাহ্ তা’আলার বাণী : ৬৮%,। ৩% ৬<% এ**’ … *//; অর্থাৎ আমি যে রিসালাত তোমাকে দান করেছি তা শক্তভাবে গ্ৰহণ কর, তার চাইতে বেশি প্রার্থীনা কর না এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। আল্লাহ তা’আলা বলেন, : ‘আমি তার জন্যে ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি।’ ফলকগুলোর উপাদান ছিল খুবই মূল্যবান। সহীহ গ্রন্থে আছে যে, আল্লাহ তা’আলা নিজ কুদরতী হাতে মূসা (আ)-এর জন্য তাওরাত লিখেছিলেন, তার মধ্যে ছিল উপদেশাবলী এবং বনী ইসরাঈলের প্রয়োজনীয় হালাল-হারামের বিস্তারিত ব্যাখ্যা। আল্লাহ তা’আলা বলেন, %, 45% তুর্থাৎ এগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে নেক নিয়ুতে ধর। তারপর বলেন : L44.24 9424 41%; # %2.1% অর্থাৎ তােমার সম্প্রদায়কে নির্দেশ দাও তারা যেন এগুলোর যা উত্তম তা গ্ৰহণ করে। অর্থাৎ তারা যেন তার উত্তম ব্যাখ্যা গ্ৰহণ করে। উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত ৩১ – 1) % 16:24, % এর অর্থ হচ্ছে তারা আমার আনুগত্য

 

ԿVDVՆ

পরিহারকারী, আমার আদেশের বিরোধী ও আমার রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণাম গোপন রাখছে। আমি শীঘ্রই সত্য-ত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখাব।

আয়াতে উল্লেখিত

অর্থাৎ- পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব। তারা এগুলোর তাৎপর্য ও মূল অৰ্থ বুঝতে অক্ষম থাকবে; তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পরও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না; তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, এ পথে চলবে না, এ পথের অনুসরণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্ৰান্ত পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করেছে; এগুলো থেকে তারা গাফিল রয়েছে; এগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমল করা থেকে বিরত রয়েছে। যারা আমার নিদর্শন ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করে তাদের কর্ম নিস্ফল হবে। তারা যা করবে। তদনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ’রাফ S8V-S8)

বনী ইসরাঈলের বাছুর পূজার বিবরণ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :

‘মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা গড়ল একটি বাছুর, একটি অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। তারা কি দেখল না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা এটাকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করলে এবং তারা ছিল জালিম। তারা যখন অনুতপ্ত হল ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই। মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ। তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বে তোমরা ত্বরান্বিত করলো? এবং সে ফলকগুলো ফেলে দিল আর তার ভাইকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল। হারূন বললেন, হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল ঠাউরিয়েছিল এবং আমাকে প্ৰায় হত্যা করেই ফেলেছিল। তুমি আমার সাথে এমন করো না যাতে শক্ররা আনন্দিত হয় এবং আমাকে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত করো না। মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর। তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। যারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। যারা অসৎকাৰ্য করে তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মূসার ক্ৰোধ যখন প্রশমিত হলো তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য এতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা আ’রাফ : ১৪৮-১৫৪)

কিসে? সে বলল, এই তো তারা আমার পশ্চাতে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি তুরায় তোমার কাছে আসলাম, তুমি সন্তুষ্ট হবে এ জন্য। তিনি বললেন, আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামিরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তারপর মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গোল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের কাছে সুদীর্ঘ হয়েছে; না তোমরা চেয়েছ তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের প্রতিপালকের ক্ৰোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অংগীকার ভংগ করলো? ওরা বলল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অংগীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি, তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে। তারপর সে ওদের জন্যে গড়ল একটা বাছুর, একটা অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। ওরা বলল, ‘এটা তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গিয়েছে। তবে কি ওরা ভেবে দেখে না যে, এটা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করবার ক্ষমতাও রাখে না। হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এটার দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। তোমাদের প্রতিপালক দয়াময়। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল। ওরা বলেছিল, আমাদের কাছে মূসা ফিরে না। আসা পর্যন্ত আমরা এটার পূজা হতে কিছুতেই বিরত হব না। মূসা বলল, হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল, আমার অনুসরণ করা থেকে? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলো? হারূন বলল, হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরো না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হওনি।

05ا

মূসা বলল, হে সামিরী! তোমার ব্যাপার কি? সে বলল, আমি দেখেছিলাম যা ওরা দেখেনি তারপর আমি সেই দূতের (জিবরাঈলের) পদচিহ্ন থেকে এবং মুষ্ঠি (ধুলা) নিয়েছিলাম এবং আমি এটা নিক্ষেপ করেছিলাম এবং আমার মন আমার জন্য শোভন করেছিল এইরূপ করা।’ মূসা বলল, দূর হও, তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইল যে তুমি বলবে, ‘আমি অস্পৃশ্য’ এবং তোমার জন্য রইল একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না। এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা ওটাকে জ্বলিয়ে দেবই। অতঃপর ওটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই। তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত। (সূরা তাহা 3 Ե՞Տ-ֆԵr)

উপরোক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ তা’আলা নির্ধারিত সময়ে উপনীত হলেন, তখন তিনি তুর পর্বতে অবস্থান করে আপন প্রতিপালকের সাথে একান্ত কথা বললেন। মূসা (আ) আল্লাহ তা’আলার নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান এবং আল্লাহ তা’আলা সে সব বিষয়ে তাকে জানিয়ে দেন। তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি যাকে হারব্ধন আস সামিরী বলা হয়। সে যেসব অলংকার ধারস্বরূপ নিয়েছিল সেগুলো দিয়ে সে একটি বাছুর-মূর্তি তৈরি করল এবং বনী ইসরাঈলের সামনে ফিরআউনকে আল্লাহ তা’আলা ডুবিয়ে মারার সময় জিবরাঈল (আঃ)-এর ঘোড়ার পায়ের এক মুষ্ঠি ধুলা মূর্তিটির ভিতরে নিক্ষেপ করল। সাথে সাথে বাছুর মূর্তিটি জীবন্ত বাছুরের মত হাম্বা হাম্বা আওয়াজ দিতে লাগল। কেউ কেউ বলেন, এতে তা রক্ত-মাংসের জীবন্ত একটি বাছুরে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর তা হাম্বা হাম্বা রব করতে থাকে। কাতাদা (র) প্রমুখ মুফাসসিরীন এ মত ব্যক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘যখন এটার পেছন দিক থেকে বাতাস চুকত এবং মুখ দিয়ে বের হত তখনই হাম্বা হাম্বা আওয়াজ হত। যেমন সাধারণত গরু ডেকে থাকে। এতে তারা এর চতুর্দিকে নাচতে থাকে এবং উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। তারা বলতে লাগল, এটাই তোমাদের ও মূসা (আ)-এর ইলাহ, কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন। অর্থাৎ মূসা (আ) আমাদের নিকটস্থ প্রতিপালককে ভুলে গেছেন এবং অন্যত্র গিয়ে তাকে খোজাখুঁজি করছেন। অথচ প্রতিপালক তো এখানেই রয়েছেন। (নির্বোধিরা যা বলছে আল্লাহ তা’আলা তার বহু বহু ঊর্ধে, তার নাম ও গুণগুলো এসব অপবাদ থেকে পূত-পবিত্র এবং আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত নিয়ামত সমূহও অগণিত) তারা যেটাকে ইলাহরূপে গ্ৰহণ করেছিল তা বড় জোর একটা জন্তু বা শয়তান ছিল। তাদের এই ভ্ৰান্ত ধারণার অসারতা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তারা কি দেখে না যে, এই বাছুরটি তাদের কথার কোন উত্তর দিতে পারে না এবং এটা তাদের কোন উপকার বা অপকার করতে পারে না। অন্যত্র বলেন, তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলতে পারে না এবং তাদেরকে পথনির্দেশ করতে পারে না। আর এরা ছিল জালিম |’ (৭ আরাফ : ১৪৮)

এখানে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেন যে, এ জন্তুটি তাদের সাথে কথা বলতে পারে না, তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না, কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না কিংবা কোন উপকার করারও শক্তি রাখে না, তাদেরকে পথনির্দেশও করতে পারে না, তারা তাদের আত্মার

V8o

প্রতি জুলুম করেছে। তারা তাদের এই মূর্থিতা ও বিভ্রান্তির অসারতা সম্বন্ধে সম্যক অবগত। ‘অতঃপর তারা যখন তাদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হল এবং অনুভব করতে পারল যে, তারা ভ্ৰান্তির মধ্যে রয়েছে তখন তারা বলতে লাগল, যদি আমাদের প্রতিপালক আমাদের প্রতি দয়া না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব।’ (A St’sis*F 3 >8ð)

অতঃপর মূসা (আঃ) তাদের কাছে ফিরে আসলেন এবং তাদের বাছুর পূজা করার বিষয়টি জানতে পারলেন। তার সাথে ছিল বেশ কয়েকটি ফলক যেগুলোর মধ্যে তাওরাত লিপিবদ্ধ ছিল, তিনি এগুলো ফেলে দিলেন। কেউ কেউ বলেন, এগুলোকে তিনি ভেঙ্গে ফেলেন। কিতাবীরা এরূপ বলে থাকে। এরপর আল্লাহ তা’আলা এগুলোর পরিবর্তে অন্য ফলক দান করেন। কুরআনুল করীমের ভাষ্যে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে এত দূর আছে যে, মূসা (আ) তাদের কার্যকলাপ প্ৰত্যক্ষ করে, ফলকগুলো ফেলে দিয়েছিলেন। কিতাবীদের মতে, সেখানে ছিল মাত্র দুইটি ফলক। কুরআনের আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ফলক বেশ কয়েকটিই ছিল। আল্লাহ্ তা’আলা যখন তাঁকে তাঁর সম্প্রদায়ের বাছুর পূজার কথা অবগত করেছিলেন, তখন মূসা (আ) তেমন প্রভাবান্বিত হননি। তখন আল্লাহ তাকে তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে নির্দেশ দেন। এ জন্যেই ইমাম আহমদ (র) ও ইব্‌ন হিব্বান (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন ৭ – Ln-2 J[<!– 2।( U.J অর্থাৎ সংবাদ প্রাপ্তি এবং প্রত্যক্ষ দর্শন সমান নয়। অতঃপর মূসা (আঃ) তাদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাদেরকে ভৎসনা করলেন এবং তাদের এ হীন কাজের জন্যে তাদেরকে দোষারোপ করলেন। তখন তার কাছে তারা মিথ্যা ওযর আপত্তি পেশ করে বলল ৪ قانو ما كفائتا موهكك يملكها ولكن خيث أثرًارًا بين زيئة القوم

فقد فتاها فگذابل القی المساوی. অর্থাৎ— তারা বলল, আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি। তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি। অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে। (সূরা তা-হা : ৮৭)

তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ফিরআউন সম্প্রদায়ের অলংকারের অধিকারী হওয়াকে তারা পাপকাৰ্য বলে মনে করতে লাগল। অথচ আল্লাহ তা’আলা এগুলোকে তাদের জন্য বৈধ করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা মহা পরাক্রমশালী অদ্বিতীয় মহাপ্রভুর সাথে হাম্বা হাম্বা রবের অধিকারী বাছুরের পূজাকে তাদের মূর্খতা ও নিবুদ্ধিতার কারণে পাপকাৰ্য বলে বিবেচনা করছিল না। অতঃপর মূসা (আঃ) আপনি সহোদর হারূন (আ.)-এর প্রতি মনোযোগী হলেন এবং তাকে বললেনঃ …&%5¥L% হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল আমার অনুসরণ করা থেকে? (সূরা তা-হা : ৯২)

অর্থাৎ যখন তুমি তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারটি দেখলে তখন তুমি কেন আমাকে সে সম্বন্ধে অবহিত করলে না? তখন তিনি বললেন,

আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ। (সূরা তা-হা : ৯৪)

অর্থাৎ তুমি হয়ত বলতে, তুমি তাদেরকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসলে অথচ আমি তোমাকে তাদের মধ্যে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে এসেছিলাম।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

  1. M. ر ال? / n^ /^ / / ۸۶ . ؛ ‘ ، ۸ ۷ 4 / ۔ / A. Z^ ^ / . قال ربت اغفر إلى والأخي وادخلنا في رحمتك و انت ارخم الرّجمين . ‘মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর। তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা আ’রাফ : ১৫১)

হারান (আঃ) তাদেরকে এরূপ জঘন্য কাজ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন এবং তাদেরকে কঠোরভাবে ভৎসনা করেছিলেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এর দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এ বাছুর ও এর হাম্বা রবকে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষার বিষয় করেছেন।

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়াময় অর্থাৎ এ বাছুর তোমাদের প্রভু নয়। (সূরা

তা-হা : ৯০ আয়াত) & 13:31, 3, … সুতরাং আমি যা বলি তার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মান্য কর। তারা বলেছিল, আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটার পূজা থেকে কিছুতেই বিরত হব না।’ (সূরা তা-হা : ৯১)। আল্লাহ তা’আলা। হারূন (আ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন- আর আল্লাহ তা’আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। যে হারূন (আ) তাদেরকে এরূপ জঘন্য কাজ থেকে নিষেধ করেছিলেন, তাদেরকে ভৎসনা করেছিলেন। কিন্তু তারা তার কথা মানা করেনি। অতঃপর মূসা (আ) সামিরীর প্রতি মনোযোগী হলেন এবং বললেন, ‘তুমি যা করেছ কে তোমাকে এরূপ করতে বলেছিল?’ উত্তরে সে বলল, ‘আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে দেখেছিলাম, তিনি ছিলেন একটি ঘোড়ার উপর সওয়ার তখন আমি জিবরাঈল (আ.)-এর ঘোড়ার পায়ের ধুলা সংগ্রহ করেছিলাম।’ আবার কেউ কেউ বলেন : সামিরী জিবরাঈল (আঃ)-কে দেখেছিল। জিবরাঈল (আ.)-এর ঘোড়ার খুর যেখানেই পড়ত অমনি সে স্থানটি ঘাসে সবুজ হয়ে যেত। তাই সে ঘোড়ার খুরের নিচের মাটি সংগ্ৰহ করল। এরপর যখন সে এই স্বর্ণ-নির্মিত বাছুরের মুখে ঐ মাটি রেখে দিল, তখনই সে আওয়াজ করতে লাগল এবং পরবর্তী ঘটনা সংঘটিত হল। এজন্যেই সামিরী বলেছিল-’আমার মন আমার জন্যে এরূপ করা শোভন করেছিল।’ তখন মূসা (আ) তাকে অভিশাপ দিলেন এবং বললেন, তুমি সব সময়ে বলবে এ.L. S অর্থাৎ আমাকে কেউ স্পর্শ করবে না- কেননা, সে এমন জিনিস স্পর্শ করেছিল যা তার স্পর্শ করা উচিত ছিল না। এটা তার দুনিয়ার শাস্তি। অতঃপর আখিরাতের শাস্তির কথাও তিনি ঘোষণা করেন। অত্র আয়াতে উল্লেখিত ও AL২, ৩, ৩০ Jকে কেউ কেউ 4_a L১, ২, ৩,। পাঠ করেছেন অর্থাৎ এর ‘ব্যতিক্রম হবে না’ স্থলে ‘আমি ব্যতিক্রম করব না।’ অতঃপর মূসা (আ) বাছুরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন।

এ অভিমতটি কাতাদা (র) প্রমুখের। আবার কেউ কেউ বলেন, উখা দিয়ে তিনি বাছুর মূর্তিটি ধ্বংস করেছিলেন। এ অভিমতটি আলী (রা), আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) প্ৰমুখের। কিতাবীদের ভাষ্যও তাই। অতঃপর এটাকে মূসা (আ) সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন এবং বনী ইসরাঈলকে সেই সমুদ্রের পানি পান করতে নির্দেশ দিলেন। তারা পানি পান করল। যারা বাছুরের পূজা করেছিল, বাছুরের ছাই তাদের ঠোঁটে লেগে রইল যাতে বোঝা গেল যে, তারাই ছিল এর পূজারী। কেউ কেউ বলেন, তাদের রং হলদে হয়ে যায়।

আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ) সম্বন্ধে আরও বলেন যে, তিনি বনী ইসরাঈলকে বলেছিলেন : অর্থাৎ ‘তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তার জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত।’

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :

অর্থাৎ–’যারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করেছে পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা। আপতিত হবেই, আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদের

প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সূরা আরাফ : ১৫২)

বাস্তবিকই বনী ইসরাঈলের উপর এরূপ ক্রোধ ও লাঞ্ছনাই, আপতিত হয়েছিল। প্রাচীন আলিমগণের কেউ কেউ বলেছেন, 946421৷ এওঁ ৫J14% আয়াতাংশ -এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী প্রতিটি বিদ্যআত উদ্ভাবনকারীর এরূপ অবশ্যম্ভাবী পরিণামের কথা বলা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আপন ধৈর্যশীলতা, সৃষ্টির প্রতি তার দয়া ও তওবা কবুলের ব্যাপারে বান্দাদের উপর তাঁর অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা অসৎ কার্য করে তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আরাফ : ১৫৩)।

কিন্তু বাছুর পূজারীদের হত্যার শাস্তি ব্যতীত আল্লাহ তা’আলা কোন তওবা কবুল করলেন

না। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

আর স্মরণ কর, যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছি। সুতরাং তোমরা

তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও, এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার কাছে

V8 N)

এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা : ৫৪)

কথিত আছে, একদিন ভোরবেলা যারা বাছুর পূজা করেনি তারা তরবারি হাতে নিল; অন্যদিকে আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি এমন ঘন কুয়াশা অবতীর্ণ করলেন যে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে এবং একই বংশের একজন অন্যজনকে চিনতে পারছিল না। তারা বাছুর পূজারীদেরকে পাইকারী হারে হত্যা করল এবং তাদের মূলোৎপাটন করে দিল। কথিত রয়েছে যে, তারা ঐ দিনের একই প্ৰভাতে সত্তর হাজার লোককে হত্যা করেছিল।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

অর্থাৎ—’যখন মূসার ক্ৰোধ প্রশমিত হল তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল। যারা তাদের প্ৰতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য ওতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।’ (সূরা আরাফ : ১৫৪)

আয়াতাংশে উল্লেখিত : نشختها هادی و را خمةm /7. ۹ گا-وفی দ্বারা কেউ কেউ প্ৰমাণ করেন যে, ফলকগুলো ভেঙে গিয়েছিল। তবে এই প্রমাণটি সঠিক নয়। কেননা, কুরআনের শব্দে এমন কিছু পাওয়া যায় না যাতে প্রমাণিত হয় যে, এগুলো ভেঙে গিয়েছিল। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) ফিৎনা সম্বলিত হাদীসসমূহে উল্লেখ করেছেন যে, তাদের বাছুর পূজার ঘটনাটি ছিল তাদের সমুদ্র পার হবার পর। এই অভিমতটি অযৌক্তিক নয়; কেননা তারা যখন সমুদ্র পার হলো তখন তারা বলেছিল, ‘হে মূসা’! তাদের যেমন ইলাহসমূহ রয়েছে আমাদের জন্যেও তেমন একটি ইলাহ গড়ে দাও।’ (সূরা আ’রাফ : ১০৮)

অনুরূপ অভিমত কিতাবীরা প্রকাশ করে থাকেন। কেননা, তাদের বাছুর পূজার ঘটনাটি ছিল বায়তুল মুকাদাস শহরে আগমনের পূর্বে। বাছুর পূজারীদেরকে হত্যা করার যখন হুকুম দেয়া হয়, তখন প্রথম দিনে তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। অতঃপর মূসা (আ) তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থীনা করলেন। তাদের ক্ষমা করা হল এই শর্তে যে, তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

জন্যে মনোনীত করল। তারা যখন ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল, তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধি তারা যা করেছে। সেজন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এটা তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দিয়ে তুমি যাকে ইচ্ছে বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। আমাদের জন্য নির্ধারিত কর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি। আল্লাহ বলেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া, তাতো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এটা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে। যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উন্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জিল, যা তাদের নিকট রয়েছে তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায়, যে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা দেয়, যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে ও অপবিত্র বস্তু হারাম করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার থেকে ও শৃংখল থেকে যা তাদের উপর ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যেই নূর তার সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।।’ (সূরা আ’রাফ : ১৫৫-১৫৭)

সুদী (র) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও অন্যান্য মুফাসসির উল্লেখ করেন যে, এই সত্তরজন ছিলেন বনী ইসরাঈলের উলামায়ে কিয়াম। আর তাদের সাথে ছিলেন মূসা (আ), হারূন (আ), ইউশা (আ) নাদাব ও আবীছ। বনী ইসরাঈলের যারা বাছুর পূজা করেছিল তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থীনার জন্যে তারা মূসা (আ)-এর সাথে গিয়েছিলেন। আর তাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছিল তারা যেন পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে গোসল করে ও সুগন্ধি ব্যবহার করে। তখন তারা মূসা (আ)-এর সাথে আগমন করলেন, পাহাড়ের নিকটবতী হলেন; পাহাড়ের উপরে ঝুলন্ত ছিল মেঘখণ্ড, নূরের স্তম্ভ ছিল সুউচ্চ। মূসা (আ) পাহাড়ে আরোহণ করলেন। বনী ইসরাঈলরা দাবি করেন যে, তারা আল্লাহ তা’আলার কালাম শুনেছেন। কিছু সংখ্যক তাফসীরকার তাদের এ দাবিকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, সূরায়ে বাকারার ৭৫

&ኃ8(፩

নং আয়াতে উল্লেখিত আল্লাহ তা’আলার বাণী শ্রবণকারী যে দলটির কথা বলা হয়েছে, সত্তরজনের দলের দ্বারাও একই অর্থ নেয়া হয়েছে।

সুরায়ে ব্যকারায় আল্লাহ্ তা’আল ইরশাদ করেছেন :

অর্থাৎ- তোমরা কি এই আশা করা যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে, যখন তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে। তারপর তা বুঝবার পর জেনে-শুনে এটা বিকৃত করে। (সূরা বাকারা : ৭৫)

তবে এ আয়াতে যে শুধু তাদের কথাই বলা হয়েছে, এটাও অপরিহার্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন ৪

অর্থাৎ— ‘মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থীনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দেবে যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দেবে।

কারণ তারা অজ্ঞ লোক।’ (সূরা তওবা : ৬)

অর্থাৎ তাবলীগের খাতিরে তাকে আল্লাহ তা’আলার বাণী শোনাবার জন্যে হুকুম দেয়া হয়েছে, অনুরূপভাবে তারাও মূসা (আ) থেকে তাবলীগ হিসেবে আল্লাহ তা’আলার বাণী শুনেছিলেন। কিতাবীরা আরো মনে করে যে, এ সত্তর ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে দেখেছিল। এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা বৈ আর কিছুই নয়। কেননা, তারা যখন আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে চেয়েছিল তখনই তারা বাজাহত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ৪

‘স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না। তখন তোমরা বাজাহত হয়েছিলে, আর তোমরা নিজেরাই দেখছিলে, মৃত্যুর পর তোমাদের পুনজীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।’ (সূরা বাকারা : ৫৫-৫৬)

অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ৪

অর্থাৎ—’তারা যখন ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছে করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে …..।’

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, ‘মূসা (আ) বনী ইসরাঈল থেকে সত্তরজন সদস্যকে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ক্রমানুযায়ী মনোনীত করেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ

তা’আলার দিকে প্রত্যাগমন কর, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তওবা কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা বাছুর পূজা করে অন্যায় করেছে তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে তোমরা তাওবা কর; তোমরা সিয়াম আদায় কর; পবিত্ৰতা অর্জন কর ও নিজেদের জামা-কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর।’ অতঃপর আপন প্রতিপালক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সীনাই মরুভূমির তুর পাহাড়ে মূসা (আ) তাদেরকে নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। আর তিনি কোন সময়ই আল্লাহ তা’আলার অনুমতি ব্যতীত সেখানে গমন করতেন না। আল্লাহ তা’আলার কালাম শোনাবার জন্যে তাদের সেই সত্তরজন মূসা (আ)-কে অনুরোধ করল। মূসা (আ) বললেন, আমি একাজটি করতে চেষ্টা করব। মূসা (আঃ) যখন পাহাড়ের নিকটবতী হলেন, তখন তাঁর উপর মেঘমালার স্তম্ভ নেমে আসল এবং তা সমস্ত পাহাড়কে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মূসা (আ) আরও নিকটবতীর্ণ হলেন এবং মেঘমালায় ঢুকে পড়লেন, আর নিজের সম্প্রদায়কে বলতে লাগলেন, ‘তোমরা নিকটবতী হও।’ মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলতেন, তখন মূসা (আ)-এর মুখমণ্ডলের উপর এমন উজ্জ্বল নূরের প্রতিফলন ঘটত যার দিকে বনী আদমের কেউ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারত না। তাই সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল, সম্প্রদায়ের লোকেরা অগ্রসর হলেন এবং মেঘমালায় ঢুকে সিজদাবনত হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তা’আলা যখন মূসা (আ)-এর সাথে কথা বলছিলেন, মূসা (আ)-কে বলছিলেন, এটা কর, ঐটা করো না। তখন তারা আল্লাহ তা’আলার কথা শুনছিলেন। আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর নির্দেশ প্রদান সম্পন্ন করলেন এবং মূসা (আ) থেকে মেঘমালা কেটে গেল ও সম্প্রদায়ের দিকে তিনি দৃষ্টি দিলেন, তখন তারা বলল, হে মূসা! আমরা তোমার কথায় বিশ্বাস করি না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য দেখতে পাই। তারা তখন বজাহত হল ও তাদের থেকে তাদের রূহ বের হয়ে পড়ল। তাতে তারা সকলেই মৃত্যুবরণ করল।

তৎক্ষণাৎ মূসা (আ) আপন প্রতিপালককে ডাকতে লাগলেন এবং অনুনয় বিনয় করে আরষী জানাতে লুগলেন :

অর্থাৎ— ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছে করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ংস করতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধি, তারা যা করেছে। সেজন্য তুমি আমাদেরকে কি ধ্বংস করবে?

‘অন্য কথায়, আমাদের মধ্য হতে নির্বোধরা যা করেছে; তারা বাছুরের পূজা করেছে। তাদের এ কাজের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), মুজাহিদ (র), কাতাদা (র) ও ইব্‌ন জুরায়জ (র) বলেন, বনী ইসরাঈলরা বজাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল, কেননা তারা তাদের সম্প্রদায়কে বাছুর পূজা থেকে বিরত রাখেনি। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাংশ فبثثتك $y£ %)-এর অর্থ হচ্ছে, ‘এটা তােমার প্রদত্ত পরীক্ষা ছাড়া কিছুই নয়।’ এ অভিমতটি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), সাঈদ ইব্‌ন জুবাইর (রা), আবুল আলীয়া (র), রাবী ইব্‌ন আনাস (র) ও পূর্বাপরের অসংখ্য উলামায়ে কিরামের। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই এটা নির্ধারিত করে রেখেছিলে, বা তাদেরকে এটার দ্বারা পরীক্ষা করার জন্যে বাছুর পূজা করার বিষয়টি সৃষ্টি করেছিলে।

যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ৪

অর্থাৎ— ‘হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুর পূজা দ্বারা তো

কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায়ই ফেলা হয়েছে।’ (সূরা তা-হা : ৯০) / w A نگضل پیها من نگشا و تهرانی من تاشا | : ۶۱۹}&le|{{Pl (SIT) ۹۶fی অর্থাৎ- ‘তুমিই এই পরীক্ষা দ্বারা যাকে ইচ্ছে পথভ্ৰষ্ট কর এবং যাকে ইচ্ছে হিদায়ত কর। তুমিই নির্দেশ ও ইচ্ছার মালিক। তুমি যা নির্দেশ বা ফয়সালা কর তা বাধা দেয়ার মত কারো

শক্তি নেই এবং কেউ তা প্ৰতিহতও করতে পারে না।

তুমিই তো আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। আমাদের জন্য নির্ধারিত কর ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি এবং অনুনয় বিনয় সহকারে তোমাকেই স্মরণ করেছি।

উপরোক্ত তাফসীরটি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), মুজাহিদ, সাঈদ ইব্‌ন জুবাইর, আবুল আলীয়া, ইবরাহীম তায়মী, যাহহাক, সুদী, কাতাদা (র) ও আরো অনেকেই এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। আভিধানিক অর্থও তাই।

/, //, м / a /, a 4 / / . আয়াতাংশ। ৪ 1 ܒܩ

অর্থাৎ–’আমি যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছি। এগুলোর কারণে আমি যাকে ইচ্ছে শাস্তি প্ৰদান করব। আমার রহমত তা তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। (সূরা আ’রাফ : ১৫৬)

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : ‘আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন সমাপ্ত করেন তখন তিনি একটি লিপি লিখলেন

‘নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার গযবকে হার মানায়।’

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : ‘সুতরাং এটা আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে, যাকাত দেবে ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করবে।’ অর্থাৎ আমি সুনিশ্চিতভাবে তাদেরকেই রহমত দান করব যারা এসব গুণের অধিকারী হবে। ‘আর যারা বার্তাবাহক উক্ষ্মী নবীর অনুসরণ করবে’— এখানে মূসা (আ)-এর কাছে আল্লাহ তা’আলা। মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর উম্মত সম্বন্ধে উল্লেখ করে তাদের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং মূসা (আ)-এর সাথে একান্ত আলাপে আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়টিও জানিয়ে দিয়েছিলেন। আমার তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াত ও তার পরবর্তী আয়াতের তাফসীর বর্ণনাকালে আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রয়োজনীয় আলোচনা পেশ করেছি।

სტ8br

কাতাদা (র) বলেন, মূসা (আ) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন এক উম্মতের উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি। যারা হবে শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তাদের আবির্ভাব হবে, তারা সৎ কার্যের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে। হে প্ৰতিপালক! তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন! আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, ওরা আহমদের উম্মত।’ পুনরায় মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি। যারা সৃষ্টি হিসেবে সর্বশেষ কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম। হে আমার প্রতিপালক! তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন!’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, এরা আহমদের উম্মত।’ আবার মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, যাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলার কালাম সুরক্ষিত, অর্থাৎ ওরা আল্লাহ তা’আলার কালামের হাফিজ। তারা হিফজ হতে আল্লাহ তা’আলার কালাম তিলাওয়াত করবেন। উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্বে যেসব উম্মত ছিলেন তারা দেখে দেখে আল্লাহ তা’আলার কালাম তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু যখন তাদের থেকে আল্লাহ তা’আলার কালাম উঠিয়ে নেয়া হতো, তখন তারা আর কিছুই তিলাওয়াত করতে পারতো না। কেননা, তারা আল্লাহ তা’আলার কালামের কোন অংশই হিফজ করতে পারেনি। তারা পরবর্তীতে আল্লাহ তা’আলার কালামকে আর চিনতেই সক্ষম হতো না। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহ তা’আলার কালাম হিফজ করার তাওফীক দান করা হয়েছে, যা অন্য কাউকে দান করা হয়নি। মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ওদেরকে আমার উম্মত করে দিন।’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, ওরা আহমদের উন্মত।’

মূসা (আঃ) আবারো বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, যারা তাদের পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং শেষ কিতাবের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে। তারা পথভ্রষ্ট বিভিন্ন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, এমনকি আখেরী যামানার একচক্ষুবিশিষ্ট মিথ্যাবাদী দাজ্জালের বিরুদ্ধেও জিহাদ করবে। তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন।’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, ওরা, আহমদের উম্মত।’ মূসা (আ) পুনরায় বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি। যারা আল্লাহ তা’আলার নামের সাদকা-খয়রাত নিজেরা খাবে কিন্তু তাদেরকে এটার জন্যে আবার পুরস্কারও দেয়া হবে।’ উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্বে অন্যান্য উম্মতের কোন ব্যক্তি যদি সাদকা করত এবং তা আল্লাহ তা’আলার দরবারে কবুল হত তখন আল্লাহ তা’আলা আগুন প্রেরণ করতেন এবং সে আগুন তা পুড়িয়ে দিত। কিন্তু যদি তা কবুল না হত তাহলে আগুন তা পোড়াত না। বরং এটাকে পশু-পাখিরা খেয়ে ফেলত এবং আল্লাহ তা’আলা ঐ উম্মতের ধনীদের সাদকা দরিদ্রদের জন্যে গ্ৰহণ করবেন। মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! এদেরকে আমার উম্মত বানিয়ে দিন।’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, ওরা আহমদের উন্মত।’ মূসা (আ) পুনরায় বললেন, ‘ফলকে আমি এমন এক উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, তারা যদি একটি নেক কাজ করতে ইচ্ছে করে অথচ পরবর্তীতে তা করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য একটি নেকী লেখা হবে। আর যদি তা তারা করতে পারে, তাহলে তাদের জন্যে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত নেকী দেয়া হবে। ওদেরকে আমার উম্মত করে দিন!’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, ওরা আহমদের উম্মত।’ মূসা (আ) পুনরায় বললেন, ‘আমি ফলকে এমন একটি উম্মতের উল্লেখ

Կ85

পাচ্ছি। যারা অন্যদের জন্যে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে এবং তাদের সে সুপারিশ কবুলও, করা হবে। তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন।’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘না, এরা আহমদের উম্মত।’

কাতাদা (র) বলেন, আমাদের কাছে বৰ্ণনা করা হয়েছে যে, অতঃপর মূসা (আ) ফলক T(۴ G||||||||||||||||ت! &SIII 5 اللهم اجعلنی من امة احمد آ۶) ۹۹۹۶ آ5)f آRFCs) আহমদের উম্মতে শামিল করুন। অনেকেই মূসা (আ)-এর এরূপ মুনাজাত উল্লেখ করেছেন এবং মুনাজাতে এমন বিষয়াদি সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বিশুদ্ধ হাদীস ও বাণীসমূহের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত বিবরণ আল্লাহ তা’আলার সাহায্য, তাওফীক, হিদায়াত ও সহায়তা নিয়ে পেশ করব।

হাফিজ আবু হাতিম মুহাম্মদ ইব্‌ন হাতিম ইব্‌ন হিব্বান (র) তাঁর বিখ্যাত ‘সহীহ’ গ্রন্থে জান্নাতীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কাছে মূসা (আ)-এর জিজ্ঞাসা সম্পর্কে বলেনঃ মুগীরা ইব্‌ন শু’বা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, মূসা (আঃ) আল্লাহ তা’আলাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতীদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ন কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘জান্নাতীগণ জান্নাতে প্ৰবেশ করার পর এক ব্যক্তি আগমন করবে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতে প্ৰবেশ কর। সে ব্যক্তি বলবে, আমি কেমন করে জান্নাতে প্ৰবেশ করবো। অথচ লোকজন সকলেই নিজ নিজ স্থান করে নিয়েছে ও নির্ধারিত নিয়ামত লাভ করেছে। তাকে তখন বলা হবে যে, যদি তোমাকে দুনিয়ার রাজাদের কোন এক রাজার রাজ্যের সমান জান্নাত দেয়া হয়, তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? উত্তরে সে বলবে, ‘হ্যা, আমার প্ৰতিপালক!’ তাকে তখন বলা হবে, তোমার জন্যে এটা এটার ন্যায় আরো একটা এবং এটার ন্যায় আরো এক জান্নাত। সে তখন বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি সন্তুষ্ট।’ তখন তাকে বলা হবে, ‘এর সাথে রয়েছে তোমার জন্যে যা তোমার মন চাইবে ও যাতে চােখ জুড়াবে।’ মূসা (আ) আল্লাহ তা’আলার কাছে জানতে চান, ‘জান্নাতীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী কে?’

নিজ কুদরতী হাতে রোপণ করেছি এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়েছি- তা এমন যা কোন দিন কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যা কোন আদম সন্তানের কল্পনায় আসেনি।’

এ হাদীসের বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ বহন করে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতটি :

অর্থাৎ- ‘কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন গ্ৰীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।’ (৩২ সােজদা : ১৭)

অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম (র) ও ইমাম তিরমিয়ী (র) সুফিয়ান ইব্‌ন উয়াইনা (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, মুসলিমের পাঠ হচ্ছে : ৩-১ এ। ২_J JL;,; অতঃপর তাকে বলা হবে। যদি পৃথিবীর কোন রাজার রাজ্যের সমতুল্য তােমাকে দান করা হয় তাতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? তখন সে ব্যক্তি বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি এতে সন্তুষ্ট।’ আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার জন্যে রয়েছে এটা, এটার অনুরূপ এবং এটার অনুরূপ। এটার অনুরূপ, আরো এটার অনুরূপ

(১ম খণ্ড) ৮২—

Ն( Օ

পঞ্চম বারের পর সে ব্যক্তি বলবে : ‘হে আমার প্রতিপালক! এটাতে আমি সন্তুষ্ট।’ অতঃপর বলা হবে, এটা তো তোমার জন্যে থাকবেই এবং তার সাথে আরো দশগুণ, আর এছাড়াও তোমার জন্যে থাকবে যা তোমার মনে চাইবে ও যাতে তোমার চোখ জুড়াবে।’ তখন সে ব্যক্তি বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি সন্তুষ্ট।’ আর মূসা (আ) বললেন, : ‘হে আমার প্রতিপালক! এরাই তাহলে মর্যাদায় সর্বোচ্চ?’ তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘তাদের সম্মানের বৃক্ষ আমি নিজ হাতে রোপণ করেছি এবং সম্মানের পরিচর্যার কাজও আমিই সমাপ্ত করেছি। তাদের এত নিয়ামত দেয়া হবে, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানবহৃদয় এর কল্পনাও করেনি।’ ইমাম মুসলিম (র) বলেন, কুরআন মজীদের আয়াতে তার فلا تغله كفل ما أخفى لهم ا 10308ة RT8ع 88f918}3

ইমাম তিরমিয়ী (র) হাদীসটি হাসান’ ও সহীহ বলেছেন। কেউ কেউ বলেন, হাদীসটিকে মওকুফ বললেও বিশুদ্ধ মতে তা মারফু’। ইব্‌ন হিব্বান (র) তার সহীহ গ্রন্থে মূসা (আ) কর্তৃক তার প্রতিপালককে সাতটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা প্রসঙ্গে বলেন :

আবু হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন। একদিন মূসা (আ) আপন প্রতিপালকের কাছে ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন করেন, আর এই ছয়টি বিষয় শুধু তাঁরই জন্যে বলে তিনি মনে করেছিলেন। সপ্তম বিষয়টি মূসা (আ) পছন্দ করেননি। মূসা (আ) প্রশ্ন করেন, (১) হে আমার প্রতিপালক! তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক পরহেজগার কে? আল্লাহ তা’আলা। বললেন, : ‘যে ব্যক্তি যিকির করে এবং গাফিল থাকে না। (২) মূসা (আঃ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করে। (৩) মূসা (আঃ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে মানুষের জন্যে সেরূপ বিচারই করে যা সে নিজের জন্যে করে। (৪) মূসা (আ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, এমন জ্ঞানী যে জ্ঞান আহরণে তৃপ্ত হয় না। বরং লোকজনের জ্ঞানকে নিজের জ্ঞানের সাথে যোগ করে। (৫) মূসা (আঃ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত কে? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যে বান্দা প্রতিশোধ গ্রহণের সামৰ্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়। (৬) মূসা (আ) প্রশ্ন করেন : তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক ধনী কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যে বান্দা তাকে যা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।’ (৭) মূসা (আ) প্রশ্ন করেন : তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক দরিদ্র কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘মানকুস’-যার মনে অভাববোধ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, ‘বাহ্যিক ধনীকে প্রকৃত পক্ষে ধনী বলা হয় না, অন্তরের ধনীকেই ধনী বলা হয়।’ যখন আল্লাহ তা’আলা কোন বান্দার প্রতি কল্যাণ চান, তখন তাকে অন্তরে ধনী হবার এবং হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভয় করার তাওফীক দেন। আর যদি কোন বান্দার অকল্যাণ চান তাহলে তার চোখ দারিদ্রকে প্রকট করে তুলেন। হাদীসে বর্ণিত ২০-২৫ a, — শব্দের ব্যাখ্যায় ইব্‌ন হিব্বান (র) বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে তাকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা সে নগণ্য মনে করে এবং আরো অধিক

চায় |

ইব্‌ন জারীর (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ধিত করে বলেন, মূসা (আঃ) বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক!

 

د)اما

তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সর্বাধিক জ্ঞানী? আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে নিজের জ্ঞানের সাথে সাথে লোকজনের জ্ঞানও অন্বেষণ করে। অচিরেই সে একটি উপদেশ বাণী পাবে, যা তাকে আমার হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শন করবে কিংবা আমার নিষেধ থেকে বিরত রাখবে। মূসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কি পৃথিবীতে কেউ আছেন? আল্লাহ্ তা’আলা’ বললেন, ‘হঁ্যা আছে, সে হচ্ছে খিযির। মূসা (আ) খিযির (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্যে পথের সন্ধান চান। পরবর্তীতে এর আলোচনা হবে।

ইব্‌ন হিব্বানের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস— ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন, ‘একদিন মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার মুমিন বান্দা দুনিয়াতে অভাবে-অনটনে দিন যাপন করে। আল্লাহ বলেন, তার জন্যে জান্নাতের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে তা দিয়ে সে জান্নাতের দিকে তাকাবে। ‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘হে মূসা! এটা হচ্ছে সেই বস্তু যা আমি তার জন্যে তৈরি করে রেখেছি।’ মূসা (আঃ) বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইযযত ও পরাক্রমের শপথ, যদি তার দুই হাত ও দুই পা কাটা গিয়ে থাকে এবং তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সে হামাগুড়ি দিয়ে চলে আর এটাই যদি তার শেষ গন্তব্যস্থল হয়, তাহলে সে যেন কোনদিন কোন কষ্টই ভোগ করেনি।’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, ‘পুনরায় মূসা (আঃ) বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাফির বান্দা দুনিয়ার প্রাচুর্যের মধ্যে রয়েছে।’ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘তার জন্যে জাহান্নামের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে।’ আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মূসা! এটা আমি তার জন্যে তৈরি করে রেখেছি।’ মূসা (আঃ) বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইযযন্ত ও পরাক্রমের শপথ, তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যদি তাকে পার্থিব সম্পদ দেয়া হত, আর এটাই যদি তার গন্তব্যস্থল হয় তাহলে সে যেন কখনও কোন কল্যাণ লাভ করেনি।’ তবে এ হাদীসের সূত্রের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।

ইব্‌ন হিব্বান (র) মূসা (আ) কর্তৃক আপন প্রতিপালকের কাছে ‘এমন একটি যিকির প্রার্থীনা’ শিরোনামে আবু সাঈদ (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এটি বর্ণনা করেন যে, একদিন মূসা (আ) আরয করলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনাকে স্মরণ করতে পারি ও ডাকতে পারি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হে মূসা’! তুমি বল, 4_L|| ১১|| 4_II ১ মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার প্রত্যেক বান্দাই তো এই কলেমা বলে থাকে। আল্লাহ তা’আলা। বললেন, তুমি বল 4_L|| ১১|| 4।( ১ মূসা (আঃ) বললেন, আমি এমন একটি কালেমা চাই যা আপনি আমার জন্যেই বিশেষভাবে দান করবেন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘হে মূসা! যদি সাত আসমান ও সাত যমীনের বাসিন্দাদেরকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং 4_L|| ১। কলেমাকে অন্য পাল্লায় রাখা হয় তাহলে 4_L|| ১১|| 4।( ১ এর পাল্লাটি অপর পাল্লাটি থেকে অধিক ভারী হবে। এই হাদীসের সত্যতার প্রমাণ বা au J | এ, ১২ আর অর্থের দিক দিয়ে এ হাদীসের অতি নিকটবতী হল নিম্ন বর্ণিত হাদীস যা হাদীসের কিতাবগুলোতে বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, ‘সর্বোত্তম দুআ হচ্ছে, আরাফাত ময়দানের দু’আ।’

Ն@ Հ

আমি ও আমার পূর্ববতী নবীগণের সর্বোত্তম বাণী হল : لا اله الا الله وحده لا شریل له. له المللث وله الحمد و هو علی کل شی قدیر . অর্থাৎ— এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, অংশীদারহীন, তারই জন্য যত প্রশংসা এবং তিনিই সর্বশক্তিমান। –…<। ব|-এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইব্‌ন আবু হাতিম (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনী ইসরাঈল মূসা (আ)-কে প্রশ্ন করলেন, তোমার প্রতিপালক কি ঘুমােন? মূসা (আ) বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তখন তার প্রতিপালক তাকে ডেকে বললেন, হে মূসা! তারা তোমাকে প্রশ্ন করেছে— তোমার প্রতিপালক কি ঘুমােন? তাই তুমি তোমার দুই হাতে দুইটি বোতল ধারণ কর এবং রাত জাগরণ কর। মূসা (আ) এরূপ করলেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হল, তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন এবং তার মাথা হাঁটুর উপর বুকে পড়ল। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বোতল দু’টিকে মজবুত করে ধরলেন। এরপর যখন শেষরাত হলো তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। আমনি তার দুই হাতের দুটি বোতল পড়ে গেল ও ভেঙ্গে গেল।

অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-কে বললেন, ‘হে মূসা! যদি আমি নিদ্রাচ্ছন্ন হতাম তাহলে আসমান ও যমীন পতিত হত এবং তোমার হাতের বোতল দু’টির ন্যায় আসমান-যমীন ংস হয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা)-এর কাছে আয়াতুল কুরসী নাযিল করেন।

ইব্‌ন জারীর (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল (সা)-কে মিম্বরে বসে মূসা (আ)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘একদিন মূসা (আ)-এর অন্তরে এই প্রশ্ন উদিত হল যে, আল্লাহ্ তা’আলা কি নিদ্ৰা যান? তখন

অবস্থায় রাখলেন। অতঃপর তাকে দুই হাতে দু’টি কাচের বোতল দিলেন, আর এই দু’টো বোতলকে সযত্নে রাখার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তার ঘুম পেলেই দু’টো হাত একত্র হয়ে যাবার উপক্রম হত এবং তিনি জেগে উঠতেন। অতঃপর তিনি একটিকে অপরটির সাথে একত্রে ধরে রাখতেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর দুটো হাত কেঁপে উঠলো এবং দুটো বোতলই পড়ে ভেঙ্গে গেল।’ রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-এর জন্যে এই একটি উদাহরণ বর্ণনা করেন যে, যদি আল্লাহ তা’আলা নিদ্রা যেতেন তাহলে আসমান ও যমীনকে ধরে রাখতে পারতেন না। –

উপরোক্ত হাদীস মারফুরূপে গরীব পর্যায়ের। তবে খুব সম্ভব এটা কোন সাহাবীর বাণী এবং এর উৎস ইহুদীদের বর্ণনা।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

‘স্মরণ করা যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুরকে তোমাদের উর্ধে উত্তোলন করেছিলাম; বলেছিলাম, আমি যা দিলাম দৃঢ়তার সাথে তা গ্ৰহণ কর এবং তাতে যা রয়েছে তা স্মরণ রাখা। যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার। এটার পরেও তোমরা মুখ ফিরালে! আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা তোমাদের প্রতি না থাকলে তোমরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে। (সূরা বাকারা : ৬৩ – ৬৪)

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

অর্থাৎ- ‘স্মরণ করা, আমি পর্বতকে তাদের উর্ধে উত্তোলন করি। আর তা ছিল যেন এক চাঁদোয়া। তারা ধারণা করল যে, এটা তাদের উপর পড়ে যাবে। বললাম, আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ওতে যা আছে তা স্মরণ করো, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।’ (সূরা আ’রাফ : ১৭১ )

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও প্রাচীন যুগের উলামায়ে কিরামের অনেকেই বলেন, মূসা (আঃ) যখন তাওরাত সম্বলিত ফলক নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করলেন তখন নিজ সম্প্রদায়কে তা গ্ৰহণ করতে ও শক্তভাবে তা ধরতে নির্দেশ দিলেন। তারা তখন বলল, তাওরাতকে আমাদের কাছে খুলে ধরুন, যদি এর আদেশ নিষেধাবলী সহজ হয় তাহলে আমরা তা গ্রহণ করব। মূসা (আ) বললেন, ‘তাওরাতের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা তোমরা কবুল কর, তারা তা কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে হুকুম করেন তারা যেন তুর পাহাড় বনী ইসরাঈলের মাথার উপর উত্তোলন করেন। আমনি পাহাড় তাদের মাথার উপর মেঘখণ্ডের ন্যায় বুলতে লাগল, তাদের তখন বলা হল, তোমরা যদি তাওরাতকে তার সব কিছুসহ কবুল না কর এই পাহাড় তোমাদের মাথার উপর পড়বে। তখন তারা তা কবুল করল। তাদেরকে সিজদা করার হুকুম দেয়া হলো, তখন তারা সিজদা করল। তবে তারা পাহাড়ের দিকে আড় নজরে তাকিয়ে রয়েছিল। ইহুদীদের মধ্যে আজ পর্যন্ত এরূপ বলাবলি করে থাকে যে, যে সিজদার কারণে আমাদের উপর থেকে আযাব বিদূরিত হয়েছিল তার থেকে উত্তম সিজদা হতে পারে না।

আবু বকর ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মূসা (আঃ) যখন তাওরাতকে খুলে ধরলেন তখন পৃথিবীতে যত পাহাড়, গাছপালা ও পাথর রয়েছে সবই কম্পিত হয়ে উঠল, আর দুনিয়ার বালক বৃদ্ধ নির্বিশেষে যত ইহুদীর কাছে তাওরাত পাঠ করা হল তারা প্ৰকম্পিত হয়ে উঠল ও মাথা অবনত করল।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : ثم توليتم من بغير ذلك অর্থাৎ- তোমরা এই মহাপ্রতিশ্রুতি ও বিরাট ব্যাপার দেখার পর তোমাদের অঙ্গীকার ও

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছ।

অর্থাৎ— তোমাদের প্রতি রাসূল ও কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে যদি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা না থাকত। তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্ৰস্ত হতে।

w حمي ༡ ས་ অর্থাৎ— স্মরণ কর, যখন মূসা (আ) আপনি সম্প্রদায়কে বলেছিল। আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যিবোেহর আদেশ দিয়েছেন। তারা বলেছিল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ? মূসা বলল, আল্লাহর শরণ নিচ্ছি। যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল, ওটা কী রূপ? মূসা বলল, আল্লাহ বলেছেন, ‘এটা এমন গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্পবয়স্কও নয়— মধ্যবয়সী। সুতরাং তােমরা যা আদিষ্ট হয়েছ তা কর। তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল, এটার রং কি? মূসা বলল, আল্লাহ বলছেন, ‘এটা হলুদ বর্ণের গরু, এটার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদেরকে আনন্দ দেয়।’ তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল, তা কোনটি? আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছি এবং আল্লাহ ইচ্ছে করলে নিশ্চয়ই আমরা দিশা পাব। মূসা বলল, তিনি বলছেন, ওটা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, সুস্থ ও নিখুঁত। তারা বলল, এখন তুমি সত্য এনেছো যদিও তারা যাবোহ করতে প্ৰস্তৃত ছিল না, তবুও তারা এটাকে যবোহ করল। স্মরণ কর, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করছিলে।

তোমরা যা গোপন রাখছিলে, আল্লাহ তা ব্যক্ত করছেন। আমি বললাম, ‘এটার কোন অংশ দ্বারা ওকে আঘাত কর, এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন তােমাদেরকে দেখিয়ে থাকেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (২ : বাকারা ৪৬৭ – ৭৩)

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) উবাইদা সালমানী আবুল আলীয়া (র) মুজাহিদ আর সূদী (র) ও প্রাচীনকালের অনেক আলিম বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল খুবই ধনী ও অতিশয় বৃদ্ধ। তার ছিল বেশ কয়েকজন ভাতিজা। তারা তার ওয়ারিশ হবার জন্যে তার মৃত্যু কামনা করছিল। তাই একরাতে তাদের একজন তাকে হত্যা করল এবং তার লাশ চৌরাস্তায় ফেলে রেখে এল। আবার কেউ কেউ বলেন, ভাতিজাদের একজনের ঘরের সামনে তা রেখে এল। ভোর বেলায় হত্যাকারী সম্বন্ধে লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। তার ঐ ভাতিজা এসে কান্নাকাটি করতে লাগল এবং তার উপরে জুলুম হয়েছে বলে অভিযোগ করতে লাগল। অন্য লোকজন বলতে লাগল, তোমরা কেন ঝগড়া করছি এবং আল্লাহর নবীর কাছে গিয়ে কেন এটার ফয়সালা প্রার্থীনা করছি না? তাই মৃত ব্যক্তির ভাতিজা আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর কাছে আগমন করে তার চাচার হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ করল। মূসা (আঃ) তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার শপথ দিয়ে বললেন, কেউ যদি এ বিষয়ে কিছু জানে তাহলে সে যেন বিষয়টি আমাকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে এমন একটি লোকও পাওয়া গেল না, যে এ বিষয়ে জানে। তারা বরং মূসা (আ)-কে অনুরোধ করল তিনি যেন নিজ প্রতিপালককে এই বিষয়ে প্রশ্ন করে তা জেনে নেন। সুতরাং মূসা (আ) আপন প্রতিপালকের নিকট তা জানতে চান।

আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-কে হুকুম দিলেন; যাতে তিনি তাদেরকে একটি গাভী যবোহ

করতে আদেশ করেন। তিনি বললেন, :

অর্থাৎ – ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যিবোহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ তারা। প্রতি উত্তরে বলল, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছ? অর্থাৎ আমরা তোমাকে নিহত ব্যক্তি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছি আর তুমি আমাদের গরু যিবোহ করার পরামর্শ দিচ্ছ? মূসা (আঃ) বললেন, আমার কাছে প্রেরিত ওহী ব্যতীত অন্য কিছু বলার ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা’আলার শরণ নিচ্ছি। তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে প্রশ্ন করার জন্যে আবেদন করেছ, আল্লাহ তা’আলা প্রশ্নের উত্তরে এটা বলেছেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), উবায়দা, মুজাহিদ, ইকরিম, আবুল আলীয়া প্রমুখ বলেছেন, যদি তারা যে কোন একটি গাভী যবোহ করত তাহলে তার দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হত। কিন্তু তারা ব্যাপারটি জটিল করাতে তাদের কাছে এটা জটিল আকার ধারণ করেছিল। একটি মারফু হাসীসে এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে। তবে এটার সূত্রে কিছু ক্রটি রয়েছে। অতঃপর তারা গরুটির গুণাগুণ, রঙ ও বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তাদেরকে প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এমনভাবে জবাব দেয়া হল যে, এরূপ গরু খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াল। তাফসীর গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বস্তুত তাদেরকে একটি মধ্য বয়সী গরু যিবোহ করার জন্যে হুকুম দেয়া হয়েছিল। অন্য কথায়, এটা বৃদ্ধও নয়, আবার অল্প বয়সীও নয়।

Ն( Ն

এই অভিমতটি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা), মুজাহিদ, আবুল আলীয়া, ইকরামা, হাসান, কাতাদা (র) প্রমুখ তাফসীরবিদের। তারপর তারা নিজেদের জন্য সংকীর্ণতা ও জটিলতা ডেকে আনল। তারা গরুটির রং সম্বন্ধে প্রশ্ন করল। তাই তাদেরকে এমন লোহিতাভ হলুদ রং-এর কথা বলা হল, যা দর্শকদেরও আনন্দ দেয়। এই রংটি একান্তই দুর্লভ। এরপর তারা আরো সংকীর্ণতা ও জটিলতা সৃষ্টি করে বলল, ‘হে মূসা! তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল যে, তা কোনটি? আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছি এবং আল্লাহ ইচ্ছে করলে নিশ্চয়ই আমরা দিশা পাব।’ এই প্রসঙ্গে ইব্‌ন আবু হাতিম (র) ও ইব্‌ন মারদুওয়েহ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বরাতে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, ইসরাঈল যদি গরু সম্বন্ধে পরিচিতি লাভ করার ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ না বলত তাহলে কখনও তাদেরকে এ কাজ সম্পাদন করার জন্যে তাওফীক দেয়া হত না। তবে এ হাদীসের বিশুদ্ধতা সন্দেহমুক্ত নয়। আল্লাহ তা’আলাই অধিকতর জ্ঞাত।

আঁদ্রাহ তা’আলা বলেন :

অর্থাৎ— মূসা বলল, তিনি বলছেন, ওটা এমন এক গরু, যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি। সুস্থ, নিখুঁত। তারা বলল, এখন তুমি সত্য এনেছি। যদিও তারা

যবোহ করতে উদ্যত ছিল না। তবুও তারা তা যবোহ করল। (সূরা : বাকারা : ৬৮ – ৭১)

উক্ত আয়াতে আরোপিত এ বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনায় আরো দুষ্পাপ্য ছিল। কেননা এতে শর্ত আরোপ করা হয়েছে যেন গরুটি জমি চাষ ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার ফলে দুর্বল ও অসুস্থ না হয়ে থাকে, এবং তা যেন সুস্থ, সবল ও নিখুঁত হয়। এটি আবুল আলীয়া ও কাতাদা (র)-এর অভিমত। আয়াতে উক্ত এ44 44.৬% এর অর্থ হচ্ছে এটার মধ্যে নিজস্ব রঙ ব্যতীত এতে যেন অন্য কোন রঙ এর মিশ্রণ না থাকে। বরং এটা যাবতীয় দোষ ও অন্য সব রঙয়ের মিশ্রণ থেকে যেন নিখুঁত হয়। যখন গরুটিতে উল্লেখিত শর্ত ও গুণসমূহ আরোপিত করা হল তখন তারা বলল, এখন তুমি সত্য এনেছ। কথিত আছে যে, তারা এসব গুণবিশিষ্ট গরুটি খোঁজাখুঁজি করে এমন এক ব্যক্তির কাছে এটাকে পেয়েছিল, যে ছিলেন অত্যন্ত পিতৃভক্ত। তারা তার কাছ থেকে গরুটি কিনতে চাইল, কিন্তু সে তাদের কাছে গরুটি বিক্রি করতে রাজি হল না। তারা তাকে অত্যন্ত চড়ামূল্য দিয়ে গরুটি খরিদ করল।

সুদী (র) উল্লেখ করেছেন, তারা প্রথমত গরুটির সম-ওজনের স্বর্ণ দিয়ে গরুটি ক্রয় করতে চায়। কিন্তু গরুর মালিক রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার ওজনের দশগুণ স্বর্ণ দিয়ে তারা গরুটি খরিদ করল। অতঃপর আল্লাহর নবী মূসা (আ) এটাকে যবোহ করার নির্দেশ দিলেন। তারা গরুটি যবোহ করার ব্যাপারে প্রথমত ইতস্তত করছিল। পরে রাজি হল। এরপর আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে হুকুম আসল যেন তারা নিহত ব্যক্তিটিকে যবেহা কৃত গরুটির কোন অঙ্গ দ্বারা আঘাত করে। কেউ কেউ বলেন, উরুর গোশত দ্বারা আঘাত করার কথা বলা হয়েছিল; আবার কেউ কেউ কোমলাস্থি দ্বারা, আবার কেউ কেউ দুই কাঁধের মধ্যবর্তী গোশত দ্বারা আঘাত

VG

করার কথা বলা হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেন। যখন তারা মৃত ব্যক্তিকে ওটার দ্বারা আঘাত করল, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে পুনজীবিত করলেন এবং লোকটি উঠে দাঁড়াল। তার গলার শিরা থেকে রক্ত ঝরছিল। মূসা (আঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে তোমাকে হত্যা করেছে?’ সে বলল, ‘আমার ভাতিজা।’ তার পর সে পূর্বের মত অবস্থায় ফিরে গেল।

আল্লাহ তা’আলা বলেন :

‘এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন তোমাদের দেখিয়ে থাকেন। যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পোর।’ অর্থাৎ তোমরা যেমন আল্লাহ তা’আলার হুকুমে নিহত ব্যক্তির পুনজীবিত হওয়া প্রত্যক্ষ করলে, তেমনি আল্লাহ তা’আলা এক মুহুর্তে সমস্ত মৃতকে যখন ইচ্ছে তখন জীবিত করবেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন?

অর্থাৎ—তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীব সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *