২৬. কওমি শু’আয়ব বা মাদিয়ানবাসীর ঘটনা

কওমি শুআয়ব বা মাদিয়ানবাসীর ঘটনা

আল্লাহ্ তা’আলা সূরা আ’রাফে কাওমে লুতের কাহিনী শেষ করার পর বলেন :

মাদায়ানবাসীদের কাছে তাদের স্বগোত্রীয় শু’আয়বকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ

নেই। তোমাদের প্রতিপালক হতে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা মাপ ও ওজন ঠিকভাবে দেবে; লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না; তোমরা মু’মিন হলে তোমাদের জন্যে এটা কল্যাণকর। তার প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ভয় প্রদর্শনের জন্যে কোন পথে বসে থাকবে না, আল্লাহর পথে তাদেরকে বাধা দেবে না এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে না। স্মরণ কর, ‘তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে আল্লাহ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কিরূপ ছিল, তা লক্ষ্য কর। আমি যাসহ প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল বিশ্বাস না করে তবে ধৈর্যধারণ করা, যতক্ষণ না। আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। আর তিনিই শ্ৰেষ্ঠ মীমাংসাকারী। তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানগণ বলল, ‘হে শু’আয়াব! তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস করেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করবই। অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।’ ‘সে বলল, ‘কী!! আমরা তা ঘূণা করলেও?’ তোমাদের ধর্মদর্শ হতে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাতে ফিরে যাই, তবে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করব, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা না করলে আর তাতে ফিরে যাওয়া আমাদের কাজ নয়; সবকিছুই আমাদের প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত। আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ভর করি; ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যাভাবে মীমাংসা করে দাও; এবং তুমিই মীমাংসাকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।’ তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, ‘তোমরা যদি শু’আয়বকে অনুসরণ কর। তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল, ফলে তাদের প্রভাত হল নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পতিত অবস্থায়। মনে হল, শু’আয়বকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা যেন কখনও সেখানে বসবাস করেই নি। শু’আয়বকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারাই ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছিল। সে তাদের থেকে মুখ ফিরাল এবং বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তো তোমাদেরকে পৌঁছে দিয়েছি। এবং তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি; সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্যে কি করে আক্ষেপ করি!’ (৭ : ৮৫-৯৩)

সূরা হ্রদের মধ্যেও লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা বলার পর আল্লাহ বলেন :

মাদায়ানবাসীদের নিকট তাদের স্ব-গোত্রীয় শু’আয়বকে পাঠিয়েছিলাম; সে বলেছিল, ‘হে

নেই। মাপে ও ওজনে কম করো না। আমি তােমাদেরকে সমৃদ্ধিশালী দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদের জন্যে আশংকা করছি এক সর্বগ্রাসী দিনের শাস্তি। হে আমার সম্প্রদায়! ন্যায়-সংগতভাবে মাপবে ও ওজন করবে। লোকদেরকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম দেবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না, ‘যদি তোমরা মুমিন হও তবে আল্লাহ অনুমোদিত যা বাকি থাকবে তোমাদের জন্যে তা উত্তম; আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই।’ ওরা বলল, ‘হে শু’আয়ব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা যার ইবাদত করত, আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও না? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু, সদাচারী।’

সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখেছি কি, আমি যদি আমার প্রতিপালক-প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তার কাছ থেকে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করে থাকেন, তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকিব? আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি, আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি আমার

8SV)

সাধ্যমত সংস্কার করতে চাই। আমার কার্য-সাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে: আমি তারই উপর * নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার সাথে বিরোধ যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যাতে তোমাদের উপর তার অনুরূপ বিপদ আপতিত হবে যা আপতিত হয়েছিল নূহের সম্প্রদায়ের উপর, হ্রদের সম্প্রদায়ের উপর কিংবা সালিহর সম্প্রদায়ের উপর, আর লুতের সম্প্রদায় তো তোমাদের থেকে দূরে নয়। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থীনা কর ও তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা; আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু, প্ৰেমময়।’ তারা বলল, ‘হে শু’আয়ব! তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না এবং আমরা তো তোমাকে আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনবৰ্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও।’ সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনবৰ্গ আল্লাহর চাইতে অধিক শক্তিশালী? তোমরা তাকে সম্পূর্ণ পেছনে ফেলে রেখেছি। তোমরা যা কর আমার প্রতিপালক তা পরিবেষ্টন করে আছেন।

‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ করছি; তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কে মিথ্যাবাদী? সুতরাং তোমরা প্ৰতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।’ যখন আমার নির্দেশ আসল তখন আমি শু’আয়ব ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম, তারপর যারা সীমালংঘন করেছিল মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল; যেন তারা সেখানে কখনও বসবাস করেনি। জেনে রেখ, ধ্বংসই ছিল মাদয়ানবাসীদের পরিণাম; যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল ছামুদ ች ̊]ጓlቛ | (SS 8 br8-እ¢)

সূরা আল-হিজারে লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনার পর বলা হয়েছে :

/ w J. M M l MLM, W M w وإن كان أشكاب الأيكة لظالميكا. فَانتُقشطًا وثهم. واكهما لبرماه

a

আর ‘আয়কাবাসীরাও* তো ছিল সীমালংঘনকারী। সুতরাং আমি ওদেরকে শাস্তি দিয়েছি, এরা উভয়ই তো প্ৰকাশ্য পথের পাশে অবস্থিত। (১৫ : ৭৮-৭৯)

সূরা শু’আরায় উক্ত ঘটনার পর আল্লাহ বলেন : y Ꮝ . / AᎩ.Ꮂ 1. ル ク』(‘ ノ m / v 4u Y

১. আয়কা অর্থ গভীর অরণ্য। শু’আয়ব (আ)-এর সম্প্রদায় অরণ্যের অধিবাসী ছিল। আয়কা মাদায়নের পার্শ্বের অঞ্চল।

উভয় অঞ্চলের জন্য তিনি নবী ছিলেন।

২. উভয় শব্দ দ্বারা লুত (আ) ও শু’আয়ব (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের বসতির ধ্বংসস্তুপ বুঝানো হয়েছে।

8 Σ8

V a 々A./* العزيز الرجيم. আয়কাবাসীরা রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল যখন শু’আয়ব ওদেরকে বলেছিল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর। এর জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের কাছেই আছে। মাপে পূৰ্ণমাত্রায় দেবে; যারা মাপে ঘাটতি করে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না এবং ওজন করবে। সঠিক দাড়ি-পাল্লায়। লোকদেরকে তাদের প্রাপ্ত বস্তু কম দিবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না। এবং ভয় কর তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।’ তারা বলল, তুমি তো জাদুগ্ৰস্তাদের অন্তর্ভুক্ত; আমাদের মত একজন মানুষ। আমরা মনে করি, তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম। তুমি যদি সত্যবাদী হও, তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও। সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক ভাল জানেন তোমরা যা কর।’ তারপর ওরা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে ওদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি গ্রাস করল। এতো ছিল এক ভীষণ দিনের শাস্তি। এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু ওদের অধিকাংশই মুমিন নয়। এবং তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (২৬ : ১৭৬-১৯১) {

সিরিয়ার নিকটবতী মা’আন এলাকার একটি গ্রামের নাম। এর অবস্থান হিজায্যের পার্শ্বে ও লুত সম্প্রদায়ের এহদের সন্নিকটে। লুতের সম্প্রদায়ের পরেই এই সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। মাদায়ানবাসীরা ছিল মাদৃয়ান ইব্‌ন মাদয়ানে ইব্‌ন ইবরাহীম খলিলুল্লাহর সন্তান। শু’আয়ব ইব্‌ন মীকীল ইব্‌ন য়াশাজান তাদের নবী। ইব্‌ন ইসহাক উপরোক্ত মত বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, শু’আয়ব (আ)-কে সুরিয়ানী ভাষায় বলা হয় বিনযুন। কিন্তু এ মত গ্রহণযোগ্য নয়। শু’আয়ব (আ)-এর নিসাবনামায় বিভিন্ন মত দেখতে পাওয়া যায়। কেউ বলেন, শু’আয়ব ইব্‌ন য়াশখার ইব্‌ন লাবায় ইব্‌ন ইয়াকুব। কেউ বলেছেন, শু’আয়ব ইব্‌ন নুওয়ায়ব ইব্‌ন আয়ফা ইব্‌ন মাদায়ান ইব্‌ন ইবরাহীম। কারও মতে, শু’আয়ব ইব্‌ন দায়ফুর ইব্‌ন আয়ফা ইব্‌ন ছাবিত ইব্‌ন মাদৃয়ান ইব্‌ন ইবরাহীম। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন মত রয়েছে।

ইব্‌ন আসাকির (র) বলেন, হযরত লুত (আ)-এর কন্যা ছিলেন। হযরত শু’আয়বের মা; মতান্তরে, তিনি ছিলেন তাঁর নানী। যে কয়জন লোক ইবরাহীম (আ)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল

8 Sy¢

শু’আয়ব (আ) ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাথে হিজরত করেন। ও তাঁর সাথে দামেশকে যান। ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ বলেন, শু’আয়ব ও মালগাম দু’জনে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপের দিন তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। উভয়ে তার সাথে সিরিয়ায় হিজরতও করেন। সেখানে তিনি লুত (আ)-এর দুই কন্যাকে তাদের দু’জনের সাথে বিবাহ দেন। ইব্‌ন কুতায়বা এভাবেই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত কোন মতই সন্দেহমুক্ত

নয়।

আবু উমর ইব্‌ন আবদুর বার (র) ‘ইসতি’আব’ গ্রন্থে সালামা ইব্‌ন সা’দ আল আনায়ী প্রসঙ্গে লিখেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে আগমন করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর আনাযা পর্যন্ত তিনি তাঁর বংশ পঞ্জিকাও উল্লেখ করেন। রাসূল (সা) বললেন, কতই না। উত্তম এ আনাযা গোত্র, তারা ছিল নির্যাতিত এবং এরাই সেই সাহায্যপ্ৰাপ্ত শু’আয়বের অনুসারী এবং মূসা (আ)-এর শ্বশুর গোষ্ঠী। এ বর্ণনা সঠিক হলে প্রমাণিত হয় যে, হযরত শু’আয়ব মূসা (আ)-এর সমগোত্রীয় এবং তিনি আদি আরবদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁর কবীলার নাম আনাযা। তবে এরা আনাযা ইব্‌ন আসাদ ইব্‌ন রাবীআ ইব্‌ন নাযার ইব্‌ন মাদ ইব্‌ন আদনান গোত্র নয়। কেননা, এই আনা যা উপরোক্ত আনাযার দীর্ঘকাল পরে এসেছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সহীহ ইব্‌ন হিব্বান গ্রন্থে আম্বিয়া ও রসূলগণের বিবরণ অধ্যায়ে হযরত আবু যর (রা)-এর বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করীম (সা) বলেছেন : নবীদের মধ্যে চারজন নবী আরবের যথা—হ্রদ, সালিহ, শু’আয়ব ও তোমাদের নবী, হে আবু যর! কোন কোন প্রাচীন বিজ্ঞ আলিম হযরত শু’আয়ব (আঃ)-কে ‘খতীবুল আম্বিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা, তিনি তার সম্প্রদায়কে ঈমান গ্রহণের জন্যে যে দাওয়াত পেশ করেন তার শব্দ ও ভাষা ছিল অতি উচ্চাঙ্গের এবং বক্তব্য ও উপস্থাপনা ছিল অতি প্ৰাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী। ইব্‌ন ইসহাক (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসূল (সা) যখনই হযরত শু’আয়ব (আ)-এর উল্লেখ করতেন তখনই তিনি বলতেন : তিনি ছিলেন খতীবুল আম্বিয়া (নবীগণের খতীব)। মাদৃয়ানবাসীরা ছিল কাফির, ডাকাতি ও রাহাজানি করত, পথচারীদেরকে ভয়-ভীতি দেখাত এবং আয়কার উপাসনা করত। আয়কা ছিল পার্শ্ববতীর্ণ অরণ্যের একটি ঘন শাখা-প্ৰশাখা বিশিষ্ট গাছের নাম। তাদের লেন-দেনের ক্ষেত্রে তারা ছিল অত্যন্ত জঘন্য। ওজনে এবং মাপে তারা খুবই কম দিত। পক্ষান্তরে কারও থেকে নেওয়ার সময় বেশি বেশি নিত। আল্লাহ তাদেরই মধ্য থেকে শু’আয়ব (আ)-কে তাদের রসূলক্কপে প্রেরণ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানান। মাপে ও ওজনে কম দেয়া এবং পথিকদের ভয়-ভীতি প্ৰদৰ্শন প্রভৃতি দুষ্কর্ম থেকে নিষেধ করেন। কিছু লোক তাঁর প্রতি ঈমান আনল, কিন্তু অধিকাংশই কুফরীর উপর অটল থাকল। ফলে আল্লাহ তাদের উপর কঠিন আযাব নাযিল করেন।

আল্লাহর বাণী :

মাদৃয়ানবাসীদের কাছে তাদের স্ব-গোত্রীয় শু’আয়বকে প্রেরণ করেছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। (৭ : ৮৫)

অর্থাৎ আমি তোমাদের নিকট যা কিছু বিধি-বিধান নিয়ে এসেছি তার সত্যতার উপর সুস্পষ্ট দলীল ও অকাট্য প্রমাণ এসে গেছে। আর তিনি যে আমাকে রসূল করে পাঠিয়েছেন তার প্রমাণও এসে গেছে। এই দলীল ও প্রমাণ হল সেই সব মু’জিযা। যা হযরত শু’আয়ব (আ)-এর হাতে আল্লাহ প্রকাশ করেন। সেই মু’জিযাসমূহের বিস্তারিত বিবরণ আমাদের কাছে না পীেছলেও আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ (;, ) থেকে মোটামুটি এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

মাপে ও ওজনে পুরোপুরি দাও। মানুষের প্রাপ্য বস্তু কম দিও না এবং সমাজকে সংস্কারের পর ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করো না। (৭ : ৮৫)

এ আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে জুলুমের পথ পরিহার করে ইনসাফের পথে চলার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদেরকে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন। অতঃপর বলেন :

ذالكم حُية لكم إث عُثكم مؤمنين. کو لاً کُفیت کا پگلا صب کراچل كؤيدًاؤن.

‘তোমরা মু’মিন হলে এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর এবং ভয় দেখাবার উদ্দেশ্যে প্রতিটি রাস্তায় বসে থেকো না।’ অর্থাৎ পথের উপর বসে পথিকদেরকে ভয় দেখিয়ে তাদের সম্পদ ও শুল্ক আদায় করো না। উপরোক্ত আয়াত (.634.34 % » • তুর্থ, 13:44, 1) এর ব্যাখ্যায় সাহাবীদের বরাত দিয়ে সুদী (র) বলেছেন যে, তারা পথিকদের থেকে তাদের পণ্য দ্রব্যের এক-দশমাংশ টোল আদায় করত। ইসহাক ইব্‌ন বিশর… ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, শু’আয়ব (আ)-এর সম্প্রদায় ছিল সীমালংঘনকারী, বিদ্রোহী— তারা রাস্তার উপরে বসে থাকত ৩.*/, $1;2. 4, অর্থাৎ তারা মানুষের নিকট থেকে তাদের এক-দশমাংশ উসূল করত। এ প্রথা তারাই সর্বপ্রথম চালু করে।

‘আল্লাহর প্রতি যারা ঈমান পোষণ করে তাদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিও না। আর আল্লাহর পথের মধ্যে বক্রতা তালাশ করো না।’ আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার ডাকাতি ও দীনের ডাকাতি উভয়টা থেকে নিষেধ করে দেন।

‘স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে। অতঃপর আল্লাহ

তােমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেন, আর তোমরা লক্ষ্য করে দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কেমন হয়!’ (৭ : ৮৫-৮৬)

जाव्ल-विनाशा ७शान् निशशों 8Տ Գ

প্রথমে তারা সংখ্যায় কম ছিল, পরে আল্লাহ তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন— এই নিয়ামতের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এরপর যদি তারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথের বিরুদ্ধে যায় তাহলে সে জন্যে যে শাস্তি আসবে তার হুমকি দেয়া হয়। অন্য এক ঘটনায় তাদের উদ্দেশে

سمہ. / /۸ س% A عذاب یو متجایطره ‘মাপে ও ওজনে কম দিও না, আমি তো তোমাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। আমি তোমাদের উপর এক সামগ্রিক আযাব আসার আশংকা করছি।’ অর্থাৎ তোমরা যে অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে গেছ তার উপর অবিচল থেকে না, অন্যথায় তোমাদের ধন-সম্পদের বরকত আল্লাহ তা’আলা উঠিয়ে নেবেন, তোমাদেরকে অভাবগ্ৰস্ত করে দেবেন। উপরন্তু থাকবে পরকালের আযাব। আর যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই রকম উভয় শাস্তি একত্রিত হবে, সে ব্যক্তি মহা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই কারণে আল্লাহ তাদেরকে প্রথমে হালকাভাবে ঐসব কাজ থেকে নিষেধ করেছেন এবং দুনিয়ায় আল্লাহর নিয়ামত উঠিয়ে নেয়ার ভয় দেখিয়েছেন ও আখিরাতের শাস্তি থেকে হুশিয়ার করেছেন এবং কঠোরভাবে সাবধান করে দিয়েছেন।

ভূতঃপর আল্লাহ্ নির্দেশের সুরে বুলেন:

হে আমার সম্প্রদায়! ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপবে ও ওজন করবে। লােকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে আল্লাহ অনুমোদিত যা বাকি থাকবে তোমাদের জন্যে তাই উত্তম। আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই। (s» 3 br8-brVo)

ٹل

2 4 حمر ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও হাসান বসরী (র) 臀 115%; 1 -এর ব্যাখ্যায় বলেছেন : 8f858اً قمة الة R الة الث’ – iTS* لك رزق الله خير لكم من اخذ اموال الناس তোমাদেরকে দান করেন তা ঐসব সম্পদের তুলনায় অনেক ভাল যা তোমরা মানুষের থেকে জোরপূর্বক আদায় কর।’

ইব্‌ন জারীর (র) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন; ওজনে কম দিয়ে মানুষের সম্পদ নেয়ার চাইতে মাপ ও ওজন সঠিকভাবে পুরোপুরি দেওয়ার পর যা কিছু মুনাফা অবশিষ্ট থাকে, তা-ই তোমাদের জন্যে বহুগুণে উত্তম। ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে এরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। হাসান বসরী (র) যে ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নের আয়াত তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ :

‘বল, পবিত্র বস্তু ও অপবিত্ৰ বস্তু সমান হয় না, যদিও অপবিত্ৰ বস্তুর আধিক্য তোমার কাছে আকর্ষণীয় হোক না কেন।’ অর্থাৎ হালাল জিনিস। যদি কমও হয় তবুও তা তোমাদের জন্যে ভাল হারাম জিনিস থেকে, যদিও তা বেশি হয়। কেননা, হালাল জিনিস কম হলেও তা বরকতময়; পক্ষান্তরে হারাম জিনিস বেশি হলেও তা বরকত শূন্য।

* у м 2

আল্লাহ द6ठलGछन्म ६ 4 الزبا و برای الضدّقابتي LII یمحق অর্থাৎ—’আল্লাহ সূদকে বিলুপ্ত করেন এবং দান-সাদকাকে বৃদ্ধি করেন।’

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : সূদের মাল যতই বেশি হোক না কেন, ক্ৰমান্বয়ে তা ফুরিয়ে যায়। ইমাম আহমদ (র) তার মুসনাদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। রসূল (সা) আরও বলেছেন, ক্ৰিয়-বিক্রয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্যে গ্রহণ ও বর্জনের ইখতিয়ার থাকে। যতক্ষণ তারা আলাদা হয়ে না যায়। যদি তারা সততার সাথে বেচা-কেনা করে এবং পণ্যের দােষ-গুণ প্রকাশ করে দেয় তাহলে এ ব্যবসায়ে উভয়কে বরকত দান করা হয়। আর যদি তারা পণ্যের দোষ-গুণ গোপন রাখে এবং মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তাহলে উভয়ের থেকে এ বেচা-কেনায় বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। মোটকথা, হালাল মুনাফা কম হলেও তাতে বরকত হয়, কিন্তু হারাম মুনাফা বেশি হলেও তাতে বরকত থাকে না। এ কারণেই নবী। শু’আয়ব (আ) বলেছিলেন :।

আল্লাহর অনুমোদিত যা-ই বাকি থাকে তা-ই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বিশ্বাসী

হও। আল্লাহর বাণী : 1$( عليكم يحفيظ L4, ‘আমি তােমাদের তত্ত্বাবধায়ক নাই’ অর্থাৎ

তোমাদেরকে আমি যা করার নির্দেশ দিয়েছি তোমরা তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে কর, আমাকে বা অন্যকে দেখাবার জন্যে নয়।

আল্লাহর বাণী :

তারা বলল, হে শু’আয়াব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃ-পুরুষরা যার ইবাদত করতো আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ

সম্পর্কে যা করি তাও না? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু, সদাচারী। (১১ : ৮৭)

শু’আয়ব (আঃ)-এর সম্প্রদায় এ কথাটি ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাসস্বরূপ বলেছে। তারা বলেছে, এই যে সালাত তুমি পড়ছ তা কি তোমাকে আমাদের বিরোধিতা করতে বলে যে, আমরা কেবল তোমার আল্লাহরই ইবাদত করব এবং আমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তাদেরকে ত্যাগ করে দেব? কিংবা তুমি যেভাবে চাও সেভাবে আমরা আমাদের লেনদেন করুত্ব অ্যর যেভাবে চাও না সেভাবে আমাদের পছন্দনীয় লেনদেন করা ছেড়ে দেব? 54,411 458 61%, 4; &%। (নিশ্চয় তুমি একজন ধৈর্যশীল, সত্যপন্থী) এ প্রসঙ্গে হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা), মায়মুন ইব্‌ন মিহরান, ইব্‌ন জুরায়জ, যায়দ ইব্‌ন আসলাম (রা) এবং ইব্‌ন জারীর (র) বলেন, এ উক্তি তারা ঠাট্টা ও বিদ্ৰপাত্মকভাবে করেছে।

শু’আয়ব বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এ ব্যাপারে তোমরা ভেবে দেখেছি কি, আমি যদি আমার পালনকর্তার সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, আর তিনি যদি আমাকে তার কাছ থেকে উত্তম রিফিক দান করেন, তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য থেকে বিরত থাকবো? আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি, আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি আমার সাধ্যমত সংস্কার করতে চাই। আমার কার্য-সাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে। আমি তারই উপর নির্ভর করি এবং আমি তারই অভিমুখী। (১১ : ৮৮)

এখানে হযরত শু’আয়ব (আ) কোমল ভাষায় কিন্তু সুস্পষ্ট ইংগিতে তাঁর সম্প্রদায়কে সত্যের

দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন। তিনি বলছেন-তোমরা কি একটু চিন্তা করে দেখেছ, হে মিথ্যাবাদীর

‘л А ‘سمي

দল! &J% € % ® » °L» ঐ.34 3্য ‘আমি যদি আমার রবের প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত

থাকি অর্থাৎ আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশের উপর যে, তিনি আমাকে তােমাদের নিকট রসূলক্সপে

YW yn y Д/ л ‘ А ( / / / . – – এবং তার কাছ থেকে আমাকে উত্তম রিযিক ورزقانی میانه رزقا حسننا : ۴۹&) d۹۹۹۴۹ع দান করেছেন’ উত্তম রিযিক অর্থ নবুওত ও রিসালাত। অর্থাৎ তোমরা যদি তা বুঝতে না পার, তবে তোমাদের ব্যাপারে আমার আর কি করার আছে? এ কথাটি ঠিক তদ্রুপ যা নূহ (আঃ) তাঁর وما أريد أن أخالهكم اللى ما أنهاكم علثة . . effect 46f8676

‘যে কাজ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করি আমি সে কাজ নিজে করতে ইচ্ছা করি না।’ অর্থাৎ তোমাদেরকে যে কাজ করতে আদেশ করি সে কাজ সর্বপ্রথম আমিই করি; আর যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে সর্বপ্রথম আমি-ই বিরত থাকি। বস্তৃত পক্ষে এটা একটা উৎকৃষ্ট ও মহান গুণ। এর বিপরীত আচরণ অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট। বনী ইসরাঈলের শেষ দিকের আলিম ও ধর্মোপদেশদাতাগণ এই দোষে দুষ্ট ছিলেন। আল্লাহ বলেন, :

نی ۰

‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের আদেশ দাও এবং নিজেদেরকে বিস্মৃত হও? অথচ তােমরাই তো কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝি না?’ (২ : ৪৪)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায়। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে— রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। তার পেট থেকে নাড়িতুড়ি বের হয়ে যাবে এবং তা নিয়ে সে ঘুরপাক খেতে থাকবে, যেমনটি গাধা আটা পেষার চাব্ধি নিয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। দোযখবাসীরা তার কাছে এসে জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার একি দশা, তুমি না। সৎ কাজের আদেশ দিতে ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে? সে বলবে, হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম। কিন্তু নিজে তা করতাম না এবং অসৎ কাজ থেকে

8 Sqo

নিষেধ করতাম। কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম। এ আচরণ নবীদের নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী—পাপিষ্ঠ ও দুৰ্বত্তদের নীতি। পক্ষান্তরে জ্ঞানী-গুণী উলামা যারা না দেখেই আল্লাহকে ভয় করে চলে তাদের অবস্থা হয় সেই রকম, যেমন নবী। শু’আয়ব (আঃ) বলেছেন :

অর্থাৎ—আমার যাবতীয় কর্মতৎপরতার উদ্দেশ্য হল, সাধ্য য়ী কথা ও কাজের সংশোধন ও সংস্কার করা। .وما توفيقى الاً بالله. عليه توكلك وإليه أنيت

অর্থাৎ—’সর্বাবস্থায় আল্লাহই আমাকে সাহায্য ও ক্ষমতা দান করবেন। সকল বিষয়ে তার উপরই আমি ভরসা রাখি এবং সকল ব্যাপারে তার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তন করি।’ এ হল তারাগীব বা উৎসাহ প্ৰদান। এরপর হযরত শু’আয়ব (আ) কিছুটা তারহীব বা ধমকের সুরে

বলেন, :

হে আমার সম্প্রদায়! আমার বিরোধিতা যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যাতে তোমাদের উপর তার অনুরূপ বিপদ আসবে, যেরূপ বিপদ আপতিত হয়েছিল কওমে নূহ, কওমে হ্রদ কিংবা কাওমে সালিহর উপর আর কওমে লুত তো তোমাদের থেকে খুব দূরে নয়। (১১ : ৮৯)

অর্থাৎ আমার সাথে তোমাদের শক্রিতা এবং আমি যে দীন নিয়ে এসেছি তার সাথে বিদ্বেষ ভাব যেন তোমাদেরকে গুমরাহী, মুর্থতা ও শক্রতার উপর অবিচল থাকতে বাধ্য না করে। এরূপ হলে তোমাদের উপর সেই ধরনের আযাব ও শাস্তি আসবে, যে ধরনের আযাব ও শাস্তি এসেছিল কাওমে নূহ, কওমে হ্রদ ও কাওমে সালিহ-এর মিথ্যাচারী বিরুদ্ধাচারীদের উপর।

  1. 4 … <

……. && %34 % …, (কাওমে লুত তাে তােমাদের থেকে দূরে নয়) দূরে নয়।’ এই কথাটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে; (১) সময়ের দিক থেকে, অর্থাৎ কুফার ও জুলুমের কারণে কওমে লুতের উপর যে শাস্তি এসেছিল সে ঘটনা বেশি দিনের নয়। তাদের সব বর্ণনাই তোমাদের কাছে পৌঁছেছে। (২) স্থান ও অবস্থানের দিক দিয়ে। অর্থাৎ কিওমে লুতের বিধ্বস্ত এলাকা তোমাদের বাসস্থান থেকে দূরে নয়। (৩) নীতি ও কর্মের দিক থেকে। অর্থাৎ কিওমে লুত যেমন ডাকাতি-রাহাজানি করত, মানুষের ধন-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নিত এবং বিভিন্ন রকম গোপন ফাদ আঁটত, তোমরাও তাই করছি। অবশ্য উপরোক্ত তিনটি মতকে এখানে একত্রেও বলা যেতে পারে, যেমন কাওমে লুত সময়ের দিক থেকে, অবস্থানের দিক থেকে এবং কর্মনীতির দিক থেকে দূরে নয়। অতঃপর ভয় ও আগ্রহ সৃষ্টি সমন্বিত আহবানস্বরূপ বলেন :

‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থীনা কর, তার কাছে তওবা কর। আমার প্রতিপালক নিশ্চয় দয়ালু প্ৰেমময়।’ (১১ : ৯০)

8

অর্থাৎ তোমরা যেসব অপরাধে জড়িত আছ, তা বর্জন কর এবং দয়াময় প্ৰেমময় প্রতিপালকের নিকট তওবা কর। কেননা, যে ব্যক্তি তাঁর কাছে তওবা করে, তিনি তার তওবা কবুল করেন।

তারা বলল, হে শু’আয়ব! তুমি যা বল তার অধিকাংশই আমরা বুঝি না, আমরা তো তোমাকে আমাদের মধ্যে দুর্বল-শক্তিহীন দেখতে পাচ্ছি। (১১ : ৯১)

ইব্‌ন আব্বাস, সাঈদ ইব্‌ন জুবোয়র ও ছাওরী (রা) বলেছেন, হযরত শু’আয়ব (আঃ)-এর চােখে দৃষ্টিশক্তি ছিল না। মারফু হাদীসে বর্ণিত, আল্লাহর মহব্বতে নবী। শু’আয়ব (আ) এতো অধিক পরিমাণ কান্নাকাটি করেন যে, তিনি অন্ধ হয়ে যান। আল্লাহ তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, হে শু’আয়াব! তোমার কান্নাকাটি কি জাহান্নামের ভয়ে, নাকি জান্নাতের লোভে? শু’আয়ব (আ) বলেন, বরং আপনার মহব্বতেই কাদি। আমি যখন আপনাকে দেখব, তখন আমার প্রতি কি করা হবে তার পরোয়া আমি করি না। আল্লাহ তখন ওহীর মাধ্যমে জানালেন, হে শু’আয়ব! আমার সাথে তােমার সাক্ষাৎ খুবই আনন্দময় হবে। এ জন্যে আমি ইমরানের পুত্ৰ মূসা কালীমুল্লাহকে তোমার খিদমতে নিয়োগ করেছি। এ হাদীস ওয়াহিদী … শাদদাদ ইব্‌ন আমীন (রা) সূত্রে রসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেন। কিন্তু এটা অত্যন্ত গরীব’ হাদীস। খাতীব বাগদাদী (র) একে যায়ীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

. তােমার আত্মীয়বর্গ না থাকলে আমরা তােমাকে পাথর মেরে হত্যা করতাম। তুমি আমাদের উপর শক্তিশালী নও। (১১ : ৯১)

এটি ছিল তাদের কট্টর কুফারী ও জঘন্য শক্রিতার বহিঃপ্রকাশ। এ কারণেই তারা বলেছেঃ Us*’, LA – I_ *< 4_a + ‘, L2 (তুমি যা বল তার অধিকাংশই আমরা বুঝি না।) অর্থাৎ আমরা তা উপলব্ধি করি না। কেননা ওসব আমরা পছন্দ করি না, চাইও না। ওর প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ নেই, আকর্ষণও নেই। ওদের এ কথাটি ঠিক কুরায়শ কাফিরদের সেই কথার সাথে মিলে যায়, যা তারা রসূলুল্লাহ (সা)-কে উদ্দেশ করে বলেছিল?

ওরা বলে, তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহবান করছে সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণ-আচ্ছাদিত। আমাদের কানে আছে বধিরতা এবং আমাদের ও তােমার মাঝে রয়েছে অন্তরাল। সুতরাং তুমি তোমার কাজ কর, আমরা আমাদের কাজ করি। (৪১ : ৫)

غی سمي

[‘a’, … …’ } @1_ { »1% (আমরা আমাদের মধ্যে তােমাকে দুর্বল দেখতে পাচ্ছি)

سمم ‘تمي == سمي অর্থাৎ নিঃসঙ্গ ও পরিত্যাজ্য এ1 ^ 4, ১১, অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যদি তোমার গোত্র ও

5*4 ه 41 515 964) لرجمنالك وما اتت علينا يعزيز 1 stRRR9f all 8i R Sة তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করতাম। তুমি আমাদের উপর শক্তিশালী নও।)

(হে আমার সম্প্রদায়! আমার আত্মীয়-স্বজন কি আল্লাহর চাইতেও তোমাদের উপর অধিক শক্তিশালী?)। অর্থাৎ তোমরা আমার গোত্র ও স্বজনদেরকে ভয় কর এবং তাদের কারণে আমাকে খাতির করছ, অথচ, আল্লাহর পাকড়াওকে ভয় করছ না এবং আল্লাহর রসূল হওয়ার কারণে আমাকে খাতির করছ না। ফলে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমার গোত্র ও আত্মীয়-স্বজনই তােমাদের উপর আল্লাহর চাইতে অধিক শক্তিশালী।

th h %d’, &র্থ41 667.347 41% (আর আল্লাহকে তোমরা পশ্চাতে ফেলে রেখেছি)। অর্থাৎ –

ফুর দিকে তোমরা পিঠ দিয়ে রেখেছে। … … … 651.4% LK) 046 56), (তোমরা যা-ই

سمعہ سمي قة কর, আমার প্রতিপালক তা পরিবেষ্টন করে আছেন।) অর্থাৎ তোমরা যা কিছু কাজ-কর্ম কর না কেন সে সব বিষয়ে আল্লাহ পূর্ণভাবে অবগত আছেন। যখন তাঁর কাছে ফিরে যাবে, তখন তিনি এর প্রতিফল দান করবেন।

لنی معکم رفتن ب . হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের অবস্থানের উপর থেকে কাজ কর, আমি আমার কাজ করতে থাকি। অচিরেই জানতে পারবে যে, আযাব। কার উপর আসে, যা তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বে? এবং আরও জানতে পারবে যে, মিথ্যাবাদী কে? তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও

তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম। (সূরা হ্রদ : ৯৩)

এটা স্বাভাবিক আদেশ নয় যে, তাদেরকে তাদের রীতি-নীতি ও অভ্যাস পদ্ধতির উপরে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বরং এটা ধমকের সুরে কঠোর হুশিয়ারি বাণী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শীঘই জানতে পারবে যে, পরকালের শুভ পরিণতি কার ভাগ্যে

* メ○ জুটে এবং ধ্বংস ও বিনাশ কাকে গ্ৰাস করে। ৪-৫১-এ 432.164 4_1_1_5_% (কার উপর

* * s Y n r ހ/- مه / व्ली র আযাব আসে) এ আযাব দুনিয়ায় তাদের উপর পতিত আযাবকে বুঝান হয়েছে।

A 7 كا ላ 4 / ሪኃ / / =

এবং তাদের উপর স্থায়ী আযাব চেপে বসবে)-এ আযাব হল( – ویچل علیهر عذاب مقاثی আখিরাতের আযাব। এ 131K 54 52.6 (আর কে মিথ্যাবাদী) অর্থাৎ যে বিষয়ে সংবাদ দেয়া হচ্ছে। সুসংবাদ ও সতর্কবাণী শুনান হচ্ছে সে বিষয়ে তােমাদের ও আমার মধ্যে কে মিথ্যাবাদী

بر 2 » তা অতি শীঘ্রই তােমরা জানতে পারবে। এ%5* K&4 🙂 13:01, ‘তোমরাও অপেক্ষা

is

سمي لغة = কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করতে থাকি।’ নিম্নের আয়াতে এ আয়াতের সাদৃশ্য আছে, যাতে বলা হয়েছে :

আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল বিশ্বাস না করে, তবে ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী। তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানগণ বলল, ‘হে শু’আয়ব! তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস করেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবই। অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।’ সে বলল, কী আমরা তা ঘূণা করলেও? তোমাদের ধর্মদর্শ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাতে ফিরে যাই। তবে তো আমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করব। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা না করলে আর ওতে ফিরে যাওয়া আমাদের কাজ নয়। সব কিছুই আমাদের প্রতিপালকের জ্ঞানময়ত্ত। আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ভর করি; হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই মীমাংসাকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (৭ : ৮৭-৮৯)

শু’আয়ব (আ)-এর সম্প্রদায় তাদের ধারণা মতে ঈমান গ্রহণকারীদেরকে পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে নেয়ার কামনা করেছিল। নবী। শু’আয়ব (আ) তাদের এ আশা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, : %-৫১৩৫। পূর্ব;; (আমরা যদি অপছন্দ করি তবুও কি?)। অর্থাৎ এরা স্বেচ্ছায় তােমাদের ধর্মে ফিরে আসবে না। যদি ফিরে আসে। তবে বুঝতে হবে শক্তি প্রয়ােগের ফলে অসন্তুষ্টি ও অনিচ্ছায় ফিরে এসেছে। কেননা, আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে যে ব্যক্তি ঈমান আনে তার সে ঈমান কেউ কেড়ে নিতে পারে না, কেউ তাকে তা থেকে ফিরাতে পারে না, কারও পক্ষে তা সম্ভবও নয়। এ জন্যেই বলেছেন :

‘আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যােব। যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাই। অথচ তিনি আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমাদের কাজ নয়। ঐ ধর্মে ফিরে যাওয়া কিন্তু আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যদি চান। আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করছি।’ অর্থাৎ আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই আমাদের রক্ষাকারী। সকল বিষয়ে তিনিই আমাদের আশ্রয় স্থল। অতপর হযরত শু’আয়ব (আ) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন এবং তারা যে

শাস্তির যোগ্য তার সত্ত্বর আগমন কামনা করেন। তিনি বলেন :

سمي ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যে ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দিন যথার্থ ফয়সালা। আপনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালা দানকারী।’ (৭ : ৮৯)

এভাবে হযরত শু’আয়ব (আ) তাঁর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট প্রার্থীনা করেন। আর আল্লাহর রাসূলদের যারা অস্বীকার করে, অবাধ্য হয় ও বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের বিরুদ্ধে রসূলদের প্রার্থীনা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন না। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সম্প্রদায়ের লোক যে নীতির উপর ছিল তার উপরই তারা অটল অবিচল হয়ে রইল :

তায় সম্প্রদায়ের কাফির সর্দাররা বলল : যদি তোমরা শু’আয়বের অনুসরণ কর, তবে নশ্চিতই ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে।

1183:Sll ‘অনন্তর তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল। ফলে তারা সকাল বেলায় ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।’ (৭ : ৯০-৯১)

সূরা আ’রাফে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করেছিল। অর্থাৎ এক মহা কম্পন তাদের গোটা আবাসভূমিকে সজোরে আঘাত করে। ফলে তাদের দেহ থেকে তাদের রূহ উধাও হয়ে যায়। গোটা এলাকার জীব-জন্তু জড়-বস্তুর ন্যায় নিশ্চল হয়ে পড়ে। তাদের শবদেহগুলো নিথর হয়ে যত্রতত্র পড়ে থাকে। উক্ত জনগোষ্ঠীর উপর আল্লাহ বিভিন্ন প্রকার আযাব ও শাস্তি নাযিল করেন। যখন তারা বিভিন্ন প্রকার অন্যায় ও জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হলো, তখন আল্লাহ তাদের উপর মহাকম্পন পাঠালেন। যার ফলে সকল চলাচল মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায়। বিকট আওয়াজ পাঠান যার ফলে অপর সকল আওয়াজ নীরব হয়ে যায়। আগুনের মেঘ পাঠান, যার লেলিহান শিখা চতুর্দিক থেকে তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলে। কিন্তু বিভিন্ন সূরায় আলোচনার • পূর্বাপরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেখানে যেমন প্রয়োজন আল্লাহ। সেখানে ততটুকুই উল্লেখ করেছেন। সূরা আ’রাফের বক্তব্যে কাফির সর্দাররা আল্লাহর নবী ও তার সাথীদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এলাকা থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় অথবা তাদেরকে তাদের পূর্বের কুফারী ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। এই পটভূমিতে আল্লাহ বলেন :

‘অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে আঘাত করল। ফলে তারা তাদের ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল’।’

এখানে তাদের বহিষ্কারের হুমকি ও ধমকের মোকাবিলায় ভূমিকম্পের কথা এবং ভীতি প্রদর্শনের মোকাবিলায় ভয়ের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং পূর্বাপর আলোচনার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়েছে। অপর দিকে সূরা হ্রদে বলা হয়েছে এক বিকট শব্দ তাদেরকে আঘাত করে।

– 8ՀՓ

ফলে তারা নিজেদের ঘর-বাড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে। এর কারণ ঐ সূরায় বর্ণিত হয়েছে যে, তারা নবীকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করে বলতো : –

‘তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা যেগুলোর ইবাদত করত। আমরা তা বর্জন করি? কিংবা আমাদের ধনসম্পদ আমাদের ইচ্ছামত ব্যবহার না করি? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু, সদাচারী।’ (১১ : ৮৭)

সুতরাং আল্লাহর রসূলকে এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলার কারণে এখানে এই ভয়ানক বিকট শব্দের উল্লেখ সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। সূরা শু’আরায় বলা হয়েছে যে, এক মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আযাব তাদেরকে গ্ৰাস করেছিল। এর কারণ হল, তারা এ জাতীয় আযাব নিয়ে আসার জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। সুতরাং তাদের আগ্রহ অনুযায়ী সেই আযাবের কথা বলাই সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বিবেচিতৃ হয়েছে। কেননা তারা বলেছিল?

‘তুমি তাে জাদুগ্ৰস্তাদের অন্তর্ভুক্ত। তুমি আমাদেরই মত একজন মানুষ বৈ তাে নও। আমাদের ধারণা, তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যদি সত্যবাদী হও, তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও। সে বলল, তোমরা যা কর, আমার পালনকর্তা সে সম্পর্কে

ভাল জানেন।’ (২৬ : ১৮৫-১৮৯)

আল্লাহ বলেন;:পর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করলো। ফলে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আযাব পাকড়াও করল। নিশ্চয়ই সেটা ছিল এক ভীষণ দিবসের আযাব। (২৬ : ১৯০)

কাতাদা (র) সহ কতিপয় মুফাসসিরের মতে, আয়কাবাসী ও মাদয়ানবাসী অভিন্ন সম্প্রদায়

নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন দুইটি সম্প্রদায়। কিন্তু তাদের এ মত দুর্বল। এ মতের পক্ষে দুইটি যুক্তি পেশ করা হয়;

(১) আল্লাহর বাণী : ওঁ….. &41 کب اُضخائب الأيكة المُرسلين إذ قال (আয়কাবাসীরা রসূলগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছে। যখন শু’আয়ব তাদেরকে বলল….) এখানে ‘তাদের স্বগোত্রীর শু’আয়ব’ বলা হয়নি। কিন্তু মাদয়ানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে : ২, 16 (^x_ £ ©ALK1644 4 অর্থাৎ মাদয়ানবাসীদের কাছে তাদের স্বগোত্রীয় শু’আয়বকে রসূল রূপে পাঠালাম; (২) আয়কাবাসীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে : ‘মেঘাচ্ছন্ন দিবসের’ (ப் یکوم(-

(১ম খণ্ড), ৫৪—

8 ՀՆ

আযাব তাদেরকে গ্রাস করে। আর মাদয়ানবাসীদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে যে, ভূমিকম্প ও

মহানাদ (‘G8.216 442.5/i) তাদেরকে আঘাত হানে। প্রথম প্রশ্নের উত্তর এই যে, ‘… إذ قال لهم اخوه ثم 50308 461 4654 llة 268 5لى أشكاليب ألأيكة المرسلين এ%3:44, কেননা, এখানে কথা বলা হয়েছে আয়কার অধিবাসীদের সম্বোধন করে, সুতরাং এ ক্ষেত্রে তাদের স্বগোত্রীয় বলা সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু যেখানে গোত্রকে সম্বোধন (6.4%)- করা হয়েছে, সেখানে তাদের স্বগোত্রীয়’ বলাই যুক্তিসংগত। প্রকৃত পক্ষে এ একটি সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এই ৪, fর্থ। ‘:4 বা ‘মেঘাচ্ছন্ন দিবসুের শান্তি’ এই একটি স্বতন্ত্র শাস্তির উল্লেখ দেখেই যদি বলা হয় যে, এরা ভিন্ন সম্প্রদায়, তা হলে ধ4২% বা ভূমিকম্প এবং ‘1 2 3.2, বা নাদ এ দু’টি স্বতন্ত্র শাস্তির থেকেও দলীল নেয়া যেতে পারে যে, এরাও দু’টি ভিন্ন সম্প্রদায়—যাদের এক দলের উপর ভূমিকম্প ও অপর দলের উপর নাদ-রূপে আযাব এসেছিল। কিন্তু এমন কথা কেউই বলেননি। তবে হাফিজ ইব্‌ন আসাকির (র) হযরত শু’আয়ব নবীর আলোচনা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইব্‌ন উছমান (র) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রা) বর্ণিত একটি মারফু’ হাদীসের উল্লেখ করেছেন :

অর্থাৎ মাদয়ানবাসী ও আয়কাবাসী দু’টি সম্প্রদায়। উভয়ের কাছে আল্লাহ হযরত শু’আয়ব (আ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করেন। কিন্তু এ হাদীসটি গরীব’ পর্যায়ের। এর সনদে বিতর্কিত ব্যক্তিও রয়েছেন। সম্ভবত এটা হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রা)-এর নিজস্ব উক্তি যা তিনি ইয়ারমুকের যুদ্ধের সময় বনী ইসরাঈলের কাহিনী সম্পর্কে প্রাপ্ত দুই উট বোঝাই পাণ্ডুলিপি থেকে নিয়ে থাকবেন।

এছাড়া লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তা’আলা আয়কাবাসীদের সেই সব দোষ-ত্রুটির উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও ছিল। যেমন : ওজনে ও মাপে কম দেওয়া ইত্যাদি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উভয়ে একই সম্প্রদায়ভুক্ত। বিভিন্ন প্রকার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়। অবশ্য বিভিন্ন সূরায় আলোচনার পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম সম্বোধন করা হয়েছে। ش به تک

আল্লাহর বাণী : .فَأَحَدُهُمْ عَذَابُ يؤم الفلز يته كان عذاب يؤو عظثو ‘মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আযাব তাদেরকে গ্ৰাস করে নিল। এটা ছিল ভয়াবহ দিবসের শাস্তি। (সূরা শু’আরা : ১৮৯)

মুফাসসিরগণ বলেছেন : শু’আয়বের সম্প্রদায় প্রচণ্ড গরমে আক্রান্ত হয়। আল্লাহ সাত দিন পর্যন্ত তাদের উপর বায়ু প্রবাহ বন্ধ রাখেন। ফলে পানি, ছায়া ও ঝর্ণাধারা তাদের কোন কাজেই আসেনি। তখন তারা, ঘর-বাড়ি ছেড়ে উন্মুক্ত প্ৰান্তরে চলে যায়। এক টুকরা মেঘ এসে তাদেরকে ছায়াদান করে। সম্প্রদায়ের সবাই ঐ মেঘের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়। সকলে যখন সমবেত হল তখন আল্লাহ তাদের উপর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও জুলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ

8ՀԳ

করেন। গোটা এলাকাব্যাপী প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয় এবং আকাশ থেকে এক ভয়াবহ নাদ আসে। ফলে সকলের প্রাণ বায়ু উড়ে যায়, ঘরবাড়ি উজাড় হয় এবং নিজ নিজ ঘরের মধ্যে তারা উপুড় হয়ে পড়ে থাকে। যারা শু’আয়ব (আ)-কে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করেছিল, তারা এরূপ নিশ্চিহ্ন হলো যে, এখানে যেন তারা কোন দিনই বসবাস করেনি। যারাই শু’আয়ব (আঃ)-কে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করেছে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হল। পক্ষান্তরে, আল্লাহ শু’আয়ব (আ)-কে ও তার সাথের মুমিনদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করেন।

আল্লাহ বলেন, :

سمي যখন আমার নির্দেশ এল, তখন আমি শু’আয়ব ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম, তারপর যারা সীমালংঘন করেছিল, মহানাদ তাদেরকে আঘাত হানলো। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। যেন তারা সেখানে কখনও বসবাসই করেনি। জেনে রেখো, ধ্বংস ছিল মাদয়ানবাসীদের পরিণাম যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল ছামূদ সম্প্রদায় | (১১ : ৯৪-৯৬)

আল্লাহ আরও বলেন :

তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, তোমরা যদি শু’আয়বের অনুসরণ করা তাহলে ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে। তারপর এক ভূমিকম্প তাদেরকে আঘাত করল। ফলে তারা ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল, যারা শু’আয়বকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। মনে হবে যেন এখানে তারা কখনও বসবাস করেনি। শু’আয়বকে যারা মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করছিল, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’ (৭ : ৯০-৯২)

এ কথাটি তাদেরই কথার পাল্টা হিসাবে বলা হয়েছে। কারণ তারা বলেছিল ৪

যদি তোমরা শু’আয়বের অনুগামী( -لين اتبغثم شكيبارككم إذا كحّارسؤون. হও তবে অবশ্যই তােমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (৭ : ৯০)

সম্প্রদায়ের ধ্বংসের পরে নবী। শু’আয়ব (আ) দুঃখ করে যে কথা বলেছিলেন সে প্রসংগে

আল্লাহর বাণী :

‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদেরকে আমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের উপদেশ দিয়েছি। এখন আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্যে কী করে আক্ষেপ করি | (סיף 3 Q)

অর্থাৎ তাদের ধ্বংসের পরে তিনি তাদের এলাকা থেকে এই কথা বলে চলে আসেন যে,

ハク / ‘ A / く / ムッ/ a 2 as a 4. A

আমার সম্প্রদায়! আমি *) یا قوچی لقذ ابلغنگمر شالابتِ کر کئی ؤثضخیث لکم আমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এবং তোমাদেরকে উপদেশ দান করেছি)। অর্থাৎ পৌঁছিয়ে দেয়ার ও উপদেশ দেয়ার যে দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ করা হয়েছিল তা আমি পূর্ণরূপে আদায় করেছি এবং তোমাদের হিদায়াতের জন্যে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার এসব প্ৰচেষ্টা তোমাদের কোন উপকারে আসেনি। কেননা যে ব্যক্তি ভ্ৰান্ত পথে চলে আল্লাহ তাকে হিদায়াত করেন না, আর তার কোন সাহায্যকারীও থাকে না। অতএব, এরপর আমি তোমাদের ব্যাপারে। আক্ষেপ করব না। কেননা তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করনি, লাঞ্ছিত হবার দিনকে ভয় করিনি। এ জন্যেই তিনি বলেছেন, ‘কিভাবে আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্যে আক্ষেপ ও দুঃখ প্ৰকাশ করব! অর্থাৎ যা সত্য তা তোমরা মানছ না, সেদিকে প্রত্যাবর্তন করছ না এবং সেদিকে দৃষ্টিপাতও করতে প্রস্তুত নও। ফলে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন আঘাত আসল, যা না যায় ফিরান আর না যায় প্রতিরোধ করা, আর না। স্থগিত করা সম্ভব। কারও উপর পতিত হলে না সে এর থেকে রক্ষা পেতে পারে, না পলায়ন করে বাঁচতে পারে।

হাফিজ ইব্‌ন আসাকির (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, হযরত শু’আয়ব (আ) হযরত ইউসুফ (আ)-এর পরবর্তী কালের লোক। ওহাব ইব্‌ন মুনব্বিহ (র) থেকে বর্ণিত, হযরত শু’আয়ব (আ) ও তাঁর সঙ্গী মুমিনগণ সকলেই মক্কা শরীফে ইনতিকাল করেন এবং তাদের কবর কা’বা গৃহের পশ্চিম পাশে দারুন-নাদওয়া ও দারে বনী-সাহিমের মধ্যবতী স্থানে অবস্থিত।

ইবরাহীম ()-এর সন্তানসন্ততি

ইতিপূর্বে আমরা হযরত ইবরাহীম (আ) ও তার সম্প্রদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও ঘটনাপঞ্জি বর্ণনা করেছি। এরপর তাঁর সময়কালে সংঘটিত লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা উল্লেখ করেছি। অতঃপর কিওমে। শু’আয়ব অর্থাৎ মাদয়ানবাসীদের ঘটনা বর্ণনা করেছি। কারণ কুরআন মজীদের বহু স্থানে এ উভয় ঘটনাগুলো পাশাপাশি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা। লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনার পরেই মাদয়ান বা আয়কাবাসীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কুরআনের অনুকরণে আমরা লুত (আ)-এর পরে শু’আয়ব (আ)-এর ঘটনা বর্ণনা করেছি। এখন আমরা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সন্তান-সন্ততি ও বংশধরদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কেননা তার বংশধরদের মধ্যেই আল্লাহ নবী ও কিতাব প্রেরণ সীমাবদ্ধ রাখেন। সুতরাং ইবরাহীম (আ)-এর পরে আগত প্রত্যেক নবীই তার অধঃস্তন

বংশধর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *