৩০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পবিত্র জীবন-চরিত

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পবিত্র জীবন-চরিত

আল্লাহ তাআলা বলেন :

আল্লাহ রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। (৬৪১২৪) রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এায় পরিচয় সম্পর্কে যে কটি প্রশ্ন করেছিলেন, তাতে তিনি একথাও জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তোমাদের মাঝে তার বংশ মর্যাদা কেমন? উত্তরে আবু সুফিয়ান বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে তিনি সম্রােন্ত বংশীয়। তখন হিরাক্লিয়াস বলেছিলেন, এমনিভাবে সব রাসূলই নিজ নিজ সমাজের সম্রােন্ত বংশে প্রেরিত হয়ে

থাকেন। অর্থাৎ রাসূলগণ বংশগতভাবে সকলের চাইতে সম্রােন্ত আর তাদের বংশের জনসংখ্যাও সর্বাধিক হয়ে থাকে।

রাসূলুল্লাহ (সা) হলেন আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইহকাল-পরকালে তাদের গর্বের ধন। তার উপনাম আবুল কাসিম ও আবু ইবরাহীম। তিনিই মুহাম্মদ, আহমাদ, আলমাহী- যার মাধ্যমে কুফরের মূলোৎপাটিত হয়। তিনিই আল-আকিব-যার পরে আর কোন নবী নেই। আল-হাশির-যার পদপ্রান্তে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। তিনি আল-মুকাফী, নবীউর রহমত, নবীউত তওবা, নবীউল মালহামাহ, খাতামুন্নাবিয়্যিন, আল-ফাতিহ, ত্বাহা, ইয়াসীন ও আবদুল্লাহ।

বায়হাকী বলেন, কোন কোন আলিম রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আরও অনেক নামের উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তাকে রাসূল, নবী, আমীন, শাহিদ, মুবাশশির, নায়ীর, দাঈআন ইলাল্লাহি বিইযনিহী, সিরাজাম মুনীরা, রাউফুর রাহীম ও মুযাক্কির অভিধায় অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তাকে রহমত, নিয়ামত ও হাদী বানিয়েছেন। সীরাত আলোচনার পর স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়ে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নাম সংক্রান্ত হাদীসসমূহ উদ্ধৃত করব। এ বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বায়হাকী ও ইব্‌ন আসাকির সেগুলো সংকলন করেছেন। তাছাড়া স্বতন্ত্রভাবে অনেকে এ বিষয়ে বহু গ্ৰন্থও রচনা করেছেন। এমনকি কেউ কেউ তো রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এক হাজার নামের তালিকা সংকলনের কসরত পর্যন্ত করেছেন। তিরমিয়ী শরীফের ভাষ্যকার ইবনুল আরাবী আল-মালিকী তাঁর আল আহওয়ায়ী গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চৌষট্টিটি নামের উল্লেখ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) হলেন অবদুল্লাহর পুত্র। আবদুল্লাহ ছিলেন তাঁর পিতা আবদুল মুত্তালিবের কনিষ্ঠ পুত্র। এই আবদুল্লাহই ইতিহাসে দ্বিতীয় যাবীহ বলে খ্যাত, যার বদলে একশত উট জবাই করা হয়েছিল। পূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

হারিস, যুবায়র, হামযা, যিরার, আবু তালিব (যার আসল নাম আবদে মানাফ), আবু লাহাব (যার আসল নাম আব্দুল উন্যযা) মুকাওয়িম (যার আসল নাম আবদুল কাবা।)। কারও কারও মতে মুকাওয়িম আর আবদুল কাবা ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি। হাজাল (যার আসল নাম মুগীরা)-প্রখ্যাত দানশীল, গায়দাক— (যার আসল নাম নওফল) কারও কারও মতে গায়দাক আর হাজাল এক ও অভিন্ন ব্যক্তি। এরা সকলেই ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা। তার ফুফী ছিলেন ছয়জন। তাঁরা হলেন, আরওয়া, বাররা, উমায়মাহ, সাফিয়্যাহ, আতিকাহ ও উম্মে হাকীম- যার অপর নাম বায়যা। এদের প্রত্যেকের ব্যাপারে পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এরা সকলে ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের সন্তান! আবদুল মুত্তালিবের আসল নাম ছিল শায়বাহ। তাঁর মাথায় কয়েকটি সাদা চুল ছিল বলে তাকে শায়বাহ বলা হতো। আবার তীর বদান্যতার কারণে তাকে শায়বাতুল হামদও বলা হতো। .

তাকে আবদুল মুত্তালিব নামে আখ্যায়িত করার নেপথ্য কারণ এই যে, তাঁর পিতা হাশিম বাণিজ্যোপলক্ষে যখন মদীনার পথে সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হন, তখন একস্থানে আমর ইব্‌নে আল-খাজরাজী আন-নাজারী)-এর বাড়িতে মেহমান হন। আমর ইব্‌নে যায়েদ ছিলেন তাঁর সম্প্রদায়ের সরদার। এ সময়ে তার সালমা নামী এক কন্যাকে দেখে হাশিম মুগ্ধ হন। তিনি তাকে বিবাহের জন্য তার পিতার নিকট প্রস্তাব দেন। আমার ইব্‌ন যায়েদ এই শর্তে মেয়েকে তার নিকট বিয়ে দেন যে, মেয়ে পিত্ৰালয়েই অবস্থান করবে। কারো কারো মতে, বিবাহের শর্ত এই ছিল যে, মদিনায় ছাড়া সালমা সন্তান প্রসব করতে পারবে না। সিরিয়া থেকে ফিরে হাশিম স্ত্রী সালমার সঙ্গে বাসর করেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় চলে আসেন। পরে পুনরায় ব্যবসা উপলক্ষে বের হলে স্ত্রীকেও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যান। স্ত্রী সালমা তখন গর্ভবতী। ফলে তাকে মদীনায় রেখে হাশিম সিরিয়া গমন করেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে গাজায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। স্ত্রী সালমা যথাসময়ে একটি পুত্ৰ সন্তান প্রসব করেন। তিনি তার নাম রাখেন শায়াবা। শায়বা দীর্ঘ সাত বছর তার মাতুলালয় আদী ইব্‌ন নাজার গোত্রে অবস্থান করে। এরপর চাচা মুত্তালিব ইব্‌নে আবাদ মানাফ এসে একদিন শায়বাকে গোপনে মায়ের নিকট হতে নিয়ে মক্কায় চলে যান। লোকেরা দেখে জিজ্ঞাসা করে, আপনার সঙ্গে এই বালকটি কে? উত্তরে মুত্তালিব বলেন, এ.- (অর্থাৎ আমার গোলাম)। জনতা তাকে সাদরে বরণ করে নেয় এবং তাকে আবদুল মুত্তালিব বা মুত্তালিবের গোলাম বলে ডাকতে শুরু করে এবং এই নামই প্রসিদ্ধি লাভ করে। আবদুল মুত্তালিব ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন। এক পর্যায়ে কুরাইশ সমাজের নেতৃত্বের আসন লাভ করেন। সকলের সেরা ব্যক্তি বলে পরিচিতি লাভ করেন। আবদুল মুত্তালিব এখন সকলের মধ্যমণি। হাজীদের পানি পান করানো (সিকায়া) এবং জনকল্যাণমূলক সব কাজ (রিফাদা:)-এর নেতৃত্ব মুত্তালিবের পরে এখন তার হাতে। জুরহুমের আমল থেকে পরিত্যক্ত হয়ে থাকা যম যম কৃপ তিনি পুনঃ খনন করেন। যমযম খননকালে প্রাপ্ত সোনার হরিণ মূর্তিদ্বয়ের সোনা দ্বারা তিনিই সর্বপ্রথম কাবার দরজায় প্রলেপ দেন। আবদুল মুত্তালিবের ভাই-বোনেরা হচ্ছেন আসাদ, ফুযুলা, আবু সাইফী, হায়্যা, খালেদা, রুকাইয়া, শিফা ও যায়ীফা। এরা সকলে হাশিমের পুত্ৰ-কন্যা। হাশিমের আসল নাম আমর। কোনো এক দুর্ভিক্ষের বছর গোশতের সঙ্গে ছারাদ তথা ঝোল মিশ্রিত রুটির টুকরা দুর্ভিক্ষ কবলিত অসহায় লোকদের খাবার দিয়েছিলেন বলে লোকেরা তাকে হাশিম নাম দেয়। হাশিম শব্দের অর্থ মিশ্রণকারী। হাশিম ছিলেন তার পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র। ইব্‌ন জারীর বর্ণনা করেন যে, হাশিম ছিলেন তার তাই আবদে শামস এর জমজ। হাশিম যখন মায়ের পেট থেকে বের হন তখন তার পা আবদে শামস এর মাথার সঙ্গে আটকে ছিল। এতে দুজনের শরীর থেকেই রক্তক্ষরণ হয়। এতে লোকেরা মন্তব্য করে যে, এর ফলে এই দু ভাইয়ের সন্তানদের মাঝে বিবাদ জন্ম নেবে। কার্যত হয়েছেও তাই! একশ তেত্রিশ হিজরী সনে বনু আব্বাস ও বনু উমাইয়া ইব্‌নে আবদে শামস-এর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত অনুষ্ঠিত হয়।

মায়ের নাম আতিকা বিনতে মুররা ইব্‌ন হিলাল। তার চতুর্থ ভাইয়ের নাম নওফল। নওফল আরেক মায়ের সন্তান। তার নাম ওয়াকিদা বিনতে আমার আল মাযেনিয়াহ। পিতার মৃত্যুর পর এরা প্রত্যেকেই নেতৃত্বে আসীন হন। সমাজের মানুষ তাদেরকে ত্রাণকর্তা বলে অভিহিত করত। কারণ তারা বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে কুরাইশদের জন্য যে কোনো দেশে ব্যবসা করতে যাওয়ার অবাধ নিরাপত্তা এনে দিয়েছিলেন। হাশিম সিরিয়া, রোম ও গাসসান থেকে, আবদে শামস হাবশার রাজা বড় নাজাশী থেকে, নওফল কিসরা থেকে এবং মুত্তালিব হিময়ার এর রাজ্যগুলো থেকে নিরাপত্তা এনে দেন। কবির ভাষায় :

— ওহে পরিভ্রমণকারী মুসাফির! তুমি তো আবদে মানাফের বংশের লোকদের আতিথেয়তা গ্ৰহণ না করে ছাড়নি!

পিতার মৃত্যুর পর হাশিমের দায়িত্বে ছিল সিকায়া তথা হাজীদের পানি পান করানো ও রিফাদা তথা জনকল্যাণমূলক কাজ। আর হাশিম ও তাঁর ভাই মুত্তালিবের যৌথ দায়িত্বে ছিল আত্মীয় স্বজনের বংশ তালিকা সংরক্ষণ করা। তারা সব ভাই জাহিলিয়াত ও ইসলামের উভয় পরিবেশে একান্নভুক্ত ছিলেন, কখনো ভিন্ন হননি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বন্দী জীবনে তারাও গিরিবর্তে তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেছিলেন। সরে গিয়েছিল শুধু আবদে শামস ও নওফল। এ কারণে আবু তালিব তাদের সম্পর্কে বলতেন :

—অনতিবিলম্বে আল্লাহ যেন আবদে শামস ও নওফলকে শাস্তি দিয়ে তাদের অপকর্মের বিচার করেন।

আবু তালিবের পুত্ৰগণ এক একজন এক এক স্থানে মারা যান। অন্য কোন পিতার সন্তানদের সাধারণত এভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায় না। যেমনঃ হাশিম জেরুজালেমের গাজা উপত্যকায় মৃত্যুবরণ করেন, আবদে শামস মারা যায় মক্কায়, নওফল ইরাকের সালামান নামক স্থানে আর মুত্তালিবের মৃত্যু হয় ইয়েমেনের রায়মান নামক জায়গায়। অনুপম রূপের কারণে মুত্তালিবকে কামরাও (চন্দ্র) বলা হতো। হাশিম, আবদে শামস, নওফল ও মুত্তালিব এই চার ভাইই সর্বজন পরিচিত। এদের আরেকজন অখ্যাত ভাই ছিলেন, তার নাম ছিল আবু আমর বা আবদ। তবে তাঁর আসল নাম আবদে কুসাই। এই অখ্যাতির কারণে মানুষ তাকে তাদের আপন ভাই বলে গণ্য করত না। এরপর তাদের আর কোনো ভাই ছিলেন না। যুবোয়র ইব্‌নে বাক্কার প্রমুখ একথা বলেছেন।

মুত্তালিবের ছয় বোন ছিলেন। তাদের নাম ছিল তামায়ুর, হায়্যা, রীতা, কিলাবা, উন্মুল আখসা ও উম্মে সুফিয়ান। এঁরা সকলে আবদে মানাফের সন্তান ছিলেন। মানাফ একটি মূর্তির নাম। আবদে মানাফের প্রকৃত নাম ছিল মুগীরা। পিতার জীবদ্দশাতেই তিনি সমাজের নেতৃত্ব দিতেন। সকলের কাছে তিনি একজন শ্রদ্ধাভাজন ও মাননীয় ব্যক্তি বলে পরিচিত ছিলেন। আবদে মানাফ ছিলেন আবদুন্দার এর ভাই। আবদুন্দার ছিলেন পিতার বড় সন্তান। মৃত্যুকালে পিতা তাকেই নিজের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ওসিয়ত করে যান। আবদুল উযযা, আবদ, বাররাহ এবং তাখান্মরও আবদে মানাফের ভাই। এদের মায়ের নাম ছিল হুয়াই বিনতে হালীল। হুয়াই এর পিতা হালীল ছিলেন খুযায়া গোত্রের সর্বশেষ শাসনকর্তা। তারা সকলেই কুসাই-এর সন্তান ছিলেন। কুসাই-এর আসল নাম যায়েদ। কুসাই নামকরণের কারণ হলো, পিতার মৃত্যুর পর তার মা পুনরায় রবীয়া ইব্‌ন হিযাম ইব্‌ন আযরা এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর রবীয়া স্ত্রীকে নিয়ে নিজ দেশে রওয়ানা হন। শিশু যিয়েদও তখন মায়ের সঙ্গে ছিলেন। সেই থেকে তিনি কুসাই নামে অভিহিত হন। কুসাই শব্দের অর্থ হচ্ছে দূরদেশী। অতঃপর বড় হয়ে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। কুরায়শরা এদিক-সেদিক বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ার পর কুসাই বিভিন্ন এলাকা থেকে খুঁজে এনে আবার তাদেরকে মক্কায় প্রতিষ্ঠিত করেন। বায়তুল্লাহর দখল থেকে বনি খুযাআকে উৎখাত করে তাদেরকে মক্কা থেকে বের করে দেন। সত্য স্ব-স্থানে প্রতিষ্ঠিত এবং কুসাই এককভাবে কুরাইশের নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন। দৌত্যকর্ম, যম যম কৃপ থেকে হাজীদের পান করানো, বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, যুদ্ধের সময় পতাকা বহন এবং দারুন নান্দওয়া ইত্যাদি সবকিছুই তাঁর দায়িত্বে ছিল। বিখ্যাত দারুন-নাদওয়া তার ঘরেই ছিল। তাই কবি বলেন :

—আমার জীবনের শপথ! কুসাই ছিলেন সকলের মিলন সাধনকারী! তার মাধ্যমে আল্লাহ ফিহর এর সব কটি গোত্রকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

কুসাই ছিলেন যাহরার ভাই। তারা দুজন ছিলেন কিলাবের পুত্র। তাইম ও ইয়াকযা আবু মাখযুমের ভাই। তারা তিনজনই ছিলেন মুররা-এর পুত্র। মুররার ভাই ছিলেন আদী ও হাসীস।

তারা তিনজন ছিলেন কাব। এর পুত্র। কাব। প্ৰতি জুমাবারে তার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন এবং তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আগমনের সুসংবাদ শোনাতেন এবং এ সংক্রান্ত নানা রকম কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন। যেমন আমরা পূর্বে বলে এসেছি। কাব ছিলেন আমের, সামাহ, খুযায়মাহ, সাদ, হারিছ ও আওফ-এর ভাই। তারা সাতজন ছিলেন। লুওয়াই-এর পুত্র, আল আন্দরাম-এর ভাই। লুওয়াই ছিলেন তাইম-এর ভাই আবু তাইম আল-আন্দরাম ছিলেন গালিব এর পুত্র। হারিছ ও গালিবের ভাই ছিলেন মুহারিব। এরা তিনজন ছিলেন ফিহর এর সন্তান। ফিহর ছিল হারিছ-এর ভাই। তাদের পিতা ছিলেন মালিক। মালিক ছিলেন সালত ইয়াখলুদের ভাই। এঁরা তিনজন ছিলেন নাযার এর পুত্র। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, এই নাযার-ই ছিলেন। কুরায়শ বংশের স্থপতি। আমরা পূর্বে এর প্রমাণও পেশ করে এসেছি। নাযার ছিলেন মালিক, মালকান ও আবদে মানাত প্ৰমুখের ভাই। তাঁরা সকলে ছিলেন। কিনানার পুত্ৰ। আসাদ, আসদাহ ও হাওন ছিলেন। কিনানার ভাই। এরা সকলেই ছিলেন খুযায়মার পুত্র। খুযায়মা ছিলেন হুযায়লের ভাই। খুযায়মা ও হুযায়ল ছিলেন মুদরিকাহর পুত্র। মুদরিকার আসল নাম ছিল। আমরা। তার ভাই ছিলেন তাবিখ্যা, যার আসল ছিল নাম আমির। মুদরিকা, তা বিখ্যা, ও কামআ তিন জনই ছিলেন ইলিয়াসের পুত্র। ইলিয়াসের এক ভাই ছিলেন গায়লান। গায়লান ছিলেন কায়স গোত্রের পিতা। এই ইলিয়াস ও গায়লান দুইজন ছিলেন রবীয়ার ভাই মুযার এর সন্তান। মুযার ও রবীয়াকে সরাসরি ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর বলে দাবি করা হয়। আনমার ও ইয়াদ তায়ামুনা নামে এঁদের আরও দুই ভাই ছিলেন। এই চার ভাই ছিলেন কুযাআর ভাই নেযার-এর সন্তান। এই অভিমত তাদের, যারা মনে করেন যে, কুযাআ হিজায়ী ও আদনানী বংশোদ্ভূত। উপরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নেযার ও কুযাআ মাআদ ইব্‌নে আদনান-এর সন্তান।

আরবদের যে বংশনামা আমরা বর্ণনা করলাম, এ ব্যাপারে আলিমগণের কোনো দ্বিমত নেই। এই বংশ তালিকায় প্রমাণিত হয় যে, আরবের সকল গোত্রের বংশ পরম্পরা। এই পর্যন্ত গিয়ে পৌছে। এ কারণেই হযরত ইব্‌নে আব্বাস (রা) প্রমুখ

বল, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না। (৪২৪২৩) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, কুরায়শের যত গোত্র আছে তাতে এমন কোনো গোত্র নেই, যাদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশ সম্পৃক্ত নয়। ইব্‌নে আব্বাস (রা) যথার্থই বলেছেন। আমি তো এ-ও বলতে চাই যে, আরবের সকল আদনানী গোত্র পিতৃকুলের দিক থেকে রাসূল (সা) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। অনেক গােত্র মাতৃকুলের দিক থেকেও এর সাথে সম্পর্কিত। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক প্রমুখ এরূপই বলেছেন। হাফিজ ইব্‌নে আসাকির-এর অভিমতও অনুরূপ। আদিনানের জীবন চরিতে আমরা তার বংশনামা এবং সে সম্পর্কিত মতভেদের উল্লেখ করেছি। আর এও বলেছি যে, আদনান নিশ্চিতরূপে ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর। যদিও তাদের দুজনের মধ্যে কত পুরুষের ব্যবধান, তাতে মতবিরোধ রয়েছে। উপরে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি। আদনান থেকে আদিম (আঃ) পর্যন্ত বংশধারাও উল্লেখ করেছি এবং এ সম্পর্কিত আবুল আব্বাস এর একটি কবিতাও উদ্ধৃত করেছি। হিজয়ী আরবের ইতিহাসে এসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। ইমাম আবু জাফর ইব্‌নে জারীর তাঁর তারীখ গ্রন্থের প্রথম দিকে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন।

বায়হাকী—- আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা)-এর নিকট সংবাদ এলো যে, কিনাদাহ গোত্রের কতিপয় লোক মনে করে যে, তারা আর নবী করীম (সা) একই বংশোদ্ভূত। এ সংবাদ শুনে নবী করীম (সা) বললেন : আব্বাস এবং আবু সুফিয়ান ইব্‌নে হারবও এরূপ বলত এবং নিরাপত্তা লাভ করত। আর আমরা নিজেদের বংশধারা অস্বীকার করি না। আমরা নযর ইব্‌নে কিনানা এর বংশধর। এ বর্ণনার সনদে সন্দেহ আছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর নবী করীম (সা) খুতবা দান করেন। তাতে তিনি বলেন :

আমি মুহাম্মদ ইব্‌নে আব্দুল্লাহ ইব্‌নে আবদুল মুত্তালিব ইব্‌নে, হাশিম ইব্‌ন আবদে মানাফ ইব্‌নে কুসাই ইব্‌নে কিলাব ইব্‌নে মুররা ইব্‌ন কাব। ইব্‌ন লুওয়াই ইব্‌ন গালিব ইব্‌ন ফিহর

ইব্‌ন নিযার। মানুষের গোত্র যেখানেই বিভক্ত হয়েছে সেখানেই আল্লাহ আমাকে উত্তম ভাগে স্থান দিয়েছেন। যেমন : আমি পিতা-মাতা থেকে বৈধভাবে জন্মলাভ করেছি, জাহিলিয়াতের ব্যভিচার আমার বংশলতিকাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমার জন্ম বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে, অবৈধ সম্পর্ক থেকে নয়। এই পবিত্রতার ধারা আদিম থেকে আমার আকবা-আম্মা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলে এসেছে। অতএব ব্যক্তির দিক থেকেও আমি তোমাদের মধ্যে সেরা; বংশের দিক থেকেও। এ সনদটি অত্যন্ত গরীব। পর্যায়ের। এতে কুদামী নামক একজন দুর্বল রাবীর একক বৰ্ণনা রয়েছে। তবে এর সমর্থনে অন্যান্য বর্ণনা পরে আসছে। আবদুর রাজাক বৰ্ণনা করেন যে, আবু জাফর আল – বাকির পবিত্র কুরআনের 2.431 ৩-০ (U১.৩ হেঁa L }। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জাহিলী যুগের সন্তান জন্মের কোন অবৈধ উপায় স্পর্শ করেনি। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে বলেছেন :

– অবৈধ সম্পর্ক থেকে নয়-আমি বৈবাহিক বন্ধন থেকে জন্মলাভ করেছি। এটি একটি

উত্তম মুরসাল রিওয়ায়ত।

বায়হাকী… মুহাম্মদ (র)-এর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে বৈবাহিক বন্ধন থেকে নিৰ্গত করেছেন-অবৈধ সম্পর্ক থেকে নয়। উমর (রা) আলী ইব্‌নে আবু তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

– অবৈধ সম্পর্ক থেকে নয়, বৈবাহিক সম্বন্ধ থেকে আমি নিৰ্গত হয়েছি। আদম থেকে আমার আব্বা-আম্মা আমাকে জন্ম দেওয়া পর্যন্ত আমার বংশধারায় এই পবিত্রতা অব্যাহত ছিল। আমার জন্মে জাহিলিয়াতের কোন অপকর্ম আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বর্ণনাটি বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

জাহিলী যুগের লোকদের কোন বিবাহ আমাকে জন্ম দেয়নি। যে বিবাহ থেকে আমার জন্ম তা ইসলামের বিবাহ। এ বর্ণনাটিও গরিব পর্যায়ের। মুহাম্মদ ইব্‌ন সাদ বৰ্ণনা করেন, হযরত আয়েশা (রা)-এর বরাতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইব্‌ন আসাকির ইব্‌নে আব্বাস (রা) সূত্রে ৩.১–৯t 1.J। — এ11:44, (সিজদাকারীদের সঙ্গে তোমার উঠা-বসা দেখেন। ২৬ : ২১৯) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : অর্থাৎ এক নবীর পরে আরেক নবী আসেন। এক পর্যায়ে আমিও নবীরূপে আবির্ভূত হয়েছি। ইব্‌ন সাদ মুহাম্মদ কালাবীর পিতার সূত্রে বলেন, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মায়ের বংশধারার পাঁচশত মহিলার তালিকা সংকলন করেছি। তাদের কোন একজনকে না ব্যাভিচারী পেয়েছি, না জাহিলিয়াতের কোন অনাচারে সম্পৃক্ত পেয়েছি। বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

— মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা উত্তম যুগে আমি প্রেরিত হয়েছি। এক এক করে বহু যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর এই যুগে এসে আমার আবির্ভাব হয়েছে।

সহীহ মুসলিমে ওয়াছিলা ইব্‌ন আসকা থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ ইবরাহীমের বংশ থেকে ইসমাঈলকে, ইসমাঈলের বংশ থেকে বনু কিন্যানাকে, বনু কিনানা থেকে কুরায়শকে এবং কুরায়শ থেকে বনু হাশিমকে নির্বাচিত করেছেন। আর আমাকে নির্বাচিত করেছেন হাশিম থেকে।

ইমাম আহমদ।—মুত্তালিব ইব্‌ন আবু ওয়াদাআহ আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একদা লোকেরা কানা ঘুষা শুরু করলে সে খবর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কানে আসে। ফলে তিনি মিম্বরে উঠে বললেন : আমি কে? জনতা জবাব দিল, আপনি আল্লাহর রাসূল (সা)। নবী করীম (সা) বললেন : আমি আবদুল মুত্তালিব এর পুত্র আবদুল্লাহর সন্তান মুহাম্মদ। আল্লাহ জগত সৃষ্টি করে আমাকে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছেন। সকল মানুষকে দুইটি দলে বিভক্ত করে আমাকে শ্রেষ্ঠ দলে স্থান দিয়েছেন। আবার বিভিন্ন গোত্র সৃষ্টি করে আমাকে সেরা গোত্রে রেখেছেন। অতঃপর সব গোত্ৰকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করে আমাকে তাদের শ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য করেছেন। ফলে আমি পরিবারের দিক থেকেও তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং ব্যক্তিগত দিক থেকেও তোমাদের মধ্যে সেরা।

ইয়াকুব ইব্‌ন সুফিয়ান —-আব্বাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদিন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কুরাইশরা যখন নিজেরা পরস্পরে মিলিত হয়, তখন হাসিমুখে মিলিত হয়। আর আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত হলে তাদের চেহারায় বৈরীভােব ফুটে ওঠে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেন। তারপর বললেন :

যার মুঠোয় মুহাম্মদের জীবন, আমি তার শপথ করে বলছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদের ভালোবাসবে। আব্বাস (রা) বলেন, একথা শুনে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কুরাইশরা একদিন বসে তাদের বংশধারা নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হলো। তাতে আপনাকে তারা কোন এক ঊষর ভূমিতে অবস্থিত খেজুর গাছের সঙ্গে তুলনা করল। শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করে আমাকে সৃষ্টির সেরা দলের অন্তর্ভুক্ত করলেন। অতঃপর সৃষ্টির সব মানুষকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করলেন, তাতে গোত্র হিসেবেও আমাকে সকলের শ্ৰেষ্ঠ গোত্রে রাখলেন। অতঃপর যখন মানুষগুলোকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করলেন, তখনও পরিবারের দিক থেকেও আমাকে সকলের শ্রেষ্ঠ পরিবারভুক্ত করলেন। অতএব আমি ব্যক্তি হিসাবেও সৃষ্টির সেরা পরিবার হিসাবেও সকলের শ্রেষ্ঠ।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুলাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ সৃষ্টির সকল মানুষকে দুভাগে বিভক্ত করেন। তাতে দুভাগের মধ্যে যেভাগ শ্রেষ্ঠ, আমাকে তার অন্তর্ভুক্ত করেন। কুরআনের আয়াত ১· L_1^13 ৩,_-1_1_^ -1; UL. II-এর এটাই তাৎপর্য। আমি ৬, …। °L» >। তথা / ডানের লোকদের অন্তর্ভুক্ত। আবার আমি : ১। এU-2 এর সকলের সেরা। এই দুই ভাগকে আবার তিনভাগে ভাগ করেন। আমাকে তার মধ্যকার শ্রেষ্ঠ ভাগে রাখেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত ة۹۶Ti &GR(*।।।। If * ۹۴۹ یک لی – و اصحاب المیمنة والسابقون السابقون এই 552 L. বা অগ্রগামীদের সেরা। অতঃপর এই তিন দলকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করেছেন। আমাকে বানিয়েছেন সবচেয়ে শ্ৰেষ্ঠ গােত্রের মানুষ :

(আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। তোমাদের যে যত মুত্তাকী, আল্লাহর নিকট সে তত মর্যাদাবান। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী

ও সর্বজ্ঞাতা। ৪৯ : ১৩) আয়াতের এটাই অর্থ। আমি আদমের সন্তানদের সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী এবং আল্লাহর নিকট সবচাইতে মর্যাদাসম্পন্ন। কথাটা গৰ্ব নয়। অতঃপর গোত্রগুলোকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেন এবং আমাকে শ্রেষ্ঠ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর বাণী :

(হে আহলে বায়ত!) আল্লাহ তোমাদের থেকে পঙ্কিলতা দূর করে তোমাদেরকে সর্বোতভাবে পবিত্র করতে চান।) আয়াতে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ফলে আমি ও আমার পরিবার যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র। বর্ণনাটি গরীব ও মুনকার পর্যায়ের। হাকিম ও বায়হাকী… ইব্‌নে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ঘরের আঙ্গিনায় বসা ছিলাম। এ সময় এক মহিলা সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করেন। দেখে একজন বলল, ইনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কন্যা। ঠিক তখন আবু সুফিয়ান বলল, হাশিম গোত্রে মুহাম্মদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে গোবরে পদ্মফুলের মতো। মহিলাটি চলে গেলেন এবং কথাটা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কানে দিলেন। শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট আসলেন। তার চেহারায় তখন অসন্তোষ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। এসে তিনি বললেন : ব্যাপার কি, আমি কী সব কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি? আল্লাহ সাত আকাশ সৃষ্টি করে তার উর্ধলোকে যাদেরকে ইচ্ছা! স্থান দিলেন। অতঃপর তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বনী আদমকে মনোনীত করলেন। বনী আদমের মধ্য থেকে মনোনীত করলেন আরবদেরকে আর আরবদের মধ্য থেকে মনোনীত করলেন মুযারকে। মুযার-এর থেকে মনোনীত করলেন কুরাইশকে, কুরাইশ থেকে বনু হাশিমকে, আর বনু হাশিম থেকে আমাকে। অতএব আমি সেরার সেরা। ফলে যে ব্যক্তি আরবদেরকে ভালোবাসল, সে আমার খাতিরেই তাদেরকে ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আরবদের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করল, আমার সঙ্গে বিদ্বেষ থাকার কারণেই তাদের সঙ্গে সে বিদ্বেষ পোষণ করল।

তবে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানদের সরদার রূপে থাকবো। এটা আমার গর্ব নয়।

হাকিম ও বায়হাকী…… আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ জিবরাঈল আমাকে বললেন যে, আমি পৃথিবীটা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে দেখলাম, মুহাম্মদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কাউকে পেলাম না। আবার পৃথিবীটা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত উলট-পালট করলাম; কিন্তু হাশিমের গোত্র অপেক্ষা উত্তম কোন গোত্রের খোজ পেলাম না। বায়হাকী মন্তব্য করেন যে, বর্ণনাগুলোতে দুর্বলতা থাকলেও একটি অপরটির সমর্থক হওয়ায় গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঠিক এই মর্মে আবু তালিব নবী করীম (সা)-এর প্রশংসায় বলতেন :

কুরায়শ যদি কখনো গৌরব করার জন্য সমবেত হয়, তো আবদে মানাফ-ই সেই মহান ব্যক্তি, যাকে নিয়ে কুরাইশ গর্ব করতে পারে। আবার আবদে মানাফের সম্রােন্ত ও অভিজাত ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে চাইলে তাদেরকে হাশিম গোত্রেই খুঁজতে হবে।

তারা যদি আরো গৌরব করতে চায়, তাহলে মুহাম্মদকে নিয়েই তা করতে হবে। কেননা মুহাম্মদই হলেন তাদের মধ্যে মহান ব্যক্তিদের বাছাই করা ব্যক্তি।

কুরাইশের শীর্ণ মোটা সকলে আমাদের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে তারা সফল হয়নি এবং তাদের বুদ্ধির বিভ্ৰাট ঘটেছে।

অতীতে আমরা অত্যাচার স্বীকার করতাম না। লোকে অবজ্ঞা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমরা তা সোজা করে দিতাম। যে কোন দুর্দিনে আমরা তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতাম আর বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিরোধ করতাম। আমাদের উসিলায় নেতিয়ে পড়া কাঠ সোজা হয়ে দাড়াত এবং আমাদের এই সহযোগিতায় তা সজীব হতো এবং বৃদ্ধি লাভ করত।

আবুস সাকান খারাম ইব্‌নে আউস সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাবুক থেকে ফিরে আসা কালে আমি তার দরবারে হাজির হলাম, তখন আমি ইসলাম গ্ৰহণ করি। তখন শুনতে পেলাম, আব্বাস ইব্‌নে আবদুল মুত্তালিব বলছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আচ্ছা বল, আল্লাহ তোমার মুখে ফুল চন্দন ফুটান! অনুমতি পেয়ে বলতে শুরু করলেন :

এক সময়ে আপনি অবস্থান করেছেন, ছায়াময় এবং সংরক্ষিত স্থানে। তারপর আপনি ধরায় অবতরণ করলেন। তখন আপনি না পূর্ণাঙ্গ মানব, না গোশতের টুকরা, না রক্তপিণ্ড। বরং এক ফোটা বীৰ্য কিশতিতে আরোহণ করে আসলেন। অথচ, তখনকার সব জনপদ ভেসে গিয়েছিল প্লাবনের পানিতে। তারপর আপনি পিতার মেরুদণ্ড থেকে মায়ের গর্ভে স্থানান্তরিত হলেন এবং ধীরে ধীরে একজন পূর্ণাঙ্গ মানবের রূপ ধারণ করলেন। নিজ ঘরের শোভা হয়ে এক সময়ে ভূমিষ্ঠ হলেন পৃথিবীতে। আপনি যখন জন্মগ্রহণ করলেন, তখন আপনার আলোতে আলোকিত হল সমগ্ৰ পৃথিবী। এখন সেই আলোতে আমরা পথ চলি।

এই কবিতাগুলো হাসসান ইব্‌নে সাবিত (রা)-এর নামেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন : ইব্‌ন আসাকির ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার আব্বা-আম্মা আপনার জন্য কুরবান হোন। বলুন তো, আদম (আ) যখন জান্নাতে, আপনি তখন কোথায় ছিলেন? ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, আমার এ প্রশ্ন শুনে নবী করীম (সা) হেসে উঠলেন। এমনকি তায় সামনের কটি দাঁত দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন : আমি আদমের মেরুদণ্ডে ছিলাম। আমার পিতৃপুরুষ নূহ (আ) তার মেরুদণ্ডে করে আমাকে নিয়ে কিশতিতে আরোহণ করেন। তারপর আমাকে আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীমের মেরুদণ্ডে করে (অগ্নিকুণ্ডে) নিক্ষেপ করা হয়। আমার বংশ লতিকার কোন পিতা-মাতাই জীবনে কখনো ব্যভিচারে সম্পৃক্ত হননি। আল্লাহ আমাকে কুলীন মেরুদণ্ড থেকে পূত-পবিত্র জরায়ুতে স্থানান্তরিত করতে থাকেন। আমার পরিচয় হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত। যখনই মানুষ ভালো-মন্দ দুদলে বিভক্ত হয়, আমি ভালো ও শ্রেষ্ঠ দলে থাকি। আল্লাহ নবুওত দ্বারা আমার অঙ্গীকার এবং ইসলাম দ্বারা আমার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। তাওরাত ও ইনজীলে আমার সুসংবাদ প্ৰকাশ করেছেন এবং প্রত্যেক নবীকে আমার বিস্তারিত পরিচয় জানিয়েছেন। আমার নূরে বিশ্বজগত এবং আমার মুখমণ্ডলে মেঘমালা আলোকিত হয়। আল্লাহ আমাকে তার কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন এবং তার নামে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ তার নিজের নাম থেকে বের করে আমার নাম রেখেছেন। ফলে আরাশের অধিপতি হলেন মাহমুদ আর আমি হলাম মুহাম্মদ ও আহমদ। আল্লাহ আমাকে হাউযে কাওছার দিয়ে ধন্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আমাকে সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম সুপারিশ মঞ্জরকৃত ব্যক্তিরূপে মনোনীত করেছেন। এরপর আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের জন্য শ্রেষ্ঠ যুগে আমার আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। আমার উম্মত অত্যধিক প্ৰশংসাকারী। তারা সৎকাজের আদেশ

করে এবং অন্যায় কাজ থেকে বারণ করে।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, তখন হাস্সান ইব্‌ন সাবিত নবী করীম (সা)-এর শানে পূর্বোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করেন যাতে বলা হয়েছে

শুনে নবী করীম (সা) বললেন, আল্লাহ হাসসানের প্রতি রহমত করুন। তৎক্ষণাৎ আলী ইব্‌ন আবু তালিব বলে উঠলেন, কাবার প্রভুর শপথ, হাসসানের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। ইব্‌ন আসাকির এ বর্ণনাটিকে গরীব বলেছেন। আমার মতে এগুলো মুনকারও বটে।

কাজী ইয়ায তাঁর আশ-শিফা গ্রন্থে বলেছেন, বিভিন্ন আসমানী কিতাবে যে আহমদের কথা বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন নুবুৰীকে যারু সুসংবাদ-দেওয়া-হ্রয়েছে, তার নামে যেন কারও নামকরণ করা না হয় এবং তার অবিভাবৈর অর্গে কেউ যেন নিজেকে আহমদ বলে দাবি না। করে, কৌশলে আল্লাহ তার পথ রুদ্ধ করে দেন। যাতে দুর্বলমনা লোকদের মধ্যে কোন রকম SSBBBB BBB BSBBBSB BSBEEBmBYSBEB BDBB BDBDB BBBSBBBSBDDBBDBB BBB S BBDBLLDBB BBB BBBB BBBSDBBB BBB SBBSBBuS BeB BBBBDDD

ছেলেদের মুহাম্মদ নামে নামকরণ করেছিল এঁই আশীয়ধ্যে ফ্রন্থ ছিলেই সেই মুহাম্মদ হুয়াকিনী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *