২৭. ঈসা (আ) ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মধ্যবর্তী যুগের কয়েকটি ঘটনা

ঈসা (আ) ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মধ্যবর্তী যুগের কয়েকটি ঘটনা

(क) का या निभी।

কেউ কেউ বলেন, সর্বপ্রথম যিনি কাবা ঘর নির্মাণ করেন, তিনি হলেন আদম (আ) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমার বর্ণিত এ সম্পর্কে একটি মারফু হাদীসও আছে। তবে এর সনদে ইবনুল হায়আ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন। বিশুদ্ধতর অভিমত হলো, সর্বপ্রথম যিনি কাবা ঘর নির্মাণ করেছেন, তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সিমাক ইব্‌ন হারব আলী ইব্‌ন আবু তালিব থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। আলী (রা) বলেন, অতঃপর কাবাঘর ধ্বংস হয়ে গেলে আমালিকা বংশীয়রা তা নির্মাণ করে। তারপর আবারও ধ্বংস হলে জুরহুম বংশীয়রা তা নির্মাণ করে। পুনরায় ধ্বংস হলে এবার কুরাইশরা তা নির্মাণ করে। কুরাইশের কাবাঘর পুনঃনির্মাণের আলোচনা পরে আসছে। তা ঘটেছিল নবী করীম (সা)-এর নবুওত লাভের পাঁচ বছর, মতান্তরে পনের বছর আগে। যুহরী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তখন যৌবনে উপনীত। যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

(খ) কব ইব্‌ন লুওয়াই

আবু নু আয়ম. আবু সালামা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, কাব। ইব্‌ন লুওয়াই প্রতি শুক্রবার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সমবেত করে ভাষণ দিতেন। কুরাইশরা সে দিনটিকে বলতো আরূবা। বক্ততায় তিনি বলতেন, হে লোক সকল! তোমরা শ্রবণ করা, শিক্ষা লাভ কর ও অনুধাবন কর! অন্ধকার রাত, আলোকোজ্জ্বল দিন বিছানা স্বরূপ পৃথিবী ছাদ আকাশ স্বরূপ, কীলকীস্বরূপ পাহাড়রাজি আর পথ নির্দেশক তারকারাজি আগের পরের নির্বিশেষে সকল সকল, নারী ও পুরুষ সর্বপ্রথম স্বীকারোক্তি L-এর প্রতি ইঙ্গিতকারী বিষয় এবং রূহ। তোমরা রক্তের আত্মীয়তা বজায় রেখে চল। বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা কর। অর্থ-সম্পদকে ফলপ্ৰদ বানাও। মৃত্যুবরণকারী কাউকে কি তোমরা ফিরে আসতে কিংবা মৃত ব্যক্তিকে পুনরুখিত হবে দেখেছ? আসল বাড়ী তোমাদের সম্মুখে। তোমরা যা বলছি, ব্যাপার তার বিপরীত। তোমাদের মর্যাদাকে তোমরা উৎকর্ষিত করে তোল এবং এর উপর দৃঢ় থাক। অচিরেই আসছে এক মহা সংবাদ। মহান এক নবী আত্মপ্রকাশ করছেন বলে। অতঃপর তিনি আবৃত্তি করেন :

— রাত ও দিন প্রত্যহ নিত্য-নতুন ঘটনা নিয়ে আসছে। সেই রাত ও দিন সবই আমাদের জন্য সমান। বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে রাত-দিন ফিরে আসে। প্রভূত প্রাচুর্য নিয়ে আমাদের উপর তার আবরণ ঢেলে দেয়। নবী মুহাম্মদ এসে পড়বেন, তোমরা টেরও পাবে না। এসে তিনি বহু সংবাদ প্ৰদান করবেন, সংবাদদাতা হবেন মহা সত্যবাদী।

অতঃপর তিনি বলতেন : সেদিন পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকতাম,তাহলে অবশ্যই আমি উটের উপর দাড়িয়ে থাকার ন্যায় ঠােয় দাঁড়িয়ে থাকতাম এবং বাছুরের ন্যায় দৌড়াতাম।

তারপর বললেন :

দাওয়াতের সামনে উপস্থিত থাকতে পারতাম!

বর্ণনাকারী বলেন, কাব। ইব্‌ন লুওয়াই এর মৃত্যু এবং রাসূল (সা)-এর নবুওত লাভের মাঝে ব্যবধান ছিল পাঁচশত। ষাট বছর।

(গ) যম যম কূপ পুনঃখনন

জুরহুম গোত্ৰ যম যম কৃপ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে আবদুল মুত্তালিবের সময়কাল পর্যন্ত তার কোন চিহ্ন বিদ্যমান ছিল না। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক বৰ্ণনা করেন যে, একদা আব্দুল মুত্তালিব হিজারে তথা হাতীমে ঘুমিয়ে ছিলেন। এসম্পর্কে তিনি বলেন যে, হিজারে ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্নে দেখলাম। এক ব্যক্তি এসে বলল, তুমি তায়্যেবা খনন কর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তায়্যেবা কী? কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সে চলে গেল। পরদিন রাতে আমি যখন বিছানায় গেলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, লোকটি এসে পুনরায় আমাকে বলল, বাররা খনন করা! আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বাররা কী? লোকটি আমাকে জবাব না দিয়েই চলে গেল। তৃতীয় রাতে আবারো স্বপ্নে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে বলছে, মাযন্নুন্না খনন কর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মাযানুন্না কী? পরের রাতে আবারো এসে সে বলল, যমযম খনন কর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, যম যম কী? সে বলল, যা কখনো শুকাবে না, মহান হাজীগণ যার পানি পান করবেন। গোবর ও রক্তের মধ্যখানে যার অবস্থান, সাদা পা বিশিষ্ট কাকের নিকটে, পিপড়ার বসতির কাছে।

আব্দুল মুত্তালিব বলেন, পরিচয় ও জায়গার নির্দেশনা পেয়ে আমি কোদাল নিয়ে সেখানে গেলাম। পুত্ৰ হারিছ ইব্‌ন আব্দুল মুত্তালিবও সঙ্গে ছিল। সে সময় পর্যন্ত তাঁর অন্য কোন পুত্ৰ ছিল না। খনন কার্য শুরু হয়ে এক সময়ে তা শেষ হলো। আব্দুল মুত্তালিব পানি দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর বলে উঠলেন। তাকবীর ধ্বনি শুনে কুরাইশরা বুঝল যে, আব্দুল মুত্তালিব এর উদ্দেশ্যে হাসিল হয়ে গেছে। ফলে তারা তার নিকট গিয়ে বলল, হে আব্দুল মুত্তালিব! আপনি যে কুপের সন্ধান পেয়েছেন, তা আমাদের পিতা ইসমাঈলের কৃপ এবং নিঃসন্দেহে তাতে আমাদের অধিকার আছে। অতএব আমাদেরকে তার ভাগ দিতে হবে। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, না, তা হবে না। এ কৃপ শুধু আমাকেই দেওয়া হয়েছে, এতে তোমাদের কোন অংশ নেই। কুরাইশরা বলল, আমরা এর দাবি ছাড়ব না। প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে লড়াই করে হলেও আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে ছাড়ব। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ঠিক আছে, তা-ই যদি করো, তা হলে একজন লোক ঠিক কর, আমরা তার উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করব। কুরাইশরা বলল, বনু সাদ ইব্‌ন হুয়াইমের গণক ঠাকুরণীর কাছে চলুন। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ঠিক আছে। এই গণব ঠাকুরণীর আবাসস্থল ছিল সিরিয়ার দিকে।

আব্দুল মুত্তালিব রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তাঁর বনু উমাইয়া এবং কুরাইশের প্রত্যেক গোত্রের একজন করে একদল লোক। তখনকার দিনে তা ছিল এক বিরান মরু প্ৰান্তর। এক সময়ে আব্দুল মুত্তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের পানি শেষ হয়ে গেল। তারা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লেন। এমন কি প্রাণ হারাবার উপক্রম হল। ফলে আব্দুল মুত্তালিবের সঙ্গীরা অন্যদের নিকট পানি চাইল। কিন্তু তারা পানি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল, আমরা নিজেরাও তোমাদের মত এ মরু প্রান্তরে বিপন্ন হওয়ার আশংকা করছি। অগত্যা আব্দুল মুত্তালিব সঙ্গীদেরকে বললেন, গায়ে কিছুটা শক্তি-সামৰ্থ্য থাকতেই তোমরা নিজেদের জন্য গর্ত খনন করে রােখ, যাতে কেউ মারা গেলে সঙ্গীরা তাকে সেই গর্তে পুতে রাখতে পারে। এভাবে সর্বশেষ একজন হয়ত সমাধি থেকে বঞ্চিত হবে। তা হয় হোক। গোটা কাফেলা বিনা দাফনে থাকা অপেক্ষা একজন থাকাই ভালো। সঙ্গীরা বলল, আপনার এই আদেশ অতি উত্তম। আমরা তা-ই করব। প্রত্যেকেই নিজের জন্য গর্ত খনন করল এবং বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে লাগল।

অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব সাথীদের বললেন, আমরা এভাবে নিজেদেরকে মৃত্যুর হাতে সোপর্দ করে বসে রইলাম। চেষ্টা করলে হয়ত আল্লাহ কোন প্রকারে পানির ব্যবস্থা করেও দিবেন। বসে না থেকে তোমরা সামনে অগ্রসর হয়ে দেখ। তারা রওয়ানা হলো। আব্দুল মুত্তালিবের উটি উঠে দাঁড়াতেই তার পায়ের নীচ থেকে সুমিষ্ট পানির ফোয়ারা বইতে শুরু করল। আব্দুল মুত্তালিব তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠলেন। সংগীরাও তাকবীর দিয়ে উঠল। আব্দুল মুত্তালিব বাহন থেকে নেমে পানি পান করলেন। সংগীরাও পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করল এবং আপনি আপন মশক ভরে নিল। অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশের গোত্ৰসমূহের প্রতিনিধিদেরকে আহবান করলেন। এতক্ষণ তারা তাকিয়ে এসব অবস্থা দেখছিল। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, এসো এসো এই যে পানি!! আল্লাহ আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন।

তারাও সেই পানি পান করল এবং পরিতৃপ্ত হলো। অতঃপর বলল, আল্লাহ। আপনাকে আমাদের উপর বিজয়ী করেছেন। শপথ আল্লাহর, যমযমের ব্যাপারে আমরা আপনার সঙ্গে আর কখনো বিবাদ করব না। এই মরু অঞ্চলে যিনি আপনাকে এ পানি দান করলেন, তিনিই আপনাকে যম যম দান করেছেন। অতএব নিরাপদে আপনি আপনার কুপের নিকট ফিরে যান। আব্দুল মুত্তালিব ফিরে গেলেন। প্রতিপক্ষও তাঁর সঙ্গে ফিরে গেল। যম যম সম্পর্কিত বিবাদের মীমাংসা এভাবেই হয়ে গেল। গণক ঠাকুরণীর কাছে আর যাওয়ার প্রয়োজন হলো না। তারা তার হাতেই যমযমের অধিকার ছেড়ে দিল।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, এই হলো আলী ইব্‌ন আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত যমযম সম্পর্কিত বর্ণনা। অন্য এক সূত্রে আমি শুনেছি যে, আব্দুল মুত্তালিব বর্ণনা করেছেন, স্বপ্নে যখন তাকে যম যম খনন করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন এ-ও বলা হয়েছিল— এরপর তুমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানির জন্য দোয়া করবে। আল্লাহর ঘরের হাজীরা তা পান করবে। এই কূপ যতদিন টিকে থাকবে, তা থেকে কোন ভয়ের কারণ থাকবে না।

বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশের নিকট গিয়ে বললেন, তোমরা জেনে রাখ, আমি যম যম খননের জন্যে আদিষ্ট হয়েছি। তারা জিজ্ঞাসা করল, যম যম কোথায় তা কি আপনাকে বলে দেওয়া হয়েছে? আব্দুল মুত্তালিব বললেন, না জানানো হয়নি। লোকেরা বলল, তা হলে এ স্বপ্নটি যে বিছানায় শুয়ে দেখেছিলেন, আজও সে বিছানায় ঘুমাবেন। এই স্বপ্ন যদি সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা হলে আল্লাহ বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়ে দিবেন। আর যদি তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে সে আর আসবে না। আব্দুল মুত্তালিব ফিরে গেলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এবারও স্বপ্ন দেখলেন, কে যেন বলছে, যম যম খনন কর, যদি তুমি তা কর তা হলে লজ্জিত হবে না। তা তোমার মহান পিতার উত্তরাধিকার; কখনো তা শুকাবে না। হাজীগণকে তুমি তা থেকে পান করাবে। মানতকারীরা সেখানে প্রাচুর্যের জন্য মানত করবে। তা পৈত্রিক সম্পত্তি হবে এবং মজবুত বন্ধন হবে। তার স্থান তুমি জান আর তা রক্ত ও গোবরের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আব্দুল মুত্তালিবকে যখন স্বপ্নে এ সব কথা বলা হলো, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কৃপটির অবস্থান কোথায়? বলা হলো পিঁপড়ের ঢিবির নিকট। আগামীকাল ওখানে কাক ঠোকরাবে।

উক্ত বিবরণ দুটির কোনটি যথার্থ, তা আল্লাহই ভাল জানেন। আব্দুল মুত্তালিব পরের দিন পুত্ৰ হারিছকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। সে সময়ে হারিছ ছাড়া তাঁর আর কোন পুত্র ছিল না। উমুবীর বর্ণনা মতে, তার গোলাম পিঁপড়ের ঢিবিতে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, আসাফ ও নায়লা মূর্তিদ্বয়ের মধ্যখানে কাক ঠোকরাচ্ছে। এই দুই মূর্তির নিকট কুরাইশরা পশু বলি দিত। আব্দুল মুত্তালিব কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। দেখে কুরাইশের লোকেরা ছুটে এসে বলল, আল্লাহর কসম!! আমরা তোমাকে এই জায়গার মাটি খুঁড়তে দেব না। আমাদের দুই দেবতার মধ্যকার এই স্থানে আমরা পশু বলি দেই। শুনে আব্দুল মুত্তালিব পুত্ৰ হারিছকে বললেন, আমি কূপ খনন করা পর্যন্ত তুমি আমার হেফাজতের ব্যবস্থা কর। আল্লাহর কসম, আমি যে কাজের আদেশ পেয়েছি, তা আমি বাস্তবায়ন করবই। আব্দুল মুত্তালিবের দৃঢ়তা দেখে কুরাইশের লোকেরা তাকে আর খনন কাজে বাধা দিল না।

আব্দুল মুত্তালিব খনন কার্য চালাতে থাকলেন। অল্প একটু খনন করার পরই পানি বেরিয়ে এলো। আব্দুল মুত্তালিব তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠলেন এবং পরিষ্কার বুঝতে পারলেন যে, তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা সত্য।

বেশ কিছুটা খনন করার পর আব্দুল মুত্তালিব তাতে স্বর্ণের দুটি হরিণ মূর্তি পান। জুরহুম গোত্র এখানে তা পুঁতে রেখেছিল। সেখানে তিনি কয়েকটি তলোয়ার এবং কিছু বর্ম পেলেন। দেখে কুরাইশরা বলল, আব্দুল মুত্তালিব! এতে তোমার সঙ্গে আমাদের ভাগ আছে। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, না, তা হবে না। তবে একটি সুরাহায় আসতে পোর। এসো লটারীর মাধ্যমে আমরা এর মীমাংসা করি। কুরাইশরা বলল, তা কিভাবে হবে বলুন। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, কাবার নামে দুটি তীর নাও। আমার নামে নাও দুটি এবং তোমাদের নামে দুটি। যার তীর যে জিনিসটির উপর গিয়ে পড়বে সে তার মালিক হবে। আর যার তীর লক্ষ্যচু্যত হবে, সে কিছুই পাবে না। কুরাইশরা বলল, আপনার প্রস্তাবটি ন্যায়সঙ্গত।

আব্দুল মুত্তালিব কাবার নামে দুটি হলুদ তীর নিলেন। নিজের জন্য নিলেন দুটি কালো তীর এবং কুরাইশদের জন্য নিলেন দুটি সাদা তীর। কুরাইশের বড় দেবতা তার নিকটবতীর্ণ তীর নিক্ষেপকারীর নিকট তীরগুলি অৰ্পণ করে। হোবল- যে কারণে আবু সুফিয়ান ওহুদ যুদ্ধের দিন বলেছিল হোবলের জয় হোক।– আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহর নিকট দোয়া করতে লাগলেন :

হে আল্লাহ্! আপনি প্রশংসিত রাজাধিরাজ। আপনি আমার প্রতিপালক আপনিই সৃষ্টির সূচনাকারী এবং পুনঃসৃষ্টিকারী। আপনি পাথুরে পাহাড়কে সুদৃঢ় করে রেখেছেন। আপনার নিকট থেকে আসে অর্থ ও পশু সম্পদ। আপনি চাইলে আমার মনে ইলহাম করবেন কাবার ঐ স্থানটি যেখানে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর স্বর্ণালঙ্কার ও অস্ত্রশস্ত্র প্রোথিত রয়েছে। আজ আপনি

আমাকে অবহিত করেন। আপনার ইচ্ছা যদি আপনার মজি হয়। আমি শপথ করেছি। আপনি আমাকে তা দিয়ে দিন। আমি আর কিছু চাইবো না।

এবার তীর নিক্ষেপ শুরু হলো। হলুদ তীর দুটি গিয়ে হরিণ মূর্তির উপর পতিত হলো। যা ছিল কাবার জন্য। কালো দুটি গিয়ে পড়ল তরবারী ও বর্মগুলোর উপর। এগুলো পেলেন

8や>

আব্দুল মুত্তালিব। কুরাইশদের সাদা তীর দুটো লক্ষ্যচ্যুত হলো। আব্দুল মুত্তালিব তরবারী এবং হরিণ মূর্তি দুটি কাবার দরজায় স্থাপন করে রাখেন। লোকের ধারণা তা-ই ছিল কাবার গায়ে প্রথম সোনার অলংকার। তারপর আব্দুল মুত্তালিব যম যম কুপে হাজীদের পানি পানের ব্যবস্থা

করেন।

ইব্‌ন ইসহাক প্রমুখ বলেন, আব্দুল মুত্তালিবের আমলে যম যম উদঘাটিত হওয়ার আগে মক্কায় আরো অনেকগুলো কৃপ ছিল। ইব্‌ন ইসহাক সেগুলোর সংখ্যা এবং নামধামও উল্লেখ করেছেন। সবশেষে বলেন, কিন্তু যমযম অন্যসব কূপের উপর প্রাধান্য লাভ করে এবং মানুষ অন্যান্য কৃপ ছেড়ে যমযমের প্রতি ছুটে আসে। কারণ যম যম মসজিদুল হারামে অবস্থিত। আর এর পানি সব কূপ অপেক্ষা উত্তম। সর্বোপরি, যম যম ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর কৃপ। আবদে মানাফের গোত্র এই কৃপ নিযে কুরাইশর অন্যান্য গোত্র এবং সমস্ত আরবের উপর গর্ব করত।

হযরত আবু যর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ বিষয়ক মুসলিম শরীফের এক হাদীসে আছে যে, এই যম যম তার পানকারীর জন্য খাদ্য স্বরূপ এবং তা রোগের নিরাময়ও বটে।

ইমাম আহমদ হযরত জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রা)-এর বরাতে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) যমযমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হয়। ইব্‌ন মোজাহর বর্ণনায় এর পাঠ হচ্ছে : (1 < ….. ماء زمزم لما হাকিম (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বলেছেন, তুমি যখন যমযমের পানি পান করবে, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে, বিসমিল্লাহ বলবে, তিন নিঃশ্বাসে পান করবে এবং পরিতৃপ্তি সহকারে পান করবে। যখন পান করা শেষ করবে, তখন আল-হামদু লিল্লাহ বলবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমাদের ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য হলো, ওরা যমযমের পানি তৃপ্তি সহকারে পান করে না।

আব্দুল মুত্তালিব থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন : হে আল্লাহ! এই যমযমের পানি আমি গোসলকারীর জন্য হালাল মনে করি না। যমযমের পানি পানকারীর জন্য বৈধ ৷ কেউ কেউ এ উক্তিটি আব্বাস (রা)-এর বলে মত প্ৰকাশ করলেও বিশুদ্ধ মতে এটি আবদুল মুত্তালিবেরই উক্তি। কেননা তিনিই এটি পুনঃ খনন করেছিলেন।

উমাবী তাঁর মাগাষীতে বর্ণনা করেছেন যে, আবু উবায়দ ইয়াহয়া ইব্‌ন সাঈদ ও আব্দুর রহমান ইব্‌ন হারমালাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আব্দুর রহমান ইব্‌ন হারমালা বলেন, আমি সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যাবকে বলতে শুনেছি যে, আব্দুল মুত্তালিব ইব্‌ন হাশিম যখন যম যম খনন করলেন তখন বলেছিলেন, এই কৃপ গোসলকারীর জন্য হালাল নয়, এটি কেবল পানকারীর জন্যই বৈধ। তিনি যম যম কূপে দুটি হাউজ তৈরি করে দিয়েছিলেন। একটি পান করার জন্য অপরটি ওজু করার জন্য। তখন তিনি বলেছিলেন, একে আমি গোসলের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেবে না। তার উদ্দেশ্যে ছিল মসজিদকে পবিত্র রাখা।

আবু উবায়দ অন্য এক সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আসিম ইব্‌ন আবুন্নাজুদ আব্বাস (রা)-কে বলতে শুনেছেন, আমি একে গোসলকারীর জন্য হালাল করব না। এটি পানকারীর জন্য বৈধ। আব্দুর রহমান ইব্‌ন মাহদী সুফিয়ান ও আব্দুর রহমান ইব্‌ন আলাকামা সূত্ৰেও ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে অনুরূপ বৰ্ণিত আছে।

মূলত যমযমের পানি দ্বারা গোসল করা নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু আব্দুল মুত্তালিব ও আব্বাস (রা) এ কাজ থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এমনটি বলেছিলেন বলে মনে হয়।

উল্লেখ্য যে, আব্দুল মুত্তালিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত তিনিই যমযমের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই দায়িত্ব পুত্র আবু তালিবের উপর कUांठ श्श।

আবু তালিব অভাবগ্ৰস্ত হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর ভাই আব্বাস-এর নিকট থেকে দশ হাজার মুদ্র ঋণ নিয়ে হাজীদের জন্য যমযমের কাজে ব্যয় করেন। কথা ছিল, পরের বছর সে ঋণ শোধ করে দেবেন। কিন্তু একবছর চলে যাওয়ার পরও আবু তালিবের স্বচ্ছলতা ফিরে আসল না। তাই তিনি আব্বাসকে বললেন, তুমি আমাকে চৌদ্দ হাজার মুদ্র ঋণ দাও। আগামী বছর আমি তোমার সব পাওনা পরিশোধ করে দেব। জবাবে আব্বাস (রা) বললেন, এই শর্তে দিতে পারি যে, যদি আপনি যথাসময়ে ঋণ শোধ করতে না পারেন, তাহলে যমযমের কর্তৃত্ব আমার হাতে চলে আসবে। আবু তালিব শর্তটি মেনে নেন। এক বছর চলে যাওয়ার পরও আবু তালিব ঋণ পরিশোধ করার কোন ব্যবস্থা করতে পারলেন না। ফলে শর্ত অনুযায়ী যমযমের দায়িত্বভার আব্বাসকে দিয়ে দেন। আব্বাসের পরে যমযমের দায়িত্ব আব্বাসের পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে আসে। আব্দুল্লাহর পরে আসে আলী ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাসের হাতে। তারপর আসে দাউদ ইব্‌ন আলীর হাতে। অতঃপর সুলায়মান ইব্‌ন আলীর হাতে। অতঃপর ঈসা ইব্‌ন আলীর হাতে। অতঃপর মনসুর যমযমের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তাঁর আযাদকৃত গোলাম আবু রায়ীনকে দেখা-শোনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। উমুবী এরূপ বর্ণনা করেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *