1 of 2

২০. হাসিমুখে, স্নিগ্ধ মনে

হাসিমুখে, স্নিগ্ধ মনে কিছুক্ষণ দীপনাথের দিকে চেয়ে থাকে প্রীতম। বাইরের ঘরে কোনও বাচ্চা বুঝি কচি গলায় ইংরিজি গান গাইছে। বেশ সাহেবি উচ্চারণ। সঙ্গে বোঙ্গো আর মাউথ-অর্গান। মন দিয়ে শোনে প্রীতম। তারপর বলে, ও ঘরে কী হচ্ছে তা আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

দীপনাথ জিজ্ঞেস করল, যাবি?

প্রীতম মাথা নেড়ে বলে, না। থাকগে।

দীপনাথ বলে, নতুন কিছু হচ্ছে না। সেই কেক কাটা, মোমবাতি নেভানো, সাহেবরা যা সব করত আর কী।

বলে একটু হাসে দীপ।

প্রীতমও হাসে। বলে, সাহেবরা দেশ ছেড়ে গেলেও সাহেবদের ভূত তো আর আমাদের ছেড়ে যায়নি সেজদা। আমার জন্মদিনে মা পুজো দিত, পায়েস রাঁধত। আজও তাই করে শুনেছি, আমি কাছে না থাকলেও করে।

থাকগে। তুই এ নিয়ে বিলুকে কিছু বলতে যাস না। তোদের সম্পর্কটা একটু ভাল যাচ্ছে দেখছি। সেটা যেন বজায় থাকে।

ও নিয়ে ভেবো না। আমি কখনও ঝগড়া করি না। তাছাড়া, বিলু যা করে আনন্দ পায় তাই করুক।

বলে প্রীতম ছাদের দিকে চেয়ে একরকম উদাস অভিমান মুখ করে শুয়ে থাকে। অনেকক্ষণ বাদে বলে, তোমার কথা বলো সেজদা, শুনি।

আমার আর কী কথা! নাথিং নিউ।

আমি তোমার কথা মাঝে মাঝেই ভাবি। মনে হয়, তোমার সত্যিই আরও ওপরে ওঠার কথা ছিল। এতদিনে একটা বেশ হোমরাচোমড়া হতে পারতে তুমি। একজন সুন্দরী মহিলাকে বিয়ে করতে পারতো কিছুই করলে না। কেমন যেন উদাস হয়ে যাচ্ছে।

দীপ হাসছিল মৃদু-মৃদু। বলল, দুনিয়াটা যে সস্তা নয় তা কি নিজে এতদিনেও বুঝিসনি প্রীতম?

দুনিয়া সস্তা নয় জানি। কিন্তু তোমার যে ভীষণ রোখ ছিল। স্কুলে তুমি কত ভাল ছাত্র ছিলে। বিলু খুব দ্রুত পায়ে এসে প্রীতমের বিছানায় একটা প্লাস্টিক ফেলে তার ওপর চিনেমাটির বড় প্লেট রেখে বলল, লাগলে বোলো, বিন্দু দেবে।

বলেই বাইরের ঘরের দিকে চলে গেল বিলু। ওই ঘর থেকে হট্টগোল আর গানবাজনার শব্দ আসছিল কিছুক্ষণ ধরে। বিলু সাবধানে মাঝখানের দরজাটা ভেজিয়ে দিল।

প্রীতম প্লেটের দিকে তাকাল, কিন্তু নড়ল না।

খা।—দীপনাথ সস্নেহে বলে।

ইচ্ছে করছে না।

এই তো বলছিলি খিদে পেয়েছে।

এইমাত্র খিদেটা চলে গেল।

দীপনাথ মৃদু হেসে বলে, আসলে বোধ হয় কিছু একটা ভেবে তোর মনটা খারাপ হয়েছে।

প্রীতম ক্লিষ্ট একটু হাসে। বলে, তোমার মতো এত ভাল করে আমাকে কেউ চেনে না মেজদা। তুমি খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারো। কী করে পারো বলো তো!

দূর পাগলা!—দীপনাথ উদাস মুখ করে বলে, আসলে তোকে ছেলেবেলা থেকেই দেখছি তো!

তাই হবে।বলে প্রীতম আবার ছাদের দিকে চেয়ে থাকে। বলে, তোমার কথা ভেবেই আমার মনটা খারাপ লাগছে সেজদা। তোমাকে এত আনসাকসেসফুল দেখব বলে কোনওদিন ভাবিনি।

তবে তুই কী ভেবেছিলি? এয়ারকন্ডিশনড চেম্বার? চার হাজার টাকা মাইনে? ফ্লুয়েন্ট ইংরিজি বলিয়ে বাঙালি-মেম বউ নিয়ে পার্টিতে যাওয়া?

প্রীতম উদাস গলায় বলে, হলেই বা দোষ কী ছিল?

দোষ কিছু নয়। তবে সেরকম হলে এই যেমন তোর কাছটিতে এসে বসে আছি এরকম বসতে পারতাম না। বাইরের ঘর থেকেই হয়তো বিদায় নিতাম। নয়তো লাবুর জন্মদিনে আসতামই না। হয়তো লাবুর জন্মদিনের চেয়েও ইমপর্ট্যান্ট কোনও পার্টি থাকত।

তাও মেনে নিতে রাজি আছি সেজদা। আমার কাছে এসে তোমাকে বসতে হবে না, লাবুর জন্মদিনের কথাও না হয় ভুলে গেলে, তবু সাকসেসফুল হও।

এসব কথায় ঠিক হাসি আসে না দীপনাথের। একটু বিষঃ স্বরে সে বলে, তুই আমাকে খামোখা হিরো বানাচ্ছিস। এর চেয়ে বড় কিছু হওয়ার যোগ্যতাই আমার ছিল না। আমি এই বেশ আছি। আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, তাই কমপিটিশনও নেই কারও সঙ্গে, আর তাই অযথা উদ্বেগ নেই, অশান্তি নেই। এই একরকম কেটে যাচ্ছে তো।

প্রীতম দীপনাথের মুখের দিকে চেযে বুঝল, প্রসঙ্গটা আর বানানো ঠিক হবে না। দীপনাথ সত্যিকারের অস্বস্তি বোধ করছে। সে আবার ছাদের দিকে চেয়ে রইল। তারপর যেন দীপনাথের নয়, খুব দুরের কাউকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমার মনে আছে সেজদা, একবার আমার দশ বারো বছর বয়সের সময় তুমি আমাকে হাকিমপাড়ার রাস্তায় খুব মেরেছিলে?

দীপনাথ প্রথমে জবাব দিল না। স্থির হয়ে বসে রইল। তারপর মৃদু স্বরে বলল, হুঁ, তখন তো ছেলেমানুষ ছিলাম।

আমি জানি সেজদা, সে কথা ভাবলে তুমি আজও দুঃখ পাবে। কিন্তু মজা কী জানো?

কী?

মজা হল, তুমি আমাকে মেরে মস্ত এক উপকার করেছিলে। বোধ হয় মার্বেলের জেত্তাল নিয়ে তোমার সঙ্গে ঝগড়া লাগে। তারপর তুমি আমাকে হঠাৎ দুমদাম প্রচণ্ড মারতে শুরু করে দিলে। আশ্চর্য এই যে, তার আগে বা পরে জীবনে আমি কারও হাতে মার খাইনি। স্কুলে নিরীহ ভাল ছেলে, বাড়িতে চুড়ান্ত আদরে, বড় হয়ে ল-অবাইডিং সিটিজেন, তাই আমাকে কেউ কখনও মারধর করার স্কোপ পায়নি। একমাত্র তুমি মেরেছিলে। জীবনে ওই একবারই আমি মার খাই।

দীপনাথ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, সে কথা ভাবলে আজও আমার খারাপ লাগে। তুই-ই বা কেন ওসব ভাবিস? কোন ছেলেবেলার কথা!

প্রীতম হাত তুলে দীপনাথকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ভাবলে আমার দুঃখ হয় না। বরং খুব আনন্দ পাই। ব্যাপারটা তুমি ঠিক বুঝবে না। সেই বয়সে তুমি পাড়ায় পাড়ায় মারপিট করে বেড়াতে, ওসব। ছিল তোমার জলভাত। আমার কাছে তো তা ছিল না। কেউ আমাকে ঘুসি চড় লাথি মারবে, ড্রেনের মধ্যে ফেলে দেবে এমন ঘটনা কল্পনাও করতে পারতাম না কোনওদিন। আমার গায়ে ফুলের টোকাটাও লাগেনি তখনও। তুমি যখন মারলে তখন ভয় বা ব্যথার চেয়েও বেশি হয়েছিল বিস্ময়। একজন আমাকে মারছে! ভীষণ মরছে! বীভৎস রকমের মারছে! আমি মার খাচ্ছি! আমার নাক আর দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি নোংরা ড্রেনের মধ্যে পড়ে আছি! এইসব ভেবে আমি ভীষণ ভীষণ অবাক হয়ে গেছি তখন। আর চোখের সামনে চেনা পৃথিবীটাই তখন হঠাৎ বদলে যাচ্ছে। ঠিক সেন পুনর্জন্মের মতো একটা ব্যাপার! মার খেয়ে প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছিলাম। সবাই তাই দেখে হেসেছিল। অপমানে তখন মাথা পাগল-পাগল। পারলে তোমাকে তখন খুন করি। কিন্তু কী হল জানো? অদ্ভুত একটা পরিবর্তন এসে গেল আমার মধ্যে। তুমি জানো না, বড়সড় বসেও মাঝে মধ্যে আমি রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় পেচ্ছাপ করে ফেলতাম। তোমার হাতে মার খাওয়ার পরই সেই বদ অভ্যাস। একদম চলে গেল। সেই সঙ্গে আমার যে সাংঘাতিক ভূতের ভয় ছিল সেটা অর্ধেকের বেশি কমে এল। খেতে শুতে, জামা-জুতো পরতে আমি সবসময়ে মা বা দিদিদের ওপর নির্ভর করতাম। সেই থেকে সেই নির্ভরশীলতা আর একদম রইল না। মনে মনে ভাবতাম, যে রাস্তার ছেলের হাতে মার খায় তার বাড়ির আদর খাওয়া মানায় না। তার ভূতের ভয় হলেও চলে না। এইভাবে নিজের ওপর ধপত্য এল। তোমার ওপর শোধ নেব বলে আমি একটা ব্যায়ামাগারে ভরতি হয়ে বহুদিন ব্যায়াম-ট্যায়াম করে মাসলও ফুলিয়েছিলাম। কিন্তু ততদিনে তোমার সঙ্গে আমার খুব গভীর ভাব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই মার খাওয়াটা কোনওদিন ভুলিনি। আজ যে আমি একটা অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে পারছি তা কী করে পারছি জানো? তোমার সেই মারের জন্য। তোমার হাতেব মার আজও আমাকে চাবকে চালায়। বাইরের ঘরে যে বেলুনের থোপা ঝুলছে, দরজায় যে রঙিন কাগজের শিকলি তা আজ আমি নিজে তৈরি করলাম। সেই যে তুমি আমাকে দুনিয়ার সব বিপদ সম্পর্কে হুশিয়ার করে লড়াই করার দম দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলে, সেই দমে আমি আজও বহাল আছি সেজদা। নইলে কবে রোগের কথা ভেবে ভেবে শুকিয়ে মরে থাকতাম।

দীপনাথ ম্লান হেসে বলল, কোনওদিন তো বলিসনি এসব!

আজ মনে হল তাই বললাম।

দীপনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, বুঝলাম। কিন্তু এখন তোর বেলুন-টেলুন ফোলাতে যাওয়া উচিত নয়। বিলু আমাকে বলছিল, তুই নাকি কিছু মানতে চাস না। চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলি নাকি আজ!

খুব অকপটে বাচ্চা ছেলের মতো হাসে প্রীতম। বলে, ও কিছু নয়। ব্যালান্সটা রাখতে পারিনি।

একটু সাবধান হওয়া ভাল। বেশি বাড়াবাড়ি না-ই করলি।

প্রীতম করুণ মুখ করে বলে, কিন্তু আমি যে ভাল আছি সেজদা। খুব ভাল আছি।

তাই থাকিস।

কিন্তু তুমি কেন ভাল নেই?

আমি!—অবাক হয়ে দীপনাথ বলে, আমি কি খারাপ আছি? বেশ আছি তো! ভালই আছি। তোমার মুখ দেখে তা মনে হয় না। দীপনাথ বেখেয়ালে নিজের গালে হাত বোলাল, তারপর খুব বোকার মতো একটু হাসল। বলল, কেন? আজ তো দাড়িটাড়ি কামিয়ে এসেছি। মুখ দেখে খারাপ লাগার কথা তো নয়।

ইয়ারকি মেরো না সেজদা। মনে রেখো, রোগে ভুগলে মানুষের অনুভূতি ভীষণ বেড়ে যায়। তুমি স্নো পাউডার মেখে এসে হোঃ হোঃ হিঃ হিঃ করতে থাকলেও আমি ঠিক বুঝতে পারতাম যে, তুমি আসলে ভাল নেই।

তখন থেকে কেন যে তুই কেবল টিকটিক করছিস! এমন পিছনে লাগলে আর ঘন ঘন আসব না দেখিস, বহুদিন বাদে বাদে আসব।

প্রীতম একটু অদ্ভুত চোখে চেয়ে রইল, তারপর একেবারে আপাদমস্তক দীপনাথকে চমকে দিয়ে প্রশ্ন করল, তুমি কারও প্রেমে-টেমে পড়োনি তো?

এত চমকে গিয়েছিল দীপনাথ যে, বুকটা ধুকধুক করে উঠল ভীষণভাবে। আর ঠিক সেই সময়ে বাইরের ঘরের ভেজানো দরজাটা কে যেন খুলে ধরল। উন্মুক্ত বোঙ্গো, ব্যানজো আর মাউথঅর্গানের সঙ্গে মার্কিনি গানের দুর্দান্ত শব্দ এসে তছনছ করতে লাগল ঘর। দীপনাথ কোনওকালেই ভাল অভিনেতা নয়। তার ধারণা, সে যা ভাবছে তা আশেপাশের সবাই টের পেয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত কোনও গোপন কথাই ঠিকমতো গোপন করতে পারেনি দীপনাথ।

বাইরের ঘরের দরজা ভেজিয়ে বিলু রান্নাঘরের দিকে চলে যাওয়ার পর দীপনাথ মৃদু স্বরে বলল, দূর দুর!

প্রীতম কথাটা বিশ্বাস করল না। কিন্তু তেমনি অদ্ভুত গোয়েন্দার মতো দৃষ্টিতে চেয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল দীপনাথকে। বাস্তবিক তার অনুভূতি আজকাল প্রখর থেকে প্রখরতর হয়েছে। এমনকী সে আজকাল বাতাসে অশরীরীদেরও বুঝি টের পায়। দীপনাথের চোখে মুখে সে আজ একটা হালকা ছায়া দেখতে পাচ্ছে। চোখের দৃষ্টি বড় চঞ্চল, চোখে চোখ রাখতে চাইছে না। প্রীতম আজকাল উকিলের মতো সওয়াল করতে পারে। তাই সে সহজ সরল পথে গেল না। বলল, তোমার কি আজকাল বকুলের কথা খুব মনে পড়ে?

বকুলের কথা!—একটু যেন অবাক হয় দীপনাথ। বকুলের কথা একসময়ে ভুলে যাওয়া শক্ত ছিল বটে। কিন্তু এখন তো একদম মনে পড়ে না। সে মাথা নেড়ে বলল, কী যে বলিস পাগলের মতো। কোন ছেলেবেলার কথা সব! কবে ভুলে গেছি।

একটুও মনে নেই?

তা মনে থাকবে না কেন? মনে করতে চাইলে মনে পড়ে। এমনিতে পড়ে না।

বকুল কিন্তু দেখতে ভারী সুন্দর ছিল। একদম রবি ঠাকুরের কোনও উপন্যাসের নায়িকার মতো।

দীপনাথ ম্লান হাসল। বলল, তা হবে। তোর মতো চোখ তো সকলের নেই। আমার অত সুন্দর লাগত না।

তবে ওর সঙ্গে ঝুলেছিলে কেন?

তা সে বয়সে কি আর বাছাবাছি থাকে!

তোমার আর সব ভাল, কিন্তু বরাবরই তুমি একটু চরিত্রহীন ছিলে কিন্তু সেজদা।

বহুক্ষণ বাদে হঠাৎ খুব হোঃ হোঃ করে হাসে দীপনাথ। বলে, চরিত্রহীন। বলিস কী?

একটু ছিলে। হাসলে কী হবে, আমি তো জানি।

কী জানিস?

সাইকেল নিয়ে বাবুপাড়ায় একসময়ে শীলাদের বাড়ির কাছে টহল মারতে। তারপর নজর দিলে রেল-কোয়ার্টারের লাবণ্যর ওপর। তোমাকে সবচেয়ে জব্দ করেছিল কলেজপাড়ার বকুল।

স্মিত হাসছিল দীপনাথ। একটা শ্বাস ফেলল।

প্রীতম বলল, অবশ্য জব্দ করতে গিয়ে বকুল নিজেই জব্দ হয়ে গেল শেষ অবধি।

পাশের ঘরে উৎসব চলছে। এই ঘরে দু’জন মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে আস্তে আস্তে ফিরে যাচ্ছিল উজানে।

বকুলকে কে যেন শিখিয়েছিল, ছেলেদের সঙ্গে মিশতে নেই। তার বিষণ্ণ, গম্ভীর, সুন্দর মুখে সবসময়ে একটা অদৃশ্য নোটিশ ঝুলত : আমার দিকে কেউ তাকাবে না, একদম তাকাবে না, খবরদার তাকাবে না।

বকুল নিজেও বোধহয় কোনও ছেলের দিকে তাকায়নি কোনওদিন।

বকুল এমনিতে বাড়ি থেকে বেরোত না কখনও। তবু স্কুলের পথে বা এ বাড়ি ও বাড়ি কখনও যেতে হলে ছেলেরা তো টিটকিরি দিতে ছাড়ত না। কিন্তু বকুল উদাস অহংকারে রানির মতো হেঁটে চলে যেত। যখন কলেজে ভরতি হল তখন কো-এড়ুকেশনেও তাকে কাবু করতে পারেনি। দীপনাথ তখন কলেজের শেষ ক্লাসে। সে বকুলের হাবভাব দেখে বলত, হাতি চলে বাজারে, কুত্তা ভুখে হাজারে।

দীপনাথ বকুলের প্রেমে পড়েছিল কি না তাতে সন্দেহ আছে। তখন সে ছিল শিলিগুড়ির চালু মস্তান টাইপের ছেলে। দল পাকাত, ইউনিয়ন করত, মেয়েছেলে নিয়ে দেয়ালা করার সময় পেত না।

তবু বকুলকে নজরে পড়েছিল দীপনাথের। ভারী সুন্দরী, ভীষণ শান্ত, অদ্ভুত অহংকারী। কাউকে পাত্তা দিত না। কারও দিকে তাকাত না। এমনকী পাছে তার দিকে কেউ তাকায় সেই ভয়েই বোধ হয় ভাল করে সাজগোজও করত না সে। অত্যন্ত সাদামাটা শাড়ি পরে আসত, মুখে কোনও রূপটান মাখত না, আঁচল জড়িয়ে শরীরটাকে খুব ভাল করে মমির মতো ঢেকে রাখত। নজর থাকত সবসময়েই মাটির দিকে। সাহস করে দু-চারজন ফাজিল ছেলে তার সঙ্গে নানা ছুতোয় কথা বলার চেষ্টা করেছে, বকুল জবাব দেয়নি।

এই বকুলের সঙ্গে দীপনাথের সেবার লেগে গেল হঠাৎ। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে কোনও মেয়ের সঙ্গে প্লাস চিহ্ন দিয়ে কোনও ছেলের নাম লেখাটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সর্বত্রই হয়ে থাকে। বকুলের নামও বহুবার ব্ল্যাকবোর্ডে কেউ কোনও ছেলের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে লিখেছে। একদিন সংস্কৃত ক্লাসে প্রফেসর এসে দেখলেন গোটা গোটা অক্ষরে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা : বকুল, তোমাকে আমি ভালবাসি—দীপনাথ চট্টোপাধ্যায়। লেখাটা ডাস্টার দিয়ে মুছবার আগে রসিক অধ্যাপক একটা ছোট রসিকতা করেছিলেন। লেখাটার জন্য বকুল হয়তো কিছু মনে করত না, কিন্তু রসিকতাটার জন্যই বোধ হয় হঠাৎ ফুঁসে উঠেছিল মনে মনে।

পরদিন ঘটনাটা আর-একটু গড়ায়। বকুল দীপনাথের লেখা একটা কুৎসিত প্রেমপত্র পায়। সেই চিঠিতে আদিরসের ছড়াছড়ি। বকুল এমনিতেও বোধ হয় কিছু প্রেমপত্র পেত। সেগুলোকে পাত্তা দিত না। এই চিঠিটাকে একটু বেশি পাত্তা দিল।

সেদিন সোজা প্রিন্সিপালের ঘরে গিয়ে চিঠিটা তাঁর হাতে দিয়ে ভীষণভাবে কেঁদে ফেলল বকুল, দেখুন স্যার, কীসব লিখেছে।

প্রিন্সিপ্যাল অপ্রস্তুতের একশেষ। চিঠিটায় চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখলেন। তারপর ডেকে পাঠালেন দীপনাথকে।

ইউনিয়নের পান্ডা হিসেবে দীপনাথকে ভাল করেই চিনতেন তিনি এবং অপছন্দও করতেন।

দীপনাথ এলে জিজ্ঞেস করলেন, এই চিঠি তোমার লেখা?

দীপনাথ চিঠিটা পড়ল। তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল পলকে। এ চিঠি সে লেখেনি। তার রুচিবোধ কখনও অত নীচে নামতে পারে না। তবু হাতের লেখাটা তার চেনা-চেনা ঠেকেছিল বলে চিঠিটা পকেটে রেখে সে অকপটে বলল, না। কিন্তু কে লিখেছে তা খুঁজে বের করতে পারব।

বলে সে বকুলের দিকে ইঙ্গিত করে প্রিন্সিপ্যালকে বলল, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, এই মহিলার প্রতি আমার কোনও দুর্বলতা নেই।

এই কথাটা দীপনাথ তেমন কিছু ভেবে বলেনি, শুধু আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া। প্রকৃতপক্ষেও বকুলের প্রতি তার কোনও দুর্বলতা তো ছিলও না। মেয়েটিকে সে আর পাঁচজনের মতোই সুন্দরী বলে লক্ষ করেছিল মাত্র। তার বেশি কিছু নয়।

কিন্তু শান্ত, শামুক স্বভাবের লাজুক ও অহংকারী বকুল কথাটার মধ্যে কেন সাংঘাতিক অপমান খুঁজে পেল সেই জানে। হঠাৎ সে দিশাহারার মতো দাঁড়িয়ে তা স্বরে বলল, মিথ্যে কথা। আপনি মিথ্যে কথা বলছেন।

দীপনাথ অবাক হয়ে বলল, কোনটা মিথ্যে কথা?

এ চিঠি আপনার লেখা। কাল ব্ল্যাকবোর্ডেও আপনি যা-তা লিখে রেখেছিলেন। আপনি অনেকদিন আমার পিছু নিয়েছেন। আপনি মিথ্যেবাদী, স্কাউন্ড্রেল :

বলতে বলতে রাগে বুদ্ধিবিভ্রমে, আক্রোশে বকুল হঠাৎ নিজের পায়ের চটি খুলে ছুড়ে মারল দীপনাথের দিকে।

দীপনাথের কপাল খারাপ। চটিটা এদিক-ওদিক না গিয়ে সোজা এসে লাগল তার কপালে।

প্রিন্সিপ্যালের চোখের সামনে এই ঘটনা।

দীপনাথ তেমন কিছু বলেনি। পকেট থেকে চিঠিটা বের করে প্রিন্সিপ্যালকে ফেবত দিয়ে বলেছিল, আমি এ কাজ করিনি। আপনি এনকোয়ারি করে দেখতে পারেন। যদি আমার কথা সত্যি হয় তবে এ মেয়েটির পানিশমেন্টের ব্যবস্থা করবেন কি? আমি বিচার চাই।

ব্যাপারটা নিয়ে সারা কলেজ এবং শহরেও বেশ একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। ফয়সালা হতেও অবশ্য দেরি হয়নি। চিঠির হাতের লেখা দীপনাথের ছিল না, সুব্রত নামে একটি মিটমিটে ডান ছেলে ওই কাজটি করে দীপনাথকে ফাসায়। ব্ল্যাকবোর্ডের লেখাটা কার তা অবশ্য ধরা পড়েনি।

প্রিন্সিপ্যাল একদিন ইউনিয়নের পা সমেত দীপনাঘকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে বললো, ব্যাপারটা মিটিয়ে নাও। আফটার অল একটা মেয়ের ভবিষ্যৎ বলে একটা কথা আছে। তাকে। তোমরা পাবলিকলি অপমান করলে তোমাদের পৌরুষ বলে কিছু থাকে না।

কিন্তু ইউনিয়নের নেতারা বলল, না জেনে যখন অন্যায় কাজ করেছে তখন পানিশমেন্টও তাকে নিতেই হবে। একজন নির্দোষ ছেলেকে আপনার সামনেই ও চটি ছুড়ে মেরেছে। এ কাজ কোনও ছেলে করলে তো আপনি ছেড়ে দিতেন না!

এই নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা, তর্কাতর্কি হল।

অবশেষে প্রিন্সিপ্যাল বললেন, বকুলের কী শাস্তি হবে তা লেট হারসেলফ ডিসাইড। মেয়েটির স্বভাব চমৎকার। আমার মনে হয় ওকে সেলফ-ইমপোজড পানিশমেন্ট নেওয়ার স্বাধীনতা তোমাদের দেওয়া উচিত।

এতে দীপনাথ ও তার বন্ধুরা আপত্তি করেনি।

বিকেলের দিকে জানা গেল বকুল নিজের শাস্তি নিজেই ঠিক করে নিয়েছে। সে ছ’মাস খালি পায়ে কলেজে আসবে।

এ পর্যন্ত ঘটনাটা ছিল অপমান, আক্রোশ, বিবাদে ভরা।

কিন্তু বকুল যখন পরদিন থেকে খালি পায়ে কলেজে আসতে লাগল তখন ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়াল ভারী করুণ।

বকুলের মাথা আরও হেঁট, চোখে-মুখে অহংকারের বদলে নিরুদ্ধ কান্না। মেয়েটাকে প্রায় ভিখিরি করে ছেড়ে দিয়েছিল দীপনাথ। আর তখনই তাকে গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেছিল।

কিন্তু মফস্‌সল শহরে তখনকার দিনে মেলামেশা বা ভাব করা অত সহজ ছিল না।

মাসখানেক বাদে ভরা বর্ষার একটি দিনে যখন কলেজে ভিড় খুব কম, তখন বারান্দায় হঠাৎ বকুলের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল দীপনাথের।

দীপনাথ বলল, বকুল, একটা কথা বলব? মাথা নত করে বকুল মৃদু স্বরে বলল, বলুন।

আমি ব্যাপারটা মনে রাখিনি। আপনি কাল থেকে আর খালি পায়ে কলেজে আসবেন না। তার দরকার নেই।

বকুল বিনীত এবং দৃঢ় স্বরে বলেছিল, আপনার কথায় তো হবে না।

কেন হবে না! ভিকটিম তো আমিই। আমিই সব অভিযোগ তুলে নিচ্ছি।

তা নিলেও হয় না। পানিশমেন্টটা তো আমি নিজেই নিয়েছি। ডিসিশনটা আমার। সেখানে অন্যের কথায় কিছু যায় আসে না।

দীপনাথ উদ্বেগের সঙ্গে বলল, খালি পায়ে হেঁটে অভ্যাস নেই, শেষে যদি পেরেক-টেরেক ফুটে ভাল-মন্দ কিছু হয় তো লোকে আমাকেই দায়ী করবে যে!

করবে না। এতে আপনার কোনও হাত ছিল না।

শান্ত স্বভাবের আড়ালে বকুলের যে একটি জেদি, একগুয়ে, নিজস্ব মন আছে তা হাড়ে হাড়ে টের পেল দীপনাথ। এও বুঝল, এ মেয়েটির সঙ্গে জমানো ততটা সহজ হবে না। বরফ এখনও গলেনি।

বরফ অবশ্য কোনওদিনই তেমন করে গলল না। তবে বকুলের সঙ্গে একটু মাখামাখি করার রাস্তা দীপনাথ অনেক চেষ্টায় করে নিয়েছিল। প্রায়ই দেখা হত তাদের। কথাবার্তা হত।

শেষ পর্যন্ত বুঝি দীপনাথেব ওপর একটু টান এসেছিল বকুলের। একদিন বলল, আপনি কি চাকরি-বাকরি করবেন না? বি-এ পাশ করে ভ্যাবাগঙ্গারামের মতো আড্ডা মেরে বেড়াচ্ছেন যে বড়!

চাকরি করলে কী হবে?

হবে একটা কিছু। আপনি একটা চাকরি জোগাড় করুন তো আগে।

মনে মনে তখন বকুলকে প্রশ্ন করেছিল দীপনাথ, আমাকে বিয়ে করবে বকুল?

মনে মনে বকুলের জবাব এল, হ্যাঁ।

পিসেমশাইয়ের এক চেনা লোকের সূত্র ধরে কৌটোর কারখানায় চাকরি পেয়ে গেল দীপনাথ। কলকাতায় চলে এল।

তারপর যা হয়। চাকরি বাঁচাতে আর কাজ শিখতে হিমশিম খেতে খেতে একদিন বকুল তার মন থেকে বেরিয়ে গেল। বকুলের কী হয়েছিল কে বলবে! সে দীপনাথকে কোনওদিন মনের কথা তেমন করে জানায়নি তো! তবে একজন মিলিটারি অফিসারকে বিয়ে করে সে ইউ পিবাসিনী হয় বলে খবর পেয়েছিল দীপনাথ। খুব একটা দুঃখ পায়নি তার জন্য।

এখন প্রীতমদের এই ঘরে অনেকখানি উজিয়ে দৃশ্যটা দেখে আবার বর্তমানে ফিরে আসে দীপনাথ। একটা বড় করে শ্বাস ছাড়ে।

প্রীতম বলে, তাহলে বকুল নয়।

দীপনাথ মৃদু ম্লান হেসে বলে, না, বকুল নয়।

তবে কে সেজদা?

কেউ নয়।

আজ নয়, তবে কোনওদিন ইচ্ছে হলে বোলো।

বলার কিছু নেই রে। আজ চলি।

বলে উঠল দীপনাথ।

আবার এসো। তুমি এলে ভাল লাগে।

আসব। তুই ভাল থাকিস।

আমি ভাল আছি। খুব ভাল আছি।

দীপনাথ চলে গেলে প্রীতম খানিকক্ষণ চোখ বুজে থাকে। সে কিছু ভোলে না, সে অনেক কিছু দেখতে পায়, অনেক বেশি অনুভব করে। বিড়বিড় করে সে বলল, তোমার কিছু হয়েছে সেজদা। তুমি ভাল নেই। তুমি কি এমন কারও প্রেমে পড়েছ যে তোমাকে ভালবাসে না?

 

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই স্কুলে যেতে শুরু করল লাবু। ফেব্রুয়ারিতে বিলু যোগ দিল চাকরিতে। আড়াইশো টাকা মাইনে আর খাওয়া-দাওয়া কবুল করে একজন বেবি সিটার রাখা হয়েছে লাবুর জন্য।

এইসব ঘটনাগুলো বাইরে থেকে দেখতে কিছুই নয়। কিন্তু প্রীতমকে এইসব ছোটখাটো পরিবর্তন বড় গভীরভাবে স্পর্শ করে। বিলু বাড়িতে না থাকলে তার কাছে ভীষণ একঘেয়ে আর ফাঁকা লাগে বাড়িটা। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। লাবু যতক্ষণ স্কুলে থাকে ততক্ষণ সে ভিতরেভিতরে অস্থির হয়ে থাকে। সবচেয়ে খারাপ লাগে বেবিসিটার মেয়েটিকে। বয়স বেশি নয়, লেখাপড়া জানে, চেহারারও খানিকটা চটক আছে। কিন্তু মেয়েটা খুব অবাক চোখে প্রীতমকে বারবার তাকিয়ে দেখে। কী দেখে মেয়েটি? প্রীতমের অস্বাভাবিক রোগা, শুকিয়ে যাওয়া হাত-পা? প্রীতমের নিরন্তর শুয়ে থাকা? ও কি ভাবে, এ লোকটা আর বেশিদিন বাঁচবে না?

যদি সবসময়ে একজন লোক প্রীতমকে লক্ষ করে তাহলে প্রীতম কীভাবে তার লড়াই করবে? বারবার যে সে আত্মসচেতন হয়ে ওঠে! চমকে যায় মাঝে মাঝে! অস্বস্তি বোধ করে।

সে একদিন বলেই ফেলল, বিলু, ওকে তাড়াও।

কাকে?

অচলাকে।

কেন? ও কী করেছে?

কিছু করেনি। কিন্তু বাইরের অচেনা একজন সবসময়ে ঘরে থাকলে আমার ভারী অস্বস্তি হয়।

ও মা! তাহলে লাবুকে দেখবে কে?

কেন, বিন্দু!

বিন্দুর যে ট্রেনিং নেই! অচলা ট্রেইনড নাস। ভাল বেবিসিটার। অরুণের চেনা বলে কম নিচ্ছে। নইলে ট্রেইনড বেবিসিটারের মাইনে কম করেও তিনশো।

প্রীতম জানে, বলে লাভ নেই। সে যত ঘ্যানঘ্যান করবে তত বিলু তাকে খুব ভদ্রভাবে বোঝাবে, রাজি করানোর চেষ্টা করবে। কিছুতেই তবু ছাড়বে না অচলাকে। বিলু ওইরকম। খুব ঠান্ডা আর কঠিন ওর প্রতিরোধ।

প্রীতম তাই হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু তবু তো তাকে বাঁচতেই হবে! সব বিরুদ্ধতার বিরুদ্ধেই তো তার লড়াই। তাই সে অচলার বিস্ময়কে সহ্য করার নতুন শিক্ষণ নিতে চেষ্টা করে।

শোনো অচলা।

বলুন।

পাখাটা একটু আস্তে করে খুলে দাও। গরম লাগছে।

দিচ্ছি।

তোমার বাড়িতে কে কে আছে?

স্বামী, একটা ছেলে।

তোমার ছেলেকে কে দেখাশোনা করে?

সে এখন বড় হয়েছে। দশে পড়ল। কাউকে দেখতে হয় না।

তোমার যে দশ বছরের ছেলে আছে তা তো মনে হয় না। কত বয়স তোমার?

কত আর হবে! আমার খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল।

স্বামী কী করে?

বিজনেস।

এবার একটু শীত-শীত করছে। পাখাটা আর-একটু কমিয়ে দাও বরং।

পাখা তো এক-এ আছে, আর তত কমবে না। তাহলে বন্ধ করে দিই?

দাও। এখন কি গরম পড়েছে?

তা একটু পড়েছে।

তাই বলল, আমারও আজকাল গরমই লাগে।

শীত তো চলে গেল।

বিন্দুকে একটু চা করতে বলবে?

বিন্দু বাড়ি নেই, এ বেলা ছুটি নিয়েছে।

ও। তাহলে থাক।

ও মা! থাকবে কেন? আমি করে দিচ্ছি।

এইভাবে লড়াইটা লড়তে থাকে প্রীতম। বেশ ভালই লড়ে। একদিন অচলার চোখ থেকে কৌতূহল খসে যায়। সে প্রীতমের দিকে আর আড়ে-আড়ে তাকায় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *