২০. আমিরুল মুমেনীনের মহল

আমিরুল মুমেনীনের মহল।

নিশীথ রাত্রি।

–কে?

–মশ্‌রুর, জাঁহাপনা।

–গোলামকে এনেছো?

–হাঁ, জাঁহাপনা।

–ওকে পৌঁছে দিয়ে, তুমি বাইরে যাও। ওর সঙ্গে আমার কিছু গোপনীয় কথা আছে।

–আস্‌সামায়ো তায়াতান।

(শৃঙ্খলাবদ্ধ তাতারীর প্রবেশ। সমস্ত শরীর কোড়াঘাতে জর্জর। দেহ প্রায় ত্বকহীন। কপালে, গণ্ডদেশে দগদগে ঘা) তাতারী, জানি, তুমি আমার কথার জবাব দেবে না। কিন্তু আজ খলিফারূপে আমি তোমাকে ডাকি নি।

তাতারী : [কণ্ঠে ঘড়ঘড় শব্দ। শ্বাস-কষ্ট।]

হারুন : আজ তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-রূপে তোমাকে এইখানে ডেকে এনেছি। তুমি দেখছো, বাইরের বাতাসের কত দাম। আমি তোমার সমস্ত মঙ্গলের জন্য প্রস্তুত। আমাকে ভুল বুঝো না।

তাতারী : (খলিফার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু চোখ স্ফীত। ফলে তাকানো কষ্টকর।]

হারুন : তুমি একটিবার হাসো। তাহলে তুমি যা চাও, তাই পাবে। আমার সুদক্ষ হেকিম রয়েছে, তারা শরীর সাত দিনে আবার পূর্বের মত চাঙ্গা করে তুলবে। তোমার একটা হাসি শুধু প্রয়োজন। জবাব দাও।

তাতারী : [নিরুত্তর]

হারুন : আবু নওয়াসের কাছে আমি অপদস্থ। তুমি নাকি আর কোনদিন হাসবেই না। কিন্তু কেন? কেন তুমি জীবনের পেয়ালা এমনভাবে পায়ে ঠেলে দিচ্ছ? তুমি নওজোয়ান। জীবনের সমস্ত সড়ক তোমার জন্য দু’পাশে ফল-ফুল। নিয়ে অপেক্ষা করছে। আর তুমি নিজের দুই চোখ যেন অন্ধ করে দিয়েছ। কানে আর শ্রুতিশক্তি রাখো নি। কেন? এই নিশীথ রাত্রি, কেউ শুনবে না। তুমি শুধু জবাব দাও, আমি পাক কোরান ছুঁয়ে কসম করছি—তোমার নালিশের ভিৎ আমি উপড়ে ফেলতে চেষ্টা পাব। তস্‌বী হাতে কবীর মত আমাকে ভণ্ড মনে করো না আমার কসমের দাম আছে।… তবুও তুমি নিরুত্তর! কি চাও তুমি? একটা গোলামের যা কাম্য, তার চেয়ে ঢের ঢের বেশী, অনেক কিছু তোমাকে দিয়েছিলুম, তুমি নিলে না। এত জুলুম সহ্য করছ, অথচ তোমার কথা যেখানে কাজে পরিণত হতে পারে সঙ্গে সঙ্গে… সেই সুযোগ তুমি নিচ্ছ না। আমি নিজে ভেবে পাই নে। তোমরা কি আর। কোন ধাতুতে গড়া? একটা জবাব দাও…[পায়চারী রত] একটা জবাব… একটা হাসি… আচ্ছা, হাসি জাহান্নামে যাক, একটা জবাব দাও। আমি তোমার সব অপরাধ মাফ করে দেব। যা চাও তাই পাবে। সময় দিলুম … বুঝেছি, তুমি … নির্বাক থাকবে, হাসবে না … বেশ। যাও। তোমাকে তিন দিনের মেয়াদ দিলুম। শুধু একটি হাসি হেসে তুমি জীবনের সবকিছু অধিকার ফিরে পেতে পারো। নচেৎ আরো শাস্তি–হ্যাঁ, শাস্তি–যা কোনদিন তুমি কল্পনাও করো নি। তোমাকে ভেবে দেখার সময় দিলুম।…

(হাততালি প্রদান) মশ্‌রুর—

মশ্‌রুর : জাঁহাপনা!

হারুন : মশ্‌রুর, গোলামকে নিয়ে যাও।

মশ্‌রুর : আস্‌সামায়ো তায়াতান।

হারুন : মশ্‌রুর,–না থাক, আর একদিন বলব।

[সকলের প্রস্থান]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *