বেগম জুবায়দা দাঁড়িয়েছিলেন, যেখান থেকে একদিন তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল মেহেরজান। বাগানে তেমনই অন্ধকার। সাদা পাথরের রাস্তা হয়ত কিছুটা আভাস দিয়ে যায়। হয়ত মেহেরজান এই পথেই আবার ফিরে আসবে। মালে-গনীমতের মধ্যে এমন উপহার পাওয়া যায়? কথাটা একবার বেগমের মনে জাগল। তিনি পায়চারী করতে লাগলেন।
কালো বোরখা পরিহিতা এক নারী হঠাৎ পেছন থেকে তাকে ডাক দিলে ফিসফিস কণ্ঠে :
–বেগম সাহেবা।
–কে তুতী?
–জী, বেগম সাহেবা।
তুতী মহলের ক্রীতদাসী। বোরখা খুলে ফেলেছে সে ততক্ষণে।
–কোন খবর পেলি?
–না, বেগম সাহেবা। এই বিরাট মহল। যেখানে শত শত গোলাম আর বান্দী, সেখানে খবর পাওয়া মুশকিল।
–আমি ত আর কিছু চাই নে। কেমন আছে, এইটুকু খবর পেলেই খুশি।
–বেগম সাহেবা, আপনি ওকে বড় ভালবাসতেন।
–তা ত বাসতাম। পরের দুঃখ মুছে নিতে পারলে রুহে আত্মায় কত যে শান্তি, তা যদি মানুষ জান্ত।
–বেগম সাহেবা, আপনি ফেরেশতা। বেহেশতের হুর দুনিয়ায় এসেছেন।
–যা, কি-যে সব বলি। পানির জন্য মানুষের কত কষ্ট। আমি একটা নহর কাটাব ঠিক করেছি।
–বেগম সাহেবা, সবাই আল্লার কাছে হাত তুলে আপনার জন্যে দোয়া মাঙবে।
–তুই মেহেরজানের খবর আন্তে পারলি না।
–বেগম সাহেবা, এই মহলের ব্যাপার ত আপনি জানেন। এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সকলে যে-যার স্বার্থ নিয়ে আছে। মেহেরজান… এখানে না-ও থাকতে পারে।
–হুঁ। তুই যা। খবরদার, এ-খবর কেউ না জানে।
–খোদার কসম, বেগম সাহেবা। আপনি মায়ের সমান। আমার কাছ থেকে কোন খবর আল্পর ফেরেশতা পর্যন্ত বের করতে পারবে না।
তুতী চলে গেল।
বেগম সাহেবা দাঁড়িয়ে রইলেন খাম্বার মতই অনড়। উত্তর্ণ। বাতাসের ঈষৎ শব্দ তাঁকে উচ্চকিত করে তোলে।
তীক্ষ্ণ-বুদ্ধি মেহেরজান। তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবেনা। তার একমাত্র দুশমন দুরন্ত যৌবন। সেই যা ভয়। নচেৎ এমন নিভাঁজ অন্ধকারেই ত সে ফিরে আসবে।
বেগম জুবায়দা বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলেন।