সাহিত্য ও বিজ্ঞান
আমরা এখন সেই যুগে উপস্থিত হয়েছি যখন আরবী ভাষা কেবল দর্শন, ইতিহাস, নীতিশাস্ত্র ও সাহিত্যে নয়–চিকিৎসা, গৃহ-বিজ্ঞান, আলকিমিয়া (রসায়ন শাস্ত্রের আরম্ভ ও অগ্রগামী), ভূগোল ও গণিত প্রভৃতি বিজ্ঞান বিষয়েও নতুন মৌলিক গ্রন্থ লেখার উপযুক্ত বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরজমার যুগ ৭৫০ হতে ৮৫০ পর্যন্ত মোটামুটি একশ’ বছর চলে। এরপর নবম শতাব্দীর শেষার্ধে এই নয়া জামানার পত্তন হয়। এ যুগে অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন একদল মনস্বীর আবির্ভাব হয়। আজকের পাশ্চাত্যের জনসাধারণ তাদের খবর কমই রাখে। কিন্তু সাহিত্য ও বিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বাৰেষীরা তাদের অনেককেই জানে এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আমাদের পরিচিত সভ্যতা ইসলামের যে সন্তানদের অজস্র অবদানে সমৃদ্ধ, আমরা তাদের মাত্র কয়েকজনের কথা এখানে উল্লেখ করতে পারব।
এই সময়ের মধ্যে আরবরা পারস্য ও গ্রীসের প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানকে কেবল যে আত্মস্থ করে এমন নয়, সে নবলব্ধ জ্ঞানকে তারা নিজ প্রয়োজন ও চিন্তাধারা মোতাবেক খাপ খাইয়ে নেয়। তাদের তরজমা কয়েক শতাব্দী যাবত আরব মনের পরশ পেয়ে স্বভাবতঃই আংশিক রূপায়িত হয় এবং আরবরা সেই জ্ঞান রূপান্তরিত অবস্থায় বহু নতুন অবদানসহ সিরিয়া, স্পেন ও সিসিলী মারফত ইউরোপে পৌঁছিয়ে দেয়। জ্ঞানের যে সব সূত্র মধ্যযুগীয় ইউরোপের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারই মারফত তার ভিত্তি স্থাপিত হয়। সংস্কৃতির ইতিহাসে এই পৌঁছিয়ে দেওয়ার কাজ সৃষ্টি-কাজের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ যদি আরাস্তু, গ্যালেন ও টলেমীর গবেষণা হারিয়ে যেত, তবে জগত এত দরিদ্র হয়ে পড়ত যেন ওসব গবেষণা আদৌ কখনো হয় নাই। তরজমার কাজ আর মৌলিক কাজের সীমারেখা সবসময় স্পষ্ট করে আঁকা সম্ভব নয়। অনুবাদকদের অনেকেই মৌলিক দানও করে থাকেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি আরবদের অনুরাগ মহানবীর একটি বাণীতে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন : ‘বিজ্ঞানের দুই শাখা–ধর্মশাস্ত্র ও চিকিৎসাশাস্ত্র।’ চিকিৎসক একই সময়ে দার্শনিক ও জ্ঞানবীর ছিলেন। এই সময় আরবরা ঔষধের আরোগ্য বিষয়ক গবেষণায় অদ্ভুত সাফল্য লাভ করে। তারাই সর্বপ্রথম ঔষধ বিক্রেতার দোকান স্থাপন করে; তারাই সকলের আগে ঔষধ সংমিশ্রণের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম ফার্মাকোপিয়ার স্রষ্টা তারাই। খলীফা আল-মামুনের আমলেই আমরা দেখতে পাই যে, ফার্মেসী ওয়ালাদের (ঔষধ মিশ্রণকারীদের) একটা পরীক্ষা পাশ করতে হত। ঔষধ বিক্রেতাদের মত চিকিৎসকগণকেও একটা পরীক্ষা দিতে হত। একটা অনাচারের ব্যাপার ধরা পড়ায় খলীফা ৯৩১ সালে একজন সুবিখ্যাত চিকিৎসককে হুকুম দেন যে, উক্ত চিকিৎসক বাকী সমস্ত চিকিৎসককে পরীক্ষা করবেন এবং কেবল উপযুক্ত ব্যক্তিদেরই সনদ দিবেন। বাগদাদে ৮৬০ জনের উপর চিকিৎসক এ পরীক্ষায় পাশ করে। রাজধানী হাতুড়ে ডাক্তারদের হাত হতে বেঁচে যায়। জনৈক উজীর এক রকম পল্লীস্বাস্থ্য সেবা-সংঘের পত্তন করেন। তিনি একদল চিকিৎসককে আদেশ দেন যে, তারা ঔষধ-পত্রসহ গ্রাম হতে গ্রামান্তরে গিয়ে বিমারীদের আরোগ্যের ব্যবস্থা করবে। অন্য চিকিৎসকেরা রোজ জেলখানা পরিদর্শন করত। এসব ব্যবস্থা হতে দেখা যায় যে, জনসাধারণের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হত। তৎকালীন জগতে এমন ব্যবস্থা আর কোথাও ছিল না। নবম শতাব্দীর প্রারম্ভে হারুনর-রশিদ পারস্যের আদর্শে মুসলিম জগতের প্রথম হাসপাতাল স্থাপন করেন। এরপর কিছুকালের মধ্যেই মুসলিম জাহানের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি হাসপাতাল গড়ে ওঠে। কায়রো তার প্রথম হাসপাতাল স্থাপন করে ৮৭২ সালে। পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ হাসপাতালটি টিকে ছিল। একাদশ শতাব্দীতে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসালয় দেখা দেয়। মুসলিম হাসপাতালে নারীদের জন্য আলাদা বিভাগ ও ডিস্পেনসারী থাকত। কোন কোন হাসপাতালে থাকত–ডাক্তারী বইয়ের লাইব্রেরী এবং চিকিৎসা শিক্ষাদানের সুযোগ।
মনস্বী অনুবাদকদের যুগের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে সব চিকিৎসাবিদ গ্রন্থকারের আবির্ভাব হয়, তাঁরা জাতিতে ছিলেন পারসিক, ভাষায় ছিলেন আরব। এঁদের মধ্যে আবু আলী ইবনে-সীনা (সংক্ষেপে ইবনে সিনা) এবং আল রাজীর চিত্র প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল-অব মেডিসিন-এর বিরাট সভাগৃহ অলঙ্কৃত করছে।
আল-রাজী (৮৬৫-৯২৫) কেবল মুসলিম জগতের মধ্যে নয়, সমস্ত মধ্যযুগের মধ্যে তীক্ষ্ণতম মৌলিক চিন্তাবিদ ও শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসাবিদদের অন্যতম ছিলেন। তিনি বাগদাদের বিশাল হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ছিলেন। কথিত আছে, এই হাসপাতালের জন্য স্থাননির্বাচনকালে তিনি বিভিন্নস্থানে গোশতের টুকরা টানিয়ে রাখেন; যে স্থানের টুকরায় পচন ক্রিয়া সবচেয়ে কম দেখা যায়, সেই স্থানকে তিনি হাসপাতালের জন্য নির্বাচন করেন। সার্জারীতে তাকেই সিটনের আবিষ্কর্তা বলে মনে করা হয়। তার লিখিত আলকিমিয়া সংক্রান্ত বইয়ের মধ্যে গোপনতত্ত্ব’ নামক বইটি বহুজন দ্বারা সম্পাদিত হওয়ার পর দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ক্রেমোনার অধিবাসী বিখ্যাত অনুবাদক জিরার্ড কর্তৃক ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এই-ই ছিল রসায়ন জ্ঞানের প্রধান আকর। রোজার বেকন একে ‘ডি. পিরিটিবাস-এট-করপোরিবাস’ নামে তার বইয়ে উদ্ধৃত করেন। আল-রাজীর এক-বিষয়ক বইয়ের মধ্যে বসন্ত ও হাম সম্পর্কিত বইটি সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত এবং উক্ত বিষয়ে এ-ই সর্বপ্রথম বই। নিতান্ত সঙ্গতভাবেই এ বইটিকে আরবী চিকিৎসা সাহিত্যের অন্যতম অলঙ্কার মনে করা হয়। তবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ছিল ‘আল-হাভী। এ একটি ব্যাপক আলোচনার বই। আনজুর প্রথম চার্লসের পৃষ্ঠপোষকতায় এ-গ্রন্থ ১২৭৯ সালে সিসিলীর ইহূদী চিকিৎসক ফারাজ-বেন-সলিম কর্তৃক সর্বপ্রথম ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। ১৪৮৬ সাল হতে পরবর্তীকালের মধ্যে ‘কনটিনেনস’ নামে এই বইয়ের বহু সংস্কারণ হয়; এর পঞ্চম সংস্কারণ ১৫৪২ সালে ভেনিসে প্রকাশিত হয়। নামেই বোঝা যায়, লেখক এ বইটিকে চিকিৎসা-জ্ঞানের বিশ্বকোষ করতে চেয়ে ছিলেন। ঐ সময় গ্রীক, পারসিক ও হিন্দু চিকিৎসা-বিজ্ঞান সম্বন্ধে আরবরা যা কিছু জানত, আল রাজী এ গ্রন্থে তার সংক্ষিপ্ত সার দেওয়ার পর তার সঙ্গে নিজ মৌলিক গবেষণার ফল যোগ করেছেন। যে যুগে পুস্তক-মুদ্রণ তার শৈশব অতিক্রম করে নাই, সেই যুগে আল-রাজীর এসব বই মুদ্রিত হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত ল্যাটিন-পাশ্চাত্যের মনের উপর বিস্ময়কর প্রভাব বিস্তার করে। আরব চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে আল-রাজীর পরই ইবনে সীনার নাম ভুবন বিখ্যাত। তার বিশ্বকোষ-সম গ্রন্থ ‘ক্যানন’ নামে অনূদিত হয়ে সে যুগের চিকিৎসা শাস্ত্রের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে এবং ইউরোপের বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে পাঠ্যবই হিসাবে নির্বাচিত হয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ত্রিশ বছরের মধ্যে ল্যাটিনে এর পনেরটি এবং হিব্রতে একটি সংকরণ হয়। কিছুকাল আগে ইংরেজিতে এর আংশিক অনুবাদ হয়। এ গ্রন্থের মেটেরিয়া-মেডিকো বিভাগে ৭৬০টি ঔষধের গুণ বিচার করা হয়। দ্বাদশ হতে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাশ্চাত্য জগতের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই গ্রন্থ প্রধান পথপ্রদর্শক হিসাবে ব্যবহূত হয়েছে। মুসলিম-প্রাচ্যে এখনো মাঝে মাঝে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। ডাক্তার উইলিয়াম ওসলার-এর ভাষায় : এ গ্রন্থটি অন্য যে কোন গ্রন্থের চেয়ে দীর্ঘতর কাল পর্যন্ত মেডিক্যাল বাইবেল হিসাবে টিকে ছিল।
দর্শন-শাস্ত্রের ক্ষেত্রে আরবদের প্রধান অবদান এই যে, তারা গ্রীক চিন্তার সঙ্গে ইসলামী ভাবধারার সামঞ্জস্য বিধান করে। এ বিষয়টি নিতান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আরবদের বিবেচনায় মানুষের চিন্তা-শক্তির বলে যতখানি সভব, বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ নির্ণয়ের সেই পরিমাণ জ্ঞানই হচ্ছে দর্শন শারে দান। এ মতবাদ আসলে গ্রীক মতবাদের মূলকথা। আরবদের এ মতবাদ বিজিত, জাতিদের চিন্তাধারা এবং অন্যান্য প্রাচ্য চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেই পরিবর্তিত অবস্থায় আরবরা একে ইসলামের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান ও আরবী ভাষায় প্রকাশের ব্যবস্থা করে। গ্রীক-বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আরবরা বিশ্বাস করত যে, আরাস্তু তাঁর গ্রন্থাবলীতে যাবতীয় দার্শনিক তত্ত্বকে সূত্ররূপে বিধিবদ্ধ করেছেন। আর গ্যালেন তার গ্রন্থাবলীতে যাবতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত সার দিয়েছেন। অবশ্য সে যুগে গ্রীক-দর্শন ও গ্রীক চিকিৎসা-বিজ্ঞানই প্রতীচ্যের একমাত্র সম্বল ছিল। মুসলমান হিসেবে আরবরা বিশ্বাস করত যে, কোরআন ও ইসলামী ধর্মশাস্ত্রে যাবতীয় ধর্মীয় আইন ও অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত সার আছে। সুরাং, তাদের মৌলিক অবদান এক দিকে দর্শন ও ধর্মশাত্রের, অন্য দিকে দর্শন ও চিকিৎসাশাস্ত্রের মধ্যম সীমান্ত ভূমিতে আবদ্ধ ছিল। একেশ্বরবাদ ছিল প্রাচীন সেমিটিক জগতের মহত্তম অবদান; আর গ্রীক দর্শন ছিল। প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় জগতের মহত্তম অবদান। মধ্যযুগীয় ইসলাম এই একেশ্বরবাদিতা ও গ্রীক-দর্শনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান দ্বারা অবিনশ্বর কীর্তি অর্জন করে। এইরূপে ইসলাম ইউরোপকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীর জয়যাত্রার পথে নিয়ে আসে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় জগতে–বিশেষ করে মুসলিম জাহানে–জ্ঞান বিভিন্ন বিভাগে এখনকার চেয়ে অনেক কম বিভক্ত ছিল দার্শনিকরা গণিত ও সঙ্গীতবিদ হতে পারতেন; আবার জ্যোতির্বিদরা কবি হতে পারতেন। আধুনিক পাশ্চাত্য পাঠক ইসলামের শ্রেষ্ঠতম জ্যোতির্বিদদের মধ্যে প্রথিতযশা ওমর খইয়ামকে দেখে বিস্ময় বোধ করবেন; কারণ সুবিখ্যাত রুবাইয়াত’ তারই অমর লেখনীর অবদান। তিনি সত্যিকার ফারসী কবি ও স্বাধীন-চিন্তাবিদ ছিলেন; আবার সেই সঙ্গে তিনি প্রথম শ্রেণীর গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন। আল-কিন্দীও এই শ্রেণীর পণ্ডিত ছিলেন। দার্শনিক হিসেবে তিনি নিও-প্ল্যাটোনিকদের মত আফলাতুন ও আরাস্তুর মতবাদকে একীভূত করতে চেষ্টা করেন এবং লিও পিথাগোরীয়ান গণিতকে সমস্ত বিজ্ঞানের ভিত্তি বলে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তিনি দার্শনিক ছাড়া আরো কিছু ছিলেন। তিনি জ্যোতিষী, কিমিয়াবিদ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং সঙ্গীত-বিদ্যাবিদ ছিলেন। তিনি ২৬৫ খানা বই লেখেন বলে কথিত; কিন্তু দুঃখের বিষয় এর বেশীর ভাগই হারিয়ে গেছে। চক্ষু সংক্রান্ত আলোক-বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় তার প্রধান বইখানি ইউক্লিডের অপটিকস-এর উপর ভিত্তি করে লিখতে হয়। এ পুস্তক প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় জগতে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয় এবং রোজার বেকনকে প্রভাবিত করে। তাঁর সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ হতে প্রতীয়মান হয় যে, ছন্দ ও তালযুক্ত সঙ্গীত খৃস্টান ইউরোপে প্রবর্তিত হওয়ার বহু শতাব্দী আগে মুসলিম জগতে প্রচলিত ছিল।
পাক-ভারতীয় গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত’ ৭৭১ সালে বাগদাদে নীত এবং এরই প্রভাবে মুসলিম জগতে জ্যোতিষ-শাত্রের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন শুরু হয়। নবম শতাব্দীর প্রথমভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম পারস্যে মোটামুটি নির্ভুল যন্ত্রের সাহায্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ শুরু হয় এবং সে শতাব্দীর মধ্যভাগের আগেই খলীফা আল-মামুন বাগদাদের ভিতরে ও দামেকের বাইরে মান-মন্দির নির্মান করেন। সে যুগের উপকরণ ছিল উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্র ( কোয়াডরেন্ট ও এস্ট্রোলেব) সূর্য ঘড়ি (ডায়াল) ও গোলক (গ্লোব)। এই খলীফার জ্যোতির্বিদারা একটা নিতান্ত সূক্ষ্ম হিসাবের কাজ করেন : অর্থাৎ পার্থিব ডিগ্রীর দৈর্ঘ্য পরিমাপ। এর উদ্দেশ্য ছিল, পৃথিবীকে গোলাকার ধরে নিয়ে তার আয়তন নির্ণয় করা। ইউফ্রেতীসের উত্তরখ সমতল ভূমি ও পামীরার নিকট এই জরিপ কাজ সমাধা করা হয় এবং এ জরিপের ফলে মধ্যরেখার মেরিডিয়ামের) এক ডিগ্রীর দৈর্ঘ্য পাওয়া যায় ৫৬জত(২,৩) আরবী মাইল। আশ্চর্য রকম সূক্ষ্ম হিসাব; কারণ ওখানকার ডিগ্রীর যা প্রকৃত দৈর্ঘ্য, এ হিসাবে তার চেয়ে মাত্র ২৮৭৭ ফুট বেশী দেখান হয়।
যে সব জ্যোতির্বিদ এ কাজে সম্ভবতঃ শরীক হন, তাদের মধ্যে ছিলেন আল-খাওয়ারিজমী। ইনি ইসলামের শ্রেষ্ঠতম বৈজ্ঞানিকদের অন্যতম এবং মধ্যযুগীয় সমস্ত লেখকের চেয়ে ইনি গণিত-বিষয়ক চিন্তাকে অধিকতর প্রভাবিত করেন। তিনি সবচেয়ে আগে গ্রহ-বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় নির্ঘন্ট সংকলন করেন, সবচেয়ে আগে অঙ্ক ও এলজেবরা সম্বন্ধে বই লেখেন। তার লিখিত এলজেবরা ল্যাটিনে অনূদিত হয় ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত গণিত সম্বন্ধীয় প্রধান বই হিসেবে পাঠ্য থাকে এবং ইউরোপে এইরূপে এলজেবরা বিজ্ঞানের প্রবর্তন হয়। তারই গ্রন্থাবলী মারফত পাশ্চাত্যে আরবী সংখ্যাতত্ত্ব প্রবেশ লাভ করে এবং তাঁর নাম অনুসারে সে সংখ্যাতত্ত্বের নাম হয়, এলগোরিজম’। এই সময় শূন্য বা সাইফারও আরবী সিফার’ প্রবর্তিত হয়।
মেটিরিয়ামেডিকা, গ্রহ-বিজ্ঞান এবং গণিতের পরই আরবদের শ্রেষ্ঠ দান রসায়ন-শাস্ত্রে। রসায়ন এবং অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়নে তারা বাস্তব পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান শুরু করেন। গ্রীকদের অস্পষ্ট আন্দাজের চেয়ে এ নিঃসন্দেহ রকমে উন্নতর পদ্ধতি ছিল। প্রকৃতির তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহে অসাধারণ ধৈর্য থাকা সত্ত্বেও আরবরা সহজে কোন উপযুক্ত হাইপথিসিস বা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারত না। তাদের চরম দুর্বলতা দেখা দিত, কোন পদ্ধতির চরম বিশ্লেষণের বেলায়।
‘আল কিমিয়াকে’ আমরা আরবী শব্দ বলে জানি। আসলে শব্দটি ছিল অতি প্রাচীন যুগের একটি মিসরীয় শব্দ; মানে ছিল কালো। গ্রীক ভাষার ভিতর দিয়ে শব্দটি আরবীতে আসে। আরবীয় আল-কিমিয়ার জনক ছিলেন জাবের-ইবনে হাইয়ান। ৭৭৬ সালের কাছাকাছি কুফায় তার আবির্ভাব হয়। তাঁর মিসরীয় ও গ্রীক পূর্ববর্তীদের মত তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, কোন রহস্যপূর্ণ দ্রব্যের সাহায্যে টিন, সীসা, লোহা ও তামা প্রভৃতি মৌলিক ধাতুকে সোনা বা রূপায় রূপান্তরিত করে চলে এবং এই অনুসন্ধানে তিনি ব্যাপৃত হন। পরীক্ষামূলকভাবে বিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্ব তিনি সে আমলে সমস্ত কিমিয়াবিদদের চেয়ে অধিতর স্পষ্টরূপে উপলব্ধি করেন এবং রসায়নশাস্ত্রের উন্নতি বিধানে তার তত্ত্বগত ও কার্যগত অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পাশ্চাত্য জগতে একটা বিশ্বাস চলে আসছে যে, তিনি কয়েকটি রাসায়নিক কমপাউন্ড আবিষ্কার করেন; কিন্তু যে বাইশটি আরবী বইয়ে লেখক হিসেবে তার নাম আছে, তার কোনটিতে এ আবিষ্কারের উল্লেখ নাই। একথা সত্য যে, আরবী ও ল্যাটিনে যে একশ বই তার নামে চলে, তার বেশীর ভাগই মেকি। তথাপি তার নামে চলিত বইগুলি চতুর্দশ শতাব্দীর পর এশিয়া ও ইউরোপ উভয় মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাসায়নিক আলোচনা পুস্তক ছিল। তার কয়েকটি অবদান সম্বন্ধে আমরা নিঃসন্দেহ। তিনি বিজ্ঞানসম্মত ভাষায় রসায়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া–ভস্মীকরণ (ক্যালসিনেশন) এবং উপাদান বিশ্লেষণ (রিডাকশন) বর্ণনা করেন। বাষ্পীভূতকরণ (ইভাপোরেশন), ঊর্ধ্বপাতন (সাবলিমেশান), দ্রবীভূতকরণ (মেলটিং) এবং জমাটভুক্তকরণ (ক্রিস্টালিজেশন) প্রক্রিয়ার তিনি উৎকর্ষ সাধন করেন। তিনি কাঁচা সালফিউরিক ও নাইট্রিক এসিড তৈরী করে তা মিশিয়ে একোয়া রিজীয়া (পানির রাজা) উৎপাদন করতে জানতেন এবং সে একোয়া রিজীয়ায় সোনা ও রূপা গলান যেত। এই যে দাবী, এর কোন প্রমাণ নাই। ধাতুর উপাদান সম্বন্ধে আরাস্তুর মতবাদকে তিনি সংশোধন করেন এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে আধুনিক রসায়নের আরম্ভের আগ পর্যন্ত সামান্য পরিবর্তনসহ তার সেই মতবাদ প্রচলিত থাকে।
হজ অনুষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা, মক্কার দিক করে মসজিদ তৈরীর নিয়ম এবং নামাজের সময় কাবার দিকে সিজদাকরণ–এইসব কারণ মুসলমানকে ভূগোল অধ্যয়নে উৎসাহিত করে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা নির্ণয়ের জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রের দরকার ছিল। জ্যোতিষও তার বৈজ্ঞানিক-প্রভাব বিস্তার করে। সপ্তম এবং নবম শতাব্দীর মধ্যে মুসলিম সওদাগরেরা পূর্ব দিকে জল-স্থল উভয় পথে চীনে পৌঁছে; দক্ষিণ জাঞ্জিবার দ্বীপ ও আফ্রিকার দূরতম উপকূলে গিয়ে হাজির হয় এবং উত্তরে রাশিয়ায় গিয়ে প্রবেশ করে। পশ্চিম দিকে তাদের অগ্রগতি রুদ্ধ হয় অন্ধকার সমুদ্রে (আটলান্টিকের) অনন্ত বারিরাশি দ্বারা। প্রত্যাগত সওদাগরদের মুখের কাহিনী জনগণের মনে দূরদূরান্তের দেশ ও জাতি সম্বন্ধে কৌতূহলের উদ্রেক করত। টলেমীর ভূগোল সোজাসুজি কিংবা সিরীয় ভাষা মারফত আরবীতে কয়েকবার অনূদিত হয় এবং এর সাহায্যে বিখ্যাত খাওয়ারিজমী অন্যান্য ৬৯ জন পণ্ডিতসহ পৃথিবীর একটি রূপ-কল্প মূর্তি মানচিত্র তৈরী করেন। এই-ই ছিল মুসলিম জগত ও পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানচিত্র। আরব ভৌগোলিকেরা পাক-ভারত হতে একটা ধারণা পেয়েছিল যে, পৃথিবীর একটা কেন্দ্রস্থল আছে। তারা এর নাম দিয়েছিল আরিন। এ ছিল টলেমীর ভূগোলে উল্লেখিত একটি পাক-ভারতীয় শহরের নামের অপভ্রংশ। এ শহরে একটি মান-মন্দির ছিল এবং এই শহরের দ্রাঘিমা রেখার উপর নাকি স্থাপিত ছিল পৃথিবীর চূড়া। টলেমীর মত মুসলিম ভৌগোলিকেরা সাধারণতঃ প্রধান প্রাইম মেরিডীয়ান হতে দ্রাঘিমার মাপ-জোক করতেন। এখন যাকে ক্যানারী দ্বীপমালা বলে, এ মেরিডীয়ান তারই উপর দিয়ে গেছে।
দর্শন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে যেমন গ্রীক প্রভাব সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ছিল, ইতিহাস এবং সাহিত্য রচনাতে তেমনি পারসিক প্রভাব সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ছিল। কিন্তু বিষয়ের উপস্থাপনে চিরাচরিত ইসলামী প্রথাই চলতে থাকে। প্রত্যেক ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী বা সমসাময়িকদের কথায় বর্ণিত হয় এবং একের পর এক অনেকজন বর্ণনাকারীর মারফত শেষ বর্ণনাকারী গ্রন্থকারের নিকট পৌঁছে। এই পদ্ধতি অনুকরণ করায় ঘটনার সঠিকতা বৃদ্ধি পায়; আর এতে তারিখ ও একদম মাসের দিন পর্যন্ত দেওয়ার তাগিদ থাকে। কিন্তু বর্ণনাকারীরা অখণ্ড শৃঙ্খলে বর্ণনা করেছে কিনা এবং তারা বিশ্বাসযোগ্য ছিল কিনা, ঘটনার সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য এর উপর যতখানি নির্ভর করা হত, আসল ঘটনার সূক্ষ্ম বিচারমূলক পরীক্ষার উপর ততখানি নির্ভর করা হত না। ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধি অনুসারে বর্ণনাকারী নির্বাচন এবং তথ্যাবলী সাজানো ছাড়া ইতিহাসবেত্তা বিশ্লেষণ, সমালোচনা, তুলনা বা অনুমানশক্তির প্রয়োেগ কমই করতেন।
আরব ঐতিহাসিকেরা সে যুগের ঘটনাবলী সম্বন্ধে যথেষ্ট বিস্তৃতভাবে লিখলেও তাদের নিজস্ব প্রকৃতিসঙ্গত ঐতিহাসিক সাধনার ফল হচ্ছে, হাদীস বা ধর্মীয় ঐতিহ্য-বিজ্ঞান। হযরত মুহম্মদের (সঃ) পর প্রথম আড়াই শতাব্দীর মধ্যে তাঁর কথা ও কাজের দলীল বহু পরিমাণে বেড়ে যায়। ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন সমস্যার উদ্ভব হলেই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলি মহানবীর কোন কথা বা রায় উদ্ধৃত করে নিজ নিজ মত সমর্থন করত, তা মহানবীর উদ্ধৃত কথা বা রায় সঠিকই হোক আর কৃত্রিমই হোক।
প্রত্যেক পূর্ণ হাদীস দুই অংশে বিভক্ত ও বর্ণনা-পরম্পরা ও মূল বিষয়। মূল বিষয় বর্ণনানুক্রমের পরে আসে এবং সোজাসুজি বলা হয়? ক’ আমার কাছে বর্ণনা করল যে খ’ তার কাছে বর্ণনা করেছে; খ বলেছে গ এর উপর নির্ভর করে, আর গ বলেছে ঘ-এর উপর নির্ভর করে এবং ঘ বলেছে….।’ এই একই আর্যা ফরমূলা সরকারী ইতিহাস ও জ্ঞান-সাহিত্যে (উইজডম লিটারেচার) প্রযুক্ত হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সমালোচনা ছিল বাইরের জিনিস। কারণ, তা সীমাবদ্ধ ছিল বর্ণনাকারীদের সততা বিচারেযাতে একটা সম্পূর্ণ বর্ণনানুক্রম স্বয়ং মহানবী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছতে পারে।
রোমকদের পর মধ্যযুগীয় জাতিসমূহের মধ্যে একমাত্র আরবরাই আইন বিজ্ঞান অনুশীলন করে একটা স্বতন্ত্র বিধানের বিকাশ সাধন করে। এর আসল ভিত্তি ছিল কোরআন ও হাদীস; তবে এর উপর গ্রীকো-রোমাক আইনের প্রভাব বিস্তৃত হয়। ইসলামের শায়ী আইন মারফত কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর আদেশাবলী পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জ্ঞাত করানো হয়।
শরায়ী আইনের বিধান মুসলমানের-কি ধর্মীয়, কি রাজনৈতিক, কি সামাজিক সমস্ত জীবনই নিয়ন্ত্রণ করে। এ আইন তার বিবাহ জীবন, তার নাগরিক জীবন এবং অমুসলমানের সঙ্গে তার ব্যবহারগত জীবন পরিচালনা করে থাকে। ধর্মীয় আইনের উপরই মুসলমানের নৈতিক আইনের ভিত্তি। আইনের দিক হতে মানুষের সমঃ কাজকে পাঁচভাগে বিভক্ত করা হয়েছে : ১. অপরিহার্য ফরয, –(অবশ্য পালনীয়) পালন না করলে শাস্তি; ২. প্রশংসনীয় পুণ্য কাজ । করলে পুরস্কার না করলে শাস্তি নাই ৩. অনুমতি দেওয়া কাজ; আইন এ সম্বন্ধে উদাসীন; . না পছন্দ কাজ; অননুমোদিত–তবে শান্তি নাই; ৫. হারাম কাজ । করলে কঠোর শাস্তি।
কোরআন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে নীতিশাস্ত্রের যে সব বই লেখা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রচুর হলেও আরবী সাহিত্যে নীতিঘটিত যত কথার আলোচনা আছে, তার সমস্ত ও-সব বইয়ে স্থান পায় নাই। এইসব দার্শনিক গ্রন্থে আত্মসমর্পণ, সন্তোষ এবং সবরের যথেষ্ট প্রশংসা করা হয়েছে; পাপ হচ্ছে, আত্মার ব্যারাম আর দার্শনিক তার চিকিত্সক ।
১০০০ সালের কাছকাছি আরবী সাহিত্য উন্নতির উচ্চতম শিখরে আরোহণ করে; কিন্তু পারস্যের প্রভাবের ফলে রচনা-রীতি কৃত্রিম ও অলঙ্কারবহুল হয়ে পড়ে। প্রাথমিক যুগের সংক্ষিপ্ত, তীক্ষ্ণ এবং সহজ প্রকাশভঙ্গী চিরদিনের জন্য বিদায় গ্রহণ করে। এর স্থান দখল করে এক মার্জিত সুন্দর উপমাবহুল ও ছন্দোময় রচনাশৈলী। পাশ্চাত্য জগত এ যুগের সাহিত্যের মধ্য হতে একখানি। বই বেছে নিয়েছে–আরব্য উপন্যাস এবং তারই উপর এর সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। আল-জাহশিয়ারী (মৃত্যু ৯৪২) একটি পারস্য দেশীয় কাহিনী অবলম্বন করে এর প্রথম খসড়া তৈরী করেন। পরে স্থানীয় গাল্পিকরা অন্যান্য কাহিনী ও নায়িকা শাহারজাদের নাম যোগ করে। যতই দিন যেতে থাকে ততই পাক-ভারতীয়, গ্রীক, হিব্রু, মিসরীয় এবং অন্যান্য সর্বপ্রকার প্রাচ্য গল্প এর সঙ্গে যোগ হতে থাকে। হারুনর রশীদের কাল্পনিক দরবার অবলম্বনে অনেকগুলি রসাল গল্প ও ভালোবাসার কাহিনী জন্মলাভ করে। চতুর্দশ শতাব্দীর আগে এ উপন্যাসে গল্পের সংযোজন শেষ হয় নাই। আশ্চর্যের কথা এই, আরব্য-উপন্যাস প্রাচ্যের চেয়ে পাশ্চাত্যে অনেক বেশী লোক-প্রিয়।
আরব্য উপন্যাস যখন আরবীতে শেষ আকার ধারণ করে, তখন সাহিত্য ও বিজ্ঞানে মুসলমানদের সোনার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আব্বাসীয় যুগের পর বিজ্ঞানের কোন বিভাগেই আর কোন উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় নাই। আজকের মুসলমানেরা কেবল তাদের নিজের বইয়ের উপর নির্ভর করলে তাদের সেই সুর একাদশ শতাব্দীর পূর্ব পুরুষদের চেয়ে নীচেই তাদের স্থান হবে। চিকিৎসা, দর্শন, গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা ও অন্যান্য শাস্ত্রে মুসলমানরা একটা নির্দিষ্ট মান পর্যন্ত ওঠে। তারপর যেন মুসলিম-জগতের মন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়। ধর্ম ও বিজ্ঞানঘটিত অতীত ঐতিহ্যের প্রতি অন্ধ ভক্তি আরব-বুদ্ধিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলে; কেবল ইদানীং তারা শৃঙ্খল ভাঙ্গতে শুরু করেছে।
আসসালামু আলাইকুম।
অসাধারণ হয়েছে। অনেক তথ্য বহুল।
উক্ত আর্টিকেল টির লেখক সম্পর্কে জানতে পারি?