১১. দ্য কন্টিনেন্ট অফ সার্সি

দ্য কন্টিনেন্ট অফ সার্সি

উনি এটা আশা করেননি। এই অসৌজন্য।

একটু থতমত হয়ে গেলেন বটে। তা বলে পাঁচপেঁচি, গড়পড়তা পুলিস অফিসারের মতন ওঁর চোখের তারাদুটো যে হঠাৎ পাথরে পরিণত হল, তা না। এদিক-ওদিক ওঁর দৃষ্টি ঘুরে বেড়াল কিছুক্ষণ। তারপর যখন তাকালেন, দেখলাম দৃষ্টি আরও কোমল হয়েছে। সস্নেহে বললেন, এত তাড়া কীসের?

আমি বললাম, দেখুন আমার অ্যালিবাই নেই।

না থাক। সেটাই নেসেসারিলি প্রমাণ করে না যে, আপনিই ক্রাইমটা করেছেন।

কিন্তু যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আজ আমি তোমায় ছাড়ব না।

আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানতে চাইলাম, কাগজে বেরিয়েছে আমিই প্রাইম সাসপেক্ট। কেন? আমি এর কৈফিয়ত চাই।

তাতে কী হয়েছে। জবাবদিহির সুরে সত্যবান বললেন, তাতে কী হয়েছে। ছাগলে কী না খায় আর কাগজে কী না বলে। আমিই বলেছি কাগজকে।

কেন? যেন আমার হক, আমি উত্তর দাবি করি।

আমার আজকের রুখে-দাঁড়ানো দেখে উনি এখনও অপ্রস্তুত। ওঁর দৃষ্টি ব্যথিত। এঁর এতদিনের সৌজন্য ও সকল সহৃদয়তাকে চ্যালেঞ্জ করে আমি কি অবিচার করছি তার ওপর? নাকি, এটা ওর মুখোশ? এমন তো নয় যে, খুনিকে না ধরতে পারলে শেষ পর্যন্ত, সাবস্ট্যানসিয়াল ক্ল তথা সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্সের জোরে চালান দেবে বলে ও আমাকে এভাবে জিইয়ে রেখেছে? যদি তাই হয়, তাহলে এই ঢ্যামনামির আমি আজ শেষ দেখব।

সত্যবান বললেন, ওটা একটা ক্ল্যাসিকাল মেথড আমাদের। এখনও কাজ দেয়। রিয়েল কালপ্রিট নিশ্চিন্ত থাকে। অন্তত, অ্যালার্ট আর থাকে না।

আজকের ইভিনিং স্টারে বেরিয়েছে, আমি নাকি কনফেস করেছি বিদ্রুপে সরু হয়ে আসে আমার ঠোট, এটাও কি আপনি বলেছেন? আপনার মেথডটা ক্ল্যাসিকাল না মর্ডান সার?

ওরা একটু বাড়িয়ে লিরেছে। কিন্তু কনফেস তো আপনি করেছেন।

এই তো মুখোশ খুলছে। একটু একটু করে। এসো, বাছাধন।

কনফেস? আমি! টেবিল ছেড়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি উঠে দাঁড়াই, হোয়াট ডু ইউ মিন!

বেশ খানিকটা গ্যাপ দিয়ে সত্যবান আবার একটা সিগারেট ধরালেন। প্যাকেটটা সেই থেকে টেবিলে পড়ে। যখন ইচ্ছা আমি নিতে পারি, উনি বলে রেখেছেন।

স্ত্রীকে মার্ডার করার জন্যে একটা ব্লু-প্রিন্ট তো আপনি তৈরি করেছিলেন — বাবু। সত্যবান বলে গেলেন, করেননি? ব্যাঙ্ক অফ টোকিওর চন্দনবাবু যেদিন এলফিনে আপনাকে বললেন, ওদের দলের একজন মহিলা বদ্রীনাথ থেকে নামার সময় ঘোড়াসুদু খাদে পড়ে গিয়েছিল, পরের দিন ফোন করে আপনি চন্দনবাবুকে, আজকাল একটা ঘোড়ার দাম কত জেনে আপনাকে জানাতে বলেছিলেন। বলেননি? চন্দনবাবু রেসে যান। রেসের মাঠ থেকে জেনে চন্দনবাবু আপনাকে জানান। জানাননি? আসলে এলফিনেই আপনার মাথায় এটা ফ্ল্যাশ করে যে তাহলে তো আপনার স্ত্রীও ওভাবে পড়ে যেতে পারেন, ঘোড়াসুদু! তাই না?

এসব কী উন্মাদের মতো বলছেন আপনি? এতদিন পরে!

দাঁড়ান। বাধা দিলেন সত্যবান, লেট মি ফিনিশ। আপনি স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে এক লাখ টাকা তুলে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

হ্যাঁ। পথে কোনও বিপদ-আপদ…

এক লাখ টাকা! না। মানতে পারলাম না। আমি ধরে নিতে পারি এবং নিয়েছি যে, এটা ছিল আপনার একটা হিসেব। ঘোড়া বিশ আর খুন পঞ্চাশ। যদি রাজি হয় কোনও ঘোড়াঅলা। আপনারা—আমি আপনাদের মোডাস অপারেন্ডি বা থট-প্রসেস নিয়েই বলছি—মশাই ভারি চ্যারিটেবল। এমন ছেলেমানুষের মতো ব্লু ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে যান, প্রিয় অভিভাবকের মতো হাসতে হাসতে সত্যবান জানতে চাইলেন, আচ্ছা, আচ্ছা। মানছি, এগুলো সব ডাইডাক্টিভ কু। কিন্তু মার্কেটে ক্ষেমচাদ ভাটিয়ার দোকান থেকে আপনি আমেরিকান ছুরিটা তো কিনেছিলেন? এটা তো কনফেস্ করেছেন?

কিন্তু, দেখুন, ওটা তো হঠাৎ একদিন রাগের মাথায় কিনে ফেলেছিলাম। ওর পাঞ্জার জোর কত বেশি টের পেতে পেতে শুকনো টোক গিলে আমি বলি, কিন্তু তারপর দীপ্তি যেদিন সকালে একটা কিচেন নাইফ আনতে বলল, সেদিন সন্ধেবেলা আমিই ওর হাতে সেটা তুলে দিই। দিয়ে বলি, সস্তায় পেয়ে গেলাম। এতে তোমার পাউরুটি আর আমার গলা দুটোই স্লাইস করতে পারবে। সবই তো বলেছি আপনাকে।

হ্যাঁ। কিন্তু, আমি যেটা আপনাকে বলিনি, সেটা হল ওই ছুরিটা দিয়েই আপনার স্ত্রীর গলা কাটা হয়।

আঁ!

হ্যাঁ।

কিক-কিন্তু আমি তো খুন করিনি। মামুর কাছে প্রতিবাদের সময় চৈতির তীক্ষ্ণ গলায় আমি চিৎকার করে উঠলাম।

খাপে ছুরি ঢুকিয়ে নেওয়া রণত্যাগীর আত্মসমর্পিত গলায় আমি শান্তভাবে বললাম, কিন্তু, আমি তো খুন করিনি।

অনেস্টলি, আমি এখনও তাই মনে করি।

এখনও?

এখনও। আর তাই আপনি বাইরে।

কিন্তু, কে খুনি তা কি আপনি গেস করতে পারছেন না। এখনও? এতদিনেও!

এটা ট্রেড সিক্রেট। সত্যবান বললেন, এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইবেন না। প্লিজ।

কিন্তু, আমি যদি পালিয়ে যাই?

পালাবেন না। পালাবেন না। আপনার মতো লোকরা পালায় না। সত্যবান প্রথম ড্রয়ার খুললেন : রিভলভার। দ্বিতীয়, তৃতীয়, একেবারে শেষ ড্রয়ারে খুঁজে পেলেন ডায়েরিটা, এই যে আপনার ডায়েরিটা দেখছিলাম। উঃ, মশাই, আগাগোড়া বন্দীর একি ভয়াবহ কারাবন্দনা! এক জায়গায়, এই যে, পেজ মার্ক ধরে ডায়েরিটা খুলে উনি পড়তে শুরু করলেন, দীপ্তি, তুমি যেটাকে ভাবছ খাঁচা, সেটা খাঁচা সত্যিই, কিন্তু, পাকাটির। দীপ্তি : পাকাটির তো ভেঙে বেরিয়ে যাওনা কেন? আমি : কারণ, ভেঙে বেরুলে কী, খাঁচার বাইরে কী, আমি তা জানি না। পদচিহ্নহীন সে অজানার চেয়ে, এই জানা বন্দিদশা, এ আমারই পছন্দ। সপ্তাহে বার দুই এই চেনা দানাপানি বলে আমি পাকা পোনার পেটের মতো নরম দীপ্তির… সরি। অবভিয়াসলি, এ-সব পিলো-টক। স্ত্রীকে আপনি কিন্তু, খুব ভালবাসতেন মশাই, যাই বলুন।

 

ওগো তোমরা কে কে চা খাবে উঠে পড়। কারণ, এরপর সাড়ে আটটার আগে আর চা হবে না…

 

অ্যান্ড শি ওয়াজ আ রিমার্কেবল উওমান ইনডিড। কলেজের কলিগ এবং ছাত্রীরা শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজন, আপনার বন্ধু এবং বন্ধুপত্নীরা যেখানে গেছি সবাই, সবাই ওঁর গুণমুগ্ধ। তবু কেন যে আপনারা এ-ভাবে ঘর পোড়ালেন, সাইকিয়াট্রিস্টরা হয়ত বলতে পারবেন। এ আমাদের পুলিসের কর্ম নয়।

হ্যাঁ। কিন্তু খাঁচা পাকাটি, এসবের সঙ্গে আমার না-পালানোর সম্পর্ক কী, কই কিছু বললেন না তো?

বললাম তো। ওই যে জানা-অজানা? গোটা লালবাজারটাই তো আপনার একটা পাকাটির খাঁচা, উনি হাত ঘুরিয়ে দেখান, কই, কেউ কি ভাঙছে? হাজতের দরজা খোলা রাখলেও আপনার মতো লোকরা পালাবে না মশাই। হুইচ ইজ ওয়ান থিং আই ক্যান টেল ইউ ফর শিওর।

এই প্রথম আমি বুঝলাম, এঁর কুহক-এলাকা থেকে পালাবার উপায় আমার নেই। নিশ্চিত পরাজয়ের নিশ্চেষ্টতা আমার পাঞ্জায়, উনিও টের পেয়েছে। ধীরে, কিছু বা সস্নেহে, উনি আমার বিফল প্রতিরোধ টেবিলে শুইয়ে দিলেন।

সত্যবান তখন বলে যাচ্ছেন, এই যে ছেড়ে রেখেছি আপনাকে। আইভি সোমের ব্যাপারটা তো সেইজন্যেই জানতে পারলাম। তাই না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *