১০. প্রবাসে সমান স্বচ্ছন্দ
আমি বিশ্বনাগরিক।
প্রতিটি নাগরিক আমার আত্মীয়॥
কর্মজীবনের আগাগোড়া যেহেতু আমি নানা ধরনের সময়সীমা নির্দিষ্ট জাতীয় কর্মভারে ব্যস্ত ছিলাম তাই সেভাবে আমি কখনও বিদেশভ্রমণ করতে পারিনি। যাই হোক, দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের ভারতে অভ্যর্থনা জানানো এবং বিদেশি রাষ্ট্র পরিদর্শনের মাধ্যমে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন সরকারি কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে। যখনই বিদেশি প্রতিনিধিরা আমাদের দেশে এসেছেন তখনই রাষ্ট্রপতি ভবনের উৎসাহী কর্মীবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা তাঁদের আতিথেয়তা প্রদর্শনে কোনও অভাব রাখেননি এবং আমাদের দেশের অর্জিত নৈপুণ্য তাঁদের প্রদর্শন করেছেন। আমার কাছে এই ধরনের সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মদক্ষতা কীভাবে জ্ঞাপন করা হবে এবং আমাদের নিজেদের উপকারের জন্য কীভাবে অন্য দেশের রীতিনীতি শিখব। এর থেকেই বিশ্ব জ্ঞানমঞ্চের ধারণার জন্ম হয়, যা আমার মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল অনেক বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ফলস্বরূপ। পরিবেশের অবনমনজনিত উদ্বেগ-চিন্তা ভাগ করে নিয়েছিলাম এবং শক্তিক্ষেত্রে স্ব-নির্ভরতার প্রয়োজনীয়তা আমরা আলোচনা করেছিলাম। আমরা বিদেশি অতিথিদের ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি, ই-গভর্ন্যান্স এবং ভেষজ শিল্পে সক্ষমতা দেখিয়েছিলাম। প্রতিটি সাক্ষাৎ পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক বা নানাদিক সমন্বিত লাভজনক প্রায়োগিক কার্যক্রমের দিকে পরিবর্তিত হত দেখে আমি খুশি হয়েছিলাম।
আমার প্রতিটি বিদেশভ্রমণ তার নিজের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সুদানে, দেশের দক্ষিণাংশ থেকে রাজধানী খার্টুম অবধি একটা জ্বালানি তেলের পাইপলাইন নির্মাণকেন্দ্রিক আলোচনা হয়েছিল। এর জন্য খরচের হিসাব ধরা হয়েছিল প্রায় এক বিলিয়ন ডলার, যাতে ভারতের সহযোগিতা থাকবে। আজ সুদান থেকে ভারতে তেল পরিবাহিত হচ্ছে। ইউক্রেনে প্রচণ্ড ব্যস্ত কর্মসূচি ছিল। ইউক্রেন পরিদর্শন মহাকাশ ক্ষেত্রে সহযোগিতায় অগ্রগমন ঘটিয়েছিল। যাই হোক, আমি এইসমস্ত সফরের শুধু কিছু তাৎপর্যময় ঘটনাবলি পরিবেশন করব। আমি ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলাম, রাষ্ট্রপতি Thabo Mbeki-র জোহানেসবার্গে প্যান আফ্রিকীয় সংসদ ভবনে আমায় অভিভাষণ দিতে অনুরোধ করেছিলেন, ওই সংসদ তিপ্পান্নটা আফ্রিকান রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই অনুরোধ স্বীকার করেছিলাম এবং যখন আমি বা আমার সঙ্গীরা বক্তৃতা তৈরি করছিলাম তখন ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় কর্মদক্ষতাগুলির সঙ্গে আফ্রিকা জাতিকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা কী নিবেদন করতে পারি বিবেচনা করতে হয়েছিল। এই ঘটনা সমগ্র আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্ক ধারণার উদ্ভব ঘটাল, যা ভারত এবং আফ্রিকার বারোটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সতেরোটা স্পেশালিটি হাসপাতালের থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা নিবেদন করতে পারে, এ ছাড়া প্যান আফ্রিকীয় রাষ্ট্রগুলোর সব রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে যোগাযোগ সংস্থাপন করতে পারে যাতে তাঁরা পারস্পরিক ধ্যানধারণা বিনিময় করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা ই-নেটওয়ার্ক স্থাপনা করতে প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয় ৫০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার নির্দেশ করেছিলেন। প্যান আফ্রিকান সংসদে প্রস্তাবনা পেশ করার আগে আমি প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-কে সংক্ষিপ্তাকারে সব জানিয়েছিলাম। তিনিও মনে করেছিলেন এ প্রস্তাবনা ভারত সরকারের ফোকাস আফ্রিকা (Focus Africa) বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্যান আফ্রিকার রাষ্ট্রসমূহ ও ভারতবর্ষের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্ক প্রজেক্ট এখন যথেষ্ট পরিমাণে গতিবেগ অর্জন করেছে যা ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে। আজকের দিনে আন্তর্জাতিক সামাজিক দায়িত্ব পালনে ই-নেটওয়ার্ক একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মনে হয় ২০০৬ সাল নাগাদ, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সভাপতি Josep Borrell Fontelles-এর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমার দেখা হয়েছিল। কথোপকথনের সময় তিনি এমন একটা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন যা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। আলোকপ্রাপ্ত নাগরিকের বিকাশ বা Evolution of Enlightened Citizens বিষয়ে তিনি আমার ওয়েবসাইট থেকে জেনেছিলেন। তিনি এ-বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্ন করেছিলেন। সেগুলো ছিল সুগভীর, সুচিন্তিত ও উদ্দেশ্যপূর্ণ। আলোচনা শেষে তিনি আমায় ইউরোপীয় সংসদে অভিভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। সংসদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭৮৫ জন সদস্য সাতাশটা সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। সংসদ হল একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত। তিনি আমায় তাঁর রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদকাল ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার আগে অভিভাষণ দেবার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যাই হোক, ২০০৬ সালে আমার নানা পূর্বনির্ধারিত প্রতিশ্রুতি পালনের ব্যস্ততার কারণে সে অনুরোধ রাখতে পারিনি। শেষপর্যন্ত ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল আমি অভিভাষণ দিয়েছিলাম, তখন ইতিমধ্যে Hans Gert Pottering রাষ্ট্রপতি হিসেবে Fontelles-এর হাত থেকে কর্মভার নিয়েছিলেন।
যেহেতু এই অভিভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাই ভ্রমণসূচি ঘোষণা করবার অনেক আগে থেকে আমি প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলাম। বন্ধু, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, বিজ্ঞানী এবং তরুণদের সঙ্গে আমার চিন্তাউদ্রেককারী অধিবেশন হয়েছিল। বিশেষ করে এই উপলক্ষে আমি একটি কবিতা রচনা করেছিলাম ‘ধরিত্রীমাতার বার্তা’ বা ‘Message from Mother Earth’। এই কবিতাটিতে প্রতিফলন ঘটেছিল কীভাবে ইউরোপীয় জাতিগুলি একে অপরের সঙ্গে হিংস্র যুদ্ধে রত ছিল এবং পরে সাফল্যের সঙ্গে ইউরোপীয় সংঘে পরিণত হল— প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, শান্তি ও আনন্দের প্রতি লক্ষ্য রেখে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ এক অগ্রণী পদক্ষেপ।
যখন ২৫ এপ্রিলের ভোরে আমি ইউরোপীয় সংসদে পৌঁছলাম তখন রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর সহকর্মীরা আমায় স্বাগত জানালেন। ইউরোপীয় সংঘের ৭৮৫ জন প্রতিনিধি এবং সংসদে দর্শনার্থীর ভিড়ে উপচে পড়া গ্যালারি সত্যি সত্যি মনকে অভিভূত করার মতো দৃশ্য।
ওই উপলক্ষে আমার অভিভাষণের শিরোনাম ছিল ‘জাতির ঐক্যের গতিময়তা’ বা ‘Dynamics of Unity of Nations’। ভারতবর্ষের ইতিহাসগত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সভ্যতাসমূহের দ্বন্দ্বের পরিবর্তে তাদের একত্রে প্রবাহিত হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। আমার বক্তৃতা আলোকপ্রাপ্ত নাগরিকত্বের বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিল, যার তিনটি অংশ ছিল— মূল্যবোধব্যবস্থা-সহ শিক্ষা, ধর্মের আধ্যাত্মিকতায় রূপান্তর, এবং জাতীয় উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সমাজের রূপান্তর।
এ ছাড়াও আমি ভারতবর্ষ এবং ইউরোপে শক্তিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলাম এবং একে বাস্তবায়িত করার পদ্ধতির রূপরেখা অঙ্কিত করেছিলাম। আমার বক্তৃতা পর্যায়ক্রমে অভিনন্দিত হয়েছিল অভিভাষণের শেষে, সমস্ত সদস্যর অনুমতি নিয়ে আমি এই উপলক্ষে রচিত আমার কবিতা পাঠ করেছিলাম—
ধরিত্রীমাতার বার্তা
মনোরম পরিবেশ
সুন্দর মনের দিশা দেখায়;
সুন্দর মন তৈরি করে,
সতেজতা আর সৃষ্টিশীলতা।
তৈরি করেছে দেশ ও সমুদ্র অনুসন্ধানকারীর দল,
তৈরি করেছে আবিষ্কার করার মন,
তৈরি করেছে বৈজ্ঞানিক মানসিকতা,
সব জায়গায় তৈরি করেছে, কেন?
অনেক আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে,
খুঁজে পেয়েছে এক মহাদেশ আর
অনেক অজানা দেশ,
অনেক না-জানা পথের সন্ধান পেয়েছে,
কত নতুন রাজপথ তৈরি করেছে।
সবচেয়ে ভাল মনের ভেতরে
শয়তানও জন্ম নেয়;
যুদ্ধ ও ঘৃণার বীজ জন্মায়
শত শত বছর ধরে চলে যুদ্ধ আর রক্তক্ষয়।
আমার লক্ষ লক্ষ অপূর্ব সন্তানেরা
কত দেশ ও সাগরে হারিয়ে গেছে;
অশ্রুজলে প্লাবিত হয়েছে কত দেশ
দুঃখের সাগরে লুপ্ত হয়েছে কত লোক।
তারপর, তখন এল ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বপ্ন
তারা শপথ নিল,
মানবের জ্ঞানকে কখনওই
আমাদের অথবা অন্যদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাব না।
তাদের এই চিন্তার সমন্বয় প্রচেষ্টা,
কাজ করেছে।
ইউরোপকে সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ করতে,
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্ম হল।
ওই খুশির তরঙ্গগুলি মোহিত করেছিল
সকল জায়গার সকল মানুষকে।
হে! ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তোমার লক্ষ্য
সর্বত্র ছড়িয়ে দাও, শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস যেমন
ছড়িয়ে যায়।
কবিতাপাঠ শেষ হওয়ার পর সাংসদদের আলোড়ন এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় আমি অভিভূত হয়ে গেছিলাম। শ্রোতারা উঠে দাঁড়িয়ে যে অভ্যর্থনা আমায় জানালেন তা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। প্রত্যুত্তরে আমি ভারতবর্ষের একশো কোটি নাগরিকের শুভেচ্ছাবার্তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রসমূহকে জানালাম। আমার অভিভাষণের পরে রাষ্ট্রপতি পটারিং উপসংহারে যা বললেন আমি তা উদ্ধৃত করছি, ‘মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম, ইউরোপীয় সংসদের পক্ষ থেকে, সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং উৎসাহব্যঞ্জক বক্তৃতার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এরকম অসাধারণ বক্তব্য আমরা কখনও কোনও রাষ্ট্রনায়ক, বৈজ্ঞানিক এবং কবির কাছ থেকে কখনও শুনিনি। এ বক্তৃতা অতুলনীয়। মহান দেশ ভারতবর্ষের শুভেচ্ছা কামনা করি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মহান রাষ্ট্র ভারতবর্ষের মধ্যে সহযোগিতার শুভেচ্ছা কামনা করি এবং রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা কামনা করি।’
অভিভাষণের পরে সদস্যদের অনেকেই বক্তৃতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। সাধারণ পর্যবেক্ষণ হল ভারতবর্ষ এক মহান রাষ্ট্র যার মানবিকমূল্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
সমগ্র বিশ্বে মানসিক সমন্বয় প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় সংসদে আমার অভিভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। ওই অভিভাষণটি অনেক রাষ্ট্রে উদ্ধৃত করা হয়েছিল এবং ইউ টিউব (You Tube)-সহ অসংখ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বের শ্রোতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছেছিল।
ভারতবর্ষে ফিরে আসার পরে সংসদে যে অভিভাষণ দিয়েছিলাম তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা লক্ষ্যে কাজ করার আগ্রহের কথা উল্লেখ করেছিলাম, যেমন— শক্তিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা এবং বিশ্ব জ্ঞানমঞ্চ নির্মাণ। এর কারণ ছিল, ভারতবর্ষ যাতে অগ্রসরের লক্ষ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
আমি যখন গ্রিসে গেছিলাম সক্রেটিস গুহায় যাত্রার এক বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছিলাম। ভ্রমণার্থীরা কদাচিৎ ওখানে যায় কারণ জায়গাটা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। আমার অনুরোধেই যাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওখানে গিয়ে গুহার মধ্যে আমাকে দেওয়া একটিমাত্র কাঁপাকাঁপা আলোয় কিছু মুহূর্ত আমি কাটিয়েছিলাম। ওই পাঁচ মিনিট আমি একা ছিলাম— ধ্যানস্থ ভাবে। ভাবছিলাম, জগতের শ্রেষ্ঠ চিন্তাশীল ব্যক্তিদের অন্যতম সক্রেটিস কেন নিজের জীবন শেষ করে দিতে বিষ পান করেছিলেন। আমার মনে পড়ল তাঁর উক্তি যে, তাঁর সদুপদেশের মূল্য তাঁর জীবনের চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সহসা সেই অন্ধকার গুহার ভেতরে একটা উজ্জ্বল আলোর মতো দেখা যেতে পারে— যেটা তাঁর এই পৃথিবীকে দিয়ে যাওয়া যুক্তির পরম্পরা।
২০০৫ সালে আমি সুইজারল্যান্ড সফরে গেছিলাম। বিমান থেকে অবতরণ করার পর আমার জন্য এক বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। উপরাষ্ট্রপতি আমায় অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিলেন, আমার আগমন দিবসের স্মারক হিসেবে ২০০৫ সালের ২৬ মে দিনটি বিজ্ঞান দিবস হিসেবে রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল। সুইজারল্যান্ড সরকারের তরফ থেকে অবশ্যই এ এক অপ্রত্যাশিত ব্যঞ্জনাপূর্ণ কাজ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে আমি এরজন্য ধন্যবাদ জানালাম। তিনি বললেন আমার লেখা দুটো বই ‘Ignited Minds’ এবং ‘India ২০২০’ তিনি পড়েছেন। লেখা পড়ে প্রভাবিত হয়ে তিনি মন্ত্রিসভায় সংক্ষিপ্তাকারে মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ে আমার সম্পাদিত কাজ বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন এবং মন্ত্রিসভা স্থির করেছিল আমার সুইজারল্যান্ড পরিদর্শনের দিনটি বিজ্ঞান দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হবে। ওখানকার বিজ্ঞান গবেষণাগার পরিদর্শন করা ও গবেষক, ছাত্র এবং অধ্যাপকের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি জুরিখে স্যুইস ফেডারাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে গিয়েছিলাম, আইনস্টাইন জার্মানি থেকে এসে ওখানেই প্রথম পড়াশোনা করেছিলেন। ওখানে আমি বোস-আইনস্টাইন গবেষণাগারে গেছিলাম, যেখানে ৬ জন বিজ্ঞানী বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এখানেও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং ছাত্রদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেবার সুযোগ হয়েছিল এবং আমি ‘প্রযুক্তি এবং জাতীয় উন্নয়ন’ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলাম।
উপসংহারে ছাত্রদের আমি স্যর সি ভি রমনের উদ্বুদ্ধকারী উপদেশ শুনিয়েছিলাম, ‘আমাদের জয়ের উদ্দীপনা চাই, এমন চালিকাশক্তি চাই যা আমাদের এই পৃথিবীতে সঠিক জায়গায় বহন করে নিয়ে যাবে। এমন চৈতন্য চাই যা আমাদের গর্বিত সভ্যতার উত্তরসূরি হিসেবে এই গ্রহে সঠিক স্থান লাভ করতে সাহায্য করবে। যদি এই অপরাজেয় চৈতন্য জাগ্রত হয় তা হলে কোনও কিছুই আমাদের সঠিক ভবিতব্য অর্জনে প্রতিরোধ করতে পারবে না।’
আমি ড. নেলসন ম্যান্ডেলার কথা না বলে থাকতে পারি না। ওঁর সঙ্গে ২০০৪ সালে আমার দেখা হয়েছিল। এই মহান ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে দুটো মহৎ শিক্ষা পাওয়া সম্ভব— চৈতন্যের অপরাজয়তা এবং ক্ষমার মহত্ত্ব।
কেপটাউন মালভূমির জন্য বিখ্যাত, এর তিনটি শিখর আছে— টেবল পিক, ডেভিল পিক এবং ফেক পিক। সারাদিন ধরে এই শিখরগুলি ঘিরে অত্যন্ত মনোহর দৃশ্য দেখা যায়, যেমন লাগামছেঁড়া ভেসে থাকা মেঘ শিখরকে জড়িয়ে রেখেছে, কখনও সেগুলো কালো, কখনও-বা সাদা রঙের। আমরা হেলিকপ্টারে করে কেপটাউন থেকে রবেন দ্বীপে গিয়েছিলাম। ওখানে আহমেদ কাথরাদা আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। উনি নেলসন ম্যান্ডেলার সহবন্দি ছিলেন। দেখে আশ্চর্য লেগেছিল যে, প্রায় ছয় ফুট লম্বা ম্যান্ডেলা বর্ণবৈষম্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন বলে তাঁকে ২৬ বছর কারাগারে একটা ছোট ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। জীবনের বেশিরভাগ সময় তাঁকে ওই দ্বীপে নির্বাসিত অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। তাঁকে কাছাকাছি কোনও পাহাড়ের পাথর খাদান থেকে পাথর তোলার জন্য প্রখর সূর্যের তাপে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিয়ে যাওয়া হত। সেসময়ই তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এত অত্যাচার সত্ত্বেও তাঁর প্রাণশক্তি অটুট ছিল। যখন প্রহরীরা ঘুমোতে যেত সেসময় তিনি লিখতেন। এভাবেই তিনি লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘Long walk to Freedom’।
জোহানেসবার্গে ওঁর বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়া আমার পক্ষে এক বিরল সৌভাগ্য। যখন আমি করমর্দন করলাম মনে হল আমি যেন এক মহান আত্মাকে স্পর্শ করছি। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে পথ চলার লাঠিটা ছুড়ে ফেলে দিলেন, আমায় অবলম্বন করলেন। ওঁর কাছ থেকে এক বিশাল শিক্ষা পেলাম যা অন্যতম তিরুক্কুরালেও আছে, ‘যারা তোমার অনিষ্ট করতে চায় তার পরম শাস্তি হল তাদের ভাল করা।’
রেলগাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক আমাকে ছেলেবেলার দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যখন আমি রামেশ্বরম শহরের রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে ছুড়ে দেওয়া সংবাদপত্র ঘরে ঘরে বিলোনোর জন্য কুড়িয়ে নিতাম। নিজের দেশকে দেখা এবং তার সুগন্ধ আঘ্রাণ করার জন্য রেলযাত্রা খুব ভাল। মাঝেমধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় নিসর্গদৃশ্য কিছুটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যেমন, সবুজ খেত এবং গ্রামের টুকরো ছবিগুলো অনেক কাছের বলে মনে হয়। সব মিলিয়ে রেলযাত্রা যথেষ্ট আনন্দদায়ক এবং আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যে প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রেন আবার চালু করব।
প্রেসিনডেন্সিয়াল কক্ষ এক জোড়া জুড়ি কোচের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে— একান্তভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যবহারের জন্য। কামরার ভেতরে ভোজন কক্ষ, তার দ্বিগুণ জায়গাবিশিষ্ট দর্শনার্থীদের কক্ষ, বসবার বা অধিবেশনের জন্য কক্ষ এবং রাষ্ট্রপতির শয়নকক্ষ থাকে। এ ছাড়াও থাকে রান্নাঘর এবং রাষ্ট্রপতির সচিব ও কর্মী এবং তাঁর যাত্রাসঙ্গী রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ। কামরাগুলো সেগুন কাঠের আসবাবপত্র, সিল্কের পরদা এবং কুশান ঢাকনা দিয়ে বিলাসবহুলভাবে সজ্জিত।
এই কামরাগুলো ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর প্রথম দিকে কিছু ব্যবহার হয়েছিল। একটা ঐতিহ্যও ছিল যে, রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যের মেয়াদকাল শেষ হলে নিউ দিল্লির বাইরে, যেখানে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসে ইচ্ছুক হবেন সেখানে ওই ট্রেনে চড়ে যেতেন। এইভাবে শেষ যে রাষ্ট্রপতি ট্রেনে চড়েছিলেন তিনি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি, ১৯৭৭ সালে।
এর পর থেকে হয়তো সুরক্ষার কারণেই কামরাগুলো আর ব্যবহার করা হয়নি— কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ বজায় ছিল। এর আবার ব্যবহার হল ২০০৬ সালের ৩০ মে, ২৬ বছর পরে— হরনউত থেকে পটনা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিমি রাস্তা আমি এই ট্রেনে চড়ে গেছিলাম। কামরাগুলো মেরামত করা হয়েছিল এবং আধুনিক সরঞ্জাম যেমন উপগ্রহনির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল। আমি যতটা সম্ভব তার ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলাম— সর্বমোট তিনবার।
আরও দু’বার ট্রেনযাত্রা করেছিলাম— ২০০৪ সালে চণ্ডীগড় থেকে দিল্লি এবং ২০০৬ সালে দিল্লি থেকে দেরাদুন। এই রেলযাত্রা আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে জরুরি হয়ে পরে। এ ছাড়া যাত্রাকালীন সময়ে নানা বৈঠকও সমাপন করা যায়।
হরনউত থেকে পটনা রেলযাত্রার অনেকগুলো কারণ ছিল। হরনউতে আমি নতুন রেলপথ কর্মশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। নীতিশকুমার তখন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নিজের রাজ্যে বিশালাকারের কর্মশালা কেন্দ্র ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ার দরুন তিনি দারুণ খুশি হয়েছিলেন। আমার অভিভাষণে আমি হরনউতের উপস্থিত শ্রোতাকে বলেছিলাম— আমি সবেমাত্র প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র নালন্দার ধ্বংসস্তূপ থেকে আসছি। আমি আশা করি বিহার বিশ্বশান্তি প্রচার সম্পর্কিত বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন সমকালীন পাঠ্যক্রম দ্বারা এই মহান বিশ্ববিদ্যালয় পুনরুজ্জীবিত করবে।
রেলযাত্রা অসম্ভব কার্যকরী হয়েছিল কারণ আমি বিহারের পনেরোজন উপাচার্যকে আমার সঙ্গে যাত্রা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম এবং যাত্রাপথে ওঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ঘণ্টা খানেক আলোচনা করেছিলাম।
রাজ্যের উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে প্রাসঙ্গিক এমন পাঠ্যসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর আমি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছিলাম। বিহারের রাজ্যপাল যেসমস্ত সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সেগুলোর সমাধান করে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমর্যাদায় উন্নীত করার প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। দু’বছর পরে ক্যালেন্ডারভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলনের দ্বারা দেখলাম লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হয়েছে।
এই ভ্রমণের এক সন্তোষজনক পাদটীকা আছে— পটনা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে দেখি আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদব এবং সংযুক্ত জনতা দলের নেতা নীতিশকুমার দু’জনেই উপস্থিত কিন্তু দু’জনেই বিপরীত দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ট্রেন থেকে নেমেই এই দুইজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে এক জায়গায় আনলাম এবং উপস্থিত জনতাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করালাম।
২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারি, আমি শিশুদের বিজ্ঞান কংগ্রেস বা Childrens’ Science Congress উদ্বোধন করার জন্য এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে অভিভাষণ দেওয়ার জন্য চণ্ডীগড় গিয়েছিলাম। পরদিন ৬ জানুয়ারি আমাকে বিশেষ কাজের জন্য দিল্লি ফিরে আসতে হয়েছিল। সকালবেলার কুয়াশার দরুন যাত্রার অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেয়ে সঠিক সময়ে দিল্লিতে পৌঁছনোর জন্য আমি ট্রেনে ফিরেছিলাম। বিজ্ঞান কংগ্রেস উদ্বোধন করতে পেরে বিশেষ আনন্দ পেয়েছিলাম। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী তাদের প্রজেক্ট নিয়ে ওখানে জড়ো হয়েছিল।
২০০৬ সালে আমি তৃতীয়বার ভ্রমণ করেছিলাম। ভারতীয় সেনাবাহিনী অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ সমাপ্তকরণ কুচকাওয়াজে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করার জন্য আমি দেরাদুনে গেছিলাম। সময়টা ছিল শীতকাল এবং সকালবেলার অস্পষ্ট দৃশ্যমানতার কারণে বিমানে করে সময়মতো পৌঁছনো বেশ অনিশ্চিত ছিল। রাতের বেলাও যথেষ্ট কুয়াশা পড়েছিল। ট্রেন সফদরজং থেকে দেরাদুন পর্যন্ত কোথাও না থেমে অবিরাম চলেছিল কিন্তু রেল বিভাগ যাত্রার নির্বিঘ্নতার জন্য অনেকগুলো চেকপয়েন্টের ব্যবস্থা করেছিল।
উৎফুল্ল ভাবী স্নাতকদের সঙ্গে সময় কাটানো এক আনন্দজনক অভিজ্ঞতা। বিশেষত অনেক ভাবী স্নাতক অফিসাররা আমায় প্রশ্ন করেছিলেন কীরকম ভারতবর্ষকে তাঁরা সুরক্ষা দেবেন। এই অফিসারদের দলকে আমি যখন পরিদর্শনে সীমান্ত নিকটবর্তী, উত্তরাঞ্চল সেনাবাহিনীর ইউনিটে গেছিলাম সে-কথা বললাম। সীমান্ত ওপারবর্তী পাকিস্তানি সেনাধিকারীরা আমার পরিদর্শন পুঙ্খানুপুঙ্খ লক্ষ রাখছিল। আমি বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় দুশো তরুণ আধিকারিকদের উদ্দেশে অভিভাষণ দিয়েছিলাম। অভিভাষণের পরে বড়াখানায় যাওয়ার আগে আমি এই তরুণ আধিকারিকদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম— প্রিয় নবীন আধিকারিকগণ, যেহেতু সৈন্যবাহিনীতে আপনাদের সামনে প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি কর্মজীবন পড়ে রয়েছে, আপনারা আমায় বলতে পারবেন কি একজন আধিকারিক হিসেবে কী অভিনব লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন আপনারা দেখেন?
বর্ষীয়ান আধিকারিকরা নিশ্চুপ ছিলেন কিন্তু নবীন আধিকারিকদের মধ্যে যারা উত্তর দেবার জন্য হাত তুলেছিলেন তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে আমি বেছে নিলাম। আমায় অভিবাদন জানিয়ে তিনি বললেন, ‘স্যার আমার একটা স্বপ্ন আছে, সে স্বপ্ন হল আমাদের দেশের ভূমি যা অন্য রাষ্ট্র দখল করে নিয়েছে তা ফেরত পাওয়া।’ সমস্ত অধিবেশনে যেন তড়িৎপ্রবাহ সঞ্চালিত হল, সবাই ওই নবীন আধিকারিককে বাহবা দিলেন। এই উত্তর যখন আমি স্নাতক পরীক্ষার্থী সামরিক শিক্ষানবিশদের জানালাম সেখানেও একই প্রতিক্রিয়া দেখলাম— ‘আমরাও তাই করব স্যার।’ এসব নানা কারণে রেলযাত্রা দীর্ঘদিন আমার স্মরণে রয়ে গেছে।
.
সুদানে আমি এক অত্যন্ত সুন্দর এক দৃশ্য দেখেছিলাম যে নীলরঙা নীলনদ এবং সাদারঙা নীলনদ মিলিত হয়ে অন্য এক নদীতে, অন্য কোনও এক রং ধারণ করে বয়ে চলেছে, যেন এ এক সঙ্গম। বহু মিলনে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখলেও আমরাও পরিবর্তিত হই।